1 of 3

০৬।০৩ ষষ্ঠ কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক

তৃতীয় অনুবাক
প্রথম সূক্ত : কেশবর্ধনী ঔষধিঃ
[ঋষি : শন্তাতি দেবতা : চন্দ্রমা ছন্দ : অনুষ্টুপ ]

ইমা যান্তিঃ পৃথিবীস্তাসাং হ ভূমিরুত্তমা। তাসামধি ত্বচো অহং ভেষজং সমু জগ্রভ৷১৷ শ্রেষ্ঠমসি ভেষজানাং বসিষ্ঠং বীরুধানাম। সোমো ভগ ইব যামেষু দেবেষু বরুণো যথা ॥ ২॥ রেবতীরনাধৃষঃ সিষাসবঃ সিষাসথ। উত স্থ কেশদৃংহনীরথো হ কেসবর্ধনীঃ ॥ ৩৷৷

বঙ্গানুবাদ –পৃথিবী ইত্যাদি তিনটি লোকের মধ্যে ঐহিক ফলভোগের কারণ হওয়ায়, এবং স্বর্গ ইত্যাদি ফলের সাধন যজ্ঞ ইত্যাদি কর্মের কারণ হওয়ায়, এই পৃথিবী শ্রেষ্ঠ। এই পৃথিবীর ত্বচের (চর্মের) ন্যায় ভূমিভাগে ব্যাধিসমূহের শমন-করণশালী যে ঔষধিসমূহ উৎপন্ন হয়, সেগুলি আমি সংগ্রহ করবো ॥১॥

হে অমোঘ বীর্য যুক্ত হরিদ্রা! তুমি সকল ঔষধি ও বীরুধ সমুদায়ের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। যেমন দিবা-রাত্রির কালাবচ্ছেদের কারণে চন্দ্র ও সূর্য শ্রেষ্ঠ, যেমন দেবতাগণের মধ্যে বরুণ মুখ্য, তেমনই তুমি ॥ ২॥

 হে ঔষধিসমূহ! তোমরা কারও দ্বারা হিংসিত না হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্না, ধনশালিনী, এবং নীরোগ দানশালিনী হয়ে আছে। তোমরা আমার কেশরাশিকে দৃঢ় করো ও সেগুলির বৃদ্ধি করো ৷৷ ৩৷৷

.

দ্বিতীয় সূক্ত : ভৈষজ্যম

[ঋষি : শন্তাতি দেবতা : আদিত্যরশ্মি, মরুৎ ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, জগতী ]

কৃষ্ণং নিয়ানং হরয়ঃ সুপর্ণা অপো বসানা দিবমুৎ পতন্তি। ত আববৃত্রসদনাদৃতস্যাদি ঘৃতেন পৃথিবীং বৃদুঃ ॥১॥ পয়স্বতীঃ কৃণুথাপ ওষধীঃ শিবা যদেজথা মরুতে রুক্সবক্ষসঃ। ঊর্জং চ তত্র সুমতিং চ পিন্বত যত্রা নরো মরুতঃ সিঞ্চথা মধু ॥ ২॥ উদতো মরুতস্তাঁ ইয়র্ত বৃষ্টির‍ বিশ্বা নিবতশৃণাতি। এজাতি গ্লহা কন্যে তুনুরুং তুন্দানা পতত্যব জায়া ॥ ৩৷৷

বঙ্গানুবাদ –যে অন্তরিক্ষলোকে নক্ষত্র-চক্র নিয়মিত ভাবে বিচরণ করে, তাকে প্রাপ্ত হয়েই সূর্যরশ্মিসমূহ সকল পার্থিব রসকে গ্রহণ করে সূর্য মণ্ডলে ঊর্ধ্বারোহণ করছে, এবং পুনরায় সেখান হতে বর্ষা করণের জন্য আগত হয়ে পৃথিবীকে সিক্ত করছে। ১।

হে স্বর্ণাভূষণ-ধারী মরুৎ-গণ! তোমরা নিজেদের গমনকালে জল ও ঔষধিসমূহকে পুষ্ট করে থাকো। যে দেশে জল-বর্ষণ করো, সেখানে বলদায়ক অন্ন ও সুবুদ্ধি যুক্ত প্রজাগণকে পোষণ করে থাকো। ২।

 হে মরুৎ-গণ! সকল ধান্য ও নিম্নাভিমুখে গমনশালিনী নদীগুলিকে তৃপ্ত করণশালী মেঘসমূহকে প্রেরিত করো। দরিদ্র মাতা-পিতার আপন কন্যাকে দর্শন করে কম্পায়মান হওয়ার তুল্য, গর্জন রূপী ভীতিতে স্তনয়িতুরূপা মাধ্যামিকা বা বৃষ্টির নিমিত্ত সেই মেঘদলকে কম্পিত করছে। পতিকে সম্ভাষণ করে স্ত্রী যেমন অন্ন ইত্যাদি প্রদান করে, তেমনই সেই বাণী গমনশীল মেঘকে অন্ন ইত্যাদি প্রদান করছে ৷ ৩৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— ইমা যাস্তিস্রঃ ইতি তৃচেন কেশবৃদ্ধিকামং বৃক্ষভূমিজাতৌষধিভিঃ অবজ্বালিদেকেন বা বিভীতকাথোদকেন বা হরিদ্রাক্কাথোদকেন বা অভিমন্ত্রিতেন উষঃকালে অবসিঞ্চেৎ …কৃষ্ণং নিয়ানং ইতি তৃচেন উদরতুন্দাদিভৈষজ্যার্থং চিত্তিপ্রায়শ্চিত্ত্যাদ্যোষধিসহিতং উদকং অভিমন্ত্র তেনোদকেন ব্যাধিতং অবসিঞ্চেৎ …ইত্যাদি৷৷ (৬কা, ৩অ. ১-২)।

 টীকা –উপযুক্ত প্রথম সূক্তটির দ্বারা কেশবৃদ্ধিকামীকে বৃক্ষ বা ভূমিজাত ঔষধির দ্বারা অথবা অবজ্বালিত জলের দ্বারা অথবা বিভীতকের কাথের (অর্থাৎ অগ্নিপক্ক রসের) সাথে মিশ্রিত জলের দ্বারা অথবা হরিদ্রার কাথে মিশ্রিত জলের দ্বারা উষাকালে অবসিঞ্চন করণীয়।…দ্বিতীয় সূক্তের দ্বারা উদর-ব্যথা জনিত কষ্টের ভৈষজ্যের নিমিত্ত চিত্তি-প্রায়শ্চিত্তি ইত্যাদি ঔষধির সাথে জল অভিমন্ত্রিত পূর্বক তার দ্বারা ব্যাধিতকে অবসিঞ্চন কর্তব্য।..ইত্যাদি। ॥ (৬কা, ৩অ. ১-২সূ)।

.

তৃতীয়সূক্ত : অপাং ভৈষজ্যম

 [ঋষি : শন্তাতি দেবতা : আপঃ ছন্দ : অনুষ্টুপ, গায়ত্রী, উষ্ণিক ]

সসুষীস্তদপসসা দিবা নক্তং চ সষীঃ। বরেণ্যক্রতুরহমপো দেবীরূপ হ্রয়ে ॥ ১৷ ওতা আপঃ কর্মণ্যা মুঞ্চতিঃ প্রণীতয়ে। সদ্যঃ কৃম্বতৈবে ॥ ২॥ দেবস্য সবিতুঃ সবে কর্ম কৃথন্তু মানুষাঃ। শং নো ভবন্তুপ ওষধীঃ শিবাঃ ॥ ৩৷৷

বঙ্গানুবাদ— সর্বপ্রাণীর জীবনাত্মক রূপে প্রসিদ্ধ, সংসারের রক্ষা-কর্মের কারণে নিরন্তর প্রবাহিত, সেই জলসমূহকে (বা ঈদৃশী জলরূপা দেবীগণকে) আমি উত্তম কর্মকারী (স্তোতা) নিকটে আহ্বান করছি। ১৷৷

নিরন্তর প্রবাহশালী হয়ে অবস্থিত জলসমূহ উত্তম ফলের নিমিত্ত অনর্থের জড় পাপ হতে আমাদের রক্ষা করুক। তারা আমাদের মঙ্গল প্রাপ্তি করানোর নিমিত্ত পাপ হতে মুক্ত করুক। ২।

সূর্যদেবের প্রেরণায় মনুষ্যগণ সকল বৈদিক কর্মের অনুষ্ঠান করুক। কল্যাণপ্রদ ঔষধিসমূহ ও তাদের পুষ্টকরণশালী জলরাশি আমাদের কল্যাণ সাধন পূর্বক পাপকে নষ্ট করে দিক ॥ ৩৷৷

.

চতুর্থ সূক্ত : অপাং ভৈষজ্যম

[ঋষি : শন্তাতি দেবতা : আপঃ ছন্দ : অনুষ্টুপ]

হিমবতঃ প্রস্রবন্তি সিন্ধৌ সমহ সংগমঃ। আপো হ মহং তদ দেবীর্দদ হৃদ্যোতভেষজম ॥১॥ যন্মে অক্ষ্যোরাদিদ্যোত পাষ্ণোঃ প্রপদোশ্চ যৎ। আপস্তৎ সর্বং নিষ্কর ভিষজাং সুভিষক্তমাঃ ॥ ২। সিন্ধুপত্নীঃ সিন্ধুরাজ্ঞীঃ সর্বা বা নদ্য স্থান। দত্ত নস্তস্য ভেষজং তেনা বো ভুনজামহৈ ॥ ৩৷৷

বঙ্গানুবাদ –হিমালয় হতে পাপ-নাশক গঙ্গা ইত্যাদির জল প্রবাহিত হচ্ছে; তারা সকলে সমুদ্রে সংযুক্ত হচ্ছে। এই জলরাশি আমাকে এমনই ঔষধিসমূহ প্রদান করুক, যা হৃদয়ের দাহকে প্রশমিত করতে সমর্থ ॥১॥

দেবতা-সমান জলরাশি আমার নেত্রের ব্যাধি, পাষ্ণির (অর্থাৎ পদের উপরভাগের) ব্যাধি, প্রপদের (অর্থাৎ পদের পুরোভাগের) ব্যাধি ইত্যাদিকে দূরীভূত করে দিক। এই জলরাশি ব্যাধি দূরীকরণশালিনী ঔষধির মধ্যে পরম কুশল চিকিৎসক ॥ ২

হে জলদেবীগণ! তোমাদের স্বামী সমুদ্র, এবং তোমরা তার পত্নী। তোমরা ব্যাধিসমূহকে দূরীকরণশালিনী ঔষধি প্রদান করো, যাতে আমরা অন্ন ইত্যাদি বলদানশালী পদার্থগুলিকে সেবন করতে সমর্থ হই ৷ ৩৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— সসুধীঃ হিমবতঃ প্র স্রবন্তি ইতি তৃচয়োঃ পুনন্তু মা (৬/১৯) …বায়ো পূতঃ পবিত্রেণ (৬৫১) ইতি বৃহঙ্গণে (কৌ.১৯) পাঠাৎ শান্তুদকাদৌ, বিনিয়োগঃ।…তথা অর্থোত্থাপনবিঘুশমনকামঃ আভ্যাং তৃচাভ্যাং…ক্ষীরৌদনহবনাদীনি কর্মাণি কুর্যাৎ।…তথা উদর তুলাদিভৈষজ্যে কৃষ্ণং নিয়ানং (৬।২২) ইতি তৃচোক্তানি কর্মাণি কুর্যাৎ!…তথা হৃদয়দোষ জলোদরকামলরোগশাস্ত্যর্থং নদ্যাদকং প্রবাহানুগুণং আহৃত্য তত্র বলীকতৃণানি প্রক্ষিপ্য অনেন তৃচেন অবসিচ্য ব্যাধিতং অবসিঞ্চেৎ মার্জয়েৎ আচাময়েৎ বা..সূত্রিতং হি। ..ইত্যাদি৷৷ (৬কা, ৩অ, ৩-৪সূ)।

টীকা –উপযুক্ত সূক্ত দুটির শান্তিকর্মে বিনিয়োগ হয়। (ষষ্ঠ কাণ্ডের দ্বিতীয় অনুবাকের নবম সূক্ত এবং ষষ্ঠ কাণ্ডের পঞ্চম অনুবাকের দশম সূক্তের সাথে এর বিনিয়োগ সংশিষ্ট)। বিঘ্নবিনাশের কামনাকারী জন এই সূক্ত দুটির সম্পাতনে দুগ্ধ, অন্ন প্রভৃতির দ্বারা যাগকর্ম করবেন। তথা উদরতুল ইত্যাদির ভৈষজ্যে কৃষ্ণ নিয়ানং (ষষ্ঠ কাণ্ডের তৃতীয় অনুবাকের দ্বিতীয়) সূক্তের কর্ম ইত্যাদি করণীয়। হৃদয়-দোষ, জলোদর, কামলবরাগ ইত্যাদির শান্তির নিমিত্ত প্রবাহানুগুণ নদীর জল আহরণ করে বলীক-তৃণ প্রক্ষিপ্ত করে এই সূক্তের দ্বারা ব্যাধিতকে অবসিঞ্চন, মার্জন বা আচমন করানো কর্তব্য।…ইত্যাদি। (৬কা, ৩অ, ৩-৪)।

.

পঞ্চম সূক্ত : মন্যাবিনাশনম

 [ঋষি : শুনঃশেপ দেবতা : মন্যাবিনাশনম্ ছন্দ : অনুষ্টুপ ]

পঞ্চ চ যাঃ পঞ্চাশচ্চ সংযন্তি মন্যা অভি। ইতস্তাঃ সর্বা নশ্যন্তু বাক্য অপচিতামিব ॥১॥ সপ্ত চ যাঃ সপ্ততিশ্চ সংযন্তি গ্রৈব্যা অভি। ইতস্তাঃ সর্বা নশ্যন্তু বাকা অপচিতামিব। ২। নব চ যা নবতিশ্চ সংযন্তি স্কন্ধ্যা অভি। ইতস্তাঃ সর্বা নশ্যন্তু বাকা অপচিতামিব ৷ ৩৷৷

বঙ্গানুবাদ –গলদেশের শিরাসমূহের মধ্যে এই পঞ্চান্নটি কণ্ঠমালা (বা গণ্ডমালা) ব্যাপ্ত হয়ে আছে, সেগুলি এই মন্ত্রের প্রয়োগে বিনষ্ট হয়ে যাক, যেমন পতিব্রতা স্ত্রীকে প্রাপ্ত হয়ে (পুরুষের) দোষসমূহ বিনষ্ট হয়ে যায় ॥ ১।

 গ্রীবাদেশে নাড়ীসমূহে সাতাত্তরটি কণ্ঠমালা ব্যাপ্ত হয়ে আছে, সেগুলি এই মন্ত্রের প্রয়োগে বিনষ্ট হয়ে যাক, যেমন পতিব্রতা স্ত্রীকে প্রাপ্ত হয়ে (পুরুষের) দোষসমূহ বিনষ্ট হয়ে যায়। ২৷

 স্কন্ধের ধমনীসমূহের মধ্যে নিরানব্বইটি কণ্ঠমালা ব্যাপ্ত হয়ে আছে, সেগুলি এই মন্ত্রের প্রয়োগে বিনষ্ট হয়ে যাক, যেমন পতিব্রতা স্ত্রীকে প্রাপ্ত হয়ে (পুরুষের) দোষসমূহ বিনষ্ট হয়ে যায় ॥ ৩॥

.

ষষ্ঠ সূক্ত : পাপনাশনম্

 [ঋষি : ব্রহ্মা দেবতা : পাপমা ছন্দ : অনুষ্টুপ ]

 অব মা পাগান্তসৃজ বশী সন মৃড়য়াসি নঃ। আ মা ভদ্রস্য লোকে পান্ ধেহ্যবিহূতম্ ॥১॥ যো নঃ পাগন্ ন জহাসি তমু বা জহিমো বয়। পথমনু ব্যাবর্তনেহন্যং পাস্নানু পদ্যতাম্ ॥ ২॥ অন্যত্রাম্মন্যুচ্যতু সহস্রাক্ষো অমর্ত্যঃ। যং দ্বেযাম তমৃচ্ছতু যমু দ্বিম্মস্তমিজ্জহি ॥ ৩॥

বঙ্গানুবাদ –হে পাপের অভিমানী দেবতা! তুমি সকলকে বশে রক্ষণশালী (বশয়িতা)। তুমি আমাকে ত্যাগ করো এবং সুখী করো। তুমি আমাকে আমার পুণ্যের কারণে স্বর্গে প্রাপ্ত করাও ॥১॥

 হে পাস্মন্ (পাপাভিমানী দেবতা)! তুমি যদি আমাকে না ত্যাগ করো, তবে আমরা তোমাকে এই অনুষ্ঠান-কর্মের দ্বারা বলপূর্বক পথের চৌমাথায় পরিত্যাগ করছি। এই স্থান হতে তুমি আমাদের শত্রুদের দেহমধ্যে প্রবিষ্ট হও। ২৷৷

 যাদের আমরা দ্বেষ করি, তাদেরই এই ইন্দ্রসম শক্তিশালী পাপ প্রাপ্ত হোক। হে পাপ! তুমি তাদের (অর্থাৎ আমাদের যারা দ্বেষ করে, সেই শত্রুদের) বিনাশ করে দাও ৩

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –পঞ্চ চ যাঃ ইতি তৃচেন গণ্ডমালানিবৃত্ত্যর্থং পঞ্চাধিকপঞ্চাশৎসংখ্যাকৈঃ সূত্রোক্তকাষ্ঠৈঃ প্রজ্বালনং ইত্যেবমাদীনি কর্মাণি কুর্যাৎ। সূত্রিতং হি।….অব মা পাস্মন্ ইতি (তৃচেন) সর্বরোগভৈষজ্যকর্মণি সূত্রোক্তপ্রকারেণ তন্ত্রং কৃত্বা অপরেস্ত্রীংস্ত্রী পুরোডাশসংবর্তাংশ্চতুষ্পথে অবচরেৎ। সূত্রিতং হি।…মহাশান্ত্যাদৌ ক্রিয়মানে নৈঋতকর্মণি এতং তৃচং জপ নদীতীরং গচ্ছেৎ.. ইত্যাদি৷৷ (৬কা, ৩অ. ৫-৬)।

টীকা –উপযুক্ত পঞ্চম সূক্তটির দ্বারা গণ্ডমালা নিবৃত্তির নিমিত্ত পঞ্চান্নটি সূত্রোক্ত কাষ্ঠের প্রজ্বালন ইত্যাদি কর্মানুষ্ঠান করণীয়। ষষ্ঠ সূক্তটির দ্বারা সর্বরোগের ভৈষজ্যকর্মে সূত্রোক্ত প্রকারের দ্বারা তন্ত্র সাধন পূর্বক তিন তিনটি পুরোডাশ চতুষ্পথে বিতায়িত করণীয়। তথা মহাশান্তি ইত্যাদি ক্রিয়মানে নৈঋতকর্মে এই সূক্তের মন্ত্ৰত্রয় জপ পূর্বক নদীতীরে গমনীয়।…ইত্যাদি ॥ (৬কা, ৩অ. ৫-৬)।

.

সপ্তম সূক্ত : অরিষ্টক্ষয়ণম

[ঋষি : ভৃগু দেবতা : যম, নির্ঋতি ছন্দ : জগতী, ত্রিষ্টুপ ]

দেবাঃ কপোত ইষিততা যদিচ্ছন দূতো নিঋত্যা ইদমাজােম। তম্য অৰ্চাম কৃণবাম নিষ্কৃতিং শং নো অস্তু দ্বিপদে শং চতুষ্পদে ৷ ১৷৷ শিবঃ কপোত ইষিতো নো অনাগা দেবাঃ শকুনো গৃহং নঃ। অগ্নিহিঁ বিপ্রো জুতাং হবিনঃ পরি হেতিঃ পক্ষিণী নো বৃণ ॥ ২॥ হেতিঃ পক্ষিণী ন দত্যম্মানাষ্ট্ৰী পদং কৃণুতে অগ্নিধানে। শিবো গোভ উত পুরুষেভ্যো নো অস্তু মা নো দেবা ইহ হিংসীৎ কপোতঃ ॥ ৩॥

বঙ্গানুবাদ –হে দেববৃন্দ! নির্ঋতি নাম্নী এই পাপদেবতার দূতরূপ কপোতাখ্য পক্ষী আমাদের অনিষ্ট সাধনের ইচ্ছা করছে; তার নিবারণের নিমিত্ত আমরা তোমাদের হব্য ইত্যাদির দ্বারা পূজা করছি। আমাদের দ্বিপদ পুত্র প্রজা ইত্যাদি ও চতুষ্পদ গো-ইত্যাদি প্রাণীসমূহের কল্যাণ হোক ॥ ১৷৷

হে দেববৃন্দ! পাপদেবতার এই দূত যেন আমাদের গৃহকে দুঃখগ্রস্ত করতে না পারে, সে যেন আমাদের সুখদায়ক হয়। বিজ্ঞ অগ্নি এই নিমিত্ত আমাদের হব্যকে গ্রহণ করুন। তাঁর কৃপায় এই কপোত আমাদের যেন অকল্যাণ না করতে পারে।২

 তার পক্ষযুক্ত আয়ুধ আমাদের যেন নাশ না করে। আমাদের এই গো ও পুরুষদের পক্ষে যেন সে সুখ-প্রদানশালী হয়, হে দেবগণ! এই কবুতর যেন আমাদের সন্তাপকারক না হয়। ৩।

.

অষ্টম সূক্ত : অরিষ্টক্ষয়ণম

 [ঋষি : ভৃগু দেবতা : যম, নির্ঋতি ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, অনুষ্টুপ, জগতী ]

 ঋচা কপোতং নুদত প্ৰণোদমিবং মদন্তঃ পরি গাং নয়ামঃ। সংলোভয়ন্তো দুরি পদানি হিত্বা ন ঊর্জং প্র পদাৎ পথিষ্ঠঃ ॥ ১৷ পরীমেহগ্নিমর্ষত পরীমে গামনেষত। দেবেম্বত শ্রবঃ ক ইমা আ দধর্ষতি ॥ ২॥ যঃ প্রথমঃ প্রবতমাসসাদ বহুভ্যঃ পন্থমনুপম্পশানঃ। যোহস্যেশে দ্বিপদো যশ্চতুষ্পদস্তস্মৈ যমায় নমো অস্তু মৃত্যবে ॥ ৩॥

বঙ্গানুবাদ –হে দেববৃন্দ! এই কপোতকে আমাদের গৃহ হতে বিতাড়িত করে দাও। আমরা অন্নের দ্বারা তৃপ্ত হয়ে গো-সকলকে সঞ্চারণ করছি। এই কপোতের পদচিহ্নকে সম্যক প্রমার্জনার দ্বারা শান্তিময় করে তুলছি। এই কপোত আমাদের পাকশালার অন্নকে ত্যাগ করে উড্ডীয়মান হয়ে যাক। ১।

কবুতরের প্রবেশকে শমিত করণের নিমিত্ত এই ঋত্বিকগণ অগ্নিকে গৃহে আনয়ন (বা সংগ্রহ) করেছেন। এই গো-সকল সর্বত্র সঞ্চারণ করছে এবং দেবতাগণের উদ্দেশে হব্য ইত্যাদি সমর্পিত করা হচ্ছে। এই হেন শান্তিকর্মের উপরান্তে কোন হিংসক পুরুষ আমাদের পীড়িত করতে সক্ষম হবে না। ২।

এই আজ মারণের যোগ্য, এই কল্য মারণের যোগ্য এইরকম অনুক্রম করতে থেকে যমরাজ ফল দানের নিমিত্ত স্থিত আছেন (বা পরিগণনা করতে করতে পরিক্রমণ করে চলেছেন। তিনি দ্বিপদশালী মনুষ্য ইত্যাদি ও চতুষ্পদশালী পশুবর্গের নিয়ন্তা। সেই মৃত্যুকেপ্রেরণশালী যমরাজের উদ্দেশে নমস্কার জ্ঞাপন করছি ৷ ৩৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— গৃহাদিষু কপোতোকপ্রবেশশান্ত্যর্থং শান্ত্যদকাভিমন্ত্রণে বিনিযুক্ত মহাশান্তিগণে দেবাঃ কপোতঃ (৬/২৭) ঋচা কপোতং (৬/২৮) অমুন হেতি (৬/২৯) ইতি ত্রয়চা আবপনীয়াঃ।….ইত্যনয়া ঋচা কপোততালুকপ্রবেশ শান্ত্যৰ্যমেব গাং অগ্নিং আনীয় শালাং কপোতপ্রবেশস্থলং বা ত্রিঃ পরিভ্রাময়েৎ। সূত্রিতং হি।… ইত্যাদি৷৷ (৬কা, ৩অ. ৭-৮)।

টীকা –উপযুক্ত ৭ম ও ৮ম এবং পরবর্তী ৯ম সূক্তের মন্ত্রগুলি গৃহ ইত্যাদিতে কপোত (কবুতর, মতান্তরে ঘুঘু), উল্ক (পেঁচা) প্রবেশ করলে তার শান্তির জন্য বিনিয়োগ হয়। এই উদ্দেশে গৃহে হোমাগ্নি আবপনীয় ও কপোতের প্রবেশ স্থলে গাভীকে তিনবার পরিভ্রামিত করানো কর্তব্য ॥ (৬কা, ৩অ. ৭-৮)।

.

নবম সূক্ত : অরিষ্টক্ষয়ণম

 [ঋষি : ভৃগু দেবতা : যম, নির্ঋতি ছন্দ : গায়ত্রী, অষ্টি]

 অমূন হেতিঃ পতত্রিণী ন্যেতু যদুলুকো বদতি মোঘমেতৎ। যদ বা কপোতঃ পদমগ্নেী কৃপণোতি ॥১॥ যৌ তে দূতৌ নিঋত ইদমেতোহপ্রহিতৌ প্ৰহিতৌ বা গৃহং নঃ। কপোতোকাভ্যামপদং তদস্তু ॥ ২॥ অবৈরহত্যায়েদমা পপত্যাৎ সুবীরতায়া ইদমা সসদ্যাৎ। পরাঙেব পরা বদ পরাচীমনু সংবত। যথা যমস্য ত্বা গৃহেহরসং প্রতিচাকশানাভূকং প্ৰতিচাকশান্ ॥ ৩॥

বঙ্গানুবাদ –এই পক্ষশালী (পক্ষীরূপ) আয়ুধ দূরস্থে পরিদৃশ্যমান শত্রুগণকে প্রাপ্ত হোক। ঐ অশোভন বাণী উচ্চারণকারী উল্ক (পেঁচা) নিবার্য হয়ে যাক, পচনাগ্নির (রন্ধনশালাস্থিত অগ্নির) নিকট পদচিহ্ন রক্ষণকারী অশুভসূচক কপোতও নির্বীর্য হয়ে যাক ॥ ১।

 হে পাপদেবতা নির্ঋতি! তোমার দ্বারা প্রেরিত হয়ে এই কপোত ও উল্ক আমাদের ঘরে আগত হয়েও যেন না প্রাপ্ত হতে পারে ॥ ২॥

এই কপোত ও উলুকের আগমন জনিত অশুভ চিহ্ন আমাদের নিমিত্ত অহিংসক হয়ে যাক। আমাদের বীরবর্গ পরাজিত হয়ে প্রত্যাবর্তনের ভাবকে যেন প্রাপ্ত না হয়। হে যমের দূতরূপ কপোত! যেমন তোমার অধিস্বামীর গৃহে সেখানকার প্রাণীগণ তোমাকে নির্বীর্যরূপে দর্শন করে, তেমনই যেন আমরাও দেখি ৷ ৩৷৷

.

দশম সূক্ত: পাপশমনম

[ঋষি : উপরিবভ্রব। দেবতা : শমী ছন্দ : জগতী, ত্রিষ্টুপ, অনুষ্টুপ ]

দেবা ইমং মধুনা সংযুতং যং সরস্বত্যামধি মণাবচক্ষুঃ। ইন্দ্র আসীৎ সীরপতিঃ শতক্রতুঃ কীনাশা আসন্ মরুতঃ সুদানবঃ ॥ ১। যস্তে মদোহবকেশো বিকেশো যেনাভিহস্যং পুরুষং কৃপণাষি। আরাৎ ত্বদন্যা বনানি বৃক্ষি ত্বং শমি শতব বি রোহ ॥ ২॥ বৃহৎপলাশে সুভগে বর্ষবৃদ্ধ ঋতাবরি। মাতেব পুত্রেভ্যো মৃড কেশেভ্যঃ শমি ৷ ৩৷৷

বঙ্গানুবাদ –মধু-রসযুক্ত এই যবকে দেবতাগণ সরস্বতী নদীর নিকট মনুষ্যগণকে দান করেছিলেন। সেই সময় কর্ষণ করে ধান্য উৎপন্ন করার নিমিত্ত ইন্দ্র হল ধরেছিলেন এবং শোভন দানশালী মরুৎ-বর্গ কৃষক হয়েছিলেন। ১।

হে শমী (শাই বৃক্ষ)! তোমার যে হর্ষ (মদ) অবমত (অপকৃষ্ট) বা বিকেশসম্পন্ন জনের কেশের উৎপাদক, এবং সেই কেশের বৃদ্ধিকারক হয়ে থাকে, তাতে তুমি পুরুষকে সর্বত্র হর্ষযুক্ত করে থাকো। তুমি শতশাখা সম্পন্ন হয়ে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হও। আমি তোমাকে ছেদন করছি না, অন্য বৃক্ষকে ছেদন করছি। ২

হে সৌভাগ্যের করণরূপা, বিনা প্রযত্নেই বর্ষার জলে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত-শালিনী, বৃহৎ বৃহৎ পত্রশালিনী শমী! মাতা কর্তৃক পুত্রকে সুখ। প্রদানের সমান, তুমি কেশসমূহের সুখকারী হও ৩৷

.

একাদশ সূক্ত : গৌঃ

[ঋষি : উপরিবভ্রব দেবতা : গৌ ছন্দ : গায়ত্রী ]

আয়ং গৌঃ পৃশ্নিরক্রমীদসদন্মাতরং পুরঃ। পিতরং চ প্রয়স্বঃ ॥ ১৷৷ অন্তশ্রুতি রোচনা অস্য প্রাণাদপানতঃ। ব্যখ্যন্মহিষঃ স্বঃ ॥ ২॥ ত্রিংশদ ধামা বি রাজতি বা পতঙ্গো অশিশিয়ৎ। প্রতি বস্তোরহভিঃ ৷৷ ৩৷৷

বঙ্গানুবাদ— সূর্য উদয়াচলের উপর আরোহণ করে পূর্ব- দিভাগে দর্শন দান করছেন। এঁর কিরণসমূহ সকলের মাতৃস্বরূপা পৃথিবীকে আবৃত বা ব্যাপ্ত করে দিয়েছে। পুনরায় ইনি স্বর্গ ও অন্তরিক্ষ লোককে ব্যাপ্ত করেছেন. এই সূর্য বৃষ্টির জলকে দোহন করার কারণে গো নামে অভিহিত হয়ে থাকেন। ১।

 প্রাণ ও অপান ব্যাপারের করণশালী (অর্থাৎ প্রাণাপানযুক্ত) প্রাণীগণের দেহের মধ্যে সূর্যের প্রভা বিচরণ করছে। এই মহান্ সূর্য স্বর্গ ও উপরস্থ সকল লোককেও প্রকাশমান করে তুলছে। ২।

 দিবা ও রাত্রির অঙ্গ রূপ ত্রিশ মুহূর্তকাল এই সূর্যের রশ্মিসমূহ হতেই দেদীপ্যমান হয়ে থাকে এবং বেদত্রয়ী বাণীও সূর্যের আশ্রয়েই অবস্থিত থাকে ৷ ৩৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –অমুন হেতিঃ ইতি তৃচস্য পূর্বসূক্তেন সহ উক্তো বিনিয়োগঃ।…দেবা ইমং ইত্যচ্য পৌনসিরসবে মধুমত্মাভিমৰ্শনাদীনি কর্মাণি কুর্যাৎ… আয়ং গৌঃ ইতি তৃচেন পৃশ্লিসবে গোরভিমৰ্শন সম্পাদীনি কর্মাণি কুর্যাৎ। ….দ্বাদশাহে অবিবাক্যেহনি মানসস্তোত্রং অনেন তৃচেন অনুমন্ত্রয়েত।… ইত্যাদি। (৬কা, ৩অ. ৯-১১)।

টীকা— উপযুক্ত নবম সূক্তের বিনিয়োগ পূর্বসূক্তের সাথে উক্ত হয়েছে। দশম সূক্তের দ্বারা মধুমস্থাভিমৰ্শন ইত্যাদি কর্ম করণীয়। একাদশ সূক্তের দ্বারা দ্বাদশাহে মানসস্তোত্রের অনুমন্ত্রণ করণীয়। এই সূক্তে গৌঃ অর্থে বলা হয়েছে গমনশীলঃ। আবার, স এব বৃদকলক্ষণস্য অমৃতস্যদোহনা গৌরিত্যুচ্যতে–অর্থাৎ বৃষ্টির জললক্ষণ অমৃতের দোহনের নিমিত্ত সূর্যকে গৌ বলা হয়েছে। বেদত্রয়ী বাণীও সূর্যের আশ্রয়েই অবস্থিত থাকে–এই উক্তি প্রসঙ্গে সায়ণাচার্য তৈত্তরীয় ব্রাহ্মণের (৩/১২/৯১) বক্তব্য তুলে ধরেছেন–দ্যুলোকে সূর্যদেব ঋগ্বেদের দ্বারা পূর্বাহ্নে, যজুর্বেদের দ্বারা মধ্যাহ্নে এবং সামবেদের দ্বারা সায়াহ্নে পূজিত হয়ে থাকেন।…ইত্যাদি। (৬কা, ৩অ. ৯-১১)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *