1 of 3

০৩।২ তৃতীয় কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক

দ্বিতীয় অনুবাক
প্রথম সূক্ত : শত্রুনাশনম্
 [ঋষি : জগৎবীজ পুরুষ দেবতা : অশ্বত্থ ছন্দ : অনুষ্টুপ]

পুমান পুংসঃ পরিজাতোহশ্বখঃ খদিরাদধি। স হন্তু শক্র মামকান্ যানহং দ্বেষ্মি যে চ মাম্ ॥১॥ তানশ্বত্থ নিঃ শৃণীহি শত্রু বৈবাধদোধতঃ। ইন্দ্ৰেণ বৃত্ৰয়া মেদী মিত্রেণ বরুণেন চ ॥ ২॥ যথাশ্বত্থ নিরভনোহন্তৰ্মহত্যর্ণবে। এবা তান্তসর্বান্নিভঙগ্ধি যানহং দ্বেষ্মি যে চ মাম্ ॥৩৷৷ যঃ সহমানশ্চরসি সাসহান ইব ঋষভঃ। তেনাশ্বখ ত্বয়া বয়ং সপত্নান্তসহিষীমহি ॥৪॥ সিনত্বেনা নিঝতিত্যোঃ পাশৈরমোক্যৈঃ। অশ্বখ শন মামকান যানহং দ্বেম্মি যে চ মাম্ ॥ ৫যথাশ্বথ বনস্প্যানারোহন কৃণুষেধরা। এবা মে শত্রাক্ষুর্ধানং বিম্বগভিদ্ধি সহস্ব চ ॥ ৬ তেহধরাঞ্চঃ প্র প্লবন্তাং ছিন্না নৌরিব বন্ধনাৎ। ন বৈবাধপ্রণুত্তানাং পুনরস্তি নিবর্তনম্ ॥৭॥ প্রৈণা নুদে মনসা প্র চিত্তেনোত ব্ৰহ্মণা। প্রৈণা বৃক্ষস্য শাখয়াশ্বত্থাস্য নুদামহে ॥৮॥.

বঙ্গানুবাদ –অত্যন্ত বীর্যশালী পুরুষ-বৃক্ষ পীপল (অশ্বথ) এবং গায়ত্রী সারোৎপন্ন অত্যন্ত বলবান্ খদির বৃক্ষের সংযোগে নির্মিত অশ্বত্থামণি ধারণের পর, এই মণি আমার শত্রুগণকে নাশ করুক। ১

হে খদিরোৎপন্ন অশ্বত্থের বিকার হতে নির্মিত মণি! বৃত্রঘাতী ইন্দ্র ও বরুণের সাথে তোমার মিত্ৰতা আছে; তুমি আমার শত্রুবর্গকে সম্পূর্ণভাবে নষ্ট করো। ২।

 হে পীপল! তুমি মণির উপাদান স্বরূপ। তুমি যেমন ভাবে খদির বৃক্ষের ত্বককে ভেদ করে উৎপন্ন হয়েছে, সেইভাবে আমাদের শত্রুগণকে বিদীর্ণ করে দাও ৷৷ ৩৷

যেমনভাবে পীপল অপর বৃক্ষগুলিকে অবনত করে রাখে (অর্থাৎ পীপুলের উচ্চতা অপর বৃক্ষের চেয়ে বেশী), ঋষভের মতো (দ্রুত) বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়, সেইরকমেই তোমার (অর্থাৎ পীপল বা অশ্বথের) বিকার রূপ মণি ধারণকারী আমরা শত্রুগণকে বিনাশ-করণে প্রবৃদ্ধ (বা সক্ষম) হবো। ৪

হে পীপল! পাপদেবী নির্ঋতি আমার শত্রুদের এমন সুদৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ করুক, যাতে তারা কোন রকমেই সেই বন্ধন মোচন করতে না পারে। ৫।

হে পীপল! তুমি যেমন ভাবে বনস্পতি-বৃক্ষগুলিতে আরোহণ করে তাদের নত করে থাকো (অর্থাৎ অন্য সকল বনস্পতিকে ছাপিয়ে তোমার শির যেমন সর্বোচ্চতা প্রাপ্ত হয়ে থাকে), সেই ভাবেই আমার শত্রুদের মস্তক পদদলিত পূর্বক তাদের তিরস্কৃত করে বিনাশ প্রাপ্ত করাও। ৬

যে ভাবে তটস্থিত (তীরস্থায়ী) বৃক্ষে রজ্জবদ্ধ নৌকাগুলি বন্ধন ছিন্ন হয়ে নদীর স্রোতে নিম্নাভিমুখে ধাবিত হয়ে খেইহারা হয়ে যায়, সেই ভাবেই আমার শত্রুগণও যেন প্রবাহিত হয়ে চলে, কখনও যেন পার না প্রাপ্ত হয় (অর্থাৎ রক্ষা না পায়); কেন না, খদির হতে উৎপন্ন হওয়া পীপলের প্রবাহে আগ্রস্ত শত্ৰু পুনরায় আগমন করতে সক্ষম হয় না। ৭।

আমি শত্রুগণের উদ্দেশে উচ্চাটন করছি এবং শত্রুগণকে ধংসসাধনকারী মন্ত্রে অভিমন্ত্রিত পীপল শাখার দ্বারা তাদের সংহার করছি। ৮

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –দ্বিতীয়েনুবাকে পঞ্চ সূক্তানি। তত্র পুমান পুঃসঃ ইতি প্রথমং সূক্তং। তেন অভিচারকর্মণি খদিরোত্থাশ্বত্থামণিং সম্পত্য অভিমন্ত্র বধীয়াৎ। তথা অনেন সূক্তেন পাশান। ইঙ্গিডালঙ্কৃতান্ সম্পত্য অভিমন্ত্র শত্রুমর্মাণ নিখনেৎ।..ইত্যাদি। (৩কা, ২অ. ১সূ)।

টীকা— এই সূক্তটির দ্বারা অভিচার কর্মে খদির-অশ্বখ মণি অভিমন্ত্রিত পূর্বক বন্ধন করণীয়। এই সূক্তমন্ত্রে অভিমন্ত্রিত পাশা শত্রুর মর্মস্থানে নিক্ষেপ করলে শত্রু বিনাশ হয়।…ইত্যাদি। (৩কা, ২অ. ১সূ)।

.

দ্বিতীয় সূক্ত : যক্ষ্মনাশনম্

 [ঋষি : ভৃগ্বঙ্গিরা দেবতা : হরিণ প্রভৃতি ছন্দ : অনুষ্টুপ ]

 হরিণস্য রঘুষ্যদোহধি শীর্ষণি ভেষজম। স ক্ষেত্রিয়ং বিষাণয়া বিমূচীনমনীনশৎ ॥১॥ অনু ত্বা হরিণো বৃষা পদ্ভিশ্চতুর্ভি রক্ৰমীৎ। বিষাণে বি ষ্য গুস্পিতং যদস্য ক্ষেত্রিয়ং হৃদি ॥ ২॥ অদো যদববোচতে চতুষ্পক্ষমিব চ্ছদিঃ। তেনা তে সর্বং ক্ষেত্রিয়মঙ্গেভ্যো নাশয়ামসি ॥৩॥ অমূ যে দিবি সুভগে বিচূতৌ নাম তারকে। বি ক্ষেত্রিয়স্য মুঞ্চতামধমং পাশমুওমম্ ॥৪॥ আপ ইদ বা উ ভেষজীরাপো অমীবচাতনীঃ। আপো বিশ্বস্য ভেষজীস্তান্ত্বা মুঞ্চন্তু ক্ষেত্রিয়াৎ ॥৫॥ যদাসুতেঃ ক্রিয়ামাণায়াঃ ক্ষেত্রিয়ং বা ব্যানশে। বেদাহং তস্য ভেষজং ক্ষেত্রিয়ং নাশয়ামি ত্বৎ ॥৬৷৷ অপবাসে নক্ষত্রাণামপবাস উষসামুত। অপাম্মৎ সর্বং দুর্ভূতমপ ক্ষেত্রিয়মুচ্ছতু ॥৭॥

বঙ্গানুবাদ –দ্রুতগামী কৃষ্ণমৃগের মস্তকে যে রোগ-নাশিনী শৃঙ্গ রূপ ঔষধি আছে, মাতৃ-পিতৃ হতে প্রাপ্ত ক্ষয়, কুষ্ঠ, মৃগী ইত্যাদি ব্যাধিসমূহকে বিনাশ করুক৷ ১।

 হে মৃগশৃঙ্গ! তোমাকে ক্ষেত্রিয় রোগ (মাতা-পিতা হতে প্রাপ্ত রোগ) বিনাশের নিমিত্ত ধারণ করা হয়েছে। তুমি হৃদয়ে গ্রন্থিত হয়ে থাকা ক্ষেত্রিয় রোগকে শমন করো। ২।

এই যে চতুষ্কোণ সম্পন্ন হরিণচর্ম পরিচ্ছদের ন্যায় শোভিত হচ্ছে, তার দ্বারা আমি তোমার (অর্থাৎ রোগীর) অনেক রকমের ক্ষেত্রিয় রোগকে নাশ করছি। ৩।

মাতা-পিতা হতে আগত ক্ষয়, কুষ্ঠ, অপর ইত্যাদি ক্ষেত্রিয় ব্যাধিসমূহকে আকাশে স্থিত বিচ্যুত নামক তারকা দুটি (রোগীর) দেহের বিবিধ অঙ্গ হতে পৃথক করুক। ৪।

 জলই ভেষজ, জলই সমস্ত ব্যাধির নাশক এবং ঔষধি রূপ। হে রোগী! এই হেন জল তোমাকে ক্ষেত্রিয় ব্যাধি হতে মুক্ত করণশালী ॥ ৫৷৷

হে রোগী! অনুপযুক্ত অন্ন ইত্যাদি সেবনের ফলে যে কুষ্ঠ ইত্যাদি রোগ তোমার শরীরে উৎপন্ন হয়ে গিয়েছে, সেগুলিকে দূরীকরণশালিনী যে ঔষধিকে আমি জ্ঞাত আছি, তার দ্বারা তোমার রোগকে দূর করে দিচ্ছি ৷ ৬ ৷

রোগ ইত্যাদির কারণ রূপ পাপ উষাকাল অথবা প্রাতঃকালে অনুষ্ঠিত আমার এই অভিযেক ইত্যাদি কর্মের দ্বারা বিনাশ প্রাপ্ত হোক। পুনরায় আমাদের ক্ষেত্রিয় রোগগুলি (অর্থাৎ পাপের বিনাশের ফলে, আমাদের মধ্যে সংক্রামিত কুলানুক্রমিক ব্যাধিসমূহও) বিনাশপ্রাপ্ত হয়ে যাক ॥ ৭।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –হরিণস্য ইতি সূক্তেন ক্ষেত্রিয়ব্যাধিভৈষজ্যে হরিণশৃঙ্গমণেবন্ধনং তচ্ছুঙ্গসহিতোদকপায়নং হরিণচর্মণঃ শঙ্কুচ্ছিদ্রভাগং প্রজ্বাল্য উদকে প্রক্ষিপ্য তেনোদকেন উষঃকালে ব্যাধিতস্যাবসেচনং যবহোমং অভিমন্ত্রিতভক্তভক্ষণং চ কুর্যাৎ। তদ্ উক্তং সংহিতাবিধৌ।…ইত্যাদি। (৩কা, ২অ, ২সূ)।

টীকা –ক্ষেত্রিয় ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তির ভেষজরূপে হরিণশৃঙ্গের মণিবন্ধন, তার শৃঙ্গের সাথে জল পান, হরিণচর্মের শঙ্কুছিদ্রভাগ প্রজ্বালিত করে জলে নিক্ষেপণ এবং সেই জলের দ্বারা উষাকালে ঐ ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তির অবসেচন এবং যব হোম অনুষ্ঠান পূর্বক এই মন্ত্রগুলির দ্বারা অভিমন্ত্রিত অন্ন ভোজন করানো ও  কর্তব্য।..ইত্যাদি ॥ (৩কা, ২অ. ২সূ)।

.

তৃতীয় সূক্ত : রাষ্ট্রধারণম

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : মিত্র ইত্যাদি দেববর্গ ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, জগতী ]

আ যাতু মিত্র ঋতুভিঃ কল্পমানঃ সংবেশয় পৃথিবীমুয়াভিঃ। অথাস্মভ্যং বরুণো বায়ুরগ্নিবৃহদ রাষ্ট্রং সংবেশ্যং দধাতু ॥১॥ ধাতা রাতিঃ সবিতেদং জুষামিন্দ্ৰষ্টা প্রতি হর্ষন্তু মে বচঃ। হুবে দেবীমদিতিং নূরপুত্ৰাং সজানাং মধ্যমেষ্ঠা যথাসানি। ২। হুবে সোমং সবিতারং নমোভিবিশ্বানাদিতা অহমুত্তরত্বে। অয়মগ্নিদীদায় দীর্ঘমেব সজাতৈরিদ্ধোহপ্রতিব্ৰুবদ্ভিঃ ॥ ৩৷৷ ইহেদসাথ ন পরো গমাথের্যো গোপাঃ পুষ্টপতিব আজৎ। অম্মৈ কামায়োপ কামিনীর্বিশ্বে বো দেবা উপসংযন্তু ॥৪॥ সং বো মনাংসি সং ব্ৰতা সমাকৃতীর্নর্মমসি। অমী যে বিব্রতা স্থন তা বঃ সং নময়ামসি ॥৫॥ অহং গৃভূমি মনসা মনাংসি মম চিত্তমনু চিত্তেভিরেত। মম বশেমু হৃদয়ানি বঃ কৃণোমি মম যাতমনুবঝান এত ॥ ৬৷

বঙ্গানুবাদ –মৃত্যু হতে রক্ষা-করণে সমর্থ এবং মিত্রের ন্যায় উপকারী মিত্র দেবতা বসন্ত ইত্যাদি ঋতুগুলির সাথে আমাদের দীর্ঘায়ুষ্য করুন। পুনরায় বরুণ, বায়ু ও অগ্নি দেবতা আমাদের মহান্ রাজ্যের উপর প্রতিষ্ঠিত করুন ॥১॥

ধাতা, অর্যমা এবং সবিতাদেব আমার হবিঃসমূহ গ্রহণ করুন। এই সকল দেবতা এবং ইন্দ্র তথা ত্বষ্টা দেব আমার স্তুতিমন্ত্র শ্রবণ করুন। আমি দেবমাতা অদিতিকেও আহ্বান করছি। এঁদের কৃপায় আমি আপন সমকক্ষ ব্যক্তিগণের মধ্যে (বিশেষ) সম্মান লাভ করতে পারি। ২৷৷

আমি যজমানকে শ্রেষ্ঠ পদ প্রাপ্ত করানোর নিমিত্ত সোম, সবিতা তথা অদিতির অন্য সকল পুত্রকে (অর্থাৎ আদিতির অপর সকল পুত্র দেবগণকে) আহুত করছি। এই আহুতির আশ্রয়ভূত অগ্নিদেব আপন দীপ্তি বর্ধন করুন। আমি যেন আপন সজাতীয় ব্যক্তিগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে পারি ৷ ৩৷

হে মহিলাবৃন্দ! তোমরা কন্যাগণের নিকটেই অবস্থান করো। এই বরের ইচ্ছার নিমিত্ত বিশ্বদেবগণ তোমাদের পার্শ্বেই রাখুন। মার্গপ্রেরক পূষাদেব তোমাদের সৎ-প্রেরণা দান করুন ॥৪॥

হে বিরুদ্ধ মনঃসম্পন্নগণ! আমি তোমাদের অন্তঃকরণগুলিকে বিরুদ্ধতা হতে মুক্ত করে (বিরোধিতাহীন করে) পরস্পর অনুকূল করে দিচ্ছি ॥৫।

 হে বিরুদ্ধ মনঃ-সম্পন্নগণ! আমি তোমাদের মনকে আপন অধীন করে নিচ্ছি। তোমরাও আমার মনের অনুকূলবর্তী হয়ে আমার মনের সাথে সংযোগ প্রাপ্ত হও। তোমরা আমার ইচ্ছানুসার কর্ম করো এবং আমার অনুগত হও। ৬

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— আ য়াতু মিত্রঃ ইতি সূক্তেন উপনয়নকর্মণি মানবকং নাভিদেশে সংস্পৃশ্য Sই অনুমন্ত্রয়েত।…ইত্যাদি। (৩কা, ২অ. ৩সূ)।

টীকা –এই সূক্তের দ্বারা উপনয়ন কর্মে মানবকের নাভিদেশ স্পর্শ পূর্বক অনুমন্ত্রণ করণীয়।… ইত্যাদি। (৩কা, ২অ, ৩সূ)।

.

চতুর্থ সূক্ত : দুঃখনাশনম্

[ঋষি : বামদেব দেবতা : দ্যাবাপৃথিবী, বিশ্বদেবগণ ছন্দ : বৃহতী ]

 কৰ্শস্য বিশস্য দৌঃ পিতা পৃথিবী মাতা। যথাভিচক্র দেবাস্তথাপ কৃণুতা পুনঃ ॥১॥ অশ্রেষ্মণো অধারয় তথা তন্মনুনা কৃত৷ কৃপোমি বথ্রি বিষ্কন্ধং মুক্কাবহো গবামিব। ২। পিশঙ্গে সূত্রে খৃগলং তদা বধুন্তি বেধসঃ।  এবং শুষ্মং কাববং বর্ধিং কৃন্তু বন্ধুরঃ॥৩॥ যেনা এবস্যবশ্চরথ দেবা ইবাসুরমায়য়া। শুনাং কপিরিব দূষণণা বন্ধুরা কাববস্য চ ॥৪॥ দুষ্ট্যৈ হি ত্বা ভৎস্যামি দূষয়িষ্যামি কাববম্। উদাশবো রথা ই শপথেভিঃ সরিষ্যথ৷৷ ৫৷৷ একশতং বিন্ধানি বিষ্ঠিতা পৃথিবীমনু। তেষাং ত্বামগ্র উজ্জহরুর্মাণং বিষ্কন্ধদূষণম্ ॥৬॥

বঙ্গানুবাদ –হস্তে নখ, খুর ইত্যাদি সম্পন্ন ব্যাঘ্র ইত্যাদি, খুররহিত সর্প ইত্যাদি, তথা গো-মহিষ ইত্যাদিকে বর্ষা ইত্যাদির দ্বারা পোষণ করার কারণে আকাশ পিতা এবং আশ্রয় রূপ হওয়ার নিমিত্ত পৃথিবী মাতা। (সুতরাং এই দৃঢ়মূল জীবসমূহ হতে সৃষ্ট বিপ্নরাশি দূরীকরণের উদ্দেশে প্রার্থনা–) হে দেবগণ! তোমরা যে রকম বিঘ্নের কারণগুলিকে সম্মুখে দিয়েছে, সেই রকমেই এই বিঘ্নরাশিকে দূর করো ৷৷ ১।

ঈপ্সিত কার্যের ফলপ্রাপ্তি-রহিত মনুষ্যগণ এবং দূষিত শরীরশালী দেবতাগণ বিঘু-শান্তির নিমিত্ত অরলু বৃক্ষের মণি ধারণ করেছিল। স্বায়ম্ভব মনুও এই রকমই করেছিলেন। আমিও মণি ইত্যাদি ধারণ পূর্বক বিঘ্নসমূহকে শুষ্ক চর্মের রশ্মির দ্বারা মূল হতে বিনষ্ট (অর্থাৎ নিমূল) করে দিচ্ছি। ২৷৷

হলুদ বর্ণের সূত্রে কবচের ন্যায় গ্রথিত হওয়া অর মণিকে বিঘ্ন শমনের নিমিত্ত ধারণ করা হয়ে থাকে। আমাদের দ্বারা ধারণকৃত এই মণি এবস্য, শোষক, কবুর, ইত্যাদি বিঘ্নরাশিকে প্রভাবহীন করুক৷৷ ৩৷৷

হে মনুষ্যগণ! তোমরা শত্রুগণের উপর বিজয় লাভ, করে অন্ন-ধন গ্রহণ করতে আকাঙ্ক্ষা করছো। তোমরা অসুরগণের মায়ায় বিমোহিত দেবগণের মতো মোহিত হয়ে ঘূর্ণন (বিচরণ) করছে। যেমন কুকুরদের দূষণ বানর, তেমনই বিঘ্নসমূহের দূষক এই মণিখণ্ড। ৪

হে মণি! অন্যের দ্বারা উপস্থিত বিঘুকে নিষ্ফল করণের নিমিত্ত আমি তোমাকে [ ধারণ করছি। কাবব নামক (সকল) বিদ্যুকে দূষণ করছি। হে মনুষ্যগণ! এই রকম বিঘ্নের শান্তি সংঘটনের পরে তুমি নিঃশঙ্ক হয়ে আপন কর্মে নিযুক্ত হও। ৫।

 হে মণি! পৃথিবীতে স্থিত একশত এক প্রকার বিঘ্ন আছে, সেগুলির শান্তির নিমিত্ত দেবতাগণ মুক্ত করে দিয়েছিলেন (অর্থাৎ সকলে যাতে বিঘ্নবিনাশের নিমিত্ত তোমাকে ধারণ করতে পারে, তার ব্যবস্থা করেছিলেন)। এই কারণে বিঘ্নের দূষক অরলু-মণিকে আমিও ধারণ করে আছি ৷৷ ৬ ৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –কশস্য বিশস্য ইতি সূক্তেন বিঘুশমনকর্মণি স্পর্ধারূপবিঘ্নবিনাশার্থং অরলুমণিবন্ধনং সপশৃঙ্গিদংষ্ট্রাদিবিঘুশমনার্থং সম্পাতযুক্তবেণুদণ্ডধারণং সংগ্রামে শত্ৰুকৃতমায়াদিরূপবিঘ্ন নিবারণার্থং সম্পাতযুক্তায়ুধধারণং সর্বারস্তুবিদ্যুশমনার্থং ফলীকরণৈর্ধ্বপনং চ কুর্যাৎ… ইত্যাদি৷ (৩কা, ২অ. ৪সূ)।

টীকা –এই সূক্তের দ্বারা বিদ্যুশমনকর্মে স্পর্ধারূপ বিঘ্নবিনাশার্থে অরলু-মণি বন্ধন করণীয়। সর্প, শৃঙ্গী, দ্রংষ্ট্রা ইত্যাদি জীব হতে আগত বিঘু নিবারণ কল্পে সম্পাতযুক্ত বেণুদণ্ড ধারণীয়। সংগ্রামে শত্ৰুকৃত মায়া ইত্যাদিরূপ বিঘু নিবারণের নিমিত্ত এই মন্ত্রের দ্বারা সম্পাতযুক্ত আয়ুধ ধারণীয়।…ইত্যাদি। (৩কা, ২অ. ৪সূ)।

.

পঞ্চম সূক্ত : রায়স্পোষপ্রাপ্তিঃ

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : অষ্টকা ছন্দ : অনুষ্টুপ, ত্রিষ্টুপ, জগতী]

প্রথমা হ ব্যুবাস সা ধেনুরভবদ যমে। সা নঃ পয়স্বতী দুহামুত্তরামুত্তরাং সমাম্ ॥১॥ যাং দেবাঃ প্রতিনন্দন্তি রাত্রিং ধেনুমুপায়তীম্। সংবৎসরস্য যা পত্নী সা নো অস্তু সুমঙ্গলী।.২৷৷ সংবৎসরস্য প্রতিমাং যাং ত্বরাঞ্যপাস্মহে। সা ন আয়ুষ্মতীং প্রজাং রায়পোষেণ সং সৃজ৷৩৷ ইয়মেব সা যা প্রথমা ব্যৌচ্ছদাস্বিতরাসু চরতি প্রবিষ্টা। মহান্তো অস্যাং মহিমাননা অন্তর্বধূৰ্জিৰ্গায় নবগজ্জনিত্ৰী ॥৪॥ বানম্পত্যা গ্রাবাণে ঘোষমত হবিষ্কৃন্বন্তঃ পরিবৎসরীণম্। একাষ্টকে সুপ্রজসঃ সুবীরা বয়ং স্যাম পতয়ো রয়ীণা ৷৷ ৫৷৷ ইড়ায়াস্পদং ধৃতবৎ সরীসৃপং জাতবেদঃ প্রতি হব্যা গৃভায়। যে গ্রাম্যাঃ পশবো বিশ্বরূপাস্তেষাং সপ্তানাং ময়ি রন্তিরস্ত ॥৬॥ আ মা পুষ্টে চ পোষে চ রাত্রি দেবানাং সুমতৌ স্যাম। পূর্ণা দর্বে পরা পত সুপূর্ণা পুনরা পত। সর্বান যজ্ঞান্তসংভুঞ্জভীষমূৰ্জং ন আ ভর ॥৭৷ আয়মগন্তসংবৎসরঃ পতিরেকাষ্টকে তব। সা ন আয়ুষ্মতীং প্রজাং রায়ম্পোষেণ সং সৃজ। ৮৷৷ ঋতুন যজ ঋতুপতীনার্তবানুত হায়না। সমাঃ সংবৎসরা মাসান্ ভূতস্য পতয়ে যজে ॥৯॥ ঋতুভ্যার্তবেভ্যো মাদ্ভঃ সংবৎসরেভ্যঃ। ধাত্রে বিধাত্রে সমৃধে ভূতস্য পতয়ে যজে। ১০৷৷ ইড়য়া জুহুতোবয়ং দেবা ঘৃতবতা যজে।। গৃহানলুভ্যতোবয়ং সং বিশেমোপ গোমতঃ ॥১১৷৷ একাষ্টকা তপসা তপ্যমানা জজান গর্ভং মহিমামিন্দ্র। তেন দেবা ব্যসহন্ত শক্রন্ হন্তা দস্যুনামভচ্ছচীপতিঃ ॥১২৷৷ ইন্দ্রপুত্রে সোমপুত্রে দুহিতাসি প্রজাপতেঃ। কামানস্মাকং পূরয় প্রতি গৃহ্নাহি নো হবিঃ ॥১৩৷৷

বঙ্গানুবাদ –মাঘ মাসের কৃষ্টাষ্টমী তিথি অর্থাৎ একাষ্টকা সম্বন্ধী উষা অন্ধকার দূর করে দিয়েছিল। এইটি সৃষ্টির আরম্ভে উৎপন্ন হয়েছিল। এই একাষ্টকা আমাদের নিমিত্ত দুগ্ধশালিনী (ধেনুবৎ) হোক এবং বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়ে উত্তমোত্তম ফল প্রদান করুক। ১।

 যে একাষ্টকাত্মিকা রাত্রিকে নিকটে আগত দর্শন করে, হবিঃ প্ৰাপণশীল দেবতা প্রশংসা করতে থাকেন, সে (অর্থাৎ সেই একাষ্টকাত্মিকা রাত্রি) সম্বৎসরের পত্নীরূপা। সে আমাদের নিমিত্ত সুন্দর কলাণ-যুক্ত হোক। ২৷৷

হে রাত্রি! আমরা তোমারই উপাসনা করছি; তুমি আমাদের পুত্র-পৌত্র ইত্যাদিকে চিরায়ুষ্য করো এবং গো-ইত্যাদি পশুসমূহে আমাদের সমৃদ্ধ করো ৷৷ ৩৷৷

এই একাষ্টকা লক্ষণশালিনী উষা সৃষ্টির প্রারম্ভে উৎপন্ন হয়ে অন্ধকারকে দূর করে দিয়েছিল। এই উষা অন্য উষাগুলিতে প্রবিষ্ট হয়ে নিত্য উদয় হচ্ছে। এই উষাতে সূর্য, সোম, অগ্নি ইত্যাদির নিবাস। সূর্যের ভার্যারূপা এই উষা প্রাণিগণকে প্রকাশ করে অত্যন্ত শ্রেষ্ঠ ভাবে স্থিত থাকে ৷৷ ৪।

 হে একাষ্টকা! বনস্পতির বিকার রূপ উদূখল, মুসল ইত্যাদি তথা প্রস্তরসমূহ তোমার নিমিত্ত যব ইত্যাদি অন্নকে পেষণ করে এবং দধি ইত্যাদি যুক্ত পুরোডাশ প্রস্তুত করে প্রীতিকর শব্দ (বা স্তুতি) করছে। তোমার কৃপায় আমরা সুন্দর পুত্র, পৌত্র, ভৃত্য এবং ধনসমূহের অধিপতি হবো। ৫।

হে জাতবেদা অগ্নি! তুমি হবিঃ গ্রহণ করো এবং প্রসন্নতা লাভ করো। পুনরায় গাভী, অশ্ব, ছাগ, মেষ, গর্দভ, উষ্ট্র নামক এই ছয় প্রকার পশু আমাতে প্রীতি রাখুক। ৬৷৷

হে রাত্রি! আমাকে ধন, পুত্র, পৌত্র ইত্যাদিতে সমৃদ্ধ করো। তোমার কৃপাবলে আমরা দেবতাগণের কৃপা লাভ করবো। হে দর্বি! তুমি হবিঃযুক্ত হয়ে দেবতাগণকে প্রাপ্ত হও (অর্থাৎ দেবতাগণের সকাশে আমাদের হবিঃ বহন করে নিয়ে যাও) এবং পুনরায় ঈঙ্গিত ফলশালিনী হয়ে আমাদের নিকট প্রত্যাবর্তন করো। তাঁদের নিকট হতে আমাদের নিমিত্ত অন্ন ও বল আনয়ন করো। ৭।

 হে একাষ্টকা! এই সম্বৎসর তোমার পতি। সে এখানে আগত হয়েছে। তুমি তার সাথে অবস্থান পূর্বক আমাদের পুত্র পৌত্র ইত্যাদি সন্ততিগণকে আয়ুস্মান করো এবং ধনের দ্বারা আমাদের সম্পন্ন করো ॥ ৮৷

বসন্ত ইত্যাদি ঋতুসমূহ এবং তাদের স্বামী (বা অধিপতি) দেবতাগণকে হবিঃ-দানের দ্বারা পূজিত করছি। সম্বৎসরের দিন ও রাত্রির উদ্দেশে যজ্ঞ সাধন পূর্বক হবিঃ দান করছি। ঋতুর অবয়ব রূপ কাষ্ঠা ইত্যাদি, চতুস্ত্রিংশ (চৌত্রিশ) পক্ষ, দ্বাদশ মাস ইত্যাদির উদ্দেশেও যাগ করছি। সংসারের অধিস্বামী কালের উদ্দেশেও পূজা করছি। ৯৷

ঋতুসমূহ, দিন রাত্রি এবং সম্বৎসরের প্রসন্নতার নিমিত্ত বিধাতা, ধাতা, সমৃদ্ধ দেবতা তথা সংসারের অধিপতি কালের উদ্দেশে, হে একাষ্টকা! আমি তোমার যজ্ঞ করছি। ১০।

আমরা ঘৃত ইত্যাদি যুক্ত হবির দ্বারা দেবতাগণের উদ্দেশে যজ্ঞ করছি। সেই দেবগণের কৃপায় আমরা অসংখ্য গাভী লাভ পূর্বক সকল কামনায় সম্পন্ন (বা সমৃদ্ধ) হবো॥১১৷

একাষ্টকা দেবী অনুষ্ঠান রূপ কর্মের দ্বারা মহত্তাবান ইন্দ্রকে প্রকট করেছিলেন। সেই ইন্দ্রের বলে দেবতাগণ আপন শত্রু অসুরবর্গেকে বিশেষ রকমে পরাঙ্মুখ করেছিলেন। সেই ইন্দ্র, নাশকারী শত্রুগণকে সংহার করতে সমর্থ হয়েছিলেন। ১২।

হে ইন্দ্র-পুত্রী (অর্থাৎ ইন্দ্র যাঁর পুত্র), হে সোম-পুত্রী! হে একাষ্টকা! তুমি দেবতা ও মনুষ্যের উৎপন্নকারী প্রজাপতির পুত্রী। অতএব তুমি আমাদের প্রদত্ত হবিঃ গ্রহণ পূর্বক আমাদের প্রজা ও পশুর কামনাকে পূর্ণভাবে সন্তুষ্টকারিণী হও (অর্থাৎ সেই কামনা পূর্ণ করো) ॥ ১৩।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— প্রথমা হ ব্যবাস ইতি সূক্তেন সর্বেণ পুষ্টার্থে অষ্টকাকর্মণি আজমাংসস্থালীপাকা প্রত্যেকং ত্রিস্ত্রিজুহোতি। নবকৃত্ব সূক্তাবৃত্তিঃ ..ইত্যাদি৷৷ (৩কা, ২৩. ৫)। টীকা— এই সূক্তের দ্বারা সকলরকম পুষ্টির কামনায় অষ্টকাকর্মে আজমাংসস্থালী পাকের তিনবার হোম করণীয়, নয়বার সূক্তাবৃত্তি করণীয় …ইত্যাদি। (৩কা, ২অ. ৫সূ)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *