দি প্রপার্টি অফ এ লেডি

দি প্রপার্টি অফ লেডি — জেমস বন্ড

জুন মাসের আইঢাই করা গরমে 00 বিভাগেরও কাজকর্ম না থাকায় 007-কে অর্থাৎ জেমস বন্ডকেও অফিসের কাজকর্ম কয়েক সময় কাটাতে হয়।

কিন্তু সে কাজে অল্প দিনের মধ্যেই জেমস্ বন্ড অতিষ্ট হয়ে ওঠে, তার কাজে মন বসে না, তখন সে পৃথিবীর সমস্ত প্রানে শান্তি বজায় থাকায় সৃষ্টিকর্তার উপর রেগে যায়।

সেই সময় মিঃ M-এর সেক্রেটারি মিস মানিপেনি ফোন করে জেমস্ বন্ডকে জানায়, মিঃ M-তাকে ডাকছে। খেলনার পিস্তলের ভেতর রাখা সায়নাইড গ্যাস দিয়ে কি করে মানুষ খুন করা যায়, জেমস বন্ড তাই মনোযোগ দিয়ে পড়ছিল। ঠিক যেমন রং বেরোয় খেলনা পিস্তল দিয়ে, ঠিক তার বদলে গ্যাস বেরুলেই সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মৃত্যু হয়।

জেমস বন্ড নিজেকে ফিটফাট করে নিয়েই বেরিয়ে পড়ে M-এর উদ্দেশ্যে। খুব সাবধানে বড়কর্তা M-এর ঘরে ঢোকে এবং ড ফর্স কার্পেটের ওপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তার টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ায়। তার পাশে একজন মাঝবয়সী অচেনা লোক বসেছিল। M দুজনের পরিচয় করিয়ে দিল। একজন ছিল বিখ্যাত মণিমুক্তা সম্বন্ধে বিশিষ্ট পণ্ডিত আর একজন ছিল 07 অর্থাৎ জেমস বন্ড। মণিমুক্তা জ্ঞানী ডঃ ফ্যাসকে M-এর বন্ধুরা পাঠিয়েছিল যোগাযোগ বিভাগের মিস্ ফ্রয়েডেন স্টাইনের জন্য।

বড়কর্তা M-এর কথা শেষ হওয়া মাত্রই জেমস বন্ড এবং ডঃ ফ্যান্স চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে করমর্দন করেছিল।

ডঃ ফ্যানস কোন মতে জেমস বন্ডের হাত স্পর্শ করেন বটে, কিন্তু সাথে সাথে কাটা কলাগাছের মতন চেয়ারে বসে পড়েছিল। সোজাভাবে জেমস বন্ডের দিকে না তাকিয়ে ডঃ ফ্যান্স একটু আড়চোখেই এক পলক দেখেছিল আর সেই এক পলকেই মানুষের দেহটাকে জরিপ করে সমস্ত খবরাখবর নেবার ক্ষমতা তার ছিল।

বড়কর্তা M জেমস্ বন্ডকে কোন কথা বলতে না দিয়ে নিজেই শুরু করেছিলেন, রাশিয়ার গুপ্তচর বিভাগের মেয়ে হল মিস ফ্রয়েডেন স্টাইন। তাদের সিক্রেট সার্ভিসের বুকে KGB হয়ে সমানে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য তারা জেনে শুনেই যোগাযোগ বিভাগের মধ্যেই তাকে চাপে রেখেছে। তার জন্যই পার্পল সাইফার নামে একটা সাংকেতিক সংবাদ-এর অক্ষর বের করেছে।

তার প্রতিদিনের কাজ হল সেই সাংকেতিক সংবাদ অক্ষর ওয়াশিংটনে তাদের CIA. অফিসে পাঠানো। সেই সংবাদ সৃষ্টি করে তাদের সংবাদ বিভাগ ১০০।

তাদের লাইনে ঐ রকম অনেক কাজ আছে যেগুলি ডবল এজেন্টদের করতে হয়। যদিও এদের দেখলে মনে হয়। এরা এক পক্ষের হয়ে কাজ করে। কিন্তু এরা দুপক্ষেরই গুপ্ত খবরাখবর দুপক্ষকে দেয়। সেই জন্যই ১০০ বিভাগের খবর মিথ্যে হয় এবং খবর ছাপার সাথে সাথে শত্রুপক্ষের লোকেরা কাজে লেগে পড়লেও পরে বুঝতে পারে এজেন্টরা ভুল খবর দিয়েছে।

উভয় দেশের কাছে বিশ্বাস হারিয়ে ডবল এজেন্টরা শেষে ঘাতকের হাতে মারা যায়।

মিস্ ফ্রয়েডন স্টাইন সুন্দরী না হওয়ায় কাউকে প্রেমের ফাঁদে ফেলা এবং খবর সংগ্রহ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। তাছাড়া গুজগুজ ফুসফুস করে অন্যান্য বিভাগের লোকদের কাছ থেকে খবর নিয়ে রাশিয়াতে পাঠাবার সুযোগ নেই।

তারপরেও কোন খবর সংগ্রহ করতে হলে তাদের যাবতীয় ঝুঁকি নিতে হবে।

পরের অংশটুকু জেমস বন্ড ওরফে o07-কে বলার জন্য বড়কর্তা M ডঃ ফ্যানসকে অনুরোধ করেন।

ডঃ ফ্যান্স জেমস্ বন্ডের মুখের দিকে একবারও না তাকিয়ে নিজের চেয়ারেই একটু নড়ে চড়ে বসে।

নিজের জুতার দিকে তাকাতে তাকাতে মিঃ বন্ডকে জানায় যে ফাবেয়ার্জে একজন রাশিয়ার প্রখ্যাত মণিকার।

অতীতে সে রাশিয়ার জার এবং স্ত্রীদের জন্য নানারকমের অলংকার ইস্টার এগ তৈরি করতো।

তার আগে ও পরে আর কেউ অত সুন্দর মুক্তার জিনিস তৈরি করেনি।

এখনও বিখ্যাত কোন কোন সোনার দোকানে তা পাওয়া গেলেও তাদের দাম পঞ্চাশ হাজার পাউন্ডেরও বেশি।

এই ফাবেয়ার্জের বিখ্যাত জিনিসগুলোর মধ্যে একটা মারকত গোলক তখন দেশে এসেছে। পরিচিত একজনের নামে জিনিসটা প্যারিস থেকে ইন্সিওর করে পাঠানো হয়েছে। যোগাযোগ বিভাগের কর্মী ফ্রয়েডেন স্টাইনের নামে উপহার হিসাবে জিনিসটা এসেছে। মারকত গোলকের দাম হচ্ছে এক লক্ষ ডলার।

ডঃ ফ্যান্স একটু চুপ করলে 007 তাকে প্রশ্ন করে যে কোথা থেকে এই খবর সংগ্রহ করেছে। এই খবরটা 007-এর খুব জুরুরি।

তার আগেই বড়কর্তা M জানায় যে সে সি.আই.ডি বিভাগের সঙ্গে জড়িত। বিদেশ থেকে মূল্যবান কোন জিনিস পাঠাতে হলে দামের সাথে কাস্টমসূ-এর অনুমতি নিতে হয়।

তারপর পররাষ্ট্র বিভাগ থেকে অনুমতি নিয়ে প্যাকেটটা খুলতে হয়। 007 জানায় যে মারকত গোলকের বিবরণ ও নকসা পেলে মারকত গোলককে চিনতে তার কোন অসুবিধা হবে না।

তাছাড়া প্যাকেটের উপরে দাম লেখা ছিল। আসলে মারকত গোলকের দাম অনেক বেশি।

তারপর ডঃ ফ্যানসকে M-এর টেবিলে পড়ে থাকা একটা ফটোস্ট্যাট কপির দিকে তাকিয়ে 007 জিজ্ঞাসা করে সে কি ফটোস্ট্যাট কপিটা মিঃ M-কে দিয়েছে কিনা বলে। কারণ তাতে মিস ফ্রয়েড স্টাইনের প্রকৃত পরিচয় জানানো আছে।

১৯১৭ সালে ফ্রয়েড স্টাইনের পিতামহ ফাবেয়ার্জকেই ঐ মারকত গোলক বানানোর জন্য আদেশ দিয়েছিল।

১৯১৮ সালে ফ্রয়েড স্টাইনের পিতামহের মৃত্যুর পর মারকত গোলকটি তার ভাই-এর কাছে রেখে আসে।

১৯৫০ সালে সেটা আবার তার মায়ের কাছে আসে।

 আর একটু খবর নেবার পর জানা যায় যে ফ্রয়েড স্টাইনের মা ছোটবেলায় রাশিয়া থেকে চলে আসে।

অবৈধ সন্তান ফ্রয়েড স্টাইনকে নিয়ে সে বিয়ে না করে রাশিয়ানদের সঙ্গে বাস করে।

 তার আগের বছর মিস ফ্রয়েডেন স্টাইনের মা মারা যাবার সময় মারকত গোলকটিকে উইল অনুসারে মার এক শুভাকাঙ্ক্ষী মিস্ ফ্রয়েডেন স্টাইনের কাছে পাঠিয়ে দেয়।

সেই সংবাদ সংগ্রহ করে তার মনে সন্দেহ জাগে, কারণ ফ্রয়েডেন স্টাইনের মাহিনাতে এত দামী জিনিস কেনা সম্ভব নয়।

তাছাড়াও সাদবি নিলামদার কাগজে দুষ্প্রাপ্য জিনিসটার মালিক একজন মহিলার নাম জানিয়ে সাতদিন পরে তার নিলামের খবর দেয়।

তারপর সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে যোগাযোগ করে এবং মিস ফ্রয়েডেন স্টাইনের সাথে যোগাযোগ করে তাকে কিছু প্রশ্ন করলে সবকটি প্রশ্নের উত্তর পায়, সে গুলোর খবর তার আগেই জানা ছিল।

অন্য কোন উপায় না পেয়ে কাস্টমসের M/5-এর একজন কর্তা সঙ্গে সব কথা আলোচনা করে। সেই কর্তাই তাকে ঐ বিভাগে পাঠিয়ে দেয়। তারপর সে বিষয়ের উত্তরটা তাদের ওপরই নির্ভর করছে।

তাদের সাহায্য করার জন্য বড়কর্তা M ডঃ ফ্যানসকে ধন্যবাদ জানায়।

তবে বড়কর্তা M সে বিষয়ে দু-একটা প্রশ্ন করতে চাইলে ডঃ ফ্যান্স রাজি হয়।

মরকত গোলকটা ভাল করে পরীক্ষা করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ডঃ M-এর কাঁধের দিকে তাকিয়ে বলে, ফাবেয়ার্জের তৈরি জিনিস ওয়াটস্কি প্রতিষ্ঠানের লোকেরা বেশি বিক্রি করে।

মিঃ স্নোম্যানকে প্রশ্ন করলে মিঃ স্নো ম্যান একই মত দেয়।

কিন্তু তাদের মনে হয় যাকে এই মূল্যবান জিনিসটা পাঠানো হয়েছে তাকে সরাসরি টাকা না পাঠিয়ে জিনিসটা পাঠিয়েছে এবং নিলামে তুলে টাকা পাইয়ে দেবার মতলব করেছে।

M ডঃ ফ্যানসকে প্রশ্ন করে মরকত গোলকটার নিলামে কত দাম হতে পারে? তবে তার অনুমান ওয়াটস্কির তরফ থেকে ভাল দর উঠবে। সুতরাং তাদের সেখানে বসে কোন অনুমান করাটা ঠিক হবে না।

জেমস বন্ড মনে মনে স্থির করে, ঐ সব বাজে আলোচনা থেকে বড়কর্তা M-কে বাঁচানো দরকার।

তখন সে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, সারাক্ষণ সব কথা শুনেছে কিন্তু সে রকম কোন কিছু পায়নি। তাদের যে একজন সহকর্মীর ভাগ্য খুলেছে, সে বিষয়ে তার সন্দেহ নেই।

তারপরেই জেমস বন্ড উঠে দাঁড়িয়ে বলে তাদের বিভাগের গাড়ি করে কি তাকে বাড়ি পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করবে?

পার্কের মধ্যে দিয়ে বেড়াতে বেড়াতে চলে যেতে পারবে বলে এই প্রস্তাব মেনে নেয়নি।

এর পর ডাক্তার ফ্যানস চেয়ারে বসে থাকাটা ঠিক নয় ভেবে সকলের সাথে করমর্দন করে M-এর কাছে বিদায় নিলে জেমস বন্ড তাকে রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে M-এর ঘরে ঢোকে। এবং সেখানে M-কে পুরানোমোটা ফাইল দেখতে দেখে।

বেশ কিছুক্ষণ পরে M আপন মনে বলে ওঠে ডঃ ফ্যান্স ঠিকই বলেছে, মেয়েটির ১৯৩৫ সালে জন্ম।

জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় যে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে ওঠে তাতে তার মা সক্রিয় ভূমিকা নেয় এবং যুদ্ধের পর দূতাবাসে চাকরি নিয়ে সারবোনে চলে যায়।

মিস ফ্রয়েডন স্টাইনকে তাদের দূতাবাসে বিশেষ সুপারিশ করে পাঠানো হয়।

এখানে তার পরেই সে এক বছরের ছুটি নেয় -এর বেশ কিছুদিন খোঁজ খবর করার পর তাকে লেলিনগ্রেডে বৃত্তি শেখাবার এক স্কুলে পাওয়া যায়।

তারপর চিন্তা করে পায় না যে মিস ফ্রয়েডন স্টাইন কাজে এলে তাকে কোথায় বসাবে।

 আর এই সমস্যার সমাধান করে তাদের ১০০ বিভাগ। এবং তারাই পার্পল সাইফারের পরিকল্পনার কথা বলে।

 তারপর o07-কে M জিজ্ঞাসা করে, তারপর থেকে যা হয়েছে, সে নিশ্চয় জানে।

তবে আপাতদৃষ্টিতে দেখলে দেখা যাবে, সে বিগত তিন বছর তাদের বিভাগে আছে।

সে সময়ে গুপ্তচর বৃত্তির জন্য রাশিয়ানদের কাছ থেকে কোন টাকাই পায়নি। কারণ ওর ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট চেক করে দেখেছে বিগত তিন বছর ধরে যা বেতন পেয়েছে, তাই সে ব্যাংকে জমা দিয়েছে। সেই জমা টাকা তুলে এখন জীবিকা নির্বাহ করছে।

জেমস্ বন্ড চিন্তিত ভাবে বলে, এ বিষয়ে তাদের একটু সতর্ক হওয়া উচিত।

 যা ব্যবস্থা করা হয়েছে সেই যথেষ্ট।

তারপর কিন্তু যে গুপ্তচর প্রধানটি লন্ডনে বসে সকলকে পরিচালনা করছে, তাকে বের করা উচিত।

হ্যাঁ, জানা উচিত। কারণ, তারা তখনও পর্যন্ত জানে না, সেই ভদ্রলোকটিকে।

 স্যারকে বলে, এখন তা জানার সুযোগ এসেছে। প্রথমত রাশিয়ানরা সেই অমূল্য সম্পদের মূল্য বোঝে না। কিন্তু এই দ্রব্যটি যাতে নিলামে আবার রাশিয়ায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, তার জন্য প্রধান গুপ্তচর ছদ্মবেশে নিলামেও উপস্থিত থাকবে। চড়া দরে মরকত গোলকটা কিনবে। সে সময় তারা ওকে চিনতে পারবে। ফলে, অবাঞ্ছিত লোক ঘোষণা করে তাকে ইংল্যান্ড থেকে বার করে দেওয়া সম্ভব হবে।

একবার ফেরত পাঠালে আবার নতুন করে রেসিডেন্ট ডিরেক্টর পদে যোগ্য লোক পাঠাতে বেশ কিছু সময় লাগবে।

বড়কর্তা M-এর জেমস বন্ডের কথা পছন্দ হয়। এবং রিভলবিং চেয়ারটাকে তার দিকে ঘুরিয়ে বসে, বসে ঠিক আছে।

 তারপর তাকে চীফ অফ স্টাফের সঙ্গে সব কথা বলে ব্যবস্থা করতে বলে।

আর যেহেতু ব্যাপারটা M/২-এর এক্তিয়ারে বলেই তাদের সঙ্গে সব কথা তিনিই বলবেন বলেন। তবে নিলামে গিয়ে তাদের ডাকের সাথে থেকে দরিয়া হতে বারণ করেন। তার উদ্দেশ্য রাশিয়ায় ইংল্যান্ডে যে গুপ্তচর প্রধানটি আছে তাকে খুঁজে বের করা।

বড়কর্তার মত পরিবর্তন করে ফেলার ভয়ে বন্ড আর এক মিনিটও অপেক্ষা না করে বেরিয়ে আসে।

সব ব্যবস্থা করার পর জেমস বন্ড ওয়াটস্কির দোকানে আসে। এখানে প্রচুর মূল্যবান জিনিসপত্র সাজানো আছে, সব জায়গাটাই সুন্দর দেখতে। ঐ সব জায়গায় সাধারণত সমাজের ওপর তলার মানুষেরা যাতায়াত করে।

পরিকল্পনা মত জেমস্ বন্ড কেনেথ স্নোম্যান-এর সাথে দেখা করে এবং তার মনে বিশ্বাস জন্মাবার জন্য নিজেকে সি.আই.ডি অফিসার বলে পরিচয় দেয়।

মিঃ কেনেথের মুখে বেশ বুদ্ধির ছাপ আছে। সে একটিবার জেমস বন্ডের দিকে তাকিয়ে তাকে মাটির ঘরে আসতে বলে।

মিঃ কেনেথ মিঃ বন্ডকে কার্পেট মোড়া সিঁড়ি দিয়ে অন্ধকার ঘরে নিয়ে আসে।

 বড় ঝলমলে ঘরটার চারদিকের দেওয়ালে কাঁচের আলমারি এবং তাতে সোনা মণিমুক্তা ভরা। মোটা গদিতে ঢাকা বসবার চেয়ার। মূল্যবান ধনরত্ন একটু উঁচু জায়গায় রাখা আছে।

জেমস বন্ড সিগারেট ধরিয়ে মগজের বুদ্ধির গোড়াকে সতেজ করে নিয়ে বলে, কাল সবির নিলাম খানায় ফাবের্জের মরকত গোলক নিলাম হবে। আর সেই নিলাম সম্পর্কে তার কিছু জানার আছে।

মিঃ কেনেথ এ বিষয়ে কিছু গণ্ডগোল আছে কিনা জানতে চাইলে মিঃ বন্ড জানায় বিশেষ কিছু নেই। তবে তাদের কাছ খবর এসেছে গোলকটির দাম অস্বাভাবিক তোলা হবে। আর তার সেই দাম তোলার লোকগুলোকে দেখা দরকার। মিঃ বন্ড বলে যে সবাই সেই গোলকটি পেতে চেষ্টা করবে।

মিঃ কেনেথ তার কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলে, মূল্যবান জিনিস পেতে সকলেরই ইচ্ছা হয়। তবে যা অনুমান হচ্ছে। তাতে মিঃ বন্ডের কথা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

মিঃ বন্ড বলে, এ বিষয়ে তার সাহায্য দরকার।

তাদের তরফে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে জানাতে পারারও অনুমতি দেয়। এবং বলে। মণিমুক্তা নিয়ে যারা ব্যবসা করে তাদের গোপনীয়তা রক্ষা করে চলতে হয়। কাজেই তার উপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস রাখার আশ্বাসও দেয়।

তারপর সে আরও ভাল করে বলল, গোলকটার দাম যারা যত বাড়াবে তারাই হল রাশিয়ার গুপ্তচর। তাদের কাজ হবে ওদের চিনে রাখা। আর তার দরকার পরদিন নিলামের কাছে গিয়ে গুপ্তচরদের চিনে রাখা।

ঐ নিলাম পরিচালনা করবে সাবিরের বড়কর্তা পিটার উইলসন নিজে। কখনও আবার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তাদের অস্তিত্বকে আড়াল করার জন্য ইঙ্গিতে দাম বাড়ায়। আর ঐ সব ইঙ্গিত নিলামদারদের সাথে কথা বলা থাকে। কাজেই সতর্ক না থাকলে কে দর বাড়াচ্ছে বুঝতে পারবে না। তবে রাশিয়ান গুপ্তচররা নিঃসন্দেহে দাম বাড়াবে। সেইমত তারাও তাদের খদ্দেরদের জানিয়ে দেবে।

মিঃ কেনেথ একটু থেমে বলে, এই নিলামে ক্রোড়পতি, ডিউক, ডাচেসূদের নিমন্ত্রণ জানান হয়েছে। নিলামটা টেলিভিশনে দেখান হবে এবং প্রেস, জার্নালিস্টরাতো আছেই। এরপর মিঃ বন্ডকে জিজ্ঞাসা করে যে সে গুপ্তচর ছাড়া কি কাউকে দেখতে চায়।

সে মিঃ কেনেথকে বলে যে তার অনুমান ঠিক। কিন্তু তাকে জিজ্ঞাসা করে, এই নিলামে পরিচয় গোপন করে কিভাবে যাওয়া যাবে?

এর পর স্নোম্যান কুমিরের চামড়ার নোটকেস থেকে ছাপানো দুটো কার্ড বের করে তাকে দিয়ে বলে, নিলাম হলে তারা পাশাপাশি বসবে, ঠিক সময় মত পৌঁছে যেতে বলে।

মিঃ বন্ড তার কথায় সম্মতি জানিয়ে তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হীরে পান্নার ঝলমলে পরিবেশ থেকে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। বাকি দিনটা দপ্তরে বসে এ বিষয়ে খুঁটিনাটি সব জেনে নেয় এবং এমন একটা লোকের ফটো নিতে চায় যাকে মিঃ বন্ড চেনেই না।

তারপর মিঃ বন্ড পরিবহন বিভাগের দিকে চলে যায় এবং এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে ফ্রয়েডেন স্টাইনের ঘরে গিয়ে দেখে দু জন সহকারি নিয়ে সে খবর পাঠাতে ব্যস্ত।

মিঃ বন্ড সহকারি দু জনের সঙ্গে রসিকতা করলে ফ্রয়েডেন স্টাইন কাজ করতে করতে মুচকি হাসে।

তাকে দেখতে মোটেই ভাল নয়, গায়ের রঙ ফ্যাকাশে, চুল কালো। দেখে মনে হয় কোন দিন বোধহয় গোসল করেনি। এ ধরনের যুবতীরা সাধারণত ভীষণ রাগচটা হয় এসং সমাজের উপর এদের রাগ ও ঘৃণা থাকে। সমাজের উপর প্রতিশোধ নেবার স্পৃহাও এত বেশি থাকে যে এরাই সমাজের শত্রু হয়।

মিঃ বন্ড ভাবল মিস্ ফ্রয়েডেন স্টাইন ধনী হয়ে যাবে এবং সুন্দরী হবার জন্য ভাল ডাক্তার দেখাতে পারবে। তাকে চেনাও যাবে না। ঠিক সময় ট্যাক্সি করে বন্ড নিলাম খানার সিঁড়ি বেয়ে দরজার দিকে এগোয়।

একজন ইউনিফর্ম পরা লোক তার কার্ড পরীক্ষা করে তার হাতে একটা ক্যাটালগ ধরিয়ে দিয়ে সামনের দিকে যেতে অনুরোধ করে। প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে নিজের জায়গাটা খুঁজে বের করে দিখতে পেল মিঃ কেনেথ আগেই এসে বসে আছে। নিলাম ঘরটা একটা টেনিস কোর্টের মতন লম্বা আর চওড়া এবং ঘরের দেওয়ালে কারুকার্য করা জিনিস ছিল।

একদিকে মঞ্চে কাগজ ও টেলিভিশনের কর্মীরা ছিল।

 তাদের মধ্যেই সানডে টাইমসের প্রেস ফটোগ্রাফার যথাযথ নির্দেশ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।

পঁচিশ হাজার ডলারে একটা হীরের নেকলেস ও পরে হীরে চুনীর-চুড়ি বিক্রি হবার সময়-জেমস্ বন্ড পিছনের ভিড়ে মিশে গিয়েছিল। কারণ পিছনের লোকদের নজর রাখার জন্য।

পেছন থেকে জেমস্ বন্ড সকলকেই তার সন্ধানী দৃষ্টি দিয়ে একবার দেখে নেয় বটে, কিন্তু সবাই নিজেকে কালো চশমা দিয়ে গোপন করতে চেষ্টা করছিল।

তারপর মিঃ বন্ড নিজের চেয়ারে এসে বসলেন মিঃ কেনেথ তাকে নিলামদার পিটার উইলসনের চোখের দিকে নজর রাখতে বলে। কার দিকে তাকাবে বা কে কানে, চোখে হাত দিচ্ছে সেগুলোই লক্ষ্য করতে বলে, কারণ ঐ গুলোই দাম বাড়াবার ইঙ্গিত।

সে যাকে খুঁজছে, সেই লোকটাকে কি দর দেওয়া যায় সে জেনেছে। কাজেই তারপর লোকটা আর দর দেবে না।

তারপর নিলামের বেদিতে উঁচু টুলে করে একটা বাক্স নিয়ে এসেছিল।

 তারপর বয়স্ক একজন পরিচালক মখমলের কাপড়ের উপর মরকত গোলকটা বসিয়ে দিল।

সেটাকে দেখার পর জনসাধারণের মধ্যে একটা চাপা গুঞ্জন শুরু হল।

সঙ্গে সঙ্গেই নিলামদরে দামের ইশারাও শুরু হয়েছিল। তারপর গোলকটির দাম ৪০ হাজার পাউন্ড ওঠার পর সাময়িক চুপ থাকে। তারপর এক লাফে এক লক্ষ পাউন্ডে উঠে পড়ে।

সেই সময় সকলের দৃষ্টি যায় নিলামদারের বাঁদিকে থাকা তিনজনের উপর। তারা অনবরত টেলিফোনে কারুর সাথে কথা বলছিল।

একজন ছোকরা এক লক্ষ পাউন্ডের ডাক দিয়েছিল।

 মিঃ কেনেথ মিঃ বন্ডকে বলে যারা সবসময় ফোন করছিল তারাই মেট্রোপলিটনের লোক ছিল। টেলিফোনে মেট্রোপলিটনের নির্দেশে নিলামদারের লোকই এক লক্ষ পাউন্ড ডাক দেয়।

তারপর মিঃ কেনেথ ক্যাটালগ হাতে আসরে নামার সাথে সাথে নিলামদার এক লক্ষ দশ হাজার পাউন্ড বললে টেলিফোনের যুবকটি ঘাড় নাড়ছিল। পরক্ষণেই বলে উঠেছিল এক লক্ষ কুড়ি হাজার। কেনেথ ক্যাটালগটা মাথার উপর তুললে, নিলামদার ঘোষণা করে এক লক্ষ তিরিশ হাজার পাউন্ড। তারপর টেলিফোন ধরা যুবকটি অনেকক্ষণ কথা বলার পর ইঙ্গিত করছিল, নিলামদার ঘরের অন্য দিকে তাকিয়ে দেখেছিল কেউ ইশারা করছে কিনা।

তখন কেনেথ বন্ডকে চাপা আওয়াজে মেট্রোপলিটনের দম ফুরিয়ে যাবার কথা বলেছিল। এবং মিঃ বন্ডকে ভাল করে লক্ষ্য করতে বলেছিল যে তার লোকটি হয়ত তখন দাঁড়াবে।

মিঃ বন্ড নিলামদারের পাশে গিয়ে দাঁড়ালেও কারুর ইশারা বুঝতে পারেনি কিন্তু নিলামদার চিৎকার করে বলে এক লক্ষ চল্লিশ হাজার পাউন্ড। তখন নিলামদার কেনেথের দিকে তাকালে তিনি হাতে পাঁচটা আঙ্গুল দেখালেন, নিলামদার পঞ্চাশের ঘোষণা করলে দর্শক হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানাল। নিলামদারের দু বার ডাক হয়ে গিয়েছিল।

তারপর ডানদিকের দেওয়ালের কাছে এক ভদ্রলোক কালো চশমা পরে বসেছিল। তার ইঙ্গিত ছিল চশমা খোলা আর রুমাল দিয়ে মোছা।

নিলামদার যতক্ষণ দশ দশ করে নিলামের দাম বাড়াতে থাকে, সেই সুযোগে বন্ড M/S বিভাগের ক্যামেরাম্যানকে লোকটির ফটো তুলতে বললে বেশ কয়েকটি ছবি তুলেছিল। মিঃ কেনেথকে প্রয়োজনীয় লোকটাকে পেতে সাহায্য করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে মিঃ বন্ড নিজের জায়গায় ফিরে গিয়েছিল এবং পরদিন দেখা করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

সেই সময় নিলামদার হাতুড়ি পিটিয়ে কেনেথকেই মরকত গোলকটার বিজয়ী ঘোষণা করেছিল।

নিলাম শেষ হবার পর জেমস বন্ড কালো চশমা পরা লোকটার পিছনে এসেছিল এবং ভাল করে লক্ষ্য করায় বুঝতে পেরেছিল লোকটা রাশিয়ান রাষ্ট্রদূতের এগ্রিকালচারাল অ্যাটাশে পিটার ম্যানিনোকি তার নাম। এরপর সে রাস্তায় নেমে কুইট স্ট্রিটের রাস্তা ধরে হাঁটতে শুরু করে।

এরপর পিটার ম্যানিনোসকিকে ফলো করার জন্য M/-এর গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে বললে ড্রাইভার সম্মতি জানিয়েছিল এবং তাকে ফলো করেছিল। পিটার বন্ড স্ট্রিটের মুখে থেকে ট্যাক্সি ধরেছিল, এবং মিঃ বন্ড তাকে দুরত্ব রেখেই ফলো করছিল।

অবশেষে মিঃ বন্ডের ধারণাই সত্যি হল, ভদ্রলোক রাশিয়ান দূতাবাসের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল।

 এরপর জেমস বন্ডের চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল M/২-এর ফটো। পররাষ্ট্র বিভাগে পৌঁছলে পিটারকে অবাঞ্ছিত ব্যক্তি ঘোষণা করতে আর কোন অসুবিধে হবেই না।

তারপরেই জেমস্ বন্ড ট্যাক্সি ড্রাইভারকে ধন্যবাদ জানিয়ে ট্যাক্সি হেডকোয়ার্টারে নিয়ে যেতে অনুরোধ জানায়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *