১৯।৬ ঊনবিংশ কাণ্ড : ষষ্ঠ অনুবাক

ষষ্ঠ অনুবাক
প্রথম সূক্ত : অস্তৃতমণিঃ
[ঋষি : প্রজাপতি দেবতা : অস্তৃতমণি ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, শক্করী, পংক্তি, জগতী, বিরাট ইত্যাদি]

প্রজাপতিষ্টা বর্ধৎ প্রথমমস্তৃতং বীর্যায় কম্। তৎ তে বর্ধম্যাথুষে বস ওজসে চ বলায় চাস্তৃতত্ত্বাভি রক্ষতু ॥১॥ ঊধ্বস্তিষ্ঠতু রক্ষন্নপ্রমাদমস্তৃতেমং মা ত্বা দভ পণয়ো যাতুনাঃ। ইন্দ্র ইব দনব ধূনুধ পৃতন্যতঃ সর্বাংছ বি ষহস্বাস্তৃতস্যাভি রক্ষতু ॥ ২॥ শতং চ ন প্রহরন্তো নিন্তো ন তস্তিরে। তম্মিন্নিন্দ্রঃ পর্যদত্ত চক্ষুঃ প্রাণমথো বলমতত্ত্বাভি রক্ষতু ৷৩৷৷ ইন্দ্রস্য ত্বা বর্মণা পরি ধাপয়ামো যো দেবানামধিরাজো বভূব। পুনা দেবাঃ প্রণয়ন্তু সর্বেস্তৃতত্ত্বাভি রক্ষতু ॥৪॥ অস্মিন্ মণাবেকশতং বীর্যাণি সহস্রং প্রাণা অস্মিন্ন্যুতে। ব্যাঘ্রঃ শনভি তিষ্ঠ সর্বান্ যা পৃতণ্যাদধরঃ সো অস্তৃতাভি রক্ষতু ॥৫৷৷ ঘৃতাদুল্লুপ্তো মধুমান্ পয়স্বাৎ সহস্ৰপ্ৰাণঃ শতযোনির্বয়োধাঃ। শম্ভুশ্চ ময়োভূশ্চোর্জাংশ্চ পয়স্বাংশ্চাস্তৃতত্ত্বাভি রক্ষতু৷ ৬ ৷৷ যথা ত্বমুত্তরোহসো অসপত্নঃ সপত্নহা। সজাতানামসদ বশী তথা ত্বা সবিতা করদস্তৃতত্ত্বাভি রতু।৭৷৷

 বঙ্গানুবাদ –প্রজাপতিদেব অর্থাৎ প্রজাগণের পালক ও সর্ব জগতের বিধাতা, সৃষ্টির আদিতে (প্রথমং) অস্তৃত নামক অর্থাৎ অপরের প্রতিবন্ধরহিত মণি ধারণ করেছিলেন (ত্বা বর্ধৎ); বা অতিশয় প্রভাবত্বের নিমিত্ত অস্তৃত নামে খ্যাত ত্রিবৃত্মণি ধারণ করেছিলেন। (কি নিমিত্ত? না) বীর্যায় অর্থাৎ পরাভিভবন সামর্থ্য লাভের নিমিত্ত। হে মণিধারক! আমি (অর্থাৎ পুরোহিত) তোমার অঙ্গে সেই অস্তৃতাখ্য মণি বন্ধন করে দিচ্ছি (বপ্লমি)। (কি নিমিত্ত? না–) আয়ু লাভের জন্য (আয়ুষে) অর্থাৎ চিরকাল জীবন ধারণের জন্য, দীপ্তি লাভের জন্য (বৰ্চসে), শারীরিক বল লাভের জন্য (ওজসে), ভৃত্য ইত্যাদি সমৃদ্ধি রূপ বাহ্য বল প্রাপ্তির জন্য (বলায়)। এই অস্তৃত নামক মণি তোমাকে সবতঃ পালন করুক (অস্তৃতঃ ত্বা অভি রক্ষতু)। অর্থাৎ পূর্বে প্রজাপতি কর্তৃক ধারিত এই মণি, ইদানীং ধার্যমাণ তোমাকে শত্রুর প্রতিবন্ধরহিত ও পরের উপদ্রব-নিহারক করুক। ১।

 হে অস্তৃতাখ্য মণি! তুমি অনবধানতাবশতঃ না হয়ে অর্থাৎ সাবধান হয়ে (অপ্রমাদ) তোমার ধারণকারীকে (ইমং) রক্ষা বা পালন করো (রক্ষন) এবং সর্বদা উন্মুখ হয়ে অর্থাৎ জাগ্রত হয়ে এই অবস্থান করো (ঊর্ধ্বঃ তিতু)। (এইবার মণির পক্ষেও শত্ৰুকৃত বাধা পরিহার আশা করা হচ্ছে)– হে অস্তৃতমণি! তোমাতে (ত্বা) যাতনা-বিধানকারী রাক্ষসগণ (যাতুধানাঃ) এবং সেইরকম পণি নামক অসুবরবর্গ (পণয়ঃ) যেন হিংসা করতে না পারে (মা দভ)। অধিকন্তু, ইন্দ্রদেব যেমন শত্রুদের বিনাশকারী, (ইন্দ্র ইব) সেইরকমে তুমিও শত্ৰুবর্গকে (দস্যুন) অবাঙমুখে কম্পিত করো, অর্থাৎ পাদপ্রহার ইত্যাদির দ্বারা পশ্চাতে পাতিত করো (অব ধুনুম্ব); কেবল তাদেরই নয়, সংগ্রামেচ্ছ সকল শত্রুদেরও বিশেষভাবে পরাভূত করো (পৃতন্যতঃ সর্বান শত্রু বি, সহস্ব)। হে মণিধারক! এই হেন পরাভিভবন-সমর্থ ত্রিবৃতাখ্য নামান্তরে অস্তৃতাখ্য মণি তোমাকে সর্বতোভাবে রক্ষা করুক (অস্তৃতঃ ত্বা অভি রক্ষতু)। ২।

শত শত অর্থাৎ অপরিমিত শক্ৰবৰ্গ শস্ত্র ইত্যাদিকৃত বাধায় এই অস্তৃত মণিকে বিনাশ করতে পারে না, অথবা প্রকর্ষের সাথে শস্ত্র ইত্যাদির দ্বারা মারণ বা হিংসা করতে পারে না (ন প্রহরন্তো নিঘুন্তঃ) এবং আচ্ছাদিত করতে পারে না (ন তস্তিরে)! শত্রু কর্তৃকও সর্বতো অনাবৃত ও অহিংসিত এই অস্তৃতাখ্য মণির মধ্যে ইন্দ্রদেব চক্ষু অর্থাৎ শত্ৰুদর্শনসামর্থ্য, প্রাণসামর্থ ও বীর্য পরিপূরিত করেছেন (পরি যৎ) অর্থাৎ স্থাপন করেছেন। হে মণিধারক! এই হেন অস্তৃতাখ্য মণি তোমাকে সর্বতোভাবে রক্ষা করুক৷ ৩৷৷

হে অস্তৃত মণি! তোমাকে (ত্বা) সেই ইন্দ্রের কবচের দ্বারা (বর্মণা) সর্বতোভাবে আবৃত করছি (পরি ধাময়ানমা), যে ইন্দ্র দেবগণের অর্থাৎ দ্যোতমান দু-লোকের সকল শ্ৰেষ্ঠসমুহের অধিপতি (যঃ দেবানাম্ অধিরাজঃ বভুব)। অধিকন্তু, হে মণি! ইন্দ্রবর্মাচ্ছাদিত তোমাকে (ত্ব) ইন্দ্র কর্তৃক পালিত সকল দেবগণ (দেবাঃ) আপন আপন কার্যসিদ্ধির নিমিত্ত পুনরায় আপন আপন-কবচরূপে ধারণ পূর্বক লাভ করুক (প্র নয়ন্তু)। এইভাবে, ইন্দ্রবর্ম-পরিহিত সকল দেবতার অনুগৃহীত এই অস্তৃত-মণি ধারকরূপী তোমাকে (ত্ব) সর্বতো রক্ষা করুক (অভি রক্ষ)। ৪

এই মণিতে শতক্রতু ইন্দ্রের সম্বন্ধিনী শতসংখ্যক বীর্য বা সামর্থ্য এবং আপন একসংখ্যক বীর্য বা সামর্থ্য (অর্থাৎ সাকুল্যে একশত এক সংখ্যক সামর্থ্য) বিদ্যমান আছে (অস্মিন্ মণৌ একোত্তরং শতং), তথা এই অস্তৃতাখ্য মণি অপরের দ্বারা অহিংসিত ও সর্বদেবতার অনুগৃহীত হওয়ার কারণে এতে অপরিমিত (সহস্ৰম) বলের হেতুভূত প্রাণ (প্রাণাঃ) সম্পাদিত হয়েছে। এই হেন বীর্য ও বলোপেত, হে মণি! তুমি ব্যাঘ্রের ন্যায় অথবা প্রবল ঘ্রাণশক্তিপরায়ণ হয়ে শত্রুর অভিমুখে অবস্থান করো, অর্থাৎ তাদের আক্রমণে সমর্থ হও (ব্যাঘ্রঃ শত্রু অভি তিষ্ঠ)। যে সকল শত্রু তোমার প্রতি (যঃ ত্বা) যুদ্ধ বা হিংসা ইচ্ছা করে, সেই শত্রুদের নিকৃষ্টভাবে পরাজিত করো (পৃতন্যাৎ অধরঃ)। হে মণিধারক! এই অস্তৃতাখ্য মণি তোমাকে সর্বতো রক্ষা করুক ॥ ৫।

 আজ্যের দ্বারা উপরিভাগে লিপ্ত (ঘৃতাৎ উলুপ্তঃ), মধু ও ক্ষীরে লিপ্ত-সর্বাঙ্গ (মধুমান্ পয়স্বান), সর্ব দেবতার অনুগৃহীত হওয়ার কারণে অপরিমিত বলে বলীয়ান্ (সহস্ৰপ্ৰাণঃ), ইন্দ্রবর্ম-পরিহিতত্বের কারণে শতসংখ্যক বীর্যোপেত (শতযোনিঃ) অর্থাৎ শত্রুসঙ্গমননিমিত্ত বা শত্রুবিয়োজন-সাধনের সামর্থযুক্ত, মণিধারক পুরুষের অন্নের ধারণকারী (বয়োধাঃ), সুখের উৎপাদক (শম্ভঃ), শারীরিক ও পুত্র ইত্যাদি সম্পর্কিত আনন্দের ভাবয়িতা (ময়োভুঃ), (অথবা সকল উপদ্রবের নিবারক ও ইষ্টপ্রাপ্তি-কারক) এবং অন্নের দাতা (ঊর্জন) ও ক্ষীর ইত্যাদির প্রদাতা–এই হেন গুণবিশিষ্ট অস্তৃত নামক মণি, হে মণিধারক! তোমাকে সর্বতো পালন করুক ৷৷ ৬।

 (এই মন্ত্রে সবিতাদেবের আনুকূল্যে মণিধারক পুরুষের সর্বোত্তরত্ব ও ॥ শত্রুধর্ষণসামর্থ্য আশা করা হচ্ছে)–হে মণিধারক (সাধক) পুরুষ! তুমি (ত্বম) যাতে (যথা)। সর্বোত্তরা অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ হও (উত্তরঃ); তুমি যাতে শত্রুবিহীন হও (অসপত্নঃ); যদি বা তোমার কোন শত্রু থাকে তো তুমি যাতে তাদের বিনাশক হও (সপত্নহা); তোমার সমানজাত পুরুষবর্গের মধ্যে যারা অসৎ, তারাও যাতে তোমার বশীভূত হয় অর্থাৎ যাতে তারাও তোমার সেবা করে; সর্বপ্রেরক সবিতাদেব তোমাকে তেমন করুন (ত্বা সবিতা করৎ)। হে মণিধারক! এই অস্তৃতাখ্য মণি তোমাকে সর্বতো রক্ষা করুক ॥ ৭

 সূক্তস্য বিনিয়োগঃ–..তত্র প্রজাপতিষ্টা ইতি প্রথম সূক্তেন মারুণীং বলকামস্য প্রযুঞ্জীত ইতি বিহিতায়া গণ্যাখ্যায়াং মহাশূন্তৌ অস্তৃতাখ্যমণিং অভিমন্যু বীয়াৎ-ইত্যাদি। (১৯কা, ৬অ. ১সূ.)।

টীকা— নক্ষত্রকল্পের (১৭) সূত্রানুসারে ষষ্ঠ অনুবাকের ছয়টি সূক্তের মধ্যে উপযুক্ত প্রথম সূক্তটি বল-কামনায় মরুৎ-দেবতাগণের উদ্দেশে মারুণ্যাখ্য মহাশান্তি যাগে অস্তৃতাখ্য মণি অভিমন্ত্রিত পূর্বক ধারণে বিনিযুক্ত হয়। পঞ্চম অনুবাকের একাদশ সূক্তটির (আয়ুষোহসি ইত্যাদি) দ্বারা নৈঋতি নামক মহাশান্তি যাগে আঞ্জনমণি ধারণের যেমন পদ্ধতি, উপযুক্ত সূক্তটি মারুণ্যাখ্য মহাশান্তি যাগে অস্তৃতাখ্য মণির ধারণের ক্ষেত্রে তেমনই বিহিত। (নক্ষত্ৰকল্প, ১৯)। (১৯কা, ৬অ. ১সূ.)।

.

দ্বিতীয় সূক্ত : রাত্রিঃ

[ঋষি : গোপথ দেবতা : রাত্রি ছন্দ : বৃহতী, জগতী, অনুষ্টুপ]

আ রাত্রি পার্থিবং রজঃ পিতুরপ্রায়ি ধামভিঃ। দিবং সদাংসি বৃহতী বি তিষ্ঠস আ ত্বেষং বৰ্ততে তমঃ ॥১॥  ন যস্যাঃ পারং দদৃশে ন যোযুবৎ বিশ্বমস্যাং নি বিশতে যদেজতি। অরিষ্টাসস্ত উর্বি তমস্বতি রাত্রি পারমশীমহি ভদ্রে পারমশীমহি। ২ যে তে রাত্রি নৃচক্ষসো দ্রষ্টানরা নবতির্নব। অশীতিঃ সন্ত্যষ্টা উতো তে সপ্ত সপ্তভিঃ ॥৩॥ যষ্টিশ্চ ষট্‌ চ রেবতি পঞ্চাশৎ পঞ্চ সুয়ি। চত্বারশ্চত্বারিংশচ্চ ত্রয়স্ত্রিংশচ্চ বাজিনি ॥৪॥ দ্বৌ চ তে বিংশতিশ্চ তে রাত্র্যেকাদশাবমাঃ। তেভির্নো অদ্য পায়ুভি পাহি দুহিতর্দিবঃ ॥৫৷৷ রক্ষা মাকিনো অঘশংস ঈশত মা নো দুঃশংস ঈশত। মা নো অদ্য গং স্তেনো মবীনাং বৃক ঈশত ॥৬॥ মাশ্বানাং ভদ্রে তস্করো মা নৃণাং যাতৃধান্যঃ। পরমেভিঃ পথিভি স্তেনো ধাবতু তস্করঃ। পরেণ দত্বতী রঞ্জুঃ পরেণাঘায়ুরতু॥৭॥ অধ রাত্রি তৃষ্টধূমমশীর্ষাণমহিং কৃণু। হনূ বৃকস্য জম্ভয়াস্তেন তং দ্রুপদে জহি৷৮ ত্বয়ি রাত্রি বসামসি স্বপিষ্যামসি জাগৃহি। গোভ্যো নঃ শৰ্ম যচ্ছাশ্বেভ্যঃ পুরুষেভ্যঃ ॥৯॥

বঙ্গানুবাদ –হে রাত্রি! তুমি পৃথিবীরূপ। সুতরাং তুমি পৃথিবীসম্বন্ধী লোকের (রজঃ) সকল স্থল, অর্থাৎ পর্বত-নদী-সমুদ্র ইত্যাদি এবং স্বর্গ ও পৃথিবীর মধ্যমভূত পিতৃলোক বা অন্তরিক্ষের (পিতুঃ) স্থানসমূহের সাথে (ধামভিঃ) তমসায় আপূরিত করে দিয়েছো (অপ্রায়ি)। তথা সর্বত্র ব্যাপিনী হয়ে (বৃহতী) দ্যুলোকের তৃতীয় স্থানে বিশেষ ভাবে অবস্থান করছো (দিবঃ সদাংসি বি তিষ্ঠসে)। এইভাবে লোকয়ব্যাপিত্বের দ্বারা তোমার দীপ্যমান নীলবর্ণ অন্ধকার সব কিছুকে আবৃত করে অবস্থান করছে (ত্বেষম্ তমঃ আ বৰ্ততে) ১

যে রাত্রির পরতীর বা অন্ত দেখা যায় না (ন দদৃশে), লোকত্রয়ব্যাপী অনবচ্ছিন্ন এই ত্রির মধ্যে (অস্যাং) চরাচরাত্মক জগৎ (বিশ্বম্) বিভক্ত নয়, কিন্তু বিশ্ব একাকার হয়ে আছে (যোযুবৎ ন)। সকল প্রাণীজাত ইতস্ততঃ গমনে অসমর্থ হয়ে এতে নিদ্রিত হয়ে আছে (অস্যাং নি বিশতে); কিম্বা তমসায় কম্পান্বিত হয়ে এই অপরিদৃশ্যমান রাত্রে প্রবিষ্ট হয়ে থাকে (যৎ এজতি)। হে সর্বলোকব্যাপিণী (উর্বি)! হে বহুলান্ধকারবতী (তমস্বতি)! হে রাত্রি! তোমার পরতীরস্থ (পারম) হিংস্র সর্প-ব্যাঘ্র-চোর প্রভৃতির দ্বারা অবাধিত অর্থাৎ হিংসিত না হয়ে আমরা যেন তোমাকে লাভ করি (অশীমহি)। হে কল্যাণরূপা বা শুভদায়িনী আমরা যেন তোমার অবধি অর্থাৎ অন্ত প্রাপ্ত হই (পারম্ অশীমহি) ॥ ২॥

[এইটি এবং এর পরবর্তী দুটি মন্ত্রের দ্বারা সর্বলোকব্যাপিনী রাত্রির প্রভাব দর্শনকারী গণদেববর্গ সম্পর্কে বলা হচ্ছে)–হে রাত্রি! তোমার সম্বন্ধী মহিমার দ্রষ্টাগণ–যেমন, মনুষ্যগণের কর্মফলের দ্রষ্টা (নৃচক্ষসঃ) যে নিরানব্বই সংখ্যক (নবতির্নর্ব-নবোত্তরনবতিসংখ্যকা) গণদেবতা তোমার প্রভাবের অবলোকনকারী, তথা যে অষ্টাশী সংখ্যক (অশীতিঃ সন্তি অষ্টো–অষ্টোত্তরাশীতিসংখ্যাকা) গণদেবতা তোমার মহিমার দর্শনকারী, অধিকন্তু (উতো), যে সাতাত্তর সংখ্যক (সপ্তসপ্ততি–সপ্তোত্তরসপ্ততিসংখ্যাকা) গণদেবতা তোমার গরিমার দ্রষ্টারূপে বিরাজমান–তাদের সকলকে এবং আমাদের রক্ষা করো। [তেভিৰ্নঃ পাহি– এইটিই পরম প্রার্থনা] ৩

হে রেবতি (অর্থাৎ রয়িমতী বা ধনবতী বা ধনপ্রদায়িনী রাত্রি)! তোমার যে ষষ্টি সংখ্যক (যষ্টিশ্চ ষট্‌ চ-ষড়ুত্তরষষ্টিসংখ্যাকা) গণদেবতা বিদ্যমান; তথা, হে সুন্নয়ি (অর্থাৎ সুখবতী বা সুখপ্রদায়িনী রাত্রি)! তোমার যে পঞ্চান্ন সংখ্যক (পঞ্চাশৎ পঞ্চ– পঞ্চোত্তরপঞ্চাশৎসংখ্যাকা) মহত্বদ্রষ্টারূপী গণদেবতা বর্তমান; তথা, হে বাজিনি (অর্থাৎ অন্নবতী বা বেগবতী রাত্রি! তোমার যে চুয়াল্লিশ সংখ্যক (চত্বারঃ চত্বারিংশৎ–চতুরুত্তরাশ্চত্বারিংশৎসংখ্যাকা) গণদেবতা বিরাজিত; তথা তোমার মহত্বদ্রষ্টা যে তেত্রিশ সংখ্যক (ত্রয়স্ত্রিংশৎসংখ্যাকা) গণদেবতা অধিষ্ঠিত–তাদের সকলকে এবং আমাদের রক্ষা করো। [পূর্ব মন্ত্রের ন্যায় এখানেও এইটিই পর প্রার্থনা ] ৪

হে বিভাবরি (রাত্রি)! তোমার প্রাধান্যদর্শী যে বাইশ সংখ্যক (দৌ বিংশতি– দ্ব্যধিকবিংশতিসংখ্যাকা) গণদেবতা বিরাজমান, তথা তোমার ব্যাপ্তিদ্রষ্টা নিকৃষ্টসংখ্যক (অবমাঃ) অর্থাৎ একাদশ (একোত্তরদশসংখ্যাকা) যে গণদেবতা বর্তমান–হে দ্যুলোক-দুহিতা! তুমি ইদানীং (অদ্য) ক্ষিপ্রতার সাথে (নু) পূর্বৰ্মন্ত্রোক্ত এবং এই মন্ত্রোক্ত তোমার ব্যাপ্তিদর্শক গণদেবতাগণের র সাথে আমাদের রক্ষক হও (তেভিঃ নঃ পায়ুভিঃ পাহি)। [ রাত্রিকে দু বা আকাশের কন্যারূপে বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে–আলোকাভাবে রাত্রিকে আকাশ হতে আপতিতার ন্যায় দেখা যায়, অতএব রাত্রি দ্যুলোকের পুত্রী বলে উক্ত হয়েছে]। ৫।

হে রাত্রি! তুমি আমাদের রক্ষা করো (রক্ষ নঃ), অর্থাৎ পরকৃত বাধা পরিহার করো। পাপ অর্থাৎ হিংসা ইত্যাদি লক্ষণ সমন্বিত কথা যারা বলে (অঘশংসঃ) অথবা পাপরূপ ক্র শস্ত্র ইত্যাদির দ্বারা যারা হিংসা করে (অঘেন শংসতি), এই রকম কেউ অর্থাৎ কোনও হিংসক যেন কখনও আমাদের (মাকি নঃ) পীড়ন করতে সমর্থ না হয় (মা ঈশত)। তথা কোনও দুষ্ট বা দুর্বচন-কথয়িতা অর্থাৎ মন্দ-বাক্য ব্যবহারকারী জন (দুঃশংসঃ) যেন আমাদের পীড়নে সমর্থ না হতে পারে। যেন কোনও চোর (স্তেনঃ) ইদানীং (অদ্য) আমাদের গাভীগুলি অপহরণ করতে সমর্থ না হয়, যেন কোনও নেকড়ে বা শৃগাল জাতীয় হিংস্র প্রাণী (বৃকঃ) আমাদের ছাগ বা মেষজাতীয় পোষ্য পশুগুলিকে (অবীনা) বলপূর্বক অপহরণে সমর্থ না হয় ৷৷ ৬ ৷

হে ভদ্রে (অর্থাৎ মঙ্গলদায়িনী রাত্রি)! কোন তস্কর (অর্থাৎ সেই নিন্দিত কর্মকারী কোন জন) যেন আমাদের অশ্বগুলি অপহরণ করতে না পারে (অশ্বানা মা ঈশত), তথা যাতুধানগণ (যাতুধানাঃ) অর্থাৎ যাতনা বা পীড়া প্রদানকারী পিশাচ ইত্যাদি বা রাক্ষসগণ যেন আমাদের প্রিয়মাণ পুত্র-ভৃত্য ইত্যাদির বাধক না হয় (নৃণাং মা ঈশত)। ধনাপহরণ ইত্যাদি কর্মকারী সেই চোর ও নিন্দিত ব্যক্তিগণ (স্তেনঃ তস্করঃ) অতিদূর পর্যন্ত বিস্তৃত পথ ধরে শীঘ্র গমন করুক অর্থাৎ পলায়ন করুক (পরমেভিঃ পথিভিঃ ধাবতু)। তথা দন্তবতী (দত্বতী), রজ্জ্ববৎ আয়ত সপিণী ইত্যাদি (রজ্জ্বঃ) অতিদূর পর্যন্ত বিস্তৃত পথ ধরে পলায়ন করুক (পরেণ ধাতু)। তথা পাপ, যা পরের হিংসা কামনা করে, সেই শত্রুও দূরে গমন করুক (অঘায়ুঃ পরেণ অতু) ৭

হে রাত্রি! বিষজ্বালাধূম বা নিশ্বাসধূম সম্পন্ন অর্থাৎ পরের উপদ্রবকারী বিষজ্বালাপরিবৃত সর্পের শির ছিন্ন করে দাও (তৃষ্টধূমং অহিং অশীর্ষাণং কৃণু)। অধিকন্তু, ছাগ-মেষ ইতাদির অপহরণকারী হিংসা কর্মা (জয়া) আরণ্যকুকুরের (বৃকস্য) হন্‌ নিৰ্মর্দিত করে বৃক্ষের নিম্নে (দ্রুপদে) বধ করো (জহি) ॥ ৮

হে রাত্রি! তোমার অধিকরণত্বে বা তোমার কৃত রক্ষণে (ত্বয়ি) আমরা একত্রে নিবাসিত হবো (বসামসি); কেবল নিবাসই নয়, কিন্তু নিদ্রাগমনও করবো (স্বপিষ্যামসি) যদি তুমি আমাদের রক্ষণে অবহিত হয়ে জাগরিত থাকো (ত্বং জাগৃহি)। তুমি আমাদের (নঃ) গাভীসমূহকে (গোভ্য), অশ্বগুলিকে (অশ্বেভ্য) ও গৃহে নিবাসকারী পুরুষ সমুদায়কে (পুরুষেভ্যঃ) সুখ প্রদান করো (শর্ম যচ্ছ), অর্থাৎ এই নিদ্রার মধ্য দিয়েই আমরা তোমার পরতীরে কল্যাণ লাভে সমর্থ হবো। ৯

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— আ রাত্রি পার্থিবং ইতি সূক্তদ্বয়ং অর্থসূক্ত। ইষিরা যো ইতি সূক্তদ্বয়মপি অর্থসূক্তং। অস্য সূক্তদ্বয়যুগলস্য রাত্রীকল্পে রাক্র্যপস্থানে জপে চ বিনিয়োগঃ।–ইত্যাদি। (১৯কা, ৬অ. ২সূ.)।

টীকা— উপযুক্ত সূক্তটি এবং এর পরবর্তী তিনটি সূক্ত (অথো যানি চ ইত্যাদি, ইষিরা যোষা ইত্যাদি ও অধ রাত্রি তৃষ্টধূমম ইত্যাদি) অর্থসূক্ত। বর্তমান সূক্তটি ও এর পরবর্তী সূক্তটি রাত্রীকল্পে ও রাক্রপস্থানে জপে বিনিয়োগ করা হয়। পরিশিষ্টে (৪/৩) এর প্রক্রম্য উক্ত হয়েছে ৷ (১৯কা, ৬অ. ২সূ.)।

.

তৃতীয় সূক্ত : রাত্রিঃ

[ঋষি : গোপথ দেবতা : রাত্রি ছন্দ : গায়ত্রী, অনুষ্টুপ, পংক্তি]

অথো যানি চ যম্মা হ যানি চান্তঃ পরীণহি। তানি তে পরি দদ্মসি ॥১৷৷ রাত্রি মাতরুষসে নঃ পরি দেহি। উষা নো অহ্নে পরিদদাত্বহস্তুভ্যং বিভাবরি ॥ ২। যৎ কিং চেদং পতয়তি যৎ কিং চেদং সরীসৃপ। যৎ কিং চ পর্বতায়াসত্বং তস্মাৎ ত্বং রাত্রি পাহি নঃ ॥ ৩৷– সা পশ্চাৎ পাহি সা পুরঃ সোত্তরাদধরাদুত। গোপায় নো বিভাবরি স্তোতারস্ত ইহ স্মসি ॥৪॥ যে রাত্ৰিমনুতিষ্ঠন্তি যে চ ভূতেষু জাতি। পশূন্ যে সর্বান্ রক্ষন্তি তে ন আত্ম জাগ্রতি তে নঃ পশুষু জাগ্রতি ॥৫৷৷ বেদ বৈ রাত্রি তে নাম ঘৃতাচী নাম বা অসি। তাং ত্বং ভরদ্বাজো বেদ সা নো বিত্তেহধি জাগ্রতি ॥ ৬

বঙ্গানুবাদ –[পূর্বৰ্মন্ত্রে গৃহবর্তী গো-অজ ইত্যাদি পশুর কথা বিশেষভাবে উক্ত হয়েছে। এই স্থলেও মম (বক্তা) সম্বন্ধী বাহিরের গোচরপ্রদেশে বা অনাবৃত দেশে বর্তমান যে বস্তুনিচয় আছে, সেইগুলিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে]। (হে রাত্রি!) বাহিরের নিরাবৃত স্থানে যে বস্তুগুলি বর্তমান (অথো ইতি), এবং গৃহের অভ্যন্তরে অর্থাৎ আবৃত স্থানে যে বস্তুগুলি অবস্থিত (যানি চ পরিণহি অন্তঃ), সেই প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত দুই রকম বস্তুনিচয় (তানি) তোমাকে রক্ষার্থে, অর্থাৎ সেইগুলিকে রক্ষার নিমিত্ত, প্রদান করছি (তে পরি দসি)। ১।

হে মাতৃবৎ পরিপালয়িত্ৰী (মাতঃ) রাত্রি! তুমি তোমার অবসানভাবী সূর্যোদয়সমীপবর্তী সময় পর্যন্ত অর্থাৎ উষাকাল অবধি আমাদের রক্ষা করো এবং তারপর উষাকালান্তরভাবী কালের হাতে অর্থাৎ উষার হাতে আমাদের সমর্পণ করো (উষসে নঃ পরি দেহি)। উষাকাল আমাদের প্রাতঃসঙ্গম কাল হতে সায়াহ্নরূপ দিবসের হাতে রক্ষার নিমিত্ত প্রদান করুক (উষাঃ নঃ অহ্নে পরি দদাতু) এবং হে দীপ্তিময়ী রাত্রি (বিভাবরী)! উক্ত রক্ষণ-লক্ষণেপেত দিবাকাল (অহঃ) তোমার হাতে রক্ষার নিমিত্ত আমাদের প্রদান করুক (তুভ্যম নঃ পরি দদাতু)। (অর্থাৎ এইভাবে পুনঃ পুনঃ আবর্তমান অহোরাত্রি তোমার কৃপায় আমাদের রক্ষা করুক–এটাই বক্তব্য)। ২।

এই পরিদৃশ্যমান শ্যেনপক্ষী ইত্যাদি (ইদং) যা কিছু (যৎ কিম্ চ) আকাশে সঞ্চরণ করছে (পতয়তি), এই পরিদৃশ্যমান যা কিছু সৰ্প ইত্যাদি প্রাণী ভূমিতে গমনশীল (সরীসৃপ), এই পরিদৃশ্যমান যা কিছু পার্বতীয় (পর্বতায়) দুষ্ট ব্যাঘ্র-সিংহ ইত্যাদি প্রাণী (অসত্বং) আছে সেই সকলের উপদ্রব হতে (তস্মাৎ), হে রাত্রি! তুমি আমাদের রক্ষা করো (ত্বম্ পাহি নঃ)। ৩।

হে পূর্বোক্তলক্ষণা রাত্রি (সা)! তুমি পশ্চিম দিকে (পশ্চাৎ) বাসকারী আমাদের রক্ষা রে করো। তথা তুমি (সা) পূর্ব দিকে আমাদের রক্ষ করো (পুরঃ পাহি); অধিকন্তু (উত) তুমি (সা) উত্তর ও দক্ষিণ দিকে (উত্তরাৎ অধরা) আমাদের রক্ষা করো। আরও, হে দীপ্তিময়ী রাত্রি (বিভাবরী)! তুমি আমাদের রক্ষা করো (নঃ গোপায়)। বর্তমানে (ইহ) আমরা তোমার স্তাবক অর্থাৎ স্তুতিকারী হয়েছি (তে স্তোতারঃ স্মসি) ॥৪॥

 যে জনগণ পূজা-জপ-সেবারূপ রাত্রিবিষয়ক কর্ম করে (যে রাত্রি অনুষ্ঠিন্তি), যে জনগণ প্রাণীগণের (ভূতেষু) রক্ষণবিষয়ে অবহিত আছে। (জাতি), যে জনগণ রাত্রিকালে গো-অশ্ব ইত্যাদি পশুগুলিকে ভয় হতে রক্ষা করে (যে সর্বান্ পশু রক্ষন্তি)–তারা সকলে আমাদের পুত্র-মিত্র ইত্যাদির রক্ষার নিমিত্ত অবহিত হোক (তে ন আত্মসু জাতি), আমাদের পশুগুলির রক্ষার বিষয়ে অবহিত থাকুক। ৫।

 হে (বৈ) রাত্রি! তোমার নাম অর্থাৎ নামধেয় আমি বিদিত আছি (বেদ-বেঘ্নি)। সেই প্রসিদ্ধ নাম ঘৃতাচী অর্থাৎ দীপ্তিমতী (ঘৃত-দীপ্তি)। উক্ত নামধারিণী তোমাকে মহর্ষি ভরদ্বাজ (ভরৎ অর্থাৎ পোষক, বাজঃ অর্থাৎ অন্ন, যাঁর) জ্ঞাত আছেন (বেদ)। অতএব ভরদ্বাজের দ্বারা বিদিতপ্রভাবা সেই রাত্রি (সা) আমাদের পশু-পুত্র ইত্যাদিরূপ বিষয়ে (বিত্তে) অধিক জাগ্রত থাকুক বা রক্ষণার্থে অধিকতর অবহিতা থাকুক (অধি জাগ্রতি)। ৬৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –অথো যানি চ ইতি সূক্তস্য রাত্রীকল্পে রাক্র্যপস্থানে জপে চ বিনিয়োগঃ পূর্বসূক্তেনসহোক্তঃ (১৯কা, ৬অ. ৩সূ.)।

টীকা –পূর্বসূক্তের বিনিয়োগ প্রসঙ্গের উল্লেখানুসারে উপযুক্ত সূক্তটিও ঐ সঙ্গে রাত্রিকল্পে ও রাক্র্যপস্থানে জপে বিনিযুক্ত হয় ৷৷ (১৯কা, ৬অ. ৩সূ.)।

.

চতুর্থ সূক্ত : রাত্রিঃ

[ঋষি : গোপথ ভরদ্বাজ দেবতা : রাত্রি ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, পংক্তি, জগতী]

ইষিরা যোষা যুবতিমুনা রাত্রী দেবস্য সবিতুৰ্ভগস্য। অশ্বক্ষভা সুহবা সস্তৃতীরা পপ্রৌ দ্যাবাপৃথিবী মহিত্বা ॥১॥ অতি বিশ্বানরুহদ গম্ভীররা বর্ষিষ্ঠমরুন্ত বিষ্ঠাঃ। উশতী রানু সা ভদ্রাভি তিষ্ঠতে মিত্র ইব স্বধাভিঃ ॥ ২॥ বর্যে বলে সুভগে সুজাত আজগন রাত্রি সুমনা ইহ স্যাম। অম্মাস্ত্রায়স্ব নর্যাণি জাতা অথো যানি গব্যানি পুষ্ট্যা ৷৷ ৩৷৷ সিংহস্য রাশতী পীংষস্য ব্যাঘ্ৰস্য দ্বীপিন বৰ্চ আদদে। অশ্বস্য ব্ৰধং পুরুষস্য মায়ুং পুরু রুপাণি কৃণুষে বিভাতী ॥৪ শিবাং রাত্ৰিমনুসূর্যং চ হিমস্য মাতা সুহবা নো অস্তু। অস্য স্যোমস্য সুভগে নি বোধ যেন ত্বা বলে বিশ্বাসু দিক্ষু ॥৫৷৷ স্তোমস্য নো বিভাবরি রাত্রি রাজেব জোষসে। অসাম সর্ববীরা ভবাম সর্ববেদসো ব্যুচ্ছত্তীরনূষসঃ ॥ ৬৷৷ শম্যা হ নাম দধিষে মম দিন্তি যে ধনা। রাত্রীহি তানসুতপা য স্তেনো ন বিদ্যতে যৎ পুনর্ন বিদ্যতে ॥৭৷৷ ভদ্রাসি রাত্রি চমসো ন বিষ্টো বিম্বং গোরূপং যুবতি বিভর্ষি। চক্ষুষ্মতী মে উশতী বপূংষি প্রতি ত্বং দিব্যা ক্ষামমুকথাঃ ॥৮॥ যো অদ্য স্তেন আয়ত্যঘায়ুমর্তো রিপুঃ।.. রাত্রী তস্য প্রতীত্য প্র গ্রীবাঃ প্র শিয়ো হনৎ ॥৯॥ প্র পাদৌ ন যথায়তি প্র হস্তৌ ন যথাশিষৎ। যো মলিম্নরুপায়তি স সম্পিক্টো অপায়তি। অপায়তি স্বপায়তি শুল্কে স্থাণাবপায়তি ॥ ১০৷৷

বঙ্গানুবাদ –সকলের প্রার্থনীয়া অথবা গতিমতী অর্থাৎ সর্বত্র ব্যাপনশীলা (ইষিরা), যৌবনবতী (যুবতীঃ), দান্তমনা (দমুনাঃ) অর্থাৎ শান্ত মনঃসম্পন্না রাত্রি হলো সর্বপ্রেরক (সবিতুঃ) ভগ নামক দেবতার রমণী (ভগস্য দেবস্য যোষা)। সেই হেন রাত্রি চক্ষু ইত্যাদি ইন্দ্রিয়ের নিবরাধিকা অথবা অশ্ব ইত্যাদির দর্শনশক্তির প্রতিবন্ধকের উপযুক্ত দীপ্তিযুক্তা (অশ্বক্ষভা), (অর্থাৎ অশ্বগণ দূর হতে দর্শনের জন্য প্রসিদ্ধ হলেও রাত্রির দীপ্তিতে তা-ও প্রতিহত হয়ে থাকে)। রাত্রি সুষ্ঠু হৃতব্যা অর্থাৎ সম্বোধনযোগ্যা (সুহবা), সম্পূর্ণকান্তি (সতশ্রীঃ) অর্থাৎ সর্ব জগৎকে ব্যাপ্ত পূর্বক স্বয়ং একা বলে প্রতীয়মানা। এই হেন লক্ষণযুক্তা রাত্রি আপন মহত্বের দ্বারা দ্যাব-পৃথিবীকে আপূরিত করেছে (মহিত্বা দ্যাবাপৃথিবী ইতি আ পপ্রৌ)। ১৷৷

দুষ্প্রবেশা অর্থাৎ দুর্গম (গম্ভীরা) রাত্রি চরাচরাত্মক সকল বস্তুকে (বিশ্বানি) ব্যাপ্ত পূর্বক বর্তমান। সেই রাত্রি অতিশয় অন্নবতী (এবিষ্ঠা) অথবা সকলের অতিশয় স্থূয়মানা সেই রাত্রি বনস্পতি-পর্বত-সমুদ্র ইত্যাদিকে অতিক্রম পূর্বক বিরাজমান। অনন্তর স্বগতজনের বা সকলের আকাঙ্ক্ষাকারিণী বা কামনাকারিণী রাত্রি (উশন্তি রাত্রী) অনুক্ষণ বিশেষভারে জগৎ ব্যাপ্ত করে থাকে (অনু বি তিষ্ঠতে)। যেমন মিত্রের ন্যায় সূর্যদেব (মিত্র ইব) যজমান ইত্যাদি কর্তৃক প্রদত্ত হবিঃ-রূপ অন্ন সাধনের দ্বারা (স্বধাভিঃ) ক্ষণে ক্ষণে আপন তেজে, সব কিছু অধিকার করে থাকেন, সেই রকম এই মঙ্গলময়ী রাত্রিও (সা ভদ্রা) সব কিছু অধিকার করে (অভি তিষ্ঠতে)। ২।

 হে অনিরুদ্ধ-প্রভাবশালিনী (বর্যে)! হে সকলের অভিষ্টয়মানা অর্থাৎ সকলের দ্বারা স্তুতা (বন্দে)! হে সৌভাগ্যবতী বা সকলের সুষ্ঠু সম্ভজনীয়া (সুভগে)! হে সুষ্ঠু প্রাদুর্ভূতা (সুজাতে) রাত্রি! তুমি আগত হয়েছে (আ অজগন)। তোমার আগমনে আমি সুষ্ঠু মনোভিলাষী বা শোভন মনঃসম্পন্ন হবো (সুমনাঃ ইহ স্যাম)। তুমি আমাদের পালন করো (অস্মা ত্রায়স্ব)। তথা মানুষ্যের হিতকরী যে বস্তুগুলি উৎপন্ন (নর্যাণি জাতা), অধিকন্তু গো-অশ্ব ইত্যাদির পুষ্টির নিমিত্ত যে বস্তুগুলি উৎপন্ন (অথথা ইতি যানি গব্যানি পুষ্ট্যা), সেই সবগুলিকেও রক্ষা করো (ত্রায়স্ব) ৷৷ ৩৷৷

 কাময়মানা রাত্রি দেবতা (উশতি) গজমূথের সম্যক চূর্ণকরী সামর্থযুক্ত (পীংষস্য) সিংহের ও জলবেষ্টিতে স্থানে স্বচ্ছন্দে বিচরণকারী (দ্বীপিনঃ) ব্যাঘ্রের পরাভিধর্ষণরূপ তেজঃ (বৰ্চঃ) অপহৃতবতী (আ দদে)। (অর্থাৎ রাত্রি দেবতা হস্তীবিমর্দক সিংহের ও দ্বীপবাসী ব্যাঘ্রের পরোপদ্রবকারক সামর্থ্য আকর্ষণ করে থাকে)। তথা শীঘ্রগামী অশ্বের মূল অর্থাৎ অশ্ববীর্যের বেগ (অশ্বস্য ব্ৰধং), এবং পুরুষের অর্থাৎ প্রাণীগণের আহ্বান ইত্যাদি শব্দ (পুরুষস্য মায়ুং) অপহৃতবতী (আ দদে)। (অর্থাৎ রাত্রি দেবতা অশ্বের গতিবেগ ও প্রাণীগণের বাকশক্তি নিরুদ্ধ করে থাকে)। অনন্তর স্বয়ং বিশেষভাবে দীপ্যমানা (বিভাতী) রাত্রি নানারকম রূপ (পুরুণি রূপাণি) পরিগ্রহ করে থাকে (কৃণুষে)। ৪

হে রাত্রি! তুমি শিবকারিণী (ত্বাং শিবাং) অর্থাৎ শুভপ্রদায়িনী, তোমাকে বন্দনা করি (বন্দে); তথা তোমার ভর্তা অর্থাৎ পতি মহান্ত সূর্যকে বা ভগদেবকে বন্দনা করি। (প্রথম মন্ত্রেই বলা হয়েছিল–রাত্রী সর্বপ্রেরক ভগ নামক দেবতার পত্নী)। হিমের অর্থাৎ তুহিন বা তুষারের জননী (হিমস্য মাতা) অর্থাৎ হিমের উৎপাদয়িত্রী রাত্রি আমাদের সুষ্ঠু হ্রাতব্যা অর্থাৎ আহ্বানের যোগ্যা হোক (সুহবা নঃ অস্তু)। (রাত্রিকালেই শীতল হিমের উৎপত্তি হয়ে থাকে)। হে সৌভাগ্যবতী বা ভগ নামক শোভন পতিযুক্তা (সুভগে) রাত্রি! তুমি ইদানীং আমাদের ক্রিয়মাণ এই স্তোত্র নিরন্তর জ্ঞাত হও (অস্য স্তোমস্য নি বোধ), অর্থাৎ অনুগ্রহানুকূল বুদ্ধিতে অবিরত অনুমোদন করতে থাকো, যে স্তোত্রের দ্বারা (যেন) সর্ব দিকে ব্যাপ্তা (বিশ্বাসু দিক্ষু) তোমাকে অভিবাদন করছি (বিশ্বাসু দিক্ষু ত্বা বন্দে) ৷৷ ৫।

 হে বিশেষভাবে দীপ্যমানা (বিভাবরী) রাত্রি! তুমি সেইরকম অবহিতা হয়ে আমাদের স্তুতিসমূহ সেবন অর্থাৎ উপভোগ করো, যে রকম কোন রাজা ক্রিয়মাণ স্তুতি শ্রবণ করে প্রীত হয়ে থাকে (রাজা ইব জোষসে)। তমসার অপসারণে প্রকাশমানা (ব্যুম্ন্তীঃ ) প্রতি উষায় (অনু উষসঃ) অর্থাৎ সর্বকালে, আমরা সকল কর্মকুশল পুত্রমিত্র ইত্যাদি সমেত একত্র হবো (সর্ববীরাঃ অসাম ভবাব) এবং সম্পূর্ণ ধনযুক্ত হবো (সর্ববেদসঃ ভবাম)। অর্থাৎ রাত্রিকালে নিদ্রাবশে সকল বিষয়সম্পর্কিত জ্ঞান বা সকল ইন্দ্রিয় ব্যাপার সম্পর্কে বিরাম হেতু মূঢ় থাকার পর বিগতান্ধকার উষাকালে সর্ব ইন্দ্রিয় সম্পর্কিত বিষয়ে জ্ঞানবন্ত হবো॥ ৬

হে রাত্রি! তুমি শত্রুশমনসমর্থ হওয়ায় শম্যা নাম ধারণ করেছো (শম্যা হ নাম দধিষে)। (শম্যা নাম ধারণের প্রয়োজন কি? না–) যে শত্রুগণ আমার ধনরাশির প্রতি হিংসা করে অর্থাৎ অপহরণের ইচ্ছা করে (যে মম ধনা দিন্তি) তাদের তুমি শমন করে থাকো। হে রাত্রি! তুমি সেই শত্রুদের প্রাণ তাপিত করে থাকো (রাত্রি ইহি তান অসুতপা); যারা চোর তারা যেন বিদ্যমান না থাকে (যঃ স্তেনঃ ন বিদ্যতে) অর্থাৎ যেন তারা আর সত্তা লাভ করতে না পারে; এবং তারা যেন পুনর্বার উৎপন্ন হতে না পারে, অর্থাৎ সেই শত্রুগণ যেন পুত্র-পশু-বান্ধব সহ বিনষ্ট হয়ে যায়। ৭।

 হে রাত্রি! তুমি কল্যাণরূপা (ভদ্রা)। তুমি ভোজনার্থে পরিবিষ্ট, অর্থাৎ পরিবেষণার্থে প্রয়োজনীয়, পাত্রের সাথে উপমেয় (চমসো ন বিষ্ট)। তুমি সর্বত্র ব্যাপ্তা (বিম্বং), যৌবনবতী (যুবতিঃ) অর্থাৎ উত্তরোত্তর বহুল তমঃপুঞ্জযুতা, ধেনুর আকৃতি ধারণ করেছো (গোরূপং বিভর্ষি)। যেহেতু গোরূপধারণকারিণী, অতএব আমাদের পোষণের জন্য কাময়মানা (উশতি) তুমি, চক্ষুষ্মতী অর্থাৎ আমাদের বিষয়ে দর্শনশক্তিমতী হয়ে বা আমাদের রক্ষার নিমিত্ত অনুগ্রহবুদ্ধি সম্পন্ন হয়ে লোকমানা হয়ে বিরাজিতা থাকো, অর্থাৎ এই লোকে অবস্থান করো। এই রকমেই তুমি আমাদের পুত্র ইত্যাদির শরীর লক্ষ্য রেখে (ত্বং মে বপূংষি প্রতি) ভূলোক পরিত্যাগ করো না (ক্ষাম অমুকথাঃ)। (দৃষ্টান্ত কি? না) যেমন তুমি তোমার স্বর্গীয় তনু (দিব্যা) ত্যাগ করো না, তেমনই আমাদের তনু ত্যাগ করো না (যথা দিব্যশরীরাণি ন মুঞ্চসি এবং আম্মাকানীতি) ॥ ৮

আমাদের ধন অপহরণের নিমিত্ত ইদানীং যে চোর আগমন করছে (অদ্য যঃ স্তেন আয়তি), তো হিংসালক্ষণ পাপরূপ যে মরণধর্মা শত্রু আগমন করছে (অঘায়ুঃ মর্ত্য রিপুঃ আয়তি), হে সুরূপা রাত্রি! তুমি তাদের অর্থাৎ সেই চোর ও শত্রুদের ) অভিপ্রায় সম্যক জ্ঞাপিত হয়ে (প্রতীত্য) তাদের স্কন্ধ (গ্রীবা) ও মস্তক প্রকৃষ্টভাবে ছিন্ন করে হত্যা? করো (প্র হনৎ)। ৯ ৷

 (সেই চোর ও পাপময় শত্রুদের) পরোপদ্রবকারিত্বের অভিপ্রায় সম্যকরূপে জ্ঞাত হয়ে (পূর্বে যেমন গ্রীবা ও মস্তক ছিন্ন করেছো) সেই ভাবে তাদের পাদদ্বয় বা পাদসমুদায় ভঙ্গ করে দাও যাতে তারা আর আগমন করতে না পারে (প্র পাদৌ ন যথা অয়তি); এবং তাদের হস্তদ্বয় বা হস্তসমূহ ছিন্ন করে দাও যাতে তারা আর আলিঙ্গনের নিমিত্ত হস্ত সংযোজন করতে না পারে (প্র হস্তৌ ন যথা অশিষৎ)। যে চোর (যঃ মলিল্লুঃ) আমাদের ধন অপহরণ বা বশীভূত করতে আমাদের সমীপে আগমন করছে (উপায়তি) সেই শত্রুকে সম্যক চূর্ণিত করে (সঃ সমপিষ্টঃ) আমাদের নিকট হতে দূরে প্রেরণ করে দাও (অপায়তি)। (আবশ্যকত্ব বোঝানোর নিমিত্ত অপায়তি শব্দের পুনরুক্তি করে বলা হচ্ছে)–তাদের সম্যক্‌ নিঃশেষে বিনাশ করে (সু অপায়তি) শুষ্ক অর্থাৎ নীরস স্থানে অর্থাৎ শাখাপ্রশাখারহিত বৃক্ষমূলে বা আশ্রয়ে প্রস্থিত করে দাও (শুষ্কে স্থানৌ অপ অয়তি ॥ ১০৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— …রাত্রীকল্পে পুরোহিতকর্তব্যে রাত্রীসমৰ্চনকর্মণি রাত্রপস্থানে চ অস্য সূক্তস্য বিনিয়োগঃ।–ইত্যাদি৷ (১৯কা, ৬অ. ৪সূ.)।

টীকা –পূর্বেই উল্লিখিত হয়েছে যে, দ্বিতীয়-তৃতীয় ও চতুর্থ-পঞ্চম এই সূক্ত চারটি অর্থসূক্ত। সেই অনুসারে উপযুক্ত অর্থসূক্তটি রাত্রীকল্পে পুরোহিতের কর্তব্য হিসেবে রাত্রির সমর্চন কর্মসমূহে ও রাক্রপস্থানে (উপাসনায়) বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। পরিশিষ্টে (৪৩, ৪৪, ৪৫) এই সম্পর্কে বিস্তৃত নির্দেশ উল্লিখিত আছে ৷ (১৯কা, ৬অ. ৪সূ.)।

.

পঞ্চম সূক্ত : রাত্রিঃ

 [ঋষি : গোপথ দেবতা : রাত্রি ছন্দ : অনুষ্টুপ]

অধ রাত্রি তৃষ্টধূমমশীর্ষণমহিং কৃণু। অক্ষৌ বৃকস্য নির্জহ্যাস্তেন তং দ্রুপদে জহি॥১॥ যে তে রানভৃহস্তীক্ষশৃঙ্গাঃ স্বাশবঃ। তের্ভিননা অদ্য পারয়াতি দুর্গাণি বিশ্বহা ॥ ২॥ রাত্রিংরাত্ৰিমরিষ্যন্তস্তরেম তন্বা বয়ম্। গম্ভীরমপ্লবা ইব ন তরেয়ুররাতয়ঃ ॥ ৩৷৷ যথা শাম্যাকঃ প্রপতন্নপবান্ নানুবিদ্যতে। এবা রাত্রি প্র পাতয় যো অস্ম অভ্যঘায়তি। ৪৷ অপং স্তেনং বাসো গোঅজমুত তস্কর। অথো যো অবতঃ শিরোহভিধায় নিনীষতি ॥ ৫যদদ্যা রাত্রি সুভগে বিভজ্যুয়ো বসু। যদেতদম্মান ভোজয় যথেদন্যানুপায়সি ॥ ৬৷৷ উষসে নঃ পরি দেহি সর্বান্ রানাগসঃ। উষা নো অহ্নে আ ভজাদহস্তুভ্যং বিভাবরি ॥৭ ৷৷

বঙ্গানুবাদ –[বর্তমান কাণ্ডের ৪৮শ সূক্তের ৮ম মন্ত্রে এই প্রথম ঋটি সামান্য ব্যতিক্রমে ব্যাখ্যাত হয়েছে। যথা,–] হে রাত্রি! বিষজ্বালাধূম বা, নিশ্বাসধূম সম্পন্ন অর্থাৎ পরের উপদ্রবকারী বিষজ্বালাপরিবৃত সর্পের শির ছিন্ন করে দাও। অধিকন্তু, ছাগ মেষ ইত্যাদির অপহরণকারী আরণ্যকুকুরের চক্ষু (অক্ষৌ) উৎপাটিত করে (নিঃ জহ্যাঃ) তাকে তুমি বৃক্ষের নিম্নে বধ করো ॥ ১

হে রাত্রি! তোমার বাহনভূত শাণিত-শৃঙ্গশালী (তীক্ষশৃঙ্গার) অতিশয় শীঘ্রগামী (স্বাশবঃ) যে অনড্রাহ পুঙ্গবগণ অর্থাৎ শকট বহনে ক্ষমতাসম্পন্ন বৃষগুলি রয়েছে, সেইগুলি অর্থাৎ উক্ত লক্ষণেপেত বৃষগুলির দ্বারা (তেভিঃ) আমাদের ইদানীং (নঃ অদ্য) সকল দিবা (বিশ্বহা) এবং রাত্রিব্যাপী অনর্থজাত সঙ্কটসমূহ (দুর্গাণি) অতিক্রম করিয়ে দাও (অতি পিরয়) ॥ ২॥

 রাত্রির পর রাত্রি (রাত্রিং রাত্রিং) গত হলেও (অরিষ্যন্ত) আমরা স্বশরীরে (বয়ম তন্ব) অর্থাৎ পুত্র ইত্যাদির সাথে সেগুলি অতিক্রম করে যাবো (তরেম)। আমাদের শত্রুবর্গ যেন রাত্রি অতিক্রম করতে না পারে (অরাতয়ঃ ন তরেয়ু), রাত্রির মধ্যেই যেন তারা বিনাশ প্রাপ্ত হয়; (তার দৃষ্টান্ত, অর্থাৎ কি রকম ভাবে বিনষ্ট হবে? না–) গম্ভীরং অপ্লবা ইব–অর্থাৎ তরণসাধন অর্থাৎ পার হওয়ার উপযুক্ত ভেলারহিত জনগণ যেমন অতি গভীর নদী ইত্যাদি পার হতে উদ্যত হয়ে জলমধ্যে নিমজ্জিত হয়, সেইরকম ৷ ৩৷৷

(পরোক্ষভাবে বলা হচ্ছে)–যেমন শ্যামাক বা শ্যামা নামক ধান্যবিশেষ পক্ক অবস্থায় অপকর্ষর্বাণ অর্থাৎ দুর্বল বা নিঃসার হয়ে অবস্থান লাভ করতে পারে না (প্ৰবতন অপবান্ ন অনুবিদ্যতে) অর্থাৎ বিনাশপ্রাপ্ত হয়, সেই রকম হে রাত্রি! যে শত্রু আমাদের প্রতি হিংসালক্ষণ পাপ সাধনে ইচ্ছা করে, (যঃ অস্মান অভি অঘায়তি), তাদের তুমি প্রকৃষ্টভাবে অবাঙমুখে নিপাতিত করো (প্র পাতয়) ॥ ৪৷

 যে আমাদের বস্ত্র (বাসঃ) গো-অজ ইত্যাদি অপহরণ (স্তেনং) করতে ইচ্ছা করে, হে রাত্রি! তুমি সেই চোরদের অপসারণ করো। অধিকন্তু (অথো) যে তস্কর আমাদের অশ্বের: শির (অবর্তঃ শিরঃ) বন্ধন করতে অভিলাষ করে (অভিধায়), অর্থাৎ রজ্জ্ব প্রভৃতির দ্বারা বন্ধন পূর্বক পরিগ্রহণ করতে চায় (নিনীষতি), তাদের দূরীভূত করে দাও। ৫।

 হে সৌভাগ্যবতী বা ভগের পত্নী (সুভগে) রাত্রি! এই মুহূর্তে শত্রুগণ আমাদের যে লৌহময় বস্তু (যৎ অয়ঃ) ও স্বর্ণ ইত্যাদি ধনসামগ্রী (বসু) অপহরণপূর্বক বিভাগ করে অর্থাৎ নিজেদের মধ্যে বন্টন করে নিতে অভিলাষী (বিভজন্তি) তা আমাদের অর্থাৎ ধনস্বামীবর্গের (অস্মা) ভোগের উপযুক্ত করে দাও। অন্যান্য (অন্যান) শত্রুবর্গের অপহৃত পদার্থসমূহ অর্থাৎ বস্ত্র-গাভী-অজ-অশ্ব ইত্যাদি (ইৎ) যে কোন রকমে (যথা আমাদের নিমিত্ত আনয়ন করো ॥ ৬

হে রাত্রি! অনপরাধী (অনাগসঃ) আমাদের সকলকে (নঃ সর্বান) অর্থাৎ আমাদের পশু-পুত্র-মিত্র ইত্যাদি সকলকে উষাকাল পর্যন্ত অর্থাৎ প্রভাতকাল পর্যন্ত রক্ষা করো; সেই উষা আমাদের (নঃ) প্রাতঃ ইত্যাদি সায়াহ্নকাল পর্যন্ত অর্থাৎ সমগ্র দিবস ব্যাপী পরিপালনের জন্য দিবসের হস্তে সমর্পণ করুক (অহ্নে আ ভজাৎ)। এইরূপে, হে বিভাবরি (রজনী)! দিবস আমাদের তোমার হস্তে সমর্পণ করুক (অহঃ তুভ্যম বিভাবরি) (এইরকমে অনবরত অর্থাৎ অহোরাত্রব্যাপী আমাদের শত্রুবাধা পরিহার পূর্বক পশু-ধন ইত্যাদি সমেত রক্ষা করো–এটাই বক্তব্য)। ৭।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— অধ রাত্রি তৃষ্টধূমং ইতি সূক্তস্য রাত্রীকল্পে রাক্র্যপস্থানে জপে চ বিনিয়োগঃ পূর্বসূক্তেন সহ উক্ত৷৷ (১৯কা, ৬অ. ৫সূ.)।

টীকা –উপযুক্ত সূক্তটির বিনিয়োগ পূর্বসূক্তে উল্লিখিত আছে ৷ (১৯কা, ৬অ. ৫সূ.)।

.

ষষ্ঠ সূক্ত : আত্মা

[ঋষি : ব্রহ্মা দেবতা : আত্মা, সবিতা ছন্দ : অনুষ্টুপ, উষ্ণিক]

অযুতোহহমযুতো ম আত্মাযুতং মে চক্ষুরযুতং মে শ্ৰোত্ৰমযুতো মে প্রাণোহযুতে মেহপানোহযুতে মে ব্যানোহযুতোহহং সর্বঃ ॥১॥ দেবস্য ত্বা সবিতুঃ প্রসবেংশ্বিনোর্বাহুভ্যাং পূষ্ণো হস্তাভ্যাং প্রসূত আ রভে ॥ ২॥

 বঙ্গানুবাদ— আমি (অহম) অর্থাৎ সর্বাবয়ববিশিষ্ট এই সত্তা, আজ পূর্ণতা লাভ করেছি (অযুতঃ)। আমার আত্মা অর্থাৎ দেহাবচ্ছিন্ন এই সত্তাও আজ পূর্ণতা লাভ করেছে (মে আত্মা অযুত)। অথবা আত্মা শব্দের দ্বারা শরীরও বোঝাচ্ছে, যেমন-চক্ষুঃ অর্থাৎ সর্বপদার্থবিষয়ে জ্ঞান সাধনের চক্ষুরিন্দ্রিয় সম্পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়েছে, শ্রোত্রং অর্থাৎ বৈদিকমন্ত্র শ্রবণ-সাধনের শ্রবণেন্দ্রিয় সম্পূর্ণতা লাভ করেছে, আমার প্রাণঃ অর্থাৎ হৃদয় হতে আরম্ভ করে নাসিকারনির্গত প্রাণবায়ু সম্পূর্ণতা প্রাপিত হয়েছে (মে প্রাণঃ অযুতঃ), আমার অপানঃ অর্থাৎ পায়ুদ্বার-নির্গত অপান নামক বায়ু সম্পূর্ণতা লাভ করেছে (মে অপানঃ অযুত্র), আমার ব্যান অর্থাৎ প্রাণাপানের সন্ধিরূপ বায়ু পূর্ণতা লাভ করেছে (মে ব্যানঃ অযুত), উজানুক্ত অবয়ব-ইন্দ্রিয় সবকিছু সমন্বিত আমি আজ সামগ্রিকতা আহরণ করছি (অযুতঃ অহম্ সর্বঃ)। ১।

সেই হেন সামগ্রিকতা আহরণকারী আমি আজ সর্বপ্রেরক দেব সবিতার অনুজ্ঞায় (প্রসবে), অশ্বিদেবদ্বয়ের বাহুসমূহের দ্বারা (অশ্বিননাঃ বাহুভ্যা) ও পূষা দেবতার হস্তের দ্বারা (পূষ্ণঃ হস্তাভ্যা) প্রেরিত বা অনুজ্ঞাত হয়ে কর্মে প্রযুক্ত হচ্ছি (প্রসূতঃ আ রভে)। ২৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগ— অযুতোহং ইতি যজুমন্ত্ৰাত্মকং সূক্তং। অস্য বিনিয়োগো লিঙ্গ অবগন্তব্যঃ ৷৷ (১৯কা, ৬অ. ৬সূ.)।

টীকা –উপযুক্ত যজুমন্ত্ৰাত্মক সূক্তটি যাগে প্রবৃত্ত হওয়ার পূর্বে অধ্বর্য (যজুর্বেদীয় ঋত্বিক) কর্তৃক সঙ্কল্পরূপে বিনিযুক্ত হয়ে তাকে। এ ছাড়া এর বিনিয়োগ অর্থপ্রকাশক সামর্থ্য হতেই অবগন্তব্য।–এই জাতীয় বহু মন্ত্র যজুর্বেদে আছে। এই রকম অশ্বিদেবতার বাহু ও পূষা দেবতার হস্ত ইত্যাদি উল্লেখ অনেক ক্ষেত্রেই পাওয়া যায়। বাহু–অংসপ্রভৃতি প্রকোষ্ঠ অর্থাৎ কফোণি অবধি মণিবন্ধ পর্যন্ত বাহুভাগ। হস্ত মণিবন্ধ হতে অঙ্গুলীর অগ্রভাগ পর্যন্ত হস্তের অংশ৷ (১৯কা, ৬. ৬সূ.)।

.

সপ্তম সূক্ত : কামঃ

[ঋষি : ব্রহ্মা দেবতা : কাম ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, উষ্ণিক, বৃহতী]

কামস্তদগ্রে সমবৰ্তত মনসো রেতঃ প্রথমং যদাসীৎ। স কাম কামেন বৃহতা সযোনী রায়ম্পোষং যজমানায় ধেহি ॥১॥ ত্বং কাম সহসাসি প্রতিষ্ঠিত বিভুর্বিভাবা সখ আ সখীয়তে। ত্বমুগ্ৰঃ পৃতনাসু সাসহিঃ সহ ওজো যজমানায় ধেহি ॥ ২॥ দূরাচ্চকমানায় প্রতিপাণায়াক্ষয়ে। আম্মা অশৃথন্নাশাঃ কামেনাজনয় স্বঃ ॥৩॥ কামেন মা কাম আগন্ হৃদয়াদ্ধৃদয়ং পরি। যদমীষামদো মনস্তদৈতৃপ মামিহ। ৪যৎ কাম কাময়মানা ইদং কৃশ্মসি তে হবিঃ। তন্নঃ সর্বং সমৃধ্যতামথৈতস্য হবিষো বীহি স্বাহা ॥৫॥

 বঙ্গানুবাদ— [এই সূক্তটি কামপ্রতিপাদকত্বের নিমিত্ত কামসূক্ত নামে অভিহিত।–প্রলয়কালে সর্ব জগৎ বাসনাশেষে মায়ায় বিলীন হলে পুনরায় ঈশ্বরের পর্যালোচনাক্রমে এই জগৎ সৃষ্টি হয়। ঈশ্বরের কামনাজাত বারংবার সৃষ্ট এই জগতের স্বরূপ সম্পর্কে এই মন্ত্রে বলা হয়েছে ]–অগ্রে অর্থাৎ এই বিকারজাত সৃষ্টির প্রাক্-অবস্থায় পরমেশ্বরের মনে সম্যরূপে কাম জাত হয়েছিল (সমবর্তত), অর্থাৎ সৃষ্টির ইচ্ছা সঞ্জাত হয়েছিল। (কি জন্য?–না)–তাদৃশ মনঃসম্বন্ধি রেতঃ এই কারণেই উদ্ভূত হয়েছিল যে, অতীত কল্পে সৃষ্টির বীজভূত, প্রাণীবর্গের কৃত পুণ্য ও অপুণ্যরূপ কর্মসমূহ সৃষ্টিসময়ে বর্ধিষ্ণু হওয়ার জন্য সম্যক্ প্রকাশিত হয়ে ছিলো, অর্থাৎ পরিপক্করূপে ফলের জন্য উন্মুখ হয়ে ছিলো। হে কাম! সর্বজগৎকে সৃষ্টির উদ্দেশে পরমেশ্বরের দ্বারা উৎপাদিত তুমি মহান দেশ-কাল-বস্তুর পরিচ্ছেদরহিত পরমেশ্বরের সমানকারণ হয়ে (সযোনিঃ), অর্থাৎ পরমেশ্বর ব্যতিরিক্ত কারণান্তররহিত হয়ে এই যজমানে অর্থাৎ ধনপ্রদাতা বা হবিঃপ্রদাতা পুরুষে ধনপুষ্টি অর্থাৎ সমৃদ্ধি স্থাপন করো (রায়ঃ পোষম ধেহি) অর্থাৎ প্রদান করো। [এই স্থলে আপন ফলসিদ্ধির নিমিত্ত কামের স্তুতি করা হয়েছে]। ১।

হে কাম! তুমি পরধর্ষণ অর্থাৎ শত্ৰুনিপীড়ন সামর্থ্যে প্রতিষ্ঠিত (ত্বম্ সহসা অসি); তুমি সর্ববিষয়ে ব্যাপ্ত (বিভুঃ) এবং বিশেষভাবে দীপ্যমান (বিভাবা)। হে সখা (অর্থাৎ সখিবৎ-হিতকারী কাম)! আমাদের অভিলক্ষ্যে সখিবৎ অর্থাৎ মিত্রের ন্যায় আচরণ করো (আ সখীয়তে)। আরও, হে কাম! তুমি উগ্র্ণ (উঃ-উদ্যত), শক্তসংগ্রামে সহনশীল (পৃতনাসু সাসহিঃ) অর্থাৎ তুমি এমন উদ্যত বলশালী যে, যে কোন শত্রুর সাথে সংগ্রামে তাদের সকল পরাক্রমকে প্রতিহত করার ক্ষমতাধারী। সেই শত্রুধর্ষণসমর্থ (সহঃ) বল (ওজঃ) যজমানকে অর্থাৎ যাগকারী জনকে প্রদান করো ॥ ২॥

অত্যন্তদুর্লভ (দূরাৎ) ফলকামনাকারী (চকমানায়) এই জনের সর্বতোরক্ষণের অর্থাৎ অভিমত ফল প্রাপণের ও ক্ষয়রাহিত্য অর্থাৎ অনিষ্ট নিবারণের নিমিত্ত (প্রতিপানায় অক্ষয়ে) প্রাচী ইত্যাদি সকল দিক (আশাঃ) ফলপ্রদানের অঙ্গীকার করেছে (অশৃথন)। কেবল অঙ্গীকারই নয়, কামের দ্বারা অর্থাৎ অভিমত ফলবিষয়ের দ্বারা (কামেন) সুখ উৎপাদন করেছে (স্বঃ অজনয়ন) ৷ ৩৷

 কামের দ্বারা (কামেন) অর্থাৎ অভিমত ফলবিষয়ক ইচ্ছার দ্বারা কাম্যমান ফল (কামঃ) আমার নিকট আগমন করুক (মা আ অগন)। পুর্বে জগৎসৃষ্টির নিমিত্ত কামনাকারী নব ব্রহ্মায় (অমীষাং ইতি) যে মন অর্থাৎ অস্তিত্বভাবনা-নিমিত্তকেন্দ্ররূপ হৃদয়ে (যৎ অদো মনঃ) নিহিত ছিলো, তা তাদের হৃদয় হতে (তৎ হৃদয়াৎ) ফলাকাঙ্ক্ষী আমার (ইহ মাং)। হৃদয়প্রদেশে (হৃদয়ং পরি) আগত হোক (উপ এতু)। ৪

হে কামদেব! আমরা যে ফলের কামনায়মান হয়ে (যৎ কামনায়মানাঃ) তোমার নিমিত্ত (তে) ইদানীং যে হবিঃ-চরু-পুরোডাশ ইত্যাদি প্রদান করছি (কৃশ্মসি), তা অর্থাৎ সেই হবিসমূহের ভাগ তুমি ভক্ষণ করো (বীহি)। এই হবিঃ (ইদং) সুহুত তোক (স্বাহা) এবং কাম্যমান আমাদের (তৎ নঃ) ফলসমূহ (সর্বং) সমৃদ্ধ বা সম্পূর্ণ হোক (সম্ ঋধ্যতাম্ ॥ ৫

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— কামস্তদগ্রে ইতি সূক্তেন প্রতিগৃহ্যমাণং দ্রব্যং অভিমন্ত্র প্রতিগ্রহীতা স্বীকুর্যাৎ। সূত্রিতং হি সংহিতাবিধৌ-ইত্যাদি। (১৯কা, ৬অ. ৭সূ.)।

টীকা –উপযুক্ত সূক্তের দ্বারা গ্রহণযোগ্য দ্রব্য অভিমন্ত্রিত করে গ্রহণকারী কর্তৃক গ্রহণীয়। কৌশিক সূত্রে (৫৫।৯, ৮।৯, ১।৬) এর নানা প্রয়োগবিধি বিধৃত আছে। সৌবর্ণ ভূমি ও প্রতিকৃতি দানকর্মে এই কামসূক্তের দ্বারা আজহোম করণীয় (প. ১০।১)। (১৯কা, ৬অ. ৭সূ.)।

.

অষ্টম সূক্ত : কালঃ

 [ঋষি : ভৃগু দেবতা : কাল ছন্দ : অনুষ্টুপ, ত্রিষ্টুপ, বৃহতী]

 কালো অশ্বে বহতি সপ্তরশ্মিঃ সহস্রাক্ষো অজরো ভূরিরেতাঃ। তমা রোহন্তি কবয়ো বিপশ্চিতস্তস্য চক্রা ভুবনানি বিশ্বা॥১॥ সপ্ত চক্রান্ বহতি কাল এষ সপ্তাস্য নাভীরমৃতং ন্বক্ষঃ। স ইমা বিশ্বা ভুবনান্যঞ্জৎ কালঃ স ঈয়তে প্রথমো নু দেবঃ ॥২॥ পূর্ণ কুম্ভোহধি কাল আহিতস্তং বৈ পশ্যামো বহুধা নু সন্তঃ। স ইমা বিশ্বা ভুবনানি প্রত্যঙ কালং তমাহুঃ পরমে ব্যোম ৷ ৩৷৷ স এব সং ভুবনান্যাভরৎ স এব সং ভুবনানি পর্যৈৎ। পিতা সন্নভবৎ পুত্ৰ এষাং তস্মাৎ বৈ নান্যৎ পরমস্তি তেজঃ ॥৪॥ কালোহমূং দিবমজনয়ৎ কাল ইমাঃ পৃথিবীরুত। কালে হ ভূতং ভব্যং চেষিতং হ বি তিষ্ঠতে ॥৫॥ কালো ভূতিমসৃজত কালে তপতি সূর্যঃ। কালে হ বিশ্বা ভূতানি কালে চক্ষুবি পশ্যতি ॥ ৬৷৷ তব বিষয়ে কুশল অথান তস্য চক্রা) সকল তত ভবিষ্যৎ-বর্তমান অখ। কালে মনঃ কালে প্রাণঃ নাম সমাহিতম্। কালেন সর্বা নন্দ্যাগতেন প্রজা ইমাঃ ॥৭॥ কালে তপঃ কালে জ্যেষ্ঠং কালে ব্ৰহ্ম সমাহিতম। কালো হ সর্বস্যেশ্বরো যঃ পিতাসীৎ প্রজাপতেঃ ॥৮ তেনেষিতং তেন জাতং তদু তস্মিন্ প্রতিষ্ঠিত। কালো হ ব্ৰহ্ম ভূত্ব বিভর্তি পরমেণ্ঠিনম্ ॥৯॥ কালঃ প্রজা অসৃজত কালো অগ্রে প্রজাপতি। স্বয়ম্ভুঃ কশ্যপঃ কালাৎ তপঃ কালাদজায়ত ॥১০৷৷

বঙ্গানুবাদ –[এইস্থলে সর্বজগকারণভূত কালরূপ পরমাত্মার স্তুতি প্রসঙ্গে কালকে অশ্বরূপে কল্পনা করা হয়েছে ]-সপ্তসংখ্যক রশ্মি সমন্বিত অর্থাৎ সপ্তরঙ্গুর দ্বারা মুখ-গ্রীবা-পাদবদ্ধ, সহস্ৰলোচন, জরারহিত (অজরঃ) অর্থাৎ নিত্যযুবা, প্রভূতবীর্য (ভুরিরেতাঃ) অর্থাৎ শুক্র বা বীর্যসেচনের দ্বারা অপত্যোৎপাদনে সমর্থ কালরূপ অশ্ব (কালঃ অশ্বঃ) আপন আরোহীগণকে অভিমত প্রদেশ প্রাপ্ত করাচ্ছে, অর্থাৎ গ্রহণ পূর্বক উপনীত করাচ্ছে (বহতি)। সেই অশ্বে (তং) আরোহণ ও অবরোহণ বিষয়ে কুশল অর্থাৎ অশ্বশাস্ত্রনিপুণ ধীমন্তগণই আরোহণ করেন (বিপশ্চিতঃ কবয়ো আ রোহন্তি)। সেই অশ্বের গন্তব্য স্থান (তস্য চক্রা) সকল ভুবন (বিশ্বা ভুবনানি)। (কাল বলতে ভূত-ভবিষ্যৎ-বর্তমান অর্থাৎ ত্রিকালস্থ সকল বস্তুকে ব্যাপ্তকারী ভূত-ভবিষ্যৎ-বর্তমান অর্থাৎ ত্রিকালস্থ সকল বস্তুকে ব্যাপ্তকারী চিরন্তনীয় অস্তিত্ব। কাল হলেন সবকিছুর নিয়ন্তা ও সকল জগতের অনবচ্ছিন্নকালরূপ পরমেশ্বর। তাঁর সপ্তরশ্মি হলো ছয় ঋতু ও একটি অধিমাস। তিনি সহস্ৰসংখ্যক অর্থাৎ সংখ্যাতীত দিবারাত্রির সমন্বিত রূপ। কাল জরারহিত অর্থাৎ পরিবর্তন হলেও রূপান্তরহীন–সর্বদা একরূপ; ভূরিরেতাঃ অর্থাৎ প্রভূত জগৎ সৃষ্টির সমর্থশক্তিসম্পন্ন। এই কাল সকল প্রাণিজাতকে আপন আপন কর্মে প্রাপিত বা নিযুক্ত করছেন। সেই কালকে ক্রান্তদর্শী পণ্ডিতগণ আপন অধীন করে থাকেন। সেই কালরূপ রথের চক্রগুলি সকল প্রাণীর প্রতি ধাবিত হয়ে চলেছে।–সায়ণাচার্য উপযুক্ত ভাষ্য ছাড়াও কালকে কালরূপ চক্রযুক্ত সপ্তাশ্ববাহিত রথে আরোহিত চিরকাল সর্ব ভুবনব্যাপী ধাবিত অতন্দ্রিত সবিতারূপেও বর্ণনা করেছেন। এর স্বপক্ষে তিনি ঋগ্বেদ (৯।১১।৩), তৈ. আ (১।৭।১), তৈ.ব্রা. (৩।১২।৯।১), নিগম (৯।১৪।২), তৈ, সং (২।৪।১০।২), ঐ. আ. (২।২।৪) ইত্যাদির উল্লেখ করেছেন)। ১

 [এইভাবে পরবর্তী মন্ত্রগুলিকেও সায়ণ দার্শনিকভাবে বিশ্লেষণ করেছেন, যা সাধারণ ভাবে এই মন্ত্রগুলির বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আদৌ অপ্রয়োজনীয়। সেই হেতু আমরা অবশিষ্ট মন্ত্রগুলির সংক্ষিপ্ত ও যথাযোগ্য অজটিল অনুবাদের দিকেই লক্ষ্য রেখেছি।–দ্বিতীয় মন্ত্রটিতে সম্বৎসররূপ কালচক্র বর্ণিত হয়েছে ] কালাত্মক সম্বৎসররূপী সেই পরমাত্মা সপ্তসংখ্যক চক্র অর্থাৎ সপ্ত ঋতুকে অনুক্রমে বহন বা ধারণ করে চলেছেন। এই সম্বৎসরের নাভি সংখ্যা সাত। (চক্ৰমণ্ডল হতে মধ্যচ্ছিদ্রের বন্ধন হলো সপ্ত ঋতুসন্ধিকাল)। এর অক্ষ অর্থাৎ তনু অমৃত অর্থাৎ অবিনশ্বর তত্ত্ব, সপ্তসংখ্যক চক্রছিদ্রে গ্রথিত হয়ে আছে এক সত্য অর্থাৎ অনায়ত্ত তত্ত্ব। পূর্বোক্ত সম্বৎসররূপ (সঃ) সকলের আদিভূত (প্রথমঃ) দ্যোতমান নিত্যজ্ঞানরূপ (দেবঃ) কাল বা পরমাত্মা নাম ও রূপে প্রকাশিত (ইমা) সকল ভুবন বা ॥ চরাচরাত্মক সকল জগৎ (বিশ্বা ভুবনানি) ব্যক্ত করছেন (অঞ্জৎ), অর্থাৎ আপন কালের দ্বারা বিশ্লিষ্ট করে উৎপাদন পূর্বক বা সংহরণ পূর্বক অবস্থান করছেন। (সায়ণাচার্য অধ্যাত্মপক্ষেও এই মন্ত্রটির ব্যাখ্যা করেছেন। সেখানে তিনি কালকে সর্ব ইন্দ্রিয়ের ব্যাপারকর্তা শরীরাভিমানী দেবরূপে বর্ণনা করেছেন। তার তনু সূক্ষ্ম অর্থাৎ দুদর্শ। অমৃত হলো চৈতন্য। অক্ষ সকল ইন্দ্রিয়ের ও সেই সেই বিষয়ের অনুগত। এই ভাবে তিনি সকল প্রাণিজাতকে প্রেরিত করছেন। তত্ত্বজ্ঞগণ সেই কালকে জ্ঞাত আছেন) ২

কালে অর্থাৎ সর্বজগতের কারণভূত নিত্য অবিশ্লিষ্ট পরমাত্ম আপন আপন রূপে সর্বত্র ব্যাপ্ত (পূর্ণঃ) কুম্ভের ন্যায় (কুম্ভঃ) অর্থাৎ অহোরাত্ৰ-মাস-ঋতু সম্বৎসর ইত্যাদি রূপ অবচ্ছিন্নতার (বিশ্লিষ্টতার) জন্য কাল নিহিত রয়েছে (আহিতঃ), যেহেতু সকল কার্যে আপন কারণে অবস্থান করছে। সেই হেতু কালকে সৎপুরুষবর্গ (সন্তঃ) আমরা নানারকম অহোরাত্রভেদে (বহুধা) অনুভব করে থাকি (পশ্যামো নু)। [–অথবা সেই নিমিত্ত কালাধার পরমাত্মাকে বহুধা অর্থাৎ শ্রবণ মনন-নিদিধ্যাসন ইত্যাদি বহুভাবে আমরা সরূপ ব্রহ্মোপাসকগণ (সঃ) সাক্ষাৎ করে থাকি (পশ্যামঃ)]। সেই কাল পরিদৃশ্যমান (ইমা) সর্ব ব্যাপ্ত ভূতজাতকে (বিশ্বা ভুবনানি) অভিমুখে আনয়ন করেছে (প্রত্যঙ)। সেই কাল পরমে অর্থাৎ উৎকৃষ্ট সাংসারিক সুখ-দুঃখ ইত্যাদি দ্বন্দ্বদোষরহিত আকাশবৎ নির্লেপে (ব্যোম) বিবিধ পরমানন্দদায়ক আপন আপন রূপে বর্তমান বিদ্বানগণ এই কথা বলে থাকেন (তম্ আহুঃ) ॥ ৩৷

সেই হেন কালই (স এব) ভূতজাতসমূহকে (ভুবনানি) আহরণ বা উৎপাদন করেছে (অথবা আপনার দ্বারা উৎপাদিত সকল ভুবনকে তিনিই সম্পূর্ণভাবে পোষণ করে থাকেন)। সেই হেন কালই সমগ্র ভুবন (ভুবনানি) সম্যক্ ব্যাপ্ত করেছেন (সং পর্যৈ)। সেই হেন কালই এই ভুবনের জনক হয়ে (পিতা স) এর পুত্ররপে বিরাজমান (এষাং পুত্রোভবৎ)। (কালই পিতৃত্বের দ্বারা ও পুত্রত্বের দ্বারা আচরিত হচ্ছে। যিনি পূর্বজন্মে পিতারূপে জাত হয়েছিলেন তিনিই এই জন্মে পুত্ররূপে আচরিত হয়েছেন অর্থাৎ জাত হয়েছেন। অথবা এই একই জন্মে পিতা আপন স্ত্রীগর্ভে সন্তান উৎপাদন করে সেই সন্তানের মধ্যে আপন সত্তায় সৃষ্টিলাভ করছেন। সেই হেন সর্বোৎপাদক সর্বগত কাল ব্যতীত (তস্মাৎ বৈ) অন্য (অন্যৎ) উৎকৃষ্ট (পরম) তেজঃ আর নেই (তেজঃ ন অস্তি) ৷৷ ৪৷

কাল অর্থাৎ পরমাত্মা ঐ বিপ্রকৃষ্ট (অমূং) দ্যুলোক উৎপাদন করেছেন (দিবম্ অজনয়ৎ)। অধিকন্তু (উত) তিনিই এই পরিদৃশ্যমানা (ইমা) সর্বপ্রাণীর আধারভূতা পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। এই হেন কালই (কালে হ) অতীত (ভূতং), ভবিষ্যৎ (ভব্যং) ও বর্তমান কালাবচ্ছিন্ন (ইষিতং) জগৎ বিশেষভাবে আশ্রয় করে বিরাজমান রয়েছে (বি তিষ্ঠতে)।৫৷৷

কালরূপ পরমাত্মা এই ভবনবৎ জগৎ সৃষ্টি করেছেন (কালঃ ভূতি অসৃজত)। কালের দ্বারা প্রেরিত হয়ে আদিত্য জগৎকে তাপিত করে অর্থাৎ প্রকাশিত করে। কালেরই আশ্রয়ে (বিশ্বা) সকল ভূতজাত স্থিত হয়ে আছে। কালেরই প্রভাবে চক্ষু ইত্যাদি ইন্দ্রিয় দর্শন ইত্যাদি কর্ম করে থাকে (কালে চক্ষুঃ বি পশ্যতি);–অথবা চক্ষুষ্মন্ সর্বোন্দ্রিয়াধিষ্ঠাতা কালাত্মক পরমেশ্বর যথাযথ প্রতিটি ইন্দ্রিয়ব্যাপার সাধিত করে থাকেন ৷ ৬ ৷৷

সেই কালাত্মক পরমাত্মায় (কালে) জগৎসৃষ্টির নিমিত্তভূত মন বিদ্যমান রয়েছে। তার মধ্যেই প্রাণ অর্থাৎ সূত্ৰাত্মা সর্ব জগৎ-অন্তর্যামী বিদ্যমান।–(অথবা তাতেই সকল প্রাণীর মন ও পঞ্চবৃত্তিক প্রাণও বিদ্যমান রয়েছে)। তথা সকল বস্তুর সংজ্ঞা ও এমনকি স্ত্রী পুরুষ ইত্যাদি সংজ্ঞাও, সেই কালেই সমাহিত হয়ে আছে (কালে নাম সমাহিতম)। বসন্ত ইত্যাদি রূপে আগত কালের দ্বারা (কালেন আগতেন) সকল প্রজা আপন আপন অভীষ্ট-সিদ্ধি প্রাপ্তি পূর্বক প্রসন্ন হচ্ছে (সর্বাঃ ইমাঃ প্রজাঃ নন্দন্তি)। ৭৷

সেই কালাত্মক পরমাত্মাতেই জগসৃষ্টি-বিষয়ের পর্যালোচনা (তপঃ) নিহিত; তথা সকলের আদিভূত (জ্যেষ্ঠং) হিরণ্যগর্ভ-আখ্যাত তত্ত্ব বর্তমান; তথা সাঙ্গ বেদ (অর্থাৎ শিক্ষা, কল্প, ব্যাকরণ, নিরুক্ত, ছন্দ, ॥ জ্যোতিষ সহ বেদশাস্ত্র) ও তার প্রতিপাদক তত্ত্ব (ব্রহ্ম) সমাহিত রয়েছে। কালই সর্ব জগতের স্বামী (কালঃ সর্বস্য ঈশ্বরঃ) যা অর্থাৎ যে কাল (যঃ) প্রজাগণের স্রষ্টা চতুর্মুখ ব্রহ্মার জনক (প্রজাপতেঃ পিতা আসীৎ)। ৮।

 সেই পরমাত্মা (তেন) কালের দ্বারা সকল স্রষ্টব্য অর্থাৎ সৃষ্টির উপযুক্ত বা সৃজনীয় জগতের কামনা করেছিলেন (ইযিতম)। তার দ্বারা উৎপাদিত জগৎ (তেনৈব জাতং) সেই কালেই প্রতিস্থিত (তৎ উম্ তস্মিন্ প্রতিষ্ঠিত)। সেই হেন কালই দেশকালাবচ্ছিন্ন সৎ-চিৎ-সুখাত্মক পরমার্থ তত্ত্ব ব্রহ্মরূপে পরম স্থানে অর্থাৎ সত্যলোকে বিদ্যমান (পরমেষ্ঠিনং) চতুর্মুখ ব্রহ্মাকে পালন করেন (কালো হ ব্ৰহ্ম ভূত্বা পরমেষ্ঠিনং বিভর্তি)। ৯

কালই সৃষ্টির আদিকালে (অগ্রে) ব্রহ্মাকে (প্রজাপতি) উৎপাদিত করেছিল (অসৃজত); এবং সেই কালই প্রজা উৎপাদন করেছিল। স্বয়ং নিজেকে সৃষ্টিকারী (স্বয়ম্ভু) সকলের দ্রষ্টা অষ্টম সূর্য (কশ্যপ) ও তার সন্তাপক তেজঃ (তপঃ) কাল হতে উৎপাদিত (কালাৎ অজায়ত)। ১০।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –কালো অশ্বে বহতি ইতি সূক্তদ্বয়স্য সৌবর্ণভূমিদানে আজহোমে বিনিয়োগঃ। উক্তং হি পরিশিষ্টে।..কালপ্রতিপাদকত্বাৎ কালসূক্তং ইত্যুচ্যতে৷৷ (১৯কা, ৬অ. ৮সূ.)।

টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি ও এর পরবর্তী সূক্তটির বিনিয়োগ একই। এই দুই সূক্তই সুবর্ণ ও ভূমি দানে আজহোমে বিনিয়োগ করা হয়। পরিশিষ্টে (১০।১) কামসূক্ত, কালসূক্ত ও পুরুষসূক্তের সমভাবাপন্নতার উল্লেখ আছে। কালপ্রতিপাদকত্বের কারণে এটি কালসূক্ত নামে অভিহিত ৷ (১৯কা, ৬অ. ৮সূ.)।

.

নবম সূক্ত : কালঃ

[ঋষি : ভৃগু দেবতা : কাল ছন্দ : অনুষ্টুপ, গায়ত্রী, অষ্টি]

কালাদাপঃ সমভবন্ কালাৎ ব্রহ্ম তপো দিশঃ। কালেনোদেতি সূর্যঃ কালে নি বিশতে পুনঃ ॥১॥ কালেন বাতঃ পবতে কালেন পৃথিবী মহী। দৌর্মহী কাল আহিতা ॥ ২॥ কালো হ ভূতং ভব্যং চ পুত্রো অজনয়ৎ পুরা। কালাদৃচঃ সমভব যজুঃ কালাদজায়ত ॥ ৩॥ কালো যজ্ঞং সমৈরয়দ্দেবেভ্যো ভাগমক্ষিত। কালে গন্ধর্বাঙ্গরসঃ কালে লোকাঃ প্রতিষ্ঠিতাঃ ॥৪॥ কালেহয়মঙ্গিরা দেবোহথবা চাধি তিষ্ঠতঃ। ইমং চ লোকং পরমং চ লোকং পুণ্যাংশ্চ লোকান্ বিধৃতীশ্চ পুণ্যাঃ। সর্বাংল্লোকানভিজিত্য ব্ৰহ্মণা কালঃ স ঈয়তে পরমমা নু দেবঃ ॥ ৫৷৷

 বঙ্গানুবাদ –কালাৎ অর্থাৎ সর্বজগতের কারণ পরমাত্মার সমীপ হতে আপঃ অর্থাৎ ব্রহ্মাণ্ডের আধারভূত জল উৎপন্ন হয়েছিল (সম্ অভব)। সেই ভাবে সেই কাল হতে (কালাৎ) যজ্ঞ ইত্যাদি কর্ম (ব্রহ্ম), চান্দ্রায়ণ ইত্যাদি কৃচ্ছসাধন ব্রত (তপঃ) ও. প্রাচী ইত্যাদি দিমূহ (দিশঃ) সৃষ্টি হয়েছিল, (অর্থাৎ জগৎসৃষ্টি-কর্মে তপ্যমান কাল হতে দিসমূহের সৃষ্টি)। কালের দ্বারা প্রেরিত হয়ে সূর্য উদয় প্রাপ্ত হয় (কালেন সূর্য উদেতি) এবং পুনরায় কালেই বিলয় প্রাপ্ত হয় (পুনঃ কালে নি। বিশতে), অর্থাৎ অস্তগমন করে। ১।

কালের দ্বারা প্রেরিত পরমাত্মা বায়ু প্রবাহিত হয় (কালেন বাতঃ পবতে)। কালের দ্বারাই মহতী পৃথিবী দৃঢ়রূপে স্থাপিতা (আহিতা) এবং কালের আধারে মহতী দ্যুলোক (দৌঃ) স্থাপিতা ॥ ২॥

 কালরূপ পিতার প্রেরণায় পুত্র প্রজাপতি, ভূতকাল, ভবিষ্যকাল ও বর্তমানকাল (চ) উৎপাদিত হয়েছে। কাল হতেই (কালাৎ) পরমাত্মার স্বরূপ ঋক্ (ঋচঃ) অর্থাৎ পাদবদ্ধ মন্ত্রাবলী সম্ভবিত হয়েছে। কালের দ্বারাই যজুঃ অর্থাৎ প্ৰশ্লিষ্ট পাঠরূপ মন্ত্রগুলি সৃষ্ট হয়েছে, (অজায়ত), (ও কাল হতেই সামবেদ ইত্যাদির উৎপত্তি)। ৩৷

তথা কালই ইন্দ্র প্রমুখ দেববৃন্দের নিমিত্ত (দেবেভ্যঃ) ক্ষয়রহিত ভাগত্বের দ্বারা পরিকল্পিত যজ্ঞ (অক্ষিত ভাগ যজ্ঞ) অর্থাৎ প্রকৃতি-বিকৃত্যাত্মক সোমবাগ, উৎপাদিত করিয়েছিলেন (সম ঐরয়ৎ)। বাক্যের ধারক (গাং) অর্থাৎ গায়ক গন্ধর্ববৃন্দ ও জলে (অন্দু) বা অন্তরিক্ষে বিচরণশালিনী অপ্সরাবৃন্দ কালের আধারে বর্তমান রয়েছে। সমস্ত লোকই, অর্থাৎ জনগণ ও ভুবনগুলি, কালে প্রতিষ্ঠিত (প্রতিষ্ঠিতাঃ)। ৪।

 এই অথর্ববেদের স্রষ্টা (অথর্বা) ও দীপ্যমান (দেবঃ) পরমাত্মার অঙ্গ-সস্তৃত অঙ্গিরা ঋষি আপন জনক কালেই অধিষ্ঠিত। এই সর্বকর্মার্জন স্থান ভূমি বা ভূলোক (ইমং লোকম), ফলভোগস্থান স্বর্গলোক : (পরমং লোকং), পুণ্যকর্মার্জনের লোকসমূহ (পুণ্যান লোকান) এবং দুঃখলেশের দ্বারা অসংখৃষ্ট অর্থাৎ দুঃখলেশহীন উক্ত ও অনুক্ত লোক সমুদায় (পুণ্যা সর্বান্ লোকা), স্বকারণের দ্বারা দেশকাল-বস্তু-পরিচ্ছেদরহিত অনন্ত সত্যজ্ঞান ইত্যাদি লক্ষণ সমন্বিত পরমাত্মার দ্বারা (ব্ৰহ্মণা) সর্বদিকে ব্যাপ্ত করে (অভিজিত্য) এই সূক্ত দুটির প্রতিপাদ্য (সঃ) সর্বোত্তম (পরমঃ) কালাত্মক দেব (কালো দেবঃ) সকল স্থাবরজঙ্গমাত্মক জগৎ ব্যেপে বিদ্যমান রয়েছেন (ঈয়তে)। ৫।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— কালাদাপঃ ইতি সূক্তং কালপ্রতিপাদকত্বাৎ কালসূক্তং ইতাচ্যতে। তস্য পূর্বসূক্তেন সহ উক্তো বিনিয়োগঃ। (১৯কা, ৬অ. ৯সূ.)।

টীকা –উপযুক্ত সূক্তটিও কালপ্রতিপাদকত্বের কারণে কালসূক্ত নামে অভিহিত। এইটি এবং এর পূর্ববর্তী সূক্তটির বিনিয়োগ একই ৷ (১৯কা, ৬অ. ৯সূ.)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *