০৩ অধ্যায় – আক্রমণের কৌশল

০৩ অধ্যায় – আক্রমণের কৌশল

১.

সানজু বলেন :

এক, সাধারণ একটা সামরিক অভিযানের সবচেয়ে বিচক্ষণতা হল দখলকৃত রাজ্যকে ধ্বংস করার চেয়ে অক্ষত দখল করা। শত্রু সৈন্যদের হত্যা করার বদলে তাদেরকে আটক করুন যাতে করে একটা অক্ষত বাহিনী তৈরি করা যায় অর্থাৎ পাঁচ জনের একটা দলকে হত্যা করার চেয়ে তাদেরকে দিয়ে দল গঠন করা ঢের ভালো। একশটা যুদ্ধের মধ্যে একশটাতেই জয়ী হওয়ার চরম উৎকর্ষতার পরিচয় নয়। কোন যুদ্ধ ছাড়াই শত্রুকে দমন করতে পারাটাই হল সুদক্ষতার পরিচয়। আর তাই যুদ্ধে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল শত্রুর কৌশলটাকে নসাৎ করে দেয়া।

তু-মু এর ভাষ্যমতে, মহান ডিউক বলেন: ‘যারা সমস্যা সমাধান করতে পটু তারা সমস্যার উদ্ভব হওয়ার আগেই তার সমাধান করে ফেলে। যারা শত্রুর প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়েছে তারা শত্রুর থেকে হুমকি আসার আগেই তাদেরকে দমন করে ফেলে।’

লি চিয়াং এর ভাষ্যমতে, শত্রুর মুলে আক্রমণের পরিকল্পনা করে হান রাজবংশের সেনানায়ক কাউ সুন চারিদিক থেকে কাউ চুন রাজ্য ঘিরে ফেলে। সুন তার পরিকল্পনা মাফিক অফিসার হুয়ান-ফু ওয়ানকে পাঠায়। হুয়ান-ফু ওয়ান ছিল প্রচন্ড একগুয়ে আর বদমেজাজি। কাউ সুন তাকে হত্যা করে কাট চুন রাজ্যে জানায়: আপনার অফিসার এই কাজের জন্য উপযুক্ত ছিল না। আমি তাকে হত্যা করেছি। আপনি যদি উপযুক্ত কিছু করতে চান; তা দ্রুত করুন। নতুবা নিজেদেরকে রক্ষা করুন। ঐ দিনই চুন তার দুর্গ খুলে দিয়ে আত্মসমর্পন করেন।

কাউ সুনের জেনারেলরা জিজ্ঞেস করল: আপনি তো তার ভৃত্যকে হত্যা করেছেন, কিন্তু এখনও তো আত্ম সমর্পনের জন্য শহর অবরুদ্ধই করলেন না। এমনটা হল কেন?

কাউ সুন জবাব দিলেন: হুয়াং-ফু ওয়ান ছিল কাউ চুনের সবচেয়ে কাছের উপদেষ্টা। যদি হুয়াং-ফু ওয়ানকে ছেড়ে দিতাম সে তার কার্য যথাযথভাবে পালন করতে পারতো। কিন্তু তাকে হত্যা করায় কাউ চুনের সকল তেজ ধ্বংস করে দিলাম। বলা হয়ে থাকে: “যুদ্ধের সবচেয়ে বড় আক্রমণটা হল শত্রুর পরিকল্পনাটাকেই নসাৎ করে দেয়া।”

সব জেনারেলরাই বলে উঠল: ‘এটা তো আমাদের কল্পনাতেও ছিল না।’

দুই. দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল শক্রর একতা নষ্ট করে দেয়া।

তু-মু এর ভাষ্যমতে, শত্রুর মিত্র বাহিনীগুলোকে কখনও একত্রিত হতে দেয়া যাবে না।

ওয়াং সি এর ভাষ্যমতে, শত্রুর মিত্র বাহিনীগুলোর মধ্যে একটা ফাটল তৈরি করে দিন। যদি শত্রুর কোন মিত্র বাহিনী থাকে তবে আপনার জন্য সেই শত্রু অত্যন্ত শক্তিশালি হবে, তাই সমস্যাটা অত্যন্ত জটিল; আর যদি শত্রুর কোন মিত্র না থাকে তবে সমস্যাটা বেশি জটিল নয়, আর সেক্ষেত্রে তাদের শক্তিও কম হয়।

তিন. তারপর যে উত্তম উপায়টা রয়েছে তা হল শত্রুর সৈন্যদেরকে আক্রমণ করা।

চিয়া লিন এর ভাষ্যমতে, মহান ডিউক বলেন: ‘যে সেনানায়ক কেবলমাত্র কোষমুক্ত তরবারি দ্বারা যুদ্ধ জিততে চায় তিনি যোগ্য সেনানায়ক নন।’

ওয়াং সি এর ভাষ্যমতে, যুদ্ধে শত্রুর পরিকল্পনাটাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে পারেন, অথবা তার মিত্রদের মাঝে ফাটল ধরাতে না পারেন তবে তারাই যুদ্ধ জয়ের স্বাদ গ্রহণ করবে।

চার. সবচেয়ে যে বাজে পরিকল্পনা, তা হল শত্রু পক্ষের শহরগুলো আক্রমণ করা। শুধুমাত্র অন্য কোন উপায় না থাকলে তবেই শহর আক্রমণ করুন।

.

২.

সানজু বলেন, একটা সামিরিক অভিযানে ওয়াগন প্রস্তুত করতে এবং যুদ্ধের প্রয়োজনীয় অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি তৈরি করতে সব মিলিয়ে তিন মাসের মত সময় লেগে যেতে পারে; সুরক্ষা দেয়াল পার হবার সিঁড়িগুলো তৈরি করতে অতিরিক্ত তিনটা মাস সময় ব্যয় করতে হবে। যদি সেনানায়ক এই সময়গুলোতে ধৈর্য্য ধারণ করতে না পারেন আর তার সৈন্যদেরকে পিপড়ার মত করে দেয়ালে উঠে যেতে আদেশ দেন তবে শহর দখল করা আগেই তার সৈন্যদের এক তৃতীয়াংশের সলিল সমাধি হবে সেখানেই। এই ধরনের আক্রমণের একটাই পরিণতি হয়।

তু-মু এর ভাষ্যমতে, অয়েই বংশের এক সম্রাট তাই উ (Wu) এক লক্ষ সৈন্য নিয়ে ইউ তাই রাজ্য আক্রমণ করেন। শত্রু পক্ষের জেনারেল সাং তাং কে সম্রাট তাই উ কিছু ওয়াইন চেয়ে পাঠালেন। সাং সি একটা ড্রামে ইউরিন প্রবেশ করিয়ে সেটা বন্ধ করে পাঠালো। তাই উ সেটা পেয়ে ক্ষেভে ফেটে পড়ল এবং সাথে সাথে শহর আক্রমনের নির্দেশ দিলে সৈন্যরা সুরক্ষা দেয়ালের উপরিভাগে উঠতে উঠতেই অর্ধেক সৈন্য হতাহত হল।

.

৩.

সানজুর মতে, যারা যুদ্ধে অত্যন্ত পারদর্শী কোন যুদ্ধ ছাড়াই শত্রুকে তারা দমন করতে চাইবে। তারা কোন প্রকার আক্রমণ ছাড়াই শহরগুলো দখল করে এবং দীর্ঘায়িত কোন যুদ্ধ বিগ্রহ ছাড়াই শত্রু রাজ্যকে পরাজিত করতে পারে।

লি চুয়ান এর ভাষ্যমতে, দক্ষরা কৌশলেই যুদ্ধ করে নেন। হান বংশের সাং কুং বিদ্রোহী ইয়াও অঞ্চলের ইয়ানকে উ নামক শহরে ঘিরে ফেলেন। কিন্তু কয়েক মাসের সফল সব প্রচেষ্ট সত্ত্বেও শহর দখল করতে পারছিলেন না। তার। অফিসার এবং সৈন্যরা ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়ছিল। তুং হাইয়ের রাজা সাং কু বলেন: যখন আপনার একতাবদ্ধ একটা সৈন্যবাহিনী আছে আর শত্রুকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলেছেন, যে তার শেষ রক্ত বিন্দু পর্যন্ত যুদ্ধ করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ; তখন আপনার নেয়া কৌশলটা ঠিক নয়। তখন অবরোধ ছেড়ে দিয়ে তাদেরকে এটুকু জানতে দিন যে সেখান থেকে পালানোর একটা পথ খোলা আছে আর তা পেলে তারা সেখান থেকে পালাবেই। আর তখন কোন গ্রামে তাদের পিছু নিয়ে ধরে ফেলতে পারবেন! সাং কুং এই কৌশলটা অনুসরণ করে ইয়ান উ কে ধরতে সক্ষম হন।

আপনার লক্ষ্য হবে সব কিছু একেবারে সুরক্ষিত অবস্থায় জয় করা। আর এভাবেই আপনার সৈন্যদের কোন ক্ষতি হবে না আর আপনারও উদ্দেশ্যটা পূরণ হবে। এটাই হল আক্রমণের মুল কৌশল। অতএব, সৈন্য ব্যবহারের একটা কৌশল আছে:

এক. যখন আপনার দশজন সৈন্য আর শক্রর একজন তখন তাকে ঘিরে ফেলুন;

দুই. যখন আপনার শক্তি শক্রর পাঁচগুণ, তখনই তাকে আক্রমণ করুন;

চ্যাং ইউ এর ভাষ্যমতে, যদি আমার ক্ষমতা শত্রুর থেকে পাঁচগুণ বেশি হয়ে থাকে, আমি তাকে সরাসরি সতর্ক করব, হুংকার দিয়ে ভয় পাইয়ে দেব, একদিকে গিয়ে জোর চিৎকার করে অন্যদিকে গিয়ে আক্রমণ করে বসব।

তিন. যদি তার ক্ষমতার দিগুণ হয়, তাকে বিভক্ত করে ফেলুন।

তু-ইয়ু এর ভাষ্যমতে, দুই ভাগের এক ভাগ পরিমাণ ক্ষমতার জন্য যথেষ্ট না হয় তবে পরিস্থিতিটা অবলোকন করে তার সৈন্যদেরকে দুই ভাগ করে দিতে হয়। আর তাই মহান ডিউক বলেন: যদি কেউ তার শত্রুর সৈন্যদেরকে আলাদা করে দিতে না পারে সে এর ফলাফল সম্পর্কে ভাবারও সুযোগ পাবে না।

চার. যদি সমানে সামনে হয় তবে তার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হতে পারেন।

হো ইয়েন- সি এর ভাষ্যমতে, এই পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র যোগ্য জেনারেলই জয়ী হবেন।

পাঁচ. যদি শত্রুর থেকে কম শক্তিশালী হোন তবে যুদ্ধটা এড়িয়ে যান;

তু-মু এর ভাষ্যমতে, যদি সৈন্যরা শত্রুর সমকক্ষ হয় তবে ক্ষণিকের জন্য আক্রমণ থেকে বিরত থাকতে হয়। এমনতো হতে পারে পরবর্তীতে ভালো কোন সুযোগ পেয়ে গেলেন আর তখনই নিজের সকল শক্তি নিয়ে জয়ের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়লেন।

চ্যাং ইউ এর ভাষ্যমতে, যদি শত্রু শক্তিশালী আর আমি দুর্বল হই তখন ক্ষণকালের জন্য যুদ্ধ থেকে বিরত থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।

সানজু বলেন, যদি আমি যুদ্ধ পরিচালনায় কম পারদর্শী হই আর শত্রু সেনারা ছত্রভঙ্গ অবস্থায় থাকে; যদি আমি প্রবল তেজদ্বিপ্ত হই আর শত্রু সেই মুহূর্তে কিছুটা অসতর্ক এমনকি তখন শত্রু যেকোন দিক থেকে যতটাই শক্তিশালী হোক না কেন আমি আক্রমণের নির্দেশ প্রদান করি।

আর যদি কোন দিক থেকেই শত্রুর সমকক্ষ না হোন, যদি শত্রুর থেকে পালানোর কোন উপায় না থাকে তবে সেক্ষেত্রে ছোট একটা দল নিয়ে লুট করা শক্তিশালী কোন দলের বিরুদ্ধে এটা ঢের ভালো একটা কাজ।

চ্যাং ইউ এর ভাষ্যমতে, মেনসিয়াস বলেন; নিশ্চয়ই ছোট একটা দল বড় দলের সমকক্ষ নয়, আবার দুর্বল দল শক্তিশালী দলেরও সমকক্ষ নয় আবার সামান্য কিছু সৈন্যের শক্তি অনেকগুলো সৈন্যের শক্তির সমকক্ষ নয়।

.

৪.

সানজু বলেন, এখনকার সেনানায়করাই হলেন রাষ্ট্রের রক্ষক। যদি এই রক্ষণাবেক্ষণ চারিদিক থেকে সমানভাবে খেয়াল রেখে করা হয় তবে সে রাষ্ট্র শক্তিশালী বলে পরিগণিত হয়; আর যদি সেখানে ক্ষুত থেকে যায় তবে সে রাষ্ট্র নিশ্চয়ই দুর্বল রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাবে।

চ্যাং ইউ এর ভাষ্যমতে, মহান ডিউক বলেন: ‘যদি সার্বভৌম ক্ষমতা কোন সঠিক লোকের হাতে না থাকে তবে সেখানে ধ্বংস অনিবার্য।’

একজন শাসক তিনটি উপায়ে তার সৈন্যদের জন্য দুর্ভাগ্য ডেকে আনতে পারেন;

এক. সামনে কি অপেক্ষা করছে সেটা যখন জানা না থাকে তখন সৈন্যবাহিনী নিয়ে আগোনো উচিত নয়, আর যদি সৈন্যদের উদ্দমতা অবস্থায় থামিয়ে দেয়া হয় তবে সেটাকে বলা হয় “সৈন্যদের কার্যক্ষমতা দমিয়ে দেয়া।”

।চিয়া লিন এর ভাষ্যমতে, এগিয়ে যাওয়া এবং থেমে পড়ার নিয়ন্ত্রণ জেনারেল পরিবেশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেবেন। যদি এই বিষয়ের সিদ্ধান্ত রাজসভা থেকে নেয়া হয়ে এর চেয়ে বাজে কোন কাজ হতে পারে না।

দুই. সেনানায়ক সামরিক ক্ষেত্রে অজ্ঞ হলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমস্যা হয়, এর কারণে তার অধিনস্ত অফিসাররা হতবুদ্ধিকর হয়ে যায়।

সাও-সাও এর ভাষ্যমতে, ধরাবাধা নিয়মের দ্বারা কোন যোদ্ধা চলতে পারে না।

তু-মু এর ভাষ্যমতে, ব্যক্তি স্বাতন্ত্র, আইন এবং নির্দেশনার বাইরেও সৈন্যদের নিজেদের কিছু নিজস্বতা থাকে, যেটা তারা নিজেরাই অনুসরণ করে থাকে। যদি এগুলো রাষ্ট্রীয় ধরাবাধা নিয়ম হিসেবে চাপিয়ে দেয়া হয় তবে অফিসাররা হতবুদ্ধিকর হয়ে যাবে।

চ্যাং ইউ এর ভাষ্যমতে, উদারতা এবং সদাচার হয়তো রাজ্য পরিচালনায় ব্যবহার করা হয় কিন্তু এসব দিয়ে একটা সৈন্যদল পরিচালনা করা যায় না। যুক্তি এবং নমনীয়তা দ্বারাই সৈন্যদল পরিচালনা করা যায় কিন্তু এগুলো রাজ্য পরিচালনায় ব্যবহার করা যায় না।

তিন. সমস্যার সমাধানে যোগ্য ব্যক্তিকে সৈন্যবাহিনী পরিচালনায় পাঠানো হলে অফিসারদের মনে সন্দেহের চির ধরে।

ওয়াং সি এর ভাষ্যমতে, সামরিক ব্যাপারে অজ্ঞ ব্যক্তিকে যদি সৈন্য সভায় পাঠানো হয় তবে প্রতি মুহূর্তে সেখানে মতবিরোধ এবং হতাশা দেখা দেবে, ফলশ্রুতিতে পুরো বাহিনীর মধ্যে বিশৃঙ্খলা শুরু হবে। আর তাই পেই তু সভার ডাক দেন এবং যুদ্ধ পরিচালনাকারিকে রহিত করেন; তারপরই সাও পাওকে পরাজিত করতে সক্ষম হন।

চ্যাং ইউ এর ভাষ্যমতে, সাম্প্রতি সময়ে রাজসভাসদদের মধ্যে থেকে সেনাবাহিনী পরিচালনাকারি নিয়োগ পেয়ে থাকেন যেটা সম্পূর্ণ ভুল একটা সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়।

চার. সেনাবাহিনী যদি বিভ্রান্ত বা সন্দেহপ্রবণ হয়ে পড়ে প্রতিবেশি শাসক সমসার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এটাকে বলা হয়ে থাকে: ‘একটি বিভ্রান্ত সেনাবাহিনী অন্য কারও জয়ী হওয়ার পথ সুপ্রশস্ত করে।’

মেং এর ভাষ্যমতে, মহান ডিউক বলেন: উদ্দেশ্য সাধনে নেতা যদি বিভ্রান্ত হন তবে তিনি শত্রুর বিপক্ষে যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে পারবেন না।’

লি চুয়ান এর ভাষ্যমতে, অনুপযুক্ত মানুষকে নেতৃত্ব দেয়া যাবে না। লিন সিয়াংজু হলেন চাও রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী, যিনি বলেন: চাও কু তার বাবার বইগুলো পড়েনি বলে এখনও পরিবর্তিত পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে অক্ষম হয়েছিল। এখন মহামান্য আপনি শুধুমাত্র তার বাবার খ্যাতির নাম করে তাকে কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে নিয়োগ দেন আর এটা হবে একটা বাঁশির ছিদ্রগুলোতে ঘাম দিয়ে আটকে দিয়ে সেখান থেকে সুর তোলার মত চেষ্টা করা।

.

৫.

সানজুর মতে, যুদ্ধের সম্ভাব্য পরিণতি পাঁচটি বিষয়ের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আগে থেকেই বলা যায়:

এক, যিনি জানেন কখন তাকে যুদ্ধ করতে হবে এবং কখন থামতে হবে তখনই তার জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

দুই. যিনি জানেন একটা বড় দল পাঠাবেন নাকি ছোট একটা চৌকশ দল আক্রমণে যাবে, তখনই তার জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

তু-ইউ এর ভাষ্যমতে, এমন অনেক পরিস্থিতি আছে যেখানে অনেকে খুবই কম আক্রমণ করেন, আর এই পরিস্থিতিটাকে কাজে লাগিয়ে জয় ছিনিয়ে আনতে পারেন।

তিন. যারা পদসোপান ভিত্তিক বা চেইন অব কমান্ড মেনে চলেন তাদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

তু-ইউ এর ভাষ্যমতে, আর তাই মেনসিয়াস বলেন: যুদ্ধক্ষেত্রের ভূমিটা যতটা উপযুক্ত হবে এর চেয়ে ঋতুর আনুকুল্য কম গুরুত্বপূর্ণ; আবার এই দুটোর আনুকুল্যের চাইতে মানবিক সম্পর্কগুলোর একতা ঢের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

চার. যিনি বিচক্ষণতার সাথে শত্রুর ধৈর্য্যের বাধ ভাঙার জন্য অপেক্ষা করবেন তিনিই জয়ী হবেন।

সেন হাও এর ভাষ্যমতে; অপরাজেয় একটা সৈন্যদল গঠন করুন এবং শত্রুর বিশৃঙ্খলার জন্য অপেক্ষা করুন।

হো ইয়েন সিএর ভাষ্যমতে, এক ভদ্রলোক বলেন: ‘অদক্ষ সামরিক বাহিনীর ওপর নির্ভর করা এবং যুদ্ধের প্রস্তুতি না নেয়া হল বড় ধরনের অপরাধ; আগে থেকেই সব কিছুর প্রস্তুতি নেয়াই হল সবচেয়ে বড় গুন!

পাঁচ. যে শাসকের সেনানায়ক সুদক্ষ এবং যিনি সেনানায়কের স্বাধীন সিদ্ধান্তে বাধা প্রদান না করেন তারা জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

তু-ইউ এর ভাষ্যমতে, আর তাই মাস্টার ইয়াং বলেন: জেনারেল নিয়োগ করা রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা; আর যুদ্ধের ময়দানে সিদ্ধান্ত নেয়ার সার্বভৌম ক্ষমতা হল জেনারেল এর।

ওয়াং সি এর ভাষ্যমতে, সার্বভৌম কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই সঠিক সেনানায়ক খুঁজে বের করতে হবে। তার উপর সকল দায়দায়িত্ব অর্পন করে ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

হো ইয়েন সি এর ভাষ্যমতে, যখন আপনি যুদ্ধে থাকবেন তখন প্রতি পদক্ষেপে একশ রকমের পরিবর্তন আনতে হবে। যখনই সুযোগ পাবেন তখনই এগিয়ে যাবেন; যখন বুঝতে পারবেন এগুতে গেলে কঠিন বাধার সম্মুখিন হবেন তখন একটু বিরতি দেবেন। এই পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষকে জানানোর নির্দেশ দেয়া থাকলে আপনি আক্রমণ থেকে বিরত থাকতে চান এমন সিদ্ধান্ত জানাতে আর কর্তৃপক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত আসতে আসতে সব কিছু পুড়ে ছাই পর্যন্ত ঠান্ডা হয়ে যাবে। আর এটাকে বলা হয় একজন যুদ্ধ পরিচালনাকারিকে কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা।

আর তাই পাঁচটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যাবে ফলাফল কার দিকে যাবে। তাই আমি বলি: শত্রুকে এবং নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। তবেই একশটা যুদ্ধ করলেও আপনি বিপদে পড়বেন না।

যখন আপনি নিজের সৈন্যশক্তি সম্পর্কে অবগত থাকবেন কিন্তু শত্রুর সম্পর্কে অজ্ঞ তখন হার জিতের আশংকা ফিফটি ফিফটি। যদি শত্রু এবং নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে কিছুই জানবেন না, তবে মনে রাখুন আপনি প্রতিটা যুদ্ধেই বিপদে পড়তে যাচ্ছেন।

লি চুয়ান এর ভাষ্যমতে, এই ধরনের যোদ্ধাকে বলা হয় ‘ক্ষ্যাপাটে যোদ্ধা’। তার কাছে পরাজয় ছাড়া আর কি বা আশা করা যায়?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *