1 of 3

০৬।০৮ ষষ্ঠ কাণ্ড : অষ্টম অনুবাক

অষ্টম অনুবাক
প্রথম সূক্ত : সাংমনস্যম
[ঋষি : অথর্বা দেবতা : সাংমনস্যম, বরুণ, সো ইত্যাদি ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

এই যাতু বরুণঃ সোমো অগ্নিবৃহস্পতিবসুভিরেহ যাতু। অস্য শ্রিয়মুপসংযাত সর্ব উগ্ৰস্য চেতুঃ সংমনসঃ সজাতাঃ ॥১॥ যো বঃ শুষ্মে হৃদয়েম্বন্তরাকৃতির‍্যা বো মনসি প্রবিষ্টা। তান্তসীবয়ামি হবিষা ঘৃতেন ময়ি সজাতা রমতিৰ্বো অস্তু। ২। ইহৈব স্ত মাপ যাতাধ্যম্মৎ পূষা পরস্তাদপথং বঃ কৃপোত্। বাস্তোস্পতিরনু বো জোহবীতু ময়ি সজাতা রমতিৰ্বো অস্তু। ৩

বঙ্গানুবাদ –এই স্থানে বরুণ, সোম, অগ্নি প্রত্যেকে সাংমনস্য করণের (অর্থাৎ প্রত্যেকের মধ্যে মনের মিল করার) নিমিত্ত আগমন করুন। সকল দেবতার অধিস্বামী বৃহস্পতি দেবতা অষ্টবসুগণের সাথে আগমন করুন। হে সমান জন্মশালীগণ! তোমরা সমান মনঃ সম্পন্ন হয়ে এই যজমানের নিমিত্ত তাঁর সম্পদের উপজীবী হও ৷ ১৷৷

হে বান্ধববর্গ! তোমাদের মধ্যে যে বল ও তোমাদের হৃদয়ে যে সঙ্কল্প আছে, সেগুলিকে আমি হব্য-ঘৃতের দ্বারা মিলিয়ে দিচ্ছি। আমি হেন সাংমনস্যের (এক বিচারের) ইচ্ছুকের নিমিত্ত তোমরা অনুকূল হও ২

হে স্বজাতি বান্ধবগণ! তোমরা আমাকে স্নেহ করো, পৃথক হয়ো না। আমার প্রতিকূলগামী হলে পূষা দেবতা তোমাদের পথ অবরোধ করে দিন এবং গৃহের পালক বাস্তোস্পতি দেবতা আমার নিমিত্ত তোমাদের আহ্বান করুন ৩

.

দ্বিতীয় সূক্ত : সাংমনস্যম

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : সাংমনস্যম, ব্ৰহ্মণস্পতি ইত্যাদি ছন্দ : অনুষ্টুপ ত্রিষ্টুপ]

সং বঃ পৃচ্যাং তন্বঃ সং মনাংসি সমু ব্রতা। সং বোহয়ং ব্ৰহ্মণস্পতিৰ্ভগঃ সং বো অজীগমৎ ॥ ১৷৷ সংজ্ঞপনং বো মনসোহথো সংজ্ঞপনং হৃদঃ। অথো ভগস্য যক্ষ্যান্তং তেন সংজ্ঞপয়ামি বঃ ॥২॥ যথাদিত্য বসুভিঃ সমুভূবুর্মরদ্ভিরুগ্রা অঙ্গণীয়মানাঃ। এবা ত্ৰিণামন্নণীয়মান ইমান জনান্তসংমনসস্কৃধীহ ৷ ৩৷৷

 বঙ্গানুবাদ –হে সাংমনস্যকামী (সমমনোভাবান্ন হতে ইচ্ছুক) জনগণ! তোমাদের শরীর ও মন পরস্পর স্নেহে আবদ্ধ হোক, তোমাদের কর্মও অনুরাগের সাথে যুক্ত হোক। ভগ ও ব্ৰহ্মণস্পতি দেব আমাদের নিমিত্ত তোমাকে (সাংমনস্যকে) বারবার আহ্বান করুন ৷ ১।

হে এক-মনঃশালী মনুষ্যগণ! তোমাদের মন-ইন্দ্রিয় যে কর্মের দ্বারা জ্ঞানোৎপাদিনী হয়, তা আমি করছি। আমি তোমাদের হৃদয়কেও সমান জ্ঞানোৎপাদক করে দিচ্ছি। আমি ভগ দেবতার উদ্দেশে কৃত তপের দ্বারা তোমাদের সমজ্ঞানসম্পন্ন করে দিচ্ছি। ২

অদিতির পুত্র মিত্র ও বরুণ যেমন অষ্টবসুগণের সাথে সমান জ্ঞানী হয়েছিলেন এবং রুদ্রগণ আপন প্রচণ্ড রূপকে ত্যাগ করে যেমন মরুত্বর্গের সমান জ্ঞানসম্পন্ন হয়েছিলেন, তেমনই হে ত্রিনামধারী অগ্নি! তুমিও ক্রোধ পরিত্যাগ করে এই মনুষ্যগণকে। ) সাংমনস্য-শালী (অর্থাৎ সমান-মনঃসম্পন্ন) করে দাও। ৩৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –অত্র আদ্যস্য (এহ যাতু বরুণঃ ইতি) তৃচস্য সং বঃ পৃচ্যাং  ইতি দ্বিতীয়স্য চ সাংমনস্য-কৰ্মাণ সং জানীধ্বং (৬/৬৪) ইতি তৃচোক্তেষু উদকুম্ভনিনয়নাদিষু বিনিয়োগ। সূত্রং চ তত্রৈবোদাহৃতং…ইত্যাদি৷৷ (৬কা, ৮অ. ১-২)।

টীকা –উপযুক্ত প্রথম ও দ্বিতীয় সূক্তের বিনিয়োগ পূর্ববর্তী অনুবাকের তৃতীয় সূক্তের অনুরূপ হবে। এগুলি সাংমনস্য কর্মে অর্থাৎ পরস্পর মনের অমিল দূরীকরণে বিনিযুক্ত। দ্বিতীয় সূক্তের তৃতীয় মন্ত্রে অগ্নিকে ত্রিনামধারী বলার কারণ এই যে, অগ্নিদেব ভূমি, অন্তরিক্ষ ও দ্যুলোকে যথাক্রমে পার্থিব,বিদ্যুৎ ওসূর্যাত্ম অথবা সাধারণতঃ ভৌম (গার্হপত্য), দিব্য ও জাঠর নামে বিশেষ প্রসিদ্ধ ॥ (৬কা, ৮অ. ১-২)।

.

তৃতীয় সূক্ত : সপত্নক্ষয়ণম

[ঋষি : কবন্ধ দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : অনুষ্টুপ, জগতী]

নিরমুং নুদ ওকসঃ সপত্নে যঃ পৃতন্যতি। নৈর্বাধ্যেন হবিষেন্দ্র এনং পরাশরীৎ ॥ ১৷ পরমাং তং পরাবতমিন্দ্রো নুদতু বৃত্রহা। যতো ন পুনরায়তি শশ্বতীভ্যঃ সমাভ্যঃ ॥ ২॥ এতু তিঃ পরাবত এতু পঞ্চ জন অতি। এতু তিস্রোইতি নোচনা যতো ন পুনরায়তি। শশ্বতীভ্যঃ সমাভ্যো যাবৎ সূৰ্যো অস দিবি ॥ ৩॥

 বঙ্গানুবাদ— আমাদের পীড়িত (বা আক্রমণ) করার উদ্দেশে সেনা একত্র (বা সংগ্রহ) করণশীল শত্রুকে মন্ত্রশক্তির দ্বারা আমরা বিচ্যুত করছি। শত্রু দমনার্থে প্রেরিত হবিঃ সমূহে প্রসন্ন হয়ে ইন্দ্র আমাদের শত্রুদের এমন প্রহার করুন, যাতে তারা এই স্থানে আর কখনও প্রত্যাবর্তন করতে না পারে ॥১॥

 বৃত্ৰ-নাশক ইন্দ্রদেব সেই শত্রুকে এমন দূরে প্রেরণ করুন, যাতে যে স্থান হতে সে শতবর্ষ (বহু বহু বৎসর) পর্যন্ত প্রত্যাবর্তন করতে না পারে। ২।

ইন্দ্র কর্তৃক বিতাড়িত সেই শত্রু তিন ভুবনের পার অতিক্রম করে, নিষাদসহ পঞ্চ মনুষ্য-সঞ্চারদেশ পরিত্যাগ করে এমন দূরতম স্থানে গমন করুক, যেস্থানে সূর্য, চন্দ্র ও অগ্নির দীপ্তি নেই। যাবৎকাল পর্যন্ত দ্যুলোকে সূর্য বর্তমান থাকবেন, তাবৎকাল পর্যন্ত যেন তারা আর প্রত্যাবর্তন করতে না পারে ৷৷ ৩৷৷

.

চতুর্থ সূক্ত : আয়ুষ্যম

[ঋষি : কবন্ধ দেবতা : সান্তপনাগ্নি ছন্দ : অনুষ্টুপ ]

য এনং পরিষদন্তি সমাদধতি চক্ষসে। সম্প্রেদ্ধা অগ্নির্জিাভিরুদেতু হৃদয়াদধি ॥ ১৷৷ অগ্নেঃ সাংতপনস্যাহমায়ুষে পদমা রভে। অন্ধাতির্যস্য পশ্যতি ধূমমুদ্যমাস্যতঃ। ২৷৷ যো অস্য সমিধং বেদ ক্ষত্রিয়েণ সমাহিতাম। নাভিরে পদং নি দধাতি স মৃত্যবে। ৩ নৈনং ঘন্তি পর্যায়িশোন সন্না অব গচ্ছতি। অগ্নেঃ ক্ষত্রিয়ো বিদ্বান্নাম গৃহ্বাত্যায়ুষে। ৪।

বঙ্গানুবাদ –রাক্ষস ইত্যাদি যারা এই স্বস্ত্যয়নকামী, অগ্নিপরিচরণকারী পুরুষকে হিংসা করণের নিমিত্ত চতুর্দিকে উপবিষ্ট রয়েছে, তাদের ভস্ম করার নিমিত্ত প্রচণ্ড অগ্নি আপন জ্বালা-রপ জিহ্বা সমুদায় বিস্তার করে প্রকট হোন ॥১॥

 যে অগ্নির ধূমকে অদ্ধাতি ঋষি আপন মুখবিবর হতে বিনিষ্ক্রান্ত হতে দর্শন করেছিলেন, সেই অগ্নির বাচক শব্দকে আমি আরম্ভ করাছি ॥ ২॥

 বিজয়কামী ক্ষত্রিয় পুরুষগণের দ্বারা রক্ষিত অগ্নির সন্দীপনী আহুতিকে জ্ঞাতশালী জন হস্তী, সিংহ ইত্যাদিতে পূর্ণ মৃত্যুর আশঙ্কাজনক স্থানে কখনও গমন করে না ৷ ৩৷৷

যে ক্ষত্রিয় চিরজীবন (অর্থাৎ দীর্ঘায়ু) লাভের অভিলাষে অগ্নির স্তোত্র উচ্চারণ করেন, সেই স্বস্ত্যয়নকামীর নিকটে শত্রুগণ আগমন করতে সমর্থ হয় না ॥ ৪৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— নিরমুং নুদে ইতি তৃচেন আভিচারিকে তন্ত্রে দর্ভাস্তরণং কুর্যাৎ। তথা তত্রৈব কর্মণি অনেন সূক্তেন অভ্যাতানান্তে ইঙ্গিড়ং জুহুয়াৎ…তস্মিন্নেব তন্ত্রে অনেন তৃচেন সংস্থিত হোমা জুহুয়াৎ।য এনং পরিষদন্তি ইতি চতুঋচেন বিজয়স্বস্ত্যয়নকামঃ খাদ্যসাধারণং শস্ত্রং সম্পত্য হস্তেন বিমৃজ্য অভিমন্ত্র ধারয়েৎ।..ইত্যাদি। (৬কা, ৮অ. ৩-৪সূ)৷৷

টীকা— তৃতীয় সুক্তের দ্বারা আভিচারিক তন্ত্রে দর্ভাস্তরণ করণীয়। এই সূক্তের দ্বারা ইঙ্গিড় হোম ইত্যাদি করণীয়। চতুর্থ সূক্তটির দ্বারা বিজয়স্বস্ত্যয়নকামীর পক্ষে খঙ্গ ইত্যাদি শস্ত্র অভিমন্ত্রিত পূর্বক ধারণ কর্তব্য ॥ (৬কা, ৮অ. ৩-৪)।

.

পঞ্চম সূক্ত : প্রতিষ্ঠাপনম

 [ঋষি : কবন্ধ দেবতা : জাতবেদা ছন্দ : অনুষ্টুপ]

অস্থা দৌরস্থাৎ পৃথিব্যস্থা বিশ্বমিদং জগৎ। আস্থানে পর্বতা অস্তু স্থাৰ্খা অতিষ্ঠিপম্ ॥ ১ য উদানট পরায়ণং য উদানন্যায়ন। আবর্তনং নিবর্তনং যো গোপা অপি তং হুবে ॥ ২॥ জাতবেদো নি বৰ্ত্তয় শতং তে সন্ত্রাবৃতঃ। সহস্রং ত উপবৃতস্তাভির্নঃ পুনরা কৃধি ॥ ৩॥

বঙ্গানুবাদ –ঈশ্বরের আজ্ঞাক্রমে যেমন দুলোক এবং পৃথিবী আপন-আপন স্থানে স্থির হয়ে আছে; এবং দ্যাবা ও পৃথিবীর মধ্যস্থায়ী সমগ্র জগৎ-সংসার আপন-আপন স্থানে স্থাপিত হয়ে আছে, পর্বতসমূহ যেমন ঈশ্বরের দ্বারা কল্পিত স্থানে (আস্থানে) স্থির হয়ে আছে, তেমনই, হে নারী! যে স্তম্ভের আধারের উপর এই গৃহ অস্তিত্বসম্পন্ন হয়ে আছে, গৃহরূপ সেই আধারে তোমাকে স্থাপন করছি। অশ্বচালক কর্তৃক দুষ্ট অশ্ব যেমন রঞ্জুর দ্বারা বন্ধন প্রাপ্ত হয়, সেই মতোই তুমি কর্ম-বন্ধনে স্থিত হও। ১

সেই দেবতাকে আমি আহূত করছি, যিনি পশ্চাৎগমনকে ব্যাপ্ত করেছেন, নীচে লুক্কায়িত হয়ে গমনকে ব্যাপ্ত করেছেন, পলায়নকারীগণের গতি প্রতিরোধকে ব্যাপ্ত করেছেন। ২।

হে জাতবেদা অগ্নি! পলায়ন-স্বভাবশালিনী এই স্ত্রীর স্বভাবকে পরিবর্তন করে দাও। এর প্রত্যাবর্তনের উপায় শত সংখ্যক হোক; তাকে আমার সমীপদেশে প্রাপ্তির উপায় সহস্র সংখ্যক হোক। আপন সকল উপায়ের সাথে তাকে আমার সম্মুখে আনয়ন করো ৷ ৩৷৷

.

ষষ্ঠ সূক্ত : দম্পত্যো রয়িপ্রাপ্তয়ে প্রার্থনা

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : চন্দ্রমা, ত্বষ্টা ছন্দ : অনুষ্টুপ]

 তেন ভূতেন হবিষায়মা প্যায়ং পুনঃ। জায়াং যামম্মা আবাক্ষুস্তাং রসেনাভি বর্ধতাম্ ॥ ১। অভি বর্ধতাং পয়সাভি রাষ্ট্রেণ বর্ধতা। রষ্যা সহস্রবর্ডসেমৌ স্যামনুপক্ষিতৌ ॥ ২॥ ত্বষ্টা জায়ামজনয়ৎ ত্বষ্টাস্যৈ ত্বাং পতিম। ত্বষ্টা সহস্ৰমায়ুংষি দীর্ঘমায়ুঃ কৃণোতু বাম্। ৩।

বঙ্গানুবাদ –এই পতির (বা পাত্রের) সাথে বিবাহের নিমিত্ত যে স্ত্রীকে তার মাতা-পিতা আনয়ন করেছে, তাকে এই অগ্নিদেব দধি-মধু-ঘৃত ইত্যাদির দ্বারা বর্ধিত করুন। এই পতি প্রসিদ্ধ হুয়মান হবির দ্বারা প্রজা, পশু ইত্যাদিতে সমৃদ্ধ হোক॥১॥

 এই পতি-পত্নীর গৃহ দুগ্ধ ইত্যাদিতে সম্পন্ন থাকুক। এদের রাজ্য (বা গ্রাম) বৃদ্ধির দিকে চলমান থাকুক। বহু ধনের দ্বারা এরা পরিপূর্ণ থাকুক। ২।

 ত্বষ্টা এই স্ত্রীকে উৎপন্ন করেছেন। হে বর! তোমাকে এই বধূর পতিরূপে ত্বষ্টাই সৃষ্টি করেছেন। অতএব হে জায়া ও পতি! ত্বষ্টা তোমাদের সহস্ৰায়ু (বহু বৎসরের জীবন) দান করুন। ৩।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— অস্থাদ দ্যৌঃ ইতি তৃচেন পলায়নশীলায়াঃ স্ত্রীয় নিরোধনকর্মণি রক্ষ্মবেষ্টনং অভিমন্যু মধ্যমস্থূণায়াং বধীয়াৎ। তথা তস্মিন্নেব কর্মণি স্ত্রীখট্রায়াঃ পাদং অনেন তৃচেন অভিমন্যু উপলে বধীয়াৎ। তথা তস্মিন্নেব কর্মণি অনেন তৃচেন তিলা জুহুয়াৎ। সূত্রিতং হি।…তেন ভূতেন ইতি তৃচেন বিবাহে আজ্যং হুত্বা বরবধ্বেমূর্ধি সম্পাতা আনয়েৎ। তথা তত্রৈব কর্মণি তেনৈব তৃচেন রসান্ স্থালীপাকং চ সম্পত্য অভিম ভোজনসময়ে জায়াপতী প্রাশয়েৎ। তথা তস্মিন্নেব কর্মণি ( অনেন তৃচেন আজমিশ্রৈবৈঃ অঞ্জলিং পরিপূৰ্য্য জুহুয়াৎ। সূত্রিতং হি বিবাহ প্রকরণে।…ইত্যাদি। (৬কা, ৮অ, ৫-৬সূ)।

টীকা –পঞ্চম সূক্তটির দ্বারা পলায়নশীলা স্ত্রীগণের নিরোধনকর্মে অভিমন্ত্রিত রঞ্জুবেষ্টন-বন্ধন, স্ত্রীর খাটের পায়ায় অভিমন্ত্রিত প্রস্তর বন্ধন ইত্যাদিতে বিনিযুক্ত হয়। এই কর্মে এই মন্ত্রের দ্বারা অগ্নিতে তিলাহুতি প্রদান করতে হয়। ষষ্ঠ সূক্তটির দ্বারা বিবাহে আজ্যাহুতি প্রদান পূর্বক বর-বধূর মস্তকে সেই আজ্যের অবশিষ্ট অংশ সম্পাতিত করণীয়। এই মন্ত্রের দ্বারা অভিমন্ত্রিত খাদ্য বরবধূকে খাওয়ানো, অঞ্জলিপূর্ণ আজ্য অগ্নিতে সমর্পণ ইত্যাদি কর্মের সূত্র বিবাহ প্রকরণে পাওয়া যায় ॥(৬কা. ৮অ. ৫-৬)।

.

সপ্তম সূক্ত : ঊর্জঃপ্রাপ্তিঃ

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : সংস্ফানম ছন্দ : গায়ত্রী ]

অয়ং নো নভসম্পতিঃ সংস্ফানো অভি রক্ষতু। অসমাতিং গৃহেষু নঃ ॥১॥ ত্বং নো নভসম্পত উজং গৃহেষু ধারয়। আ পুষ্টমেত্বা বসু। ২। দেব সংস্ফান সহস্রাপোষস্যেশিষে। তস্য নো রাস্ব তস্য নো ধেহি তস্য তে ভক্তিবাংসঃ স্যাম ॥ ৩॥

বঙ্গানুবাদ –এই অগ্নি আহুতির দ্বারা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে দেবগণের সমীপে হবিঃ সমুপস্থিত করণের নিমিত্ত আকাশের পালকরূপে স্বীকৃত হয়েছেন। সেই অগ্নিদেব আমাদের ধন-ধান্যের দ্বারা বর্ধন করুন। আমাদের গৃহের সকল সামগ্রী অগণিত হোক ॥১॥

হে অন্তরিক্ষ-পালক বায়ু। তুমি আমাদের গৃহে বলদায়ক অন্ন স্থাপিত করো। প্রজা, পশু তথা নানা প্রকারের ধন আমার প্রাপ্ত হোক ॥ ২॥

হে আদিত্য। তুমি প্রজাবর্গের পোষণ-করণশালী এবং ধন সমূহের অধিপতি। আমরা তোমার অনুগ্রহে সেই ধনের ভাগী হবো॥ ৩॥

.

অষ্টম সূক্ত : অরিষ্টক্ষয়ণম

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : চন্দ্রমা ছন্দ : অনুষ্টুপ, পংক্তি]

অন্তরিক্ষেণ পততি বিশ্বা ভূতাবাকশৎ। শুনো দিব্যস্য যন্মহস্তে তে হবিষা বিধেম। ১। যে এয়ঃ কালকাঞ্জা দিবি দেবা ইব শিতাঃ। তাসর্বানহু উতয়েহম্মা অরিষ্টতাতয়ে। ২। অল্প তে জন্ম দিবি তে সধস্থং সমুদ্রে অন্তর্মহিমা তে পৃথিব্যাম্। শুনো দিব্যস্য যন্মহস্তেনা তে হবিষা বিধেম। ৩।

বঙ্গানুবাদ –সকল ভূতজাতকে অবলোকন করতে করতে আকাশমার্গ হতে কাক, কপোত ইত্যাদি পক্ষী প্রায়ই পুরুষের অঙ্গে পতিত হয়ে থাকে। সেই দোষশান্তির নিমিত্ত দিব্যলোকে কুকুরের যে তেজঃ আছে, সেই তেজঃস্বরূপ হবির দ্বারা, হে অগ্নি! আমরা তোমার পরিচর‍্যা করছি। (অর্থাৎ আমরা স্বর্গস্থ কুকুরের তেজের দ্বারা অগ্নির পূজা করে তার প্রসাদে অশুভ পক্ষীদের আঘাতজনিত দোষ-শান্তি করতে সমর্থ হবো)। ১

কালকাঞ্জ প্রমুখ যে তিনজন অসুর উত্তম কর্মের কারণে স্বর্গলোকে দেবতাগণের ন্যায় অবস্থান করছে; আমি কাক বা কপোতের উপঘাত জনিত দোষ শান্তির নিমিত্ত এই পুরুষের রক্ষার্থে সেই কালকাঞ্জ নামক অসুরত্রয়কে আহ্বান করছি। ২।

 হে অগ্নি! বিদ্যুৎ-রূপ হতে জলে তোমার উৎপত্তি প্রত্যক্ষ হয়, আদিত্য-রূপ হতে দ্যুলোকে তোমার স্থান রয়েছে, তথা পৃথিবীতেও তুমি মহিমাবা। দিব্য কুকুরের তেজঃ-রূপ হবির দ্বারা আমরা তোমার পূজা করছি। (এই কার্যের ফলে কাককপোত ইত্যাদির উপঘাতজনিত দোষের শান্তি হোক)। ৩ ৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –অয়ং নো নভসম্পতিঃ ইতি তৃচেন ধান্যস্ফাতিকামঃ অশ্মানং সক্ষে অভিমন্যু কুসূলাদিধান্যনিধানস্থানেষু নিধায় তস্যোপরি অল্বচং তিম্রো ধান্যমুষ্টীর্নির্দয়ধ্যাৎ। সূত্রিতং হি।..অন্তরিক্ষেণ পততি ইতি তৃচেন কাককপোতশ্যেনাদিপক্ষিহতং অঙ্গং শ্বপদস্থানমৃত্তিকাং অভিমন্ত্র প্রলিম্পেৎ। তথা তত্রৈব কর্মণি শুনোঙ্গস্থা মক্ষিকা অনেন অভিমন্ত্র অগ্নৌ প্রক্ষিপ্য তথাবিধং অঙ্গং ধূপয়েৎ…ইত্যাদি ॥ (৬কা, ৮অ. ৭-৮)।

টীকা –সপ্তম সূক্তের দ্বারা ধান্যের প্রাচুর্য কামনায় সূত্রোক্ত প্রকারে বিনিয়োগ উক্ত হয়েছে। অষ্টম সূক্তের দ্বারা কাক, কপোত, বাজ ইত্যাদি পক্ষির দ্বারা আহত অঙ্গে কুকুর-বাসিত ভূমির মৃত্তিকা অভিমন্ত্রিত করে প্রলেপন কর্তব্য। কুকুরের অঙ্গস্থ মক্ষিকা অভিমন্ত্রিত করে অগ্নিতে প্রক্ষেপণ ইত্যাদি কর্মে এই মন্ত্রগুলি বিনিযুক্ত হয় ॥(৬কা, ৮অ.৭-৮)।

.

নবম সূক্ত : গর্ভাধানম

 [ঋষি : অথর্বা দেবতা : আদিত্য ছন্দ : অনুষ্টুপ ]

যন্তাসি যচ্ছসে হস্তাবপ রক্ষাংসি সেধসি। প্রজাং ধনং চ গৃহানঃ পরিহস্তো অভূদয়। ১। পরিহস্ত বি ধারয় যোনিং গর্ভায় ধাতবে। মর্যাদে পুত্রমা ধেহি তং ত্বমা গময়াগমে। ২। যং পরিহস্তমবিভরদিতিঃ পুত্রকাম্য। ত্বষ্টা তমস্যা আ বদ যথা পুত্রং জনাদিতি ॥ ৩॥

বঙ্গানুবাদ –হে অগ্নি! তুমি গর্ভকে নষ্ট-করণশালিনী ব্যাধিকে বশকরণে সমর্থ। তুমি আপন হস্ত বিস্তারিত করে গর্ভ-ঘাতক রাক্ষসগণকে সংহার করে থাকো। সেই অগ্নি তার পূজকের পুত্র পৌত্র ইত্যাদি ও তাদের ভোগের নিমিত্ত রক্ষক হয়ে থাকেন। ১।

হে পরিহস্ত (কঙ্কন ইত্যাদিরূপ ভূষণ)! তোমরা গর্ভ-স্থাপনের নিমিত্ত গর্ভাশয়কে বিস্তৃত করো। হে স্ত্রী! তুমি আপন গর্ভাশয়ে পুত্রকে স্থাপিত করো ॥ ২॥

পুত্রের কামনায় যে কঙ্কন ইত্যাদি দেবমাতা অদিতি ধারণ করেছিলেন, ত্বষ্টাদেব সেই রকম কঙ্কণ ইত্যাদি এই স্ত্রীকে বন্ধন করে দিন। এই স্ত্রী সুপুত্র উৎপাদনে (জন্মদানে) সমর্থ হোক ৩

.

দশম সূক্ত : জায়াকামনা

[ঋষি : ভৃগ দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ :অনুষ্টুপ]

 আগচ্ছত আগতস্য নাম গৃহাম্যায়তঃ। ইন্দ্রস্য বৃত্ৰছো বন্বে বাসস্য শতক্রতোঃ ॥ ১। যেন সূর্যাং সাবিত্রীমশ্বিনোহতুঃ পথা। তেন মামব্রবীদ ভগো জায়ামা বহতাদিতি ॥ ২॥ যন্তেইঙ্কুশশা বসুদানো বৃহন্নি হিরণ্যয়ঃ। তেনা জনীয়তে জায়াং মহং ধেহি শচীপতে ॥ ৩॥

বঙ্গানুবাদ— আমার নিকট আগত ইন্দ্রের প্রসন্নতার নিমিত্ত তাঁকে বৃত্রসংহারক ইত্যাদি নামে সম্বোধন করছি, এবং বিবাহের কামনাশালী আমি শতকর্মা (শতক্রতু সম্পন্নকারী), বাসব (বসুগণের উপাস্য) ইত্যাদি নামে খ্যাত ইন্দ্রের নিকট আমার অভীতি ফল প্রার্থনা করছি ॥১॥

আমি হেন বিবাহেচ্ছ পুরুষকে ভগদেবতা উপদেশ দিয়েছেন যে, যে পথে অশ্বিনীকুমারদ্বয় সাবিত্রী অর্থাৎ সবিতার পুত্রী সূর্যাকে জায়া-রূপে লাভ করেছিলেন, সেই পথে (বা প্রকারে) আমি যেন স্ত্রীকে প্রাপ্ত হই। ২।

 হে শচীপতি (ইন্দ্র)! প্রভূত ধনকে ধারণশালী তোমার অঙ্কুশবৎ (অঙ্কুশের ন্যায় আকৰ্ষক) হস্ত আছে; সেই মহান্ হিরন্ময় হস্তে তুমি পুত্রাভিলাষী আমাকে ভার‍্যা সম্প্রদান করো ৩

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –যম্ভাসি ইতি তৃচেন গর্ভাধানে কঙ্কণাদিকং সম্পত্য অভিমন্যু স্ত্রিয়া হস্তে বন্ধুীয়াৎ…আগচ্ছতঃ ইতি তৃচেন বিবাহকামঃ ইন্দ্রং যজতে উপতিষ্ঠতে বা।…তথা অনেন তৃচেন আজং হুত্বা বরবর্ধ্বেমূধি সম্পাতা আনয়েৎ …ইত্যাদি। (৬কা, ৮অ. ৯-১০)। টীকা –উপযুক্ত নবম সূক্তটির দ্বারা গর্ভাধানে কঙ্কন ইত্যাদি অভিমন্ত্রিত পূর্বক স্ত্রীর হস্তে বন্ধন করণীয়। দশম সূক্তটির দ্বারা বিবাহকামী জন ইন্দ্রের উদ্দেশে যাগ বা উপাসনা করবেন। বিবাহে এই সূক্তমন্ত্রের দ্বারা আজ্যাতি প্রদানপূর্বক বরবধূর মস্তকে নিক্ষেপ করণীয়। আগচ্ছতঃ (৬/৮২) এবং সবিতা প্রসবানাং ৫/২৪) সূক্তদ্বয়ের বিনিয়োগ অনুসরণীয়।(৬কা.৮অ. ৯-১০)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *