১৩. অন্যান্যদেরও সারিয়ে তুলুন

১৩. অন্যান্যদেরও সারিয়ে তুলুন

দূর থেকে অচেনা একজন লোকের অসুস্থতা ধরতে পারা বিস্ময়কর একটা ব্যাপার, কিন্তু এখানেই আপনি থেমে যেতে চান না। যেসব শরীরে আপনি আপনার সচেতনতা প্রজেক্ট বা আরোপ করেন সে-সব শরীরের রোগ বা অসুস্থতা সারিয়ে তোলার প্রতিক্রিয়াও আপনি প্রয়োগ করবেন। ডাক্তার-কবিরাজ না হয়ে, কোনো রকম ওষুধপত্র ব্যবহার না করে সাধু-সন্ন্যাসী, পীর-ফকিররা তাঁদের অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার সাহায্যে রোগ বালাই সারিয়ে তুলতে পারলে, আপনি কেন পারবেন না! ব্যাপারটা চ্যালেঞ্জ বা তর্ক নয়, কারণ পারা যে যায় সেটা নিঃসন্দেহে প্রমাণ হয়েছে। সাধু-সন্ন্যাসী বা অন্যান্যদের অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা ব্যবহারে ভুল-ভ্রান্তি থেকে যাবার প্রচুর সম্ভাবনা আছে, কারণ এই ক্ষমতা অর্জন এবং ব্যবহার সম্পর্কে তাঁদের কোনো রকমের ট্রেনিং নেয়ার সুযোগ হয়নি। বোধহয় সেজন্যেই অভিযোগ শোনা যায়, অমুক লোককে ফকির বাবাজী চিকিৎসা করেছিল, কিন্তু রোগটা আরো বেড়ে গেল। এদের প্রতি কিছু লোকের যেমন ভক্তি আছে, তেমনি কিছু লোকের রয়েছে চরম অবিশ্বাস। অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করতে না জানার ফলে বা অপব্যবহার করায় ফলাফল সব সময় সবাইকে সন্তুষ্ট করতে পারে না, সেটাই এই অবিশ্বাসের কারণ।

আপনি পদ্ধতি এবং কৌশল শিখে রীতিমত চর্চার পর রোগ সারাবার কাজে হাত দেবেন, কাজে ভুল-ভ্রান্তির সম্ভাবনা নেই। এই সব পদ্ধতি এবং কৌশল সাধারণ মানুষের অলস মস্তিষ্ক থেকে আসেনি, এসেছে নিবেদিত প্রাণ গবেষকদের দীর্ঘকাল গবেষণার ফসল হিসেবে। এগুলোকে সঠিক এবং ত্রুটিহীন মনে না করার কোনো কারণ নেই।

একটা বিষয় পরিষ্কার, মনকে কোথাও বা কারো ভেতর ঢোকাবার ব্যাপারে এনার্জি বা শক্তির একটা ভূমিকা আছে। এই শক্তি চালিত হয় আমাদের মনের অভিপ্রায় বা সংকল্পের দ্বারা। মনের এই সংকল্প যদি বদলে দেয়া যায়, তাহলে শক্তির গতিবিধি এবং অর্জনও বদলে যাবে। মনের সংকল্প যদি তথ্য পাওয়া হয়, শক্তি তখন সেটা। সংগ্রহের জন্যে ছোটে। সেই রকম, মনের সংকল্প যদি রোগ-বালাই সারিয়ে তোলা হয়, শক্তিও তখন সেই কাজ সম্পাদন করার জন্যে উঠেপড়ে লাগে।

এখন কিভাবে এই শক্তির গলায় একটা লাগাম পরানো যায়, যাতে আপনি যা চান। তাই করিয়ে নেয়া যায় তাকে দিয়ে? সংকল্প একা, অনেকটা ইচ্ছাশক্তির মতো। একা শুধু ইচ্ছাশক্তিকে কোনো কাজে লাগিয়ে তেমন কোনো ফল পাওয়া যায় না। সেই রকম, শুধু সংকল্প দিয়ে কাজ হবে না। এর সাথে যোগ হওয়া চাই মনের পর্দায় চাক্ষুষ করা। মনের পর্দায় শুধু দেখে আপনি যেমন অসুস্থতা চিহ্নিত করতে পারেন, তেমনি ভাবে আপনি ওগুলোকে যে অবস্থায় দেখতে চান সেভাবে দেখবেন–সুস্থ অবস্থায়। এরই নাম সাইকিক হিলিং বা অতীন্দ্রিয় পদ্ধতিতে রোগ-নিরাময়। ব্যাপারটা এই রকমই সহজ, এর মধ্যে আর কোনো জটিলতা নেই।

বেশিরভাগ অসুস্থতা যেগুলো আপনি সারিয়ে তুলতে চাইবেন, তার জন্যে ল্যাবরেটরী পদ্ধতি বা কে নিয়ে কাজ করার পদ্ধতি শিখে আগে ওস্তাদ হয়ে ওঠার কোনো দরকার নেই। সমস্যা দূর করার জন্যে এর আগে আপনি মনের পর্দা ব্যবহার করেছেন, শুধু সেটা ব্যবহার করেও আপনি একজন সফল অতীন্দ্রিয় রোগ নিরাময়কারী হতে পারেন। আরো একটা অতি সহজ পদ্ধতি আছে, ইচ্ছে করলে সেটাও ব্যবহার করতে পারবেন। সেটা সম্পর্কে এই পরিচ্ছেদের শেষে বলবো আমরা। আসলে, আপনি যখন ধ্যান করা শেখা আর মনের পর্দায় ছবি দেখা শেখার প্রথম দিকে থাকবেন, তখনও অসুস্থতা সারানোর ক্ষেত্রে কিছু কিছু সফলতা দেখতে পাবেন।

জীবনের অনেক সম্ভাবনাই একটা বিপজ্জনক, অনিশ্চিত কিনারায় ভারসাম্য বজায় রেখে ঝুলছে। সামান্য একটু ধাক্কা দিয়ে পাকা ফলের মতো সম্ভাবনাটাকে নিজের দিকে ফেলতে পারেন আপনি। আবার কপাল খারাপ হলে এমনও হতে দেখা যায় যে ধাক্কাটা আগেই পড়েছে, কিন্তু উল্টো দিকে। ওটাকে আবার ফিরিয়ে আনতে হলে আপনাকে অর্জন করতে হবে আরো অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা। মন-নিয়ন্ত্রণ করতে যতোটা। দক্ষতা অর্জন করতে চান ততোটা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত যদি সাইকিক হিলিং শুরু করতে দ্বিধা থাকে, তাহলে শুধু অমূল্য সময়েরই অপচয় করা হবে। অনেকের অনেক সাহায্য দরকার, আপনি সাহায্য করতেও পারেন, তবু অপেক্ষা করবেন কেন?

এবার কিভাবে রোগ সারাতে হবে তার নিয়ম, ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করা হলো।

১। যার চিকিৎসা আপনি করতে চান, তার অবস্থা জানতে পারলে সুবিধে হয়, তবে জানতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। এটা আপনি অতীন্দ্রিয় উপায়েও জানতে পারেন, আবার বিটা লেভেলে থেকে অর্থাৎ জেগে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন উপায়ে জানতে পারেন।

২। নিজের ধ্যানের লেভেলে চলে যান, তারপর লোকটা যেমন তাকে ঠিক সেভাবে আপনার মনের পর্দায় নিয়ে আসুন, তার অসুস্থতা সহ। এরপর পর্দার বাঁ দিকে অন্য একটা ছবি আনুন, ওই লোকেরই, তবে এই ছবিতে আপনি দেখবেন তার অসুস্থতার জন্যে কিছু একটা নিরাময় ব্যবস্থা করা হয়েছে। (আপনি যদি লোকটার সাথে পরিচিত না হয়ে থাকেন, এবং যদি কেস নিয়ে কাজ করার জন্যে এখনো তৈরি না হয়ে থাকেন, তাহলে আগেই আপনাকে জেনে নিতে হবে লোকটা দেখতে কেমন, তা না হলে মনের পর্দায় তার ছবি পরিষ্কার ভাবে দেখতে পাবেন না।)

৩। এবার পর্দায় আনুন, আরো বাঁ দিকে, লোকটার সম্পূর্ণ সুস্থদেহের ছবি। আপনাকে দেখতে পেতে হবে, লোকটা প্রাণ চাঞ্চল্যে এবং আশাবাদে ভরপুর হয়ে। আছে। গভীর ধ্যানমগ্ন অবস্থায় নিজেকে বলা যে- কোনো কথা প্রচণ্ড ছাপ ফেলে মনে, কারণ তখন আপনার গ্রহণ ক্ষমতা সাংঘাতিক বেড়ে যায়। এই মুহূর্তটি আপনার জন্যে অত্যন্ত কঠিন। কারণ লোকটার অসুস্থতা যাই হোক, যতো গুরুতরই হোক, সে-কথা সম্পূর্ণ ভুলে গিয়ে দৃঢ় বিশ্বাস আনতে হবে, মনের পর্দায় লোকটার যে সুস্থদেহের ছবি দেখছেন আপনি, সেটাই একমাত্র সত্যি–ব্যাপারটা সত্যি হয়ে উঠছে বা সত্যি হয়ে উঠবে নয়, এখনই সত্যি। এর কারণ হলো, ধ্যানমগ্নতার এই স্তরে, আলফা আর থিটায়, আপনার মন যুক্তি, হেতু, আর কারণের সাথে যুক্ত রয়েছে–বিটা লেভেলে আপনার মন বেশিরভাগ যুক্ত থাকে ফলাফলের সাথে। আলফা আর থিটায় দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে পর্দায় ছবি দেখে আপনি আসলে যুক্তি, কারণ আর হেতু তৈরি করেছেন। যা হয়নি সেটাকে সংঘটিত হয়েছে ধরে নেয়ায়, আপনার হয়ত মনে হতে পারে, সময়ের স্বাভাবিক গতি বা নিয়ম লঙ্ঘন করা হলো। এই চিন্তাটাকে কোনো গুরুত্ব দেবেন না। এই লেভেলে সময় অন্য খাতে বয়। মনের পর্দায় চাক্ষুষ করুন যে ফলাফল আপনি চান। সেটা ইতিমধ্যেই অর্জিত হয়েছে।

.

নিশ্চয় করে বলা যায়, বিধাতার তৈরি শাসনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত আছে একটা মহাজাগতিক মানবাধিকার সনদ, যাতে গ্যারান্টি দিয়ে বলা হয়েছে, আমরা সবাই, ছোটো হই বড় হই, বোকা হই বা বুদ্ধিমান, দৃঢ় বাসনা, বিশ্বাস আর প্রত্যাশার মাধ্যমে মঙ্গলসূচক ঘটনা ঘটাবার কারণ সৃষ্টিতে অংশগ্রহণ করতে পারবো। এই কথা আগেও বলা হয়েছে, আরো ভালো ভাবে, প্রায় দু’হাজার বছর আগেঃ যে জিনিস তুমি কামনা করো, প্রার্থনার সময়, বিশ্বাস করো তা তুমি পাবে, এবং তা তুমি পাবে।–নিউ টেস্টামেন্ট।

লোকটাকে যখন মনের পর্দায় সুস্থ দেহে দেখছেন আপনি, এই সময় একটা মুহূর্ত আসবে, অত্যন্ত আনন্দময় মুহূর্ত হবে সেটা, তখন আপনি উপলব্ধি করবেন যা করার যথেষ্টই করেছেন। মুহূর্তটি আনন্দদায়ক হবে এই জন্যে যে ওটা আপনার সাফল্যের মুহূর্ত। এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত গুণে এবার উঠে আসুন বিটায়, অনুভব করুন সম্পূর্ণ সজাগ অবস্থায় জেগে আছেন, এবং আগের চেয়ে তাজা আর ঝরঝরে লাগছে।

এই পদ্ধতি যতোই ব্যবহার করবেন, ততোই চমৎকার সব ‘কাকতালীয় ঘটনা। ঘটবে, ততোই দৃঢ় হবে আপনার বিশ্বাস, যা এমনকি আরো চমৎকার কাকতালীয় ঘটনা প্রসব করবে। আপনি আপনার মনের পর্দা ব্যবহার করা শিখতে যা দেরি, তারপর থেকেই চেইন রিয়্যাকশনের মতো একের পর এক এই ঘটনা ঘটতে থাকবে।

সাইকিক আর ফেইথ হিলিঙের টেকনিক আলাদা বটে, কিন্তু দুটোরই মূল নীতি আর ফলাফল এক। ফেইথ হিলিঙের রীতি-নীতি এক এক ধর্মে এক এক রকম, কিন্তু মূল শর্ত মাত্র দুটোই–এক, পৌঁছতে হবে মনের গহনে। দুই, থাকতে হবে বাসনা, বিশ্বাস এবং প্রত্যাশা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *