৯. সমাপ্তি সংলাপ

সমাপ্তি সংলাপ

ডিস্টাবিং কল

হুইস্কি হাতে স্টাডিতে বসে আছে বিজয়। একেবারে একা ইউএসে ফিরে গেছে কলিন। টাস্ক ফোর্সের মিটিং সেরেই সোজা এয়ারপোর্ট চলে গেছে। সাথে এলিস। দুজনে একই ফ্লাইট বুক করেছে। ইউএসে এলিসের নিরাপত্তার জন্য সব ব্যবস্থা করে রেখেছেন প্যাটারসন। তবে কী ব্যবস্থা সে সম্পর্কে কেউ জানতেও চায়নি আর তিনিও কিছুই বলেন নি। এটাই ভালো হয়েছে।

জীবনে প্রথমবারের মত নিজেকে একা বোধ করল বিজয়। পিতা-মাতার মৃত্যুর পরে আঙ্কেলকে পেয়েছে। আঙ্কেল যখন খুন হলেন তখনো পাশে কলিন ছিল। পরে রাধা।

অথচ এখন সে সম্পূর্ণ একা। আপন মনে ভেবে দেখল যে এটাই সত্যি। মানুষ পৃথিবীতে একাই আসে আর সেভাবেই চলে যায়। কেন যেন হতাশায় ছেয়ে গেছে মন। সারাক্ষণ কেবলই মৃত্যুর কথা ভাবছে। তবে এতে অবাক হবারও কিছু নেই; বরাবরই মৃত্যু এসে তার প্রিয়জনদের ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।

হাতের গ্লাসটাকে ডেস্কের উপর নামিয়ে রাখল। অন্য কিছু না হলেও এসব চিন্তাভাবনার হাত থেকে বাঁচার জন্যও নিজেকে ব্যস্ত করে ফেলতে হবে। তাই ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত পাঁচতলায় উঠে কার্টনগুলো খুলে দেখাটাই ভালো হবে। তারপর না হয় ঘুমাতে যাবে।

আর ঠিক সেসময়েই ঝনঝন করে বেজে উঠল টেলিফোন। ভ্রু-কুঁচকে তাকাল বিজয়। কে হতে পারে? ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল এগারোটা বাজে। এত রাতে তো কারো ফোন করার কথা নয়।

নাম্বারটাও অপরিচিত। ঠিক করল ফোনটা ধরবে।

“ইয়েস?”

“বিজয় সিং?”

ভ্রুকুটি করল বিজয়। তার মানে পরিচিত কেউ। কিন্তু কণ্ঠস্বর তো চিনতে পারছে না।

“বলছি।”

“তুমি আমাকে চেন না।” খানিকটা দ্বিধায় পড়ে গেছে কণ্ঠস্বরের মালিক; বলা যায় গলাটা কাঁপছে। মনে হচ্ছে বুঝতে পারছে না বিজয়কে ফোন করাটা ঠিক হয়েছে কিনা। খুব সাবধানে, মেপে মেপে কথা বলছে।

“কে বলছেন?”

“আমি প্রতাপ সিংয়ের বন্ধু।” উত্তরে শুনল, “খুব কাছের বন্ধু।”

নড়েচড়ে বসল বিজয়। প্রতাপ সিং তো ওর বাবার নাম। “আপনার নাম কী?”

“আমি…আমরা কি একবার দেখা করতে পারি?”

“তার আগে জানতে হবে যে, আপনি কে?”

“আমাদের আসলে দেখা করা দরকার। লোকটা এবার বেশ জোর দিচ্ছে। সরে গেছে সব দ্বিধা। “তোমাকে কয়েকটা কথা বলতে চাই। তোমার বাবা মারা যাবার আগে আমাকে একটা জিনিস দিয়ে গেছেন। তারপর নিজেকে শুধরে নিয়ে বলল, “গাড়ি দুর্ঘটনার আগে।”

“কী সেটা?”

“আমি…ফোনে বলতে পারব না দেখা করলে ভালো হয়।”

“আর আমার সাথে যোগাযোগ করার জন্য পনের বছর কেন অপেক্ষা করলেন?”

“তখন প্রয়োজন পড়েনি। এখন দরকার।”

মনে মনে ভেবে দেখল বিজয়। পনের বছর পরে এই রহস্যময় ফোনটা করার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে?

“আপনি যে ধোকা দিচ্ছেন না সেটাই বা কিভাবে বুঝব? আমার বাবাকে চেনার ভান করছেন হয়ত?”

“তোমার ই-মেইল চেক করে দেখো।”

“দাঁড়ান।” ল্যাপটপ নিজের কাছে টেনে নিয়ে সুইচ অন করল বিজয়। তারপর দ্রুতহাতে মেইল চেক করে নিল। আসলেই কয়েক মিনিট আগে একটা ই-মেইল এসেছে। তবে অ্যাড্রেসটা অপরিচিত। মেইলে ক্লিক করল।

আর সাথে সাথে যেন জমে গেল। পর্দার ছবিটাকে যেন বিশ্বাসই হচ্ছে। এবারে বুঝতে পারল। বাবার কাগজপত্রের একটা ফাইল। সংবাদপত্রের কাটা অংশ আর বিভিন্ন আর্টিকেল। প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজের উপর গবেষণা। চমকে গেল বিজয়। বাকিটা এখন জানতেই হবে।

“তুমি কি লাইনে আছো?” খানিকটা উদ্বেগের স্বরে জানতে চাইল ওপাশের লোকটা। কল্পনার জগৎ থেকে ফিরে এলো বিজয়, “হ্যাঁ, আছি। কখন দেখা করব?”

“এখন থেকে ছয় মাস পর। স্টারবাকস্। সাইবার হাব, গুড়গাঁও। দুদিন আগে ফোন করে তোমাকে সময় বলে দিব।”

“এত জরুরি হলে দেখা করার জন্য আরো অপেক্ষা করছেন কেন?” কিছুই বুঝতে পারছে না বিজয়।

“প্রস্তুতির জন্য আমার কিছু সময় দরকার।” সংক্ষিপ্ত একটা উত্তর দিল লোকটা।

কেটে গেল ফোন। বসে বসে ভাবতে লাগল বিজয়। পুরো মাথা যেন ঘুরছে। কে এই রহস্যময় লোক? পরিষ্কার বোঝা গেছে জরুরি ভিত্তিতে দেখা করতে চায়। অথচ আবার ছয় মাস পরের টাইম দিল। কেন? লোকটার ব্যাখ্যাটাও তত পছন্দ হল না। কোন ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে? আর দেখা হলে বিজয়কেই বা কী জানাবে? এত্ত এত্ত প্রশ্ন যেগুলোর কোনো উত্তরই নেই।

যাই হোক, আজ থেকে ছয় মাস পরে এই রহেস্যর জট খুলবে।

সে পর্যন্ত তাকে অপেক্ষা করতেই হবে।

চলবে…

*

লেখকের কথা

প্রিয় পাঠক

এই বই সম্পর্কে এত আগ্রহের জন্য ধন্যবাদ। এটা একটা সিরিজের প্রথম বই। আমার প্রথম উপন্যাস ‘দ্য মহাভারত সিক্রেটের’ মত সমাপ্তিতে এসে কাহিনিটা শেষ হয়নি, বরঞ্চ বলা যায় আরো বহুদূর চলবে।

এইমাত্র যা পড়লেন তা নিয়ে নিশ্চয় মনে অনেক প্রশ্ন জাগছে আর এসবের ব্যাখ্যাও জানতে ইচ্ছে করছে। বই পড়ার সময় অনেক ঘটনা কিংবা বর্ণনা অথবা চরিত্র সম্পর্কে হয়ত ভালোভাবে বুঝতে পারেন নি। তবে এসবই ইচ্ছেকৃত; কারণ এই কাহিনি এখানেই শেষ হয়নি। দয়া করে বিশ্বাস রাখুন যে আপনার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেয়া হবে আর গল্পের বিস্তৃতির সাথে সাথে কেটে যাবে সমস্ত দ্বিধা।

আমি শুধু আশা করছি এসব শঙ্কাই আপনাদের রোমাঞ্চিত করে রাখবে আর কাহিনি শেষ হবার সাথে সাথে সমস্ত উত্তর পেয়ে যাবেন। তাই আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ হল, ধৈর্য সহকারে পরবর্তী কয়েকটা বইয়ের জন্য অপেক্ষা। করুন। প্রতিজ্ঞা করে বলছি যে এই অপেক্ষা বৃথা যাবে না।

এই ফাঁকে এমন কিছু ঘটনা বইয়ে আছে যার ব্যাখ্যা আমার মনে হয় দেয়া উচিত। সেগুলো হল :

বিজ্ঞানের ফাইল থেকে

এই বইয়ে অসংখ্য বৈজ্ঞানিক গবেষণার কথা লেখা আছে। যতদূর সম্ভব সহজভাবে তুলে ধরার চেষ্টায় খেয়াল রেখেছি যেন প্রয়োজনমত বর্ণনারও কোনো কমতি না হয়। তাই গল্পের বাকি অংশ উন্মোচিত না করেই কিছু কিছু ব্যাখ্যা এখানে সোজাসাপ্টাভাবে তুলে ধরা হল।

পি সি আর পরীক্ষা : পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশনের মাধ্যমে ডিএনএ’র সংক্ষিপ্ত অনুক্রম বিশ্লেষণ করা হয়। পি সি আ’রের মাধ্যমে আরএনএ’র পুনউৎপাদন ঘটে। এই অনুরূপ তৈরির কাজে ডিএনএ পলিমারেজ ব্যবহার করা হয়। পিসিআর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ডিএনএ নিজে নিজেকেই অনুরূপ তৈরির মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে। আর চেইন রিঅ্যাকশনের মাধ্যমে ডিএনএ’র আরো অসংখ্য কপি তৈরি হয়।

স্টিনশ্নে : নতুন এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বহনযোগ যন্ত্রের সাহায্যে যে কোনো ধরনের যানবাহন, ঘর-বাড়ি আর দালানের মাঝেও সেল ফোনের সিগন্যাল খুঁজে বের করা যায়। সেল ফোনের টাওয়ার, আর ফোনের সমস্ত তথ্য এমনকি ই-মেইল, মেসেজ আর সেল সাইট তথ্য মুছে এই নজরদারির কাজ করা যায়। এর মাধ্যমে স্টিনগ্রে যন্ত্র ব্যবহারকারী চাইলে সেল ফোনের অবস্থান নির্ণয় করা ছাড়াও কাকে ফোন করল, কাদের সাথে সময় কাটাল সব বের করতে পারে।

ভাইরাসের অনুরূপ তৈরি : বিভক্তির মাধ্যমেই সমস্ত কোষের অনুরূপ তৈরি হয়। নিউক্লিয়াসে অবস্থানরত ভিন্ন ভিন্ন ডিএনএ কপি তৈরি হয়। কিন্তু একটা ভাইরাস নিজে থেকে এ কাজ করতে অক্ষম। তাই প্রয়োজন আশ্রয়দাতা যা হতে পারে যে কোনো জীবন্ত প্রাণী। এমনকি ব্যাকটেরিয়া পর্যন্ত। সাধারণ একটা ভাইরাস ডিএনএ’কে আরএনএ’তে অনুবাদের মাধ্যমে বদলে যায় (রাইবো-নিউক্লিক অ্যাসিড)। এই আরএনএ আর কিছুই নয় প্রোটিন জড়ো করার জন্য কম্পিউটার প্রোগামের মত একগাদা নির্দেশ। এসব প্রোটিন সহযোগে তৈরি হয় নতুন ভাইরাস। ভাইরাস আশ্রয়দাতা কোষ সংক্রমণের মাধ্যমে এই কোষের অনুরূপ তৈরির কলকজা ব্যবহার করে নিজ ডিএনএ’কে আর এন এতে রূপান্তর করে। ফলে ভাইরাসের প্রোটিন নতুন আরেক প্রোটিনের জন্ম দেয়। শিশু ভাইরাসটাই তখন কোষের মাঝে বিস্ফোরিত হয়ে এটাকে মেরে ফেলে; আরো নতুন কোষে সংক্রমণ করে। পুরো প্রক্রিয়াটা আবার নতুন করে শুরু হয়। ভয়ংকর, তাই না?

প্রো-ভাইরাস : আশ্রয়দাতার ডিএনএ’র মাঝে আবদ্ধ ভাইরাসের জেনেটিক কোড বা জিনগত সংকেত।

ব্যাকটেরিওফেজ : এগুলো এমন সব ভাইরাস যা ব্যাকটেরিয়ার মাঝে সংক্রামিত হয়ে এর কোষকে উপরোল্লিখিত প্রক্রিয়ায় অনুরূপ তৈরির কাজে ব্যবহার করে।

ভিরিয়ন : সংক্রামিত ভাইরাসের অংশ।

রেট্রোভাইরাস অনুরূপ তৈরি প্রক্রিয়া : রেট্রোভাইরাস আরো চতুর আর জটিল। এগুলোতে আর এন এর তন্তু থাকে; ডিএনএ’র নয়। তাই যখন তারা আশ্রয়দাতা কোষকে সংক্রামিত করে তখন প্রথমে আর এন এ ডিএনএতে পরিবর্তিত হয়। প্রোটিনকে ব্যবহার করে এই পুরো প্রক্রিয়া ঘটে। ভাইরাস ডিএনএ সৃষ্টি হয়ে গেলে পর এটাকে আশ্রয়দাতা কোষের ডিএনএ’তে বসিয়ে দেয়া হয় ঠিক তাই! আশ্রয়দাতার অংশ হিসেবে মানব শরীরে ডিএনএ’র গুরুত্বপূর্ণ অংশও রেট্রোভাইরাস থেকে আসে। বিশ্বাস হোক বা না হোক ডিএনএ’তে চলে আসায় আমরাও অংশত ভাইরাসে পরিণত হই! ভাইরাস ডিএনএ তখন ভাইরাস আরএনএ’তে পরিণত হয়, যার ফলে প্রোটিনের উৎপাদন বেড়ে যায় আর নতুন ভাইরাস জড়ো হয়। এই বইয়ে উল্লেখিত রেট্রোভাইরাস এভাবেই কাজ করে। লেকের ব্যাকটেরিয়াতে সংক্রামিত হয়ে সেগুলোর ডিএনএ বদলে দিয়েছে। (ব্যাকটেরিয়ার ডিএনএ’র মধ্যে নিজের ডিএনএ ঢুকিয়ে দেয়ার মাধ্যমে)। এর ফলে ব্যাকটেরিয়া থেকে উৎপন্ন প্রোটিনের প্রকৃতি বদলে যায়-আর বাস্তব জীবনেও সত্যি তাই ঘটে।

উপকারী ভাইরাস : রেট্রোভাইরাস মানবকোষে সংক্রামিত হবার পর পূর্বের নিষ্ক্রিয় জিনকেও সচল করে তোলে। এটা পুরোপুরি সত্যি। বইয়ে ব্যবহৃত উদাহরণগুলোও একেবারে সত্য। ভাইরাস কিভাবে আমাদের ডিএনএ আর জিনকে সংক্রামিত করে সে ব্যাপারে প্রতিদিন অসংখ্য নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কৃত হচ্ছে। জিনগুলো আসলে অনেকটা কম্পিউটার প্রোগামের মতন। শুধু এই প্রোগ্রামগুলোই শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে প্রোটিন উৎপন্ন করে। বইয়ে উল্লেখিত সমস্ত প্রোটিন যেমন পিফিফটি থ্রি একটা সত্যিকারের প্রোটিন। এমনকি এগুলোর কর্মক্ষমতাও সত্য। গোপন সব জিনকেও সক্রিয় করে তোলে ভাইরাস। এর ফলে প্রোটিনের উৎপাদন বেড়ে যায় যার ফলে শরীরে সব ধরনের প্রভাব পড়ে। আমরা হয়ত সেসব টেরও পাই না। এই কারণেই আজকের দুনিয়ায় সর্বত্র জিনশাস্ত্র নিয়ে চর্চা করা হয়। যে কোনো ওষুধের চেয়েও জিনগত চিকিৎসা বেশি কার্যকরী। বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন আমাদের অনেক উপকারে লাগে। পিফিফটিথ্রি সত্যিই ক্যান্সারের কোষকে মেরে ফেলে। আর এমন অনেক জিন আছে যেগুলোর উৎপাদিত প্রোটিন ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, অ্যালজেইমা আর কার্ডিওভাসকুলার রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এসব জিনের স্থানান্তর এ সমস্ত রোগের কারণ। যদি এমন কোনো পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয় যার ফলে প্রোটিন উৎপাদনের জন্য এসব জিনের কর্মক্ষমতা বেড়ে যাবে তাহলে বৃদ্ধ হবার প্রক্রিয়া সত্যিই ধীর হয়ে যাবে। আমি যখন লিখছি তখন এ সম্পর্কে চারপাশে বিস্তর গবেষণা হচ্ছে আর কে জানে হয়ত আগামী বিশ বছরে কোনো একটা সমাধানও বের হয়ে যাবে!

প্রোফেজ পদ্ধতি : ভাইরাস দু’ভাবে পুনর্জাত হতে পারে। প্রথমটা হল লিকটিক চক্রের মাধ্যমে। যেখানে ভাইরাস আশ্রয়দানকারী কোষ খুঁজে নিয়ে পুনর্জাত হবার জন্য সেই কোষেরই সেলুলার মেশিনারি ব্যবহার করে। ফলে ভাইরাসে পূর্ণ হয়ে কোষ বিস্ফোরিত হয়। কোষ মারা যাওয়ার ফলে মুক্ত ভাইরাস আরো অসংখ্য কোষকে সংক্রমণ করে। দ্বিতীয়টা হচ্ছে লিসোড়েনিক সাইকেল। ভাইরাস একটা প্রোফেজ হওয়ায় এর জিনগত উপাদান আশ্রয়দানকারী জিনের মাঝে মিশে যায়। ভাইরাস এরপর এই কোষের মাঝে লুকিয়ে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত না লিকটিক স্টেজে পুনর্জাত হয়ে উঠে। প্রোফেজ পদ্ধতির মাধ্যমে এসব গুপ্ত ভাইরাস লিকটিক স্টেজে প্রবেশ করে পুনর্জাত হয়। তবে এর জন্য উদ্দীপক প্রয়োজন। ব্যাকটেরিয়ার ক্রোমোজোম থেকে প্রোফেজকে অপসারণ করবে।

টেলোমারেজ আর বৃদ্ধ হওয়া : এই বইয়ে আমি যে প্রোটিনের কথা উল্লেখ করেছি সে টেলোমারেজ হল একটা নোবেল প্রাইজের বিষয়। কোষসমূহ যাতে বিভক্তি প্রক্রিয়া থামিয়ে না দেয় কিংবা মৃত্যবরণ না করে তাতে সাহায্য করে টেলোমারেজ। টেলেমারেজের উপকারী দিক নিয়ে বিজ্ঞানীদের মাঝেও জোর বিতর্ক আছে। এর উৎস হল টেলোমারেজের উপস্থিতি সত্ত্বেও ক্যান্সারের উদয়ের সম্ভাবনা। আমরা যখন মাতৃগর্ভে ঐণ হিসেবে ছিলাম, তখন থেকেই সক্রিয় আছে এই টেলোমারেজ। কেননা জ্বণের বৃদ্ধির জন্যও টেলোমারেজ দরকার। তারপর যেদিন জন্মগ্রহণ করি সেদিন থেকেই টেলোমারেজ উৎপাদনের জন্য দায়ী জিন বন্ধ হয়ে যায়। ফলে টেলোমারেজ কমতে থাকে। আমরা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাই। তবে কোষগুলো যেন অনুরূপ তৈরি করতে থাকে তা প্রকৃতিই নিশ্চিত করে দেয়, যা হল ক্যান্সারের সংজ্ঞা। তাই টেলোমারেজ হল দো ধারী তলোয়ার। বৃদ্ধ হবার প্রক্রিয়া ধীর করলেও ক্যান্সারে মৃত্যু ত্বরান্বিত করে।

তারপরেও জিন আর প্যাথোজিন নিয়ে আমাদের জ্ঞান এখনো সীমিত। কোষের কর্মপ্রণালি, জিন কিভাবে কাজ করে, প্যাথোজিন কিভাবে আশ্রয়দাতাকে সংক্রামিত করে (মানুষ কিংবা প্রাণী) সে সম্পর্কে প্রতিদিনই কোনো না কোনো কিছু আবিষ্কৃত হচ্ছে। এই বইয়ে ব্যবহৃত ঘটনা ও তথ্য মাত্র গত দুই থেকে তিন বছর আগেকার আবিষ্কার।

শুক্রের বিস্ময়কর ঘটনা : এই বইয়ের ষষ্ঠ অধ্যায়ে বর্ণিত ঘটনা আসলেই এক বিস্ময়। একই ধরনের আশ্চর্য আরেক ঘটনা ঘটেছিল ওয়েলস’র ব্রায়ান সিলি দু’নামক স্থানে; যেখানে ঠিক বইয়ের বর্ণনার মত করেই একটা প্রবেশপথ উন্মোচন করে দিয়েছে শুক্র। ইউরিয়েল’স মেশিন নামক বইয়ে এ বিষয়ে গবেষণা করে আদ্যোপান্ত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন ক্রিস্টোফার নাইট আর রবার্ট লোমাস। যেহেতু এটা কল্প-কাহিনি, হিন্দুকুশে এ ধরনের ঘটনা না শুনলেও ঘটনাটা একেবারে মিথ্যে নয়। লাইটবক্সের ধারণাও নিউগ্রাঞ্জ, আয়ারল্যান্ড থেকে ধার করা হয়েছে, যেখানে সূর্য (শুক্র নয় কিন্ত) আলো ফেলে পাথরের দেয়ালের মাঝেকার প্রবেশপথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে। বইয়ে এর উল্লেখও আছে।

ইতিহাসের পাতা থেকে : বইয়ে অলিম্পিয়াস, ইউমেনিস আর ক্যালিসথিনস সম্পর্কে অনেক কিছু বলা হলেও অন্যান্য ঐতিহাসিক চরিত্রেরও উল্লেখ আছে। তাই ভাবলাম তাদের সম্পর্কে আরো কিছু বলা যাক।

পার্দিক্কাস : আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পরে বেশ কয়েক বছর পর্যন্ত পুরো সাম্রাজ্যে রাজপ্রতিভূ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু আলেকজান্ডারের জেনারেলদের ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়ে পরবর্তীতে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর প্রধান মিত্র ছিল ইউমেনিস।

অ্যান্টিপ্যাটার : উনাকে ফিলিপ আর আলেকজান্ডার দু’জনেই অত্যন্ত বিশ্বাস করতেন। আলেকজান্ডারের এশিয়া অভিযানের সময় রাজার হয়ে গ্রিস আর মেসিডোনিয়া নিয়ন্ত্রণ করতেন।

পলিপার্সন : অ্যান্টিপ্যাটারের সাথে মিত্রতা করে তার মৃত্যুর পর গ্রিস আর মেসিডোনিয়ার রাজপ্রতিভূ হয়ে উঠেন। পরবর্তীতে ক্যাসান্ডার তাঁকে পরাজিত করে সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ ভার নিয়ে নেয়।

ক্যাসান্ডার : অ্যান্টিপ্যাটারের পুত্র।

টলেমি : আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর মিশরের শাসক হিসেবে নিযুক্ত হন। পার্দিক্কাস আর অ্যান্টিগোনাসের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মদদ দিয়েছেন। তারপর ফারাও পদবী নিয়ে টলেমি রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করে।

অ্যান্টিগেনাস : প্রকৃতপক্ষে ফিরিজিয়ার গভর্নর ছিলেন। পার্দিষ্কাসের সাথেই পতন ঘটে আর সিরিয়া আর পারস্যের জন্য ইউমেনিসের সাথে যুদ্ধ করেন। ইউমেনিসের হাতে দু’বার পরাজিত হবার পর অত্যন্ত ধূর্ততার সাথে তাকে গ্রেফতার ও মেরে ফেলা হয়।

ক্লিটাস : একজন বাস্তব চরিত্র। ক্রিমসন বিশ্ববিদ্যালয়ের এলিজাবেথ কানির লেখা “দ্য ডেথ অব ক্লিটাস” আর পুটার্কের “লাইফ অব আলেকজান্ডারে” বর্ণিত সত্য ঘটনা অবলম্বনেই লেখা হয়েছে।

আমার পঠিত সমস্ত বই-পত্র, আর্টিকেল, ভিডিও আর ওয়েব সাইটে ঢু মারা ছাড়াই যদি আরো বিশদভাবে জানতে চান তাহলে দুই ধরনের সূত্র অলিম্পিয়াস ও আলেকজান্ডার সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে। একই সাথে আলেকজান্ডারের মৃত্যু পরবর্তী যুদ্ধসমূহে তার জেনারেলদের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে পারবেন ভিজিট করুন :

. আলেকজান্ডার : http://www.ancuient.eu.com/Alexander-the-Great

. অলিম্পিয়াস : http://www.historydoday.com/rabin-waterfeild/ ofympias olympias-funeral-games

.

পুরাণতত্ত্ব

সমুদ্রমন্থন : পৌরাণিক এই কাহিনি সবারই জানা। বইয়ের ভিত্তি হিসেবে আমি দুই ধরনের সূত্র ব্যবহার করেছি-কিশোরী মোহন গাঙ্গুলীর লেখা “দ্য মহাভারত ভাষা” (প্রকৃত সংকৃত গদ্যের ইংরেজি অনুবাদ আর সান সারিনের লেখা সমুদ্রমন্থন; এখানে প্রতিটি সংস্কৃত শ্লোকের ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা সমেত প্রকৃত সংস্কৃত শ্লোকগুলো লেখা আছে। কেননা প্রকৃত সংস্কৃত গদ্য পড়া আসলে বেশ কঠিন ব্যাপার।)

আমার উপস্থাপিত সমুদ্রমন্থনের ব্যাখ্যা আর বিজ্ঞান উভয়ই আপ যুক্তিসংগত দৃশ্যকল্প। অনুবাদ আর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাগুলোকেও সংস্কৃত ভাষায় দক্ষ পণ্ডিতগণ স্বীকৃতি দিয়েছেন। চিকিৎসাশাস্ত্র সম্পর্কিত ব্যাখ্যাগুলোও বিশ্বাসযোগ্য। তবে সত্যিই কি এমনটা ঘটেছে? অসম্ভব নয় কিন্তু! জানতে ভিজিট করুন আমার ওয়েব সাইট (www.christopher.cdoyle.com) অথবা ফেসবুক পেইজ (www.facebook.com/authorchristophercdoyle) আশা করি এই বইয়ে ব্যবহৃত বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা ও তথ্য জানতে সক্ষম হবেন। এছাড়া বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে ই-মেইল করুন এই ঠিকানায়[email protected]

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *