1 of 3

০৩।৪ তৃতীয় কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক

চতুর্থ অনুবাক
প্রথম সূক্ত : স্বস্তয়ে প্রার্থনা
[ঋষি : অথর্বা দেবতা : অগ্নীন্দ্র ইত্যাদি ছন্দ : আর্পী, ত্রিষ্টুপ ]

প্রাতরগ্নিং প্রাতরিন্দ্রং হবামহে প্রাতর্মিত্রাবরুণা প্রাতরশ্বিনা। প্রাতর্ভগং পূষণং ব্ৰহ্মণস্পতিং প্রাতঃ সোমমুত রুদ্রং হবামহে ॥১॥ প্রাতর্জিতং ভগমুগ্রং হবামহে বয়ং পুত্ৰমদিতেৰ্যো বিধর্তা। আশ্চিদ যং মন্যমনস্তুরশ্চিদ রাজা চিদ যং ভগং ভক্ষীত্যাহ। ২। ভগ প্রণেতর্ভগ সত্যরাধো ভগেমাং ধিয়মুদবা দদন্নঃ। ভগ প্র নো জনয় গোভিরশ্বৈগ প্র নৃভিবন্তঃ স্যাম ॥৩॥ উতেদানীং ভগবন্তঃ স্যামোত প্রপিত্ব উত মধ্যে অহ্নাম। উতোদিতৌ মঘবন্তসূর্যস্য বয়ং দেবানাং সুমতৌ স্যাম ॥ ৪৷ ভগ এব ভগবাঁ অস্তু দেবস্তেনা বয়ং ভগবন্তঃ স্যাম। তং ত্বা ভগ সর্ব ইজ্জোহবীমি স নো ভগ পুরত্রতা ভবেহ ৷ ৫সমরায়োষসো নমন্ত দধিক্রাবেব শুয়ে পদায়। অর্বাচীনং বসুবিদং ভগং মে রথমিবাশ্বা বাজিন আ বহন্তু ॥ ৬। অশ্বাবতীর্গোমতীন ঊষালো বীরবতীঃ সমুচ্ছন্তু ভদ্রাঃ। ঘৃতং দুহানা বিশ্বতঃ প্রপীতা মূয়ং পাত স্বস্তিভিঃ সদা নঃ ॥ ৭

বঙ্গানুবাদ –আমরা প্রাতঃসময়ে ফলপ্রাপ্তির নিমিত্ত ইন্দ্র, মিত্র, বরুণ, অশ্বিদ্বয়, পূষা, ভগ, ব্ৰহ্মণস্পতি, সোম ও রুদ্রকে আবাহন করছি ॥ ১।

যে সূর্যদেব সকলের ধারণকর্তা তথা পোষণকর্তা, দরিদ্র ব্যক্তি তাকে আপন কাম্য ফলের সাধন রূপে মান্য করে তার পূজা করে থাকে। রাজাও তার পূজা করার কামনা করে থাকে। সেই অদিতিপুত্র সূর্যকে আমরাও প্রাতঃকালে আহুত করার অভিলাষ করছি।২।

হে সূর্য! তোমার ধনের কখনও বিনাশ হয় না। তুমি আমাদের বুদ্ধি ইত্যাদি প্রদান পূর্বক সুফল মনোরথ করো। হে ভগ (অর্থাৎ সম্পূর্ণ ঐশ্বর্যশালী দেব)! আমরা যেন গো ও অশ্বের সাথে যুক্ত হই; তথা পুত্র, পৌত্র, ভৃত্য ইত্যাদির সাথেও সম্পন্ন হই ॥ ৩॥

 আমরা এই কর্ম সাধিত করে ভগ দেবতার কৃপা-বুদ্ধিতে থাকবো। সায়ংকালে, মধ্যাহ্নে ও সূর্যোদয়ের সময়েও, হে ইন্দ্র! আমরা যেন সূর্য ও অগ্নি ইত্যাদি দেবতাগণের কৃপা-বুদ্ধিতেই অবস্থান করি। ৪

আমরা ধনশালী ভগদেবতার কৃপায় ধনবান্ হবো। হে ভগদেব! তুমি আমাদের। কর্মানুষ্ঠানে পুরোভাগে থাকো; আমরা তোমাকে আহুত করছি ॥ ৫॥

যেমন পুরুষের দ্বারা আরোহণের পরে অশ্ব চলমান হতে প্রস্তুত হয়, সেই রকমেই উষা দেবী ধনদানশীল ভগদেবতাকে আমার নিকট আনয়নের নিমিত্ত প্রস্তুত হোন, এবং অশ্বের দ্বারা রথকে আকর্ষণের ন্যায় তাঁকে (অর্থাৎ সেই ভগদেবতাকে) আমার সমীপে আনয়ন করুন ॥ ৬৷

অশ্ব ও গাভীর দ্বারা সম্পন্ন হয়ে উষা দেবী আমাদের গৃহে সদাই উদয় হোন। হে উষা দেবতা! আপন অবিনাশী কর্মসমূহের দ্বারা আমাদের সর্বদা রক্ষা করতে থাকো। তুমি সর্বগুণসম্পন্ন এমন জল প্রদানশালিনী হও। ৭ ॥

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –চতুর্থেনুবাকে পঞ্চ সূক্তানি। তত্র প্রাতরগ্নিং ইতি প্রথমং সূক্তং। তেন মেধাকামঃ সুভ্ৰোতীয় মুখপ্রক্ষালনং হস্তেন কুর্যাৎ। তৎ উক্তং কৌশিকেন।…তথা অনেন সূক্তেন দধিমধুনী সম্পত্য অভিমন্যু বচস্কামং ব্রাহ্মণং আশয়েৎ। ক্ষত্রিয়ং তু দধিমধুমিশ্রং অন্নং আশয়েৎ। বৈশ্যাদিকং তু কেবলভক্তং আশয়েৎ। তথা চ কৌশিকঃ ….তথা বৰ্চস্যকর্মণি স্নাতকসিংহব্যাঘ্রাদিনাং সপ্তানাং অন্যতমস্য নাভিলোমমনিং লাক্ষাহিরণ্যেন বেষ্টয়িত্বা অনেন সূক্তেন সত্য অভিমন্ত্র বন্ধুীয়াৎ। তথা বচষ্কামাণাং ক্ষত্রিয়াদিনাং স্নাতকাদিসপ্তমর্মাণি প্রচ্ছিদ্য স্থালীপাকে প্রক্ষিপ্য অনেন সূক্তেন সম্পত্য অভিমন্ত্র স্থালীপাকেন সহ প্রাশনং সম্পাতিতাভি মন্ত্রিত জলেনাপ্লাবনং অবসেচনং (চ) বৰ্চকামস্য কার্যাং। সূত্রিতং হি।…ইত্যাদি৷৷ (৩কা. ৪অ. ১সূ)।

টীকা –চতুর্থ অনুবাকে পাঁচটি সুক্ত। তার মধ্যে এটি প্রথম সূক্ত। এই সূক্তের দ্বারা মেধাকামনায় সুপ্তোত্থিত হয়ে হস্তের দ্বারা মুখপ্রক্ষালন করণীয়।…তেজঃ কামনায় দধি-মধু মিশ্রিত পূর্বক এই সূক্ত-মন্ত্রে অভিমন্ত্রিত করে ব্রাহ্মণকে খাওয়াতে হয়। ক্ষত্রিয়কে এইভাবে দধিমধুমিশ্রিত অন্ন ভোজন করাতে হয়। বৈশ্যকে কেবল এই ভাবে এই সূক্ত-মন্ত্রে অভিমন্ত্রিত ভোজন করাতে হয়।…ইত্যাদি। (৩কা. ৪অ. ১সূ)।

.

দ্বিতীয় সূক্ত : কৃষিঃ

 [ঋষি : বিশ্বামিত্র দেবতা : সীতা ছন্দ : গায়ত্রী, ত্রিষ্টুপ ইত্যাদি ]

সীরা যুঞ্জন্তি কবয়ো যুগা বি তন্বতে পৃথক। ধীরা দেবেষু সুন্নয়ৌ ॥ ১। যুনক্ত সীরা বি যুগা তনোত কৃতে যোনৌ বপতেহ বীজ। বিরাজঃ শুষ্টিঃ সভরা অসন্নো নেদীয় ইৎ সৃণ্যঃ পক্কমা যবন্ ॥ ২॥ লাঙ্গলং পবীরবৎ সুশীমং সোমসসরু। উদিদ বপতু গামবিং প্রস্থাবদ রথবাহনং পিবরীং চ প্ৰফৰ্যম ৷ ৩৷৷ ইন্দ্রঃ সীতাং নি গৃহ্নাতু তাং পূষাভি রক্ষতু। সা নঃ পয়স্বতী দুহামুত্তরামুত্তরাং সমাম ॥৪॥, শুনং সুফালা বি তুদন্তু ভূমিং শুনং কীনাশা অনু ষন্তু বাহা। শুনাসীরা হবিষা তোশমানা সুপিপ্পলা ঔষধীঃ কর্তমস্মৈ ॥ ৫শুনং বাহাঃ শুনং নরঃ শুনং কৃষতু লাঙ্গল। শুনং বরত্রা বধ্যন্তাং শুনমষ্ট্ৰামুদিঙ্গয় ॥ ৬৷৷  শুনাসীরেহ স্ম মে জুষেথাম। য দিবি চক্ৰথুঃ পয়স্তেনেমামুপ সিঞ্চতম্ ॥ ৭৷৷ সীতে বন্দামহে স্বার্বাচী সুভগে ভব৷ যথা নঃ সুমনা অসো যথা নঃ সুফলা ভুবঃ ॥ ৮ ঘৃতেন সীতা মধুনা সমক্তা বিশ্বৈর্দেবৈরনুমতা মরুদ্ভিঃ। সা নঃ সীতে পয়সাভ্যাবশৃৎ স্বার্জতী ঘৃতবৎ পিন্থমানা ॥ ৯৷৷

বঙ্গানুবাদ –হাল অর্থাৎ লাঙ্গলগুলিকে যুক্ত করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি দেবাত্মক হবিঃ রূপ অন্ন প্রাপ্তির নিমিত্ত বৃষভসমূহের স্কন্ধোপরি যুগ বা জোয়ালগুলিকে স্থাপন করছে ৷৷ ১।

হে কৃষকগণ! লাঙ্গলগুলিকে জোয়ালে যুক্ত করে জোয়ালগুলিকে বৃষভের স্কন্ধের উপর স্থাপিত করো। এই কর্যণ হওয়া ক্ষেতে বা ভূমিতে ব্রীহি যব ইত্যাদি বপন করো। যব ইত্যাদি রূপ অন্ন শীঘ্রই আমাদের এই স্থানে উৎপন্ন হোক। পুনরায় এই ধান্য ইত্যাদি পক্কতা প্রাপ্ত হয়ে শীঘ্র দা (অর্থাৎ শস্যচ্ছেদক কাটারি) দ্বারা স্পর্শ করণের (অর্থাৎ ছেদন করার) যোগ্য হোক। ২।

কৃষিযোগ্য ভূমিকে লৌহের শল্যশালী (ফলাসম্পন্ন) লাঙ্গল সুখ প্রদান করছে। এইটি (অর্থাৎ লাঙ্গলটি) ধান্য ইত্যাদির উৎপত্তিকারক হওয়ায় সোমবাগের কর্তা (অর্থাৎ নিম্পাদক) হয়েছে। এর অবয়ব ভূমিতে রক্ষিত হয়ে গতি (গমন) প্রাপ্ত হচ্ছে। এই লাঙ্গল গো-ইত্যাদি পশুসমূহের সমৃদ্ধির কারণ হয়ে উঠুক ॥ ৩।

ক্ষেতের রেখাকে (লাঙ্গলপদ্ধতি বা সীতাকে) ইন্দ্র গ্রহণ করুন, পূষা সেই রেখাসমূহকে! ১ রক্ষাকরণশীল হোন। এই রেখাসমূহ আমাদের বাঞ্চিত ফলের দ্বারা সম্পন্ন হয়ে প্রতি বর্ষে সুখ প্রদান কে করুক। এই রেখাসমূহ জলে সম্পন্ন হোক, ধান্য ইত্যাদি প্রদানশালিনী হোক। ৪

সুন্দর শল্য। (লাঙ্গলের মুখ বা ফলা) ভূমি কর্ষণ পূর্বক বলীবর্দসমূহের পশ্চাতে গমন করুক। হে সূর্য ও বায়ু! আমাদের হবিঃসমূহে তৃপ্ত হয়ে তোমরা অন্ন ইত্যাদিকে সুন্দর ফলসালী করে দাও। ৫।

 কৃষকগণ সুখ পূর্বক ক্ষেত কৰ্ষণ করুক, বৃষভগুলি তাদের সুখপ্রদানশীল হোক, লাঙ্গল ও রঞ্জুসমূহ অনুকূল হোক। হে শুনঃদেব! তুমি প্রতোদেতেও (চাবুকেও) সুখ পূর্ণ করে দাও। ৬।

হে সূর্য ও বায়ু! আমার প্রদত্ত হবিঃ গ্রহণ করো। আকাশস্থ জল-দেবতা এই কর্ষিত ভূমিকে বৃষ্টির জলে সিক্ত করে দাও। ৭।

 হে সীতা! আমরা তোমাকে নমস্কার জ্ঞাপন করছি। তুমি যে ভাবে সুন্দর (সার্থক) ফলের সাথে যুক্ত হয়ে থাকো, সেই ভাবেই আমাদের অভিমুখিনী হও ৮

হে সীতা! মধুর রসে সিঞ্চিত তথা ঘৃতযুক্ত অন্নকে সিঞ্চনশালিনী হয়ে, বিশ্বদেবগণ ও মরুৎ-বর্গের দ্বারা প্রেরিত হয়ে, তুমি জলের সাথে আমাদের সম্মুখে আগতা হও। ৯।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –সীরা যুঞ্জন্তি ইতি দ্বিতীয়সূক্তেন কৃষিনিষ্পত্তিকর্মণি ক্ষেত্রং গত্বা যুগলাঙ্গলং বন্ধুতি। অনেনৈব সূক্তেন দক্ষিণং অনড়াহং যুগে যুনক্তি। ততঃ কর্তা অনেন সূক্তেন প্রাচীনং কৃষন্ সূক্তসমাপ্ত্যনন্তরং হালিকায় হলং প্রযচ্ছে। তেন তিসৃষ্ণু সীতাসু কৃষ্টাসু উত্তরসীতান্তে অগ্নিং উপসমাধায় অনেন সূক্তেন পুরোশেন ইন্দ্ৰং স্থালীপাকেন অশ্বিনৌ চ যজত্ উত্তরাস্যাং সীতায়াং সম্পাতা আনয়েৎ। তথা বৃষলাভকর্মণি সারূপবৎসে ওদনে শকৃৎপিণ্ডগুগগুলুলবণানি প্রক্ষিপ্য অনেন সূক্তেন সম্পত্য অভিমন্যু অশ্নাতি। সীতে বামহে (৮) ইতৃচা হালিকেন কৃষ্যমাণাস্তিস্রঃ সীতাঃ কর্তা প্রত্যেকং অনুমন্ত্রয়তে।…ইত্যাদি। (৩কা. ৪অ. ২সূ)।

টীকা –এই দ্বিতীয় সূক্ত-মন্ত্রের দ্বারা কৃষিনিষ্পত্তি কর্মে কৃষিক্ষেত্রে গমন পূর্বক যুগলাঙ্গল বন্ধন করতে (জুততে) হয়। এই সূক্তের দ্বারা দক্ষিণে বলদকে যুগে যুক্ত করতে হয়।…ইত্যাদি ॥ (৩কা. ৪অ. ২সূ)।

.

তৃতীয় সূক্ত : বনস্পতিঃ

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : বনস্পতি ছন্দ : অনুষ্টুপ, উষ্ণিক]

 ইমাং খনামোষধিং বীরুধাং বলবত্তমা। যয়া সপত্নীং বাধতে যয়া সংবিন্দুতে পতিম্ ॥ ১উত্তানপর্ণে সুভগে দেবজুতে সহস্বতি। সপত্নীং মে পরা গুদ পতিং মে কেবলং কৃধি ॥ ২॥ নহি তে নাম জগ্রাহ নো অস্মিন্ রমসে পতৌ। পরামেব পরাবতং সপত্নীং গময়ামসি ॥ ৩৷ উত্তরাহমুত্তর উত্তরেদুত্তরাভ্যঃ। অধঃ সপত্নী যা মমাধরা সাধরাভ্যঃ ॥ ৪৷৷ অহমস্মি সহমানাথো ত্বমসি সাসহিঃ। উভে সহস্বতী ভূত্বা সপত্নীং মে সহাবহৈ ॥ ৫॥ অভি তেইধাং সহমানামুপ তেহধাং সহীয়সীম। মামনু প্র তে মনো বৎসং গৌরিব ধাতু পথা বারিব ধাতু ॥ ৬

বঙ্গানুবাদ –যে ঔষধি সতীনকে (অর্থাৎ সপত্নীকে) বাধা প্রদানকারিণী তথা যে ঔষধি স্ত্রীকে তার পতিকে প্রাপ্ত করাতে সক্ষমা, সেই পরম শক্তিশালিনী পাঠা নাম্নী ঔষধিকে আমি খনন করে লাভ করছি৷৷ ১।

হে ঊধ্বমুখশালী পত্রের সাথে যুক্ত পাঠা নাম্নী ঔষধি! আমার সতীনকে পতির সামীপ্য হতে দূর করো এবং আমার পতিকে আমার নিমিত্তই অসাধারণ বলে (শক্তিতে) স্থিত করো। ২।

হে সতী: তুমি আমার পতির সাথে সহবাস (রমণ) করো না। আমি তোমার নামও গ্রহণ করতে চাই না, এবং তোমাকে অনেক দূরে প্রেরণ করছি ৷৷ ৩৷৷

হে পাঠা ঔষধি! আমার সতীন নীচ বা অধম হতেও অধমা হয়ে যাক, এবং আমি শ্রেষ্ঠ বা উত্তম অপেক্ষাও উত্তমা হয়ে যেতে চাই ৷৷ ৪৷৷

 হে পাঠা! তুমি শত্রুগণকে তিরস্কার করতে সমর্থ। আমি তোমার প্রভাবে সতাঁকে বশীভূত (বা পরাভূত) করবো। তুমি এবং আমি উভয়ে মিলে সতাঁকে বশীভূত (বা পরাভূত) করবো। ৫।

হে সতীন্! আমি তোমার পর্যঙ্কের (খাটের) চতুর্দিকে তথা পর্যঙ্কের উপরে এই শক্তিশালী ঔষধিকে স্থাপন করছি। ঔষধির শক্তিতে বশীকৃত হয়ে তোমার মন, আপন বৎসের। প্রতি স্নেহবশতঃ ধাবমানা গাভীর ন্যায়, আমার পশ্চাতে ধাবিত হোক (অর্থাৎ আমাকে অনুসরণ করুক) ৬

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— ইমাং খনামি ইতি তৃতীয়সূক্তেন সপত্নীজয়কর্মণি বাণাপর্ণীপত্ৰচুৰ্ণং লোহিতবর্ণজায়া দধদকেন সংমিশ্রা অভিমন্যু সপত্নীশয়নে পরিকিরেৎ….ইত্যাদি৷ (৩কা, ৪অ. ৩সূ)।

টীকা— সপত্নী-জয় কর্মে বাণাপর্ণীপত্রের চূর্ণ লোহিতবর্ণজায়া দধি ও জলের সাথে সংমিশ্রিত করে এই সূক্ত-মন্ত্রের দ্বারা অভিমন্ত্রিত কর সপত্নীর শয়নক্ষেত্রের সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হয়। শেষ দুটি মন্ত্র বিবাদে জয়লাভের কর্মে জপনীয়।..ইত্যাদি। (৩কা. ৪অ, ৩সূ)।

.

চতুর্থ সূক্ত : অজরং ক্ষত্রম

[ঋষি : বশিষ্ঠ দেবতা : বিশ্বদেবগণ, ইন্দ্র ছন্দ : বৃহতী, অনুষ্টুপ]

সংশিতং ম ইদং ব্ৰহ্ম সংশিতং বীর্যং বল। সংশিতং ক্ষমজরমস্তু জিষ্ণুর্যেমস্মি পুরোহিতঃ ॥ ১৷ সমহমেষাং রাষ্ট্রং স্যামি সমোজো বীর্যং বল। বৃশ্চামি শত্ৰুণাং বাহুননেন হবিষাহম ॥ ২॥ নীচৈঃ পদ্যন্তামধরে ভবন্তু যে নঃ সূরিং মঘবানং পৃতন্যা। ক্ষিণামি ব্ৰহ্মণামিত্রানুন্নয়মি স্বানহম্ ॥ ৩॥ তীক্ষ্মীয়াংসঃ পরশোরগ্নেস্তীক্ষ্মতরা উত। ইন্দ্রস্য বজ্ৰাৎ তীক্ষ্ণীয়াংসো যেষামস্মি পুরোহিতঃ ॥৪৷৷ এষামহমায়ুধা সং স্যাম্যেং রাষ্ট্রং সুবীরং বর্ধয়ামি। এষাং ক্ষত্রমজরমস্তু জিষ্ণুষাং চিত্তং বিশ্বেইবন্তু দেবাঃ ॥ ৫উদ্ধষন্তাং মঘব বাজিনান বীরাণাং জয়তামেতু ঘোষঃ। পৃথগ ঘোষা উলুলয়ঃ কেতুমন্ত উদীরতাম্। দেবা ইন্দ্ৰজ্যেষ্ঠা মরুতো যন্তু সেনয়া ॥ ৬ প্রেতা জয়তা নর উগ্রা বঃ সন্তু বাহবঃ। তীক্ষ্মেষবোহবলধন্বনো হতোগ্ৰায়ুধা অবলানুগ্রবাহবঃ ॥৭॥ অবসৃষ্ট পরা পত শরব্যে ব্রহ্মসংশিতে। জয়ামিত্রা প্র পদ্যস্ব জহ্যেষাং বরংবরং মামীং মোচি কশ্চন ॥ ৮।

বঙ্গানুবাদ –জাতি হতে ভ্ৰষ্ট-করণশালী দোষকে পরিহার করে আমার ব্রাহ্মণত্ব তীক্ষ্ণ (তেজোবিশিষ্ট) হোক এবং এই মন্ত্র তীক্ষ্ণ হয়ে অমোঘ ফলযুক্ত হোক। মন্ত্রশক্তির দ্বারা শারীরিক বল বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হোক এবং আমি যে ক্ষত্রিয়ের পুরোহিত, সেই ক্ষত্রিয়-জাতি ক্ষীণতা-রহিত হোক ॥ ১।

আমি যে রাজার রাজ্যে বাস করি, সেই রাজার রাজ্যকে সমৃদ্ধ করছি। শত্রুদের দূরীকরণশালিনী শক্তি ও সেনাকেও মন্ত্রের প্রভাবে দৃঢ় করছি। আমি তাদের (অর্থাৎ সেই শত্রুদের) হবির দ্বারা ছিন্ন-ভিন্ন করে দিচ্ছি। ২৷

আমাদের কার্যাকার্যের জ্ঞাতা রাজাকে বিজয় করার নিমিত্ত শত্রুগণ সেনা সংগৃহীত করার চেষ্টায় আছে। সেই শত্রুগণ তার অভিমুখী হয়ে পতন-প্রাপ্ত হোক এবং পদের নীচে দলিত হোক। এই নিমিত্ত আমি মন্ত্রশক্তির দ্বারা শত্রুগণকে হীনবীর্য (বা ক্ষীণ) করে আপন রাজাকে বিজয়লাভ করাচ্ছি ৷ ৩৷৷

আমি যে রাজার পুরোহিত, সেই রাজা শত্রুকে বিধ্বংস করার নিমিত্ত কাষ্ঠ-ছেদনকারী কুঠার অপেক্ষাও অধিক তীক্ষ্ণ (বা তেজঃ-সম্পন্ন হয়ে যাক। সম্পূর্ণ বিশ্বলোককে ভস্ম করার শক্তিসম্পন্ন অগ্নিদেবও তীক্ষ্ণ (বা তেজোগৰ্ভ) হয়ে শত্রু-সেনাকে ভস্ম করুন। ৪

আমি আপন রাজার অস্ত্রশস্ত্রগুলিকে শাণিত করে সেগুলিকে বীরবর্গের সাথে যুক্ত করছি (অর্থাৎ রাজার বীর সেনানীগণের হস্তে অর্পণ করছি)। এই রাজার ক্ষত্রিয়ত্বরূপ বল বিজয়শালী হোক; দেবগণ তাঁর মনের রক্ষক হোন ॥ ৫॥

হে ইন্দ্র! তোমার কৃপায় সংগ্রামে উপনীত রথ, হস্তী, অশ্ব ইত্যাদি হর্ষিত থাকুক। আমাদের শূরগণ সিংহনাদ করতে থাকুক। সকল দিকে আমাদের বিজয়াত্মক জয়ঘোষ বিস্তৃত হয়ে যাক। ৬।

হে সৈনিকগণ! তোমরা রণক্ষেত্রের দিকে অগ্রসর হও। আয়ুধসম্পন্ন তোমাদের ভুজসমূহ শত্রুদের উপর প্রহার করুক এবং তোমরা বল-রহিত শত্রুগণকে বিনাশ করে ফেলে। যে মরুৎ-বর্গের মধ্যে ইন্দ্র জ্যেষ্ঠ, সেই মরুৎ-বর্গ আপন সেনাগণের সাথে আগমন পূর্বক তোমার (অর্থাৎ রাজার) সহায়ক হোক৷ ৭ ॥

হে বাণ! তুমি মন্ত্রের দ্বারা তীক্ষ্ণকৃত হয়ে মারণ কর্মে কুশল হয়েছে। তুমি শত্রুবর্গের দিকে গমন পূর্বক তাদের উপর বিজয় লাভ করো। তাদের শ্রেষ্ঠ হস্তী, পদাতিক ও অশ্বারোহী ইত্যাদি সেনাকে বিনষ্ট করো; শত্রুগণের মধ্যে কেউ যেন জীবিত না থেকে যায় ॥ ৮৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— সংশিতং মে ইতি চতুর্থসূক্তেন পরসেনোন্বেজনকর্মণি আজ্যং হুত্বা চ সিতপদীং অজাং অবিং বা সম্পত্য অভিমন্ত্র শত্রুসেনাং প্রতি বিসর্জয়েৎ। তথা সংগ্রামজয়ার্থং অনেন সূক্তেন আজ্যহোমং সহোমং ধনুরিমাধানং ইসমিদাধানং রাজ্ঞে– অভিমন্ত্রিত ধনুপ্রদানং চ কুঠাৎ..ইত্যাদি। (৩কা. ৪অ. ৪সূ)।

টীকা— এই সূক্তের দ্বারা পরসেনা অর্থাৎ শত্রুসেনাগণের উদ্বেজনকর্মে আজ্যাহুতি প্রদান পূর্বক শ্বেতবর্ণের পদশালী অজা বা অবি অভিমন্ত্রিত করে শত্রসেনাগণের অভিমুখে প্রেরণ করণীয়। এবং সংগ্রামজয়ের নিমিত্ত এই সূক্তের দ্বারা আজ্যহোম, সহোম ধনুরিধান, ইষু-সমিদান অনুষ্ঠান পূর্বক রাজাকে এই মন্ত্রেই অভিমন্ত্রিত ধনু প্রদান করণীয়।…ইত্যাদি। (৩কা. ৪অ. ৪সূ)।

.

পঞ্চম সূক্ত : রয়িসংবর্ধনম

[ঋষি : বশিষ্ঠ দেবতা : অগ্নি প্রভৃতি ছন্দ : অনুষ্টুপ, পংক্তি]

অয়ং তে যোনিঋত্বিয়ো যতো জাতত অবোচথাঃ। তং জানন্নগ্ন আ রোহা নো বর্ধয়া রয়িম্ ॥১॥ অগ্নে অচ্ছা বদেহ নঃ প্রত্যঙ নঃ সুমনা ভব। প্রণো যচ্ছ বিশাং পতে ধনদা অসি নম্ ॥ ২॥ প্র পো যচ্চত্ব প্ৰ ভগঃ প্র বৃহস্পতিঃ। প্র দেবীঃ পোত সূতা রয়িং দেবী দধাতু মে ৷৩৷৷ সোমং রাজানমবসেহগ্নিং গীৰ্ভিৰ্হৰ্বমহে। আদিত্যং বিষ্ণুং সূর্যং ব্রহ্মাণং চ বৃহস্পতিম্ ॥ ৪৷৷ ত্বং নো অগ্নে অগ্নিভিব্রহ্ম যজ্ঞং চ বর্ধয়।। ত্বং নো দেব দাঁতবে রয়িং দানায় চোদ্দয় ॥ ৫৷৷ ইন্দ্ৰবায়ু উভাবিহ সুহবেহ হবামহে। যথা নঃ সর্ব ইজ্জনঃ সঙ্গত্যাং সুমনা। অসদ দানকামশ্চ নো ভুবৎ ॥ ৬ অৰ্মণং বৃহস্পতিমিং দানায় চোদ্দয়। বাচং বিষ্ণুং সরস্বতীং সবিতারং চ বাজিন ॥ ৭৷৷ বাজস্য নু প্রসবে সং বভূবিমেমা চ বিশ্বা ভুবনান্যন্ত। উদিৎসন্তং দাপয়তু প্রজান রয়িং চ নঃ সর্ববীরং নি যচ্ছ ॥৮॥ দুহ্রাং মে পঞ্চ প্রদিশো দুহ্ৰামুর্বীর্যৰ্থাবলম্। প্রাপেয়ং সর্বা আকৃতীৰ্মনসা হৃদয়েন চ ॥ ৯৷ গোসনিং বাচমুদেয়ং বচসা মাদিহি। আ রুন্ধাং সর্বতো বায়ুস্তষ্টা পোষং দধাতু মে। ১০।

বঙ্গানুবাদ –হে অগ্নি। এই যজমান যজ্ঞের সময়ে তোমার উৎপত্তির কারণস্বরূপ হয়ে থাকেন। তুমি তোমার সেই উৎপত্তি-কারণকে জ্ঞাত হয়ে তাতে প্রবিষ্ট হয়ে আমাদের ধনকে বৃদ্ধিকরণশালী হও ॥১।

 হে অগ্নি! আমাদের সমুখস্থ হয়ে আমাদের প্রাপ্তব্য (যজ্ঞীয়) ফল সম্বন্ধে বলো। তুমি বৈশ্বানর রূপে প্রজার পালক; তুমি ধনদানশালী; এই নিমিত্ত আমাদের অভিলষিত ধন প্রদান করো ৷৷ ২।

অর্যমা, ভগ, বৃহস্পতি দেবতা আমাদের ধন প্রদান করুন। ইন্দ্রানী ও বাণীরূপা সরস্বতীও আমাদের ধন প্রদান করুন ৷ ৩৷৷

 আমরা সোম ও অগ্নিকে রক্ষার নিমিত্ত আহূত করছি। অদিতির পুত্র ত্রিবিক্রম বিষ্ণুকে (বা তিনপদে পৃথিবীর পরিমাপ গ্রহণকারী সর্বব্যাপী দেবতাকে), সর্ব প্রেরক সূর্যকে তথা দেবতাগণেরও স্রষ্টা (বা রচয়িতা) ব্রহ্মাকে আহূত করছি। দেব-হিতৈষী বৃহস্পতিকেও আমাদের স্ত্রোত্র (বা রচয়িতা) ব্রহ্মাকে আহূত করছি। দেব-হিতৈষী বৃহস্পতিকেও আমাদের প্রয়োজন পূর্ণ করার নিমিত্ত আহ্বান জ্ঞাপন করছি। ৪

হে অগ্নি! তুমি অন্য সকল অগ্নির সাথে আমাদের স্তোত্র ও যজ্ঞফলকে যুক্ত করো। হবিঃ-দানশীল যজমানকে দানের উদ্দেশে ধন প্রেরিত করো ॥৫॥৷

এই কর্মে আমরা ইন্দ্র ও বায়ুকে আহূত করছি। আমাদের সঙ্গতির দ্বারা সকল মনুষ্য শ্রেষ্ঠ মনঃ-সম্পন্ন হোক এবং তারা আমাদের দান দেবার ইচ্ছাশালী হোক, এই নিমিত্ত আমরা তোমাকে আহ্বান জানাচ্ছি ৷৬৷

হে স্তোতা! তুমি অৰ্মা, বৃহস্পতি, ইন্দ্র, সরস্বতী, বিষ্ণু ও সূর্যকে আমাদের ঈঙ্গিত ফলদানের নিমিত্ত স্তুতির দ্বারা প্রেরিত করো। ৭

অন্নের উৎপত্তি রূপ কর্মকে শীঘ্র আমাদের প্রাপ্ত করাও। এই দৃশ্যমানসকল প্রাণী বৃষ্টির দ্বারা অন্ন উৎপাদনশীল বাজ প্রসব দেবতার মধ্যে অবস্থান করছে। তারা দান করতে অনিচ্ছুক জনকেও দান-করণে প্রেরণা দান করুক। আমাদের ধন সমূহ পুত্র, পৌত্র ইত্যাদিতে চিরকাল পর্যন্ত স্থির রাখো ॥৮॥

পৃথিবী, আকাশ, দিবা, রাত্রি, জল ও ঔষধি আমাদের অভিলষিত ধন দান করুক। পূর্ব ইত্যাদি দিকসমূহও আমাদের কাম্য ধন প্রাপ্তি করাক। আমি হৃদয়ে যে সমস্ত সঙ্কল্প করছি, সেগুলি সার্থক ফল প্রাপ্ত হবো ॥৯॥

সকল প্রকার ধন-দানশালিনী বাণীকে আমি উচ্চারণ করছি। হে বাণী (বাগদেবী)! তুমি তেজের সাথে আমাতে উদিত হও। বায়ু আমার শরীরে প্রাণ পূর্ণ করে দিন এবং ত্বষ্টা আমাকে পুষ্ট করুন ১০

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— অয়ং তে যোনিঃ ইতি সূক্তেন নির্ঋতিকর্মণি শর্করামিশ্ৰান্ ব্রীহীন জুহুয়াৎ।..তথা অর্থোত্থাপনবিঘশামনকর্মণি অনেন সূক্তেন আজ্যসমিদাদিভিস্ত্রয়োদশভিউঁধ্যেজুহুয়াৎ। …ইত্যাদি। (৩কা. ৪অ. ৫সূ)।

টীকা— এই সূক্ত-মন্ত্রের দ্বারা নির্ঋতি কর্মে শর্করামিশ্র ব্রীহি যাগ অনুষ্ঠেয় অর্থোত্থাপন বিঘুশমন কর্মে এই সূক্তের দ্বারা আজ্য, সমিৎ ইত্যাদি ত্রয়োদশ সংখ্যক দ্রব্য সহযোগে হোম করণীয়।…ইত্যাদি। (৩কা. ৪অ. ৫সূ)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *