গোল্ড লাইন

গোল্ড লাইন

০১.

লন্ডন শহর গরমে ঝলসে উঠেছে; জুলাই শেষ থার্মোমিটারের পারা ক্রমশ ওপরের দিকে উঠে আশি ডিগ্রিতে এসেছে। ব্রিটেনে এটাই সবচেয়ে বেশি গরম, বিয়ার এবং ঘামের ভ্যাপসা গন্ধ ফারেনহাইটের দাগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। চলেছে।

পোরটেবোনো রোডের স্যাঁতসেঁতে দি গোল্ডেন ইউনিকর্ণ বার তখন বন্ধ হওয়ার মুখে। এই বারে এয়ার কন্ডিশন নেই, অত্যন্ত নোংরা। বিয়ার, টোব্যাকো, গায়ের ঘাম এবং সস্তা প্রসাধনীতে একটা জঘন্য অবস্থা। বারের মালিক সমাগত মাতালদের কানে তালা ধরিয়ে দিতে থাকে, মাল শেষ করুন চটপট, দরজা বন্ধ হওয়ার সময় হয়েছে।

বারের পিছন দিকে ছ জন মাতালকে দেখা গেল। ওরা কি যেন পরামর্শ করছে। ওদের মধ্যে পাঁচজনকে দেখলেই বোঝা যায় ওরা লন্ডন শহরের বেশ ডাকসাইটে মস্তান, তাদের মধ্যে একজন অন্য ধরনের। পোশাক বেশ কনজারভেটিভ, দ্রভাব। ভদ্রলোকের নাম থিওডোর ব্লেকার। বন্ধু-বান্ধবদের কাছে টেড বা টেডি। অবশ্যই থিওডোরের বন্ধুবান্ধব বেশি নেই। থিওডোর আগে ছিল কুইনা আলস্কার রাইফেনাস-এর ক্যাপ্টেন। রেজিমেন্টের তহবিল তছরূপের দায়ে তাকে চাকরিটা হারাতে হয়।

থিওডোর কথা শেষ করে পাঁচজন মস্তানকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখে বলল, বুঝতে পারছ তোমাদের কি করতে হবে? কিছু জিজ্ঞেস করার থাকলে এখুনি কর, পরে আমার পক্ষে জবাব দেওয়ার সময় হবে না।

একজন মস্তান বলল, আমার অনেক প্রশ্ন আছে, তার আগে একটা বোতল ওস্তাদ।

 থিওডোর অদূরে বারের মালিকের দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করল। বিরক্তভাব প্রকাশ করল না। কারণ আগামী কয়েক ঘণ্টার জন্য এই বেয়াদব লোকগুলিই তার দরকার–অন্ততঃ মান বাঁচাবার জন্য। থিওডোের সিগারেট ধরাল, আর কয়েক ঘণ্টার ব্যাপার, তারপর আর কে পায় তাকে? তার ব্যবসায় লেনদেন হলে তার পকেটে অনেক টাকা আসবে। তবে হ্যাঁ, তাকে অবশ্যই ইংল্যান্ড ছেড়ে চলে যেতে হবে। তাতে কি আছে, দক্ষিণ আমেরিকা দেশটি দেখার জন্য সবসময়ে তার মন চেয়ে এসেছে।

মস্তানদের ওস্তাদ আলফি ডুলিৰ্টল লোকটা দারুণ চতুর, ঠোঁট চলকে গড়িয়ে পড়া মদ হাত দিয়ে মুছল। থিওডোরকে নিরীক্ষণ করে তারপর জিজ্ঞেস করল, কোন খুন খারাপি হবে না তো টেড়? স্রেফ মাথায় রড, কিন্তু খুন নয়। এই তো? তাছাড়া পাঁচশ পাউন্ডের জন্য খুনই বা করতে যাব কেন, তাই না?

সোনার দামী কব্জি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বিরক্তভাবে বলল, আমি তো সব খুলেই বলেছি। একান্তই যদি ঝামেলা হয় তখন অন্য কথা। তোমাদের কাজ হবে আমাদের মক্কেলদের ওপর নজর রাখা। দেখবে কোন মক্কেল আমাকে না। কিছু করে বসে–বুঝলে আলফি, কেউ কেউ হয়ত দাম না দিয়েই আমার মাল উঠিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

থিওডোর তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে ভাবল, এরা তেমন বুদ্ধিমান নয় বলেই সংগঠিতভাবে এরা কোন অপরাধমূলক কাজ করতে পারবে না। থিওডোর বলল, তোমরা ঠিক আড়াইটার সময় আসবে। আমার মক্কেলরা আসবে ঠিক তিনটের সময়। ওখানে বীটে কনস্টেবল ডিউটিতে থাকবে, তাই তোমরা একসঙ্গে না এসে আলাদাভাবে আসবে। আলফি, তোমাকে ঠিকানাটা বলে দিই, কেমন? ১৪ নং হাফ ক্রিসেন্ট মিউজ- মুরগেট রোডের ঠিক উল্টোদিকে, পাঁচতলা, মনে থাকবে তো?

নিশ্চয়ই।

ঠিক আছে। আমি এখন চলি। ঐ সময় তোমাদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে–চীয়ার্স।

থিওডোর চলে যেতেই ছোট-খাটো, বেঁটে, নাক উঁচু ওস্তাদ তার সঙ্গীদের বলল, শোন একদম ভদ্রলোকের মত। কোন রঙ নেই মাইরি। একেই বলে গুরু!

বারের মালিক আবার ঘোষণা করল, সময় নেই এবার দয়া করে তোমরা তল্পিতল্পা গোটাও।

ট্যাক্সি থেকে নেমে থিওভোর মুরগেট গেটের ১৪নং বাড়ির দিকে হেঁটে যায়। পাঁচতলা ভিক্টোরিয়া যুগের বাড়ি। গলিতে ঢুকেই থিওডোর তার প্রাক্তন রেজিমেন্টের টাইটা খুলে ফেলল। রেজিমেন্টের তহবিল তছরূপের দায়ে তার চাকরি যায়নি। আসল কারণ, তার বাবা ছিল কসাই। এবং মা বিয়ের আগে এক ভদ্রমহিলার পরিচারিকা ছিল বলে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

পাঁচতলায় সরু সরু সিঁড়ি বেয়ে উঠতে থিওডোরের খুব কষ্ট হচ্ছিল নিঃশ্বাস নিতে। মাঝামাঝি এসে সে হাঁপাতে লাগল, তবু ভবিষ্যতের কথা ভেবে কষ্ট সহ্য করল। মনকে বোঝাল, আরে বাবা মালকড়ি পেলে শরীর সারাতে আর ক দিন লাগবে। সবে তো সে বেয়াল্লিশটা বসন্ত পেরিয়েছে, এখনো জীবনে কত বসন্ত আসবে। কিন্তু টাকা চাই, অনেক টাকা। তারপর দক্ষিণ আমেরিকায় গিয়ে তার টাকার গরমেই অর্ধেক স্বাস্থ্য ফিরে যাবে। টাকা থাকলে কি না হয়?

টেড ব্লেকার একেবারে টপ ফ্লোরে এসে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে পকেট হাতড়ে চাবি বার করল। কালো দরজা। ওপরে সোনালি আর লাল দাগে আঁকা একটি ড্রাগন। থিওডোরের গোপন আস্তানা–ড্রাগন ক্লাব। এই ক্লাবে যারা আসে সবাই আধুনিক যুবক, গো-গো গ্যাং অর্থ ও প্রতিপত্তি দুই-ই আছে তাদের।

কালো দরজা পথে ঘরে ঢুকে সে দরজা বন্ধ করে দিল। ঘরটা শীততাপ নিয়ন্ত্রিত-বিলাস বহুল। এইভাবে প্রাইভেট ক্লাবগুলোতে অনেক সমস্যা। টাকা হাতে এল সব ঠিক হয়ে যাবে। তার হাতে এখন পঞ্চাশ পাউন্ডও নেই। তাতে কি হয়েছে?

থিওডোর হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে উঠল। এবার তার হাতে আসবে দুশ পঞ্চাশ হাজার পাউন্ড। সাত লক্ষ ডলার। সে একটি ফিল্ম বিক্রি করে এই টাকা পাবে।

ঘরের এক কোণায় মিনি বারের দিকে এগিয়ে গিয়ে ওয়াই ক্যাবিনেট থেকে ব্লেকার হাল্কা স্কচ এবং সোডার বোতল বার করল। উত্তেজক মাদ্রদ্রব্যে তার রুচি নেই, কিন্তু অবাধে সে বিক্রি করে এসেছে ম্যারি জুয়ানা, কোকেন, গাঁজা, নানা ধরনের রগরগে পিল, এল, এস, ডি। হ্যাঁ, এল এস ডিতে পয়সা আছে, তাতে দামী দামী খদ্দেরদের আকর্ষণ করা যায়।

ঠোঁটের ওপর লেগে থাকা মদ মুছে ভাবল থিওডোর–তার এখন অনেক ঝামেলা। ঘোড়ার পিছনে এবং জুয়া খেলতে গিয়ে অনেক টাকা লোকসান করেছে সে। বাজারে তার পাঁচশ ডলার দেনা। তারা আবার যখন আসবে তখন আমি প্রচুর টাকা নিয়ে দক্ষিণ আমেরিকায়, সেখানে আমি নিরাপদ। নাম বদলে আমার জীবনধারা পাল্টে দেব, সহজ সরল জীবন যাপন করব।

ব্লেকার আবার ভেবে নিল, ওরা এলে কোথায় কোথায় ওদের দাঁড় করাবে। দু জন সামনে, দু জন পেছনে আর ওস্তাদ আনিফা থাকবে তার পাশে। কিন্তু তার অনুমতি ছাড়া কেউ ঘর ছেড়ে যেতে পারবে না।

ব্লেকার মদের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে ক্লাব ঘরের ভেতরে চোখ বুলাল। এই ঘরটা তার মানস কন্যা, তবু সে এখন একে ঘৃণা করছে, এই ঘরটা ছেড়ে পালাতে চাইছে। ঘরটা তৈরি করার সময় তার হাতে এক পয়সাও ছিল না কিন্তু। যেভাবে টাকা জোগাড় করেছে, জুয়েলারী লুঠ, ব্যাংক ডাকাতি, ইনস্টার রাইফেলের দু জন কর্মকর্তাকে ব্ল্যাকমেল করে মোটা টাকা আদায় করা, এসবের পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার কথা ভেবেই তার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া। এখানকার সব সম্পর্ক ছিন্ন করে, তার পালিয়ে যাওয়ার আরও একটা কারণ হল, গায়ে-গতরে যত শক্তিই থাকুক না কেন, মনের দিক থেকে ভীষণ দুর্বল সে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড এবং নারকোটিক ব্রাঞ্চের ভয়ে। সেই সঙ্গে ইন্টারপোলের ভয় তো আছেই। এই কারণে বেশি দামে ফিল্মটা বিক্রি করে এখানকার আস্তানা গোটাতে চাইছে। ইংল্যান্ড তাকে কিছুই দিতে পারল না। একটা অভিমান ব্লেকারের মনে দানা বাঁধতে শুরু করেছিল ইনস্টার রাইফেলস-এর চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার দিন থেকে। এবং কর্নেল এ্যালিস্টেয়ার পনসোবির উক্তিটাও মনে জ্বালা ধরিয়ে দিয়েছিল।

কর্নেল বলেছিল, ব্লেকার, তুমি এতই অবজ্ঞেয় যে, কিছুই ভাবতে না পারলেও করুণা বোধ করি। হ্যাঁ, এখানকার ভদ্রলোকদের মত তুমি না পারবে ঠিক মত চুরি করতে, না পারবে ঠকাতে।

সেই কথাটাই আজ ফিরে মনে পড়ল তার। যত ভাবে তার কথা ভাববে না, ভুলে যাবে তার কথা, কিন্তু তা হল কই! যাইহোক লোকটা এখন মৃত। তাহলে হবে কি? পৃথিবীটা অনেক বড়, অনেক চেনা-অচেনা মুখ আছে। তাদের মধ্যে যেমন একজন-কথাটা মনে হতেই প্রিন্সেসের কথা মনে পড়ে গেল ব্লেকারের।

প্রিন্সেস মরগান দ্য গামা।

থিওডোরের মুখে ক্রুর হাসি দেখা গেল। মুখের চোয়াল দুটি কঠিন হয়ে উঠল। একটা ভয়ঙ্কর অনুভূতি তার সারা দেহে ঝড় তুলল। প্রিন্সেস পুরো দাম দেবে। তাকে সে হাড়ে হাড়ে চিনেছে। ঐ ঠাণ্ডা এক জোড়া সবুজ চোখে যত শীতল ঘৃণাই জমা থাক না কেন, তা তার রাজকীয় কাম দংশনে চাপা রাখতে পারেনি কোনদিন। এল. এস. ডি. টানলেই প্রিন্সেসের মজা বাড়ে এবং মজার পর রগড় শুরু হয়।

হ্যাঁ, থিওডোর বলতে পারে, প্রিন্সেসের প্রতিটি শারীরিক বাঁক তার নখদর্পণে। মনে মনে এক হিংস্র আনন্দ অনুভব করল সে, প্রিন্সেস ঐ সোফায় উজ্জ্বল হয়ে কত কিই না করেছে তার সঙ্গে এল. এস. ডির নেশায় বুঁদ হয়ে। সেই সব দৃশ্যগুলি চিত্রায়িত হয়ে আছে। তার ইচ্ছে বিশ্বের প্রতিটি অগ্রণী সংবাদপত্রের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রিন্সেসের কামোত্তেজক নগ্ন দেহের ছবি ছাপা হোক।

এক চুমুকে অনেকটা মদ খেয়ে চোখ বুজল সে। ভাবছে প্রিন্সেসকে নিয়ে সামাজিক পৃষ্ঠায় তার অবৈধ জীবনের কেচ্ছা কাহিনী ছাপার অক্ষরে দেখতে পাচ্ছে। পুর্তগীজদের নীল রঙের বাহক সুন্দরী প্রিন্সেস মরগান দ্য গামা শহরের নাম করা ব্যাভিচারিণী, দেহ পসারিণী। অন্ডগেটে প্রিন্সেসের একটা রয়্যাল সুইট আছে। সাংবাদিকদের কাছে ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে প্রিন্সেস বলেছে, ড্রাগন ক্লাবে না গিয়ে কিছুতেই সে থাকতে পারে না। সেখানে সে পুরুষের সঙ্গে অবৈধ যৌন মিলনে লিপ্ত হয়, টাকার জন্য তো বটেই, তবে তার থেকেও বেশি প্রয়োজন তার যৌন ক্ষুধা। এক ঢিলে দুই পাখি সে বধ করে।

হঠাৎ ঘরের ভিতরে বিকট হাসি শুনতে পেল সে। একটু পরেই সম্বিত ফিরে পেল থিওডোর, সে হাসি তারই। কল্পনার জগৎ ছেড়ে ফিরে এল বাস্তবে।

থিওডোর প্রায় একশবার ফিল্মটা দেখেছে কিন্তু তা সত্ত্বেও মদের গ্লাস নিয়ে বড় সোফার উপর বসে অবচেতন মনে একসময় সুইচটিতে চাপ দিতেই একটা যান্ত্রিক আওয়াজ ভেসে এল। সঙ্গে সঙ্গে একেবারে শেষ প্রান্তের ছাদ থেকে একটি সাদা পর্দা নেমে এল। আর একটি সুইচ টিপতেই পেছনের দেওয়ালে লুকিয়ে রাখা প্রোজেক্টর থেকে তীব্র আলো বিচ্ছুরিত হল সেই সাদা পর্দায়। ঠোঁট থেকে মদ মুছে একটা সিগারেট ধরিয়ে পায়ের ওপর পা রেখে পর্দার ওপর দৃষ্টি ফেলল ভাল করে। এই ফিল্ম এই তার শেষ দেখা, কারণ এটা এক দামী খদ্দেরের হাতে চলে যাবে। ফিল্ম-এর নেগেটিভটাও সে বিক্রি করে দিতে চায়। কারণ সে খদ্দেরকে ঠকাতে চায় না। সে তার টাকার সদ্ব্যবহার করতে চায় পুরোপুরি।

ছবির পর্দায় প্রথমেই তার চেহারা প্রতিফলিত হতে দেখা গেল। গোপন ক্যামেরাটা সে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে পরীক্ষা করে দেখছিল–এ কাজে সফল হতে পারলে একদিন সে টাকার কুমীর হতে পারবে।

পর্দায় নিজের ছবি দেখতে দেখতে সে ভাবছিল কতই না ভয় হচ্ছিল। প্রিন্সেস যদি ক্যামেরার যান্ত্রিক আওয়াজ শুনতে পায় তাহলে রক্ষা নেই। পরক্ষণেই প্রিন্সেসকে তো সে জানে একবার এল, এস, ডি টানলেই তার কেবল শ্রবণশক্তি কেন, সব অনুভূতি, চেতনা সব কিছু লুপ্ত হয়ে যায়। তখন তার একটাই চিন্তা কি করে তার সঙ্গী পুরুষকে উপভোগ করা যায়। কোন্ কোন্ পোজে সে সেই পুরুষটি কর্তৃক ধর্ষিতা হবে।

ব্লেকার ঘড়ি দেখল, দুটো পনের। এখনও হাতে ঢের সময় আছে, ফিল্মের শেষটুকু দেখা যাবে।

পর্দায় তখন তার উত্তেজিত দেহটা থেকে থেকে কেঁপে উঠতে দেখা যাচ্ছিল। হঠাৎ সে দরজার দিকে তাকাতেই। দেখে প্রিন্সেস দ্য গামার অবয়বটা ভেসে উঠল। প্রিন্সেস ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে তার দিকে এদিকে তার দেহটা সোফায় টান টান হয়ে ওঠে। প্রোজেক্টর মেশিনটা অফ করে দিতেই পর্দাটা কালো হল। তারপর উঠে গিয়ে ক্যাবিনেট থেকে ড্রিঙ্ক বার করে ফিরে এল সোফায় এবং তারপর সুইচ টিপল প্রোজেক্টের মেশিনের। ব্লেকার জানে এর পরের দৃশ্যগুলি কি হবে। প্রিন্সেসের নগ্ন দেহের মধ্যে প্রবিষ্ট হয়ে গিয়েছিল সে প্রায় আধঘণ্টার ওপর। খুশির আমেজে প্রতিটি দৃশ্য খুঁটিয়ে ভাবতে থাকে ব্লেকার।

প্রিন্সেস আশা করেছিল আরও অনেকে উপস্থিত থাকবে সেখানে। প্রথমে তার কাছে একা থাকতে চায়নি সে। কিন্তু ব্লেকার জানে কি করে তার ইচ্ছেটা পূরণ হবে। ড্রাগন ক্লাবে ঢোকা মাত্র মদের গ্লাস তার ঠোঁটের সামনে তুলে ধরেছিল সে, তার সঙ্গে মেশানো ছিল এল. এস. ডি।

ব্লেকার জানত স্বাভাবিক অবস্থায় প্রিন্সেস তাকে ঘৃণা করত। কিন্তু একবার এল. এস. ডি. তার পেটে পড়লে সে আর প্রিন্সেস থাকত না, রাজকুমারী থেকে একেবারে বারবধূতে পরিণত হয়ে যেত। কিন্তু তার টাকা, অনেক অনেক। টাকা আছে। সে যদি একবার তার শয্যাসঙ্গিনীর যৌন মিলনের দৃশ্যগুলি চিত্রায়িত করে রাখতে পারে, পরে সেই ফিল্ম দেখিয়ে তাকে ব্ল্যাকমেল করতে পারবে; তাছাড়া পুর্তগালে নামীদামী লোকদের সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে। তার বাবা, লোকটা হাই ক্যাবিনেট পোস্টে কাজ করে। হ্যাঁ, প্রিন্সেসের পিছনে বিনিয়োগে লাভ আছে। তবে ভাল কি মন্দ, এ স্বপ্ন শুরুতে দেখনি, দেখেছি পরে, অনেক পরে।

প্রিন্সেসকে এল. এস. ডি গলাধঃকরণ করানোর পরেও সুইচ টেপেনি ক্যামেরার আরও আধঘণ্টা তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল। কারণ একটু একটু করে চেতনা হারাতে থিওডোর তাকে বড় সোফায় শুইয়ে দেয় যখন প্রিন্সেসের স্বাভাবিক সত্তা বলতে কিছু ছিল না, তখন থিওডোর ক্যামেরার সুইচ টেপে। নেশার ঘোরে প্রিন্সেস তাকে প্রিয় বন্ধু বলে গলা জড়িয়ে ধরে যে সব কথা বলেছিল রাজকুমারীর কণ্ঠে তা মানায় না। পুর্তগালের নীল রক্তে জন্ম প্রিন্সেস তখন বাজারের সস্তা কলগার্ল। পুর্তগালে ফিরে যাব? না, না প্রিয়তম। আমি তোমার কাছেই থাকব চিরদিনের জন্য এই তো তোমার কাছে কত সুখ। থিওডোরের গালে গাল ঘষতে ঘষতে সে বলে। পুর্তগালে ওরা ভাবে আমি পাগল, ওরা আমাকে তালা চাবি দিয়ে রাখবে। ওরা আমার খ্যাতি, প্রতিপত্তি সব জানে। তবু আমাকে সাধারণভাবে বাঁচতে দেবে না। আমার অভিভাবক কাকা, তার ধারণা–আমি মাদক দ্রব্য সেবন করি, যত্রতত্র ঘুরে বেড়াই, যে কোন পুরুষকে আমার শয্যাসঙ্গী করি। আমি তাদের সব অভিযোগ মানছি, কিন্তু ওরা যে আমাকে পাগল বলে এটাই মানতে পারি না। বিশ্বাস কর প্রিয়তম, আমি সুস্থ স্বাভাবিক পুরুষের সঙ্গে ছাড়া থাকতে পারি না। এইজন্যই আমি পুর্তগালে যেতে চাই না।

মাতাল হলে প্রিন্সেসের জ্ঞান থাকে না, সে তখন যে কোন পুরুষকে দেহ উপভোগ করতে দেয়; এই কারণেই থিওডোরের প্রথমেই ভাল লেগেছিল প্রিন্সেসকে। প্রথমে তার দেহ উপভোগ ভাল লাগলেও পরবর্তীকালে থিওডোর তার দেহ উপভোগের বদলে তাকে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে কাজে লাগিয়েছিল। তার বেশ মনে আছে অর্থের প্রয়োজনে সে একদিন গোপন ক্যামেরায় তাকে উপভোগ করার অছিলায় ব্লু-ফিল্ম তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল, সেদিন প্রিন্সেস একদম টের পায়নি। এখন টের পেলেও কিছু করার নেই। প্রিন্সেস এখন কোথায় কে জানে। সে শুধু জানে, একটু পরেই তার তিনজন দামী খদ্দের আসবে ফিল্মটি কেনার জন্য। চড়া দামে সেইটি বিক্রি করে সে পাড়ি দেবে দক্ষিণ আমেরিকায়। তখন আর তাকে পায় কে?

অসংলগ্ন সংলাপের পর প্রিন্সেসের তখন আচ্ছন্নভাব, কোন সাড়া শব্দ কিছুই নেই। প্রিন্সেস তখন নগ্ন পুতুলের মত। সে তার ইচ্ছেমত পা দুটো নাড়ছিল, ফাঁক করছিল, প্রিন্সেস তখন বাধাও দিল না। তার উদাস চাহনি, লাল ঠোঁটে হাসি। প্রিন্সেসের পরণে পাতলা স্বচ্ছ পোশাক, তবে একেবারে মিনি নয়। বাধ্য মেয়ের মত হাত দুটো তুলেনিলে থিওডোর তার পোশাক খুলে নিল। পরণে তার লাল ব্রা এবং কাল লেসের প্যান্ট-প্যাটার লাগান। সেদিনের সেই হট সীনগুলো দেখতে গিয়ে আজও ঘামতে শুরু করে ব্লেকার এই শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে। আসলে প্রিন্সেসের দেহটা এত সুন্দর যে ছবি না দেখে শুধু দেহের নগ্ন দেহের কথা মনে করলেই উত্তেজনা হয়। সত্যিই সে উপভোগ্য।

তার ব্রার হুক খুলে হাত গলিয়ে নামিয়ে দিয়েছিল ব্লেকার। প্রিন্সেসের স্তন দুটো অস্বাভাবিক বড় ও পুরুষ্ট। সে এক হাতে একটি স্তনের ওপর জোরে চাপ দিয়ে অন্য হাতে আরেকটি ক্যামেরার সুইচ টিপে দিল। শেষের ক্যামেরাটা সোফার খুব কাছে লুকানো ছিল। খুব কাছে থাকার দরুন তাদের ছবিগুলো খুব বড় লাগছিল। প্রিন্সেসের প্রতিটি লোমকূপ পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল।

থিওডোর তখন দারুণ উত্তেজিত, তাড়াতাড়ি নিজের পজিশন নিয়ে নেয় প্রয়োজনে প্রিন্সেসের দেহের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। নিজের সুবিধে মত সোফার উপর শুইয়ে দিল সে। কোন কথা না বলে প্রিন্সেস তার হুকুম মত চলতে থাকে। একসময় সে তার ব্রা এবং ট্রাউজারও খুলে ফেলে। প্রিন্সেস তখন সম্পূর্ণ নগ্ন।

অতঃপর থিওডোর নিজেই নিজের পোশাক খুলে ফেলল প্রিন্সেসের চোখের সামনে। ঘরের মধ্যে তীব্র আলো আসছিল, ক্যামেরার লেন্স তাদের দুটি নগ্ন দেহের দিকে ঘোরানো। পরবর্তী কুড়ি মিনিট দুটি নগ্ন দেহ মিলিয়ে দিয়ে একাকার হয়ে গেল। যৌন মিলনে উভয়ের দেহ থরথর করে কেঁপে উঠতে থাকে সোফার উপরে। মাঝে মাঝে যৌন কলা-কৌশলে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছিল থিওডোর। চরম সুখপ্রাপ্তির জন্য নারী-পুরুষ যা যা করে থাকে, তারা তাই করল।

এল, এস, ডি র নেশায় বুঁদ হলেও প্রিন্সেস কিন্তু তাকে কামে উত্তেজিত রমণীর মত সহযোগিতা করেছিল। এ কাজে থিওডোর তার ড্রাগন ক্লাবের বন্ধু সদস্য এমন কি ক্লাব বয়দেরও তার সামিল করে তোলে। প্রিন্সেস তাদের গ্রহণ করতে ইচ্ছা-অনিচ্ছা কিছুই প্রকাশ করল না। তার মুখের ভাব দেখে মনে হল, সে যেন ভয়ঙ্করভাবে ধর্ষিতা হতে চাইচে তখন। শেষ চার মিনিট সব থেকে বেশি উত্তেজনাপূর্ণ থিওডোরের কাছে। কামুক প্রিন্সেসের নগ্ন দেহের বার বার স্পর্শসুখ পেতে পেতে সে তখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারল না। তার দেহের যৌন নির্যাস ঝলকে ঝলকে নিঃসৃত হতে থাকল প্রিন্সেসের দেহের মধ্যে। আবেগে প্রিন্সেস তাকে জড়িয়ে ধরল। সোফাটা তখন ভেঙে পড়ার উপক্রম দু জনের দেহের উত্থান-পতনে।

এর পরেই পর্দাটা কালো ছায়ায় ঢেকে গেল। প্রজেক্টর বন্ধ করে সে তার মিনি বারের দিকে এগিয়ে গেল। তখন দু টো ঊনত্রিশ বাজে। আর ঠিক সময়ে আলফি লবিতে এসে ঢুকল। ব্লেকার তাকে আহ্বান জানাল মৃদু হেসে।

আর বাকি সব কোথায়? থিওডোর বলল।

জো এবং হেনরী এসে গেছে। তোমার কথা মত ওদের বাইরে পাহারা দিতে বলেছি। অপরজন এখুনি এসে পড়বে। খুশি হয়ে ব্লেকার জিজ্ঞেস করল, আজ রাতের জন্য তুমি কি সঙ্গে এনেছ দেখি?

চাক্কু, স্রেফ চাক্কু ওস্তাদ, কোমরে গোজা ধারাল ছুরিটা দেখিয়ে আলফি বলে, তবে বন্দুক নয়। আমার মত ওদের কাছেও কেবল চাকু আছে। তার বেশি কিছু নয়।

ব্লেকার সম্মতিসূচক মাথা নেড়ে বলল, খুব প্রয়োজন না হলে কাউকে একেবারে শেষ কর না, তাতে অনেক ঝামেলা আছে, বুঝলে? তোমার লোকদের আরেকবার বুঝিয়ে দিও, আমার অতিথিদের উপর যেন কড়া নজর রাখে, তাদের কাছে কোন অস্ত্র থাকলে সেগুলো যেন নিয়ে নেয় তোমার লোকেরা। অতিথিদের কোন সুযোগ আমি দিতে চাই না। এখন তুমি নিচে গিয়ে অপেক্ষা কর। আমার অতিথিদের আসতে দেখলে তুমি একা এখানে আসবে, কেমন?

আমার লোকেরা তাদের ডিউটি কি তারা সেটা ভাল করেই জানে, তার জন্য তোমাকে কিছু ভাবতে হবে না টেডি!

ঠিক আছে তুমি এখন এখান থেকে যেতে পার।

আলফি কিছুক্ষণ পরেই হন্তদন্ত হয়ে ফিরে এল। ব্লেকার তাকে একটা চেয়ারে বসতে বলল। বড় সোফাটায় অতিথিরা বসে ব্লু ফিল্ম দেখবে।

আলফি, ওরা এলে, ওদের আমি আজ একটা রগরগে ব্লু-ফিল্ম দেখাব। তুমিও দেখতে পার। তবে ওদের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখবে, একটু বেচাল দেখলেই তুমি প্রস্তুতি নেবে, বুঝলে?

তিনটে বাজার কয়েক মিনিট পরেই ব্লেকার ড্রাগন ক্লাবের দরজায় প্রথম টোকা পড়ল। দরজা খুলল থিওডোর।

প্রথম আগন্তুক এসেই ছোট্ট করে অভিবাদন জানাল, আপনিই কি থিওডোর ব্লেকার?

 হু! লোকটার মাথায় সাদা পানামা হ্যাট, দামী পোশাক, খর্বকায় চৈনিক। আর আপনার পরিচয়।

আগন্তুক তার ধূসর প্যান্টের পকেট থেকে একটা কার্ড বার করে দিলেন, ওয়ান হাই!

 ব্লেকার তাকে স্বাগত জানাল, আসুন মিস্টার হাই। ড্রিঙ্ক?

না, ধন্যবাদ।

 দরজায় আবার টোকা, এবারে দৈত্যাকৃতি জনৈক নিগ্রো। থিওভোর একবার তার দিকে তাকিয়ে পরক্ষণেই আলফির দিকে একবার তাকিয়ে মনে মনে বলল, হ্যাঁ আলফি, একে সামাল দিতে কেবল তুমিই পারবে। আপনার নাম? ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল ব্লেকার।

আমার নাম জেনে কোন লাভ নেই মিঃ ব্লেকার আমি প্রিন্স সোরাজ, আংকারির প্রতিনিধি।

ড্রিঙ্ক, স্মোক?

ধন্যবাদ কোনটাই লাগবে না।

দরজায় আবার টোকা, তৃতীয় আগন্তুক শ্বেতাঙ্গ তবে তার ইংরেজি উচ্চারণে ল্যাটিনী ঝোঁক। মাথায় ঝাঁকড়া চুল।

আপনিই তো মিঃ থিওডোর ব্লেকার, তাই না? আগন্তুক মৃদু হেসে বলল, আমি মেজর কার্লো ওলিভার, পুর্তগীজ ইনটেলিজেন্স। পুর্তগালের প্রিন্সেস দ্য গামার কথাটা হঠাৎ মনে পড়ল ব্লেকারের।

দরজাটা ভাল করে বন্ধ করে এসে পকেট থেকে তিনটি কার্ড বার করেন ব্লেকার, ব্লু-ফিল্ম দেখার পর এই পোষ্টকার্ডে সর্বনিম্ন দাম লেখা আছে আড়াই মিলিয়ন পাউন্ড। তবে যে বেশি দাম দেবে আমি তার হাতেই তুলে দেব। ফিল্মের পজেটিভ ও নেগেটিভ। এবার ভদ্রমহোদয়গণ, এই ছবিতে প্রিন্সেস মরগ্যান দ্য গামার সব থেকে চাঞ্চল্যকর যৌন জীবন দৃশ্য উপভোগ করুন। তারপর আপনাদের দেশে গিয়ে আপনাদের বড় কর্তার সঙ্গে আলোচনা করে আপনাদের সর্বোচ্চ দর আমাকে জানান। এই কার্ডে আপনাদের অর্ডার দেবার সময় ফোন নম্বর দিতে ভুলবেন না। পরে আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করব।

বড় সোফায় তিনজনকে বসিয়ে থিওডোরের নির্দেশে মাঝখানে বসল কর্নেল মেজর ওলিভার।

প্রজেক্টর মেশিন চালু হল। অলস বেড়ালের মত ঘুম ঘুম চোখ প্রিন্সেসের, ঠোঁটে রহস্যময় হাসি। ছবির প্রথম দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে, প্রিন্সেসের ফ্রকের বোতাম খুলছে ব্লেকার। পর্দার উপর প্রিন্সেসের সমৃদ্ধ স্তন, মাংসল উরু, ভারী নিতম্ব, নাভীর নিচে ঢল নেমেছে। লোমশ সেই অংশটা দেখা গেল…।

.

 ০২.

দ্য ডিপ্লোম্যাট লন্ডনের নামীদামী জুয়া খেলা, নাচগান, হৈ-হুল্লোড়ের ক্লাবগুলোর মধ্যে অন্যতম। থ্রী কিংস ইয়ার্ডের ঠিক বিপরীত দিকে, গভর্নর স্কোয়ার থেকে খুব বেশি দূরে নয়। সেদিন বেশি লোকজন ছিল না, কয়েকজন ভদ্রলোককে সেই ক্লাবে যাতায়াত করতে দেখা গেল। তখন রাত নটা। লন্ডনে গরমের সময় এই সব ক্লাবে জুয়ার আড্ডা বেশ জমে। কেউ জুয়া খেলতে আসে, কেউ রগড় দেখতে আসে।

কীন মাস্টার বন্ড কার্টার তাদের ব্যতিক্রম নয়। গরমের মধ্যেই সে পথে বেরিয়েছে। তার এখন একটাই চিন্তা, হাতে কোন কাজ নেই, হক ডেভিড হক তার বস, তার সঙ্গে দেখা হলেই সে নতুন কাজ চাইবে। পুরুষ মানুষ, খালি হাতে বসে থাকতে ভাল লাগে না তাই মাঝে মাঝে এই বারে এলে জ্যাক চৌহাল্ডারটার তাকে সঙ্গ দেয়। জ্যাকের কাছে শুনেছে, সে, তার বাবা নাকি একজন সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারি। এসব লোকের সঙ্গে আলাপ রাখা ভাল। তার যা পেশা, কখন কাকে কি কাজে লাগে কে জানে।

গরমে গলাটা শুকিয়ে গেছে, গলাটা একটু ভিজিয়ে নেওয়ার জন্যই এই ক্লাবে আসা।

একথা সত্যি যে, সবসময় যে কাজেই ব্যস্ত থাকে, তবু অন্য কাজের মধ্যেও তাকে প্রয়োজনীয় সেই সব কাজ সারতে হয়, যোগ-ব্যায়াম তার মধ্যে অন্যতম। লন্ডনে টম মিতুবাশির সঙ্গে সে কাজ করেছে। জুডো, ক্যারাটে এখন তার কাছে ভালই লাগে।

এই সবই প্রতিদিনের চর্চার উপর নির্ভর করে। কিন্তু তার এখন প্রয়োজন একটা সাড়া জাগানো কাজ। এখন হাতে অফুরন্ত সময়। বাড়িতে বৃদ্ধ পিতার দেখাশুনা করা ছাড়া আর কোন কাজ নেই, ওয়াশিংটনে রাত হতে তখনো দেরি ছিল। হকের মনে কি আছে কে জানে। সে উদ্দেশ্য ছাড়া কাজ করে না। এই যে এখন তাকে কাজের বাইরে রেখেছে। কি উদ্দেশ্যে সেই জানে।

অফুরন্ত অবসর হাতে নিয়ে তাই দ্য ডিপ্লোম্যাট ক্লাবে চলে এসেছিল বন্ড। ক্লাবে ঢুকেই সে দেখল হাল্কা ভীড় অথচ একটা সম্মিলিত কোলাহল ভেসে এল। বন্ড সিঁড়ির সামনে থমকে দাঁড়ায়। সিঁড়িটা নিচে আন্ডারগ্রাউন্ডে নেমে গেছে। সিঁড়ির ওপর লেখা ছিল ও প্রাইভেট, মেনস বার।

উচ্চ কোলাহল আবার কানে আসতেই দৃষ্টি সজাগ হল বন্ডের। পুরুষদের বার, অথচ সেখান থেকে নারীর হাস্য কলরব ভেসে আসছে, বুঝতে পারে না সে। বন্ড সিঁড়ির তিনটে ধাপ নেমে এল। হকের সঙ্গে দেখা করার প্রসঙ্গে তার হাসি পেল। কে জানে এই প্রাইভেট মেনস্ বারেই আজ রাতে সে তার কাজের খোরাক পেতে পারে।

সিঁড়িপথে ধীরে ধীরে নীচে নেমে এল সে। একটা আবছা অন্ধকারে ঢাকা ছিল বারটা। ব্যতিক্রম একটা বার– সেখানে আলোর রোশনাই, বার টেন্ডারদের আনাগোনা, ব্যস্ততা।

অসাধারণ সুন্দরী এক বিদেশিনী মাতাল হয়ে বারের মধ্যে নাচছিল অবিরত। কিন্তু ঠিক চিনতে পারল না বন্ড। হলঘরের এক কোণে একজন আমেরিকান বাজনা বাজিয়ে চলেছে একটানা। প্রায় আধ ডজন পঞ্চাশোর্ধ বয়সের প্রৌঢ়। লোক অর্ধনগ্ন মেয়েটির নাচ দেখে হাততালি দিয়ে উৎসাহিত করছিল, হাসিতে ফেটে পড়ছিল। বয়স্ক বারটেন্ডার চোখ দু টি আড়াআড়িভাবে বুকের ওপর রেখে অবাক হয়ে নাচ দেখছিল আর ভাবছিল এরকম দৃশ্য সে এখানে এর আগে ঘটতে দেখেনি।

কীন মাস্টার ও কম অবাক হয়নি। এই ক্লাবে এটা অস্বাভাবিক ঘটনা, পুরুষদের বারে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা নিশ্চয়ই ম্যানেজমেন্ট জানে না।

 অন্ধকারে চলতে গিয়ে বন্ড বারটেন্ডারের সঙ্গে ধাক্কা খেল। লোকটা নাচ দেখতে দেখতে যাচ্ছিল আর ভাবছিল একবার যদি আমার বাহুপাশে পেতাম। কিন্তু বন্ডের সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময় হতেই মুখের ভাব বদলে গেল। এটা একটা লজ্জার ব্যাপার তাই না স্যার? সত্যি মেয়েটির জন্য করুণা হয়। এর জন্য পুরুষরা দায়ী, তারাই আজ ওকে এই অবস্থায় এনে ফেলেছে। মোটেই না, মেয়েটিও বোয়া তুলসী পাতা নয়। পুরুষদের সঙ্গে এমন ন্যাক্কারভাবে ঢলাঢলি করার ইচ্ছে না থাকলে কেউ জোর করে পারে না। বিশ্বাস করুন স্যার, মেয়েটি রীতিমত ভয়ঙ্কর। মেয়েটিকে আমি প্রথম দেখছি না। ও

একদল লোকের চিৎকারে তার কণ্ঠস্বর চাপা পড়ে গেল। একজন বলে উঠল, রাজকুমারী তোমার জামাটা খুলে ফেল, আমরা তোমার নগ্ন দেহ দেখতে চাই।

বন্ড দৃশ্যটা উপভোগ করে। সেও কম উত্তেজিত হয়নি। মেয়েটি সত্যিই লোভনীয়, তার দেহের সৌন্দর্য উপভোগ করার মতন।

কে এই মেয়েটি? বৃদ্ধা বারটেন্ডারকে বন্ড বলল। মেয়েটির উপর দৃষ্টি রেখেই সে উত্তর দিল। প্রিন্সেস দ্য গামা স্যার। পুর্তগীজের রাজ পরিবারের নীল রক্ত ওর দেহে–উঁচু মহলে ওর খুব নাম–সবাই ওর দেহ উপভোগ করতে চায়। এখন সে সম্পূর্ণ মাতাল। বেচারী মাতাল হলে ওর কোন জ্ঞান থাকে না, হায়, সৃষ্টিকর্তা! ঐ দেখুন স্যার, সব খুলে ফেলার চেষ্টা করছে।

জনতাও তাকে উৎসাহ দিয়ে চিৎকার করতে থাকে, সব খুলে ফেল, সব খুলে ফেল —

পেটমোটা এক মাঝবয়সী লোক তার মনের ভাব এরকম যেন ওকে পেলে সে ছিঁড়ে খাবে। মেয়েটি কিন্তু তাকে পাত্তা দিল না। মাতাল হলেও সে এক ধাক্কায় দূরে ঠেলে ফেলে দিয়ে বলল, বুড়ো ভাম, তুই কি আমার গরম ঠাণ্ডা করতে পারবি? মেয়েটি প্রায় তার সব পোশাক খুলে ফেলেছিল।

সেই দৃশ্যটা দেখে বন্ডের মনে হল সে যেন ইটালিয়ান ফিল্ম দেখছে। প্রিন্সেস সেই মুহূর্তে আদিম এক নৃত্যের তালে তালে পোশাক খুলে যাচ্ছে এক এক করে।

বন্ড খালি গ্লাস হাতে বার-এর দিকে চেয়ে। বারটেন্ডারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য মেয়েটি হঠাৎ ছুটে তার কাছে এসে স্কার্টটা খুলে ফেলল। এখন পরণে শুধু ব্রা আর প্যান্টি। এই অবস্থায় মেয়েটি বন্ডকে জড়িয়ে ধরল। তার শরীর থেকে দামী প্রসাধনীর গন্ধে ম ম করছে।

জনতা তাদের দুজনকে একসঙ্গে দেখে উল্লাসে চিৎকার করে বলে, চালিয়ে যাও –বন্ডের শরীর উত্তেজিত, এক রোমাঞ্চকর অনুভূতির মধ্যে একটু একটু করে ডুবে যেতে থাকে সে।

চোখ বন্ধ করে মেয়েটি নাচছিল মাথা দুলিয়ে, কোমর দুলিয়ে, কখনও একটি পা পিছনদিকে ছড়িয়ে নিতম্ব প্রদর্শনের ভঙ্গিমায়। বয়স্ক পুরুষেরা চিৎকার করে ওঠে, আর একবার, আর একবার, আর একবার পিছন ফিরে আমাদের দিকে দাঁড়াও প্রিন্সেস। প্যান্টিটা খুলে ফেল। আপন খেয়ালে সে নেচে চলে, নাচের উত্তেজনায় বাঁদিকে ব্রা থেকে মুক্ত হয়ে পড়ে তার বা স্তনটা। খয়েরি বোঁটা, আঙুরের মত সাইজ।

এক সময়ে মেয়েটি বন্ডের সামনাসামনি এসে নাচ বন্ধ করে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল। উত্তেজিত জনতা চিৎকার করে উঠল, বাঘটার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়– ওরা বাঘ আর বাঘিনীর মিলনের দৃশ্য দেখতে চায়। খুলে ফেল, সব খুলে ফেল।

মেয়েটির সঙ্গে বন্ডের চোখাচোখি হতেই মেয়েটি হেসে ফেলল, তার চোখে কামনা থিকথিক করছিল।

তুমি কত সুন্দর! আমার রাজপুত্তুর। তোমাকে আমার ভীষণ ভাল লাগছে। তোমাকে কি বিশ্বাস করা যায়। বন্ড বিপন্ন বিস্ময়ে তাকাল মেয়েটির দিকে। মেয়েটি গাঢ় স্বরে বলল, দয়া করে আমাকে বাড়িতে নিয়ে চল।

 প্রিন্সেস তখন বন্ডের গলা জড়িয়ে ধরেছে। তার বুকের উত্তাপ, উষ্ণ নিঃশ্বাস বন্ডের বুকে লাগছে।

ওদিকে সেই মোটা লোকটা তখন বন্ডকে বলল, ও মশাই শুনছেন, মেয়েটিকে আমি নিতে চাই। ও আমাদের বুঝলেন? তোমার নয়! আমরা ওকে চাই। তুমি ওকে আমার হাতে তুলে দাও!

তখুনি বন্ড সিদ্ধান্ত নিয়ে বলে, মনে হয় আপনার অনুরোধ রাখতে পারব না। মেয়েটি তাকে ঘরে পৌঁছে দিতে বলল, শুনতে পাননি?

মেয়েটিকে ঘিরে তাদের পরিকল্পনার কথা বন্ড এবার বুঝতে পারে। নিউইয়র্ক বা লন্ডনের দলবাজির খবর সে জানে। পুরুষগুলো সব জানোয়ারেরই নামান্তর। বারের প্রতিটি লোক তার দিকে লাল চোখে তাকিয়েছিল। বারের বৃদ্ধ মালিক ভয়ে একবার বারের লোকগুলোর দিকে একবার বন্ডের দিকে তাকিয়ে ভাবছে–এই বুঝি বড় রকমের সংঘর্ষ বেধে গেল।

সেই বুড়ো ভাম গর্জে উঠল; শ্লা–আমরা কতদিন ওর জন্য রাতের পর রাত মদ কিনেছি, ওর পিছনে ঘুরেছি, আমার কোন অধিকারই নেই ওর ওপর? আর একদিনের ছোকরা এসেই ওকে জয় করে নেবে? ইয়ার্কি পেয়েছ?

বন্ড খুব সতর্ক ছিল, সে কেবল তার দু-তিনটি আঙুল দিয়ে একটু ধাক্কা দিল, লোকটা পেটে হাত দিয়ে বসে পড়ল হঠাৎ। অন্য সবাই হায় হায় করে ছুটে এল। বন্ড কঠোর দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে বলল, ঐ লোকটির মত আপনারা যদি পড়তে না চান তো ভালয় ভালয় কেটে পড় ন।

ওদিকে মেয়েটির দেহ তার বাঁ-হাতের মধ্যে আবদ্ধ। বন্ড তাকে নিয়ে চলল অন্ধকারে ক্লোকরুমে। বন্ড বৃদ্ধ। বারটেন্ডারকে নির্দেশ দেয়, আলোটা জ্বেলে দাও।

হলুদ আলোয় বেহুশ মেয়েটার দেহটা চোখের সামনে ভেসে উঠল। বন্ড বার বার টেন্ডারকে বলল, এক মিনিট। এস, এবার ওর গায়ে পোশাক চাপিয়ে দিই।

লোকটাকে নড়তে না দেখে বন্ড বলল, কি ব্যাপার বুড়ো ভাম? আগে কখনো অর্ধনগ্ন নারীর দেহ তুমি দেখনি?

লোকটা দাঁত বার করে হাসে, না স্যার, চল্লিশ বছর হল স্ত্রী মারা গেছে। তাই…যাই হোক, এবার আমি আপনাকে সাহায্য করব।

হ্যাঁ, তই কর। একটু তাড়াতাড়ি–দেহে পোশাক চাপাতে গিয়ে বন্ড বলল, মেয়েটির হাতে কোন বটুয়া বা লেডিজ পার্স দেখনি?

হ্যাঁ, দেখেছিলাম তো।

 খুঁজে দেখ, তাতে এর বাড়ির ঠিকানাটা পেতে পারি–আর তুমি যদি…জান নাকি?

না স্যার। তবে কাগজে পড়েছিলাম, অলিডগেট হোটেলে থাকে সে। চেনেন সেই হোটেল টা?

হ্যাঁ, বন্ড বলল, তবু তুমি এর পার্স খুঁজে বার কর তারপরের ভাবনা আমার।

 মেয়েটির চোখ বোজা, বন্ডের বাহুপাশের মধ্যে, ওর দেহে দামী প্রসাধনী বন্ডকে আসক্ত করে। লাল পাতলা ঠোঁট, সমৃদ্ধ স্তন মেয়েটি অসম্ভব লোভনীয় সুন্দরী। না আজ রাতে সে তাকে গ্রহণ করবে না।

বুড়ো বারটেন্ডার একটা সাদা রঙের পার্স নিয়ে আসে। বন্ড একহাতে পার্সটা পকেটে রেখে তার পার্স থেকে একগাদা পাউন্ডের বিল বুড়োকে দিয়ে বলে দ্যাখ, একটা ট্যাক্সি পাও কিনা।

লোকটা চলে যাওয়ার পর দু হাতের চেষ্টায় মেয়েটির চিবুক তুলল। মেয়েটি একটু চোখ মেলে তাকাতেই বন্ড বলল, হাঁটতে পারবে?

মেয়েটি অসম্মতি জানিয়ে তার গলা জড়িয়ে ধরল। পারবে না? তাহলে তোমাকে কোলে নিয়ে যেতে হবে। ঠিক আছে– সেই রকম জড়ানো অবস্থাই সে ক্লোকরুম থেকে বেরিয়ে এল।

বাইরে আসতেই বার-এর ম্যানেজারের সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময়, তার পরেই তার দৃষ্টি মেয়েটির স্কার্টের উপর।

স্যার, ঐ দেখুন। দেখলাম কোলে করে নিয়ে যাওয়ার ঝাঁকুনিতে স্কার্টটা নাভীর ওপরে উঠে গেছে–এর ফলে টাইট উরু এবং প্যান্টিটা একেবারে স্পষ্ট। স্যার। বন্ড স্কার্টটিকে নিচে নামিয়ে ঠিক করে দিয়ে বলল, তুমি কি কিছু চাও?

বন্ড বলে, প্রিন্সেসকে আমি সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছি।

 খুব ভাল কথা লোকটি বলল, যত তাড়াতাড়ি পার এখান থেকে নিয়ে যাও। লন্ডনের যে কোন ক্লাবের কাছেই মেয়েটি একটি অভিশপ্ত।

হ্যাঁ, যাব, নিশ্চয়ই যাব! বন্ড আক্ষেপ করে বলে, বেচারা, ঠিক সময়ে আমি না এলে এতক্ষণে ওর সতীত্বের কিছুই থাকত না। জানেন, একটু আগে পেট ফোলা মোটা লোকটি ওকে প্রায় ধর্ষণ করতে যাচ্ছিল। আমি বাধা দিয়ে বাঁচাই মেয়েটিকে।

আমার বারে ধর্ষণ। তাও কেবল পুরুষদের নির্দিষ্ট বারে। আপনি কি স্বপ্ন দেখছিলেন তখন, নাকি একটু বেশি ড্রিঙ্ক করেছিলেন?

না, কোনটাই নয়। বন্ড ম্লান হেসে বলল, খাঁটি সত্য ঘটনা। তাছাড়া বেশি মদ খেলেও আমি কখনো মাতাল হই না।

স্যরি।

কে এই লোকটিং বন্ড জানতে চাইল–ঐ পেট মোটা লোকটা? ম্যানেজার প্রত্যুত্তরে বলল, স্যার চার্লস ফদারিংগে। এই ক্লাবের একজন নিয়ন্ত্রণ কর্তা উনি।

বন্ড বলে, উনি যেই হোন না কেন, আপনি ওকে ব্ল্যাকমেল করতে পারেন। ও. কে, গুডবাই

বাই

বন্ড কার্টার ট্যাক্সিতে উঠে চালককে নির্দেশ দিলেন, কিনিংটন। অলিড়গেট হোটেলে বন্ড ওকে নিতে চায় না। প্রিন্সেস গামার একটি বিশেষ পরিচিতি আছে, রিপোর্টার দেখতে পেলে নানা প্রশ্ন। পরদিন খবরের কাগজে বড় বড় হেড লাইন হয়ে যাবে সে। এদিকে দেহের তাগিদও তাকে তাড়া দিচ্ছে। অনেক মেয়েকে দেখেছে সে কিন্তু এমন সুন্দরী এর আগে চোখে পড়েনি। বিছানায় মেয়েটি তৃপ্তি অনুভব না করলেও তার দেহ তো শীতল হবে। আজ সে প্রিন্সেসের দেহের প্রতিটি ইঞ্চি জরিপ করে দেখতে চায়।

এইসব কথা যখন সে হঠাৎ ভাবছিল ট্যাক্সিটা জোরে ঝাঁকুনি দিতেই মেয়েটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বন্ড তাকে আবার জড়িয়ে ধরে আবেগে। বন্ড তার তপ্ত ঠোঁটের ওপর ঠোঁট দুটি ঘষতে থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে ঠোঁট ঘষার পর নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নিতেই প্রিন্সেস আবেগ কম্পিত গলায় বলে, প্লিজ, আর একবার, আর একবার–

মেয়েটির ঠোঁটে গভীরভাবে চুম্বন এঁকে দিতে দিতে তার বুকে পিঠে হাত বোলাতে থাকে বন্ড। এবার বন্ডের মনে। পড়ে বন্ধুদের মুখে প্রিন্সেস দ্য গামার নাম শুনেছে অনেকবার, রয়্যাল পুর্তগীজ রক্ত, ভাস্কো দ্য গামার বংশের মেয়ে–

ইতিমধ্যে ট্যাক্সিটা তার ফ্ল্যাটের সামনে এসে গেছে। ড্রাইভার ভদ্রতা করে বলে, স্যার আমি কি আপনাকে সাহায্য করব।

না, ধন্যবাদ। ট্যাক্সি থেকে নেমে দেখল প্রিন্সেস হাঁটতে পারছে না। বন্ড তখন তাকে কাঁধে তুলে নিয়ে ফ্ল্যাটের দিকে গেল। দুদিনে প্রিন্সেসকে সুস্থ করে তুলে তারপর কবে জানাবে, ভাবল বন্ড।

চৌদ্দ নম্বর হাফ ক্রিসেন্ট মিউজ-এ ড্রাগন ক্লাবে মিনিট দশেক স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল বন্ড। প্রিন্সেসের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার দরুন তাকে এখানে আসতে হয়েছে।

চারটে বেজে পাঁচ মিনিট তখন। ড্রাগন ক্লাবে ঢোকার আগে সে ছিল প্লে-বয়, এখন ড্রাগন ক্লাবে ঢুকেই সে একজন কীলমাস্টার, পেশাদার টাইগার।

ড্রাগন ক্লাবে ঢুকে হঠাৎ যেন তাজা রক্তের গন্ধ পেল। থিওডোর ব্লেকারের জিনিসপত্র, সোফা-ডিভানের গদিগুলো টুকরো টুকরো করে কাটা। একটি সোফার ওপর ব্লেকারের মৃতদেহ। মনে হল, প্রথমে তাকে খুন করে, তারপর তার দেহ থেকে মুণ্ডটা ধারাল ছুরির আঘাতে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। পরিষ্কার, পেশাদার হাতে গলাটা কাটা।

একপাশে গাদা করা মৃত রেকারের পোশাক। বন্ড নিচু হয়ে ব্লেকারের ট্রাউজারে পকেট থেকে তোয়ালেটা টেনে বার করল, অবশ্য রুমালে হাত চাপা দিয়ে। ওয়ালেটের ভেতর একটা সাদা কার্ড তুলে নিয়ে ভাল করে দেখল বন্ড, কার্ডের এক কোণায় লেখা রয়েছে ক্যাপ্টেন থিওডোর ব্লেকার। হিজ হাইনেশ ইনস্টার রাইফেলস। হঠাৎ দেখল একটা কার্ডে প্রিন্সেস দ্য গামা লেখা। পেছনে লেখা রয়েছে–ওকে খুন কর। ওকে খুন কর। ওকে খুন কর!

বন্ড গম্ভীর হল। হাতের লেখাটা যদি প্রিন্সেসের হয় তাহলে এই খুনের পেছনে এর হাত আছে। বন্ড পকেটে হাত রাখল। পিস্তলটা প্রিন্সেসের পয়েন্ট বাইশ ক্যালিবারের ঠিক জায়গাতেই আছে। সাইলেন্সর লাগানো আছে, গুলি ছুঁড়লে শব্দ হবে না। প্রয়োজনে ব্যবহার করতে হবে।

কিন্তু ব্রেকারের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রিন্সেস জড়িত, বিশ্বাস হল না বন্ডের। তার সন্দেহ, প্রিন্সেসের নামটা ইচ্ছে করে জড়িয়েছে যাতে পুলিশকে ভুল পথে নেওয়া যায়। ব্রেকারকে সে প্রথম ও শেষ দেখেছিল র-ফিল্ম বিক্রেতা হিসেবে। কোন নগ্ন ছবি বিক্রি করতে গিয়ে চড়া দাম নিয়ে ঝামেলা হয়েছে, তাই সে খুন হয়েছে। বন্ড ঘরের ভেতরটা তন্ন তন্ন। করে খুঁজে দেখল। প্রজেক্টর মেশিন ভাঙা, গোপন ক্যামেরায় কোন ফিল্ম নেই। বন্ডের অনুমান সত্য হতে চলেছে। দুটো কার্ডই পকেটে চালান করে ভাবল এর মধ্যে প্রিন্সেস দ্য গামার কার্ডে অনেক সত্য লুকিয়ে আছে হয়ত। প্রিন্সেস এখন তার বিছানায় শুয়ে আছে নিশ্চিন্তে। বন্ডের কাছে এখন প্রিন্সেসকে অনেক প্রশ্নের সামনে মুখোমুখি হতে হবে।

কীল মাস্টার দরজার দিকে এগিয়ে যায়। অনেকক্ষণ হল সে এখানে এসেছে, কেউ দেখার আগেই পালাতে হবে। তার বিশ্বাস প্রিন্সেস এই ব্যাপারে জড়িত নেই। বন্ডের মনে হল অত্যন্ত জটিল কেস, হক যদি এই কেস হাতে নেয়। তাহলে তাকে বেশ ঝামেলায় পড়তে হবে।

বন্ড দেখল, ড্রাগনের দরজা ভেজানো। সে বাইরে এসে ভাবল থ্রেনীডস স্ট্রীটে যেতে পারলে সেখান থেকে একটা ট্যাক্সি পেয়ে যেতে পারে। কিন্তু এ পথে যাওয়া মানে একেবারে বিপরীত পথে যাওয়া।

কিন্তু ড্রাগন ক্লাবের প্রবেশ পথের বড় কাঁচের দরজার সামনে এসে দেখে ভোর হয়ে আসছে। রাস্তায় একটি কালো রঙের গাড়ি দাঁড়ান। গাড়ির আরোহী দু জনের চেহারা বড় মাপের, বেঁটে লোকটা চালক আসনে। তাদের গায়ের রঙ ও চেহারা দেখে বন্ডের মনে হল, ওরা নিগ্রো হলেও হতে পারে।

বন্ড চালে ভুল করল। কাঁচের দরজা পেরিয়েই ছুটতে শুরু করল। গাড়ির চালকের আসনে উপবিষ্ট লোকটি দীর্ঘাকৃতি লোক দুটিকে কি নির্দেশ দিল এবং সঙ্গে সঙ্গে তারা বন্ডকে অনুসরণ করার জন্য ১৪নং হাফ ক্রিসেন্ট মিউজ এর দিকে এগিয়ে আসতে থাকল।

লবি পেরিয়ে ছোট্ট একটা প্যাসেজে পা দিল বন্ড, উদ্দেশ্য পেছনের দরজা দিয়ে পালানোর রাস্তা খোঁজা, পয়েন্ট টুয়েনটি-টু ক্যালিবার পিস্তলটা বন্ডের হাতে উদ্যত। পিছনের দরজায় তালা ছিল। বন্ড পকেট থেকে চাবির গোছা বার করে তালা খুলল। বাইরে এসে আবার তালা লাগিয়ে দিল।

বিরাট পাঁচিল সামনে, পাঁচিলের ওপর কাঁচ লাগানো। বন্ড পরণের জ্যাকেটটা খুলে ভাঙ্গা কাঁচের টুকরো ঢাকবার জন্য পাঁচিলের ওপর ছুঁড়তে যাবে ঠিক নিচে জঙ্গলপের উপর দুটি গলা কাটা মৃতদেহ পড়ে আছে।

বন্ড দেরী না করে জোরে ভল্ট দিয়ে দেহটা শূন্যে নিক্ষেপ করে পাচিলের এপাশে এসে পৌঁছল। ছোট্ট একটা গলির মত রাস্তা মুরগেট রোডের সমান্তরাল। বন্ড বাঁদিকে যাবে ঠিক করল।

রাস্তায় দাঁড়াতেই বন্ড চমকে উঠল। দেখে পাচিলের ওপরে একটা দৈত্যাকারের লোক তার দিকে হাত বাড়াচ্ছে। সাক্ষাৎ যেন যমদূত, তার ঠোঁটে ব্যাঙ্গের হাসি। সে পাঁচিল টপকে বন্ডের পেছনে ছুটতে লাগল।

নানান রাস্তা ঘুরে ফিনসবারি সারকাসে ঢুকতেই দেখে সেই কালো সেজন গাড়িটা। এখানে পালাবার পথ নেই, সারি সারি বাড়ি আর দোকান। দোকানগুলি সব বন্ধ। বন্ড হাঁটতে শুরু করল পকেটে হাত ঢুকিয়ে। প্রয়োজনে পিস্তলটা বার করবে।

গাড়ির পেছনের তিনজন আরোহীর মধ্যে একজন বলল, থাম, আমাদের গাড়িতে উঠে এস মিস্টার। তোমার সঙ্গে অনেক কথা আছে।

বন্ড কোন কথা না বলে হাঁটতে থাকে। তারা বারবার বাধা দিলে বন্ড বিরক্ত হয়ে বলে, জাহান্নামে যাও তোমরা তোমাদের সঙ্গে আমার কোন কথা নেই। বন্ডের উপকার হল, তাদের কথায় বুঝতে পারল তারা আফ্রিকার লোক।

তারা তাকে ১৪নং হাফ ক্রিসেন্ট মিউজের সামনে দেখেছে তাই বন্ড ভাবছে, ক্লাব থেকে কি খোলা গেছে তারা জানতে চায়, তারা রেকারের খুনের কারণ জানতে চায়।

ডানদিকে মোড় নিল বন্ড। সেই সঙ্গে সেই কালো গাড়িটাও। লোকটা তিনবার কঠোর ভাষায় বলল, এবার তুমি যদি গাড়ির ভেতরে উঠে না আস আমরা তাহলে তোমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে বাধ্য হব। আমরা কেবল তোমার সঙ্গে দুমিনিট কথা বলতে চাই।

বন্ড ঠিক তেমনি হাঁটতে থাকে। জাহান্নামে যাও। আমাকে একটু একা থাকতে দাও।

বিরাট চেহারার নিগ্রো দুজন গাড়ি থেকে নেমে এবার বন্ডকে অনুসরণ করতে লাগল আর বেঁটে নিগ্রোটা খোলা দরজায় মুখ বাড়িয়ে। তার হাতে সেই অটোমেটিক রিভলবার।

বন্ড বুঝতে পারল, এবার সংঘর্ষ আসন্ন, সে ভাবছে প্রয়োজনে ওদের খুন করবে কি না? সাড়ে ছ ফুট লম্বা গেরিলার মত দেখতে লোকটা খুব কাছাকাছি হাঁটছিল, লোকটা খালি হাতে লড়াই করলেই সে খতম হবে।

আগুয়ান নিগ্রোটা দুহাত বাড়িয়ে সাক্ষাৎ মৃত্যুর মত ছুটে এল। তার ঠোঁটে ভয়ঙ্কর ব্যঙ্গের হাসি। বন্ডও প্রস্তুত হয়ে দাঁড়াল, তারপর আচম্বিতে লাফ দিয়ে নিগ্রো গেরিলার গলা টিপে ধরার চেষ্টা করতেই প্রচণ্ড এক ঘুষি এসে পড়ল বন্ডের মুখে। তারপর আর একটা

নিগ্রোটা বন্ডকে শূন্যে উত্তোলন করল, যেন কোন শিশুকে নিয়ে খেলা করছে। বন্ড বুঝতে পারল যে সে তাকে খতম করতে চায় না, তার দলের কাছে নিয়ে গিয়ে কোন জরুরী খবর শুনতে চায়। কিন্তু বন্ড তাদের পাত্তা দেয় না।

বন্ডের মনে পড়ল, প্রিন্সেস দ্য গামার সাইলেন্সার দেওয়া ছোট্ট পিস্তলটা আছে সে সেটা বার করল এবং নিগ্রোর কাঁধে গুলি ছুড়ল। কোন শব্দ নেই তাই প্রথমে রক্ত দেখে নিগ্রোটা আঁতকে উঠল। কিন্তু পরক্ষণেই বন্ডের হাতে পিস্তলটা দেখে বলল। ও! এ তোমার কাজ তাহলে? কিন্তু তোমাকে আমি এক্ষুণি শেষ করতে পারব না, তোমাকে আমাদের খুব প্রয়োজন। তুমি একটু শান্ত হয়ে আমার কথাটা বোঝার চেষ্টা কর

ছোটখাটো বেঁটে নিগ্রো লোকটা ওর সঙ্গীতে সাহায্য করতে এগিয়ে এসে বন্ডকে বলল, এখন তুমি এখানে থেকে পালিয়ে যাও মিস্টার। আবার দেখা হবে, হাঃ হাঃ। আশা করি বোকামি করে এ খবরটা পুলিশকে জানাবে না।

দৈত্যের মত চেহারার লোকটা তাঁর ক্ষতস্থান দেখছিল, বেঁটে লোকটা এক ধমক দিয়ে তাকে গাড়িতে নিয়ে গিয়ে এগিয়ে চলল। বন্ড লক্ষ্য করে দেখল এদের গাড়ির নাম্বার প্লেটে কাদা মাখানো ইচ্ছাকৃত যাতে গাড়ির নাম্বার কেউ নিতে না পারে।

বন্ড গভীর বিস্ময়ে ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত পায়ে হেঁটে সে টিউব ট্রেনের সামনে গিয়ে কিনিংটন পোরে যাবার ট্রেনে। উঠে বসল। এবার তার প্রিন্সেসের কথা মনে পড়ল। সে হয়ত এতক্ষণে জেগে অবাক হচ্ছেন আবার ভয়ও পাচ্ছে। বন্ড মনে মনে খুশি হয়ে ভাবল, যত ঝামেলা বাধল প্রিন্সেসকে নিয়ে।

একটি লোক ট্রেনের কামরায় প্রভাতী কাগজ পড়তে পড়তে তাকাল বন্ডের দিকে। চোখ দুটো লালচে। হঠাৎ ব্রেকারের কথা মনে পড়ল। হয়ত লোকটা নিজের প্রাণ বাঁচানোর জন্য খুন করেছিল। হক-এর নির্দেশ আছে, নিজের প্রাণ বাঁচাতে যে কোন শত্রুকে তুমি খুন করতে পার। কিল মাস্টার বন্ডের যে পেশী তাতে দু-একটা খুন হতেই পারে, সে কথা ভেবে লাভ নেই।

কোমরে গোঁজা চামড়ার খাপ থেকে ষ্টীল টোটা বার করে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করল বন্ড। শয়নকক্ষের দেওয়ালে টাঙানো মোষের মাথায় একটা ষ্টীল টোটা নিক্ষেপ করলে সেটা বিধল মোষের ডান চোখে। এবার সে উৎসাহ পেল যে সে এখনো পুরোপুরি ফিট। বন্ড এবার বসার ঘরে এসে অনিগেট হোটেলে ফোন করে।

একটু বাদেই এক যুবতীর কণ্ঠস্বর ভেসে আসে ফোনে, অনিগেট হোটেল, সুপ্রভাত।

দয়া করে প্রিন্সেস দ্য গামাকে লাইনটা দিন, বন্ড ভাবল এখানেই আছে কিন্তু পুরুষ কণ্ঠস্বর। ফোরটিন হাফ ক্রিসেন্ট মিউজ!

তবু সহজ ভঙ্গিমায় বন্ড বলল, আমি প্রিন্সেসের সঙ্গে কথা বলতে চাই। কিছুক্ষণ নীরবতার পর, হবে না, এই মুহূর্তে প্রিন্সেস এখানে নেই, আপনি কে কথা বলছেন? লোকটি ইংরেজিতে বললেও সামান্য ইতালীয় টান আছে। ওরাও মনে হল প্রিন্সেসকে খুঁজছে।

লোকটা খুব চিন্তিতভাবে বলল, হ্যালো, হ্যালো, আপনি কি এখনো লাইনে আছেন?

ঝাকড়া চুল লোকটিকে বন্ড পাত্তা দিল না। তার মাথায় তখন অনেক চিন্তা। ফিরে গিয়ে প্রিন্সেসের সঙ্গে দেখা। হতেই তার প্রথম প্রশ্ন; এ আমি কোথায়?

সেই লোকটা তখনো বন্ডের দিকে তাকিয়ে আছে। কি বিরক্তিকর। সন্দেহজনক তার চাহনি। বন্ড এবার তাকে নিরীক্ষণ করল। কিনিংটন পোরে ট্রেনটা থামতেই লোকটা বন্ডের পিছন পিছন অনুসরণ করল।

.

০৩.

বন্ড প্রিন্সেস দ্য গামাকে পেল না, সে চলে গেছে। কিন্তু শয়নকক্ষে প্রসাধনীর গন্ধ তখনো ম ম করছিল। আর তাছাড়া যে মেয়ের জ্ঞান ছিল না।….

বন্ড কিচেনে গিয়ে এক কাপ কফি করে ফিরে এল খাবার ঘরে। কফিতে এক চুমুক দিয়েই আবার সেই কফির সঙ্গে একটু স্কচ মিশিয়ে নিল। হাতে সোনালি টিপের সিগারেট টার্কিশ এবং ভার্জিনার মিশ্রণ। সিগারেটের নীল ধূসর রঙের ধোয়ার দিকে তাকিয়ে সে প্রিন্সেসের কথা ভাবতে থাকে। প্রেমের খেলায় ওস্তাদ সে, আশ্চর্য একটুও যেন ক্লান্তি। নেই। একই বিছানায় পাঁচ-ছ বার যে কোন পুরুষকে তৃপ্তি দেবার ক্ষমতা রাখে মেয়েটি। কিন্তু এত ক্ষমতা, এত উৎসাহ সে পায় কোথা থেকে? বন্ডের মনে পড়ল, জ্ঞান হারানো প্রিন্সেসের ট্রাউজারের পকেট হাতড়াতে গিয়ে পয়েন্ট টোয়েন্টি টু ক্যালিবারের পিস্তলটার সঙ্গে তার একটা পার্সও ছিল। আর সেই পার্সের ভেতর ছিল দারুণ উত্তেজক কয়েকটি পিল। মনে হয় ঐ পিলগুলিই তাকে যৌন উত্তেজনায় সাহায্য করে।

প্রিন্সেসের চিন্তা থেকে এবার বন্ড মন দিল নিগ্রোদের দিকে। আবার ফোন করাতে, হু, মিষ্টি সুরে বলল বন্ড, আর এখনো আমি প্রিন্সেসের সঙ্গে কথা বলার জন্য অপেক্ষারত।

লোকটা একটু জোর দিয়ে কথা বলতে মনে হল পুর্তগীজের চাপ রয়েছে। বললাম তো সে এখানে নেই এখন, সত্যি কথা বলতে কি স্যার, ওর জন্য আমরা খুবই চিন্তিত। আপনার নামটি কি যেন?

কীল মাস্টার পাল্টা প্রশ্ন করল, তাহলে আপনি বলছেন, প্রিন্সেস এখন কোথায় থাকতে পারে সে খবর আপনি জানেন না?

না। লোকটা বলল, আমরা ওর খবর জানতে চাই। আপনি ওর বন্ধু, যদি ওর খবরটা দেন তবে খুবই বাধিত হব। হ্যাঁ, আমি বাজী ধরে বলতে পারি, অবশ্যই তা হবেন, কিন্তু কথাটা অসমাপ্ত রেখেই বন্ড কেটে দিল ইচ্ছা করে। এবার ওরা গরু খোঁজার মত খুজুক তাকে।

ফিরে গ্লাসে স্কচ ঢেলে এক চুমুক দিয়ে গ্লাস হাতে জানলার ধারে গিয়ে দাঁড়াল সে। নিচে প্রশস্ত বাগান, বড় বড় গাছের নিচে ফুলের বাগান, বসার বেঞ্চ। একটা বেঞ্চের দিকে তাকাতেই সে অবাক হল–সেই টিউব ট্রেনের লোকটার হাতে এখন সেই কাগজটা, তার হাতেই হয়েছে। বন্ড ভাল করে দেখল লোকটাকে। টুপিহীন মাথা, চুলগুলো বেশ বড়, বয়সের তুলনায় লোকটা দেখতে বুড়োটে ধরনের। বন্ড তার একটা সিগারেট ধরিয়ে আবার জানালার ধারে এল। এবার লোকটা কাগজটা মুড়ে পাশে রেখে দিয়েছে।

এ্যাক্স-এর এজেন্ট, বন্ড মাথা নাড়ল–লোকটা সুপুরুষ বটে, তবে আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই নিশ্চয়ই। নইলে এমন মামুলি পোশাকে লন্ডন শহরে মানায়, লোকটা কাউন্টার এজেন্ট নয় তো? ব্লেকারের খুনের জায়গা থেকেই সে নিশ্চয়ই বন্ডকে অনুসরণ করছে। সে নিশ্চয়ই খুন হতে দেখেছে কিন্তু যত আগ্রহ তার বন্ড কার্টারের ওপর।

বন্ড আবার সিগারেট ধরিয়ে ভাবল লোকটা কি প্রিন্সেসকে খুঁজছে। এবার সে কোচে গা এলিয়ে সমস্ত ব্যাপারটা ভেবে দেখার চেষ্টা করল।

ফ্যাক্ট-অনিগেট হোটেলে দ্বিতীয়বার ফোনের লোকটির স্বরে পুর্তগীজের টান।

 ফ্যাক্ট-বেঞ্চের উপর বসে থাকা লোকটিও পুর্তগীজ হতে পারে।

 ফ্যাক্ট–প্রিন্সেস দ্য গামা পুর্তগীজ। মেয়েটি ধনী, সুন্দরী তবে বড্ড বেশি সেক্সী আর আর ড্রাগ এ্যাডিকটেড।

ফ্যাক্ট–থিওডোর ব্লেকার, যার সম্পর্কে সে কিছুই জানে না, সে নৃশংসভাবে খুন, তার মুণ্ডটা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন।

ফ্যাক্ট–প্রিন্সেস যেভাবেই হোক ব্লেকারের দলে মিশেছে। ব্লেকারের কার্ড প্রিন্সেসের পার্সে আর প্রিন্সেসের কার্ড ব্রেকারের হীপ পকেটে যাতে লেখা ছিল, কিল হিম। কেনই বা প্রিন্সেস সবসময় তার পকেটে সাইলেন্সর লাগানো পিস্তল রাখত?

ফ্যাক্ট–তিনজন নিগ্রো প্রিন্সের পিছু নিলেও তারা কিন্তু প্রিন্সেসকে কিডন্যাপ করেনি। সমস্ত ব্যাপারটাই একটা ধাঁধা-র মত মনে হল কিল মাস্টারের কাছে। কেবল একটি জিনিস বড় মনে হচ্ছে : পুর্তগীজ আর পুর্তগাল যার কেন্দ্রবিন্দু প্রিন্সেস।

হঠাৎ একটি ট্যাক্সি আসে এবং প্রিন্সেস গাড়ি থেকে নামে। আর বেঞ্চে বসা লোকটি দ্রুতপায় ট্যাক্সিটার দিকে গেল। প্রিন্সেসের পা কাঁপছিল। কোন রকমে ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে সে এগিয়ে আসতে চায়। পারে না, পা টলে ওঠে। ওদিকে লোকটা পৌঁছানোর আগেই সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত পায়ে বন্ড এগিয়ে গেল। প্রিন্সেস কাঁচের সুইংডোের ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই লোকটাও ভেতরে ঢুকতে চায়। বন্ড তার পথ আড়াল করে দাঁড়ায়। লোকটা চিৎকার করে বলে, প্লীজ আমাকে ছেড়ে দিন। বন্ড অসম্মতি জানায়। লোকটি তখন আবার চিৎকার করে, প্রিন্সেস দ্য গামা…ঐ মেয়েটিকে আমাদের দরকার, ওকে আমাদের হাতে তুলে দিন।

প্রিন্সেস তখন বন্ডের বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে করুণস্বরে বলে। প্লীজ ওর হাতে আমাকে তুলে দিও না। ওর থেকে রক্ষা পাবার জন্য তুমি আমাকে সাহায্য কর, প্লীজ

বন্ড দু হাত জড়িয়ে ধরে তার গালে গাল ঘষে বলে, তোমার কোন চিন্তা নেই প্রিন্সেস। আমার হাতে যখন এসে পড়েছ, তোমাকে বাঁচানো আমার একান্ত কর্তব্য। নিজের মনে বলল, এ্যাক্স-এর এজেন্টের কাজই হল, বিপদের মুখোমুখি হওয়া।

এবার সেই লোকটার দিকে ফিরে দরজার এপার থেকে চিৎকার করে বলল, আপনি এখন ফিরে যান। মিথ্যে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে আপনার বিপদ হতে পারে।

লোকটা এবার কঠিন স্বরে পুর্তগীজ ভাষায় বলল, প্রিন্সেসের সঙ্গে আমি অবশ্যই কথা বলব এবং কথাটা খুব জরুরী।

তার দিকে কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বন্ড বলল, কিন্তু আপনার পরিচয়?

লোকটা তার পরিচিতির কার্ডটা বের করে বন্ডকে দেখায়, আমি পুর্তগাল সরকারের একজন প্রতিনিধি। আপনি পুর্তগাল এমবাসিতে খোঁজ নিয়ে সত্যি যাচাই করতে পারেন। কিন্তু তার আগে এক্ষুনি একবার প্রিন্সেসের সঙ্গে কথা বলতে চাই।

ঠিক আছে। আমি একবার প্রিন্সেসের সঙ্গে কথা বলে দেখি উনি রাজি আছেন কিনা। ততক্ষণ আপনি বেঞ্চে গিয়ে বসুন। উনি রাজি হলে আপনাকে ডেকে পাঠাব। ও, কে।

লোকটা ভ্রূ কুচকালো, প্রিন্সেস কখনোই রাজি হবে না স্যার। প্রিন্সেস অসুস্থ। সরকারের পক্ষ থেকে আমি তাকে নিতে এসেছি। অতএব, আপনি এখুনি দরজা খুলে দিন।

না, আমি তা করতে পারি না। অবশ্য আপনি দরকার হলে পুলিশের সাহায্য নিতে পারেন, বন্ড কঠিন স্বরে বলল।

 লোকটা মাথা নাড়ল, না, এ ব্যাপারে আমরা পুলিশকে জড়াতে চাই না।

তাহলে লক্ষ্মী ছেলের মত ঐ বেঞ্চে গিয়ে বসুন।

লোকটা লাল চোখে বন্ডের দিকে তাকাল। তারপর গজরাতে গজরাতে বেঞ্চের দিকে গেল। বন্ড ফ্ল্যাটের দিকে, প্রিন্সেস অনেক আগেই ওপরে উঠে গেছে।

সেই বিল্ডিং-এ আরো অনেক ফ্ল্যাট আছে এবং সেখানে অধিকাংশই পুর্তগীজ। তাহলে প্রিন্সেস এখানে নিশ্চিন্ত।

বন্ড ফ্ল্যাটে ঢুকে দেখল প্রিন্সেস সোফায় বসে, তার পরণে সেই সবুজ রঙের মিনি স্কার্টটা যা পরার এখন অযোগ্য। সবুজ চোখের নীচে কালো দাগ।

বন্ড দরজা বন্ধ করে ঘরে ঢুকতেই প্রিন্সেস রুক্ষ স্বরে ঝাঁঝিয়ে উঠল, কে তুমি? এখানে তুমি কি করছ? দরজা বন্ধ করার সাহস পেলে কোত্থেকে?

বন্ডের চোয়াল দুটো শক্ত হয়ে ওঠে, তার ইচ্ছে হয় একটা চড় মেরে বুঝিয়ে দেয় কে সে? কিন্তু তক্ষুনি ফোনটা বেজে উঠল। কে ফোন করতে পারে এসময় আমেরিকান এ্যাম্বাসাডার এবং ডেভিড হক ছাড়া কাউকে তো তার ফোন নম্বর দেওয়া হয় নাই।

বন্ড ভাল করে দরজার খিলে চেন লাগিয়ে মেয়েটিকে বলল, পালাবার চেষ্টা কর না

মেয়েটি কথায় কান না দিয়ে সোফার উপর চোখ বন্ধ করে পড়ে রইল। ফোনটা তুলতেই পরিচিত কণ্ঠস্বর, হ্যাঁ, আমি বন্ড কথা বলছি

বন্ড, আমি বাড়ি থেকে বলছি। তোমার ঘর থেকে মেয়েটিকে এক্ষুণি বার করে দাও।

বন্ড তার বস ডেভিড হককে ভাল করেই চেনে। লোকটা যখন ভাঁড়ের অভিনয় করে তখন এই রকমই ঝামেলায় পড়তে হয় তাকে।

বন্ডও একজন পাকা অভিনেতার মত জবাব দিল, দুঃখিত স্যার, আর কিছু বলার আছে?

নিশ্চয়ই! রুক্ষস্বরে বলল হক, এখন আমার প্রশ্ন শুনে সংক্ষেপে হ্যাঁ কিংবা না বল। এটা হল কোড বো।

পৃথিবীর অন্তিম মুহূর্ত এসে গেছে। এই কোড এ্যাক্স এজেন্সির ভয়ঙ্কর জরুরী। এর ওপর সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এবারে বন্ড বুঝতে পারল যে হক এবার যা করবেন বা বলবেন সবই বাস্তব ও সত্য। তাই তাঁর কথায় গুরুত্ব দিয়ে বলল, হ্যাঁ স্যার। আমি বুঝেছি।

এই মুহূর্তে প্রিন্সেস নিশ্চয়ই তোমার কাছে আছে?

হ্যাঁ।

খুব ভাল কথা। হকের কণ্ঠস্বরে খুশির ছোঁয়া, যেভাবে হোক ওকে আটকে রাখ। হ্যাঁ, যে কোন মূল্যে বুঝলে?

বুঝেছি।

ওর সম্পর্কে আর কেউ আগ্রহী?

হ্যাঁ স্যার। একজন পুর্তগীজ সরকারের প্রতিনিধি। এখন সে পার্কে বসে আছে, বলল সে পুর্তগীজ। কিন্তু

তা হতে পারে হক সবজান্তার মত বললেন, ও হচ্ছে মেজর কার্লো ওলিভিয়ার, পুর্তগাল ইন্টেলিজেন্সের লোক। সে কি একা?

তাই তো মনে হচ্ছে।

ভাল কথা, বললেন হক, আচ্ছা তুমি একটা কাজ করতে পার? সবার নজর এড়িয়ে মেয়েটিকে নিয়ে বেরিয়ে আসতে পার?

চেষ্টা করতে পারি।

তাহলে চটপট কর। আমি এখন লন্ডন এয়ারপোর্টে যাচ্ছি। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে। আমি কক্ এন্ড বুল-এ পৌঁছে যাব বুঝলে?

বুঝেছি।

হঠাৎ নিচে রাস্তা থেকে পরপর গুলির আওয়াজ। বন্ড তার বসকে বলল, এক মিনিট স্যার।

জানালার কাছে উঁকি দিল সে। দেখল সেই কালো রংয়ের গাড়িটা বেরিয়ে গেল সেই মাত্র। বেঞ্চের ওপর চোখ রাখতেই বন্ড দেখল বেঞ্চের ওপর কালো ওলিভিয়ারের দেহটা এলিয়ে পড়ে আছে। একটা পা তার তখনো কাঁপছিল– আবার সে রিসিভার তুলে নিল স্যার, এইমাত্র খুন হল কার্লো ওলিভিয়ার। কালো গাড়ি কালো মানুষ, কালো মেশিনগান ব্যবহার হয়েছে আর আজ সকালে এই কালো লোকগুলিই আমাকে অসুবিধায় ফেলেছিল।

এটা একটা হুমকি বলে ধরে নিতে পার; হক তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, একটু আগে যা বললাম, চটপট মেয়েটিকে নিয়ে চলে এসবুক এ্যান্ড বুল-এ। ঐ মেয়েটির ওপর সব কিছু নির্ভর করছে।

সব কিছু মানে হক কি বোঝাতে চাইছেন। চিন্তিতভাবে সোফায় বসল কিল মাস্টার সে ভেবেছিল প্রিন্সেসের কেসটা সে নিজে সমাধান করবে কিন্তু তা হল কই?

প্রিন্সেস তখন আরামে ঘুমাচ্ছে, তার স্কার্টটা হাঁটুর অনেক ওপরে। উপযুক্ত প্যান্টিজ-মাংসল শ্ৰেণীদেশ শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। প্রিন্সেসকে ডেকে বন্ড বলল, চটপট তৈরি হয়ে নাও। এক্ষুণি আমাদের পালাতে হবে এখান থেকে। ওরা আমাদের খুঁজছে। তারপর মৃদু হেসে বন্ড বলল, তোমার নগ্ন পা দুটো দেখতে সুন্দর হলেও এ দুটো ঢেকে ফেল। সুন্দর সুডোল পা দুটোর সঙ্গে ফাউ হিসেবে যেটা দৃশ্যত সে বড় দৃষ্টিকটু।

সঙ্গে সঙ্গে স্কার্টটা হাঁটুর নিচে নামিয়ে প্রিন্সেস এবার বলল, আমি ক্লান্ত, আমার ঘুম পাচ্ছে। আর শরীরও খারাপ, খুব খারাপ।

আমাকে হুকুম করার কে তুমি প্রিন্সেস এবার ফুঁসে উঠল, এর আগে তোমাকে দেখেছি বলে মনে হচ্ছে না।

বলে কি মেয়েটা? অসম্ভব জেদী মেয়ে তো। কার্লো কি সত্যিই বলেছে, ও কি পাগল হয়ে গেছে? এইজন্যই কি ওরা পুর্তগালে নিয়ে ওকে পাগলা গারদে রাখতে চায়? হঠাৎ প্রিন্সেসের হাত ধরে বন্ড হিড়হিড়িয়ে টেনে জানালার কাছে গিয়ে, দ্যাখ, সামনে তাকিয়ে দ্যাখ একবার–

প্রিন্সেস ভয়ে আঁতকে উঠল। নিচে পার্কের চারপাশে বিক্ষিপ্ত ভিড়, উত্তেজনা, পুলিশের আনাগোনা, বেঞ্চের ওপর পড়ে থাকা কার্লোর মৃতদেহ

প্রিন্সেসের চোখেমুখে উত্তেজনা। সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে থরথর করে কেঁপে উঠল। বন্ডকে অনুরোধ করল সে, আমাকে একটু ড্রিঙ্ক দাও প্লীজ, আমি আর পারছি না।…।

স্কচের একটা বোতল এগিয়ে দিল বন্ড। এক নিঃশ্বাসে অর্ধেকটা শেষ করে একটু সুস্থ হয়ে বলল। এবার আমি তোমাকে চিনেছি। তুমি আমার পিস্তল, কার্ড নিয়েছ, যাক, এ সব আমি চাই না। কিন্তু আমাকে পিলগুলো ফেরত দাও।

বন্ড কয়েকটা পিল দিল–বেনিজ। এ্যামফিটামাইন! প্রিন্সেসের চোখ দুটো উজ্জ্বল হল, হ্যাঁ আমার নার্ভ ঠিক রাখার জন্য খাই।

হঠাৎ বন্ড দেখল প্রিন্সেসের হাতে ও হাঁটুর কাছে রক্তের দাগ। প্রিন্সেসও স্কার্টটা টেনে দিল হাঁটুর নিচে।

ঐ রক্ত কোত্থেকে এল? বন্ড তার দৃষ্টি অনুসরণ করে বলল, এ দাগ কি ফোরটিন হাফ ক্রিসেন্ট মিউজ থেকে?

বন্ডের প্রশ্নে প্রিন্সেস কেঁপে উঠল ভয়ে। লাল ঠোঁট দুটো মুহূর্তে বর্ণহীন, কাঁপা কণ্ঠস্বরে বলল, কে তুমি?

তার পার্সটা মেলে ধরে বলল, আমি যেই হই না কেন, প্রিন্সেস তোমার খেল খতম। চল এবার আমার কোর্টে! তারপর বস্তু নিজের মনে বলল তোমাকে এবার ঠিক চিনেছি। তোমাকে ভাঙিয়ে আমাদের অনেক কাজ হাসিল হবে।

প্রিন্সেস শীতল নিরুত্তাপ কণ্ঠে বন্ডকে প্রশ্ন করল, তুমি কি পুলিশের লোক?

না, ঠিক পুলিশের নই। তোমার ব্যাপারে আমার একটা আগ্রহ আছে। অবশ্যই ব্যক্তিগত। শোন শ্ৰীমতী, আমি তোমাকে একটি শর্তে সাহায্য করতে পারি। একজনের সঙ্গে তোমাকে দেখা করতে হবে।

এবার বেশ উদ্ধত্তস্বরে বলল, কার সঙ্গে এবার স্কচ ও পিলের কাজ শুরু হয়ে গেছে।

বন্ড হাসল। এবার তার শর্তটার কথা বললে তার পরিকল্পনা সফল হতে পারে। তোমাকে সাহায্য করতে ইচ্ছুক এমন একজনের সঙ্গে।

প্রিন্সেসের ঠোঁটে ব্যঙ্গের হাসি হেসে গেল, আমি মাতাল হতে পারি, কিন্তু কচি খুকি নই। বোতলের দিকে হাত বাড়াতেই বন্ড বোতলটা নিয়ে বলল, উঁহু, এখন আর এক ফোঁটাও নয়।

তারপর উল্টোপাল্টা ডায়েল করল, আমি পুলিশ ডাকছি, পুর্তগালের ইনটেলিজেন্সকে জানাচ্ছি।

প্রিন্সেস ছুটে এল বন্ডের কাছে। না, না, প্লীজ ওসব কর না, আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, তোমার সঙ্গে যাব। কিন্তু দোহাই তোমার, পুর্তগীজদের হাতে তুলে দিও না। ওরা আমাকে নিয়ে পাগলা গারদে পুরে দেবে।

কঠোর দৃষ্টিতে প্রিন্সেসের দিকে তাকাল বন্ড। তারপর গম্ভীর স্বরে বাথরুম দেখিয়ে বলল, আমি তোমাকে পাঁচ মিনিট সময় দিচ্ছি। চটপট তৈরি হয়ে নাও।

.

০৪.

 ক্রিস্টোফার মারলোর সময়ে তৈরি অতি পুরাতন পান্থশালা কক এন্ড বুল। অনেকের ধারণা মারলো এখানে খুন হয়েছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া ডক রোডের উপর এই পান্থশালাটিতে আজ আর সেই রমরমা ভাব নেই।

লন্ডন শহরের পুরনো অঞ্চলের নির্জন উপকণ্ঠে এই পান্থশালাটি দেখলে কেউ বুঝবেই না যে, বাড়ির নিচে শীততাপ-নিয়ন্ত্রিত অনেকগুলি ঘর গোলক ধাঁধার মত সাজানো এবং স্কটল্যান্ডের ইয়ার্ডের স্টেশন ব্রাঞ্চের অফিস।

এ্যাক্স-র প্রধান ডেভিড হক একজন অত্যন্ত পরিশ্রমী ও সাবধানী লোক। তিনি তার দায়িত্বের ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন। তিনি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত একটা ঘরে পায়চারী করতে করতে তার সংস্থার নাম্বার ওয়ান এজেন্টের দিকে স্থির। চোখে তাকিয়ে বলে উঠলেন, নরকের মতই এসব জঘন্য, বে-আইনী বুঝলে? আমরা পুর্তগীজ, নিগ্রো সবই পিচ্ছিল জমির উপর দাঁড়িয়ে আছি। ওদের কোন দেশ নেই, যাযাবরের মত। পুর্তগীজরা একটু ভালর দিকে। ব্রিটিশদের। ব্যাপারে তাদের একটু সতর্ক হওয়া উচিত। কারণ, এ্যাংগোলার ব্যাপারে আমরা তাদের পথ নিয়েছি। তাই তারা সিংহের ল্যাজ মোচড় দিতে চায় না আর সেই কারণেই প্রিন্সেসকে ছিনিয়ে নিতে সাহস রাখে না তারা।

বন্ড এবং তার বস দু জনে মিলে প্রায় আধঘণ্টা ধরে আলোচনারত। হক নিজে থেকেই আবার বলেন, সাড়ে চার ঘন্টা আগে আমার বিছানায় ঘুমাচ্ছিলাম। ফোনটা বেজে উঠল। স্টেটের সেক্রেটারীর ফোন। পঁয়তাল্লিশ মিনিট পরে আমি, মিঃ আই প্লেনে উঠি। আটলান্টিকের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় দু হাজার মাইল পাড়ি দেওয়া কম কথা।

এখনো কিন্তু আমি আপনার কথার প্রকৃত অর্থ বুঝতে পারিনি স্যার। বন্ড বলে, সেক্রেটারীর দূত আলোচনা করার জন্য ছুটে আসছেন তার নিজস্ব প্লেনে। এর কারণ পুর্তগীজরা তারস্বরে চিৎকার করছে। এ্যাক্স-এর একটা নিজস্ব সুপারসোনিক প্লেন থাকা উচিত। তার জন্য অবশ্য ফরমাশ দিয়েছি। বন্ড কাটারের অসীম ধৈর্য, বসের কথা শোনার ফাঁকে সে প্রিন্সেসের কথা জেনে নেয় একবার। বেসমেন্ট কমপ্লেক্সের আর একটা ঘরে বন্দিনী প্রিন্সেস। হকের নির্দেশ প্রিন্সেসকে সুস্থ করে কথা বলতে ২৪ ঘণ্টা লাগবে। প্রিন্সেসের উপর নজর রাখার সবরকম ব্যবস্থা করছেন হক।

দেওয়াল মানচিত্রটা টেনে টেবিলের ওপর নামিয়ে রাখলেন হক। খুব ভাল একটা প্রশ্ন পুর্তগীজদের সম্পর্কে। তুমি মনে করছ, সংকেত পেলেই আমেরিকার মত একটা দেশ ঝাঁপিয়ে পড়বে? কেপ ভার্দি দ্বীপের নাম শুনেছ?

ভাসা ভাসা শুনেছি। কখনো যাইনি সেখানে। দ্বীপটা পুর্তগালের?

হকের মুখে ভাজ পড়তে দেখা গেল এবং বিরক্তিভাবে বললেন, হু! ১৪৯৫ সাল থেকে দ্বীপটা পুর্তগালের অধীনে। দেখ

মানচিত্রের ওপর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বৃদ্ধ হক বলতে থাকেন, আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে তিনশো মাইল দূরে। আলজিরিয়া মরক্কোর কাছে। আশে পাশে আরো কয়েকটা ছোট বড় দ্বীপ আছে। এর মধ্যে একটা কিংবা তারও বেশি দ্বীপে আমেরিকা কিছু গুপ্তধন লুকিয়ে রেখেছে।

গুপ্তধন স্যার? বলে কি লোকটা? আজগুবি গল্প নয় তো? বন্ড প্রায় চিৎকার করে বলল।

গুপ্তধন মানে হাইড্রোজেন মালমশলা। ব্যাপারটা একদম টপ সিক্রেট, আশা করি, সেটা তোমাকে খুলে বলতে হবে না।

বন্ড মাথা নাড়ল বিজ্ঞের মত।

এখন ব্যাপারটা এইরকম দাঁড়িয়েছে–পুর্তগালের লোক চাইছে, আমাদের সেই সব হাইড্রোজেন বোমার মাল মশলা সেখান থেকে বার করে নিতে।

হক সিগারেট মুখে দিয়ে আবার বলতে থাকেন, বিশ্বের প্রায় সবজায়গাতেই আমাদের এইরকম বোমা লুকানো আছে। কিন্তু একমাত্র এখানে এই দ্বীপে তাই আমরা এখন ওগুলো সরাতে চাই। আমাদের এই কাজে অফিসার হবে পুর্তগীজরা এ ব্যাপারে ঠিকমত আভাষ দেওয়া। 

কিন মাস্টারের কাছে ব্যাপারটা তখনও ঠিক মত পরিষ্কার হচ্ছিল না। দেখা যাচ্ছে ওরা এক মুহূর্তও সময় নষ্ট করেনি, বন্ড বলল, কিন্তু আমি ভেবে পাচ্ছি না, এত দ্রুত কিভাবে পুর্তগীজ সরকারের প্রতিক্রিয়া হল? তারপর সে তার বসকে সব খুলে বলল সকালের ঘটনা থেকে প্রিন্সেসকে ডিপ্লো মাঠ থেকে তুলে আনা সব কিছু।

বস কাঁধ ঝাঁকাল, এত খুবই সহজ ব্যাপার। এরা প্রিন্সেসের পিছু নিয়েছিল নিঃশব্দে এবং ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিল তোমার কাছ থেকে। সবশেষে চেয়েছিল নিজের প্রচার। আমার ধারণা মেয়েটি যখন ক্লাবে ঢোকে তখন থেকেই ওরা তাকে অনুসরণ করে। তুমি তাকে সেখান থেকে বার করে নিয়ে এসেছিলে, সে দৃশ্যটাও নজর এড়ায়নি। তোমাকে চিনেও থাকবে হয়ত। মেজর এক সময় কাউন্টার ইনটেলিজেন্সিতে ছিল, আর পুর্তগীজের কাছে ফাইলও আছে। অতএব সে অনেকগুলো ফোন করে। সম্ভবত এ কাজে পঁয়তাল্লিশ মিনিট সময় লেগে থাকবে। প্রথমে মেজর তার দূতাবাসে ফোন করে, দূতাবাস লিসবনে, এবং ওয়াশিংটনকে।

আর সেক্রেটারি জানায় আমাকে, হক তার কথার জের টেনে বলেন। বন্ড সিগারেট ধরিয়ে হকের দিকে তাকাল। এই মুখ আগেও দেখেছে। লোভী কুকুরের দৃষ্টি, সে জানে কোথায় মাংসল হাড় পাওয়া যায়। কিন্তু নিজেকে গুটিয়ে রাখার জন্য বদ্ধপরিকর সে।

এটা একটা কাকতালীয় ব্যাপার, বড় ব্যাখ্যা করে বলল, মেয়েটি হাতে এসে পড়ল, আর এমন একটা গোলমালে জড়িয়ে পড়লাম। কিন্তু স্যার, কিছুতেই বুঝতে পারছি না, এ ব্যাপারে প্রিন্সেস দ্য গামাকে কেন এত প্রয়োজন? কেন সবাই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

হকের ঠোঁটে স্মিত হাসি। সত্যি কথা এই নিজেকে নিয়ে আমি এত বেশি বিব্রত যে, এখন মনে হচ্ছে, এই মেয়েটিই আমাদের একমাত্র ভরসা। ওকে পাশার ঘুটির মত ঠেলে দেওয়া হয়েছে, মাঝখানে আমরা ওকে ধরছি মাত্র।

ওদিকে বন্ড চোখ বুজে হকের মুখটা মনে করে তার মনে এখন কি চিন্তা উপলব্ধি করার চেষ্টা করল। হক বিস্ময় প্রকাশ করে জিজ্ঞেস করলেন, কি ব্যাপার, মন-গুহায় কেউ কি হানা দিয়েছে।

স্যার, মেয়েটির সম্পর্কে কিছু বলবেন?

 হক কাঁধ ঝাঁকালেন। বললাম তো ওর সম্পর্কে আমি তেমন কিছুই জানি না। কোন্ কারণে এমন বিখ্যাত হল ও। ওয়াশিংটন ছেড়ে আসার আগে ভেলাস্টোককে ডেকে পাঠিয়ে বলে এসেছি মেয়েটির সম্পর্কে খবর নিয়ে আমাকে টেলেক্স করার জন্য। তবে খবরের কাগজ থেকে যেটুকু জানি তা হল, প্রিন্সেস একালের ভাষায় স্রেফ জেট-সেট মেয়ে। ওর এক কাকা পুর্তগীজ সরকারের একজন হোমরা-চোমরা। এমন শুনেছি মেয়েটা মদের নেশায় পুরুষের সঙ্গে মিলিত হয়, আর নোংরা ছবির জন্য পোজও দেয়?

হকের দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে বন্ড ভাবতে থাকে হ্যাঁ, তার মনে আছে ব্লেকারের ফ্ল্যাটে ক্যামেরা আর প্রোজেক্টার মেশিন দেখেছিল সে। প্রথমে ভেবেছিল ভাল ফিল্ম-এর সঙ্গে প্রিন্সেসের সেই নোংরা ছবিটা মিশে গিয়ে থাকবে। কিন্তু কার্যতঃ মনে হচ্ছে, আসলে তা নয়। ব্রেকারের ফ্ল্যাটে সব ছবিই নোংরা পোজের ছিল।

হক তাকে চুপ করে থাকতে দেখে নিজের থেকেই বলল,, হংকং-এর এজেন্টের খবর হল, প্রিন্সেস সেখানে নোংরা পোজ দিত টাকা রোজগারের জন্য। টাকার প্রয়োজন। পুর্তগীজ সরকার ওর টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। বিদেশের যাওয়ার মেয়াদ কমিয়েছে। তারা ওকে পুর্তগালে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু প্রিন্সেস এখানেই থাকতে চায়। এখানে থাকতে অনেক খরচ

হ্যাঁ স্যার। ও এ্যাভগেটে থাকে। ওখানে থাকার খরচ প্রচুর।

সেখানে এজেন্ট ফিট করা আছে। মেয়েটির সম্পর্কে খবর সংগ্রহ করার জন্য। এখন প্রথম কাজ হবে।

ঠিক সেই সময়ে ফোনটা বেজে উঠতেই হক রিসিভারটা নিয়ে নিচু গলায় সংক্ষেপে কিছু বললেন, রিসিভারটা যথাস্থানে রেখে বন্ডের দিকে ফিরে বললেন, আমাদের এজেন্ট খবর দিল। এ্যান্ডগেটে প্রিন্সেসের দু হাজার ডলার ধরা পড়েছে। এবার তোমার প্রশ্নের উত্তর দাও।

বন্ড বলল, প্রশ্নটা তার নয়। হক অবাক চোখে তাকালেন বন্ডের দিকে, কদাচিত তোমাকে উপদেশ দিয়ে থাকি, তাই না?

হ্যাঁ স্যার।

তার মানে যখন দরকার পড়ে তখন। এখন আমার মনে হল, তোমাকে উপদেশ দেওয়া প্রয়োজন, একটু থেমে হক তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বললেন, হ্যাঁ, বলছিলাম, মেয়েটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হবার চেষ্টা কর না। আমি ওকে জানি। ও আন্তর্জানিক তুরুপের তাস। সেই সঙ্গে ড্রাগ ও দেহের ক্ষুধা আছেই! তুমি যদি খেলাতে চাও, তাহলে এখন নয়। ব্যাপারটা সহজ হয়ে যাক, পরে সময় পাবে ওকে মনের মত ব্যবহার করার জন্য।

হকের কথায় সায় দিল সে। কিন্তু মেয়েটির কথাও ভাল করে ভেবে দেখল সে, বিশেষ করে ফ্ল্যাটে মেয়েটির ব্যবহার খারাপ ছিল না, যতটা সম্ভব সংযত রাখার চেষ্টা করেছিল। হ্যাঁ, সেই সব কথা ভেবেই হকের সঙ্গে একমত হতে পারল না। প্রিন্সেসের বদ অভ্যাসের মধ্যে কয়েকটা ভালদিকও ছিল বৈকি! একথাও ভাবল বন্ড। ওদিকে হক কাগজের শীট দলা পাকিয়ে ফেলে দিয়ে বললেন, এখন তুমি ঐ মেয়েটির কথা একেবারে ভুলে যাও। আটচল্লিশ ঘণ্টা বসে থাকতে হবে এখানে। এর মধ্যে মেয়েটি সুস্থ হয়ে উঠলে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করব। এখন জানতে চাই, তুমি প্রিন্স শোভুতি আস্কারি ও জেনারেল আগাস্টের বুলেঙ্গারের নাম শুনেছ কিনা?

 এ্যাক্স-এর প্রতিটি টপ অফিসারদেরও নামী দামী তোক আর জরুরী খবরা-খবর ওয়াকিবহাল হওয়া উচিত। হঠাৎ এক সময় এসব ব্যাপারে সেমিনার হয়ে থাকে, সেখানে এই সব প্রশ্ন করা হয়ে থাকে।

উত্তরে বন্ড বলল, প্রিন্স আসকারি আফ্রিকার লোক, আমার ধারণা, অক্সফোর্ডে পড়াশুনা করেছে। পূর্তগীজদের বিরুদ্ধে এ্যাংগোলার বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দিচ্ছে সে। পুর্তগীজদের বিরুদ্ধে কোন যুদ্ধে জয়ী হয়ে কিছু ভূখন্ডও অধিকার করে নিয়েছে সে।

বন্ডের সম্যক জ্ঞান দেখে মুগ্ধ হক। থামলে কেন বলে যাও। জেনারেলের সম্পর্কে কিছু বল?

এ লোকটা বড় জটিল। বঙ-এর ব্রেন কোন কাজ করছে না, বিশেষ করে জেনারেলের প্রসঙ্গে সে কেমন বোকা বনে যায় যেন। তাছাড়া ইদানীং জেনারেলের খবরও পাওয়া যাচ্ছে না।

অনেকক্ষণ পরে মাথাটা হাল্কা মনে হল, সে তখন জেনারেলের কথা ভাবতে বসল। হ্যাঁ, এবার মনে পড়েছে। জেনারেল একজন দলত্যাগী ফ্রেন্ড জেনারেল। গোঁড়া আলজিরিয়ানও বলা যেতে পারে। সন্ত্রাসবাদী দলের সদস্য। ও, এ, এস-এর একজন প্রথম সারির নেতা, এখনো সেই দলে আছে সে। সব শেষে জেনেছিলাম, ফ্রান্সে মৃত্যুদন্ড হয়েছে।

হ্যাঁ, ঠিক তাই, বললেন হক, আর সেই কারণেই এ্যাংগোলার বিদ্রোহীরা শেষ পর্যায়ে জিতেছিল। ফরাসীরা বুলেঙ্গারকে বন্দী করে ফাঁসির হুকুম দিলে, সে তখন পালিয়ে যায়। তারপর সে প্রিন্স আসকারীর সঙ্গে হাত মেলায়। দেরীতে হলেও প্রিন্স আসকারি জেনারেল বুলেঙ্গারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কিছু টাকা সংগ্রহ করার ধান্দায় আছে। এখন অনেক টাকার প্রয়োজন। তারা যদি এভাবে অর্থ সংগ্রহ করে যেতে পারে, তাহলে এ্যাঙ্গোলার যুদ্ধে তাদের জয় নিশ্চিত। তখন আফ্রিকায় নতুন একটা দেশের জন্ম হবে। আসকারি ভাবে, সে নিজে এ্যাংগোলার বিদ্রোহ পরিচালনা করছে। বুলেঙ্গার ভাবে, সে-ই এই বিদ্রোহের একমাত্র নেতা। নিজেকে সে ডিরেক্টর ভাবে, বাজী ধরে বলতে পারি, আগাস্টে বুলেঙ্গার এ ধরনেরই লোক। অতএব এসব কথা স্মরণ রেখে তোমাকে একাজে এগুতে হবে, বুঝলে বাছা?

বন্ড সিগারেটের ছাই ঝেড়ে জিজ্ঞেস করল, তা হলে এটাই হল মিশণ, তাই না স্যার? এখন কথা হচ্ছে আমি কার বিরুদ্ধে লড়ব? প্রিন্স আসকারি নাকি জেনারেল বুলেঙ্গার? নাকি দুজনের বিরুদ্ধেই। কারণ বন্ড ভাল করেই জানে, হক তার ব্যাখ্যা করে দেবেন।

হক প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে, একটা কাগজ তুলে চোখ বুলিয়ে নিয়ে বললেন, তুমি কর্নেল চুন লি কে চেন?

খুব সহজ প্রশ্ন! কর্নেল চুন লি চীনা কাউন্টার ইনটেলিজেন্সের লোক, হকের বিরোধী। পৃথিবীর দুই প্রান্তে দুজন প্রধান আন্তর্জাতিক দাবার ছক নিয়ে বসে আছে, ওকে দাবার চালে হারাতে হবে।

চুন লি তোমাকে মৃত দেখতে চায়। হক বললেন, খুবই স্বাভাবিক। আমিও তাকে মৃত অবস্থায় দেখতে চাই। অনেক দিন থেকে আমার ব্ল্যাক বুকে লেখা আছে। সে অত্যন্ত দক্ষ। খুন করতে ওস্তাদ সে। ছ মাসে ঐ বেজন্মাটা আমার দক্ষ আধ ডজন এজেন্টকে খুন করেছে। তাই আমি পথের কাঁটা চুন লিকে সরাতে চাই।

তাহলে এটাই হবে আসল কাজ, বন্ড বলল, এই তো?

হ্যাঁ, ঠিক তাই। আমার জন্য চুন লিকে খতম কর!

 কিন্তু কি করে?

 হক রহস্যের হাসি হাসলেন। অনেক কাগজ তুলে দিয়ে বললেন, এগুলো পড়ে দেখ, তাহলে তোমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে। তাছাড়া, এখন আসল খে। প্রিন্সেস, ব্রেকারের ছিন্ন মস্তক, তিনজন নিগ্রোর খুন হওয়া, কালোর মৃত্যু সবার খেল এখানেই শেষ। একটু থেমে আবার বললেন, এদের মধ্যে কেউই উল্লেখযোগ্য লোক নয়। আমি খুশি, তুমি ওদের কাউকেই খুন করনি। যেমন মেজর অলিভিয়েরার কথাই ধরা যাক–ওর খুন হওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু নিগ্রোরা এ্যাঙ্গোলিয়ান, আর মেজর পুর্তগীজ। তাই নিগ্রোরা ওকে খুন তো করবেই। তারা চায়নি মেজর প্রিন্সেসকে পাক। তারা তাদের স্বার্থে প্রিন্সেসকে পেতে চায়।

সবাই প্রিন্সেসকে চায়! বন্ড বিস্ময় প্রকাশ করল।

ওরা প্রিন্সেসকে চায়ই, আর একটা জিনিষও চায়, যতদূর মনে হয় ব্লেকার প্রিন্সেসের নগ্ন ছবি তুলেছিল। হক বললেন একটু সহজ করে, নিশ্চয়ই ব্ল্যাকমেল করার তালে ছিল সে। যাক, প্রিন্সেসকে দিয়ে আমাদের স্বার্থে কাজ করাব।

ও যদি রাজি না হয়, জোর করে? বন্ড প্রশ্ন করে তাকাল হকের দিকে।

হ্যাঁ, দরকার হলে তাই করতে হবে। আমরা প্রিন্সেসকে শর্ত দেব, আমাদের কাজ না করলে আমরা পুর্তগাল সরকারের হাতে তুলে দেব। ওরা ওকে পাগলাগারদে পুরবে…

বন্ড জানাল, হ্যাঁ, আমিও একথা প্রিন্সেসের মুখে শুনেছি।

তাহলে তো ভালই হল, ওর সঙ্গে একা কথা বলব, তুমি আমাদের কথা টেপ করে শুনতে পার। এখন একটু বিশ্রাম  নাও, তোমাকে হংকং-এ যেতে হবে। সঙ্গে প্রিন্সেস যাবে। এবং স্বামী-স্ত্রী সেজে। তোমাদের পার্সপোর্ট তৈরি আছে।

হংকং? বন্ড দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাস করল, তাহলে হংকং-এ চুন লিকে বধ করতে হবে?

না হংকং-এ নয়, ম্যাকাওতে! হক রহস্য করলেন, চুন লি তোমার জন্য ফাঁদ পেতে বসেছে। ফাঁদে ধরা দিয়ে বেরিয়ে আসতে হবে।

কি করে?

বুদ্ধি খাঁটিয়ে, হক রহস্য করে বললেন, তাছাড়া কথায় আছে, অতি চালাকের গলায় দড়ি! আর নিজের ফাঁদে নিজেকেই পড়তে হবে। চুন লির অবস্থাও সেইরকম করতে হবে তোমাকে। তোমার ওপর অগাধ বিশ্বাস আছে। তুমি ঠিকই জয়ী হবে! যাও গভীর ঘুম দিয়ে নাও।

বৃদ্ধ বসের কথা অমান্য করতে পারল না বন্ড। পাশের ঘরে বিশ্রাম নেবার জন্য গেল। শুয়ে প্রিন্সেসের কথা মনে পড়ল তার। আমিও তার পাশে শুয়ে থাকব, রাতটা ভালই কাটবে, ভাবল সে।

.

০৫.

 হক যে ধুরন্ধর লোক তা জানত বন্ড। কিন্তু তাজ্জব বনে গেল টেপ চালাতে গিয়ে। হক পুর্তগীজ ভাষাও জানেন।

বন্ড টেপ-এর সংলাপ শুনতে থাকল। দ্র-স্বচ্ছ-কণ্ঠে হক কথা বলছেন,–সিউ লোমে ডেভিড হক। কোন ই ও সিউ লোমে?

প্রিন্সেস দ্য গামা কেন জিজ্ঞেস করছেন? আমি নিশ্চিত, আপনি তা জেনে গেছেন। নাম জেনে আমার কোন লাভ নেই। কিন্তু কে আপনি ইচ্ছের বিরুদ্ধে কেন বন্দিনী করে রাখা হয়েছে!

পুর্তগীজ ভাষায় কথোপকথন শুনে মজা করে বন্ড।

আপনার ইচ্ছে হয় আমার তাতে কিছু এসে যাবে না। কিন্তু চমৎকার পুর্তগীজ ভাষায় কথা বলতে পারেন দেখছি।

 তুমি স্পষ্ট ইংরেজি বলতে পার তেমনি পুর্তগীজ ভাষায় আমি কিন্তু বলতে পারি না।

তারপরেই শুরু হল সংলাপ।

হকঃ আমেরিকা সম্পর্কে কি ধারণা প্রিন্সেস?

 মেয়েটিঃ আপনার ধারণার মানে, ঠিক বুঝতে পারলাম না।

হকঃ ঠিক আছে, আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি। তুমি কি আমেরিকাকে পছন্দ কর? সেখানে তোমার বন্ধু-বান্ধব আছে? তোমার কি মনে হয় না, বিশ্বে শান্তি স্থাপনের জন্য আমেরিকা অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে।

এ তো রাজনীতির কথা। আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে, আপনি কোন সিক্রেট এজেন্ট! সি. আই. এ-র কি?

না, আমি সি. আই. এ করি না। আমার উত্তর দাও! তুমি কি আমেরিকাকে সমর্থন কর? যদি কর তাহলে তোমাকে কিছু কাজ করতে হবে, অবশ্য অনেক ঝুঁকি আছে, তা হলে উপযুক্ত পারিশ্রমিক পাবে। খুব অভাবে আছ, শুনেছি তোমার টাকার দরকার তাই না?

হ্যাঁ, টাকার প্রয়োজন বৈকী। আমেরিকার বিরুদ্ধে কিছু বলারও নেই। টাকার জন্য যে কোন কাজ করতে পারি, কিন্তু এ যে রাজনৈতিক ব্যাপার…।

হককে চেনে বন্ড। তাঁর উত্তর শুনে খুশি হল সে মনে মনে, স্পষ্ট উত্তরের জন্য ধন্যবাদ। শুনেছি কাকা লুইস দ্য গামা মাসোহারার টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। এই দুরবস্থার জন্য ঐ লোকটি একান্ত দায়ী

এরপর দীর্ঘ নীরবতা। প্রিন্সেসই নীরবতা ভঙ্গ করল, কিন্তু আমার কাকার কথা জানলেন কি করে? আমার সম্পর্কে এত খবর সংগ্রহ করলেন কি ভাবে?

সব খবরই আমি রাখি প্রিন্সেস, হকের রহস্যের হাসি উঠতে দেখা যায়, আমার সরকারকে সাহায্য কর, আমরাও তোমাকে দেখব। অভাবই রাখব না। তুমি চাইলে আমেরিকান পাসপোর্টও করে দিতে পারব। এমন কি তোমার আত্মমর্যাদা পেতে আমরা সাহায্য করতে পারি।

তবু অসাধ্য কাজ সফল করার জন্য একবার চেষ্টা করে দেখতে পার। রাজি থাকলে এখন থেকেই শুরু করা যাক। তার আগে ব্যক্তিগত প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে তোমাকে। আশা করি, তুমি সঠিক উত্তর ও সত্য কথা বলবে নিশ্চয়ই!

মেয়েটিঃ যদি না দিই।

হক : তাহরে লন্ডনের পুর্তগীজ দূতাবাসের হাতে তুলে দেবার ব্যবস্থা করব। খুব খুশি হবে। তোমার সরকারকে ফাঁকি দিয়ে আসছ। আমার বিশ্বাস তোমার কাকা লিসরনের ক্যাবিনেটের উচ্চস্থানীয় সদস্য। তোমাকে ফিরে পেয়ে সেও কম খুবি হবে না।

অনেক পরে মেয়েটির কণ্ঠস্বর শুনতে পেল বন্ড। আমার কাকা–ঐ বেজন্মা লোকটা!

ঠিক আছে আমি রাজি। বলুন উত্তর দেব। পুর্তগালে ফিরে যাব না। আপনার প্রশ্নের উত্তর দেব।

সেই ভাল প্রিন্সেস, আর অত নিষ্ঠুর হতে যাব না। ফটোটা দেখ। কয়েক মাস আগে সংগ্রহ করেছি হংকং থেকে। এখন বল, এ ছবি তোমার?

বন্ড বুঝল, হক তাকে তার নোংরা ছবি দেখাল, বন্ড জানে প্রিন্সেস খরচ চালাবার জন্য উলঙ্গ ছবির মডেল হয়েছে।

হ্যাঁ, আমার ছবি। সেই সময় মাতাল হয়ে গিয়েছিলাম, নেশার ঘোরে অমন নগ্ন দেহের ছবি তোলবার জন্য।

হকঃ লোকটা চাইনিজ, যে তোমার নগ্ন দেহের ওপর শুয়ে আছে তোমার মধ্যে প্রবেশরত, ওর নাম জান?

না, আগে কখনো দেখিনি, মাতাল হলে কিছুই খেয়াল থাকে না। মনে পড়ে, স্টুডিওয় প্রথম দেখি।

তোমার সঙ্গী কে, সেটা জানবার দরকার নেই। বিভিন্ন জায়গা খবর নিয়ে জেনেছি, কয়েক বছর পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় বেহিসেবী ভাবে মাতলামি করার জন্য গ্রেফতার হও। ড্রাগ রাখার জন্য ফ্রান্সে গ্রেফতার করা হয়েছিল। লোকমুখে শুনেছি, তুমি লোকের সঙ্গে ঘনিষ্ট হও, আর খারাপ কাজ কর। এমন কি ন্যাংটা হয়ে তুমি নাকি তাদের তোমার দেহের মধ্যে প্রবিষ্টও হতে দাও। স্বাভাবিক হলে তাদের কথা একদম মনে থাকে না।

হকঃ তোমার কথা শুনে আমরা অনায়াসে ধারণা করে নিয়েছি যে তুমি একজন মাতাল মদ্যম মহিলা, উত্তেজক মাদক দ্রব্য সেবন করে থাক। উত্তেজিত অবস্থায় যে কোন পুরুষের সঙ্গে যৌন সংসর্গে লিপ্ত হতে পার। বন্ড আশা করেছিল, হকের কথা শুনে প্রিন্সেস বুঝি কেঁদে ফেলবে। কিন্তু তা হল না, উল্টে প্রিন্সেস এবার রেগে গিয়ে বলল, হা, আমি চরিত্রহীনা, তাতে আপনি খুশি তো?

হকঃ শোন শ্রীমতী, এ আমার কোন ব্যক্তিগত ব্যাপার নয়। তোমার ভালর জন্যই অপ্রিয় সত্য প্রকাশ করলাম।

মেয়েটিঃ ঠিক আছে, আপনার জানতে আর কিছু বাকি নেই তো?

হক : সেকি। এই তো সবে শুরু। এবার আমি কয়েকটি ঘটনার কথা বলব। মিথ্যে বল না। ফোরটিন হাফ ক্রিসেন্ট মিউজ-এর থিওডোর ব্রেকার। যে এখন মৃত, তার ব্যাপার তুমি কি জান? আর তার সঙ্গে তোমার সম্পর্কই বা কি ছিল? সে কি তোমাকে ব্ল্যাকমেল করেছিল?

মেয়েটিঃ কয়েক মাস আগে রাত্রে হঠাৎ ওর ওখানে গিয়ে পড়ি। ড্রাগন ক্লাবের নাম শুনেছি কিন্তু সেখানে যাইনি। কয়েকজন বন্ধুকে সেখানে দেখে বিস্মিত হই কিন্তু তারা আমাকে দেখেই অদৃশ্য হয়ে যায়। থিওডোর ব্লেকার আমাকে মদ খেতে দেয়। তার সঙ্গে এল. এস. ডি মিশিয়ে দিয়ে নেশায় আমাকে বেহুশ করে দেয়। সেই সুযোগে সে আমাকে নগ্ন অবস্থায় আমার সঙ্গে যৌন সংসর্গ করায় তার এক নিগ্রো সহচরকে দিয়ে। আর সেই দৃশ্যের ছবি তুলে রাখে। সম্পূর্ণ ছবি না দেখেই আমার মাথা ঘুরে যায়।

হকঃ আর তারপর থেকে রেকার তোমাকে ব্ল্যাকমেল করতে চায়। সেই ফিল্মের বিনিময়ে সে মোটা টাকা দাবী করে। এই তোর

মেয়েটিঃ হ্যাঁ, ঠিক তাই। তার দাবী অনুযায়ী অতটাকা আমার কাছে ছিল না। সে বিরক্ত হয়।

হক : তুমি ওর ক্লাবে গিয়েছিলো।

মেয়েটিঃ না, তবে বার কিংবা রেস্তোরাঁয় ওর সঙ্গে দেখা হত। একদিন ও আমাকে বলে ও আমার কাছে আর টাকার দাবি করবে না। তার কারণ ও নাকি সেই ফিল্ম, নিলামে চড়া দামে বিক্রি করতে যাচ্ছে।

হকঃ এরপর আর তোমার সঙ্গে রেকারের দেখা হয়নি বন্ড কান পেতে টেপ শোনে আর মনে মনে বলে। প্রিন্সেস, তুমি ঐ বুড়োটার ফাঁদে পড় না। সব খুলে বললো না।

মেয়েটিঃ না, তারপর আর ওর সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। কিল মাস্টার চিৎকার করে উঠল।

এবার হক রুম্মস্বরে বলে উঠলো। এক্ষেত্রে তোমার কথা সত্যি নয় প্রিন্সেস। তুমি আমাকে একটিও মিথ্যে কথা বলবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে, মনে আছে।

মেয়েটিঃ আপনার কথা আমি বুঝতে পারছি না। আমি আবার বলছি, ব্রেকারের সঙ্গে তারপর আমার আর দেখা হয়নি।

হকঃ তোমার হাতের এই দস্তানা দুটি ভাল করে দেখ। তোমাকে আর মিথ্যে বলার জন্য উপদেশ দেব না।

হা, এগুলো আমারই বটে।

হকঃ তোমার হাতের দস্তানায় রক্তের দাগ; রক্তের দাগ তোমার পোশাকে, হাঁটুতেও অস্বীকার করতে পার?

মেয়েটি কান্নায় ভেঙে পড়ল। না আমি অস্বীকার করছি না। সত্যি আমি বলছি, আমার টাকার বড় অভাব যাচ্ছিল। ব্লেকারের কাছে গিয়েছিলাম কিছু টাকা চাইতে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি ওর সারাঘর তছনছ, গলা কাটা হয়ে ব্লেকার সোফায়। সারা ঘরে রক্ত। আমি ভয়ে পালিয়ে আসতে যাই। টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যাই। তখনই আমার গায়ে রক্ত লেগে যায়। আমি তখন দিশাহার হয়ে পার্স থেকে এল, এস. ডি বার করে মুখে দিই। জ্ঞান হারাবার আগে আমার মনে হয় কেউ এসে গেলে তাহলে আমাকে পুলিশ খুনের কেসে জড়াতে পারবে না। আর সত্যিই একজন আমার মত ব্রেকার ক্লাবে গিয়েছিল। তারপরে আর জানি না। সেই ভদ্রলোকই আমাকে এখানে নিয়ে আসে।

হক : তোমার কি মনে হয় ব্লেকার খুন হয়েছে।

 মেয়েটি? হ্যাঁ, তাতে কোন সন্দেহ নেই।

হক : কিন্তু কে তাকে খুন করতে পারে বলে তোমার মনে হয় প্রিন্সেস?

মেয়েটি? জানিনা, তবে ওর মত শয়তানের অনেক শত্রু থাকতে পারে।

 হকঃ গুড! আচ্ছা পুর্তগাল ইনটেলিজেন্সির লোকটা তোমার চেনা?

 মেয়েটিঃ না, তবে লোকটা আমাকে অনুসরণ করেছে।

হক : ঠিক আছে প্রিন্সেস, এখন থেকে তুমি আমাদের লোক। আমাদের দলের একজন এজেন্টের সঙ্গে তোমাকে হংকং-এ যেতে হবে। সম্ভবতঃ ম্যাকাওতে যেতে হতে পারে, সেই লোকটা আর তুমি হবে স্বামী-স্ত্রী। ম্যাকাও হচ্ছে পুর্তগীজ কলোনি। মনে রেখ, সেখানে যদি তুমি কোন বেয়াদপি কর, তাহলে সমূহ বিপদ তোমার। তোমার সরকার তোমাকে ঘরে নিয়ে পাগলাগারদে পুরে রাখবে। মেয়েটি কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, বুঝেছি। আমি তো বলছি আমি আপনাদের হয়ে কাজ করব। আমাকে যেতে দিন। মনে হচ্ছে আমি আবার অসুস্থ হয়ে পড়ব।

হক : ঠিক আছে, তুমি এখন যেতে পার। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে ম্যাকাও যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে নাও। আর তোমার প্রয়োজনীয় পোশাক ও জিনিষপত্রের একটা তালিকা দিও। আমরা ব্যবস্থা করব। আর শোন, তোমাকে হোটেলে একাই যেতে হবে। তোমার সঙ্গে আমাদের লোক থাকলে, তোমার শত্রুপক্ষ জানতে পারলে তোমার ক্ষতি হবে বেশি। যথা সময়ে আমি আবার তোমাকে ডেকে আনব, গুড বাই।

বউ আশ্চর্য হল হকের ক্ষমতা দেখে। হক সেই টেপটা বন্ডের হাতে তুলে দিয়ে বলেছিলেন, টেপটা চালিয়ে দেখ আমার বিশ্বাস, মেয়েটি আমাদের দারুণ উপকারে আসবে। ওকে তুমি তোমার স্ত্রী হিসেবে ম্যাকাওতে নিতে পারলে আমাদের নিজেদের স্বার্থে এবং তোমার ব্যক্তিগত স্ফুর্তির কাজে লাগবে। উইশ ইউ গুড লাক মাই বয়।

টেপটা বন্ধ করতেই বন্ড দেখল তার ঘরের সামনে এক জোড়া জুতোর শব্দ এসে থেমে গেল।

ভেতরে আসতে পার, বন্ড বলল।

 দরজা ঠেলে টম বক্সার ঘরে ঢুকে বন্ডের দিকে তাকিয়ে দাঁত বার করে হাসল, ক্যারাটে, কেউ নেই।

বন্ডও হাসল, কেন থাকবে না। আমরা মিলেমিশে অনেক ভাল কাজ করতে পারি। এক মিনিট এগিয়ে গিয়ে বন্ড ডেস্কের থেকে একটু লুগার বার করল। লুগারের দিকে তাকিয়ে টম বলল, মানুষের সব থেকে উপকারী বন্ধু হল ওটা।

বন্ড তার কথায় হাসল। তার হাসিটা অর্থপূর্ণ।

.

০৬.

টোকিও হয়ে হংকং-এ ওদের যাত্রা শুরু বি ও এ সি ৭০৭ বিমানে। যাওয়ার আগে মেয়েটি সারক্ষণ ঘুমিয়ে কাটাল। হক তার পোশাক, লাগেজ সবকিছুর পরিবর্তন ঘটাল–হাঁটুর নীচে স্কাটের ঝুল। আলগা শার্ট। আর মেয়েটিও তারপর কেমন যেন বদলে গেছে। বন্ড তার হাতে হাতকড়া পরিয়ে প্লেনে তুলল–মেয়েটিকে যদি কেউ অপহরণ করে সেই ভয়ে।

হংকং-এ পাড়ি দেবার আগে বন্ড তার বসের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার কক্ষে তিনঘন্টা আলোচনা করে। ফিরে এলে ঘুমন্ত মেয়েটিকে দেখে ভাবে হংকং-এ সে আমার স্ত্রী হয়ে যাচ্ছে। হকের নির্দেশ, প্রিন্সেস আর সে এমনভাবে চলবে কেউ যেন কোন প্রকারে সন্দেহ না করে যে তারা স্বামী-স্ত্রী নয়। দিনের আলোয় চঞ্চলা হরিণীর মত তারা বিচরণ করবে আর রাতের অন্ধকারে হোটেলে ফিরে এসে তাদের জন্য নির্দিষ্ট কক্ষে সে হবে তার শয্যাসঙ্গিনী।

প্লেনে ওঠার আগে হক তাকে একটা টাটকা খবর দিল। তার মুখে হাসি দেখা গেল। জেনারেল আগাস্টে বুলেঙ্গার এখন ম্যাকাওতে রয়েছে সম্ভবতঃ চুন লি র সঙ্গে দেখা করবার জন্য। তোমার সঙ্গে সে মিলিত হতে চায়। আর প্রিন্সেসকেও হাতাতে চায়। আমি তোমাকে আগেই বলেছি, জেনারেলের সুন্দরী নারীর প্রতি প্রচণ্ড দুর্বলতা আছে। আমার ধারণা, হংকং-এ থাকার সময় প্রিন্সেসের নগ্ন ছবি নিশ্চয়ই দেখে থাকবে। এখন সে আবার ব্লেকারের র-ফ্লিমটাও হাতিয়েছে আর সেই ছবি দেখেই সে প্রিন্সেসকে চিনে থাকবে। তাই মেয়েটিকে তার চাই। তার ব্যবসায়। সওদা করার ব্যাপারে প্রিন্সেসকে সে কাজে লাগাতে চায়। কয়েক মিলিয়ন ডলার মূল্যের কাঁচা হীরের বিনিময়ে আমরা তার সঙ্গে একটা রফা করতে পারি। মেয়েটি আমাদের হাতের মুঠোয় এখন, কি বল?

বন্ড কার্টার জিজ্ঞেস করে, আপনার ঐ কাঁচা হীরের কথা তো বুঝলাম না স্যার? আর আমাকে এত দ্রুত এগুতে বলছেন। চীনারা কম তৎপর নয়।

খুবই সহজ অর্থ। এই কাঁচা হীরের বিনিময়ে পুর্তগীজদের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য প্রিন্স আসকারি আর বুলেঙ্গার অর্থ সংগ্রহ করছে। দক্ষিণ পশ্চিম আফ্রিকার কিছু অংশ অ্যাংগোলা বিদ্রোহীরা দখল করেছে। অ্যাংগোলায় পুর্তগীজদের কয়েকটা হীরের খনি আছে। বিদ্রোহীদের প্রচুর চাই। কাজেই ওরা জানে আসকারি, বুলেঙ্গার হংকং কিংবা ম্যাকাওতে হীরে বেচার চেষ্টা করবে। ওদিকে চুন লি হীরে কেনার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।

কিন্তু চীনেদের হীরে কিনতে এত আগ্রহ কেন তা বুঝলাম না।

কারণ চীনারা ব্যবসা করতে চায় এই কাঁচা হীরে নিয়ে। বুঝেছি কিল মাস্টার মাথা নেড়ে বলে, এক্ষেত্রে আমরা জেনারেল এবং প্রিন্সে আসকারিকে তাদের কাঁচা হীরের জন্য ভাল দাম দেব, আর তারা কর্নেল চুন লিকে আমাদের হাতে তুলে দেবে। বিশেষ করে আমাদের স্বার্থে, এই তো?

তোমার অনুমান আংশিকভাবে ঠিক। কারণ বুলেঙ্গির লোকটা দারুণ ধূর্ত ও শয়তান। তার নীতি হল দু মুখো সাপের মতন। অ্যাংগোলিয়ার বিদ্রোহীরা সফল হলে আসকারিকে খতম করার চেষ্টা করবে সে। আসকারিকে সরাতে পারলেই বিদ্রোহীদের নেতা হবে সে। যাই হোক আসকারি সম্পর্কে যেটুকু জানি তাতে লোকটা আদর্শবাদী, সৎ এক অবস্থাপন্ন লোক। আমি তোমাকে এমন একটা জলাধারে নিক্ষেপ করছি, যেখানে রাশি রাশি হিংস্র হাঙ্গর ওৎ পেতে বসে আছে তোমার জন্য। অতএব মাই বয়, খুব সাবধান।

সবই তো বুঝলাম কিন্তু এক্ষেত্রে টেড ব্লেকারের ভূমিকা যে কি ছিল তা তো বুঝলাম না স্যার?

খুবই সহজ, বলে, হক তাকে বোঝাতে থাকেন, প্রিন্সেসকে মাদক দ্রব্যে আসক্ত করে তাকে দিয়ে ব্লুফিল্ম তুলে পরে সেই ব্লু ফিল্ম দেখিয়ে তাকে ব্ল্যাকমেল করা। কিন্তু পরে যখন জানল যে প্রিন্সেসের কাছে কোন টাকা নেই তখন সে অন্য ধান্দায় মেতে ওঠে। ব্লেকার জানতো প্রিন্সেসের কাকা লুইস দ্য গামা লিসবনে ক্যাবিনেট পর্যায়ের একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি। তাই সে তাকে প্রিন্সের নগ্ন ছবি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করতে চেয়েছিল। যাই হোক প্রিন্সেসের কাকা পুর্তগীজ ইনটেলিজেন্সকে সতর্ক করে দিয়ে হুকুম দেয়, যেভাবেই হোক প্রিন্সেসকে পুর্তগালে ফিরিয়ে আনা চাই। কিন্তু শেষ খবর হল, পুর্তগীজ চায় প্রিন্সেসকে কেন্দ্র করে তার কাকা কেসটা প্রফুঁকো স্ক্যান্ডালে পরিণত হোক। মনে আছে তোমার, প্রফুঁকো কেলেঙ্কারির দরুণ তখনকার ব্রিটিশ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হয়েছিল! প্রিন্স আসকারি প্রিন্সেস এবং ব্রেকারের বু ফিল্ম দু টোকেই কাজে লাগাতে চায়। পুর্তগীজ সরকারকে উচ্ছেদ করতে চায় প্রিন্সেসের কাকাকে এই কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে। জেনারেল বুলেঙ্গারের কথা তো আগেই বলেছি তোমাকে। সে মেয়েটির নগ্ন ছবি দেখে এত বেশি গরম হয়ে আছে যে, তাকে সে তার শয্যাসঙ্গিনী করতে চায় চিরদিনের জন্য। তাই সে প্রিন্সেসকে পাবার জন্য চীনা বন্ধুদের সাহায্য পেতে চায়। লন্ডনে চীনাদের গুপ্তচর সংস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে জেনারেলের মত আছে। চীনারা ব্লেকারকে খুন করেই ক্ষান্ত হয়নি তারা দুজন নিগ্রোকেও খতম করেছে। জেনারেল হয়ত বু ফিল্ম পেয়ে গেছে, আর এখন মেয়েটিকে পেতে চায়। সে জানে মেয়েটি এখন আমাদের কাছে। আমরা তার হাতে মেয়েটিকে তুলে দেব তার কাছে মোটা টাকার হীরে সংগ্রহের বিনিময়ে। আর সেই সঙ্গে চুন লিকে তোমার হাতে তুলে দিতে হবে তাকে।

কিংবা সে আমাকে চুন লি র হাতে তুলে দেবে, এই তো? আমি তো তোমাকে আগেই বলেছি বস, তোমাকে একঝাক হাঙরের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

প্লেনের মধ্যে ইংরেজি, ফরাসী এবং চীনা ভাষায় উচ্চারিত হল–আপনারা যে যার আসনের বেল্ট শক্ত করে বেঁধে নিন ধূমপান করবেন না। তারা তখন কাকটাই এয়ারপোর্টে পৌঁছেছিল। বন্ড ঘুমন্ত প্রিন্সেসকে জাগিয়ে তুলে ফিসফিসিয়ে বলল, আমার সুন্দরী বৌ উঠে পড়। আমাদের গন্তব্যস্থলে প্রায় এসে গেছি।

প্রিন্সেস বাঁকা চোখে বন্ডের দিকে তাকিয়ে, ঐ কথাটা কি তোমার ব্যবহার না করলেই নয়?

তেমনি বাঁকা চোখে তাকিয়ে বন্ড বলল, হ্যাঁ, এর প্রয়োজন খুবই জরুরী, আর এ কথাটা তোমাকে অবশ্যই মনে। রাখতে হবে। আমাদের পরিচয় হল, মি. এ্যান্ড মিসেস ফ্রাঙ্গ ম্যানিং, বাফেলো, নিউইয়র্ক, সদ্য বিবাহিত। হংকং-এ এসেছি মধুচন্দ্রিমা যাপন করতে।

বৃষ্টি পড়ছিল। তবু গরমের যেন ঘাটতি নেই। প্লেন থেকে নেমে তারা কাষ্টমস-এর দিকে এগিয়ে গেল। আকাশের অবস্থা ভাল নয়। যে কোন সময় হংকং দ্বীপে ঝড় উঠতে পারে, সমুদ্রে টাইফুন দেখা দিতে পারে।

কাষ্টমস চেকিং নির্বিঘ্নেই কাটল। বন্ড তবু সতর্ক হয়ে পকেটে হুগার এবং ট্যাকে গোঁজা স্টিলটো ভাল করে দেখে নিল। সে জানে এ্যাক্স-এর লোকেরা তাকে এখানে আড়াল করে রাখছে, সে তাদের কর্তব্য সম্পর্কে যে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল সেটা ভাল করেই জানে। বন্ড এও জানে জেনারেল বুলেঙ্গার চুন লি র এজেন্টরাও নজর রাখবে তাদের ওপর। দু পক্ষই চৈনিক।

নির্দেশ অনুযায়ী সে ভিক্টোরিয়ায় বু মান্দারিন হোটেলে উঠবে। সেখানে তাকে অপেক্ষা করতে হবে যতক্ষণ জেনারেল যোগাযোগ না করেন। বন্ড কাষ্টমস পার হয়ে আসতেই নির্দিষ্ট ট্যাক্সি এসে গেল। প্রিন্সেসকে নিয়ে বন্ড ট্যাক্সিতে উঠেই আবার তাকে হাতকড়াটা পরিয়ে দিল। প্রিন্সেস তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল। বন্ড চীনা ড্রাইভারকে নির্দেশ দিল র মান্দারিন হোটেলে যেতে এবং সেই সঙ্গে বলল, একটু আস্তে চালাতে, রাস্তাটা সে ভাল করে চিনে রাখতে চায়।

তোমার ভালর জন্যই বন্ড বোঝাল প্রিন্সেসকে, এই অপ্রিয় কাজটা আমাকে করতে হল। এখানে বহুলোক তোমার সম্পর্কে দারুণ আগ্রহী। ওরা তোমাকে যে কোন সময়ে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে পারে।

প্রিন্সেস তার কথায় ভোলবার পাত্রী নয়। সে কঠিন মুখ করে তার দিকে তাকিয়ে রইল। বন্ড তার কঠিন মনোভাবের অর্থ বুঝতে পারে না। সেই সময় বন্ড জনিকে দেখতে পেয়ে মেয়েটির কথা ভুলে গেল। তার ট্যাক্সি থেকে তিনটি গাড়ির পিছনে জনি একটা ছোট্ট লাল রঙের এম. জি. গাড়ি চালাচ্ছিল। একটা সিগারেট ধরিয়ে বন্ড জনির কথা বলল। জনি তার পুরনো বন্ধু, দু জনেই আমেরিকায় বড় হয়েছিল। জনিও তাকে নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছে তাই সে তার ট্যাক্সিটাকে ছাড়িয়ে যেতে চাইল না। মনে হয় সে পেছন থেকে অনুসরণ করে জানতে চায়, তারা কোথায় যায়।

কিল মাস্টার বন্ড তাকে লক্ষ্য করে সাইড মীররের ওপর দৃষ্টি রাখে। স্টার ফেরীর কাছে এসে এক সময় জনির লাল এম. জি. তার দৃষ্টির আড়াল হয়ে গেল। বন্ড ভাবল, জনি এখানে কি করছে? জনির আসল নাম সে জানে না, জানে না সে তার চৈনিক নাম। জনির সম্পর্কে তার কাছে শেষ খবর হল, সে নাকি হংকং-এ প্রাইভেট ডিটেকটিভ এজেন্সির অফিস খুলে বসেছে।

বন্ড স্থির দৃষ্টি রাখল লাল এম, জির ওপরে। কোলোন ট্রাফিক পাতলা হয়ে আসছিল। জনি এবার একটা গাড়ি টপকে তার ট্যাক্সি দুটো গাড়ির পিছনে পিছনে চলতে থাকল। কিল মাস্টার অবাক হয়ে ভাবে। বুলেঙ্গার চৈনিক, চুন লি চৈনিক, আবার হক ও একজন চৈনিক–তারা সবাই মিলে জনিকে তাদের এজেন্ট হিসেবে মনোনীত করেনি তো?

বন্ড হাসলো। জনি আর যাইহোক তার পুরনো বন্ধু, তার চেনা-জানার মধ্যে একজন সুতরাং খুব একটা অসুবিধা হবে না তাকে সামলাতে।

হ্যাপি জনির সামনে রেস ট্র্যাকের উল্টো দিকে কুইনস রোডের ধারে বু মান্দারিন হোটেল। মেয়েটির হাত থেকে হাতকড়া খুলে দিল বন্ড। মৃদু হেসে প্রিন্সেসকে সামনের দিকে তাকাতে বলল। হোটেলের সামনে সুইমিং পুল, নীল পানি, টেনিস কোর্ট, বাগানে চীনে অশ্বথের গাছ, লাকসারির চূড়ান্ত এই মারিন হোটেল।

মধু চন্দ্রিমার স্বরে বন্ড মৃদু উচ্ছ্বসিত হয়ে প্রিন্সেসকে বলল, লাভলি ডার্লিং। এসব যেন আমাদের জন্যই তৈরি, তাই নয় কি?

প্রিন্সেসের মুখ কঠিন হয়ে উঠল, তুমি নিজেকে বোকা বানানোর চেষ্টা করো না।

বন্ড তার কথায় কান দিল না। চুক্তিমত স্বামীর দাবীতে হঠাৎ সে প্রিন্সসের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় চেপে ধরে আবেগ কম্পিত স্বরে বলে উঠল, এসো প্রিন্সেস, এবার স্বর্গে আরোহণ করা যাক। দিনে পাঁচশ ডলারের স্যইট। মন্দ কি?

এবার প্রিন্সেস হেসে ফেলল। বন্ড বলল, লন্ডন ছেড়ে আসার পর থেকে এই প্রথম তুমি হাসলে। প্রিন্সেস হাসিমুখেই বলল, হোটেল ঘরে ঢুকেই যত শীঘ্র পার আমার জন্য মদের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের মধুচন্দ্রিমা উৎসব মধুময় করার জন্য। চেষ্টা করব। এখান এস আমার সঙ্গে।

লাল এম. জির কোন পাত্তা নেই। ওদিকে কুইন্স রোডে দু জন লোকসমেত নীল হাম্বার থেমে পড়ল। সংক্ষেপে ড্রাইভারকে নির্দেশ দিয়ে মেয়েটিকে সঙ্গে নিয়ে হোটেলের লবিতে এসে উঠল বন্ড। মেয়েটি একবারও তার হাত ছাড়ল না, নিখুঁত স্বামী-স্ত্রীর অভিনয় করছে। বন্ড লক্ষ্য করল হোটেলের লবিতে প্রত্যেকটি পুরুষের চোখে তুরপুনের মত বিধনো প্রিন্সেসের সৌন্দর্য্য। সম্ভবতঃ তারা বন্ডের সৌভাগ্যের প্রতি হিংসা প্রকাশ করতে থাকল ভেতরে ভেতরে। ডেভম্যানকে শুনিয়ে বন্ড কার্টার প্রিন্সেসের চিবুকের কাছে মুখ নামিয়ে শুধাল, ডার্লিং, আমি তোমাকে খুব ভালবাসি। তাই নিলজ্জের মত তোমার হাতটা ছাড়তে পারছি না, দেখছ না?

প্রিন্সেসের সুন্দর লাল ঠোঁটে বিরক্তির ভাব দেখা গেল। আমার কাছে তুমি একটা স্টুপিড ভাড় ছাড়া আর কিছু নও।

হোটেল ক্লার্ক হেসে বিনীত সুরে বলল, আপনাদের জন্য হানিমুনের স্যুইট প্রস্তুত স্যার, ফুলে ফুলে সাজানো। আশা করি, মিঃ এ্যান্ড মিসেস ম্যানিং আমাদের সঙ্গে কিছুদিন এখানে থেকে আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন। যদি কোন প্রয়োজন হয় তো বলবেন

বন্ড দ্রুত তার সঙ্গে কথাবার্তা সেরে মেয়েটিকে ইশারায় এলিভেটরের দিকে যেতে বলল, দু টো বয় তাদের মালপত্র সঙ্গে নিয়ে অনুসরণ করল।

মিনিট পাঁচেক পরে ওরা ওদের কামরায় এল। জ্বলন্ত লাল গোলাপ আর ম্যাগনোলিয়ার আমন্ত্রণ। কামরায় এসেই প্রিন্সেস আবদারের সুরে বলল, উঃ অনেকক্ষণ ড্রিঙ্ক করিনি। আমি এখন খুব ভাল মেয়ে হয়েছি, তোমার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করছি, তাই নয় কি? আমার সঙ্গে তোমার এক মত নয় কি?

বন্ড তার কব্জি ঘড়ির দিকে তাকাতেই মনে পড়ে গেল, তার এখন অনেক কাজ। প্রিন্সেসকে একটা ডিভানের ওপর ঠেলে দিয়ে বলল, দেখ প্রিন্সেস দ্য গামা, এবার একটু আলোচনা করে নেওয়া যাক। প্রথমেই তোমাকে বলে রাখি, তুমি ড্রিঙ্ক পাচ্ছ না, কোন ড্রিঙ্ক নয়, কোন ড্রাগ নয়। তোমাকে যা যা বলা হয়েছে, এখানে তুমি ঠিক তাই করে যাবে।

মেয়েটির সবুজ চোখ হঠাৎ এক কঠিন পাথরে পরিণত হল, তার সুন্দর ঠোঁট এখন বিবর্ণ, কথায় বিরক্তি, তুমি, তুমি, একটা ভাঁড় কোথাকার। তুমি কি ভেবেছ মেয়েরা তোমার কাছে সৃষ্টিকর্তার দান? ভাবনি? মেয়েটির আবার পাগলামি শুরু হল।

বন্ড তাকে সামলাতে তার বুকের ওপর তার দেহের সমস্ত ভার দিয়ে চেপে ধরে। তার দৃষ্টি কঠিন হয়ে ওঠে নিমেষে, তুমি যদি তোমার সেই হিস্ট্রিয়া রোগটা প্রকাশ করতে চাও তো এখুনি কর। তাড়াতাড়ি

প্রিন্সেস ডিভানে তার নরম শরীরটা এলিয়ে দিল। এরপর তার স্কার্ট শালীনতার সীমা অতিক্রম করল। উন্মাদিনীর মত একটানে ব্রাটা সরিয়ে দিয়ে স্তন দুটি টেনে বের করে প্রিন্সেস বলল, প্লিজ, একটা বোতল দিলে আমি তোমাকে সেই স্বাভাবিক আদিম শব্দ উচ্চারিত হল প্রিন্সেসের কণ্ঠে।

মুহূর্তের মধ্যে বন্ড প্রচন্ড এক চড় বসাল প্রিন্সেসের গালে। প্রিন্সেসের গালের লাল আরো লাল হল। প্রিন্সেস তখন ক্ষেপে লাল, নখ দিয়ে আঁচড়ে ক্ষত-বিক্ষত করল বন্ডের মুখ। বন্ড গম্ভীরভাবে প্রিন্সেসকে চেপে ধরল ডিভানের ওপর, স্টপ! তুমি আমাদের সঙ্গে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছ। আমাদের চুক্তি মত এখন আমি তোমাকে যা বলব তাই তোমাকে করতে হবে। কাজ শেষ হলে তোমার পাওনা গণ্ডা মিটিয়ে দেওয়া হবে। আমাদের মিশন শেষ হওয়ার আগে ফের যদি তুমি বেয়াদপি কর, তাহলে আমরা তোমাকে পুর্তগীজ সরকারের হাতে তুলে দিতে একটুও দ্বিধা করব না। আমি জানি, তুমি একটা বাজারের নষ্টা মেয়ে।

বাজারের মেয়ে কথাটা শোনামাত্র প্রিন্সেসের লাল মুখ কেমন যেন সাদা ফ্যাকাসে হয়ে উঠল। একজন চীনা মেয়ের কাছে বাজারের মেয়ে কথাটা খুবই খারাপ। মেয়েটি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। ঠিক সেই সময় দরজায় নক করার শব্দ হল।

দরজা খুলে বন্ড দু জন সাদা চামড়ার লোককে ভেতরে আহ্বান করল। বড় মাপের, তবে তাদের তেমন আকর্ষণীয় চেহারা নয়। তারা এক্স-এর লোক। ম্যানিলা থেকে হক তাদের পাঠিয়েছে।

তাদের মধ্যে একজনের হাতে একটা স্যুটকেশ। বন্ডের দিকে হাত বাড়িয়ে সে তার পরিচয় দিল, স্যার। আমার নাম প্রেস্টন। ট্যাক্সিতে ছেয়ে গেছে চারদিক।

বন্ড মাথা নেড়ে জিজ্ঞেস করল, কোন্ কোন্ রঙ সেই ট্যাক্সিগুলোর।

তার অপর সঙ্গী ডিকেন্সন এই প্রথম মুখ খুলল, সাদা আর হলুদ রঙের স্যার।

বন্ড ভ্রূ কোঁচকালো, কালো রঙের ট্যাক্সি নেই?

এ্যাক্স-এর লোকেরা দৃষ্টি বিনিময় করল। প্রেস্টন বলল, না স্যার। কেন, কালো রঙের কি থাকার কথা?

-খবর কখনো ঠিক হয় না, এমন কি এ্যাক্স-এরও। নিক তাদের বলল, সে যাই হোক, কালো গাড়ির কথা ভুলে যাও।

প্রেস্টন এবার স্যুটকেশটা খুলে একটা ছোট রেডিও ট্রান্সমিটার চালু করবার কাজে লেগে পড়ল। ডিভানের ওপর পড়ে থাকা মেয়েটির দিকে কেউ তাকাল না। রেডিও ট্রান্সমিটার চালু করে প্রেস্টন জিজ্ঞেস করল বন্ডকে, আপনার কখন হেলিকপ্টারের প্রয়োজন হবে স্যার?

এখন নয়। যতক্ষণ না তারা যোগাযোগ করে ততক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে আমাদের। বন্ড বলে, আমি যে এখানে, এ খবর তাদের জানাতে হবেই।

তারা আপনাকে এয়ারপোর্টেই লক্ষ্য করে থাকবে, ডিকেন্সন বলল, দুজনেই চৈনিক। এ ওর ওপর নজর রাখছে, সেই সঙ্গে আপনাদের ওপরেও আর জনিও অবশ্যই।

তাহলে জনিকে তোমরাও দেখেছ? বন্ড জিজ্ঞেস করল, এখানে আসার উদ্দেশ্য কি জান?

তারা দুজনেই মাথা নাড়ল, না স্যার, ওর ব্যাপারে আমাদের কোন ধারণা নেই। বরং জনিকে দেখে আমরা একটু আশ্চর্যই হয়েছি। আপনি যে কালো গাড়ির কথা বলেছিলেন, সেই গাড়ির আরোহীদের সঙ্গে তার কি কোন সম্পর্ক আছে

হ্যাঁ হতে পারে। খোঁজ নিয়ে দেখব। জনির অতীত ইতিহাস আমার জানা আছে—

ইতিমধ্যে ফোনটা বেজে উঠল। বন্ড রিসিভারটা তুলে নিল। ওরা হতে পারে। মাউথ পীসে মুখ রেখে বলল সে,

মিঃ ফ্র্যাঙ্ক ম্যানিং সদ্য বিবাহিত! হানিমুন করতে এসেছেন? পরিষ্কার ওরিয়েন্টাল ধাঁচে ইংরেজি উচ্চারণ।

হ্যাঁ, আমি ফ্র্যাঙ্ক ম্যানিং কথা বলছি। বন্ড উত্তর দিয়ে ভাবে, ওদের তাহলে বোকা বানাতে পেরেছে সে। তার আসল পরিচয় ওরা জানতে পারেনি। এখন তার কাজ হল জেনারেল বুলেঙ্গারের সঙ্গে যোগাযোগ করা–হংকং কিংবা ম্যাকাও কর্তৃপক্ষ যেখানেই হোক না কেন।আপনি? দূরভাসে সেই কণ্ঠস্বর ভেসে আসে, ম্যাকাওতে এলে আপনার শুধু আগ্রহই নয় লাভও হবে অনেক। আর এখুনি আসতে হবে। হংকং থেকে পঁচাত্তর মিনিট। আপনি চাইলে আপনার সেখানে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারি।

দরকার হবে না। বন্ড বলল। আমি নিজেই আমার যাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারব। তবে আমার মনে হয়, আজ যেতে পারব না।

কিন্তু আজ আসতেই হবে। তীক্ষ্ণ কণ্ঠস্বর, সময় নষ্ট করবেন না।

না, আজ হবে না।

রাতের দিকে?

 রাতের দিকে হতে পারে। তবে একটু দেরী হবে। বন্ড হাসল, বেশি রাতেই বেশি সুবিধে তার।

 ঠিক আছে, ওপার থেকে জবাব এল, গোল্ডেন টাইগার, রুয়াদাস রোডের সরাই খানায় চলে আসবেন। সঙ্গে মাল আনতে ভুলবেন না। মাল মানে বুঝেছেন তো প্রিন্স

হ্যাঁ বুঝেছি।

 আপনারা দুজনে মানে, আপনি আর প্রিন্সেস কেবল আসবেন। কথা না শুনলে, কিংবা চালাকি করলে বিপদ হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার নিরাপত্তার দায়িত্ব আমরা নিতে পারব না।

ঠিক আছে, তাই হবে। ফোন ছেড়ে দিয়ে বন্ড এ্যাক্স-এর দু জন লোকের দিকে তাকাল। প্রেস্টন। তোমার রেডিও ট্রানজিস্টার চালু করে বলে দাও, চটপট একটা হেলিকপ্টার পাঠিয়ে দেবার জন্য। আর কুইন্স রোডে ট্রাফিক জ্যাম করার বন্দোবস্ত কর। ঠিক আছে স্যার। প্রেস্টন রেডিও ট্রানজিস্টার চালু করে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয় তাদের দলের লোকদের।

এবার ডিকেন্সনের দিকে তাকিয়ে বন্ড বলল, এখানে বেশি রাত বলতে কখন বোঝায়?

এগারটা।

ধন্যবাদ। তোমাদের কাছে হাতকড়া আছে।

হাতকড়া, স্যার? ওরা বিস্মিত হল। ডিকেন্সন উত্তরে বলল, না তো স্যার। আসার সময় আমাদের তো বলা হয়নি হাতকড়ার প্রয়োজন হতে পারে।

বন্ড তখন তার নিজের হাতকড়াটা পকেট থেকে বের করে ডিকেন্সনের হাতে তুলে দিয়ে প্রিন্সেসকে দেখিয়ে দিল। কান্নায় প্রিন্সেসের চোখ রাঙা। বন্ড ছোট্ট করে বলল, ওকে ছাদে নিয়ে যাও। ওর জিনিষপত্র এখানেই থাকুক। হেলিকপ্টারে তোলার পর ওর হাতের হাতকড়া খুলে নেবে। ওর প্রয়োজন খুব জরুরী আমাদের কাছে। ওই আমাদের বিজনেসের মূলধন। তাই ওর ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখবে। যাতে করে ও কিডন্যাপ হয়।

প্রিন্সেস মুখের ওপর থেকে হাত সরিয়ে ভাঙা ভাঙা গলায় অনুরোধ জানাল, প্লিজ, একটু ড্রিঙ্ক…

বন্ড ডিকেন্সনের চোখে চোখ রেখে বলল, আমার নির্দেশ ছাড়া এক চুমুক ড্রিঙ্কও দেবে না। তোমার ওপর প্রভাব বিস্তার করতে দেবে না ওকে। ও চেষ্টা করতে পারে, এ ব্যাপারে অনেক ছেনালী জানে ও।

প্রিন্সেস তার পা দুটো আড়াআড়ি ভাবে রাখল। স্বচ্ছ নাইলনের প্যান্টিজের আড়াল থেকে সবই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ডিকেন্স দাঁত বের করে হাসল বন্ডের দিকে তাকিয়ে। আমার বিবাহিত জীবন বেশ সুখের স্যার। কোন মেয়েই আমাকে ভোলাতে পারবে না, সে যত সুন্দরী আর সেক্সিই হোক না কেন। আপনি চিন্তা করবেন না।

প্রেস্টন তখন মাইকে কথা বলছিল, স্পিনার ওয়ানঃ হ্যাঁচেট ওয়ান-এর মেসেজ। আমাদের মিশন শুরু হচ্ছে এবার। উইলকো। কামিং। আউট…আমার কথা বুঝলে স্পিনার ওয়ান?

কিন মাস্টার এবার প্রেক্টনের দিকে ফিরে বলল, ঠিক আছে প্রেস্টন। ট্রাফিক জ্যামের বন্দোবস্ত কর। এবার আমাদের বন্ধুরা হেলিকপ্টারকে অনুসরণ করে, আমি চাই না। বুমন্দারিন হোটেলের ছাদটা বিরাট। হেলিকপ্টার ওঠা নামা করার পক্ষে উপযোগী। ডিকেন্সন আগেই প্রিন্সেসকে ছাদের ওপরে নিয়ে গিয়েছিল। বন্ড পরে ছাদে এল। ওদিকে হেলিকপ্টার নিঃশব্দে ছাদে নামল। বন্ডের নির্দেশ মত ডিকেন্সন মেয়েটিকে হেলিকপ্টারে তুলে নিল। পাঁচ মিনিট পরেই প্রিন্সেসকে একটা স্টীমলঞ্চে নামিয়ে দেওয়া হবে। ওকে তখন খুঁজে পেতে ওদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে, বন্ড ভাবল। ট্রাফিক-জ্যামে এতক্ষণে যারা আটকা পড়েছে তাদের মধ্যে চুন লির লোকও আছে।

.

০৭.

হংকং-এর আইস হাউস স্ট্রীটটা বেরিয়েছে কনট রোডের চৌমাথা থেকে। মুচি, ধোপা, প্লাস্টিক ফুলের কারবারি থেকে দাঁতের ডাক্তার এখানে সবই আছে।

এরই মধ্যে জনি, জনি ওয়াইজ গাই-এর আস্তানাটা খুঁজে নিল বন্ড। পিতলের পাতের ওপর ইংরেজি ও চীনা হরফে জনি হোয়, প্রাইভেট ইনটেলিজেন্স লেখা রয়েছে।

চারতলায় তার অফিসে বন্ড উঠল তাকে হঠাৎ চমকে দেবে ভেবে। দরজা ভেজানো ছিল। নতুন ধরনের এ্যাক্স এর হোল্টারে রাখা লুগারটা হাতে নিয়ে দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকতে যাবে পানি পড়ার ছপ ছপ আওয়াজ তার কানে ভেসে এল। ঘরের ভেতর চোখ বুলোতে দেখল এক কোণায় দীর্ঘাকৃতি একজন নিগ্রো ল্যাভেটরিতে হাত ধুচ্ছে। তাকে দেখা মাত্র নিক সেদিকে এগিয়ে গেল। তার হাতে উদ্যত লুগার।

ঠিক ঐভাবে ওখানে দাঁড়িয়ে থাক, কঠিন সুরে বলল বন্ড, এক চুলও নড়বে না, ওপর দিকে হাত তুলে দেওয়ালে পিঠ দিয়ে দাঁড়াও।

লোকটা তার হুকুম মান্য করল। পরণে দামী স্যুট। তবে শার্টটা ছেঁড়া, কারোর সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে ছিঁড়ে গিয়ে থাকবে হয়ত। কেবল একটা পায়ে জুতা। চাহনি উদভ্রান্তের মত। বন্ড তার দিকে একটা চেয়ার ছুঁড়ে দিয়ে বলল, বস।

পরক্ষণেই জনির রক্তাক্ত দেহটা বুকে ছুরি বিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেল। সে যদি মৃত না হত, যদি কথা বলতে পারত তাহলে নিশ্চয়ই আমাকে বলত, বন্ধু সেই এলে, কিন্তু বড় দেরী করে ফেললে।

বন্ড আবার বাস্তবে ফিরে এল। এবার সে লোকটার মুখোমুখি হল। অসম্ভব সুগঠিত চেহারার মনে হল নিগ্রো প্রেত। মৃত জনির দিকে তাকিয়ে বন্ড বলল, তুমি ওকে খুন করেছ? হ্যাঁ, সে আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আমাকে খুন করতে চেয়েছিল। নিখুঁত ইংরেজি উচ্চারণ, অক্সফোর্ড ঈটন কায়দায়। কিন্তু বন্ড অবাক হল তার পঁাত দেখে দাঁতগুলো সরু করাতের মত।

বন্ডের বিস্ময় দেখে সে বলল, অবাক হওয়ার কিছু নেই আমার দাঁত দেখে। আমি চৌকি–আমাদের চৌকি জাতের লোকদের এটাই নিয়ম। পাঁচশ বছর তারা বন্দী ছিল। তাদের এবার মুক্তিযুদ্ধ শুরু–আমিও তাদের একজন। আমাকেও কিছু একটা, সবই পলিটিক্স, তোমাদের কংগ্রেসের সেনেটরদের মত কিছু করতে হবে।

 আমি তোমার কথা মেনে নিলাম কিন্তু তুমি জনিকে খুন করতে গেলে কেন? –বস্ত বলল।

আমার সঙ্গে ও নোংরা খেলা খেলতে চেয়েছিল। শুধু তাই নয়, ওরা আমাকে কাল রাতে খতম করতে চেয়েছিল ম্যাকাওয়েতে–আমি শ্রীমার থেকে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে এসেছি হংকং-এ-এখানে আসতে জনি পুলড এ গান অন মি…তারই বদলা নিয়ে হাতের রক্ত ধুচ্ছিলাম, আর তখুনি এলেন আপনি। ওয়েল মিঃ কার্টার, সে নিশ্চয়ই বেশি কিছু হারায়নি, হারিয়েছে কি সে?

কি আশ্চর্য। আপনি আমাকে চেনেন? কিন্তু কেমন করে?

খুব সহজেই মিঃ কার্টার, আমি আপনাকে চিনেছি যেমন করে আপনিও জেনেছেন আমি কে। আমার নিজের ইনটেলিজেন্স সার্ভিস খুব একটা পাকাঁপোক্ত নয়, তবে পুর্তগীজ ইনটেলিজেন্স-এর উপর আমার আস্থা আছে। তাদের কাছে আপনাদের একটা সম্পূর্ণ ফাইল আছে মিঃ কার্টার। এ্যাংগোলায় আমাদের হেডকোয়ার্টারের মাধ্যমে আপনার সেই ফাইলের একটা ফটোস্ট্যাট কপি সংগ্রহ করে রেখেছি, আরো অনেক বিগ এক্সিকিউটিভদের সঙ্গে। আশা করি আপনি তাতে আপত্তি করবেন না।

হেসে ফেলল বন্ড। আর আপনি তো সভূদি আসকারি?

লোকটা বিনা অনুমতিতেই উঠে দাঁড়াল। ছ ফুট তিন চার ইঞ্চি লম্বা, বয়স তিরিশ থেকে চল্লিশের মধ্যে।

হ্যাঁ, আমি প্রিন্স সভুদি আসকারি। আমার লোকেরা আমাকে দাবকা বলে–দ্য নায়ন। কয়েক বছর আগে পুর্তগীজরা আমার বাবাকে হত্যা করে–তার অপরাধ, তিনি প্রথম বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পাঁচশ বছর ওরা আমাদের ক্রীতদাস করে রেখেছে, এবার আমরা ওদের মারব। আমাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেব। বিশ্বের সর্বত্র আজ মুক্তির জন্য লড়াই চলছে। যেমন আফ্রিকায় চলছে। আমার বিশ্বাস, আমরা জয়ী হব।

আমি আপনার পাশে আছি। আমরা দুজনে এক সঙ্গে কাজ করতে চাই আমাদের নিজেদের স্বার্থে, বলল বন্ড।

হ্যাঁ, আমিও তাই মনে করি, প্রিন্স আসকারি বেরিয়ে যাবার আগে জনির মৃতদেহটাকে ঘৃণায় ও অবজ্ঞায় দেখে নিল। এখানে আবার হংকং পুলিশের খুনের ব্যাপারে ভীষণ কঠোর। কিন্তু এভাবে একপায়ে জুতা নেই এই পোশাকে তো যাওয়া যায় না।

বেশ তো আরেক পায়ের জুতাটা খুলে যান।

তা হয় না মিঃ কার্টার। লন্ডনের তৈরি জুতা, হংকং পুলিশ সহজেই ধরতে পারে খুনীকে।

তা ঠিক, বন্ড বলল, তবে চলে আসুন।

আসকারি বন্ডের দিকে তাকিয়ে, ওল্ড ম্যান, প্রিন্স এর সঙ্গে এভাবে কেউ কথা বলে না।

বন্ড বললেন, কিন্তু আমি বলে থাকি। এখন আসুন তো, সেই সঙ্গে আপনার মনস্থির করে ফেলুন। আমাকে ঠকাবার চেষ্টা করবেন না। আপনি বিপদে পড়েছেন এবং আমিও। এই সময়ে আমাদের পরস্পরকে খুবই প্রয়োজন। তাই আমরা দুজনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করলেই হল।

বন্ডের থেকে একটা সিগারেট চাইলেন প্রিন্স। হংকং-এ আমার লোকবল কেউ নেই। তিনজন ছিল কালই খতম হয়ে গেছে। তাছাড়া, আমার পোশাক নেই, লুকোবার জায়গা নেই। তাই আপনি ছাড়া আমার গতিও নেই। আমেরিকান দেশাত্মবোধক গান এত বেশি অনুভূতিশীল

দু জনে জনির কামরা থেকে বেরিয়ে এল, প্রিন্স-এর দুটো পা জুতোহীন, প্যান্টের পা অনেকখানি গুটোন। বন্ডেরও সেই রকম। দু জন আমেরিকান মাতাল নাবিকের মত ওরা এগিয়ে চলল। তারা একটি বারে ঢুকল। একটি মেয়ে এসে। তাদের কাছে অর্ডার নিয়ে গেল।

একটু বাদেই মেয়েটি হুইস্কির বোতল এনে তাদের টেবিলে দিল। বন্ড একবার মেয়েটির সৌন্দর্য লক্ষ্য করল। এবার কাজের কথায় আসল বন্ড। আচ্ছা প্রিন্স, আপনি জানেন জেনারেল আগাস্টে বুলেঙ্গার এখন কোথায়?

ম্যাকাও-র টাই টপ হোটেলে। লোকটা দারুণ সেক্সি, যে কোন বয়সের ছুকরি পেলে সব কিছু ভুলে যায় ও। ভীষণ বিপদজ্জনক লোক।

বন্ড কিন্তু প্রিন্সের কথাগুলো খুব মন দিয়ে শুনল। জেনারেলের এই দুর্বলতার কথা সে কিংবা হক্‌ জানেন না। এমন কি তাদের ইনটেলিজেন্স-ও এসব খবর রাখে না। আশ্চর্য।

দ্য গল অনেক চেষ্টা করেও জেনারেলকে ধরে রাখতে পারেননি, প্রিন্স আরো বলল, শেষ পর্যন্ত তারা তাকে ফাঁসি দেবার জন্য সাব্যস্ত করে। তখন জেনারেল আমার কাছে চলে আসে এ্যাংগোলায়। জেনারেল গেরিলা লড়াইয়ে ওস্তাদ, কিন্তু সে এখন আমাকে হত্যা করে নিজে ডিরেক্টর হবে।

বন্ড মাথা নাড়ল, হক ঠিকই বলেছেন। বন্ড এবার জিজ্ঞেস করল, কর্নেল চুন লি কে ম্যাকাওতে দেখেছেন? লোকটা চৈনিক। আপনি হয়ত তাকে চিনবেন না, তাদের দেশের কাউন্টার ইনটেলিজেন্স-এর লোক সে। ওকে আমি চাই।

প্রিন্স বলল, তোমার চুন লিও এখন টাই পি হোটেলে রয়েছে। আমরা তিনজনে গতকাল এক সঙ্গে ছিলাম। ড্রিঙ্ক করিয়ে ওরা আমাকে মাতাল করে দিয়েছে, ওরা নিজেরাও মাতাল হয়েছে। নেশার ঝোঁকে আমাকে খুন করার চক্রান্ত, আমার সামনেই করেছিল। কিন্তু ওরা ভুল করেছিল, ওরা ভেবেছিল খুব সহজেই আমাকে খুন করতে পারবে। দ্বিতীয়তঃ ওরা ভেবেছিল আমি খুন হওয়ার পর ওরা ওদের মতলবের কথা বেমালুম চেপে যাবে, নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করবে। প্রিন্স হেসে বলল, অতএব, মিঃ কার্টার আপনি হয়ত একটা ভুল করেছেন। আপনি যা মনে করছেন ব্যাপারটা কিন্তু ঠিক তার বিপরীত। হয়ত আমার থেকে আপনার প্রয়োজনটাই বেশি। আর তাই জিজ্ঞেস করছি সেই মেয়েটি এখন কোথায়? প্রিন্সেস মরগ্যান দ্য গামা? মেয়েটিকে কয়েকটা কাগজে সই করাতে হবে। আমি ওর কোন ক্ষতি করব না। বরং ব্যক্তিগত ভাবে ওকে আমি অনুরোধ জানাব নোংরা পথ ছেড়ে দেবার জন্য।

নোংরা পথ? বন্ড বলল, তার মানে আপনি কি ওর নগ্ন দেহের ফিলম দেখেছেন?

প্রিন্স বিরক্তিস্বরে, যা দেখেছি। তবে কোন উৎসাহ পাইনি, বরং দেখতে দেখতে ঘৃনা হয়েছে, চুন লি রও। শুধু জেনারেল একান্ত মনে দেখেছে। আমার মনে হয় জেনারেল, এই সব নোংরা ছবি দেখে চাঙ্গা হওয়ার চেষ্টা করে। প্রিন্সেস-এর নগ্নফিল্ম দেখে জেনারেল এখন খ্যাপা কুকুরের মত। যেভাবেই হোক প্রিন্সেসকে দখল করতে চায় সে। কিন্তু ঐ জেনারেলের হাত থেকে ওকে বাঁচাতে হবে, ওকে আমার চাই। প্রয়োজনে লিসবনের সাহায্য নিতে পারি।

লিসবন তথা পুর্তগীজ সরকার যদি একবার প্রিন্সেস-এর হদিশ পায়, তাহলে ওরা ওকে পুর্তগালে নেবেই। আর ওর কাকা ওকে পাগলা গারদে পুরে দেবে। বন্ড তা চায় না। তাই সে বলে, আমরা দুজনে একসঙ্গে কাজ করলে। প্রিন্সেসকে বাঁচাতে পারব। আমি জানি প্রিন্সেস এখন কোথায় আছে। সে খবর আপনার জানা নেই। আমার বিশ্বাস, সব খবর আপনি এখনো আমাকে খুলে বলেননি।

সঙ্গে সঙ্গে হকের কথা মনে পড়ে বন্ডের। তার নির্দেশ ম্যাকাওতে তার একা যেতে হবে, এমনকি এ্যাক্সের কোন এজেন্টকেও নয়। ম্যাকাও হংকং নয়। বিট্রিশ দেখল দারুণ কঠোর হলেও তারা আমেরিকানদের সহযোগিতা করবেই। আর পুর্তগীজ? ওরা লেড়ি কুত্তার জাত। কেবল চিৎকারই করে, কামড়াতে পারে না। ভুলে যেও না, হক। তাকে বার বার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন কেপ ভারদি দ্বীপের কথা। আর সেখানে সঞ্চিত মূল্যবান ধনরত্নের কথা। প্রিন্স আসকারি বন্ডের দিকে হাত বাড়ায়, আমি আপনার সঙ্গে চুক্তি করতে চাই মিঃ কাটার। আমি এ্যাংগোলার প্রিন্স, আমার কথার খেলাপ হয় না।

বন্ড বিশ্বাস করল বটে, কিন্তু প্রিন্সের সঙ্গে হাত মিলালো না। বলল সে, হতে পারে, তবে চুক্তি করার, আগে আমরা উভয়ে উভয়কে কতটা দিতে পারি, তার বিনিময়ে কতটা পেতে পারি। আর আমাদের প্রয়োজনটা কি?

প্রিন্স তার হাতটা গুটিয়ে নিয়ে ক্লান্তস্বরে বলল, ঠিক আছে মিঃ কার্টার। আপনি যা ইচ্ছে করেন।

বন্ড বলল, এখন থেকে আপনি নয় তুমি, আর আমাকে বন্ড বলে বলবেন। আমাদের উদ্দেশ্য যখন এক, খুন, রাহাজানি, তাহলে মিষ্টার, এ সবের কি প্রয়োজন? প্রিন্স মাথা নাড়ে, তুমি তো তাহলে আমাকে আসকাই বলবে। তাহলে আসকাই, তুমি আসলে কি চাও। মানে কি পেলে সন্তুষ্ট হবে। খুব সাধারণ জিনিষ। আমি প্রিন্সেসকে কয়েক ঘণ্টার জন্য চাই। জেনারেলের এটাচিকেস কাঁচা হীরেতে ভর্তি আমি সেগুলো চাই। তবে কর্নেল চুন লিকে তুমি খতম করলে সেই হীরের দাম তেমন পাওয়া যাবে না। তাতে আমার ক্ষতি হবে।

তার জন্য ভেবো না বন্ধু, কাঁচা হীরের ভাল বাজার দর আমরা অন্যত্র পেতে পারি। আমাদের হক, ইচ্ছে করলে হীরেগুলো অনেক বেশি দামে বিক্রি করতে পারেন।

প্রিন্স বলে, তাহলে, জেনারেল বুলেঙ্গারকে আমি খুন করব। আমার লন্ডনের লোকেরা যদি মেয়েটিকে আর সেই নোংরা ফিল্ম পায়, তাহলে জেনারেলকে খুন করতে আমার আর দ্বিধা নেই। ব্যাস, এই হল আমার তিনটে দাবি। তুমি রাজি তো বন্ড?

হ্যাঁ, আমি রাজি, কিন্তু জেনারেলকে খুন করার ব্যাপারে আমি নিজেকে জড়াতে চাই না। ম্যাকাও কিংবা হংকং পুলিশ যদি তোমার সন্ধান পায়, আমি কিন্তু তখন তোমাকে চিনব না, তোমাকে দেখিনি এমন ভাব দেখাব।

অবশ্য।

তাহলে ঠিক আছে, হীরেগুলো তোমাকে পাইয়ে দেওয়া। প্রিন্সেস-র সঙ্গে তোমার দেখা করানো, এ দুটো ব্যবস্থা আমি করে দেব। আর প্রিন্সেস যদি আমার সঙ্গে থাকে তাতে তোমার বাড়তি লাভও হতে পারে। অতএব তুমি নিশ্চয়ই চাইবে সে বেঁচে থাকুক।

সত্যি তুমি মহান বন্ড। তাই তো ফাইলে তোমার সম্পর্কে কি নোট লেখা আছে জান? তুমি ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক। সাবধান। সেই সঙ্গে আরও আছে, তোমার দাবি যৎসামান্য।

ধন্যবাদ আসকাই। আমি তোষামোেদ চাই না, আমি কাজ চাই। এবার শোন, তুমি প্রিন্সেস–কাকা, পুর্তগীজ ক্যাবিনেটের সদস্য লুইস দ্য গামাকে চেন?

চিনি না আবার প্রিন্স মুখ বিকৃত করে বলল, কিন্তু বন্ড, সে অতি জঘন্য কাহিনী।

জঘন্য কাহিনী শোনাই আমার কাজ। বল আমাকে।

 হংকং-এর দক্ষিণ পশ্চিমে ম্যাকাও-এর মিনি কলোনি। ১৫৫৭ সালে পুর্তগালের সবুজ ঘাসের দ্বীপ।

অজস্র সামপানের ভিড়ের মধ্যে এসে দাঁড়াল লঞ্চ। প্রিন্স, প্রিন্সেস, বন্ড ও আরো তিনজন অনুচর চীনে জেলেদের পোশাকে দাঁড়িয়েছিল। বন্ডের জ্যাকেটের নিচে গ্রেনেডের বেল্ট, তার কাছে লুগার ছাড়া একটা স্টীলেটোও ছিল। গলায় ঝুলছে ট্রেঞ্চ লাইফ। প্রিন্স-এর কাছে আছে ট্রেঞ্চ লাইফ আর পঁয়তাল্লিশ ক্যালিবারের অটোমেটিক।

আশ্চর্য। প্রিন্সেস যেন হঠাৎ বদলে গেছে। বন্ড সিগারেট খেতে খেতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস এর ওপর নজর রাখছিল। আজ রাতে মেয়েটি কেমন হেসে হেসে কথা বলছিল। ডিকেনসন বলছিল ও আর মদ খেতে চায়নি। এ পরিবর্তন কি তাহলে সমুদ্রের পানি আবহাওয়ার জন্য?

সমুদ্রের ঢেউ বাড়ছে। সেই সঙ্গে প্রিন্স-এর হাসি ঠাট্টা বাড়ছে। প্রিন্সেসও হাসিতে যোগ দিল। বন্ড ওদের দিকে এগিয়ে গেল। আম্বির কাজে খুবই সন্তুষ্ট সে। মিলন সঠিক পথেই এগুচ্ছে, আর এইভাবে চলতে থাকলে কিল মাস্টার ভাবে, তাহলে সে ঠিক তার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে। কারণ কর্নেল চুন লি ভয়ঙ্কর আত্মবিশ্বাসী, এই জন্যই তার পতন।

আধঘণ্টা পরে ওদের দেখা পেল জেনা পয়েন্টের কাছাকাছি সবুজ একটা টিলার কাছে। ওরা অপেক্ষা করতে লাগল। একজন ঠ্যাঙ্গার ছেলে ছইয়ের মধ্যে থেকে বুকে হেঁটে বন্ডের কাছাকাছি আসতেই সে জিজ্ঞেস করল। কি ব্যাপার তুমি এখানে?

লোকটা ফিসফিসিয়ে বলল, আমরা পেনা পয়েন্টের খুব কাছাকাছি এসে গেছি। এখান থেকে আর মাত্র এক মাইল–আর এগুনো উচিত হবে না। চীনা গার্ডরা টহল দিচ্ছে,

মনে হয় জেলেরা ভয় পাচ্ছে, বন্ড ভাবল। এরা দারুণ বিশ্বাসী। বন্ড ভাবল, ব্রিটিশদের গোলামী করে এরা চীনা রেড গার্ডদের ভয় পাচ্ছে। আসকারি বলছিল, চীনারা এই শহরটা প্রায় দখল করে ফেলেছে, শুধু নামটাই বদলায়নি এখনো পর্যন্ত।

ওদের মনোভাব বুঝে বন্ড নির্দেশ দিল নৌকা থামাতে। বাকিপথটুকু ওরা সাঁতার কেটে যাবে। তোমরা সব তৈরি হয়ে নাও। প্রিন্স, তোমাদের কি করতে হবে মনে আছে তো? কিছু বলার থাকলে জোরে নয়, ফিসফিসিয়ে বলতে হবে। ও, কে, প্রিন্স তোমার কিছু বলার আছে।

হ্যাঁ, আমার কাছে তুমি এখন শিশু।তুমি কি জান না এক সময় আমি ব্রিটিশ কম্যান্ডোতে কাজ করতাম?

কবে ঘি খেয়েছ তার গন্ধ এখন শুঁকে লাভ নেই খোকন। বর্তমান পরিস্থিতির কথা ভেবে ঝাঁপিয়ে পড়।

বন্ড এবার ছই-এর মই বেয়ে নিচে নামতে শুরু করল। পিছনে প্রিন্স ও প্রিন্সেস। প্রিন্সেস হাসছিল শব্দ করে। মনে মনে খিস্তি করে বন্ড আবার মেয়েটিকে পেছন ফিরে নিচে নামতে সাহায্য করল।

বন্ড ভাবল এবার নাটকের শেষ দৃশ্য শুরু হবে কে হারে, কে জেতে। তবে সে এটুকু জানে, এখন আর পিছু হটার উপায় নেই।

এক ঘণ্টা পরে সেই পেনা পয়েন্টের সবুজ তৃণাচ্ছাদিত কালো পাহাড়ের পিছনে তিনজন এসে দাঁড়াল। তাদের পরণে ছিল পানি নিরোধক পোশাক। মেয়েটি প্রায় নগ্ন। এক চিলতে ব্রা আর প্যান্টি ছাড়া আর কিছুই নেই। মেয়েটি বিড় বিড় করে বকে যাচ্ছিল। আস্কারিকে কনুই-এর গুতো মেরে ফিসফিসিয়ে বলল বন্ড, ওকে থামতে বল, তা না হলে ওরা কাছেই আছে, শুনতে পাবে।

তোমার কোন চিন্তা নেই খোকন। যা জোরে বাতাস বইছে কিছুই শোনা যাচ্ছে না।

 তুমি একটা আস্ত মূর্খ, ধমকে উঠল কিল মাস্টার। বাতাসেও শব্দ ভাসে, এমন কি হংকং থেকেও কেউ কথা বললে। এখানে শোনা যেতে পারে, বুঝলে বোকারাম?

হঠাৎ বন্ড কব্জিঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখে ঘড়ির কাঁটাগুলো দপদপ করে জ্বলে উঠল। প্রিন্স ও প্রিন্সেস-এর দিকে বলে উঠল, লোকটার আসার সময় হয়ে গেছে। তোমরা এবার একটু আড়ালে যাও।

বরং তোমরা দুজনে এখানে অপেক্ষা কর, প্রিন্স বলে, এ কাজটা আমি ভাল করতে পারব। ফিরে এসে তুমি দেখতে পাবে। তোমার জন্য এই লোকটার গা থেকে পোশাকটা কেমন খুলে নিয়েছি।

সঙ্গে সঙ্গে বন্ড পকেট থেকে লুগারটা বার করে প্রিন্স-এর বুকে ঠেকিয়ে বলল, এর আগেও মাফ করেছি। এরপর আবার বেয়াদপি করলে একেবারে খতম করে দেব, বুঝলে?

প্রিন্স ঘাবড়ে গিয়ে বলল, ঠিক আছে। তোমার উপদেশ মনে থাকবে। এই বলে প্রিন্সেসকে নিয়ে আড়ালে গেল।

মিনিট খানেক বাদেই মোজাম্বিক রেজিমেন্টের সেই কালো লোকটা এল। এবং খুন হল বন্ডের হাতে। সুদূর মোজাম্বিক থেকে হাজার হাজার মাইল ছুটে এসেছিল সে বন্ডের হাতে খুন হওয়ার জন্য। বেচারা জানতেও পারল না কি অপরাধে তাকে প্রাণ দিতে হল। বন্ড ছুরি ব্যবহার করেনি পাছে লোকটার পোশাকে রক্তের দাগ লেগে যায়। তাই সে পেছন থেকে অতর্কিতে ঝাঁপ দিয়ে গলা টিপে হত্যা করল। লোকটার প্রাণহীন দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়লে স্ত হাতে তার দেহ থেকে পোশাকটা খুলে নিল। ওদিকে প্রিন্স ও প্রিন্সেস সমুদ্রের তীর থেকে উঠে এল। বন্ড বলল, এসো। ইউনিফর্মটা ভালই আছে–রক্ত কিংবা কাদার দাগ একেবারেই লাগেনি। আশা করি, তোমার গায়ে ঠিক ফিট করবে।

প্রিন্স তার পোশাক বদলানোর পর বন্ড বলল, এবার আমার ঘড়ির সঙ্গে তোমার ঘড়ির সময় মিলিয়ে নাও। তারপর আমি তোমার পথে রওনা হয়ে যাব।

ঘড়িতে তখন সাড়ে দশটা। ইঁদুর ধরার সময় তখনো আধঘণ্টা বাকি ছিল। সাবেকী মা কক মিউ মন্দির পেরিয়ে এসে তারা বন্দরের পথ ধরে চলল। ওদের দু জনের পরণে কুলির পোশাক।

বন্ড চায় না রুয়া দা নোরকায় গোল্ডেন ট্রাইগারের ত্রিমুখি সংঘর্ষ হোক। আসলে চুন লি র একটা ফাঁদ বলে মনে হচ্ছে। ফোনটা ছিল একটা টোপ মাত্র। বন্ড আর প্রিন্সেস হংকং-এ এসেছে কিনা সেটা জানার জন্যই এই আহ্বান।

চলতে চলতে বন্ড থমকে দাঁড়াল। সামনে শোভা পাচ্ছিল ম্যাকাও প্রাসাদের সাইন বোর্ডটা। প্রাসাদের চারদিকে আলোর রোশনাই, মধ্য ম্যাকাও তখন প্রাণ চাঞ্চল্যে ভরপুর। আর একটু এগিয়ে দুটো বাড়ি পেরুতেই সে দেখল একটা সরু গলি। এই গলির পথেই তাকে এগিয়ে যেতে হবে। তাই টপ হোটেলের পিছন দিকে যেখানে জেনারেল বুলেঙ্গারের অতিথি রূপে উঠেছে। হয়ত এটাও একটা ফাঁদ। তার মত কর্নেল চুন লিও জানে যে এটা একটা ফাঁদ। এই মারন ফাঁদের উদ্যোক্তা সে নিজেই।

চুন লি কি ধরে নিয়েছে, জেনারেল বুলেঙ্গারের সঙ্গে দেখা করবেই বন্ড প্রিন্স-এর কথা যদি ঠিক হয় তাহলে সমস্ত ব্যাপারটাই সাজানো, সাজিয়েছে চুন লি। তার সন্দেহ নিরসনের জন্য। সে কেবল দেখতে চায়, জেনারেল কি করে। জেনারেলকে চুন লি তার পাশার খুঁটি বানাতে চায়।

একটু পরেই বন্ড এসে পৌঁছল টাইটপ হোটেলের সামনে। পিছনে গাড়ি পার্কিং-এর জায়গা। এ পাশে ফুটপাথের ওপর ঘুমন্ত কুলিদের দল। আফিমের গন্ধ।

টাই টপ হোটেলটা দশ তলা। জেনারেল থাকে আট তলায়। চুন লি নিশ্চয়ই জানে। বন্ড এখানে আসবে। চুন লি খুশি হবে বন্ড যদি বুলকে খতম করে। তাহলে তারপরেই বন্ডকে ধরা সহজ হবে। ওপরের দিকে তাকিয়ে দেখল বন্ড সবই প্রহরী, কুলি মজুরের দল। ঘুমন্ত কুলিদের কাছ থেকে একটা মোট পিঠের ওপর তুলে নিল সে। দূরে গাড়ির মধ্যে একটি মেয়ের চিৎকার, বন্ড এগিয়ে গেল। চারদিকে, আশেপাশে কেউ নেই। একজন ঘুমন্ত প্রহরীকে দেখা গেল স্টোররুমের মত একটা কামরায়। বন্ডের পায়ের শব্দে সে চোখ মেলে তাকাল, তারপর ইশারায় জানাল মোট ওখানে রাখ। বন্ড মোট রেখেই প্রহরীকে চেপে ধরল। ক্যারাটের এক প্যাঁচে তার ঘাড় ভেঙে দিল। সেখান থেকে এগিয়ে গেল বন্ড ক্যাশ অফিসের দিকে। অভিনয় নিখুঁত করে তোলার জন্য সে তার মজুরী আদায় করতে চলল।

ক্যাশ ক্লার্কের মুখটা থমথমে, বন্ড গিয়ে বলল, আমার মজুরী চাই।

ক্লার্ক তাচ্ছিল্যের মত করে একবার সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে বিড়বিড় করল, হায় সৃষ্টিকর্তা, একি করলে? ইঁদুরখেকো গুলোকে আস্ত গর্দভে পরিণত করে ছাড়লে? তারপর সে বন্ডের দিকে ফিরে বলল, আজ আর কাউকে মজুরীর টাকা দেওয়া হবে না। কাল এস। এখন ভালয় ভালয় এখান থেকে কেটে পড় দেখি।

বন্ড এগিয়ে এল আরো দু পা। হংকং ডলারে আমার মজুরী দেবে কিনা বল? আরেক পা এগিয়ে দেখল সামনেই একটা বারান্দা, বারান্দার শেষ প্রান্তে মালপত্র বহনের একটা লিফট।

ক্লার্ক এবার বন্ডকে সরাসরি জিজ্ঞেস করল, তোমার নাম কি বল?

নিকোলাস হান্টিংটন কার্টার।

লোকটার ইংরেজি উচ্চারণ খুবই স্পষ্ট। ক্লার্কের ঘাড়ের উপর প্রচণ্ড একটা ঘুষি মারল। টাল সামলাতে না পেরে লোকটা ছিটকে পড়ল। বন্ড বিদ্রুপের স্বরে বলল, দোস্ত, এ যাত্রায় খুব বেঁচে গেলে তুমি। সে ঘড়ি দেখল ভোর চারটে। চুন লি ধরেই নিয়েছে বন্ড আর আসবে না। বন্ড এবার লিফটে একেবারে আটতলায় উঠে গেল। ফাঁকা বারান্দা। তার পায়ে জুতার কোন শব্দ হল না।

দরজায় প্রহরী–দেখতে চীনাদের মত, বয়সে তরুণ, সম্ভবতঃ রেড গার্ড। এখন সবাই তার শত্রু। নিঃশব্দে প্রায় তার গা ঘেষে দাঁড়াল কিল মাস্টার। খিমচি কোরিয়ান ডিপ খেয়ে থাকবে প্রহরীটা। তারই গন্ধ নাকে আসছে। স্টিলেটোটা বার করে হাতের ওপর চাপ দিয়ে ফলাটা বার করল সে। প্রহরীর কাঁধে ঝুলছিল একটা গ্রিজগান, পুরনো ইউ, এস এস থ্রী। বন্ড পিছন দিক থেকে হাত বাড়িয়ে প্রহরীর গলাটা চেপে ধরে সামনে টেনে আনল। বন্ডের লোহার মত শক্ত আঙুলের চাপে তার দমবন্ধ হয়ে আসছিল। বন্ড তার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল, যদি বাঁচতে চাও তো তোমার বন্ধুর নাম তাড়াতাড়ি বল। মিথ্যে বললে নির্ঘাত মৃত্যু। বন্ড ভাবতে পারেনি ছাদে দু জনেরও বেশি প্রহরী থাকতে পারে।

বন্ড তার গলায় চাপ বাড়িয়ে, সে কি ক্যান্টোনিজ? হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমরা সবাই ক্যান্টোনিজ প্রহরী বলল। বন্ডের জানা শেষ। এবার ঘাড় মটকে খতম করল তাকে। তারপর বন্ড তাকে টেনে নিয়ে এল সামনে। প্রহরীর ইউনিফর্মটা ছোট তাকে ঠিক ফিট করবে না। তবে তার টুপিটা ঠিক আছে। অপর প্রহরীটিকে বন্ড দেখতে পেল না। কোথায় গেল? তাকে খতম করতে হবে, ছাদ পরিষ্কার রাখতে হবে, পালাবার সময় যাতে কোন বাধা না পায়।

মাথার ওপর হেরণ পাখিদের উড়তে দেখে বন্ড ভাবল, আজ রাতে ওরা কেউ আর ঘুমাচ্ছে না। রাতে সাদা হেরণ পাখি উড়তে দেখলেই, বুঝতে হবে সেদিন টাইফুন আসবে।

কিন্তু ওয়াং কোথায় গেল। বন্ড চীনা ভাষায় মৃদু চিৎকার করল। ওয়াং তুমি কোথায়? কমরেড ক্যাপ্টেন এখুনি এসে পড়লেন বলে?

ওয়াং এবার বন্ডের সামনে এসে বলল, কে তুমি তোয়া? বন্ডের বলিষ্ঠ হাত ওয়াং-এর গলায় পেচিয়ে ধরে। ওয়াং ও বন্ডের চোখে আঙুলের খোঁচা দিয়ে বুঝিয়ে দেয় যে সে তার পরিচয় পেয়ে গেছে। বন্ডও ঠিক এরকম একজন বলিষ্ঠ প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি হতে চাইছিল। শিশু হত্যা তার পছন্দ নয়। প্রহরী তার অণ্ডকোষে আঘাত করতে এলে সে চকিতে সরে যায়। বন্ড উল্টোপাল্টা আঘাত করল প্রহরীর অন্ডকোষে। লোকটা একেবারে নিস্তেজ না হওয়া পর্যন্ত বন্ড থামল না। একটু পরেই প্রহরীর প্রাণহীন দেহটা লুটিয়ে পড়ল।

তারপর বন্ড আগের প্রহরীর গ্রীজগানটা কাঁধে তুলে নিয়ে জেনারেলের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। এরপর নিচে ব্যালকনিটা দেখল বন্ড, কোমর থেকে ম্যানিলা লাইনটা খুলে ঝুলিয়ে দিল, এদিক ওদিক তাকিয়ে নেমে এল। জানালা বন্ধ। ভেতরে শব্দ। প্রোজেক্টার মেশিন চলছে ঘরের মধ্যে। লন্ডনে ব্লেকারের তোলা ব্লু ফিল্ম দেখছে জেনারেল। আস্তে আস্তে দরজা ঠেলে বন্ড সাপের মত বুকে হেঁটে ঢুকে পড়ল ঘরের ভেতর। জেনারেল একমনে…দৃষ্টি তার পর্দার ওপর। ছবির পর্দায় মৃত ব্যক্তির ছবি। মানে ব্লেকার। লন্ডনের ড্রাগন ক্লাবের ডিভানে।

সোফার একটু পিছনে এসে থামল বন্ড।

সাদা পর্দায় এবার প্রিন্সেস-এর ছবি দেখা দিল। একজোড়া সবুজ চোখ, প্রবাল দ্বীপ স্তন। এটাই ব্লেকারের তোলা ছবি।

বন্ড বুঝল জেনারেল কেন, যে কোন ব্যক্তি এ ছবি দেখে উত্তেজিত হবে। ব্লেকার কিভাবে মেয়েটিকে ব্যবহার করেছে এ তারই দলিলপত্র। পুর্তগীজ সরকার এই জন্যই এই দৃশ্যের ছবিটা পেতে চেয়েছিল, আর কেনই বা সেটা নষ্ট করতে চেয়েছিল। তারা চায় না তাদের রাজরক্তের অধিকারিণীর এমন অন্যায় খেলার দৃশ্য অন্য কোন দেশের দর্শকরা দেখুক।

হঠাৎ জেনারেলের হাসিতে ঘরটা মুখরিত হল। একান্ত সুখতৃপ্তির হাসি হাসছে এই ভেবে যে এ ধরনের ব্লু ফিল্ম দেখলে সে তার হারানো পুরুষত্ব ফিরে পাবে। দু দুটি বিশ্বযুদ্ধের নায়ক, ধূর্ত বৃদ্ধ ফৌজি মস্তিষ্ক, এই সিংহ বিক্রম প্রতাপের লোকটি বসে আছে অন্ধকারে।

বন্ড এবার তৎপর হল, তার অত্যন্ত ঠাণ্ডা লুগারের নল জেনারেলের মাথার ওপর ঠেকিয়ে ধরল, একটুও নড়বার চেষ্টা কর না। চুপি চুপি কথা বল। ভয় নেই আমি তোমাকে মারব না। ছবি দেখতে দেখতে উত্তর দাও। ইজ দিস প্লেস, বাজও, মানে মাইক ফিট করা আছে?

উই…ই…।

ইংরেজিতে বল, চুন লি কোথায়?

জানি না। তবে তোমার নাম যদি বন্ড কার্টার হয়, সে এখানে তোমার আসার অপেক্ষায় আছে।

হ্যাঁ, আমি সেই বন্ড

জেনারেল একটু নড়ে উঠতেই, বন্ড খোঁচা দিল, নড়ো না! বল, এখন চুন লি-কে কোথায় পাব?

আগে প্রিন্সেসকে দাও। আমরা আগে চাই প্রিন্সেসকে, তারপর—

 প্রিন্সেস এখন ম্যাকাওতে আছে। ও তোমার কাছে আসবে। যদি চুন লি-কে আমার হাতে তুলে দাও।

আগে প্রিন্সেসকে দেখাও। ওকে দেখলে তবে আমি চুন লি-কে তোমার হাতে তুলে দেব। চুন লি আমাকে বিশ্বাস করে, তাই এ সহজ কাজ।

কিন্তু আমি তা মনে করি না। চুন লি সাংঘাতিক শয়তান। চুন লি-কে তুমি ঠিক কবুল করতে পারবে না। চুন লি তোমাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছে। ডোন্ট মুভ!

প্রোজেক্টার বন্ধ হয়ে গেল। নিরস্ত্র অন্ধকারের মধ্যে ফিসফিসিয়ে বলল বন্ড, জেনারেল তুমি সবাইকে বোকা বানাতে চাইছ না? তুমি আসকারিকে খুন করার চেষ্টা করেছিলে?

চেষ্টা? সে কি, ওরা মারা যায়নি?

না, আসকারিও ম্যাকাওতে আছে। চুন লি তোমাকে বলেছে, আসকারি মৃত। তাই না?

হ্যাঁ।

তাহলে বোঝ ব্যাপারটা কি? আর এই শয়তানটাকে তুমি বিশ্বাস কর! শোন জেনারেল, তোমার কাছে একটা অ্যাটাচি ভর্তি হীরে আছে?

হা, মাথা নাড়ল জেনারেল।

তাহলে শোন, তুমি যেগুলোকে আসল হীরে ভেবে সযত্নে আগলে রেখেছ, ওগুলো স্রেফ নকল কাঁচের টুকরো। তুমি হীরে চেন না, আসকারি চেনে। তোমার অ্যাটাচি হাত বদল হয়ে গেছে। এখন এই নকল হীরে দেখলে চুন লি কি করবে? কথাটা শুনে জেনারেল আঁতকে উঠল, আঁ, এ তুমি কি বলছ, বন্ড?

ঠিকই বলছি। তাহলে চুন লি-কে আমার হাতে তুলে না দিলে তোমার কি হাল হবে, ভাবতে পার? তার চেয়ে

তুমি আমাকে মদত দাও জেনারেল, আমি তোমার সঙ্গে থাকব।

জেনারেল হতাশ ভঙ্গিতে জানাল, এখন মনে হচ্ছে, এছাড়া আমার আর কোন পথ নেই। বল, এখন আমাকে কি করতে হবে?

চুন লি-কে আমার হাতে তুলে দিতে হবে।

বেশ, তাই হবে।

আর তখনই অন্ধকারে বন্ডের মাথায় যেন বাড়িটা ভেঙে পড়ল।

.

০৮.

 আস্তে আস্তে জ্ঞান ফিরে এল বন্ডের একসময়। জ্ঞান হারাবার আগে কয়েকটা মুহূর্ত মনে পড়ল। জেনারেলকে সে বলেছিল, এক ঘণ্টা পরে আলটিমেট হ্যাপিনেস হলে কর্নেল চুন লি-কে সঙ্গে নিয়ে হাজির হবার জন্য। সেখানেই সে চুন লি-কে খতম করতে চায়, ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়েছিল জেনারেলের কাছে। আর সে রাজি হয়েছিল বন্ডের প্রস্তাবে। সে মানিলা ধরে নিচে নেমে এসেছিল। এখন তার মনে হচ্ছে, চুন লি র কাছে সে শিশুমাত্র। চুন লি র হাতে সে এখন বন্দী।

বন্ড! ব…ড…

আওয়াজ শুনে এদিক ওদিক তাকাতে গিয়ে প্রিন্সেসকে দেখতে পেল সে। প্রিন্সেসও তার মত বন্দিনী। বন্ডের মতই সে উলঙ্গ। একটা থামের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে ওকেও। দুঃস্বপ্নের মতই মনে হল তার, প্রিন্সেসের ভয়ানক সাদা, দীর্ঘাঙ্গী চেহারাটা যেন ভয়ঙ্কর কোন ভয়ে জমাট হিম হয়ে গেছে।

ওর আয়ত সবুজ চোখে মৃত্যুর ছায়া। বন্ড তাকিয়ে আছে দেখে প্রিন্সেস হাত দিয়ে নিদারুণ লজ্জায় বুক ঢাকতে চাইল।

প্রিন্সেস নরম গলায় বলল, তোমার কি কিছুই মনে পড়ছে না বন্ড।

একটু একটু মনে পড়ছে। আমি—

 হঠাৎ বন্ড চুপ করল, প্রিন্সেস ইশারায় তাকে জানিয়ে দিল, এখানে লুকানো মাইক্রোফোন আছে।

মাথার ওপর জমাট অন্ধকার। হঠাৎ একটা লাউডস্পিকারের আওয়াজ। হায়নার মত হিংস্র এক হাসি শোনা গেল।

আমি চুন লি কথা বলছি মিঃ বন্ড! অবশ্যই-এই জায়গাটা পৃথিবীরই অন্তর্গত। আর পৃথিবীটা যখন গোল, আমাদের দেখা তো হবারই কথা, কি বল? ওখানে একটা ক্লোজ সার্কিট টেলিভিশনও আছে। আমি তোমাদের লোমকূপ পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি এখান থেকে।

বন্ড মাথাটা নিচু করল, যাতে টেলিভিশনে ওর মুখের অভিব্যক্তি ধরা না পড়ে। চুন লি জিজ্ঞেস করল, কেমন লাগছে ওখানে বন্ড

শুয়োরের বাচ্চা!

আবার সেই ভয়ঙ্কর হাসি।

জীবন বড় হতাশাপূর্ণ কার্টার, তাই না? তোমাকে বন্দী করতে আমার একটু অসুবিধে হয়নি। বরং এ্যাক্সের প্রধান এজেন্টকে এতো সহজে ধরতে পারব, ভাবতেই পারিনি। এখন মনে হচ্ছে, তুমি একটা কাগুঁজে বাঘ ছাড়া আর কিছু নও! চমৎকার ইংরেজী উচ্চারণ চুন লি র। অথচ সে কখনো পাশ্চাত্যে থাকেনি, এমন কি আমেরিকান ইংরেজিও জানে না সে।

বন্ড হ্যাঁ, না কিংবা তার কোন প্রতিবাদ করল না। চুন লি বলল, তা আমার বন্ধু ডেভিডহকের কি খবর মিঃ কার্টারঃ বন্ড বিস্মিতভাবে তাকিয়ে আছে দেখে চুন লি বলল, এটা নিশ্চয়ই জান, আমার দরকার হককে। হককে ধরবার জন্যই আমি তোমাকে ফাঁদে ফেলেছি।

কর্নেল তুমি তোমার অধিকারের বাইরে চলে যাচ্ছ, বন্ড গর্জে উঠল, হকের কেশাগ্রও তুমি স্পর্শ করতে পারবে না, সে আমি আগেই তোমাকে বলে রাখছি, বুঝলে?

পাব কি পাব না সে তো পরের কথা, মাইক্রোফোনে চুন লি র দৃঢ় স্বর ভেসে উঠল আবার, আমি আমার দেশের স্বার্থে কাজ করছি তাই কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত থামছি না।

মাইক্রোফোন স্তব্ধ হল কিছুক্ষণের জন্য। তারপর ওপর থেকে একটুও করে সাদা আলো নিচে পড়ল, হঠাৎ আলোটা সরে গেল অন্যদিকে। প্রিন্সেস ও বন্ড সেদিকে তাকাল। জাল দিয়ে ঘেরা একটা খাঁচা, একটা গোটা মানুষ তাতে ধরতে পারে। খাঁচাটা দেখামাত্রই ওরা বিস্মিতভাবে এ ওর দিকে তাকাল।

বন্ড বলল, তুমি এখানে কি করে এলে?

তোমার কথামত অপেক্ষা করে আমরা বেরিয়ে পড়ি আন্টিমেট হ্যাপিনের সরাইখানার দিকে। আসকারির পরণে ঐ প্রহরীর পোশাক ছিল। রাস্তায় এক প্যাট্রন পুলিশের গাড়ি থেমে পড়ে, ওরা আসকারির পাশ দেখতে চায়, ওরা। সেটা না পেয়ে ওকে গ্রেফতার করে। আমি একা–আবার মাইক্রোফোনে, এই যে তোমাদের এক সঙ্গী হাজির হচ্ছে তোমাদের সামনে।

চারজন চীনাম্যান একজনকে হিড়হিড় করে টেনে এনে ঢুকিয়ে দিল সেই খাঁচায়। প্রিন্সেস একবার আর্তনাদ করেই থেমে গেল।

জেনারেলের উলঙ্গ চেহারাটা সেই মুহূর্তে ভীষণ অশ্লীল ও ন্যাক্কারজনক মনে হল। টাকভর্তি মাথা, রোগাটে বুকের ওপর অজস্র চুল, ঠিক যেন পালক ছেঁড়া মুরগী। জেনারেলের দড়ি পাকানো নগ্ন চেহারাটা দেখে বন্ডের গা গুলিয়ে উঠল।

জেনারেল বলল, এবার দেখ, ভয় কাকে বলে?

 প্রিন্সেস চিৎকার করে উঠল আবার। মাইক্রোফোনে আবার চুন লি র কণ্ঠস্বর, দেখ বন্ড, তুমি আর তোমার বস হক–এর আগে নির্বিচারে আমাদের লোকদের খুন জখম করেছ। এবার আমাদের বদলা নেবার পালা।

বন্ড তাকিয়েছিল ইঁদুরটার দিকে ভয়ার্ত চোখে। চুন লি হেসে উঠল, ইঁদুরের কি রকম সাইজ দেখছ বন্ড? আমরা একটা দ্বীপে এ্যাটমিক পরীক্ষা চালাই, এর ফলে সেখানকার সব জীবজন্তু মারা গেলেও ইঁদুর স্বাভাবিকভাবে বেঁচে যায়। রেডিও অ্যাকটিভ এ্যাটমসফিয়ারের জন্য ইঁদুরগুলো এত বিরাট হয়। আশ্চর্য।

চুন লি আবার বলল, জেনারেল জান তো না যে ওর হিয়ারিং-এও আমি বাগ করে রেখেছি। তুমি যখন ওর কানে কথা বলছিলে আসলে আমাকেই বলেছিলে।

প্রিন্সেস হাত দিয়ে চোখ ঢাকার চেষ্টা করল। ওর শরীরটা অসম্ভব কাঁপছিল। বন্ড বুঝতে পারল যে প্রিন্সেস এবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে।

হঠাৎ ইঁদুরটা আক্রমণ করাতে প্রাণঘাতী আর্তনাদ করে উঠল জেনারেল বুল। নিমেষে জেনারেলের কণ্ঠনালীটা ছিঁড়ে বের করে নিয়েছে ইদরটা। ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরে পড়ছে।

রক্ত দেখে প্রিন্সেস বমি করতে শুরু করল। চুন লি হেসে বলল, আরো ইঁদুর যাচ্ছে।

ডজনখানেক ইঁদুর এবার জেনারেলের শরীরটা টুকরো টুকরো মাংস ছিঁড়ে নিল। সেই ভয়ঙ্কর বীভৎস দৃশ্যটা দেখে ভয়ে প্রিন্সেস এবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। দু টো ইঁদুর তখন এক টুকরো মাংস দিয়ে লড়াই শুরু করে দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ধেড়ে ইঁদুরটা ছোট ইঁদুরের গলার ওপর ধারাল দাঁত বসিয়ে খতম করে ফেলল।

সেই বীভৎস দৃশ্য দেখে বন্ড চোখ ফিরিয়ে নিল। আবার চুন লি র কণ্ঠস্বর, কেমন লাগছে মিঃ বন্ড? তোমার ঐ নর্ম সহচরী প্রিন্সেসকে যদি ওইভাবে ইঁদুরের মুখে ফেলে দিই।

না।

 আবার সেই তীক্ষ্ণ হায়নার হাসি। আমি বোবার মুখে কথা ফোঁটাতে পারি জান? তোমার দেহের মাংস টুকরো টুকরো করে আমেরিকায় হকের কাছে পাঠিয়ে দেব।

বন্ড বলল, আমাকে তুমি যা খুশি ভাবতে পার। কিন্তু হককে অত বোকা বানানো সহজ নয়। আর তাকে কেটে শত টুকরো করলেও রক্ত বেরোবে না। জেনে রেখো প্রিন্স এখনো মুক্ত, আর এ্যাংগোলার হাওয়া খুব খারাপ। বন্ড বুঝল এবার তার কথায় কাজ হয়েছে।

চুন লি বলল, তুমি আমার দুর্বলতার দিকটা বুঝেছ। দেখ, তুমি আমাকে সহযোগিতা করলে, আমি তোমাকে মুক্তি দিতে পারি।

তোমার সঙ্গে সহযোগিতা? ঘৃণায় থুথু ছিটাল বন্ড।

প্রিন্সেসের কথা ভুলে যেও না। চুন লি বলল।

কে ওর তোয়াক্কা করে একটা ড্রাগ এডিক্ট, ড্রাঙ্ক, সেক্স ভিজানারেট মেয়ের কথা কেনই বা আমি চিন্তা করব?

জ্ঞান ফিরে প্রিন্সেস বন্ডের কথাগুলো শুনে ফুঁপিয়ে উঠল। একজন প্রহরী ভেতরে ঢুকল। খাঁচার দরজাটা খুলে দিয়ে চলে গেল। তার মনে এবার প্রিন্সেসের পালা। খাঁচার ভেতর থেকে একটা বিরাটাকৃতি ইঁদুর উঁকি দিল। প্রিন্সেস আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। ইতিমধ্যে বন্ড মনস্থির করে ফেলেছে। ইঁদুরটা ধীরে ধীরে প্রিন্সেসের সুড়োল বুকের দিকে এগিয়ে আসছে। বন্ড যে একটা মানুষ রয়েছে ইঁদুরটা সে ভয় করে না।

নিমেষের মধ্যে ইঁদুরটার ঘাড় চেপে গলা মুছড়ে ছিঁড়ে দিল। ইঁদুরের মাথাটা মেঝের ওপর পড়ে গেল। বুক চাপা দুঃস্বপ্নের মধ্যে প্রিন্সেস দেখল এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য। চুন লি আবার হাসল, ব্রেভো! কিন্তু বন্ড, তুমি এভাবে কটা ইঁদুর মারবে?

কয়েক মিনিটের মধ্যে আরো অনেক দুর এল। বন্ড ওদের এক এক করে নিহত করল অতিকায় ইঁদুর বেশ কয়েকটি। প্রিন্সেস যে থামটার সঙ্গে বাঁধা ছিল, সেই থামটার কাছাকাছি দরজা খোলার শব্দ হল। চারজন চীনা প্রহরীকে সঙ্গে নিয়ে প্রচণ্ড রাগে এগিয়ে এল চুন লি।

মুখোমুখি চুন লি আর বন্ড দাঁড়িয়ে। হঠাৎ চুন লি এক প্রচণ্ড মুষ্ঠাঘাত করল বন্ডের ওপর। বন্ডও প্রস্তুত ছিল। সেই মুহূর্তে চেনটা টেনে খুলে প্রচণ্ড জোরে আঘাত করল চুন লি-কে। চেনটা চুন লি র গলায় জড়িয়ে ধরে টান দিতে লাগল সে পাশ থেকে। তারপর অতর্কিতে এক হাতে চুন লি র আলস্টার থেকে অটোমেটিকটা তুলে নিয়ে বিভ্রান্ত প্রহরীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ল। দুজন প্রহরী আঘাত পেয়ে ছুটে পালাল। যাওয়ার সময় দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে গেল। বন্ড অন্য বাঁধা হাতটা প্রচন্ড শক্তিতে টান দিল। কিন্তু নড়াতে পারল না। বন্ড প্রিন্সেসের দিকে তাকিয়ে মৃত প্রহরীদ্বয়ের টমিগান দুটো দেখিয়ে দিয়ে বলল, এটা এদিকে ঠেলে দাও।

প্রথমেই টি, ভি, ক্যামেরার দিকে তাক করে গুলি চালাল বন্ড। তারপর চেনটা টেনে ধরে থামের ওপর দিকে গুলি ছুঁড়ল, মুহূর্তের মধ্যে রিং রোল্ট খুলে গেল। বন্ড এবার ছুটল প্রিন্সেসের দিকে। সঙ্গে সঙ্গে দরজা খোলার শব্দ। মনে হল, মেঝের ওপর কেউ কিছু ছুঁড়ে দিল। বন্ড মুহূর্তের মধ্যে তার বিশাল নগ্ন শরীরটা দিয়ে আড়াল করে দিল প্রিন্সেসের দেহ। চুন লি খতম হয়ে গেছে। ওরা টের পেয়েছে, তাই গ্রেনেড ছুঁড়ছে শেষ কামড় দেবার জন্য।

থামের আড়াল থেকে বন্ড গুলি চালাল। সঙ্গে সঙ্গে একটা লোকের কাতরানির শব্দ ভেসে এল। বন্ড টমিগানটা একনাগাড়ে চালিয়ে গেল।

প্রিন্সেস বন্ডের নিচ থেকে বলল, লাগছে। তুমি বেশ ভারি।

দুঃখিত বন্ড জবাব দিল, এই থামটা ছাড়া আপাততঃ গা ঢাকা দেওয়ার জায়গা দেখছি না কোথাও।

এখন কি হবে?

বন্ড তাকাল প্রিন্সেসের দিকে। বন্ড বলল, গুলি গোলার আওয়াজ শুনে পুলিশ আসতে পারে কাজেই আমাদের পালাতে হবে এখান থেকে।

পুর্তগীজ পুলিশ? ওরা তো আমাকে ছাড়বে না। ওদের হাতে আমাকে দিয়ো না বরং তুমি আমাকে খুন কর। বন্ড বলল, তুমি চিন্তা করো না, প্রয়োজন হলে আমি তাই করব। চল, এবার আমরা পালাবার চেষ্টা করি।

হঠাৎ দেখা গেল আসকারি টর্চ হাতে এগিয়ে এল। অপর হাতে রাইফেল, পিঠে গ্রেনেড ব্যাগ। প্রিন্স ম্লান হেসে বলল, দুঃখিত দেরি হয়ে গেল। হাজতে কয়েকজন সৎ লোক আমাকে সাহায্য না করলে তোমাদের দেখা পেতাম না। প্রিন্স এবার জয়ের হাসিতে প্রিন্সেসের দিকে তাকাল, বন্ডকে বলল, তা তোমরা কি ঠিক করলে? আদম আর ইভ

পরের দিন। প্রিন্স ফোন করল বন্ডকে রুমানদারিন হোটেলে।

প্রিন্সেসকে বিয়ে করছি দু-চার দিনের মধ্যে। আমাদের বিদ্রোহের ব্যাপারে ও এখন মাথা ঘামাচ্ছে। ও এখন আমার সাথী হতে চায়। সুখ দুঃখের সব কিছুর।

এ তো খুব ভাল কথা, বন্ড শুভেচ্ছা জানাল, তোমাদের জন্য আমার সবরকম শুভেচ্ছা রইল।

গুড বাই বন্ড

এরপরেই প্রিন্সেসের ফোন এল।

আমার জন্য তুমি যা করেছ বন্ড, তার জন্য অজস্র ধন্যবাদ…ভি ন্যাডা…।

ওদিকে, লুই দ্য গামা, প্রিন্সেসের কাকা, পুর্তগীজ সরকারের মাতব্বরের পদ আলো করে বসেছিল তখন। কাকা প্রিন্সেসের টাকাকড়িই নিজের আয়ত্বে পেল না, প্রিন্সেসের দেহটাও।

লুই দ্য গামা মাঝে মাঝে ভয় পেত, বাইরের কেউ যদি ওদের গোপন সম্পর্কের কথা টের পায়। তাহলে ওর সব, যা কিছু প্রতিপত্তি, তা নিমেষে ধুলিস্যাৎ হয়ে যাবে।

প্রিন্সেস একদিন গোপনে পালিয়ে গেল সুইজারল্যান্ডে। পাছে ভাইঝির মুখ দিয়ে কিছু ফাঁস হয়ে যায়, তাই ওর কাকা ওকে চালান করে দিল স্যানাটোরিয়ামে। কিন্তু সেখানে সোডিয়াম পেন্টাথলের প্রভাবে প্রিন্সেস সব কিছু বলে ফেলল নার্সকে। সেই নার্সটি ওর কাকাকে ব্ল্যাকমেল করতে শুরু করল।

অবশেষে প্রিন্সেস পালিয়ে গেল স্যানাটোরিয়াম থেকে। একদেশ থেকে আর এক দেশে চলল ওর বিচরণ। সেই। সঙ্গে সমানে চলল ড্রাগ ট্যাবলেট, সেক্স–এসবই হল ওর সঙ্গী তখন।

পুর্তগীজ ইনটেলিজেন্স মারফত লুই গামা একদিন জানল ব্লেকারের বু ফিল্মের কথা। লুই ভাবল। কোনরকমে যদি প্রিন্সেসকে ধরা যায় তাহলে ওকে পাগল বলে সারাজীবন পাগলাগারদে রাখা যাবে, আর কেউ জানবে না কাকা ভাইঝির গোপন সম্পর্কের কথা।

আসকারি গুপ্তচরের মারফতে খবর পেয়ে ভাবল পুর্তগীজ সরকারের বিরুদ্ধে এই অস্ত্রটি দারুণ কাজ করবে।

দু ঘণ্টা পরে হকের ফোন পেয়ে বন্ডের সম্বিৎ ফিরল। ধন্যবাদ বন্ড, আমরা সবাই তোমার দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছি। তা কবে আসছ?

হঠাৎ জানলার দিকে দেখল বন্ড, সার্সির ওপারে ধূসর বৃষ্টি। টাইফুন আসছে স্যার। সম্ভবতঃ দুতিন চলবে এই টাইফুনের দাপট। তারপরেই আমি ফিরছি। গুডবাই স্যার।

কিন্তু বন্ড। অপেক্ষা কর, আমি—

আমাকে ফোন করবেন না। বলল বন্ড।

বরং আমি আপনাকে ফোন করব।

তারপর সে বুথের দিকে ফিরে গেল, সেখানে ইন্ডিয়ানার ফোর্ট ওয়েনের মিস বেনিটা ডান্ডসন অপেক্ষা করছিল বন্ডের জন্য।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *