2 of 3

০৭।০৯ সপ্তম কাণ্ড : নবম অনুবাক

নবম অনুবাক
প্রথম
সূক্ত : সুত্ৰামা ইন্দ্রঃ
[ঋষি : অথর্বা দেবতা : চন্দ্রমা, ইন্দ্র ছন্দ : ত্রিষ্টুপ ]

ইন্দ্রঃ সুত্রামা স্ববাঁ অবোভিঃ সুমৃড়ীকো ভবতু বিশ্ববেদাঃ। বাধতাং দ্বেষো অভয়ং কৃপোতু সুবীর্যস্য পতয়ঃ স্যাম ॥১॥–

বঙ্গানুবাদ –সুষ্ঠু ত্রাতা, ধনবান্ বা হিতাত্মা, বিশ্ববেদা (অর্থাৎ সকলের জ্ঞাতা) ইন্দ্রদেব আমাদের সুখপ্রদান করুন, আমাদের রক্ষক হোন, আমাদের শত্রুগণকে বিনাশ করুন। তিনি আমাদের ভয় বিদূরিত করুন। আমরা যেন সুন্দর বীর্যযুক্ত ধনের অধিপতি হই। ১।

.

দ্বিতীয় সূক্ত : সুত্রামা ইন্দ্রঃ

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : চন্দ্রমা, ইন্দ্র ছন্দ : ত্রিষ্টুপ ]

স সুত্রামা স্ববা ইন্দ্রো অম্মদারাচ্চিদ দ্বেষঃ সনুতযুয়োতু। তস্য বয়ং সুমতৌ যজ্ঞিয়স্যাপি ভদ্রে সৌমনসে স্যাম ॥১॥

বঙ্গানুবাদ –সেই সুষ্ঠু ত্রাতা, ধনবান ও প্রসিদ্ধ ইন্দ্রদেব আমাদের শত্রুগণকে দূর হতেই ॥ বিতাড়িত করে দিন। আমরা সেই যজ্ঞযোগ্য ইন্দ্রদেবের কৃপা রূপ মতিতে অবস্থিত থেকে তার নিকট হতে মঙ্গল প্রাপ্ত হতে থাকবো ॥ ১।

.

তৃতীয় সূক্ত: শত্রুনাশনম

 [ঋষি : ভৃগ্বঙ্গিরা দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : গায়ত্রী ]

 ইন্দ্ৰেণ মোনা বয়মভি শ্যাম পৃতন্যতঃ। ঘন্তো বৃত্ৰাণ্যপ্রতি ॥১॥

 বঙ্গানুবাদ— ইন্দ্রের সহায়তায় তাঁর কোপের সাহায্যে আমাদের সাথে যুদ্ধ কামনাশালী শত্রুগণকে আমরা বশীভূত করবো; তাদের মধ্যে কাউকেই পরিত্রাণ পেতে দেবো না এবং তাদের নিঃশেষে বিনাশ করবো ॥১॥

.

চতুর্থ সূক্ত : সাংমনস্যম

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : সো ছন্দ : অনুষ্টুপ]

 ধ্রুবং ধ্রুবেণ হবিষাব সোমং নয়ামসি। যথা ন ইন্দ্রঃ কেবলীর্বিশঃ সংমনসস্করৎ ॥১॥

বঙ্গানুবাদ— ধ্রুবের ন্যায় সুপ্রতিষ্ঠিত পুরোডাশ ইত্যাদির দ্বারা যুক্ত (বা ধ্রুবের ন্যায় স্থির বা ধ্রুবগ্রহস্থ) রাজা সোমকে রথাসীন করে আমরা আনয়ন করছি। ইন্দ্র আমাদের সন্তানগণকে অসাধারণ ও সমান মনঃসম্পন্ন করুন। ১।

.

পঞ্চম সূক্ত : শত্রুনাশনম্

 [ঋষি : কপিঞ্জল দেবতা : গৃধ্রদ্বয় ছন্দ : অনুষ্টুপ]

 উদস্য শ্যাবৌ বিহূরৌ গৃস্ত্রেী দ্যামিব পেততুঃ। উচ্ছোচনপ্রশোচনাবস্যোচ্ছোচনৌ হৃদঃ ॥ ১। অহমেনাবুদতিষ্ঠিপং গাবৌ শ্রান্তসদাবিব। কুকুরাবিব কূজন্তাবুদবস্তেী বৃকাবিব। ২। আততদিনৌ নিতোদিনাবথো সন্তোদিনাবুত। অপি নহ্যাম্যস্য মেট্রং য ইতঃ স্ত্রী পুমান্ জভার ॥ ৩॥–

বঙ্গানুবাদ— নিজেকে মকরূপে ভাবিত এই শত্রুর সততঃ চলনশীল কপিশবর্ণ ওষ্ঠ বিদীর্ণ হয়ে যাক, বা তার প্রাণ ও অপান আকাশে শকুনিদ্বয়ের উড্ডয়নের মতো উড্ডীন হয়ে যাক। উৎকৃষ্ট শোককারক উচ্ছোটন ও প্রকর্ষের সাথে শোকদায়ক প্রশোচন নামক মৃত্যুদূতদ্বয় এই শত্রুর হৃদয়কে শোকসন্তপ্ত করে তুলুক। ১৷

 প্রযোক্তা (অর্থাৎ মন্ত্রের প্রয়োগকারী) আমি তেমনভাবেই এই কপিশবর্ণ ওষ্ঠশালী শত্রুর প্রাণ ও অপানকে বলাৎকার পূর্বক উৎপাটিত করছি, যেমনভাবে ক্লান্ত হয়ে গোষ্ঠে শায়িত বলদদ্বয়কে দণ্ডমূলের আঘাতে উত্থিত করা হয়, বা যেমনভাবে অসহনীয় (ঘেউ ঘেউ) রর্বকারী কুকুরদ্বয়কে ক্ষুদ্র পাষাণ-প্রহরণ ইত্যাদি নিক্ষেপ করে অপসারিত করা হয়, বা যেমনভাবে গো-পালকগণ গোযূথমধ্যে বৎস উদগ্রহণপূর্বক ধাবমান বৃকদ্বয়কে বিতাড়িত করে থাকে। ২

শত্রুর ওষ্ঠদ্বয় বা প্রাণাপানদ্বয়কে সর্বাবয়বে ক্লেশদায়ক, নিয়ত বা নিকৃষ্টরূপে ব্যথাদায়ক বা সহনশীলতায় বাধাকারীরূপে উচ্ছেদ করে ফেলবো। যে স্ত্রী বা পুরুষ বিদ্বেষী হয়ে আমাদের এই স্থান হতে ধন অপহরণ করেছে, সেই শত্রুর উপস্থ (বা মর্মস্থান) বন্ধন করে দিচ্ছি, আমি সেই শত্রুর প্রাণকে পৃথক করে দিচ্ছি ৷ ৩৷৷

.

ষষ্ঠ সূক্ত : শত্রুনাশনম্

[ঋষি : কপিঞ্জল দেবতা : বয়ঃ ছন্দ : অনুষ্টুপ ]

অসদন গাবঃ সদনেহপপ্তদ বসতিং বয়ঃ। আস্থানে পর্তা অস্তুঃ স্থামি বৃক্কাবতিষ্ঠিপম্ ॥১॥

বঙ্গানুবাদ –গাভীগণ যেমন গোষ্ঠের অভিমুখে গমন করে, পক্ষীগণ যেমন আপন নীড় পানে উড্ডীয়মান হয়ে চলে, পর্বত যেমন আপন স্থানে স্থিত হয়ে থাকে, তেমনই আমি শত্রুর আবাস স্থান, অর্থাৎ যেস্থানে সে স্ত্রী-পুত্র সমভিব্যাহারে অবস্থান করে, সেই শত্ৰুগৃহকে বৃক-বৃকীর আবাসস্থল অর্থাৎ অরণ্যে পরিণত করতে আকাঙ্ক্ষা করি। (অনেন শত্ৰুং নিঃশেষং হত্বা গৃহং অরণ্যং করোমীত্যর্থ উক্তো ভবতি)।১৷৷

.

সপ্তম সূক্ত : যজ্ঞঃ

 [ঋষি : অথর্বা দেবতা : ইন্দ্রাগ্নী ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, গায়ত্রী প্রভৃতি ]

যদদ্য জ্বা প্রয়তি যজ্ঞে অস্মিন্ হোতশ্চিকিত্বন্নবৃণীমহীহ। ধ্রুবময়ো ধ্রুবমুতা শবিষ্ঠ প্রবিদ্বান্ যজ্ঞমুপ যাহি সোমম্ ॥১॥ সমিন্দ্র নো মনসা নেষ গোভিঃ সং সূরিভিহরিবং স্বস্ত্যা। সং ব্ৰহ্মণা দেবহিতং যদস্তি সং দেবানাং সুমতৌ যজ্ঞিয়ানাম্ ॥ ২॥ যানাবহ উশতো দেব দেবাংস্তা প্রেরয় স্বে অগ্নে সধস্থে। জক্ষিবাংসঃ পপিবাংলো মধূন্যস্মৈ ধৰ্ত্ত বসবো বসূনি ॥ ৩॥ সুগা বো দেবাঃ সদনা অকর্ম য আজগ্ম সবনে মা জুষাণাঃ। বহমান ভরমাণাঃ স্বা বসূনি বসুং ঘর্মং দিবমা রোহতানু ॥ ৪। যজ্ঞং যজ্ঞ গচ্ছ যজ্ঞপতিং গচ্ছ। স্বাং যোনিং গচ্ছ স্বাহা ॥ ৫॥ এষ তে যজ্ঞো যজ্ঞপতে সহসূক্তবাকঃ। সুবীর্যঃ স্বাহা ৷ ৬ ৷ বষড়ঢুতেভ্যো বহুতেভ্যঃ। দেবা গাতুবিদা গাতুং বিত্ত্বা গাতুমিত ॥৭॥ মনসম্পত ইমং নো দিবি দেবেষু যজ্ঞ। স্বাহা দিবি স্বাহা পৃথিব্যাং স্বাহান্তরিক্ষে স্বাহা বাতে ধাং স্বাহা ॥ ৮৷৷

বঙ্গানুবাদ –হে দেবগণের হোতা, হে চিকিত্ব (অর্থাৎ জ্ঞানবান) অগ্নিদেব! ইদানীং এই প্রবর্তমান (ক্রিয়মাণ) যজ্ঞে আমরা তোমাকে তোমার হোতা (অর্থাৎ আহ্বতা) রূপে বরণ করছি। তোমার হোতরূপে আমরা তোমাকে বরণ করেছি, অতএব তুমি সর্বৰ্থ যজ্ঞাহঁ দেবগণকে পূজন করো এবং আমাদের কর্মের বৈকল্য (দোষ) দূরীভূত করো। আমাদের অভীপ্সিত ফলের উপায় জ্ঞাত হয়ে আমাদের এই সোমবন্ত যজ্ঞের নিকটে আগমন করো এবং দীয়মান এই হবির সেবা করো ৷৷ ১।

হে ইন্দ্র! আমাদের মনকে স্তুতিরূপ বাণীসমূহের সাথে যুক্ত করো যাতে আমরা প্রকৃষ্টরূপে তোমার স্তুতি-করণে সমর্থ হই (অথবা, আমাদের গো ইত্যাদি পশুসমূহে সম্পন্ন করো)। হে হ্যবান (হরি-নামক অশ্বশালী) ইন্দ্র! তুমি আমাদের বেদার্থ-জ্ঞান এবং সেই সম্পর্কিত। অনুষ্ঠানের সাথে যুক্ত করো। দেবতাবর্গের হিতকরণশালী অগ্নিহোত্র এবং, দেবতাবর্গের কৃপাপূর্ণ বুদ্ধির দ্বারা আমাদের সম্পন্ন করো ॥ ২॥

হে অগ্নি! তুমি যে হবির কামনাশালী দেবতাগণকে আহ্বান করেছে, সেই দেবতাগণকে সধস্থে (অর্থাৎ তাদের স্বকীয় স্থানে) প্রেরিত করো। হে বসুগণ! তোমরা পুরোডাশ ইত্যাদি ভক্ষণ পূর্বক, মধুর রসোপেত আজ্য ইত্যাদি পীতবন্ত হয়ে এই যজমানকে ধনরাশি প্রদান করো ৷৷ ৩৷৷

 হে দেবতাবর্গ! আমরা তোমাদের মার্গসমূহকে সরল করে দিয়েছি; এমনকি তোমাদের নিমিত্ত ভবন নির্মিত করে দিয়েছি। তোমরা আমাদের ধন প্রদান করে সর্বলোকের বাসয়িতা আদিত্যলোকে এবং তারপর নিজেদের বাসস্থান স্বর্গলোকে আরোহণ (বা প্রত্যাবর্তন) করো। ৪৷৷

হে যজ্ঞ! তুমি যে বিষ্ণুর দ্বারা প্রতিষ্ঠা প্রাপ্ত হয়েছে, সেই পূজনীয় পরমাত্মার নিকট গমন করো। তারপর যজ্ঞপালক যজমানের নিকট ফলের সাথে যুক্ত হয়ে আগমন করো। তারপর সংসারের কারণভূত শক্তি রূপ যোনি (অর্থাৎ সর্বজগকারণভূতা পারমেশ্বরী শক্তিকে) প্রাপ্ত হও। স্বাহুত এই আজ্য (ঘৃত) তোমার নিমিত্ত হোক (তবাধৃতি)। ৫

হে যজ্ঞপতি (যজমান)! যষ্টব্যদেবতাগণের নামকীর্তনপর এবং শোভন পুত্র-পৌত্র ইত্যাদির কর্মে সম্পন্ন এই যজ্ঞ তোমার কল্যাণের নিমিত্ত সামর্থ্যবান হোক। ৬

যে দেবতাগণের পূজা প্রথমে করা হয়নি, তাদের (অর্থাৎ সেই ইষ্ট দেবগণের) উদ্দেশে এই ঘৃতাহুতি প্রদত্ত হচ্ছে; এবং যাঁদের পূজা করা হয়ে গিয়েছে, তারাও এই ঘৃতাহুতি প্রাপ্ত হোন। হে দেবগণ! তোমরা যে মার্গ অবলম্বন করে এই যজ্ঞে আগমন করেছিলে, কর্মের সম্পন্নতার পর সেই মার্গ অবলম্বন করেই আপন স্থানে (বা লোকে), প্রত্যাবর্তন করো। ৭।

হে সর্বভূতের অন্তরাত্মাস্বরূপ মনেরও স্বামিন! আমাদের এই যজ্ঞকে স্বর্গস্থিত দেবতাগণে স্থাপিত করো। তারপর অন্তরিক্ষ, পৃথিবী ও আকাশে–সর্বকর্মাধার বায়ুতে স্থাপিত করো–ইতি স্বাহা সরস্বতী, অর্থাৎ এই কথা বাকদেবী সরস্বতী কর্তৃক কথিত হয়েছে। ৮

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –অত্র ইন্দ্রঃ সুব্রামাইত্যাদ্যে সূক্তে আদ্যেন তৃচেন গ্রামকামঃ ইন্দ্রং যজতে উপতিষ্ঠেত বা।…অগ্নিষ্টোমে (ধ্রুবং ধ্রুবেণ ইতি ঋচা) আসন্দীং নীয়মানং সোমরাজং অনুমন্ত্রয়েত। উক্তং বৈতানে)।…আভিচারিকে কর্মণি উদস্য শ্যাবো ইতি তৃচেন আজ্যং জুহুয়াৎ।…অভিচারকর্মণি অসদন গাবঃ ইতি ঋচা রক্তশালিতলৈঃ ক্ষীরৌদনং কৃত্বা সম্পত্য অভিমন্ত্র দ্বেষ্যায় দদ্যাৎ। দর্শপূর্ণমাসয়োঃ যৎ অদ্য ত্বা প্রতি ইত্যষ্টৰ্চেন সংস্থিতহোমান্ জুহুয়াৎ। ….ইত্যাদি। (৭কা, ৯অ. ১-৭সূ)।

টীকা— প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সূক্তমন্ত্রের দ্বারা গ্রামকামী জন ইন্দ্রের উদ্দেশে যাগ করে থাকেন। চতুর্থ সূক্তের মন্ত্রটি অগ্নিষ্টোমে সোমরাজের উদ্দেশে সূত্রোক্তপ্রকারে বিনিয়োগ করণীয়। আভিচারিক কর্মে পঞ্চম সূক্তের মন্ত্রগুলির দ্বারা আজ্য হোম করণীয়। ষষ্ঠ সূক্তের মন্ত্রটি অভিচার কর্মে সূত্রোক্ত রীতি অনুসারে দ্বেষ্য জনের প্রতি বিনিযুক্ত হয়। সপ্তম সূক্তের আটটি মন্ত্রে দর্শপূর্ণমাস যজ্ঞ, উপনয়ন কর্ম ইত্যাদিতে বিনিয়োগ হয়ে থাকে। (৭কা, ৯অ.১-৭)।

.

অষ্টম সূক্ত : হবিঃ

 [ঋষি : অথর্বা দেবতা : ইন্দ্র, বিশ্বদেবগণ ছন্দ : বিরাট, ত্রিষ্টুপ ]

সং বৰ্হিরক্তং হবিষা ঘৃতেন সমিন্দ্রেণ বসুনা সং মরুদ্ভিঃ। সং দেবৈবিশ্বদেবেভিরক্তমিং গচ্ছতু হবিঃ স্বাহা। ১৷

বঙ্গানুবাদ –এই সুক সুব ইত্যাদি যজ্ঞীয় পাত্রসমূহের রক্ষণস্থান হলো বৰ্হি; এই স্থান পুরোডাশ, ঘৃত ইত্যাদির দ্বারা সম্যক লেপিত হয়ে গিয়েছে এবং বসুদেবতাগণের দ্বারা, ইন্দ্রের দ্বারা, মরুৎ-গণের দ্বারা এবং বিশ্বদেবগণের (অর্থাৎ গণদেবগণের) দ্বারা সমক্ত (সঙ্গত) বা যুক্ত হয়ে গিয়েছে। এই হেন সর্বদেবাধিষ্ঠিত হবি-সাধন বৰ্হি সকল দেবগণের মধ্যে মুখ্য ইন্দ্রদেবকে সম্প্রাপ্ত হোক। স্বাহা অর্থাৎ ইদং বৰ্হি স্বাহুতং অস্তু–এই বৰ্হি স্বাহুত হোক॥১॥

.

নবম সূক্ত : বেদী

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : বেদি ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

পরি স্তণীহি পরি ধেহি বেদিং মা জামিং মোষীরমুয়া শয়ানাম। হোতৃষনং হরিতং হিরণ্যয়ং নিষ্কা এতে যজমানস্য লোকে ॥১॥

বঙ্গানুবাদ –হে দৰ্ভস্তম্ব! বেদীর উপর বিস্তারিত হয়ে যাও, সেটিকে সর্বদিক দিয়ে আবৃত করে লও। এই বেদীর পুত্ররূপ যজমানকে বিনষ্ট করো না। হরিবর্ণ বা শোভনবর্ণ বা হিতরমণীয় হে দৰ্ভরূপ বস্তু! তুমি হোতার নিমিত্ত আসনরূপ। এই যজমানের পুণ্যভভাগের স্থানে হিরন্ময় যুক্ত হও। হে দর্ভ! তুমি বেদীর উপর বিস্তারিত হয়ে যাও, অর্থাৎ বেদীকে আচ্ছাদিত করে লও। ১৷৷

.

দশম সূক্ত : দুঃস্বপ্ননাশনম্

[ঋষি : যম দেবতা : দুঃস্বপ্ননাশনম ছন্দ : অনুষ্টুপ]

পর্যাবর্তে দুম্বপ্ন্যাৎ পাপাৎ স্বপ্ন্যাদভূত্যাঃ। ব্ৰহ্মাহমন্তরং কৃথে পরা স্বপ্নমুখাঃ শুচঃ ॥ ১

বঙ্গানুবাদ –আমি দুঃস্বপ্ন জনিত পাপ হতে নিবৃত্ত হচ্ছি, সম্পত্তি হীনতা হতে দূর হচ্ছি। দুঃস্বপ্নের পাপ যাতে আমাকে স্পর্শ করতে না পারে, তার নিবারণ করণশালী মন্ত্রসঙ্ঘকে আমি সমর্থ (অর্থাৎ আয়ত্ত) করে নিয়েছি; সেই মন্ত্রগুলিকে আমি কবচের ন্যায় ধারণ করে নিয়েছি। এই নিমিত্ত অর্থাৎ এই ব্যবধিকরণের দ্বারা আমার দুঃস্বপ্ননিবন্ধন শোকসমূহ পরাভূত হোক। ১৷৷

.

একাদশ সূক্ত : দুঃস্বপ্ননাশনম্

 [ঋষি : যম দেবতা : দুঃস্বপ্ননাশনম্ ছন্দ : অনুষ্টুপ]

যৎ স্বপ্নে অন্নমামি ন প্রাতরধিগম্যতে। সর্বং তদস্তু মে শিবং নহি তদ দৃশ্যতে দিবা ॥ ১৷

বঙ্গানুবাদ –স্বপ্নে যে অন্নকে আমি ভক্ষণ করে থাকি, তা প্রভাতকালে দৃষ্ট হয় না। যেহেতু ঐ অন্ন-সম্পর্কিত স্বপ্ন দিবাভাগে দৃষ্ট হয় না, সুতরাং স্বপ্নে অখাদ্য ভোজন ইত্যাদি সকল অন্ন আমার নিমিত্ত মঙ্গল করণশালী হোক। স্বপ্নে অন্নভোজন দর্শনে আমার যে অরিষ্ট (বা অনিষ্ট) ঘটেছে, তা এই মন্ত্র-জপের দ্বারা বরং কল্যাণকারী হোক ॥১॥

.

দ্বাদশ সূক্ত : আত্মনোহহিংসনম

[ঋষি : প্রজাপতি দেবতা : দ্যাবাপৃথিবী, অন্তরিক্ষ, মৃত্যু ছন্দ : বৃহতী ]

নমস্কৃত্য দ্যাবাপৃথিবীভ্যামন্তরিক্ষায় মৃত্যবে। মেক্ষামৰ্ব্বস্তিষ্ঠ মা মা হিংসিষুরীশ্বরাঃ ॥১॥,

বঙ্গানুবাদ –আকাশ ও পৃথিবী (অর্থাৎ দ্যাবাপৃথিবী), অন্তরিক্ষ ও মৃত্যুকে নমস্কার করে আমি ঊর্ধ্বলোকে গমন না করে ইহলোকেই দীর্ঘকাল ব্যাপী স্থিত হয়ে থাকবো। আকাশ, পৃথিবী ও অন্তরিক্ষের অধিপতি অগ্নি, বায়ু ও সূর্য যেন আমাকে হিংসিত না করেন এবং মৃত্যুও যেন আমাকে না বধ করেন। (অর্থাৎ তারা ইহলোকে যেন আমাকে অবস্থান করতে দেন) ॥১॥

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— দর্শপূর্ণমাসয়য়া প্রহিঁয়মাণপ্রস্তরানুমন্ত্রণং সং বৰ্হিরক্তং ইত্যনয়া ব্রহ্মা কুর্যাৎ।…শ্রৌতদর্শপূর্ণমাসয়োঃ বেদিং পরিণন্তং অধ্বর্যং পরিস্থণীহি ইত্যনয়া ব্রহ্মা অনুমন্ত্রয়েত।… দুঃস্বপ্নদর্শননিমিত্তদোষপরিহারার্থং পর্যাবর্তে ইতি ঋচং জপন পর্যাবর্তেত। স্বপ্নে অন্নভক্ষণনিমিত্তদোষ পরিহারার্থং যৎ স্বপ্নে ইতি ঋচং জপেৎ। সূত্রিতং হি।…স্বস্ত্যয়নার্থং নমস্কৃত্য ইত্যনয়া মান্ত্ৰবৰ্ণিকীভ্যো দেবতাভ্যো নমস্কারং উপস্থানং বা কুর্যাৎ।..ইত্যাদি। (৭কা, ৯অ. ৮-১২সূ)।

টীকা –উপযুক্ত অষ্টম সূক্তের মন্ত্রটি দর্শপূর্ণমাসে ব্রহ্মা কর্তৃক অনুমন্ত্ৰণীয়। শ্রৌতদর্শপূর্ণমাসে নবম সূক্তের মন্ত্রটিও বেদি পরিণন্তের নিমিত্ত ব্রহ্মা কর্তৃক সূত্রোক্তপ্রকারে অনুমণীয়। দুঃস্বপ্নদর্শননিমিত্ত দোষ পরিহারার্থে দশম সূক্তটি জপে বিনিয়োগ হয়। স্বপ্নে অন্নভক্ষণজনিত দোষ পরিহারার্থে একাদশ সূক্তটি জপে বিনিয়োগ হয়। স্বস্ত্যয়নকর্মে দ্বাদশ সুক্তের মন্ত্রটি ঐ মন্ত্রে উক্ত দেবতাগণের উদ্দেশে নমস্কার বা উপাসনায় বিনিয়োগ করণীয়৷৷ (৭কা. ৯অ.৮-১২সূ)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *