2 of 3

১৭।১ সপ্তদশ কাণ্ড : প্রথম অনুবাক

অথর্ববেদসংহিতা সপ্তদশ কাণ্ড
প্রথম অনুবাক
প্রথম সূক্ত : অভ্যুদয় প্রার্থনা
[ঋষি : ব্রহ্মা দেবতা : আদিত্য ছন্দ : জগতী, অষ্টি, ধৃতি, শক্করী, কৃতী, প্রকৃতি, ককুপ, বৃহতী, অনুষ্টুপ, ত্রিষ্টুপ]

বিষাসহিং সহমানং সাসহানং সহীয়াংস। সহমানং সহোজিতং স্বর্জিতং গোজিতং সন্ধজিত৷ ঈড্যং নাম হু ইন্দ্রমায়ুষ্মন্ ভূয়াসম্ ॥১॥ বিষাসহিং সহমানং সাসহানং সহীয়াংস। সহমানং সহোজিতং স্বর্জিতং গোজিতং সন্ধজিত। ঈড্যং নাম হু ইন্দ্ৰং প্রিয়ো দেবানাং ভূয়াস ৷৷ ২ বিষাসহিং সহমানং সাসহানং সহীয়াংস। সহমানং সহোজিতং স্বর্জিতং গোজিতং সন্ধজিত। ঈড্যং নাম হু ইন্দ্রং প্রিয়ঃ প্রজানাং ভূয়াস৷ ৩৷৷ বিষাসহিং সহমানং সাসহানং সহীয়াংস। সহমানং সহোজিতং স্বর্জিতং গোজিতং সন্ধজিত। ঈড্যং নাম হু ইন্দ্ৰং প্রিয়ঃ পশূনাং ভূয়াসম্॥ ৪৷৷ বিষাসহিং সহমানং সাসহানং সহীয়াংস। সহমানং সহোজিতং স্বর্জিতং গোজিতং সন্ধজিতম। ঈড্যং নাম হু ইন্দ্ৰং প্রিয়ঃ সমানানাং ভূয়াস। ৫উদিত্যুদিহি সূর্য বচসা মাভূদিহি। দ্বিষংশ্চ মহ্যং বধ্যতু মা চাহং দ্বিষতে রং তবেদ। বিষ্ণো বহু বীর্যাণি। ত্বং নঃ পৃণীহি পশুভির্বিশ্বরূপৈঃ সুধায়াং মা ধেহি পরমে ব্যোম৷৬৷ উদিদিহি সূর্য বচসা মাভূদিহি। যাংশ্চ পশ্যামি যাংশ্চ ন তেষু মা সুমতিং কৃধি তবেদ। বিষ্ণো বহুধা বীর্যাণি। ত্বং নঃ পৃণীহি পশুভির্বিশ্বরূপৈঃ সুধায়াং মা ধেহি পরমে ব্যোম। ৭। মা ত্বা দভৎ সলিলে অন্তর্যে পাশিন উপতিষ্ঠ্যত্র। হিত্বাশস্তিং দিবমারুক্ষ এতাং স নো মৃড় সুমতৌ তে স্যাম তবে বিষ্ণো বহুধা বীর্যাণি। ত্বং নঃ পৃণীহি পশুভির্বিশ্বরূপৈঃ সুধায়াং মা ধেহি পরমে ব্যোম॥ ৮৷৷ ত্বং ন ইন্দ্র মহতে সৌভগায়াদব্ধেভিঃ পরি পাহ্যত্রুভিস্তবে বিষ্ণো বহুধা বীর্যাণি। ত্বং নঃ পৃণীহি পশুভির্বিশ্বরূপৈঃ সুধায়াং। মা ধেহি পরমে ব্যোম৷ ৯৷ ত্বং ন ইন্দ্রোতিভিঃ শিবাভিঃ শন্তমো ভব। আরোহংস্ত্রিদিবং দিবো গৃণানঃ সোমপীতয়ে প্রিয়ধামা স্বস্তয়ে তবেদ বিষ্ণো বহুধা বীৰ্ষাণি। ত্বং নঃ পৃণীহি পশুভির্বিশ্বরূপৈঃ সুধায়াং মা ধেহি পরমে ব্যোমন্ ॥ ১০।

 বঙ্গানুবাদ— আরোগ্য ইত্যাদির নিমিত্ত প্রার্থনাকারী সকল প্রাণীর দ্বারা সর্বদা স্তোতব্য, আমি সেই পরম ঐশ্বর্যযুক্ত ইন্দ্ররূপ সূর্যকে (যিনি বৃষ্টি ইত্যাদির দ্বারা সকল প্রাণীকে পোষণ করেন, তাঁকে) আহ্বান করছি। অন্যকে দমনশালী তেজের সাথে যুক্ত, শত্রবর্গের মধ্য হতে সেই তেজঃকে জয়কারী, শত্ৰুহননে স্বভাবসিদ্ধ, সহনশীলগণের মধ্যে অতিশয় সহনশীল, শত্রুবর্গের গো-ইত্যাদি পশু-সমূহকে জয়কারী (বা জলের জেতা), শত্রুর বল ও সুখের বিনাশক, শত্রুগণের সুবর্ণ-রজত মণিমুক্তা ইত্যাদি জয়ে পারঙ্গম–সেই হেন ইন্দ্র-শব্দবাচ্য ভগবান্ সূর্যকে ত্রিকাল কর্মের দ্বারা (প্রাতঃ, মধ্য ও সায়ংকালে সাধ্য নিত্যকৃত্যের দ্বারা) আহূত করছি; তার কৃপায় আমি আয়ুষ্মন্ হবো (অর্থাৎ শত সম্বৎসরের আয়ু লাভ করবো ॥১॥

বিষাসহি, সহমান,সাসহান, সহীবান্ (সহীয়াংস), তেজের বিজেতা, স্বর্গ ও গাভীগণের বিজেতা, জলের বিজেতা-ইন্দ্ৰ শব্দবাচ্য সেই ভগবান্ সূর্যকে ত্রিকাল কর্মের দ্বারা আহূত করছি; তাঁর কৃপায় আমি দেবগণের (প্রিয়) হবো। (সূর্য হলেন একেব মহান আত্মা বা দেবতা, অর্থাৎ সর্বভূতাত্মা। সুতরাং তার প্রীতিতে আমি সর্ব দেবতার প্রীতি লাভ করবো)। ২।

বিষাসহি…আহূত করছি; তাঁর কৃপায় আমি পুত্র ভৃত্য ইত্যাদি প্রজাগণের প্রিয় হবো৷ ৩৷

 বিষাসহি….আহূত করছি; তার কৃপায় আমি গো-মহিষ-অজ-অবি ইত্যাদি ও হস্তী-অশ্ব উষ্ট্র ইত্যাদি চতুষ্পদ পশু সমূহের প্রিয় হবো ॥৪॥

 বিষাসহি…আহুত করছি; তাঁর কৃপায় আমি কুল-জাতি-বয়স-ধন-বিদ্যা-কর্ম ইত্যাদিতে আমার সমান ব্যক্তিগণের মধ্যে প্রিয় হবো॥ ৫॥

উদয় হওয়ার পর সকল প্রাণীকে আপন আপন কর্মে প্রেরণকারী হে সূর্য! তুমি উদিত হও, উদিত হও। (সূর্যের উদয়বিষয়ে ত্বরা দ্যোতিত হচ্ছে)। তুমি সকলকে দমনকারী; আমাতে তেজঃপ্রাপ্ত করানোর। নিমিত্ত উদয় হও। তোমার কৃপায় আমাতে দ্বেষ-পোষণকারী জন আমার অধীন হোক। আমি এ তোমার উপাসক, কখনও শত্রুর বশীভূত হবো না। হে অনন্ত বীর্যশালী বিষ্ণুরূপী সূর্য! তুমি আপন কিরণের দ্বারা বিশ্বকে ব্যাপ্ত করণশালী। (বিষ্ণুরাদিত্য আপন রশ্মির দ্বারা সকল ব্ৰহ্মাণ্ডান্তরাল:ব্যাপ্ত করেন–এটি শ্রুতির মত)। তুমি আমাদের বহু প্রকারের (অর্থাৎ গো-মহিষ-অজ-অবি করি-তুরগ-উষ্ট্র ইত্যাদি) পশু সমূহে পূর্ণ করো এবং দেহান্তের পর আমাকে (ক্ষুৎপিপাসা-শোক মোহ-জরা-মরণ ইত্যাদি রহিত) সুধাময় পরম ব্যোমে স্থাপিত করো ৷ ৬ ৷

হে সূর্য! তুমি উদিত হও, উদিত হও। তুমি সকলের দমনকারী; আমাকে তেজঃপ্রাপ্ত করানোর নিমিত্ত উদিত হও। যে প্রাণী আমার সম্মুখে দৃষ্ট হচ্ছে অথবা যারা (দেশ ইত্যাদির ব্যবধানবশতঃ) দৃষ্ট হচ্ছে না, সেই দ্বিবিধ প্রাণীর প্রতি আমাকে সুমতি অর্থাৎ শোভনবুদ্ধিযুক্ত করো। (অর্থাৎ তাদের প্রতি আমাকে দ্রোহরহিত চিত্তশালী করো–এটাই বক্তব্য)। হে অনন্ত বীর্যশালী বিষ্ণুরূপী সূর্য! এমন তোমারই প্রভাব, অন্য কারো নয়। তুমি আমাদের বহু প্রকারের পশু সমূহে পূর্ণ করো এবং দেহান্তের পর আমাকে সুধাময় পরম ব্যোমে স্থাপিত করো ৷৷ ৭

 হে সূর্য অন্তরিক্ষ-স্থানে সলিলের অভ্যন্তরে পাশধারী প্রচ্ছন্নচারী হিংসক রাক্ষসগণ যেন দম্ভভরে তোমাকে প্রতিরোধ করতে না পারে। (পরাখ্যব্রহ্মের সগুণমূর্তিভূত ভগবানই সূর্যের গতি রাক্ষসগণ কর্তৃক প্রতিবন্ধিত হয়েছে, এমন) নিন্দা প্রতিহত করে তুমি আপন সামর্থ্যে অন্তরিক্ষে আরূঢ়বান হয়ে থাকো। তুমি আমাদের সুখ প্রদান করো। আমরা তোমার শোভন অনুগ্রহবুদ্ধিতে অবস্থান করবো। (অর্থাৎ তোমার অনুগ্রহবুদ্ধির সৌজন্যে আমরা যে অভীষ্ট প্রার্থনা করি, তা সুলভ হবে)। হে অনন্ত বীর্যশালী বিষ্ণুরূপী সূর্য! তুমি আমাদের বহু প্রকারের পশু সমূহে পূর্ণ করো এবং দেহান্তের পর আমাকে সুধাময় পরম ব্যোমে স্থাপিত করো ॥ ৮

হে (ইন্দ্ররূপী) পরমেশ্বর সূর্য! তুমি আমাদের (ধর্ম-যশ-শ্রী-জ্ঞান-বৈরাগ্য ইত্যাদিরূপ) প্রভূত ঐশ্বর্যসিদ্ধির নিমিত্ত ব্যাধি-সর্প-অগ্নি-তস্কর ইত্যাদি জনিত হিংসা হতে আমাদের দিবারাত্রগুলিকে রাহিত্য প্রদান করো। হে অনন্ত বীর্যশালী বিষ্ণুরূপী সূর্য! তুমি আমাদের বহু প্রকারের পশু সমূহে পূর্ণ করো এবং দেহান্তের পর আমাকে সুধাময় পরম ব্যোমে স্থাপিত করো ৷ ৯৷

হে ঐশ্বর্যসম্পন্ন..(ইন্দ্ররূপী) সূর্য! তুমি আমাদের সুখতম হও। (অর্থাৎ পুনপুনঃ জন্ম-মরণ ইত্যাদির ক্লেশ হতে আমাদের রক্ষাজনিত সুখয়িত্ব হও)। অগ্নিতে আহুত সোম পান করে (অর্থাৎ যাগ ইত্যাদি কর্মে আহূত হয়ে হুতসোম পান করে) এবং আমার দ্বারা স্তুত হয়ে তোমার প্রিয় ধাম ত্রিদিবে (দুস্থানে) আরোহণ করো এবং জগতের স্বস্তি (অর্থাৎ মঙ্গল) বিধান করো। হে। অনন্ত বীর্যশালী বিষ্ণুরূপী সূর্য! তুমি আমাদের বহু প্রকারের পশুসমূহে পূর্ণ করো এবং দেহান্তের পর আমাকে সুধাময় পরম ব্যোমে স্থাপিত করো। ১০।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –সপ্তদশ কাণ্ডে একোইনুবাকঃ। তত্র ত্ৰীনি সূক্তানি। অয়ং বিষাসহিং ইত্যনুবাকঃ সলিলগণমধ্যে পঠিতঃ। অতঃ সলিলৈঃ ক্ষীরৌদনং অশ্নাতি। মস্থান্তানি ইতি (কৌ. ৩/১) সলিলৈঃ সর্বকামঃ (৩/৭) ইত্যাদি চাস্য বিনিয়োগঃ–ইত্যাদি। (১৭কা, ১অ, ১সূ.)।

টীকা— এই কাণ্ডে একটি অনুবাক এবং তাতে তিনটি সূক্ত বলা হলেও মূলে ঐ তিনটি সূক্তও একটি সূক্তে গ্রথিত। আমরা স্বর্গীয় দুর্গাদাসের গ্রন্থানুসারে ঐ একটি সূক্তকে তিনটি সূক্তে বিভক্ত রূপেই গ্রহণ করেছি। এই সম্পূর্ণ অনুবাকটি সলিলগণমধ্যে পাঠিত। তার বিনিয়োগ কৌশিক সূত্রে (৩/১, ৩/৭) প্রদত্ত হয়েছে। উপনয়ন কর্মে আচার্য কর্তৃক উপনীত ব্রহ্মচারীর নাভিদেশ স্পর্শ পূর্বক এই অনুবাকের মন্ত্রগুলি। জপনীয়। (কৌ. ৭/৬)। উপনয়ন কর্মে হস্ত প্রক্ষালনের পর আচার্য উপনীত মানবককে এই মন্ত্রগুলির দ্বারা অনুমন্ত্রিত করেন (কৌ. ৭/৯)। আদিত্যগ্রহণরূপ দুর্নিমিত্তের শান্তির নিমিত্ত এই মন্ত্রগুলির দ্বারা আজ্য হোম করণীয় (কৌ. ১৩/৭)। চন্দ্রগ্রহণরূপ দুর্নিমিত্তের শান্তির নিমিত্ত এই মন্ত্রগুলির দ্বারা উপাসনা করণীয় (কৌ. ১৩/৮)। ভাস্করের প্রীতির উদ্দেশ্যে ক্রিয়মান আদিত্যমণ্ডলদানে এই অনুবাকের দ্বারা মণ্ডলাকার অপূপ (পিষ্টক) অভিমন্ত্রণ, আয়ুয্যগণে পঠিতব্য হওয়ার কারণে এই অনুবাকের দ্বারা আজ্য হোম, ইত্যাদি সম্পর্কিত বিনিয়োগগুলি নক্ষত্র কল্প (১৭,১৮), বৈতান (১/৩) ইত্যাদিতে উক্ত হয়েছে। (১৭কা, ১অ. ১সূ.)।

.

দ্বিতীয় সূক্ত : অভ্যুদয় প্রার্থনা

 [ঋষি : ব্রহ্মা দেবতা : আদিত্য ছন্দ : জগতী, অষ্টি, ধৃতি, শক্করী, কৃতী, প্রকৃতি, ককুপ, বৃহতী, অনুষ্টুপ, ত্রিষ্টুপ]

ত্বমিাসি বিশ্বজিৎ সর্ববিৎ পুরুহুতমিন্দ্র। বৃমিমেং সুহবং স্তোমমেরয়স্ব স নো মৃড় সুমতৌ তে স্যাম তবে বিষ্ণো বহুধা বীর্যাণি। ত্বং নঃ পৃণীহি পশুভির্বিশ্বরূপৈঃ সুধায়াং মা ধেহি পরমে ব্যোমন্ ॥১॥ অদক্কো দিবি পৃথিব্যামুতাসি ন ত আপুর্মহিমানমন্তরিক্ষে। অদনে ব্ৰহ্মণা বাক্বানঃ স ত্বং ন ইন্দ্র দিবি। যংছর্ম যচ্ছ তবেদ বিষ্ণো বহুধা বীর্যাণি। ত্বং নঃ পৃণীহি পশুভির্বিশ্বরূপৈঃ সুধায়াং মা ধেহি পরমে ব্যোম৷ ২৷ যা ত ইন্দ্র তরঙ্গু যা পৃথিব্যাং যান্তরগ্নেী যা ত ইন্দ্র পবমানে স্বৰ্বিদি। যয়েন্দ্র তন্বাহন্তরিক্ষং ব্যাপিথ তয়া ন ইন্দ্র তন্ব শৰ্ম যচ্ছ। তবে বিষ্ণো বহুধা বীর্যাণি। ত্বং নঃ পৃনীহি পশুভির্বিশ্বরূপৈঃ সুধায়াং মা ধেহি পরমে ব্যোম ৷৩৷৷ ত্বামি ব্ৰহ্মণা বর্ধয়ন্তঃ সত্রং নি যেদুঋষয়গা নাধমানাস্তবে বিষ্ণো বহুধা বীর্যাণি। ত্বং নঃ পৃণীহি পশুভির্বিশ্বরূপৈঃ সুধায়াং মা ধেহি পরমে ব্যোমন্ ॥৪॥ ত্বং তৃতং ত্বং পৰ্যেষৎসং সহস্রধারং বিদথং স্বর্বিদং তবে বিষ্ণো বহুধা বীর্যাণি। ত্বং নঃ পৃণীহি পশুভির্বিশ্বরূপৈঃ সুধায়াং মা ধেহি পরমে ব্যোম ॥৫॥ এয়াং। ত্বং রক্ষসে প্রদিশশ্চতভ্রং শোচি নভসী বি ভাসি। ভূমিমা বিশ্বা ভুবনানু তিষ্ঠস ঋতস্য পন্থমন্বেষি বিদ্বাংস্তবে বিষ্ণো বহুধা বীর্যাণি। ত্বং নঃ পৃণীহি পশুভির্বিশ্বরূপৈঃ সুধায়াং মা ধেহি পরমে ব্যোম ॥ ৬। পঞ্চভিঃ পরাঙ তপস্যেকয়ার্নাঙশস্তিমেষি সুদিনে বাধমানস্তবে বিষ্ণু বহুধা বীর্যাণি। ত্বং নঃ পৃণীহি পশুভির্বিশ্বরূপৈঃ সুধায়াং মা ধেহি পরমে ব্যোমনু ॥৭॥ ত্বমিং মহেন্দ্রং লোকং প্রজাপতিঃ। তুভ্যং যজ্ঞো বি তায়তে তুভ্যং জুহুতি জুতস্তবে বিষ্ণো বহুধা বীর্যাণি। ত্বং নঃ পৃণীহি পশুভির্বিশ্বরূপৈঃ সুধায়াং মা ধেহি পরমে ব্যোম ৷৮ অসতি সৎ প্রতিষ্ঠিতং সতি ভূতং প্রতিষ্ঠিত। ভূতং হ ভব্য আহিতং ভব্যং ভূতে প্রতিষ্ঠিতং তবে বিষ্ণো বহুধা বীর্যাণি। ত্বং নঃ পৃণীহি পশুভিৰ্বিশ্বরূপৈঃ সুধায়াং মা ধেহি পরমে ব্যোমন্॥৯॥ শুক্ৰোহসি ভ্ৰাজোহসি। স যথা ত্বং ভ্রাজ ভ্ৰাজোহস্যেবাহং ভ্রাতা ভ্রাজ্যাসম্ ॥১০.

বঙ্গানুবাদ –হে পরমেশ্বর্যবান্ ইন্দ্রাত্মক সূর্য! তুমি বিশ্বজিৎ (অর্থাৎ জগৎ-সংসারের বশীকর্তা (বা অধিপতি)। তুমি সর্ববিৎ (অর্থাৎ সকলের প্রেরকত্বের কারণে সর্বাত্মক)। হে ইন্দ্র! তুমি পুরুহুত (অর্থাৎ যজমানগণের দ্বারা তাদের আপন আপন যাগসিদ্ধির নিমিত্ত প্রভূতরূপে আহূত। হে ইন্দ্র! ইদানীং সর্বতঃ ক্রিয়মাণ-প্রকার শোভন আহ্বান-সাধন স্তবের (বা স্তুতির) প্রেরণ দান করো (অথবা এই স্তোত্র সমূহকে স্বীকার করো)। তুমি আমাদের সুখ প্রদান করো। আমরা তোমার শোভন অনুগ্রহ বুদ্ধিতে অবস্থান করবো। হে অনন্ত বীর্যশালী বিষ্ণুরূপী সূর্য! তুমি আমাদের বহু প্রকারের পশু সমূহে পূর্ণ করো এবং দেহান্তের পর সুধাময় পরম ব্যোমে স্থাপন করো। ১।

হে ইন্দ্রাত্মক সূর্য! তুমি দ্যুলোকে কোনও রাক্ষস ইত্যাদির দ্বারা, বা পৃথিবীতে কোনও ভূচরের দ্বারা, বা অন্তরিক্ষেও কারো দ্বারা তুমি হিংসিত হওনি। অতি কঠোর তেজস্বী হওয়ায় এই তিন লোকও তোমার সন্তাপলক্ষণ মহিমা আপ্ত করতেই সক্ষম হয় না (তো তোমাকে দমন করবে কেমন করে?)। এমন কি, তুমি অসীম শক্তির দ্বারা সম্পন্ন গায়ন্ত্রী মন্ত্রে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হতে থাকছে (অর্থাৎ অন্যের অলভ্য মাহাত্মে তুমি মহীয়া)। হে ইন্দ্র! তুমি দিবি অর্থাৎ দ্যুলোকে আমাদের সুখ প্রদান করো। হে অনন্ত বীর্যশালী বিষ্ণুরূপী সূর্য! তুমি আমাদের বহু প্রকারের পশু সমূহে পূর্ণ করো এবং দেহান্তের পর সুধাময় পরম ব্যোমে স্থাপিত করো ॥ ২॥

(ইখং মণ্ডলাভিমানিনঃ সূর্যস্য মাহাত্ম্যং উপবর্ণ বহুবিধং  স্বাভিষ্টমপি অর্থয়িত্বা….ইত্যাদি–অর্থাৎ এতক্ষণ এইভাবে মণ্ডলাভিমানী সূর্যের মাহাত্ম্য বর্ণনা পূর্বক নিজের নানা অভীষ্ট প্রার্থনার পর সূর্যের পঞ্চ মহাভূতস্থ অর্থাৎ ক্ষিতি-অপ-তেজঃ মরুৎ-ব্যোমে বিরাজমান মূর্তিগুলির নিকট অথর্ববেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ আপন অভীষ্ট প্রার্থনা করছেন)–হে পরমেশ্বর্যযুক্ত সূর্য (অথবা প্রসিদ্ধ ইন্দ্র)! জলরাশির মধ্যে তোমার যে মূর্তি আছে, সেই মূর্তি সমূহের দ্বারা আমাদের সুখ প্রদান করো; (অর্থাৎ জলে বিদ্যমান সারভূত অমৃত, ভৈষজ্য ইত্যাদির দ্বারা সুখ সম্পাদিত করো। হে ইন্দ্র! পৃথিবীতে তোমার যে তন্ আছে, সেই তনুর দ্বারা (অর্থাৎ পৃথিবীর অভিমানী দেবমূর্তিগুলির মাধ্যমে) আমাদের সুখ প্রদান করো; (অর্থাৎ পৃথিবীর বিকারভূত অন্ন ইত্যাদির দ্বারা সম্পন্ন করো)। অগ্নিতে ব্যাপ্ত তোমার যে তনু আছে, সেই মূর্তির দ্বারা তুমি আমাদের সুখ প্রদান করো; (অর্থাৎ তোমার তেজোময় মূর্তি সমূহের দ্বারা দাহ-পাক-প্রকাশ ইত্যাদির দ্বারা সুখ প্রদান করো)। (বাহিরের অনুকূল স্পর্শের জন্য এবং অন্তরের প্রাণ ইত্যাদি বায়ুর চিরকাল সঞ্চারের নিমিত্ত) স্বর্গের জ্ঞাতা প্রবহমান বায়ুতে তোমার যে মূর্তি আছে, সেগুলির দ্বারা তুমি আমাদের সুখ প্রদান করো। হে ইন্দ্র! অন্তরিক্ষ ব্যেপে তোমার যে মূর্তি সমূহ আছে, সেগুলির দ্বারা তুমি আমাদের (বৃষ্টি ইত্যাদির দ্বারা সাধ্য) সুখ প্রদান করো। হে অনন্ত বীর্যশালী, বিষ্ণুরূপী সূর্য! তুমি আমাদের বহু প্রকারের পশু সমূহে পূর্ণ করো এবং দেহান্তের পর সুধাময় পরম ব্যোপে স্থাপিত করো ৷৩৷

হে ইন্দ্রাত্মক সূর্য! অভীষ্ট ফলসমূহের অভিলাষী হয়ে পুরাতন-কালীন (অঙ্গিরা প্রভৃতি) ঋষিগণ অভিমত ফল যাচনা করে তোমাকে স্তোত্র ইত্যাদির দ্বারা প্রবুদ্ধ করেছিলেন (অথবা সোম, পশু ইত্যাদি রূপ হবিঃর দ্বারা অভিবর্ধন করেছিলেন)। হে অনন্ত বীর্যশালী বিষ্ণুরূপী সূর্য! তুমি আমাদের বহু প্রকারের পশু সমূহে পূর্ণ করো এবং দেহান্তের পর পরম ব্যোমে অমৃতময় স্থানে প্রতিষ্ঠিত করো। ৪।

হে ইন্দ্রাত্মক সূর্য! তুমি বিস্তীর্ণ অন্তরিক্ষে ব্যাপ্ত হয়ে অপরিমিত ধারাশালী মেঘকে প্রাপ্ত হয়েছে। (অর্থাৎ সেই সহস্রধার মেঘ ঔষধি-বনস্পতির অভিবৃদ্ধি সাধিত করে স্বর্গ-সুখের উৎসরূপ সাক্ষাৎ যজ্ঞের স্বারূপ্য প্রাপ্ত হয়েছে)। হে অনন্ত বীর্যশালী বিষ্ণুরূপী সূর্য। তুমি আমাদের বহু প্রকারের পশু সমূহে পূর্ণ করো এবং দেহান্তের পর পরম ব্যোমের অমৃতে প্রতিষ্ঠিত করো ৫

হে সূর্য! তুমি পূর্ব ইত্যাদি চারিটি দিককে পালন (বা রক্ষা) করছে; (অর্থাৎ তথাকার সকল লোককে বা প্রাণীসমূহকে পালন করছে)। তুমি আপন প্রকাশের দ্বারা আকাশ ও পৃথিবীকে প্রকাশিত করে থাকো। তুমি যজ্ঞের বা জলের মার্গ অন্বেষণ করে ক্রমে ক্রমে তা ব্যাপ্ত করছো; (যেমন বিদ্বান্ ব্যক্তি যজ্ঞের অবস্থিতি জ্ঞাত হন; অর্থাৎ কখনও কোন পদার্থ অজ্ঞাত থাকলে তা অন্বেষণ করে জ্ঞাত হন, সেই ভাবে তুমি যজ্ঞের মার্গ অন্বেষণ করে জ্ঞাত হয়েছে)। হে অনন্ত বীর্যশালী বিষ্ণুরূপী সূর্য! তুমি আমাদের বহু প্রকারের পশু সমূহে পূর্ণ করো এবং দেহান্তের পর পরম ব্যোমের অমৃতময় স্থানে প্রতিষ্ঠিত করো ॥ ৬।

হে সূর্য! তুমি পঞ্চ দীধিতির (অর্থাৎ কিরণের) দ্বারা পরা অর্থাৎ উধ্বমুখ হয়ে উপরিতন (স্বঃ-মহঃ-জন-তপঃ ও সত্য) লোকে প্রকাশ প্রাপ্ত হয়ে থাকো এবং একটি দীধিতির দ্বারা অবাঙ অর্থাৎ অধোমুখ হয়ে (ভূলোকে) তাপ প্রদান করে থাকো। এই রূপে, সুদিনে অর্থাৎ শোভনদিবসে নীহার (হিম), মেঘ ইত্যাদির উপদ্রবরহিত দিবসে পৃথিবীকে একটি দীধিতিতে তাপ প্রদান করে নিন্দাভাজন হয়েছে। (অথবা নিম্নমুখী তেজঃ চক্ষুগম্য হওয়ায় একটি অংশরূপে ও ঊর্ধ্বমুখী পঞ্চ তেজঃ অসীম–এমন প্রতিভাত হওয়ায় সকলের স্তুতিভাজন হয়েছে)। হে অনন্ত বীর্যশালী বিষ্ণুরূপী সূর্য! তুমি আমাদের বহু প্রকারের পশু সমূহে সমৃদ্ধ করো এবং দেহান্তের পর পরম ব্যোমের অমৃতময় স্থানে স্থাপিত করো। ৭।

হে সূর্য! তুমি (স্বর্গাধিপতি) ইন্দ্র, তুমিই (মহত্বগুণবিশিষ্ট) মহেন্দ্র। (তান্ত্রিকগণ বিশেষণ ভেদে দেবতার ভেদ করে থাকেন)। তুমিই পুণ্যাত্মাগণের প্রাপ্য স্বর্গ ইত্যাদি লক্ষণ সমন্বিত লোক; (অথবা পরব্রহ্মের স্বরূপত্বের কারণে সর্বকোত্মক)। তুমিই প্রাণীগণের রচয়িতা; এই কারণে যজমানগণ তোমার প্রীতি সম্পাদনের উদ্দেশ্যে জ্যোতিষ্টোম ইত্যাদি বিস্তাৰ্যমান যজ্ঞে আহুতি প্রদান করছেন; এবং হোমে আহুতি প্রদান করছেন। (যাজ্যা ও পুরোনুবাকা পুরঃসর হৃয়মান যজ্ঞ হলো যাগ, তা ব্যতিরেকে আহুতি হলো হোম)। হে বীর্যশালী বিষ্ণুরূপী সূর্য! তুমি আমাদের বহু প্রকারের পশু সমূহে সমৃদ্ধ করো এবং দেহান্তের পর পরম ব্যোমের অমৃতময় স্থানে প্রতিষ্ঠিত করো ॥ ৮।

 অসতের (অর্থাৎ চক্ষু ইত্যাদির অবিষয়ী হওয়ায়, দর্শনের যোগ্য না হওয়ায়, অসৎ সংজ্ঞায় বিভূষিত মায়াময় ব্রহ্মেরই) মধ্যে ভূতস্রষ্টা ব্রহ্মের স্বরূপে, হে সূর্য! তুমি অধিষ্ঠিত আছো। হে বীর্যশালী বিষ্ণুরূপী সূর্য! তুমি আমাদের বহু প্রকারের পশু সমূহে সমৃদ্ধ করো এবং দেহান্তের পর পরম ব্যোমের অমৃতময় স্থানে প্রতিষ্ঠিত করো ॥ ৯

হে সূর্য! তুমি শুক্র (অর্থাৎ অতিবিশদ স্বচ্ছ প্রকাশরূপ বা শুক্রগুণযুক্ত বা অত্যন্ত নির্মল স্বরূপ) হয়ে থাকো। সর্বলোককে প্রকাশিত করণশালী তেজের দ্বারা তুমি জ্যোতির্ময় (ভ্ৰাজমান) হয়ে আছো। (সেই হেন তোমার মতোই) তোমার উক্ত স্বরূপের উপাসক আমি জ্যোতির্ময় শরীরকান্তি প্রাপ্ত হয়ে দীপ্ত হবো। (অর্থাৎ–তেজোগুণযুক্ত সূর্যের উপাসকও তেজোগুণসম্পন্ন হয়–এটাই যুক্তি)। ১০।

.

তৃতীয় সূক্ত : অভ্যুদয় প্রার্থনা

[ঋষি : ব্রহ্মা দেবতা : আদিত্য ছন্দ : জগতী, অষ্টি, ধৃতি, শক্করী, কৃতী, প্রকৃতি, ককুপ, বৃহতী, অনুষ্টুপ, ত্রিষ্টুপ]

 রুচিরসি রোচোহসি। স যথা ত্বং রুচ্যা রোচোহস্যেবাহং পশুভি ব্রাহ্মণবৰ্চসেন চ রুচিশীয় ॥১॥ উদ্যতে নম উদায়তে নম উদিতায় নমঃ। বিরাজে নমঃ স্বরাজে নমঃ সম্রাজে নমঃ ॥ ২॥ অস্তংয়তে নমোহস্তমেষ্যতে নমোহস্তমিতায় নমঃ। বিরাজে নমঃ স্বরাজে নমঃ সম্রাজে নমঃ ॥ ৩ উদগাদয়মাদিতত্যা বিশ্বেন তপসা সহ। সপত্ন মহ্যং রন্ধয় মা চাহং দ্বিষতে ধং তবে বিষ্ণো বহুধা বীর্যাণি। ত্বং নঃ পৃণীহি পশুভির্বিশ্বরূপৈঃ সুধায়াং মা ধেহি পরমে ব্যোমন্ ॥ ৪৷৷ আদিত্য নাবমারুক্ষঃ শতারিত্রাং স্বস্তয়ে। অহৰ্মাত্যপীপবো রাত্রিং সত্ৰাতি পারয় ॥৫৷৷ সূর্য নাবমারুক্ষ শতারিত্ৰাং স্বস্তয়ে। রাত্রিং মাত্যপীপরোহহঃ সত্ৰাতি পায়। ৬। প্রজাপতেরাবৃত ব্ৰহ্মণা বর্মণাহং কশ্যপস্য জ্যোতিষ বচসা চ। জরদষ্টিঃ কৃতবীর্যো বিহায়াঃ সহস্ৰায়ুঃ সুকৃতশ্চরেয়ম্ ॥৭॥.. পরীবৃতো ব্ৰহ্মণা বর্ণণাহং কশ্যপস্য জ্যোতিষ বচসা চ। মা মা প্রাপন্নিষবো দৈব্যা যা মা মানুষীরবসৃষ্টা বধায় ॥ ৮৷ ঋতেন গুপ্ত ঋতুভিশ্চ সর্বৈভূতেন গুপ্তো ভব্যেন চাহম। মা মা প্রাপৎ পাপমা মোত মৃত্যুরন্তর্দধেহহং সলিলেন বাচঃ ॥৯॥ অগ্নিৰ্মা গোঙা পরি পাতু বিশ্বত উদ্যসূর্যো নুদতাং মৃত্যুপাশা। বাচ্ছন্তীরূষসঃ পর্বতা ধ্রুবাঃ সহস্রং প্রাণা ময্যা যতন্তাম্ ॥১০৷৷

বঙ্গানুবাদ –হে সূর্য! তুমি রুচিমান অর্থাৎ প্রকৃষ্ট দীপ্তিমা৷ তুমি যেমন জগৎসংসারকে প্রকাশিত করণশালিনী দীপ্তির দ্বারা দীপ্ত হয়ে আছে, তেমনই আমিও পশুর দ্বারা (অর্থাৎ গো-মহিষ ইত্যাদির দ্বারা) এবং ব্রাহ্মণের বর্ডসের দ্বারা (অর্থাৎ বেদাধ্যয়ন, তপস্যা ইত্যাদির মাধ্যমে ব্রাহ্মণের অর্জিত ব্রহ্মতেজের দ্বারা) দীপ্ত হবো ৷৷ ১।

হে সূর্য! উদয়াচল প্রাপ্ত তোমাকে নমস্কার; অর্ধ-উদিত ও সম্যক ঊর্ধ্বপ্রাপ্ত তোমাকে নমস্কার। একদেশোদিত বিরাজ বা বিরাডাত্মক (অর্থাৎ পরমেশ্বরের সকল লোকাত্মক স্থূল-শরীরাভিমানী পুরুষশব্দবাচী দেবরূপী) তোমাকে নমস্কার। অর্ধ-উদিত স্বরাজ বা স্বরাডাত্মক (অর্থাৎ ভূতপঞ্চকের সারাত্মক পরমেশ্বরের সর্বসমষ্টিরূপ সূক্ষ্মশরীরের অভিমানী হিরণ্য গৰ্ভরূপী) তোমাকে নমস্কার। পূর্ণ উদিত সম্রাজ বা সম্রাডাত্মক (অর্থাৎ পরমেশ্বরের কারণশরীরাভিমানী সকল-ভূত ভৌতিক-প্রপঞ্চস্রষ্টা মায়া–উপাধিক ঈশ্বররূপী) তোমাকে নমস্কার। (এইরূপে বিরাট, স্বরাষ্ট্র ও সম্রাট অর্থাৎ অগ্নি-বায়ু-আদিত্য আখ্যাত পরমেশ্বরের তিনটি মূর্তিকে পৃথক পৃথক ভাবে নমস্কার করা হয়েছে)। ২।

(হে সূর্য!) অস্তাচলে গমনোদ্যত (অর্থাৎ কিঞ্চিৎ অস্তমিত) বিরাট নামে আখ্যাত তোমাকে নমস্কার। অর্ধ-অস্তমিত স্বরা নামে আখ্যাত তোমাকে নমস্কার। সম্পূর্ণরূপে অস্তপ্রাপ্ত সম্রাট নামে আখ্যাত তোমাকে নমস্কার। এইভাবে বিরাট, স্বরা ও সম্রাট-রূপী (পূর্বে ব্যাখ্যাত) তোমাকে নমস্কার ৷৷ ৩৷৷

সর্ব লোককে পূর্ণভাবে সন্তাপ-দানশীল রশ্মিনিচয় সহ পরিদৃশ্যমান আদিত্য উদিত হয়েছেন। (সূর্যের রশ্মিজালে রাক্ষসাদিকৃত অপকর্মগুলি : ন্যূনতা, প্রাপ্ত হয়, এটাই বিশেষিত)। হে উদ্যত আদিত্য! তোমার অনুগ্রহে (উদয়তস্তবানুগ্রহাৎ) আমার সপত্ন অর্থাৎ শত্রুগণ আমার বশীভূত হোক; আমি যেন আমার দ্বেষ্যগণের বশীভূত না হই। হে বীর্যশালী বিষ্ণুরূপী সূর্য! তুমি আমাদের বহু প্রকারের পশু সমূহে পূর্ণ করো এবং দেহান্তের পর পরম ব্যোমের অমৃতময় স্থানে প্রতিষ্ঠিত করো। ৪।

 হে আদিত্য! সকল প্রাণীর স্বস্তির নিমিত্ত তাদের ব্যোমরূপ (বা জগৎসংসাররূপ) সমুদ্র উত্তীর্ণ করানোর উদ্দেশে তুমি (গ্রহমণ্ডলকে আকর্ষণকারী বায়ুরূপ) শত (বা অপরিমিত) অরিত্রযুক্ত (বা রশ্মিসমন্বিত) রথলক্ষণান্বিত নৌকায় আরূঢ় হয়েছে। (অরিত্র হলো নৌকার জল-আকর্ষণকারী কর্ণ, হাল বা দাঁড়)। এই হেন নৌকায় আরূঢ় হয়ে তুমি আমাদের (আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক–এই ত্রিবিধ বিঘ্ন বা দুঃখ। পরিহার করিয়ে) দিনের পার প্রাপ্ত করিয়ে দাও। এইরূপে আমাদের রাত্রিরও পরপার প্রাপ্ত করাও। (অর্থাৎ দিবা ও রাত্রির মধ্যে ব্যবধান না করে পার করাও)।–(এই মন্ত্রের দ্বারা মরণ ইত্যাদির ভীতি, জ্বর-শিরোব্যথা ইত্যাদি পরিহারের দ্বারা আয়ুর অভিবৃদ্ধি প্রার্থিত হয়ে থাকে)। ৫।

 হে আদিত্য! সকল প্রাণীর কল্যাণের (স্বস্তির) নিমিত্ত তাদের ব্যোমরূপ সমুদ্র উত্তীর্ণ করানোর উদ্দেশে শত অরিত্রযুক্ত রথলক্ষণান্বিত নৌকায় আরূঢ় হয়েছে। এই হেন নৌকায় আরূঢ় হয়ে তুমি আমাদের রাত্রির পার প্রাপ্ত করিয়ে দিয়েছো;এবার দিনও পার করিয়ে দাও ৬

প্রজাপতিরূপ সূর্যের (অথবা প্রজাগণের স্রষ্টা হিরণ্যগর্ভের) তেজোরূপ করচের দ্বারা বেষ্টিত (বা আচ্ছাদিত) হয়ে, কিম্বা সূর্য-মূর্তির প্রভেদভূত কশ্যপের প্রকাশময় জ্যোতিরাশির দ্বারা আবৃত হয়ে, আমি (অবিচ্ছিন্ন) জরাকাল পর্যন্ত অশন (অর্থাৎ ভোজন) লাভ করে, আরোগ (অর্থাৎ দৃঢ় অঙ্গসম্পন্ন) হয়ে, অপরিমিত বীর্যশালী হয়ে (বা অনেক পুত্র ইত্যাদি উৎপাদনের সামর্থোপেত হয়ে), সর্বত্র অপ্রতিহত গতিসম্পন্ন হয়ে (বিহায়াঃ), অপরিমিত আয়ুঃশালী হয়ে (সহস্ৰায়ুঃ), সুষ্ঠু সংস্কৃত হয়ে (সুকৃতঃ), (অথবা লৌকিক ও বৈদিক কর্তব্য সমূহ পালন করে) পৃথিবীর সর্বত্র গমন করবো। ৭।

আমি সূর্যের ও কশ্যপরূপ আদিত্যের মন্ত্রময় কবচের দ্বারা আচ্ছাদিত। আমি তেজঃ ও রক্ষাত্মক রশ্মিরাশির দ্বারা রক্ষিত আছি। এই কারণে আমার প্রতি হিংসার উদ্দেশে দেবতা ও মনুষ্যবর্গের দ্বারা প্রযুক্ত বাণসমূহ যেন আমার প্রাপ্য না হয় (অর্থাৎ আমাকে যেন বধ করতে না পারে) ॥ ৮৷

 আমি ঋতের (যথার্থ সত্যের) দ্বারা (অথবা আদিত্যাখ্য সত্যস্বরূপ ব্রহ্মের দ্বারা) গুপ্ত (অর্থাৎ রক্ষিত) আছি। তথা (বসন্ত ইত্যাদি) সকল ঋতুর দ্বারা রক্ষিত আছি। তথা ভূতের (অর্থাৎ পূর্বকালে উৎপন্ন পদার্থনিচয়ের) দ্বারা রক্ষিত আছি। আমি ভব্যের (অর্থাৎ ভাবীকালে উৎপাদিতব্য পদার্থ সমূহের) দ্বারা রক্ষিত। অতএব নরকের হেতুভূত পাপ যেন আমাকে না প্রাপ্ত হতে পারে এবং মরণকর্তা দেবও যেন আমার সমীবর্তী হতে না পারেন। আমি মন্ত্রের দ্বারা অভিমন্ত্রিত জলে। অন্তর্হিত হয়ে থাকবো। (অর্থাৎ লোকে যেমন সলিলের মধ্যে অন্তর্হিত প্রাণীকে কেউ দর্শন করতে পারে না, সেই রকমেই আমি মন্ত্রময় সলিলে পাপ ইত্যাদির বাধারাহিত্য হয়ে নিজেকে গোপন করে রাখবো) ॥৯॥

অগ্নিদেব আপন আশ্রিতের রক্ষক; তিনি আমাকে (সঃ) ভয় হতে রক্ষা করুন। তথা সূর্যদেব উদয় মুহূর্তেই (সর্প-অগ্নি-ব্যাঘ্র-কন্টক ইত্যাদি রূপ) মৃত্যুর পাশগুলি অপসারিত করে দিন; সেগুলি যাতে আমাকে স্পর্শ করতে না পারে, তেমন করুন। তথা (উদয়পূর্বকালভিমানিনী) উদেবতাবৃন্দ এবং ধ্রুব (অর্থাৎ নিশ্চল বা স্থির) পর্বর্তসমূহ (যথা হিমালয় ইত্যাদি শৈলগুলি) মৃত্যুপাশ সমুদায়কে দূর করুক (অথবা মাং অনুগৃদ্ধৃতি…–অর্থাৎ আমাকে অনুগৃহীত করুক)। তাদের (অর্থাৎ অগ্নি ইত্যাদির) অনুগ্রহে সহস্র (অর্থাৎ অপরিমিত) প্রাণ আমার আয়ুর কামনায় সর্বতোভাবে চেষ্টা করুক ॥ ১০

টীকা –উপযুক্ত দ্বিতীয় ও তৃতীয় সূক্তদ্বয়ের বিনিয়োগ প্রথম সূক্তেই উল্লেখিত হয়েছে। তৃতীয় সূক্তের ৪র্থ মন্ত্রের একটি অতিরিক্ত বিনিয়োগ সেখানেই উল্লেখ করা হয়েছে। (১৭কা, ১অ. ২-৩সূ.)।

[ইতি সপ্তদশং কাণ্ডং সমাপ্তম]

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *