১.৪ এবারডিন বাজার

এবারডিন বাজার থেকে যে রাস্তাটা পশ্চিম দিকে,গেছে, সেটা ধরে জিপ ছুটছিল। পাহাড়ি শহর। উঁচু-নিচু পথ। গাড়ি একবার টিলার মাথায় উঠছে, তার পরেই নেমে যাচ্ছে নিচে। চড়াই-উতরাইতে ওঠানামা করতে করতে নাচের তালে দৌড়াচ্ছে জিপটা।

বাজারের জমজমাট এলাকা ছাড়ানোর পর সব কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা। শহর এধারে তেমন দানা বাঁধেনি। দূরে দূরে ছাড়া ছাড়া দু’চারটে বাড়ি চোখে পড়ে। গাড়ি টিলার ওপর চড়লে দু’পাশে গাছ। সেখানে ঝোঁপঝাড়, বুনো গাছের জটলা। উতরাইতে নামলে কিন্তু দৃশ্যটা বদলে যাচ্ছে। এবার ডাইনে বাঁয়ে দুদিকেই সমতল জমিতে ধানের খেত।

রাস্তায় অনেকটা দূরে দূরে ল্যাম্পপোস্টের গায়ে মিটমিট করে দু-একটা বা জ্বলছে। • সেগুলো থাকা না-থাকা সমান। জোনাকির আলোও তার চেয়ে জোরালো। তবে পূর্ণিমার চাঁদ আকাশের অনেকটা উঁচুতে উঠে এসেছে। অঢেল জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ মাইল নিচের পৃথিবী।

জিপের পেছন দিকের সিটে পাশাপাশি বসেছিল বিনয় আর বিশ্বজিৎ। বেশ খানিকটা সময় চুপচাপ কেটেছে। অন্যমনস্কর মতো বাইরের দৃশ্যাবলি দেখছে বিনয়। নতুন একটা জায়গায় এলে সেখানকার সম্বন্ধে আগ্রহ থাকাটা স্বাভাবিক।

‘বিনয়বাবু-’

বিশ্বজিতের ডাক কানে আসতে মুখ ফিরিয়ে তাকায় বিনয়।–’কিছু বলবেন?’

‘হ্যাঁ। ‘রস’ আইল্যান্ডে উদ্বাস্তুরা নামার পর থেকে ওদের যেভাবে রিসিভ করা হয়েছে সেটা আপনার কেমন লাগল?’

‘চমৎকার।’ বিনয় বলতে লাগল, ‘সব চেয়ে আমার ভালো লেগেছে চিফ কমিশনারকে। আন্দামানের বিশিষ্ট বাঙালিরা। রিফিউজিদের ভরসা দেবার জন্য ছুটে যাবেন সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নন-বেঙ্গলি চিফ কমিশনার বাঙালি উদ্বাস্তুদের সম্বন্ধে এতটা সিমপ্যাথেটিক, ভাবতে পারিনি।’

চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে বিশ্বজিৎকে। তার মুখে বিচিত্র একটু হাসি ফুটে ওঠে। কী আছে সেই হাসিতে? ব্যঙ্গ? মজা? না তান্য কিছু?

কয়েক লহমা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে বিনয়। তারপর দ্বিধাগ্রস্তের মতো জিগ্যেস করে, হাসছেন যে?’

বিশ্বজিৎ বললেন, ‘লোকটার দুটো চেহারা আছে। একটা আপনি দেখেছেন।’

‘সেটা এত তাড়াতাড়ি কি বোঝা যাবে? সবে তো এলেন–’ বলতে বলতে থেমে গেলেন বিশ্বজিৎ। ধীরে ধীরে মুখটা ওধারের জানলার দিকে ফিরিয়ে আনমনা তাকিয়ে রইলেন।

বিনয় বুঝে নিল, এ নিয়ে আপাতত মুখ খুলবেন না বিশ্বজিৎ। তার মনে একটা ধন্দ ঢুকে গেল। চিফ কমিশনারকে যেটুকু দেখা গেছে তাতে বেশ ভালোই লেগেছে। অমায়িক, সহানুভূতিশীল। আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা কিন্তু লেশমাত্র অহমিকা নেই। এই সদয়, স্নিগ্ধ মুখের আড়ালে অন্য যে মুখটি লুকনো রয়েছে সেটা কেমন, অনুমান করতে চাইল বিনয়। কিন্তু বেশিক্ষণ নয়, চিফ কমিশনারের চিন্তাটা ঠেলে সরিয়ে দিয়ে ঝিনুকের মুখ চোখের সামনে ফুটে ওঠে। উদ্বাস্তুরা তাকে ছাড়তে চাইছিল না। তবু বিশ্বজিৎ তাকে যে একরকম টেনে নিয়েই তার বাংলোয় চলেছেন সেটা একদিক থেকে ভালোই হল। বিশ্বজিতের অ্যাটাচিতে উদ্বাস্তুদের নামের যে দীর্ঘ তালিকাটা রয়েছে সেটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে আজ রাতেই ঝিনুক কাদের সঙ্গে এসেছে, বার করা যাবে।

অনেকটা দৌড়ের পর একটা চৌমাথায় চলে এল বিনয়দের জিপ। কালীপদ গাড়িটা ঘুরিয়ে ডানপাশের রাস্তায় নিয়ে গেল। মোড়ের মুখেই বাঁ দিকে প্যাগোডা ধরনের বড় বিল্ডিং।

বিশ্বজিং ওধারের জানলা থেকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, ‘এটা ফুঙ্গি চাউং–বুদ্ধমন্দির। আর খানিকটা গেলেই আমার বাংলো।’

বিনয়ের মনে পড়ে গেল, ব্রহ্মদেশ ব্রিটিশ আমলে ছিল ভারতের একটি প্রদেশ। উনিশশো পঁয়ত্রিশ পর্যন্ত সেখান থেকে কয়েদিদের পাঠানো হত আন্দামানে। এদের বেশিরভাগই বৌদ্ধধর্মের উপাসক। খুব সম্ভব সেই কারণে এখানে ‘ফুঙ্গি চাউং’ গড়ে তোলা হয়েছে।

বুদ্ধমন্দির পেছনে ফেলে আরও দুতিনটে ছোট ছোট টিলা পেরিয়ে একটা অনেক উঁচু টিলার ঢালে চলে এল জিপ। নিচেই উপসাগর। বিনয় আন্দাজ করে নিল এটা সিসোস্ট্রেস বে। ‘রস’ আইল্যান্ডের দিক থেকে বেঁকে এধারে চলে এসেছে।

টিলার গায়ে বেশ কটা কাঠের বাংলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।

একটা দোতলা বাংলোর কমপাউন্ডের ভেতর জিপটা নিয়ে এসে থামিয়ে দিল কালীপদ।

বিশ্বজিৎ বললেন, ‘এই আমার আস্তানা। আসুন—’

দু’জনে নেমে পড়ল।

বাইরের দিকে ক’টা বাল জুলছিল। সেই আলোয় দেখা গেল, বাংলোর গ্রাউন্ড ফ্লোরে দু-তিনটে ঘর ছাড়া বাকি অংশটা ফাঁকা; সেখানে গাড়ি রাখার ব্যবস্থা।

একপাশ দিয়ে দোতলায় ওঠার সিঁড়ি। বিনয়কে সঙ্গে নিয়ে সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে বিশ্বজিৎ কালীপদকে বললেন, ‘আমার অ্যাটাচি আর বিনয়বাবুর সুটকেস-টুটকেস ওপরে নিয়ে আয়।‘

দোতলায় উঠলেই বড় একটা হল-ঘর। কাঠের ফ্লোরে জুটের কাপেট পাতা। তার একধারে দু’সেট বেতের সোফা, সেন্টার টেবিল। আরেক পাশে ডাইনিং টেবিল এবং অনেকগুলো চেয়ার। সিলিং থেকে চারটে ফ্যান ঝুলছে। দু’পাশের দেওয়ালে ল্যাম্পশেডের ভেতর জোরালো আলো জ্বলছিল। একপাশের দেওয়াল জুড়ে কাঁচের পাল্লা দেওয়া আলমারি। সেগুলো রকমারি বইয়ে ঠাসা। হলঘরটি ঘিরে চারটে বেডরুম, কিচেন ইত্যাদি।

বিনয়দের পায়ের আওয়াজে কিচেন আর বেডরুমগুলোর দিক থেকে তিনজন বেরিয়ে এল। বয়স কুড়ি থেকে চল্লিশ বিয়াল্লিশের মধ্যে। দেখেই বোঝা যায় কাজের লোক।

একটা সোফায় বিনয়কে বসিয়ে নিজে তার পাশে বসলেন বিশ্বজিৎ। বিনয়ের সঙ্গে তিনজনের পরিচয় করিয়ে দিলেন।—এঁর কথা তোমাদের বলেছি। যতদিন আন্দামানে আছেন, মাঝে মাঝে আমাদের এখানে এসে থাকবেন। পুবদিকের বড় ঘরটায় ওঁর জন্যে বিছানা-টিছানা করে রাখা হয়েছে তো?’

তিনজনই ঘাড় কাত করে-হয়েছে।

‘রান্নাটান্না?’

ওরা জানায়, তাও হয়ে গেছে।

বিনয় বুঝতে পারে, তাকে যে এখানে নিয়ে আসবেন তা আগেই ঠিক করে রেখেছিলেন বিশ্বজিৎ।

এবার কাজের লোকেদের নামগুলোও বিনয়কে জানিয়ে দেন বিশ্বজিৎ। সবচেয়ে কমবয়সি ছেলেটির নাম গোপাল, যার বয়স ত্রিশ-বত্রিশ সে কার্তিক আর বয়স্ক লোকটি হল ভুবন।

বিশ্বজিৎ ভুবনকে বললেন, ‘আমাদের জন্যে গরম চা নিয়ে এসো। আগুন আগুন। ঠান্ডা শরবত যেন না হয়ে যায়।’কার্তিককে বললেন, ‘জল গরম করে আমার আর বিনয়বাবুর ঘরের বাথরুমে দিয়ে আসবে। দেরি করো না।

কার্তিক আর ভুবন ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ঝটিতে দু’জনে ভেতর দিকে চলে যায়। নিশ্চয়ই কিচেনে। তবে গোপাল একধারে উদগ্রীব দাঁড়িয়ে থাকে, যদি তাকে কোনও ফরমাশ দেওয়া হয় তারই অপেক্ষায়।

বিনয়ের কৌতূহল হচ্ছিল। কাজের লোকেরা আছে ঠিকই, তবু বাংলোটা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা। একটু ইতস্তত করে জিগ্যেস করল, ‘আর কারওকে তো দেখছি না।’

ইঙ্গিতটা ধরতে পেরেছিলেন বিশ্বজিৎ। কয়েক পলক স্থির দৃষ্টিতে বিনয়ের দিকে তাকিয়ে থাকেন। তার চোখে কৌতুক ঝিলিক দিয়ে যায়। হঠাৎ শব্দ করে হেসে ওঠেন। স্বচ্ছ, নির্মল, প্রাণখোলা হাসি। হাসতে হাসতেই বলতে থাকেন, কী ভেবেছিলেন, গন্ডাখানেক আন্ডা বাচ্চা নিয়ে বেশ রসেবশে আছি? আমি একদম একা। চিরকুমার থাকব কি না, জানি না। তবে কোনও মহিলা নিয়ার ফিউচারে মিসেস রাহা হয়ে আমার লাইফে আবির্ভূত হবেন, এমন সম্ভাবনা আপাতত নেই। কাকা আছেন তার কথা আপনাকে বলেছি। তিনি কনফার্মড চিরকুমার। আন্দামানের দ্বীপে দ্বীপে ঘুরে বেড়ান। রিসেন্টলি রিফিউজিরা আসতে শুরু করেছে। তাদের সঙ্গেই ইদানীং বেশির ভাগ সময়টা কাটান। পোর্টব্লেয়ারে যখন আসেন, আমার কাছেই থাকেন।

ভুবন চা দিয়ে গেল। কাপ তুলে নিয়ে বিশ্বজিৎ বলতে লাগলেন, ‘অবশ্য আমার মা, দুই বোন আর এক ভাই কলকাতার বরানগরে থাকে। বছরে একবার এসে কয়েকদিন এখানে কাটিয়ে যায়। আমার বাবা নেই। এই যে বাংলোটা দেখছেন এটা পুরোপুরি ভৃত্যতান্ত্রিক। ভুবন, গোপাল, কার্তিক, আর কালীপদ দিনের পর দিন আমার সব ঝক্কি সামলায়।’

কালীপদ বিনয়ের মালপত্র আর বিশ্বজিতের অ্যাটাচিটা মাথায় কাঁধে চাপিয়ে সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠে এল। বিশ্বজিৎ তাকে বললেন, ‘বিনয়বাবুর জিনিসগুলো পূর্ব দিকের ঘরে রেখে অ্যাটাচিকেসটা আমার ঘরের আলমারিতে ঢুকিয়ে রাখবে।’

বিনয়ের বুকের ভেতর জোরালো কঁকুনি লাগে। বলতে যাচ্ছিল, ‘অ্যাটাচিটা এখানে থাক। রিফিউজিদের লিস্টটা দেখব’ কিন্তু বলা গেল না। ঝিনুকের জন্য সে কতটা ব্যগ্র হয়ে আছে, তার সঙ্গে ঝিনুকের সম্পর্কটা কী ধরনের সেসব বিশ্বজিৎকে জানানো যায়নি। মাত্র একদিনের পরিচয়ে জীবনের গোপন দহন কি খুলে মেলে দেখানো যায়? বিশ্বজিৎকে সে শুধু বলেছিল, ঝিনুক নামে একটি মেয়ের খোঁজ করছে। চেনাজানা কারও সম্বন্ধে জানতে চাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। সেটাকে খুব সম্ভব লঘুভাবেই নিয়েছেন বিশ্বজিৎ, তেমন গুরুত্ব দেননি। হয়তো ভেবেছেন, যখন হোক নামের তালিকা ঘেঁটে বিনয়কে বললেই হল। কিন্তু বিনয়ের এই সন্ধানের পেছনে কতখানি উৎকণ্ঠা, কতখানি ব্যাকুলতা আর আবেগ জড়িয়ে রয়েছে, তিনি বুঝবেন কী করে?

বিশ্বজিৎ এবার বললেন, ‘আমার কথা শোনালাম। জগদীশ কাকা লিখেছেন, লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তুর সঙ্গে ইস্ট পাকিস্তান থেকে আপনি ইন্ডিয়ায় চলে এসেছেন। ব্যস, এটুকুই। আপনার সম্বন্ধে, পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্বন্ধে খুব জানতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু রাত হয়েছে। তাছাড়া সারাদিনের স্ট্রেনে আপনি আমি দুজনেই ভীষণ টায়ার্ড। আজ থাক। পরে আপনার কথা শোনা যাবে।’

কার্তিক এসে খবর দিল বাথরুমে গরম জল দেওয়া হয়েছে।

.

খাওয়াদাওয়া চুকতে ঢুকতে বেশ রাত হয়ে গেল। বিনয়কে পুব দিকের ঘরে পৌঁছে দিয়ে দক্ষিণ দিকে নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লেন বিশ্বজিৎ।

বিনয়ের ঘরের মাঝখানে মস্ত খাট ছাড়াও রয়েছে আলমারি, ড্রেসিং টেবিল, আর্ম চেয়ার, মেঝেতে জুট কার্পেট ইত্যাদি। শিয়রের দিকে এবং ডানপাশে কাঠের দেওয়ালের গায়ে মস্ত জোড়া জানালা। পাল্লাগুলো খোলা।

ধবধবে নরম বিছানায় কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল বিনয়। দুই দেওয়ালে দুটো আলো জ্বলছিল; এক সময় নিভিয়ে দিয়ে শুয়েও পড়ে সে।

সাড়ে চার দিনের সমুদ্রযাত্রা, তার ভেতর পুরো একটা রাত সাইক্লোনের তুমুল তাণ্ডবের মধ্যে কেটেছে। আজ ‘রস’ আইল্যান্ডে নামার পর লহমার জন্যও বিশ্রাম হয়নি। কত মানুষ, কত রকমের ঘটনা, সারাক্ষণ হইচই। এসবের মধ্যে গা এলিয়ে জিরিয়ে নেবার মতো ফুরসত কোথায়?

সারা শরীরে অসীম ক্লান্তি। শোয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়ার কথা। কিন্তু ঘুম আসছে না। খানিকটা সময় এপাশ ওপাশ করে উঠে পড়ল বিনয়। বিছানা থেকে নেমে শিয়রের দিকের জানলার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। বাঁয়ে ঘন জঙ্গলে ঢাকা মাউন্ট হ্যারিয়েটের গায়ে সেই সাদা ক্রসটা চোখে পড়ছে। ডাইনে কোনাকুনি পাহাড়ের মাথায় সেলুলার জেল। সামনের দিকে সোজাসুজি যতদূর চোখ যায় উপসাগর–সিসোস্ট্রেস বে।

পোর্টব্লেয়ার এখন একেবারে নিঝুম। কীটপতঙ্গ, সরীসৃপ বা মানুষ, কেউ জেগে নেই। কিন্তু সমুদ্র বুঝিবা কখনও ঘুমায় না। বহুদুর থেকে জ্যোৎস্নার রুপোলি তবক-মোড়া ঢেউয়ের পর ঢেউ সশব্দে আছড়ে পড়ছে পাড়ে। অবিরল। ক্লান্তিহীন। আর আছে জোরালো হাওয়া; সমুদ্র ফুঁড়ে উঠে এসে শহরের বাড়িঘর, উঁচু উঁচু ঝাকড়া-মাথা মহা মহা বৃক্ষ নাস্তানাবুদ করে দিচ্ছে।

কোনও দিকে লক্ষ নেই বিনয়ের। সমস্ত কিছু ছাপিয়ে ঝিনুকের মুখ চরাচর জুড়ে চোখের সামনে ফুটে উঠছে। এক সপ্তাহ, দু’সপ্তাহ কি আরও বেশি, যতদিন, লাক, মধ্য আন্দামানে সে যাবেই। একবার যখন দেখা গেছে, খুঁজে তাকে বার করবেই। বুঝিয়ে দেবে অপমানে, অভিমানে ঝিনুক যে নিরুদ্দেশ হয়েছিল সেজন্য সে দায়ী নয়। ঝিনুকের মানসিক যাতনা, যাবতীয় ক্লেশ আর ক্ষোভ সে ঘুচিয়ে দেবে।

ভাবতে ভাবতে আচমকা মস্তিষ্কের গোপন কুঠুরি থেকে আরও ক’টি মুখ বেরিয়ে এল। আনন্দ সুনীতি হিরণ সুধা এবং– এবং ঝুমা।

কী আশ্চর্য, খিদিরপুর ডকে একটি তরুণীর মুখে ঝিনুকের আদলটি দেখে সে উদ্ভ্রান্তের মতো জাহাজের খোলে সাড়ে চার দিন তাকে খুঁজে বেড়িয়েছে। ‘রস’ আইল্যান্ডে নামার পরও সেই সন্ধানে ছেদ পড়েনি। পাঁচ দিনেরও বেশি সময় ঝিনুকের জন্য বুকের ভেতরটা এমনই উতরোল হয়ে আছে যে আর কারও কথা মনে পড়েনি; বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ভুলে গিয়েছিল বিনয়।

এক কুহেলিবিলীন সন্ধ্যায় ভবানীপুরের বাড়ি থেকে কারওকে কিছু না জানিয়ে সেই যে ঝিনুক চলে গিয়েছিল তারপর ক’টা মাস কীভাবে যে কেটেছে, বিনয়ই শুধু জানে। কেউ যেন তাকে অপার শূন্যতায় ছুঁড়ে দিয়েছিল। প্রতি মুহূর্তে মনে হত কারা বুঝি বুকে অবিরাম শেল বিধিয়ে চলেছে। বেঁচে থাকার কোনও মানে হয় না।

কিন্তু সময় এক অলৌকিক জাদুকর। ধীরে ধীরে তার সব দুঃখ, সব আকুলতা কখন যে হরণ করে নিতে শুরু করেছিল, টের পায়নি বিনয়। বাকি যেটুকু ছিল তা প্রায় মুছে দিয়েছে ঝুমা। এই এক পরমাশ্চর্য মেয়ে। বেপরোয়া, দুঃসাহসী। যে কোনও যুবককে আচ্ছন্ন করার মতো ম্যাজিক তার হাতে আছে। তাই বলে ঝিনুকের কাছ থেকে বিনয়কে ছিনিয়ে নেবার চেষ্টা সে করেনি। বরং চিরদুঃখী, ধর্ষিত মেয়েটার জন্য তার বুকের ভেতর ছিল অফুরান সহানুভূতি।

কিন্তু ঝিনুক নিঃশব্দে নিখোঁজ হবার পর জীবনের যে অংশটা ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল অপার মায়ায় আর মাধুর্যে তা ক্রমশ ভরে দিয়েছে ঝুমা। নিয়তিতাড়িতের মতো তার কাছে না গিয়ে যেন উপায় ছিল না বিনয়ের।

আন্দামানে আসার আগে যখন বিনয় কুমার সঙ্গে দেখা করতে যায় সে বলেছিল, রোজ না হলেও দু’তিন দিন পর পর বিনয় যেন চিঠি লেখে। ঝুমা তার জন্য অনন্ত আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে আছে।

জীবনের লকূল পাওয়া ভার। সময়ের পাকে পাকে কত অজানা রহস্য যে লুকিয়ে থাকে; আচমকা বেরিয়ে এসে ভবিষ্যতের সমস্ত পরিকল্পনা আর স্বপ্ন তছনছ করে দেয়। কে জানত আন্দামানের জাহাজে আবার ঝিনুকের সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে?

আচমকা ঝুমা এবং ঝিনুক চোখের সামনে থেকে সরে যায়। অপার্থিব কোনও দর্পণে নিজের চেহারাটা দেখতে পায় বিনয়। প্রতিবিম্ব আঙুল তুলে তীব্র শ্লেষের সুরে বলে, বাহ্ বাহ্, চমৎকার। যেই ঝিনুক নিরুদ্দেশ হল, অমনি ঝুমার দিকে ঢলে পড়লে। যে নারী কৈশোরের শুরু থেকে তোমার খাসবায়ুতে জড়িয়ে আছে তার স্মৃতি নিয়ে দিন কাটিয়ে দেওয়া যেত না? একটাই তো জীবন। হাতে কত কাজ তোমার। দেখতে দেখতে সময় কেটে যেত।

আয়নার ছায়া আরও বলে, তুমি একটা নোংরা, হীন মানুষ। সংযম নেই, একাগ্রতা নেই, নিষ্ঠা নেই। যেই ঝিনুকের সঙ্গে দেখা হল অমনি তার জন্য উতলা হয়ে উঠেছ। দুই যুবতাঁকে দুই আঙুলের ডগায় দাঁড় করিয়ে এখন কী খেলা খেলতে চাও? বিশ্বাসঘাতক। একসঙ্গে দুটি মেয়ের সঙ্গে প্রবঞ্চনাকরতে তোমার আটকাবে না? মধ্য আন্দামানে যদি ঝিনুকের সঙ্গে দেখা হয়, কী করবে তাকে নিয়ে? ওদিকে ঝুমার সঙ্গে তোমার যে সম্পর্কটা গড়ে উঠেছে তার কী হবে? কী তার ভবিষ্যৎ?

বিনয় আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিল না। মাথার ভেতরটা ঝিমঝিম করছে। স্নায়ুমণ্ডলী ছিঁড়ে ছিঁড়ে পড়ছে। এলোমেলো পা ফেলে, প্রায় টলতে টলতে এসে বিছানায় নিজের শরীরটাকে ছুঁড়ে দিল।

.

খুব ভোরে ওঠা বহুদিনের অভ্যাস বিনয়ের। আজ কিন্তু একটু দেরি হয়ে গেল। ঘুম ভাঙতে চোখে পড়ল, সিসোস্ট্রেস বে অনেক দূরে যেখানে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে তারও ওধারে জলতল থেকে যেন সূর্যটা আকাশের ঢাল বেয়ে বেশ খানিকটা ওপরে উঠে এসেছে।

সকালের লাল টকটকে সূর্য এখন রং পালটে সোনালি হতে শুরু করেছে। খোলা জানলা দিয়ে অঢেল রোদ এসে পড়েছে ঘরে।

কয়েক পলক বাইরে তাকিয়ে রইল বিনয়। কাল রাতে যেমনটা শুনেছিল আজও উপসাগর থেকে পাড়ে ঢেউ ভেঙে পড়ার শব্দ উঠে আসছে বিরামহীন। আকাশ জুড়ে ঝাঁকে ঝাকে উড়ছে সিগাল। এই সাগর পাখিদের নজর কিন্তু জলের দিকে। মাছের নড়াচড়া দেখলেই হেঁ দিয়ে পড়ছে। ধারালো ঠোঁট সামুদ্রিক কোনও মাছ গেঁথে ফের উঠে যাচ্ছে।

বেশিক্ষণ বসে থাকা গেল না। চকিতে মনে পড়ে গেল, সকালের দিকেই উদ্বাস্তুদের সঙ্গে নতুন সেটলমেন্টে যেতে হবে। ব্যস্তভাবে উঠে পড়ে বিনয়। আর কার্তিক তখনই এক বালতি গরম জল নিয়ে ঘরে এসে ঢুকল। বলল, ‘তাড়াতাড়ি চান করে নিন। সারের (স্যারের) চান হয়ে গেছে। আপনার জন্যি হল-এ বসে আচেন।‘ সার হলেন বিশ্বজিৎ রাহা।

বালতিটা লাগোয়া বাথরুমে নিয়ে চলে যাচ্ছিল কার্তিক, তাকে। থামিয়ে বিনয় জিগ্যেস করে, এখনও তো ঠান্ডা পড়েনি। কালও গরম জল দিয়েছিলে, আজও দিলে-’ বলতে বলতে থেমে যায়।

ইঙ্গিতটা ধরতে পেরেছিল কার্তিক। সে বুঝিয়ে দিল। বর্ষার জল পোর্টব্লেয়ারে ধরে রাখার ব্যবস্থা আছে। সারাবছর তা সাপ্লাই করা হয়। একে জমা জুল, তার ওপর এখানকার সামুদ্রিক নোনা বাতাস। শুধু জমানো জলে চান করলে শরীর খারাপ হবে। তার সঙ্গে গরম জল মিশিয়ে নিলে ভয় নেই।

মিনিট কুড়ির ভেতর শেভ করে, চান সেরে, পোশাক পালটে হল-ঘরে চলে এল বিনয়। আন্দামানের জাহাজে ওঠার আগে প্যান্ট শার্ট কিনেছিল। এখন তা-ই পরেছে সে।

একটা সোফায় বসে সেন্টার টেবিলের ওপর ঝুঁকে খুব মন দিয়ে একতাড়া কাগজ দেখছিলেন বিশ্বজিৎ। কাছাকাছি আসতেই বিনয় চিনতে পারল। কাল যে উদ্বাস্তুরা এসেছে কাগজগুলোতে তাদের নামটাম টাইপ করা রয়েছে। বিশ্বজিৎ তাহলে ঝিনুকের কথা ভুলে যাননি। সে কাদের সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের এই দ্বীপপুঞ্জে এসেছে, নিশ্চয়ই জেনে গেছেন তিনি। অফুরান আশায় আর উত্তেজনায় বুকের ভেতরটা দুলতে থাকে বিনয়ের।

পায়ের শব্দে মুখ তুলে তাকালেন বিশ্বজিৎ। বললেন, ‘বসুন—’

বিশ্বজিতের দিকে চোখ রেখে মুখোমুখি একটা সোফায় বসে পড়ল বিনয়।

বিশ্বজিৎ ধীরে ধীরে মাথাটা ডাইনে থেকে বাঁয়ে, বাঁয়ে থেকে ডাইনে হেলাতে হেলাতে বললেন, ‘নো স্যার, তাপসী লাহিড়ি বা ঝিনুক নামে কারওকে পাওয়া গেল না। আমি পুরো লিস্টটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছি। ওই নাম দু’টো কোত্থাও নেই।’

এক ফুঁয়ে সব আলো কেউ যেন নিভিয়ে দিয়েছে। চতুর্দিক থেকে অনন্ত হতাশা বিনয়কে ঘিরে ধরতে থাকে।

বিহুলের মতো সে বলে, ‘নেই? বিশ্বজিৎ কী ভেবে বললেন, আমার চোখে হয়তো এড়িয়ে গেছে। আপনি বরং একবার দেখুন।

কাঁপা হাতে বিশাল লিস্টটা তুলে নেয় বিনয়। দৃষ্টিশক্তিকে প্রখর করে রুদ্ধশ্বাসে প্রতিটি পাতা আঁতিপাঁতি খুঁজতে থাকে। নেই, নেই। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অন্য কোথাও ঝিনুক থাকতে পারে কিন্তু এই তালিকায় নেই।

খিদিরপুর ডকে আর রস আইল্যান্ডে আবছাভাবে একটি মেয়ের মুখে ঝিনুকের আর্দল চোখে পড়েছিল। পরে মনে হয়েছিল, সেটা হয়লে ভুল। কিন্তু ‘চলুঙ্গা’ জাহাজে তাকে স্পষ্ট দেখা গেছে। তখন বিকেল। পড়ন্ত বেলার অজস্র আলোয় ভরে ছিল সমস্ত চরাচর। তার ভেতর চোখের ভ্রম হয় কী করে? চকিতে বিদ্যুতাড়িত গতিতে একটা সংকেত বিনয়ের মাথার ভেতর খেলে যায়। যার সঙ্গে এসে থাক, ঝিনুক তাকে নিজের আসল নামটা নিশ্চয়ই জানায়নি। এ নিয়ে তার মনে এখন আর লেশমাত্র ধন্দ নেই৷ মিডল আন্দামানে গেলে সব সংশয়ের অবসান হবে। তার সংকল্প আরও দৃঢ় হয়। মধ্য আন্দামানে তাকে যেতে হবে। যেতেই হবে।

সেন্টার টেবিলে লিস্টটা নামিয়ে রাখে বিনয়। বিশ্বজিৎ তা লক্ষ করছিলেন। জিগ্যেস করলেন, ‘নিজের চোখে দেখবে তো?’

আস্তে মাথা নাড়ে বিনয়।–‘দেখলাম। নেই।‘ মনের ভেতর কোন গূঢ় ভাবনা চলছে সেটা আর জানায় না।

রান্নার লোকটি এসে বলে, ‘সার (স্যার), খাবার হয়ে গেল দেব?’

‘হ্যাঁ হ্যাঁ, দাও–’ বিশ্বজিৎ উঠে পড়লেন।–‘চলুন বিনয়বাবু—’

হল-ঘরের একধারে সমুদ্রের দিকের জানলার পাশে ডাই টেবিল। সেখানে গিয়ে বসতে না-বসতেই ভুবন দুজনকে বড় প্লেটে লুচি তরকারি বেগুনভাজা আর মিষ্টি দিয়ে গেল।

বিশ্বজিৎ বললেন, ‘পেট ভরে খেয়ে নিন। খাওয়া হতে বেরিয়ে পড়ব। জেফ্রি পয়েন্টে পৌঁছতে পৌঁছতে বিকেল হ যাবে। তার আগে খাবারদাবার কিন্তু মিলবে না।‘

বিনয় জিগ্যেস করল, ‘জেফ্রি পয়েন্টটা কোথায়?’

এখান থেকে অনেকটা দুরে। পঞ্চাশ বাহান্ন মাইল তো হবে সমুদ্রের একটা ‘বে’ আছে ওই দিকটায়। ওখানে রিফিউজিতে নতুন সেটলমেন্ট বসানো হচ্ছে।

‘ওখানে জঙ্গল নেই?’

বিশ্বজিৎ হাসলেন।–’আন্দামানে এমন কোনও জায়গা পাবেন না যেখানে জঙ্গল নেই। জেফ্রি পয়েন্টেও ডিপ ফরেস্ট। গেলে দেখতে পাবেন।’

গভীর জঙ্গলে কীভাবে বসতি গড়ে উঠছে, ভেবে পেল না বিনয়। তবে এ নিয়ে সে আর কোনও প্রশ্ন করল না।

খাওয়া হয়ে গেলে কার্তিককে ডেকে বললেন, ‘এই স্যারে সঙ্গে ওঁর ঘরে যাও। ওঁর মালপত্র গোছগাছ করে কালীপ গাড়িতে রেখে আসবে।‘

কিছুক্ষণের মধ্যে বিনয়কে সঙ্গে নিয়ে নিচে নেমে এলেন বিশ্বজিৎ। জিপে স্টিয়ারিং ধরে বসে ছিল কালীপদ। গাড়িটা বেশ প্রশস্ত। সামনের দিকে ড্রাইভার ছাড়াও দু’জন বেশ আরাম করে বসতে পারে।

বিশ্বজিৎ তার ফ্রন্ট সিটেই উঠে বসল। বিনয়ের সুটকেস হোন্ড-অল পেছন দিকের সিটে রেখে গিয়েছিল কার্তিক।

কালীপদকে কিছু বলতে হল না। খুব সম্ভব তার জানা আছে, কোন দিকে যেতে হবে। স্টার্ট দিয়ে ঢাল বেয়ে খানিকটা নেমে ডানধারের রাস্তা ধরে জিপটাকে ছুটিয়ে নিয়ে চলল।

চড়াই উতরাই পেরিয়ে গাড়ি চলেছে তো চলেছেই। রাস্তার দু’ধারে কোথাও খাদ, কোথাও সমতল জমি। খাদে জঙ্গল মাথা তুলে আছে। কোথাও বা ধানের খেত। মাঝে মাঝে কাঠের বাড়ি, দু’চারটে দালান-কোঠা।

কাল রাত্তিরে ওই পথ দিয়েই বিশ্বজিতের বাংলোয় গিয়েছিল বিনয়। তখন পরিপূর্ণ চাঁদ আলো ঢেলে দিচ্ছিল নিচের পৃথিবীতে। সমস্ত কিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। এখন এই দিনের বেলাতেও রাস্তাঘাট এবং দুধারের দৃশ্যাবলি চিনতে অসুবিধা হল না। ছবির মতো সব মাথায় গাঁথা হয়ে গেছে।

ফুঙ্গি চাউং পার হয়ে জিপের মুখ ডান পাশের রাস্তার দিকে যখন কালীপদ ঘোরাচ্ছে রীতিমতো অবাকই হল বিনয়। কেননা, তাদের বাঁ দিকে যাবার কথা। সেখানে এবারডিন বাজারের লাগোয়া দু তিনটে বাড়িতে উদ্বাস্তুরা রয়েছে। বিনয় ভেবেছিল সকালে সেখানে যাবে তারা। তারপর উদ্বাস্তুদের সঙ্গে সেটলমেন্টের দিকে রওনা হবে।

গলার স্বর সামান্য উঁচুতে তুলে বিনয় বলল, ‘এ কী, আমরা এবারডিন মার্কেটে যাব না?’ বিশ্বজিৎ বললেন, ‘না।‘

‘তা হলে?’

 ‘আমরা সোজা পোর্টে যাচ্ছি।’

পোর্ট হল বন্দর। সেখানে কেন যেতে হবে বোঝা যাচ্ছে না। বিনয় বিমূঢ়ের মতো জিগ্যেস করল, ‘কিন্তু রিফিউজিরা?’

বিশ্বজিৎ বললেন, ‘বিভাসরা এতক্ষণে ওদের নিয়ে সেখানে পৌঁছে গেছে। পোর্ট থেকে আমরা একসঙ্গে সেটলমেন্টে যাব।’

জিপ মোড় ঘুরে ফের দৌড় শুরু করল। এতক্ষণ দু’পাশে ছাড়া ছাড়া কিছু বাংলো জাতীয় বাড়ি চোখে পড়ছিল। কোনওটাই কাছাকাছি নয়, একটার সঙ্গে অন্যটার দূরত্ব অনেকখানি।

ক্রমশ বাড়ির সংখ্যা বাড়ছে কাঠের বাড়ির চাইতে পাকা বিল্ডিং বেশি। একতল্ম, দোতলা, মাঝে মাঝে দু-একটা তেতলাও। বেশ কগ কাঠ চেরাইয়ের কারখানাও চোখে পড়ল। শহর এদিকটায় দস্তুর মতো জমজমাট। রাস্তায় প্রচুর লোকজন। জিপ, ভ্যান, কিছু প্রাইভেট কারও ব্যস্তভাবে পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে।

একেকটা এলাকা পেরিয়ে যেতে যেতে বিশ্বজিৎ বলে যাচ্ছেন, ‘এই জায়গাটা ভিলানিপুর, –এটা হল হ্যাডো–’ ইত্যাদি।

একসময় বিশ্বজিতের জিপ পোর্টে পৌঁছে গেল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *