০৮. কল্পনার শক্তি

০৮. কল্পনার শক্তি

ক্ষতিকর অভ্যাস থেকে মুক্ত হওয়ার সহজ একটা উপায় আছে সেটা হলো কল্পনা। কল্পনা খপ করে লক্ষ্যবস্তু ধরে ফেলে। যা চায় তাই পায় সে।

– কল্পনা আমাদের জন্যে একটা অত্যন্ত কাজের, দরকারী হাতিয়ার। এর কাছ থেকে উপকার পাবার কোনো শেষ সীমা নেই। সেজন্যেই এই বইয়ের প্রথম দিকে বার বার করে বলা হয়েছে, গভীর স্তরে পৌঁছে মনের পর্দায় জ্যান্ত ছবি দেখাটা আপনাকে ভালো করে শিখে নিতে হবে। আপনি যদি বিশ্বাস, বাসনা আর প্রত্যাশা দিয়ে কল্পনাকে উজ্জীবিত করতে পারেন, এবং উদ্দেশ্য আর লক্ষ্য চাক্ষুষ করার কাজে এমনভাবে ব্যবহার করতে পারেন, যার ফলে উদ্দেশ্য আর লক্ষ্যগুলো আপনি দেখতে, অনুভব করতে, শুনতে, স্বাদ নিতে এবং এমন কি প্রায় ছুতে পারবেন, তাহলে জীবনের কাছ থেকে কিছু চেয়ে আপনাকে কখনো নিরাশ হতে হবে না।

ড. কুয়ে বলেছেন, ‘ইচ্ছা শক্তি (Will Power) আর কল্পনার মধ্যে বিরোধ বাধলে কল্পনাই সব সময় জেতে।

যদি ভাবেন, একটা বদভ্যাস ত্যাগ করতে চান আপনি, সম্ভবত নিজের সাথে প্রতারণা করছেন। সত্যি যদি ওটা ছাড়তে চান, আপনা থেকেই আপনাকে ছেড়ে যাবে ওটা। আপনার আসলে চাওয়া উচিত বদভ্যাসটি ছাড়লে কি লাভ হবে, সেইটা। এই লাভটা যখন পাবার জন্যে অস্থির হয়ে উঠবেন, তখনই ছাড়তে পারবেন ক্ষতিকর অভ্যেস। লাভ পাবার জন্যে অস্থির হওয়া, এটা একটা শেখার বিষয়। লাভ পাবার জন্যে কিভাবে অস্থির হতে শিখতে হয় তা যখন জানা হয়ে যাবে আপনার, অবাঞ্ছিত অভ্যেস ছেড়ে দেয় তখন আর সমস্যা হবে না।

খারাপ অভ্যেস সম্পর্কে বেশি চিন্তা করা, ছেড়ে দেবো বলে বার বার প্রতিজ্ঞা করা, অনেক সময় এর ফল হয় উল্টো, অভ্যেসটা আরো শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে আপনাকে। ব্যাপারটা অনেকটা ঘুম আনার জন্যে অস্থির হয়ে ওঠার মতো, যতোই আপনি অস্থির হবেন ততোই আপনি জেগে থাকবেন, ঘুম আসতে চাইবে না।

এখন দেখা যাক এসব ব্যাপার আমরা নিজেদের কাজে কিভাবে ব্যবহার করতে পারি। এখানে আমরা দুটো অভ্যেস নিয়ে আলোচনা করবো। একটা হলো অতিভোজন, অপরটা ধূমপান।

আপনি যদি ওজন কমাতে চান, আপনার প্রথম কাজ হবে সমস্যাটাকে খতিয়ে পরীক্ষা করা। এই কাজ আপনি জেগে থাকা অবস্থায় অর্থাৎ বিটা লেভেলে করবেন।

আগে জানুন, আপনার সমস্যা অতিভোজন, নাকি ব্যায়ামের অভাব, নাকি দুটোই?

এমনও হতে পারে, অতিভোজন নয়, খাচ্ছেন আপনি পরিমাণ মতোই, কিন্তু খাচ্ছেন ভুল খাবার, সেটাই মেদ বাড়িয়ে তুলে সমস্যার সৃষ্টি করছে। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে কি কি খাবেন আর কি কি খাবেন না সেটা ঠিক করতে হবে আপনাকে, তাহলেই ওজন কমানো সম্ভব হয়ে উঠবে।

তারপর নিজেকে প্রশ্ন করুন, ওজন কমাতে চাইছেন কেন? আপনি কি এতোই মোটা যে আপনার স্বাস্থ্য বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে? এতোই মোটা যে বেচে থাকাটা কষ্টকর হয়ে উঠেছে? নাকি ভাবেন, আরো রোগা হতে পারলে আরো সুন্দর দেখাবে। নিজেকে? যেটাই হোক, ওজন কমাবার যুক্তি হিসেবে দুটোই শক্তিশালী।

আগে জানুন, ওজন কমিয়ে তা থেকে কি লাভ পেতে চান আপনি।

এমন হতে পারে, আপনি হয়তো পরিমিত খাওয়াদাওয়া করেন, যতটুকু দরকার ততোটুকু ব্যায়ামও করে চলেছেন নিয়মিত, এবং আপনার ওজনও খুব নয়, সামান্য বেশি। সেক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ হবে, ডাক্তার যদি আপত্তি না করেন, সামান্য এই বাড়তি ওজনটুকু নিয়েই আপনি সন্তুষ্ট থাকুন। শরীরের নিজস্ব নিয়ম-শৃঙ্খলা আছে, সেটা অকারণে ঘাঁটাঘাঁটি না করাই তো ভালো। তাছাড়া, জীবনে সমস্যা কি আর একটা? এরচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেগুলো, সেগুলো সমাধানের জন্যে ব্যবহার করুন এই বিদ্যা।

তবু যদি মনে করেন আপনার ওজন কমানো দরকার, এবং কারণটাও আপনার জানা থাকে, তাহলে আপনার পরবর্তী কাজ হবে ওজন কমাতে পারলে কি কি লাভ হবে তার একটা তালিকা তৈরি করা। ‘ দেখতে আমি আরো সুন্দর হবো, এই ধরনের লাভের কথা বলছি না। নিরেট কি লাভ হবে সেটা বিবেচনা করুন। সম্ভব হলে পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সাহায্য নিন। উদাহরণ থেকে নিয়মটা বুঝে নিন।

দর্শনঃ যখন রোগা ছিলেন তখনকার একটা ফটো বের করুন।

স্পর্শ : কল্পনা করুন, আবার যখন রোগা হবেন, আপনার হাত, উরু আর তলপেট চুলে কি রকম মসৃণ লাগবে।

স্বাদ : নতুন যে পথ্য গ্রহণ করতে হবে, সেগুলোর স্বাদ কল্পনা করুন। ঘ্রাণঃ যে খাবারগুলো খেতে হবে সেগুলোর ঘ্রাণ কল্পনা করুন।

শ্রবণ : আপনি যাদের মতামতের দাম দেন তারা আপনাকে রোগা হতে দেখে খুশি হয়ে কি বলবে সেটা কল্পনা করুন।

কিন্তু শুধু পাঁচটা ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে ছবি দেখাও যথেষ্ট নয়। সেই সাথে দরকার ভাবাবেগও।

কল্পনা করুন, মনের মতো রোগা হতে পারলে কি রকম খুশি লাগবে আপনার, আত্মবিশ্বাস কতোখানি বেড়ে যাবে।

এসব প্রয়োজনের কথা মনে রেখে, এবার আপনি নিজের লেভেলে চলে যান। পর্দা তৈরি করুন, সেই পর্দায় ফুটিয়ে তুলুন আপনার এখনকার চেহারা। ছবিটাকে ডানদিকে সরিয়ে পর্দা থেকে বের করে দিন, তারপর নতুন একটা ছবি আনুন বাঁ দিক থেকে। এই ছবিতে নিজেকে রোগ দেখুন, ঠিক যতোটা রোগা হতে চান। ইচ্ছে করলে পুরনো ফটোটাও দেখতে পারেন। এই ছবিটা দেখার সময় নিজেকে স্মরণ করিয়ে দেবেন, আপনি কি কি খাবার খেয়ে রোগা হতে চাইছেন।

আপনার নতুন চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকার সময় সমস্ত ছোটোখাটো ব্যাপার খুটিয়ে লক্ষ্য করুন। এই রকম রোগা হলে আপনার কেমন লাগবে, এক এক করে কল্পনা করুন। এই রকম রোগা হতে পারলে কি কি সুবিধে হবে, এক এক করে কল্পনা করুন। কল্পনা করুন, জুতোর ফিতে বাঁধার জন্যে ঝুঁকে পড়ার সময় কেমন লাগবে আপনার। সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় ওঠার সময়? এখন যে পোশাকগুলো ছোটো হয় সেগুলো পরলে?

সময় নিয়ে, তাড়াহুড়ো করবেন না, সুবিধে আর লাভগুলো অনুভব করুন। এক একবার এক একটি ইন্দ্রিয়ের সাহায্য নিন, ওপরে যে নিয়ম দেয়া হয়েছে।

এবার আপনার পথ্যগুলোকে পর্দায় নিয়ে এসে ভালো করে দেখুন আরেকবার। কি কি খাবেন শুধু তাই নয়, পরিমাণে কতোটা খাবেন তাও দেখুন। তারপর নিজেকে বলুন, এই খাবারগুলো এই পরিমাণেই আপনার শরীরের জন্যে দরকার, অন্য কোনো খাবার বা এর চেয়ে বেশি নয়। বলুন, অন্য কোনো খাবারের জন্যে আপনার লোভ জাগবে না।

ধ্যান করার এখানেই শেষ। দিনে দুবার চর্চা করলেই হবে।

বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় অন্য কোনো খাবারের চিন্তা বা ছবি যেন মনে না আসে, যেগুলো আপনার খাওয়া নিষেধ। এতোদিন ওগুলো যে বেশি খেয়েছেন তার কারণ আপনি ওগুলো পছন্দ করেন। কাজেই ওগুলোর কথা শুধু চিন্তা করলেই আপনার কল্পনা আজেবাজে দিকে ছুটে যেতে চাইতে পারে।

আসল কথা হলো হা-সূচক চিন্তা-ভাবনা। এতে যদি অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারেন, ওজন কমানো কোনো সমস্যা নয়। কি হারাবেন সেটা না ভেবে ভাবুন কি লাভ করবেন।

আরেকটা কথা। ওজন কমাবার প্রোগ্রাম যখন তৈরি করবেন, পরিষ্কার ধারণা। থাকতে হবে আপনার, ঠিক কতোটা ওজন কমাতে যাচ্ছেন আপনি। তা না হলে প্ল্যানটা বিশ্বাস্য বলে নাও মনে হতে পারে। আপনার বাড়তি ওজন যদি পঞ্চাশ পাউও হয়, তাহলে এক হপ্তার মধ্যে চলতি বছরের বিশ্ব সুন্দরী বা বাস্কেট বল খেলোয়াড় করিম আবদুল জব্বারের মতো হতে চাওয়াটা যুক্তিসঙ্গত হবে না। তা হতে চেয়ে মনের পর্দায় ছবি দেখলেও ফল হবে অশ্ব ডিম্ব।

প্রথম ক’দিন রসগোল্লা বা চর্বিযুক্ত মাংসের কথা বার বার ফিরে আসতে পারে মনে। পুরনো অভ্যেস, আপনি ছাড়তে চাইলেও, ওরা আপনাকে ছাড়তে চাইবে না সহজে। ওগুলোর কথা মনে পড়ে গেলে রসনা যদি লোলুপ হয়ে ওঠে, তখন কি করবেন? তখন হয়তো ধ্যানমগ্ন হওয়ার সুযোগ থাকবে না, কাজেই ওগুলোর প্রভাব থেকে মুক্ত হবার জন্যে অন্য উপায় ধরতে হবে আপনাকে।

বুক ভরে শ্বাস নিন। তিনটে আঙুল এক করুন। তারপর নিজেকে আগের কথা গুলোই বলুন, ধ্যানমগ্ন অবস্থায় যেগুলো বলেছিলেন। পথ্যগুলো কল্পনা করুন, তারপর বলুন, ‘শুধু এই খাবারগুলোই আমার শরীরের জন্যে দরকার। বলুন, ‘এগুলো ছাড়া অন্য কোনো খাবারের জন্যে আমার লোভ জাগবে না। এই সুযোগে আপনার রোগা পাতলা হ্যাঁণ্ড সাম ছবিটা একবার যদি দেখে নিতে পারেন, ভালো হয়।

মন-নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি চর্চা করলে সামগ্রিক ভাবে আপনার মানসিক অবস্থার উন্নতি হবে, তাতে করে বিশেষ কোনো চেষ্টা ছাড়াই নানা গুরুত্বপূর্ণ দিক থেকে আপনাআপনি উপকৃত হবে আপনার শরীর। তার ওপর যদি বিশেষ একটা সমস্যা সমাধানের ভ একটু চেষ্টা করেন, অতি চমৎকার সুফল ফলার সম্ভাবনা ষোলো আনা। ওজন কমায় জন্যে অস্থির হবার দরকার নেই, সহজ সরল ভাবে পদ্ধতি ধরে এগোন, সামগ্রিক মানসিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় আপনার শরীর নিজেই প্রয়োজনীয় ওজন কমাবার কাজে নেমে পড়বে।

ওপরে যে পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে তার নানা দিক আছে, সেগুলোও আপনি। ব্যবহার করতে পারেন। এই দিকগুলো আপনি দেখতে পাবেন ধ্যানমগ্ন অবস্থায়। একজন লোকের কথা বলি। সে শ্রমিক। আলফা লেভেলে পৌঁছে নিজেকে বলতো, ‘শুধু আমার শরীরের জন্যে ভালো খাবারগুলো খেতে চাইবে আমি, তাছাড়া আর কিছু খেতে ইচ্ছে করবে না আমার। ‘হঠাৎ করেই দেখা গেল মিষ্টি, আলু, মাংস, এরকম অনেক খাবারের প্রতি অরুচি এসে গেছে তার, বদলে ভালো লাগতে শুরু করেছে সবুজ শাকসজি। লোকটা চার মাসে চল্লিশ পাউণ্ড ওজন হারায় সামান্যতম অসুস্থ না হয়ে।

আরেক মহিলা, তিনিও এই একই টেকনিক ব্যবহার করেন। একদিন বাজার করতে গিয়ে এক বাক্স মিষ্টি কিনে নিয়ে এলেন। প্রত্যেকের জন্যে হিসেব করে কেনা, মাথা পিছু একটা করে। ছেলেমেয়েদের জন্যে তিনটে, মেহমানদের জন্যে পাঁচটা, স্বামীর জন্যে একটা, বাড়ির ঝি-র জন্যে একটা। তাঁর নিজের ভাষায়, ‘নিজের জন্যে কেনার কথা আমার মনেই পড়েনি! বাড়িতে এসে ব্যাপারটা উপলব্ধি করলাম। আনন্দে আমার কাঁদতে ইচ্ছে করলো।

একজন কৃষক, একশো পঞ্চাশ ডলার দিয়ে একটা স্যুট তৈরি করালো। মাপের চেয়ে অনেক ছোটো করে তৈরি করালো স্যুটটা। এতো ছোটো যে ট্রাউজারটা কোমর পর্যন্ত তুলতেই পারে না, বোতাম লাগাতে পারে না জ্যাকেটের। ‘ সেলসম্যান লোকটা আমাকে পাগল ভেবেছিল। কিন্তু পর্দা টেকনিক ব্যবহার করে চার মাসে পয়তাল্লিশ পাউণ্ড হালকা হই আমি। স্যুটটা এখন নিখুঁত ভাবে ফিট করে।

প্রতি ক্ষেত্রেই ফলাফল এতো সুন্দর হয় না। তা অবশ্য হবার কথাও নয়। ভালো ফল পাবার ব্যাপারটা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। একটা নিয়মের ভেতর থাকার জন্যে যেসব শর্ত মেনে চলা দরকার সবার পক্ষে সে-সব শর্ত মেনে চলা সম্ভব হয় না। আসল কথা হলো, চাওয়া। এই চাওয়া যদি দুর্বল হয়, ফলাফলও দুর্বল হতে বাধ্য।

প্রসঙ্গক্রমে এখানে ডেনভারের ক্যারোলিন ডি স্যাপ্তি আর জিম উইলিয়ামের একটা এক্সপেরিমেন্টের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।

ক্যারোলিন এক মাসের জন্যে একটা কর্ম-শিবিরের আয়োজন করেন। কথা ছিলো, পঁচিশ জন নারী-পুরুষ হপ্তায় একবার করে এক জায়গায় জড়ো হবে। এদের মধ্যে পনেরো জন প্রত্যেকটি অধিবেশনে উপস্থিত থাকলো, কিন্তু বাকি দশজন। অংশগ্রহণ করলো অনিয়মিত ভাবে। নিয়মিত পনেরো জনের গড় হিসেবে দেখা গেল, সোয়া চার পাউণ্ডের একটু বেশি করে ওজন কমেছে। প্রত্যেকেরই কমেছে ওজন। তবে অনিয়মিতদের কমেছে গড়ে মাত্র এক পাউণ্ড।

এক মাস পর, এদের পনেরোজনের খোঁজখবর নিতে গিয়ে ক্যারোলিন জানতে পারেন, সাতজন এখনো একটু একটু করে ওজন হারাচ্ছে, আটজন স্থির হয়ে আছে আগের জায়গায়। একজনেরও ওজন বাড়েনি। আর অনিয়মিত দশজনের আটজনই ফিরে গেছে আগের ওজনে।

.

ধূমপান একটা ভয়ঙ্কর বদভ্যাস। আপনি যদি ধূমপায়ী হন, প্রাক্তন-ধূমপায়ী হওয়ার জন্যে ধূমপান ছেড়ে দিতে শুরু করার এখনই সময়। ওজন কমাবার জন্যে আমরা যা করেছি, এক্ষেত্রেও ছোটো ছোটো সহজ নিয়ম ধরে এগোবো, যাতে মন থেকে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের নির্দেশ পেয়ে তা মেনে চলা শিখতে প্রচুর সময় পায় আমাদের শরীর।

কেন ছাড়বেন তাই নিয়ে বিটা লেভেলে যুক্তির অবতারণা করার কোনো দরকার নেই, ছাড়তে চাওয়ার কারণগুলো সবার কাছে অত্যন্ত স্পষ্ট। দরকার যেটা, কি কি লাভ হবে তার একটা তালিকা তৈরি করা। পরে এই লাভগুলো এতো পরিষ্কার, উজ্জ্বল ভাবে মনের পর্দায় দেখবেন যে নিজে থেকেই তখন ধূমপান ছাড়তে ইচ্ছে হবে।

নিজের লেভেলে চলে যান। দিনের যে সময়ে প্রথম সিগারেট ধরান সেই সময় এবং পরিবেশটা মনের পর্দায় দেখুন। নিজেকে পরিষ্কার ভাবে দেখতে পেতে হবে, আপনার শরীরের সমস্ত পেশী ঢিল হয়ে আছে, কোনো উত্তেজনায় ভুগছেন না। এই মুহূর্তটি থেকে পরবর্তী একটি ঘন্টা দেখতে হবে নিজেকে আপনার, এই সময় সাধারণত যা যা করে থাকেন আপনি সব করবেন, শুধু সিগারেট খাওয়া ছাড়া। সময়টা যদি সাড়ে সাতটা থেকে সাড়ে আটটা হয়, নিজেকে বলুন, এখন থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত আমি একজন প্রাক্তন-ধূমপায়ী হিসেবে থাকবো। প্রাক্তন- ধূমপায়ী হিসেবে এই একটা ঘন্টা উপভোগ করবো আমি। প্রাক্তন-ধূমপায়ী হিসেবে এই সময়টা কাটানো একেবারে সহজ, এতে আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি।

এই অনুশীলন চালিয়ে যেতে হবে আপনাকে যতদিন না বিটা লেভেলে ওই সময়টায় ধূমপান না করেও সম্পূর্ণ শান্ত এবং অনুত্তেজিত থাকতে পারেন। এই একই নিয়ম ধরে দ্বিতীয় ঘন্টার জন্যে সাজেশন দেবেন নিজেকে, তারপর তৃতীয় ঘন্টার জন্যে, এভাবে সময় বাড়াবেন। ধীরে-সুস্থে এগোনোই ভালো, তাড়াহুড়ো করলে আপনার শরীরের ওপর অত্যাচার করা হয়ে যাবে, যা তার প্রাপ্য নয়। কারণ, আপনার শরীর নয়, অভ্যেসটা আমদানী করেছিল আপনার মন। তাড়াবার কাজটা তাকেই করতে দিন। কল্পনার সাহায্য নিয়ে আপনার মনই পারবে অভ্যেসটাকে বিদায় করতে।

ধূমপানের অভিশাপ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্যে দু’একটা পরামর্শ।

১। ঘন ঘন ব্র্যাণ্ড বদল করুন।

২। দিনের যে সময়টায় আপনি প্রাক্তন-ধূমপায়ী নন, সিগারেট ধরাতে যাবার। আগে প্রতিবার নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘সত্যিই কি এটা এখন আমার দরকার আছে?’ বেশিরভাগ সময় উত্তর হবে, না। যতোক্ষণ না সত্যি ওটা দরকার হচ্ছে ততোক্ষণ। অপেক্ষা করুন।

৩। অভিশাপ মুক্ত সময়ে কখনো যদি ধূমপান করার প্রচণ্ড ইচ্ছা জাগে, যদি মনে। হয় এখন আপনার সিগারেট খাওয়া দরকার, বুক ভরে বাতাস নিন, তিন আঙুল এক করুন, এবং ধ্যানমগ্ন অবস্থায় যে শব্দ ব্যবহার করেছিলেন সেই একই শব্দ ব্যবহার। করে নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিন, ‘যাই ঘটুক না কেন, এই একঘন্টা আমি অধূমপায়ী থাকতে চাই, থাকতে পারবো।’

.

ধূমপান নিয়ন্ত্রণ করার আরো টেকনিক আছে, মূল পদ্ধতিটির সাথে সেগুলোও আপনি। ব্যবহার করতে পারেন। আট বছর ধরে দিনে দেড় প্যাকেট সিগারেট খেতো এক লোক, আলফা লেভেলে পৌঁছে মনের পর্দায় দেখলো, এতোদিন ধরে যতো সিগারেট খেয়েছে সব এক জায়গায় জড়ো করায় বিরাট এক তূপ তৈরি হয়েছে, সেই স্কুপে আগুন। ধরিয়ে দিলো সে।

এরপর সে মনের পর্দায় দেখলো, সিগারেট যদি না ছাড়ে তাহলে ভবিষ্যতে যতো সিগারেট খাবে সেগুলো এক জায়গায় জড়ো করায় আরো একটা বিরাট স্তূপ তৈরি হয়েছে, তাতেও আগুন ধরালো সে। এর আগেও এই লোক বেশ কয়েক বার সিগারেট ছেড়ে দিয়েছিল, কিন্তু এবার মাত্র একবার ধ্যানমগ্ন হয়ে সেই যে সিগারেট ছাড়লো, আর ধরেনি। ছেড়ে দেয়ার পর কোনো অসুবিধে হয়নি তার, কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ারও শিকার হয়নি।

নিয়মিত অনুশীলনের জন্যে এখানে কয়েকটা ফর্মুলা দেয়া হলো।

অভ্যাস নিয়ন্ত্ৰণঃ ভোজন (১)

আপনার বাড়তি ওজনের পরিমাণ যদি খুব বেশি হয়, এবং এই ওজন যদি কমাতে চান, তিন–এক পদ্ধতির সাহায্যে নিজের লেভেলে চলে যান, তারপর আপনার ওজন সমস্যাটা বিশ্লেষণ করুন। ধ্যানমগ্ন অবস্থায় চিন্তা করে বের করুন কোন ধরনের খাবার আপনার এই ওজন-সমস্যার জন্যে দায়ী। যে খাবারগুলো দায়ী বলে মনে হবে, প্রত্যেকটিকে মনের পর্দায় দেখুন, এক এক করে প্রত্যেকটির গায়ে বড় লাল অক্ষরে লিখুন–না।

অভ্যাস নিয়ন্ত্ৰণঃ ভোজন (২)

আপনি যদি ওজন বাড়াতে চান, যেসব খাবার খেলে ওজন বাড়ে সেগুলো বেশি করে খেতে অভ্যস্ত হোন। খাবারগুলো চিবিয়ে, ধীরে ধীরে খাবেন। যে-সব খাবার সামনে নিয়ে বসবেন সেগুলোর দিকে গভীর মনোযোগ থাকা চাই, যাতে স্বাদ এবং গন্ধ পুরোপুরি উপভোগ করা সম্ভব হয়ে ওঠে।

অভ্যাস নিয়ন্ত্ৰণঃ ধূমপান।

দিনের প্রথম সিগারেট যখন ধরান তখন সিগারেট না ধরিয়ে ধ্যানমগ্ন হোন, নিজেকে বলুন, প্রথম সিগারেটটা একঘন্টা পর ধরাবো। এইভাবে সময়টা একঘন্টা একঘন্টা করে বাড়াতে থাকুন, যতদিন না দিনে মাত্র দু’একটা সিগারেট খাওয়ার সময় পান হাতে। এভাবে যদি কমিয়ে আনতে পারেন, একেবারে ছেড়ে দেয়া তখন আর কোনো সমস্যা হবে না।

আপনি যাদের ভালোবাসেন তাদের মুখ চেয়ে সিগারেট ছেড়ে দেয়া উচিত।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *