২. পোয়ারোর চিরদিনের অভ্যাস

০৬.

পোয়ারোর চিরদিনের অভ্যাস তাড়াতাড়ি শয্যায় গমন ও তাড়াতাড়ি শয্যাত্যাগ। তাই ওকে বিশ্রামের সুযোগ দিয়ে বেরিয়ে এলাম।

সিঁড়ির মুখে কারটিসের সঙ্গে দেখা। একটা দুটো কথা বলে বুঝলাম লোকটা কর্মঠ ও বিশ্বাসী। জানাল এর মধ্যে দুবার পোয়ারোর হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেছে। ঈজিপ্টে গিয়ে বিশ্রাম নিয়েও ফল হয়নি। ওঁকে ছাড়া কিভাবে জীবন কাটাব আমি।

ড্রয়িংরুমে আমাকে দেখেই ক্যারিংটন হৈ হৈ করে উঠল। ব্রিজ খেলতে আমায় আহ্বান করল। মনটা বিক্ষিপ্ত হলেও ওদের খেলার পার্টনার হয়ে গেলাম। ভদ্রলোক তার স্ত্রীকেই সঙ্গী করেছেন। কর্নেলের কাছে এ এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। মাঝেমাঝে ভুল হলেই মিসেস লাটরেল মুখিয়ে উঠছিলেন স্বামীর প্রতি। তিনি ভয়ে গুটিয়ে যাচ্ছিলেন। এভাবে খেলা যায় না, একটা অজুহাত করে উঠে পড়লাম। নরটনও একই কারণ দেখিয়ে বেরিয়ে এল।

বারান্দা দিয়ে একসাথে হাঁটতে হাঁটতে জানালেন, এ সহ্য করা যায় না। ভাবা যায় না কিভাবে তিনি ভারতবর্ষে একসময় দাপটের সঙ্গে সৈন্য পরিচালনা করে ছিলেন, আর এখন কিভাবে বেড়াল ছানা হয়ে থাকেন।

আমি ওনাকে সাবধান করে দিই, কারণ মিসেস লাটরেলের থেকে আমরা বেশি দূরে এখনও যেতে পারিনি।

তবে বললুম, আপনার সঙ্গে আমিও একমত। তবে এ বয়সে তিনি কিভাবে স্ত্রীকে কচুকাটা করবেন? যা বলেছেন, এই বয়সে হা প্রিয়তমা, না প্রিয়তমা না বললে স্ত্রী কি আর বশে থাকে?

নিরীহ নরটনের জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ ছাড়া কি করতে পারি?

হলঘরে ঢুকে নরটনকে বললুম, ব্যাপার কি এত রাতে দরজা খুলে বসে আছেন হাওয়া আসছে। বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ বলে মনে হয়।

না, তা নয়। তবে বাড়ির সবলোক ঘরে ফিরেছে বলে মনে হয় না।

এ সময় আবার কে বাইরে থাকতে পারে?

 জুডিথ ও এলারটনের কথা–ওরা মাঝে মধ্যে রাত করে বাড়ি ফেরে।

লোকটার নাম শুনেই হাড়পিত্তি জ্বলে ওঠে। পোয়ারোকে বলে দিলাম ঐ লোকটা মোটেই নির্ভরযোগ্য নয়। বন্ধু আমার সে কথা শুনতেই চায় না। এখন আমার ভদ্র নম্র মেয়েটা জুটেছে ওর সঙ্গে।

রাগে বিছানায় শুয়ে রইলাম। ঘুম এল না। উঠে পড়ে ভাবলাম এক ডোজ অ্যাসপিরিন নেব। তবে কাজ হবে বলে মনে হয় না। এর একটা হেস্তনেস্ত করা দরকার। এর আগে একটা পোয়ারোর সঙ্গে আলোচনা করা দরকার। শেষে রাতের পোষাক চাপিয়ে ওপরে চলে এলাম।

অসুস্থ পোয়ারোকে এই সময় বিরক্ত করব কিনা ওর ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম, এমন সময় পিছনে পায়ের শব্দে চমকে উঠে দেখি এলারটন হাসতে হাসতে উপরে উঠে আসছে।

আমার সামনে এসে হেসে জিজ্ঞেস করল, কি ব্যাপার মিঃ হেস্টিংস এখনও শুতে যাননি?

দাঁত কিড়মিড় করে বললুম, ঘুম আসছে না।

আসুন আমার সঙ্গে ঘুমের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি, মানুষটাকে বোঝার জন্য ওর আহ্বান পেতেই চলে গেলাম, একটু ঝালিয়ে দেখবে বলে।

দুজনের ঘর একেবারে পাশাপাশি। বললুম, আপনিও দেখছি অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকেন। এলারটন উত্তর দিল, বিছানায় শুয়ে সুন্দর সন্ধ্যাটা নষ্ট করতে চাই না। আলমারি থেকে একটা শিশি নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, আপনার নিচ্ছিদ্র ঘুম হবে এতে। ডাক্তারি নাম প্লাম্বারিন।

ভুরু কুঁচকে বলি, তাই কী? খেলে বিপদও হতে পারে।

নির্দ্বিধায় বলল, হতে পারে তবে পরিমাণটা বেশি হলে। খলনায়কের মত একটা বাঁকা হাসি হাসল। মনে হল লোকটা কোনোদিক দিয়েই সুবিধের নয়।

প্রতিবাদ করে বললাম, ডাক্তারের অনুমোদন ছাড়া এসব ব্যবহার করা যায়; জানা ছিল না।

তবে, এসব ব্যাপারে আমার একটু পড়াশুনা ছিল।

বেমক্কা একটা প্রশ্ন করে বসলুম, এথারিটনকে আপনি চেনেন? তাই না?

প্রশ্নটা ভুল হয়নি বুঝলাম যখন দেখলাম এলারটন হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেল, তবে মুহূর্তের জন্য। চিনি, বেচারা নিজের ভুলে মৃত্যু ডেকে আনল। তবে ওরস্ত্রীর ভাগ্য সুপ্রসন্ন বলতে হয়। জুরীরা নিরপেক্ষ না হলে ওকে ফাঁসি কাঠে ঝুলতে হত।

শিশি থেকে কয়েকটা বড়ি বার করে আমার হাতে দিয়ে বলল, এথারিটনকে আপনি চেনেন বলে মনে হচ্ছে?

বড়িগুলো নিয়ে বললাম না, চিনি না।

মানুষ হিসেবে তিনি খুব আমুদে ছিলেন, বলল এলারটন।

ধন্যবাদ জানিয়ে ঘরে ফিরে এলাম। আবার চিন্তা করতে লাগলাম, ভুল করলাম না তো? প্রশ্নটা কি বোকার মতন হল? পোয়ারো আমাকে সাবধান করে দিয়েছিল বটে। কিন্তু হঠাৎ মনে হল এই এক্স। পরক্ষণেই ভয়। না বুঝেই কী নিষিদ্ধ ফলে হাত দিয়ে ফেলেছি?

 .

 ০৭.

 ()

স্টাইলসের এর পরের দিনগুলো তুলতে গেলে হয়তো এলোমেলো হবে, হয়তো কোনো ধারাবাহিকতা থাকবে না। তবু চেষ্টা করছি……

 বৃদ্ধ, অথর্ব, পঙ্গু পোয়ারোর সঙ্গে তার বশম্বদ অনুচর কারটিস বেশ মিলেমিশেই আছে। ক্ষণিকের জন্য পোয়ারো মুক্ত বাতাস সেবন করে যখন কারটিস তাকে বাগানের এককোণে রেখে আসে। হাওয়া খারাপ হলে, হয় ড্রয়িংরুমে নয় নিজের ঘরে শুয়ে থাকে। সেই সময়ে আমাকে ওর চোখ কান হয়ে চারদিকে দেখতে শুনতে হয়। কোনো সুফল না হলেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

এরপর ফ্রাঙ্কলিন, ভদ্রলোক তার ছোট ল্যাবরেটরির ঘরে নিয়ে গিয়েছিলেন। নানারকম গন্ধে অন্নপ্রাশনের ভাত উঠে আসে। অনভিজ্ঞ লোকের পক্ষে কাজকর্ম অনুধাবন করা অসম্ভব। আনাড়ির মত কাজকর্ম বোঝার চেষ্টা করছিলাম। উৎসাহভরে তিনি সব পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন তবে ঐ সব বিদঘুঁটে নাম মনে নেই। তবে যা শুনেছি, তা মনে রাখতেই হবে আমায়। জুডিথও সেখানে ছিল। ও আরো বেশি উৎসাহের সঙ্গে বৈজ্ঞানিক নামগুলো আমাকে শোনাচ্ছিল। এইটে কিমোষ্টিগ মাইন, ওটা এসরিন, এটা ফিমোভেইন, জেনেসেরিনা, ড্রিহাই-ড্রোস্ফিফিল ট্রিমিফাইল ল্যামোনাম ইত্যাদি। দম বন্ধ হয়ে আসছিল, তাই নেমে এলাম।

বিরক্ত হয়ে জুডিথকে প্রশ্ন করেছিলুম, মানুষের কোনো উপকারে ফলপ্রসু হবে তোমাদের এ সাধনা। প্রকৃত বিজ্ঞানির মত কোনো উত্তর না দিয়ে আমার দিকে এমনভাবে তাকাল যেন বেণু বনে মুক্ত ছড়ানো হয়েছে এতক্ষণ। তখন আমায় ছেড়ে নিজেদের মধ্যে ওরা আলোচনা শুরু করল। সেই আলোচনা থেকে উদ্ধার করলাম। পশ্চিম আফ্রিকার আদিবাসীদের মধ্যে একধরনের অদ্ভুত রোগ আছে যার প্রতিষেধক আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। এখন সেই প্রতিষেধকই আবিষ্কার করতে হবে।

ওরা আসতেই বললুম, তোমরা বাপু যদি হামের পরে মানুষের দেহে যে বিষটুকু থাকে তার প্রতিকারের জন্য কোনো প্রতিষেধক ওষুধ বার কর তাহলে মনুষ্য জাতি তোমাদের দু-হাত তুলে আশীর্বাদ করবে।

জুডিথ রেগে গিয়ে একপ্রকার যা বলল তা এইরকম–এই সব বুড়ো হাবড়াদের জন্য বিজ্ঞান সাধনা এতটা পিছিয়ে পড়েছে। এই তিরস্কার আমাকে নীরবে হজম করতে হয়েছিল।

খাঁচার ভেতরে একটা ইঁদুরের ছটফটানি দেখে বুঝলুম ওর গবেষণা চলছে।

ওদিকে কানে যা এল তাতে মনে হল, ফ্রাঙ্কলিন পোয়ারোকে তার সাধনার কথা শোনাচ্ছিলেন।

বুঝলেন মঁসিয়ে পোয়ারো, পশ্চিম আফ্রিকার আদিবাসীরা জীবনধারণের জন্য এমনসব গাছের শেকড় খাচ্ছে যার ফলে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে অপরিণত বয়সে মৃত্যু হচ্ছে তা ওরা জানতে বা বুঝতে পারছে না। পোয়ারো সহজ মন্তব্য করেছিল এবং তাতে মৃত্যুর সংখ্যাও অস্বাভাবিক।

না, খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। তবে ধীরে ধীরে তাদের জীবনী শক্তি, প্রতিরোধ ক্ষমতা, হারিয়ে যাচ্ছে। পরীক্ষা করে দেখেছি এই সব গাছের মধ্যে দু বর্ণের প্রজাতি আছে, একটি বিষাক্ত অন্যটি ততটা নয়। এই শিকড় থেকে এক ধরনের সুরাসার তৈরি করার চেষ্টা করছি যা যুগান্তকারী সৃষ্টি হয়ে থাকবে মানব জাতির ইতিহাসে।

পোয়ারো বলল, জেনে ভালো লাগল যে আপনি দুটো প্রজাতির মধ্যে কোনোটা ভালো, কোনোটা মন্দ তা চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছেন। হা ভগবান, যদি মানুষের মধ্যে এই রকম কোনো ব্যবস্থার দ্বারা ভালো-মন্দটুকু চটপট জানা যেত!

আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না মঁসিয়ে পোয়ারো।

হেসে পোয়ারো বলল, আপনার মত বিজ্ঞানীর পক্ষে এই সহজ কথাটা বোঝা উচিৎ ছিল। ধরুন কোনো অত্যাচারী, উৎপীড়ককে খুন করার পূর্বে আপনার ঐ সব কোনো আবিষ্কারের দ্বারা কি খুনের পূর্বে খুনীকে চিনে ফেলা যাবে?

পোয়ারো থামতেই বলে উঠলুম, এর জন্য কোনো বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার প্রয়োজন কী। তার মনের মধ্যে সে অপরাধ বোধতো থেকেই যাবে।

হঠাৎ অত্যুৎসাহে ফ্রাঙ্কলিন বলে উঠল, পৃথিবীকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে তোলার জন্য আমি অনেক মানুষকে মেরে ফেলতে চাই। তার জন্য আমার সারা রাতের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে না। বলেই শিস্ দিতে দিতে ঘর থেকে প্রস্থান করলেন।

তারপর পোয়ারোর দিকে তাকিয়ে বললাম, মনে হয় বন্ধু অজান্তেই সাপের গর্তে হাত ঢুকিয়ে দিয়েছি।

পোয়ারো বলল, এটা হয়তো ডাক্তারের কথা, মনের কথা নয়।

নিরাশ হয়ে বললুম তাই যেন সত্যি হয়।

.

 ()

নিজের সঙ্গে অনেক যুদ্ধ করার পর সিদ্ধান্তে এলাম জুডিথকে এলারটন সম্পর্কে একটু সতর্ক করে দিতে হবে। জানি জুডিথ অন্য পাঁচটি মেয়ের চেয়ে আমার কাছে আলাদা। ও বুদ্ধিমতী, কোনো কাজ কিভাবে করা উচিৎ সে জ্ঞান আছে। তবুও ছেলে নয়, মেয়ে মেয়েই।

তবু ওর সঙ্গে যখন কথা বললাম যথেষ্ট সজাগ ছিলাম। কিন্তু আজকালকার ছেলেমেয়েরা বয়োঃজেষ্ঠ্যদের সম্মান দিতে জানে না।

আমার কথায় ক্ষিপ্ত হয়ে বলল, এ সবের মানে কী? সন্তানের ওপর পিতা মাতার সেই চিরন্তন অধিকারের পরাকাষ্ঠা দেখানো?

না, আমায় ভুল বুঝো না, আমি সেকথা বলতে চাইনি।

জানি এলারটন কে তুমি দু চক্ষে দেখতে পারো না।

 তা অস্বীকার করছি না। তবে তুমিও আমার সঙ্গে একমত হবে।

কেন?

কারণ তোমার সঙ্গে ওর কোনো চারিত্রিক মিল নেই।

এ তোমার শাসন, আমি এখন সাবালিকা। বিদ্রুপের সঙ্গে হেসে বলল, এখন আমার, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তোমার নতুন কি ধারণা জন্মাল শুনি? যদিও তুমি ওকে পছন্দ কর না, তবে উনি বেশ মিশুকে এবং ফুর্তিবাজ।

হ্যাঁ মেয়েদের কাছে উনি আকর্ষণের বস্তু হলেও ছেলেদের কাছে নয়।

 এটা তো স্বাভাবিক।

 তবে তোমাদের ওভাবে রাত অব্দি ঘুরে বেড়ানো ভদ্রতার মধ্যে পড়ে না।

আগুনে ঘি পড়ার মত জ্বলে উঠে বলল, ওহ-কী নিচ! তোমার মতন এমন পরস্ত্রীকাতর অভিভাবক দুটো দেখিনি। তুমি কি আমায় কচি খুকী মনে করেছ? দ্বিতীয় মিঃ ব্যারেট সাজতে যেও না–

সত্যিই এবার ভীষণ আঘাত পেলুম। শরবিদ্ধ আহত পাখির মতন মেয়ের এই ব্যবহারে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।

ক্লাভেন আসতে নিজেকে একটু সামলে উঠলুম।

কী-ব্যাপার! মুখখানা অমন পাচার মত করে আছেন কেন?

হেসে বললাম এবার, এমনিই।

 ক্লাভেন সহানুভূতির সঙ্গে বলল, না, গুরু গম্ভার ভাবে থাকবেন না, আপনাকে মানায় না।

হেসে বললাম, ধন্যবাদ।

ক্লাভেন মুখ ঝামটা দিয়ে বলল, সেকথা আর বলবেন না, এই সব মহিলারা কোনোদিনই সুখী হতে পারে না। বলছি মিসেস ফ্রাঙ্কলিনের কথা। একেবারে বোকার হদ্দ।

বললুম, যা বলেছেন।

ক্লাভেন আমাকে শ্রোতা পেয়ে বলল, মিসেস ফ্রাঙ্কলিন সবসময় খিটমিট করে, এতে স্বামী বশে থাকে? সত্যি মিঃ ফ্রাঙ্কলিন ভালো মানুষ, ওর জন্য কষ্ট হয়।

না জানার ভান করে বললুম, আপনার দুঃখের কারণটা ঠিক বুঝতে পারলাম না।

আহ। সাধারণ কথা–স্বামী-স্ত্রীর মনের মিল না থাকলে সংসারে সুখ থাকে না।

আচ্ছা আপনি কি মনে করেন, মিঃ ফ্রাঙ্কলিন ওনাকে বিয়ে করে ভুল করেছেন?

 কেন? আপনার তা মনে হয় না? দেখছেন না দুজনের মধ্যে মিল নেই।

চিন্তিত হওয়ার ভান করে বলি, বাইরে থেকে ওদের সুখী মনে হয়। স্বাস্থ্যের নজর রাখেন, ভালোবাসেন।

মেয়ে মানুষের মনের কথা কে বোঝে বলুন?

 তবে তার অসুখটা তাহলে সত্যি নয়।

নার্স ক্লাভেন সুচতুর হেসে বলল, বড় বেয়াড়া প্রশ্ন করেন আপনি। সেকথা আমি বলতে চাইনি। এই সংসারে নানাধরণের মহিলা আছে। তবে মিসেস ফ্রাঙ্কলিনের ধাতটা আলাদা, সারারাত জেগে থাকেন, দিনে ঝিমিয়ে কাটান। কে জানে কেন?

মিসেস ফ্রাঙ্কলিন অসুস্থ বলেই হয়তো এইসব উপসর্গ।

অদ্ভুত ভঙ্গি করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, হ্যাঁ অসুস্থ যখন উপসর্গ থাকবেই।

এ নিয়ে কথা বাড়িয়ে দরকার নেই। তবে আপনি তো এখানে অনেকদিন আগে ছিলেন?

 হা। ফিসফিস করে ভয়ার্ত গলায় বলল তখন আপনি এই স্টাইলসে ছিলেন?

হ্যাঁ ছিলুম। নিজের মনেই কেঁপে উঠে বলল, ঠিক যা ভেবেছি।

আপানার সবকিছু হেঁয়ালী বলে মনে হচ্ছে। নতুন করে আবার কী ভাবলেন?

হিমশীতল গলায় বলল, এখানকার থমথমে, গা কাঁপানো পরিবেশ দেখে মনে হয় কোথায় একটা গণ্ডগোল আছে। আপনার মনে হয় না?

এটাও কি সম্ভব, সেই বহুকাল আগের হত্যার রেশ এখনও রয়েছে।

আমায় চিন্তান্বিত দেখে উৎসাহিত গলায় ক্লাভেন বলল, এইরকম আমার জীবনে এক ঘটনা ঘটেছিল। আমার এক রোগী হঠাৎ রোগ শয্যায় খুন হল। সেকী ভয়ংকর দৃশ্য, সে কথা ভাবলে গা শিউরে ওঠে।

ঠিক, আমার জীবনেও একবার, কথা শেষ হতে না হতেই, বয়েড ক্যারিংটন হৈ হৈ করে ঘরে ঢুকল। ঢুকেই বললেন, সুপ্রভাত মিঃ হেস্টিংস। সুপ্রভাত নার্স। বারবারাকে তো ঘরে দেখলাম না?

ক্লাভেন বিনয়ের সঙ্গে বলল, উনি নিচে বাগানে মুক্ত বাতাস সেবন করছেন। আমিই বসিয়ে এসেছি।

সহাস্যে ক্যারিংটন বললেন, নিশ্চয়ই একা।

ক্লাভেন মাথা নাড়ল হা।

ফ্রাঙ্কলিন কোথায়? সেই বদ্ধ খাঁচায় ডাক্তার, অবশ্য একা নন। মিস হেস্টিংস আছেন।

মিঃ হেস্টিংস আপনি তো একটু বাধা দিতে পারেন, যৌবনের মুহূর্তগুলো ঐ বদ্ধ ঘরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

মোটেই তা নয়, বরঞ্চ ঐটাতেই উনি আনন্দ পান। ডাক্তারেরও ওকে ছাড়া এক মুহূর্ত চলে না।

জানেন জুডিথের মতন একজন সেক্রেটারী পেলে আমি ঐ বিচ্ছিরি গিনিপিগগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখতাম না–ক্যারিংটন বলল।

ঐ কথা বলবেন না, মিঃ ফ্রাঙ্কলিন অন্যধাতের মানুষ। কাজ ছাড়া কিছুই বোঝে না। নার্স ক্লাভেন দুঃখের সঙ্গে বললেন।

বয়েড মুচকি হেসে বলল, খুব ভালো। বারবারাও যে পিছিয়ে নেই তা দেখেও ভালো লাগছে। ঠিক সময় মত ঠিক জায়গাটি বেছে নিয়ে বসেছে। স্বামীর ওপর তদারকিটা ভালোই চলবে। হা ঈশ্বর, মেয়েদের কি হিংসুটে করেই না পাঠিয়েছে পৃথিবীতে।

রূঢ় কণ্ঠে ক্লাভেন বলল, আপনি দেখছি সব জেনে বসে আছেন, বলেই চলে গেল।

ক্যারিংটন ক্লাভেনের দিকে তাকিয়ে বলল, ঈশ্বর এই সোনালী চুলের সুন্দরী মেয়েকে দিয়ে তুমি নার্সের কাজ করাচ্ছ।

আমি চকিত কণ্ঠে বললুম, আপনি কি ভাবছেন জীবনে কোনোদিন আর ওর বিয়ে হবে না?

হলেই ভালো।…যাবেন নাকি আমার সঙ্গে ন্যাটনে বেড়াতে?

 ভালো প্রস্তাব, তবে এখন নয়। পোয়ারোর সঙ্গে দেখা করতে হবে।

দেখলুম ও ওর ঘরের সামনের বারান্দায় বসে। ওকে বয়েডের প্রস্তাবের কথা জানাতে বলল, নিশ্চয়ই যাবে, ঐ বিশাল অট্টালিকা ও প্রভূত সম্পত্তি দেখতে না পেলে তোমার জীবন বৃথা যাবে।

কিন্তু তোমাকে যে একা ছেড়ে যেতে হবে

তোমার কাছে অনেক পেয়েছি। একবার ঘুরে এসো। ওর সঙ্গে তোমার ভীষণ মিল আছে। সময়টাও তো কাটানো চাই।

.

 ()

বয়েড ক্যারিংটন প্রকৃত অর্থেই মানুষ। বেশ সুন্দর কিছু মুহূর্ত ওঁর সঙ্গে কেটে গেল, ন্যাটনের প্রাসাদোপম অট্টালিকায়।

দেখুন গৃহকত্রী না থাকায় এ সব অযত্নে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

স্ত্রী বিয়োগে সত্যিই বয়েড কাতর হয়ে পড়েছে। দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আমার আর বলার কিছু নেই। বললুম দ্বিতীয় বার বিবাহ করলেন না কেন?

অনেকেই সেকথা বলেন। তবে ব্যাচেলার জীবন ভালো লাগছে।

তখনকার মতন এই প্রসঙ্গ চাপা দিয়ে পোয়ারোর কথা তুললাম। ওর প্রাণশক্তির কথা বললাম।

ভাবতে রোমাঞ্চ লাগে আমাদের মধ্যেই আছেন সেই এরকুল পোয়ারো। তারপর সকৌতুকে বলল, যদি এখনই খুব চটপট একটা খুন করে ফেলি?

নির্দ্বিধায় বললুম, দেহ পঙ্গু হলেও মস্তিষ্ক ওর সতেজ। তাই ধরে ঠিকই ফেলব।

সত্যিই ওঁর মতন মানুষ দুটো জন্মাবে না। ও সব খুনখারাপী আমার দ্বারা হবে না। কিন্তু যদি কেউ ব্ল্যাকমেল করে, আমি তাহলে তাদের চোখবুজে খুন করে ফেলতে পারি। মনে হয় রাস্তার কুকুরের মতন ওদের মেরে ফেলা উচিৎ।

স্বীকার করতেই হল ওর কথা।

এর পর এই অট্টালিকার প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। তার প্রসঙ্গ উঠল। বয়েড ক্যারিংটনের খুল্লতাত স্যার এভার্ট ভোগ করবে। সেইসব সম্পত্তি অন্যকে দান না করে তার ভাইপোকে দান করে গেছেন।

কথায় কথায় লাটরেলের কথা উঠল। বয়েড ছোটবেলা থেকে জানে। কেমন যেন হয়ে গেছেন। স্ত্রীর কথায় ওঠেন বসেন। অবস্থার বিপাকে অতিথিশালা খুলেছেন।

ক্যারিংটন সুপুরুষই নয়, সুবক্তাও। স্টাইলের অনেক ক্ষুদ্র অকিঞ্চিৎকর ঘটনায় সূক্ষাতিসূক্ষ্ম বর্ণনা দিলেন। নরটন বদ্ধ পাগল। পাখি দেখার আনন্দের থেকে শিকারে বেশি আনন্দ-বললেন বয়েড।

সেদিন আমরা ঘৃণাক্ষরেও ভাবতে পারিনি নরটনের এই পাখি দেখার আগামী দিনে এক মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকবে…..

.

০৮.

(ক)

পোয়ারো আশাবাদী হলে আমার চারপাশে নিরাশার একটা প্রাচীর গড়ে তুলেছে।

সহজাত উৎসাহে বলল, বন্ধু কোনো মেলা কী জলসা নয়। অথবা, কোনো শিকার খেলাও নয়। এভাবে অনেক কিছু আমাদের বুদ্ধি দিয়ে দেখতে হবে।এক্সকে দেখতে পাচ্ছ না বলে হয় তো তুমি ধৈৰ্য্য হারাচ্ছ। এক্স আমাদের চোখের সামনে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হল কে সেই : ব্যক্তি যে অনতিকালের মধ্যে এক্স এর শিকার হতে চলেছে? জানতে পারলে নিশ্চয় তাকে বাঁচাবার চেষ্টা করতাম। পোয়ারোর স্থৈর্য দেখে বললাম, তোমার অনুশোচনা আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু আমরা এখনও অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াচ্ছি।

পোয়ারো হঠাৎ বলল, বলতে পারো কে খুন হতে পারে?

এ আবার কী প্রশ্ন? এ তো তুমি জানো।

পোয়ারো হঠাৎ ধমক দিয়ে বলে উঠল, এতদিন এসেছ এটা বুঝতে পারছ না?

তুমি এখনও জানালে না যে কে সেই এক্স…. কতদিন আর এরকমভাবে নাচাবে?

 বিরক্ত হয়ে পোয়ারো বলল, এক্স-এর মৌলিকত্ব তো ওখানেই, ও জানতে দেবে কেন, আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।

এক্স এর অতীত আলোচনা করলেও কী তা বুঝতে পারবে না?

অসম্ভব। প্রায় ভবিষ্যৎবাণীর মত পোয়ারো বলল, তুমি ভাববার অবকাশও পাবে না যে কখন হত্যা হবে।

মানে এই বাড়ির কেউ খুন হবে?

হা

তুমি তাকে চেনো না।

 যদি জানতাম তাহলে তোমাকে এখানে আনার প্রয়োজন কী ছিল?

তাহলে, তুমি শুধুমাত্র এক্স এর উপস্থিতি থেকে, খুন হতে যাচ্ছে ধরে নিচ্ছ?

পূর্বের পোয়ারো হলে রাগে ফেটে পড়ত, কিন্তু শারীরিক পঙ্গুতার কারণে তা দেখাতে পারছে না। শুধু বলল, হ্যাঁ। যদি দেখা যায় কোন দেশে যুদ্ধ বিশারদ সাংবাদিক বা কোনোদেশে বহু ডাক্তারের আবির্ভাব ঘটেছে, তাহলে ধরে নেওয়া হয় যে সেখানে হয় যুদ্ধ হবে নয় তো কোনো মেডিকেল কনফারেন্স হতে চলেছে। যেমনভাবে বোঝ শকুনির ঘোরা ফেরা দেখে প্রাণীর শবদেহের অবস্থানের কথা।

কিন্তু সাংবাদিকদের দলের উপস্থিতি দেখে একথা হলফ করে বলা যায় না যে, ওখানে যুদ্ধ হবে।

ঠিকই। কিন্তু হত্যাকারীর বেলায় এ ইঙ্গিত আশ্চর্যের নয়।

কিন্তু খুনী যে আরেকটা খুনের জন্যই আসবে তা না হতেও পারে। হয়তো অবকাশ জীবন যাপনের জন্য আসতে পারে। শারীরিক অসুস্থতার জন্য হয়তো পোয়ারোর এই আবোল তাবোল চিন্তা।

পোয়ারো কিন্তু অস্থির। ওসব বুজরুকি আমার সহ্য হয় না। মনে নেই সেই বিগত যুদ্ধে মিঃ অ্যাসকুইয়ের কীর্তি কাহিনী? আমি অবশ্য তোমাকে জোর দিয়ে বলিনি আমি কৃতকার্য হব বা খুনীকে খুঁজে বার করতে পারবই। কিন্তু চুপচাপ বসে থাকা আমার ধাতে সয় না। তোমার সামনের এই জোড়াজোড়া তাসগুলো দেখে বল, কোনো দল জিতবে।

কিন্তু পোয়ারো আমি যতক্ষণ না এক্স কে চিনতে পারছি

রাগে ফেটে পড়ল পোয়ারো সঙ্গে সঙ্গে, বোকা, গর্দভ কোথাকার! পোয়ারোর এই চিৎকারে কারটিস ঘরে এসে ঢুকল। কিন্তু কারটিস আসাতে ও সংযত হয়ে, ওকে হাত নেড়ে বাইরে যেতে বলল। পরে ক্ষোভকে চেপে রেখে বলল, তুমি নিজেকে বোকা ভাবলেও তা তুমি নও, বুদ্ধি খরচ কর। এক্স কে না চিনলেও সব ঘটনা শোনার পর নিশ্চয়ই তার কলাকৌশল কিছু ধাতস্থ করতে পেরেছো?

হতে পারে।

হতে পারে নয়–নিশ্চয়ই বুঝেছো। মনের অলস প্রকৃতির জন্য তুমি খেলতে ভালোবাসলেও বুদ্ধি খরচ করো না। আমি বলতে চাই যে যখন সে তার উদ্দেশ্য সিদ্ধ করবে, তখন এমন একটা পরিবেশ, বা পরিস্থিতি তৈরি করবে যাতে সে হত্যা করেনি করতে পারে না, তার মনে হবে বুঝি সেই এই গর্হিত কাজটি করে ফেলেছে, মাথায় ঢুকছে?

সত্যিই এদিকটাতো ভাবিনি। সত্যি তোমার তুলনা হয় না পোয়ারো।

তবুও পোয়ারোর মন পাওয়া গেল না। শুধু বলল, কেন যে ঈশ্বর আমার পা দুটো অকেজো করে দিলে? কারটিসকে পাঠিয়ে দাও। তুমি নিজে কিছু করবে না শুধু কে কি করছে, বলছে চোখ-কান সজাগ রেখে দেখে-শুনে যাবে। গোপনে অন্যের দরজায় চোখ রেখো।

আতে ঘা লাগল। সব কিছু বললে করতে পারব, কিন্তু কারোর দরজায় চাবির ফুটোয় চোখ রাখতে পারব না।

ওহঃ, ভুলে গিয়েছিলাম তুমি এক ইংরেজ ভদ্রলোক। যতটুকু পারো তাহলে তাই কারো, একজন অথর্ব পঙ্গু বৃদ্ধ আর কি এর থেকে বেশি আশা করতে পারে।

.

(খ)

পরদিন একটা বুদ্ধি এল মাথায়। ওর ঘরে গিয়ে বললাম, সারা রাত কাল তোমার কথাগুলো ভেবেছি। আমি তোমার মত গুণসম্পন্ন নই। সিণ্ডারস মারা যাবার পর সব বুদ্ধি সুদ্ধি যেন লোপ পেয়েছে, আমার কথাগুলো পোয়ারো মনে হল খুব সহানুভূতির সঙ্গে শুনছে।

সাহস পেয়ে বললাম, আমাদের সাহায্য করার জন্য এখন একজন করিতকর্মা লোক চাই। বুদ্ধি, প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা সবই আছে–বয়েড ক্যারিংটন। বিশ্বাস করে ওকে নিলে মনে হয় কাজ হবে।

হঠাৎ চমকে উঠে বলল, না কখনো না।

কেন নয় পোয়ারো?

না। এসব আবদার আমার কাছে আর কোনোদিন করো না। কতটুকু জানো ঐ ভদ্রলোককে? তোমার যেটুকু আছে ওর তার কণামাত্র নেই।

হে বন্ধু ভুলে যেও না আমি এখনও বেঁচে আছি, যদিও পঙ্গু। পোয়ারোর শেষ কথাটা আমার মনে ব্যথার ঝড় তুলল। চোখের কোণে জল টলমল করে নড়ে পড়ার আগেই ছুটে পালালাম।

.

 (গ)

ভারাক্রান্ত হৃদয়ে পোড়োবাড়ির শেষ প্রান্তের বেঞ্চটাতে বসে পড়লাম। নির্জন হলেও শহরটি ভোরের আলোয় মনোরম। মনটা যেন বাতাসে ক্রমশ ভেসে যেতে লাগল…

এই স্টাইলসেই কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করার এক স্পষ্ট পরিকল্পনা আছে। কিন্তু কে সে? সে কাকে খুন করবে? মিঃ লাটরেল… তবে কি নিজে। স্ত্রীর হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য?….

নাহ। সেরকমভাবে কাউকে কাউকে চিনি না। যেমন মিসেস নরটন।-এদের কি মোটিভ থাকতে পারে হত্যার? অর্থ? এখানে প্রভূত অর্থের বয়েড ক্যারিংটন, যদি ক্যারিংটনই হয় হত্যাকারীর উদ্দেশ্য? আর তাহলে ফ্রাঙ্কলিন কি সেই সম্ভাব্য খুনী? তাছাড়া যদি মিস কেলি বা নরটন, ক্যারিংটনের দূর সম্পর্কের কোনো আত্মীয় হন, তাহলে ওকে পৃথিবী থেকে সরাবার কারণ আছে। কর্নেল লাটরেল ক্যারিংটনের বন্ধু। যদি কোনো উইল করার সম্ভাবনা থাকে তাহলে কর্নেল লাভবান হচ্ছে। এভাবে ভাবলে ক্যারিংটন খুনের একটা মোটিভ তৈরি হয়। আবার যদি কাল থেকে চলে আসা সেই ত্রিকোণ প্রেমের কথা মনে হয়। ফলে এখানে ফ্রাঙ্কলিনরা এসে পড়েন, মিসেস ফ্রাঙ্কলিন অসুস্থ, বিষ খাইয়ে তাকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিতে চায়, স্বয়ং মিঃ ফ্রাঙ্কলিন। মিঃ ফ্রাঙ্কলিনের সঙ্গে জুডিথের সম্পর্কের ছবিটা ভেসে উঠল। সুন্দরী সেক্রেটারী; এখানে পৃথিবী থেকে মিসেস ফ্রাঙ্কলিনকে সরিয়ে ফেলাটা স্বাভাবিক। কিন্তু এই সম্ভাবনার কথায় মনটা ভারাক্রান্ত হল। অবশ্য এলারটনকেও বাদ দেওয়া যায় না। কেউ তাকে হত্যা করতে চায়। হঠাৎ মনে হল যদি কোনো হত্যাকারী এখানে থেকে থাকে তবে এলারটনই তার লক্ষ্য, কেন এমন মনে হচ্ছে? তার হদিশ পোলাম না। মিস কেলি তরুণী না হলেও পুরুষের মাথা ঘুরিয়ে দিতে পারে। যদি মিস কেলি ও এলারটনের মাঝখানে জুডিথ কাঁটার মত এসে পড়ে, তাহলে তাদের মাখামাখিতে ঈর্ষণ নামক বস্তুটি তো থেকেই যায়। কিন্তু…যদি এলারটনই এক্স হয়?

প্রকৃতপক্ষে কোনো সমাধানেই আমি পৌঁছতে পারলাম না। হঠাৎ ঝোঁপের পাশে একটা শব্দে চটকা ভাঙে। পোয়ারোর কথা অনুযায়ী নিজেকে যথাসম্ভব লুকিয়ে রেখে ঝোঁপের আড়াল থেকে লক্ষ্য করলাম। ডঃ ফ্রাঙ্কলিন হেঁটে যাচ্ছে। দুহাত অ্যাপ্রনের পকেটে। চোখ মাটির দিকে। বিষাদগ্রস্ত চেহারা।

ফ্রাঙ্কলিনকে নিয়ে ব্যস্ত থাকাতে মিস কেলি কখন পিছন থেকে এসেছে বুঝতে পারিনি।

টের পেতেই ক্ষমা চেয়ে নিলাম, আমার কথায় উনি তেমন আমল দিলেন না। পুরোনো বাড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন, যেন ভিক্টোরিয়া আমলের স্থাপত্য শৈলী। কি সুন্দর!

তাকে ভালো করে জানার জন্য বললাম, বসুন না। বসে পড়ে বললেন, কী সুন্দর! কিন্তু যত্ন না নিলে যা হয়।

হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, এত কি ভাবছিলেন যে আমি এলাম টেরই পেলেন না? বললাম। মিঃ ফ্রাঙ্কলিনকে দেখছিলুম।

আমিও তাই ভেবেছি–কেন বলুন তো অত বিষণ্ণ দেখাচ্ছিল?

ঠিকই দেখেছেন।

না–মানে থতমত খেয়ে বললুম, হাজার হলেও কাজের মানুষ তো, তার এমন বিষণ্ণতা ঠিক যেন মানায় না।

হতে পারে। নিস্পৃহ কণ্ঠস্বর শোনা গেল মিস কেলির।

অর্থাৎ আপনিও বলছেন উনি অসুখী। যে যা চায় তা করতে না পারলে অসুখী হয়।

ঠিক বুঝলাম না আপনার কথা।

গত হেমন্তে মিঃ ফ্রাঙ্কলিন একটা গবেষণার সুযোগ পেয়েছিলেন কিন্তু স্ত্রীর জন্য তা করতে পারেননি। অসুস্থ স্ত্রী, স্বামী ছেড়ে থাকতে পারবে না। আর যদি যানও তবে এই সামান্য মাইনেয় তাদের চলবে না।

বুঝলুম, অসুস্থ অবস্থায় একা ফেলে যেতে পারেন না ডক্টর।

অসুস্থ! তার অসুস্থতা সম্পর্কে কতটুকু জানেন আপনি?

 সবটা জানি না। তবে দেখে মনে হয় তো তিনি অসুস্থ।

অদ্ভুত এক হেসে বললেন, এই অসুখ নিয়েই তিনি সুখী। চমকে উঠলাম, বুঝতে অসুবিধা হল না ডাক্তারের প্রতি তার সহানুভূতি রয়েছে।

বেশ কিছুক্ষণ আমরা নীরব। তারপর নিরবতা ভঙ্গ করে বললাম, মনে হয় দুর্বল, অসুস্থ স্ত্রীরা স্বাভাবিক কারণেই স্বার্থপর হয়ে পড়েন।

হ্যাঁ ঠিকই বলেছেন।

এটা কি মিসেস ফ্রাঙ্কলিনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য?

আসলে ব্যাপারটা কি জানেন, মিসেস ফ্রাঙ্কলিন সারা দিন বিছানায় শুয়ে থাকার মহিলা নন। তিনি নিজের খেয়ালখুশিতে চলতে ভালোবাসেন।

গম্ভীর ভাবে মিস কেলির কথায় ভাববার চেষ্টা করলুম ফ্রাঙ্কলিনদের পরিবারে জটিলতা আছে।

আপনি নিশ্চয় ডঃ ফ্রাঙ্কলিনকে ভালোবাসেন? কৌতূহলের সঙ্গে প্রশ্ন করলাম।

মোটেই না। এর আগে দু-একবার মাত্র দেখা হয়েছে ওদের সঙ্গে।

তখন নিশ্চয়ই মিঃ ফ্রাঙ্কলিন তার দুঃখের কথা বলেছেন?

কোনোদিন না। এসব কথা আমি আপনার মেয়ে জুডিথের কাছেই শুনেছি।

শুনেই বেদনায় ভরে ওঠে মনটা। ওর সব কথা অন্যের সঙ্গে, তবু পিতার সঙ্গে নয়। কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দেবার মত বলে গেলেন, আপনার মেয়ের তার মনিবের উপর যথেষ্ট আস্থা, বলতে গেলে উনি হাত। ও একদম মিসেস ফ্রাঙ্কলিনকে সহ্য করতে পারে না।

গভীর বেদনায় বলি, তাহলে আপনার মতে জুডিথ স্বার্থপর।

হুঁ, সে কথা বলতে পারেন। প্রকৃত অর্থে জুডিথ একজন দক্ষ বৈজ্ঞানিক। কাজেই মিসেস ফ্রাঙ্কলিন ওদের পথে বাধা স্বরূপ।

খারাপ বলেননি, আমি জুডিথকে জানি ভারী একগুঁয়ে। ভীষণ ঘর কুনো এই বয়সে। আমাদের যৌবনে আমরা অনেক হৈ হুল্লোড় করেছি তাই নয়?

ও সম্বন্ধে আমার কোনো সম্যকজ্ঞান নেই ঠান্ডা গলায় উত্তর দিল।

একটু অবাক হয়ে তাকালাম। হয়তো কোনো ক্ষত স্থানে আঘাত দিয়েছি। ও দশ বছরের ছোট হবে। আমরা সমসাময়িক নই। তাই আমার বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করলুম।

না, না, আপনি লজ্জিত বা কুণ্ঠিত হবেন না। আসলে আমার জীবনে কোনোদিন সে সময় আসেনি

দুঃখিত-মিস কেলি–আপনি বড্ড বেশি ছেলে মানুষ। ছাড়ুন তো ওসব কথা।

অন্যান্যদের সম্পর্কে একটু কিছু বলবেন। আসলে এখানকার কাউকে তো সেভাবে আমি চিনি না।

তা বটে। যদি লাটরেল পরিবারের কথা বলেন, তাহলে ওদের বহুদিন ধরে জানি, সদবংশ। সপরিবার। দুঃখের বিষয় শেষ পর্যন্ত ওদের অতিথিশালা খুলে বসতে হল। কর্নেল গোবেচারা নিরীহ লোক। সাংসারিক বিপর্যয়ে হয় তো মিসেস লাটরেল স্বামীকে পীড়ন করেন, এইরকম হয় বিপর্যয়ে পড়লে মেয়েদের।

মিঃ নরটন সম্পর্কে কিছু জানেন?

বেশি কিছু না। লাজুক স্বভাবের চমৎকার মানুষ। বেশিরভাগ সময় কেটেছে মায়ের হেফাজতে, তাই বোধহয় এমনটি হয়েছেন। সবকিছু খুঁটিয়ে দেখার অভ্যাস ওনার।

আপনি বোধহয় ঐ ফিল্ড গ্লাস থাকার জন্য একথা বলছেন।

না ঠিক সে কথা ভেবে বলিনি, যারা শান্ত প্রকৃতির, সংসার থেকে দূরে থাকতে চান, তারা মনে হয় এই ভাবেই নিজেদের ব্যস্ত রাখেন।

বুঝেছি।

এই হচ্ছে আমাদের জীবন ও ছোট জায়গার ইতিবৃত্ত। যেখানে অতি ভদ্র প্রকৃতির মানুষ অতিথিশালা চালায় সেখানে বোধহয় যত পঙ্গু, বৃদ্ধ এসে ভিড় করে। নতুন করে সে জায়গা সম্বন্ধে তার কী বলার আছে?

ওর কথায় শ্লেষ থাকলেও সত্য। পোয়ারোর, যার উপস্থিতি একদিন চাঞ্চল্যের ছিল, আজ তার আর কোনো মূল্য নেই, একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল।

মিস কেলি অবাক হয়ে বললেন, আপনার আবার কি হল?

বললাম, কিছু না, আপনার কথাগুলো ভাবছিলাম। শুনেছেন নিশ্চয় যৌবনে একবার এখানে এসেছিলাম। কিন্তু তার সঙ্গে এখনকার কোনো মিল নেই।

মিস কেলি নড়েচড়ে বসে বললেন, তখন নিশ্চয়ই সবাই সুখী ছিল, সুন্দর পরিবেশ ছিল?

যদিও এক এক সময় তাই মনে হয়। তবে মনে হয় কখনও কোনো অবস্থাতেই আমরা সুখী নই। এখন মনে হয় তখনও অনেকে অসুখী ছিলেন এখানে।

জুডিথ বোধহয় অসুখী নয়। ভালোই আছে–

কি জানি? উদাসীন ভাবে বলি, ক্যারিংটনের কথাই ধরুন না, কি একাকীত্মভাবে দিন কাটান।

মোটেই তা নয়। ফোঁস করে ওঠেন। তিনি অন্য জগতের মানুষ। বিত্তের মধ্যে মানুষ হয়েছেন। তিনি জীবনে অসুখী হতে পারেন না

আপনার কথা ঠিক বুঝলাম না।

 একটু ঝাজের সঙ্গে বললেন, জীবনে সুখ কাকে বলে জানি না। আমার দিকে দেখুন

 বুঝতে পারছি, আপনার কোথাও একটা ব্যথা আছে।

কোনো কথা না বলে আমার দিকে মিস কেলি তাকিয়ে রইলেন, তারপর চোয়াল চেপে বললেন, আপনি আমার সম্পর্কে কতটুকু জানেন?

না, মানে, আপনার নাম শুনেছি—

কেলি আমার পদবী নয়। তা কী জানেন? ওটা আমার মায়ের পদবী। আমি এখন এটাই ব্যবহার করি।

হকচকিয়ে উঠি, তাহলে এর আগে?

 আমার আসল পদবী হচ্ছে লিচফিল্ড।

লিচফিল্ড! চট করে ঘুরে বললুম, ম্যাথিউ লিচফিল্ড!

বিচলিত না হয়ে বললেন, জানেন দেখছি। আমার বাবা ছিলেন ভয়ঙ্কর স্বার্থপর। বহু অত্যাচার করতেন। সামান্যতম স্বাধীনতাও আমাদের ছিল না। বন্দীজীবন কাটিয়েছি, তারপর আমার বোন-কথা শেষ করতে পারলেন না। বেদনায় কণ্ঠ রুদ্ধ হল ওর।

বললুম, কষ্ট হচ্ছে আপনার, থাক ওসব কথা।

সকরুণ ধরা গলায় বলল, আমার বোন ম্যাগীকে যদি দেখতেন। কী যে হল তার। পুলিশের কাছে হঠাৎ ধরা দিল। আমি জানি একাজ ও করতে পারে না–ঝর ঝর করে কেঁদে ফেলল মিস কেলি।

ওর কাঁধে আলতো হাতের চাপ দিয়ে বললুম, শান্ত হোন মিস কেলি। আমি তো জানি, ও একাজ করেনি।

.

০৯.

তখন প্রায় ছ-টা। ঝোঁপের ওপাশ দিয়ে কর্নেল লাটরেল ধীরে ধীরে হেঁটে যাচ্ছেন। একহাতে বন্দুক ও অন্য হাতে দুটি গুলিবিদ্ধ বুনো পায়রা।

ডাক শুনে বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা দুজনে এখানে কি করছেন? এই পোড়ো বাড়ির সামনে আমরা কখন আসি না। কি জানি কখন ভেঙে পড়ে। এলিজাবেথ–আরে তোমার জামা কাপড় নোংরা হয়ে যাবে যে।

এলিজাবেথ কেলি হেসে বললেন, মিঃ হেস্টিংস এর জন্য ওনার রুমালটা নোংরা করেছেন।

খুব ভালো, খুব ভালো। বলেই চলতে আরম্ভ করলেন। আমরাও ওনার সঙ্গী হলাম। আপন মনে বলতে লাগলেন, এই বুনো পায়রাগুলো এমন নোংরা করে যে ঘর দোর, কী বলব।

আপনার বন্দুকের হাত বেশ ভালো বুঝলুম।

 কে বললে? বয়েড বুঝি।

চোখে কেমন দেখছেন আজকাল। কথার পিঠে কথা। যেন কিছু বলতেই হবে।

চোখে? মন্দ নয়। দূরের জিনিস ভালো দেখি কাছের জিনিস দেখতে চোখে চশমা লাগে। আজকের সন্ধ্যাটা বেশ ভালো লাগছে বলুন?

সত্যিই সুন্দর উত্তর করল মিস কেলি?

একমাত্র ভারতবর্ষেই এমন সন্ধ্যা দেখেছি, তারপর এই স্টাইলসে। চাকরার শেষে অবসর যাপনের জন্য এই রকম জায়গা বেশ ভালো। কি বলুন মিঃ হেস্টিংস।

উত্তর না দিয়ে মাথা নাড়লুম। বাড়ির কাছাকাছি এসে বয়েড ও ক্যারিংটনকে দেখতে পেলাম বারান্দায়। মিস কেলি পাশ কাটিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেল।

বারান্দায় বসে গল্প চলল বেশ কিছুক্ষণ। নরটন একসময় প্রস্তাব করল, যা গরম, একটু ঠান্ডা পানীয় পেলে মন্দ হত না।

এ আর বেশি কি আর, ব্যবস্থা করছি। সহানুভূতির সঙ্গে কর্নেল বলল।

আমরা ধন্যবাদ জানিয়ে ভেতরে গেলাম।

বারান্দার পাশেই ড্রয়িংরুমের ভেতর থেকে আলমারি খোলার শব্দ পেলাম। তার পরেই এক মেয়েলী কণ্ঠ, চিৎকার করে উঠল, এখানে কী করছ?

শুধু এটুকু শুনতে পেলাম, বা-বাইরে ওরা একটু ঠান্ডা পানীয়…।

মামার বাড়ি? এজন্য বলেছি তোমাকে দিয়ে এসব কাজ চলবে না।

না।

চোপ। এখানে দানছত্র খুলে বসেছি? হবে না। বোতলটা দাও বলছি।

কর্নেল নিচু গলায় কি বোঝাতে চাইল।

মিসেস লাটরেল ধমকানি দিল, পোয় থাকবে, না পোষায় চলে যাবে। সখের আবদার

আলমারিতে তেমনি আটকাবার শব্দ এল, তখন মিসেস লাটরেলের সোচ্চার উচ্ছ্বাস, যেমন কুকুর তেমনি মুগুর।

কর্নেলের সামান্য জোরালো প্রতিবাদ শোনা গেল, এ তোমার ভীষণ বাড়াবাড়ি ডেইজি, এতটা ভালো নয়।

বাড়াবাড়ি? এবাড়ি কে চালায়? তারপর আবার নিস্তব্ধতা। কিছু পরেই স্খলিত পায়ে কর্নেল বেরিয়ে এলেন। সামান্য সময়ের মধ্যে কী পরিবর্তন।

আমরা এমনভাবে তাকালুম যেন কিছুই শুনিনি।

কর্নেল অপ্রতিভের হাসি হেসে বলল, দেখলাম বোতলে আর তেমন হুইস্কি নেই।

 বললাম, ঠিক আছে, ঠিক আছে। এখন আর হুইস্কিতে প্রয়োজন নেই।

মিসেস লাটরেল হনহন করে ওপাশের দরজা দিয়ে বাগানে নেমে গেলেন। ওকে দেখে ঘেন্নায় ভেতরটা রিরি করে উঠল। এমন নিষ্ঠুর মহিলা আর দ্বিতীয় নেই।

কর্নেলের ঐ অস্বস্তিকর অবস্থাটা হাল্কা করার জন্য নরটন কথার ফুলঝুরি ফোঁটালো। নিজের কৈশোর। কর্নেলের বুনো পায়রা…ইত্যাদি অনেক কথা বলে গেল। মৃত্যু তার কাছে। বিশ্রী ব্যাপার তাই, লিকারে তার কোনো স্পৃহা নেই।

কর্নেলের বুকের ভার নামাতে ক্যারিংটনও যোগ দিল। তিনি বললেন, আমার এক আইরিশ বন্ধু ছিল। বেশ বেপরোয়া। একবার ছুটিতে আয়ারল্যাণ্ডে বেড়াতে গিয়েছিলাম। তাকে কেমন ছুটি কাটল জানতে চাইলে যে ঘটনা সে বলল, শুনবেন নাকি সেই ঘটনাটা?

আমরা সবাই বললাম, নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই, বয়েড বলল এটা ঠিক গল্প নয়, এক নিষ্ঠুর সত্য ঘটনা। অনেকে আছে যারা নির্দয়তার মধ্যে আনন্দ খুঁজে পায়। আমার বন্ধুটি তাদেরই একজন। শিকারে পারদর্শী। বন্দুকের হাত চমৎকার। তার এক ভাইও সে শিকারে গিয়েছিল। তার ভাই তার আগে আগে পথ পরিষ্কার করে চলে। হঠাৎ বন্ধুটি বলে যখন এগোতে এগোতে অনেকদূর চলে গেছে, তখন মনে হল জন্তু জানোয়ারের আর কী প্রয়োজন? সামনেই তো শিকার রয়েছে। যেই ভাবা অমনি কাজ। শুনেই হৃদকম্প হল। কিন্তু বন্ধুটি অমায়িকভাবে হেসে বলল কোনো বন্য প্রাণীর চেয়ে মানুষ শিকার অনেক আনন্দের। সে নিষ্কম্প চিত্তে গুলি চালাল। তাই তার প্রাণ নিয়ে পালাবার সময় পেল না। হঠাৎ থেমে গিয়ে লাফিয়ে উঠে বলল, কিছু মনে করবেন না, আমার কাজ আছে, এখন চলি বলেই অদৃশ্য হয়ে গেলেন।

আমরা নিশ্বাস ফেলার সময় পেলাম না। কি নাটকীয়তার মধ্যে একটি খুনের কাহিনী শুনিয়ে গেল।

নরটন বলল, কী ভয়ঙ্কর। ভাবতেই পারি না।

আমরা চুপ করেই রইলুম।

নরটন আবার বলল, কিছু মানুষ আছে যারা অনেক সুখ নিয়ে জন্মায়।

কার কথা বলছেন বয়েড না তার বন্ধুর?

আমি স্যার উইলিয়ামের কথাই বলছি। দূরে এক পায়রার শব্দ শুনেই কর্নেল বন্দুক তুলে নিলেন।

কিন্তু বন্দুক তাক করার আগেই ঝোঁপঝাড় কাঁপিয়ে পায়রাটা উড়ে গেল।

গোঁফ চুমরে বললেন, ব্যাটা খরগোস কচি ফুলের গাছের রস পেয়েছে। রোসো মজা দেখাচ্ছি। বলেই বন্দুক থেকে গুলি ছুঁড়লেন।

আর সঙ্গে সঙ্গে গুলির শব্দ বাতাসে মিলিয়ে যেতে না যেতেই এক নারী কণ্ঠের তীব্র আর্তনাদ শোনা গেল।

কর্নেল লতানো গাছের মত কেঁপে উঠলেন। বন্দুক হাত থেকে খসে পড়ল। এ যে ডেইজির কণ্ঠস্বর।

আমি আগেই ছুটে ঝোঁপের দিকে ছুটলুম, পেছনে নরটন। ঝোঁপ সরিয়ে দেখলুম– মিসেস লাটরেল উবু হয়েছিলেন। খরগোস ভেবে গুলি চালিয়ে দেন কর্নেল। জ্ঞান হারিয়েছেন মিসেস লাটরেল। নরটনকে বললাম শীঘ্র ডঃ ফ্রাঙ্কলিন অথবা নার্সকে ডাকুন

নরটন স্বগতোক্তি করল, উফ, এত রক্ত সহ্য করতে পারি না।

নার্স ক্লাভেন এলেন। ফ্রাঙ্কলিনও প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এলেন।

ক্লাভেন ও ফ্রাঙ্কলিন মিসেস লাটরেলকে কোল পাঁজা করে তার ঘরের দিকে ছুটে গেল। তার পর প্রাথমিক শুশ্রূষা সেরে ফোন করতে ছুটলেন। রিসিভার নামিয়ে বললেন, খুব অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন।

ছোট করে তাকে ঘটনাটা জানালুম। বললেন, দুর্ভাগ্য, ভয়টা কর্নেলকে নিয়ে, দুর্বল মানুষ, মনে হয় এখন স্ত্রীর চেয়ে স্বামীর দিকে বেশি নজর দিতে হবে।

কর্নেল একটা ছোট্ট বৈঠকখানায় বাচ্চার মতন ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আ-আমার ডেইজি ডেইজি।

ওঁনাকে সান্ত্বনা দিলাম। সব ঠিক হয়ে যাবে।

 আসলে অল্প আলোয় আমি মনে করেছিলাম খরগোস।

এতে ঘাবড়াবার কিছু নেই। ভুল মানুষ মাত্রেরই হয়। আপনার হার্ট দুর্বল অত ভেঙে পড়বেন না। ভালো হয় একটা ইনজেকশন নিয়ে নিন।

না, না, আমি বেশ সুস্থ আছি। ডেইজির কাছে যেতে পারি একবার?

ফ্রাঙ্কলিন বললেন, ঠিক এখন নয়, ক্লাভেন ওর কাছে আছে। ডঃ অলিভারকে ফোন করেছি, এখনই এসে পড়বেন।

ওদেরকে বৈঠকখানায় রেখেই চলে এলাম।

হঠাৎ কয়েকজন মেয়ে পুরুষের গলার শব্দে তাকিয়ে দেখি এলারটন ও জুডিথ নবদম্পতির মত গায়ে গা লাগিয়ে হাসতে হাসতে এগিয়ে আসছে। পূর্বের এই বিয়োগান্ত ঘটনার রেশ মাত্র ওদের মধ্যে নেই, অসহ্য। একটু ঝাঁঝালো কণ্ঠে জুডিথকে ডাকতেই দুজনে থমকে দাঁড়াল। সন্ধ্যার ঘটনাটা জানিয়ে ওদের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করতে লাগলাম।

জুডিথ সহজভাবেই বলল, কি সব যাচ্ছেতাই ঘটনা এখানে ঘটে।

এলারটন বিষোদগার করে বলল, যা প্রাপ্য বুড়ির তাই পেয়েছে। যেমন হিংসুটে তেমন বদ মেজাজী। যেকোনো স্বামীই একাজ করতে পারে। আপনি কি মনে করেন এটা বুড়োর ইচ্ছাকৃত?

ধমকের সুরে বলি, না, এটা নিছকই দুর্ঘটনা।

ধমক শুনে, গলা নামিয়ে এলারটন বলে, হয়তো ঠিক। তবে এইরকম দুর্ঘটনা মাঝে মাঝে সংসারে শান্তি আনে। এটা আপনি হয়তো মানবেন না। আর যদি কর্নেল ইচ্ছাকৃত এটা করেন, তাহলে আমি তাকে বাহবা দিই।

এ অন্যায়, প্রগলভতা, ও সব কিছু নয়।

এলারটন নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, যেহেতু আমরা সমস্ত ঘটনাটা কিভাবে ঘটেছে জানি না, তাই এখন কোনো সিদ্ধান্তে আসা যাবে না। দুটো ক্ষেত্রেই দুই ভদ্রলোক স্ত্রীর হাত থেকে মুক্তি পাবার জন্য এই ঘটনাটা ঘটিয়েছে। প্রথম ভদ্রলোক রিভলবার পরিষ্কার করতে উপরে আচমকা গুলি ছুঁড়ছেন, যা দুর্ঘটনা হলে আসলে খুন। দ্বিতীয় ভদ্রলোকটি আরো সরেস। খেলা খেলতে গিয়ে গুলি ফস্কে গেল। এদের দুজনের স্ত্রীরাই জীবন অতিষ্ট করে তুলেছিল।

কিন্তু কর্নেল সে ধাতের লোক নয়। এলারটন বলল, এরকম চিন্তা করা আপনার মত ভদ্রলোকের পক্ষে সম্ভব নয়। অথচ দিনরাত দেখছি শুনছি উনি স্ত্রীর হাতে নির্যাতিত হচ্ছেন। এ যে বিধাতার আশীবাদ নয় তার পক্ষে সেকথা কে বলতে পারে।

এদের সঙ্গে কথা বলতে প্রবৃত্তিতে বাধছিল। তবে ওর কথার মধ্যে যে সত্যি নিহিত নেই, তা নয়। সেটাই আমার বিভ্রান্তির কারণ হল।

ফেরার পথে আবার ক্যারিংটনের সঙ্গে দেখা হল। হঠাৎ জিজ্ঞেস করল, মিঃ হেস্টিংস, কি মনে হয় উনি কি অজ্ঞাতসারেই করেছেন?

শেষ পর্যন্ত আপনিও একথা বলছেন? অবাক হয়ে বললাম।

না, আসলে সেকথা বলতে চাইনি। আসলে মিসেস লাটরেলের বিশ্রী ব্যবহারের কথাও যে ভুলতে পারছি না।

এটা সত্য। কারণ সেদিন সামান্য হুইস্কি নিয়ে যা করলেন। অবশেষে বিদায় নিয়ে পোয়ারোর কাছে গেলাম। ওখানে গেলেই হয়তো শান্তি পাব।

হয়তো কারটিসের কাছে পোয়ারো সব কথা শুনেছে। একের পর সবার প্রতিক্রিয়া, চলন বলন সব বললাম।

পোয়ারো আমার কথাগুলো মন দিয়ে শুনল। ও কিছু বলার আগেই ক্লাভেন ঘরে ঢুকল।

 বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। ভেবেছিলাম ডঃ ফ্রাঙ্কলিন এখানে আছেন হয় তো, মিসেস লাটরেল এখন কিছুটা সুস্থ। কর্নেলের সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন। তিনি কোথায় জানেন মিঃ হেস্টিংস?

পোয়ারোকে জিজ্ঞেস করলাম, খুঁজে দেখব কিনা, ও নিঃশব্দে মাথা নাড়ল। ক্লাভেনকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে এলাম।

মিঃ লাটরেলকে দেখে বললাম, মিসেস লাটরেল এখন বেশ সুস্থ, আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন।

ওঃ, ডেইজি আমার সঙ্গে দেখা করতে চায়? মায়ের ডাক শুনে শিশু যেভাবে উৎফুল্ল হয়, সেভাবে কর্নেল আনন্দে বললেন, নিশ্চয়ই যাব। যেন হাতে স্বর্গ পেলেন। আপন মনে কি বলতে বলতে ছুটে গেলেন, ফলে মাঝে হোঁচট খেলেন। হাত বাড়িয়ে না ধরলেই পড়েই যেতেন। ডঃ ফ্রাঙ্কলিন ঠিকই বলেছেন, আঘাতটা শেলের মত বিঁধেছে। এতে সন্দেহ নেই।

কর্নেলকে একেবারে টেনেই আনতে হল আমাকে। ক্লাভেন সাদর আহবান জানাল, ভেতরে আসুন।

আমরা দুজনে খাটের পাশে এলুম পর্দা সরিয়ে। মিসেস লাটরেল সম্পূর্ণ সুস্থ নন, তবু স্বামীকে দেখে বিচলিত হলেন। এক হাতে ব্যাণ্ডেজ অন্য হাত বাড়িয়ে জর্জ–জর্জ?

ডেইজি, ডেইজি, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, যে তুমি সুস্থ হয়ে উঠেছে। আমায় ক্ষমা করো ডেইজি।

কর্নেলের আবেগ জড়ানো চোখের জল দেখে মনে হল এই নিরীহ মানুষটাকে সন্দেহ করতে যাচ্ছিলাম। কি অন্যায়! স্বস্তিতে বুক ভরে গেল, যেন বুকের ওপর থেকে বোঝাটা নেমে গেল।

বাইরের ঘড়ির ঢং ঢং শব্দে চমকে উঠলাম। পাঁচক ঠাকুর খাবারের ডাক দিল। কত সময় হু হু করে বেরিয়ে গেছে বুঝতে পারিনি।

যে যেমনভাবে ছিলাম ডাইনিং রুমে সেই পোষাকে দেখা হল। পোষাক পাল্টাবার কথা অবশ্য তেমন নেই। প্রথমবার দেখলাম মিসেস ফ্রাঙ্কলিন বেশ সেজেগুজে এসেছেন আজ। বেশ উৎফুল্ল দেখাচ্ছিল। কর্নেল আসেননি, স্বাভাবিক।

খেতে খেতে কেউ আজ বিশেষ কথা বলেনি। পরিস্থিতিটা পরিবেশের সঙ্গে বেশ পরিপাটি, মানানসই।

লনে এসে সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসলাম। শুধু জুডিথ ও এলারটনের জল খাওয়াটা আমাকে পীড়া দিল। অবাধ্য ছেলেমেয়েদের শাসনের হাতিয়ার এখনকার পিতা-মাতাদের নেই, হায় পিতা!

ফ্রাঙ্কলিন ও নটনের মধ্যে গ্রীষ্ম প্রধান দেশের রোগের ব্যাধি নিয়ে কথা হচ্ছিল। মিসেস ফ্রাঙ্কলিন ও বয়েড পাশাপাশি কিন্তু একটু দূরে।

এলিজাবেথ একটা বই-এর মাঝে এমনভাবে নিবিড় হয়েছিল যে কথা বলার সাহস পেলাম না।

একা তো আর বেশিক্ষণ বসে থাকা যায় না। অবশেষে পোয়ারোর কাছেই গেলাম। দেখা গেল পোয়ারো একা নয়, কর্নেলও আছে। কর্নেলের চেহারার কোনো উন্নতি হয়নি। এখনও বিবর্ণ, অনুতাপে দগ্ধ।

গভীর বেদনার সঙ্গে বলে গেল, ওকে আমি ভালোবেসে বিয়ে করেছি। যেমন সুন্দর দেখতে ছিল, স্বভাবটিও মিষ্টি মধুর। কী বলব মঁসিয়ে পোয়ারো। ওকে প্রথম যেদিন দেখেছিলাম সেদিন মনে হয়েছিল, এই সেই মেয়ে যাকে আমি দীর্ঘকাল খুঁজে বেড়াচ্ছি।

আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পোয়ারো ইশারায় বসতে বলল। কর্নেলের বক্তব্যের সঙ্গে আমার মনশ্চক্ষে যুবতী ডেইজি ও প্রৌঢ়া ডেইজির ছবি ভেসে উঠল। সত্যি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের কত পরিবর্তন হয়। কত ফারাক।

কর্নেল আমার অনেক আগে এসেছিল, মনে হয়, তাই আমার প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই প্রস্থান করল।

পোয়ারো আমার কাছে আবার সব পুঙ্খানুপুঙ্খ জানতে চাইল, বললাম। কিন্তু কোনো মন্তব্য করল না। ওর মুখের ভাব আমি কোনো কালই বুঝতে পারিনি। বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে পোয়ারো বলল, তাহলে তুমিও ভেবেছিলে, গুলি ছোঁড়াটা ইচ্ছাকৃত।

অকপটে স্বীকার করলুম, হ্যাঁ, সেজন্য ক্ষমা চাইতে আমার কোনো লজ্জা নেই।

এটাকি তোমার নিজের ধারণা না কেউ তোমার মনে ঢুকিয়ে দিয়েছে? জিজ্ঞেস করল পোয়ারো।

সে রকম কিছু নয়। তবে এলারটনও এই রকমই বলছিল। অবশ্য ওর মতন অসভ্য লোকের একথাটা বলা কিছু বিচিত্র নয়।

আর কেউ, পোয়ারোর টুকরো জেরা চলছে।

বয়েড ক্যারিংটন। তিনিও এইরকম কিছু বলেছিলেন।

পোয়ারো দীর্ঘশ্বাস ফেলল, ওহ, বয়েড ক্যারিংটন।

 হাজার হলেও ভদ্রলোক অভিজ্ঞ। মানুষের চরিত্র সম্পর্কে প্রচুর জ্ঞান। অনেক জানেন।

 স্বাভাবিক। পোয়ারো মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, ঘটনার সময় যদিও তিনি উপস্থিত ছিলেন না।

 হুঁ। শুধু ওরাই নন, আমারও যেন মনে হয়েছিল। অবশ্য এখন

ঠিক আছে। বারবার ক্ষমা চাইতে হবে না। এটা একটা ধারণা মাত্র, ওরকম পরিস্থিতিতে যে কেউ তাই করে থাকে।

মাঝে মাঝে গিয়ে তারিয়ে তারিয়ে আমাকে দেখতে লাগল। ঠিক বুঝতে পারি না ওর মনের কথা।

ইতস্ততঃ করে বললাম, হয়তো ঠিকই বলেছ, ও সব দেখে শুনে—

ঠিক। তোমার কোনো দোষ নেই। এরকম পরিস্থিতিতে ওরকম মনে হওয়াটা স্বাভাবিক।

পোয়ারোর ঘর থেকে ফিরে বিছানায় শুয়ে স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। ভাবলাম হায় বিবাহিত জীবন! কিন্তু পোয়ারো কী বলতে চায়? কিছুই তো বলল না। হঠাৎ মনে হল যদি মিসেস লাটরেল মারা যেতেন! তাহলে? কেঁপে উঠলাম পোয়ারোর সেই টুকরো খবরগুলোর মধ্যে এ ঘটনাটি অন্য রকম কিছু? বাইরে থেকে মনে হত মিঃ লাটরেল ওনার স্ত্রীকে খুন করেছেন, কিন্তু ইচ্ছাকৃত নয় বলে বিচারে শাস্তি হল না। নিছকই দুর্ঘটনা, ঘটনা প্রবাহই তার প্রমাণ দিত। তাহলে এটা পোয়ারোর বিচিত্র খুনের ঘটনাগুলোর মধ্যে নবসংযোজন হত।

সত্যিই তো, একটু বুদ্ধি খরচ করলে এরও ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। এ হত্যার নায়ক কর্নেল লাটরেল হলেও, আড়াল থেকে পোয়ারোর সেই এক্সই এই কাজ করেছে।

নাঃ কিন্তু যখন কর্নেল গুলি ছুঁড়েছেন আমি তো কাছেই ছিলাম। যদি না-নাঃ, তাহলে মিঃ লাটরেলের সঙ্গে সঙ্গেই কেউ তাক করে গুলি ছুঁড়েছে? প্রতিধ্বনি হ্যাঁ, এখন যেন মনে হচ্ছে একটি প্রতিধ্বনি শুনেছি আমি–

অসম্ভব। ফরেনসিক এক্সপার্টরা নিশ্চয়ই বার করবেন। পরবর্তী পর্যায়ে কি কি করা হয়েছে। পুলিশের দোষ নেই, কারণ আমরাই বলেছিলাম অজ্ঞানবশত হঠাৎ গুলি ছুঁড়েছেন, তাই বন্দুক সম্বন্ধে, খোঁজ খবর নেননি। কিন্তু মজার ব্যাপার এখানেই যে এ ব্যাপারটাতে কেন যে আমরা সবাই এত নিশ্চিত ছিলাম? পোয়ারোর সেবারের মত সেই ঘটনার সঙ্গে আর একটি হত্যা নিছক দুর্ঘটনা বলে যোগ করে দিয়েছি। হঠাৎ মনে হল পোয়ারো যেন আমার কর্ণকুহূরে বলে গেল, কেমন বন্ধু তোমার মস্তিষ্ক এবার সাবালক হয়ে উঠেছে…