1 of 3

০২।৬ দ্বিতীয় কাণ্ড : ষষ্ঠ অনুবাক

ষষ্ঠ অনুবাক
প্রথম সূক্ত : ক্রিমিনাশনম্
[ঋষি : কাণ্ব দেবতা : আদিত্য ছন্দ : গায়ত্রী, অনুষ্টুপ, উষ্ণিক]

উদ্যন্নাদিত্যঃ ক্রিমী হন্তু নিম্নোচন্ হন্তু রশ্মিভিঃ। যে অন্তঃ ক্রিময়ো গবি ॥১॥ বিশ্বরূপং চতুরক্ষং ক্রিমিং সারঙ্গমঞ্জুন। শৃণাম্যস্য পৃষ্টীরপি বৃশ্চামি যচ্ছিরঃ ॥ ২॥ অত্রিবদ্বঃ ক্রিময়ো হন্মি কম্ববজ্জমদগ্নিবৎ। অগস্ত্যস্য ব্ৰহ্মণা সং পিনষ্ম্যহং ক্রিমী ॥ ৩ হতো রাজা ক্রিমণামুতৈষাং স্থপতিহতঃ। হতো হতমাতা ক্রিমিতভ্রাতা হতসা। ৪। হতাসো অস্য বেশসো হতাসঃ পরিবেশসঃ। অথো যে ক্ষুল্লকা ইব সর্বে তে ক্রিময়ো হতাঃ ॥ ৫৷৷ প্র তে শৃণামি শৃঙ্গে যাভ্যাং বিতুদায়সি। ভিনন্নি তে কুষুম্ভং যস্তে বিষধানঃ ॥ ৬৷৷

বঙ্গানুবাদ –সূর্য উদয় লাভ পূর্বক গো-বর্গের শরীরে প্রবিষ্ট ক্রিমিগুলিকে আপন রশ্মিসমূহের দ্বারা বিনাশ করুন। ১।

নানা রং-বেরঙের (বা চিত্র-বিচিত্র অঙ্গ বিশিষ্ট, চতুর্নেত্রশালী, শ্বেত ইত্যাদি বহু বর্ণশালী ও আকারসম্পন্ন ক্রিমিগুলিকে তাদের দেহের সাথে বিনষ্ট করছি। ২

হে কৃমির দল! অত্রি, কথ ও জমদগ্নি ঋষির মন্ত্রের দ্বারা আমি তোমাদের বিনাশ করছি। তোমাদের পুনরূৎপত্তিরোধক মহর্ষি অগস্ত্যের মন্ত্রের দ্বারা কৃমি-কীটগুলিকে বিনষ্ট করছি ৷৷ ৩৷

কৃমিদলের রাজা, মন্ত্রী ইত্যাদি আপন মাতা ও ভ্রাতৃগণের সাথে বিনাশ প্রাপ্ত হয়েছে। এই মন্ত্রের প্রভাবে ক্রিমিবর্গের বংশই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে৷ ৪৷

এই ক্রিমিগণের অবস্থান নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাদের গৃহও নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বীজরূপী সূক্ষ্ম কৃমি-কীটও নষ্ট হয়ে গিয়েছে ॥ ৫॥

হে শৃঙ্গযুক্ত কীট! তোর পীড়াপ্রদ শৃঙ্গকে আমি কর্তন করছি, তোর কুষুম্ভকে আমি বিদীর্ণ করে দিচ্ছি। তোর বিষযুক্ত অবয়বকে আমি খণ্ড-বিখণ্ড করে দিচ্ছি ৷ ৬ ৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –ষষ্ঠেনুবাকে পঞ্চ সূক্তানি। অত্র উদ্যন্নাদিত্যঃ ইতি প্রথমসূক্তেন গোক্রিমিভৈষজ্যকর্মণি সন্ধ্যাত্ৰয়েপি ক্রিমিযুতব্রণমুখং দর্ভৈস্তাড়য়েৎ। তথা অনেন সূক্তেন সাজ্যকৃষ্ণচণক হোমাদিকং পূর্বসূক্তোক্তপ্রকারেণৈব কুর্যাৎ।…ইত্যাদি। (২কা, ৬অ. ১সূ)।

টীকা –ষষ্ঠ অনুবাকের পাঁচটি সূক্তের মধ্যে এই প্রথম সূক্তোক্ত মন্ত্রগুলি গাভীর ক্রিমিজনিত ব্যাধির। ও চিকিৎসায় বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। এই মন্ত্রগুলি ত্রি-সন্ধ্যা জপ পূর্বক ক্রিমিযুক্ত ব্রণের মুখে দর্ভের দ্বারা তাড়ন করণীয়। এবং এই সূক্তের দ্বারা আজ্যসহ কৃষ্ণচণকের হোম ইত্যাদি পূর্ববর্তী সূক্তের প্রকারে করণীয়। (২কা, ৬অ. ১সূ) ॥

.

দ্বিতীয় সূক্ত : যক্ষ্মবিবর্হণম

[ঋষি : ব্রহ্ম দেবতা : যক্ষ্মবিবর্হণম্ ছন্দ : অনুষ্টুপ, বৃহতী, পংক্তি]

অক্ষীভ্যাং তে নাসিকাভ্যাং কর্ণাভ্যাং ছুবুকাদধি। যক্ষ্মং শীর্ষণ্যং মস্তিস্কাজ্জিায়া বি বৃহামি তে ॥ ১ গ্রীবাভ্যস্ত উষ্ণিহাভ্য কীকসাভো অনূক্যাৎ। যক্ষ্মং দোষণ্যমংসাভ্যাং বাহুভ্যাং বি বৃহামি তে ॥ ২॥ হৃদয়াৎ তে পরি ক্লোন্নে হলীক্ষ্মাৎ পাশ্বাভ্যাম্। যক্ষ্মং মতভ্যাং প্লীহ্নে যন্তে বি বৃহামসি ॥ ৩॥ আন্ত্রেভ্যস্তে গুদাভ্যো বনিষ্ঠারুদরাদধি। যক্ষ্মং কুক্ষিভ্যাং প্লাশের্নাভ্যা বি বৃহামি তে ॥৪॥ ঊরুভ্যাং তে অষ্ঠীবদ্ভ্যাং পাষ্ণিভ্যাং প্রপদাভ্যাম। যক্ষ্মং ভসদ্যং শ্রেণিভ্যাং ভাসদং ভংসসসা বি বৃহামি তে ॥ ৫৷৷ অস্থিভ্যস্তে মজ্জভ্যঃ স্নাবভ্যা ধমনিভ্যঃ। যক্ষ্মং পাণিভ্যামলিভ্যো নখেভ্যো বি বৃহামি তে ৷৬৷৷ অঙ্গেঅঙ্গে লোম্নিলোমি যস্তে পর্বণিপর্বণি। যক্ষ্মং স্বচস্যং তে বয়ং কশ্যপস্য বীবহেৰ্ণ বিষ্ণং বি বৃহামসি। ৭।

 বঙ্গানুবাদ –হে ক্ষয়গ্রস্ত (যক্ষ্মারোগাক্রান্ত) মনুষ্য! তোমার নেত্র, কর্ণ, মস্তক, মস্তিষ্ক, নাসিকা, চিবুক এবং জিহ্বা হতে যক্ষ্মা-ব্যাধিকে পৃথক করে দিচ্ছি ৷ ১।

হে রোগী! তোমার গ্রীবাদেশের চৌদ্দটি নাড়ী হতে, তোমার উষ্ণিহ নামক নাড়ী হতে, কণ্ঠ ও বক্ষস্থ নাড়ী হতে, অস্থির সংযোগসমূহ হতে, স্কন্ধ ও বাহুদ্বয় হতে তোমার যক্ষ্মা ব্যাধিতে পৃথক করে দিচ্ছি। ২৷৷

হে রোগী মনুষ্য! তোমার হৃৎপিণ্ড হতে, হৃৎপিণ্ডের সমীপবর্তী ক্লোন্ন ও হলী নামক মাংসপিণ্ড হতে, পার্শ্বদেশ হতে, জঠর হতে, প্লীহা হতে, যকৃৎ ইত্যাদি হতে যক্ষ্মা ব্যাধিকে বিদূরিত করে দিচ্ছি ৷ ৩৷৷

তোমার অন্ত্র হতে, গৃহ্যস্থান হতে, কুক্ষি (উদরের গহ্বর) হতে, প্লাশি (অর্থাৎ জঠরস্থ মলধারক স্থান) হতে এবং নাভি হতে যক্ষ্মা ব্যাধিকে বিতাড়িত করে দিচ্ছি। ৪

তোমার জঙ্ হতে, তোমার পাদস্থ ঊর্ধ্বভাগ (জানু) ও নিম্নস্থ পদতল হতে, কটি হতে, কটির নিম্নভাগ হতে এবং শ্রোণি (নিতম্ব) হতে যক্ষ্মা ব্যাধিকে দূর করছি। ৫

তোমার অস্থি, মজ্জা, সূক্ষ্ম ও স্কুল নাড়ী, অঙ্গুলী ও নখ ইত্যাদি হতে যক্ষ্মা ব্যাধিকে বিদূরিত করছি। ৬

হে রোগী! তোমার অন্য সকল অঙ্গ হতে (অর্থাৎ যে অঙ্গের নাম অনুক্ত রয়ে গেছে), রোমকূপ সমূহ হতে, দেহের সকল সংযোগস্থল হতে, ত্বক ইত্যাদি হতে মহর্ষি কশ্যপের এই বিবৰ্হ (পৃথক্‌-করণশালী) সূক্ত-মন্ত্রের এ বলে আমি তোমার যক্ষ্মা ব্যাধিকে বিতাড়িত করে দিচ্ছি। ৭।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— অক্ষীভ্যাং ইতি সূক্তেন অক্ষিনাসাকর্ণশিরোজিহ্বাগ্রীবাদি সর্বাবয়জরোগ ভৈষজ্যকর্মণি বাহ্বাদিপর্বসু বদ্ধং ব্যাধিতং সম্পতিতোদকেন সর্বগ্রন্থীন বিমুচ্য অবসিঞ্চেৎ …ইত্যাদি। (২কা, ৬অ. ২সূ)।

টীকা –এই সূক্ত মন্ত্রে অভিমন্ত্রিত জল যক্ষ্মা-রোগাক্রান্ত ব্যক্তির সর্বাঙ্গে নিক্ষেপ করণীয়। অন্যান্য ব্যাধির মুক্তির ক্ষেত্রেও এই মন্ত্রগুলির এইরকম বিনিয়োগ বিহিত আছে। এই মন্ত্রের দ্বারা যজ্ঞ-দীক্ষিত যজমানেরও চিকিৎসা করা হয়।….ইত্যাদি। (২কা, ৬অ. ২সূ)।

.

তৃতীয় সূক্ত : পশবঃ

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : পশুপতি প্রভৃতি ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

 য ঈশে পশুপতিঃ পশূনাং চতুষ্পদামুত যো দ্বিপদাম। নিষ্ক্রীতঃ স যজ্ঞিয়ং ভাগমেতু রায়ম্পোষা যজমানং সচন্তাম্ ॥ ১ প্রমুঞ্চন্তো ভুবনস্য রেতো গাতুং ধ যজমানায় দেবাঃ। উপাকৃতং শশমানং যদস্থাৎ প্রিয়ং দেৰানামপ্যেতু পাথঃ ॥ ২॥ যে বধ্যমানমনু দীধ্যানা অন্বৈক্ষ মনসা চক্ষুষা চ। অগ্নিষ্টানগ্রে প্র মুমোতূ দেবো বিশ্বকর্মা প্রজয়া সংররাণঃ ৷ ৩৷৷ যে গ্রাম্যাঃ পশবো বিশ্বরূপা বিরূপাঃ সন্তো বহুধৈকরূপাঃ। বায়ুষ্টানগ্রে প্র মুমোতূ দেবঃ প্রজাপতিঃ প্রজয়া সংররাণঃ ॥৪॥ প্রজানন্তঃ প্রতি গৃহ্নন্তু পূর্বে প্রাণমঙ্গেভ্যঃ পর্যাচরন্ত। দিবং গচ্ছ প্রতি তিষ্ঠা শরীরৈঃ স্বর্গং যাহি পথিভিদেবযানৈঃ ॥ ৫৷৷

বঙ্গানুবাদ –যে পশুপতি (অর্থাৎ ঈশ্বর) দ্বিপদ (মনুষ্য) ও চতুষ্পদ (গো ইত্যাদি) প্রাণীগণের স্বামী (অর্থাৎ অধিপতি), তিনি পূর্ণ রূপে জ্ঞাত হয়ে এই যজ্ঞকে প্রাপ্ত হোন। তার কৃপায় এই যজ্ঞ-করণশীল যজমান ধন ও বল প্রাপ্ত হোন ॥ ১।

 হে দেবগণ! সংসারের সারভূত উপদেশ দান পূর্বক এই যজ্ঞানুষ্ঠান-কর্তাকে সৎ-পথ প্রদর্শন করো। যে সোম রূপ সুসংস্কৃত অন্ন দেবগণের প্রিয়, তা আমাদের প্রাপ্ত হোক ॥ ২॥

যে প্রকাশমান জীব (পশুগণ) এই বধ্যমান (বলীর জন্য উৎসর্গীকৃত) পশুকে চক্ষুর দ্বারা দর্শন এবং মনের দ্বারা অনুতপ্ত হচ্ছে, তাকে (বা তাদের) সেই বিশ্বকর্তা সর্বাগ্রে মুক্ত করুন ৷ ৩৷৷

গ্রামের যে সমস্ত বিবিধ রূপ ও বর্ণশালী পশু, ভিন্নতা হওয়ার পরেও যজ্ঞে বধ্যমান এই পশুর প্রতি একরকম ভাব প্রাপ্ত হয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে (অর্থাৎ সমভাবাপন্ন হচ্ছে), তাদেরও প্রজাগণের সাথে অবস্থানকারী প্রাণদেব (ঈশ্বর) প্রথমে মুক্ত করুন। ৪।

 বিশেষভাবে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চতুর্দিকস্থ স্থানসমূহে ভ্রমণশীল (অর্থাৎ অন্তরিক্ষচারী) জ্ঞানী দেবগণ এই যজ্ঞে  বলীপ্রদত্ত পশুর দেহ হতে নিষ্ক্রান্ত প্রাণকে (বা আত্মাকে) সকল অঙ্গ হতে স্বতন্ত্রিত করে স্ববশে গ্রহণ পূর্বক স্বস্থ জীবন-ব্যতীত করে থাকেন এবং পুনরায় দিব্যমার্গে সহজে স্বর্গে গমন করেন। সেই স্থানে এ (অর্থাৎ এই বধ্যমান প্রাণির আত্মা প্রকাশময় স্থান প্রাপ্ত হয়ে থাকে। ৫

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –য ঈশে পশুপতিঃ ইতি সূক্তেন বশাশমনকর্মণি আজ্যং জুহুয়া…তথা সর্বাকাধিপত্যকামঃ অনেন সূক্তেন ইন্দ্রাগ্ন্যোর্যাগং উপস্থানং বা কুর্যাৎ। তথৈব অনেন সূক্তেন অন্নং অভিমন্ত্র ব্রাহ্মণেভ্যো দদ্যাৎ।…তথৈব অনেন পশুযাগে সংজ্ঞপনার্থং যুপাৎ প্রপুচ্যমানং পশুং অনুমন্ত্রয়েত।..ইত্যাদি। (২কা, ৬অ. ৩সূ)।

টীকা— এই সূক্তের মন্ত্রগুলি বশাশমনকর্মে আজ্যাতি প্রদানে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। সর্বলোকে আধিপত্য কামনায় এই সূক্তের দ্বারা ইন্দ্রাগ্নী-যাগ বা উপস্থান করা হয়। এ ব্যতীত এই সূক্তের দ্বারা অন্ন অভিমন্ত্রিত করে ব্রাহ্মণকে দান করণীয়। পশুযাগে সংজ্ঞপনার্থে ঘূপ হতে প্রমুক্ত পশুর অনুমন্ত্রণ বিহিত আছে।…ইত্যাদি ॥(২কা, ৬অ. ৩সূ)।

.

চতুর্থ সূক্ত : বিশ্বকর্মা

[ঋষি : অঙ্গিরা দেবতা : বিশ্বকর্মা ছন্দ : ত্রিষ্টুপ ]

যে ভক্ষয়ন্তো ন বসূন্যানৃধুর্যানগ্নয়ো অন্বতপ্যন্ত ধিষ্ণ্যাঃ। যা তেষামবয়া দুরিষ্টিঃ স্বিষ্টিং নস্তাং কৃণব বিশ্বকর্মা ॥১॥ যজ্ঞপতিমৃষয় এনসাহুনির্ভক্তং প্রজা অনুতপ্যমান। মথব্যাস্তোকানপ যান ররাধ সং নষ্টেভিঃ সৃজতু বিশ্বকর্মা ॥ ২॥ অদান্যান্সামপান মন্যমানো যজ্ঞস্য বিদ্ধান্তসময়ে ন ধীরঃ। ষদেনশ্চকৃবা বদ্ধ এষ তং বিশ্বকর্মন্ প্র মুঞ্চা স্বস্তয়ে ॥ ৩৷৷, ঘোরা ঋষয়ো নমো অভ্যেশ্চক্ষুর্ষ দেং মনসশ্চ সত্য। বৃহস্পতয়ে মহিষ দুমন্নমো বিশ্বকর্ম নমস্তে পাহ্যম্মান ॥ ৪৷৷ যজ্ঞস্য চক্ষুঃ প্রভৃতিমুখং চ বাঁচা শ্রোত্রেণ মনসা জুহোমি। ইমং যজ্ঞং বিততং বিশ্বকর্মণা দেবা যন্তু সুমনস্যমানাঃ ॥ ৫

বঙ্গানুবাদ –যজ্ঞ-কার্য না করে অন্যত্র ধন-ব্যয় করার কারণে আমরা সমৃদ্ধিহীন রয়ে গিয়েছি। এই নিমিত্ত আহ্বানীয় অগ্নি আমার অনুতাপিত হয়েছেন। এইভাবে আমরা অষ্টা (যাগহীন) ও দুষ্টা (দুষ্ট যাগকারী) রূপে পরিগণিত হয়েছি। আমাদের সুন্দর (ত্রুটিহীন) যজ্ঞানুষ্ঠান করার অভিলাষকে বিশ্বকর্মা পূর্ণ করুন ॥ ১।

 অতীন্দ্রিয় ঋষিগণ যাগবৈকল্যশালী এবং স্বয়ংই পাপের জন্য অনুতপ্ত যজমানকে পাপী বলে অভিহিত করেন। যে প্রজাপতি দেবতা সোমের বিন্দুকে অবতরিত করেছিলেন, সেই প্রজাপতি সেই বিন্দুসমূহে আমাদের যজ্ঞকে সম্পন্ন করুন। ২।

রণাঙ্গনে সমুপস্থিত যোদ্ধা অন্য যোদ্ধার (অর্থাৎ প্রতিযোদ্ধার) রূপ (বা সামর্থ্য) জ্ঞাত।  হয়ে তাকে যেমন তুচ্ছজ্ঞান করে, সেই রকমেই আমি এই যজ্ঞের স্বরূপকে জ্ঞাত হয়েছিলাম (অর্থাৎ তুচ্ছ জ্ঞান করেছিলাম)। বিদ্যার অহঙ্কারে মত্ত হয়ে বিদ্বাৰ্গণকে তুচ্ছজ্ঞান করে তাদের প্রতি তিরস্কার করার পাপ করেছিলাম; সেই পাপ হতে, হে প্রজাপতি! আমাকে মুক্ত করো। ৩।

চক্ষু ইত্যাদি প্রাণরূপ ঋষিগণের মধ্যে যথার্থ দর্শনশালী চক্ষুকে নমস্কার। দেবতাগণের পালক বৃহস্পতিকে এবং হে প্রজাপতি! তোমাকেও নমস্কার। তুমি ক্রুর দৃষ্টি হতে উৎপন্ন পাপকে বিদূরিত করে আমাদের রক্ষক হও ৷৷ ৪

যজ্ঞের এই অগ্নিকে চক্ষুর সমান দেখাচ্ছে। সকল যজ্ঞ অগ্নির দ্বারাই (বা উদ্দেশে) অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। দেবতাগণের মধ্যে প্রথমে এঁরই (অর্থাৎ অগ্নির) পূজা অনুষ্ঠিত হওয়ায় ইনিই মুখ্যরূপে পরিগণিত। এই হেন অগ্নিদেবের উদ্দেশে আমি ঘৃতাহুতি সমর্পণ করছি; এই প্রজাপতির (অগ্নির) দ্বারা অনুষ্ঠীয়মান যজ্ঞে ইন্দ্র প্রমুখ দেবতাগণ আপনাপন কৃপাপূর্ণ বা অনুগ্রহসম্পন্ন বুদ্ধির সাথে আগমন করুন ॥ ৫

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –যে ভক্ষয়ন্তঃ ইতি সূক্তেন বহুজনমধ্যে ভুঞ্জানো দৃষ্টিদোষনিবারণায় অন্নং অভিমন্ত্র ভুঞ্জীত।…ইত্যাদি। (২কা, ৬অ. ৪সূ) ৷৷

টীকা –বহু ব্যক্তির মধ্যে ভোজনকারী জনের পক্ষে দৃষ্টিদোষ নিবারণ কল্পে এই সূক্তমন্ত্রের দ্বারা অভিমন্ত্রিত অন্ন ভোজন করণীয়। সর্বলোকের আধিপত্য কামনাতেও এই সূক্তের দ্বারা ইন্দ্র ও অগ্নির উদ্দেশ্যে অন্ন-দান-যজ্ঞ অনুষ্ঠান করণীয়।…ইত্যাদি ॥ (২কা, ৬অ. ৪সূ)।

.

পঞ্চম সূক্ত : পতিবেদনম

[ঋষি : পতিবেদন দেবতা : অগ্নি প্রভৃতি ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, অনুষ্টুপ ]

আ নো অগ্নে সুমতিং সম্ভলো গমেদিমাং কুমারীং সহ নো ভগেন। জুষ্টা বরেষু সমনেষু বন্ধুররাষং পত্যা সৌভগমস্তুস্যৈ ॥১॥ সোমজুষ্টং ব্রহ্মজুমর‍্যা সংভৃতং ভগ। ধাতুর্দেবস্য সত্যেন কৃপোমি পতিবেদন ॥ ২॥ ইয়মগ্নে নারী পতিং বিদেষ্ট সোমো হি রাজা সুভগাং কৃণোতি। সুবানা পুত্রা মহিষী ভবাতি গত্বা পতিং সুভগা বি রাজতু ॥৩৷৷ যথাখরো মঘবংশ্চারুরেষ প্রিয়ো মৃগাণাং সুষদা বভূব। এবা ভগস্য জুষ্টেয়মস্তু নারী সংপ্রিয়া প্যাবিরাধয়ন্তী ॥ ৪৷৷ ভগস্য নাবমা রোহ পূর্ণামনুপদস্বতী। তয়োপপ্রতারয় যো বরঃ প্রতিকামঃ ॥ ৫॥ আ ক্রয় ধনপতে বরমামনুসং কৃণু। সর্বং প্রদক্ষিণং কৃণু যো বরঃ প্রতিকাম্যঃ ॥ ৬৷৷ ইদং হিরণ্যং গুয়মৌক্ষো অখো ভগঃ। এতে পতিভ্যামদুঃ প্রতিকামায় বেত্তবে ॥ ৭ আ তে নয়তু সবিতা নয়তু পতিঃ প্রতিকাম্য। ত্বমস্যৈ ধেহ্যোষধে ॥৮॥

বঙ্গানুবাদ— হে অগ্নি! কন্যাকে গ্রহণ করতে অভিলাষী সুন্দর বর (পুরুষ বা পাত্র) আমাদের দৃষ্টিগত হয়ে যাক; যে বর আমাদের প্রথমে নিরাশ করে দিয়েছিল (অর্থাৎ এই কন্যাকে অপছন্দ করেছিল), সে এই কন্যাকে লাভ করার অভিলাষের সাথে আগমন পূর্বক আপন ঐশ্বর্যের সাথে এই কন্যাকে গ্রহণ করুক। পুনরায় আগত বরপক্ষীয়গণের নিকট এই কন্যার বরণ সুন্দর লাগুক এবং এই কন্যা পতির সান্নিধ্যে সৌভাগ্যবতী হোক ॥১

সোম, গন্ধর্ব ও অর্যমা নামক বিবাহাগ্নির দ্বারা স্বীকৃত এই কুমারিকা রূপ ধন ধাতা দেবতার অনুজ্ঞাক্রমে মনুষ্যরূপ পতিকে লাভ-করণশালিনী করে তুলুক। ২

এই কন্যা পতিকে প্রাপ্ত হোক, সোমদেব একে সৌভাগ্যবতী করুন; এই কন্যা পতিকে প্রাপ্ত হয়ে তেজস্বিনী হয়ে উঠুক এবং পুত্রোৎপাদনশালিনী শ্রেষ্ঠ জায়ায় পরিণতি লাভ করুক। ৩।

 সুন্দর স্থান যেমন মৃগদলের প্রিয় হয়, এবং তারা সেখানে যেমন সুখে অবস্থান করে, তেমনই এই স্ত্রী তার পতির সাথে অবস্থান পূর্বক ভাগ্যবতী হয়ে উঠুক। ৪

হে কন্যা! তুমি অভিলষিত ফলে পরিপূর্ণ (বোঝাই) হয়ে এই নৌকার উপর আরোহণ করো এবং এর দ্বারা আপন আকাঙ্ক্ষিত পতিকে লাভ করো ॥ ৫॥

হে বরুণ! বরকে এই কন্যার সম্মুখে আহ্বান করে তার (অর্থাৎ সেই বরের) মন এর দিকে প্রেরিত করো এবং তাকে বিবাহের অনুকূল ব্যাপারশালিনী করে দাও। তাকে (অর্থাৎ সেই বরকে) বলাও, এই কন্যা আমার পত্নী। ৬

হে কন্যা! এই স্বর্ণভূষণ, এই ঔক্ষ অর্থাৎ প্রলেপন সামগ্রী অলঙ্কার ইত্যাদির অধিষ্ঠাতা দেবতা ভগ (সূর্য) তোমাকে সোম, গন্ধর্ব ও অগ্নি নামক রক্ষকগণের দ্বারা যুক্ত মনুষ্য পতিকে প্রাপ্ত করার নিমিত্ত প্রদান করছেন। ৭।

হে ব্রীহি ইত্যাদি ঔষধি! এই কন্যাকে পতি প্রদান করো। হে কন্যা! সূর্যদেব বরকে তোমার সমীপে আনয়ন করুন। নিয়ত সেই বর তোমার পাণিগ্রহণ পূর্বক তোমাকে আপন গৃহে নয়ন করুক (নিয়ে যাক) ॥৮॥

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— আ নো অগ্নে ইতি সূক্তেন পতিলাভকর্মণি আগমকৃসরং সম্পত্য কুমারীং আশয়েৎ। তথা তস্মিন্নেব কর্মণি তস্যা এব অলঙ্কারগুগুৗক্ষানাং সম্পতিতানাং ক্রমেণ বন্ধনং ধূপনং প্রলেপনং চ কুর্যাৎ..তথৈব অনেন সূক্তেন রাত্রৌ ব্রীহিন্ হুত্বা কুমারীং দক্ষিণেন প্রক্রাময়েৎ। এবং অনেনৈব সূক্তেন সম্পাবতীং নাবং কন্যকাং আরোপ্য ভগস্য নাবং ইতি পঞ্চমৰ্চা তাং উত্তারয়েৎ। তথা পতিলাভবিজ্ঞান কর্মণি সপ্তদামতাং সম্পাবত্যা সপ্ত বৎসা বন্ধয়িত্বা কুমাৰ্যা মোচয়েৎ। সা যদি প্রদক্ষিণং মুঞ্চেৎ তৰ্হি পতিলাভং জানীয়াৎ। তথা অনেনৈব সূক্তেন অহতবস্ত্রেণ বেষ্টিতং ঋষভং সত্য বিসর্জয়েৎ। …অত্র পতিবেদনশব্দেন পতিলাভসাধনত্বাৎ ইদমেব সূক্তং বিবক্ষিতং।…ইত্যাদি। (২কা, ৬অ. ৫সূ)।

টীকা— অনূঢ়া কন্যার বারংবার বিবাহ-সম্ভাবনা ভঙ্গজনিত দোষের প্রতিকারকল্পে এই সূক্তের দ্বারা তার অলঙ্কার, ব্যবহৃত গন্ধদ্রব্য, প্রলেপন দ্রব্য ইত্যাদি অভিমন্ত্রিত করে ক্রমে (অলঙ্কার) বন্ধন, (গন্ধদ্রব্য) ধূপন ও (প্রলেপন দ্রব্য) লেপন করণীয়। এই সূক্তের মন্ত্রগুলির দ্বারা সম্পাতবতী নৌকায় কুমারীকে আরোহণ করিয়ে পঞ্চম মন্ত্রোক্ত ভগস্য নাবমা রোহ ইত্যাদি বাক্য উচ্চারণ পূর্বক তাকে নদী উত্তীর্ণ করানো কর্তব্য। সেইরকমে পতিলাভবিজ্ঞান কর্মে এই মন্ত্রে অভিমন্ত্রিত সাতটি রঞ্জুতে সাতটি গো-বৎস বন্ধন পূর্বক কুমারীর দ্বারা একে একে সেগুলিকে মোচন করণীয়। সেইকালে কুমারী যদি সেগুলিকে প্রদক্ষিণক্রমে উন্মোচিত করে, তবে তার পতিলাভ অনিবার্য।…এই সূক্তটি পতিবেদন নামে প্রসিদ্ধ, কারণ পতিলাভ সাধনের উদ্দেশে এটির বিনিয়োগ বিহিত হয়েছে।..ইত্যাদি। (২কা, ৬অ. ৫সূ)।

[ইতি দ্বিতীয়ং কাণ্ডং সমাপ্তম্]

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *