দি ম্যান উইথ দ্য গোল্ডেন গান

দি ম্যান উইথ দ্য গোল্ডেন গান

বলুন, আপনার জন্য কি করতে পারি?

 সিক্রেট সার্ভিসের অনেক গোপন ব্যাপার একমাত্র জানেন M আর তার চিফ অফ স্টাফ। হঠাৎ যদি দু জনের মৃত্যু ঘটে তবে কাজের ফিরিস্তি পাওয়ার উপায় হল এক গোপন দলিল। এই দলিলকে বলা হয় ওয়ার-বুক।

নভেম্বরের এক শীতের সকাল ডিফেন্স মিনিস্ট্রিতে যে মেয়েটি সুইচবোর্ডে ছিল সে থামবার সুইচটাকে তুলে তার পাশের মেয়েটিকে বলল, নাও আর এক পাগল। বলছে নাকি জেমস বন্ড। M-এর সাথে দেখা করতে চায়। পাসপোর্ট অনুসারে বন্ডের নাম এখন ফ্রাঙ্ক ওয়েস্টমাকট, কোম্পানি ডিরেক্টর। টেলিফোনের তারে একটি পুরুষ কণ্ঠ, ক্যাপ্টেন ওয়াকার কথা বলছি। বলুন, আপনার জন্য কি করতে পারি?

আমি কমান্ডার জেমস বন্ড বলছি, বন্ডের গলা ধীর ও স্পষ্ট। আপনি কি দয়া করে আমাকে M কিংবা তার সেক্রেটারি মিস মানিপেনির সাথে কানেক্ট করে দেবেন?

-আপনাকে যোগাযোগ করতে হবে মেজর টাউনসেন্ডের সাথে। চুয়াল্লিশ নম্বর কেনসিংটন ক্লয়স্টার্স। এই হল ঠিকানা আর টেলিফোন : কেনসিংটন ডাবল ফাইভ ডাবল ফাইভ।

কর্নেল বরিসের কথামত লন্ডনে বন্ড উঠেছিল রিজ হোটেলে। কেজিবি র ফাইলে তাকে বর্ণনা করা হয়েছে এমন একটি লোক যার চালচলনে বড়লোকীভাব। বন্ড লিফটে করে নামল আর্লিংটন স্ট্রিট দিয়ে ঢোকার গেটে। এই অবসরে খবরের কাগজের স্টলে দাঁড়ানো একটি লোক টেলিস্কোপিক লেন্স লাগানো ক্যাননফ্লেক্স ক্যামেরায় বন্ডের ছবি তুলে ফেলল। তারপর একটি গাড়ি বন্ডের ট্যাক্সিকে অনুসরণ করে যেতে লাগল। ইতিমধ্যে আর একটি লোক স্পেশাল ব্রাঞ্চের অ্যাকশন রুমে খবরটা জানিয়ে দিল।

একটি সেকেলে বাড়ি–এই হল চুয়াল্লিশ নম্বর কেনসিংটন ক্লয়-স্টার্স। এক সময় কোলাহল নিবারণী সমিতির প্রধান কার্যালয় ছিল এখানে। বন্ড নেমে ঢুকে যাওয়ার পর দরজা বন্ধ হয়ে গেল। মেজর টাউনসেন্ডের সাথে আমার দেখা করার কথা ছিল, জেমস বন্ড জানাল।

আজ্ঞে হ্যাঁ, উনি আপনার জন্যে অপেক্ষা করছেন। আপনার বর্ষাতিটা কি খুলে নিতে পারি? দরজায় যে ষন্ডামার্কা প্রহরীটি ছিল সে বর্ষাতিটা একটা হ্যাঁঙ্গারে আটকে দরজার পাশের সারি সারি হুকের মধ্যে একটিতে ঝুলিয়ে দিল। বন্ড যেই মেজরের কাছে চলে যাবে তখনই ঐ বর্ষাতি চলে যাবে দোতলায় ল্যাবরেটরিতে। সেখানে কাপড়টা পরীক্ষা করে তার সব বৃত্তান্ত জানা হবে।

সরু বারান্দা। একটি মাত্র লম্বা গোছের জানালা সেখানে কার্পেটের মধ্যে লুকানো স্বয়ংক্রিয় প্রতিপ্রভ পর্দা চালু আছে। এর মর্মভেদী চোখ যা দেখে নিচ্ছে তা যাবে বারান্দার ঠিক উপরে ল্যাবরেটরি ঘরে।

বারান্দার শেষ প্রান্তে দুটি দরজা। একটিতে লেখা A, অন্যটিতে B। প্রহরী B লেখা ঘরে টোকা দিয়ে সরে দাঁড়াল; বন্ড ভেতরে ঢুকল। ঘরের দেওয়ালে যুদ্ধের ছবি। ম্যান্টলপীসের উপরে গোটাকতক রূপার ট্রফি আর দুটি ছবি–একটি সুন্দরী তার তিনটি সুন্দর ছেলেমেয়ে। নিচে আগুন জ্বালা। আগুনের দু পাশে দুটো চেয়ার। হাসিখুশি মেজাজের একটি লোক চেয়ারে বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন। বন্ডকে দেখে হাসিমুখে এগিয়ে গেলেন। ইনিই সেই ঠাণ্ডা মাস্টার নামে পরিচিত লোকটি। মুখোমুখি বসলেন দুজনে। মেজর টাউনসেন্ড বললেন, এবার বলুন, আমার দ্বারা আপনার কি উপকার হতে পারে?

বারান্দার ওদিকে A মার্কা ঘরটিতে ঢুকলে কিন্তু বন্ডের ঠিক এ ধরনের সমাদর হত না। কারণ ঐ ঘরটিতে কড়া মাস্টার নামে এক ব্যক্তি অধিষ্ঠিত। তিনি বন্ডকে সহজে রেহাই দিতেন না। সুতরাং এই হল সিক্রেট সার্ভিসের মধ্যে দেখাশোনার নমুনা। কর্নেল বরিস আগে থেকে বেশ ভালভাবেই জানিয়ে দিয়েছিলেন বন্ডকে যে, এভাবে পরীক্ষায় পাশ করে তবে সে তার আগেকার মনিবের দর্শন লাভের অনুমোদন পাবে।

মেজর টাউনসেন্ড অনেকক্ষণ ধরে বন্ডের সাথে কথা বলে বুঝতে পারলেন যে, এই লোকটি জেমস বন্ড না হয়েই যায় না। এখন শুধু এটা জানলেই চলবে যে, সে কোথা থেকে আসছে এবং এত মাস সে কোথায় ছিল। কিন্তু বন্ড জানাল, এ প্রশ্নের উত্তর সে একমাত্র M-কেই দিতে পারবে। মেজর টাউনসেন্ডকে চিন্তিত দেখাল। দরজা ভেজিয়ে তিনি A মার্কা ঘরটিতে ঢুকে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে বললেন, M জানিয়েছেন আপনি ফিরে আসায় উনি পরম নিশ্চিন্ত। আধ ঘণ্টার মধ্যেই ওঁর সময় হবে। দশ মিনিটের মধ্যেই গাড়ি এসে যাচ্ছে।

.

সাবধান

চিফ অফ স্টাফ M-এর ডেস্কের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁকে নিরস্ত করার যথাসাধ্য চেষ্টা করছিলেন। ওর সাথে দেখা করাটা ঠিক হবে না স্যার, আমি হলে করতাম না। M হাত তুলে বললেন, আমি 007-কে ভাল করেই চিনি। আমি যা বলছি শুনে যাও। ইন্টারকমের আলো জ্বলল। এসেছে। সোজা ওখানে পাঠিয়ে দেবে। মিস মানিপেনির সামনে দাঁড়িয়ে বন্ড আবছাভাবে হাসল। M-এর গলা। এস জেমস, খুব খুশি হলাম। এবার সব খবর-টবর বল, শুনি।

ডেস্কের অন্যদিকে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসল বন্ড। তার স্মৃতির মধ্যে ঝড় উঠল। পরপর অনেকগুলো হিজিবিজি ছবি, খারাপ হয়ে যাওয়া প্রজেক্টারের মত। নিজেকে গুটিয়ে নিল। ডানদিকের রগে আঙুল ঠেকিয়ে বলল, আসলে এখানে একটা গুলি লেগেছিল, স্যার। তারপর অনেক কিছু মনে করতে পারছি না। ব্লাডিভস্টকে পানি থেকে পুলিশ আমাকে তোলে। কি করে সেখানে পৌঁছলাম কিছুই জানি না। ওদের ধাতানির চোটে অবশ্য আমি কে, কি বৃত্তান্ত মনে পড়ে যায়। তারপর পুলিশ আমাকে স্থানীয় কেজিবি র হাতে চালান করে দেয়। ঐ যে লেনিন গ্রাডের কি যেন ইনস্টিটিউট নাকি, ওখানে রাজার হালে রেখেছিল আমাকে। বন্ড সামনের লোকটির দিকে অবাধ্য ভঙ্গিতে তাকাল, দেখল তার নীল চোখ রাগে জ্বলছে।

– বেশ তো ওরা যদি এতই ভাল তবে তুমি তো ওখানে থেকে গেলেই পারতে।

-আমরা ঠিক করলাম তার বদলে আমাকে ফিরে আসতে হবে, আর শান্তির জন্য লড়ে যেতে হবে। আপনার দালালরা আর আপনি আমাকে গোপন যুদ্ধের কিছু কায়দা শিখিয়েছিলেন। ওরা বলল শান্তির কাজে ঐ একই কায়দা প্রয়োগ করা যেতে পারে। নির্বিকারভাবে জেমস্ বন্ডের হাত চলে এল ডানদিকের পকেটে। যেন কিছুই হয়নি এমনিভাবে M তাঁর চেয়ারটা একটু পিছন দিয়ে ঠেললেন আর বাঁ হাত দিয়ে খুঁজতে লাগলেন চেয়ারের তলার বোতামটা।

কি রকমভাবে শুনি? জিজ্ঞেস করার সাথে সাথে M জানতেন মৃত্যু এসে ঘরের মধ্যে ঢুকে তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে, এবং তিনি তাকে সরাসরি আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন।

ততক্ষণে জেমস্ বন্ড শক্ত হয়ে গেছে। তার ঠোঁটের দু পাশ ফ্যাকাসে। নীল চোখে শূন্য দৃষ্টি নিয়ে সে তাকাল M এর দিকে। কে যেন তাকে দিয়ে কথা বলালো, যদি যুদ্ধবাজদের এই পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলা যায় তাহলে সেটা এক কাজের কাজ হবে। আমাদের ফর্দে প্রথম ব্যক্তির জন্য এই ঠিক হয়েছে।

বলার সাথে সাথে বোচা কালো ধাতব জিনিসটা পকেট থেকে উঠে এসেছে। কিন্তু ততক্ষণে ছাদের লুকানো জায়গা থেকে একটি আর্মারপ্লেট কাঁচের দেওয়াল খ্যাচ করে মেঝের উপর নেমে এসেছে। নল থেকে বেরিয়ে আসা বাদামী রঙের বিষাক্ত বস্তুটি ছিটকে এসে লাগল সেই কাঁচে, টপটপ করে গড়িয়ে পড়তে লাগল। কিন্তু M ততক্ষণে সেই গণ্ডির ওপারে নিরাপদ, যদিও তিনি মুখ আড়াল করার জন্য প্রায় সাথে সাথেই হাত তুলে ফেলেছিলেন।

ততক্ষণে চিফ অফ স্টাফ ছুটে এসেছেন ঘরে। পেছন পেছন নিরাপত্তা প্রধান। দুজনেই বন্ডের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তার হাত ধরে ফেললেন। কিন্তু তার মাথা বুকের ওপর ঝুঁকে এসেছে। ওরা ধরে না ফেললে হয়ত চেয়ার থেকে মেঝেতে গড়িয়ে পড়ত। ওরা টেনে তুললেন, কিন্তু বন্ডের হুঁশ নেই। একটু এঁকে নিরাপত্তা প্রধান বললেন, সায়েনাইড। কার্পেটের ওপর পড়ে ছিল পিস্তলটা। এক লাথি মেরে সেটাকে দূরে সরালেন। কাঁচের দেওয়ালের ওপার থেকে M এদিকে এসেছেন।

এই মুহূর্তে আপনি এ ঘর ছেড়ে চলে যান স্যার। আমি লাঞ্চের সময় পরিষ্কার করাচ্ছি সব। মিস মানিপেনি ভয়ার্ত চোখে দেখলেন বন্ডের দীর্ঘ দেহ টানতে টানতে চিফ অফ স্টাফের ঘরের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

বন্ডের মুখ রক্তশূন্য। একটুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে দেখলেন M তারপর দেওয়ালের দিকে মুখ ফেরালেন। তারপর চিফ অফ স্টাফকে বললেন, যাক, যা হবার হল। আমার আগের জন ঐ চেয়ারেই মারা যান এরকম এক পাগল অফিসারের গুলিতে। পাগলদের বিরুদ্ধে তো আইন চলে না। তিনি চিফ অফ স্টাফকে বললেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্যার জেমস মলোনিকে ধরার চেষ্টা করুন। 007-কে নিয়ে যাও ওঁর ওখানে অ্যাম্বুলেন্সে করে খুব গোপনে।

স্যার জেমসকে আমি আজ বিকালে সব বুঝিয়ে বলব। সংক্ষেপে তোমাকে বলি, কেজিবি র খপ্পরে পড়ে ছিল বেচারা। মগজ ধোলাই করে আর কিছু বাকি রাখেনি। আপাতত হোটেল থেকে ওর জিনিসপত্র আনিয়ে নাও, বিলপত্তর চুকিয়ে দাও। আর প্রেস অ্যাসোসিয়েশনকে জানিয়ে দাও প্রতিরক্ষা বিভাগ আনন্দের সাথে জানাচ্ছেন যে, জেমস্ বন্ড যিনি গত নভেম্বরে জাপানে নিহত হয়েছেন বলে ঘোষিত হয়েছিল, প্রায় এক বছর পর অত্যন্ত বিপদসঙ্কুল পথে সোভিয়েত রাশিয়ার মধ্য দিয়ে ফিরে এসেছেন। আশা করা যাচ্ছে, তার কাছ থেকে অনেক মূল্যবান তথ্য পাওয়া যাবে। তিনি এখন ডাক্তারের পরামর্শাধীনে সম্পূর্ণ বিশ্রাম নিচ্ছেন।

বন্ডকে আপাতত ওর পুরানো সেশনেই অর্ধেক রাখা হোক। আর গত বছরের জন্য বেতন আর ভাতা যেন পুরো দেওয়া হয়। যদি 007-কে আবার নিজের পায়ে দাঁড় করাতে পারি তাহলে ও-ই হবে ঐ শয়তানটাকে শায়েস্তা করার উপযুক্ত লোক।

007-কে আর একবার লড়াই করতে পাঠানোই ভাল। কারণ যদি ও জেতে একমাত্র তাহলেই আমরা ওর আজকের ব্যবহার ভুলে যেতে পারব।

দরজায় টোকা দিয়ে ঘরে ঢুকলেন মেডিক্যাল অফিসার। M তাঁকে সম্ভাষণ জানিয়ে মিলিটারি কায়দায় একপাক ঘুরলেন, তারপর সোজা বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে।

.

পিস্তল স্কারামাঙ্গা

ক্লাবে বসে হালকা খাবার খেলেন M। মাঝে খবরের কাগজের পাতা ওল্টাচ্ছিলেন, যদিও আসলে তিনি মোটেই কাগজ পড়ছিলেন না। কিছুক্ষণ পর M দরজার দিকে হাঁটা দিলেন। দুটো বেজেছে। বার্কলে স্কোয়ার আর অক্সফোর্ড স্ট্রিট হয়ে উইগনোর স্ট্রিট পেরিয়ে চললেন রিজেন্ট পার্ক। ড্রাইভারের মাথার পেছন দিকে চিন্তাকুল দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বসে রইলেন। হার্ট বিশেষজ্ঞ স্যার জেমস্ মলোনির চিকিৎসায় বন্ড নিশ্চয়ই সেরে উঠবে, কিন্তু পুরানো সেশনে ওকে আগেকার মত কাজে লাগান স্রেফ বোকামি হবে। জেমস বন্ডের নিশানা অব্যর্থ বহুবার প্রমাণ হয়ে গেছে, তা না হলে তাকে 007 নামটি দেওয়া হত না। এ কাজে সফল হলে সে আবার আগের মত খ্যাতি অর্জন করবে। না হলে, অন্তত সম্মানের সাথে মৃত্যুবরণ করবে। উভয় দিকেই প্ল্যানটা কাজ করবে।

ফাইল হাতে করে তার নিজের ঘরে ঢুকলেন M। বাদামী ফোল্ডার খুলে হাত বাড়িয়ে পাইপটা তুলে নিলেন। তারপর পড়তে শুরু করলেন।

বড় টাইপে লেখা ফ্রান্সিসকো পিস্তল স্কারামাঙ্গা। তারপর ছোট টাইপে পেশাদার খুনে। প্রধানত কেজিবি র অধীনে, কিউবার হাভানা থেকে ভিএসএস মারফত কাজ করে। এ বছর থেকে হঠাৎ স্কারামাঙ্গারও খুব শক্তিবৃদ্ধি হতে দেখা গেছে। এসব দেশে পুলিশের সাবধানতা সত্ত্বেও লোকটা যথেচ্ছ ঘুরে বেড়ায়। তার প্রধান অস্ত্র সোনার পাতে মোড়া লং ব্যারেল সিংগল অ্যাকশন কোল্ট 45। সোনার পিস্তলধারী বলেই সে সাধারণত পরিচিত। তার বুলেটগুলো বিশেষভাবে তৈরি, ২৪ ক্যারেট সোনার উপর রূপা দিয়ে মোড়া দমদম বুলেট। বয়স প্রায় পঁয়ত্রিশ, ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি। রোগা পাতলা চেহারা। দু হাত সমান চলে। যে কোন প্রকার স্ত্রীলোেকে আসক্ত এবং খুনের আগে যৌন সংসর্গ করে থাকে। এই বিশ্বাসে যে তাহলে টিপ অব্যর্থ হয়। এ নামের কাটালান সার্কাসের দলের সাথে আত্মীয়তা আছে। ছেলেবেলা তাদের সাথে কাটিয়েছে। লা ভেগাসে জুয়ার আড্ডায় চাকরি করত। ঐ সময় এক লক্ষ ডলার হস্তগত করে। সেই টাকায় ক্যারিবিয়ানের বিভিন্ন অঞ্চলে শেয়ার কেনে। ১৯৬৯ সালে হাভানায় বসবাস করতে শুরু করে। কিউবার কূটনৈতিক পাসপোর্টও আছে। পুলিশ রেকর্ড না থাকার জন্য যথেচ্ছ ঘুরে বেড়াবার স্বাধীনতাও আছে। নানারকমের ক্রেডিট কার্ড এবং জুরিখের ইউনিয়ন ব্যাংকে একাউন্ট আছে। M আবার পাইপটা ধরালেন তারপর পড়তে শুরু করলেন।

সি.সি. নামে আত্মগোপনকারী ব্যক্তিটি আসলে অক্সফোর্ডের ভূতপূর্ব ইতিহাসের অধ্যাপক। M লোকটিকে বিশেষ পছন্দ করতেন না। কিন্তু লোকটির তীক্ষ্ণ মেধা আর জ্ঞানের প্রশংসা না করে পারতেন না। এই লোকটি একটি অদ্ভুত চরিত্র। সহকর্মীদের, যাদের প্রতি এর কোন ব্যক্তিগত আক্রোশ নেই, কেবল মালিকের ইচ্ছা অনুসারে হত্যা করার এই যে প্রবৃত্তি, আমাদের মনে হয় তার পূর্ব জীবনের এক ঘটনা থেকে এর কিছুটা ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে। এর বাবা এনরিকো স্কারামাঙ্গার একটি ভ্রাম্যমান সার্কাস দল ছিল। সেই দলে একে নানা রকম কাজ করতে হত। ম্যাক্স বলে একটি হাতিকে সে ভীষণ ভালোবাসত কিন্তু কোন বিশেষ কারণে পুলিশ হাতিটাকে গুলি করলে স্কারামাঙ্গা পুলিশের সেই লোকটির বুকের মধ্যে সোজা গুলি করে ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়ে। তারপর সে জাহাজে করে সোজা আমেরিকায় পালায়।

আমার মনে হয় এই মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার মধ্যে লোকটার পরিবর্তনের বীজ নিহিত আছে। পরবর্তীকালে এই স্কারামাঙ্গাই মারাত্মক বন্দুকবাজ বলে খ্যাত হয়। টাইম পত্রিকায় আমি পাশ থেকে লোকটার যে ছবি দেখেছি, তাতে ওর যৌন অস্বাভাবিকতা সম্বন্ধে আমার ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে। টাইম পত্রিকায় স্কারামাঙ্গার বিবিধ গুণাবলীর মধ্যে তার শিক্ষা দেবার অক্ষমতার কথাও ছিল। যাই হোক, এই লোকটি সিক্রেট সার্ভিসের যা ক্ষতি করেছে সেই কথা মনে করে এবং অন্য সব দিক বিচার করে আমি এই সিদ্ধান্তে আসতে বাধ্য হচ্ছি যে, লোকটিকে যতশীঘ্র সম্ভব ধরাধাম থেকে বিদায়ের ব্যবস্থা করা দরকার। স্বাক্ষর সি.সি.।

প্রায় পাঁচ মিনিট শূন্যদৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন M। তারপর লিখলেন : কাজ শুরু করে দেওয়া হোক। তারপর বসে বসে ভাবতে লাগলেন, তাহলে কি আমি জেমস্ বন্ডের মৃত্যুর পরোয়ানা সই করলাম?

.

দিনটা কেমন যাবে?

গরমের বিকেল কাটানোর পক্ষে জ্যামাইকার কিংস্টন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের চেয়ে খারাপ জায়গা কমই আছে। কঘণ্টা আগে ত্রিনিদাদ থেকে পৌঁছেছে বন্ড। হাভানা যাবার কিউবান এয়ারওয়েজের প্লেন আসতে তখনো ঘণ্টা দুই বাকি। বন্ড উঠে গিয়ে দোকান থেকে একটা কাগজ কিনল। অপরিসীম বিরক্ত বশে বন্ড খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব কিছু পড়ে ফেলল। হাভানা পৌঁছে প্রথম দিনেই সে স্কারামাঙ্গার খোঁজ পাবে–সে আশা দুরাশা। কারামাঙ্গা সেখানে নাও থাকতে পারে। তবুও একবার শেষ চেষ্টা করে দেখা যাক। গত দেড় মাস যাবত বন্ড এই লোকটার খোঁজে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

একান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও বন্ডকে এখানে আসতে হয়েছে ওর সন্ধানে। এই প্রতিকূল পরিবেশের সাথে সে একেবারেই পরিচিত নয়। কাগজের একটি বিজ্ঞাপনের দিকে বন্ডের চোখ পড়ল। এই না হলে জ্যামাইকা! বিজ্ঞাপনটি এ রকম :

নিলামে বিক্রি হবে

২৮শে, বুধবার সকাল সাড়ে দশটায় ৭৭নং হারবার স্ট্রিট, কিংসটনে একটি মর্টগেজ করা সম্পত্তি সাড়ে তিন লাভে লেন।

এর পরের জমি ও বাড়ির বর্ণনায় পুরানো সাবেকী আমলের ব্রিটিশ-রাজের গন্ধ বন্ড বেশ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছিল। জ্যামাইকা ছিল ব্রিটেনের সর্বপ্রথম উপনিবেশগুলোর একটি। বন্ডের দৃঢ় বিশ্বাস কিংসটনের কেন্দ্রস্থলে রাণী ভিক্টোরিয়ার মূর্তি নিশ্চয়ই এখনো আছে। ঘড়ি দেখল বন্ড। কোট আর ব্রিফকেসটা তুলে নিয়ে সে ভাবল আর বেশিক্ষণ নেই।

বিভিন্ন এয়ার লাইনের খোপগুলো জনশূন্য, কেবল ফ্ল্যাগ আর ফোল্ডারগুলোর ওপর ধুলো জমছে। বন্ড উঠে বেড়াতে বেড়াতে সেদিকে গেল। যাত্রীদের চিঠিপত্র মাঝখানের একটি স্ট্যান্ডে রাখা। ওর জন্যে যদি কিছু থাকে ভেবে বন্ড একবার সেদিকে গেল। খামগুলোর উপর অলস দৃষ্টিপাত করতে গিয়ে থমকে গেল সে। সর্বাঙ্গ ঠাণ্ডা হয়ে গেল। চট করে রুমালে হাত মুড়ে খামটা টেনে পকেটে পুরলো। খামে লেখা ছিল–স্কারামাঙ্গা। কিংসটন থেকে বারোটা। পনেরোয় খবর পৌঁছেছে। আগামীকাল দুপুরের পর থেকে নমুনা পাওয়া যাবে সাড়ে তিন নং এস.এল.এম.-এ। নিচে কোন সই নেই। বন্ড আনন্দের হাসি রোধ করতে পারল না। চট করে চিঠিটা খুঁজে নিয়ে বন্ড এবার কিউবান এয়ার লাইনস বুথে গিয়ে নিজের রিজার্ভেশনটা ক্যানসেল করাল। তারপর বি.ও.এ.সি. র কাউন্টারে গিয়ে খুঁজে বের করল লিসা থেকে আসছে যে প্লেনটা তার বৃত্তান্ত। লিসা থেকে কিংসটন, নিউইয়র্ক হয়ে লন্ডন। পরের দিন একটা পনেরোতে এসে পৌঁছাচ্ছে। এবার তো কারো শরণাপন্ন হতে হয়। মনে পড়ে গেল স্টেশন জে.-তে আছে তার নাম। সে হাই কমিশনারের অফিসে ফোন করল। একটি মেয়ের গলা শোনা গেল, আমি কমান্ডার রস-এর সহকারী বলছি। বলুন, কি করতে পারি। গলার আওয়াজ যেন চেনা চেনা। বন্ড হাসল, আরে তুমি, গুডনাইট, সত্যি কি কাণ্ড! তা তুমি এখানে কি করছ?

আরে জেমস্! কি দারুণ ব্যাপার! এখন কোথা থেকে কথা বলছ?

কিংসটন এয়ারপোের্ট। এখন শোন, আমাকে একটু সাহায্য করতে হবে। লিখে নাও। এক নম্বর, আমার একটা গাড়ি চাই। যে কোন রকম হলেই চলবে। দু নম্বর, সাভানা লা মারের ওদিকটার সব থেকে শাসালো মক্কেলের নাম। আর জ্যামাইকার মুদ্রায় একশো পাউন্ড। আর লক্ষ্মী মেয়ের মত নিলাম ব্যবসায়ী আলেকজান্দারদের ফোন করে আজকের গ্লীমারে যে সম্পত্তিটার সম্বন্ধে বিজ্ঞাপন দিয়েছে তার সম্বন্ধে যা কিছু জ্ঞাতব্য জেনে নাও। বল, তুমি ওটা কিনতে উৎসুক। সাড়ে তিন লাভ লেন। তুমি ওখানে চলে এসো। রাতটা আছি। রাতে আমার সাথে খাবে।

মেয়েটি হেসে বলল, দেখি তোমার জন্য কি করতে পারি। টেলিফোন বুথের মধ্যে ঘেমে অস্থির হচ্ছিল বন্ড। এবার বাইরে হাওয়ায় এসে সে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। মনে মনে ভাবল মেরি গুডনাইট, তার বহুদিনের পুরানো, অতি প্রিয় সেক্রেটারি তাহলে এখানে। এখন অন্তত একজন দলের লোক পাওয়া গেল।

হোটেলটি পালিসাডোর ডগায় বড় মনোরম। মালিক এক ইংরেজ। বন্ডকে দেখে খুব খুশি হয়ে তাকে একটি বড় ঘর দিলেন। এয়ার কন্ডিশন করা।

ছ টার সময় ঘুম ভাঙল বন্ডের। চুপ করে শুয়ে রইল, আস্তে আস্তে মনে পড়ল সব। সে ভাবতে লাগল, পৃথিবীর মধ্যে সম্ভবত দ্রুততম বন্দুকবাজ বলে যে লোকটি কুখ্যাত তার সাথে গুলির লড়াইয়ে নামা তো স্রেফ আত্মহত্যা। ভাগ্যে কি আছে দেখা যাক। কূটনৈতিক পাসপোর্ট মেরি গুডনাইটের কাছে রেখে যেতে হবে। এখন থেকে জেমস্ বন্ড মার্ক হ্যাঁজার্ড বলে পরিচিত হবে।

পশ্চিমে কিছুক্ষণ সূর্যাস্তের শেষ আলো আগুনের মত জ্বলল, তারপর গলা আগুনের মত সমুদ্রের পানিতে চাঁদের আলো পড়ে বন্দুকের ইস্পাতের মত চকচক করতে লাগল।

পরিচিত সেন্টের গন্ধ। একটি নিরাবরণ হাত বন্ডের গলা জড়িয়ে ধরল। পরক্ষণেই ঠোঁটের কোনায় চুম্বন। হাত বাড়িয়ে তাকে ধরবার চেষ্টা করতেই মেয়েটি বলল, কিছু মনে করো না জেমস্, পারলাম না। কতদিন পরে।

চিবুকের নিচে হাত দিয়ে মুখ তুলে বন্ড প্রতিদানে তার অল্প খোলা ঠোঁটের উপর সোজা চুম্বন করল। মেয়েটির দৃষ্টির সামনে অনেকবার বন্ড অন্যমনস্ক হয়েছে। সুগঠিত দেহে স্বাস্থ্যের দীপ্তি, পুরন্ত ঠোঁটে সরল হাসি যা বরাবরই বন্ডকে আকৃষ্ট করেছে। বন্ড ড্রিঙ্ক-এর অর্ডার দিয়ে সিগারেট ধরাল। মেরি গুডনাইট সোনালি চেন দেওয়া হ্যান্ডব্যাগ থেকে মোটা খাম বের করে বন্ডকে দিল। বেশিটা পুরোনো এক পাউন্ড নোটে, কিছুটা পাঁচ পাউন্ডের আছে।

গাড়ি বাইরে। স্ট্রেঞ্জওয়েসকে মনে আছে? ওরই গাড়ি–সানবিম আলপাইন। ফ্রোমের সব থেকে শাসাল মক্কেলের নাম টোনি হিউগিল। আগে নৌবাহিনীতে কাজ করেছে। ভাল লোক। এবছর কিউবার খুব দুঃসময় গেছে। ঝড় হয়েছে প্রচণ্ড। আর বৃষ্টি। ইতিমধ্যে ক্ষেপনাস্ত্র কেলেঙ্কারীকে রাশিয়ার প্রচুর টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন কিউবাকে বাঁচাবার জন্যে আরো টাকা আর জিনিসপত্র ঢালতে হচ্ছে। সারা পৃথিবী জুড়ে চিনি নিয়ে এক বিরাট দাবা খেলা চলছে–চিনির ভবিষ্যৎ নিয়ে। যতদূর সম্ভব জ্যামাইকার ফসল নষ্ট করে দেওয়া কিউবার স্বার্থ। মেরি একটু থেমে গ্লাসে চুমুক দিল।

বন্ড জানতে চাইল, তোমার কর্তা রস কোথায় গেছে?

গুডনাইট চিন্তিত মুখে বলল, সত্যি বলতে কি আমি নিজেই জানি না। গত সপ্তাহে, ট্রিনিদাদে কি কাজে ওকে যেতে হয়েছিল। স্কারামাঙ্গা বলে একটা লোকের পিছনে।

বন্ড আবার জানতে চাইল, সাড়ে তিন নং লাভ লেন সম্বন্ধে কোন খোঁজ আছে? মেরী গুডনাইট লজ্জিত মুখে বলল, পাইনি আবার? নাক কুঁচকে জানাল, মানে সাভানা লা মারের একটা নামকরা খারাপ জায়গা।

ওর অবস্থা দেখে হো-হো করে হেসে উঠল বন্ড।

.

সাড়ে তিন নম্বর লাভ সেন

 প্রচণ্ড রোদ। একের পর এক পার হয়ে যেতে লাগল স্প্যানিশ টাউন, ব্লাক রিভার। বিকেল চারটা নাগাদ ওরা পৌঁছাল ছোট্ট শহর সাভানা লা মারের শহরতলীতে। সুন্দর বাংলো প্যাটার্নের বাড়িগুলো, সামনে একটু করে ঘাস জমি, বুগনভিলার ঝাড় আর ক্রোটনের কেয়ারী।

সমুদ্রতীরের পুরানো পাড়াটা বাদ দিলে বাকি শহরটা মোটেই জ্যামাইকা ধাচের নয়। মেরী পথ দেখাবার জন্য বন্ডের সাথে এসেছিল। কাজ শেষ হতে সে বন্ডের কাছ থেকে বিদায় নিল। বন্ড জানাল যে, কাজ হয়ে গেলেই সে ফিরবে। আবার দেখা হবে।

লাভ লেন খুঁজে বের করতে বেশি দেরি হল না বন্ডের। বাড়িটার দিকে ভাল করে তাকিয়ে সে বুঝল এটা এককালে কোন শাসাল ব্যবসাদের বাড়ি ছিল। এখন ভগ্নদশা। রাস্তা পার হয়ে সিঁড়ি বেয়ে ঝোলানো পুঁথির পর্দা ঠেলে ভেতরে ঢুকল জেমস্। কাউন্টারের কাছে গিয়ে দেখল গোলাপি ছোট ফ্রক পরা একটি মেয়ে।

বলুন।

 আমি একটা রেড স্ট্রাইপ পেতে পারি?

নিশ্চয়ই।

কাউন্টারের পিছনে গিয়ে অনাবশ্যকভাবে একটু বেশি নিচু হয়ে আইসবক্সের দরজা খুলল মেয়েটি বন্ডের নজরে এল তার সুগঠিত বুকের একঝলক। হাটু দিয়ে দরজায় ধাক্কা মেরে বন্ধ করে সে দক্ষ হাতে ছিপি খুলে একটা ময়লা মত গ্লাসের পাশে বোতলটি বসাল। এক শিলিং ছ পেন্স দাম।

বন্ড দাম দিয়ে একটা টুল টেনে নিয়ে বসল। তারপর সে জানতে চাইল, এখানে ঘর ভাড়া পাওয়া যায় নাকি? মেয়েটির নাম টিফি। সে জানাল, ঘর ভাড়া দেওয়া হয়, তবে গোলমাল বেশি হয় এই যা।

ঘরের পিছনে পুঁথির পর্দার শব্দ হল। বন্ড আস্তে আস্তে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। সুটকেসটা মাটিতে নামিয়ে রেখে এগিয়ে এল লোকটা। স্কারামাঙ্গা সামনে এসে কাউন্টারে হেলান দিয়ে দাঁড়াল। চেহারার বর্ণনা রেকর্ডের সাথে হুবহু এক। গলায় টাই-এর বদলে সাদা সিল্কের স্কার্ফ বাঁধা তাতে পিন আঁটা সোনার পিস্তল।

বন্ড বিয়ারের বাকিটা শেষ করে উঠে দাঁড়াল। স্কারামাঙ্গার পাশ কাটিয়ে চলে যাবে হঠাৎ লোকটা বাঁ হাত দিয়ে খপ করে ওর বাইসেপস চেপে ধরল। সোনার পিস্তলটা সে এমনভাবে বন্ডের সামনে ধরল যেন একটা গোলাপ।

স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেল বন্ড, হাত ছাড় ন । কাউন্টার ঘেঁষে চলে গেল বন্ড। সে লক্ষ্য করল স্কারামাঙ্গার দৃষ্টিতে কৌতূহল আর ঘৃণা।

.

হাত বাড়ালে হাজার টাকা

টিফির পাশে হাঁটু গেড়ে বসে বন্ড প্রথমে তার ডান গালে তারপর বাঁ গালে গোটাকতক চড় মারল। ভিজে চোখে এতক্ষণে দৃষ্টি ফিরে এল। বন্ডের দিকে অবাক হয়ে চাইল টিফি। বন্ড একটা কাপড় নিয়ে পানিতে ভিজিয়ে সস্নেহে তার মুখ মুছিয়ে দিতে লাগল। তারপর বলল, ওঠ টিফি, মুখটা ঠিক করে নাও। এক্ষুনি খদ্দের আসতে শুরু করবে।

টিফি ব্যাগটা খুলে তাকাতেই ওদিকে কারামাঙ্গার দিকে নজর গেল। ঘৃণায় মুখ বেঁকিয়ে বলল, আমি তোমাকে শায়েস্তা করছি শয়তান। অরেঞ্জ হিলের ওদিকে মাদার এড়োনাকে গিয়ে সব বলছি, কালই যাব। বন্ড অবশ্য ওর কথাগুলো শুনতে পেল। একটা আয়না বের করে মেকআপ করতে লাগল টিফি। বন্ড পাঁচটা এক পাউন্ডের নোট তার ব্যাগে গুঁজে গিয়ে বলল, এ নিয়ে আর ভেবো না।

স্কারামাঙ্গা বন্ডের দিকে ঘুরে বলল, দাঁড়িয়ে ক টা কথার উত্তর দিয়ে যাও। ফেউ নাকি হে তুমি? পুলিশের গন্ধ পাই যেন?

বন্ড একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে বলল, আমি কি করব না করব একথা কারো কাছ থেকে শোনার লোক আমি নই। বেশি ওস্তাদি করার চেষ্টা করলে সুবিধে হবে না।

স্কারামাঙ্গা এগিয়ে এসে একটা চেয়ার নিয়ে ঘুরিয়ে সেটার উল্টো দিকে বসে পড়ল। দু হাত টেবিলের ওপর রেখে হাসিমুখে বন্ড বলল, আমি পুলিশের কেউ নই। আমার নাম মার্ক হ্যাঁন্ডার্ড। কাজ করি যে কোম্পানিতে তাদের নাম ট্রান্সওয়ার্ল্ড কনসর্টিয়াম। ফ্রোমের আমের খেতে কাজ করছি আপাতত।

আপনার পরিচয়টা?

স্কারামাঙ্গা। ফ্রান্সিসকো স্কারামাঙ্গা।

বন্ড পায়ের ওপর পা তুলে বসল। তারপর বলল, আপনি কুয়োর মধ্যে ব্যাঙ রাজা ভাবছেন নিজেকে।

স্কারামাঙ্গা কিন্তু চটে উঠল না। একটু ভেবে বলল, তা হবে। ক্যারিবিয়ন কুয়ো ছাড়া আর কি। তবে লাভের জায়গা। এখানকার লোকে সোনার পিস্তলটার জন্য আমাকে চেনে। তোমার মত লোক ঢের দেখেছি। ও পুলিশের গন্ধ চিনতে আমার দেরি হয় না বাবা। খোঁজখবর পাওয়া গেল কিছু?

গোটাকতক রাসতফারী ধরেছি। তবে মহা চেঁচামেচি লাগিয়েছে ব্যাটারা। আমরা নাকি ধর্ম নিয়ে বাছবিচার করছি। ছেড়ে দিতে হবে মনে হচ্ছে। সুতরাং শিগগিরি আগুন লাগা শুরু হবে আবার। তাই বলছিলাম আপনার মত একজন জবরদস্ত লোক পেলে হত। গায়ের জোরে আদায় তাই তো করেন আপনি?

স্কারামাঙ্গা বন্ডকে জিজ্ঞেস করলেন, তা এরপর কি করা হচ্ছে? ঠিক নেই। লন্ডনে খবর নিয়ে দেখতে হবে এদিকে ওদের আর কোন কাজ আছে কিনা। তবে তাড়া নেই। আমি ঠিক বেতনভুক্ত লোক নই, কাজ হিসেবে টাকা। কেন, আপনার হাতে কিছু আছে নাকি?

টিফি ট্রেতে করে বোতল আর গ্লাস নিয়ে এসে বন্ডের সামনে রাখল। সে স্কারামাঙ্গার দিকে তাকাল না দেখে স্কারামাঙ্গা কর্কশভাবে হেসে উঠল। কোটের ভেতর থেকে কুমিরের চামড়ার মানিব্যাগ বের করে তার থেকে একটা একশ ডলারের নোট টেনে ছুঁড়ে দিল টেবিলে, বেশি মাথা গরম করবি না, বুঝলি!

টিফি নোটটা তুলে নিয়ে চলে গেলে স্কারামাঙ্গা কাঁধ ঝাঁকাল। বোতল থেকে বিয়ার ঢালল গ্লাসে। দু জনে নীরবে বিয়ার পান করতে লাগল। স্কারামাঙ্গা কিছুক্ষণ বন্ডের দিকে তাকিয়ে বলল, এক হাজার ডলার রোজগার করার বাসনা আছে?

বন্ড বলল, থাকতে পারে।

বাইরে গাড়ি থামার শব্দ। দুটি লোক হাসাহাসি করতে করতে উপরে উঠে এল। দুজনেই শ্রমিক শ্রেণীর জ্যামাইকান। কাউন্টারে গিয়ে টিফির সাথে কি-সব ফিসফাস করে দুজনেই এক পাউন্ডের একটা করে নোট দিয়ে সরে। পড়ল। স্কারামাঙ্গা বলল, এ ব্যবসাতে আমার কিছু শেয়ার আছে। থান্ডাবার্ড হচ্ছে হোটেলের নাম আর জনা ছয়েক স্টকহোল্ডার আসছেন। ওখানে মিটিং হবে। মানে জায়গাটা ঘুরে-টুরে দেখা আর সবাই মিলে মাথা খাঁটিয়ে একটা উপায় বের করা। এদের জন্য আমোদ-প্রমোদের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। কিংসটন থেকে ব্যান্ড আনাচ্ছি, ক্যালিপেসো, মেয়েছেলে বুঝলে কিনা। তাছাড়া সাঁতারের আয়োজন। এভাবে ওদের ফুর্তিতে রাখা, বুঝলে না?

বুঝেছি। যাতে ফুর্তির চোটে ওরা আপনার শেয়ারগুলো কিনে নেয়।

স্কারামাঙ্গা চটে গিয়ে বলল, উল্টোপাল্টা কথা বল না। এর জন্য তোমাকে এক হাজার ডলার দেওয়া হচ্ছে না। তুমি নিরাপত্তার ব্যাপারে কাজ করেছ শুনে আমার মনে হল যে তুমি এসব মিটিং-এ একটু দেখাশোনা করতে পারবে, মানে কোথাও লুকানো মাইক্রোফোন আছে কি-না আগে থাকতে দেখে নেবে। তারপর দরজার কাছে হাজির থাকবে।

বন্ড না হেসে পারল না। মানে আপনার দেহরক্ষী। বন্ড যা ভাবেনি তাই পেয়ে গেল অর্থাৎ স্কারামাঙ্গার কাছে। পাহারা এড়িয়ে পৌঁছান। হয়ত এটা ফাঁদও হতে পারে। তবে ফাঁদটা যে কি বন্ডের মাথায় এল না। বন্ড একটা। সিগারেট ধরাল। স্কারামাঙ্গা হাতটা উল্টে কব্জিতে সোনার ঘড়ি দেখে নিল তারপর বন্ডকে বলল, চল হে যাওয়া যাক। এতক্ষণে আমার গাড়ি এসে গেছে। তবে খেয়াল রেখো, একটুকুতে আমার মেজাজ বিগড়ে যায় কিন্তু

বেশ। স্কারামাঙ্গা ঘরের ওদিকে গিয়ে সুটকেসটা তুলে নিল।

বন্ড চট করে কাউন্টারে ফিরে গেল। চললাম টিফি। আবার কোন-একদিন ফিরব। যদি কেউ আমার খোঁজ করতে আসে বলে দিয়ে আমি থান্ডারবার্ড হোটেলে আছি।

টিফি ওর হাতটা ছুঁয়ে ভয়ে ভয়ে বলল, সাবধানে থেকো। ওটা গুণ্ডার আড়া। সামনে থেকো। বাইরের দিকে ইশারা করে বলল, ওরকম পাজি লোক আমি আর দেখিনি।

পিছনে উঠে বন্ড ভাবতে লাগল এই বেলা ব্যাটার মাথার মধ্যে গুলি চালিয়ে দিলে কেমন হয়–কিন্তু পরক্ষণেই ভাবল এরকম ঠাণ্ডা মাথায় খুন করা তার আদৌ পছন্দ নয়। এসব ভেবে তার মন থেকে হত্যার ইচ্ছে উবে গেল। তার। মনে হল এখনো বোধহয় সেই মুহূর্ত আসেনি।

গাড়ি সমুদ্রের চর্চকে পানির দিকে মোড় ঘুরেছে। বন্ড মনে মনে বুঝল সে শুধু আদেশ অমান্য নয়, একটা বোকার মত কাজও করে ফেলেছে।

.

অস্থাবর

অন্ধকার রাতে যদি বিদেশ বিভুয়ে একটা অজানা বাড়িতে কিংবা হোটেলে কেউ এসে পৌঁছায় তাহলে তার যেমন অবাক লাগে জেমস্ বন্ডেরও তাই হল। জ্যামাইকার ম্যাপটা তার মোটামুটি জানাই ছিল। সামনের গাড়ির লাল আলো অনুসরণ করে আসতে আসতে সে অনুভব করেছে বাঁ দিকে সমুদ্র।

গোয়েন্দার প্রথম কর্তব্য হল, নতুন জায়গাটার হদিশ বুঝে নেওয়া, পালাবার রাস্তা দেখে রাখা আর বাইরের সাথে যোগাযোগের ব্যবস্থা ঠিক রাখা। তার যোগাযোগের একমাত্র সূত্র তিরিশ মাইল দূরে এক গণিকালয়ে একটি মেয়ে, সব মিলিয়ে খুব একটা আশাব্যঞ্জক পরিস্থিতি বলা যায় না। আশেপাশে কোথাও বাড়ি তৈরির চিহ্ন দেখা গেল না, কেননা বাকি সব অন্ধকারে ঢাকা। বিরাট গাড়িবারান্দা। বন্ড গাড়ি থেকে দেখতে পেল ভিতরে ঝাড়লণ্ঠন আর সাদা কালো মার্বেলের মেঝে। কালো প্যান্ট আর লাল কোট পরা জ্যামাইকান কর্মচারিরা তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এল। ছোটখাটো শোভাযাত্রা করে ওরা প্রথমে হলে ঢুকল। খাতায় সই করা হবে। বন্ড লিখল–মার্ক হ্যাঁজার্ড, ঠিকানা দিল কেনসিংটনের। ট্রান্সওয়ার্ল্ড কন্সটিয়ম। স্কারামাঙ্গা বন্ডকে বলল, তোমার ঘর পশ্চিম দিকে ২৪নং। আমি কাছেই ১০নং এ আছি। সকাল ১০টা নাগাদ দেখা হবে। বন্ড ছোকরা চারটার পিছু পিছু পিছল মার্বেলের মেঝের ওপর দিয়ে হেঁটে চলল। চাকরটি দরজা খুলে ধরল, ঠাণ্ডা এয়ার কন্ডিশন করা হাওয়ার ঝলক। বন্ড পর্দা সরিয়ে দেখল বাইরে অদৃশ্য তটভূমিতে সমুদ্রের অস্ফুট শব্দ। টেলিফোনটি সাবধানে বিছানায় উপুড় করল। এমনভাবে যাতে রিসিভারটি না সরে যায়। তারপর ছোট ছুরি দিয়ে নিচের পাতটি খুলে ফেলল। একটি ছোট সাইক্রোফোন প্রধান তারের সাথে জোড়া। বন্ড টেলিফোন যথাস্থানে রাখল। ট্রানজিস্টর চালিত এমন যন্ত্র যাতে ঘরের ভেতর যে কোন আওয়াজ তুলে নিতে পারে। বন্ড রুমসার্ভিসকে ডেকে রাত্রি নটায় খাবারের অর্ডার দিল। তারপর জানলার ধারে বসে সমুদ্র আর গাছের গন্ধ মেশা সোঁদা বাতাস উপভোগ করতে লাগল। এবং কারামাঙ্গার কথা ভাবতে বসল। ক্যারিবিয়ানে এখন বেআইনী টাকার ছড়াছড়ি, কাছাকাছি অঞ্চলের কলার লাখপতি ব্যবসাদার থেকে শুরু করে যে কোন যৌথ সম্প্রদায়ের টাকা। হওয়া আশ্চর্য কিছু নয়। আর যে লোকটা উড়ন্ত পাখি মারতে পারে তাকে বন্ড কি করে কজা করবে? স্কারামাঙ্গার কাছে নিশ্চয়ই প্রত্যেক ঘরের চাবি আছে। কাল ও দরজাটা আটকে রাখার ব্যবস্থা করবে। আপাতত সে সুইটকেসটি বন্ধ দরজার গায়ে দাঁড় করিয়ে তার উপরে তিনটি গ্লাস পাশাপাশি রেখে দিল। সহজ ফাঁদ। রাত দুটো নাগাদ এক দুঃস্বপ্ন দেখে তার ঘুম ভেঙে গেল। বাথরুমে গিয়ে ঠান্ডা পানিতে গোসল করে নিল সে। সকালে যখন ঘুম ভাঙল তখন সাড়ে সাতটা। সামান্য নাস্তাখেয়ে পিস্তলে সজ্জিত হয়ে একটু ঘুরে বেড়াতে চলল।

ফিরে এসে স্কারামাঙ্গাকে সে জিজ্ঞেস করল, এখন তার কি কাজ আছে, সে এখন কোথায় থাকবে?

স্কারামাঙ্গা বন্ডের দিকে কঠিন ভাবে তাকিয়ে বলল, আজ বিকেল চারটের সময় জেনারেল মিটিং। এই মিটিং এ আমাকে যেন কেউ বিরক্ত করতে না আসে। এটা দেখাই তোমার কাজ। এই মিটিং এ কারা কারা আসতে পারেন, কোথা থেকে, কি উদ্দেশ্যে আসবেন সব কিছুই কাগজ পেনসিল নিয়ে বন্ড স্কারামাঙ্গার কাছ থেকে লিখে নিল। কিন্তু যে নামটি দেখে সে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট হল তা হল মিঃ হেনড্রিক্স এর নাম, যিনি ইউরোপীয় স্বার্থে আসছেন। এটাই যদি তার আসল নাম হয় তাহলে তিনি ওলন্দাজ। কাউন্টারের সামনে হঠাৎ এক ভদ্রলোকের গলা শোনা,গেল, তিনি বললেন, আমি মিঃ হেনড্রিকস। আমার জন্য ঘর থাকার কথা।

.

পরিবেশন হচ্ছে তো?

এক এক করে গাড়িগুলো এসে ঢুকতে লাগল। সামনে দাঁড়িয়ে তোে হাসি দিয়ে স্কারামাঙ্গা সকলকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছিল। বন্ড কাছে দাঁড়িয়ে নামের সাথে চেহারা গুলো মিলিয়ে দেখছিল। সব কটারই এক ধাচের চেহারা। পূর্বদিকের ঘরগুলোতে ওদের ব্যবস্থা হয়েছিল। ওরা চলে যেতে বন্ড লিস্ট বার করে নোট লিখে নিতে লাগল। স্কারামাঙ্গা বউকে বলে গেলেন, বারোটার সময় বারে এসো, তোমাকে আমার পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট বলে পরিচয় দেব।

বন্ড তার ঘরে ফিরে এসে কয়েকটি জিনিস পরীক্ষা করে। তার বদ্ধমূল ধারণা হল যে, কোন ফাঁকে কেউ এসে তার ঘরখানা তল্লাসী করে গেছে। বন্ড মনে মনে খুশিই হল, সামনে লড়াই হওয়াই ভাল। বন্ড নিজেকে তৈরি করে নিল বারে যাবার জন্য। কনফারেন্স রুমে ঢোকার পথের উল্টোদিকে পেতলের চাকতি খোদাই করা চামড়ার দরজা ঠেলে ঢুকতে হয় বারে।

বন্ড ঢুকল। দরজাটা নিজে থেকে বন্ধ হয়ে গেল। বন্ডকে স্কারামাঙ্গা আর সবাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন নিজের সহকারী হিসাবে।

মুখে হাসি ফুটিয়ে বন্ড অতিথিদের আপ্যায়ন করতে লাগল। সে সকলের সাথে নানাবিধ বিষয় নিয়ে আলাপ করতে লাগল। মিঃ হেনড্রিকস ছাড়া আর সকলেই শ্যাম্পেন খাচ্ছিল। বন্ড হেনড্রিকসের সাথে আলাপ করল।

বারের কাছে রাজকীয় ভঙ্গিমায় এখনো দাঁড়িয়ে স্কারামাঙ্গা। হেনড্রিকস স্কারামাঙ্গার কাছে এগিয়ে গিয়ে অনেকক্ষণ ধরে কিছু গোপন কথা আলোচনা করলেন। বন্ডের ধারণা অনুযায়ী লোকটি হয় মাফিয়া নয় কেজিবি র লোক। হয়ত বাকি পাঁচজনও জানে না ঠিক কাদের লোক হেনড্রিকস কিন্তু বিশেষ শক্তিশালী কোন গোষ্ঠীর সেটা তার ধরন ধারনেই বোঝা যায়।

দুটো টেবিলে দুপুরের খাবার দেওয়া হল। প্রত্যেক চেয়ারে নাম লেখা কার্ড আঁটা। টেবিলের মাথায় গৃহকর্তার জায়গায় স্কারামাঙ্গা, অন্য টেবিলে বন্ড। রুলেত খেলায় বাজিধরার প্রসঙ্গ তুলে বন্ড একটু তর্কাতর্কি করার চেষ্টা করল, কিন্তু কাকস্য পরিবেদনা। এরপরে আয়-ব্যয় ঘটিত এক মহা জটিল আলোচনা শুরু হল। পাশের টেবিলের দিকে দৃষ্টি দিল বন্ড, সেখানে আরো কম কথাবার্তা চলছে।

খাওয়া শেষ হতে যে যার ঘরে চলে গেল। বন্ড হাঁটতে হাঁটতে গেল হোটেলের পিছন দিকে। কোট আর টাই খুলে নিয়ে সে একটা ঝোঁপের ছায়ায় বসে পড়ে দেখতে লাগল কাঁকড়াগুলোর বালির ওপর যাওয়া আসা। চোখ বন্ধ করে সে ভাবতে লাগল মেরী গুডনাইটের কথা। হঠাৎ ঘড়ি দেখে চমকে উঠল। সাড়ে তিনটে। চট করে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করে, কাঠের টুকরোগুলো যে কাজের জন্য আনা তাতে চলবে কিনা পরীক্ষা করে দেখে বারান্দা দিয়ে হলের দিকে হাঁটা দিল।

ডেস্কের পিছন থেকে ছিমছাম চেহারার ম্যানেজারটি এগিয়ে এসে ডাকলেন, মিঃ হ্যাঁজার্ড, আপনার সাথে আমার

সহকারী মিঃ ট্রেভিসের আলাপ হয়নি বোধহয়? আপনি কি একটু আসবেন আমার অফিসে? উনি ওখানে আছেন।

কনফারেন্স শুরু হচ্ছে এক্ষুনি। পরে এলে হয় না।

এক পা এগিয়ে এসে লোকটি বলল, কিন্তু মিঃ বন্ড, উনি আপনার সাথে এক্ষুনি দেখা করতে চান।

দুই গুপ্তচর নিজেদের চিনে ফেলতে দেরি করল না। বন্ডের মুখ হাসিতে ভরে গেল। মিঃ টেরিভিসও হাসি মুখে বললেন, অধমের নাম ফেলিক্স লিটার। অ্যাকাউন্টেন্ট। আপাতত থান্ডারবার্ড; হোটেল আমাকে ধার নিয়েছে মর গ্যাস গ্যারান্টি ট্রাস্টের কাছ থেকে। অনুগ্রহ করে কি আপনার পরিচয়টা বলবেন?

.

মিটিঙে কি হল?

 খুশিতে ডগমগ হয়ে বন্ড ডেস্ক থেকে গোটা কতক পত্রিকা তুলে নিয়ে দেখে মিঃ গ্যাং গেরেলা আসছে। ধাঁ করে বলে বসল নমস্কার। অবশ্য কোন উত্তর পেল না। বন্ড হাজির হল কনফারেন্স রুমের দরজার সামনে। বন্ডকে দেখে কারামাজা বললেন, ওহে আমরা ঢুকে গেলে দরজাটা বন্ধ করে দিও, হোটেল রসাতলে গেলেও খুলবে না।

স্কারামাঙ্গার পিছন পিছন আরো ছ জন গিয়ে ঘরে ঢুকল। কে কোথায় বসেছে এক নজর দেখে নিয়েই বন্ড দরজা বন্ধ করে দিল। চট করে একটা শ্যাম্পেনের গ্লাস তুলে নিয়ে দরজার কাছে চেয়ার টেনে বসল সে, গ্লাসের মুখটা দরজার একটা কার সাথে সেঁটে নিচের দিকটায় কান লাগিয়ে। হেনড্রিকস বলছিল, চেয়ারম্যানের খোঁজে এদিকে এসেছে। বৃটিশ সিক্রেট সার্ভিস-এর লোক।

স্কারামাঙ্গা জবাব দিল, এরা তো আমার জলখাবার। এই তো কিছুদিন আগে ওদের একজন আমার খুব কাছাকাছি চলে এসেছিল। লোকটার নাম রস। দিলাম ব্যাটাকে সাবড়ে।

কারমাঙ্গা নানা রকম আলোচনার পর হোটেল সম্বন্ধে বিরাট ফিরিস্তি দিতে শুরু করলেন। বন্ড শুনতে উৎসাহ বোধ। করছিল না। ফেলিক্স লিটার এর সমস্তটাই রেকর্ড করছে। বন্ডকে এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে ও। ছিমছাম চেহারা ম্যানেজারটি আসলে সি আই এর লোক, নাম নিক নিকলসন। তার কাজ হেনড্রিকসের ওপর নজর রাখা। এরা প্রত্যেকেই নামজাদা গুণ্ডা। এই প্রথম কেজিবি আর মাফিয়াকে এক সাথে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। যেটা খুব বিপজ্জনক। যে করেই হোক এ কাজ বন্ধ করতে হবে। দরকার হলে এজন্য খুনও করা যেতে পারে। কনফারেন্সের ঘরে স্কারামাঙ্গার টেপ রেকর্ডারের তার খুঁজে বার করে তার থেকে একটা লাইন ট্যাপ করে নিকলসন নিজের টেপ। রেকর্ডারে লাগিয়ে দিয়েছিল, সে একজন ইলেকট্রনিকস বিশেষজ্ঞ। সুতরাং বন্ড এক প্রকার নিশ্চিন্ত। বন্ড এখানে কি সূত্রে এসেছে জানতে পেরে লিটার কম অবাক হয়নি। ওরা ঠিক করেছে তিনজন তিন জনের কাছ থেকে যতটা সম্ভব দূরে থেকে নিজেদের কাজ করে যাবে। তবে হঠাৎ প্রয়োজন হলে দেখা করবার জন্য এবং চিঠিপত্র চালাচালি করবার জন্য তারা একটা অর্ধেক তৈরি বাথরুম-কে ডাকঘর হিসাবে ঠিক করে নিল।

স্কারামাঙ্গা তার বক্তব্য প্রায় শেষ করে এনেছিল। তাহলে মোদ্দা কথা হল এই আমাদের এক কোটি টাকা দরকার। আমি বলি একটা হ্যান্ডনোট দিয়ে এই টাকাটা তোলা হোক। ধার হিসাবে এটা আপনারা দিচ্ছেন। দশ বছরে শতকরা দশ টাকা সুদে।

রটকফ চটেমটে বলে উঠল, প্রাণ থাকতে নয়। এক বছর আগে আমি আর আমার বন্ধুরা যে মর্টগেজ দিলাম সাত পার্সেন্টে–তার কি হল? ভেবেছ কি?

বিষাক্ত গলায় কারামাঙ্গা বললেন, রুবি তুমি ভুল করছ। আমরা এই দল গঠন করার সময় শপথ নিয়েছিলাম কেউ কারো বিরুদ্ধে যাব না। তুমি যা বলছ, ভেবে বলছ?

একশ বার ভেবে বলছি।

 তারপর আর্তনাদ আর শব্দ দুটো একসাথে। একটা চেয়ার আছড়ে পড়ল। গ্যাংগেরেলা স্থির গলায় বলল, ভালই হয়েছে রুবির ভেগাসের বন্ধুরা ঝামেলা ভালবাসে না।

স্কারামাঙ্গা নিশ্চিন্তভাবে বললেন, কোন চিন্তা নেই। আমরা রুবির সম্বন্ধে কিছুই জানি না। নদীতে অনেক কুমির আছে, তারাই ওকে যেখানে পৌঁছবার পৌঁছে দেবে।

হাল গারফিংকেল ভিতু ভিতু গলায় বলল, এক মিনিট। ঐ যে ইংরেজ লোকটা বাইরে বসে আছে ও তো শব্দ শুনে ফেলেছে। স্কারামাঙ্গা জানালেন, ওসব ছোটখাটো জিনিস নিয়ে তোমাকে মাথা ঘামাতে হবে না। এখানে যতজনকে দেখছ হোটেলে সবই অল্প কদিনের মেয়াদে আনা। শুধু রুবিকে দিয়ে কুমিরের পেট ভরবে না আরো কিছু চাই। তাছাড়া ইংরেজদের আমি দু চোখে দেখতে পারি না।

চাবি খোলার শব্দ। স্কারামাঙ্গা দরজা থেকে বন্ডের দিকে তাকালেন। তারপর বললেন, অনেক তো শ্যাম্পেন খাওয়া হল। এবার ম্যানেজারকে গিয়ে বল মিঃ রুবি রটকফ আজ রাত্রেই চলে যাচ্ছেন। বাকি সব আমি করছি। আমি ঘরটা বন্ধ রাখতে চাই কেউ যেন না যায়। মিটিং এর সময় একটা ফিউজ উড়ে গেছে। তারপর ড্রিঙ্ক ও ডিনারের ব্যবস্থা তারপর নিচের মেয়েরা আসবে। মাথায় ঢুকছে তো?

বন্ড মাথা নাড়ল। একেবারে পানির মত পরিষ্কার।

.

কেমন ধরনের নাচ?

 পিছনের অফিসে ওদের তিনজনের বৈঠক বসেছিল। নিকনিসলসন আর ফেলিক্স লিটার যা টেপ করেছিল সেটা কারামাঙ্গাকে ফাঁসিতে ঝোলাবার পক্ষে যথেষ্ট। তাছাড়া বন্ড সাক্ষী তো আছেই।

বন্ড শুয়ে রইল আটটা পর্যন্ত। এবার ডিনারের সময়। কারামাঙ্গা আর হেনড্রিক্স ছাড়া অন্যেরা বেশ নেশা করল। কিন্তু বন্ডকে কেউ বিশেষ আলোচনার মধ্যে টানতে চাইছিল না। ঘরটিকে আসন্ন নাচের উপযোগী করে সাজিয়ে ফেলা হল, রাশি রাশি টবের গাছ, পর্বতপ্রমাণ কমলালেবু নারকেল আর কলার ঝাড় দিয়ে। কিছুক্ষণের মধ্যে সোনালি লাল ঘাগরা পরা মেয়েরা এসে হাজির। ব্যান্ড বাজতে লাগল। বাজনা থামতে একটি প্রচণ্ড সাজগোজ করা মেয়ে গান গাইতে লাগল। মেয়েটির মাথায় নকল আনারস টুপির মত বসানো। বন্ড স্কারামাঙ্গার কাছে গিয়ে বলল, সে শুতে যাচ্ছে।

টিকটিকির মত চোখে তাকাল স্কারামাঙ্গা, বল্লেই হল শুতে যাচ্ছি। যদি তোমার মনে হয় জমছে না, তাহলে জমাও দেখি। এই জন্যই তোমাকে টাকা দিয়ে রাখা হয়েছে। অনেকদিন এভাবে বন্ডকে কেউ চ্যালেঞ্জ করেনি। সবাই একদৃষ্টে তার দিকে তাকিয়ে। বন্ড স্কারামাঙ্গার কাছে গিয়ে একশটা ডলার আর পিস্তলটা চেয়ে নিল। ঘরে একটিমাত্র জোরালো আলো মেয়েটির ওপর। হঠাৎ বন্ড বো করে ঘুরে হাঁটু গেড়ে বসে হাত সোজা করে গুলি ছুঁড়ে দিল। বিকট আওয়াজ। গান বাজনা সব বন্ধ। মেয়েটির মাথার আনারস বন্ডের গুলিতে উড়ে গিয়েছিল। তার একটা টুকরো থপ করে কিসের ওপর যেন গিয়ে পড়ল। হোটেলের স্টুয়ার্ড ছুটতে ছুটতে অন্ধকারের মধ্যে এসে উপস্থিত। বন্ড মেয়েটির কাছে গিয়ে বলল, আমি তোমার আনারসটা টিপ করেছিলাম তোমাকে নয়। একশ ডলারের নোটটি তার বুকের মধ্যে খুঁজে দিয়ে বলল, পরের নাচটার জন্য তৈরি হও। এবার বাজনাদারদের কাছে গিয়ে বলল, আমি রাম পাঠিয়ে দিচ্ছি টেনে বাজাও। তারপর স্কারামাঙ্গাকে পিস্তলটা ফিরিয়ে দিল। এবার শুরু হল ব্যান্ডে উত্তাল বাজনা।

দেখা গেল হৃষ্টপুষ্ট চেহারার চারটি মেয়ে পরনে লজ্জা নিবারণ করার মত যৎসামান্য পোশাক ছাড়া আর কিছুই নেই, তারা অঙ্গভঙ্গি সহকারে নাচ জুড়ে দিয়েছে। ড্রামের তাল আরো বাড়ল। এবার দেখা গেল সর্বশরীর নাচাতে নাচাতে সম্পূর্ণ নগ্ন একটি মেয়ে হাজির হল। তার গায়ে কষে নারিকেল তেল মাখা। দেখে মনে হয় মেয়েটির শরীরে চীনে রক্ত আছে। কারামাঙ্গার চোখের দৃষ্টি মেয়েটির ওপর। সব মিলিয়ে কদর্য আবহাওয়া। স্কারামাঙ্গা তালি বাজিয়ে বাজনা দলের প্রধানকে ডেকে তার হাতে একটি নোট দিয়ে কি যেন বললেন। বন্ড আন্দাজ করল আজ রাতের জন্য কনের ব্যবস্থা হয়ে গেল মহাপ্রভুর। বন্ডের আর ভাল লাগছিল না, সে বাথরুমে যাবার নাম করে পালাল। সে যখন ঘরে পৌঁছল তখন রাত বারোটা। জানালাগুলো অর্ধেক খুলে দিয়ে তারপরে গোসল করে বিছানায় লম্বা ঘুম।

দরজায় কে যেন টোকা মারছে, বন্ডের ঘুম ভেঙে গেল। সে বালিশের তলা থেকে পিস্তলটা টেনে নিয়ে দেওয়াল ঘেঁষে চলল, ধা করে পর্দায় টান মারতেই দেখা গেল সোনালি চুল চাঁদের আলোয় চক করছে। মেরি গুডনাইট। জেমস্ কার্পেটের ওপর পিস্তলটা ফেলে টেনে তুলল ওকে। মেরির জুতার হিল লেগে দরজাটা দড়াম করে বন্ধ হয়ে গেল। মেরিকে টানতে টানতে নিয়ে ঢোকাল বাথরুমে, আলো জ্বেলে শাওয়ারটা চালিয়ে দিল, যাতে কারো সন্দেহ না হয়। মেরি বলল, আমি সেই জায়গায় গিয়ে মেয়েটার কাছ থেকে খবর পেলাম তুমি এখানে আছ। গাড়িটা গাছের তলায় রেখে আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি। একটা জানালা খোলা দেখে ভাবলাম তুমি ছাড়া কে আর জানালা খুলে ঘুমোবে। যাই হোক একটা জরুরী খবর আছে। হেড কোয়ার্টার মনে করছে তুমি হাভানায় আছ। ওরা বলছে কেজিবি র একজন। বড়কর্তা, ছদ্মনাম হেনড্রিকস নাকি এদিকে আছে আর আপাতত এই হোটেলে আছে। ওর কাজ হচ্ছে তোমাকে খুঁজে বের করা আর খতম করা। তাই ভাবলাম তুমি হয়ত ফাঁদে পড়েছ।

বন্ড অন্যমনস্ক হয়ে গেল। আবার এক নতুন ঝামেলা পাকাল। লোকটা এখানেই আছে সেই সাথে এক বন্দুকবাজ খুনে স্কারামাজা বলে। তোমাকে বলে দেওয়া ভাল যে স্কারামাঙ্গা বসকে খুন করেছে। তুমি রিপোর্ট করতে পার, যদি অবশ্য এখান থেকে বেরোনো সম্ভব হয়। আর হেনড্রিকসের কথা বলছ ও এখানে আছে তবে আমাকে এখনো চিনতে পারিনি। বন্ড মেরিকে লিটার আর নিকলসনের কথাও বলল। তারপর মেরিকে জানালা দিয়ে নামিয়ে দেবে বলে ঠিক করে কল বন্ধ করে দরজা খুলল। ঘরের অন্যদিক থেকে একটা গলা ভেসে এল দুজনে ঘাড়ের পেছনে হাত দিয়ে এগোও বাছাধনেরা।

.

নানান গণ্ডগোল

স্কারামাঙ্গা এগিয়ে এসে আলোটা জ্বাললেন। বগলে পিস্তলের খাপ। পিস্তলের নল বন্ডের দিকে উঁচিয়ে রাখা। বন্ড তাকিয়ে দেখল কাপড়ের দেওয়াল আলমারি হাঁ হয়ে আছে। ওপাশ দিয়ে অন্য ঘরের আলো আসছে। তার মানে আলমারির পেছনের পুরো দেওয়ালটাই একটা দরজা।

ঘরের মাঝখানে চলে এলেন স্কারামাঙ্গা। তারপর নাক সিঁটকে বললেন, মালটিকে কোথায় লুকিয়ে রাখা হয়েছিল?

এই ভদ্রমহিলার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। আমার মা লন্ডনে পড়ে গিয়ে খুব অসুস্থ তাই আমাকে বলার জন্য ইনি এসেছেন। আপনার সাথে আমার দেখা হয় যেখানে, সেখান থেকে আমার খবর পেয়ে উনি আসছেন।

স্কারামাঙ্গা মেরির দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনি যেতে পারেন মেমসাহেব। আর পরের বাড়িতে কখনো ভবিষ্যতে হানা দেবেন না। বন্ড কোনরকমে মেরিকে ঠেলেঠুলে জানালা দিয়ে বের করে দিল। ব্যাপারটা এত সহজে মিটে যাবে, বন্ড তা ভাবতেই পারেনি। বন্ডের দিকে চেয়ে স্কারামাঙ্গা বললেন, একটা কথা তোমাকে বলে রাখি, প্রথমে থেকেই আমি একটা পুলিশ-পুলিশ গন্ধ পাচ্ছিলাম। তোমার অন্য কোন পরিচয় যদি ফাঁস হয়ে যায় তবে তোমাকে টুকরো টুকরো করে ফেলা হবে, বুঝেছ? সকাল দশটায় হেনড্রিকসের সাথে আমার একটা মিটিং আছে। কেউ যেন আমাকে বিরক্ত করতে না আসে। তারপর ট্রেনে করে সবাই মিলে বেড়াতে যাওয়া হবে। সর ব্যবস্থা তুমি করবে। স্কারামাঙ্গা বেরিয়ে গেল। দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ হল।

ঠিক সাড়ে ছ টার সময় বন্ডের ঘুম ভাঙল। বন্ড বুঝতে পারল তার ছদ্মবেশ আর টিকছে না। সে লিটারের সাথে। দেখা করল। লিটার বন্ডকে জানাল, আর কোন আশা নেই। ও রাশিয়ানে কথা বলছিল কিন্তু তোমার নাম আর নম্বর বলছিল বারবার। যত শিগগির পার গাড়ি নিয়ে চম্পট দাও। বন্ড লিটারকে রাতের বেলার মেরি গুডনাইটের কথাটা বলল। সুতরাং এখন আর পালাবার মানে হয় না। সকালে বেড়াতে যাওয়ার কথা গল্প করে বলল, এই বেড়াবার প্রোগ্রামটা যদি বানচাল করা যায় তবে পরেরটা দেখা যাবে। লিটার কিছুক্ষণ ভাবল। তার মুখ থেকে মেঘ কেটে গেল। আজকের প্ল্যান হচ্ছে এই প্রথমে একটা খেলনা ট্রেনে করে আমের ক্ষেতে পিকনিক, তারপর গ্রীন আইল্যান্ড বন্দর থেকে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা। লিটারের কথা মত বন্ড উইসকো সুগার এস্টেটের ম্যানেজারকে একটা চিঠি লিখে দিল। তারপর গভীর চিন্তায় ডুবে গেল।

.

শলাপরামর্শ

বন্ড কনফারেন্স রুমে গিয়ে দেখল যে টেবিলে পত্রিকাগুলো যেভাবে ফেলে গিয়েছিল সেভাবেই ছড়ানো। কার্পেটে রক্তের দাগ-টাগ কিছু নেই। বন্ড চেয়ারগুলো ঠিকঠাক করতে লাগল। স্কারামাঙ্গা এ সময় ঢুকে বললেন, এতেই হবে মিঃ হ্যাঁজার্ড। কালকের মত দুটো দরজাই যেন বন্ধ থাকে।

বন্ড বাইরে গিয়ে চেয়ারটা টেনে নিয়ে শ্যাম্পেনের গ্লাস নিয়ে বসে গেল। সাথে কিছু পত্রিকা। খুব তাড়াতাড়ি কথা বলছিল হেনড্রি, সকালে আমার লোক ফোন করেছিল। এই লোকটাই হল ইংরেজ গুপ্তচর জেমস বন্ড। কোন সন্দেহ নেই। মুখের ডানদিকে কাটা দাগটা মিলে যাচ্ছে।

কারামাঙ্গার গলার স্বর শোনা গেল, আমি কনফারেন্সের প্রথম দিনেই বলেছিলাম, এসব গুপ্তচরেরা আমার কাছে সকালের নাস্তা। আপনার কথা শুনে আমি আমার প্ল্যানটা কিছুটা বদলাতে বাধ্য হচ্ছি। আগামীকাল ওকে খতম করা হত, সে জায়গায় আজই করা হবে। কি করে বলছি। বন্ড টুকরো টুকরো কথা ছাড়া কিছুই শুনতে পেল না। সে রুমাল দিয়ে কানটা মুছে নিল। নিজের মৃত্যুদণ্ড ছাড়াও সে যে কতরকম গোপন পরামর্শ শুনে ফেলেছে তার ঠিক নেই। কেজিবি র সাথে স্কারামাঙ্গার সম্পর্ক, ক্যারিবিয়ান এলাকায় এদের গতিবিধি। তাছাড়া নানা ছোটখাট ব্যাপার যেমন বক্সাইট শিল্প নষ্ট করা, আমেরিকায় চোরাই গাঁজা চালান এবং জুয়া। এত বড় শিকার জালে পড়েছে। এখন জাল গোটাবার জন্যে প্রাণটা থাকলে হয়।

স্কারামাঙ্গার গলা আবার শোনা গেল, আমার ওপরওয়ালার মতে, মাফিয়ারা নিজেদের ছাড়া অন্য কারো কথা ভাবে না। আমার মিঃ সি মনে করেন আমেরিকার খুব-একটা সুবিধা হবে না। ওখানে কিউবা বিরোধী মনোভাব খুব জোরাল। তবে ওঁর মতে, ক্যারিবিয়ান এলাকায় নানা ছোটখাট কাজ ওদের দ্বারা হতে পারে। চলুন, সাড়ে এগারটা বাজে। এবার যাবার চেষ্টা করা যাক। বারোটায় ট্রেন। আজ দিনটা ভালই কাটবে মনে হচ্ছে। ইংরেজ ব্যাটাকে কেমন ধোলাই দেওয়া হয় ওপরওয়ালা দেখলে বেশ হত।

দরজা থেকে সরে গেল জেমস্ বন্ড। স্কারামাঙ্গার চাবি খোলার শব্দ হল। স্কারামাঙ্গা আর হেনড্রিকস দুজনেই গম্ভীরমুখে বন্ডের দিকে তাকিয়ে দেখল।

.

ট্রেন দুর্ঘটনা

বারোটার সময় সকলে হলে জড়ো হল। নিখুঁত স্যুটের ওপর চওড়া হ্যাট পরে স্কারামাঙ্গাকে দেখাচ্ছে যেন বিরাট জমি জমার মালিক। যে ধরনের লোক দক্ষিণে প্রায়ই দেখা যায়। হেনড্রিকসের পোশাক শীতের দেশের মত। বাকি চারটা শয়তান প্যান্টের ওপর ঝুলিয়ে চকরা-বকরা শার্ট পরেছিল। দেখে বন্ড খুশিই হল। কারণ ঝোলান শার্টের তলা থেকে পিস্তল বের করতে একটু সময় লাগে।

স্কারামাঙ্গা অন্যদের দিকে ফিরল। শোন সবাই। আমরা প্রথমে গাড়িতে স্টেশন যাচ্ছি। এক মাইল, তারপর একটা ছোট রেলগাড়িতে উঠছি। তারপর আখ খেতের মধ্যে দিয়ে মাইল কুড়ি গিয়ে গ্রীন আইল্যান্ড বন্দরে পৌঁছাচ্ছি। তারপর আমরা চড়ব একটা বড় স্টিমারে। স্টিমারটার নাম থান্ডারগার্ল। সমুদ্রের ধারে লুসিয়া বলে একটা ছোট্ট শহর আছে সেই পর্যন্ত আমরা যাব। বেশ, তাহলে যাওয়া যাক্।

বন্ডকে বলা হল গাড়ির পেছনের সিটে বসতে। যাত্রা শুরু হল। পিছন থেকে স্কারামাঙ্গার ঘাড় দেখে বন্ডের হাত নিশপিশ করতে লাগল। কিন্তু খোলা মাঠ, পালাবার উপায় নেই। পিছনে চারটা গুণ্ডা পিস্তল নিয়ে। বন্ড হাসল। কি জানি কেন তার মেজাজ খুব খুশি খুশি লাগছিল। এই লোকটার পেছনে দেড় মাস ধরে ঘুরছে সে। বন্ড ঠিক করল অপর পক্ষকে আরো অসতর্ক হবার সুযোগ দিতে হবে। এমন ভান করতে হবে যে, সে নেহাতই একজন ভদ্রলোক ইংরেজ। বন্ডের রক্ত দ্রুত বইতে লাগল, নাড়ি চঞ্চল হয়ে উঠল।

কলোরাডোতে যে সময় ছোট লাইনে রেলগাড়ি চলত সেই যুগের আদলে তৈরি অপূর্ব একটি স্টেশন। স্টেশনের নাম থান্ডারবার্ড হল্ট, কারুকার্য খোদিত অক্ষরে লেখা। বিরাট পেতলের হেড লাইটের পিছনে চোঙা থেকে সরু ধোয়া উঠছে। উৎসাহে টগবগ করতে করতে কারামাঙ্গা সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন, বন্ধুগণ, ট্রেন হুইসল দিচ্ছে, উঠে পড় ন সবাই। তারপর একটা কাণ্ড হল। সোনার পিস্তল বের করে বন্ডের হতভম্ব দৃষ্টির সামনে আকাশে তাক করে ট্রিগার টিপল সে। স্টেশনের দেওয়াল থেকে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে এল দুম শব্দ। স্কারামাঙ্গা পিস্তলটা ভাল করে দেখল। তারপর চিন্তিতমুখে বন্ডের দিকে ফিরে বলল, ঠিক আছে। ওহে, তুমি সামনে ড্রাইভারের সাথে বসবে। সবাই যে-যার জায়গায় বসে পড়ল। স্টেশন মাস্টার নিশান আর ঘড়ি নিয়ে নাড়ানাড়ি করল। স্পীড গেজে উঠেছে কুড়ি। বন্ড এবার ড্রাইভারটার দিকে তাকাল। কেবিনের চারপাশে সন্তর্পণে চোখ বোলাল সে। এই তো লম্বা জ্যামাইকান কাটারি, চুঁচালো মুখে সাক্ষাৎ মৃত্যু। লোকটার হাতের কাছেই রাখা। কিন্তু তাকে কি এভাবে শেষ করা হবে? বন্ডের সন্দেহ হল। স্কারামাঙ্গা নাটকীয়ভাবে ব্যাপারটা সমাধা করতে চাইবে, যাতে ওর ঘাড়ে দোষটা না চাপে। কিংবা হয়ত হেনড্রিকসই জল্লাদের কাজটা করবে। সে দেখল পাঁচ জোড়া কুটিল দৃষ্টি যেন পাঁচ জোড়া পিস্তলের নলের মত তার দিকে উঁচিয়ে রাখা। বন্ড সোজা হয়ে দাঁড়াল। সে ড্রাইভারের পাশের সিটে বসে পড়ল।

বন্ডকে মেরি যে ম্যাপটা দিয়েছিল সেটা ১/৫০,০০০ অনুপাতের সার্ভে ম্যাপ। সে সেই ম্যাপটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিল। সুতরাং আজকের এ পথ তার ভালভাবেই জানা। পাঁচ মাইল জুড়ে কেবল লম্বা লম্বা আখ গাছ। গাড়ি তার মধ্যে দিয়েই চলেছে। একশ গজ দূর থেকে একটা শকুন আকাশে উড়ল। স্কারামাঙ্গার পিস্তল হঠাৎ গর্জে উঠল। পাখিটা ঝাঁকুনি খেয়ে পড়তে লাগল নিচে।

বন্ড গলা বের করে বলে উঠল, পাঁচ পাউন্ড জরিমানা দিতে হবে। রাস্তার ফারিটাকে যদি হাত করে না থাকেন। এ পাখি মরার কথা নয়। বন্ডের মাথা ঘেঁষে গুলি চলে গেল শ করে। হো-হো করে হেসে উঠলেন কারামাঙ্গা। ওরে ব্যাটা ইংরেজ, যতবড় মুখ নয় তত বড় কথা। সাবধান, নইলে মুখটাই উড়ে যাবে। সঙ্গীরা আর একবার অট্টহাস্য করে উঠল।

বন্ড দেখল লাইনের ওপর গোলাপী মত কি যেন পড়ে আছে। ড্রাইভার গাড়ির গতি কমাবার চেষ্টা করল। শব্দ করে দুটি গুলি এসে লাগল গাড়ির মাথায়। স্কারামাঙ্গা বলে উঠলেন, গাড়ির স্টিম বাড়িয়ে দে হতভাগা।

ড্রাইবার অগত্যা গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিল। ট্রেন আবার ঘণ্টায় কুড়ি মাইল বেগ নিল। হাওয়ার শব্দ ভেদ করে স্কারামাঙ্গার গলা ভেসে এল। বন্ধুগণ, একটা অবাক করে দেবার মত ব্যাপার। ঐ যে লাইনের ওপর পড়ে আছে যে মেয়েটি সে হল জেমস্ বন্ডের বান্ধবী মেরি গুডনাইট। ওকে বেঁধে ফেলে রাখা হয়েছে। আহা যদি বন্ড বলে সেই ব্যাটা ট্রেনে থাকত তাহলে নিশ্চয়ই সে কান্নাকাটি শুরু করে দিত।

.

জলেকাদায়

অ্যাকসিলেটারের ডাণ্ডার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বন্ড সেটা প্রাণপনে টানতে লাগল। মাত্র একশ গজ বাকি। বাঁচাবার একমাত্র উপায় ব্রেক ভ্যানে গিয়ে ব্রেক কষা, কিন্তু সেখানে স্কারামাঙ্গা। ড্রাইভারের হাত কাটারি। জেমসের হাতে পিস্তল দেখে ঘাবড়ে গিয়ে পিছনে দাঁড়িয়েছে সে। মেরিকে বাঁচাবার আর কোন উপায় নেই, বন্ড বাঁ দিকে এক লাফ মারল। হেনড্রিকস পিস্তল বের করল কিন্তু ঘোরাবার আগেই তার দু চোখের মধ্যে বন্ডের গুলি গিয়ে ঢুকে গেল। এক ঝাঁকানিতে মাথা থেকে টুপিটা খসে গেল, পিছন দিকে গড়িয়ে পড়ল মাথাটা। সোনার পিস্তল গর্জে উঠল একবার। ড্রাইভারটা বিকট আর্তনাদ করে গলা চেপে লুটিয়ে পড়ল। আর পঞ্চাশ গজ, মেয়েটির কব্জিতে আর হাঁটুতে দড়ি বাঁধা। ট্রেন ছুটে চলেছে মেয়েটির অনাবৃত বুক লক্ষ্য করে। বন্ড দাঁতে দাঁত চেপে সেই দৃশ্য না ভাববার ভান করল। বাঁ দিকে ঝাঁপ দিয়ে ও পরপর তিনটে গুলি ছুঁড়ল, মনে হল দুটো ঠিক জায়গায় লেগেছে। হঠাৎ তার বাঁ কাঁধে তীব্র আঘাত। ছিটকে পড়ল বন্ড, কেবিনে লোহার মেঝের ওপর। মাথাটা পাদানির কাছে। সেখান থেকেই দেখতে পেল সে মেয়েটির মাথা ধড় থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছে। কোনমতে উঠে দাঁড়িয়ে কাঁধের যন্ত্রণার কথা ভুলে কয়লার গাড়ির ডানদিক ঘেঁষে এগোতে লাগল। একসাথে চারটে পিস্তল গর্জে উঠল। মাথাটা চট করে আড়াল করে নিল সে। কিন্তু এক অপূর্ব দৃশ্য সে দেখতে পেল। দেখল স্কারামাঙ্গা সিংহাসন থেকে পড়ে হাঁটু গেড়ে বসে আহত জন্তুর মত ছটফট করছে।

এমন সময় ট্রেনের পেছন থেকে একটা পরিচিত গলা শোনা গেল। লিটারের গলা, শোনো চারজন তোমরা। পিস্তল ফেলে দাও, দাও বলছি। গুলির শব্দ, মিঃ গ্যাংগেরেলা ইহলীলা শেষ করলেন। হাত তোেল মাথার পেছনে। জেমস। লড়াই শেষ ঠিক আছে ঠিক থাকলে সামনে এস। এখনো শেষটা বাকি। তাড়াতাড়ি করতে হবে।

সাবধানে দাঁড়াল জেমস্ বন্ড। এতটা তো বিশ্বাস করা যায় না। লিটার নিশ্চয় ব্রেকভ্যানের পেছনে বাফারে ঝুলতে ঝুলতে এসেছে। বন্ডের গুলিবৃষ্টির জন্যই সে আগে বেরোতে পারেনি। ঐ তো লিটার। স্কারামাঙ্গার দেহের ওপর পা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে, হুকের মধ্যে পিস্তল আটকানো। এতক্ষণে বন্ডের কাঁধের যন্ত্রণা শুরু হল। লিটার বলল, চটপট লাফ দাও আর দেরি করো না। আমি থাকছি এই লোকগুলোকে পুলিশের হাতে তুলে দেব গ্রীন হারবারে, মাথা ঝাঁকিয়ে সে ইঙ্গিত করল যে আসলে এটা মিছে কথা।

ট্রেন গমগম আওয়াজ তুলে কালভার্টের ওপর দিয়ে চলেছে। সামনে দেখা যাচ্ছে অরেঞ্জ নদীর ব্রিজ। কেবিন থেকে সিঁড়িতে নামল বন্ড। তারপর সাবধানে সময় বুঝে ঝাঁপ দিল নরম তলতলে কাদা ভর্তি পুকুরে। সাথে সাথে পানি থেকে বিকট গন্ধ বেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ল। কাদার মধ্যে দিয়ে ছপছপ করতে করতে বন্ড উঠে এল কঠিন পাড়ে। হাঁটু গেড়ে বসে বমি করে ফেলল সে। যখন মাথা তুলল দেখল ফেলিক্স লিটার ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিচ্ছে, প্রায় দু শ গজ দূরে। কিন্তু একটু বেকায়দায় পড়ল কারণ পড়ে আর উঠল না। এমন সময় আর একটি লোক ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিল, স্কারামাঙ্গা ছাড়া আর কেউ হতে পারে না। তার মানে খেলা এখনো বাকি রয়ে গেল। একঝাক প্রজাপতি রোদে নেচে বেড়াচ্ছে।

বন্ড আস্তে আস্তে উঠে লাইন ধরে ব্রিজের দিকে হাঁটতে লাগল। দুর্গন্ধ কাদার মধ্যে পড়ে আছে লিটার। যন্ত্রণায় মুখ দিয়ে শব্দ বেরিয়ে এল। কিন্তু সেই মুহূর্তে নিজের ওপর রাগ হচ্ছিল আরো বেশি। দেখলাম রক্তে মাখামাখি জামা ভিজে গেছে, চোখ বন্ধ, ভাবলাম না মরলেও ব্রিজের সাথে উড়ে যাবে। ক্ষীণ হেসে জিজ্ঞেস করল সে, কি রকম হল কায়দাটা। ব্রিজ অন দি রিভার কোয়াই-এর মত? ঠিক ফেটেছিল তো।

বন্ড বললে, দারুণ বাজি পুড়ল। এবার কুমিরদের ভোজ হচ্ছে। কিন্তু ঐ প্লাসটিকের মূর্তিটা। এটাও তোমার কর্ম?

দুঃখিত। মিঃ এস-এর হুকুম। ভাবলাম সেই ফাঁকে ব্রিজ ওড়াবার ব্যবস্থাটাও হয়ে যাবে। আমি কি জানি যে তোমার বান্ধবীর সোনালি চুল, আর তুমিও ঐ দেখে ভুলে যাবে। লিটারের বগলে হাত দিয়ে যতটা সম্ভব আস্তে বন্ড ওকে টানতে টানতে একটু শুকনো জায়গায় নিয়ে গেল। মস্ত ঝোঁপের তলায় ছায়া। যন্ত্রণায় দরদর করে ঘামতে লাগল লিটার। কাতর শব্দ করে অজ্ঞান হয়ে গেল। বন্ড ওর বেল্ট থেকে পিস্তলটা বের করে বাঁ হাতের পাশে রেখে দিল। যদি সে কোন পিবদে পড়ে তাহলে স্কারামাঙ্গা নির্ঘাৎ ফেলিক্সের ওপর গায়ের ঝাল ঝাড়তে আসবে।

ঝোঁপের গা ঘেঁষে বন্ড এগোতে লাগল ব্রিজের দিকে। কিছুক্ষণ খোলা জায়গা দিয়ে যেতে হবে। লোকটার পায়ের দাগ নজরে পড়তে পারে।

তখন দেড়টা বাজে। সূর্য মাথার ওপর। একটা গাছের শেকড়ে হোঁচট খেয়ে প্রায় পড় পড় হল বন্ড। হাত বাড়িয়ে ঝোঁপটা ধরতে গেল, পারল না। সশব্দে আছাড় খেল একখানা, সমুদ্র থেকে ভেসে আসা বাতাস জলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। হামাগুড়ি দিয়ে উঠে দাঁড়াল বন্ড। জোর করে মনের শক্তি ফিরিয়ে আনল কারণ তার এখন কাজ পড়ে আছে অনেক। ব্রিজে পৌঁছাতে আর একশ গজ। যতটা সম্ভব নদীর সাথে সমান্তরাল যাবার চেষ্টা করছিল সে। কান খাড়া করে চলেছে সে। কোথাও এতটুকু শব্দ হলেই যাতে সে শুনতে পায়। যখন বন্ড আন্দাজ করছে জলার মধ্যে প্রায় দুশো গজ হেঁটে এসেছে, সেই সময় হঠাৎ কাশির শব্দ শোনা গেল।

.

মানুষ না কাঁকড়া

প্রায় বিশ গজ দূরে নদীর দিকে কে যেন কাশলো। উৎকর্ণ হয়ে বসে পড়ল বন্ড। দাঁতে পিস্তলটা কামড়ে হামাগুড়ি দিয়ে এগোতে লাগল সে।

কিছুটা গিয়ে দেখল একটা ছড়ানো শেকড়ের ওপর পড়ে আছে কারামাঙ্গা। ডান দিকের স্যুট রক্তে কালো। তার ওপর দিয়ে পোকা-মাকড় হাঁটছে। নির্বিকার মুখ, চোখ দুটো অত্যধিক জীবন্ত। থেকে থেকে চারদিকে নজর বুলিয়ে নিচ্ছে। স্কারামাঙ্গার দুটো হাতই শেকড়ের ওপর রাখা। পিস্তল আছে বলে মনে হল না। হঠাৎ বন্ড দেখল একটা সাপ, গায়ে হালকা বাদামী বরফি আঁকা এঁকেবেঁকে স্কারামাঙ্গার দিকে চলেছে। মন্ত্রমুগ্ধের মত দেখতে লাগল বন্ড। সাপটা বোধহয় অজগর হবে, লম্বায় পাঁচ ফুটের মত। ফনা উঁচু করে এগিয়ে চলেছে।

স্কারামাঙ্গার মুখের একটি পেশিও নড়ল না। প্যান্টের ছায়ায় এসে পড়ল সাপটা। ভিজে শার্টের দিকে ক্রমশ উঠতে লাগল। হঠাৎ স্কারামাঙ্গার গায়ের উপর পড়ে থাকা ইস্পাতের ফলাটা লাফিয়ে উঠে সাপটার মাথা ফুটো করে সোজা মাটিতে বিধে গেল। কিছুক্ষণ মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করে থেমে গেল সাপটা। স্কারামাঙ্গা ছুরিটা ছাড়িয়ে নিয়ে এক কোপে সাপটার মাথা কেটে ফেলল। বন্ড ঝোঁপের মধ্যে থেকে লক্ষ্য করল–স্কারামাঙ্গার শরীরে যতই রক্তপাত হোক, তার হাতের অব্যর্থ টিপ দেখে এটুকু বোঝা যায়, স্কারামাঙ্গা এখনো মারাত্মক হয়ে আছেন। এবারে স্কারামাঙ্গা চারদিকে চোখ বুলিয়ে ছুরি দিয়ে সাপটাকে কেটে তার মাংস খেতে লাগলেন। বন্ড এবার পিস্তল হাতে নিয়ে একেবারে স্কারামাঙ্গার সামনে এসে দাঁড়াল।

কবজি ঘোরাবার একটা দ্রুতভঙ্গি, সাথে সাথে শাঁ করে ছুরিটা উঠে গেল আকাশে। ইস্পাতের চাকার মত রোদে ঝিলিক দিয়ে এসে পড়ল, বন্ড যেখান থেকে সময়মত সরে দাঁড়িয়েছিল। এসে সোজা গেঁথে গেল কাদার মধ্যে। হেসে উঠল স্কারামাঙ্গা। বন্ড বলল, তোমার সময় ফুরিয়ে এসেছে, স্কারামাঙ্গা। আমার বন্ধুদের খুন করেছ তুমি। তোমাকে খুন করার লাইসেন্স আমার আছে। খুন তুমি আমার হাতেই হচ্ছ, তবে বেশিক্ষণ লাগবে না। ভাল কথা, জীবনে তুমি ক টা লোক খুন করেছ? তোমার হোটেলের পেছনের নদীটায় শুয়ে আছেন মিঃ রটকফ। মাথার খুলির মধ্যে তোমার সেই বিখ্যাত বড় ভুল হয়ে যাচ্ছে স্কারামাঙ্গা। যে সব পাহারাদার জুটিয়েছিলে, সব কটা অন্য দলের। তোমার দুই ম্যানেজার সি আই এর চর। ইতিমধ্যে তোমাদের সব কথাবার্তার টেপটি ওয়াশিংটন চলে গেছে। রসকে তুমি খুন। করেছ, এই স্বীকারোক্তিও ওর মধ্যেই আছে। এবার বুঝেছ, কোন দিক থেকে তোমার নিস্তার নেই।

এখুনি যা ঘটতে যাচ্ছে তার নিষ্ঠুরতার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে লাগল বন্ড। লোকটা পরম নিশ্চিন্তে শেকড়ে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে, সমান তালে নিঃশ্বাসের সাথে ওঠানামা করছে বুক। পাথরের মত মুখ, সেখানে পরাজয়ের ছায়ামাত্র নেই। বন্ডের মনে হল তার হত্যার ইচ্ছাটা কেমন ফিকে হয়ে আসছে। দু হাত দিয়ে পিস্তলটা ধরে তাক ঠিক করল সে।

স্কারামাঙ্গা একটা হাত তুলল। এই প্রথম তার মুখের ভাব বদলাল, এক মিনিট ভাই, আমার প্রার্থনাটা বলে নিতে দাও। তারপর প্রাণ ভরে গুলি চালিয়ো।

পিস্তল নামাল বন্ড, ঠিক আছে কয়েক মিনিট সময় দেওয়া গেল, কিন্তু তার বেশি নয়।

ধন্যবাদ। স্কারামাঙ্গা চোখটা ঢেকে নিয়ে বিড়বিড় করে ল্যাটিন মন্ত্র জপতে শুরু করল। পিস্তল নামিয়ে বন্ড রোদ মাথায় করে দাঁড়িয়ে রইল, চোখ স্কারামাঙ্গার দিকে।

স্কারামাঙ্গার ডান হাত ধীরে ধীরে কানের দিকে এগোতে লাগল, কান পর্যন্ত গিয়ে থামল। ল্যাটিন মন্ত্রপাঠ চলছে। হঠাৎ মাথার পেছন থেকে লাফিয়ে উঠল সোনালি ডেরিংগার। তীব্র গর্জন, বন্ড চমকে উঠে ঘুরে আছাড় খেয়ে পড়ল মাটিতে। বেড়ালের মত ক্ষিপ্রগতিতে স্কারামাঙ্গা হাতের ছোরাটা নিয়ে উঠে দাঁড়াল। বন্ড ততক্ষণে আহত জন্তুর মত মাটিতে পড়ে ওলোটপালট খাচ্ছে। তার হাতের যন্ত্রটি একবার, দু বার, পাঁচবার গর্জে উঠল। স্কারামাঙ্গার হাত থেকে ছোরাটা মাটিতে পড়ে গেল। হৃদপিণ্ড ধক্ করে একেবারে চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে গেল। চিৎপাত হয়ে পড়ে গেল সে। কেউ যেন তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। দু হাত দুদিকে ছড়ান।

.

ধামাচাপা কারবার

 নদীর ধারে ধারে গদাইলস্করি চালে হেঁটে আসছিল একজন রেল পুলিশের লোক। ফেলিক্স লিটার বলেছিল, জলার মধ্যে একটা পাজি লোক একটা ভাল লোককে তাড়া করেছে, হয়ত গুলিও ছুঁড়তে পারে। আপাতত ফেলিক্সকে মর্ফিয়া দিয়ে রাখা হয়েছে।

গুলির শব্দ, সেই সাথে জলার পাখিগুলোর বিকট চিৎকার অনুসরণ করে সে অকুস্থলের খানিকটা আন্দাজ পেল। কিছুটা যাবার পর দেখল দুটি দেহ মাটিতে পড়ে আছে। তাদের পিস্তল দুটি মাটিতে পড়ে আছে। তাদের পিস্তল দুটি দেখল তারপর হুইসিল বার করে তিনবার জোরে ফুঁ দিল।

এক সপ্তাহ পরে জ্ঞান ফিরল বন্ডের। ঘরে সবুজ আভা। তার মনে হল, সে পানির তলায়। নার্সের কানে এল অদ্ভুত গোঙানি। নার্স নাড়ি দেখল। বন্ড তাকাল কিন্তু কিছু ঠাহর করতে পারল না। এই বুঝি মৎস্যকন্যা। ডক্টর ম্যাকডোনাল্ড এসে ব্যান্ডেজ বদলে দিলেন আর কিছু ফলের রস দিতে বললেন। বললেন, বুলেট প্রচণ্ড বিষাক্ত ছিল। ভাগ্যিস সাভলা মারের লোকটি সাপের বিষ বুঝতে পেরে সেইমত ওষুধ দিয়েছিল। ও-ই প্রাণ বাঁচিয়েছে বলতে গেলে। আর এক সপ্তাহের মধ্যে কাউকে যেন দেখা করতে না দেওয়া হয়।

দশদিন পরে। ঘরে তিল ধারণের জায়গা নেই। বালিশে ঠেস দিয়ে বসে আছে বন্ড। তার বাঁ দিকে পুলিশ কমিশনার কালো ইউনিফর্মে রূপালি ব্যাজ লাগিয়ে। ডানদিকে সুপ্রিম কোর্টের মহামান্য বিচারপতি। ফেলিক্স এখন ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটছে। মেরী গুডনাইট লক্ষ্মী মেয়ের মত বিছানার পাশে কাগজ পেন্সিল নিয়ে হাজির। বন্ড মনে মনে চাইছিল ফেলিক্স লিটারের সাথে একটা গোপনে কথা বলবে। পুলিশ কমিশনার বলতে শুরু করলেন, কম্যান্ডার বন্ড আজ আমরা এখানে মিলিত হয়েছি মামুলি নিয়ম রক্ষা খাতিরে। তিনি বললেন, ওয়েস্ট মোরল্যান্ড প্যারিসের থান্ডারবার্ড হোটেলে সম্প্রতি কয়েকটি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন কুখ্যাত গুণ্ডা জমায়েত হয়। এদের উদ্দেশ্য ছিল অন্তর্ঘাতমূলক কার্যকলাপের দ্বারা জ্যামাইকার চিনি-শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত করা। আমি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঘটনাগুলি উপস্থিত করি। কমিশনার বলে চললেন, নির্দেশ অনুযায়ী জ্যামাইকা সে আই ডির সাথে যোগাযোগ রেখে বন্ড, নিকলসন ও লিটার তাদের কর্তব্য যে ভাবে পালন করেছেন তার কোন তুলনা নেই। তিনি একটি সীল করা প্যাকেট বন্ডকে, একটি লিটারকে আর একটি কর্নেল ব্যারিস্টারকে দিলেন। আমরা গ্রেট ব্রিটেনের কম্যান্ডার বন্ড, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ফেলিক্স লিটার ও মিঃ নিকোলাস নিকলসনকে তাদের সাহস ও বীরত্বব্যঞ্জক কাজ জ্যামাইকা রাজ্যের সেবার জন্য জ্যামাইকার পুলিশ মেডেলস প্রদান করলাম। সকলেই হর্ষধ্বনি করলেন। সকলে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। লিটার রহস্যময় হাসি হেসে বন্ডকে বলল, কি একখানা ছাড়ল মাইরি। এ রকম মিথ্যের ওপর মিথ্যে চাপিয়ে কর্ম সারা কখনো দেখিনি, তার ওপর আমরা একখানা করে পুরস্কারও বাগালাম। লিটার বলল, চলি এবার। ফেলিক্স দেখল বন্ডের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। খোঁড়াতে খোঁড়াতে সে দরজা খুলে ধরল, একটু হাত উঁচু করল। এই দুজনে জীবনে কখনো পরস্পর পরস্পরের করমর্দন করেনি। আচ্ছা চললাম মিস গুডনাইট। মেট্রনকে বলে দেবেন আর ভয় নেই। আর ওকে বলবেন কয়েক সপ্তাহ যেন আমার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকে। ওকে দেখলে আমার কি রকম যেন হয়। আর একবার হাত তুলে বন্ডের দিকে তাকিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে বেরিয়ে গেল।

.

ইতি

সপ্তাহখানেক পরের কথা। জেমস বন্ড কোমরে একখানা তোয়ালে জড়িয়ে একটা চেয়ারে বসে গুপ্তচরবৃত্তি-সংক্রান্ত বই পড়ছিল। ঘড়ির দিকে তাকাল, চারটে বাজে। এই গরমে টাটকা গোলাপের মত চেহারা নিয়ে গুডনাইট এসে ঢুকল। একটি চিঠি বন্ডকে দিল। একান্তই ব্যক্তিগত, M পাঠিয়েছেন। M লিখেছেন, তোমার ও বন্ধুদের চিঠি পেয়েছি। তুমি বিপদজনক কাজটি করতে পেরেছ বলে আমি সন্তুষ্ট। আশা করি আমার স্বাস্থ্য ভাল আছে। পরের কাজের জন্য রিপোর্ট কবে করছ?

বন্ড মনে মনে ভাবল বুড়োটা তাহলে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। আসলে ওর মতলব ঐ হতচ্ছাড়া অফিসে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। এবার বন্ড গুডনাইটকে ভাল করে লক্ষ্য করতে লাগল, ধোপদুরস্ত পোশাকে ছিমছাম বসে, একটা পা আর একটার মধ্যে জড়ানো। ছোট চুল ঘেরা ফর্সা মুখটি আনন্দে উদ্দীপ্ত। এই মেয়েটি সবসময় কাছাকাছি থাকলে মন্দ হয় না। সেক্রেটারি করে রাখা যায় না কি অন্য কিছু করে। অনেক দিন ধরেই এ কথা ভাবছে সে।

আর একটি খবর পড়া হয়নি প্রধানমন্ত্রী রাণী এলিজাবেথের কাছে প্রস্তাব করেছেন বন্ডকে নাইট উপাধি দেওয়ার জন্য। নিচে M স্বাক্ষর না করে দুটি বড় বড় শব্দ ব্যবহার করেছেন।

গুডনাইট চোখ নিচু করল। সে জানত আসলে বন্ড খুশি হয়েছে। রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মুছে ফেলল জেমস্। গুডনাইট ভাবল, জেমস বন্ড এই নামটিই তাকে শুধু মানায়। এর আগে পরে মাঝখানে অন্য কিছু নয়। কম্যান্ডার হলেও এই পদবীটা সে কদাচিৎ ব্যবহার করে।

বন্ড মেরীকে বলল, লিখে নাও যা বলছি। কেবলের নম্বর দাও। পেয়ে বাধিত হলাম। একমাসের মধ্যে লন্ডনে। ফিরব। অনুগ্রহ করে মহামান্যা মহারাণীকে জানাবেন আমি সম্মানের জন্য অতীব অনুগৃহীত কিন্তু যথাবিহিত সম্মান। সহকারে জানাচ্ছি এই সম্মান গ্রহণে আমি অক্ষম। আসল কারণ হল আমি হোটেলে আর রেস্টুরেন্টে বেশি টাকা গুনতে রাজি নই। আশা করি আপনি বুঝবেন। ইতি।

খাতাটা বন্ধ করল মেরী। সে চোখ নিচু করে বন্ডকে বলল, মেট্রন বলছিলেন, তুমি এই সপ্তাহের শেষে ছাড়া পাবে। কিন্তু তারপরেও আর তিন সপ্তাহ…কোথাও যাবে ঠিক করেছ কিছু

কিছু ভাবিনি। তুমি কি বল?

 আমার বাড়িটা আছে মোনাগ্রামের পাশে। একটা বাড়তি ঘরও আছে। কিংসটন বন্দরের দৃশ্যও দেখা যায়। ঠাণ্ডা জায়গাটা। বাথরুম অবশ্য–একটু লাল হয়ে উঠল সে। আর কেউ থাকছে না। তবে জ্যামাইকাতে এ ব্যাপারে নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না।

কি সব ব্যাপার নিয়ে দুষ্টুমি করে বলল বন্ড। এই অবিবাহিত ছেলে আর মেয়ের এক সাথে থাকা!

 মেরী আরও বলল, আমার বাড়ির খুব কাছেই লিগুয়ানিয়া ক্লাব। সেরে গেলে সেখানে আড্ডা মারতে পার। আর আমি রান্না করব, তোমার বোম সেলাই করে দেব।

মেয়েরা যে কত ধূর্ত তার একটি প্রমাণ হল এই ধরনের কথা। বন্ড বলেই ফেলল, গুডনাইট তুমি কি ভাল!

বলল বটে কিন্তু তার মনের গভীরে তখনই সে জানে মেরীর চেয়ে অন্য কোন মেয়ের ভালবাসা তার কাছে যথেষ্ট নয়। একটা ঘরে সারাক্ষণ কাটানো, একই দৃশ্য প্রতিদিন দেখা বন্ডের কাছে শেষ পর্যন্ত এক ঘেয়ে হয়ে যেতে বাধ্য।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *