1 of 3

০৬।১২ ষষ্ঠ কাণ্ড : দ্বাদশ অনুবাক

দ্বাদশ অনুবাক
প্রথম সূক্ত : উন্মোচনম
[ঋষি : ব্রহ্মা দেবতা : সকল দেবতা ছন্দ : অনুষ্টুপ]

 যদু দেবা দেবহেডনং দেবাসশ্চমা বয়ম্।. আদিত্যাস্তম্মান্নো ঘূয়মৃতস্যৰ্তেন মুঞ্চত ॥১॥ ঋতস্যৰ্তেনাদিত্য যজত্রা মুঞ্চতেহ নঃ। যজ্ঞং যদ যজ্ঞবাহসঃ শিক্ষন্তো নোপশেকিম। ২. মেদস্বতা যজমানাঃ সুচাজ্যানি জুহুতঃ। অকামা বিশ্বে বো দেবাঃ শিক্ষন্তো নোপ শেকিম ॥ ৩॥

বঙ্গানুবাদ –হে অগ্নি প্রমুখ দেবগণ! যে পাপের নিমিত্ত (বা কারণে) দেবতা রুষ্ট হয়ে থাকেন, তা আমরা ইন্দ্রিয়বশে করে ফেলেছি। সেই পাপ হতে তোমরা আমাদের যজ্ঞাত্মক সত্যের দ্বারা মন্ত্র সাধন ইত্যাদির প্রভাবে রক্ষা করো (অর্থাৎ আমাদের সেই পাপকে দগ্ধ করে ফেলো)। ১।

 হে অদিতির পুত্রগণ (অর্থাৎ দেববর্গ)! যজ্ঞাত্মক সত্য এবং ধ্যানযোগ্য পরব্রহ্মের দ্বারা কর্মের ঘাতক পাপ হতে তোমরা আমাদের মুক্ত করো। তোমরা যজ্ঞ সম্পন্ন করণে সমর্থ। আমরা যজ্ঞ-সাধনে ইচ্ছুক হয়েও যে পাপের কারণে তা করতে পারছি না, তোমরা সেই পাপ হতে আমাদের মুক্ত করো (বা রক্ষা করো)। ২।

 হে সকল দেববর্গ! মেদযুক্ত (অর্থাৎ স্ফীতাবয়বশালী) পশুর দ্বারা সুকের সাহায্যে আহবনীয় অগ্নিতে আজ্যের (অর্থাৎ ঘৃতের) আহুতি প্রক্ষেপণেচ্ছু ও যজমানরূপী আমরা যে (পশুমেধ) যজ্ঞ করতে উদ্যত হয়েও, যে পাপের কারণে তা করতে পারছি না, তোমরা সেই পাপকে আমাদের নিকট হতে দূর করে দাও ৩

.

দ্বিতীয় সূক্ত : পাপমোচনম

[ঋষি : ব্রহ্মা দেবতা : সকল দেবতা ছন্দ : অনুষ্টুপ]

য বিদ্বাংসো যদবিদ্বাংস এনাংসি চকৃমা বয়। ঘূয়ং নস্তস্মান্মুঞ্চত বিশ্বে দেবাঃ সজোষসঃ ॥ ১৷ যদি জাগ্রদ যদি স্বপন্নেন এনস্যোইকরম্। ভূতং মা তম্মাদ ভব্যং চ দ্রুপদাদিব মুঞ্চতাম্ ॥ ২॥ দ্রুপদাদি মুমুচানঃ স্বিন্নঃ স্নাত্বা মলাদিব। পূতং পরিত্রেণেবাজ্যং বিশ্বে শুম্ভন্তু মৈনসঃ ॥৩॥

 বঙ্গানুবাদ –হে বিশ্ব দেবগণ! তোমরা আমাদের স্নেহ করে থাকে। আমাদের জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে যে পাপসমূহ আমরা করেছি, তোমরা সেই পাপরাশি হতে মুক্ত করো। ১।

আমি জাগরণকালে বা সুপ্তাবস্থায় যে পাপকে প্রিয় জ্ঞানে করে ফেলেছি, তা হতে বর্তমানে ও ভবিষ্যতেও, সেই পাদবন্ধনস্বরূপ পাপকে, বৃক্ষের ছেদনের ন্যায় ছেদিত করে, মুক্ত করে দাও। ২।

যেমন ছেদনের পর পদবন্ধন হতে মুক্ত হয়ে বা স্বেদক্লিষ্ট হওয়ার পর মনুষ্য স্নান করে বাহিরের মল হতে শুদ্ধ হয়ে থাকে, তেমনই আমি শুদ্ধ হবে। যেমন পবিত্রে ও ছাঁকনী ইত্যাদির সাধনে ঘৃত (আজ) শুদ্ধ হয়ে থাকে, তেমনই দেবগণ আমাকে (পাপ হতে) শুদ্ধ করুন। ৩ ৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –অস্যানুবাকস্য আচার্যমরণে আজ্যসমিৎপুরোডাশাদিহোমে বিনিয়োগঃ… তথা যৎ দেবা দেবহেডনং ইতি দ্বাভ্যাং তৃচাভ্যাং অগ্নিষ্টোমে তৃতীয়সবনে আদিত্যগ্রহহোমং ব্রহ্মা অনুমন্ত্রয়েত। অগ্নিষ্টোমং প্রক্রম্য বৈতানে সূত্রিতং….অত্র যৎ বিদ্বাংসঃ ইত্যনেন তৃচেন আগ্রয়ণেষ্টো বৈশ্বদেবং চরুং ব্রহ্মা অনুমন্ত্রয়েত।…ইতি (বৈ.২/৩) বৈতানে সূত্রিতং। (৬কা, ১২অ. ১-২)।

টীকা— এই দ্বাদশ অনুবাকটি আচাৰ্যৰ্মরণে আজ্য-সমিৎ-পুরোডাশ ইত্যাদি হোমে বিনিযুক্ত হয়। তার মধ্যে উপযুক্ত প্রথম সূক্তটি অগ্নিষ্টোমে তৃতীয়সবনে সূত্রানুসারে বিনিয়োগ করণীয়। দ্বিতীয় সূক্তের দ্বারা সূত্রানুসারে আগ্রয়ণেষ্টিতে বিনিয়োগ করণীয়। (৬কা, ১২অ. ১-২)।

.

তৃতীয় সূক্ত : মধুমদন্নম

 [ঋষি : জাটিকায়ন দেবতা : বিবস্বান্ ছন্দ : জগতী, ত্রিষ্টুপ]

যদ যামং চনিখনতো অগ্রে কার্ষীবণা অন্নবিদো ন বিদ্যুয়া। বৈবস্বতে রাজনি তজুহোম্যথ যজ্ঞিয়ং মধুমদস্তু নোহন্নম্ ॥ ১৷ বৈবস্বতঃ কৃণবদ ভাগধেয়ং মধুভাগগা মধুনা সং সৃজাতি। মাতুর্যদেন ইষিতং ন আগন যদ বা পিতাপরাদ্ধো জিহীডে। ২। যদিদং মাতুর্যদি বা পিতুর্নঃ পরি ভ্রাতুঃ পুর্বাচ্চেতস এন আগন্। যাবন্তো অস্মন্ পিতরঃ সচন্তে তৈষাং সর্বেষাং শিববা অস্তু মনুঃ ॥ ৩॥

বঙ্গানুবাদ –পূর্বকালে কৃষিকর্মশালী কার্ষীবণবৃন্দ (কৃষকগণ) বিদ্যাহীন ও বিচারশূন্য হওয়ার কারণে ভূমিকে খনন-রূপ, যে যম-সম্বন্ধী কার্য করতো, এটি তারা ঠিকরকম জানতো না। কেননা, তারা বিদ্যা-বুদ্ধিতে হীন হয়ে থাকে। তারই শমনার্থে আমি ঘৃত, মধু, তৈল ইত্যাদি ন্যূনাধিক পরিমাণে বৈবস্বত (অর্থাৎ বিবস্বানের পুত্র) রাজা যমের উদ্দেশে হবিঃ রূপে প্রদান করছি। এই যজ্ঞ-যোগ্য অন্ন মধুর ও উপভোগের যোগ্য হোক। ১।

সূর্যের পুত্র যম নিজের জন্য হবির্ভাগ গ্রহণ করুন এবং আমাদের মধুময় ক্ষীর ঘৃত ইত্যদির দ্বারা যুক্ত করুন। আমরা যারা অপরাধ করণশালী, হয়ে পাপ প্রাপ্ত হয়েছি, সেই মাতা-পিতা সম্বন্ধী অপরাধ-জনিত পাপ শান্ত হোক। (অর্থাৎ আমাদের পাপ যদি আমাদের মাতার নিকট হতে আগত হয়ে থাকে, অথবা আমাদের সেই পাপের জন্য যদি পিতৃপুরুষগণ ক্রুদ্ধ হয়ে থাকেন, অথবা মাতাপিত্রোদ্রোহ কৃত পাপের নিমিত্ত যা কিছু উৎপাত, তা শান্ত হোক) ॥ ২॥

এই পরিদৃশ্যমান পাপ যদি মাতার দ্বারা প্রাপ্ত হয়ে থাকি, বা পিতার দ্বারা প্রাপ্ত হয়ে থাকি, ভ্রাতা অথবা অন্য সম্বন্ধী বা পুত্রের দ্বারা প্রাপ্ত হয়ে থাকি, তবে সেই পাপের সাথে সম্বন্ধ রক্ষাকারীর (আমার) সেই পাপ শাস্তি প্রাপ্ত হোক৷৩৷৷

.

চতুর্থ সূক্ত : আনৃণ্যম

[ঋষি : কৌশিক (অনৃণকাম) দেবতা : অগ্নি ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

 অপমিত্যমপ্রতীত্তং যদস্মি যমস্য যেন বলিনা চরামি। ইদং তদগ্নে অনৃণো ভবামি ত্বং পাশা বিতং বেথ সর্বান্ ॥ ১। ইহৈব সন্তঃ প্রতি দপ্ন এনজ্জীবা জীবেভ্যো নি হরাম এনৎ। অপামিত্য ধান্যং যজ্জঘসাহমিদং তদগ্নে অনৃগো ভবামি। ২ অনৃণা অস্মিন্ননৃণাঃ পরস্মিন্ তৃতীয়ে লোকে অনৃণাঃ স্যাম। যে দেবযানাঃ পিতৃযাণাশ্চ লোকাঃ সৰ্বান পথো অনৃণা আ ক্ষিয়েম ॥ ৩.

বঙ্গানুবাদ –পরিশোধ করার যোগ্য ঋণ, যা প্রত্যর্পণ করতে পারিনি, এমন ঋণে আমি নিজেই ঋণী। সেই বলী ঋণের দ্বারা অধমর্ণ আমাকে যমরাজের বশীভূত হতে হবে। হে অগ্নি! তোমার কৃপায় আমি যেন ঋণ রহিত হয়ে যাই, কেননা তুমি ঋণজনিত পারলৌকিক পাপের বন্ধন হতে মুক্ত করতে সমর্থ ॥১॥

ইহলোকে অবস্থান করেই আমরা এই ঋণকে, ধনিকের (অর্থাৎ ঋণদাতা বা উত্তমর্ণের) নিকট সমর্পণ করছি। মরণের পূর্বেই আমরা আমাদের ঋণকে পরিশোধ করছি, আমি যে জৌ ইত্যাদি ধান্য ঋণরূপে গ্রহণ করে উদরসাৎ করেছি, হে অগ্নি! তোমার কৃপায় তা হতে ঋণমুক্ত হচ্ছি ৷ ২৷৷

হে অগ্নি! তোমার কৃপায় আমরা লৌকিক ও দৈবিক দুই প্রকার ঋণ হতে ইহলোকেই মুক্ত হবো; দেহত্যাগের পরে আমরা স্বর্গ ইত্যাদি পুণ্য স্থানে ঋণী হয়ে অবস্থান করবো না। নাকপৃষ্ঠ, দেব্যান এবং পিতৃযান ইত্যাদি মার্গে আমরা ঋণমুক্ত হয়ে প্রবিষ্ট হবো। ৩

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ যৎ যামং চক্রুঃ ইতি তৃচেন ঘৃততৈলমধুনাং পরিমিতানাং বৃদ্ধিক্ষয়লক্ষ নাদ্ভুত প্রায়শ্চিত্তার্থং আজ্যং জুহুয়াৎ। সূত্রিতং হি। অপমিত্যং অপ্রতীত্তং ইতি ত্রিমিচৈঃ উত্তমর্ণে মৃতে সতি তৎপুত্ৰায় সগোত্রায় বা ধনং অভিমন্যু ঋণী দদ্যাৎ। তথা অনেন তৃচত্রয়েন দ্রবং অভিমন্ত্র উত্তমর্ণস্য শ্মশানভূমৌ চতুষ্পথে বা নিক্ষিপেৎ। তথা তৃচত্ৰয়েন দ্রব্যং অভিমন্ত্র কক্ষে নিক্ষিপ্য তা অগ্নিনা দীপয়েৎ। সূত্রিতং হি।…ইত্যাদি। (৬কা, ১২অ, ৩-৪সূ)।

টীকা— উপযুক্ত তৃতীয় সূক্তের মন্ত্রসমূহের দ্বারা সূত্রানুসারে প্রায়শ্চিত্তের নিমিত্ত আজাহুতিতে বিনিয়োগ করণীয়। চতুর্থ সূক্তটি ঋণ-পরিশোধ সম্পকে বিনিযুক্ত হয়। ঋণদাতা পরলোকগত হলেও এই মন্ত্রগুলির দ্বারা ঋণগ্রহীতা সূত্রানুসারে ঋণদাতার পুত্র বা সগোত্রীয়কে ধন অভিমন্ত্রিত পূর্বক প্রত্যর্পণ করবেন। শ্মশানভূমিতে বা চতুষ্পথে এই মন্ত্রের দ্বারা দ্রব্য অভিমন্ত্রিত পূর্বক নিক্ষেপ ইত্যাদি ক্ষেত্রেও বিনিয়োগ করণীয় ॥ (৬কা, ১২অ, ৩-৪)।

.

পঞ্চম সূক্ত : আনৃণ্যম

[ঋষি : কৌশিক দেবতা : অগ্নি ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

যদ্ধস্তাভ্যাং চকৃম কিন্বিষাণ্যক্ষাণাং গতুমুপলিষ্পমানাঃ। উগ্রং পশ্যে উগ্রজিতৌ তদদ্যাপ্সরসাবনু দত্তামৃণং নঃ ॥ ১। উগ্রং পশ্যে রাষ্ট্রভৃৎ কিষাণি যদক্ষবৃত্তমনু দত্তং ন এতৎ। ঋণান্নো নর্ণমেৎসর্মনো যমস্য লোকে অধিরঙ্গুরায়ৎ ॥ ২॥ যম্মা ঋণং যস্য জায়ামুপৈমি যং যাচমানো অভ্যৈমি দেবাঃ। তে বাচং বাদিযুম্নেত্তরাং মদ্দেবপত্নী অপ্সরসাব ধীতম্ ॥ ৩৷৷

বঙ্গানুবাদ –আমাদের হস্ত-পদ ইত্যাদি ইন্দ্রিয়সমূহের দ্বারা যে পাপ সঙ্ঠিত হয়ে গিয়েছে, এবং ভোগলিপ্সার কারণে আমরা যে ঋণ গ্রহণ করেছি, হে উগ্রপশ্যা ও উগ্রজিতা নাম্নী অপ্সরাদ্বয়। তোমরা সেই ঋণ আমাদের ঋণদাতাদের (অর্থাৎ উত্তমর্ণগণকে) পরিশোধ করে দাও ১৷৷

হে উগ্রপশ্যা ও রাষ্ট্রভৃৎ (বা রাষ্ট্রভৃতা) নামী অপ্সরাযুগল! আমাদের কৃত পাপ-বিষয়সমূহে প্রবৃত্ত হওয়ার ব্যাপারে তোমরা লক্ষ্য করো। ঋণভূত সেই সকল পাপকে তোমরা শমন করো এবং পাপ-পুণ্য অনুসারে দণ্ডদাতা যমের লোকে ঋণদাতার নিকট আনয়ন করে পাশহস্তে আমাদের যাতে কেউ ত্রাস দিতে না আসতে পারে, সেই নিমিত্ত আমাদের ঋণকে আমাদের নিকট হতে দূর করে দাও। ২

যে বস্ত্র, সুবর্ণ, ধান্য ইত্যাদির নিমিত্ত আমি ঋণ প্রার্থনা করেছি অথবা যার ভার্যার নিকট আমি কামুক হয়ে সহায়তা প্রার্থনা করতে গিয়েছি, হে দেবগণ! আমি সেস্থান হতে সফল মনোরথ হয়ে, প্রার্থনাকে স্বীকার করিয়ে এসেছি। তারা যেন আমার সাথে বিরুদ্ধ বাক্য না প্রয়োগ করে। হে দেবপত্নী (দেবজায়াভূতা) অপ্সরাদ্বয়! তোমরা আমার বাক্যে মনোযোগ প্রদান করো। ৩

.

ষষ্ঠ সূক্ত : আনৃণ্যম

 [ঋষি : কৌশিক দেবতা : বৈশ্বনর অগ্নি ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

যদদীব্যন্বণমহং কৃপোম্যদাস্যন্নগ্ন উত সংগৃণামি। বৈশ্বানরো নো অধিপা বসিষ্ঠ উদিন্নয়াতি সুকৃতস্য লোকম্ ॥১॥ বৈশ্বানরায় প্রতি বেদয়ামি যদৃণং সংগরো দেবতাসু। স এতা পাশা বিতং বেদ সর্বানথ পক্কেন সহ সং ভবেম ॥ ২. বৈশ্বানরঃ পবিতা মা পুনাতু যৎ সংগরমভিধাবম্যাশা। অনাজান মনসা যাচমানো যৎ তত্রৈনো অপ তৎ সুমি। ৩

বঙ্গানুবাদ –আমি গ্রহণকৃত ঋণকে প্রদান করতে সমর্থ না হয়ে, তা প্রদানের কথা বলতে থেকেছি। (অর্থাৎ কেবলই প্রতিশ্রুতি দিয়েছি) সকল প্রাণীর হিতৈষী, সর্বপালক অগ্নিদেব আমাকে শ্রেষ্ঠ গতি প্রাপ্ত করান। (অর্থাৎ ঐ হেন পাপ সত্ত্বেও আমাকে সুকৃতলোকে নীত করুন)। ১।

লৌকিক ও দৈবিক (বা বৈদিক) ঋণকে পূর্ণ করার প্রতিজ্ঞাসমূহ আমি বৈশ্বানর অগ্নিকে অর্পণ করছি। সেই অগ্নিদেব সকল রকমের ঋণের পাশ হতে মুক্ত করতে জানেন। আমরা ঋণের পাশ হতে মুক্ত হয়ে স্বর্গ ইত্যাদি লাভরূপ ফলের দ্বারা সম্পন্ন হবো ॥ ২॥

আমি যজ্ঞানুষ্ঠান করবো, দান করবো, বৈশ্বানর অগ্নি আমাকে পবিত্র করুন। আমি ঋণ পরিশোধ করার প্রতিজ্ঞা করতে থেকেছি, যজ্ঞের নিমিত্ত দেবতাগণের কামনা উদ্রেগই করেছি, কিন্তু অদ্যাপিও যজ্ঞ ইত্যাদি ঋণকে পরিশোধ করতে পারিনি। আমার অজ্ঞানাত্মক অসত্য আচরণ হতে যে পাপ উদ্ভূত হয়েছে, তাকে আমি নিজের দ্বারাই দূরীভূত করছি ৷ ৩৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –যদ্ধস্তাভ্যাং ইতি পঞ্চম সূক্ত। অস্য পূর্বচেন সহ উক্তঃ। যদদীব্যন্বণমহং ইতি সূক্তেন বৈশ্বানরায় বিশ্বনরহিতায় অগ্নয়ে প্রতি বেদয়ামি বিজ্ঞাপয়ামি।…যদ ঋণং লৌকিকং দেবতাসু দেবতাবিষয়ে যঃ সঙ্গরঃ অবশ্যকর্তব্যতয়া প্রতিজ্ঞা ব্রহ্মচর্যেণ ঋষিভ্যো যজ্ঞেন দেবেভ্যঃ প্রজয়া পিতৃভ্য (তৈ. সং. ৬৩১০৫) ইতি তদ্ধি বৈদিকং ঋণং..ইত্যাদি। (৬কা, ১২অ, ৫-৬)।

টীকা— পঞ্চম সূক্তের মন্ত্রগুলির বিনিয়োগ পূর্ব সূক্তে উক্ত হয়েছে। ষষ্ঠ সূক্তের মন্ত্রগুলির দ্বারা প্রধানতঃ লৈৗকিক ঋণ অপরিশোধের কারণে উদ্ভূত পাপ হতে মুক্তির নিমিত্ত সূত্রানুসারে বিনিয়োগ কর্তব্য। এই সূক্তের দ্বিতীয় মন্ত্রটিতে স্থূলাত্মক ঐ লৌকিক ঋণের ঊধ্বস্থ ঋষি-ঋণ, দেব-ঋণ ও পিতৃঋণ পরিশোধের বিষয় বলা হয়েছে। মানব জন্মমাত্রই ঐ তিন বৈদিক ঋণে ঋণী হয়ে থাকে। এখানে বলা হয়েছে–মানব ব্রহ্মচর্যের দ্বারা ঋষি-ঋণ, যজ্ঞ সাধনের দ্বারা দেব-ঋণ এবং পুত্র ইত্যাদি উৎপাদনের দ্বারা পিতৃঋণ হতে মুক্ত হয়ে থাকে। (৬কা, ১২অ. ৫-৬সূ)।

.

সপ্তম সূক্ত : সুকৃতস্য লোকঃ

[ঋষি : কৌশিক দেবতা : অন্তরিক্ষ, পৃথিবী, দ্যৌ, অগ্নি ছন্দ : জগতী, ত্রিষ্টুপ, পংক্তি]

যদন্তরিক্ষং পৃথিবীমূত দ্যাং যন্মাতরং পিতরং বা জিহিংসিম। অয়ং তম্মাদ গাহপত্যো নো অগ্নিরুদিন্নয়াতি সুকৃতস্য লোক ॥১॥ ভূমির্মাতাদিতিনো জনিং ভাতান্তরিক্ষমভিশস্ত্যা নঃ। দৌর্নঃ পিতা পিত্রাচ্ছং ভবাতি জামিমৃত্বা মাব পৎসি লোকাৎ। ২৷৷ যা সুহাদঃ সুকৃতো মদন্তি বিহায় লোগং তন্বঃ স্বায়াঃ। অশ্লোণা অঙ্গৈরতাঃ স্বর্গে তত্র পশ্যেম পিতরৌচ পুত্ৰান্ ॥ ৩৷৷

বঙ্গানুবাদ –অন্তরিক্ষ, পৃথিবী ও দ্যুলোকের প্রাণীগণের অহিতরূপ যে হিংসা (বা পাপ) করেছি, পিতা-মাতার প্রতিকূল আচরণরূপ যে হিংসা (বা পাপ) করেছি, এই উভয়বিধ পাপ, যা সঙ্ঘটিত হয়ে গিয়েছে, গার্হপত্য অগ্নি প্রসন্ন হয়ে সেই পাপসমূহকে দমিত করে আমাদের উত্তম গতি প্রদান করুন। ১।

 পৃথিবী ও দেবমাতা অদিতি আমাদের জননী স্বরূপা। অন্তরিক্ষ আমাদের সাথে অবস্থিত হওয়ার কারণে ভ্রাতৃসম। এরা সকলে আমাদের পাপ হতে রক্ষা করুক। দ্যুলোক আমাদের পিতৃস্বরূপ, তিনি আমাদের ঋণ-গ্রহণজনিত দোষ (বা পাপ) হতে মুক্ত করুন। আমি নিষিদ্ধ নারীর সাথে (অর্থাৎ ভগিনী ইত্যাদির সাথে) পাপযুক্ত আচরণ করার কারণে স্বর্গ ইত্যাদি লোকসমূহ হতে যেন ভ্রষ্টশালী না হই। ২।

 সুন্দর মনঃসম্পন্ন ও যজ্ঞ ইত্যাদি কর্মকারী পুরুষগণ, জ্বর ইত্যাদি বোগরহিত ও দুঃখরহিত হয়ে সুখানুভব করতে করতে স্বর্গ ইত্যাদি লোকসমূহে নিবাস করে থাকেন। আমরাও বোগরহিত হয়ে শোভন গতি প্রাপ্তি পৰ্বক স্বর্গ ইত্যাদি উত্তম লোকসমূহে নিবাসিত হয়ে (স্বর্গলোকস্থ) স্বজনবর্গের সাক্ষাৎ লাভ করবো ৷ ৩৷৷

.

অষ্টম সূক্ত : সুকৃতলোকপ্রাপ্তিঃ

[ঋষি : কৌশিক দেবতা : অগ্নি, তারকা ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, অনুষ্টুপ]

 বিষাণা পাশান্ বি ব্যাধ্যম্মদ য উত্তমা অধমা বারুণা যে। দুম্ব প্ল্যং দুরিতং নি স্বাস্মদথ গচ্ছে সুকৃতস্য লোক ৷ ১। যদ দারুণি বধ্যসে যচ্চ রজ্জাং যদ ভূম্যাং বধ্যসে যচ্চ বাঁচা। অয়ং তম্মাদ গাৰ্হপতত্যা নো অগ্নিরুদিয়াতি সুকৃতস্য লোকম ॥ ২॥ উদগাতাং ভগবতী বিচুতৌ নাম তারকে। প্রেহামৃতস্য যচ্ছতাং তু বদ্ধকমোচন ॥ ৩৷ বি জিহীম্ব লোকং কৃণু বন্ধান্মুঞ্চাসি বদ্ধক। যোন্যা ই প্ৰচ্যুতো গর্ভঃ পথঃ সর্বা অনু ক্ষিয়। ৪

বঙ্গানুবাদ –হে নির্ঋতি দেবী! হে বরুণ! তোমরা মরণাত্মক উত্তম, মধ্যম ও অধম পাশসমূহকে বিমুক্ত করো। দুঃস্বপ্নজনিত পাপকেও মোচিত করে আমাদের স্বর্গলোক-প্রাপ্তি করাও। ১

হে পুরুষ! তুমি দারুণ কাষ্ঠের বন্ধনে, অচ্ছেদ্য রজ্জ্বর বন্ধনে, গভীর গহ্বরের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে, কিংবা রাজাজ্ঞা প্রকাশিত-করণশালিনী বাণীর বন্ধনে (অর্থাৎ রাজার আজ্ঞা-সম্বন্ধী গোপন বাণী বা বার্তা অপ্রকাশিত রাখার প্রতিজ্ঞার বন্ধনে) যদি আবদ্ধ হয়ে থাকো, তাহলে সেই সকল বন্ধন হতে গার্হপত্য অগ্নি মুক্তি দান (বা উদ্ধার) পূর্বক তোমাকে স্বর্গ-প্রাপ্তি করান। ২৷৷

 এই পুরুষ সন্তাপপ্রদ লৌহশৃঙ্খল ইত্যাদির বন্ধন হতে মুক্ত হোক। বিকৃত উপনামশালী দুই মূল নক্ষত্র এই বন্ধনগ্রস্ত পুরুষকে মৃত্যুভয় হতে মুক্ত করুক। ৩।

 হে বন্ধনের অভিমানী দেব! এই বন্ধনের দ্বারা পীড়িত হওনশীল পুরুষকে স্থান প্রদান করো, বন্ধন হতে মুক্ত করো এবং অনেক রকমভাবে (অর্থাৎ সর্বতোভাবে) এই স্থান হতে গমন করো। হে পুরুষ! মাতার গর্ভ হতে নিষ্ক্রান্ত হয়ে গর্ভবন্ধনমুক্ত শিশু যেমনভাবে বিচরণ করে থাকে (অর্থাৎ হস্ত-পদ বিক্ষেপণ করে), তেমনভাবেই তুমি সকল মার্গে স্বচ্ছন্দে বিচরণ করো। ৪

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –যদ অন্তরিক্ষং ইতি সপ্তমং সূক্তং বিষাণা পাশান ইতি সূক্তেন দারুললাহরজ্জাদিবন্ধনমোচনার্থং চর্মময়লোহময়াদিকং পূর্ববন্ধনরঙ্কুসদৃশং কৃত্বা সম্পত্য অভিমন্ত্রয়েত। সূত্রিতং হি।…ইত্যাদি৷৷ (৬কা, ১২অ, ৭-৮)

টীকা –সপ্তম সূক্তের মন্ত্রগুলি গাহপত্য অগ্নির কৃপায় পাপমুক্তির উদ্দেশে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। অষ্টম সূক্তের মন্ত্রগুলির দ্বারা দারু, লৌহ, রঞ্জু ইত্যাদির বন্ধন হতে মুক্তির নিমিত্ত সূত্রানুসারে অভিমন্ত্রন– পূর্বক বিনিয়োগ করণীয়। এই সূক্তের তৃতীয় মন্ত্রটিতে নক্ষত্রদ্বয় প্রসঙ্গে সায়ণাচার্যের উক্তি–ভগবতী ভাগ্যযুক্তে বিচুতৌ নাম বিছন্নামনী তারকেনক্ষত্রে উদ্গাতাং উদয়ং প্রান্তবতী। বিচুতৌ নক্ষত্রং পিতরো, দেবতা ইতি তেঃ (তৈ, সাং ৪।৪।১০।২) মূলনক্ষত্রস্য বিচূৎ ইতি সংজ্ঞা। অধিষ্ঠানদ্বয়াপেক্ষয়া দ্বিবচনং! ॥ (৬কা, ১২অ, ৭-৮)।

.

নবম সূক্ত : তৃতীয়ো নাকঃ

 [ঋষি : ভৃগু দেবতা : বিশ্বকর্মা ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, জগতী]

 এতং ভাগং পরি দামি বিদ্বান্ বিশ্বকর্ম প্রথমজা ঋতস্য। অস্মভির্দৰ্ত্তং জরসঃ পরস্তাদচ্ছিন্নং তন্তমনু সং তরেম। ১। ততং তন্তুমন্বকে তন্তি যেষাং দত্তং পিত্রমায়নেন। অবন্ধেকে দদতঃ প্রযচ্ছন্তো দাতুং চেচ্ছিাস স্বর্গ এব॥ ২॥ অন্বারভেথামনুসংরভেথামেতং লোকং শ্ৰদ্ধানাঃ সচন্তে। যদ বাং পক্কং পরিবিষ্টময়ে তস্য গুপ্তয়ে দম্পতী সং শ্রয়েথাম ৷৷ ৩৷ যজ্ঞং যন্তং মনসা বৃহন্তমন্বারোহামি তপসা সযোনিঃ। উপহৃতা অগ্নে জরসঃ পরস্তাৎ তৃতীয়ে নাকে সধমাদং মদেম। ৪৷৷ শুদ্ধাঃ পূতা যোষিততা যজ্ঞিয়া ইমা ব্ৰহ্মণাং হস্তেষু প্রপৃথক সাদয়ামি। যকাম ইদমভিষিঞ্চামি বোহমিন্দ্রো মরুত্বান্তস দদাতু তন্মে ॥৫

বঙ্গানুবাদ –হে বিশ্বকর্মা (বিশ্বের রচয়িতা)! তুমি সকলের পূর্বে উৎপন্ন হয়েছে। তোমার মহিমা জ্ঞাতশালী আমি এই পক্ক হবিরম্নকে আপন রক্ষার নিমিত্ত তোমাকে প্রদান করছি। এই লোকে প্রদত্ত এই অন্নের কারণে আমরা বার্ধক্য হতে জরাকাল পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন রূপে প্রবিষ্ট হবো (অর্থাৎ পূর্ণ আয়ু ভোগ করবো)। ১।

 কোন কোন ঋণী পুরুষ মৃত্যুর পরে পুত্র-পৌত্র ইত্যাদির মধ্যে বিস্তৃত হয়ে (অর্থাৎ তাদের দ্বারা ঋণ পরিশোধের মাধ্যমে) ঋণ হতে মুক্ত হয়ে যায়। পিতা বা পিতৃপুরুষ হতে আগত ঋণ (অর্থাৎ পিতৃকৃত ঋণ) যে পুত্র-পৌত্র ইত্যাদি পরিশোধ করে দেয়, তারাও পাপোত্তীর্ণ হয়ে যায়। যাদের কুলে পুত্র-পৌত্র ইত্যাদি কেউ না থাকে এবং যারা নিজের অথবা নিজের পিতার ঋণকে পরিশোধ করতে পারে না, কিন্তু পরিশোধ করার উৎকট ইচ্ছা রাখে, তবে তারাও সেই ইচ্ছার কারণেই ঋণমুক্ত হয়ে সুকৃতি লাভ করে থাকে। ২।

 হে দম্পতি! পরলোকের কথা মনে রেখে সকর্ম করতে থাকো। তোমরা ব্রাহ্মণগণকে যে পক্কান্ন প্রদানের ইচ্ছা করছো, এবং যে অন্ন হবিঃ রূপে অগ্নিতে দেবতাগণের উদ্দেশে প্রক্ষিপ্ত হয়েছে, তার রক্ষণের নিমিত্ত যত্ন করো। ৩

আমি অনশন ইত্যাদি দীক্ষানিয়মের দ্বারা তপস্যা পূর্বক দিব্যদেহোৎপত্তিবীজরূপ অপূর্বের সাথে মিলিত হয়ে দেবগণের মধ্যে এবং গতিমান মহান্ যজ্ঞে মনের দ্বারা প্রবিষ্ট হয়ে স্থিতি লাভ করছি। হে অগ্নি! তোমার কৃপায় আমরা আপন বৃদ্ধাবস্থা পর্যন্ত এই লোকে নিবাস পূর্বক পুনরায় জরার দ্বারা জীর্ণ হয়ে দেহ পরিত্যাগ করে দুঃখ-শোক রহিত স্বর্গপ্রাপ্ত হয়ে সুখী হবো। ৪

এই পরিশুদ্ধা, সর্বপবিত্ৰকারিণী, স্ত্রীরূপা যজ্ঞাহ জলরাশিকে আমি ঋত্বিকগণের হস্ত প্রক্ষালনের নিমিত্ত নিবেদন করছি। এই কার্য আমি যে পদার্থের কামনা করে সাধন করছি, মরুৎ-বর্গের সাথে যুক্ত হয়ে ইন্দ্রদেব সেই পদার্থ আমাকে প্রদান করুন। ৫।

.

দশম সূক্ত : সৌমনসম্

[ঋষি : ভৃগু দেবতা : সর্ব দেবতা ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, অনুষ্টুপ]

 এতং সধস্থাঃ পরি বো দদামি যং শেবধিমাবজ্জাতবেদাঃ অন্বগন্তা যজমানঃ স্বস্তি তং স্ম জানীত পরমে ব্যোমন্ ॥১॥ জানীত স্মৈনং পরমে ব্যোমন্ দেবাঃ সধস্থা বিদ লোকমত্র। অশ্বগন্তা যজমানঃ স্বস্তীষ্টপূর্তং স্ম কৃণুতাবিরস্মৈ। ২ দেবাঃ পিতরঃ পিতরো দেবাঃ। যো অস্মি সো অস্মি৷ ৩৷৷ স পচামি স দদানি স যজে স দত্তান্মা যুষম। ৪। নাকে রাজন্ প্রতি তিষ্ঠ তত্ৰৈতৎ প্রতি তিতু। বিদ্ধি পূর্তস্য নো রাজ দেব সুমনা ভব ॥ ৫৷৷

বঙ্গানুবাদ –হে সহায়ভূত দেবগণ! তোমরা স্বর্গলোকে যজমানের সাথে একত্রে অবস্থানকারী হয়ে থাকো। আমি তোমাদের উদ্দেশে এই হবিঃ সমর্পণ করছি; এই হবির্ভাগরূপ নিধি জাবেদা অগ্নির মাধ্যমে তোমাদের নিকট উপনীত হচ্ছে। এই যজমান হবির পরেই কুশলতা পূর্বক স্বর্গারোহণ করবেন। তোমরা এই যজমানকে যেন বিস্মৃত হয়ো না। ১

হে সহাবস্থানকারী দেবগণ! সেই স্বর্গলোকে তোমরা এই যজমানের সাথে পরিচিত হয়ে থেকো। সেইস্থানে এর স্থিতি নিশ্চিত করে দিও। হবিঃ সমর্পণের পরে ইনি (এই যজমান) কুশল পূর্বক সেইস্থানে গমন করবেন। এই যজমানকে তাঁর কৃত শ্রুতি-উক্ত যজ্ঞ ইত্যাদি সাধন সম্পর্কিত ইষ্টকর্মের ফল এবং স্মৃতি-উক্ত বাপী-কূপ-তড়াগ ইত্যাদি খনন সম্পর্কিত পূর্তকর্মের ফল প্রদান কোরো ॥ ২॥

 বসু রুদ্র ও আদিত্য আমার পিতা, পিতামহ ও প্রপিতামহ স্বরূপ পিতৃদেবতা। আমাদের পিতৃপিতামহপ্রপিতামহরূপ। মনুষ্য পিতৃগণ ঐ পূর্বোক্ত দেবস্বরূপ। অতএব আমি ঐ দেববৃন্দের উদ্দেশে যা কিছু অর্পণ করছি, তা আমারই পিতৃগণের উদ্দেশে অর্পিত হচ্ছে। সেই কারণে আমি পাকযজ্ঞ করছি, দান ইত্যাদি কর্ম করছি। আবার আমি আমার পুত্র ইত্যাদির দ্বারা অনুষ্ঠিত শ্রাদ্ধ ইত্যাদির দ্বারা উৎপন্ন সুফল প্রাপ্তি হতেও যেন বিচ্যুত না হই। ৩-৪৷

হে ব্রাহ্মণগণের রাজা সোমদেব! তুমি আমাদের অপরাধসমূহ বিস্মৃত হয়ে স্বর্গলোকে আমাদের প্রতি সূখপূর্ণ ব্যবহার করো। আমাদের কৃত (ইষ্টা-পূর্ত কর্ম) সেই স্বর্গলোকে ফল প্রদানশালী হোক। তুমি আমাদের কর্মফল জ্ঞাত আছো। হে স্বামি! তুমি শোভন মনঃশালী হও। ৫৷৷

.

একাদশ সূক্ত : নিত্যপস্তরণম

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : দিব্যা আপ ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

দিবো নু মাং বৃহতত অন্তরিক্ষাদপাং স্তোকো অভ্যপপ্তদ রসেন। সমিন্দ্রিয়েণ পয়সাহমগ্নে ছন্দোভিৰ্ষজ্ঞৈঃ সুকৃতাং কৃতেন ॥ ১৷ যদি বৃক্ষাদভ্যপপ্তৎ বলং তদ্ যদ্যন্তরিক্ষাৎ স উ বায়ুরেব। যত্ৰাম্পৃক্ষৎ তো যচ্চ বাসস আপা নুদন্তু নিৰ্ব্বতিং পরাচৈঃ ॥ ২॥ অভ্যঞ্জনং সুরভি স সমৃদ্ধিৰ্হিরণ্যং বৰ্চস্তদু পূমিমেব। সর্বা পবিত্রা বিধ্যস্মৎ তন্মা তারীন্নিঋতিৰ্মো অরাতিঃ ॥ ৩৷৷

বঙ্গানুবাদ –বৃহৎ অন্তরিক্ষ হতে যে জলবিন্দু আমার শরীরের উপর পতিত হয়েছে, তার সংলগ্নের প্রক্ষালন রূপ, হে অগ্নি! আমি তোমার প্রসাদে ইন্দ্রের তেজরূপ অমৃতের সাথে যুক্ত হচ্ছি। গায়ত্রী ইত্যাদি মন্ত্রের পূর্ণ অনুষ্ঠানের দ্বারা আমি পুণ্য ফলের সাথে যুক্ত হবো ॥১॥

বর্ষার একট বিন্দু যদি বৃক্ষের অগ্রভাগ হতে আমার উপর পতিত হয়ে থাকে, তবে সেই বিন্দু বৃক্ষেরই রে ফলের সমান তোক এবং যদি সেই বিন্দু আকাশ হতে পতিত হয়, তবে তা বায়ুর ফলস্বরূপ হোক। শরীরের যে অঙ্গের উপর বা দেহের যে বস্ত্রের উপর তার (অর্থাৎ সেই বারিবিন্দুর) স্পর্শ লেগেছে, সেই প্রক্ষালনার্থে প্রযুক্ত জলের ন্যায় পাপ, দেবতা নির্ঋতি আমাদের নিকট হতে অপসারিত করে দিন। ২।

এই বর্ষণের বিন্দু আমার অঙ্গে পতিত হয়ে শরীরে মালিশ করার নিমিত্ত সরিষা তিল ইত্যাদির সাধনস্বরূপ (অভ্যঞ্জনস্বরূপ) হোক। এই তৈল চন্দন ইত্যাদি, আমাদের সম্পন্নতা এবং সুবর্ণালঙ্কার ইত্যাদিরই বলস্বরূপ হোক। এই বর্ষার জল পবিত্র করণশালী হয়ে থাকে, এই জলের পবিত্র স্পর্শের কারণে পাপদেবতা নির্ঋতি ও শত্রুগণও আমাদের প্রতি যেন আক্রমণকারী হয় ৷ ৩৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— এতৎ ভাগং এতৎ সংস্থাঃ ইতি দ্বাভ্যাং সব্যজ্ঞেষু সংস্থিতহোমান্ জুহুয়াৎ। তদনুমন্ত্রনং চ কুর্যাৎ। সূত্রিতং হি। তথা অগ্নিষ্টোমে হবিধানে স্বস্বচমসসমীপে চমসিভিঃ স্বকীয়া পিতৃণ উদ্দিশ্য পুরোডাশশকলেষু দত্তেষু সংসু আভ্যাং অনুমন্ত্রয়েৎ। উক্তং বৈতানি।…দিবো না মাং বৃহতঃ ইতি তৃচেনআকাশোদকপ্লাবনদোষশাস্ত্যর্থং উদকং অভিমন্ত্র শরীরং প্রক্ষালয়েৎ। তথা তত্রৈব কর্মণি অনেন তৈলং শান্তৌষধিৰ্গন্ধং হিরণ্যং বাসোবা অভিমন্যু তৈঃ, শরীরং উদ্বর্তয়েত। সূত্রিতং হি।…ইত্যাদি। (৬কা, ১২অ. ৯-১১সূ)। টীকা— নবম ও দশম সূক্তের মন্ত্রগুলির দ্বারা সূত্রানুসারে সকল যজ্ঞে হোম করণীয়। তথা অগ্নিষ্টোমে হবিধানে আপন আপন চমসসমীপে পিতৃগণের উদ্দেশে সূত্র অনুসারে এই মন্ত্রগুলির দ্বারা অনুমন্ত্রণ করণীয়। একাদশ সূক্তের মন্ত্ৰসমুদয় আকাশ-জলের প্লাবনজনিত দোষ শান্তির নিমিত্ত সূত্রকে অনুসরণ মতো জল অভিমন্ত্রিত করে শরীরে প্রক্ষালন করার জন্য বিনিযুক্ত হয়ে থাকে।-দশম সূক্তের তৃতীয় ও চতুর্থ মন্ত্র দুটি বহু গ্রন্থেই একত্রে উল্লিখিত হয়ে যথেষ্ট সংশয়ের সৃষ্টি করেছে। আমরা কিন্তু দুটিকেই স্বতন্ত্র ভাবে দেখিয়েছি। ঐ তৃতীয় মন্ত্রে পুত্র ইত্যাদির অনুষ্ঠিত শ্রাদ্ধ প্রভৃতির জন্য সুকৃতির ফল হতে বিচ্যুত না হওয়ার প্রার্থনা প্রসঙ্গে সায়ণাচার্য বলেছেন–এই হেন মন্ত্রপাঠ-সামর্থ্যে মাতৃপিতৃ সম্পর্কিত ব্যভিচার দোষ থাকলেও সর্ব কর্ম অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে–সত্যপি মাতাপিত্ৰোৰ্যভিচারে এতন্মন্ত্রপাঠসামনে যথাস্বমেব সর্বং কর্মানুষ্ঠিতং ভবতীত্যর্থঃ। (৬কা, ১২অ. ৯-১১সূ)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *