২০।১ বিংশ কাণ্ড : প্রথম অনুবাক

অথর্ববেদসংহিতা বিংশ কাণ্ড
প্রথম অনুবাক
প্রথম সূক্ত
[ঋষি : বিশ্বামিত্র, গোতম, বিরূপ দেবতা : ইন্দ্র, মরুৎ, অগ্নি ছন্দ : গায়ত্রী]

ইন্দ্র ত্ব বৃষভং বয়ং সুতে সোমে হবামহে। স পাহি মধ্বে অন্ধসঃ ॥১॥ মরুতে যস্য হি ক্ষয়ে পাখা দিবো বিমহসঃ। স সুগোপাতমো জনঃ ॥ ২॥ উক্ষান্নায় বশান্নায় সোমপৃষ্ঠায় বেধসে। স্তোমৈর্বিধেমাগ্নয়ে৷ ৩৷৷

বঙ্গানুবাদ –হে ইন্দ্র! তুমি পরমৈশ্বর্যবান অথবা সোমের (পানের) নিমিত্ত সত্বর গমনশীল। তুমি অভীষ্টবর্ষণে সমর্থ (বৃষভং)। সেই হেন তোমাকে আমরা অর্থাৎ যজমানগণ সোম অভিযুত হলে পর, তা পান করার নিমিত্ত আহ্বান করছি (হবামহে)। তা (স) অর্থাৎ আমাদের দ্বারা আহূত হয়ে তুমি মধুর রসযুক্ত (মধ্বঃ) সোমলক্ষণ অন্ন (অন্ধসঃ) বা অন্নলক্ষণ মধুর সোমরস পান করো (পাহি)। ১।

হে মরুৎ-বর্গ! তোমরা সকল দেবগণের মধ্যে অতিশয়িত বীর্যবান, (প্রাণান্তক বায়ুর নির্গমে প্রাণীগণের মৃত্যু প্রসিদ্ধ, সুতরাং যাদের দ্বারা প্রাণীগণের মৃত্যু হয়, তোমরাই তারা; অথবা অদিতি গর্ভে অবস্থানকালে সেই গর্ভে প্রবিষ্ট ইন্দ্র কর্তৃক ঊনপঞ্চাশৎ ভাগে খণ্ডিত যে দেবগণ মরুৎ নামে প্রসিদ্ধ, তোমরাই তারা); যে যজমানের (স জনঃ) যজ্ঞগৃহে (ক্ষয়ে) দ্যুলোক হতে আগত হয়ে তোমরা সোম পান করে থাকো (পাথ), সেই যজমান এই লোকে আপন আশ্রিত রক্ষকগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ (সুগোপাতমঃ)। (অতএব আমি হেন সেই যজমানের গৃহে বা যজ্ঞগৃহে তোমরা সোমপান করো)। ২৷৷

উক্ষান্ন অর্থাৎ সেচনসমর্থ বৃষ যাঁর অন্ন, বোন্ন অর্থাৎ বন্ধ্যা অজ ইত্যাদি যাঁর অন্ন বা হবিঃ, তথা সোমরস যাঁর পৃষ্ঠে বা উপরিদেশে অর্থাৎ মুখে স্থিত হয়ে আছে (সোমপৃষ্ঠায়), সেই হেন বিধাতা বা সকলের স্রষ্টা (বেধসে) উক্তগুণবিশিষ্ট বা অঙ্গনাদিগুণবিশিষ্ট অগ্নিদেবের (অগ্নয়ে) স্তুতিসাধনভূত স্তোত্রের দ্বারা (স্তোমৈঃ) পরিচর‍্যা করছি (বিধেম)। ৩ ৷৷

বিনিয়োগ টীকা— এই বিংশ কাণ্ডের নয়টি অনুবাক। প্রথম অনুবাকে সূক্তসংখ্যা ত্রয়োদশ। এর মধ্যে প্রথম অর্থাৎ উপযুক্ত তিনটি ঋক্ সম্বলিত সূক্তে অগ্নিষ্টোম ইত্যাদি যজ্ঞে ব্রাহ্মণাচ্ছংসি, পোত্রা বা পোতা ও অগ্নিবর্গ ক্রমে প্রাতঃসবনিক প্রস্থিতযাজ্যার কথা বলা হয়েছে। বৈতানে (৩/৯) এর বিধান সূত্রিত আছে। অগ্নির উক্ষান্ন বশান্ন ইত্যাকার রূপ আখলায়ন গৃহ্যসূত্রেও (১১) পাওয়া যায়। (২০কা, ১অ. ১১সূ.)।

.

দ্বিতীয় সূক্ত

 [ঋষি : গৃৎসমদ (মেধাতিথি) দেবতা : ইন্দ্র, মরুৎ, অগ্নি, দ্রবিণোদা ছন্দ : গায়ত্রী, উষ্ণিক, ত্রিষ্টুপ]

মরুতঃ পোত্রাৎ সুষ্ঠুভঃ স্বর্কাদৃতুনা সোমং পিবতু ৷৷ ১। অগ্নিরাগ্নীাৎ সুষ্ঠুভঃ স্বর্কাদৃতুনা সোমং পিবতু ॥ ২॥ ইন্দ্রো ব্রহ্মা ব্রাহ্মণাৎ সুষ্ঠুভঃ স্বর্কাদৃতুনা সোমং পিবতু ॥৩। দেবো দ্রবিণোদাঃ পোত্রাৎ সুষ্ঠুভঃ স্বাদৃতুনা সোমং পিবতু ॥৪॥

বঙ্গানুবাদ –মরুৎ-দেবগণ সুন্দর স্তোত্রসম্পন্ন ও শস্ত্রশালী পোতার বা হোতার যজ্ঞে ঋতুগণ সমভিব্যাহারে আমাদের অভিষব ইত্যাদি সংস্কারোপেত সোমরস পান করুন (পিবতু) ॥১॥ অগ্নিদেব সুন্দর স্তোত্রসম্পন্ন ও শস্ত্রশালী আগ্নীদ্রের অর্থাৎ অগ্নিরক্ষণে নিযুক্ত ঋত্বিকের যজ্ঞে ঋতুগণ সমভিব্যাহারে আমাদের অভিষব ইত্যাদি সংস্কারোপেত সোমরস পান করুন। ২। পরমৈশ্বর্য ইত্যাদি গুণযুক্ত ইন্দ্রদেবই ব্রহ্মা অর্থাৎ ব্রহ্মাত্মক ইন্দ্র দেবতা সুন্দর স্তোত্রসম্পন্ন ও মন্ত্রযুক্ত ব্রাহ্মণাচ্ছংসী (ব্রাহ্মণাৎ) নামক শস্ত্রযাগলক্ষণ ঋত্বিকের যজ্ঞে ঋতুগণ সমভিব্যাহারে আমাদের অভিষব ইত্যাদি সংস্কারোপেত সোমরস পান করুন৷ ৩৷ হিরণ্য ইত্যাদি-লক্ষণ ধন বা বল প্রদাতা (দ্রবিনোদা) দেব সুন্দর স্তোত্রসম্পন্ন ও মন্ত্রোপেত পোতা নামক ঋত্বিকের যজ্ঞে ঋতুগণ সমভিব্যাহারে আমাদের অভিষব ইত্যাদি সংস্কারোপেত সোমরস পান করুন। ৪

বিনিয়োগ টীকা –উপযুক্ত সূক্তটির চারিটি মন্ত্রই ঋতুষৈ নামে আখ্যাত। এখানে ১ম ও ৪র্থ মন্ত্রের দ্বারা পোতা নামক ঋত্বিক যাগের মাধ্যমে ঋতু প্রেরণ করেন, ২য়টির দ্বারা আগ্রীব্র ও ৩য়টির দ্বারা ব্রাহ্মণাচ্ছংসী নামক ঋত্বিকদ্বয় যথাক্রমে যাগ করে থাকেন। বৈতানিক (৩/৯) এর বিধান সূত্রিত আছে। (২০কা, ১অ. ২সূ.)।

.

তৃতীয় সূক্ত

 [ঋষি : ইরিম্বিঠি দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : গায়ত্রী]

আ যাহি সুষুমা হি ত ইন্দ্র সোমং পিবা ইমম। এদং বর্হিঃ সদো মম॥১॥ আ জ্বা ব্রহ্মযুজা হরী বহতামিন্দ্র কেশিনা। উপ ব্ৰহ্মাণি নঃ শৃণু ॥ ২॥ ব্ৰহ্মাণস্তা বয়ং যুজা সোমপামিন্দ্র সোমিনঃ। সুতাবন্তো হবামহে৷৷ ৩৷

 বঙ্গানুবাদ –হে পরমেশ্বর্য ইত্যাদি গুণবিশিষ্ট ইন্দ্র! তুমি আগমন করো (আ যাহি)। (কি জন্য? না) তোমার নিমিত্ত সোম অভিযুত হয়েছে (সুষুমা হি); এই অভিযুত সোম পান করো (ইমম্ পিব); এবং আমার এই আস্তীর্ণ কুশে (ইদং বর্হিঃ) উপবিষ্ট হও (আ সদঃ) ১।

 হে ইন্দ্র! মন্ত্রের দ্বারা রথে যুজ্যমান (ব্রহ্মযুজা), স্কন্ধদেশে প্রকৃষ্ট কেশশালী লোহিত অশ্বদ্বয় (কেশিনা হবী) তোমাকে বহন পূর্বক আগত হোক (আ বহতামং)। তদর্থে অথবা আগমন করে আমাদের আহ্বানসাধন মন্ত্ৰসমূহ শ্রবণ করো (নঃ ব্রহ্মণি উপ শৃণু) ॥ ২॥

হে ইন্দ্র! আমরা ব্রাহ্মণ যজমানগণ (বয়ং) অথবা ব্রাহ্মণাচ্ছংসী ঋত্বিকগণ তোমাকে স্তুতিযোগ্য দেবগণের হৃদয়স্পর্শকরী স্তোত্রের দ্বারা আহ্বান করছি (তা যুজা)। (কিরকম তোমাকে? না–) সোমপানে অত্যন্ত প্রিয়ত্বসম্পন্ন (সোমপা)। (আমরা কেমন? না) আমরা কৃতসোম্যগ অর্থাৎ সোম্যগানুষ্ঠানে রত (সসামিনঃ) এবং অভিযুত- সোমবন্ত অথবা সোমের দ্বারা যুক্ত (সুতাবন্তঃ)। আমরা তোমাকে (সোমপানের নিমিত্ত) আহ্বান করছি (হবামহে) ॥ ৩

বিনিয়োগ টীকা –জ্যোতিষ্টোম ইত্যাদি যজ্ঞবিশেষে প্রাতঃসবনে ব্রাহ্মণাচ্ছংসী-শস্ত্রে উপযুক্ত সূক্তটি সহ পরবর্তী চারিটি (৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম) সূক্ত বিনিযুক্ত হয়েছে। বৈতানিকে (৩।১১) এই বিনিয়োগ-পদ্ধতি সূত্রিত আছে ৷ (২০কা, ১অ. ৩সূ.)।

.

চতুর্থ সূক্ত

 [ঋষি : ইরিম্বিঠি দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : গায়ত্রী]

আ নো যাহি সুতাবতোহস্মাকং সুষ্ঠুতীরুপ। পিবা সু শিপ্রিন্ধসঃ ॥১॥ আ তে সিঞ্চামি কুক্ষ্যোরনু গাত্রা বি ধাতু। গৃভায় জিয়া মধু৷ ২ স্বাদুষ্টে অস্তু সংসুদে মধুমা তম্বে তব। সোমঃ শমন্তু তে হৃদে ৷৩৷৷

 বঙ্গানুবাদ –হে ইন্দ্র! সোম-অভিষবকারী আমাদের প্রতি আগমন করো (সুতাবতঃ আ নঃ যাহি), আমাদের শোভন স্তুতি প্রাপ্ত হও (সুষ্ঠুতীঃ উপা যাহি); এবং আগমন পূর্বক, হে শোভন– হনুযুক্ত ইন্দ্র (সু শিপ্রিণ)! (অর্থাৎ সোমপানোচিত মুখসম্পন্ন বা শোভন-নাসিকোপেত হয়ে)। আমাদের এই সোমরসলক্ষণ অন্ন (অন্ধসঃ) গ্রহণ করো বা সোমের অংশ পান করো (পিব) ॥১॥

 হে ইন্দ্র! তোমার কুক্ষির অর্থাৎ জঠরের উভয় পার্শ্ব (কুক্ষ্যোঃ ) সোমরসে পূর্ণ করে দিচ্ছি (আ সিঞ্চামি)। সেই সোমরস উদরস্থ হয়ে সর্বাঙ্গে অর্তাৎ হস্ত-পদ ইত্যাদির সকল নাড়ীতে প্রবাহিত হোক (বি ধাবতু)। অতএব তুমি মধুবৎ স্বাদুতর (মধু) সোমরস জিহ্বার দ্বারা আস্বাদন বা লেহন করো (গৃভায়)। ২.

 হে সম্যক্ সুষ্ঠু দাতা (সংসুদে) ইন্দ্র! তোমার উদ্দেশে আমাদের দ্বারা উপহৃত মাধুর্যময় (মধুমা) সোম সুস্বাদনীয় হোক (স্বাদু তে অস্তু)। অনন্তর সেই সোম তোমার দেহে (তন্বে) বলকারক হোক অথবা সুখদায়ক হোক (শং অস্তু)। এই সোম তোমার হৃদয়ে (হৃদে) প্রসন্নতা প্রদান করুক ৷ ৩৷৷

বিনিয়োগ টীকা –উপযুক্ত সূক্তটির বিনিয়োগ পূর্ববর্তী সূক্তের অনুরূপ। (২০কা, ১অ. ৪সূ.)।

.

পঞ্চম সূক্ত

 [ঋষি : ইরিম্বিঠি দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : গায়ত্রী]

অয়মু ত্বা বিচৰ্ষণে জনীরিবাভি সমৃতঃ। প্র সোম ইন্দ্র সর্পতু॥১॥ তুবিগ্রীবো বপোদরঃ সুবাহুরন্ধসো মদে। ইন্দ্রো বৃত্রাণি জিহ্বতে ॥ ২॥ ইন্দ্র প্রেহি পুরস্তুং বিশ্বসেশান ওজসা। বৃত্রাণি বৃহং জহি৷ ৩৷৷ দীর্ঘস্তে অঙ্কুশশা যেনা বসু প্রযচ্ছসি। যজমানায় সুন্বতে ॥৪॥ অয়ং ত ইন্দ্র সোমো নিপূত অধি বহিষি। এহীমস্য দ্রবা পিব ॥ ৫৷৷ শাচিগো শাচিপূজনায়ং রণায় তে সুতঃ। আখণ্ডল প্র হুয়সে ॥ ৬৷৷ যস্তে শৃঙ্গবৃষো নপাৎ প্রণপাৎ কুণ্ডপাষ্যঃ। ন্যস্মিন্ দব্র আ মনঃ ॥৭॥

 বঙ্গানুবাদ –হে পশ্যতিকর্মা অর্থাৎ বিশেষ-দ্রষ্টা (বিচৰ্ষণিঃ) ইন্দ্র! অপত্য ইত্যাদির দ্বারা এ ও স্থিত (সভৃতঃ) উৎপত্তি স্থানের মতো (জনীরিব), অথবা সন্তানবতী জননী যেমন পুত্র ইত দ্বারা সর্বদিকে বেষ্টিত হয়ে থাকে, তেমনই এই নোম অধ্বর্য প্রভৃতির দ্বারা আচ্ছন্ন হয়ে পে প্রকৃষ্টভাবে গমন করুক (প্র সর্পতু) ॥ ১।

 সোমলক্ষণ অন্নের ভক্ষণে হর্ষান্বিত (অং ৩০ নদে) ইন্দ্রদেব প্রভূতকন্ধর (তুবিগ্রীবঃ) অর্থাৎ বৃষের ন্যায় সম্যক বৃদ্ধিসম্পন্ন স্কন্ধশালী, মেদে বিস্তীর্ণ অর্থাৎ চর্বিতে পূর্ণ বিশাল উদরশালী, (বপা উদরঃ), তথা শোভন বা বিস্তৃত বাহুশালী (সুবাহুঃ) হয়ে শত্রুগণকে সংহার করে থাকেন (বৃত্রাণি জিঘুতে)। ২।

হে ইন্দ্র! তুমি বিশ্বের অর্থাৎ স্থাবর-জঙ্গমাত্মক সব কিছুর প্রভু। এই হেন তুমি আমাদের সেনাবর্গের পুরোগামী হয়ে (ত্বং পুরঃ প্রেহি), হে বৃঘাতী (বৃহ)! আমাদের অবরোধকারী শত্রুগণকে হত্যা করো (বৃত্রাণি জহি) ॥ ৩ ৷৷

হে ইন্দ্র! তোমার অঙ্কুশবৎ নম্র বা সূক্ষ্মাগ্র অঙ্গুলিযুক্ত হস্ত দীর্ঘ হোক, অর্থাৎ প্রদানবিষয়ে সঙ্কোচরহিত হোক, যার দ্বারা (যেন) অর্থাৎ যে অঙ্কুশের দ্বারা তুমি সোম-নিষ্পন্নকারী ও সোমলক্ষণ হবির দাতা (সুম্বতে) যজমানকে বসু অর্থাৎ ধন প্রদান করতে পারো (সেই রকম দীর্ঘহস্তশালী হও) 8

হে ইন্দ্র! আস্তীর্ণ দুর্ভে (অধি বহিষি) দশাপবিত্রের দ্বারা নিরন্তর শোধিত (নিপূতঃ), (অর্থাৎ গ্রহণ-শ্রয়ণ ইত্যাদি সংস্কারের দ্বারা সংস্কৃত) এই সোম তোমারই নিমিত্ত, অতএব অবিলম্বে আমাদের এই যজ্ঞাভিমুখে (এহি) আগমন করো এবং আগমন করে এক্ষণই (ঈং) এই অভিযুত সোমকে (অস্য) পান করো ৷৷ ৫৷৷

হে পণি নামক অসুরণের দ্বারা অপহৃত গো-বর্গকে পুনরুদ্ধার পূর্বক আনয়নের নিমিত্ত প্রসিদ্ধ (শাচিগো), স্তুতির মাধ্যমে গুণপ্রকাশের নিমিত্ত পূজিত (শাচিপূজন), হে ইন্দ্র! তুমি রমণীয় (রণায়), অথবা তোমার ক্রীড়নায় (রণায়), এই সোম অভিষব ইত্যাদির দ্বারা সংস্কৃত (সুতঃ)। সেই কারণে, হে আখণ্ডল (শত্রুগণকে হিংসাকারী ইন্দ্র)! তুমি সোমপানার্থে আমাদের দ্বারা প্রকৃষ্টভাবে আহূত হচ্ছো (প্র হুয়সে) ॥ ৬৷

হে শৃঙ্গবৃষ নপাৎ (শৃঙ্গবৃণ নামক কোনও ঋষির কুলপালক পুত্র, অথবা শৃঙ্গবৎ উন্নত রশ্মিসমূহের পাতয়িতা আদিত্যকে দ্যুলোকে স্থাপয়িতা, ইন্দ্র)! এই বহুসোমযুক্ত প্রসিদ্ধ ক্রতুতে (কুণ্ডপায্যঃ) তুমি সর্বর্তভাবে মন স্থাপন করো (মনো নি দর্ধে)। ৭।

বিনিয়োগ টীকা –উপযুক্ত সূক্তের সাতটি মন্ত্রই সোমযাগে সোমের স্তুতির মাধ্যমে সোমপ্রিয় ইন্দ্রের নিকট প্রার্থনা জ্ঞাপনে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে ॥ (২০কা, ১অ. ৫সূ.)।

.

ষষ্ঠ সূক্ত

[ঋষি : বিশ্বামিত্র দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : গায়ত্রী]

 ইন্দ্র ত্বা বৃষভং বয়ং সুতে সোমে হবামহে। স পাহি মধ্বো অন্ধসঃ ॥১॥ ইন্দ্র ক্রতুবিদং সুতং সোমং হর্ষ পুরুষ্টুত। পিবা বৃষস্ব তৃপিম্ ॥ ২॥ ইন্দ্র প্রণো ধিতাবানাং যজ্ঞং বিশ্বেভির্দেবেভিঃ। তির স্তবান বিশপতে ॥ ৩ ইন্দ্র সোমাঃ সুতা ইমে তব প্র যন্তি সৎপতি। ক্ষয়ং চন্দ্রাস ইন্দবঃ ॥৪৷৷ দধিম্বা জঠরে সুতং সোমমিন্দ্র বরেণ্যম। তব দুক্ষাস ইন্দবঃ ॥৫৷৷ গির্বণঃ পাহি নঃ সুতং মধোর্ধারাভিরজ্যসে। ইন্দ্র ত্বাদাতমি যশঃ ॥৬॥ অভি দ্যুম্ননি বনিন ইন্দ্ৰং সচন্তে অক্ষিতা। পীত্বী সোমস্য বাবৃধে ॥৭॥ অর্বাবতো ন আ গহি পরাবতশ্চ বৃহন। ইমা জুষ নো গিরঃ ॥ ৮যদন্তরা পরাবতমৰ্বাবতং চ হুয়সে। ইন্দ্ৰেহ তত আ গহি ॥৯॥

বঙ্গানুবাদ –[এই ঋকটি এই অনুবাকের প্রথমেও ব্যাখ্যাত হয়েছে]–হে ইন্দ্র! তুমি পরমেশ্বর্যবান্ অথবা সোমের (পনের) নিমিত্ত সত্বর গমনশীল। তুমি অভীষ্টবর্ষণে সমর্থ। সেই হেন তোমাকে আমরা অর্থাৎ যজমানগণ সোম অভিযুত হলে পর, তা পান করার নিমিত্ত আহ্বান করছি। আমাদের দ্বারা আহূত হয়ে তুমি মধুর রসযুক্ত সোমলক্ষণ অন্ন বা অন্নলক্ষণ মধুর সোমরস পান করো ॥১।

হে পুরুষ্টুত (অর্থাৎ বহু যজমান কর্তৃক বা বহুপ্রকারে স্তুত ইন্দ্র)! যাগের নিম্পাদক (ক্রতুবিদ), অভিষব ইত্যাদির দ্বারা সংস্কৃত (সুতং) এই সোম কামনা করো (হৰ্য); অতঃপর প্রতিদায়ক এই সোম (ততৃপিং) জঠরকুহর পূর্ণ করে (আ বৃষস্ব) পান করো (পিব)। ২।

হে স্কৃয়মা (স্তবা), হে মরুৎগণের স্বামী বা সকল প্রজার পালক (বিপতে), ইন্দ্র! সকল যাগযোগ্য দেবগণের সাথে (বিশ্বেভিঃ দেবেভিঃ) গ্ৰহপাত্র ইতাদির দ্বারা গৃহীত (ধিতাবানং) সোমের আধারভূত যজ্ঞের বর্ধন করো (প্র তির) অর্থাৎ হবিঃ স্বীকার করো। ৩।

হে সৎপতে (অর্থাৎ যজমানবৃন্দের পালক) ইন্দ্র! এই অভিযুত (সুতাঃ), আহ্লাাদকারী (চন্দ্রাসঃ) রসাত্মক (ইন্দবঃ) আমাদের দ্বারা হুয়মান (ইমে) সোম তার নিবাসস্থানে (ক্ষয়ং) অর্থাৎ তোমার জঠরকুহরে প্রকৃষ্টভাবে গমন করছে (প্র যন্তি) ৷ ৪.

 হে ইন্দ্র! আমাদের দ্বারা হুয়মান এই স্পৃহণীয় (বরেণ্য) অভিযুত সোম তোমার জঠরে ধারণ করো (জঠরে দধিম্ব)। এই দীপ্তি নিবাসস্থানভূত (ক্ষাসঃ) সোমরাশি তোমার নিমিত্ত বিশিষ্ট ভাগ ॥ ৫॥

 হে সম্যক ভজনীয় (গির্বণঃ) ইন্দ্র! আমাদের অভিযুত সোম (সুতং) পান করো (পাহি), যেহেতু মধুর সোমের ধারার দ্বারা (মধ্যেঃ ধারাভিঃ) তুমি আদ্ৰীক্রিয় হচ্ছো (অজ্যসে) অর্থাৎ আহূত হচ্ছে। হে ইন্দ্র! তোমার দাঁতব্য অন্ন বা শোধিত যশ আছে (ত্বাদাতম ইৎ)। (অর্থাৎ তোমাকে আমরা সোমের দ্বারা আহূতি প্রদান করছি। এই সোম তোমার সুন্দর যশোরূপ) ৷ ৬ ৷৷

দেবগণের সম্ভজমান অর্থাৎ সম্যক্ ভজনাকারী যজমানের (বনিনঃ) দ্যোতমান সোমলক্ষণ অনুরাশি (দ্যুম্ননি) প্রভূত পরিমাণে (অক্ষিতা) ইন্দ্রদেবের অভিমুখে সম্যক্ গমন করছে (অভি সচন্তে); ইন্দ্র সেই সোম পান করে প্রবৃদ্ধ হচ্ছেন (সোমস্য পীত্বী বাবৃধে)। ৭

হে বৃহন্তা (বৃহ) অর্থাৎ ইন্দ্রদেব! তুমি আমরা হেন যজমানগণের নিকটে নিকটবর্তী দেশ বা স্থান হতে (অর্বাবতঃ), তথা দূরদেশ বা স্থান হতে (পরাবতঃ) আগমন করো। এবং আগমন করে আমাদের স্তুতিরূপ বাক্যসমূহের সেবা করো (নঃ ইমাঃ গিরঃ জুষস্য), অর্থাৎ আমাদের দ্বারা উচ্চারিত তোমার গুণকথন শ্রবণ করো ॥ ৮৷

 হে ইন্দ্র! তুমি দূরস্থান (পরাবতং) তথা সন্নিহিত স্থান (অৰ্বাবতং) এবং তার যে (যৎ) অন্তরালদেশে (অন্তরা) আহূত হয়েছে, সেই সেই দেশ হতে (ততঃ) আমাদের এই যাগদেশের প্রতি (ইহ) অর্থাৎ যজ্ঞস্থলে আগমন করো (আ গহি) ॥ ৯৷৷

বিনিয়োগ টীকা –উপযুক্ত সূক্তের নয়টি মন্ত্রই প্রাতঃসবনশস্ত্রে বিনিয়োগ করা হয়ে থাকে। (২০কা, ১অ. ৬সূ.)।

.

 সপ্তম সূক্ত

[ঋষি : সুকক্ষ, বিশ্বামিত্র দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : গায়ত্রী]

উদ্বেদভি তামঘং বৃষভং নর্যাপস। অস্তারমেষি সূর্য। ১। নব যো নবতিং পুরো বিভেদ বাহোজসা। অহিং চ বৃত্ৰহাবধীৎ ॥ ২॥ স ন ইন্দ্ৰঃ শিবঃ সখাশ্বাবদ গোমদ যমৎ। উরুধারেব দোহতে ॥৩॥ ইন্দ্ৰ ক্রতুবিদং সুতং সোমং হর্ষ পুরুষ্টুত। পিবা বৃষস্ব তৃপিম্ ॥৪॥

বঙ্গানুবাদ –হে সূর্য! স্তোতা অর্থাৎ স্তুতিপরায়ণ ও যজ্ঞক্রিয়াশীল অর্থাৎ যজমানবর্গকে দাঁতব্যের নিমিত্ত যাঁর বিখ্যাত ধনরাশি আছে (তমঘং); যিনি অভীষ্ট ফলের বর্ষক (বৃষভং); মনুষ্যের হিতের নিমিত্ত যাঁর কর্মসমূহ (ন্যাপসং), অর্থাৎ আপন সেবকগণের ইষ্টপ্রাপ্তি ও অনিষ্ট পরিহারের বিষয়ে যিনি কর্মবন্ত; তথা যিনি শূঞগণের নিবর্তক, সেই হেন মহানুভাব ইন্দ্রের অভিলক্ষ্যে তুমি উদিত হও (উৎ ব ইৎ অভি)। (সূর্যোদয়ের অভাবে ইন্দ্রের উদ্দেশে সোমলক্ষণ হবিঃ-প্রদান অসম্ভব; সেই হেতু সূর্যের নিকট এই উদয়-প্রার্থনা) ॥১॥

যে ইন্দ্র শম্বরাসুরের নব নবতি অর্থাৎ নিরানব্বই সংখ্যক মায়ানির্মিত পুরী (পুরঃ) বাহুবলে (বাহোজসা) অর্থাৎ অন্যের সাহায্য ব্যতিরেকে বিনাশ করেছেন (বিভেদ), সেই ইন্দ্ৰ শত্ৰুগণকে হত্যা করেছেন (বৃত্ৰহা) অথবা মেঘদলকে বিদীর্ণ করেছেন এবং বৃত্ৰ নামক অসুরকে বধ করেছেন (অহি চ অবধীৎ)। ২।

সেই পূর্বোক্ত গুণবিশিষ্ট ইন্দ্র আমাদের সুখকারী (শিবঃ) ও মিত্রভূত (সখা)। তাদৃশ ইন্দ্র আমাদের বহু অশ্ব, বহু গাভী ও বহু যবযুক্ত অর্থাৎ ধান্যযুক্ত ধন প্রদান করুন, যেমন প্রভূত ধারাযুক্ত অর্থাৎ বহুক্ষীরা গাভী সর্বজনের তৃপ্তিসাধন প্রভূত দুগ্ধ প্রদান করে (উরুধারেব দোহতে)। ৩।

হে বহু যজমান কর্তৃক বা বহুপ্রকারে স্তুত ইন্দ্র! যাগের নিম্পাদক, অভিষব ইত্যাদির দ্বারা সংস্কৃত এই সোম কামনা করো; অতঃপর প্রীতিদায়ক এই সোম জঠরকুহর পূর্ণ করে পান করো। ৪

 বিনিয়োগ টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি ব্রাহ্মণাচ্ছংসিগণের প্রাতঃসবনে বিনিয়োগ হয়ে থাকে। ৪র্থ মন্ত্রটি ৬ষ্ঠ সূক্তের ২য় মন্ত্ররূপে পাওয়া যায়, আবার পরবর্তী ৮ম সূক্তের ১ম মন্ত্ররূপে উল্লিখিত। (২০কা, ১ ১অ. ৭সূ.)।

.

 অষ্টম সূক্ত

 [ঋষি : ভরদ্বাজ, কুৎস, বিশ্বামিত্র দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

ইন্দ্র ক্রতুবিদং সুতং সোমং হর্য পুরুষ্টুত। পিবা বৃষ তাতৃপিম্ ॥১॥ এবা পাহি প্রথা মন্তু ত্বা শ্রুধি ব্ৰহ্ম বাবৃধতে গীর্ভিঃ। আবিঃ সূর্যঃ কৃণুহি পীপিহীষো জহি শরভি গা ইন্দ্র তৃন্ধি ॥ ২॥ অর্বাঙেহি সোমকামং ত্বাহুরয়ং সুতস্তস্য পিবা মদায়। উরুব্যচা জঠর আ বৃষস্ব পিতেব নঃ শৃণুহি হুয়মানঃ ॥ ৩৷৷ আপূর্ণো অস্য কলশঃ স্বাহা সেক্তের কোশং সিসিচে পিবধ্যৈ। সমু প্রিয়া আববৃত্ৰ মদায় প্রদক্ষিণিদভি সোমাস ইন্দ্রম্ ৷ ৪

বঙ্গানুবাদ –হে বহু যজমান কর্তৃক বা বহুপ্রকারে স্তুত ইন্দ্র! জ্যোতিষ্টোম ইত্যাদি যজ্ঞ নিষ্পদক, অভিষব ইত্যাদির দ্বারা সংস্কৃত এই সোম কামনা করো; অতঃপর প্রীতিপ্রদায়ক এই সোম জঠরকুহর পূর্ণ করে পান করো১

হে ইন্দ্র! তুমি পূর্বকালে (প্রত্নথা) অর্থাৎ অঙ্গিরা প্রভৃতি ঋষিগণের কালে তাদের অনুষ্ঠিত সোমযাগে যে প্রকারে সোম পান করেছিলে, সেইরকমে আমাদেরও সোম পান করো (এব পাহি), সেই নিমিত্ত আমাদের মন্ত্রাত্মক স্তোত্র শ্রবণ করো (ব্রহ্ম শ্রুধি)। সেই পীত সোম তোমাকে হর্ষান্বিত করুক (স ত্বা মন্দতু)। কেবল শ্রবণের দ্বারা হর্ষান্বিত নয়, অধিকন্তু আমাদের স্তুতিবাক্যে (গীর্ভি) বর্ধিত হয়ে ওঠো (ববৃধস্ব)।অতএব তোমার যাগের নিমিত্ত। সর্বকর্মের প্রেরক সূর্যদেবকে প্রকাশিত করো (আবিঃ কৃণুহি) অথবা আমাদের ব্যবহারের নিমিত্ত সূর্যদেব বহুকাল প্রকাশিত থাকুক। আমাদের উপভোগ সাধনোপযোগী অন্ন ইত্যাদির (ইষঃ) সম্যক বৃদ্ধি সাধন করো (পীপিহি); অধিকন্তু আমাদের শত্রুগণের অর্থাৎ বিরোধী ও দ্বেষীগণের বিনাশ সাধন করো (জহি)। হে ইন্দ্র! পণি নামক অসুরগণ কর্তৃক অপহৃত গাভীসমূহ আমাদের প্রত্যর্পিত করো (অভি তৃন্ধি)। ২।

হে ইন্দ্র! আমাদের অভিমুখে আগত হও (অবাঙ এহি)। (কি জন্য?) সোমকামং তাহুরিতি অভিজ্ঞজনেরা তোমাকে সোমবিষয়ে অত্যন্ত অভিলাষী বলে থাকেন, যে জন্য এই সোম তোমার নিমিত্ত অভিযুত হয়েছে (তাহুঃ অয়ং সুতঃ তস্য)। সেই সোম তুমি কুক্ষিপরিপূর্তিপর্যন্ত অর্থাৎ যতক্ষণ না উদর পরিপূর্ণ হয়ে না ওঠে, ততক্ষণ পর্যন্ত পান করো (উরু ব্যচা…); এবং পিতা যেমন পুত্রের বাক্য (অর্থাৎ অনুরোধ) শ্রবণ করে (অর্থাৎ রক্ষা করে) তেমনই তুমি আমাদের আহ্বান শ্রবণ করো (পিতা ইব নঃ…)৷ ৩৷৷

এই দ্রোণকলস (দ্রুমময় যজ্ঞীয় কলশ) ইন্দ্রের উদ্দেশে (অস্য) সোমরসের দ্বারা সর্বতঃ পূর্ণ করা হয়েছে (আপূর্ণঃ অস্য কলশঃ); (কি নিমিত্ত? না) হোমের নিমিত্ত (স্বাহা অর্থাৎ স্বাহুতত্বায়)। সেক্তা অর্থাৎ পূরক জল বা। ভিস্তিবাহক তার কোশ অর্থাৎ দৃতি বা ভিস্তি জলে পূর্ণ করে, সেইভাবে ইন্দ্রের পানের নিমিত্ত বের (পিবধ্যৈ) অধ্বর্য সোমরসে গ্রহ ইত্যাদি পাত্র পূর্ণ করছে। সেই হৃদয়গ্রাহী (প্রিয়াঃ) স্বাদু সোমসমূহ (সোমাসঃ) ইন্দ্রের তৃপ্তির নিমিত্ত (মদায়) প্রদক্ষিণক্রমে (প্রদক্ষিণিৎ) ইন্দ্রের অভিমুখে সম্যক্ ব্যাপ্ত হচ্ছে (সম্ উম্ অভি) ৪

বিনিয়োগ টীকা –উপযুক্ত সূক্তের ১ম ঋটি ব্রাহ্মণাচ্ছংসীগণের শস্ত্রজ্যা এষা পাহি ইত্যাদি পরবর্তী তিনটি ঋক্ ব্রাহ্মণাচ্ছংসীগণের মাধ্যন্দিন সবনের প্রস্থিত্যজ্যা। বৈতানিকে (৩/১১) এই বিনিয়োগ সূত্রিত আছে। (২০কা, ১অ. ৮সূ.)।

.

 নবম সূক্ত

 [ঋষি : নোধা, মেধ্যাতিথি দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, বৃহতী]

তৎ বো দম্মমৃতীযহং বসোর্মন্দানমন্ধসঃ। অভি বৎসং ন স্বসরেষু ধেনব ইন্দ্রং গীর্ভিনর্বামহে৷৷ ১৷৷ দ্যুক্ষুং সুদানুং তবিষীভিরাবৃতং গিরিং ন পুরুভোজসম্। ক্ষুমন্তং বাজং শতিনং সহশ্ৰিণং মক্ষু গোমমীমহে৷৷ ২৷৷ তৎ ত্বা যামি সুবীৰ্য্যং তদ ব্ৰহ্ম পূর্বচিত্তয়ে। যেনা যতিভ্যো ভৃগবে ধনে হিতে যেন প্ৰস্কঞ্চমাবিথ ৷৩৷৷ যেনা সমুদ্রমসৃজো মহীরপস্তদিন্দ্র বৃষ্ণি তে শবঃ। সদ্যঃ সো অস্য মহিমা ন সন্নশে যং ক্ষোণীরনুচক্রদে॥৪॥

 বঙ্গানুবাদ –হে যজমানবৃন্দ! তোমাদের যজ্ঞের সম্পন্নতার বা অভিমত ফলের নিমিত্ত (বঃ) সেই প্রসিদ্ধ ইন্দ্রের অভিলক্ষ্যে আমরা স্তুতিপ্রকাশক বাণীর দ্বারা (গীর্ভিঃ) স্তুতি করছি (নবামহে)। (কীরূপ ইন্দ্র? না–) তিনি দর্শনের যোগ্য (দস্মং), আর্তিনাশক অর্থাৎ দুঃখবিনাশক (ঋতীষহং), সোমলক্ষণ অন্নপানে নন্দমান অর্থাৎ আনন্দিতচিত্তশালী (নন্দানং)। (স্তুতির দৃষ্টান্ত কি? না) অভিনবপ্রসবা ধেনুগণ (অভি ধেনবঃ) সন্ধ্যা ও সকালে (স্বসরেষু) যেমন বৎসগণকে (বৎস) স্তন্য প্রদানের নিমিত্ত উচ্চ শব্দ সহকারে (ক্ষুমন্তং) আহ্বান করে, আমরাও সেইরকমেই ইন্দ্রকে স্তুতি করি। ১

দীপ্ত (দ্যুক্ষুং) শোভনদান (সুদানুং) অর্থাৎ বিশিষ্টদানযোগ্য, বলে বা শক্তিতে আচ্ছন্ন (তবিষভিঃ আবৃতম) অর্থাৎ বলপ্রদ, বহু প্রজার ভোগযোগ্য পর্বতের মতো (গিরিং ন পুরুভোজসং) (যেমন দুর্ভিক্ষে জীবনধারণের নিমিত্ত বহু কন্দমূল ইত্যাদিসম্পন্ন পর্বতের আশ্রয় করে, তেমন) শব্দোপেত অর্থাৎ স্তুতিমন্ত (ক্ষুমন্ত), শত-সহস্ৰসংখক প্রজার পোষকৃত্ব সম্পন্ন অর্থাৎ অপরিমিত প্রাণীর পোষক, বহুগাভীযুক্ত অন্নের (বাজং) শীঘ্র (মঞ্জু) প্রার্থনা করছি (ঈমহে)। ২।

হে ইন্দ্র আমি তোমার নিকট (তৎ) শোভন বীর্যের সাথে যুক্ত (সুবীর্যং), পরিবৃঢ় অর্থাৎ সমর্থ অন্ন (ব্রহ্ম) যাচনা করি (ত্বা যামি); উক্তলক্ষণ অন্ন (তৎ ব্রহ্ম) পূর্বপ্রজ্ঞানের নিমিত্ত (পূর্বচিত্তয়ে); যে অন্নের দ্বারা কর্ম চ হতে নিবৃত যতিগণের (যেনা যতিভ্যঃ) বা ভৃগু নামধারী (ভৃগবে) মহর্ষির নিকট হতে আহরণ করে তাঁদের প্রতিবিধান কবেছে (ধনে হিতে) অথবা যে সুবীর্য অন্নের দ্বারা কর্মনিবৃত অন্য মহর্ষিগণকে পরিতোষিত করেছে। তথা যে ধনের দ্বারা কথপুত্র প্রস্ক ঋষি রক্ষিত হয়েছেন (আবিথ)। ৩।

 হে ইন্দ্র! যে বলের দ্বারা (যেন) সৃষ্টির আদিতে (অসৃজঃ) সমুদ্রকে প্রভূত জলে পূর্ণ করেছো (মহীঃ অপঃ), সেই প্রকার (তৎ) তোমার বল (তে শবঃ) সকলের অভিমত ফলের বৰ্ষক হোক (বৃষ্ণি), অর্থাৎ সকলকে অভিলষিত ফল প্রদান করুক। এই ইন্দ্রের মহিমা (অস্য সঃ মহিমা), অর্থাৎ প্রভূত জলের দ্বারা সমুদ্রের পূর্তি ইত্যাদি লক্ষণরূপ মাহাত্ম, বর্তমানে (সদ্যঃ) ও পরেও কেউ নাশ করতে পারেনি (সন্নশে); যে মহিমা (যং) পৃথিবী (ক্ষোণীঃ) অর্থাৎ পৃথিবীর প্রাণীনিকর উদ্ঘঘাষিত করে থাকে (অনুচক্রদে)। ৪

বিনিয়োগ টীকা— উপযুক্ত সূক্তটি ও এর পরবর্তী তিনটি সূক্ত মাধ্যন্দিনসবনে ব্রাহ্মণাচ্ছংসীগণের শস্ত্রে বিনিযুক্ত হয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, ১২শ সূক্তের শেষ (৭ম) মন্ত্র ঋজীষী বজ্ৰী ইত্যাদি শস্ত্রযাজ্যা। উপযুক্ত সূক্তের প্রথম মন্ত্র তং বো দস্মমৃতীষং ইত্যাদি ও তৃতীয় মন্ত্র তৎ ত্বা যামি সুবীর্যং ইত্যাদি প্রগাথ স্তোত্রিয়ানুরূপ। তেমনই, পরবর্তী (অর্থাৎ ১০ম) সুক্তের প্রথম মন্ত্র উদু ত্যে মধুমত্তমা ইত্যাদি সামপ্রগাথ। একাদশ সূক্তের মন্ত্ৰসমুদায় উথমুখং। দ্বাদশ সূক্তের মন্ত্রগুলি পর্যায়সংজ্ঞ। এর মধ্যে ৬ষ্ঠ মন্ত্র এবেদিন্দ্রং বৃষণং ইত্যাদি পরিধানীয়া। (বৈ. ৩১২)। (২০কা, ১অ, ৯সূ.)।

.

দশম সূক্ত

 [ঋষি : মেধ্যাতিথি দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : প্রগাথ]

উদু ত্যে মধুমত্তমা গিরঃ স্তোমাস ঈরতে। সত্ৰাজিতো ধনসা অক্ষিতোতয়ো বাজয়ন্তো রথা ইব॥১॥ কথা ইব ভূগবঃ সূর‍্যা ইৰ বিশ্বমিদ ধীতমানশুঃ। ইন্দ্রং স্তোমেভিমহয়ন্ত আয়বঃ প্রিয়মেধাসো অস্বর৷৷ ২৷

বঙ্গানুবাদ –এই মাধুর্যযুক্ত স্তোম (ত্যে মধুমত্তমা) অর্থাৎ গায়ন-মন্ত্রগুলি (ত্রিবৃৎ ইত্যাদি প্ৰগীতমন্ত্রসাধ্য স্রোত্ৰসমূহ) ও অতিশয় মধুর বস্তুবৎ অগায়নশীল বাণীসমূহ (গিরঃ) (অপ্রগীতমন্ত্রসাধ্য শস্ত্রসমূহ) একেবারে শত্রুগণের জয়শীল (সত্রাজিতঃ), ধনপ্রদ (ধনসা), সর্বদা রক্ষক (অক্ষিতোতয়য়া); অন্নের অভিলাষী হয়ে ইন্দ্রের পরিতোয় সম্পাদনের নিমিত্ত প্রেরিত হয়; (তার দৃষ্টান্ত কি? না–) যেমন যথোক্তলক্ষণ রথ সেই রথস্বামীর প্রয়োজন অনুসারে প্রেরিত বা চালিত হয় (রথা ইব) ৷ ১।

কন্বগোত্রীয় মহর্ষিগণও যেমন (কথা ইব) বিশ্বব্যাপ্ত অর্থাৎ লোকত্রয়ের স্বামী ইন্দ্রকে (ইমিৎ) স্তোত্র-শস্ত্র ইত্যাদির দ্বারা প্রাপ্ত হয়েছিলেন, ভৃগু-বংশোদ্ভবগণ যেমন (ভৃগবঃ ইব) ইন্দ্রকে প্রাপ্ত হয়েছিলেন, ধাতা অর্যমা ইত্যাদি সূর্যসকল যেমন (সূর‍্যা ইব) স্বনিয়ন্তা ইন্দ্রকে প্রাপ্ত হয়েছিলেন (আনশু), সেইরকম উক্তগুণক ইন্দ্রকে প্রিয়ভূত মনুষ্যগণ বা প্রিয়মেধা নামক মহর্ষিগণ স্তোত্রের দ্বারা ইন্দ্রের উদ্দেশে স্তুতিধ্বনি উৎসারিত করেছিলেন (অস্বর) ॥ ২॥

 বিনিয়োগ টীকা –এই সূক্তের বিনিয়োগ পূর্বসূক্তের অনুরূপ ৷৷ (২০কা, ১অ ১০সূ.)।

.

একাদশ সূক্ত

[ঋষি : বিশ্বামিত্র দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

 ইন্দ্রঃ পূর্ভিদাতির দাসমর্কৈবিদদ্বসুর্দয়মানো বি শক্র। ব্রহ্মস্ফুতস্তা বাবৃধানো ভূরিদাত্র আপৃণ রোদসী উভে ॥১॥ মখস্য তে তবিষস্য প্ৰ জুতিমিয়র্মি বাচমমৃতায় ভূষ। ইন্দ্র ক্ষিতীনামসি মানুষীণাং বিশাং দৈবীনামুত পূর্বাবা ৷ ২৷৷ ইন্দ্রো বৃত্রমবৃণোচ্ছর্ধনীতিঃ প্ৰ মায়িনামমিনাৎ বৰ্পণীতিঃ। অহন ব্যংসমুশধগ বনেম্বাবিৰ্ধেনো অকৃপণাৎ রাম্যাণা ৷ ৩৷৷ ইন্দ্ৰঃ স্বর্ষা জনয়ন্নহানি জিগায়োশিগভিঃ পৃতনা অভিষ্টিঃ। প্ররোচয়ন্মনবে কেতুমামবিন্দজ্জ্যোতিবৃহতে রণায় ॥৪॥ ইন্দ্ৰস্তুজো বহা আ বিবেশ নৃবৎ দধানো নর‍্যা পুরূণি। অচেতয়ৎ ধিয় ইমা জরিত্রে প্রেমং বর্ণমতিরঞ্জুমাসাম্ ॥ ৫৷ মহো মহানি পনয়ন্ত্যস্যেন্দ্রস্য কর্ম সুকৃতা পুরূণি। বৃজনেন বৃজিনাৎসং পিপেষ মায়াভিদরভিভৃত্যোজাঃ ॥ ৬. যুধেন্দ্রো মহ্ন বরিবঞ্চকার দেবেভ্যঃ সৎপতিশ্চৰ্ষণিপ্রাঃ। বিবস্বতঃ সদনে অস্য তানি বিপ্রা উথেভিঃ কবয়ো গৃণন্তি ॥৭॥ সত্ৰাসাহং বরেণ্যং সহোদাং সসংসং স্বরপশ্চ দেবীঃ। সসান যঃ পৃথিবীং দ্যামুতেমামিং মদন্ত্যনু ধীরণাসঃ ॥ ৮৷৷ সসানাহ্যাঁ উত সূর্যং সসানেন্দ্রঃ সসান পুরুভোজসং গাম্। হিরণ্যয়মুতভোগং সসান হত্বী দস্যুন প্ৰাৰ্যং বর্ণমাবৎ ॥৯৷৷ ইন্দ্র ওষধীরসনোদহানি বনস্পতীরসনোদন্তরিক্ষম। বিভেদ বলং নুনুদে বিবাচোথাভবৎ দমিতাভিনাম ॥১০৷ শুনং হুবেম মঘবানমিন্দ্রমস্মিন্ ভরে নৃতমং বাজতৌ। শৃন্বন্তমুমূতয়ে সমৎসু ঘন্তং বৃত্রাণি সঞ্জিতং ধনানাম্ ॥১১৷

বঙ্গানুবাদ –ইন্দ্রদেব শত্ৰুপুরীসমূহের ভেত্তা অর্থাৎ বিদারক (পূর্ভিৎ); তিনি অর্চনীয় স্ববীর্যে (অকৈঃ) অর্থাৎ আপন শক্তিতে, সর্বতোভাবে শত্রুর প্রতি হিংসিতবান্ (দাসং) হয়েছিলেন বা অর্চনীয় সূত্মক রশ্মির দ্বারা (অর্কৈঃ) তমসাবিনাশক (দাসং) দিনের প্রকাশ করেছিলেন। তিনি লব্ধধন (বিদত্বসু) অর্থাৎ শত্রুধনের অপহর্তা এবং বৃত্র ইত্যাদির বিশেষভাবে হিংসক (শন্ বি দয়মানঃ)। তিনি প্রভূত স্তোত্রের দ্বারা অভিবৃদ্ধ (ব্রহ্মজুতঃ), শরীরের দ্বরা বর্ধমান (তন্ব ববৃধানঃ)। তিনি প্রভূত আয়ুধশালী (ভূরিদাত্রঃ) অথবা বহু ধনশালী। এই হেন ইন্দ্রদেব দ্যাবা ও পৃথিবী উভয়লোককেই। (উভে রোদসী) ব্যাপ্ত করেছেন (আপৃণ)। ১।

 হে ইন্দ্র! মহনীয় বা মখাত্মক অর্থাৎ যজ্ঞাত্মক (মখস্য), অতিশয়িত বলের দ্বারা যুক্ত (তবিষস্য) তোমার (তে), প্রেরয়িত্রী বা বর্ধয়িত্রী (জুতিম) স্তুতিলক্ষণা বাণী (বাচ) প্রেরণ করছি (প্র ইয়র্মি)। (কি জন্য? না–) অমৃতায় অর্থাৎ অমৃত বা অন্নের জন্য। (কেমন করে? না) তোমাকে ভূষিত বা অলঙ্কৃত করে (ভূষন)। হে ইন্দ্র! তুমি পৃথিবীর মনুষ্য (ক্ষিতীনাম্ মানুষীণাম) ও অধিকন্তু (উত) দেবতা অর্থাৎ দেবসম্বন্ধী (দৈবীনা) প্রজাগণের (বিশাং) পুরোগন্তা (পূর্বসাবা), অর্থাৎ সকল প্রাণীর শ্রেষ্ঠ; (সেই হেতু তোমার স্তুতি করছি। ২।

 ইন্দ্রদেব শক্রর প্রতি স্ববল প্রাপক হয়ে অর্থাৎ হিংসার উপযুক্ত বল প্রাপ্ত হয়ে সর্বতো ব্যাপ্ত,অসুরকে বা জলাবরক মেঘকে (বৃত্রং) বিদীর্ণ বা রুদ্ধ করেছিলেন (অবৃণোৎ)। সেই ইন্দ্র যুদ্ধে শত্রুর প্রতি স্বশরীর প্রাপক হয়ে অর্থাৎ শক্রর প্রতি অসীম-হিংস্ররূপী হয়ে (বর্পনীতিঃ) মায়াবী অসুরবর্গকে (মায়িনাং) বিনাশ করেছিলেন (প্র অমিনাৎ)। শত্ৰুদহনে কাময়মান অথবা তার সাথে যুদ্ধ কামনাকারী শত্রুদের দাহক ইন্দ্র (উশধ) বনে জলের নিমিত্ত আবরক মেঘকে বিদীর্ণ (বা বৃত্রাসুরকে স্কন্ধচ্যুত) (বি অংস) করে বধ করেছিলেন (অহন)। তারপর তার রমণীগণের (রাম্যাণাম) শোকরব উৎসারিত করিয়েছিলেন (আবিঃ)। (অথবা পণি নামক অসুরগণের দ্বারা তমসাবৃত রাত্রিতে অপহৃত গাভী, অসুরগণকে বিনাশ পূর্বক উদ্ধার করেছিলেন) ৷ ৩৷৷

স্বর্গের লম্ভক অর্থাৎ যিনি স্বর্গপ্রাপ্তি ঘটিয়ে থাকেন (স্বর্ষা), শত্রুগণের অভিভবকারী (অভিষ্টি) ইন্দ্র তমোরাশি নিবর্তিত করে দিবার প্রাদুর্ভাব পূর্বক (অহানি জনয়ন) যুদ্ধকামনাকারী অসুরবর্গের সাথে যুদ্ধ করে (উশিগভিঃ) তাদের সৈন্যগণকে জয় করেছিলেন (পৃতনা জিগায়)। অধিকন্তু তিনি মনুষ্য (মনবে) অর্থাৎ যজমানবর্গের প্রভূত বৈদিক বা দৈবিক ও লৌকিক ব্যবহারের নিমিত্ত (বৃহতে রণায়) সর্বপ্রকাশক আদিত্যকে দিবিলোকে অর্থাৎ আকাশমণ্ডলে দীপিত করেছিলেন (অহ্নাং কেতুং প্র অরেচয়েৎ)। এবং সূর্যের সর্বপদার্থপ্রকাশনক্ষম তেজঃ লাভ করেছিলেন.(জ্যোতিঃ অবিন্দৎ)। ৪।

ইন্দ্রদেব সর্বতোভাবে বর্ধনপ্রাপ্ত (বহণাঃ) হিংসক মনুষ্যবৎ (নৃবৎ) শত্রুসেনার মধ্যে (তুজঃ) প্রবেশ করেছিলেন (আ বিবেশ), যেমন মনুষ্য ঋত্বিক ইত্যাদির (নর্যা) হিতের নিমিত্ত প্রভূত (পুরূণি) সামর্থযুক্ত শত্রুধন ধারণ করে (দধানঃ) যুদ্ধার্থে শত্রুসেনার মধ্যে প্রবেশ করে, সেই রকম। [ যেমন যুদ্ধাভিলাষী বীর শত্রুসেনার মধ্যে প্রবেশ করে, তেমনই ইন্দ্রও ঋত্বিকরূপী মনুষ্যবর্গের হিতের নিমিত্ত শত্রুসেনার মধ্যে প্রবেশ করেন ]। সেই হেন ইন্দ্র স্তোতাদের জন্য (জরিত্রে) অন্ধকারনিবর্তনের দ্বারা পরিদৃশ্যমানা বা প্রসিদ্ধ উষার প্রকাশ করেছেন (ইমাঃ ধিয়ঃ); (কারণ উষাকালে স্তোত্র-শস্ত্র ইত্যাদির প্রবর্তন ঘটে)। এবং উষার শুক্লবর্ণ বৃদ্ধি করেছেন (আসাং ইমং প্র অতিরত) ॥ ৫॥

পূজনীয় বা মহৎ গুণে প্রবৃদ্ধ (মহঃ) প্রসিদ্ধ ইন্দ্রের (অস্য) সুষ্ঠু সম্পাদিত বহু মহৎ (সুকৃতা পুরূণি) কর্ম স্তোতাগণ স্তুতি করে থাকে (পনয়ন্তি)। (সেই কর্মের মধ্যে একটি কর্ম বর্ণিত হচ্ছে)–শত্রুকে অভিভবে পারঙ্গম (অভিভূতোজা) অথবা শত্রুর পরাভবে ওজঃসম্পন্ন ইন্দ্র আবর্জক বলের দ্বারা (বৃজনেন) বা আয়ুধের দ্বারা পাপরূপ অসুরবর্গকে (বৃজিনান) সম্যক্ চূর্ণ করেছিলেন (সং পিপেষ); তথা আপন শক্তির দ্বারা (মায়াভিঃ) শত্রুদের (দসূন) চূর্ণ করেছিলেন। ৬।

 ইন্দ্রদেব যুদ্ধের দ্বারা (যুধা) আপন মহত্বে (মা) অর্থাৎ কারো সহায়তা ব্যতিরেকেই আপন বলে, তার স্তোতাদের উদ্দেশে (দেবেভ্যঃ) বরণীয় ধন দান করেছিলেন (বরিবঃ চকার)। সত্য-কর্মানুষ্ঠানকারী যজমানগণের পালক (সৎপতিঃ), মনুষ্যগণের অভিমত ফলের পূরক (চণিপ্রাঃ), সেই হেন ইন্দ্ৰ আদিত্যের স্থানে অর্থাৎ আদিত্যলোকে (বিবস্বতঃ সদনে) বৃষ্টিপ্রতিবন্ধক অসুরবর্গকে বৃষ্টিলক্ষণ ধন দান করেছিলেন; অথবা বিশেষভাবে অগ্নিহোত্র ইত্যাদি কর্মের নিমিত্ত বাসকারী যজমানের গৃহে সম্পদ ইত্যাদি দান করেছিলেন। উক্ত মহিমোপেত অর্থাৎ প্রসিদ্ধ বৃত্রবধ ইত্যাদি কর্মসমূহের কর্তা (অস্য) ইন্দ্রকে মেধাবী ঋত্বিকগণ (বিপ্রাঃ) (কিরকম মেধাবী? –) ক্ৰান্তপ্রজ্ঞা বা অতিবিদ্বানগণ (কবয়ঃ), উথ মন্ত্রে অর্থাৎ যজ্ঞে আজ্যপ্রদান ইত্যাদি শস্ত্রে স্তব করে থাকেন ॥ ৭

শত্রুসেনাগণের অভিভবকারী অথবা এক প্রয়াসে শত্রুসেনার পরাভবক্ষম (সত্ৰাসাহং), যজ্ঞাদি কর্মশীল মনুষ্যগণ কর্তৃক বরণকৃত (বরেণ্যং), বলের দাতা (সহোদাং) তথা স্বর্গের দেবনশীল অর্থাৎ স্বর্গে ক্রীড়াশীল ও জলের সম্ভোক্তা (স্বঃ অপঃ চ দেবীঃ সসংস) এই হেন মহানুভাব ইন্দ্রের স্তোতা বা স্তুতিকর্মে তুষ্ট স্তোতাগণ ও যজমানবৃন্দ (ধীরণাসঃ) অনুক্রমে স্তুতি ও হবির দ্বারা তার (অর্থাৎ ইন্দ্রের) সন্তোষ বিধান করছেন (মদন্তি)। যিনি (অর্থাৎ যে ইন্দ্র) বিস্তীর্ণ দিবিলোক (দ্যাং) ও এই পৃথিবী (ইমাং পৃথিবী) দেবতা ও মনুষ্যগণকে প্রদান করেছেন (সসান)। ৮।

সেই ইন্দ্রদেব প্রাণীগণের অর্থাৎ মনুষ্যবর্গের ব্যবহারের নিমিত্ত অশ্ব-হস্তী-উষ্ট্র ইত্যাদি বাহন (অত্যা) প্রদান করেছেন (সসান)। তিনি সর্বপ্রকাশক সূর্যদেবকে প্রাণীবর্গের ব্যবহারার্থে প্রদান করেছেন (সূর্যম্ সসান)। এইমতো দুগ্ধ-দধি ইত্যাদি লক্ষণ বহু প্রকার ভোগসাধন বা বহুবিধ প্রাণীর ভোগসাধন গাভী (পুরুভোজসং গাং) ও হিরণ্যবিকারাত্মক ভোগসাধন কটক-মুকুট ইত্যাদি প্রদান করেছেন (হিরণ্যয়ং উত ভোগম সসান)। সেই ইন্দ্র প্রাণীঘাতক অসুর ইত্যাদিকে (দসূন) হত্যা পূর্বক উত্তমবর্ণীয় (আর্যং বর্ণং) অর্থাৎ ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্যাত্মক যজমান ইত্যাদি কর্মাধিকারীগণকে প্রকর্ষের সাথে রক্ষা করেছেন (প্র আবৎ)। ৯।

 উক্ত মহিমোপেত সেই হেন ইন্দ্রই প্রাণীগণের উপভোগের নিমিত্ত ওষধিসমূহ অর্থাৎ ব্রীহি-যব ইত্যাদি সৃষ্টি করেছেন (অসনোৎ)। তথা তিনি দিবস সমুদয়ও (অহানি) প্রাণীগণের উপভোগাৰ্থে সৃষ্টি করেছেন; বনস্পতিগুলিকেও সৃষ্টি করেছেন; অন্তরিক্ষলোকও প্রাণীগণের ভোগাৰ্থে সৃষ্টি করে প্রদান করেছেন। অধিকন্তু তিনি বল নামধারী অসুরকে বিদারিত করেছেন (বলম্ বিভেদ), বিরুদ্ধবাদীগণকে বিদূরিত করেছেন (বিবাচঃ নুনুদে); অনন্তর (অথ) বিরুদ্ধ কর্মের বা যজ্ঞের অনুষ্ঠানকারী দুষ্টদের দমন বা বিনাশ করেছেন (অভিঞতুনাম, দমিতা অভবৎ) ১০

সর্বগুণে উৎকৃষ্ট অথবা সুখকর (শুন), ধনবন্ত (মঘবান) ইন্দ্রদেবকে এই সংগ্রামে অথবা যজ্ঞে (অস্মিন ভরে) অন্নলাভের নিমিত্ত আহ্বান জ্ঞাপন করছি (বাজতৌ )। সংগ্রামে পুরোগামী অথবা যজ্ঞের নেতা (নৃতমং), আহ্বানের শ্রোতা (শৃন্বন্তম), উগ্র্ণ বলশালী (উগ্রং), সংগ্রামে আবরক শত্রুগণের বিঘাতক (সমৎসু বৃত্রাণি ঘন্তং) তথা তাদের ধনসমূহের সম্যক বিজেতা–এই হেন মহানুভাব ইন্দ্রকে আমাদের রক্ষার নিমিত্ত আহ্বান জ্ঞাপন করছি (উভয়ে হুবেম) ॥ ১১ :

বিনিয়োগ টীকা –উপযুক্ত সূক্তটির বিনিয়োগ পূর্ব সূক্তের অনুরূপ ৷৷ (২০কা, ১অ. ১১সূ)।

.

দ্বাদশ সূক্ত

[ঋষি : বসিষ্ঠ, অত্রি দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

 উদু ব্ৰহ্মাণ্যৈরত শবস্যেন্দ্রং সমর্যে মহয়া বসিষ্ঠ। আ যো বিশ্বানি শবসা তোনোপশ্রোতা ম ঈবতো বচাংসি ॥১॥ অযামি ঘোষ ইন্দ্র দেবজামিরিরজ্যন্ত যঞ্জুরুধ বিবাচি। নহি স্বমায়ুশ্চিকিতে জনেষু তানীদংহাংস্যতি পর্যস্মন্ ॥ ২॥ যুজে রথং গবেষণং হরিভ্যাম্প ব্ৰহ্মাণি জুজুষাণমস্থঃ। বি বাধিষ্ট স্য রোদসী মহিত্বেন্দ্রো বৃত্ৰাণ্যপ্রতী জঘন্বন্ ॥৩॥ আপশ্চিৎ পিপু স্তৰ্য্যো ন গাবো নক্ষমৃতং জরিতারস্ত ইন্দ্র। যাহি বায়ুর্ন নিযুতো নো অচ্ছা ত্বং হি ধীভিদয়সে বি বাজা৷ ৪৷ তে বা মদা ইন্দ্র মাদয়ন্তু শুষ্মিণং তুবিরাধসং জরিত্রে। একো দেবত্ৰা দয়সে হি মানস্মিনছুর সবনে মাদয়স্ক ॥৫৷৷ এবেদিন্দ্রং বৃষণং বজ্ৰবাহুং বসিষ্ঠাসো অভ্যৰ্চন্ত্যর্কৈঃ। স ন স্তুতো বীরবৎ ধাতু গোমৎ শূয়ং পাত স্বস্তিভিঃ সদা নঃ ॥ ৬৷৷ ঋজীষী বর্জী বৃষভস্তুরাছুম্মী রাজা বৃত্ৰহা সোমোবা। যুক্তা হরিভ্যামুপ যাসদৰ্বাঙ মাধ্যন্দিনে সবনে মৎসদিন্দ্রঃ ॥৭॥

বঙ্গানুবাদ –হে ঋত্বিবৃন্দ! আপনারা অন্নাকাঙ্ক্ষী হয়ে (শবস্যা) স্তোত্রসমূহ (ব্রহ্মাণি) প্রেরণ করুন (উদৈরত) অর্থাৎ উগ্নীত করুন। হে যজমান (বসিষ্ঠ)! আপনি ঋত্বিকগণের সাথে বা মর্যাদার সাথে (সমৰ্যে) এই যজ্ঞে হবিঃ ইত্যাদি সহযোগে সেই ইন্দ্রদেবের পূজা করুন (মহয়), যে ইন্দ্রদেব (যঃ) আপন শক্তির দ্বারা (শবসা) সকল ভূতজাতকের (বিশ্বানি) বিস্তার বা বৃদ্ধি করেছেন (আ ততান); সেই ইন্দ্র আমি হেন উপাসকের (ম ঈবতঃ) স্তুতিরূপ বাক্যসমূহের শ্রোতা (বচাংসি উপশ্রোতা) হোন। ১।

 হে ইন্দ্র! দেবগণের বন্ধু সদৃশ যে শব্দ, (দেবযামিঃ ঘোষঃ), অর্থাৎ উক্ত লক্ষণসম্পন্ন যে স্তোত্র, উগ্নীত হয়েছে, যার ফলে নিয়মস্থ (বিবাচি) অর্থাৎ সংযমপরায়ণ যজমানের নিমিত্তভূত জন্ম-মৃত্যুলক্ষণাত্মক শোক-নিবর্তক স্বর্গপ্রাপণশীল সোম (শুরুধঃ) বর্ধিত হচ্ছে (ইরজ্যন্ত)। মনুষ্যগণের মধ্যে (জনেষু) বা মনুষ্যগণের মধ্যে জাত এই জন অর্থাৎ যজমান। আপন (স্বং) পরমায়ু বা জীবিতকাল (আয়ুঃ) জ্ঞাত নন (ন চিকিতে); অতএব তাকে যাগ ইত্যাদি অনুষ্ঠানের উপযোগী দীর্ঘ আয়ু প্রদান করুন। (শতসম্বৎসরলক্ষণ জীবন প্রার্থনা করা হচ্ছে)। আয়ুক্ষয়কর হেতুত্বের জন্য প্রসিদ্ধ (তানিৎ) পাপসমূহকেও অতিক্রম পূর্বক (অংহাংসি অতি) আমাদের (অস্মা) অর্থাৎ আপনার সম্ভজমানগণকে পালন করুন (পর্যি) ॥ ২॥

 যে ইন্দ্র আমাদের যাগসদনে প্রাপ্তির জন্য অর্থাৎ আগমনের জন্য গাভীগণের প্রাপয়িতা রথে (গবেষণং রথং) ইন্দ্রের হরি-নামক সাধারণ অশ্বদ্বয়কে (হরী) যুক্ত করেছেন (যুজে), আমাদের প্রবৃদ্ধ স্তোত্রসমূহও (ব্রহ্মাণি) সেবমান বা সকলের সেব্যমান (জুজুষাণ) যে ইন্দ্রের সেবা করে (অস্থঃ), সেই ইন্দ্র (স্যঃ) আপন মহত্বের দ্বারা (মহিত্বা) দ্যাবাপৃথিবীকে অতিক্রম করেছেন (রোদসী বি বাধিষ্ট), অধিকস্তু আপন আবরক শত্রুগণ (বৃত্ৰাণি) যাতে বিদ্যমান না থাকে (অপ্রতি) অর্থাৎ পুনরায় যাতে প্রত্যাগত হতে না পারে সেইরূপে বিনাশ করেছেন (জঘন্বন)। ৩

হে ইন্দ্র! সোম অভিষবের নিমিত্ত জলসমূহ বশা গাভীর ন্যায় (আপঃ চিৎ স্তঃ ন গাবঃ) বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়েছে (পিপুঃ), আপনার (তে) স্তোতা ঋত্বিগণ (জরিতারঃ) সত্য ফলস্বরূপ যজ্ঞ (ঋত) প্রাপ্ত হয়েছেন (নক্ষ); অতএব আমাদের যে (নঃ) স্তোত্ৰসমূহ (নিযুতঃ) লক্ষ্য পূর্বক আগত হও (অচ্ছ)। (কেমন করে? না–) বায়ুর্ন নিযুতঃ যাতি অর্থাৎ বায়ুদেব যেমন যজ্ঞদেশ প্রাপ্তির নিমিত্ত আপন নিযুত নামক বা সংখ্যক অশ্বগণের প্রতি গমন করেন, আপনিও তেমনই আমাদের কর্মে অভিস্তুষ্ট হয়ে (ধীভিঃ) অন্ন প্রদান করুন (বাজান বি দয়সে)। ৪

হে ইন্দ্র! এই অভিযব ইত্যাদির দ্বারা সংস্কৃত প্রসিদ্ধ সোম (মদা) আপনাকে মদযুক্ত করুক (মাদয়ন্ত)। (তুমি কিরকম? না)বলবন্ত (শুষ্মিণ), স্তোতৃবর্গকে প্রদানের নিমিত্ত প্রভূত ধনশালী (জরিত্রে তুবিরাধস)। অধিকন্তু, দেব-মনুষ্যগণের মধ্যে (দেবত্রা) আপনিই একমাত্র (একঃ হি) মনুষ্যগণের প্রতি দয়াশীল (মর্তা দয়সে), অর্থাৎ মনুষ্যগণের রক্ষণে আপনি অদ্বিতীয়, অন্য কোন দেবতা নন। অতএব হে শৌর্যশালী ইন্দ্র (শূর)! আপনি এই যুগে (অস্মিন্ সবনে) বা মাধ্যন্দিন সবনে অভিমত ফল প্রদানের দ্বারা আমাদের হর্ষান্বিত করুন বা সোমপানের দ্বারা নিজে হর্ষান্বিত হোন (মাদয়স্ব) ৷৷ ৫

(উক্ত স্তুতির উপসংহার করা হচ্ছে)–উক্ত প্রকারে (এব) কামবর্ষক (বৃষণং), বজ্ৰবাহু অর্থাৎ বজ্রধারী বা বজ্রের ন্যায় কঠিন বাহুদ্বয়সম্পন্ন ইন্দ্রকে বসিষ্ঠগণ, অর্থাৎ তপস্যারূপ ধনবিশিষ্টগণ, অর্চনীয় স্তোত্রসমুহের দ্বারা (অর্কৈঃ) সুপূজিত করে থাকেন (অভ্যৰ্চন্তি)। সেই হেন ইন্দ্র (সঃ) স্তোত্রের দ্বারা পূজিত হয়ে (স্তুতঃ) আমাদের (নঃ) বহু পুত্র ইত্যাদিরূপ (বীরবৎ) ও বহু গো-রূপ ধন (গোমৎ) প্রদান করুন (ধাতু)। হে দেববৃন্দ! আপনারাও (যুয়) ইন্দ্রকে অনুসরণ পূর্বক আমাদের (নঃ) মঙ্গলের সাথে (স্বস্তিভিঃ) সর্বদা রক্ষা করুন (সদা পাত)৷ ৬ ৷৷

প্রাতঃ ও মাধ্যন্দিন সবনে অভিষবের দ্বারা গতসার তৃতীয় সবনে উপয়োক্ষ্যমাণ সোমের সাথে যুক্ত বা সোমাত্মক (ঋজীষী), বজ্ৰবান (বজ্রী), কামবর্ষণকারী (বৃষভঃ), শত্রুবর্গের অভিভবিতা, (তুরাষাট), শত্রুশোষক বলশালী (শুষ্মী), দেবগণের মধ্যে ক্ষত্রিয়জাতীয় বা সকলের, প্রভু (রাজা), বৃহন্তা (বৃত্রহা), যেথা যেথা সোমাভিষব হয় সেথা সেথা নিয়মিত সোমপানকারী (সোমপাবা)-এই হেন মহানুভাব ইন্দ্র তার রথ অশ্বদ্বয়ের দ্বারা যোজিত করে (হরিভ্যাং যুক্ৰা) আমাদের অভিমুখী হয়ে আগমন করুন (অবাঙ উপ যাস) এবং এই মাধ্যন্দিন সবনে আমাদের দত্ত সোমের দ্বারা হর্ষিত হোন (মৎসৎ)। ৭।

বিনিয়োগ টীকা –উপযুক্ত সূক্তটির বিনিয়োগ পূর্ব সূক্তের অনুরূপ। (২০কা, ১অ. ১২সূ.)।

.

ত্রয়োদশ সূক্ত

[ঋষি : বামদেব, গোতম, কুৎস বিশ্বামিত্র দেবতা : ইন্দ্রাবৃহস্পতি, মরুৎ অগ্নি ছন্দ : জগতী ত্রিষ্টুপ]

ইন্দ্র সোমং পিবতং বৃহস্পতেহস্মিন্ যজ্ঞে মন্দসানা বৃষ। আ বাং বিশদ্ভুবঃ স্বাভুবোহস্মে রয়িং সর্ববীরং নি যচ্ছতম্ ॥১॥ আ বো বহন্তু সপ্তয়ো রঘুষ্যদো রঘুপানঃ প্র জিগাত বাহুভিঃ। সীতা বহিরুরু বঃ সদস্কৃতং মাদয়ধ্বং মরুতে মধ্বো অন্ধসঃ ॥ ২॥ ইমং স্তোমমহঁতে জাতবেদসে রথমিব সং মহেমা মনীষয়া। ভদ্রা হি নঃ প্ৰমতিরস্য সংসদ্যগ্নে সখ্যে মা রিমা বয়ং তব ৷ ৩৷৷ ঐভিরগ্নে সরথং যাহ্যবাঙ নানারথং বা বিভবো হ্যশ্বাঃ। পত্নীবতস্ত্রিংশতং ত্ৰীংশ্চ দেবাননুম্বধমা বহ মাদয়স্ব ॥৪॥

বঙ্গানুবাদ –হে বৃহস্পতি (বৃহতো অর্থাৎ বেদরাশির পতি বা স্বামী)! আপনি ও ইন্দ্রদেব সোম পান করুন (ইন্দ্রঃ বৃহস্পতে চ সোমম্ পিবত)। (আপনারা কিরকম? না–) এই যজ্ঞে হৃষ্ট হয়ে ধনবর্ষণকারী (অস্মিন্ যজ্ঞে মন্দসানা বৃষথসূ), অর্থাৎ যজমানদের যজ্ঞকর্মে তুষ্ট হয়ে তাদের ধন বিতরণকারী; আপনারা সর্বতোস্থায়ী (বাং স্বাভুবঃ) অর্থাৎ সর্বশরীরে ব্যাপনসমর্থ; সেই হেতু এই সোমসমূহ আপনাদের শরীরে প্রবেশ করুক (ইন্দবঃ আ বিশন্তু)। আপনারা আমাদের সর্বপুত্র ইত্যাদি যুক্ত ধন প্রদান করুন (অস্মে রষিং সর্ববীরং নি যচ্ছত)। ১।

 হে মরুৎ-গণ! দ্রুত ও স্বচ্ছন্দগামী অশ্বগণ (রঘুষ্যদো সপ্তয়ো) আপনাদের (বো) যজ্ঞগৃহে বহন করে আনয়ন করুক (আ বহন্তু) এবং আপনারাও শীঘ্রতাপূর্বক এই স্থানে প্রকর্যের সাথে আগমন করুন (বাহুভিঃ রঘুপত্বানঃ প্র জিগাত)। আপনাদের নিমিত্ত (বঃ) বিস্তীর্ণ (উরু) সদনে অর্থাৎ বেদিতে (সঃ) কুশসমূহ আস্তীর্ণ রয়েছে (বহিঃ সীদত) অথবা সদনাহ অর্থাৎ আসনযোগ্য করে কুশগুলি বিছিয়ে রাখা হয়েছে; তথায় আপনারা উপবিষ্ট হোন এবং মধুর (মধ্বঃ) সোমলক্ষণ অন্নের অংশ (অন্ধসঃ) বা সোম পান করে তৃপ্তি লাভ করুন (মাদয়ধ্বং)। ২।

 জাতপ্রজ্ঞ বা জাতধন বা জাতমাত্রই সকলকে বিদিত (জাতবেদসে), পূজ্য (অহঁতে), অগ্নির উদ্দেশে ইদানীং ক্রিয়মাণ (ইমং) স্তোত্ৰসমূহ তীক্ষ্ণ বুদ্ধির দ্বারা (মনীষয়া) সম্যক্‌ নিষ্পদন করছি (সং মহেম)। (তার দৃষ্টান্ত কি? না–) রথমিব অর্থাৎ রথকার যেমন অক্ষ-ফলক ইত্যাদি, অর্থাৎ চক্রদণ্ড-পাটা ইত্যাদি, অবয়ব সংযোজনের দ্বারা রথের সংস্কার করে, তেমন। এই পূজ্য অগ্নি বিষয়ে (অস্য সংসদি) আমাদের প্রকৃষ্টা মতি (নঃ প্ৰমতিঃ) মঙ্গলময়ী হেতু (ভদ্রা হি), হে অগ্নি! আপনার সখ্যতায় (তব সখ্যে) আমরা অর্থাৎ স্তোতাগণ (বয়ং) হিংসিত বা বিনাশিত হবো না (মা রিষাম)। ৩।

হে অগ্নি! (এভিঃ অগ্নে) বক্ষ্যমাণ, ত্রয়স্ত্রিংশৎ (তেত্রিশ) সংখ্যক দেবগণ সহ প্রতিনিয়ত এক রথে (সরথং) অথবা পৃথকভূত রথে (নানারথং) আরোহণ পূর্বক আমাদের অভিমুখে আগমন করুন (অর্বাঙ্ আ যাহি)। আপনার রথে নিযুক্ত অশ্বগুলি অতিভার বহনে সমর্থ (বিভবো হি)। অতএব আপন আপন ত্রয়স্ত্রিংশৎ পত্নীগণ সমভিব্যাহারে দিব্যলোকস্থ দেববৃন্দকে (পত্নীবতঃ ত্রিংশতম চ ত্রী দেবা) স্বধা অনুলক্ষ্য করে (অনুস্বধ) অর্থাৎ যেখানে যেখানে সোমাহুতি দেওয়া হয়, সেই সেই স্থানে আনয়ন করে তাদের সোম প্রদান করে প্রসন্ন করুন (আ বহ মাদয়স্ব) 8

বিনিয়োগ টীকা –জ্যোতিষ্টোম ইত্যাদি ক্রতুতে উপযুক্ত সূক্তের প্রথম তিনটি ঋক্ ক্রমে ক্রমে পঠনীয়। এগুলি প্ৰস্থিত্যজ্যা। (বৈ, ৩১২)। চতুর্থ মন্ত্রটি (ঐভিরগ্নে ইত্যাদি) আগ্নীপ্র কর্তৃক পাত্নীবত গ্রহে যজনীয়। (বৈ. ৩১৩)। (২০কা, ১অ. ১৩সূ.)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *