2 of 3

১৮।২ অষ্টাদশ কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক

দ্বিতীয় অনুবাক
প্রথম সূক্ত : পিতৃমেধঃ
[ঋষি : অথর্বা দেবতা : যম, জাতবেদা, পিতৃগণ ইত্যাদি ছন্দ : অনুষ্টুপ, জগতী, ত্রিষ্টুপ, গায়ত্রী]

যমায় সোমঃ পবতে যমায় ক্ৰিয়তে হবিঃ। যমং হ যজ্ঞো গচ্ছত্যগ্নিদূততা অরষ্কৃতঃ ॥১॥ যমায় মধুমত্তমং জুহোতা প্র চ তিষ্ঠত। ইদং নম ঋষিভ্যঃ পূর্বজেভ্যঃ পূর্বেভ্যঃ পথিকৃঃ ২৷৷ যমায় ঘৃতবৎ পয়ো রাজ্ঞে হবিৰ্জুহোতন। স নো জীবেম্বা যমেদ্দীৰ্ঘমায়ুঃ প্র জীবসে ৷৩৷৷ মৈনমগ্নে বি দহো মাভি শূশুচো মাস্য ত্বং চিক্ষিপো মা শরীরম। শৃতং যদা করসি জাতবেদোহথেমেনং প্র হিণুতাৎ পিরূপ ॥৪॥ যদা শৃতং কৃণবো জাতবেদোহৰথমমেনং পরি দত্তাৎ পিতৃভ্যঃ। যদো গচ্ছাত্যসুনীতিমেতামথ দেবানাং বশনীৰ্ভবতি ॥৫॥ ত্রিককেভিঃ পবতে ষডুবীরেকমি বৃহৎ। ত্রিষ্টুব গায়ত্রী ছন্দাংসি সর্বা তা যম আর্পিতা ৷৬৷ সূর্যং চক্ষুষা গচ্ছ বাতমাত্মনা দিবং চ গচ্ছ পৃথিবীং চ ধর্মভিঃ। অপো ব গচ্ছ যদি তত্র তে হিতমোষধীষু প্রতি তিষ্ঠা শরীরৈঃ ॥৭॥ অজো ভাগস্তপসস্তং তপস্ব তং তে শশাচিস্তপতু তং তে অর্চিঃ। যাস্তে শিবাস্তষ্যে জাতবেদস্তাভিবহৈনং সুকৃতামু লোক ॥ ৮ যাস্তে শোচয়ো রংহয়ে জাতবেদা যাভিরাপূণাসি দিবমন্তরিক্ষ। অজং যন্তমনু তাঃ সমৃন্বতামথেতরাভিঃ শিবতমাভিঃ শৃং কৃধি ॥৯॥ অব সৃজ পুনরগ্নে পিতৃভ্যো যস্ত আহুতশ্চরতি স্বধাবান। আয়ুবসান উপ যাতু শেষঃ সং গচ্ছতাং তন্বা সুবর্চাঃ ১০৷৷

 বঙ্গানুবাদ –সোমযাগে (অর্থাৎ জ্যোতিষ্টোম ইত্যাদি যজ্ঞে) যমদেবতার উদ্দেশে সোম অভিযুত হচ্ছে (পবতে)। ঘৃত ইত্যাদির দ্বারা উৎপাদিত হবিঃ সংস্কারের দ্বারা যমকে প্রদান করা হচ্ছে। স্তোত্র, শস্ত্র ইত্যাদির দ্বারা সুশোভিত (অরস্কৃত) হবির বাহক অগ্নি (বা অগ্নিদূত) এই হবিঃ বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন। জ্যোতিষ্টোম ইত্যাদি যজ্ঞ যমের উদ্দেশে বাহিত হচ্ছে। (যম হলেন সর্বপ্রাণিসংহর্তা বা পিতৃলোকাধিপতি। অতএব হবি তার প্রাপ্য হলে সকল দেবতারই প্রাপ্য হয়)। ১।

হে যজমানবৃন্দ! যমের উদ্দেশে মধুময়োত্তম সোম আজ্য (ঘৃত ইত্যাদি) আহুতি রূপে প্রদান করো, তার উদ্দেশে যজ্ঞ সমাপ্তি (প্রতিষ্ঠা) করো। পূর্বজাত বা পূর্বপুরুষ পথিকৃৎ (মন্ত্রদ্রষ্টা) অঙ্গিরা ইত্যাদি ঋষিবৃন্দের (যাঁরা প্রথম স্বর্গমার্গ প্রদর্শন করিয়েছেন, তাদের) উদ্দেশে নমস্কার প্রজ্ঞাপন করো। ২।

 হে যজমানবৃন্দ! ঘৃত-সম্পন্ন ক্ষীররূপ হবি (অর্থাৎ হবিরূপে সংস্কৃত করে) রাজা যমের উদ্দেশে অর্পিত করো। সেই হবি প্রাপ্ত হয়ে দেবতা যম আমরা যারা জীবিত আছি তাদের মনুষ্যগণ-মধ্যে রক্ষা করুন এবং শতসম্বৎসর-লক্ষণ আয়ু (অর্থাৎ দীর্ঘ জীবন) প্রদান করুন ৷ ৩৷

হে অগ্নি! এই প্রেতকে তুমি অতিরিক্ত ভাবে দগ্ধ করো না (বিদহহ), অতিরিক্ত শোকযুক্ত করো না; এর শরীর হতে ত্বক বিচ্ছিন্ন করো না। (অর্থাৎ ত্বগভেদ করো না)। যখন তুমি এই হবির্যোগ্য শরীরকে পঙ্কন (শৃতং) করো, হে জাতবেদা! তখন এর রক্ষার নিমিত্ত পিতৃগণকে প্রদান করো (বা তাদের নিকট প্রেরণ করো)। ৪

হে জাতবেদা (অর্থাৎ প্রাপ্তহবিলক্ষণধন অগ্নি)! যখন তুমি এই হবি-রূপ শরীরকে পঙ্কন করো, তখন একে দাহের দ্বারা সংস্কৃত এই পুরুষকে পিতৃগণের সকাশে রক্ষার নিমিত্ত প্রদান করো। যখন এ অসুনীতি অর্থাৎ প্রাণাপহত্রী দেবতাগণের নিকট গমন করবে, তখন সে চক্ষু ইত্যাদি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সূর্য ইত্যাদি দ্যোতমান দেবগণকে প্রাপ্ত হবে ॥ ৫॥

 ত্ৰিকদ্রুক (অর্থাৎ জ্যেতিষ্টোম, গোষ্টোম ও আয়ুষ্টোম) যজ্ঞ সাধনের কালে যমের নিমিত্ত সোম অভিযুত হচ্ছে (পবতে)। ছয় উর্বী (অর্থাৎ আকাশ, পৃথিবী, দিবা, রাত্র, জল ও ঔষধি) একমেব মহান্ত (বৃহৎ) যমের উদ্দেশে প্রবৃত্ত হচ্ছে। (অথবা বৃহৎ বা বৃহাতী সহ) ত্রিষ্টুপ, গায়ত্রী ইত্যাদি ছন্দে উপলক্ষিত সকল মন্ত্র যমের বিষয়ীভূত হচ্ছে বা যমের উদ্দেশে অর্পিত হচ্ছে ৷ ৬ ৷৷

হে মৃতক (অর্থাৎ মৃত পুরুষ)! তুমি নেত্রের দ্বারা সূর্যকে প্রাপ্ত হও (অর্থাৎ দর্শন করো); মুখ্য প্রাণের সহায়তায় (আত্মনা) সূত্ৰাত্মা বায়ুর নিকট গমন করো। এইরূপে শরীরের ধারকধর্মা অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের। দ্বারা আকাশ (দিবং), পৃথিবী ও অন্তরিক্ষ লোককে (বা অপপাকে) প্রাপ্ত হও। (অর্থাৎ সেই অন্তরিক্ষস্থায়ী জল তোমার হিতকরী হবে)। তুমি সুলশরীরের দ্বারা সেই স্থানে ইচ্ছামতো উপভোগ্য ব্রীহি যব ইত্যাদি ঔষধিসমূহে প্রতিষ্ঠিত বা প্রবিষ্ট হও। ৭।

 হে অগ্নি! এই হন্যমান অজ তোমার ভাগ। তুমি তোমার তেজের দ্বারা একে সন্তপ্ত করো। একে তোমারই দীপ্তির জ্বালা সন্তপ্ত করুক। (এই অজের তাপ ইত্যাদি বিষয়ত্বে প্রেতের অভিমত লোকপ্রাপ্তি আশা করা হচ্ছে)। হে জাতবেদা! তোমার যে প্রাপ্তপশুলক্ষণধন সুখকর (শিবাঃ) তনু আছে, সেই (বিরাট স্বরাষ্ট্র ইত্যাদি) শরীরের দ্বারা এই প্রেতকে সুকৃত বা পুণ্যকৃত লোক (অর্থাৎ পুণ্যাত্মাগণের অধ্যুষিত লোক) প্রাপ্ত করিয়ে দাও ৮.

 হে জাবেদা অগ্নি! তোমার শোকপ্রদ (শোচয়ে) ও বেগবতী (রংহয়ে) গতি বা জ্বালারূপ তনুর দ্বারা আকাশ (দিব) ও অন্তরিক্ষ পূর্ণ করে আছে (পৃণাসি); তার দ্বারা তুমি এই গমনশীল (সমৃগ্ধতাং) অজকে ব্যাপ্ত করো (বা প্রাপ্ত হও)। এবং অন্য বা অত্যন্ত সুখকরী (শিবতম) তনু বা জ্বালার দ্বারা তুমি এই প্রেতকে হবির সমান করেই পক্ক করো। ৯.

হে অগ্নি! তোমার হবিরূপে কল্পিত এই প্রেতকে পিতৃলোকস্থানে ত্যাগ করো। তোমার হবি বা আহুতি রূপে এই যে প্রেতকে প্রদান করা হয়েছে এবং আমাদের দ্বারা প্রদত্ত স্বধা সম্পন্ন যে হবি বিচরণ (অর্থাৎ গমন) করছে; এবং সেই প্রেতের অপত্য অর্থাৎ পুত্ৰ আয়ুসম্পন্ন হয়ে গৃহে প্রত্যাবর্তন করুক। এই প্রেত শোভন তেজে (সুবৰ্চাঃ) যুক্ত হয়ে পিতৃলোকের অবস্থানোচিত শরীরে আপন শরীর সহ গমন করুক, (বা বিমিশ্রিত হয়ে যাক)। (মন্ত্রের এই পাদে এমনও অর্থ করা যায় যে, এই প্রেতের পুত্র ইত্যাদি অপত্যগণ শোভন, তেজস্বী হোক বা পিতৃবিয়োগ জনিত দুঃখ বিস্মৃত হয়ে তারা শোভনদেহী হোক)। ১০।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –দ্বিতীয়েনুবাকে ষট্‌ সূক্তানি। তত্র যমায় সোমঃ ইতি প্রথম সূক্তং। অত্র আদিতস্তিসৃণাং পূর্ববর্চা সহ প্রেততত্থাপনকর্মণি উক্তো বিনিয়োগঃ….ইত্যাদি৷৷ (১৮কা, ২অ. ১সূ.)৷

টীকা –স্বর্গীয় দর্গাদাস পূর্ববর্তী বহু অনুবাককে বিভিন্ন সূক্তে বিভক্ত করে ভাষ্যালোচনা করেছেন। এই ভাবে এই অনুবাকটি ছটি সূক্তে বিভক্ত করা হলেও মূলে ছটি সূক্তই একটি অনুবাকের একটি মাত্র সূক্তরূপে পাওয়া যায়। যাই হোক ছয়টির মধ্যে এই প্রথম সূক্তটি প্রেতোত্থাপন কর্মে বিনিযুক্ত। পিতৃমেধে এই সূক্তের চতুর্থ মন্ত্রে (মৈনমগ্নে ইত্যাদি) কনিষ্ঠ পুত্র কর্তৃক প্রেতশরীরে অগ্নি প্রদানের বিধান রয়েছে। আবার, মৈনমগ্নে (৪র্থ মন্ত্র), সহস্ৰণীথাঃ (২সূ. ৮মন্ত্র), অব সৃজ (১০ম মন্ত্র) ইত্যাদি মন্ত্রগুলি দ্বারা গোত্রভুক্ত আত্মীয় সকলের পক্ষে প্রেতশরীরে অগ্নি প্রদান বিহিত। অজো ভাগঃ (৮ম) মন্ত্রে চিতার দক্ষিণপার্শ্বে অজপশু বধের বিধি রয়েছে।–ইত্যাদি ॥ (১৮কা, ২অ. ১সূ.)।

.

দ্বিতীয় সূক্ত : পিতৃমেধঃ

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : যম, জাতবেদা, পিতৃগণ ইত্যাদি ছন্দ : অনুষ্টু, জগতী, ত্রিষ্টুপ, গায়ত্রী]

অতি দ্রব শ্বানৌ সারমেয়ৌ চতুরক্ষৌ শবলৌ সাধুনা পথা। অধা পিতৃসুবিদত্ৰাঁ অপীহি বমেন যে সধমাদং মদন্তি ॥১॥ যৌ তে শ্বানৌ যম রক্ষিতারৌ চতুরক্ষৌ পথিষদী নৃচক্ষা। তাভ্যাং রাজ পরি ধেহ্যেনং স্বস্ত্যম্মা অনমীবং চ ধেহি৷৷ ২৷ উরূণসাবসুতৃপাবুদুম্বলৌ যমস্য দূতৌ চরতো জনা অনু। তাবস্মভ্যং দৃশয়ে সূর্যায় পুনদাতামসুমদ্যেহ ভদ্রম্ ॥৩॥ সোম একেভ্যঃ পবতে ধৃতমেক উপিসতে। যেভ্যো মধু প্ৰধাবতি তাংশ্চিদেবাপি গচ্ছতাৎ ॥৪॥ যে চিৎ পূর্ব ঋতসাতা ঋতজাতা ঋতাবৃধঃ। ঋষী তপস্বতো যম তপোজাঁ অপি গচ্ছতাৎ॥৫॥ তপসা যে অনাধৃষ্যাস্তপসা যে স্বর্য। তপো যে চক্রিরে মহস্তাংশ্চিদেবাপি গচ্ছতাৎ॥ ৬যে যুধ্যন্তে প্ৰধনেষু শূরাসো যে তন্ত্যজঃ। যে বা সহস্রদক্ষিণাস্তাংশ্চিদেবাপি গচ্ছতাৎ৭৷৷ সহস্ৰণীথাঃ কবয়য়া যে গোপায়ন্তি সূর্যম। ঋষী তপস্বতো যম তপোজাঁ অপি গচ্ছতাৎ ॥ ৮ স্যোনাস্মৈ ভব পৃথিব্যনৃক্ষরা নিবেশনী। যচ্ছাস্মৈ শৰ্ম্ম সপ্রথাঃ ॥৯॥ অসম্বাধে পৃথিব্যা উরৌ লোকে নি ধীয়স্ব। স্বধা যাশ্চকৃষে জীবন্ তাস্তে সন্তু মধুশ্রুতঃ ॥১০

বঙ্গানুবাদ –হে প্রেত! তুমি পিতৃলোকে গমনশালী হয়েছে। (সরমা নাম্নী দেবশুনী অর্থাৎ দেব-কুকুরীর) চারিচক্ষুবিশিষ্ট প্রতিটি শবলবর্ণশালী দুই সারমেয়কে (অথবা শ্যাম ও শবল নামক কুকুরদ্বয়কে) সমীচিন বা ঋজু পথে (সাধুনা পথা) অতিক্রম পূর্বক শোভন হবিরূপ অন্নবান্ অথবা জ্ঞানবান্ (সুবিদান) সেই হব্যসম্পন্ন পিতৃগণের নিকট গমন করো, যে পূর্বজ পিতৃগণ পিতৃরাজ যমের দ্বারা তৃপ্তির সাথে বা হর্ষের সাথে (সধমাদং সহ) বিরাজমান আছেন। ১।

 হে পিতৃগণের প্রভু যম! যমপুরীর রক্ষক রূপে নিযুক্ত চারি-চক্ষুশালী যে দুটি কুকুর পিতৃলোকের গমন পথে অবস্থান করছে, তারা (যমালয়ে) গমনোদ্যত মনুষ্যের দ্রষ্টা (পথিষদী নৃচক্ষসা)। এই প্রেতকে (অর্থাৎ তোমার লোকে গমনশীল এই প্রেতপুরুষকে) রক্ষার নিমিত্ত সেই কুকুরদ্বয়ের নিকট সমর্পণ করো। তোমার লোকে অবস্থানের উদ্দেশ্যে আগমনশীল এই প্রেতপুরুষকে অবিনাশশীল অর্থাৎ রোগ বাধাহীন (স্বস্তীত্যবিনাশিনাম) স্থান বিধান করো (ধেহি) ॥ ২॥

 বিস্তীর্ণ বা দীর্ঘ নাসিকাসম্পন্ন (উরুণসৌ), প্রাণীবর্গের প্রাণাপহারক (অসুতৃপৌ), বিস্তীর্ণবলশালী (উদুম্বলৌ), যমের দূতদ্বয় জনগণের প্রাণবিনাশের নিমিত্ত সর্বত্র সঞ্চরণ করছে; সেই দুই দূত সূর্যদর্শনের নিমিত্ত অদ্য আমাদের শরীরে পুনরায় পঞ্চবৃত্তিক (অর্থাৎ পঞ্চেন্দ্রিয়যুক্ত) প্রাণ (অসুং) প্রদান করুক ॥ ৩॥

কোন কোন (একেভ্যঃ) পিতৃপুরুষের (যাঁদের বংশধরগণ ব্রহ্মযজ্ঞকালে সাম গান করে, তাদের) উপভোগের নিমিত্ত সোম নদীরূপে প্রবাহিত হয়ে থাকে; কোন কোন (একে) পিতৃপুরুষ (যাঁদের কুলজাত সন্তানগণ ব্ৰহ্মযজ্ঞকালে যজুর্মন্ত্র পাঠ করে, তারা) ঘৃত বা আজ্য উপভোগ করে থাকেন, (অর্থাৎ তাদের উপভোগের নিমিত্ত আজ্য প্রবাহিত হয়ে আসে); কোন কোন পিতৃপুরুষের নিকট মধুময়। নদী (মধু বা মধুকুল্যা) প্রবাহরূপে শীঘ্র গমন করে থাকে (যাঁদের সন্তানগণ ব্ৰহ্মযজ্ঞার্থে অথর্ব- বেদোক্ত মন্ত্ৰসমূহ অধ্যয়ন করে)। অতএব, হে ম্রিয়মাণ যজমান বা মৃতাবস্থা-প্রাপ্ত প্রেত! তুমিও সেই পূর্বোক্ত পিতৃপুরুষবৃন্দের সকাশে গমন করো। ৪

যে পূর্বপুরুষগণ ঋতসাতা (অর্থাৎ সত্য বা যজ্ঞ সাধিত করেছেন বা যজ্ঞফল সম্ভোগ করেছেন); যে পিতৃপুরুষগণ ঋতজা (অর্থাৎ সত্যের দ্বারা উৎপন্ন বা যজ্ঞজাত); যে পূর্বপুরুষগণ ঋতব্ধ (অর্থাৎ সত্য বা যজ্ঞের বর্ধন-সাধক), যে পুর্বপুরুষগণ তপস্যাযুক্ত এবং তপস্যা হতে উৎপন্ন, সেই অতীন্দ্রিয়ার্থদর্শী ঋষিবৃন্দের নিকট, হে যমবৎ নিয়ত বা পিতৃরাজ যমের দ্বারা নীয়মান প্রেত! গমন করো ॥৫॥

 যে (পূর্বজ) জনগণ চান্দ্রায়ন (তপসা) ইত্যাদি কৃচ্ছ্বসাধনে যুক্ত হয়ে পাপের দ্বারা ধর্ষিত হননি (অর্থাৎ অনাধৃষ্য থেকেছেন), যাঁরা যাগ (তপসা) ইত্যাদি সাধনের দ্বারা স্বর্গপ্রাপ্ত হয়েছেন (স্বর্যযুঃ), যাঁরা রাজসূয়-অশ্বমেধ ইত্যাদি মহৎ যজ্ঞ বা হিরণ্যগর্ভ ইত্যাদির উপাসনা করেছেন–হে প্রেত! তুমি তাদের অধ্যুষিত লোকে গমন করো ॥ ৬।

 যে (পূর্বজ) বীরবৃন্দ (শূরাসো) যুদ্ধে শত্রুগণকে সম্যক প্রহার করতে করতে দেহত্যাগ করেছেন–হে প্রেত! তাঁরা যে উত্তম লোকে (যেযু) নির্বাসিত হয়েছেন তুমি সেইলোকে গমন করো (বা সেই লোক প্রাপ্ত হও)। ৭

 সহস্র বা অনন্ত দৃষ্টিসম্পন্ন (সহস্ৰণীথাঃ) যে ক্রান্তদর্শীগণ (কবয়ে) আদিত্যকে রক্ষা করেছেন (গোপয়ন্তি সূর্য); যাঁরা তপস্যায় নিয়োজিত থেকেছেন। (তপস্বতঃ), যাঁরা তপস্যা হতে জাত হয়েছেন (তপোজা),-হে নিয়ত বা শকটে বদ্ধ বা যমের দ্বারা নীয়মান প্রেত! তুমি সেই ঋষিগণের সকাশে গমন করো ॥ ৮

হে বেদি-রূপিণী পৃথিবী! তুমি অনাধিকা (অনৃক্ষরা) শয়নাহা (নিবেশনী) হয়ে এই মুমূর্য জনের পক্ষে (অর্থাৎ মরণোন্মুখ বা অস্থিরূপ প্রেতের পক্ষে) সুখকরী হও (স্যোনা) এবং বিস্তীর্ণতার সাথে (সপ্রথাঃ) একে সুখ দান করো (শর্ম যচ্ছ)। ৯।

 হে মুমূর্ষ বা প্রেত! তুমি অসম্বাধে অর্থাৎ বাধারহিত বিস্তীর্ণ লোকে (উরৌ পৃথিব্যা) স্থাপিত হও (ধীয়স্ব)। তুমি পূর্বে জীবৎকালে পিতৃপুরুষগণের উদ্দেশে যে অন্ন (স্বধা) দান করেছিলে এবং দেবতাগণের উদ্দেশে যে হবিঃ সমর্পণ করেছিলে, সেই স্বধা তোমার পক্ষে মধুপ্রবাহ ক্ষরণ করুক (মধুঞতঃ)। (অর্থাৎ মধুররসঘৃতসোম ইত্যাদি প্রবাহরূপে তুমি প্রাপ্ত হও ১০

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –পিতৃমেধে অতি দ্রব ইতি অষ্টানাং ঋচাং দহ্যমানতেশরীরোপস্থানে বিনিয়োগ উক্তঃ। তথা এতাভিরষ্টভিদহনদেশং নীয়মানং প্রেতশরীরং অনুমন্ত্রয়েত।–ইত্যাদি৷৷ (১৮কা. ২অ, ২সূ.)।

টীকা –পিতৃমেধে এই সূক্তটির প্রথম আটটি ঋক্ দহ্যমান প্রেতশরীরের উপাসনায় বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। এই মন্ত্রাক্টকের দ্বারা দহনস্থানে নীয়মান প্রেতশরীর অনুমন্ত্রিত হয়। এই মন্ত্রগুলি সঞ্চয়ন কর্ম, অগ্নিহোত্রশালায় দর্ভ আস্তীর্ণ করণ, অগ্নির উত্তর পার্শ্বে প্রেতের শরীর বা শবকে শকট হতে অবতরণ করণ ইত্যাদি কর্মে বিহিত আছে। এই কর্ম দহনস্থানে কর্তব্য। ইত্যাদি ॥ (১৮কা, ২অ. ২সূ.)।

.

তৃতীয় সূক্ত : পিতৃমেধঃ

 [ঋষি : অথর্বা দেবতা : যম, জাতবেদা, পিতৃগণ ইত্যাদি ছন্দ : অনুষ্টুপ, জগতী, ত্রিষ্টুপ, গায়ত্রী]

হুয়ামি তে মনসা মন ইহেমান গৃহাঁ উপ জুজুষাণ এহি। সং গচ্ছস্ব পিতৃভিঃ সং যমেন স্যোনাস্তা বাতা উপ বাস্তু শর্গঃ ॥১॥ উৎ ত্বা বহন্তু মরুত উদবাহা উদতঃ। অজেন কৃথন্তঃ শীতং বর্ষেণণাক্ষন্তু বালিতি৷ ২৷৷ উদহুমায়ুরায়ুষে ক্ৰত্বে দক্ষায় জীবসে। স্বান্ গচ্ছাতু তে মনো অধা পিরূপ দ্রব ॥৩॥ মা তে মনো মাসোমাঙ্গানাং মা রসস্য তে। মা তে হাস্ত তন্বঃ কিং চনেহ ॥৪৷৷ মা ত্বা বৃক্ষঃ সং বাধিষ্ট মা দেবী পৃথিবী মহী। লোকং পিতৃযু বিত্তৈধস্ব যমরাজসু ॥ ৫৷৷ যৎ তে অঙ্গমতিহিতং পরাচৈরপানঃ প্রাণো য উ বা তে পরেতঃ। তৎ তে সঙ্গত্য পিতরঃ সনীড়া ঘাসাদ ঘাসং পুনরা বেশয়ন্তু ॥ ৬৷৷ অপেমং জীবা অরুধ গৃহেভ্যস্তং নিহত পরি গ্রামাদিতঃ। মৃত্যুৰ্যৰ্মস্যাসী দূতঃ প্রচেতা অসূন পিতৃভ্যো গময়াং চকার ॥৭॥ যে দস্যবঃ পিতৃযুপ্রবিষ্টা জ্ঞাতিমুখা অহুতাশ্চরন্তি। পরাপুরো নিপুনরা যে ভরন্ত্যগ্নিষ্টানস্মাৎ প্র ধমাতি যজ্ঞাৎ ৮সং বিশহি পিতরঃ স্বা নঃ স্যোনং কৃথন্তঃ প্রতিরন্ত আয়ুঃ। তেভ্যঃ শকেম হবিষা নক্ষমাণা জ্যোগ জীবন্তঃ শরদঃ পুরূচীঃ ॥৯॥ যাং তে ধেনুং নিপৃণামি যমু তে ক্ষীর ওদন। তেনা জনস্যাসো ভর্তা যোহত্ৰাসদজীবনঃ ১০

 বঙ্গানুবাদ –হে প্রেতপুরুষ! তোমার সম্বন্ধি অন্তঃকরণকে (মনঃ) আমাদের মনের দ্বারা (মনসা) এই লোকে আহ্বান করছি (হুয়ামি)। আমাদের গৃহে তোমার নিমিত্ত যে ঔধ্বদেহিক কর্ম (উদ্দিশ্য) করা হচ্ছে। তাতে সেবমান বা প্রতিমান হয়ে (জুজুষাণ) আগত হও এবং সংস্কারোত্তরকালে (অর্থাৎ ঔৗঁদেহিক ক্রিয়ার পর) পিতৃ-পিতামহ-প্রপিতামহ (পিতৃভিঃ)-গণের সাথে সপিণ্ডীকরণের দ্বারা সঙ্গত হও, এবং পিতৃলোকাধীশ্বর যমের সাথেও মিলিত হও। পিতৃলোকে গমনকালে তোমার যে পথশ্রম (অধ্বজন্যশ্রম) হয়েছে, তা দূর করার নিমিত্ত নিরন্তর শীতল-সৌরভযুক্ত বা গতিগন্ধমূয় বায়ু (শগ্ম) তোমার সন্নিকটে উপগত হোক (বান্তু) ॥১॥

হে প্রেত! মরুৎ নামক দেবগণ তোমাকে ঊর্ধ্বাকাশে ধারণ করুন (উদ্বহত্ত)। জলধারণকারী, ভূমিকে জলের প্লাবনে আদ্রকারী, শৈত্যগুণবিশিষ্ট মেঘরাশি তোমার সমীপবদ্ধ অজের সাথে অনুকরণ শব্দে (বা) সিঞ্চিত করুক (উক্ষন্তু)। ২।

 হে প্রেত! তোমার আয়ুকে উচ্চৈঃস্বরে আহ্বান করছি। (কি জন্য?-না) জীবনের জন্য (আয়ুষে), যজ্ঞ ইত্যাদি কর্মে বলের জন্য (দক্ষায়), বা প্রাণাপান বায়ুর জন্য (ক্ৰত্বে)। তোমার মন স্বকীয় তনু সংস্কারের নিমিত্ত অভিনব শরীরে গমন করুক (নবরূপ লাভ করুক) এবং সেই শরীর প্রাপ্তির পর বসু ইত্যাদিকে উপলক্ষ্য (উপ দ্রব) পূর্বক গমন করুক৷ ৩৷৷

হে প্রেত পুরুষ! তোমার মানসেন্দ্রিয় (মনঃ) যেন তোমাকে পরিত্যাগ না করে (মা হাস্ত)। (অর্থাৎ তোমাতেই যেন বিরাজিত থাকে)। তথা তোমার প্রাণ কোনও রূপে যেন তোমাকে না ত্যাগ করে;, তোমার হস্তপদ ইত্যাদি অবয়ব (অঙ্গানাং) তোমাকে যেন পরিত্যাগ না করে; তোমার রুধির ইত্যাদি (রসস্য)-ও কিছুই কোনভাবে যেন তোমাকে না ত্যাগ করে। এই লোকে তোমার কোন উপাঙ্গও যেন তোমাকে ত্যাগ না করে। (অর্থাৎ লোকান্তরে মন প্রাণ ইত্যাদি সর্বাঙ্গ-সহিত শরীর-যুক্ত হও এটাই বক্তব্য)। ৪

হে প্রেত! তোমার আশ্রয়ভূত বৃক্ষ (অর্থাৎ তুমি যে বৃক্ষের নিম্নে আশ্রয় গ্রহণ করে থাকো) যেন তোমাকে হিংসা বা ব্যথিত না করে (মা সং বাধিষ্ট)। তথা দ্যোতমানা বা দানাদিগুণযুক্তা (দেবী) মহতী (মহী) পৃথিবী (তোমার আশ্রয়ভূতা ভূমি যেন তোমাকে পীড়িত না। করে। এবং সেই পিতৃগণের ঈশ্বর বা রাজা যমের লোক (অর্থাৎ পিতৃদেবগণের অধ্যুষিত লোক) লাভ করে (বিত্ত্বা) বর্ধিত হতে থাকো (এধস্ব) ॥ ৫॥

হে প্রেত! তোমার যে শরীর (অঙ্গং) পরাহূখ হয়ে (পরাচৈ) অতীত (অতিহিত্য) হয়ে গিয়েছিল, সেই শরীরে বর্তমান ছিল যে অপানবায়ু (অপাঃ ), প্রাণবায়ু (প্রাণঃ) এবং চক্ষু-শ্রোত্র ইত্যাদিরূপ অন্য সপ্তপ্রাণ,–যেগুলি তোমার শরীর হতে নির্গত হয়ে গিয়েছে (পরেতঃ), সেগুলি পিতৃদেবতাগণের সাথে সঙ্গত হয়ে ভোগায়তন শরীর হতে (ঘাসাৎ) অন্য ভোজনাধিকরণ শরীর (ঘাসং) পুনরায় প্রাপ্ত হোক (বেশয়ন্তু)। ৬।

জীবন্ত অর্থাৎ প্রাণধারী বান্ধবগণ এই প্রেতশরীরকে (ইমং) গৃহ হতে অপসৃত করুন (অপারুধ)। হে বান্ধবগণ! তোমরা এই মৃতদেহটিকে গ্রাম হতে পরিহার করে নিয়ে যাও (অর্থাৎ গ্রাম হতে নির্গমিত করে নিয়ে যাও)। মারক পুরুষ (মৃত্যু) অর্থাল যমরাজের দূত এই প্রকৃষ্টজ্ঞান বা ম্রিয়মান (প্রচেতাঃ) পুরুষের প্রাণ (অসূন) পিতৃপুরুষগণের মধ্যে অনুপ্রবিষ্ট করানোর উদ্দেশে পরিগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছেন। ৭।

যে উপক্ষয়কারী অর্থাৎ হানিকারক রাক্ষসগণ (দস্যব) জ্ঞাতিবর্গের মুখ (বা মূর্তি) ধরে পিতৃ-পিতামহ-প্রপিতামহের মধ্যে প্রবিষ্ট হয়ে অহুত অর্থাৎ লৌকিক অন্ন ভক্ষণ করে বা অহুতাবস্থায় (অর্থাৎ অনাহূত হয়ে) মায়া-প্রভাবে পিতৃপুরুষগণের মধ্যে বিচরণ পূর্বক হবির্ভক্ষণ করে, এবং নিয়মানুসারে পিণ্ডদান ইত্যাদি কর্মকারী পুত্র ও পৌত্র ইত্যাদিকে বিনষ্ট বা হরণ করে (ভরন্তি)–সেই মায়াবী রাক্ষসগণকে (তা) অগ্নিদেব পিতৃগণের উদ্দেশে ক্রিয়মাণ এই যজ্ঞ হতে (অস্মাৎ) প্রকর্ষের সাথে নির্গমিত বা অপসারিত করে দিন (প্রধমতু)। ৮৷

এই যজ্ঞে আমাদের গোত্ৰজ পিতৃ-পিতামহ-প্রপিতামহোদয়গণ (স্বাঃ) উপবেশন করুন এবং উপবেশনান্তে আমাদের সুখ (স্যোনং) দান করুন এবং আয়ু বা জীবন বর্ধিত (প্রতিরন্ত) করুন। ধর্ধনপ্রাপ্ত (নক্ষমাণা) আমরা সেই পিতৃপুরুষগণকে চরুপুরোডাশ ইত্যাদির দ্বারা (হবিষা) পরিচর‍্যা করতে সক্ষম হবো (শকেম) এবং চিরকাল (জ্যোক) তাদের প্রসাদপুষ্ট হয়ে বহু সম্বৎসরকাল জীবন্ত থাকবো॥ ৯।

হে প্রেত! তোমাকে যে দুগ্ধবতী গাভী (ধেনু) প্রদান করছি (অর্থাৎ পিতৃশ্রাদ্ধে যে ধেনু দান করা হচ্ছে), এবং দুগ্ধে পক্ক যে ওদন (অন্নপিণ্ড) প্রদান করছি, তার দ্বারা (অর্থাৎ ধেনুসহিত সেই ওদনের দ্বারা) তুমি সেই জনের ধারক বা পোষক (ভর্তা) হও, যে জন এই লোকে জীবনরহিত (অজীবনঃ) হবে (অসৎ)। ১০৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –য়ামি ইতি আদ্যায়া স্যোনাস্মৈ ভব ইত্যনয়া সহ উক্তো বিনিয়োগঃ ইত্যাদি৷৷ (১৮কা, ২অ, ৩সূ.)।

টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি পূর্ব সূক্তের ৯ম মন্ত্রের সাথে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। এ ছাড়া এই সূক্তের বিভিন্ন মন্ত্রের দ্বারা চিতার দক্ষিণ পার্শ্বে অজ পশু বধ, আহিতাগ্নি সংস্কারার্থে আজ্য-যাগ পিণ্ডপিতৃযজ্ঞে বৰ্হি-আস্তরণ ইত্যাদি বহুবিধ ক্রিয়া সম্পাদিত হয়। (কৌ. ১১।৮) ইত্যাদি ॥ (১৮কা, ২অ. ৩সূ.)।

.

চতুর্থ সূক্ত : পিতৃমেধঃ

 [ঋষি : অথর্বা দেবতা : যম, জাতবেদা, পিতৃগণ ইত্যাদি ছন্দ : অনুষ্টুপ, জগতী, ত্রিষ্টুপ, গায়ত্রী]

অশ্বাবতীং প্র তর যা সুশেবাক্ষাকং বা প্রতরং নবীয়ঃ। যা জঘান বধ্যঃ সো অস্তু মা সো অন্য বিদৎ ভাগধেয়ম্ ॥১॥ যমঃ পরোহবরো বিবস্বান্ ততঃ পরং নাতি পশ্যামি কিং চন। যমে অধ্বররা অধি মে নিবিষ্টো ভুবো বিবস্বানন্বততান৷ ২ অপাগৃহন্নমৃতাং মর্তেভ্যঃ কৃত্বা সবর্ণামদধুর্বিবস্বতে। উখিনাবভর যৎ তদাসীদজহাদু বা মিথুনা সরণঃ ॥৩৷৷ যে নিখাতা যে পরোপ্তা যে দগ্ধা যে চোদ্ধিতাঃ। সর্বাংস্তানগ্ন আ বহ পিতৃন্ হবিষে অত্তবে ॥৪॥ যে অগ্নিদগ্ধা যে অনগ্নিদগ্ধা মধ্যে দিবঃ স্বধয়া মাদয়ন্তে। ত্বং তান বেথ যদি তে জাতবেদঃ স্বধয়া যজ্ঞং স্বধিতিং জুষন্তাম্ ॥ ৫৷৷ শং তপ মাতি তপো অগ্নে মা তন্বং তপ। বনেষু শুষ্মে অস্ত্র তে পৃথিব্যামস্তু যদ্ধরঃ ॥ ৬। দদাম্যম্মা অবসানমেত ষ এষ আগন্ মম চেদভূদিহ। যমশ্চিকিত্বান প্রত্যেতদাহ মমৈষ রায় উপ তিষ্ঠতামিহ ॥৭॥ ইমাং মাত্রাং মিমীমহে যথাপরং ন মাসাতৈ। শতে শরৎসু নো পুরা ॥ ৮প্রেমাং মাত্ৰাং মিমীমহে যথাপরং ন মাসাতৈ৷ শতে শরৎসু নো পুরা ॥৯৷৷ অপেমাং মাত্ৰাং মিমীমহে যথাপরং ন মাসাতৈ। শতে শরৎসু নো পুরা ॥১০৷৷

বঙ্গানুবাদ –হে প্রেত! তুমি অশ্বের আকরভূতা (অশ্বাবতী) নদী প্রকর্ষের সাথে উত্তরণ করিয়ে দাও (প্র তরয়), এবং এই নদী আমাদের সুসুখা অর্থাৎ অতি সুখকরিণী (সুশেবা) হোক। তথা ভল্লুকৈরূপেত দুষ্টমৃগনিষেবিত (ঋক্ষাকং) অদৃষ্টপূর্ব (নবীয়ঃ) অবণ্য ও আমি উত্তরণ করবো। হে প্রেত! তোমাকে যে পুরুষ বধ করেছে (জঘান) সে বধাহ (বধ্যঃ) হোক। সেই ঘাতক পুরুষ যেন পূর্বের উপভোগ্য বস্তু (অন্য ভাগধেয়ম) লাভ করতে না পারে (মা বিদত)। (অর্থাৎ নির্ধন হয়ে যাক)। ১৷

 বিবস্বানের পুত্র যমের তেজ অধিক (পরঃ) হয়েছে। যমের পিতা আদিত্য তেজে নিকৃষ্ট হয়েছেন (অবরঃ); (অর্থাৎ যম তেজের দ্বারা তাঁর পিতা অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছেন–এটাই বক্তব্য)। সেইজন্য (তত) যম অপেক্ষা উৎকৃষ্ট কোনও প্রাণিজাতকে আমি জানি না (নাতি পশ্যামি)। সেই সর্বোৎকৃষ্ট যমে আমার (মে) যজ্ঞ (অধ্বরো) অধিক অবস্থিত (অধি নিবিষ্টঃ) ( থাকুক। (অর্থাৎ এই যজ্ঞ তাঁর প্রীতিকররূপে নিম্পাদিত হোক)। যজ্ঞের সিদ্ধির নিমিত্ত বিবস্বান (অর্থাৎ যমের পিতা সূর্য) ভূপ্রদেশে (ভুবঃ) আপন কিরণ বিস্তারিত করছেন (অন্বতনান)। ২।

মরণধর্মশীল মনুষ্যের (মর্তেভ্যঃ) নিকট হতে মরণধর্মরহিত (অমৃতা) দেবগণ তাদের অমৃতত্বপ্রাপক রূপ তিরোহিত করে রেখেছেন বা প্রাচ্ছাদিত করে রেখেছেন (অপাগৃহন)। সমানরূসম্পন্না (সবর্ণাং) অন্য স্ত্রীকে সৃষ্টিপূর্বক তাকে বিবস্বানের নিকট প্রদান করে সরণ অশ্বিনীরূপ স্বীকার করেছিলেন; তাতে (তৎ) অশ্বিনীকুমার যুগল উৎপাদিত হন (অভরৎ)। (বা সূর্যও স্বয়ং অশ্বরূপী হয়ে অশ্বিনীরূপিনী সরণুর সাথে সঙ্গত হয়ে তার গর্ভে আপন রেতঃ নিষিক্ত করে অশ্বিদ্বয়ের জন্ম দান করেছিলেন)। এবং ত্বষ্টুদুহিতা সরণু (সূর্যতাপ সহ্য করতে না পেরে, সূর্যগৃহ হতে নির্গমন কালে যম ও যমী নামে আপন) দুই মিথুন-সন্তানকে ত্যাগ করে এসেছিলেন। [পূর্বে এই কাণ্ডের ১ম অনুবাকের ৬ষ্ঠ সূক্তের ৩য় মন্ত্রে এই সম্পর্কিত ইতিহাস অভিহিত আছে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে-সূর্যগৃহ হতে পলায়নকালে সরণু বা সংজ্ঞা মনু ব্যতীত যম-যমী; নামে যমজ (মিথুন) সন্তানকে রেখে এসেছিলেন। নির্গমন কালে সরণু তার সবর্ণা অর্থাৎ সমানরূপসম্পন্না যে স্ত্রীকে বিবস্বানের নিকট রেখে এসেছিলেন, তার নাম ছায়া। ছায়ার গর্ভে বিবস্বানের ঔরসে শনির জন্ম; ইত্যাদি। অশ্বিনী-রূপ-ধারিণী সরণু যখন উত্তরকুরুবর্ষে অবস্থান করছিলেন, তখন বিবস্বান আপন বিবেক-জ্যোতিতে তা জ্ঞাত হয়ে রহস্যচ্ছলে অশ্বরূপ ধারণ করে সরণুর গর্ভে আপন ঔরসে যে অশ্বিনীকুমারযুগলের জন্ম দান করেন, পৌরাণিক মতানুসারে, তাদের নাম নাসত্য ও দ] ৷ ৩৷৷

যাঁরা (অর্থাৎ যে পিতৃপুরুষগণ) ভূমিত নিখনন সংস্কারের দ্বারা (অর্থাৎ সমাধিস্থ হয়ে) সংস্কারপ্রাপ্ত হয়েছেন (নিখাতা), যাঁরা দূরদেশে কাষ্ঠবৎ পরিত্যক্ত হয়ে সংস্কারপ্রাপ্ত হয়েছেন (পরোপ্তা), যাঁরা অগ্নির দ্বারা সংস্কারপ্রাপ্ত হয়েছেন (দগ্ধা) এবং যাঁরা সংস্কারোত্তরকালে (অর্থাৎ সংস্কারপ্রাপ্তির পর) ঊর্ধ্বদেশে পিতৃলোকে স্থিত হয়েছেন (উদ্ধিতা), হে অগ্নি! তুমি সেই সকল পিতৃপুরুষগণকে আমাদের দত্ত হবিঃ ভক্ষণের নিমিত্ত (হবিষে অত্তবে) আনয়ন করো (আ বহ) ॥ ৪

যাঁরা (অর্থাৎ যে পিতৃগণ) অগ্নির দ্বারা সংস্কৃত হয়েছেন (অগ্নিদগ্ধা), এবং যাঁরা অগ্নিদাহরহিত (অনগ্নিদগ্ধা) হয়েও খনন ইত্যাদির দ্বারা সংস্কারপ্রাপ্ত হয়ে দ্যুলোকের মধ্যে অবস্থানপূর্বক স্বধা (অর্থাৎ পুত্র ইত্যাদিগণ কর্তৃক দত্ত পিণ্ডরূপ হবিঃ) ভক্ষণ করেছেন অথবা স্বৰ্ধকার-উপলক্ষিত পিণ্ডপিতৃযজ্ঞ ইত্যাদি কর্মে হৃষ্ট-তৃপ্ত হয়েছেন (মাদয়ন্তে),–হে জাতবেদা (জাতমাত্ৰ সকলের জ্ঞাতা অগ্নি)! তুমি তাদের সকলকে নিশ্চয়রূপে জ্ঞাত আছো (যদি বেখ)। আমাদের স্বধা-সম্বন্ধি যাঁরা (স্বধয়া) তারা এই যজ্ঞে (স্বধিতং) আগমন পূর্বক (যজ্ঞ) সেবন করুন (জুষন্তা)।. (বা আমাদের জ্ঞাতি পুত্রপৌত্র ইত্যাদির হিত সাধনের উদ্দেশে তারা এই স্বধা-যজ্ঞ সেবন করুন)। ৫।

হে অগ্নি! এই প্রেতশরীরকে সুখে (শং), (অর্থাৎ যাতে সুখ হয়, তেমনভাবে), তপ্ত করো (তপ); অতিরিক্ত তাপ প্রদান করো না (মা অতি তপো)। (অতিদহনে অস্থিসমূহও ভস্মীভূত হয়ে যায়; সেই কারণে সঞ্চয়ন ইত্যাদি সংস্কারের প্রতিবিধানে অতিদাহ নিষিদ্ধ)। তথা আমাদের শরীরও (তন্থঃ) তাপিত করো না (মা তপঃ)। তোমার শোষক জ্বালাসমূহ (শুম্মা) অরণ্যে (বনেষু অবস্থান করুক (অস্তু); তোমার রসহরণশীল তেজঃ ভূমিতে (পৃথিভ্যাং) অবস্থান করুক (অস্তু)। ৬

(যমে ক্ৰতে অর্থাৎ যম বলেন)–এই মৃত পুরুষ যে কারণে আমার নিকট আগমন করেছে, সেই কারণে আমি একে এই লোকে আবাসস্থান (অবসানং) প্রদান করছি। এবং এ নিশ্চয়ই এই লোকে আমার পরিচরণশীল হয়ে অবস্থান করুক (অভূচ্চেৎ)।–এইরকম জ্ঞাত করে ও (চিকিত্বান) যম মৃতের (অর্থাৎ মৃত-পুরুষের প্রতি এই কথা বললেন (আহ)–আমার সমীপে আগত পুরুষ (এষঃ) আমার স্তোতা হয়ে (রায়ে) আমার লোকে সেবা করুক (উপতিষ্ঠতাম)। ৭।

 এই (ইমাং, এতাবতীং) শ্মশানদেশের পরিমাণ অরত্নিপ্রাদেশ পরিমিত (কনুই থেকে কনিষ্ঠাঙ্গুলির অগ্রভাগ পর্যন্ত হস্ত পরিমাপ) দণ্ডের দ্বারা পরিচ্ছেদ অর্থাৎ ইয়ত্তারপে অবধারণ করছি (নিমীমহে), যথা (যেন কোনরকমভাবে) অন্য শ্মশানকর্ম (অপরং) হতে না পারে (মা ন আসাতৈ)। ব্রহ্মের দ্বারা আমাদের জীবন শত-সম্বৎসর পরিকল্পিত হয়েছে, সেই শত-সম্বৎসর মধ্যে (পুরা) আমরা যেন শ্মশানকর্ম না প্রাপ্ত হই (নো)। (অর্থাৎ আমাদের যেন অকালমৃত্যু না ঘটে)। ৮।

 প্রকর্ষের সাথে। আমরা এই শ্মশানদেশের পরিমাপ প্রতিপাদিত করছি, যাতে অন্য শ্মশানকর্ম হতে না পারে। ব্রহ্মের দ্বারা আমাদের জীবন শত-সম্বৎসর পরিকল্পিত হয়েছে, সেই শত-সম্বৎসর মধ্যে আমরা যেন শ্মশানকর্ম না প্রাপ্ত হই। (অর্থাৎ আমাদের যেন অকালমৃত্যু না ঘটে) ৯৷

এই পরিমাপরূপ উপসর্গের দ্বারা (অপেমাং) অপগত দোষতা অর্থাৎ শ্মশানলক্ষণ দোষ নিষিদ্ধ হয় (বা বিনষ্ট হয়) এই জন্যই এই পরিমাপ প্রতিপাদিত করছি, (যেন কোনরকমভাবে) অন্য শ্মশানকর্ম হতে না পারে। ব্রহ্মের দ্বারা আমাদের জীবন শত-সম্বৎসর পরিকল্পিত হয়েছে, সেই শত সম্বৎসরের মধ্যে আমরা যেন শ্মশানকর্ম না প্রাপ্ত হই। (অর্থাৎ আমাদের যেন অকালমৃত্যু না ঘটে)। ১০।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –পিতৃমেধে অশ্বাবতীং ইত্চা শবদাহানন্তরং স্নানং কৃত্বা নদীং তরতোহনুমন্ত্রয়েত।–ইত্যাদি৷৷. (১৮কা, ২অ. ৪সূ.)।

টীকা –উপযুক্ত সূক্তের প্রথম মন্ত্রটি শবদাহের পর স্নান পূর্বক নদী উত্তরণকালে অনুমন্ত্ৰণীয়। এই সূক্তের বিভিন্ন মন্ত্র সমিধাবাদাখ্যে, প্রেতশরীরে, জ্যেষ্ঠ পুত্র কর্তৃক অগ্নি দানের পর অপর পুত্রগণ বা সগোত্রীয়গণ কর্তৃক অগ্নি প্রদান কাম্পীলশাখায় দহনস্থান সম্মোক্ষণ ইত্যাদি কর্মে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। ইত্যাদি। (১৮কা, ২অ. ৪সূ.)।

.

পঞ্চম সূক্ত : পিতৃমেধঃ

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : যম, জাতবেদা, পিতৃগণ ইত্যাদি ছন্দ : অনুষ্টুপ, জগতী, ত্রিষ্টুপ, গায়ত্রী!]

বীমাং মাত্রাং মিমীমহে যথাপরং ন মাসাতৈ।, শতে শরৎসু নো পুরা ॥১॥ নিরিমাং মাত্রাং মিমীমহে যথাপরং ন মাসাতৈ। শতে শরৎসু নো পুরা ৷৷ ২৷৷ উদিমাং মাত্ৰাং মিমীমহে যথাপরং ন মাসাতে। শতে শরৎসু নো পুরা ॥৩৷৷ সমিমাং মাত্রাং মিমীমহে যথাপরং ন মাসাতৈ। শতে শরৎসু নো পুরা ॥৪॥ অমাসি মাত্রাং স্বরগামায়ুষ্মন্ ভূয়াস। যথাপরং ন মাসাতৈ শতে শরৎসু নো পুরা ॥৫৷৷ প্রাণো অপানো ব্যান আয়ুশ্চক্ষুদৃশয়ে সূর্যায়। অপরিপরেণ পথা যমরাজ্ঞঃ পিতৃন্ গচ্ছ ৷৬৷ যে অগ্রবঃ শশমানাঃ পরেয়ুহিত্বা দ্বেষাংস্যপত্যবন্তঃ। তে দ্যামুদিতাৰিদন্ত লোকং নাকস্য পৃষ্ঠে অধি দীধ্যানাঃ ॥৭৷৷ উন্বতী দৌরবমা পীলুমতীতি মধ্যমা। তৃতীয়া হ প্রদ্যৌরিতি যস্যাং পিতর আসতে ॥৮॥ যে নঃ পিতুঃ পিতরো যে পিতামহ য আবিৰিশুরুবন্তরিক্ষম। য আয়িন্তি পৃথিবীমুত দ্যাং তেভ্যঃ পিতৃভ্যো নমসা বিধেম ॥৯॥ ইদমিদ বা উ নাপরং দিবি পশ্যসি সূর্য। মাতা পুত্রং যথা সিচাভ্যেনং ভূম ঊর্ণহি৷ ১০৷৷

 বঙ্গানুবাদ— [এই মন্ত্রে বিমাং মাত্রাং অর্থাৎ মুক্তি তথা নিবৃত্তির উপসর্গের দ্বারা শ্মশানদেশের পরিমাপের বিশিষ্ট গুণযোগ প্রদর্শিত হচ্ছে। আমরা এই শ্মশানদেশের ভূমিকে বিশিষ্ট প্রকারে পরিমাপ করছি, (যেন এখানে কোনরকমভাবে) অন্য শ্মশানকর্ম হতে না পারে। ব্রহ্মের দ্বারা আমাদের জীবন শত-সম্বৎসর পরিকল্পিত হয়েছে, সেই শত সম্বৎসরের মধ্যে আমরা যেন শ্মশানকর্ম না প্রাপ্ত হই। (অর্থাৎ আমাদের যেন অকালমৃত্যু না ঘটে)। ১।

 ( এই মন্ত্রে নিরিত্যুপসর্গেন অর্থাৎ নির্গতদোষতারূপ উপসর্গের দ্বারা শ্মশানদেশের পরিমাপের কথা বলা হচ্ছে–আমরা দোষশূন্য করণের নিমিত্ত এই শ্মশানভূমিকে পরিমাপ করছি, যাতে এই স্থানে অন্য শ্মশানকর্ম হতে না পারে। ব্রহ্মের দ্বারা কল্পিত আমাদের শত সম্বৎসর পরিমিত আয়ুর মধ্যে আমাদের যেন অকালমৃত্যু না ঘটে। ২।

[এই মন্ত্রে উৎ অর্থাৎ উৎকর্ষ উপসর্গের দ্বারা শ্মশানদেশের পরিমাপের উৎকর্ষণ প্রদর্শিত হচ্ছে–আমরা উৎকৃষ্ট করণের নিমিত্ত এই শ্মশানভূমিকে পরিমাপ করছি; যাতে এই স্থানে অন্য শ্মশানকর্ম হতে না পারে। ব্রহ্মের দ্বারা কল্পিত আমাদের শত সম্বৎসর পরিমিত আয়ুর মধ্যে আমাদের যেন অকালমৃত্যু না ঘটে ৷৷ ৩৷

আমরা উদীরিত-গুণযোগের দ্বারা (অর্থাৎ উচ্চারিত মন্ত্রের দ্বারা) এই শ্মশানভূমিকে পরিমাপ করছি; যাতে এই স্থানে অন্য শ্মশানকর্ম হতে না পারে। ব্রহ্মের দ্বারা পরিকল্পিত আমাদের শত সম্বৎসরের আয়ুর মধ্যে যেন আমাদের অকালমৃত্যু না ঘটে। ৪

শ্মশানদেশের পরিমাণ (মাত্রাং) পরিচ্ছেদিতবান অর্থাৎ নিরূপিত হয়েছে (অমাসি)। সেই পরিমাপের দ্বারা আমি স্বর্গলোকে গমন করবো; (অর্থাৎ এই পরিমাপ-করণের ফল ভাবী স্বর্গলোকপ্রাপ্তি)। এবং এই পরিমাপ-কর্মে আমি শত-সম্বৎসর পরিমিত আয়ুশালী (আয়ুষ্ম) হবে। যাতে এই স্থানে অন্য শ্মশানকর্ম হতে না পারে! ব্রহ্মের দ্বারা পরিকল্পিত আমাদের শত সম্বৎসরের আয়ুর মধ্যে যেন আমাদের অকালমৃত্যু না ঘটে। ৫।

প্রাণ (অর্থাৎ মুখ-নাসিকা হতে বহির্নিঃসরণ বায়ু), অপান (অর্থাৎ অন্তর্গামী বায়ু), ব্যান (সমগ্র অবয়ব ব্যাপী অবস্থানকারী বায়ু), চক্ষু (নীলপীত ইত্যাদি দর্শন-সাধন ইন্দ্রিয়) এবং অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে সূর্যদর্শনের নিমিত্ত (সূয়ায় দৃশয়ে) আমরা শত সম্বৎসরকাল অর্থাৎ চিরকাল জীবন (আয়ু)। যাপন (বা অবস্থান) করবো। হে মৃতপুরুষ! তুমি যমরাজার স্বভূত চোরগণ-রহিত (অপারিপরেণ) মার্গ অবলম্বন পূর্বক (পথা) (অর্থাৎ যে পথে যমের নিয়োজিত তস্করগণ গমনাগমন করে না, সেই পথ ধরে) পিতৃলোকে গমন করো। ৬।

দ্রুতগতিশীল (শশমান অর্থাৎ শশ বা অশ্বের ন্যায় গতিসম্পন্ন), অগ্রগামী (অবঃ) যে পিতৃগণ অনপত্যবন্তরূপে (অর্থাৎ অপত্যরহিত অবস্থায়) পাপসমূহ (দ্বেষাংসি) পরিহার করে চলে গেছেন (হিত্বা পরেযুঃ), সেই পিতৃগণ (তে)। অন্তরিক্ষলোকের ঊর্ধ্বে (দ্যাং উদিত্য) স্বর্গের (নাকস্য) দুঃখস্পর্শরহিত স্থানেরও উপরিভাগে বা অধিক দীপ্যমানা অর্থাৎ সুকৃতফল-উপভোগের উপযুক্ত স্থান লাভ করেছেন (অবিদন্ত)। ৭।

[ এই মন্ত্রে পিতৃলোকের সর্বোৎকৃষ্টতা প্রতিপাদিত হচ্ছে]–দুলোকের নিম্নভাগে (অবমা দৌঃ) উদস্বতী অর্থাৎ জলপূর্ণা মেঘ প্রবর্ষণ করে থাকে। মধ্যমা অর্থাৎ মধ্যকক্ষ্যায় দুলোক পীলুমতী অর্থাৎ গ্রহনক্ষত্রের ধারিণী হয়ে থাকে। তৃতীয় স্থানে (তৃতীয়া হ) দ্যুলোক প্রকৃষ্টফলোপেত (প্রদ্যোঃ) নাকপৃষ্ঠ নামে আখ্যাত। সেই স্থানে পিতৃদেবগণ অবস্থান করেন (আসতে)। ৮৷

যাঁরা আমাদের পিতার পিতা (পিতুঃ পিতরঃ), এবং যারা পিতামহগণেরও জনক (পিতামহাজনকাঃ), এবং অন্য যাঁরা বিস্তীর্ণ অন্তরিক্ষলোকে নিবাস করছেন (আবিবিশু উরু অন্তরিক্ষ), যাঁরা পৃথিবীলোকে নিবাস করছেন (আয়িন্তি), (অর্থাৎ প্রেতরূপে পৃথিবীতে বর্তমান রয়েছেন), এবং যাঁরা স্বর্গলোকে (দ্যাং) আশ্রিত, (অর্থাৎ যাঁরা লোকত্রয় ব্যাপী বর্তমান), সেই সকল (তেভ্য) পিতৃগণকে আমি এই হবিলক্ষণ অন্নের দ্বারা (নমসা) পরিচর‍্যা করছি (বিধেম)। (অথবা নমসা শব্দের অর্থ অন্ন না ধরলে, অর্থ হয়–নমস্কার করছি) ॥ ৯৷

হে মৃতপুরুষ! আমাদের দ্বারা শ্রাদ্ধে প্রদত্ত এই সামগ্রীই (ইদং ইৎ বা উ) তোমার জীবন; অন্য কিছু নয় (অপরং ন কিঞ্চিৎ)। এই শ্মশানদেশে নিবাসিত থেকে আকাশে (দিবি) সূর্য দর্শন করো। যে রকমে জননী আপন বসনাঞ্চলের দ্বারা (সিচা) আপন পুত্রকে আচ্ছাদিত করেন, তেমনই, হে পৃথিবী (ভূমে)! শ্মশানস্থকে অর্থাৎ মৃতপুরুষকে (এনং) আপন তেজের দ্বারা প্রকৃষ্টভাবে আচ্ছাদিত করো (অভণুহি)। (যেন এ শীত, বায়ু, উষ্ণ ইত্যাদি প্রাপ্ত না হয়–এটাই এর অন্তর্নিহিত ভাব)। ১০।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –বীমাং মাত্রাং মিমিমহে ইতি আদিতশ্চতসৃণাং ঋচাং শ্মশানপ্ৰমাণকরণে বিনিয়োগ উক্ত।–ইত্যাদি৷ (১৮কা, ২অ. ৫সূ.)।

টীকা –উপযুক্ত সূক্তের প্রথম চারটি ঋক্ শ্মশান পরিমাপ করণে বিনিয়োগ হয়। এই পরিমাপের উদ্দেশ্য প্রতিটি মন্ত্রের প্রথমের উল্লেখ করা হয়েছে। পরবর্তী তিনটি মন্ত্র পূর্বোক্তপ্রকারে শ্মশান-পরিমাপের অনুমন্ত্রণে বিনিযুক্ত। ৮ম মন্ত্রে শকট হতে প্রেতকে উত্থাপন করণীয়। ৯ম মন্ত্রে প্রেতশরীরে সন্দীপিত অগ্নিদ্বয়ের দ্বারা যামহোম করণীয়। ১০ম মন্ত্রটি শ্মশানদেশে বিষমসংখ্যক শলাকা ইষ্টক ইত্যাদি প্রোথিত বা গ্রথিত করণে বিনিযুক্ত হয়। (১৮কা, ২অ. ৫সূ.)।

.

ষষ্ঠ সূক্ত : পিতৃমেধঃ

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : যম, জাতবেদা, পিতৃগণ ইত্যাদি ছন্দ : অনুষ্টুপ, জগতী, ত্রিষ্টুপ, গায়ত্রী]

ইদমিদ বা উ নাপরং জরস্যন্যদিাহপর। জায়া পতিমিব বাসসভ্যেনং ভূম ঊর্ণহি ॥১॥ অভি ত্বোর্ণোমি পৃথিব্যা মাতুবন্ত্রেণ ভদ্রয়া। জীবেষু ভদ্রং তন্ময় স্বধা পিতৃষ্ণু সা ত্বয়ি ৷৷ ২৷৷ অগ্নীষোমা পথিকৃতা স্যোনং দেবেভ্যো রত্নং দধগুৰ্বি লোক। উপ প্ৰেষ্যন্তং পূষণং যো বহাত্যঞ্জেযানৈঃ পথিভিস্তত্র গচ্ছতম ৷৷ ৩৷ পূষা ত্বেতশ্চ্যাবয়তু প্র বিদ্বাননষ্টপশুডুবনস্য গোপাঃ। স হৈতেভ্যঃ পরি দদৎ পিতৃভভ্যাংগ্নির্দেবেভ্যঃ সুবিদত্রিয়েভ্যঃ ॥৪॥ আত্মবিশ্বায়ুঃ পরি পাতু ত্বা পূষা বা পাতু প্রপথে পুরস্তাৎ। যত্ৰাসতে সুকৃতো যত্র ত ঈয়ুস্তত্র বা দেবঃ সবিতা দধাতু। ৫৷৷ ইমৌ যুনজিম তে বহ্নী অসুনীতায় বোঢ়বে। তাভ্যাং যমস্য সাদনং সমিতীশ্চাব গচ্ছতা ৬এতৎ ত্বা বাসঃ প্রথমং দাগন্নপৈতদূহ যদিহাবিভঃ পুরা। ইষ্টাপূর্তমনুসংক্রাম বিদ্বান্ যত্র তে দত্তং বহুধা বিবন্ধুযু ॥৭। অগ্নেবর্ম পরি গোভিব্যয়স্ব সং প্রোণুম্ব মেদস্য পীব চ।। নেৎ ত্বা ধৃষ্ণুরসা জর্ষাণো দুগ বিধক্ষন পরীঙ্খয়াতৈ ॥ ৮দণ্ডং হস্তাদাদদানো গতাসোঃ সহ শ্রোত্রেণ বচসা বলেন। অত্রৈব ত্বমিহ বয়ং সুবীরা বিশ্বা মৃধো অভিমাতীর্জয়েম ॥৯॥ ধনুহস্তাদাদদানো মৃতস্য সহ ক্ষত্রেণ বচসা বলেন। সমাগৃভায় বসু ভূরি পুষ্টমবা ত্বমেহু্যপ জীবনোকম্ ॥১০৷

বঙ্গানুবাদ –এই মৃত পুরুষ জরা অবস্থায় (জরসি) যে অন্ন ইত্যাদি উপভোগ করেছে, তা ব্যতীত অন্য (নাপরং অন্যৎ) ভোক্তব্য নেই। এই শ্মশানদেশ ব্যতীত অন্য কোন স্থানও তার নেই, অপর কোন কার্যও সম্ভব নয়। শ্মশানে পরিত্যক্ত এই মৃত পুরুষকে, হে পৃথিবী! জায়া যেমন পতিকে বসনের দ্বারা প্রচ্ছাদিত করে, তেমনই তুমি একে তোমার তেজে প্রচ্ছাদিত করো। ১।

হে মৃতপুরুষ! সর্বজনের মাতৃস্বরূপা (মাতুঃ) কল্যাণকারিণী (ভদ্রায়াঃ) পৃথিবীর বস্ত্রের দ্বারা তোমাকে (ত্বা) সর্বতোভাবে আচ্ছাদিত করছি (অভিপ্রোণোমি)। জীবেষু অর্থাৎ প্রাণধারী (মনুষ্যগণের মধ্যে) আমাদের কল্যাণ হোক (অর্থাৎ শোভন সংস্কার হোক) পিতৃদেবতাগণের উদ্দেশে স্বধাকারের দ্বারা হৃয়মান হবিলক্ষণ অন্ন তোমার (ত্বয়ি) হোক। (বা আপন জ্ঞাতিগণের দ্বারা পিতৃবর্গের তৃপ্তিকরী পিণ্ডোদক দান ইত্যাদিরূপ ক্রিয়া বা স্বধা তোমার প্রাপ্য হোক– এটাই বক্তব্য)। ২।

অগ্নিদেব ও সোমদেব হলেন পথিকৃৎ (অর্থাৎ পুণ্যলোক-গমনসাধন মার্গের নির্মাতা); তারা সুখকর (স্যোনং) বা রত্নবৎ উৎকৃষ্ট স্বর্গ-নামক সেই লোক দেবতাগণের নিমিত্ত নির্মাণ করেছেন, যে লোক তার সমীপে (উপ) প্রকৃষ্টরূপে গমনশীল (প্রেষ্যন্তং) পূষা নামে আখ্যাত দেব বা সর্বপ্রাণীর পোষক সূর্যকে ধারণ করেছে, হে পথিকৃৎ অগ্নি ও সোম! সেই লোকে সরলভাবে (অঞ্জয়ানৈঃ) গমনযোগ্য পথে তোমরা এই প্রেতকে গমন করাও ॥ ৩॥

হে প্রেত! তোমাকে জ্ঞাতশীল (বিদ্বান) পূষাদেব এই স্থান হতে নির্গমিত করুন (প্র চ্যাবয়তু)। (কিরকম পূষা? না–) পশুগণের (অর্থাৎ গো ইত্যাদির) পোষক, ভূতজাতের (ভুবনস্য) অর্থাৎ প্রাণীবর্গের রক্ষক (গোপা)। এবং তারপর তিনি তোমাকে তোমার পিতৃপিতামহ-প্রপিতামহ (এতেভ্য) অর্থাৎ মৃতপুরুষসম্বন্ধি পিতৃগণের নিকট রক্ষার নিমিত্ত পরিদান করুন (পরি দদৎ)। এবং অগ্নিদেব দহনসংস্কারের দ্বারা শোভনবিজ্ঞান করুন বা সুখের দ্বারা লব্ধব্য ধনরূপ দেবগণের নিকট তোমাকে সুষ্ঠুভাবে (সুবিদত্রং) দান করুন। ৪

আয়ু নামক জীবনাভিমানী দেবতা সকলের জীবনবান রূপে (বিশ্বায়ুঃ) তোমাকে রক্ষা করুন; তথা পূষা অর্থাৎ জীবনপোষক দেবতা পূর্বদিকে (পুরস্তাৎ) গমনমার্গের প্রারম্ভে (প্রপথে) তোমাকে রক্ষা করুন। যে স্বর্গলোকে (যত্র) পুণ্যকৃত জনগণ উপবেশন করেন (আসতে), সেই স্বর্গসম্বন্ধিনী নাকপৃষ্ট (ঈয়ুঃ) নামে আখ্যাত দেশে দেব অর্থাৎ দান ইত্যাদি গুণযুক্ত সর্বপ্রেরক-সংজ্ঞক সবিতা তোমাকে স্থাপন করুন ৫

হে মৃতপুরুষ! তোমার গতপ্রাণ দেহকে (অসুনীতায়) বহনের নিমিত্ত (বহ্নী) এই বলদদ্বয়কে (ইমৌ) সংযোজিত করছি (যুনন্নি)। এই বলদ্বয়ের দ্বারা (ভ্যাং) তুমি যমের গৃহ (সদনং) এই রকমেই সম্যক জ্ঞাত হবে (অবগচ্ছতাৎ) ॥ ৬।

এই সন্নিহিত মুখ্য (প্রথমং) বস্ত্র (বাসঃ) আজ (নু) তুমি প্রাপ্ত হয়েছে (আগন), এখন তুমি সেই বসন পরিত্যাগ করো (অপোহ), যেটি পূর্বে জীবিতকালে (পুরা) ভূলোকে (ইহ) পরিধান করতে (অবিভঃ)। মোহরহিত হয়ে (বিদ্বা) তুমি তোমার পূর্বকৃত ইষ্টাপূর্ত, কর্মাবলী (অর্থাৎ শ্রুতিশাস্ত্রানুমোদিত অগ্নিহোত্র-দর্শপূর্ণমাস ইত্যাদি ইষ্টকর্ম এবং স্মৃতিশাস্ত্রানুমোদিত বাপী-কূপ-তড়াগ ইত্যাদি নির্মাণরূপ পূর্তকর্ম) অনুক্রমে লক্ষ্য পূর্বক গমন করতে থাকো; যে ইষ্টাপূর্ত ক্রিয়মাণে তুমি বান্ধবজনেদের (বন্ধু) বহুপ্রকার (বহুধা) ধন বিতরণ করেছিলে। ৭।

 হে প্রেত! তুমি গোভিঃ অর্থাৎ ইন্দ্রিয়-সম্বন্ধী অবয়বের দ্বারা অগ্নির দাহ-নিবারক কবচ (বর্ম) পরিধান করো বা নিজেকে আচ্ছাদিত করো। হে প্রেত! তুমি স্কুলমেদময় (পীবসা) আচ্ছাদনে নিজেকে আবৃত করো, যাতে সেই ধর্ষক (ধৃষ্ণঃ), রসহরণশীল (হরসা), তেজের সাথে দগ্ধকারী (জর্ষণঃ দধূক) অগ্নি তোমাকে অধিক ভস্ম করার ইচ্ছায় ইতস্ততঃ নিক্ষেপ করতে না পারে। ৮।

গতপ্রাণ ব্রাহ্মণের হস্ত হতে এই দণ্ড (যে সমন্ত্রক বেণুদণ্ড সমাবর্তন প্রভতি কালে ব্রাহ্মণ কর্তৃক ধৃত হয়েছিল, সেই বিহিত দণ্ড) আমি গ্রহণ করছি, যার ফলে আমি শব্দশ্রবণ- সাধনেন্দ্রিয়জনিত বা ত-অধ্যয়ন-সস্তৃত তেজের দ্বারা ও তৎকৃত বলের সাথে (শ্রোত্রেণ বচসা বলেন) যুক্ত হবো। হে প্রেত! তুমি এই দহনদেশে অর্থাৎ চিতায় (অত্র) অবস্থান করো; আমরা (বয়) এই ভূলোকে (হই) সুখের সাথে অবস্থান পূর্বক সকল সংগ্রাম (মৃধঃ) ও হিংস্রক শত্রুদের (অভিঘাতীঃ) অভিভব করবো (জয়েম)। ৯।

 মৃত অর্থাৎ ত্যক্তপ্রাণ ক্ষত্রিয়ের হস্ত হতে আমি এই ধনু গ্রহণ করেছি (আদদানঃ), যার ফলে আমি ক্ষত্ৰজাতির (ক্ষত্রং) অসাধারণ তেজের দ্বারা (বৰ্চসা, অর্থাৎ পরাভিভব-সমর্থ বীর্য) ও তৎকৃত বলের সাথে যুক্ত হবো। বহুল (ভূরি) পোষক (পুষ্টং) ধন (বসু) আমাদের দানের নিমিত্ত (সমাগৃভায়) এই জীবলোকে আমাদের অভিমুখে (অর্বা) তুমি আগত হও ১০৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –ইদমিৎ বৈ ইতি ঋচোরাদ্যয়েঃ শ্মশাদশে শলাকাভিশ্চয়নকর্মণি বিনিয়োগ উক্তঃ। অভীষোমা পথিকৃত ইতি তিসৃভিঃ প্রেতং উত্থাপ্য দহনায় শকটে নিদধ্যাৎ- ইত্যাদি। (১৮কা, ২অ. ৬সূ.)।

টীকা –উপযুক্ত সূক্তের বিভিন্ন মন্ত্র শ্মশানকর্মের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ হয়। যেমন, প্রথম মন্ত্রদ্বয়ের দ্বারা শ্মশানদেশে শলাকার দ্বারা চয়নকর্ম, তৃতীয় ইত্যাদি মন্ত্রে প্রেত উত্থাপিত পূর্বক দহনের নিমিত্ত শকটে স্থাপন, যষ্ঠ মন্ত্রে শকটে বৃষভদ্বয়কে যুক্তকরণ, সপ্তম মন্ত্রের দ্বারা বস্ত্র অভিমন্ত্রিত পূর্বক প্রেতদেহ আছাদিত করণ, অষ্টম মন্ত্রের দ্বারা সপ্তচ্ছিদ্রযুক্ত বস্ত্রে প্রেতের মুখ প্রচ্ছাদন, নবম মন্ত্রের দ্বারা প্রেতব্রাহ্মণের হস্ত হতে বেদষ্টি গ্রহণ এবং দশম মন্ত্রে প্রেতক্ষত্রিয়ের হস্ত হতে ধনুগ্রহণ-ইত্যাদি বিহিত ॥ (১৮কা, ২অ. ৬সূ.)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *