০৬. স্বপ্নের দেশে

০৬. স্বপ্নের দেশে

সত্যিকার অর্থে মুক্ত যদি কখনো থাকি আমরা তো সে স্বপ্লে। সময়ের বেড়া, মহাশূন্যের সীমানা, যুক্তির গণ্ডি, বিবেকের বাধানিষেধ সব মিলিয়ে যায়, আমরা আমাদের নিজেদের সৃষ্টি অদ্ভুত এক জগতের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে পারি। স্বপ্নে আমরা যা তৈরি করি, তা একান্ত ভাবেই আমাদের। স্বপ্নকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিচার করেছেন। ফ্রয়েড। তিনি অনেকটা এই রকম বলেছেনঃ একজন লোকের স্বপ্নকে বোঝো, তাহলে লোকটাকেও বুঝতে পারবে।

মনের নিয়ন্ত্রণ শিখতে গিয়ে স্বপ্নকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিচ্ছি, কিন্তু আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি সম্পূর্ণ অন্য দিক থেকে, কারণ আমরা আমাদের মনটাকে সম্পূর্ণ অন্য এক ভাবে ব্যবহার করতে শিখছি। কোনো চেষ্টা ছাড়াই যে-স্বপ্ন দেখে মানুষ, ফ্রয়েড সে-ধরনের স্বপ্ন নিয়ে মাথা ঘামিয়েছেন। মনের নিয়ন্ত্রণ তাঁর গবেষণার বিষয়। ছিলো না। কিন্তু আমরা বিশেষ ধরনের কিছু সমস্যা সমাধানের জন্যে নিজেদের তৈরি। করা স্বপ্নকে ব্যবহার করতে চাইছি। স্বপ্নের বিষয়বস্তু কি হবে তা আমরা আগে থেকেই নির্ধারণ করে নেবো বলে, স্বপ্নের ব্যাখ্যাও আমরা করবো সম্পূর্ণ আলাদা এক নিয়মে, ফ্রয়েডীয় নিয়ম সেখানে কোনো কাজে আসবে না। নিজেদের তৈরি করা স্বপ্নের ব্যাখ্যা থেকে বেরিয়ে আসবে আমাদের সমস্যার সমাধান। এর ফলে যদিও চেষ্টা-ছাড়া-স্বপ্ন সংখ্যার দিক থেকে কমে যাবে, কিন্তু বিনিময়ে লাভ করবো অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটা স্বাধীনতা, সেই সাথে জীবনের ওপর আরো শক্ত এবং সুষ্ঠু হবে আমাদের নিয়ন্ত্রণ।

স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ করার তিনটে নিয়ম শিখবেন আপনি। প্রতিটি নিয়ম শেখার জন্যে, ধ্যানমগ্ন হতে হবে।

স্বপ্ন মনে করতে না পারা একটা সমস্যা, প্রায় সবারই এই সমস্যা আছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে কি স্বপ্ন দেখেছি তা আর মনে করতে পারি না। তাই কি করলে স্বপ্ন মনে। থাকবে সেটাই আগে শেখা যাক।

প্রায়ই অভিযোগ শোনা যায়, স্বপ্ন আমি একেবারেই দেখি না। কথাটা ঠিক নয়। স্বপ্ন আমরা সবাই দেখি, হয়ত মনে রাখতে পারি না। কোনো ভাবে যদি স্বপ্ন দেখা বন্ধ করে দেয়া যায়, কয়েক দিনের মধ্যেই আপনি মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতা হারিয়ে ফেলবেন।

তা স্বপ্ন সম্পর্কে হোসে সিলভার কিছু বক্তব্য আছে, প্রথমে তাঁর ভাষাতেই সেটা শোনা যাক।

উনিশ শো উনপঞ্চাশের দিকে যখন স্বপ্ন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলাম, আমার কোনো ধারণাই ছিলো না। শেষ পর্যন্ত কি আবিষ্কার করবো, বা কি ধরনের সিদ্ধান্তে পৌঁছুবো। স্বপ্নকে গঠনমূলক কাজে লাগানো যায় কিনা, সেটাই ছিলো আমার জানার আর গবেষণার বিষয়। স্বপ্নের বৈচিত্র্য সম্পর্কে অনেক গল্পই শোনা ছিলো আমার। সীজার, আমরা জানি, আশ্চর্য একটা অর্থপূর্ণ স্বপ্ন দেখেছিলেন পনেরোই মার্চ সম্পর্কে। স্বপ্নে সাবধান করে দেয়া হয়েছিলো তাঁকে। ওই তারিখেই নিহত হন তিনি। নিজের নিহত হওয়া সংক্রান্ত স্বপ্ন লিংকনও দেখেছিলেন। জানতাম, এই ধরনের স্বপ্ন যদি স্রেফ দুর্লভ অ্যাকসিডেন্ট হয়, তাহলে আমার পরিশ্রম বৃথাই যাবে।

এক সময় আমার দৃঢ় ধারণা হলো, আসলে আমি বৃথাই সময় নষ্ট করছি। দশ বছর ধরে ফ্রয়েড, অ্যাডলার আর ইয়াং-এর রচনা পড়ছিলাম–মনে হতে লাগলো। যতোই পড়ছি ততোই কম জানছি। একদিনের এক ঘটনা। রাত তখন দুটো। হাতের বইটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বিছানায় গিয়ে উঠলাম। ঠিক করলাম, অনেক হয়েছে, অ্যথা আর সময় নষ্ট করবো না। এসব বই আজেবাজে লোকেরা লেখেননি, এরা প্রত্যেকে এক একজন মহাপণ্ডিত। অথচ একটা বিষয়েও তাঁরা নিজেদের মধ্যে একমত হতে পারছেন না!

এর ঘন্টা দুয়েক পর একটা স্বপ্ন দেখে আমার ঘুম ভেঙে গেল। আর-সব স্বপ্নের মতো কয়েকটা ঘটনার সমষ্টি নয় ওটা, স্রেফ একটা আলো। আমি শুধু দুপুরবেলার প্রখর, সোনালি, উজ্জ্বল রোদ দেখতে পেলাম। চোখ খুললাম, ঘরটা অন্ধকার। চোখ বন্ধ করলাম, আবার সেই আলো। এভাবে কয়েক বার চোখ খুললাম আর বন্ধ করলাম। চোখ খুললে অন্ধকার, বন্ধ করলে আলো। তিন কি চার বার এই রকম করার পর আবার যখন চোখ বন্ধ করলাম, তিনটে সংখ্যা দেখতে পেলাম। ৩-৪-৩। তারপর আরেক প্রস্থ সংখ্যা দেখলাম ৩-৭-৩। পরের বার প্রথম সংখ্যা তিনটে ফিরে এলো, তারপর দ্বিতীয়। সংখ্যা তিনটে।

সংখ্যার চেয়ে আলোটাই আমাকে বেশি কৌতূহলী করে তুললো। ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে আসছিল ওটা। আমার ভয় হলো, এই আলো মিলিয়ে যাবার সাথে সাথে আমার জীবন-প্রদীপও নিভে যাবে। তারপর, সাহস হলো মনে, ভাবলাম, না, তা কেন হতে যাবে, মরবো কেন! যখন বুঝলাম, মরতে যাচ্ছি না, ইচ্ছে করলাম, উজ্জ্বল আলোটাকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে এসে ওটাকে ভালো করে লক্ষ্য করবো। নড়েচড়ে শুলাম, মনের আরো গভীর লেভেলে চলে গেলাম, কিন্তু কিছুতেই কোনো লাভ হলো না। আগের। মতোই ম্লান হতে থাকলো আলোটা। সব মিলিয়ে মিনিট পাঁচেক ছিলো, তারপর মিলিয়ে গেল।

‘ভাবলাম, কে জানে, সংখ্যাগুলোর হয়তো একটা মানে আছে। বাকি রাতটা জেগে টেলিফোন নাম্বার, ঠিকানা, লাইসেন্স নাম্বার মনে করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু স্বপ্নে দেখা ওই সংখ্যাগুলোর সাথে মিল আছে এমন কিছু মনে পড়লো না।

‘আজ স্বপ্নের ব্যাখ্যা বের করার অত্যন্ত ফলপ্রসূ একটা উপায় জানা আছে আমার, কিন্তু সে-সময় আমার গবেষণার একেবারে প্রথম দিকে ছিলাম আমি। সকাল বেলা খুব ক্লান্তি লাগলো, কারণ মাত্র দু’ঘন্টা ঘুমিয়েছি। বেলা বাড়তে লাগলো, কিন্তু সংখ্যা গুলোর কথা আমি ভুলতে পারলাম না। ভাবছি আর ভাবছি, আমার জীবনের কোনো কিছুর সাথে এগুলোর কোনো মিল আছে কিনা।

‘এবার তুচ্ছ কিছু ঘটনার কথা উল্লেখ না করলেই নয়। এই তুচ্ছ ঘটনাগুলোই আমার সেই স্বপ্ন-রহস্য ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করেছিল।

‘আমার ইলেকট্রনিকসের দোকান পনেরো মিনিট পর বন্ধ হয়ে যাবে, এই সময় এক বন্ধু এসে বললো, চলো, কফি খেয়ে আসা যাক। রাজি হয়ে বললাম, একটু অপেক্ষা করো। এই সময় দোকানে এলো আমার স্ত্রী। বললো, “কফিই যখন খাবে, মেক্সিকান সাইডের ওদিকে গিয়ে খাও, ফেরার সময় আমার জন্যে খানিকটা রাবিং অ্যালকোহল নিয়ে এসো।” ব্রিজের কাছে একটা দোকান ছিলো, যেখানে ওই অ্যালকোহল সস্তায় পাওয়া যেতো।

‘মেক্সিকান সাইডে যাবার পথে বন্ধুকে স্বপ্নের কথাটা বললাম। ওকে বলার সময় হঠাৎ একটা আইডিয়া এলো মাথায় হতে পারে স্বপ্নে দেখা ওই সংখ্যাগুলো আসলে কোনো লটারির নাম্বার। আমাদের গাড়ি একটা দোকান পেরিয়ে এলো, দোকানটায় মেক্সিকান লটারির টিকেট বিক্রি হয়। দোকান বন্ধের সময় হয়ে এসেছে। দরজার খানিকটা অংশ বন্ধ হয়ে গেছে, তাই আর গাড়ি থামালাম না। ভাবলাম, থাকগে! দরকার নেই লটারির টিকেট কিনে। এ-ধরনের ছেলেমানুষির কোনো অর্থ হয় না।

‘খানিক দূর এগিয়ে অ্যালকোহলের দোকানের সামনে গাড়ি থামালাম।

‘অ্যালকোহলের বোতলটা কাগজে মুড়ে দিচ্ছে দোকানদার, দোকানের আরেক অংশ থেকে বন্ধু আমাকে ডাকলো। জানতে চাইলো, “তুমি যেন কি সংখ্যা খুজছো হে?”

‘বললাম, “তিন-চার-তিন আর তিন-সাত–তিন।”

‘বন্ধু শো-কেস থেকে একটা টিকেটের অর্ধেক তুলে আমাকে দেখালো। দেখলাম, টিকেটের নম্বর ছাপা রয়েছে, তিন-চার-তিন।

‘রিপাবলিক অব মেক্সিকো জুড়ে হাজার হাজার দোকানদার প্রতি মাসে প্রথম তিনটে সংখ্যা বিশিষ্ট লটারির টিকেটের অর্ধেক অংশ পেয়ে থাকে। গোটা দেশের শুধু মাত্র এই দোকানেই ৩৪৩ নম্বর টিকেট বিক্রি হয়। ৩৭৩ নম্বর টিকেট বিক্রি হয় মেক্সিকো সিটিতে।

‘কয়েক হপ্তা পর আমি জানলাম, জীবনে প্রথম কেনা আমার টিকেটের প্রথম অর্ধেক অংশ দশ হাজার ডলারের একটা প্রাইজ পেয়েছে। টাকাটা আমার দরকার ছিলো, সন্দেহ নেই। কিন্তু যে ঘটনার মধ্যে দিয়ে লটারি জিতলাম, সেটা আমার কাছে টাকার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হলো। আমার প্রত্যয় দৃঢ় হলো, বছরের পর বছর ধরে এই যে লেখাপড়া আর গবেষণা করেছি, এসব বৃথা যাবে না। কিভাবে জানি না, তবে হাইয়ার ইন্টেলিজেন্সের সাথে আমার যোগাযোগ ঘটেছে। হতে পারে এর আগেও অনেক বার এই যোগাযোগ ঘটেছে, কিন্তু জানতে পারিনি।

.

হোসে সিলভার স্বপ্নের ব্যাপারটা খতিয়ে দেখা যাক।

এ হতাশার একটা মুহূর্তে স্বপ্নটা দেখেন তিনি। স্বপ্নের ভেতর আশ্চর্য একটা ব্যাপার। ছিলো–আলো। এই আলোটা ছিলো বলেই স্বপ্নটা ঘুম ভাঙার পরও তিনি মনে করতে পেরেছিলেন। পরদিন দোকানে এলো এক বন্ধু, প্রস্তাব দিলো কফি খেতে যাওয়ার। হোসে ক্লান্ত ছিলেন, তাই যেতে রাজি হলেন। সেই মুহূর্তে তাঁর স্ত্রী এসে যদি মেক্সিকান সাইডে গিয়ে অ্যালকোহল কেনার কথা না বলতেন, ওদিক তাঁদের যাওয়াই হতো না। ছোটো ছোটো ঘটনাগুলো শেষ পর্যন্ত হোসেকে টেনে নিয়ে গেল এমন একটা দোকানে, গোটা মেক্সিকোর মধ্যে শুধু ওই দোকানেই ৩-৪–৩ নম্বরের টিকেট কিনতে পাওয়া যায়।

অনেকগুলো ছোটো ছোটো ঘটনা মিলে একটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার ঘটেছে, এগুলোকে কেউ যদি কাকতালীয় বলে সন্দেহ করে, সত্যি-মিথ্যে যাচাই করে দেখা সম্ভব বাকি ঘটনাগুলো সম্পর্কে কি বলার থাকবে তার? হোসে সিলভা স্বপ্ন দেখার কৌশল উদ্ভাবন করেন এবং পদ্ধতিগুলোকে উন্নত করেন, সেগুলো ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের আরো চারজন মাইও কন্ট্রোল গ্র্যাজুয়েট লটারি জিতেছেন। তাঁরা হলেন, রকফোর্ড, ইলিয়নয়েস-এর রেগিনা এম, ফরনেকার–তিন লক্ষ ডলার। শিকাগোর ডেভিড সিকি–তিন লক্ষ ডলার। শিকাগোর ফ্রান্সেস মরোনি–পঞ্চাশ হাজার ডলার। এবং বাফেলো, নিউইয়র্কের জন ফ্লেমিং–পঞ্চাশ হাজার ডলার।

কিছু ঘটনা যখন ঘটে, যার কোনো ব্যাখ্যা করা যায় না, কিন্তু ফলটা হয়। গঠনমূলক বা উপকারী, আমরা তখন সেটাকে কোইন্সিডেন্স বলবো। কিন্তু ফল যদি হয়। ধ্বংসাত্মক, সেটাকে আমরা বলি অ্যাকসিডেন্ট। এই বই পড়ে আপনি শিখবেন। কোইন্সিডেন্স কিভাবে ঘটাতে হয়।

লটারি জেতার স্বপ্ন দেখার পর হোসে সিলভার বিশ্বাস জন্মায় হাইয়ার ইন্টেলিজেন্সের অস্তিত্ব আছে এবং সেই শক্তি তাঁর সাথে যোগাযোগ করার ক্ষমতাও রাখে। কিন্তু একটু চিন্তা করলেই পরিষ্কার হয়ে যায়, হোসে সিলভার এটা নতুন কোনো আবিষ্কার নয়। এ-কথাও সত্যি নয় যে এ ধরনের ঘটনা শুধু তাঁর জীবনে এই প্রথম ঘটলো। জীবনের মোড় ঘোরার মুহূর্তে, চরম হতাশাগ্রস্ত বা বিপদগ্রস্ত মুহূর্তে হাজার হাজার লোক এ-ধরনের স্বপ্ন দেখেছে, যে স্বপ্ন হয় তাদেরকে বিপদ সম্পর্কে আগাম সাবধান করে দিয়েছে নয়ত সমস্যার সমাধান বাতলে দিয়েছে। এ ধরনের স্বপ্নের কথা সকল ধর্মগ্রন্থেই পাওয়া যায়।

ফ্রয়েড বলেছেন, স্বপ্ন টেলিপ্যাথীর জন্যে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। পরবর্তী কালে আরো একটু এগিয়ে কোনো কোনো গবেষক বলেছেন, হাইয়ার ইন্টেলিজেন্সের কাছ থেকে তথ্য গ্রহণ করার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে স্বপ্ন।

হাইয়ার ইন্টেলিজেন্স? ঠিক কি বোঝাতে চেয়েছেন তাঁরা?

বোঝাতে চেয়েছেন, আলোর একটা ঝলকানির মতো অন্তদৃষ্টি, ঠিক যখন আপনার দরকার ওটা। কিংবা, কারো স্নেহময়, শক্তিশালী উপস্থিতি। এক হাইয়ার ইন্টেলি জেন্সের উপস্থিতি আমরা সবাই অনুভব করি, কেউ কম কেউ বেশি। তার সাহায্য এবং সান্নিধ্য কামনা করি আমরা, কিন্তু কখনোই তাকে নাগালের মধ্যে পাই না।

.

গবেষকদের মনে এক সময় একটা প্রশ্ন জাগলো, লোকে যেমন টেলিফোন পাবার জন্যে অস্থির ভাবে অপেক্ষা করে, আমাদের জন্যেও সেই রকম কেউ অপেক্ষা করছে কিনা? যোগাযোগ করার জন্যে আমরা কি নিজেরা উদ্যোগী হয়ে ডায়াল করতে পারি না? প্রার্থনার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার সাথে যদি যোগাযোগ করা যায়, তাহলে হাইয়ার ইন্টেলিজেন্সের সাথে যোগাযোগের একটা মাধ্যম আবিষ্কার করা যাবে না কেন?

গবেষণায় দেখা গেল, একাধিক মাধ্যমের সাহায্যে হাইয়ার ইন্টেলিজেন্সের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব। তার মধ্যে একটা ডিম কন্ট্রোল বা স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ। অত্যন্ত সহজ একটা পদ্ধতি, খুব সহজে শেখা যায়।

স্বপ্ন স্মরণ করার জন্যে উজ্জ্বল আলো আপনাকে সাহায্য করবে, এটা আশা করা ঠিক হবে না। তবে প্রোগ্রাম-পদ্ধতির ওপর আপনি ভরসা রাখতে পারেন। এই পদ্ধতির নিয়ম হলো, নিজেকে একটা প্রোগ্রামের আওতায় আনতে হবে, ধ্যানমগ্ন অবস্থায়।

ঘুমোতে যাবার ঠিক আগে আলফা লেভেলে চলে যান। নিজেকে সাজেশন দিন, আমি একটা স্বপ্ন মনে রাখতে চাই। আমি একটা স্বপ্ন মনে রাখতে পারবো।

এবার হাতের কাছে কলম আর কাগজ নিয়ে ঘুমাতে যান। তারপর যখন ঘুম ভাঙবে, তা সে রাতেই হোক বা সকালে, যে স্বপ্নটা দেখেছেন সেটার বিবরণ লিখে ফেলুন, যতোটুকু মনে করতে পারেন। এই পদ্ধতি রাতের পর রাত চর্চা করতে থাকুন, যতো দিন যাবে ততই বেশি স্পষ্ট মনে করতে পারবেন, এক সময় সম্পূর্ণ স্বপ্নটা মনে রাখতে কোনো অসুবিধেই হবে না। পদ্ধতিটার সাথে অভ্যস্ত হয়ে উঠলে দক্ষতা বাড়বে আপনার, তখন বুঝবেন, দ্বিতীয় নিয়মটা শেখার জন্যে তৈরি হয়েছেন আপনি।

ঘুমের আগে আলফা লেভেলে পৌঁছে মনের পর্দায় একটা সমস্যাকে জ্যান্ত করে। তুলুন। ওটা এমন একটা সমস্যা হতে হবে, উপদেশ বা তথ্য পেলে যা সমাধান করা সম্ভব। তার আগে ভালো করে বুঝে দেখুন, সত্যি আপনি সমস্যাটার সমাধান চান কি না। নির্বোধ প্রশ্ন করলে উত্তর পাবেন হাস্যকর, অর্থহীন। এবার এই কথাগুলো বলে নিজেকে প্রোগ্রামের আওতায় নিয়ে আসুন। আমার একটা সমস্যা আছে। যে স্বপটা দেখবো তাতে এমন কিছু তথ্য এবং উপদেশ থাকবে যার সাহায্যে সমস্যাটা আমি সমাধান করতে পারবো। স্বপ্ন আমি একটা দেখবোই, তাতে সমাধানের সূত্রও থাকবে। স্বপ্নে যা বলা হবে আমি তা পরিষ্কার বুঝতে পারবো।

রাতে বা সকালে ঘুম থেকে জেগে স্বপ্নটার অর্থ খোঁজার চেষ্টা করুন।

স্বপ্নের ফ্রয়েডীয় ব্যাখ্যা পদ্ধতির সাথে আমাদের ব্যাখ্যা পদ্ধতির পার্থক্য থাকবে, কারণ আমরা নিজেদের তৈরি করা স্বপ্ন দেখি। কাজেই আপনার যদি ফ্রয়েডীয় স্বপ্ন ব্যাখ্যা পদ্ধতির সাথে পরিচয় থাকে, সেটা ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করুন।

কল্পনা করুন, এই স্বপ্নটার কি অর্থ করতেন ফ্রয়েড।

নরমাংসভুক একদল আদিবাসী গভীর বনভূমির ভেতর এক ভদ্রলোককে ঘিরে ফেলেছে। তাঁর কাছে চলে আসছে তারা, তাদের হাতের বর্শা উঠছে আর নামছে, উঠছে আর নামছে। প্রতিটি বর্শার ডগায় একটা করে ফুটো রয়েছে। ঘুম ভাঙার পর ভদ্রলোক তাঁর একটা সমস্যার সমাধান হিসেবে স্বপ্নটার অর্থ করলেন। এই সমস্যাটা অনেক দিন থেকে ভোগাচ্ছে তাঁকে। একটা সেলাই মেশিনের ডিজাইন কিভাবে তৈরি করতে হবে, এই স্বপ্ন থেকে তার উত্তর পেয়ে গেলেন তিনি। স্বপ্ন দেখার আগে পর্যন্ত সূচটাকে ওঠা নামা করাতে পারতেন, কিন্তু তাতে সেলাই হতো না। স্বপ্ন থেকেই তিনি শিখলেন, সূচের ডগায় একটা ফুটো রাখতে হবে। ভদ্রলোকের নাম ইলিয়াস হাউই, ইনিই সর্বপ্রথম কাজের উপযুক্ত সেলাই মেশিন আবিষ্কার করেছিলেন।

প্রোগ্রাম-পদ্ধতির সাহায্যে দেখা স্বপ্ন লোকের প্রাণ বাঁচিয়েছে, এমন ঘটনাও ঘটেছে।

এক জায়গায় যাবার জন্যে মটর সাইকেল নিয়ে সাত দিন বাইরে থাকতে হবে এক লোককে, রওনা হবার কয়েক দিন আগে নিজেকে প্রোগ্রামের আওতায় নিয়ে এলো সে। উদ্দেশ্য, রওনা হবার পর ভাগ্যে যদি কোনো দুর্ঘটনা থেকে থাকে, স্বপ্নটা যেন তাকে আগে থেকে সাবধান করে দেয়। এর আগে দূরে যখন কোথাও গেছে সে, ছোটোখাটো দুর্ঘটনা দু’একটা ঘটেছে, তাই এই সতর্কতা।

নিজেকে প্রোগ্রামের আওতায় নিয়ে আসার পর ঠিকই স্বপ্ন দেখলো সে। দেখলো, এক বন্ধুর বাড়িতে রয়েছে সে। ডিনারের সময় তার প্লেটে পরিবেশন করা হলো কাঁচা তরকারি-একরাশ বরবটি। অথচ অন্য সবার প্লেটে লোভনীয় সব সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করা হয়েছে।

ঘুম থেকে উঠে চিন্তায় পড়ে গেল বেচারা। কি অর্থ হতে পারে এই স্বপ্নের পথে তাকে কাঁচা বরবটি খেতে নিষেধ করা হচ্ছে? কিন্তু এই নিষেধের কোনো মানে হয় না, কারণ রান্না করা বরবটিই পছন্দ করে না সে, কাঁচা বরবটি তো দূরের কথা। তবে কি স্বপ্নটার মানে, বন্ধুর বাড়িতে তাকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করা হবে না?, তাও সম্ভব নয়। অনেক দিনের পুরনো বন্ধুত্ব, বন্ধু তাকে কাছে পেলে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে। তাছাড়া, এবার তার এই যাত্রার সাথে এই বন্ধু বা তার বাড়ির কোনো সম্পর্ক নেই।

দুদিন পরের ঘটনা। নিউইয়র্কের একটা রাস্তা ধরে যাচ্ছে সে। ভোর বেলা, রাস্তায় বলতে গেলে কোনো যানবাহন নেই, একটা হাফট্রাক ছাড়া।

হাফট্রাকটা সামনে। সেটার কাছাকাছি এসে দেখলো, ট্রাকের ওপর পাহাড়ের মতো উঁচু হয়ে রয়েছে বরবটি ভরা বস্তা। স্বপ্নের কথা মনে পড়ে যেতে ঘন্টায় পয়ষট্টি মাইল থেকে ঘন্টায় পঁচিশ মাইলে স্পীড নামিয়ে আনলো সে। তারপর পনেরো মাইল স্পীডে একটা বাঁক নেয়ার সময় তার মটর সাইকেলের পিছনের চাকা পিছলে গেল –বস্তা থেকে কিছু বরবটি পড়ে গেছে রাস্তায়, তার ওপর চাকা পড়তেই ঘটনাটা ঘটলো।

সাবধান ছিলো বলে সামান্য একটু আহত হলো সে। কিন্তু স্বপ্নটা যদি না দেখতে, ঘন্টায় পঁয়ষট্টি মাইল স্পীডেই মটর সাইকেল চালাতো সে। সেক্ষেত্রে কি অবস্থা হতো তার?

যে স্বপ্ন দেখবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আপনি, শুধু আপনিই সেটার ব্যাখ্যা করতে পারবেন। স্বপ্ন বুঝতে হলে প্রোগ্রামের আওতায় নিজেকে নিয়ে আসার সময় উপযুক্ত সাজেশন দিয়ে নিতে হবে। স্বপ্নের অর্থ অনেক সময় ধরা দিয়েও ধরা দেবে না, সেক্ষেত্রে অন্তর্দৃষ্টির সহায্যে অর্থ খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে হবে আপনাকে। অনেক সময় কণ্ঠস্বরহীন অবচেতন মন এই অন্তদৃষ্টির সাহায্যে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে থাকে।

স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ শেখার ব্যাপারে আপনি যদি ধৈর্যের পরিচয় দেন, যদি নিয়মিত চর্চা করতে থাকেন, একদিন আপনার মনের একটা অমূল্য ভাণ্ডারের দরজা আপনার সামনে খুলে যাবে। যুক্তির বিচারে, লটারি জেতার আশা আপনি করতে পারেন না কারণ লটারির ধর্মই হলো, মাত্র অল্প দু’ একজন জিতবে ওটা। কিন্তু আবার একথাও তো সত্যি যে, লটারি যা দিতে পারে তারচেয়ে অনেক বেশি দেয়ার জন্যে তৈরি হয়ে আছে জীবন-যে-কেউ চেষ্টা করলেই পেতে পারে।

এবার, এখানে আমরা কয়েকটা অনুশীলন দেবো। এগুলো প্রতিদিন রাতে শোবার আগে চর্চা করতে হবে।

স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণঃ নিয়ম

স্বপ্ন মনে রাখা চর্চা করার জন্যে তিন–এক পদ্ধতির সাহায্যে নিজের লেভেলে চলে। যান। ওখানে পৌঁছে, মনে মনে নিজেকে বলুন, ‘আমি একটা স্বপ্ন মনে রাখতে চাই। আমি একটা স্বপ্ন মনে রাখতে পারবো। নিজের লেভেল থেকে বেরিয়ে আসার দরকার। নেই, লেভেলে থাকা অবস্থাতেই ঘুমিয়ে পড়ুন।

সকালে বা রাতে স্বপ্নের উজ্জ্বল, পরিষ্কার স্মৃতি নিয়ে যখন ঘুম ভাঙবে, একটা কাগজে বিবরণ লিখে নিন। যখন বুঝবেন স্বপ্ন নিয়ন্ত্ৰণঃ নিয়ম-১ ভালো কাজ দিচ্ছে, শুধু তখন দু’নম্বর নিয়ম চর্চা শুরু করবেন।

স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণঃ নিয়ম

ধ্যানমগ্ন অবস্থায় নিজেকে মনে মনে বলুন, ‘আমার স্বপ্নগুলো আমি মনে রাখতে চাই। আমার স্বপ্নগুলো আমি মনে রাখতে পারবো। এরপর ঘুমিয়ে পড়ুন।

রাতে কয়েকবার এবং সকালে স্বপ্নের পরিষ্কার, উজ্জ্বল স্মৃতি নিয়ে জেগে উঠবেন। আপনি। আপনার স্বপ্ন-খাতায় বা কোনো প্যাডে স্বপ্নের সমস্ত বিবরণ লিখে ফেলুন। দু’নম্বর নিয়ম ভালো কাজ দিলে তিন নম্বর চর্চা শুরু করুন।

স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণঃ নিয়ম

এবার শুধু স্বপ্ন মনে রাখতে নয়, সেটা বুঝতে এবং সেই সাথে আপনার সমস্যার সমাধান পাবার জন্যে নিজেকে প্রোগ্রামের আওতায় নিয়ে আসবেন আপনি। তিন–এক পদ্ধতির সাহায্যে নিজের লেভেলে চলে যান। মনে মনে নিজেকে বলুন, ‘আমার একটা সমস্যা আছে। যে স্বপ্নটা দেখবো তাতে এমন কিছু তথ্য এবং উপদেশ থাকবে যার সাহায্যে সমস্যাটা আমি সমাধান করতে পারবো। একটা স্বপ্ন আমি দেখবোই, তাতে সমাধানের সূত্রও থাকবে। স্বপ্নে যা বলা হবে আমি তা পরিষ্কার বুঝতে পারবো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *