২০।৪ বিংশ কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক

চতুর্থ অনুবাক
প্রথম সূক্ত
[ঋষি : গৃৎসমদ দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

যো জাত এব প্রথমো মনস্বান্ দেবো দেবান তুনা পৰ্যভূষৎ। যস্য শুম্মাদ রোদসী অভ্যসেতাং নৃণস্য মহা স জনাস ইন্দ্রঃ ॥১॥ যঃ পৃথিবীং ব্যথমানামদৃংহদ যঃ পর্ব প্রকুপিতা অরণাৎ। যো অন্তরিক্ষং বিমমে বরীয়ো যো দ্যামস্তভ ৎ স জনাস ইন্দ্রঃ ॥ ২॥ যো হত্বাহিরিণাৎ সপ্ত সিন্ধুন যো গা উদাজদপধা বলস্য। যো অশ্বমনোরন্তরগ্নিং জজান সম্বক সমসু স জনাস ইন্দ্ৰঃ ॥ ৩॥ যেনেমা বিশ্বা চ্যবনা কৃতানি যো দাসং বর্ণমধরং গুহাকঃ। শীব যো জিগীবাং লক্ষমাদদর্যঃ পুষ্টানি স জনাস ইন্দ্রঃ ॥৪॥ যৎ স্মা পৃচ্ছন্তি কুহ সেতি ঘোরমুতেমাহুর্নৈমো অস্ত্রীত্যেন। সো অৰ্যঃ পুষ্টব্রিজ ইবা মিনাতি শ্ৰদস্মৈ ধত্ত স জনাস ইন্দ্র ॥৫৷৷ যো রপ্ৰস্য চোদি যঃ কৃশস্য যো ব্ৰহ্মণণা নাধমানস্য কীরেঃ। যুক্তগ্রাবণে যোহবি সুশিঃ সুতসোমস্য স জনাস ইন্দ্রঃ ॥৬৷৷ যস্যাশ্বাসঃ প্রদিশি যস্য গাবো যস্য গ্রামা যস্য বিশ্বে রথাসঃ।। যঃ সূর্যং য উষসং জজান যো অপাং নেতা স জনাস ইন্দ্রঃ ॥৭॥ যং ক্রন্দসী সংযতী বিয়েতে পরেহবর উভয়া অমিত্রাঃ। সমানং চিদ্রথমাতস্থিৰাংসা নানা হবেতে স জনাস ইন্দ্রঃ ॥ ৮৷ যম্মান ঋতে বিজয়ন্তে জনাসসা যং যুধ্যমানা অবসে হবন্তে। যা বিশ্বস্য প্রতিমানং বভূব যো অচ্যুতচ্যুৎ স জনাস ইন্দ্ৰঃ ॥৯॥ যঃ শশ্বততা মহেনো দবানানমন্যমানাংছা জঘান। যঃ শর্ধতে নানুদদাতি শৃধ্যাং যো দস্যোহন্তা স জনাস ইন্দ্রঃ ॥ ১০ যঃ শম্বরং পর্বতে ক্ষিয়ন্তং চত্বারিংশ্যাং শরদ্যন্ববিন্দ। ওজায়মানং যো অহিং জঘান দানুং শয়ানং স জনাস ইন্দ্রঃ ॥১১। যঃ শম্বরং পর্যৰ্তরৎ কসীভিযোহচারুকাপিবৎ সুতস্য। অন্তর্গিরৌ যজমানং বহু জনং যস্মিন্নামূচ্ছৎ স জনাস ইন্দ্রঃ ॥১২৷ যঃ সপ্তরশ্মিবৃষভস্তুবিষ্মনবাসৃজৎ সর্তবে সপ্ত সিন্ধু। যো রৌহিণমস্ফুরৎ বজ্ৰবাহুৰ্দামারোহন্তং স জনাস ইন্দ্রঃ ॥১৩৷৷ দ্যাবা চিদস্মৈ পৃথিবী নমেতে শুচ্চিদস্য পর্বতা ভয়ন্তে। যঃ সোমপা নিচিতে বজ্ৰবাহুর্যো বজ্রহস্তঃ স জনাস ইন্দ্রঃ ॥১৪৷ যঃ সুন্বন্তমবতি যঃ পচন্তং যঃ শংসন্তং যঃ শশমানমূতী। যস্য ব্রহ্ম বর্ধনং যস্য সোমমা যস্যেদং রাধঃ স জনাস ইন্দ্রঃ ॥১৫জাতত ব্যখ্যৎ পিত্রোরুপন্থে ভুবো ন বেদ জনিতুঃ পরস্য। স্তবিষ্যমাণো নো যো অস্মৎ ব্ৰতা দেবানাং স জনাস ইন্দ্রঃ ॥ ১৬৷৷ যঃ সোমকামো হর্যশ্বঃ সূর্যিম্মাৎ রেজন্তে ভুবনানি বিশ্বা। যে জঘান শম্বরং যশ্চ শুষ্ণং য একবীরঃ স জনাস ইন্দ্রঃ ॥১৭ ৷৷ সঃ সুন্বতে পচতে দুর্ধ আ চিৎ বাজং দর্দর্ষি স কিলাসি সত্যঃ। বয়ং ত ইন্দ্র বিশ্বহ প্রিয়াসঃ সুবীরাসসা বিদথমা বদেম ॥ ১৮

বঙ্গানুবাদ –যিনি (য) অর্থাৎ যে ইন্দ্রদেব (দেবঃ) প্রাদুর্ভূতমাত্র প্রকৃষ্টতম হয়েছেন (জাতঃ এব প্রথমঃ), অর্থাৎ সকল দেবগণের মধ্যে মুখ্যরূপে স্বীকৃত হয়েছেন; যিনি প্রকৃষ্টরূপে অনুগ্রহপূর্ণ হৃদয়ে (মনস্বান) অসাধারণ কর্মের বা ব্যাপারের দ্বারা (ক্রতুনা) অপর দেবগণকে (দেবান) আপন অধীন করেছেন (পরি অভূষৎ), বা রক্ষার্থে পরিগ্রহ করেছেন; যে ইন্দ্রের (যস্য) শোষক অর্থাৎ শারীরিক বল হতে (শুম্মাৎ) ও সেনালক্ষণ মহত্ত্ব হতে (নৃমণস্য মা) দ্যাবাপৃথিবী ভীতা (রোদসী অভ্যসেতাং), হে মর্তবাসী জনগণ (জনাসঃ)! তিনিই ইন্দ্র (সঃ ইন্দ্ৰঃ); অর্থাৎ আমি হেন ঋষি নই৷১

হে মর্তবাসী জনবৃন্দ (জনাসঃ)! যিনি (যঃ) গতিশীলা বা বিচলিতা (ব্যথমানা) পৃথিবীকে শর্করা ইত্যাদির দ্বারা দৃঢ় বা স্থির করেছেন (অদৃংহৎ); যিনি (যঃ) প্রকূপিত অর্থাৎ প্রকোপপ্রাপ্তি পূর্বক পরস্পর যুদ্ধরত হয়ে ইতস্ততঃ চলমান পক্ষযুক্ত পর্বতগুলির পক্ষচ্ছেদন পূর্বক নিয়মবদ্ধ বা অচল করে দিয়েছেন (অরৎ), অর্থাৎ তারা যাতে উপদ্রবের দ্বারা প্রাণীপীড়নে সক্ষম না হতে পারে সেই মতো তাদের স্বস্থানে স্থাপিত করেছেন; যিনি সকল অন্তরকে ক্ষান্ত করেছেন অর্থাৎ র অন্তরিক্ষরূপে বিরাজমান; (তিনি কেমন? না–) বরীয় অর্থাৎ ইয়ত্তাশূন্য ও দ্যাং অস্তভাত্মাৎ অর্থাৎ দ্যুলোককে নিরুদ্ধ করেছেন; তিনিই ইন্দ্র (সঃ ইন্দ্রঃ), আমি নই ২।

যিনি (যঃ) অন্তরিক্ষে বিহারশীল মেঘকে (অহিং) বিদীর্ণ করে (হত্বা) গঙ্গা-যমুনা ইত্যাদি সর্পণশীলা বা সপ্তসংখ্যকা নদীকে (সপ্ত সিন্ধুন) প্রেরণ করেছেন (অরিণাৎ); যিনি (যঃ) বল-নামক অসুরের দ্বারা অপহৃত গাভীগুলিকে আচ্ছাদন ভেদ করে প্রকটিত বা উদগমিত করেছেন (বলস্য গাঃ উদাজৎ অপধা); যিনি (যঃ) মেঘের মধ্যে ব্যাপ্ত অগ্নিকে উৎপাদিত করেছেন (অশ্মনোঃ অন্তঃ অগ্নিম্ জজান), অর্থাৎ মেঘে মেঘে সঙ্ঘর্ষের দ্বারা বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছেন; এবং যিনি সংগ্রামে (সমৎসু) শত্রুর সম্বৰ্জক অর্থাৎ বিনাশক (সমবৃক); তিনিই ইন্দ্র (সঃ ইন্দ্রঃ), আমি নই ৷ ৩৷

হে জনগণ (জনাসঃ)! যিনি (যেন) পরিদৃশ্যমান সর্বলোককে (ইমা বিশ্বা) দৃঢ়ীকৃত করেছেন (চ্যবনা কৃতানি); যিনি হীনতাপ্রাপ্ত নীচবর্ণীয় অসুরবর্গকে (বর্ণং দাসং) নিকৃষ্টে পরিণত করে (অধরং) গুহায় অবরুদ্ধ করেছেন (গুহা অকঃ); অধিকন্তু যিনি (যঃ) প্রত্যক্ষ (লক্ষ্যং) অর্থাৎ সম্মুখ-সংগ্রামী শত্রুদের জয় পূর্বক (জিগীবা) তাদের সমৃদ্ধ ধন (পুষ্টানি অৰ্যঃ) আপন অধিকারভুক্ত করেছেন (আদৎ); (তার দৃষ্টান্ত কি? না) শ্বঘ্নীব অর্থাৎ কুকুরের দ্বারা লক্ষ্যকৃত হরিণকে ব্যাধ যেমন গ্রহণ করে; তিনিই ইন্দ্র (সঃ ইন্দ্র), আমি নই। ৪

শত্রুবর্গের বিনাশক ভয়ঙ্কর (ঘোর) যাঁকে (যং) অর্থাৎ যে ইন্দ্র সম্পর্কে লোকে, প্রশ্ন করে (পৃচ্ছন্তি স্ম)-যাঁকে ইন্দ্র ইন্দ্র বলে আহ্বান করা হয়, তিনি কোথায় বিদ্যমান (কুহ)? অপিচ (উত), অপরে কেউ কেউ বলে–সেই ইন্দ্র নেই। (ঈং এনং আহুঃ ন এষ অস্তি ইতি); (মতান্তরে বলা হচ্ছে)–যদি থাকতেন তাহলে আমাদের দৃষ্টিপথে প্রাপ্ত হতেন; অতএব তিনি নেই। এমন সংশয় করো না। সেই ইন্দ্র (সঃ) ভয়হেতু ব্যাঘ্র ইত্যাদির ন্যায় শত্রুসেনার উদ্বেগজনক (অৰ্যঃ পুষ্টীঃ বিজ ইব)। হে মর্তবাসী জনগণ (জনাসঃ)! এই ইন্দ্ৰবিষয়ে (অস্মা) বিশ্বাস করো ও তাঁর প্রতি সর্বতো শ্রদ্ধাবান হও। (আ মিনাতি শ্ৰৎ ধত্ত)। তিনি যদি না থাকতেন, তাহলে বৃত্র ইত্যাদি শত্রুসেনাদের কে জয় করতেন?–এই হেন শত্রুসেনাদের যিনি বিনাশক, তিনিই ইন্দ্র (সঃ ইন্দ্রঃ), আমি নই। ৫৷৷

 যিনি (যঃ) অভিমত ফল-প্রেরয়িতা বা সমৃদ্ধ রাজগণের (রস্য), শত্রুবর্গের অপগময়িতা (চোদিতা); যিনি ধন ইত্যাদি রহিত ক্ষীণজনের অভীষ্টধন-প্রেরয়িতা (কৃশস্য চোদিতা), অর্থাৎ যিনি নির্ধনকে ধন ও অসহায়কে সহায়তা দান করেন; যিনি স্তোতা ব্রাহ্মণগণকে তাদের যাচিত অভিমত ফল-প্রদাতা (কীরেঃ ব্রহ্মণো নাধমানস্য চোদিতা); যিনি শোভন হনুযুক্ত (সুশি) এবং যিনি প্রস্তরে সোম অভিষব ইত্যাদি কর্মে যুক্ত যজমানের রক্ষক (যঃ যুক্তগ্রাঃ সুতসোমস্য আবতা); হে মর্তবাসী জনগণ (জনাসঃ)! সেই হেন মহানুভাব যিনি, তিনিই ইন্দ্র (সঃ ইন্দ্র), আমি নই ৷৷ ৬

 [পূর্বৰ্মন্ত্রে নির্ধনকে ধন কিংবা স্তোতৃবৃন্দকে অভিমত প্রদানে সমর্থ ইন্দ্রের কথা বলা হয়েছে। এখানে প্রাণিগণের অপেক্ষিত অশ্ব-গো-রথ-বৃষ্টি ইত্যাদি লক্ষণান্বিত যে অর্থরাশি অর্থাৎ পদার্থ সমুদায় রয়েছে সেই সবগুলিকেই প্রদানে সমর্থ ইন্দ্রের কথা বলা হচ্ছে।]-যাঁর অনুশাসনে বা সংবিধানে (প্রদিশি) অথীগণের জন্য দাঁতব্য অশ্ব, বহু দাঁতব্য গাভী, গ্রামলাভকামীর জন্য দানযোগ্য গ্রাম, বহু দানযোগ্য রথ ও সব কিছু (বিশ্বে) অর্থাৎ গজ-উষ্ট্র-যান ইত্যাদি সবই আছে; যিনি সকলের গমন ইত্যাদি ব্যবহারোপযোগী প্রকাশের নিমিত্ত সূর্যকে উৎপন্ন অর্থাৎ উদিত করেছেন, তথা যিনি (যঃ) উষাকেও উৎপাদিত অর্থাৎ প্রকটিতা করেছেন (জজান), যিনি বৃষ্টি-জলের (অপাম) প্রেরক দেবতা (নেতা); হে মর্ত্যবাসী জনগণ (জনাসঃ)! তিনিই ইন্দ্র (সঃ ইন্দ্রঃ), আমি নই। ৭

পরস্পর সংসর্গান্বিত (সংযতী) দ্যাবাপৃথিবী; এর মধ্যে পৃথিবী তার আশ্রিত হে প্রাণীগণের বৃষ্টির নিমিত্ত এবং দ্যুলোক হবির নিমিত্ত যাঁকে আহ্বান করে (ক্রন্দসী), অথবা যুদ্ধের উদ্দেশ্যে পরস্পর সঙ্গত (সংযতী) উৎকৃষ্ট (পরে) ও নিকৃষ্ট (অবরে) শত্রুসেনাগণ আপন আপন জয়ের নিমিত্ত যাঁকে বিবিধ রকমে আহ্বান করে (বিহুয়েতে) এবং সমান অশ্ব-সারথি ইত্যাদি যুক্ত পরস্পরসদৃশ রথে অধিষ্ঠিত (সমানং চিৎ রথং আতস্থিবাংসা) উভয়পক্ষীয় পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী সেনাপতিদ্বয় (উভয়া অমিত্রাঃ) যাঁকে আপনাপন সহায়তার নিমিত্ত পৃথক পৃথক্‌ রূপে আহ্বান করে (নানা হবেতে), হে মর্তবাসী জনগণ (জনাসঃ)! তিনিই ইন্দ্র (সঃ ইন্দ্ৰঃ) আমি নই। ৮।

যাঁর (যস্মাৎ) অর্থাৎ যে বলপ্রদাতার সহায়তা ব্যতীত (ঋতে) প্রবল ও দুর্বল সকল জয়ার্থী জন শত্রুগণকে পরাজিত করতে পারে না (জনাসঃ ন বিজয়ন্তে), সেই কারণে যুদ্ধমান ব্যক্তিগণ আপনাপন রক্ষণের নিমিত্ত যাঁকে আহ্বান করে থাকে (যং যুদ্ধমানা আবসে হবন্তে); যিনি সকলের এমনকি বৃত্র ইত্যাদিজাত শত্রুদেরও (যা বিশ্বস্য) প্রতিনিধিস্বরূপ (প্রতিমানং বভূব) অথবা সকলের, অর্থাৎ সকল প্রাণীজাতের পাপ বা পুণ্য প্রত্যবেক্ষণের নিমিত্ত প্রতিবিম্বের স্বরূপ; যিনি বৃত্র ইত্যাদি যে কোনও দুর্দমনীয় জনের অথবা চ্যুতিরহিত পর্বত ইত্যাদি স্থাবর পদার্থের তাড়নাকারী (অচ্যুতচ্যুৎ), হে মর্তবাসী জনগণ (জনাসঃ)! তিনিই ইন্দ্র (সঃ ইন্দ্রঃ), আমি নই ॥৯॥

 যিনি (যঃ) অত্যধিক পাপীবর্গকে (মহি এনঃ দধানা) অর্থাৎ ব্রহ্মহত্যা ইত্যাদিরূপ পাপানুষ্ঠাতাগণকে; তাকে অমান্যকারীগণের অর্থাৎ তাকে মান্য না করে অপর দেবতাগণকে স্তুতি ও হবির দ্বারা পূজকদের (অমন্যমানা) যিনি হিংসা করেন (শর্বা) কিংবা বজের দ্বারা বিনাশ করেন (শরুবর্জঃ–বজেণ জঘান); যিনি তাতে নিরপেক্ষ হয়ে (শর্ধতে) অর্থাৎ তাকে পরিত্যাগ পূর্বক শক্তবর্গকে বল বা উৎসাহ প্রদানকারী পুরুষবর্গকে বলসাধন কর্মের (শৃধ্যাং) আনুকূল্য প্রদান করেন না (ন অনুদদাতি); যিনি বৃত্র ইত্যাদি দস্যগণের ঘাতক (দস্যোঃ হন্তা), হে মর্তবাসী জনগণ (জনাসঃ)! তিনিই ইন্দ্র (সঃ ইন্দ্ৰঃ), আমি নই। ১০৷

পর্বতের গুহায় ইন্দ্রের ভীতিতে নিবাস করেছিলেন যে শম্বর-নামক অসুর, (শম্বরং পর্বতেষু ক্ষিয়ন্তং), যিনি (যঃ) তাকে চত্বারিংশ (অর্থাৎ চল্লিশ) সম্বৎসর ব্যাপী (শরদি) অন্বেষণ পূর্বক লাভ করেছিলেন (অনু অবিন্দৎ) অর্থাৎ বিনাশ করেছিলেন। অধিকন্তু, যিনি (যঃ) অতিশয়িত বলসম্পন্ন (ওজায়মানং) বৃত্র নামক দানবকে শায়িত করে (অহিং দানুং শয়ানম) হত্যা করেছিলেন (জঘান); হে মর্তবাসী জনগণ! তিনিই ইন্দ্র (সঃ ইন্দ্ৰঃ), আমি নই ৷ ১১।

 যিনি (যঃ) বজ্র ইত্যাদি দীপ্ত অস্ত্রের দ্বারা বা আপন তেজে (কশীভিঃ) শম্বর-নামক অসুরকে পর্যটন করিয়েছিলেন অর্থাৎ গিরি-নদী-সমুদ্র ইত্যাদি সকল স্থান অতিক্রম করিয়েছিলেন (পর্যতরৎ) বা স্বয়ং সেই অসুরের পশ্চাতে ধাবিত হয়েছিলেন; যিনি অসুন্দর মুখের দ্বারা (অচারুকা) পাকপাত্র ইত্যাদিস্থ সোম (সুতং) পান করেছিলেন (অপিবৎ); যাঁকে (যস্মি) হননের নিমিত্ত অসুরগণ, অর্থাৎ চুমুরি-ধুনি প্রভৃতি দানববর্গ, পর্বতের মধ্যে পবিত্র যজ্ঞভূমিতে (অন্তর্গিরে) যজমানকে অর্থাৎ সোমযজ্ঞরত গৃৎসমদকে অধ্বর্য প্রভৃতি যজ্ঞস্থিত জনসঙ্ঘের সাতে (বহুং জনং) অবরুদ্ধ করে দিয়েছিলেন (চামূছ), হে মর্তবাসী জনগণ (জনাসঃ)! তিনিই ইন্দ্র (সঃ ইন্দ্রঃ), আমি নই ॥ ১২।

যিনি (যঃ) সপ্তসংখ্যক পর্জন্যরূপ রশ্মিময় (সপ্তরশ্মিঃ), অথবা সপ্তরশ্মিযুক্ত আদিত্য-স্বরূপ; যিনি কামবর্ষক বা জলবৰ্ষক (বৃষভঃ); যিনি বলবান্ (তুবিম্মান); যিনি প্রবাহমান (সর্তবে) স্যন্দনশীলা নদীসমূহকে, অথবা সপ্তসংখ্যকা গঙ্গা ইত্যাদি নদীগুলিকে (সপ্ত সিন্ধুন) উৎপন্ন করেছেন (অবাসৃজৎ) বা নিম্নগামিনী করেছেন (অব অসৃজৎ); যিনি (যঃ) দিব্যলোকে আরোহণকারী (দ্যাম্ আরোহন্ত) রৌহিন-নামধেয় অসুরকে বজ্রধারী হয়ে (বজ্রবাহুঃ) বধ করেছিলেন (অস্ফুরৎ), হে ॥ মর্তবাসী জনগণ (জনাসঃ)! তিনিই ইন্দ্র (সঃ ইন্দ্ৰঃ); আমি নই ৷৷ ১৩৷

যাঁর মহিমার সমক্ষে (অস্মৈ) দ্যুলোক (দ্যাবা) ও পৃথিবীও নমিত হয় (নমেতে); যার বল হতে (অস্য শুম্মাৎ) পর্বতসমূহও ভীত হয় (ভয়ন্তে); যিনি (যঃ) সোমপানকারীরূপে প্রজ্ঞাত (সোমপাঃ নিচিতঃ) অথবা নিরন্তর দৃঢ়াঙ্গ; যিনি (যঃ) বজ্রবাহু, অর্থাৎ বজ্রের ন্যায় সারভূত বাহুশালী ও বজ্রহস্ত, অর্থাৎ হস্তে বজ্র ধারণ করেন, হে মর্তবাসী জনগণ (জনাসঃ)! তিনিই ইন্দ্র (সঃ ইন্দ্ৰঃ), আমি নই ৷ ১৪৷

 যিনি (যঃ) সোম-অভিষবকর্তা যজমানকে রক্ষা করেন (সুন্বন্ত অবতি), যিনি পুরোডাশ ইত্যাদি হবিঃসমূহের পাকর্কতা (পচন্তম), যিনি রক্ষণের নিমিত্ত স্তবন্ত (শংসন্তং) অর্থাৎ সকলে আপনাপন রক্ষার নিমিত্ত যাঁর উদ্দেশে স্তব করে, সামমন্ত্রে তাঁর স্তুতিকারীকে যিনি রক্ষা করেন (শশমানং), স্তোত্র (ব্রহ্ম) যার বৃদ্ধিকর (বর্ধনং), তথা সোম যাঁর বৃদ্ধির হেতুকারক (যস্য সোমঃ) (বৃদ্ধিহেতুৰ্ভবতি), এবং আমাদের এই (ইদং) পুরোড়াশ ইত্যাদি লক্ষণান্বিত অন্ন (রাঃ) যাঁর (যস্য) (বৃদ্ধিকরং ভবতি); হে মর্তবাসী জনগণ (জনাস)! তিনিই ইন্দ্র (সঃ ইন্দ্রঃ), আমি নই ৷ ১৫

যিনি প্রাদুর্ভূত হওয়া মাত্রই (জাতঃ) (এব স) দ্যাবাপৃথিবীর উৎসঙ্গে (পিত্রোঃ উপস্থে) অর্থাৎ পিতৃস্বরূপ দিব্যলোক ও মাতৃস্বরূপা পৃথ্বীলোকের মধ্যে বিখ্যাতবান (ব্যখ্যৎ) অর্থাৎ প্রকাশিত হয়েছেন; কিন্তু পৃথিবীকে (ভুবঃ) মাতৃভূতারূপে এবং উৎকৃষ্ট (পরস্য) উৎপাদয়িতা (জনিতুঃ) পিতৃস্থানীয় দ্যুলোককেও জ্ঞাত হননি; প্রকৃতপক্ষে এঁরা তার জন্মের কারণ নন বলে, অথবা তিনি নিজেই সকলের উৎপাদনের কারণ বলে–অপর কাউকে তার উৎপাদকরূপে জ্ঞাত হননি; অধিকন্তু যিনি (যঃ) আমাদের দ্বারা (অস্মৎ) স্তয়মান হয়ে (স্তবিষ্যমাণো ন) দেবগণের কার্য পূর্ণ করেন (দেবানাং ব্রতা আ); হে মর্তবাসী জনগণ (জনাস)! তিনিই ইন্দ্র (সঃ ইন্দ্রঃ), আমি নই ৷৷ ১৬৷

যিনি (যঃ) সোমের কামনায় হরি-নামক অশ্বকে যাগপ্রদেশে সুষ্ঠু প্রেরণ করেন, অর্থাৎ হরি-নামক অশ্বের বাহিত হয়ে আগমন করেন (হশ্বসূরিঃ), অথবা যিনি সোমকামী (সোমকামো) হরি-নামক অশ্বশালী (হশ্ব) ও বিদ্বান (সূরিঃ); অধিকন্তু যাঁর সকাশে (যস্মাৎ) সকল ভূতজাত (বিশ্বা ভুবনানি) ভীত হয় (রেজন্তে); যিনি (যঃ) শম্বর-নামক অসুরকে ও শুষ্ণ-নামক অসুরকে বধ করেছেন (জঘান); যিনি এই হেন অসাধারণ বীর (একবীরঃ), হে মর্তবাসী জনগণ (জনাস)! তিনিই ইন্দ্র (সঃ ইন্দ্রঃ), আমি নই৷৷ ১৭ ॥

[ এই মন্ত্রে ঋষি ইন্দ্রের অবিদ্যমানতা বিষয়ে, অর্থাৎ ইন্দ্র আছেন কি নেই সেই সম্পর্কে সন্দিহান অজ্ঞানীবর্গের বিশ্বাস উৎপাদনের নিমিত্ত ইন্দ্রকে প্রত্যক্ষ করে বলছেন]–হে ইন্দ্রদেব! যে আপনি বস্তুতঃ দুর্ধর্ষ হলেও (দুপ্রঃ চিৎ) সোম-অভিষবকারী (সুন্বতে) ও পশুপুরোডাশ ইত্যাদি হবিঃ-পাককারী (পচতে) যজমানকে তার অভিমত অন্ন (বাজং) প্রদান করে থাকেন (আ দর্দর্ষি), সেই আপনি, অর্থাৎ আপনার সত্তা, অবশ্যই সত্য (সঃ কিল অসি সত্যঃ)। আমরা সর্বদা (বয়ং বিশ্বহ) আপনার প্রিয় (প্রিয়াসঃ) হয়ে, শোভন পুত্র ইত্যাদি সমন্বিত (সুবীরাসঃ) হয়ে, জ্ঞানগর্ভ স্তোত্র (বিদথং) উচ্চারণ করবে (আ বদেম)। ১৮।

বিনিয়োগ টীকা –চতুর্থ অনুবাকের মোট চারটি সূক্তের মধ্যে উপযুক্ত প্রথম সুক্তটি সামসূক্ত রূপে ব্যবহৃত হয়; যেমন অস্মা ইদু প্রতবসে ইত্যাদি দ্বিতীয় সূক্তটি অহীনসূক্ত রূপে ব্যবহৃত হয়। উপযুক্ত সূক্তটি ব্রাহ্মণাচ্ছংসী শস্ত্রে বিনিযুক্ত হয়। বৈতানে (৪।৩) এই সামসূক্ত অহীনসূক্ত ইত্যাদি সূত্রিত আছে।

এই সূক্তটির কোন কোন মন্ত্রের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আচার্য সায়ণের বিশ্লেষণ পাওয়া যায়। যেমন, বৃহদ্দেবতার অনুক্রমণী অংশে উল্লেখ আছে–কোন তপসাত্মা ইন্দ্রের ন্যায় বিশাল বপু ধারণ করে অদৃশ্যত মুহূর্তের নিমিত্ত দ্যুলোকে, ব্যোমে ও ইহলোকে অবস্থান করছিলেন। ধুনি ও চুমুরি নামে দুজন ভীমপরাক্রম দৈত্য তাকে ইন্দ্র মনে করে আক্রমণোদ্যত হলে ঋষিকণ্ঠে এই সূক্ত-মন্ত্রগুলি ধ্বনিত হয়। ইন্দ্রের প্রকৃত মহিমা কীর্তন করে তিনি তাদের বোঝালেন–এমনই যাঁর মহিমা, তিনিই ইন্দ্র, আমি নয়।–এই বর্ণনার পরেই সায়ণাচার্যের উক্তি–বিদিত্বা স তয়োর্ভাব ঋষিঃ পাপং চিকীর্ষত। যো জাত ইতি সূক্তেন কর্মাণ্যৈাণ্যকীর্তয়ৎ ॥

এই প্রসঙ্গে দ্বিতীয় একটি ইতিহাসও আচার্য সায়ণ উল্লেখে করেছেন। যেমন,–পুরাকালে ইন্দ্র ইত্যাদি দেবগণ বৈণ্যের যজ্ঞে সমাগত হয়েছিলেন। সেই যজ্ঞসভায় গৃৎসমদ নামক ঋষিও উপস্থিত ছিলেন। অসুরগণ ইন্দ্রকে বধ করার জন্য বৈণ্যের যজ্ঞ সভা আক্রমণ করলে ইন্দ্র ঐ গৃৎসমদ ঋষির রূপ ধারণ করে যজ্ঞ হতে পলায়ন করলেন। অতঃপর প্রকৃত গৃৎসমদ বৈণ্যের দ্বারা পূজিত হয়ে যজ্ঞ হতে নিষ্কান্ত্র হলে অসুরগণ তাঁকে ইন্দ্র মনে করে আক্রমণোদ্যত হলে গৃৎসমদ এই সূক্তের দ্বারা তাদের বোঝালেন যে, ঐ হেন গুণবিশিষ্ট যিনি, তিনিই ইন্দ্রি, আমি নয়। এখানেও সায়ণাচার্যের পরিশেষ উক্তি–নাহং ইন্দ্রোস্মি কিং ত্বেষংগুণোপেতঃ স ইতৃষিঃ। যো জাত ইতি সূক্তেন নিরাচক্রে বধোদ্যতা।

 তৃতীয় ইতিহাসের ব্যাখ্যাটি উপযুক্ত সূক্তের অন্তিম (অর্থাৎ ১৮শ) মন্ত্রে উল্লিখিত হয়েছে। ইন্দ্রের অসাধারণ মাহাত্মকথা বর্ণনার মাধ্যমে এই সূক্তের মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষি গৃৎসমদ কিভাবে ইন্দ্রের অস্তিত্ব প্রমাণিত করেছেন, এখানে তারই উল্লেখ পাওয়া যাচ্ছে ৷৷ (২০কা. ৪অ. ১সূ.)।

.

দ্বিতীয় সূক্ত

 [ঋষি : নোধা (মতান্তরে ভরদ্বাজ’) দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

অম্মা ইদু প্রতবসে তুরায় প্রয়ো ন হর্মি স্তোমং মাহিনায়। ঋচীষমায়াগিব ওহমিন্দ্রায় ব্রহ্মাণি রাততমা ॥১৷৷ অম্মা ইদু প্ৰয় ইব প্র যংসি ভরাম্যাঙ্গুষং বাধে সুবৃত্তি। ইন্দ্রায় হৃদা মনসা মনীষা প্রত্নায় পত্যে ধিয়ো মর্জয়ন্ত৷৷ ২৷৷ অম্মা ইদু ত্যমুপমং স্বর্ষাং ভরাম্যাঙ্গুষমাসেন। মংহিষ্ঠমচ্ছোক্তিভিৰ্মতীনাং সুবৃক্তিভিঃ সূরিং বাবৃধধ্যৈ ॥৩॥ অম্মা ইদু স্তোমং সং হিনোমি রথং তষ্টেব তৎসিনায়। গিরশ্চ গির্বাহসে সুবৃত্তীন্দ্রায় বিশ্বমিং মেধিরায় ॥৪॥ অম্মা ইদু সপ্তিমিব শ্রবস্যেন্দ্রায়ার্কং জু সমঞ্জে। বীরং দানৌকসং বন্দধ্যৈ পুরাং ঘূর্তএবসং দর্মাণ৷৷ ৫অম্মা ইদু ত্বষ্টা তক্ষৎ বজ্ৰং স্বপস্তমং স্বর্যং রণায়। বৃত্রস্য চিৎ বিদৎ যেন মর্ম তুন্নীশানস্তজতা কিয়েধাঃ ॥ ৬৷৷ অস্যেদু মাতুঃ সবনেষু সদ্যো মহঃ পিতুং পপিং চার্বন্না। মুষায়ৎ বিষ্ণুঃ পচতং সহীয়ান্ বিধ্যৎ বরাহং তিরো অদ্রিমস্তা ॥৭৷ অম্মা ইদু গ্লাশ্চিদ্ দেবীপত্নীরিায়ার্কমহিহত্য উবুঃ। পরি দ্যাপৃথিবী জৰ উৰী নাস্য তে মহিমানং পরি ঊঃ ॥৮ অস্যেদেব প্র রিরিচে মহিত্বং দিবম্পৃথিব্যাঃ পর্যন্তরিক্ষাৎ। স্বরালিন্দ্রো ম আ বিশ্বগ্র্তঃ স্বরিরমত্রো ববজ্ঞে রণায় ॥৯॥ অস্যেদেব শবসা শুষন্তং বি বৃশ্চদ বজ্রেণ বৃত্রমিঃ। গা ন ব্ৰাণা অবনীরমুঞ্চদভি এবো দাবনে সচেতাঃ ॥১০৷ .. অস্যেদু ত্বেষসা রন্ত সিন্ধবঃ পরি যদ বজ্রেণ সীমযচ্ছ। ঈশানকৃদ দাশুষে দশস্য তুবতিয়ে গাধং তুবণিঃ কঃ ॥১১। অম্মা ইদু প্র ভরা তুতুজানো বৃত্রায় বজ্রমীশানঃ কিয়েধাঃ। গোর্ন পর্ব বি রদা তিরশ্চেষ্যনুর্ণাংস্যপাং চরধ্যৈ ॥১২। অস্যেদু প্র ব্রুহি পূৰ্বাণি তুরস্য কর্মাণি নব্য উথৈঃ। যুধে যদিষ্ণান আয়ুধান্যঘায়মাণণা নিরিণতি শন্ ॥১৩৷৷ অস্যেদু ভিয়া গিরয়শ্চ দৃা দ্যাবা চ ভূমা জনুষস্তুজেতে। উপো বেনস্য জোগুবান ওণিং সদ্যো ভূবদ বীর্যায় নোধাঃ ॥১৪। অম্মা ইদু ত্যদনু দায্যেষামেকো যদ বরে ভূরেরীশানঃ। প্রৈতশং সূর্যে পধানং সৌবষ্যে সুম্বিমাবদিঃ ॥১৫এবা তে হারিযোজনা সুবৃক্তীন্দ্ৰ ব্ৰহ্মাণি গোতমাসো অক্র। ঐষু বিশ্বপেশসং ধিয়ং ধাঃ প্রাতর্মক্ষু ধিয়াবসুজর্গম্যাৎ ॥১৬।

বঙ্গানুবাদ –আমি সেই (অস্মা ইৎ উ) ইন্দ্রের উদ্দেশে প্রাপণীয় (ওহং) স্ত্রোত্র প্রকর্ষের সাথে প্রেরণ করছি (প্র হর্মি)। (কিরকম ইন্দ্র? না–) প্রবৃদ্ধ বা বলবান্ (তবসে), সোমপানের নিমিত্ত শীঘ্র আগমনকারী বা শত্রুহিংসক (তুরায়), অসীম গুণশালী (মাহিনায়) হয়েও ঋক-মন্ত্রের দ্বারা অর্থাৎ স্তুতি সাধনের দ্বারা পরিমিত বা নির্ধারিত (ঋচীষমায়) ও অপ্রতিহত গতি (অগিবে)। (স্তোত্র প্রেরণের দৃষ্টান্ত কি? না–) প্রয়ো ন…। অর্থাৎ ক্ষুধাগ্রস্তকে যেমন অন্ন প্রেরণ করা হয় সেই রকম স্তুতিকামী ইন্দ্রের উদ্দেশে স্তোত্র প্রেরণ করছি।–কেবল স্তোত্রই নয়, প্রাচীনকালীন যজমানগণ কর্তৃক দত্ত (রাততমা) প্রবৃদ্ধ সোর্ম ইত্যাদি হবিও (ব্রহ্মাণি) প্রেরণ করছি। ১

আমি সেই ইন্দ্রের উদ্দেশে অন্নের ন্যায় (প্রয় ইব) স্ততিগুলি প্রয়োগ করছি (প্র যংসি) এবং শত্রুদের বাধক (বাধে), ও সুষ্ঠু নিক্ষেপণীয় (সুবৃক্তি) সেই স্তোত্রগুলি (আঙ্গুষং), সম্পাদন করছি (ভরামি)। অধিকন্তু, পুরাতন (প্রায়), সকলের প্রভু (পত্যে) ইন্দ্রের উদ্দেশে ঋত্বিকগণও তাদের হৃদয়ের দ্বারা (হৃদা) ও হৃদয়ান্তবর্তী অন্তঃকরণ (মনসা) ও বুদ্ধির দ্বারা (মনীষা) স্তুতিসমূহকে মার্জিত বা সংস্কারিত করে থাকেন, অর্থাৎ স্তোত্রের যাবতীয় ত্রুটি অপনোদিত করেন (ধিয়ঃ মর্জয়ন্ত) ২।

 আমি সেই ইন্দ্রের উদ্দেশে প্রসিদ্ধ উপমাস্থানভূত (ত্যং উপমং), সুষ্ঠু ধনদাতা বা স্বর্গপ্রাপক লক্ষণান্বিত (স্বর্ষাং) স্তোত্রগুলি (আঙ্গুষং) মুখের দ্বারা (আস্যেন) সম্পাদন করছি (ভরামি)। (কি জন্য? না)–অতিশয় ধনবন্ত বা অতিশয় প্রবৃদ্ধ (মংহিষ্ঠং), সুষ্ঠু ধনের প্রেরয়িতা বা পণ্ডিত (সূরিং) ইন্দ্রদেবের ॥ স্তুতি-বৃদ্ধির নিমিত্ত (ববৃধধ্যৈ) স্তুতি সম্বন্ধিনী (মতীনাং) সুষ্ঠু নিক্ষেপণীয় (সুবৃক্তিভিঃ) স্বচ্ছবচনের দ্বারা (অচ্ছোক্তিভিঃ) স্তুতি সম্পাদন করছি ৷ ৩৷

আমি সেই সোম ইত্যাদি লক্ষণান্বিত অন্নযুক্ত (তৎসিনায়) ইন্দ্রের উদ্দেশে, রথশিল্পী কর্তৃক রথ প্রেরণের মতো (রথং ন তষ্টা ইব) স্তুতিসমূহ প্রেরণ করছি (স্তোমং সম্ হিনোমি)। অধিকন্তু বাক্যের দ্বারা প্রাপণীয় (গির্বাহসে), যজ্ঞাহ বা মেধাবী (মেধিরায়) ইন্দ্রের উদ্দেশে সুষ্ঠু নিক্ষেপণীয় (সুবৃক্তি), সকলের প্রাপ্তব্য বা সকল যজমানের প্ৰাপণীয় সোম ইত্যাদি লক্ষণান্বিত হবিঃ ও স্তুতি ইত্যাদি নিমিত্তভূর্ত বাক্য (গিরঃ চ) প্রেরণ করছি। ৪৷৷

সেই ইন্দ্রের উদ্দেশে আমি অন্নলাভের কামনায় (শবস্যা) অর্চনীয় হবিলক্ষণ অন্ন (অর্কং) জুহু নামক যজ্ঞীয় পাত্রে আজ্যপূর্ণ করছি (জুহ্বা সমঞ্জে), অথবা স্তুতিসাধন মন্ত্র (অর্কং) জুহূবৎ অঞ্জনসাধন জিহ্বায় যুক্ত করছি (জুহৃ সমঞ্জে)। (তার দৃষ্টান্ত কি? না) সপ্তিমিব অর্থাৎ অশ্বের ন্যায়। অশ্বগুলিকে যেমন রথে যুক্ত করা হয়, তেমন। অধিকন্তু শত্রুবর্গের অপসারক (বীরং), দানের গৃহরূপ (দানৌকসং), অসুরনগরসমূহের বিদারক (পুরা দর্মাণম), প্রশস্যান্ন বা প্রশস্যকীর্তি ইন্দ্রকে বন্দনার নিমিত্ত আহ্বান করছি (গ্র্তবসং বন্দধ্যৈ)। ৫।

 এই ইন্দ্রের নিমিত্ত নিখিল সংসারের রচয়িতা বিশ্বকর্মা (ত্বষ্টা), বজ্ৰ-নামক আয়ুধ নির্মাণ করেছিলেন (তক্ষৎ)। (কীরকম সেই বজ্র? না) অতিশয় শোভনকর্মকারী (স্বপঃতম), স্বায়ত্তবীর্য বা স্তুত্য (স্বর্যং)। (কিজন্য তা নির্মাণ করেন? না–) রণায় অর্থাৎ যুদ্ধের উদ্দেশে। হিংসতাসম্পন্ন (তুজতা) যে বজ্রের দ্বারা শত্ৰুকর্তৃক ধৃত বলের পক্ষে অপরিচ্ছেদ্য বলে বলশালী হয়ে (কিয়েধাঃ) সকলের প্রভুস্বরূপ (ঈশানঃ) ইন্দ্র সর্বাবরক প্রবল বৃত্রাসুরের (বৃত্রস্য চিৎ) মর্মস্থল হিংসন পূর্বক (তুজন) লাভ করেছিলেন (বিদৎ), অর্থাৎ প্রহার করেছিলেন–এটাই বক্তব্য)। ৬৷

সকলের নির্মাতা (মাতুঃ) মাহাত্মবান (মহঃ) ইন্দ্রের অসাধারণ কর্ম উক্ত হচ্ছে।–অথবা উক্তলক্ষণসম্পন্ন যজ্ঞের কথা বলা হচ্ছে। কি তার কর্মাবলী, সেই প্রসঙ্গে বলা হচ্ছে। এই ইন্দ্র সোময়াগসম্বন্ধী প্রাতঃ-মধ্যাহ্ন-অপরাহ্নকালীন সবনয়ে অর্থাৎ তিনবার সোমাভিষবের হোমসময়ে (সদ্যঃ) পেয় সোম (পিতু) পান করেন (পপিবা), অধিকন্তু অনিন্দ্য (চারু) সবনীয় পুরোডাশ-ধানা-করম্ভ ইত্যাদি (অন্না) ভক্ষণ করেন। আরও সবনয়ব্যাপী (বিষ্ণুঃ) সোমপান ইত্যাদি জনিত বলে শত্রুগণের অভিভবিতা (সহীয়ান) ইন্দ্ৰ শত্ৰুগণের অপহরণযোগ্যভূত ধন (পচতং) অপহরণ করে থাকেন (মুষায়)। তথা বজ্রের ক্ষেপণকারী বা প্রযোক্তা (অদ্রিং অস্তা) ইন্দ্রদেব উৎকৃষ্ট জলের ধারক মেঘকে প্রাপ্ত হয়ে (বরাহারং তিরঃ) বৃষ্টিলাভের জন্য তা বিদারিত করেন (বিধ্যৎ) ॥ ৭৷

এই ইন্দ্রের উদ্দেশে বৃত্রাসুরের নাশের নিমিত্ত (অহিহত্যে) গায়ত্রী ইত্যাদি দেবগণের পালয়িত্রীগণ (দেবপত্নীঃ) গমনস্বভাবা (গ্লাঃ চিৎ) হয়েও অর্চনসাধন স্তোত্রগুলিকে (অর্কং) বিস্তৃত করেছিলেন (উবুঃ–উবুরিত্যুবুঃ);–অথবা ইন্দ্রাণী-অগ্নায়ী- অশ্বিনী ইত্যাদি আপনাপন পতির অভিগন্তব্য স্ত্রীগণ (দেবপত্নীঃ) অর্চনসাধন হবিঃ (অর্কং) নিজেরাই বিস্তার করেছিলেন। সেই ইন্দ্র বিস্তৃতা (উর্বী) দ্যুলোক ও পৃথিবীকে আপন তেজে অতিক্রম করেছিলেন (পরি জভ্রে); এই ইন্দ্রের (অস্য) মহত্ব (মহিমানং) সেই দ্যুলোক ও পৃথিবী (তে) পরাভব করতে, অর্থাৎ সংকোচ বা খর্ব করতে সমর্থ হয় নি (ন পরি ষ্টঃ)। ৮

এই ইন্দ্রের মাহাত্ম্য (মহিত্বং) দ্যুলোকের উপরে অধিকরূপে বিস্তৃত রয়েছে (দিবঃ পরি প্র রিরিচে), তথা পৃথিবীর উপরেও অধিকরূপে বিস্তৃত রয়েছে এবং অন্তরিক্ষলোকেও অর্থাৎ দ্যুলোক ও ভূলোকের অন্তরালবর্তী যক্ষ-গন্ধর্ব-অপ্সরা প্রভৃতির আশ্রয়ভূতা লোকেও সমধিকরূপে বিস্তৃত রয়েছে। এই ইন্দ্রদেব দমনযোগ্য শত্রুজনের নিকটে (দমে) স্বরাষ্ট্র অর্থাৎ আপন তেজে দীপ্যমান এবং সকল কর্মে উদ্যতবলশালী (বিশ্বপূর্তঃ) ও প্রত্যুষ্পমনকারী (স্বরিঃ), অথবা শোভন তিনি ব্যতিরিক্ত অন্যের দ্বারা অপরাভবনীয় শত্রুকে প্রাপ্ত (সু অরিঃ), অর্থাৎ এমন শত্রুদের তিনি পরাজিত করে থাকেন, যাদের তিনি ব্যতীত আর কেই পরাজয় করতে সক্ষম নয়। যুদ্ধার্থে গমনকুশল (অমত্রঃ) ইন্দ্রদেব রমণীয় যুদ্ধের উদ্দেশে (রণায়) বৃষ্টির নিমিত্ত মেঘসমূহকে উৎপাদন বা সগৃহীত করেছিলেন (আ ববক্ষে)। ৯৷

এই ইন্দ্রেরই তেজঃপ্রভাবে (শবসা) শোষণপ্রাপ্ত বৃত্রকে (শুষন্তং বৃত্ৰ) ইন্দ্রদেব বজ্ৰাস্ত্রের দ্বারা (বজেন) বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন; যে ইন্দ্র পণিগণের দ্বারা অপহৃত গাভীগুলিকে যেমন মুক্ত করেছিলেন (গাঃ ন অমুঞ্চৎ), সেইরকম বৃত্রের দ্বারা আবৃত (ব্রাণাঃ) সকল প্রাণী-রক্ষণের হেতুভূত জলরাশিকে মেঘ বিদীর্ণ পূর্বক মুক্ত করে বর্ষণ করেছিলেন (অবনীঃ অমুঞ্চৎ)। এমন করে সেই ইন্দ্র হবিদাতা যজমানকে (দাবনে) সকল বিখ্যাত অন্ন (শ্ৰবঃ) যজমানগণের সাথে সমানচিত্ত হয়ে (সচেতাঃ) তাদের অভিমুখে প্রদান করেছিলেন (অভি– প্রাযচ্ছদ) ॥ ১০

এই ইন্দ্রেরই দীপ্ত বলে (ত্বষসা) বেগবতী নদীসমূহ আপন আপন স্থানে প্রবাহিত হচ্ছে (সিন্ধবঃ রন্ত), যে কারণে (যৎ) এই ইন্দ্ৰ বজ্রের দ্বারা (বজ্রেণ) এই নদীগুলিকে (সীং) সর্বতোভাবে নিয়মান্বিত করেছেন (পরি অচ্ছৎ)। অধিকন্তু শত্রুগণকে হত্যাপূর্বক নিজেকে তাদের অধিপতিরূপে (ঈশানকৃৎ) অথবা দরিদ্রগণের ঈশানকর্তা অর্থাৎ নিয়ন্ত্ৰা ইন্দ্র হবির্দানকারী যজমানগণকে (দাশুষে) তাঁদের অভীষ্ট ফল দান পূর্বক (দশস্য) অগাধ জলে নিমজ্জিত হয়ে অবস্থানের নিমিত্ত তুর্বিত নামে অভিহিত তপস্বীকে (তুর্বীতয়ে) শীঘ্র সম্ভক্তা হয়ে (তুৰ্বাণিঃ) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন (গাধং কঃ)। ১১।

এই ইন্দ্র বৃত্রবধের নিমিত্ত অত্যন্ত ত্বরান্বিত হয়ে বা অত্যন্ত চলায়মান হয়ে (ভূতুজানঃ) শত্রুবল তুচ্ছীকৃত পূর্বক তার বলের ধারক হয়েছিলেন (কিয়েধাঃ) অথবা ক্রমমাণ হয়ে শত্রুধারক বজ্র প্রহার বা প্রয়োগ করেছিলেন (প্র ভর বজ্র)। কেবল প্রহারমাত্রই নয়, তাকে চূর্ণিত করেছেন, যেমন মাংসাৰ্থীগণ গো-বৃষভ ইত্যাদি পশুগণের অঙ্গের প্রতিটি অংশ (গোঃ ন পর্ব) ছিন্ন করে থাকে। ভূমিতে প্রবাহের নিমিত্ত (অপাং চরধ্যৈ) জল কামনা পূর্বক (অর্ণাংসি ইষ্যন) তির্যভাবে মেঘকে বিদীর্ণ করেছেন (তিরশ্চা বি রদ) (বজ্রেণ বিশেষেণ বৃত্ৰং বিলেখয়)। ১২

হে স্তোতা! স্তুতিযোগ্য শস্ত্রসমূহের দ্বারা স্তবনীয় (উক্থৈঃ ), যুদ্ধার্থে ত্বরমাণ এই ইন্দ্রের (অস্যেদু তুরস্য) পূর্বকৃত কর্মসমূহের (পূৰ্বাণি কমাণি), অর্থাৎ বলপূর্ণ কর্মগুলির, প্রশংসা করো (প্ৰ ক্ৰহি)। যে ইন্দ্র (যৎ) যুদ্ধের উদ্দেশে (যুধে) বজ্র ইত্যাদি আয়ুধসমূহ (আয়ুধানী) প্রেরণ পূর্বক (ইষ্ণানঃ) শত্রুর প্রতি হিংসন বা বিনাশনের নিমিত্ত (শ ঋঘায়মাণঃ) তাদের অভিমুখে গমন করেন (নিরিণতি), তাঁর প্রশংসা করো। ১৩ ৷

 এই ইন্দ্রের প্রাদুর্ভাব মাত্র (জনুষঃ) বা উৎকৃষ্ট জন্মলাভের কারণে পর্বতসমূহও (গিরয়ঃ চ) পক্ষচ্ছেদনের ভয়ে (ভিয়া) দৃঢ় (ঢা) হয় অর্থাৎ জড়বৎ অচল হয়ে পড়ে এবং এঁর ভয়ে দ্যাবাপৃথিবীও কম্পিত হতে থাকে (তুর্জেতে)। আরও, কমনীয় (বেনস্য) এই ইন্দ্রের দুঃখাপনোদক রক্ষণে (ওণিং) অনেক সূক্ত ধ্বনিত করে (জোগুবানঃ) নূতন স্তবের ধারয়িতা নোধা-নামক মহর্ষি তখনই (সদ্যঃ) সামর্থ্যের (বীর্যায় ) সমীপবর্তী হয়েছিলেন (উপপা ভুবৎ), অর্থাৎ বীর্যবান্ হয়েছিলেন ৷ ১৪

এই ইন্দ্রের উদ্দেশে সেই প্রসিদ্ধি স্তোত্র বা সোমলক্ষণ অন্ন (ত্যৎ) আনুলোম্যের দ্বারা প্রদত্ত হয়েছে (অনু দায়ি)। (এই উক্তির কারণ কি? না) যেহেতু (যৎ) বা যে কারণে প্রভূত ধনের হবিঃ বা স্তোত্রের (ভুরেঃ) স্বামী ইন্দ্রই (ঈশানঃ) স্তোত্র ইত্যাদি বিষয়ে একমাত্র অসাধারণ (একঃ)। আরও, এই ইন্দ্র স্বশ্বের অপত্য সৌবশ্ব ১) নামক রাজার রক্ষণীয়ত্বের নিমিত্তভূত হয়ে সূর্য দেবে পুনঃ পুনঃ স্পর্ধমান বা সঙ্ঘর্ষকারী (পসৃধানম) সোমাভিষবকারী (সুমি) এতশ-নামক মহর্ষিকে প্রকর্ষের সাথে রক্ষা করেছেন (প্র আবৎ)। [স্বশ্বের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে সূর্যদেব তাঁর পুত্ররূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন–আখ্যায়িকামুখে এমনই অবগত হওয়া যায়। ১৫৷

হে হরি নামক অশ্ববর্গযুক্ত রথের স্বামী (হারিযোজন) ইন্দ্রদেব! সুষ্ঠু প্রয়োগকুশল (সুবৃক্তি) গোতম-গোত্রোৎপন্ন মহর্ষিগণ (গোতমাসঃ) স্তুতিরূপা মন্ত্রসমূহ (ব্রহ্মণি) আপনার উদ্দেশে এইভাবেই উৎপন্ন করেছিলেন (তে অক্র)। এই স্তোত্রসমূহে (এষু) বপুবিধ রূপযুক্ত (বিশ্বপেশসং) ধন বা কর্ম (ধিয়ং) অর্থাৎ পশু ইত্যাদি বিবিধরূপ ধন বা অগ্নিষ্টোম ইত্যাদি বহুপ্রকার যজ্ঞকর্ম, স্থাপন করুন (আ ধাঃ)। প্রাতঃকালে অর্থাৎ ইদানীং বুদ্ধির বা কর্মসমূহের দ্বারা প্রাপ্ত ধন (ধিয়াবসুঃ) ইন্দ্রদেব শীঘ্ৰ (মক্ষু) আমাদের রক্ষণার্থে আনয়ন করুন (জগম্যাৎ) ১৬

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –চতুর্বিংশেহভিজিতি বিষুবতি বিশ্বজিতি মহাব্রতে চ ব্রাহ্মণাচ্ছংসিশস্ত্রে অস্মা ইদু প্রতবসে তুরায় ইতি অহীনসূক্তসংজ্ঞকং বিনিযুক্তং। চতুর্বিংশ ইন্দ্ৰমিগাথিনো বৃহৎ (২০।৩৮।৪) ইত্যাজ্যস্তোত্রিয়ঃ ইতি প্রক্রম্য সূত্রিতং। অভি প্র বঃ সুরাধসং (২০।৫১।১) প্র সু তং সুরাধসং (২০।৫১।৩) তি পৃষ্ঠস্তোত্রিয়ানুরূপৌ বাহঁতৌ প্রগাথৌ। মা চিদন্যৎ বি শংসত (২০।৮৫।১) যচ্চিদ্ধি তা জনা ইমে (২০৮৫৩) ইতি বা। অম্মা ইদু প্র বসে তুরায় (২০।৩৫) ইত্যহীনসূক্তং আবপতে ইতি (বৈ. ৬।১)। তথা অপ্পোর্যানি মাধ্যন্দিনসবনে তচ্ছস্ত্র এব বিনিযুক্তং। সূত্রিতং হি। অপ্তোৰ্যামণি গর্ভকারং শংসতি ইতি প্রকম্য সুকীর্তিং বৃষাকপিং সামসূক্তং অহীনসূক্তং আবপতে ইতি (বৈ. ৪।৩)। (২০কা, ৪৩. ২সূ.)।

টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি অহীনসূক্ত নামক সূক্ত চতুর্বিংশ অভিজিৎ, বিষুব, বিশ্বজিৎ ও মহাব্রতে ব্রাহ্মণচ্ছংসী শস্ত্রে এটি বিনিযুক্ত হয়। এর আজ্যস্তোত্র ইত্যাদি সম্পর্কিত বিনিয়োগ, যা উল্লেখিত হয়েছে, তা যথাযথ সূক্তের শেষে উল্লেখ করা হয়েছে। বৈনিকে এর বিনিয়োগ যেভাবে সূত্রিত আছে, তা বিনিয়োগ অংশে উল্লেখিত হয়েছে। এই সূক্তে কিছু কিছু সাধারণ্যে অজ্ঞাত নামের উল্লেখ রয়েছে। বলা বাহুল্য, এগুলি দার্শনিক বিচারে রূপক বলে অনেকে মনে করেন ॥ (২০কা. ৪অ. ২সূ.)।

.

 তৃতীয় সূক্ত

[ঋষি : ভরদ্বাজ দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

য এক ইদ্ধব্যশ্চর্ষণীনামিং তং গীর্ভিরভ্যর্চ আভিঃ। যঃ পত্যতে বৃষভো বৃষ্ণ্যাবানৎসত্যঃ সত্বা পুরুমায়ঃ সহস্বান্ ॥১॥.. তমু নঃ পর্বে পিতরো নবগ্নাঃ সপ্ত বিপ্রাসো অভি বাজয়ন্তঃ। নক্ষদ্দাভং ততুরিং পর্বতেষ্ঠামদ্রোঘবাচং মতিভিঃ শবিষ্ঠম৷৷ ২। তমীমহ ইন্দ্রমস্য রায়ঃ পৃরুবীরস্য নৃবতঃ পুরুক্ষোঃ। যো অস্কৃঘোয়ুরজরঃ স্ববান্ তমা ভর হরিবো মাদয়ধ্যৈ ৷৩৷৷ তন্নো বি বোচো যদি তে পুরা চিজ্জরিতায় আনশুঃ সুমি। কন্তে ভাগঃ কিং বয়ো দুধ খিদ্বঃ পুরুত পুরূসোহসুরশ্নঃ ॥৪॥ তং পৃচ্ছন্তী বজ্রহস্তং রথেষ্ঠামিং বেপী বক্করী যস্য নূ গীঃ। তুবিগ্রাভং তুবিকৃর্মিং রভোদাং গাভূমিষে নক্ষতে তুমচ্ছ৷৷ ৫৷৷, অয়া হ ত্যং মায়য়া বাবৃধানং মনোজুবা স্বতবঃ পর্বতেন। অচ্যুতা চিদ বীলিতা স্বােজো রুজো বি দৃঙ্গা ধৃষতা বিপশি ॥ ৬। তং বো ধিয়া নস্যা শবিষ্ঠং প্রত্নং প্রত্নবৎ পরিতংসযধ্যৈ। স নো বক্ষনিমানঃ সুবহ্মেন্দ্রো বিশ্বানতি দুর্গহাণি ॥৭৷৷ আ জনায় দুহুণে পার্থিবানি দিব্যানি দীপয়োহন্তরিক্ষা। তপা বৃষণ বিশ্বতঃ শশাচিষ তা ব্ৰহ্মদ্বিষে শোচয় ক্ষামপশ্চ ৮ভুবো জনস্য দিব্যস্য রাজা পার্থিবস্য জগতস্তৃষসক। ধি বর্জং দক্ষিণ ইন্দ্র হস্তে বিশ্বা অজুর্য দয়সে বি মায়াঃ ॥ ৯। আ সংযতমিন্দ্র ণঃ স্বস্তিং শত্রুতূর্যায় বৃহতীমমৃভ্রাম। যয়া দাসান্যার্যাণি বৃত্রা করো বজিৎ সূতুকা নাহুষাণি ॥১০ স নো নিযুদ্ভিঃ পুরুহুত বেধে বিশ্ববারাভিরা গহি প্রযজ্যো। ন যা অদেবো বরতে ন দেব আভির্যাহি তৃয়মা মদ্রিক ৷৷ ১১৷

 বঙ্গানুবাদ –মনুষ্যগণের (চর্ষণীনাং) অর্থাৎ মনুষ্যরূপী যজমানগণের যজ্ঞে যে ইন্দ্র (যঃ ইন্দ্ৰঃ) প্রাধান্যের সাথে হৃতব্য অর্থাৎ আহ্বানীয় (একঃ ইৎ হব্যঃ), সেই ইন্দ্রের উদ্দেশে (তম্ ইন্দ্রং) ক্রিয়মাণপ্রকারে স্তুতিবাক্যের দ্বারা অর্চনা বা স্তুতি করছি (আভিঃ গীর্ভিঃ অভি অর্চে)। অধিকন্তু যে বক্ষ্যমাণ-গুণবিশিষ্ট ইন্দ্র (যঃ) সকলের ঈশ্বর (পত্যতে), কামবর্ষণকারী (বৃষভঃ), বর্ণযোগ্য বলে অন্বিত (বৃষ্ণ্যাবাৎ), সত্যফলরূপী (সত্যঃ), অপরের বলনাশক (সত্বা), বহুকর্মকারী (পুরুমায়ঃ) ও বলবান (সহস্বা)–তাঁকে স্তুতিবাক্যের দ্বারা অর্চনা বা স্তুতি করছি ৷ ১

নয়টি মাসব্যাপী অনুষ্ঠিত যজ্ঞ ইত্যাদি কর্মের ফল লব্ধ হয়ে (নবৰ্থাঃ) পিতৃলোকপ্রাপ্ত আমাদের পূর্বপুরুষগণ (নঃ পূর্বে পিতরঃ) এবং সপ্তসংখ্যক মেধাবী জনগণ (সপ্ত বিপ্রাসঃ) হবিলক্ষণ অন্নের ইচ্ছায় এই ইন্দ্রের স্তুতি করেছেন (বাজয়ন্তঃ মতিভিঃ)। (কীরকম ইন্দ্র? না–) নক্ষদ্দাভং অর্থাৎ তাঁর প্রতি আগুয়ান শত্রুগণের হিংসক। দুর্গম পথগামীর তারক (ততুরিং), পর্বতে মেঘে অবস্থিত (পর্বতেষ্ঠাং, অনতিক্ৰমণীয় বাক্যবান অর্থাৎ যাঁর আদেশ অলঙ্ঘনীয় (অদ্রোঘবাচম) এবং অতিশয় বলবন্ত (শবিষ্ঠম)। ২।

প্রসিদ্ধ ইন্দ্রের (তং) নিকটে আমরা যাচনা করছি (ঈমহে)। (কি যাচনা করি? না) অস্য রায়ঃ অর্থাৎ এই ধন। (কিরকম তা? না–) বহু পুত্র ইত্যাদির সাথে (পুরুবীরস্য) ও মনুষ্য সেবকগণের সাথে (নৃবতঃ) যে ধন ভোক্তব্য হয়ে থাকে, যা বহু অন্নময় (পুরুক্ষোঃ ); সেই হেন বিশেষণবিশিষ্ট ধন আমরা যাচনা করছি। অধিকন্তু যে ধন অচ্ছিন্ন (অস্কৃধোয়ুঃ), জরারহিত (অজরঃ) ও স্বর্গ বা সুখবান অর্থাৎ তার প্রাপ্তিকারক (স্বর্বা), হে হরিবঃ (অর্থাৎ হরি নামক অশ্বযুক্ত) ইন্দ্র! আমাদের তৃপ্তির নিমিত্ত সেই ধন আনয়ন করুন (মাধয়ধ্যৈ আ ভর)। ৩৷৷

 হে ইন্দ্র! পুরাকালেও আপনার স্তোতৃবর্গ (পুরা চিৎ তে জরিতারঃ) আপনার নিকট হতে যে সুখ প্রাপ্ত হয়েছেন (সুন্নম্ যদি আনশু) তা (তৎ) (অর্থাৎ সেই সুখ) আমাদেরও (নঃ) প্রদান করুন (বি বোচঃ)। সেই সুখের। উৎকোচস্বরূপ অসুরবিনাশক অর্থাৎ শত্রুঘাতী (অসুরঘুঃ) যজ্ঞে আপনার যথাযথ ভাগ (তে ভাগঃ) নির্দিষ্ট করা হয়েছে। হে দুর্ধর্ষ, অর্থাৎ শত্রুর পক্ষে অপরাজেয় (দু), হে শত্রুগণের খেদয়িতা অর্থাৎ আক্ষেপ উদ্রেককারী (খিদ্বঃ), হে বহুজন কর্তৃক আহূত (পুরুষ্কৃত), হে প্রভূত ধনশালী (পুরূবসো), ইন্দ্রদেব! আপনি আমাদের নিমিত্ত সেই হবির্লক্ষণ অন্ন প্রদান করুন (কিং বয়ঃ…)৷৷ ৪৷৷

 যজমানের যজ্ঞ ইত্যাদি লক্ষণযুক্ত কর্মবতী (যস্য বেপী) প্রবচনশীলা বাণী (বরী গীঃ) হস্তে বজ্ৰধারণকারী (বজ্রহস্তং), রথে অবস্থিত (রথেষ্ঠাং) সেই প্রসিদ্ধ ইন্দ্রকে প্রশ্ন করছে (তং পৃচ্ছন্তী), অর্থাৎ ইন্দ্রের অভিমুখে গমন করছে, [বক্তব্য এই যে, স্তুতিগুলি ইন্দ্রের উদ্দেশে ধ্বনিত হচ্ছে। বহুজনের গ্রাহক (তুবিগ্রাভং), বহু কর্মকারী (তুবিকুর্মিং), এবং বল-প্রদায়ক (রভোদাং)–এই হেন লক্ষণান্বিত ইন্দ্রের নিকটে সেই যজমান সুখ কামনা করেন (গাতুং ইষে)। অধিকন্তু সেই ইন্দ্র অভিগামী বা শীঘ্রগামী শত্রুর অভিমুখে গমন করে থাকেন (তুষং অচ্ছ নক্ষতে)। ৫

হে স্বায়ত্তবল (স্বতবঃ) (অর্থাৎ সকল বলকে আপন আয়ত্তে স্থাপনকারী) ইন্দ্র! আপনি মনের ন্যায় শীঘ্র গতিযুক্ত (মনোজুবা) পর্বতবৎ বজ্রের (পর্বতেন) প্রসিদ্ধ (অয়া) শক্তির দ্বারা (মারয়া) বর্ধমান (ববৃধানং) সেই প্রসিদ্ধ বৃত্রকে (ত্যং) বিশেষভাবে ভগ্ন করেছেন (বি রুজঃ)। তথা হে শোভনবল (সোজঃ)! হে মহান (বিরপশি) ইন্দ্র! আপনি অন্যের দ্বারা চ্যুত হবার নন্ (অচ্যুতা চিৎ), দৃঢ় অর্থাৎ অশিথিলীকৃত (বীলিতা), দৃঢ় শত্রুনগরগুলি (দ) ধর্ষক বজ্রের দ্বারা বিদারিতবান্ হয়েছেন (বি রুজঃ) অর্থাৎ বিভগ্ন করেছেন ৷ ৬ ৷

হে যজমানবৃন্দ! আপনাদের নিমিত্ত (বঃ) অতিশয়িত বলশালী (শবিষ্ঠং), প্রাচীন (প্রত্নং), সেই প্রসিদ্ধ ইন্দ্রকে (তং) নবতর স্তুতির দ্বারা (নব্যস্যা ধিয়া) প্রাচীন মহর্ষিগণের ন্যায় (প্রত্নবৎ) আমিও অলঙ্কারমণ্ডিত করতে উদ্যত হয়েছি (পরিতংসযধ্যে)। ইয়ত্তাশূন্য অর্থাৎ সর্বার্থে অসীম (অনিমানঃ) বা মহান, শোভন-বাহনশালী (সুবহ্মা) সেই ইন্দ্র আমাদের (স ইন্দ্ৰঃ নঃ) সকল দুস্তর বাধা (বিশ্বানি দুঃগহানি) অতিক্রম করিয়ে দিন ॥ ৭

হে ইন্দ্র! আপনি সাধুজনের প্রতি দ্বেষকারী (হূনে) রাক্ষস ইত্যাদিকে (জনায়) পার্থিব অর্থাৎ পৃথিবীলোকে, দিব্য অর্থাৎ দ্যুলোকে ও অন্তরিক্ষ স্থানের সর্বত্র তাপ প্রদান করুন (আ দীপয়ঃ)। হে বৃষণ (অর্থাৎ কামবৰ্ষক) ইন্দ্র! আপনি সর্বতে বিদ্যমান (বিশ্বতঃ) সেই রাক্ষস ইত্যাদিকে (তা) আপনার দীপ্তির প্রভাবে দহন করুন (শোচি তপ)। অধিকন্তু, ব্রাহ্মণদেষ্টা রাক্ষস ইত্যাদিকে (ব্রহ্মদ্বিষে) পৃথিবী ও অন্তরীক্ষে (ক্ষাম অপঃ চ) দগ্ধীভূত করুন (শোচয়)। ৮

হে দীপ্তদর্শন অর্থাৎ প্রজ্বলিত অগ্নির ন্যায় দেহধারী (ত্বেষসক) ইন্দ্র! আপনি দ্যুলোকস্থ জনগণের (দিব্যস্য জনস্য) এবং পার্থিব জগতের (পার্থিবস্য জগতঃ) রাজা অর্থাৎ ঈশ্বর (রাজা ভুবঃ)। আপনি দক্ষিণ হস্তে বজ্র ধারণ করেছেন (ধিষ)। হে অজুর্য (অর্থাৎ জরার স্পর্শের অতীত) ইন্দ্র! আপনি সেই নিহিত বজ্রের দ্বারা সকল আসুরিক মায়া (বিশ্বাঃ মায়াঃ) বিদূরিত করে দিন (বি দয়সে)। ৯।

শত্রুগণের কবল হতে উদ্ধারণের নিমিত্ত (শত্রুতূর্যায়) মহতী (বৃহতীং), অহিংসিতা (অমৃভ্রাং), সঙ্গতা (সংযতং) ও ক্ষেমলক্ষণা সম্পদ (স্বস্তিং), হে ইন্দ্র! আপনি আমাদের নিমিত্ত (নঃ) আহরণ করুন (আ হর) অর্থাৎ আমাদের প্রদান করুন। হে বজ্রভান (বজি) ইন্দ্র! সেই ক্ষেমরূপা সম্পদের দ্বারা (যয়া) কর্মের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষয়কারী (দাসানি) হীন শত্ৰুভূত (বৃত্ৰা) মনুষ্যগণকে (নাহুষানি) শ্রেষ্ঠ (আর্যাণি) তথা শোভন-অপত্যভূত অর্থাৎ পুত্রস্থানে স্থাপিত করুন (সুতুকা করঃ)। ১০।

হে পুরুহৃত (অর্থাৎ যজমানগণ কর্তৃক বহুভাবে আহূত) ইন্দ্র! হে বেধঃ (অর্থাৎ সকলের বিধাতা) ইন্দ্র! হে প্রযজ্যো (অর্থাৎ প্রকর্ষের সাথে স্তবনীয় বা প্রকৃষ্ট গমনশালী) ইন্দ্র! সকলের বরণীয় (বিশ্ববারাভিঃ) নিযুত নামক অশ্বসমূহের সাথে (নিযুৎভিঃ) আমাদের নিকট আগমন করুন (নঃ আ গহি)। আপনার আগমনসাধন সেই নিযুক্ত নামক অশ্বগুলিকে (যাঃ) দেবলক্ষণহীন অসুরগণ (অদেব) নিবারণ করতে পারে না (ন বরতে) তথা দেবতাগণও (দেবঃ) নিবারণ করতে পারেন না (ন বরতে)। কারও পক্ষেই অনিবারণীয় সেই নিযুত নামক অশ্বগুলি সমভিব্যাহারে (আভিঃ) আমাদের অভিমুখে দৃষ্টি স্থাপন পূর্বক অর্থাৎ আমাদের অভিমুখী হয়ে (মদ্রি) শীঘ্র আগমন করুন (তৃয়ম্ আ যাহি) ॥১১।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –আভিপ্লবিকে যুগ্মহনি মাধ্যন্দিনসবনে ব্রাহ্মণাচ্ছংসিশস্ত্রে য এক ইদ্ধব্যঃ, ইতি সূক্তং সম্পাতসংজ্ঞয়া বিনিযুক্তং। সূত্রিতং হি।..ইত্যাদি। (২০কা. ৪অ. ৩সূ.)।

টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি আভিপ্লবিকের যুগ্মদিনে মাধ্যন্দিন সবনে ব্রাহ্মণাচ্ছংসী শস্ত্রে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। (বৈ. ৬১)। (২০কা. ৪অ. ৩সূ)।

.

চতুর্থ সূক্ত

 [ঋষি : বসিষ্ঠ দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

 যস্তিগশৃঙ্গো বৃষভো ন ভীম একঃ কৃষ্টীশ্চাবয়তি প্ৰ বিশ্বাঃ। যঃ শশ্বততা অদাশুষো গয়স্য প্রত্নাসি সুম্বিতরায় বেদঃ ॥১॥ ত্বং হ ত্যদিন্দ্র কুৎসমাবঃ শুশ্রুষমাণস্ত সমর্ষে। দাসং যচ্ছষ্ণং কুবৎ ন্যস্মা অরন্ধয় আর্জুনেয়ায় শিক্ষ। ২। ত্বং ধৃষ্ণো ধৃষতা বীতহব্যং প্রাবো বিশ্বাভিরাতিভিঃ সুদাস। প্র পৌরুকুৎসিং সদস্যুমাবঃ ক্ষেত্রতা বৃত্ৰহত্যে পূরুম্ ॥৩॥ ত্বং নৃভিনৃর্মণণা দেববীতৌ ভূরীণি বৃত্ৰা হযশ্ব হংসি। ত্বং নি দস্যু চুমুরিং ধুনিং চাস্বাপয়ো দভীতয়ে সুহন্তু ॥৪॥ তব চৌত্নানি বজ্রহস্ত তানি নব যৎ পুরো নবতিং চ সদ্যঃ। নিবেশনে শততমাবিবেষীরহং চ বৃত্ৰং নমুচিমুতাহ ॥৫॥ সনা তা ত ইন্দ্র ভোজনানি রাতহব্যায় দাশুষে সুদাসে। বৃষ্ণে তে হরী বৃষণা যুনমি ব্যন্তু ব্ৰহ্মাণি পরুশাক বাজ ৷৬৷৷ মা তে অস্যাং সহসাব পরিষ্টাবঘায় ভূম হরিবঃ পরাদৈ। ত্রায় নোহবৃকেভির্বরূথৈস্তব প্রিয়াসঃ সূরিষু স্যাম ৷৷৷ প্রিয়াস ইৎ তে মঘবন্নভিষ্টেী নরো মদেম শরণে সখায়ঃ। নি তুবশং নি যাদ্বং শিশীহ্যতিথিদ্যায় শংস্যং করিষ্যত্ ॥৮॥ সদ্যশ্চিন্নু তে মঘবন্নভিষ্টেী নরঃ শংসন্তু্যথশাস উথা। যে তে হবেভিৰ্বি পণীরদাশম্মান বৃণী যুজ্যায় তস্মৈ ॥৯॥ এতে স্তোমা নরাং নৃতম্ তুভ্যমম্মাঞ্চো দদতো মঘানি। তেষামিন্দ্র বৃহত্যে শিববা ভূঃ সখা চ শূরোহবি চ নৃণাম ॥১০৷৷ নূ ইন্দ্র নূর স্তবমান উতী ব্রহ্মজুতস্তম্বা বাবৃধস্ব।  উপ নো বাজা মিমীহু্যপ স্তী ঘূয়ং পাত স্বস্তিভিঃ সদা নঃ ॥১১৷৷

বঙ্গানুবাদ –হে ইন্দ্র! যে আপনি তীক্ষ্ণ শৃঙ্গশালী বৃষভের ন্যায় ভয়জনক (যঃ তিগ্মশৃঙ্গঃ বৃষভঃ ন ভীমঃ); সেই আপনি কারো সহায় ব্যতিরেকে অর্থাৎ একাকীই (একঃ) আমাদের সকল শত্ৰুজনকে (বিশ্বাঃ কৃষ্টীঃ) প্রকর্ষের সাথে বিদূরিত করুন (প্র চ্যাবয়তি)। আপনি চিরন্তন বা নিত্য (যঃ শশ্বতঃ)। হবিঃ-অদানকারী, অজমানগণের (অদাশুষঃ) ধনপূর্ণ গৃহসদৃশ লুব্ধকের (গয়স্য) ধন (বেদঃ) সুষ্ঠু সোমাভিষববান (সুম্বিতরায়) যজমানগণকে প্রকর্ষের সাথে প্রদান করে থাকেন (প্রত্না অসি) ॥১॥

 হে ইন্দ্র! আপনিই মর্তের যোদ্ধাগণের সাথে সংগ্রামে (সমর্যে) অথবা মর্তের ঋত্বিকগণের সাথে যজ্ঞে, শরীরের দ্বারা (ত) শুশ্রূষা প্রাপ্ত হয়ে (শুশ্রুষমাণঃ) কুৎসকে রক্ষা করেছিলেন (আবঃ)। যখন আপনি (অস্মৈ) অর্জুনীর পুত্র কুৎসের নিমিত্ত দাস নামক ও কুযব নামক অসুরবর্গকে (শুষ্ণং) শিক্ষা দান পূর্বক (শিক্ষণ) তাদের ধন কুৎসকে প্রদানের নিমিত্ত নিরন্তর বশ করেছিলেন (নি অরন্ধয়ঃ)। ২।

হে ধৃষ্ণো (অর্থাৎ শত্রুগণের ধর্যক) ইন্দ্র! আপনি আপনার (ত্বং) শত্রুধর্ষক বজ্রের দ্বারা (ধৃষতা) হবিদাতা (বীতহব্য) সুদাস অর্থাৎ শোভনদান নামক রাজাকে অথবা বীতহব্য ও সুদাস নামক রাজদ্বয়কে সকল রক্ষণের দ্বারা (বিশ্বাভিঃ ঊতিভিঃ) রক্ষা করেছিলেন, (প্র আবঃ)। অধিকন্তু সংগ্রামে (বৃহত্যেষু) ভূমিদানের নিমিত্তভূত হয়ে (ক্ষেত্ৰসাতা) পৌরকুৎসি অর্থাৎ পুরুকুৎসের পুত্র রাজা সদস্যুকে ও পুরু নামক রাজাকে রক্ষা করেছিলেন (আবঃ) ॥ ৩৷৷

হে নৃমণঃ (অর্থাৎ স্তোতৃগণের মননীয় অর্থাৎ অনিবার অনুচিন্তনীয়, অথবা মনুষ্য যজমানগণের প্রতি অনুগ্রহ মনোযুক্ত) ইন্দ্র! হে হর্যশ্ব (অর্থাৎ হরি-নামক অশ্বোপেত) ইন্দ্র! আপনি দেবগণের আগমনস্থল বা ভক্ষণস্থলরূপ যজ্ঞে (দেববীতৌ) অথবা যুদ্ধার্থে দেবগণের গমন স্থলে, যোদ্ধা মরুত্বর্গের সাথে। (নৃভিঃ) বহু আবরক রাক্ষস ও পাপ (ভূরীণি বৃত্ৰা) হনন করেছেন (হংসি)। অধিকন্তু, হে ইন্দ্র! আপনি দভীতি নামক রাজর্ষির নিমিত্ত (দভীতয়ে) শোভন হনন-সাধন বজোপেত হয়ে (সুহঃ) দস্যু চুমুরি ও খুনিকে বিনাশ করেছেন (অস্বাপয়ঃ)। ৪

হে বজ্রধারী ইন্দ্র! আপনার (তব) সেই প্রসিদ্ধ বলসমূহ (তানি) অতি দৃঢ় অর্থাৎ অপর কর্তৃক অনভিভবনীয় (চৌত্ননি), এবং সেই বলের দ্বারা আপনি অসুরগণের একোনশতসংখ্যকা (নব নবতিং চ) অর্থাৎ নিরানব্বইটি নগরী (পুরঃ) বিধ্বংস করেছেন (সদ্যঃ) এবং শততম নগরী, বা বাসগৃহও (শততমা নিবেশনে) ব্যাপ্ত করেছেন (অবিবেষীং); এবং বৃত্র ও নমুচি নামক অসুরকে নিহত করেছেন (অহ) ॥ ৫॥

হে ইন্দ্র! আপনার দত্ত ধনসমূহ (ভোজনানি), যা আপনি শোভন হবিদাতা যজমানকে (রাতহব্যায় দাশুসে সুদাসে) অথবা সুদাস নামক রাজাকে দান করেছিলেন, তা চিরস্থায়ী (সনা) হয়েছিল। হে পুরুনাক (অর্থাৎ বহুকর্মকুশল) ইন্দ্র! কামবৰ্ষক (বৃষ্ণে) আপনাকে আনয়নের নিমিত্ত (তে) হরি নামক অশ্বদ্বয় (বৃষনা) রথে যোজিত করছি (যুনন্নি)। আমাদের স্তোত্রসমূহ (ব্রহ্মণি) বলবান্ (বাজং) আপনার সমীপে গমন করুক (ত্বাং ব্যন্তু) ॥ ৬।

 হে সহসাব (অর্থাৎ বলবান্ বা সকল বিষয়ে সামর্থ্য-সম্পন্ন) ইন্দ্র! হে হরিবঃ (অর্থাৎ হরিতবর্ণোপেত অশ্বশালী) ইন্দ্র! আপনার এই ক্রিয়মাণ (তে অস্যাং) পর্যেষণায় (পরিষ্টো) পরিত্যাগ-লক্ষণযুক্ত (পরাদৈ) পাপ (অঘায়) যেন আমাদের না ঘটে (মা ভূম); [বক্তব্য এই যে, ইন্দ্রের উদ্দেশে অনুষ্ঠিত যজ্ঞ যেন আমরা কখনও পরিত্যাগ না করি]। হে ইন্দ্র! হিংসা-পরিশূন্য উপদ্রবরহিত বক্ষণের দ্বারা আমাদের রক্ষা করুন (নঃ অবৃকেভিঃ বন্ধুথৈ); [বক্তব্য  এই যে, আমাদের সেইভাবে রক্ষা করুন, যাতে কেউ যেন আমাদের প্রতি হিংসা না করতে পারে এই এবং কোন উপদ্রব করতে না পারে ]। এবং আমরা বিদ্বান স্তোতৃবর্গের মধ্যে (সূরিষু) আপনার প্রিয় হবো (তব প্রিয়াস স্যাম)। ৭

হে ধনশালী (মঘব) ইন্দ্র! আপনার (তে) অভিগমনের ইচ্ছায় (অভিষ্টে) হবিদাতা যজমানরূপী আমরা (নরঃ) আপনার মিত্রস্বরূপ প্রিয় হয়ে (সখায়ঃ প্রিয়াসঃ ইৎ) আমাদের গৃহে (শরণে) যেন হৃষ্ট হই (মদেম)। অধিকন্তু অতিথিগণের সেবার্থে গাভী-পালক, অথবা সকারার্থে অতিথিবৃন্দের অভিমুখে গমনকারী রাজার, অর্থাৎ অতিথিদ্যের (অতিথিদ্যায়) প্রখ্যাপনীয় সুখ সম্পাদনের ইচ্ছা করে (শংস্যং করিষ্য) তুবশ নামক রাজাকে ও যদুকুলোৎপন্ন রাজাকে (যাদ্ব) আপনি তীক্ষ্ণীকৃত বা তাড়িত করুন (নি শিশীহি) ॥ ৮

হে ইন্দ্র (মঘবৎ)! আপনার অভিগমনে (তে অভিষ্টেী) অর্থাৎ আগমন ঘটলে স্তুতি-প্রবর্তক ঋত্বিকবৃন্দ (নরঃ) সেইক্ষণেই উথ শস্ত্রে আপনার স্তুতি উচ্চারণ করেন (সদ্যঃ চিৎ নু উথশাসঃ উতা শংসন্তি)। স্তুতি-প্রবর্তক ঋত্বিকবৃন্দ (যে) আপনাকে (তে) আহ্বানের মাধ্যমে (হবেভিঃ) বণিকভূত লুব্ধক অযাজ্ঞিকগণকে (পণী) বধ করে থাকেন (বি অদাশ)। এইরূপে সেই সামমন্ত্রের উদ্গাতা আমাদের (অস্মা) সেই প্রসিদ্ধ (তস্মৈ) যোজয়িতব্য ফলের নিমিত্ত অথবা যাগের নিমিত্ত (যুজ্যায়) বরণ করুন (বৃণী)। [বক্তব্য এই যে, যেহেতু আমরা উথ মন্ত্রের উচ্চারণকারী, সেই হেতু আমাদের অভিমত ফলপ্রাপ্তির পক্ষে স্বীকৃতি প্রদান করুন ] ৯

পুরুষগণের মধ্যে (নরাং), হে পুরুষোত্তম (নৃতম) ইন্দ্র! আমাদের ইদানীং এই স্তুতি সমুদায় (এতে স্তোমা) আমাদের অভিমুখে (অস্মন্ অঞ্চন্তঃ) হবিলক্ষণ ধনরাশির (মঘানি) প্রদাতা (দঃ ) আপনার উদ্দেশে (তুভ্যং) কৃত। হে ইন্দ্র! শত্রু বা আবরক পাপ হননের নিমিত্তভূত হলে (বৃহত্যে) স্ততি-সম্পাদক আমাদের অথবা আমাদের কৃত স্তোমগুলির প্রতি (তেষাং) আপনি সুখয়িতা বা মঙ্গলপ্রদায়ক হোন (শিবঃ ভূঃ)। অধিকন্তু হবিদাতা বা স্তুতিকারক আমাদের (নৃণা) পক্ষে আপনি বীরস্বরূপ (রঃ), সখিবৎ মিত্রভূত (সখা) ও রক্ষিত (অবিতা) হোন ॥ ১০

হে শৌর্যসম্পন্ন (শূর) ইন্দ্র! আপনি রক্ষণের নিমিত্তভূতরূপে (উতী) আমাদের দ্বারা স্থূয়মান (স্তবমানঃ) ও হবিঃ-সমূহের প্রাপিত (ব্রহ্মজুতঃ) হয়ে আপন শরীরের দ্বারা অত্যন্ত প্রবৃদ্ধ হয়ে উঠুন (তন্ব ববৃধস্য)। অতঃপর আমাদের (নঃ) অন্নসমূহ (বাজা) প্রদান করুন। (উপ মিমীহি)। তথা কুলের অর্থাৎ রংশের সমর্ধনের অর্থাৎ সম্যক্ বর্ধনের উপযুক্ত পুত্র ইত্যাদি প্রদান করুন (উপ স্তী)। হে অগ্নি প্রমুখ দেবগণ। আপনারাও (যুয়) মঙ্গলের সাথে (স্বস্তিভিঃ) সদা আমাদের রক্ষা করুন (নঃ পাতা)। ১১।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –আভিপ্লবিকে তৃতীয়েহনি ষষ্ঠে চ যক্তিগশৃঙ্গঃ ইতি সম্পাতসংজ্ঞকং সূক্তং মাধ্যন্দিনসবনে ব্রাহ্মণাচ্ছংসিশস্ত্রে বিনিযুক্তং (২০কা. ৪অ. ৪সূ.) ৷৷

টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি পূর্বসূক্তের মতোই বিনিযুক্ত হয়। এইটি কেবল তৃতীয় দিবসেই নয়, ষষ্ঠ দিবসেও মাধ্যন্দিন সবনে বিনিয়োগ করা হয়ে থাকে। পূর্ব সূক্তে এর সূত্রে উল্লেখিত আছে ৷ (২০কা. ৪অ. ৪সূ)। [অতঃপর, অর্থাৎ ২০শতি কাণ্ডের ৫ম অনুবাক থেকে গ্রন্থের অন্তিম পর্যন্ত অংশের ভাষ্য ইত্যাদি আচার্য সায়ন রচনা করেননি। সেই জন্য পণ্ডিতবর দুর্গাদাসও তার সম্পাদিত গ্রন্থে পূর্ববর্তী কিছু অংশের মতো এই অংশটুকুরও ভাষ্য কিংবা অনুবাদ দেওয়া থেকে বিরত থেকেছেন। তবে আমরা যথা-প্রতিশ্রুতি অনুসারে হিন্দী-বলয়ের অথর্ববেদজ্ঞ পণ্ডিতবর্গের অবদান-অবলম্বনে এই অংশেরও সূক্তসার ইত্যাদি উল্লেখ করেছি।]

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *