1 of 3

০৪।৫ চতুর্থ কাণ্ড : পঞ্চম অনুবাক

পঞ্চম অনুবাক
প্রথম সূক্ত : গাবঃ
 [ঋষি : ব্রহ্ম দেবতা : গাবঃ ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, জগতী]

আ গাবো অগুনুত ভদ্রমন্তসীদন্তু গোষ্ঠে রণয়ন্ত্রশ্মে। প্রজাবতীঃ পুরুরূপা ইহ সারিন্দ্রায় পূর্বীরুষসো দুহানাঃ ॥১॥ ইন্দ্রো যজ্বনে গৃণতে চ শিক্ষত উপেৎ দদাতি ন স্বং মুয়তি। ভূয়োভূয়ো রয়িমিদস্য বয়ন্নভিগ্নে খিল্যে নিদধাতি দেবয়ুম। ২৷৷ ন তা নশন্তি ন দভাতি তস্করো নাসামামিত্রো ব্যথিরা দধর্ষতি। দেবাংশ্চ ষাভির্যজতে দদাতি চ জ্যোগিৎ তাভিঃ সচতে গোপতিঃ সহ। ন তা অর্বা রেণুককাটোহমুতে ন সংস্কৃতত্রমুপ যন্তি তা অভি। উরুগায়মভয়ং তস্য তা অনু গাবো মর্তস্য বিচরন্তি যজ্বনঃ ॥ ৪৷৷ গাবো ভগো গাব ইন্দ্রো ম ইচ্ছাদ গাবঃ সোমস্য প্রথমস্য ভক্ষঃ। ইমা যা গাবঃ স জনাস ইন্দ্র ইচ্ছামি হৃদা মনসা চিদিম্ ॥ ৫৷৷ ঘূয়ং গাবো মেদয়থা কৃশং চিদশ্রীরং চিৎ কৃণুথা সুপ্রতীক। ভদ্রং গৃহং কৃণুথ ভদ্রবাচো বৃহৎ বো বয় উচ্যতে সভাসু। ৬। প্রজাবতীঃ সূবসে রুশন্তীঃ শুদ্ধা অপঃ সুপ্রপাণে পিবন্তীঃ। মা ব স্তেন ঈশত মাঘশংসঃ পরি বো রুদ্রস্য, হেতিৰ্বণ ॥ ৭ ৷৷

বঙ্গানুবাদ –গো-বর্গ আমাদের অভিমুখে আগমন করুক, আমাদের মঙ্গল করুক। তারা আমাদের গোষ্ঠে উপবেশন পূর্বক দুগ্ধ ইত্যাদির দ্বারা আমাদের প্রসন্ন করুক। সন্তানবতী অনেক বর্ণশালিনী গাভী যজমানের গৃহে বর্ধিত হতে থাকুক এবং অনেক উষাকালে দোহন-কৃতা (দুহ্যমানা) হয়ে ইন্দ্রকে আহ্বানকারিণী হোক৷ ১৷

 স্তুতি-করণশীল জনকে ইন্দ্র গাভী প্রাপ্তির উপায় বলে দিয়ে থাকেন এবং নিজেও বহু গাভী দান করে থাকেন। তিনি যজ্ঞকারী (যজমান) এবং স্তুতি-করণশীল জন, কারও ধন হরণ করেন না। সূর্যদেব সেই যজমান ও স্তোতাকে দুঃখরহিত স্বর্গে প্রতিষ্ঠিত করে থাকেন। সেই স্বর্গে অযাজ্ঞিক জন গমন করতে পারে না। ২।

ইন্দ্র প্রদত্ত গো-বর্গ যেন নাশ প্রাপ্ত না হয়, চোরও যেন তাদের অপহরণ করতে না পারে। শত্রুবর্গের শস্ত্র তাদের যেন পীড়িত করতে না পারে। যজমান যে গাভীসমূহের দুগ্ধে দেবতাগণের পূজন (বা যজ্ঞানুষ্ঠান) করেন, এবং যে গাভীসমূহ দক্ষিণাস্বরূপ প্রদত্ত হয়ে থাকে, সেই যজমান চিরকাল ব্যাপী সেইরকম গাভীর দ্বারা সমৃদ্ধ হয়ে থাকুন ৷ ৩৷

হিংসক ব্যাঘ্র ইত্যাদি পশু এই গো-বর্গের নিকটে না আসতে পারে! গো-কে হত্যা করে তার মাংস রন্ধনকারী ব্যক্তিগণের দিকে (এই গো-গণ) যেন গমন করতে না পারে। এই যজমানের ভয়রহিত স্থানের দিকে (এই গো-গণ) বিচরণ করতে থাকুক। ৪৷

 যাতে আমার নিকট গো-বৰ্গ অবস্থান করতে পারে, ইন্দ্র তেমন করুন। এই গো-বৰ্গই পুরুষের নিমিত্ত ধনস্বরূপ। অভিযুত সোম গোদুগ্ধে সিদ্ধকৃত হয়ে থাকে। হে মনুষ্যগণ! এই গো-বর্গই ইন্দ্রস্বরূপ (অর্থাৎ গাভীগণ যেমন ইন্দ্রের আশ্রিত, ইন্দ্রও তেমনই গাভীগণের মাধ্যমে পূজিত)। এই গাভীবর্গের দুগ্ধ-ঘৃত ইত্যাদির দ্বারা যুক্ত হবির দ্বারা আমি হৃদয়গত ভাব (বা কামনা) নিয়ে ইন্দ্রের উদ্দেশে যাগানুষ্ঠান করছি। ৫৷৷

হে গাভীবর্গ! তোমরা আপন দুগ্ধ ইত্যাদি রসের দ্বারা (অর্থাৎ সারবস্তুর দ্বারা) নির্বল প্রাণীগণকে পুষ্ট করো; অসুন্দর অঙ্গশালী পুরুষকে সুন্দর করে দাও। তোমরা আমাদের গৃহকে সুশোভিত করো। তোমাদের দুগ্ধ-ঘৃত ইত্যাদি সকলের দ্বারা প্রশংসিত হয়ে থাকে। ৬।

হে গো-বর্গ! তোমরা সুন্দর ঘাসসম্পন্ন ভূমিভাগে বিচরণ করতে করতে স্বচ্ছ জল পান করো। তোমরা সন্তান-সন্ততিদের সাথে যুক্ত হয়ে থাকো। হিংসক ব্যাঘ্র যেন তোমাদের প্রাপ্ত না হয় এবং চোরও যেন তোমাদের অপহরণ করতে না পারে। জ্বরের অভিমানী দেবতা রুদ্রের শস্ত্র যেন তোমাদের উপর নিপতিত না হয়। ৭

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –পঞ্চমেনুবাকে পঞ্চ সূক্তানি। তত্র আ গাবঃ ইত্যাদিসূক্তদশকস্য মৃগারসংজ্ঞত্বাৎ মৃগারৈমুগ্ধেত্যাপ্লাবয়তি (কৌ. ৪/৩) ইত্যাদি সূত্রবিহিতে সর্বভৈষজ্যকর্মণি হোমসম্পাতাবসেকাদিষু বিনিয়োগঃ। তত্র আ গাবঃ ইতি প্রথমেন সূক্তেন গং রোগোপশমন পুষ্টিপ্রজনন কর্মসু সলবণং কেবলং বা উদকং অভিমন্যু গাঃ পায়য়েৎ। সূত্রিতং হি।…ইত্যাদি। (৪কা, ৫অ. ১সূ)।

টীকা— পঞ্চম অনুবাকে পাঁচটি সূক্ত। তার মধ্যে আ গাবঃ ইত্যাদি সূক্ত দশকের মৃগার-সংজ্ঞত্বের। কারণে (মৃগারৈমুঞ্চেত্যাপ্লাবয়তি ইত্যাদি সূত্রবিহিতে) সকল ভৈষজ্য কর্মে এবং হোম, সম্পাত ও অবসেক ইত্যাদি কর্মে এর বিনিয়োগ হয়ে থাকে। এই আ গাবঃ সূক্তের দ্বারা গো-ব্যাধি উপশম, পুষ্টি ও প্রজনন কর্মে লবণযুক্ত বা কেবল জল অভিমন্ত্রিত করে গাভীকে পান করানো কর্তব্য।…ইত্যাদি। (৪কা, ৫অ. ১সূ)।

.

দ্বিতীয় সূক্ত : অমিত্ৰক্ষয়ণম

 [ঋষি : বশিষ্ঠ বা অথর্বা দেবতা : ইন্দ্র, ক্ষত্রিয় রাজা ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

 ইমমিন্দ্র বর্ধয় ক্ষত্রিয়ং ম ইমং বিশামেকবৃষং কৃণু ত্ব। নিরমিত্রানফ্লুহ্যস্য সর্বাংস্তান রন্ধয়াম্মা অহমুত্তরেষু ॥১॥ এমং ভজ গ্রামে অশ্বেযু গোষু নিষ্টং ভজ যো অমিত্রো অস্য। বৰ্ম ক্ষত্রাণাময়মস্তু রাজেন্দ্ৰ শত্ৰং রন্ধয় সর্বৰ্মস্মৈ ॥ ২॥ অয়মস্তু ধনপতির্ধনানাময়ং বিশাং বিপতিরস্তু রাজা। অস্মিনিদ্র মহি বৰ্চাংসি ধেহ্যবৰ্চসং কৃণুহি শত্রুমস্য ॥ ৩৷৷ অম্মৈ দ্যাবাপৃথিবী ভূরি বামং দুহাথাং ঘর্মদূঘে ইব ধেনু। অয়ং রাজা প্রিয় ইন্দ্রস্য ভূয়াৎ প্রিয়ো গবামোষধীনাং পশূনা ॥৪॥ যুনমিত উত্তরাবন্তমিং যেন জয়ন্তি ন পরাজয়ন্তে। যস্তৃা করদেকবৃষং জনানামুত রামুত্তমং মানবানাম্ ॥ ৫৷৷ উত্তরমধরে তে সপত্ন যে কে চ রাজ প্রতিশবস্তে। একবৃষ ইন্দ্ৰসখ জিগীবাং ছক্ৰয়তমা ভরা ভোজনানি ॥ ৬৷৷ সিংহপ্রতীকো বিশশা অদ্ধি সর্বা ব্যাঘ্রপ্রতীকোইব বাধস্ব শত্রু। একবৃষ ইন্দ্রসখা জিগীবাং ছয়মা খিদা ভোজনানি ॥ ৭

বঙ্গানুবাদ -হে ইন্দ্রদেব! এই রাজাকে পুত্র, পৌত্র, রথ, সম্পতি ইত্যাদির দ্বারা যুক্ত করো; বীর পুরুষগণের মধ্যে এই রাজাকে কারও মুখামুক্ষি করো না। এঁর সকল শত্রুকে নির্বীর্য করে দিয়ে এঁর বশীভূত করে দাও। আমি আপন মন্ত্রবলে এঁকে শ্রেষ্ঠ লোকপাল রূপে প্রতিষ্ঠিত করছি৷৷ ১।

 হে ইন্দ্রদেব! এই রাজাকে জনগণের সাথে গভীর সম্পর্কে যুক্ত করো। এই রাজার শত্রুকে গাভী, অশ্ব এবং মনুষ্যের সাথে সম্পর্কশূন্য করো। এই রাজা সকল ক্ষত্রিয়ের মুকুট স্বরূপ হোন। সকল রাজ্য (রাষ্ট্র) ও শত্রুবর্গকে এঁর বশীভূত করে দাও। ২।

এই রাজা সুবর্ণ ইত্যাদি ধনসমূহের এবং প্রজাগণের অধিপতি হোন। হে ইন্দ্রদেব! শত্রুবর্গকে পরাভব-করণশালী তেজকে এই রাজার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করো ৷ ৩৷

 হে দ্যাবাপৃথিবী (অর্থাৎ আকাশ ও পৃথিবী)! আমাদের রাজাকে প্রভূত ঐশ্বর্য প্রদান করো, যেমন প্রবর্গের জন্য দুটি ধেনু দোহনকারীকে প্রচুর ধন দান করে। ধন-সমৃদ্ধির পর এই রাজা বহু যজ্ঞকর্মের অনুষ্ঠানের দ্বারা ইন্দ্রের স্নেহপাত্র হোন। ইন্দ্রের স্নেহপাত্র হওয়ায় বৃষ্টির ফলে এই রাজা ঔষধিসমূহ ও পশুগণেরও প্রিয় হয়ে উঠুন। ৪

হে রাজন! পরম শ্রেষ্ঠ ইন্দ্রকে। তোমার মিত্র করে দিচ্ছি। ইন্দ্রের প্রেরণায় তোমার মিত্রবর্গ শত্রুসেনার উপর বিজয় লাভ করুক। যে, ইন্দ্রদেব তোমাকে বীরবর্গ ও রাজন্যবৃন্দের মধ্যে মুখ্যস্থানে অধিষ্ঠিত করেছেন এবং যিনি মনুবংশীয় পুরুরবা ইত্যাদি রাজগণকে অত্যন্ত বীর ও গুণযুক্ত করেছেন, আমি সেই ইন্দ্রদেবকে তোমার মিত্র করে দিচ্ছি। ৫।

 হে রাজন! তোমার শত্রু তোমার দ্বারা অবদমিত হয়ে থাকুক, তুমি? সকলের শ্রেষ্ঠ হও। ইন্দ্রের মিত্র হয়ে তুমি বৃষভের ন্যায় পরাক্রমী হও এবং শত্রুগণের নিকট হতে ভোগ-সাধন ঐশ্বর্যকে অপহরণ করো (ছিনিয়ে নাও)। ৬।

 হে রাজন্! তুমি আপন আজ্ঞাক্রমে আপন প্রজাদের উপর শাসন করো। তুমি ব্যাঘ্রের সমান পরাক্রমী; এই নিমিত্ত ব্যাঘ্রের মতোই আক্রমণ পূর্বক শক্রবর্গকে সন্তাপময় করে তোলে। ইন্দ্রের মিত্রতার সৌজন্যে বৃষভের ন্যায় অত্যন্ত পরাক্রমী হয়ে শত্রুবর্গের ঐশ্বর্যরাশি বিনষ্ট করো। ৭।

 সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— ইমং ইন্দ্র ইতি সূক্তেন সংগ্রামজয়ার্থং আজ্যহোমং সত্তুহোমং ধনুরিধানং ইসমিদাধানং রাজ্ঞে অভিমন্ত্রিতধনুঃ প্রদানং চ কুঠাৎ। সূত্রিতং হি।..ইত্যাদি। (৪কা, ৫অ. ২সূ)।

টীকা –এই সূক্তের দ্বারা সংগ্রামজয়ার্থে আজ্যহোম, সঞ্জুহোম ধনুঃ-ইধান, ইষু-সমিদাধান এবং ধনুঃ অভিমন্ত্রিত করে রাজাকে প্রদান কর্তব্য।…ইত্যাদি। (৪কা, ৫অ. ২সূ)।

.

তৃতীয় সূক্ত : পাপমোচনম

[ঋষি : মৃগার দেবতা : অগ্নি ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, অনুষ্টুপ, পংক্তি ]

অগ্নের্মন্ধে প্রথমস্য প্রচেতসঃ পাঞ্চজন্যস্য বহুধা যমিন্ধতে। বিশোবিশঃ প্রবিশিবাংসমীমহে স নো মুঞ্চত্বংহসঃ ॥ ১৷৷ যথা হব্যং বহসি জাতবেদো যথা যজ্ঞং কল্পয়সি প্রজান। এবা দেবেভ্যঃ সুমতিং ন আ ব স নো মুঞ্চত্বংহসঃ ॥ ২॥ যামন্যামনুপযুক্তং বহিষ্ঠং কর্মকর্মন্নাভগ। অগ্নিমীডে রক্ষোহণং যজ্ঞবৃধং ঘৃতাহুতং স নো মুঞ্চত্বংহসঃ ॥ ৩৷৷ সুজাতং জাতবেদসমগ্নি বৈশ্বানরং বিভূম। হব্যবাহং হবামহে স নো মুঞ্চত্বংহসঃ ॥ ৪৷ যেন ঋষয়ো বলমদ্যোতয় যুজা যেনাসুরাণাময়ুবন্ত মায়া। যেনাগ্নিনা পণীনিদ্ৰো জিগায় স নো মুঞ্চত্বংহসঃ ॥ ৫॥ যেন দেবা অমৃতমন্ববিন্দ যেনৌষধীৰ্মধুমতীরকৃষ্ণ। যেন দেবাঃ স্বরাভরন্তস নো মুঞ্চত্বংহসঃ ॥ ৬৷ যমোদং প্রদশি যৎ বিবোচতে যজ্জাতং জনিতব্যং চ কেবলম। স্তৌম্যগ্নিং নাথিতো জোহবীমি স নো মুঞ্চত্বংহসঃ ॥ ৭

 বঙ্গানুবাদ— যে পাঞ্চযজ্ঞ অগ্নিদেবকে দেবাগ, পিতৃযাগ, ভূতগ, মনুষ্যযাগ ও ব্রহ্মযাগের দ্বারা আরাধনা করা হয়, যার মধ্যে নিষাদ সহ পঞ্চ বর্ণের মনুষ্য বর্তমান (অর্থাৎ যিনি বহুরূপে চ সন্দীপ্তমান হয়ে থাকেন), সেই পঞ্চ বর্ণে বা পঞ্চযজ্ঞে যিনি বিরাজমান এবং গন্ধর্ব-অপ্সরা-দেবতা- রাক্ষস ও অসুরের দ্বারা অনুষ্ঠিত যজ্ঞে যাঁকে আরাধনা করা হয়ে থাকে, সেই অগ্নির মাহাত্ম্যকে আমি পরিজ্ঞাত আছি। আমরা যে অগ্নিকে প্রদীপ্ত করে থাকি; যিনি সকল প্রাণীর মধ্যে জঠরাগ্নি রূপে বিরাজমান আছেন, সেই অগ্নিদেব সকল পাপ হতে আমাদের রক্ষা করুন। ১।

হে অগ্নি! তুমি জাবেদা অর্থাৎ উৎপন্ন প্রাণীমারেই জ্ঞাতা। তুমি পূজনীয় দেবতার সমীপে যেভাবে হবিঃ বহন করে নিয়ে যাও, এবং যজ্ঞের ভেদকে পরিজ্ঞাত হয়ে যেভাবে সেগুলির রচনা করে থাকো, সেইভাবেই আমাদের শোভন বুদ্ধি প্রাপ্ত করিয়ে পাপসমূহ হতে রক্ষা করো ॥ ২॥

যজ্ঞের আধার, হবির বাহক অগ্নিকে আমি স্তুতি করছি। তিনি রাক্ষসগণের নাশক এবং যজ্ঞের সমৃদ্ধি-করণশীল। সেই অগ্নিকে ঘৃতাহুতির দ্বারা প্রদীপ্ত করছি; তিনি পাপ হতে আমাকে রক্ষা করুন ৷ ৩৷৷

মন্ত্রের দ্বারা শোভন জন্মশালী উৎপন্ন মাত্রেরই জ্ঞাতা (জাতবেদা), সকল প্রাণী যাঁকে জানে, এমন মনুষ্যহিতৈষী ও হবি-বাহক অগ্নিকে আমরা আহ্বান করছি; তিনি আমাদের পাপসমূহ হতে রক্ষা করুন। ৪।

অঙ্গিরা-ঋষিগণ যে অগ্নির সাথে মিত্রতা স্থাপন পূর্বক আত্মশক্তিকে জাগ্রত করেছিলেন, যার দ্বারা দেবতাগণ আসুরী মায়াকে পৃথক করেছিলেন এবং পাণি নামক অসুরদের পরাজিত করেছিলেন, সেই অগ্নিদেব আমাদের পাপসমূহ হতে মুক্ত করুন ॥ ৫॥

ইন্দ্র ইত্যাদি দেবগণ যে অগ্নির সহায়তাতেই অমৃত লাভ করেছিলেন এবং যার দ্বারা বৃক্ষ ইত্যাদি ঔষধিসমূহকে মধুর রসে সমৃদ্ধ করেছিলেন, যে অগ্নির দ্বারা যজমান বা স্তোতৃবর্গ স্বর্গলাভ করে থাকেন, সেই অগ্নিদেব আমাদের পাপ হতে বিযুক্ত করুন। ৬।

এই সংসার যাঁর শাসনাধীন, যাঁর তেজের দ্বারা এই গ্রহ নক্ষত্র ইত্যাদি প্রকাশিত হচ্ছে, পৃথিবীতে উৎপন্ন প্রাণীমাত্রই যে অগ্নির বশবর্তী হয়ে থাকে, আমি সেই অগ্নিদেবের উদ্দেশে স্তুতি পূর্বক বারংবার তাকে প্রভুরূপে প্রাপ্তির নিমিত্ত আহ্বান করছি। সেই অগ্নিদেব আমাদের পাপসমূহ হতে মুক্ত করুন ॥ ৭।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— অগ্নেমন্তে ইতি সূক্তসপ্তকস্য বৃহঙ্গনে পাঠাৎ শান্তুদকাদৌ বিনিয়োগ।…ইত্যাদি। (৪কা, ৫অ. ৩সূ)।

টীকা –অগ্নেমন্বে এই সূক্তসপ্তকের বৃহঙ্গণে পঠিত শান্তুদক কর্মে বিনিয়োগ হয়ে থাকে ইত্যাদি ॥ (৪কা, ৫অ. ৩সূ) ॥

.

চতুর্থ সূক্ত : পাপমোচনম

[ঋষি : মৃগার দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : শক্করী, ত্রিষ্টুপ]

 ইন্দ্রস্য মন্মহে শশ্বদিদস্য মন্মহে বৃত্ৰগ্ন স্তোমা উপ মেম আগুঃ। যো দাশুষঃ সুকৃতত হবমেতি স নো মুঞ্চত্বংহসঃ ॥ ১। য উগ্ৰীণামুগ্রবাহুয়ুর্যো দানবানাং বলমারুবরাজ। যেন জিতাঃ সিন্ধবো যেন গাবঃ স নো মুঞ্চত্বংহসঃ ॥ ২॥ যশ্চৰ্ষণিপ্রো বৃষভঃ স্ববিৎ যস্মৈ গ্রাবাণঃ প্রবদন্তি নৃণম্। যস্যাধ্বরঃ সপ্তহোতা মদিষ্ঠঃ স নো মুঞ্চত্বংহসঃ ॥ ৩৷৷ যস্য বশাস ঋষভাস উক্ষণো যস্মৈ মীয়ন্তে স্বরবঃ স্বৰ্বিদে। যস্মৈ শুক্রঃ পবতে ব্রহ্মশুম্ভিতঃ স নো মুঞ্চত্বংহসঃ ॥ ৪। যস্য জুষ্টিং সোমিনঃ কাময়ন্তে যং হবন্ত ইষুমন্তং গবিষ্টে। যস্মিন্নকঃ শিশ্রিয়ে যস্মিন্নোজঃ স নো মুঞ্চত্বংহসঃ ॥ ৫৷৷ যঃ প্রথমঃ কর্মকৃত্যায় জজ্ঞে যস্য বীর্যং প্রথমস্যানুবুদ্ধম। যেনোদ্যতো বজ্রোইভ্যায়হিং স নো মুঞ্চত্বংহসঃ ॥৬॥ যঃ সংগ্ৰামান নয়তি সং যুধে বশী যঃ পুষ্টানি সংসৃজতি দ্বয়ানি। স্তোমীং নাথিতো জোহবীমি স নো মুঞ্চত্বংহসঃ ॥৭॥

বঙ্গানুবাদ –আমরা ইন্দ্রের ঐশ্বর্যযুক্ত মহত্বকে জ্ঞাত আছি। বৃত্ৰনাশক ইন্দ্রের সমক্ষে উচ্চরিতব্য স্তোত্রসমুহ আমার নিকট আছে। যে ইন্দ্র উত্তম মর্মশালী যজমানের আহ্বানকে অনাদর করেন না, তিনি আমাদের পাপসমূহ হতে মুক্ত করুন ॥১॥

সেই ইন্দ্রদেব শত্রুসেনাগণের মধ্যে বিরোধ সাধন করে থাকেন, যিনি মেঘগুলিকে বিদীর্ণ করে জলকে উদ্ধার করেছিলেন এবং দানবদলের শক্তিকে বিনষ্ট করে দিয়েছিলেন, যিনি বৃত্রকে বধ করে নদীসমূহ ও সমুদ্রগুলি হতে পণি নাম, অসুরদের দ্বারা অপহৃত গো-সমূহকে উদ্ধার (বা জয়) করেছিলেন, সেই ইন্দ্রদেব আমাদের পাপসমূহ হতে বিযুক্ত করুন ॥ ২॥

 যে ইন্দ্রদেব ফল প্রদানের দ্বারা মনুষ্যগণের অভিলাষ পূর্ণ করেন, যিনি স্বর্গপ্রাপ্তি করাতে সমর্থ, যাঁর ইচ্ছানুসারে সোমকে সিদ্ধকৃত (অভিযুত) করা হয়, যার উদ্দেশে অনুষ্ঠিত সোমযাগ হোতা-মৈত্রাবরুণ- ব্রাহ্মণাচ্ছংসী-পোতা-নেষ্টা-আগ্নীব্র এই সপ্তসংখ্যক হোতার (বষকর্তার) দ্বারা হর্ষকারী হয়ে ওঠে, সেই ইন্দ্রদেব আমাদের পাপ হতে মুক্ত করুন ॥৩৷৷

যে ইন্দ্রের নিমিত্ত গর্তের মধ্যে ঘূপসমূহ স্থাপন করা হয়, যাঁর যজ্ঞের নিমিত্ত সেচন-সমর্থ বৃষভ ও বন্ধ্যা গাভী প্রদত্ত হয়ে থাকে, যাঁর নিমিত্ত সোমরস দশা-পবিত্র (ছাঁকনি) হতে বিন্দু বিন্দু ধারায় নিঃসৃত হয়, তিনি আমাদের পাপ হতে মুক্ত করুন ॥৪॥

সোমযুক্ত যজমান যে ইন্দ্রের কৃপালাভের কামনা করে থাকেন, পণিগণ কর্তৃক অপহরণের পর গাভীগণকে উদ্ধারের নিমিত্ত যাঁকে আহ্বান করা হয়, যার মধ্যে অসাধারণ বল দৃষ্ট হয়, সেই ইন্দ্র আমাদের পাপ হতে মুক্ত করুন ॥৫॥

যে ইন্দ্র যজ্ঞ-কর্মের নিমিত্ত গমন করে থাকেন, যাঁর বৃত্রহনন ইত্যাদি কর্মসকল প্রশংসাত্মক হয়ে আছে, যাঁর বজ্র বৃত্রাসুরকে হত্যা করেছিল, সেই ইন্দ্র আমাদের পাপ হতে রক্ষা করুন ॥৬॥

যে ইন্দ্র যুদ্ধক্ষেত্রে সম্যক উপস্থিত হয়ে থাকেন, যে ইন্দ্র জোড়ায় জোড়ায় (অর্থাৎ মিথুনে মিথুনে) সংসৃষ্ট (অর্থাৎ মিলন) সংঘটিত করিয়ে দেন। স্তোতারূপী আমি সেই হেন ইন্দ্রকে বারংবার আহূত করছি, তিনি পাপ হতে আমার রক্ষা সাধিত করুন ॥ ৭।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –অগ্নয়োহোমুচেষ্টাকপালঃ (তৈ. সং. ৭৫।২১১) ইত্যাদিনা দশহবিষ্কা মৃগারেষ্টিরাধ্বর্যবে বিহিতা। তত্র…অগ্নেরংহোমুচ স্তাবকং অগ্নের্মন্বে (পূর্বসূক্ত) ইতি ব্যাখ্যাতং। ইন্দ্রস্যাংহোমুচ স্তাবকং ইন্দ্রস্য মন্মহে ইতি সূক্তং। তস্য পূর্বসূক্তেন সহ উক্তো বিনিয়োগঃ ॥ (৪কা, ৫অ. ৪সূ)।

টীকা — এই সূক্তটি পূর্ব সূক্তের সাথে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে।.ইতাদি ॥ (৪কা. ৫অ. ৪সূ)।

.

পঞ্চম সূক্ত : পাপমোচনম

[ঋষি : মৃগার দেবতা : বায়ু সবিতা ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, বৃহতী ]

 বায়োঃ সবিতুর্বিদথানি মন্মহে যাবাত্মন্বৎ বিশথো যৌ চ রক্ষথঃ। যৌ বিশ্বস্য পরিভূ বভূবথুস্তেী নো মুঞ্চতমংহসঃ ॥ ১। যয়োঃ সংখ্যাতা বরিমা পার্থিবানি যাভ্যাং রজো যুপিতমন্তরিক্ষে। যয়োঃ প্রায়ং নাম্বানশে কশ্চন তৌ নো মুঞ্চতমংহসঃ ॥ ২॥ তব ব্রতে নি বিশন্তে জনাসষদিতে প্রেরতে চিত্রভাননা। যুবং বায়ো সবিতা চ ভুবনানি রক্ষথস্তেী নো মুঞ্চতমংহসঃ ॥ ৩৷৷ অপেতো বায়ো সবিতা চ দুষ্কৃতমপ রক্ষাংসি শিমিদাং চ সেধত। সং হর্জয়া সৃজথঃ সং বলেন তৌ নো মুঞ্চতমংহসঃ ॥ ৪৷৷ রয়িং মে পোষঃ সবিতোত বায়ুস্ত দক্ষমা সুবতাং সুশেবম্। অযক্ষ্মতাতিং মহ ইহ ধং তৌ নো মুঞ্চতমংহসঃ ॥ ৫৷৷ প্র সুমতিং সবিতায় উতয়ে মহন্তং মৎসরং মাদয়াথঃ। অবাগ বামস্য প্রবতো নি যচ্ছতং তৌ নো মুঞ্চতমংহসঃ ॥ ৬। উপ শ্রেষ্ঠা ন আশিযষা দেবয়োধামন্নস্থির। স্তোমি দেবং সবিতারং চ বায়ুং তৌ নো মুঞ্চতমংহসঃ ৭

বঙ্গানুবাদ –আমরা বায়ু দেবতা ও সূর্য বা সবিতা দেবতার কর্মসমূহকে জ্ঞাত আছি। হে বায়ু! হে সূর্য! তোমরা সমস্ত প্রাণীবর্গের মধ্যে ব্যাপ্ত থেকে সংসারকে রক্ষা করণে ও তাকে ধারণ-করণে নিয়োজিত আছে। তোমরা সকল মন্দ কর্মের মূলীভূত পাপ হতে আমাদের রক্ষা করো ॥১॥

বায়ু ও সবিতা দেবতার শ্রেষ্ঠ কর্মসকল পৃথিবীতে উত্তম রকমে প্রসিদ্ধ আছে। তাদের দ্বারা আকাশে জল ধৃত হয়ে থাকে; অন্য কোন দেবতা তাঁদের শ্রেষ্ঠ চালচলনের ঊর্ধ্বে উঠতে পারে না। সেই বায়ু ও সূর্য আমাদের পাপ হতে রক্ষা করুন। ২।

হে সূর্য! তোমার সেবা-করণের নিমিত্ত মনুষ্যগণ নিয়মবদ্ধ হয়ে থাকে। তোমার উদয় হওয়ার পরে সকলে আপন আপন কর্মে নিয়োজিত হয়ে থাকে। হে বায়ু ও সূর্য! তোমরা উভয়েই সকল প্রাণীর রক্ষক, অতএব পাপ হতে আমাদের রক্ষা করো। ৩

হে বায়ু! তুমি ও সূর্য, রাক্ষসবর্গ ও তেজোময়ী কৃত্যা হতে আমাদের দূরে রক্ষা করো। অন্ন-রস হতে উৎপন্ন পুষ্টি আমাদের প্রাপ্ত হোক। তোমরা পাপ হতে আমাদের পৃথক করে দাও। ৪

সবিতা দেব আমাদের ঐশ্বর্য প্রদান করুন, শরীরে বল প্রদান করুন, সুখের দ্বারা আমাদের পূর্ণ করুন। হে বায়ু ও সূর্য! এই যজমানকে অত্যন্ত তেজ ও আরোগ্যতার সাথে যুক্ত (বা পরিপূর্ণ) করে দাও ॥ ৫।

হে সবিতা! হে বায়ু! এই হর্ষদ (বা মদকর) সোমের দ্বারা তৃপ্ত হয়ে আমাদের রক্ষার নিমিত্ত সুবুদ্ধি প্রদান করো এবং মহান্ ঐশ্বর্য প্রদান পূর্বক পাপ হতে আমাদের রক্ষা করো ॥ ৬

বায়ু ও সূর্যের সমক্ষে আমাদের উত্তম ফলশালিনী স্তুতিসমূহ উপস্থিত হোক। সেই দান ও ইত্যাদি গুণসম্পন্ন দুই দেবতা আমার অনর্থ-জনিত মূলীভূত পাপ হতে আমাকে রক্ষা করুন। আমি তাদের উদ্দেশে স্তুতি করছি। ৭।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –বায়োঃ সবিতু ইত্যস্য সূক্তস্য অগ্নের্মন্বে ইত্যনেন সূক্তেন সহ উক্তো বিনিয়োগঃ। ….ইত্যাদি। (৪কা, ৫অ. ৫)। টীকা –এই সূক্তটির বিনিয়োগ পূর্ববর্তী অগ্নের্মন্বে ইত্যাদি সূক্তের সাথে উক্ত হয়।…ইত্যাদি। (৪কা. ৫অ. ৫সূ)

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *