০৩. স্মরণশক্তি ও তিন আঙুলের কেরামতি

০৩. স্মরণশক্তি ও তিন আঙুলের কেরামতি

মন-নিয়ন্ত্রণ টেকনিকের সাহায্য নিলে, টেলিফোন গাইড ব্যবহার করার দরকার হবে না আপনার, সবগুলো টেলিফোন নাম্বার মনে থাকবে। স্বভাবতই, আপনার এই ক্ষমতা দেখে তাজ্জব হয়ে যাবে বন্ধুরা। কিন্তু এখানে একটা প্রশ্ন আসছে, আপনি কি আসলেও টেলিফোন নাম্বার মনে রাখতে চান? আমি জানি, অনেকে চায় না। কোনো নাম্বার দরকার হলে গাইডের বা নোট বুকের পাতা উল্টে সেটা বের করে নেয় তারা। আগেই বলেছি, ফল পেতে হলে বাসনা থাকা চাই। টেলিফোন নাম্বার স্মরণ রাখার বাসনা অনেকের ততোটা জোরালো নয়। কিন্তু টেলিফোন নাম্বার দরকার হলেই যদি প্রতিবার শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটতে হতো, বাসনাটা তাহলে জোরালো না করে উপায় থাকতো না।

বাসনা, বিশ্বাস আর প্রত্যাশা এই তিন বিধির কারণে শুধু গুরুত্বপূর্ণ কাজে ছাড়া এই টেকনিক ব্যবহার করা উচিত নয়। এই তিন বিধি ঠিকমতো পালন না করলে কোনো কাজে সাফল্য আশা করা বোকামি হয়ে যাবে। আমরা অনেকেই আমাদের স্মরণশক্তি বাড়াতে চাই, কারণ এই শক্তিটা যথেষ্ট পরিমাণে নেই বলে মনে করি। কিন্তু এই অভাববোধটাই যথেষ্ট নয়। কোন্ বিশেষ ক্ষেত্রে স্মরণশক্তি বাড়লে আপনি সত্যি উপকৃত হবেন, উপকৃত হতে চান, সেটা আগে নির্ধারণ করতে হবে আপমাকে। ভেবে চিন্তে দেখুন, কি ধরনের বিষয় স্মরণ করতে না পারার দরুন আপনাকে বিপদে বা অসুবিধায় পড়তে হয়। তারপর পরিমাপ করুন, এই অক্ষমতা দূর করার জন্যে নিজের মধ্যে কতোটুকু আগ্রহ এবং বাসনা রয়েছে। পরিমাণ যদি কম হয়, বাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করুন।

আগের পরিচ্ছেদের অনুশীলন গুলো আপনি যদি চর্চা করে দক্ষতা অর্জন করে থাকেন, হয়ত অপ্রত্যাশিতভাবে আপনার স্মরণশক্তি আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। আলফায় পৌঁছে মনের পর্দায় ছবি দেখতে এবং অতীতের ঘটনা জ্যান্ত করে তুলতে শেখা, এগুলো আপনাকে নতুন যোগ্যতা এনে দিয়েছে। আলফা লেভেলের এই কাজকর্ম বিটা লেভেলের ওপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে, কাজেই আপনি আলাদা ভাবে চেষ্টা না করলেও আপনার মন হয়ত নানা ভাবে আপনার উপকারে লাগাতে চাইছে। তবু, আরো অনেক উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে।

আপনি যা ভুলে গেছেন বলে বিশ্বাস করছেন সেটা নিশ্চয়ই কোনও ঘটনার সাথে জড়িত। সেটা যদি একটা নাম হয়, এখানে ঘটনা হবে সময়, যখন নামটা আপনি। শুনেছেন বা পড়েছেন। হারিয়ে যাওয়া একটা জিনিস মন থেকে খুঁজে বের করা কঠিন কোনো কাজ নয়। মনের পর্দা কিভাবে ব্যবহার করতে হয় সে তো আপনি জানেনই। আপনাকে শুধু সংশ্লিষ্ট ঘটনাটা মনের পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে হবে, তাহলেই যেটা মনে করতে চাইছেন, মনে পড়ে যাবে।

আসলে আমরা বোধহয় কেউই কিছু ভুলে যাই না। বড়জোর বলা যেতে পারে, মনে করতে পারি না। দুটোর মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে।

বিজ্ঞাপন জগত ভুলে যাওয়া আর মনে করতে না পারার পার্থক্যটা অত্যন্ত পরিষ্কার ভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরে। টিভির বিজ্ঞাপন আমরা অনেকেই দেখি। সংখ্যায় ওগুলো এতো বেশি আর এতো অল্প সময়ের জন্যে দেখানো হয় যে গত হপ্তায় যেগুলো দেখেছি সেগুলো থেকে দশটার একটা তালিকা তৈরি করতে বললে আমরা হয়ত বা তিন কি চারটের বেশি মনে করতে পারবো না।

ধরুন, সিগারেট, লিপস্টিক আর ব্যাটারীর কথা আপনার মনে আছে। আপনি মার্কেটে গেলেন, নারকেল তেল কিনবেন। দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই টি, ভিতে দেখা নারকেল তেল কোম্পানির বিজ্ঞাপনটার কথা মনে পড়ে গেল আপনার। আসলে বিজ্ঞাপনগুলো আমাদের সচেতন মনে যতোটা তারচেয়ে বেশি ছাপ ফেলে অবচেতন মনে, সংশ্লিষ্ট প্রসঙ্গ না এলে অবচেতন মন থেকে তথ্যটা সচেতন মনে সহজে উঠে আসে না।

তা সে যতই তুচ্ছ আর নগণ্য হোক, প্রতিটি বিষয় আর ঘটনারই ছাপ নেয় আমাদের ব্রেন। বিষয়টা আমাদের কাছে যতো গুরুত্বপূর্ণ আর ছাপটা যতো স্পষ্ট হয়, ততো তাড়াতাড়ি আর সহজে সেটা আমরা মনে করতে পারি।

সার্জিক্যাল অপারেশনের সময় একটা ইলেকট্রোড ব্রেনকে আলতোভাবে স্পর্শ করলো। জাদুর কাঠির ছোঁয়া পেয়ে বহুকাল আগে ভুলে যাওয়া একটা ঘটনা খুঁটিনাটি বিবরণসহ পুরোটাই মনে পড়ে গেল, এতোই পরিষ্কার ভাবে যে আওয়াজ শুনতে, ঘ্রাণ নিতে এবং ছবি দেখতে পাওয়া গেল। ছোঁয়া হলো ব্রেনকে, মনকে নয়। অতীত ঘটনা ফিরিয়ে আনা থেকে শুরু করে রোগীকে সচেতন করে তোলা পর্যন্ত সমস্ত প্রস্তাবই আসছে ব্রেনের কাছ থেকে, কিন্তু তা সত্ত্বেও সে (ব্রেন) জানতে পারে, কিছু একটা বলে দেয় তাকে–আসলে, এগুলো সে নিজে উদ্ধার করছে না। এখানেই কাজ করছে। মন–মহা-পর্যবেক্ষক, মহাশক্তিশালী, সবই যে ব্যাখ্যা করতে পারে–কখনো। কোনো ইলেকট্রোড যাকে স্পর্শ করতে পারেনি বা পারবে না। আমাদের নাকের ডগার। মতো মন নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় বিরাজ করে না।

ফিরে আসা যাক স্মরণ প্রসঙ্গে। আপনি যেখানে বসে আছেন সেখান থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে একটা গাছ, সেই গাছ থেকে একটা পাতা ঝরে পড়ছে। এই ঘটনা আপনি মনে করতে পারবেন না, কারণ ঘটনাটা আপনি চাক্ষুষ বা অনুভব করেননি, সেটা আপনার জন্যে কোনো গুরুত্ব বহন করে না।

এই যে আপনি চেয়ারে বসে বইটা পড়ছেন, এই পড়ার সময়েও হাজার হাজার অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন আপনি অথচ সে ব্যাপারে আপনি পুরোপুরি সচেতন নন। আশপাশে যা ঘটে চলেছে, আপনি যা অনুভব করছেন, এক লাখ ভাগের এক ভাগও আপনি তা সচেতন ভাবে উপলব্ধি করছেন না, কারণ আপনার সমস্ত মনোযোগ রয়েছে পড়ার দিকে। শব্দ হচ্ছে, গন্ধ আছে, আপনার চোখের কোণে দৃশ্য আছে, আপনি চেয়ারটার স্পর্শ অনুভব করছেন, হয়তো ঘাড়ে একটা মশা বসেছে, হয়তো ডান পায়ের জুতো আঁটো হওয়ায় একটু কষ্ট হচ্ছে, কামরার টেমপারেচার .এর কোনো শেষ নেই। এসব ব্যাপারে আপনি একেবারে সচেতন নন, তা নয়, কিন্তু সতর্কতার সাথে, সরাসরি সচেতন নন। ব্যাপারটা ঘোলাটে, পরস্পর বিরোধী লাগছে? তাহলে এক মহিলার কথা আলোচনা করা যাক, প্রসব করানোর জন্যে যাকে জেনারেল অ্যানেসথেশিয়ার সাহায্যে অজ্ঞান করা হয়েছিল। তার ঘটনাটা আমাদেরকে আরো পরিষ্কার ভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।

সন্তান পেটে থাকার সময় এই মহিলা ও তার চিকিৎসকের মধ্যে সুন্দর একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুজনের প্রতি দু’জনের গভীর বন্ধুত্ব এবং, আস্থা ছিলো। সন্তান প্রসবের সময় হতে রুটিন অনুসারে জেনারেল অ্যানেসথেশিয়ার সাহায্যে অজ্ঞান করা হলো মহিলাকে, স্বাস্থ্যবান নিরোগ এক সন্তানের জন্ম দিলো সে। কয়েক ঘন্টা পর আবার যখন তাকে দেখতে এলো ডাক্তার, আশ্চর্য রকম এড়িয়ে যাওয়া ব্যবহার করলে মহিলা, এমন কি অকারণে রেগে উঠতেও দেখা গেল তাকে। সেদিন, পরদিন, তারপর দিন, একই ঘটনা ঘটতে লাগলো। মহিলা কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ এভাবে বদলে গেল কিভাবে, ডাক্তার বুঝতে পারে না। মহিলার মনেও এই প্রশ্ন, ডাক্তারের ওপর এই বিতা কেন আমার? দুজনেই আন্তরিকভাবে চেষ্টা করতে লাগলো এর কারণ আবিষ্কারের জন্যে। হঠাৎ এই পরিবর্তন, এর একটা ব্যাখ্যা না থেকেই পারে না।

ওরা ভাবলো, মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা কোনো স্মৃতি হয়তো এই পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা করতে পারবে। তাই ঠিক হলো, সম্মোহনের সাহায্য নেবে তারা।

সম্মোহিত করা হলো মহিলাকে। ডাক্তারের সাথে অতি সম্প্রতি যা যা ঘটেছে এক এক করে স্মরণ করিয়ে ধীরে ধীরে তাকে নিয়ে যাওয়া হলো আরো পিছনের ঘটনার দিকে। বেশি পিছনে যেতে হলো না, পাওয়া গেল সমাধান।

গভীর সম্মোহিত অবস্থায় ডেলিভারি রুমে তার জ্ঞান ফিরে আসার ঘটনাটা স্মরণ করতে পারলো মহিলা। এর সংলগ্ন পিছনের ঘটনাটা তার মনে থাকার কথা নয়, কারণ। তখন অজ্ঞান অবস্থায় ছিলো সে। কিন্তু আশ্চর্য! দেখা গেল, অপারেশন চলাকালে ডাক্তার। আর নার্স যা যা বলেছে সব তার মনে আছে। অজ্ঞান, একজন রোগিনীর সামনে কথা বলেছে তারা, কথা আর আচরণের মধ্যে তাই ফুটে উঠেছিল নির্লিপ্ত একটা ভাব। কখনো মহিলাকে নিয়ে হাসাহাসি করেছে তারা, কখনো সন্তান প্রসব হতে দেরি হচ্ছে দেখে বিরক্তি প্রকাশ করেছে। তাকে একটা জড় পদার্থ হিসেবে ধরে নেয়া হয়েছিল, ব্যক্তি হিসেবে নয়। তার বোধ আর অনুভূতির কথা বিবেচনা করা হয়নি।

তাই প্রশ্ন ওঠে, আদৌ কি অজ্ঞান বা অচেতন হওয়া সম্ভব? আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা হয় মনে করতে পারি বা পারি না, কিন্তু প্রতিটি মুহূর্তে আমরা অভিজ্ঞতা অর্জন। করছি এবং প্রতিটি অভিজ্ঞতাই স্পষ্ট ছাপ রাখছে ব্রেনের ওপর।

তবে কি এর মানে এই যে আজ থেকে দশ বছর পর এই পৃষ্ঠাটির নম্বর মনে করার কৌশল শিখতে পারবেন আপনি? পৃষ্ঠার নম্বরটি আপনি হয়তো লক্ষ্য করেননি, কিন্তু ওটা আছে। বলা যেতে পারে, চোখের কোণ দিয়ে ওটাকে আপনি দেখেছেন। হয়তো শিখতে পারবেন, কিন্তু সম্ভাবনা কম। কারণ ব্যাপারটা আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়, এবং সম্ভবত কোনো কালেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে না।

কিন্তু গত হপ্তায় সুদর্শন যে যুবকটিকে এক আত্মীয়ের বাড়িতে দেখেছিলেন, তার নাম মনে করতে পারবেন কি? আপনি যখন প্রথম নামটা শুনলেন, ওই সময়টাই একটা ঘটনা। সহজ কাজ যেটা আপনাকে করতে হবে, ওই সময়ের আশপাশের সময়গুলোকে মনের পর্দায় ফুটিয়ে তোলা। নির্দিষ্ট একটা ঘটনার কথা মনে করতে পারছেন না, কিন্তু তার আগে পরে কি ঘটেছে তা আপনার মনে আছে। আগের ঘটনাগুলো মনের পর্দায় ফুটিয়ে তুলুন, ধীরে ধীরে ভুলে যাওয়া ঘটনার দিকে এগোন, নামটা আপনি আবার শুনতে পাবেন।

আরাম করে বসুন। হাত-পা ঢিল করে দিন। নিজের লেভেলে চলে যান। পর্দায় ছবি দেখুন। এতে সময় লাগবে আপনার পনেরো থেকে বিশ মিনিট। তবে আরো একটা উপায় আছে, এ-ও জাদুমন্ত্রের মতো কাজ দেয়। এটাকে সাধারণত ইমার্জেন্সী মেথড বলা হয়। এই পদ্ধতির সাহায্যে তৎক্ষণাৎ মনের এমন একটা লেভেলে পৌঁছে যাবেন আপনি, যেখান থেকে তথ্য মনে করতে পারা খুব সহজ।

বোতামে চাপ দিলে আলো জ্বলে, বলতে পারেন এই পদ্ধতিটিও সেই রকম একটা বোতাম। বোতামটা যখন সত্যি আপনার হয়ে যাবে, তারপর থেকে যতোই ওটাকে ব্যবহার করবেন ততোই ওর কর্ম-গুণ বাড়তে থাকবে। জিনিসটাকে নিজের করার জন্যে বার কয়েক ধ্যানমগ্ন অবস্থার সাহায্য নিতে হবে আপনাকে।

সহজ এই পদ্ধতি। বৃদ্ধ, তর্জনী আর মধ্যমা, এই তিনটে আঙুল একসাথে করুন, সাথে সাথে মনের একটা গভীর লেভেলে পৌঁছে যাবেন আপনি। এই মুহূর্তে চেষ্টা করতে পারেন আপনি, কিছুই ঘটবে না। জিনিসটা এখনো আপনার পোষ মানেনি, তাই আপনার আদেশ মানবে না। পোষ মানাতে হলে একটু খাটতে হবে। রাজি?

নিজের লেভেলে চলে যান, তারপর নিজেকে বলুন, (শব্দ করে বা মনে মনে), ‘যখনই আমার এই তিন আঙুল এক করবো’–এখন এক করুন কোনো গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য নিয়ে, তখনই মনের এই লেভেলে চলে আসবো, এবং আমার উদ্দেশ্য পূরণ হবে।

এই অনুশীলন প্রতিদিন এক হপ্তা চর্চা করুন। প্রতিবার একই বাক্য ব্যবহার করা। উচিত। দিন কয়েকের মধ্যেই আপনার মন তিন আঙুল এক করার সাথে সাথে ধ্যানমগ্ন হয়ে পড়ায় অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। তারপর একদিন হয়ত একটা কিছু মনে করতে চেষ্টা করবেন আপনি হয়ত একটা নাম–কিন্তু কোনোমতেই সেটা মনে পড়বে না। যতোই চেষ্টা করবেন, ততোই গোঁ ধরে থাকবে নামটা, কিছুতেই মনে আসতে চাইবে না। ইচ্ছাশক্তি শুধু যে ব্যর্থ হবে তাই নয়, এটা একটা বাধা হয়ে দাঁড়াবে। এই যখন অবস্থা, আপনাকে ঘাবড়াতে নিষেধ করবো। শান্ত হোন। বুঝতে চেষ্টা করুন যে নামটা আপনার মনে পড়বে, কারণ আপনার আয়ত্তে রয়েছে সেই বোতাম, যেটা টিপলেই মনে পড়ে যাবে নামটা।

বিদেশী এক স্কুল শিক্ষক ছাত্রদেরকে বানান শেখাবার জন্যে তিন আঙুল পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন। হপ্তায় বিশটা করে শব্দের বানান শেখাতে পারেন তিনি। ছাত্রদের পরীক্ষা করার জন্যে এক এক করে প্রতিটি শব্দের বানান তিনি জিজ্ঞেস করেন না, চলতি হপ্তায় যে ক’ টা নতুন শব্দ তারা শিখেছে সবগুলো খাতায় লিখতে বলেন তিনি। তিন আঙুল পদ্ধতির সাহায্যে, মনের পর্দায় নতুন শেখা শব্দগুলো দেখতে পায় ছাত্ররা, নির্ভুল বানান সহ সেগুলো খাতায় লিখতে কোনো অসুবিধে হয় না তাদের। এই পরীক্ষায় সবচেয়ে মাথামোটা ছাত্রটির সফল হতে সময় লাগে পনেরো মিনিট।

ট্যাক্সি ড্রাইভার ছাত্রটির কথা মনে আছে? তার একটা বিদঘুঁটে সমস্যা ছিলো। একজন আরোহী হয়ত এমন এক জায়গায় যেতে চাইলো, যেখানে অনেক দিন আগে একবার গেছে ড্রাইভার, রাস্তাঘাট এখন আর ভালো করে মনে নেই। গাড়ি স্টার্ট দেয়ার আগে একটু সময়ের জন্যে ধ্যানমগ্ন হলে খুব কম আরোহীই সেটা ধরতে পারবে। তিন আঙুলের পদ্ধতি ব্যবহার করে মনের পর্দায় ভুলে যাওয়া জায়গাটা দেখে নেয় সে। পদ্ধতিটি শেখার পর থেকে এই ধরনের কোনো সমস্যায় পড়ে ভুগতে হয় না তাকে।

মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখার আগে ছাত্রটি লেখাপড়ায় মোটেও ভালো ছিলো না। তারপর দ্রুত শেখা বা স্পীড লার্নিং পদ্ধতি ব্যবহার করা ধরলো সে। ছাত্র হিসেবে এখন সেরাদের একজন সে, তিন আঙুল পদ্ধতি ব্যবহার করে পরীক্ষা দিয়ে আশ্চর্য ভালো রেজাল্ট করছে। এই পদ্ধতি সম্পর্কে পরের পরিচ্ছেদে আলোচনা করবো আমরা। তার আগে তিন আঙুল পদ্ধতি কোন কাজে কিভাবে ব্যবহার করবেন, সে সম্পর্কে কিছু অনুশীলন।

এক নম্বর পরিচ্ছেদে তিন–এক (৩-১) পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে, মনে আছে। তো? এখানে ওই পদ্ধতিটি ব্যবহার করতে হবে।

প্রথম কাজ, যে-কোনো হাতের প্রথম তিনটে আঙুল এক করুন। এটা ব্যবহার করায় ইতিমধ্যে আপনি যদি অভ্যস্ত হয়ে থাকেন, আঙুল তিনটে এক করার সাথে সাথে বিটা থেকে গভীর লেভেলে পৌঁছে যাবেন।

স্কুল বা কলেজের একটা পড়া মুখস্থ করতে চান আপনি। তিন আঙুল তো এক করাই আছে, এবার তিন–এক পদ্ধতি ব্যবহার করে আরো গভীর লেভেলে চলে যান। তারপর নিজেকে বলুন, আপনি এক থেকে তিন পর্যন্ত গুণতে যাচ্ছেন, এবং তিন পর্যন্ত গোণার সাথে সাথে চোখ খুলে পড়াটা পড়তে শুরু করবেন। পড়াটা কি, শিরোনাম এবং বিষয় উল্লেখ করুন।

তারপর বলুন, ‘কোনো শব্দ আমার মনোযোগ নষ্ট করতে পারবে না, আমার মনোনিবেশে একাগ্রতা এবং বুঝতে পারার ক্ষমতা অনেক গুণ বেড়ে যাবে।”

এবার এক থেকে তিন পর্যন্ত গুণুন, চোখ মেলুন, এবং পড়তে শুরু করুন।

পড়াটা শেষ করে, আবার তিন–এক পদ্ধতির সাহায্যে গভীর লেভেলে চলে যান, তারপর নিজেকে বলুন, এই মাত্র যে পড়াটা আমি শেষ করলাম (পড়াটা কি, শিরোনাম এবং বিষয় উল্লেখ করুন), সেটা আমি তিন আঙুল পদ্ধতির সাহায্যে ভবিষ্যতে যখন খুশি চাইলেই মনে করতে পারবো।

কলেজের লেকচার মনে রাখতে চান আপনি। তিন আঙুল তো এক করা আছেই, এবার তিন–এক পদ্ধতি ব্যবহার করে গভীর লেভেলে চলে যান। তারপর নিজেকে মনে মনে বলুন, আপনি একটা লেকচার শুনতে যাচ্ছেন (শিরোনাম, বিষয় এবং লেকচারের নাম উল্লেখ করুন)।

নিজেকে বলুন, আপনি তিন আঙুল পদ্ধতি ব্যবহার করতে যাচ্ছেন, লেকচার চলাকালে চোখ খোলা রাখবেন, অন্য কোনো শব্দ আপনার মনোযোগ নষ্ট করবে না, আপনার একাগ্রতা এবং বুঝতে পারার ক্ষমতা অনেক গুণ বেড়ে যাবে, এবং লেকচারটা (শিরোনাম বিষয় এবং লেকচারারের নাম উল্লেখ করুন) ভবিষ্যতে যখন খুশি চাইলেই তিন আঙুল পদ্ধতির সাহায্যে মনে করতে পারবেন।

এবার নতুন একটা পদ্ধতি। এটাকে আমরা তিন দফা পদ্ধতি বলতে পারি।

প্রথম দফা।

পরীক্ষার হলে প্রশ্নগুলো যেভাবে সব সময় পড়েন, সেভাবেই পড়ুন, তবে কোনো বিষয় নিয়েই বেশিক্ষণ মাথা ঘামাবেন না। কোনো প্রশ্নের উত্তর যদি তৈরি থাকে, সাথে সাথে লিখে ফেলুন। আর তৈরি না থাকলে ওটাকে বাদ দিয়ে পরেরটা ধরুন।

দ্বিতীয় দফা।

তিন আঙুল পদ্ধতির সাহায্যে প্রথম দফায় যা করেছেন এবারও তাই করুন, তবে এবার যে-সব প্রশ্নের উত্তর তৈরি নেই সেগুলোর ওপর একটু বেশি সময় দিন। উত্তর যদি আসে, লিখে ফেলুন। আর যদি না আসে, ওটাকে বাদ দিয়ে পরেরটা ধরুন।

তৃতীয় দফা।

তিন আঙুল পদ্ধতি ব্যবহার করে যেসব প্রশ্নের উত্তর আসেনি সেগুলো পড়ুন, এবারও যদি উত্তর না আসে, চোখ বন্ধ করুন, বন্ধ পাতার ভেতর একটু ওপর দিকে স্থির করুন দৃষ্টি, আপনার প্রফেসর, টিচার বা লেকচারারকে মনের পর্দায় দেখুন, তারপর প্রশ্নের উত্তরটা জিজ্ঞেস করুন তাঁকে। তারপর মাথা পরিষ্কার করে নিয়ে আবার উত্তর পাবার জন্যে চিন্তা-ভাবনা করতে শুরু করুন। তিন আঙুল পদ্ধতির আরো ব্যবহার আছে। ধ্যানী সাধু আর যোগীরা এই পদ্ধতি কয়েক শতাব্দী আগে থেকে ব্যবহার করে আসছেন। যখন কোনো যোগী বা সাধুর ধ্যানমগ্ন অবস্থার ছবি বা ভাস্কর্য দেখবেন, লক্ষ্য করলেই চোখে পড়বে, তাঁর হাতের তিনটে আঙুল এক করা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *