২৪. সে খুশি ছিল না

২৪.

সে খুশি ছিল না। খুব সহজেই তা তার মুখে ধরা পড়েছিল। কিন্তু আর বেশি তর্কে না গিয়ে সে আমাকে তার বাহুর মধ্যে নিয়ে নিল এবং জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিল। আমরা কোন রকম আঘাত ছাড়া, একটুখানি ঝাঁকুনি দিয়ে নিচে পড়লাম। একটা বিড়ালের মতই। আমি যেমনটি কল্পনা করেছিলাম তার চেয়ে এটা আরো কিছুটা বেশি নিচুতে।

ঠিক আছে। তারপর। সে বলল, তার কণ্ঠস্বরেই তার অনুমতির ব্যাপারটা ধরা পড়েছিল। আগে তুমি যাও।

সে তার পিছন দিকটা দিয়ে আমাকে সাহায্য করল। দৌড়াতে শুরু করল। সব সময়ের মতই এটা একটা রুটিনের মত হয়ে গেল। সহজ। এটা ঘটনাবহুলভাবে এমনটি যে তুমি কখনই এটা কখনও ভুলে যেতে পারবে না। যেমনটি বাইসাইকেল চালানো।

সে খুবই শান্তভাবে এবং অন্ধকারের মধ্যে সে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে দৌড়াতে লাগল। তার শ্বাস প্রশ্বাস ধীর এবং একইভাবে বয়ে যেতে লাগল। এতটাই অন্ধকার যে পাশ দিয়ে যাওয়া গাছগুলো প্রায় অদৃশ্যমান। শুধুমাত্র বাতাসের ঝাঁপটা আমার মুখের উপর লাগায় আমি প্রকৃত দ্রুতিটা বুঝতে পারলাম। বাতাসটা ভেজা ভেজা। আমার চোখ মুখ পুড়িয়ে দিচ্ছে না যেমনটা বিশাল প্লাজার বাতাসে হয়। এটা অনেক বেশি আরামদায়ক। এই রাতে, সেই ভয়াবহ উজ্জ্বলতার পর। যেন আমি জন্মের পর থেকে শিশুদের মত অন্ধকার নিয়ে খেলছি। অন্ধকার আমার কাছে পরিচিত এবং প্রতিরক্ষামূলক।

আমি স্মরণ করতে পারলাম জঙ্গলের ভেতর দিয়ে এভাবে দৌড়াতে আমার ভীষণ ভয় করে। তখন আমি সাধারণত আমার চোখ বন্ধ করে ফেলি। আমার কাছে এটা এখন খুব হাস্যকর একটা প্রতিক্রিয়া বলেই মনে হতে লাগল। আমি আমার চোখ খোলা রাখলাম। আমার চোয়াল তার কাঁধের উপর রাখা। আমার চিবুক চোয়াল তার ঘাড়ের উপরে। দ্রুতগতিটা আরো বাড়ছিল। একটা মোটরসাইকেলের গতির চেয়ে যেন শতগুনে ভাল।

আমি মুখ ঘুরিয়ে তার দিকে তাকালাম। তার কাঁধের বরফ শীতল ত্বকের উপর আমার ঠোঁট জোড়া চেপে ধরলাম।

ধন্যবাদ। সে বলল, শান্ত স্বরে, গাছের অন্ধকার আকৃতি তার পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছিল। তার মানে কি তুমি এই বোঝাতে চাচ্ছ যে তুমি জেগে গেছে?

আমি হাসলাম। কথাটা খুব সহজ। স্বাভাবিক। শক্তিহীন। এটা ঠিকই শোনাচ্ছে। সত্যিকারেই না। তার চেয়ে বেশি, অন্য দিক দিয়ে। আমি জেগে উঠার কোন চেষ্টা করছি না। আজ রাতে নয়।

আমি যেভাবেই হোক তোমার বিশ্বাস অর্জন করব। সে বিড়বিড় করে বলল। পুরোটাই নিজেকে শোনাল। যদি এটা আমার শেষ কাজ হয়ে থাকে।

আমি তোমাকে বিশ্বাস করি। আমি তাকে নিশ্চিত করলাম। এটা আমি নিজেই। নিজেকে বিশ্বাস করতে পারি না।

দয়া করে সেটার ব্যাখ্যা করো।

সে হাঁটার জন্য ধীর গতির হয়ে গেল। আমি এখন বলতে পারি কারণ বাতাস কমে গেছে। আমি ধারণা করছি আমরা বাড়িটা থেকে খুব বেশি দূরে নই। প্রকৃতপক্ষে,আমি ভেবেছিলাম অন্ধকারের মধ্যে আমি নদীর বয়ে যাওয়ার শব্দ শুনতে পারব।

বেশ আমি লড়াই করতে লাগলাম সঠিকভাবে জিনিসটার ব্যাখ্যা করতে। আমি নিজেকে বিশ্বাস করি না …যথেষ্ট। তোমাকে ধরে রাখার ব্যাপারে। সেখানে কোন কিছুই নেই আমার সম্বন্ধে যেটা তোমাকে ধরে রাখতে পারে।

সে থেমে গেল এবং আমাকে তার পিছন থেকে টেনে সামনের দিকে নিয়ে আসল। তার নরম অথচ দৃঢ় হাত আমাকে মুক্ত করল না। আমাকে আমার পায়ের উপর দাঁড় করিয়ে দেয়ার পর, সে তার হাত দিয়ে আমাকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে রইল। তার বুকের উপর আমাকে কোলাকুলির মত করে জড়িয়ে রাখল।

তোমার ধরে রাখাটা চিরস্থায়ী এবং অভঙ্গুর। সে ফিসফিস করে বলল, সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।

কিন্তু কীভাবে আমি পারি না?

তুমি কখনও আমাকে বলো নি… সে বিড়বিড় করে বলল।

 কি?

 তোমার সবচেয়ে বড় সমস্যাটা কী।

আমি তোমাকে অনুমান করার একটা সুযোগ দেব। আমি শ্বাস নিলাম এবং আমার তর্জনী দিয়ে তার নাকের ডগা স্পর্শ করলাম।

সে মাথা নোয়াল। আমি ভলচুরির চেয়ে অনেক বেশি খারাপ। সে মুখ ভেঙচে বলল। আমি অনুমান করছি আমি সেটা ধরতে পেরেছি।

আমি চোখ ঘোরালাম। সবচেয়ে খারাপ যেটা ভলচুরি করতে পারত, আমাকে হত্যা করতে পারত।

সে চিন্তিত চোখে অপেক্ষা করতে লাগল।

তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পার। আমি ব্যাখ্যা করলাম। ভলচুরি, ভিক্টোরিয়া….তারা কোনভাবেই সেটার সাথে তুলনীয় হতে পারে না।

এমনকি এই অন্ধকারের মধ্যেও, আমি রাগান্বিত ভঙ্গিতে তার মুখ বেকে যাওয়া দেখতে পেলাম। এটা আমাকে মনে করিয়ে দিল জেনকে অত্যাচার করার সময় তার সেই রাগান্বিত অভিব্যক্তির কথা। আমি অসুস্থবোধ করলাম। সত্যি কথা বলার জন্য অনুশোচনা হতে লাগল।

করো না। আমি ফিসফিস করে বললাম। তার মুখ স্পর্শ করলাম। দুঃখিত হয়ো না।

সে মুখের ভাব কোন মতে আন্তরিক করার চেষ্টা করল। কিন্তু সেই অভিব্যক্তি তার চোখকে স্পর্শ করল না। যদি সেখানে একমাত্র কোন পথ থাকত তোমাকে দেখাতে যে আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে পারি না। সে ফিসফিস করে বলল সময়। আমি মনে করি। সময়ই তোমাকে তার পথে বোঝাতে পারবে।

আমি সময়ের ধারণাটা পছন্দ করলাম। ঠিক আছে। আমি সম্মত হলাম।

তার মুখ এখনও আগেরই মতই। আমি চেষ্টা করলাম তাকে সেদিক থেকে বিছিন্ন করতে।

তো–যতক্ষণ তুমি থাকছু। আমি কি আমার জিনিসপত্রগুলো ফেরত পেতে পারি? আমি জিজ্ঞেস করলাম। আমার কণ্ঠস্বর যতটা হালকা করা যায় সেভাবে ম্যানেজ করে নিলাম।

আমার প্রকল্পে কাজ হলো। সে হাসল। কিন্তু তার চোখ দুঃখ কষ্টে ভরে গেল। তোমার জিনিসগুলো কখনও একেবারের জন্য যায়নি। সে আমাকে বলল। আমি জানতাম এটা ভুল। যেদিন থেকে আমি প্রতিজ্ঞা করেছি মনে করিয়ে দেয়া ছাড়াই তোমাকে শান্তিতে রাখব। এটা ছিল বোকার মত এবং শিশুসুলভ। কিন্তু আমি চেয়েছিলাম আমার কিছু একটা তোমার জন্য রেখে যেতে। সেই সিডিটা, ছবিগুলো, টিকেটটা। সেগুলো সবই তোমার ফ্লোর বোর্ডের নিচে আছে।

সত্যিই?

সে মাথা উপর নিচ করে সম্মতি দিল। দেখে মনে হলো আমার আনন্দিত মুখ দেখে কিছুটা আনন্দিত বোধ করছে। এটাতেও তার মুখের ব্যথা পুরোপুরি দূর হলো না।

আমি মনে করি। আমি ধীরে ধীরে বললাম। আমি নিশ্চিত নই। কিন্তু আমি বিস্মিত…আমি মনে করি, হতে পারে পুরোটা সময় ধরে আমি এটা জানি।

তুমি কি জানো?

আমি শুধু তার চোখের থেকে রাগের ভাবটা সরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছিলাম। কিন্তু যখন আমি সেই শব্দগুলো বললাম সেগুলো অনেক বেশি সত্য শোনাল যতটা আমি আশা করেছিলাম তার চেয়ে বেশি।

আমার কিছু অংশ, আমার অর্ধচেতন অবস্থা হতে পারে, কখনও এই বিশ্বাস থেকে দূরে থাকেনি যে তুমি সবসময়ই আমাকে রক্ষা করে চলো, তাই আমি জীবিত থাকি অথবা মৃত। সেটাই সম্ভবত সেই কারণ যে কারণে আমি সেই কণ্ঠস্বরটা শুনতে পেতাম।

সে এক মুহর্তের জন্য খুব গভীর নিরবতা নেমে এলা। কণ্ঠস্বর? সে জিজ্ঞেস করল।

বেশ। শুধু একটাই কণ্ঠস্বর। তোমারই। এটা খুব একটা বড় গল্প। তার মুখের সেই দুশ্চিন্তাগ্রস্তভাবে আমাকে এমন করল আশা করতে যে আমি সেটা বয়ে নিয়ে যেতে পারছি না। সে কি মনে করছে যে আমি উন্মত্ত। যেমনটি সবাই মনে করে? সবাই কি এ ব্যাপারে ঠিক ছিল? কিন্তু কমপক্ষে সেই অভিব্যক্তি- সেই একটা যেটা তার চাহনিকে কিছু একটা যেন তাকে পোড়াচ্ছে।

আমি সময় পেয়ে গেছি। তার কণ্ঠস্বর অস্বাভাবিকভাবে শান্ত।

এটা কিছুটা দুঃখজনক।

সে অপেক্ষা করতে লাগল।

আমি নিশ্চিত নই যে কীভাবে আমি সেটা ব্যাখ্যা করব। তুমি কি মনে করতে পার এলিস অতিরিক্ত খেলা সম্বন্ধে কি বলেছিল?

সে কথাগুলো বলল কোনরকম জোর দেয়া ছাড়াই। তুমি একটা ক্লিফের খাড়ি থেকে লাফ দিয়ে পড়েছিলে শুধুমাত্র মজা করার জন্য।

হ্যাঁ। ঠিক। এবং তার আগে, সেই মোটরসাইকেল নিয়ে

মোটরসাইকেল? সে জিজ্ঞেস করল। আমি জানতাম তার কণ্ঠস্বর বেশ ভালই শান্ত কিছু একটা আমার কাছ থেকে শোনার জন্য।

আমি অনুমান করছি-আমি এলিসকে সেই অংশটা হয়তো বলি নাই।

না।

বেশ। সেটা সম্বন্ধে…দেখ, আমি সেটা পেয়েছিলাম…যখন আমি কিছু একটা বিপজ্জনক অথবা বোকার মত করতাম…তখন আমি তোমাকে পরিষ্কারভাবে স্মরণ করতে পারতাম। মনে করতে পারতাম। আমি স্বীকার করলাম। অনুভব করছিলাম ব্যাপারটা পুরোপুরি মানসিক। আমি মনে করতে পারলাম কীভাবে তোমার কণ্ঠস্বর আমার কানে ধরা দেয় যখন তুমি রাগান্বিত হও। আমি সেটা শুনেছিলাম। যেন তুমি ঠিক আমার পাশে এসে দাঁড়াও এখনকার মত। বেশিরভাগ সময় আমি চেষ্টা করতাম তোমার সম্বন্ধে চিন্তা না করতে। কিন্তু এটা আমাকে খুব বেশ আঘাত দিত না। যেমনটি যেন তুমি আমাকে আবার রক্ষা করছ। যেন তুমি আমাকে ব্যথা পেতে দিতে চাও না।

এবং বেশ। আমি বিস্মিত যদি সেই কারণ আমি তোমাকে শুনতে পাই এতটাই কাছে কারণ এটার কাছেই সবকিছু। আমি সবসময়েই জানতাম যে তুমি কখনও আমাকে ভালবাসা বন্ধ করতে পার না।

আবার যখন আমি কথা শুরু করলাম। কথাগুলো এমনভাবে এল যেন আমি দোষ স্বীকার করছি। সত্যটা। আমার ভেতরের গভীরতর কোন অংশ থেকে সত্যটা পরিচিতের মত বেরিয়ে আসছে।

তার কথাগুলো বেরিয়ে এল অর্ধ সত্যের মত। ভাঙা ভাঙা। তুমি… করেছিলে… তোমার জীবনের উপর ঝুঁকি নিয়েছিলে… শুনতে

শশশ। আমি তাকে বাঁধা দিলাম। এক সেকেন্ড ধরে থাকো। আমি মনে করি আমি এখানে একটা ইপিফেনি পেয়ে গেছি।

আমি সেই রাতে পোর্ট এ্যাঞ্জেলসের কথা ভাবলাম। যখন আমার প্রথম বিভ্রান্তি শুরু হয়। আমি দুইটা অপশনে চলে এসেছিলাম। পাগলের প্রলাপ অথবা ইচ্ছে পুরণ হওয়া। আমার কাছে আর কোন তৃতীয় অপশন ছিল না।

কিন্তু কি হতো যদি..

কি হতো যদি তুমি সত্যিকারভাবে বিশ্বাস করতে কিছু একটা সত্য আছে। কিন্তু তুমি পুরোটাই ভুলের ভেতর আছো? কি হতো যদি তুমি এতটাই বেপরোয়াভাবে নিশ্চিত হতে যে তুমিই ঠিক আছে। যে তুমি এমনকি সত্যটাকে পরোয়া করো না। তাহলে কি সত্যটা নিরব হয়ে যেতো অথবা এটা কি নিজেই ভেঙে যেত?

তিন নাম্বার অপশন: এ্যাডওয়ার্ড আমাকে ভালবাসে। এই বন্ধন আমাদের দুজনের মধ্যে যেটা একজনের অনুপস্থিতেতে ভেঙে যেতে পারে না। সেটা দূরত্বের কারণেও বা সময়ের কারণেও। সেটা কোন ব্যাপার নয় যে সে কতটা বেশি বিশেষ অথবা সুন্দর অথবা মেধাবী অথবা উপযুক্ত আমর চেয়ে সে হতে পারে। সে এরকমটি যেমনটি আমি কোন পরিবর্তন যোগ্য নয়। যখন আমি সবসময় তাকেই চেয়ে এসেছি, থাকতে চেয়েছি সুতরাং সে সবসময় আমারই হবে।

আমি কি সেটাই নিজেকে বলার চেষ্টা করছিলাম?

ওহ!

বেলা?

ওহ! ওকে! আমি দেখছি!

তোমার ইফিফেনি? সে আমাকে জিজ্ঞেস করল। তার কণ্ঠস্বর কিছুটা অসংযত। এবং দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।

তুমি আমাকে ভালবাস। আমি চমৎকারভাবে বললাম। দোষ স্বীকার করা এবং সত্যটা আবার আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল।

যদিও তার চোখ এখনও উদ্বিগ্ন। যে হাসিটা আমি সবচেয়ে বেশি ভালবাসি সেটা তার মুখের উপর খেলে গেল। সত্যিই! আমি সেটা করি।

আমার হৃদয় এমনভাবে প্রসারিত হতে লাগল আনন্দে যেন মনে হলো সেটা সম্ভবত আমার মুখের পেশীর উপর এসে পড়ছে। আমার বুক ভরে গেল এবং আমার কণ্ঠস্বর বাষ্পরুদ্ধ হয়ে গেল, আমি কোন কথা বলতে পারলাম না।

সে সত্যিই আমাকে সেইভাবে চায় যেভাবে আমিও তাকে চাই। চিরদিনের জন্য। এটা ছিল আমার হৃদয়ের একমাত্র ভয়। মানবীয় জিনিস সে যেগুলো সে আমার কাছ থেকে নিতে চায় না। সেগুলো তাকে এতটাই বেপরোয়া করে তোলে যে আমাকে মরণশীল করে রাখে। সেটার সাথে তুলনা করলে সেই ভয় সেটা সে আমার কাছ থেকে চায় না আমার হৃদয় দেখে মনে হয় অস্পষ্টতায় ভরা।

সে আমার মুখ তার বরফ শীতল হাতের মাঝে তুলে নিল এবং আমাকে চুমু খেল যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি এতটাই তন্দ্রাছন্নতা মাথা ঘোরাতে থাকল যে গোটা বন ঘুরতে লাগল। তার সে তার কপাল আমার উপর ঝুঁকিয়ে দিল এবং আমিই সেই একমাত্র জন ছিলাম যে গাঢ়তর নিঃশ্বাস নিচ্ছিলাম।

তুমি এখন অনেক ভাল আমার চেয়ে, যেমনটি ছিলাম। তুমি জানো। সে আমাকে বলল।

বেশি ভাল কি থেকে?

টিকে থাকা। তুমি কমপক্ষে একটা শক্তি তৈরি করেছ। তুমি সকালে জেগে উঠো। চেষ্টা করো চার্লির প্রতি স্বাভাবিক থাকতে। তোমার জীবনের চিত্রণ অনুসরণ করার চেষ্টা করো। যখন আমি প্রকৃতপক্ষে সচলভাবে ট্রাকিং করছিলাম না, আমি পুরোপুরি অকর্মণ্য ছিলাম। আমি আমার পরিবারের চারিদিকে থাকতে পারিনি। আমি কারোর চারিদিকে থাকতে পারিনি। আমি এটা স্বীকার করতে বিব্রতবোধ করছি যে আমি বেশি অথবা কম একটা বলের মত কুঁকড়ে গিয়েছিলাম। সমস্ত দুঃখ দুর্দশা আমার উপর বয়ে যেতে দিয়েছিলাম। সে গুঙিয়ে উঠল। এটা ছিল অনেক বেশি করুণ। আমার কণ্ঠস্বর শোনার চেয়ে। অবশ্যই, তুমি জানো আমিও সেটা করেছিলাম।

আমি সত্যিই খুব গভীরভাবে স্বস্তি পাচ্ছিলাম যে সেও প্রকৃতপক্ষে আমার মত করেই বুঝতে পেরেছিল। আরাম পাচ্ছিলাম যে এই সবকিছু তার কাছে একটা সেন্স তৈরি করছিল। যেকোন মূল্যে সে আমার দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছিল না যে আমি উন্মত্ত। সে আমার দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছিল যেন…সে আমাকে ভালবাসে।

আমি শুধুমাত্র একটি কণ্ঠস্বরই শুনতে পেতাম। আমি সংশোধন করে দিলাম।

সে হাসল, তারপর আমাকে আরো শক্ত করে কাছে টেনে নিল তার ডানদিকে এবং আমাকে সামনের দিকে যেতে দিল।

আমি শুধু এটা নিয়ে তোমার সাথে একটু রসিকতা করছিলাম। সে গতিপূর্ণভাবে তার হাত বাড়াল অন্ধকারের দিকে আমাদের সামনে যখন আমরা হাঁটছিলাম। সেখানে কিছু একটা বিবর্ণ এবং অস্বস্তিকর কিছু ছিল। সেই বাড়িতে। আমি বুঝতে পারছিলাম এটা কোনো ব্যাপার নয় নিদেনপক্ষে তারা সেটা নিয়ে কি বলল।

এটা তাদের ওপর এখনও কাজ করেছে।

সে কাঁধ ঝাঁকাল।

সে আমাকে অন্ধকারের ভেতর দিয়ে সামনের খোলা দরজার দিকে নিয়ে গেল সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন বাড়ির দিকে। আলো জ্বেলে দিল। রুমটা সেরকমই ছিল যেমনটি আমি মনে করতে পারছিলাম। সেই পিয়োনোটা এবং সেই সাদা কোচ এবং সেই বিবর্ণ জঘন্য সিঁড়ি। কোনো ধুলোও নেই। কোনো সাদা কাপড় বিছানো নেই।

এ্যাডওয়ার্ড এমন স্বরে নাম ধরে ডাকতে লাগল যেমনটি আমরা কথোপকথনের সময় বলে থাকি। কার্লিসল? এসমে? রোসালি? এমেট? জেসপার? এলিস? তারা শুনতে পেতে পারে।

কার্ল হঠাৎ আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন। এমনভাবে যেন তিনি সেখানে আগে থেকেই ছিলেন। শুভ হোক এই ফিরে আসা, বেলা। সে হাসল। আমরা আজ সকালে তোমার জন্য কি করতে পারি? আমি কল্পনা করছি, এই রকম সময়ে এটা কোন পুরোপুরি সামাজিকভাবে দেখাশোনা করার সময় নই।

আমি মাথা নোয়ালাম। আমি এই মুহূর্তে সবার সাথে একবারের জন্য কিছু বলতে চাই। যদি সবকিছু ঠিক থাকে। গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা সম্বন্ধে।

আমি যখন কথা বলছিলাম তখন এ্যাডওয়ার্ডের মুখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না। কিন্তু চকিতে দেখে নিলাম। তার অভিব্যক্তি সংকটপূর্ণ। কিন্তু হাল ছেড়ে দেয়া। যখন কালের দিকে ফিরে তাকালাম, সেও এ্যাডওয়ার্ডের দিকেই তাকাচ্ছিল।

অবশ্যই। কার্লিসলে বললেন, আমরা কেন অন্য রুমে বসে কথা বলছি না?

কার্ল উজুল আলোকিত লিভিংরুমের দিকে মধ্য দিয়ে পথ দেখিয়ে নিয়ে গেলেন। ডাইনিং রুমের কোণা ঘুরে চলে যাওয়ার সময় লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে গেলেন। দেয়ালগুলো সাদা। সিলিং অনেক উঁচুতে। সেটাও লিভিং রুমের মত। সেই রুমের কেন্দ্রবিন্দুতে একেবারে মাঝামাঝি একটা বিশাল ডিম্বাকৃতির টেবিল এবং তার চারধার দিয়ে সাজানো আটটা চেয়ার। কার্ল মাথার দিকের একটা চেয়ার টেনে দিলেন আমাকে বসার জন্য।

আমি এর আগে কখনও দেখিনি যে কুলিনরা এরকমভাবে ডাইনিং টেবিল ব্যবহার করে। এটা কেবলমাত্র লোক দেখানো। তারা বাড়িতে কোন খাওয়া দাওয়া করে না।

যত তাড়াতাড়ি আমি চেয়ারে বসার জন্য ঘুরে দাঁড়ালাম আমি দেখলাম যে আমরা একাকী নই। এসমে এ্যাডওয়ার্ডকে অনুসরণ করছে। তার পিছনে পরিবারের বাকি সবাই আসায় রুমটা পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।

কার্ল আমার ডানপাশের চেল্লারে বসলেন। এ্যাডওয়ার্ড বামপাশে। প্রত্যেকেই নিঃশব্দে তাদের আসন গ্রহণ করল। এলিস আমার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিল। এরই মধ্যে সে তার জায়গায় বসে গেছে। এমেট এবং জেসপার বেশ কৌতূহলের সাথে দেখা দিল। রোসালি একটু শংকাপূর্ণভাবে আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। আমার প্রতি উত্তরের হাসিটা শুধুমাত্র ভীতিকর। সেটাই কিছুক্ষণ পর ঠিক হতে চলেছে।

কার্ল আমার দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে ইঙ্গিত করল। তোমারই বলার পালা।

আমি ঢোক গিলোম। তাদের এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকা আমাকে দুর্বল করে ফেলল। এ্যাডওয়ার্ড টেবিলের তলা দিয়ে আমার হাত টেনে নিল। আমি সেটা ধরে রাখলাম। কিন্তু সে অন্যদেরকে লক্ষ্য করছিল। তার মুখ হঠাৎ করে হিংস্র হয়ে উঠল।

বেশ। আমি থামলাম। আমি আশা করছি যে এরই মধ্যে এলিস আপনাদেরকে সবকিছু বলে যেটা ভলতেরায় ঘটে গেছে?

সবকিছুই। এলিস আমাকে নিশ্চিত করল।

আমি তার দিকে অর্থপূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। এবং পথের ব্যাপারটা?

সেটাও। সে মাথা নোয়াল।

ভাল। আমি স্বস্তির সাথে নিঃশ্বাস ফেললাম। তাহলে আমরা সকলেই এখন একই জায়গায় আছি।

তারা ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করছিল যখন আমি আমার চিন্তাভাবনাকে প্রকাশের জন্য আদেশ দিলাম।

সুতরাং আমার একটা সমস্যা আছে। আমি শুরু করলাম এলিস প্রতিজ্ঞা করেছিল, ভলতেরাতে আমি আপনাদের একজন হতে যাচ্ছি। তারা পাঠাতে যাচ্ছে কোন একজনকে সেটা পরখ করার জন্য এবং আমি নিশ্চিত যে সেটা খারাপ জিনিস এমন কিছু একটা যেটা এড়াতে হয়।

এবং সুতরাং এখন এইটার ভেতরে আপনার সবাই জড়িত আছেন। আমি সেটার জন্য দুঃখিত। আমি তাদের সবার সুন্দর মুখের দিকে তাকালাম। সেই সুন্দর মুখগুলো শেষবারের মত।

এ্যাডওয়ার্ডের মুখ নিচের দিকে ঝুলে পড়ল ভেঙচানোর কারণে। কিন্তু, যদি তুমি আমাকে না চাও, তাহলে আমি নিজেকে জোর করে তোমার উপর চাপিয়ে দেব না। যেখানে এলিসের ইচ্ছে আছে কি নেই সেটা কোন ব্যাপার নয়।

এসমে কথা বলার জন্য তার মুখ খুলতে গেল কিন্তু আমি একটা আঙুল তুললাম তার মুখ বন্ধ করার জন্য।

দয়া করে আমাকে শেষ করতে দিন। আপনারা সকলে জানেন আমি কি চাই। আমি নিশ্চিত যে আপনি জানেন এ্যাডওয়ার্ড কি চিন্তা করছে। আমি মনে করি একমাত্র সঠিক ভাল পথ হলো একটা সিদ্ধান্তে এসে সবাই একটা করে ভোট দিবে। যদি আপনি। সিদ্ধান্ত নেন আপনি আমাকে চান না, তাহলে… আমি অনুমান করব আমি একাকী ইতালিতে চলে যাব। আমি তাদেরকে এখানে আসতে দিতে পারি না। আমার কপাল কুঁচকে গেল যখন আমি সেটা বলতে গেলাম।

এ্যাডওয়ার্ডের বুকের ভেতর দিয়ে গোঙানির মত একটা শব্দ ভেসে আসতে লাগল। আমি সেটাকে অবজ্ঞা করলাম।

সেই দিক দিয়ে বিবেচনা করলে, তারপর, আমি আপনাদের কাউকে আর বিপদের মুখে ঠেলে দিতে চাই না যে কোন পথে। আমি চাই আপনারা ভোট করবেন

হ্যাঁ অথবা না। আমার ভ্যাম্পায়ার হওয়ার ব্যাপারে।

আমি শেষ শব্দটা বলার সময় হালকা হাসি দিলাম। অনুমান করলাম এখন কার্ল কথা বলা শুরু করবেন।

জাস্ট এক মিনিট। এ্যাডওয়ার্ড বাধা দিল।

আমি তার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে রইলাম। সে তার ভ্রু আমার দিকে উঁচু করল। আমার হাতে চাপ দিতে শুরু করল।

ভোট শুরু হওয়ার আগে আমার কিছু একটা যোগ করার আছে।

আমি নিঃশ্বাস নিলাম।

যে বিপদ সম্বন্ধে বেলা উদ্ধৃতি দিচ্ছে সে বলে চলল আমি মনে করি না সেটা নিয়ে আমাদের অতিরিক্ত উদ্বিগ্নতার কিছু আছে।

তার অভিব্যক্তি অনেক বেশি চিত্রাপিত মনে হলো। সে তার মুক্ত হাত টেবিলের উপর রাখল এবং সামনের দিকে ঝুঁকে গেল।

তুমি দেখেছো। সে ব্যাখ্যা করল, টেবিলের দিকে তাকিয়ে রইল যখন সে কথা বলতে শুরু করল। সেখানে একটা কারণের চেয়ে অনেক বেশি কারণ আছে, কেন আমি একবারে শেষ মুহূর্তে এ্যারের সাথে হ্যান্ডশেক করতে চাইনি। সেখানে কিছু একটা ছিল যেটা তারা চিন্তা করছিল না। আমি তাদেরকে কোন কু দিতে চাইনি। সে গুঙিয়ে উঠল।

সেটা কোনটা ছিল? এলিস বলল। আমি নিশ্চিত আমার অভিব্যক্তি যে কিছুটা হলো এড়ানো দৃষ্টিতে পড়লাম।

ভুলতুরিতে সে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী এবং খুব ভাল কারণে। যখন তারা সিন্ধান্ত নিল কাউকে খুঁজে নেয়ার, সেটা সত্যিই কোন সমস্যা ছিল না। তুমি কি দিমিত্রিকে মনে করতে পার? সে আমার দিকে তাকাল।

আমি কাঁপতে লাগলাম। সে সেটাকে হ্যাঁ ধরে নিল।

সে লোক খুঁজে নেয়। সেটাই তার মেধা। কেন তারা তাকে ধরে রাখে।

এখন, সমস্ত সময় আমরা ছিলাম তাদের যে কোন একজন। আমি তাদের মস্তিষ্কে এমন কিছু বপন করেছিলাম যেটায় আমাদের এতবেশি তথ্য সম্ভব। সুতরাং আমি দেখেছিলাম দিমিত্রি কীভাবে তার মেধা কাজ করে। সে একজন অনুসন্ধানী ট্রাকার একজন ট্রাকার, একহাজার গুণ বেশি প্রকৃতি প্রদত্ত জেমসের চেয়ে। তার সমর্থ হারিয়েছিল সম্পর্কহীন কি করতে পারে। অথবা কীভাবে এ্যারো কি করেছিল। সে ধরেছিল… পক্ষে? আমি জানি না সেটা কীভাবে ব্যাখ্যা করব.. দি টেনর, অথবা কোন একজনের মনে এবং তারপর সে সেটা অনুসরণ করেছিল। এটা কাজ করে এই দূরত্ব। উপর নির্ভর করে।

কিন্তু এ্যারোর সেই ছোট্ট অভিজ্ঞতার পর, বেশ…এ্যাডওয়ার্ড কাঁধ ঝাঁকাল।

তুমি মনে করো সে আমাকে খুঁজে পেতে সমর্থ হবে না। আমি নিরুত্তাপভাবে বললাম।

সে মাথা নাড়াল। আমি এই ব্যাপারে নিশ্চিত। সে সম্পূর্ণ অন্যদিক থেকে ব্যাপারটা বুঝেছে। যখন এটা তোমার উপর কাজ করবে না তাহলে তারা অন্ধের মত হয়ে যাবে।

এবং কীভাবে সেটাকে যে কোন কিছুকে সমাধান করবে?

শান্ত সুস্পষ্টভাবে। এলিস সমর্থ হবে তাদের বলবে যখন তাদের একটা ভিজিটের পরিকল্পনা থাকবে। এবং আমি তোমাকে লুকিয়ে রাখব। তারা তখন অসহায় হয়ে যাবে। সে বলল একটা অন্যরকম আনন্দের সাথে। এটা এমন হবে যে বিশাল খড়ের গাদায় এক টুকরো নির্দিষ্ট খড় খোঁজা।

সে এবং এমেট নিজেদের মধ্যে চকিতে দৃষ্টি বিনিময় করে হাসল।

সেটা আমার কাছে কোন যুক্তি তৈরি হলো না। কিন্তু তারা তোমাকে খুঁজে পাবে। আমি তাকে সেটা স্মরণ করিয়ে দিলাম।

এবং আমি নিজেকে রক্ষা করতে পারি।

এমেট হাসল। তার ভাইয়ের কাছে টেবিলে এগিয়ে গেল। মুষ্টি বিনিময় করল।

 অসম্ভব সুন্দর পরিকল্পনা আমার ভাই।

এ্যাডওয়ার্ড তার হাত প্রসারিত করল এমেটের মুষ্টিতে আঘাত করতে।

 না। রোসালি হিসহিসিয়ে উঠল।

আসলেই নয়। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম।

সুন্দর। জেসপারের কণ্ঠস্বর প্রশংসাসূচক।

ইডিয়ট। এলিস বিড়বিড় করে বলল।

 এসমে শুধু এ্যাডওয়ার্ডের দিকে তাকিয়ে রইল।

আমি চেয়ারে সোজা হয়ে রইলাম। সেদিকে তাকিয়ে ছিলাম। এটাই ছিল আমার মিটিং।

ঠিক আছে। তারপর। এ্যাডওয়ার্ড একটা বিকল্প অফার করেছে তোমার জন্য এটা কনসিডার করার জন্য। আমি ঠাণ্ডা স্বরে বললাম এখন ভোট হোক।

আমি এবার সরাসরি এ্যাডওয়ার্ডের দিকে তাকালাম। এটাই ভাল যে এই পথে তার মতামতটাও নেয়া যাবে। তুমি কি আমি তোমার পরিবারে যোগ দেই সেটা চাও?

তার চোখ কঠিন হয়ে গেল এবং সেখানে অন্ধকার। এই পথে নয়। তুমি মানবী হিসাবে থাকবে।

আমি একবার মাথা নোয়ালাম। আমার মুখটাকে ব্যবসায়ীর মত করে রাখলাম। তারপর নড়লাম।

এলিস?

হ্যাঁ।

জেসপার?

হা। সে বলল। কণ্ঠস্বর কবরের মত নিরব। আমি কিছুটা বিস্মিত হলাম। আমি তার ভোটের ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম না। কিন্তু আমি আমার প্রতিক্রিয়া চেপে রাখলাম এবং নাড়লাম।

রোসালি?

সে দ্বিধান্বিত হল। সে তার নিচের ঠোঁট মৃদু মৃদু কামড়াতে লাগল। না।

আমি আমার মুখের অভিব্যক্তি শূন্য রাখলাম। খুব ধীরে ধীরে মাথা নাড়ালাম। কিন্তু সে তার দুই হাত সামনের দিকে বাড়িয়ে ধরল। তালুও সামনের দিকে।

আমাকে ব্যাখ্যা করতে দাও। সে অনুমতি চাইল। আমি এটা মোটেই বোঝাতে চাইনি যে বোন হিসাবে তোমাকে পেতে আমার ভেতরে কোন সংকোচ আছে। এটা শুধুমাত্র এই যে…এটা এমন নয় যে এই জীবন আমি নিজেই আমার নিজের জন্য পছন্দ করে নিয়েছি। আমি আশা করছি সেখানে আমার মত আর কেউ থাকবে সে আমার জন্যই না ভোট দেবে।

আমি ধীরে ধীরে সম্মতিসূচক মাথা নাড়লাম। তারপর এমেটের দিকে ঘুরলাম।

গোল্লায় যাও। হাঁ। সে মুখ ভেংচাল। আমরা দিমিত্রির সাথে লড়াইয়ের জন্য অন্য কোন উপায় খুঁজে পেতে পারি।

আমি তখনও উদ্বিগ্নতার সাথে অকিয়ে ছিলাম যখন আমি এসমের দিকে তাকালাম।

হা। অবশ্যই বেলা। আমি এরই মধ্যে তোমাকে আমাদের পরিবারের একজন সদস্য হিসাবেই ভেবে নিয়েছি।

ধন্যবাদ এসমে। আমি বিড়বিড় করে বললাম যখন আমি কার্লিসলের দিকে ঘুরলাম।

আমি হঠাৎ করে বেশ নার্ভাস হয়ে পড়লাম। আশা করছি আমার তার ভোটটাই আগে নেয়া উচিত ছিল। আমি নিশ্চিত যে এটাই সেই ভোট যেটার উপর অনেককিছু নির্ভর করছে। এই ভোটটাই আমি সবচেয়ে বেশি গণনা করব অন্য যেকোন বৃহত্তম ভোটের চেয়ে।

কার্ল আমার দিকে তাকালেন না।

এ্যাডওয়ার্ড। তিনি বললেন।

না। এ্যাডওয়ার্ড গুঙিয়ে উঠল। তার চোয়ালে শক্ত হয়ে গেল। সে তার ঠোঁট দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরল।

এটাই একমাত্র উপায় যেটা কোন সেন্স তৈরি করে। কার্ল জোর দিলেন। তুমি পছন্দ করতে পার না তাকে ছাড়া তোমার জীবন। এবং সেখানে আমাকে কোন পছন্দের সুযোগ দেয় না।

এ্যাডওয়ার্ড আমার হাত ছেড়ে দিল। টেবিল থেকেও উঠে পড়ল। তার নিঃশ্বাস গোঙানির মত হয়ে যেতেই রুম ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল।

আমি অনুমান করছি তুমি জানো আমার ভোট কি হবে। কার্ল শ্বাস নিলেন।

আমি তখনও এ্যাডওয়ার্ডের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম। ধন্যবাদ। আমি বিড়বিড় করে বললাম।

পাশের রুম থেকে আমাদের সবার কানে এ্যাডওয়ার্ডের প্রতিক্রিয়া প্রতিধ্বনিত হতে লাগল।

এটাই সবকিছু যেটা আমার দরকার ছিল। সবাইকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ আমাকে এখানে রাখতে চাওয়ার জন্য। আমিও একই রকম অনুভব করি আমার মধ্যে আপনাদের সবার মতই। আমার কণ্ঠস্বর শেষের দিকে বাস্পরুদ্ধ হয়ে যেতে লাগল আবেগে।

এসমে দ্রুত আমার পাশে চলে এল। তার ঠাণ্ডা হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরল।

লক্ষ্মীসোনা আমার, বেলা। সে নিঃশ্বাস নিল।

আমি প্রতি উত্তরে তাকে জড়িয়ে ধরলাম। আমি চোখের কোণা দিয়ে দেখতে পেলাম, রোসালির টেবিলের নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি অনুভব করলাম যে আমার কথাগুলো দুইভাবে সবাইকে একত্রিত করেছে।

বেশ, এলিস। আমি বললাম যখন এসমে আমাকে ছেড়ে দিল। তুমি কোথা থেকে এটা করতে চাও?

এলিস আমার দিকে তাকিয়ে রইল। তার চোখ জোড়া ভয়ে বড় বড় হয়ে গেল।

না! না! না! এ্যাডওয়ার্ড গর্জন করে উঠল। আবার রুমের ভেতরে ফিরে এসেছে। আমি পলক ফেলার আগেই সে আমার মুখের উপর চলে এল। আমার সামনে নতজানু হলো। তার অভিব্যক্তি রাগে অন্যরকম হয়ে গেল। তুমি কি পাগল হয়ে গেলে? সে চিৎকার করে উঠল। তুমি কি সমপ্রতি তোমার মনকে হারিয়ে ফেলেছে?

আমি কুঁকড়ে গেলাম। আমার হাত আমার কানের উপর।

হুম বেলা। এলিস উদ্বিগ্নস্বরে নাক গলাল। আমি মনে করি না আমি এখনও এটার জন্য প্রস্তুত। আমার প্রস্তুতির জন্য কিছু সময় দরকার…

তুমি প্রতিজ্ঞা করেছিলে। আমি তাকে মনে করিয়ে দিলাম। এ্যাডওয়ার্ডের হাতের দিকে তাকালাম।

আমি জানি, কিন্তু…সিরিয়াসলি বেলায় আমার কোন ধারণাই নেই যে কীভাবে তোমাকে না মারা যায়।

তুমি সেটা করতে পার। আমি উৎসাহ দিলাম। আমি তোমাকে বিশ্বাস করি।

 এ্যাডওয়ার্ড রাগে গোঙাতে লাগল।

 এলিস তার মাথা দ্রুত দুদিকে নাড়তে লাগল। তাকে আতংকিত দেখাচ্ছে।

কার্ল? আমি ঘুরে তার দিকে তাকালাম।

এ্যাডওয়ার্ড তার হাত দিয়ে আমার মুখ তুলে ধরল। জোর করে তার দিকে তাকাতে বাধ্য করল। তার অন্যহাত বাইরের দিকে। কালের দিকে নিষেধের ভঙ্গিতে তালু ফেরানো।

কার্লিসল সেটা অগাহ্য করলেন। আমি সেটা করতে সমর্থ। তিনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিলেন। আমি আশা করছি আমি তার অনুভূতি দেখতে পেয়েছি। তুমি আমার কাছ থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কোন বিপদে পড়বে না।

সেটা ভাল শোনাচ্ছে। আমি আশা করছিলাম তিনি সেটা বুঝতে পারবেন। পরিষ্কারভাবে কথা বলা খুবই কঠিন যেভাবে এ্যাডওয়ার্ড আমার চোয়াল চেপে ধরে রেখেছে।

ধরে রাখ। এ্যাডওয়ার্ড দাঁত কিড়মিড় করে বলল। এটা এখন হতে পারে না।

সেখানে কোন কারণ নেই এটার জন্য এখনও না হওয়ার জন্য। আমি বললাম, কথাগুলো আমার ভেতর থেকে অস্থিরভাবে বেরিয়ে এল।

আমি খুব কমই কিছু ভাবতে পারছি।

 অবশ্যই তুমি তা পারো। আমি তিক্ত স্বরে বললাম এখন আমাকে যেতে দাও।

সে আমার মুখ মুক্ত করে দিল। তার দুহাত বুকের উপর আড় করে দিল। আর দুই ঘণ্টার মধ্যেই চার্লি তোমাকে খোঁজার জন্য এখানে আসবে। আমি এখানে এই ব্যাপারে কোন মতেই পুলিশের হস্তক্ষেপের ভেতরে যেতে দিতে পারি না।

তাদের তিনজনকেই। কিন্তু আমি ভ্রু কুঁচকালাম।

এটাই সবসময়েই সবচেয়ে কঠিন অংশ। চার্লি। রেনে। এখন জ্যাকবও। এইসব মানুষ যাদেরকে আমি হারাব, এইসব মানুষকে যারা দুঃখ পাবে। আমি আশা করছি সেখানে কোন একটা উপায় থাকবে যে শুধুই আমিই কষ্ট পাব। কিন্তু আমি জানি সেটা অসম্ভব।

একই সময়ে, আমি মানবী হিসাবে তাদেরকে আরো অনেক বেশি কষ্ট দিচ্ছি। আঘাত দিচ্ছি। আমার কারণে চার্লিকে একের পর এক বিপদের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছি। জ্যাকবকে সবচেয়ে খারাপ বিপদের মধ্যে ঠেলে দিয়েছি। সে তার শত্রুদের সাথে জীবন মরণ লড়াইয়ে অবর্তীণ হচ্ছে। আর সে তার জমি প্রতিরক্ষার কাজে নিয়োজিত হচ্ছে। এবং রেনে–আমি এমনকি আমার নিজের মাকেও দেখতে যেতে পারি না আমার নিজের কারণেই যে আমি তার জন্য মৃত্যুর মত সমস্যা নিয়ে আসতে পারি আমার সাথেই।

আমি একজন বিপদ আনয়নকারী। আমি সেটা নিজের জন্য নিজের জীবনে গ্রহণ করেছি।

এইসব গ্রহণ করার পর, আমি জানি আমার নিজেকে রক্ষা করার সামর্থ্য অজর্ন করেছি। যাকে আমি ভালবাসি তাকে রক্ষা করতে পেরেছি। এমনকি যদি সেটার মানে হয় আমি তাদের সাথে থাকতে পারি না। আমার আরো শক্ত হতে হবে।

কিসের কারণে এই আগ্রহ, এ্যাডওয়ার্ড বলল, এখনও সে আগের মতই তার দাঁত কিড়মিড় করছে, কিন্তু এখন কার্লের দিকে তাকাচ্ছে, আমি উপদেশ দিব আমরা এখন এই কথোপকথন বন্ধ করে দেই। যতক্ষণ পর্যন্ত না বেলা অন্তত পক্ষে হাইস্কুলের পাঠ চুকায়। এবং চার্লির বাড়ি থেকে বেরিয়ে না আসে।

সেটা খুবই যুক্তিপূর্ণ অনুরোধ বেলা। কার্ল সেটার দিকে নির্দেশ করলেন।

আমি আজ সকালে চার্লের প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছিলাম যখন সে আজ সকালে জেগে উঠবে। যদি সর্বোপরি এই জীবনের পরে তাকে গত সপ্তাহে হ্যারিকে হারাতে হয়েছে। তারপর যদি আমার এই অব্যাখ্যাত উধাও হয়ে যাওয়ার উপরে রাখি- সে আমার বিছানাকে খালি দেখবে। চার্লি তার চেয়ে অনেক বেশি আশা করে আছে। এটা শুধু মাত্র আরেকটু বেশি সময়ের ব্যাপার। আমার গ্রাজুয়েশন খুব বেশি দূরে নয়..

আমি ঠোঁট কামড়ে ধরলাম আমি এটা বিবেচনা করে দেখব। এ্যাডওয়ার্ড সহজ হলো। তার শক্ত চোয়াল স্বাভাবিক অবস্থায় এল।

আমি সম্ভবত তোমাকে বাড়িতে নিয়ে যাব। সে বলল, আগের চেয়ে অনেক শান্ত এখন। কিন্তু এখনও খুব ব্যস্ততা দেখাচ্ছে আমাকে এখান থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে। শুধুমাত্র যদি চার্লি এত সকলে ঘুম থেকে উঠে থাকে।

আমি কার্ল দিকে তাকালাম গ্রাজুয়েশনের পরে?

তুমি আমার কথা পেয়ে গেছে।

আমি গভীরভাবে শ্বাস নিলাম। হাসলাম। এ্যাডওয়ার্ডের দিকে ঘুরলাম। ঠিক আছে তুমি আমাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে পার।

কার্ল আমার কাছে আরো কিছু প্রতিজ্ঞা করার আগেই এ্যাডওয়ার্ড আমাকে টেনে বাড়ি থেকে বের করল। সে আমাকে তার পেছনে করে বের করল। কাজেই আমি দেখার সুযোগ পেলাম না যে বসার ঘরের ভেতরে কি ভাঙল।

এটা বাড়িতে যাওয়ার জন্য একটা শান্ত যাত্রা। আমি নিজেকে বিজয়ী ভাবছিলাম এবং কিছুটা অস্বস্তিতেও ছিলাম। ভয়ও এখনও আছে। অবশ্যই। কিন্তু আমি চেষ্টা করছিলাম সেই অংশ সম্বন্ধে না ভাবতে। এটা আমাকে কোন ভাল কিছু দিল না দুশ্চিন্তা করতে সেই ব্যথা সম্পর্কে। শারীরিক অথবা আবেগগত। সুতরাং আমি সেটার সমর্থ হলাম না। এমনকি এখনও পর্যন্ত না।

আমরা আমাদের বাড়িতে পৌঁছলাম। এ্যাডওয়ার্ড থামল না। সে দেয়াল বেয়ে উঠে গেল এবং এক সেকেন্ডের মধ্যে জানালা দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল। তারপর সে আমার হাত ধরে টেনে তুলল তার গলার কাছ থেকে এবং আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিল।

আমি ভাবলাম খুব সুন্দর ভাল একটা ধারণা আছে সে কি ভাবছে সেটা সম্বন্ধে। কিন্তু তার অনুভূতি আমাকে বিস্মিত করল। রাগে ফেটে না পড়ে, সে বিষয়টা নিয়ে হিসেব নিকেশ করছিল। সে নিঃশব্দে আমার অন্ধকার ঘরটাতে এমাথা ওমাথা হাঁটা চলা করছিল যখন আমি দেখলাম তার সন্দেহবাতিকগ্রস্ততা।

তুমি যে পরিকল্পনাই আটো না কেন এটা কোন কাজ করবে না। আমি তাকে বললাম।

শশশ। আমি চিন্তাভাবনা করছি।

আহ্। আমি গুঙিয়ে উঠলাম। নিজেকে বিছানায় ছুঁড়ে দিলাম এবং আমার মাথার উপর বালিশ টেনে নিলাম।

সেখানে কোন শব্দ ছিল না। কিন্তু হঠাৎ সে সেখানে চলে এল। সে চাদরটা টেনে ফেলে দিল যাতে সে আমাকে দেখতে পায়। সে আমার পাশে শুয়ে পড়ল। তার হাত আমার চুল ব্রাশ করে দিতে লাগল আমার গালের উপর থেকে।

যদি তুমি কিছু মনে না করো। আমি অনেক ভাল বোধ করব যে তুমি তোমার মুখ লুকিয়ে রাখতে বলো। আমি এটা ছাড়া এত দীর্ঘদিন বেঁচেছি যে আমি আর এটার উপর দাঁড়াতে পারছি না। এখন…আমাকে কিছু একটা বল।

কি? আমি জিজ্ঞেস করলাম। অনিচ্ছাকৃতভাবে।

যদি তোমার এই পৃথিবীতে কোন কিছু থেকে থাকে, যে কোন কিছু যাই হোক, সেটা তাহলে কি হতে পারে?

আমি আমার চোখের ভেতরে পলায়ণপরতা দেখতে পেলাম। তুমি।

 সে অধৈর্যভাবে মাথা নাড়ল। কিছু একটা এর মধ্যে তোমার নেই।

আমি নিশ্চিত না সে আমাকে ঠেলে কোন দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। সুতরাং আমি চিন্তাভাবনা করতে লাগলাম সর্তকতার সাথে কোন উত্তর দেয়ার আগে। আমি কিছু একটার উপর আছি যার দুইটা সত্য এবং সম্ভবত অসম্ভবও।

আমি যেটা চাইব…কার্ল এটা করবে না। আমি তোমার কাছে আমাকে পরিবর্তন করে দেয়ার জন্য চাইব।

আমি তার প্রতিক্রিয়া দুশ্চিন্তাগ্রস্তভাবে দেখতে লাগলাম। আশা করেছিলাম আরো অনেক বেশি রাগীভাব যেটা আমি তার বাড়িতে দেখেছিলাম তার চেয়ে। আমি বিস্মিত যে তার অনুভূতি অভিব্যক্তি পরিবর্তিত হয়নি। এটা এখনও হিসাব কষে চলছে। চিন্তাযুক্তভাবে।

তুমি সেটার পরিবর্তে কি আশা করছ?

আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলাম না। আমি তার মুখের দিকে তাকালাম এবং আমার দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যেতে লাগল উত্তর দেয়ার আগে। আমি এটা সম্বন্ধে চিন্তা ভাবনা করতে পারব।

যে কোন কিছু।

সে মুর্ছিতভাবে হাসল। তারপর তার ঠোঁট কামড়ে ধরল। পাঁচ বছর?

আমার মুখ এমনভাবে বেকে গেল অভিব্যক্তির কারণে যে কোন কিছু একটা আছে তার মধ্যে ভয় এবং আনন্দের।

তুমি বলেছ যেকোন কিছু। সে আমাকে স্মরণ করিয়ে দিল।

হ্যাঁ, কিন্তু…তুমি দেখে থাকবে সে সময়ের ব্যবহার একটা পথ খুঁজে বের করা। আমি তখনই আঘাত করতে চাই যখন লোহার রড গরম থাকে। পাশাপাশি, এটা শুধু এতটাই বিপজ্জনক একজন মানুষের পক্ষে- আমার জন্য, কমপক্ষে। সুতরাং যেকোন কিছু কিন্তু সেটা বাদে।

সে ভ্রু কুঁচকাল। তিন বছর?

না!

এটা কি তোমার সেই যে কোন কিছুর চেয়ে খারাপ কিছু হয়ে যাচ্ছে না?

আমি ভাবছিলাম কত বেশি আমি এটা চাই সেটা নিয়ে। সবচেয়ে ভাল একটা অভিব্যক্তি শূন্যমুখ করে থাকা। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম এবং তাকে জানতে দিতে চাইনি কীভাবে কত বেশি সেটা ছিল। আমি নিজেকে আরো অনেক বেশি পরিশ্রম দেব। ছয় মাস?

সে তার চোখ ঘুরাল। খুব বেশি যথেষ্ট কিছু নয়।

একবছর তাহলে। আমি বললাম এটাই আমার সীমানা।

কমপক্ষে আমাকে দুই বছর দাও।

 কোন উপায় নেই। উনিশে আমি কাজ করব। কিন্তু আমি বিশ বছরের কাছাকাছি না হওয়া পর্যন্ত কোথাও যাচ্ছি না। যদি তুমি তোমার টিনএজ বয়সে চিরদিনের জন্য থাক তাহলে আমিও সেটা থাকব।

সে এক মিনিটের জন্য চিন্তা করল। ঠিক আছে। সময়ের সীমাবদ্ধতাটা ভূলে যাও। তুমি আমাকে একজনের মত হতে বলছ। তাহলে তুমি শুধু একটা শর্তেই সেটার সাথে দেখা করতে পারবে।

শর্ত? আমার কণ্ঠস্বর নিরুত্তাপ হয়ে গেল। কি শর্ত?

তার চোখে সর্তকতা খেলা করল। সে ধীরে ধীরে কথা বলল প্রথমে আমাকে বিয়ে কর।

আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। অপেক্ষা করছিলাম… ঠিক আছে। সেটাই তাহলে সেই পাঞ্চ লাইন?

সে নিঃশ্বাস নিল। তুমি আমার ইগোতে আঘাত করেছ বেলা। আমি শুধু তোমাকে প্রোপোজ করছি। এবং তুমি ভেবেছো এটা একটা কৌতুকের বিষয়।

এ্যাডওয়ার্ড, সিরিয়াস হও।

আমি একশত ভাগ সিরিয়াস। সে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। তার মুখে রসিকতার বিন্দুমাত্র চিহ্ন দেখতে পেলাম না।

ওহ, কাজের কথা এসো। আমি বললাম, আমার কণ্ঠস্বর হিস্টোরিয়াগ্রস্তের মত শোনাল আমি কেবলমাত্র আঠারো বছরের।

বেশ, আমি একশত দশ বছরের কাছাকাছি। এখন সময় এসেছে একটা বিষয়ে সেটেল করা।

আমি দূরে তাকালাম। অন্ধকার জানালার বাইরের দিকে। চেষ্টা করছিলাম আতংকটা নিয়ন্ত্রণে রাখার এটা আমাকে পেয়ে বসার আগে।

দেখ, বিবাহটা আমার গুরুত্বের মোটেই প্রথম দিকে নেই। তুমি সেটা জানো? এটা রেনে এবং চার্লির জন্য এক প্রকার মৃত্যুকে চুম্বন করার মতই।

খুব মজার শব্দ পছন্দ করেছ তো।

তুমি জানো আমি কি বলতে চেয়েছি।

সে গভীরভাবে শ্বাস নিল। দয়া করে আমাকে বলো না যে তুমি তোমার প্রতিজ্ঞার ব্যাপারে ভীত হয়ে পড়েছে। তার কণ্ঠস্বর অবিশ্বাসে ভরা। আমি বুঝতে পারলাম সে কি বোঝাতে চাচ্ছে।

প্রকৃতপক্ষে তা নয়। আমি দ্বিধান্বিত। আমি… রেনেকে নিয়ে ভীত। তার সত্যিই কিছু অন্যরকম মতামত আছে তিরিশ বছর হওয়ার আগে বিয়ে করার ব্যাপারে।

কারণ সে তোমাকে…তুমি হও একজন…স্বর্গীয় আতঙ্ক বিয়ে করার পরিবর্তে। সে গভীরভাবে হাসল।

তুমি মনে করো তুমি মজা করছ।

 বেলা, যদি তুমি সেই প্রতিজ্ঞার কথা, সেই লেভেলের কথা ভাব। বিয়ে এবং তোমার আত্মা, একটা ভ্যাম্পায়ারে পরিণত হওয়ার আগে। সে মাথা নাড়াল যদি তুমি আমাকে বিয়ে করার মত যথেষ্ট সাহসী না হও। তাহলে…

বেশ। আমি বাধা দিলাম। কি হবে যদি আমি সেটা করি? কি হবে যদি আমি তোমাকে বলি যে এখনই আমাকে ভেগাসে নিয়ে চল? আমি কি তিনদিনের মধ্যে একটা ভ্যাম্পায়ারে পরিণত হতে পারব?

সে হাসল। অন্ধকারে তার সাদা দাঁত আলোর দ্যুতি ছড়াল নিশ্চয়! সে বলল আমাকে ব্লাফ দেয়ার জন্য আমি গাড়ি নিয়ে আসব।

গোল্লায় যাক। আমি বিড়বিড় করে বললাম আমি তোমাকে আঠারো মাস সময় দেব।

কোন ডিল নয়। সে মুখ ভেঙচে বলল, আমি এই শর্তটা পছন্দ করছি।

 বেশ ভাল। যখন আমার গ্রাজুয়েট শেষ হবে তখন আমি কার্লকে পেয়ে যাব।

 যদি সেইটাই তুমি আসলে হও। সে কাঁধ ঝাঁকাল। ওর হাসি স্বর্গীয় দেখাল। তুমি একজন অসম্ভব মানুষ। আমি গুঙিয়ে উঠলাম একজন দৈত্য।

সে হাসল, এটাই কি সেই কারণে যে কারণে তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও না?

আমি আবার গুঙিয়ে উঠলাম।

সে আমার প্রতি ঝুঁকে পড়ল। তার অন্ধকার চোখ জোড়া আমার দিকে এবং আমার মনযোগের চেষ্টায় ব্যস্ত। প্লিজ বেলা? সে শ্বাস নিল।

আমি এই মুহূর্তে ভুলে গেলাম কীভাবে নিঃশ্বাস নিতে হয়। যখন আমি সুস্থ হলাম, আমি তাড়াতাড়ি আমার মাথা নাড়লাম। চেষ্টা করছিলাম আমার হঠাৎ মেঘাচ্ছন্ন মনকে পরিষ্কার করতে।

সেইটা কি আরো বেশি ভাল হবে যদি আমি তোমার জন্য একটা আংটি নিয়ে আসি।

না। কোন আংটি নয়! আমি প্রায় চিৎকার করে উঠলাম।

এখন তুমি এটা করে ফেলেছে। সে ফিসফিস করে বলল।

 ওপস।

চার্লি জেগে উঠেছে। আমি তার চেয়ে ভাল হয় চলে যাই। এ্যাডওয়ার্ড চলে যাওয়ার জন্য বলল।

আমার হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয় আছে।

সে আমার অভিব্যক্তি এক সেকেন্ডের মধ্যে বুঝে ফেলল এটা কি খুব বেশি শিশুসুলভ হবে যদি আমি তোমার ক্লোজেটের ভেতর লুকিয়ে থাকি, তারপর?

না। আমি ফিসফিস করে আগ্রহভরে বললাম, থাকো প্লীজ।

এ্যাডওয়ার্ড হাসল এবং অদৃশ্য হয়ে গেল।

আমি ততক্ষণ অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে রইলাম যতক্ষণ না বাবা আমাকে খুঁজে রুমে আসে। এ্যাডওয়ার্ড প্রকৃতপক্ষে জানত সে কি করছে। আমি স্বেচ্ছায় বাজি ধরতে রাজি যে এই সমস্ত অসুস্থ অংশ সবই ভালবাসার অংশ, অবশ্যই। আমার এখনও কার্লের অপশনটা আছে। কিন্তু এখন আমি জানি সেখানে একটা সুযোগ আছে যে এ্যাডওয়ার্ড আমার জন্য নিজেকে বদলে ফেলবে।

আমার দরজা শব্দ করে খুলে গেল।

 শুভ সকাল বাবা।

ওহ, হেই বেলা। তিনি এমনভাবে চেঁচালেন যেন আমাকে দেখতে এসে ধরা পড়ার কারণে কিছুটা বিব্রত। আমি জানতাম না যে তুমি জেগে আছো।

হ্যাঁ। আমি তোমার জেগে উঠার জন্য অপেক্ষা করছিলাম যাতে আমি একটা শাওয়ার নিতে পারি। আমি উঠতে শুরু করলাম।

একটু দেরি করো। চার্লি বলল, আলো জ্বালিয়ে দিল। আমি হঠাৎ আলোয় চোখ বন্ধ করে ফেললাম। সর্তকতার সাথে ক্লোজেট থেকে নিজের চোখকে দূরে রাখলাম। আমাদের আগে এক মিনিট কথা বলতে দাও।

আমি মুখের গোমড়াভাবটা কোনভাবেই এড়াতে পারলাম না। আমি এলিসকে জিজ্ঞেস করতে ভুলে গিয়েছিলাম একটা ভাল অজুহাতের কথা।

তুমি জানো, তুমি সমস্যার মধ্যে আছে।

 হ্যাঁ। আমি জানি।

আমি শেষ তিনদিনে উন্মত্তর মত হয়ে গিয়েছিলাম। আমি হ্যারির শেষকৃত্য সেরে বাসায় ফিরেছিলাম। তুমি চলে গিয়েছিলে। জ্যাকব শুধু আমাকে বলতে পারল যে তুমি এলিস কুলিনের সাথে চলে গেছে। সেজন্যই সে ভেবেছিল তুমি সমস্যার মধ্যে আছে। তুমি আমার জন্য যোগাযোগের কোন নাম্বার রেখে যাও নি। তুমি কোনরকম কলও করো নি। আমি জানি না কোথায় তুমি অথবা কখন-অথবা যদি তুমি ফিরে আসো। তোমার কি কোন ধারণা আছে কীভাবে…কীভাবে… তিনি বাক্যটা শেষ করতে পারলেন না। তিনি গভীরভাবে শ্বাস নিলেন এবং বলে চললেন তুমি কি আমাকে একটা কারণ দেখাতে পার কেন আমি তোমাকে এই মুহূর্তে জ্যাকসনভিলে পাঠাবো না?

আমার চোখ সরু হয়ে গেল। তো এইটাই তাহলে সেই হুমকি হতে যাচ্ছে। তাই নয় কি? দুজনে এই খেলা খেলছে। আমি উঠে বসলাম। আমার চারদিকে চাদর টেনে নিলাম। কারণ আমি যেতে চাই না।

এখন শুধুমাত্র এক মিনিট, ইয়াং লেডি

দেখ বাবা। আমি আমার কাজের জন্য পুরোপুরি সব দায়দায়িত্ব স্বীকার করছি। তোমার এই অধিকার আছে আমাকে শাস্তি দেয়ার যেটা তুমি চাও। আমি আরো করব সকল সাংসারিক ছোট কাজ, বোয়ামোছা, লন্ড্রির কাজ, ডিশ ধোয়া যতক্ষণ না তোমার মনে হয় আমার শিক্ষা হয়নি। এবং আমি অনুমান করছি তোমার সে অধিকার আছে যদি তুমি আমাকে এখন থেকে বেরও করে দাও-কিন্তু সেটা আমাকে কোনভাবে ফ্লোরিডায় নিয়ে যেতে পারে না।

তার মুখ টকটকে লালে রুপান্তরিত হলো। তিনি উত্তর দেয়ার আগে ছোট ছোট করে কয়েকবার শ্বাস নিলেন।

তুমি কি সেটার ব্যাখ্যা করবে এখন তুমি সেখানে কোথায় ছিলে?

ওই, সেখানে…একটা জরুরি ব্যাপার ছিল।

 তিনি ভ্রূ উপরে তুললেন আমার এই অভূতপুর্ব উত্তর ও ব্যাখ্যা শুনে।

আমার দুগাল চোখের পানিতে ভিজে গেল। তারপর এটা আমি সেইভাবে যেতে দিলাম। আমি জানি না তোমাকে আমি কি বলব বাবা। এটা পুরোটাই একটা ভুল বোঝাবুঝি বাবা। সে বলেছিল। এটা আমাদের হাতের বাইরে চলে গেছে।

তিনি অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন।

দেখ, এলিস রোসালিকে আমার সম্বন্ধে বলেছিল আমি ক্লিপ থেকে লাফ দিয়ে পড়েছি… আমি উন্মত্তর মত কাঁপতে লাগলাম এই কথা বলতে যেয়ে, এটা সত্য, এত কাছাকাছি যে আমার অজুহাত এই ক্ষেত্রে কেন জানি অনেকটা নিচুলয়ে চলে যাবে যেটা মিথ্যের মত শোনাবে। কিন্তু আমি চলে যাবার আগে, চার্লির অনুভূতি আমাকে মনে করিয়ে দিল যে সে ক্লিফের ব্যাপারে কোন কিছুই জানে না।

বড়ধরনের সমস্যা। যদি আমি এখনও এটার মুখোমুখি নই।

আমি অনুমান করছি আমি তোমাকে সে সম্বন্ধে কিছু বলি নি। আমি ঢোক গিলোম। এটা কিছুই না। শুধু সবকিছু জট পাকানো। জ্যাকবের সাথে সাঁতার কাটা। যাইহোক, রোসালি এ্যাডওয়ার্ডকে বলেছিল এটা এবং সে বেশ আপসেট হয়ে গিয়েছিল। সে দুঘর্টনাক্রমে এটা ভেবে নিয়েছিল যে আমি হয়তো নিজেকে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করছিলাম। অথবা এই জাতীয় কিছু একটা। সে এমনকি তার ফোনেরও উত্তর দিতে পারে নি। সে কারণে এলিস আমাকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল…লস এঞ্জেলসে..সেটা মুখোমুখি ব্যাখ্যা করতে। আমি কাঁধ ঝাঁকালাম। বেপরোয়াভাবে আশা করছিলাম যে সে এতটাই বিছিন্ন হয়ে পড়বে না যে আমি যে অসাধারণ ব্যাখ্যা দিয়ে প্রমাণ করেছি সেটা সে বুঝতে অসমর্থ হবে।

চার্লির মুখ থমথম করছিল। তুমি কি আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলে বেলা?

না। অবশ্যই না। শুধু মাত্র জ্যাকবের সাথে মজা করছিলাম। ক্লিফ ডাইভিংয়ে। লা পুশের ছেলেরা এটা প্রায় সবসময়ই করে থাকে। আমি যেমনটি বলেছি। এটা কিছুই না।

চার্লির মুখ শীতল কঠিন থেকে ধীরে ধীরে উপন্ত হতে লাগল রাগে। যাই হোক এ্যাডওয়ার্ড কুলিনের ব্যাপারটা কি? সে চেঁচিয়ে উঠল। সব সময়েই সে তোমাকে ছেড়ে চলে যায় কোন রকম কথা না বলেই

আমি তাকে বাধা দিলাম আরেকটা ভুল বোঝাবুঝি।

 তার মুখে আবার রাগ খেলে গেল। তো সে কি তারপর ফিরে এসেছে?

আমি নিশ্চিত নই যে তাদের সঠিক পরিকল্পনাটা কি? আমি মনে করি তারা সবাই এসেছে।

তিনি দুদিকে মাথা নাড়লেন। তার কপালের দুপাশের রগ দপদপ করছে। আমি চাই তুমি তার থেকে দূরে থাক, বেলা। আমি তাকে বিশ্বাস করি না। সে তোমার জন্য ক্ষতিকারক। আমি আবার আগের মত তোমার জীবনটা নিয়ে তাকে ছিনিমিনি খেলতে দিতে পারি না।

খুব ভাল। আমি শান্ত কণ্ঠে বললাম।

চার্লি তার পায়ে শব্দ তুললেন। ওহ। তিনি এক সেকেন্ডের জন্য ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন, জোরে জোরে বিস্ময়ের সাথে শ্বাস নিলেন। আমি ভাবছি যে তুমি দিন দিন অনেক জটিল হয়ে পড়ছে।

আমি তাই। আমি সোজাসুজি তার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমি বুঝাতে চাই ভাল, আমি চলে যাব।

তার চোখ জ্বলে উঠল। তার মুখ রক্তিম হয়ে গেল। আমার এই প্রতি উত্তর তার স্বাস্থ্যের উপর দিয়ে বয়ে গেল। তিনি হ্যারির চেয়ে কোন ক্রমেই কম বয়স্ক নন।

বাবা। আমি মোটেই এখান থেকে চলে যেতে চাই না। আমি নরম স্বরে বললাম। আমি তোমাকে ভালবাসি বাবা। আমি জানি তুমি দুশ্চিন্তা করছে। কিন্তু তোমাকে আমাকে এই ব্যাপারে বিশ্বাস করতে হবে। এবং তোমাকে এ্যাডওয়ার্ডের প্রতি সহজ হতে হবে যদি তুমি চাও আমি এখানে থাকি। তুমি কি চাও আমি এখানে থাকি অথবা চলে যাই?

সেটা সঠিক নয় বেলা। তুমি জানো আমি চাই তুমি এখানে থাকো।

তাহলে এ্যাডওয়ার্ডের প্রতি ভাল আচরণ করো। কারণ আমি যেখানে যাব সে সেইখানে যাবে। আমি এটা আত্মবিশ্বাসের সাথেই বললাম। আমার এই স্বীকারোক্তি এখনও খুব শক্তিশালী।

আমার ছাদের নিচে নয়। চার্লি ঝড়ের গতিতে বললেন।

আমি গভীরভাবে একটা শ্বাস নিলাম। দেখ, আমি আজ রাতে আর তোমাকে কোন অতিরিক্ত চরম হুমকি দিতে চাচ্ছি না। অথবা আমি মনে করছি এখন সকাল হয়ে গেছে। শুধু এটা নিয়ে কয়েকটা দিন চিন্তা ভাবনা করো, ঠিক আছে? কিন্তু এটা মনে রেখো যে এ্যাডওয়ার্ড ও আমার মধ্যে এক প্রকারের প্যাকেজ ডিল হয়ে গেছে।

বেলা–

আমি জোর দিয়ে বললাম, তুমি যখন এটা করতেই চাচ্ছ, তুমি কি আমাকে কিছুটা প্রাইভেসী দেবে? আমার সত্যিই একটা শাওয়ার নেয়া প্রয়োজন।

চার্লির মুখ হঠাৎ করে গভীর গোলাপি বর্ণ হয়ে গেল কিন্তু তিনি চলে গেলেন। আমার পেছনে জোরে দরজা বন্ধ করে দিলেন। আমি সিঁড়িতে তার রাগি পদক্ষেপ শুনতে পেলাম।

আমি চাদর ছুঁড়ে দিলাম। এ্যাডওয়ার্ড এখনও এখানে। সে রকিং চেয়ারে এমনভাবে বসে আছে যেন সে বসে বসে আমাদের দুজনের সমস্ত কথোপকথন শুনে নিয়েছে।

এটার জন্য দুঃখিত। আমি ফিসফিস করে বললাম।

যদি আমি এটার চেয়ে খারাপ কিছু আশা করেছিলাম। সেও বিড়বিড় করে বলল আমার জন্য চার্লির উপর কোন কিছু শুরু করো না দয়া করে।

সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করো না। আমি শ্বাস নিলাম সেই ফাঁকে আমি বাথরুমের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিলাম এবং একপ্রস্থ পরিষ্কার কাপড়চোপড়ও। আমি শুরু করতে যাচ্ছি প্রকৃতপক্ষে যতটা প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই। এবং তার চেয়ে একটুও বেশি নয়। অথবা তুমি কি আমাকে বলার চেষ্টা করবে যে এখন আমার কোথায় যাওয়ার আছে? আমি চোখ বড় বড় করে মিথ্যে সংকেত দেয়ার মত করে বললাম।

তুমি এমন বাড়িতে যেতে পারো যেখানে ভ্যাম্পায়ারে পরিপূর্ণ?

সেটাই সম্ভবত সবচেয়ে নিরাপদ স্থান আমার মত একজনের জন্য। পাশাপাশি… আমি গুঙিয়ে উঠলাম। যদি চার্লি আমাকে বের করে দেয়, তাহলে সেখানে আর গ্রাজুয়েশনের সময় সীমার কোন প্রয়োজন নেই, আছে কি?

তার চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। অনন্ত ধাপ্পাবাজি পাওয়ার জন্য এতটাই উৎসুক্য। সে বিড়বিড় করে বলল।

তুমি জানো তুমি সত্যিই সেটা বিশ্বাস করোনা।

 ওহ, আমি কি করি না? সে বাম্পিত হলো।

না, তুমি করো না।

সে আমার দিকে তাকিয়ে রইল এবং কথা বলতে শুরু করতে যাচ্ছিল। কিন্ত আমি তাকে বাধা দিলাম।

যদি তুমি সত্যিই বিশ্বাস করো তুমি তোমার আত্মাকে হারিয়েছে, তাহলে যখন আমি তোমাকে ভলতেরাতে পেলাম, তুমি তাহলে বুঝতে পারতে তাড়াতাড়ি কি ঘটে যাচ্ছে, এটা চিন্তাভাবনা করার পরিবর্তে যে আমরা দুজনেই মারা গেছি। কিন্তু তুমি তা পারো নি- তুমি বলেছিলে বিস্ময়কর। কাল ঠিক ছিলো। আমি তাকে মনে করিয়ে দিলাম। জয়ী ভঙ্গিতে- সেখানে তোমার মধ্যে আশা আছে। সবকিছুর পরেও।

একবারের মত এ্যাডওয়ার্ড কিছুই বলতে পারল না।

সুতরাং দুর্জনকেই আশার মধ্যে থাকতে দাও, ঠিক আছে? আমি উপদেশ দিলাম। এটার ব্যাপার কি এটা কোন ব্যাপার নয়। যদি তুমি থাকো, আমার স্বর্গে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।

সে ধীরে ধীরে উঠে পড়ল। কাছে এগিয়ে এসে সে তার আমার মুখের এক পাশে রাখল যখন সে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। চিরদিনের জন্য। সে প্রতিজ্ঞা করল। এখনও কিছুটা কাঁপছে।

এটাই সবকিছু যেটা আমি জানতে চাইছিলাম। আমি বললাম। আমার পায়ের আঙুলের উপর দাঁড়ালাম যাতে আমার ঠোঁট দিয়ে তার ঠোঁটে চুমু খেতে পারি।

.

পরিশিষ্ট

প্রায় সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় চলে এসেছে। সবকিছু ভালর দিকেই।

হাসপাতাল খুব আগ্রহের সাথেই কার্লকে তাদের ওখানে নিল। ক্যালকুলাস পরীক্ষাগুলোকে ধন্যবাদ-যেগুলোকে আমি বাইরে থাকতে মিস করেছিলাম। এলিস এবং এ্যাডওয়ার্ড ভালভাবেই তাদের গ্রাজুয়েট করে ফেলতে লাগল। হঠাৎ করে কলেজ এই বিষয়ে গুরুত্ব দিল। সময় বয়ে যেতে লাগল। কিন্তু এ্যাডওয়ার্ড আমার কাছে এক নতুন ধরনের আবেদন নিয়ে এল। প্রতিদিন কিছু না কিছু আবেদন তার আছেই। সে এর মধ্যে হার্ভাড রুমের ব্যাপারে যোগাযোগ করেছে। এটা তাকে বিরক্ত করল না। আমার কুসংস্কারকে ধন্যবাদ। পেনিনসুলা কমিউনিটি কলেজে পরবর্তী বছর আমরা একত্রে থাকতে পারি।

চার্লি আমার সাথে সুখী নয়। এ্যাডওয়ার্ডের সাথে কথা বলার কারণেও হতে পারে। কিন্তু অন্ততপক্ষে এ্যাডওয়ার্ড এখানে আসার অনুমতি পেয়েছে। আমাদের দেখা করার নির্দিষ্ট সময় বেধে দেয়া হয়েছে। এই বাড়ির ভেতরেই দেখা করতে হবে। আমি শুধুমাত্র এই ব্যাপারটাকে মেনে নিতে পারছি না।

স্কুল আর কাজই হলো একমাত্র আশা করার ব্যাপার। আমার স্কুলের হলুদ বিবর্ণ দেয়ালগুলো আমাকে খুব কমই টানে। আমার ডেস্কে আমার পাশে যে বসে তার কাছ থেকে আমার অনেক বেশি কিছু করে নেয়ার থাকে।

এ্যাডওয়ার্ড বছরের শুরুতেই তার সারা বছরের পরিকল্পনা করে ফেলেছে। যেগুলোর অধিকাংশই আবার আমার ক্লাসে পড়েছে। আমার আচরণ গত ফল সেমিস্টারের মত, কুলিনরা লস এ্যাঞ্জেল চলে যাওয়ার পরের মত। আমার পাশের সিটটা আর কখনও পুরণ হবে না। এমনকি মাইক সবসময়েই আগ্রহী ছিল কোন বিষয়ে সুযোগ নেয়ার। সেও আমার সাথে সব সময় নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখে।

.

এ্যাডওয়ার্ড তার জায়গায় ফিরে এসেছে। দেখে মনে হচ্ছে গত আট মাস শুধুমাত্র একটা বিরক্তিকর দুঃস্বপ্নের মত কেটেছে।

প্রায় সবকিছুই শান্ত, কিন্তু সব শান্ত নয়। একটা বাড়ি এখনও আবদ্ধ অবস্থায় আছে। একটা জিনিসের জন্য। আমি জ্যাকব ব্লকের মত সবচেয়ে ভাল বন্ধুর সংগ পাচ্ছি না। তারপরেও আমি তাকে মিস করছি না।

আমার লা পুশে যাওয়ার কোন স্বাধীনতা নেই। জ্যাকব আমাকে দেখতে আসছে না। সে এমনকি আমার ফোনেরও কোন উত্তর দিচ্ছে না।

আমি এই ফোন কলগুলো অধিকাংশই রাতে করি। এ্যাডওয়ার্ড এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরে। প্রায় রাত নটার দিকে। গোমড়ামুখো চার্লির ঘুমিয়ে পড়ার পরে আর পিছনের জানালা দিয়ে এ্যাডওয়ার্ডের আমার রুমে ঢুকে পড়ার আগে। আমি সেই সময়টা পছন্দ করেছি আমার সেই নিষ্ফল ফোন কলগুলো করার জন্য। কারণ আমি লক্ষ্য করেছি জ্যাকবের নাম উল্লেখ করলে এ্যাডওয়ার্ড অন্যরকম একটা মুখ করে থাকে। সে সেটা পছন্দ করে না। চিন্তিতভাবে তাকায়…হতে পারে এমনকি রাগান্বিত থাকে। আমি অনুমান করছি হয়তো নেকড়েমানবদের ব্যাপারে তার কোন পুর্ব কুসংস্কার আছে। যদিও জ্যাকব যেরকম জোর গলায় ওই রক্তচোষাদের বিরুদ্ধে বলে সে সেরকম বলে না।

সুতরাং আমি জ্যাকবের নাম খুব একটা উল্লেখ করি না।

এ্যাডওয়ার্ড আমার কাছাকাছি থাকলে অসুখী থাকার কোন কারণ থাকে না। এমনকি আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধুর ব্যাপারে, যে এখন এই মুহূর্তে সম্ভবত খুবই অসুখী, আমারই। কারণে। যখন আমি জ্যাকবের কথা চিন্তা করি, আমি সবসময় নিজেকে দোষী ভাবি। তার বিষয়ে আর না ভাবার জন্য খারাপ লাগে।

সেই রুপকথার গল্পটা ফিরে এসেছে। রাজপুত্র ফিরে এসেছে। খারাপ কুহক কেটে গেছে। আমি নিশ্চিত নই প্রকৃতপক্ষে তার পরে আর কি করার আছে। সেই অমীমাংসিত চরিত্র নিয়ে। কোথায় তার সেই চিরদিনের জন্য সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকা?

সপ্তাহ যায় এবং জ্যাকব এখনও আমার ফোন কলের কোন উত্তর দেয় না। এটা বিরতিহীন দুশ্চিন্তার মত হয়ে দাঁড়াল। এমনটা যেন আমার চোখের সামনের একটা পর্দা

যেটাকে আমি কোন মতেই অবহেলা করতে পারি না। জ্যাকব! জ্যাকব! জ্যাকব!

যদিও আমি খুব বেশি জ্যাকবের কথা উল্লেখ করি না, মাঝে মাঝে আমার হতাশা এবং উদ্বিগ্নতা মাত্রা ছাড়িয়ে যায়।

এটা পুরোমাত্রায় রূঢ়তা! আমি এক শনিবারের বিকালে বললাম। এ্যাডওয়ার্ড আমার কাজ থেকে আমাকে তুলে নিল। নিজেকে দোষী ভাবার কারণে রেগে আছি প্রতিনিয়ত ইনসালটিং!

আশার বিভিন্ন রকমের ধরণ আছে। আশারও বিভিন্ন রকমের সাড়া পাওয়া যায়। আমি এই সময়ে কাজের মধ্যে জ্যাকবকে ডাকব। আবার শুধুমাত্র সাহায্যকারী বিলিকে পাওয়ার জন্য।

বিলি বললেন সে আমার সাথে কথা বলতে চায় না। আমি ধুমায়িতভাবে বললাম। তাকিয়ে ছিলাম বৃষ্টিপাতের দিকে যেটা প্যাসেঞ্জারের জানালার পাশ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল। তার মানে সে সেখানে আছে। সে মা তিনটা স্টেপ এগিয়ে এসে ফোনটা ধরতে পারছে না। সাধারণত সবসময় বিলি বলে থাকে সে বাইরে গেছে অথবা ব্যস্ত অথবা ঘুমাচ্ছে অথবা ওই জাতীয় কিছু। আমি বুঝাতে চাইছি, এটা তাই নয় যেমনটি আমি জানতাম না। তিনি আমার সাথে মিথ্যে কথা বলছেন। কিন্তু অন্ততপক্ষে হস্তক্ষেপ করার ব্যাপারে এটা একটা নম্র পদ্ধতি। আমি অনুমান করতে পারি বিলি এখনও আমাকে ঘৃণা করে। এটা ঠিক নয়!

এটা তোমাকে নয় বেলা। এ্যাডওয়ার্ড শান্তভাবে বলল কেউ তোমাকে ঘৃণা করতে পারে না।

এইভাবে অনুভব করো। আমি বিড়বিড় করে বললাম, আমার হাত বুকের উপর আড়াআড়ি ভাজ করে রাখলাম। এটা একটা জিদ্দী ভাবভঙ্গি ছাড়া এর বেশি কিছু। বুকের সেখানে এখন আর কোন গভীর ক্ষত নেই। আমি খুব কমই সেই তা অনুভূতি এখন অনুভব করি।

জ্যাকব জানে যে আমরা ফিরে এসেছি এবং আমি নিশ্চিত আমি তোমার সাথে আছি সে সম্বন্ধে সে অবগত। এ্যাডওয়ার্ড বলল। সে আমার কাছাকাছি কোনমতেই আসতে ইছুক নয়। আমাদের শত্রুতার শিকড় অনেক গভীরে।

সেটা খুব বোকার মত। সে জানে যে তুমি সেরকম নও…অন্যান্য ভ্যাম্পায়ারদের মত নও।

সেখানে একটা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার এখনও অনেক বেশি ভাল কারণ আছে।

আমি একদৃষ্টিতে অন্ধের মত জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলাম। শুধুমাত্র জ্যাকবের মুখটাই যেন দেখতে পাচ্ছিলাম। সেটা একটা তিক্ত মুখোশে আবৃত, যেটা আমি ঘৃণা করি।

বেলা, আমরা যা আছি, আমরা সেটাই। এ্যাডওয়ার্ড শান্ত স্বরে বলল। আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। কিন্তু আমার সন্দেহ আছে জ্যাকব পারে কিনা। সে খুবই তরুণ। এটা বেশিরভাগ সময়েই একটা লড়াইয়ে রুপ নেবে এবং আমি জানি না যদি আমি এটা শেষ করতে পারি… আমি তাকে হত্যা.. সে থেমে গেল। তারপর তাড়াতাড়ি সে বলে চলল আমি তাকে আঘাত করার আগে। তুমি তখন অসুখী হবে। আমি মোটেই সেটা ঘটুক তা চাই না।

জ্যাকব রান্নাঘরে কি বলেছিল সেটা আমি স্মরণ করতে পারলাম। তার সেই হাস্কি কণ্ঠস্বরে আমি পুরোপুরি তার কথাগুলো মনে করতে পারি। আমি নিশ্চিত নই যে আমি এমনকি যথেষ্ট রাগান্বিত সেটা হ্যান্ডেল করার জন্য…তুমি সম্ভবত এটা খুব একটা বেশি পছন্দ করবে না যদি আমি তোমার বন্ধুকে হত্যা করি। কিন্তু সেইবারে সে সেটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছিল…

এ্যাডওয়ার্ড কুলিন। আমি ফিসফিস করে বললাম তুমি কি এটাই বলতে চেয়েছিলে যে তাকে হত্যা করব? তাই কি?

সে আমার দিক থেকে দূরে তাকাল, বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে রইল। আমাদের সামনে, সেই লাল আলোটা আমি খেয়াল করিনি সেটা সবুজে পরিণত হয়েছে এবং সে সামনের দিকে তাকাতে শুরু করেছে। খুব আস্তে আস্তে চালাচ্ছে। তার সেই স্বাভাবিক চালানোর গতিতে নয়।

আমি চেষ্টা করব…খুব কঠিনভাবে…সেটা না করতে। এ্যাডওয়ার্ড শেষ পর্যন্ত বলল।

আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। কিন্তু সে তখনও সামনের দিকে তাকিয়ে থাকা বজায় রাখল। আমরা কোণার দিকের থামো চিহ্নের কাছে থেমে গেলাম।

এলোমেলোভাবে, আমি স্মরণ করতে পারলাম প্যারিসের যখন রোমিও ফিরে এসেছিল কি ঘটেছিল। স্টেজের নির্দেশনা খুব সাধারণ ছিল। তারা লড়াই করতে লাগল। প্যারিস পতিত হলো।

কিন্তু সেট হাস্যকর। অসম্ভব।

বেশ। আমি বললাম। গভীরভাবে নিঃশ্বাস নিলাম। আমার মাথা নাড়লাম যাতে সেই শব্দগুলো আমার মাথা থেকে চলে যায়। সেরকম কোন কিছুই কখনও ঘটতে যাচ্ছে না। সে কারণেই সে বিষয় নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ নেই। তুমি জানো চার্লি এই মুহূর্তে ঘড়ি দেখতে শুরু করেছে। তার চেয়ে ভাল হয় তুমি বাড়িতে চলে যাও। দেরি করার জন্য আরো বেশি সমস্যায় পড়ার আগে ভাগেই বাড়ি যাওয়া ভাল।

আমি আমার মুখ তার দিকে ঘোরালাম। আন্তরিকভাবে হাসলাম।

প্রতিবার আমি তার মুখের দিকে তাকাই, সেই অসম্ভব সুন্দর মুখ। এইবারে, হৃৎপিণ্ডের শব্দ আগের তুলনায় দ্রুততর হলো। আমি তার মুখের সেই মুর্তির মত নির্বাক মুখের অভিব্যক্তি দেখতে পেলাম।

তুমি এরই মধ্যে অনেক বেশি সমস্যার মধ্যে পড়ে গেছে, বেলা। সে ঠোঁট না নাড়িয়েই ফিসফিস করে বলল।

আমি আরো কাছাকাছি সরে এলাম। তার হাত আঁকড়ে ধরে তার দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখতে লাগলাম সে কি দেখছে। আমি জানি আমি কি আশা করেছিলাম। হতে পারে যে ভিক্টোরিয়া রাস্তার মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে আছে। তার স্বর্ণকেশী আগুনের মত চুল বাতাসে উড়ছে। অথবা কালো লম্বা আলখাল্লার একটা সারি …অথবা রাগান্বিত নেকড়েমানবের একটা দল। কিন্তু আমি কোন কিছুই দেখতে পেলাম না।

কি? এটা কি?

সে গভীর করে শ্বাস নিল। চার্লি…

আমার বাবা? আমি গুঙিয়ে উঠলাম।

সে আমার দিকে তাকাল। আমার এই আতংকিত অবস্থা দেখার পরও তার অভিব্যক্তি অনেক শান্ত হয়ে ছিল।

চার্লি…সম্ভবত তোমাকে খুন করতে যাচ্ছে না। কিন্তু সে এটা নিয়ে চিন্তা করছে। সে আমাকে বলল। সে আবার সামনের দিকে গাড়ি চালাতে শুরু করল। রাস্তা থেকে নিচের দিকে। কিন্তু সে বাড়িটার পাশ দিয়ে গেল এবং গাছের সারির দিকে ঢুকে গেল।

আমি এখন কি করতে পারি? আমি জোরে শ্বাস নিলাম।

এ্যাডওয়ার্ড চার্লির বাড়ির দিকে ফিরে তাকাল। আমি তার দৃষ্টি অনুসরণ করলাম। প্রথমবারের মত দেখতে পেলাম কুমার গাড়ির পাশে ড্রাইভওয়েতে কি পার্ক করা আছে। উজ্জ্বল, চকচকে, মিস করা অসম্ভব। আমার মোটরসাইকেল। সেটা ড্রাইভওয়েতে রাখা আছে।

এ্যাডওয়ার্ড বলেছিল চার্লি আমাকে হত্যা করার জন্য প্রস্তুত। সুতরাং সে অবশ্যই জানে এটা আমার। সেখানে একমাত্র একজন ব্যক্তিই আছে যার কাছে এই সম্পদ থাকতে পারে।

না! আমি ঢোক গিলালাম। কেন? কেন জ্যাকব আমার প্রতি এরকম করবে? তার এই প্রতারণার ব্যাপারটা আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। আমি জ্যাকবকে খুব বেশি বিশ্বাস করেছিলাম। তাকে আমি আমার প্রতিটি গোপন বিষয়ে, যা আমার আছে, নিশ্বাস করেছিলাম। আমার মনে হয়েছিল সে আমার একমাত্র নিরাপদ জলাশয়। সেই ব্যক্তি উপরে আমি সবসময় বিশ্বাস স্থাপন করতে পারি। অবশ্যই এখন সবকিছু অন্যদিকে মোড় নিয়েছে। কিন্তু আমি চিন্তা করতে পারি না কোনরকম যে ভেতরের কোন কিছু পরিবর্তিত হয়েছে। আমি সেটা চিন্তা করতে পারি না যেটা পরিবর্তনযোগ্য!

কেন আমি তার এই আচরণ সহ্য করব? চার্লি এটার ব্যাপারে উত্তর মত হয়ে যাবেন। তার চেয়ে খারাপ কিছু। তিনি এই মুহূর্তে খুব দুঃখ পাবেন। তিনি দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন। তিনি কি এর মধ্যে অনেক কিছু নিয়ে নিজেকে সামলে নেননি? আমি কখনও কল্পনাও করতে পারি না জ্যাকব এতটা নিচু মন মানসিকতার হতে পারে। চোখ ভেঙে কান্না চলে এলো গড়িয়ে পড়তে লাগল গাল বেয়ে। কিন্তু সেগুলো দুঃখের কান্না ছিল না। আমি প্রতারিত হয়েছি। হঠাৎ করে এতটাই রাগান্বিত হয়ে উঠলাম আমার মাথা এভাবে দপদপ করতে লাগল যেন আমি বিস্ফোরিত হতে যাচ্ছি।

সে কি এখনও সেখানে আছে? আমি হিসহিসিয়ে বললাম।

হ্যাঁ। সে সেখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। এ্যাডওয়ার্ড আমাকে বলল, সামনের অন্ধকার পথের দিকে মাথা ঝুকাল।

আমি লাফ দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম। নেমে পড়লাম গাছপালার মধ্যে। আমার হাত এর মধ্যে কখন মুষ্ঠিবদ্ধ হয়ে গেছে।

কেন এ্যাডওয়ার্ড আমার চেয়ে এতটা বেশি দ্রুতগামী?

সে আমার কোমর ধরে ফেলল যখন আমি পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম।

আমাকে ভেতরে যেতে দাও! আমি তাকে খুন করতে যাচ্ছি। বিশ্বাসঘাতক! আমি গাছপালার ভেতর দিয়ে চিৎকার করে বললাম।

চার্লি তোমার কথা শুনতে পাবে। এ্যাডওয়ার্ড আমাকে সর্তক করল। এবং যদি একবার সে তোমাকে ভেতরে পেয়ে যায়, সে তোমাকে দরজার উপরেই ধরে ফেলবে।

আমি বাড়িটার দিকে পেছন ফিরে দেখলাম। আমার চোখের সামনে শুধু লাল মোটর সাইকেলটাই ভেসে উঠল। আমি শুধু লাল দেখতে পাচ্ছি। আমার মাথা ভেতরে আবার দপদপ করতে লাগল।

শুধুমাত্র আমাকে একটিবার জ্যাকবের মুখোমুখি হতে দাও। তারপর আমি চার্লির সাথে বিষয়টি নিয়ে ফয়সালা করব।

জ্যাকব ব্লাক আমাকে দেখতে চায়। সে কারণেই সে এখনও এখানে।

সেটা আমাকে শিথিলভাবে থামিয়ে দিল। আমার ভেতরের সেই লড়াকু স্পৃহা চলে গেল। আমার হাত যেন অবশ হয়ে গেল। তারা লড়াই করল। প্যারিস পতিত হলো।

আমি রাগান্বিত কিন্তু সেরকম রাগান্বিত নই।

কথা বলতে? আমি জিজ্ঞেস করলাম।

সেরকম বা তার চেয়ে বেশি কিছু।

কতটা বেশি কিছু? আমার কণ্ঠস্বর কাঁপতে লাগল।

এ্যাডওয়ার্ড আমার মুখের উপর থেকে চুলগুলো পিছনের দিকে সরিয়ে দিল। দুশ্চিন্তা করো না। সে এখানে আমার সাথে লড়াই করার জন্য আসেনি। সে এমনভাবে কাজ করছে… সে তাদের দলের একজন মুখপাত্র হিসাবে এখানে এসেছে।

ওহ!

এ্যাডওয়ার্ড বাড়িটার দিকে আবার তাকাল। তারপর তার হাত আমার কোমরে শক্ত করে চেপে বসল। আমাকে জঙ্গলের দিকে টেনে নিয়ে গেল। আমাদের ব্যস্ত যাওয়া উচিত। চার্লি অধৈর্য হয়ে পড়ছে।

আমরা খুব বেশি দূরে গেলাম না। জ্যাকব পথের খুব কাছাকাছি অপেক্ষা করছিল। সে মসযুক্ত একটা গাছের গায়ে হেলান দিয়ে অপেক্ষা করছিল। তার মুখ কঠিন এবং তিক্ত। প্রকৃতপক্ষে তাকে আমি যেভাবে জানি এটা সেটাই। সে আমার দিকে তাকাল। তারপর এ্যাডওয়ার্ডের দিকে। জ্যাকবের মুখ এমনভাবে টান টান হয়ে রইল যেন সে কোন রসকষহীন মানুষ। সে গাছের দিকে তাকিয়ে কাঁধ ঝাঁকাল। সে তার খালি পায়ের বলের উপর দাঁড়িয়ে ছিল। সামনের দিকে কিছুটা ঝুঁকে ছিল। তার কাঁপতে থাকা হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছিল। তাকে শেষবার আমি যেমনটি দেখেছিলাম তাকে দেখতে তার চেয়ে বড় লাগছিল। যেভাবেই হোক, সে তখনও গোঙাচ্ছিল। সে এ্যাডওয়ার্ডের দিকেই থাকত যদি তারা একে অন্যের কাছাকাছি অবস্থান করত।

কিন্তু এ্যাডওয়ার্ড থেমে গেল। আমরা তাকে দেখলাম। আমাদের দুজন ও জ্যাকবের মধ্যে একটা বড় রকমের ব্যবধান বজায় রাখলাম। এ্যাডওয়ার্ড ঘুরে দাঁড়াল। আমাকে এমনভাবে সরিয়ে দিল যাতে আমি তার পেছনে থাকি। আমি তার পেছনে দাঁড়িয়ে ঝুঁকে জ্যাকবের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার চোখ দিয়ে তাকে দোষী বানানোর চেষ্টা করলাম।

আমি ভেবেছিলাম তার এই রকম মূর্তি দেখে, তার এই অভিব্যক্তি আমাকে রাগান্বিত করে তুলবে। পরিবর্তে এটা তাকে শেষবার যখন দেখেছিলাম তখনকার কথা মনে করিয়ে দিল। তার চোখে কান্নার জল দেখেছেলািম। আমার রাগান্বিত মনোভাব দুর্বল হয়ে গেল। আমি জ্যাকবের দিকে তাকিয়ে রইলাম। এত দীর্ঘদিন পর আমি তাকে দেখছি। আমি আমাদের এই পুর্ণমিলনী এই রকম হওয়ায় ঘৃণাবোধ করি।

বেলা। জ্যাকব অভিবাদনের স্বরে বলল। এ্যাডওয়ার্ডের দিক থেকে চোখ না ফিরিয়েই সে আমার দিকে মাথা নুইয়ে বলল।

কেন? আমি ফিসফিস করে বললাম। চেষ্টা করছিলাম আমার গলায় যে বাধো বাধো ভাব আছে সেটা লুকিয়ে রাখতে। তুমি কীভাবে এটা আমার প্রতি করতে পারলে জ্যাকব?

তার মুখ থেকে রাগ চলে গেল। কিন্তু তার মুখ এখনও আগের মত কঠিন হয়ে রইল। এটা সবার ভালোর জন্যই।

সেটার মানে তুমি কি বোঝাতে চাচ্ছ? তুমি কি চাও চার্লি আমার প্রতি বিরুপ হয়ে যাক? অথবা তুমি কি চাও যে তার একটা হার্ট এ্যাটাক হয়ে যাক হ্যারির মত? সেটা কোন ব্যাপার নয় তুমি আমার প্রতি কতটা পাগল তা, তুমি কীভাবে এটা তার সাথে করতে পারলে?

জ্যাকব তাকিয়ে রইল। তার ভ্রু কুঁচকে রইল কিন্তু সে কোন উত্তর দিল না।

সে কাউকে আঘাত দিতে চায় নি। সে শুধু তোমাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে চেয়েছে। সুতরাং তুমি এখন আর আমার সাথে সময় কাটানোর জন্য এ্যালাউ হলো। এ্যাডওয়ার্ড বিড়বিড় করে বলল। সে সেই চিন্তাটা ব্যাখ্যা করল যেটা জ্যাকব বলছিল না।

জ্যাকবের চোখ ঘৃণায় জুলছিল। যখন সে আবার এ্যাডওয়ার্ডের দিকে তাকাল।

আউ, জ্যাক! আমি গুঙিয়ে উঠলাম। আমি এর মধ্যেই আগের অবস্থায় ফিরে এসেছি। তুমি কেন ভেবেছিলে তোমার পশ্চাৎদেশে লাথি কষাতে আমি লা পুশে যাব না, যখন তুমি আমার ফোন কলগুলো এড়িয়ে চলছিলে?

জ্যাকবের চোখ আমার দিকে চলে এল। প্রথমবারের মত দ্বিধান্বিত দেখাল। সেটাই কারণ? সে জিজ্ঞেস করল। তারপর তার চোয়াল শক্ত করল যেন সে দুঃখিত, সে কিছু একটা বলবে।

সে ভেবেছিল আমিই তোমাকে যেতে দিচ্ছি না, চার্লি নয়। এ্যাডওয়ার্ড আবার ব্যাখ্যা করল।

থামাও ওসব। জ্যাকব চেঁচিয়ে বলল।

এ্যাডওয়ার্ড কোন উত্তর দিল না।

জ্যাকব একবার কেপে উঠল। তারপর তার মুষ্টির মত যত জোরে সম্ভব দাঁতে দাঁত চাপল। বেলা তোমার কোন ব্যাপারে…তোমার সমর্থের। সে দাঁতে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল

সুতরাং তুমি অবশ্যই এর মধ্যে জানো যে কেন আমি এখানে।

হ্যাঁ। এ্যাডওয়ার্ড নরম স্বরে সম্মতি জানাল। কিন্তু, তুমি শুরু করার আগে, আমি কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করছি।

জ্যাকব অপেক্ষা করতে লাগল। একবার মুষ্টি বন্ধ করে একবার খুলে সে তার হাতের কাঁপুনিকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতে লাগল।

ধন্যবাদ। এ্যাডওয়ার্ড বলল। তার কণ্ঠস্বর তার আনুগত্যের মত কাঁপতে লাগল আমি কখনও তোমাকে বলব না যে আমি কতটা কৃতজ্ঞ। আমি তোমার কাছে ঋণী আমার বাকি…অস্তিত্বের জন্য।

জ্যাকব শূন্য দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইল। তার কাঁপুনি বিস্ময়ের জন্য থেমে গেল। সে দ্রুত আমার সাথে চকিতে একটা চাহনি বিনিময় করল। কিন্তু আমার মুখ তখনও রহস্যের আড়ালে আবৃত।

বেলাকে জীবত রাখার জন্য। এ্যাডওয়ার্ড পরিষ্কারভাবে বলল। তার কণ্ঠস্বর কিছুটা রুক্ষ যখন আমি…পারি নাই।

এ্যাডওয়ার্ড- আমি বলতে শুরু করলাম কিন্তু সে একহাত তুলে আমাকে থামিয়ে দিল। তার চোখ এখনও জ্যাকবের উপরে।

সবকিছু বুঝতে পারায় জ্যাকবের মুখ থেকে মুখোশটা দূরীভূত হয়ে গেলো। আমি এটা তোমার উপকার বা লাভের জন্য করি নাই।

আমি জানি, কিন্তু আমি তোমার উপর যে কৃতজ্ঞতাবোধ করছি তা মুছে ফেলতে পারো না। আমি ভেবেছিলাম তুমি সেটা জেনে থাকবে। যদি আমার কোনরকম ক্ষমতা থাকত তোমার জন্য কোন কিছু করার…

জ্যাকব তার একটা ভ্রূ উঁচু করল।

এ্যাডওয়ার্ড তার মাথা নাড়ল সেটা আমার কোন ক্ষমতা নয়।  

কাদের, তাহলে? জ্যাকব গুঙিয়ে উঠল।

এ্যাডওয়ার্ড আমার দিকে তাকাল। তার। আমি একজন খুব দ্রুত শিখতে পারি, জ্যাকব ব্ল্যাক। এবং আমি দ্বিতীয়বার একই ভূল করতে যাচ্ছি না। আমি এখানে ততক্ষণ আছি যতক্ষণ না সে আমাকে চলে যেতে আদেশ দেয়।

মুহূর্তের জন্য আমি তার সোনালি দৃষ্টির মধ্যে ডুবে গেলাম। এটা বুঝে উঠা খুব একটা শক্ত কিছু নয় আমি এই কথোপকথনের মধ্যে কি মিস করেছি। একমাত্রও একটা জিনিসই জ্যাকব এ্যাডওয়ার্ডের কাছে চায়। সেটা হলো তার অনুপস্থিতি।

কখনোই না। আমি ফিসফিস করে বললাম, এখনও এ্যাডওয়ার্ডের চোখে আমার দৃষ্টি নিবদ্ধ।

জ্যাকব গরগরানির মত আওয়াজ করল।

আমি অনিচ্ছাকৃতভাবে এ্যাডওয়ার্ডের দৃষ্টি থেকে আমার দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে জ্যাকবের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। আর অন্যকিছু কি তোমার প্রয়োজন আছে জ্যাকব? তুমি চাও আমি সমস্যার মধ্যে পড়ি- তোমার সেই মিশন সফল হয়েছে। চার্লি সম্ভবত আমাকে মিলিটারী স্কুলে পাঠিয়ে দিতে পারে। কিন্তু সেটা আমাকে এ্যাডওয়ার্ডের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে না। সেখানে কিছুই নেই যেটা দিয়ে সেটা করা যাবে। তুমি এর চেয়ে বেশি কিছু আর কি চাও?

জ্যাকব তার চোখ এ্যাডওয়ার্ডের দিকে ধরে রাখল। আমার শুধু তোমার ওই রক্তচোষা বন্ধুদেরকে মনে করিয়ে দেয়া প্রয়োজন যে কয়েকটা মূল্যবান পয়েন্ট চুক্তির ভেতরে ছিল, যেটা তারা আমাদের সাথে সম্মত হয়েছিল। সেই চুক্তিই একমাত্র জিনিস যেটা ঠিক এই মুহূর্তে তার গলা কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করা থেকে আমাকে থামিয়ে রেখেছে।

আমরা সেটা ভুলি নাই। এ্যাডওয়ার্ড একই সাথে বলল, যখন আমি জানতে চাইলাম সেই কি পয়েন্টগুলো কি?

জ্যাকব এখনও এ্যাডওয়ার্ডের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে, কিন্তু সে আমাকে উত্তর দিল সেই চুক্তি কিছুটা নির্দিষ্ট বিষয়ে। যদি তাদের কোন একজন কোন মানুষকে কামড়ায়, সেই সত্যটা চলে যাবে। কামড়ানো- হত্যা করা নয়। সে জোর দিয়ে বলল। শেষ পর্যন্ত সে আমার দিকে তাকাল। তার চোখের দৃষ্টি শীতল।

এটা আমাকে এক সেকেন্ড সময় নিল তার মুখের ভাব ধরতে। তারপর আমার মুখও তার মত শীতল হয়ে গেল।

সেটা তোমার দেখার কোন বিষয় নয়।

 সেই জাহান্নামের… সে শুধু এই শব্দ দুটোই কোন মতে বের করতে পারল।

আমি আশা করিনি আমার এই সামান্য কথা এতটাই শক্ত একটা প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। সে সতর্ক সংকেত থাকা সত্বেও সে সেটা দিতে এসেছিল। সে অবশ্যই সেটা জানত না। সে অবশ্যই ভেবেছিল সে সর্তক সংকেতটা শুধু একটা প্রতিরোধ। সে সেটা বুঝতে পারে নাই। অথবা সেটা সে বিশ্বাস করতে চায় নাই। আমি এরই মধ্যে আমার পছন্দের বিষয় ঠিক করে ফেলেছি। সেটা এই যে আমি এর মধ্যেই সত্যিই কুশি পরিবারের সদস্য হওয়ার পথে এগিয়ে গেছি।

আমার উত্তর জ্যাকবের মধ্যে খিচুনির কাছাকাছি কিছু দেখা দিল। সে তার মুষ্টিবদ্ধ হাত তার কপালের উপর চেপে ধরল। তার চোখ জোর করে বন্ধ করল এবং মোচড়াতে লাগল। সে তার খিচুনি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করল। তার মুখ তার চামড়ার নিচে হালকা সবুজাভ ধারণ করল।

জ্যাক? তুমি ঠিক আছো? আমি উদ্বিগ্নতার সাথে জিজ্ঞেস করলাম।

আমি তার দিকে একটু এগিয়ে দেলাম। তারপর এ্যাডওয়ার্ড আমাকে ধরে ফেলল। আমাকে তার নিজের শরীরের পিছনে নিয়ে গেল। সাবধান! সে এখন আর নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই। সে আমাকে সতর্ক করে দিল।

কিন্তু জ্যাকব যেভাবেই হোক আবার নিজের মধ্যে ফিরে এল। এখন শুধুমাত্র তার হাতগুলি কাঁপছে। সে পরিষ্কার ঘৃণার সাথে এ্যাডওয়ার্ডের দিকে বকুনি দিল। আহ, আমি তাকে কখনও ব্যথা দিতাম না।

এ্যাডওয়ার্ড অথবা আমি কেউও সে অনুভূতি মিস করলাম না। অথবা যে দোষী ভাব এর মধ্যে ছিল। একটা নিচু লয়ের হিসহিসানি এ্যাডওয়ার্ডের নিচের ঠোঁট দিয়ে বেরিয়ে গেল। জ্যাকব প্রতিক্রিয়ার সাথে তার হাতের মুঠি বন্ধ করতে লাগল।

বেলা! বাড়ির দিক থেকে চার্লির চিত্তার প্রতিধ্বনিত হতে লাগল। তুমি এই মুহূর্তে এই বাড়ির মধ্যে প্রবেশ কর।

আমরা সবাই জমে গেলাম। আমরা সেই নিরবতার মধ্যে অনেক কিছু শুনতে পেলাম।

আমিই প্রথম কথা বললাম। আমার কণ্ঠস্বর কাঁপতে লাগল শেষ।

জ্যাকবের রাগান্বিত প্রতিক্রিয়া থেমে গেল আমি দুঃখিত সেটার ব্যাপারে। সে বিড়বিড় করে বলল আমাকে সেটা করতে দাও যেটা আমি করতে পারি-আমাকে চেষ্টা করতে দাও…

ধন্যবাদ। আমার গলার কাঁপুনি সেই ভয় কাটিয়ে দিল। আমি পথের দিকে তাকালাম। আশাংখা করছিলাম চার্লি হয়তো একটা ক্ষ্যাপা ষাড়ের মত সেই ফার্ণ ঢাকা পথ দিয়ে ছুটে আসবে। সে দৃশ্য হলে অবশ্যই আমি লাল পতাকা উড়িয়ে দেব।

শুধু আরেকটা অতিরিক্ত বিষয় এ্যাডওয়ার্ড আমার দিকে বলল এবং তারপর জ্যাকবের দিকে তাকাল আমরা আমাদের দিক থেকে ভিক্টোরিয়ার কোন সন্ধান পাই নাই- তুমি পেয়েছে কি?

সে উত্তরটা জানত। জ্যাকব সেটা নিয়ে চিন্তা করছিল। কিন্তু জ্যাকব কোন মতে উত্তরটা দিল শেষবার যখন বেলা ছিল….দূরে। আমরা তাকে এটা ভাবতে দিয়েছিলাম যে সে ফসকে গেছে। আমরা আমাদের চক্র দৃঢ় করে দিয়েছিলাম, প্রস্তুত ছিলাম তাকে এ্যামবুশ করার জন্য–

আমার মেরুদণ্ড দিয়ে শীতল স্রোত প্রবাহিত হয়ে গেল।

কিন্তু তারপর সে একটা বাদূরের মত যেন নরকের রাস্তায় উড়ে গেল। এতটা কাছাকাছি যে আমরা বলতে পারি, সে তোমার ছোট্ট মেয়েলী গন্ধটা পেয়েছে এবং সেদিকে গেছে। তারপর থেকে সে আমাদের এইদিকে আর আসেনি।

এ্যাডওয়ার্ড মাথা নোয়াল। যখন সে ফিরে আসবে, সেটা আর তোমার কোন সমস্যা হয়ে দেখা দেবে না। আমরা…

সে আমাদের একজনকে হত্যা করেছে। জ্যাকব হিসহিসিয়ে উঠল সে আমাদের।

না–আমি দুজনের মন্তব্যের উপরেই প্রতিবাদ করলাম।

বেলা! আমি তার গাড়ি দেখেছি এবং আমি জানি তুমি তখন বাইরে ছিলে। তুমি যদি এই বাড়ির ভেতরে না থাকতে এক মিনিটের মধ্যে ভেতরে না আসো..! চার্লি তার হুমকি শেষ করলেন না।

চলো যাই। এ্যাডওয়ার্ড বলল।

আমি জ্যাকবের দিকে পেছন ফিরে তাকালাম। আমি কি তাকে আবার দেখতে পাবো?

দুঃখিত। সে এতটাই নিচুলয়ে ফিসফিস করে বলল যে আমি শুধু তার ঠোঁটের নড়াচড়া দেখেই সেটা বুঝতে পারলাম বিদায় বেলা।

তুমি প্রতিজ্ঞা করেছিলে আমি বেপরোয়াভাবে তাকে মনে করিয়ে দিলাম এখনও বন্ধু থাকবে, ঠিক?

জ্যাকব খুব ধীরে ধীরে তার মাথা নাড়ল। আমার গলার কাছে বাষ্পরুদ্ধ হয়ে গেল।

তুমি জানো আমার কাছে সেই প্রতিজ্ঞা রাখা কতটা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে, কিন্তু …আমি দেখতে পাব না কীভাবে এটা রাখার চেষ্টা করব। এখন নয়… সে লড়তে লাগল তার শব্দগুলো ঠিকঠাকভাবে বলার জন্য কিন্তু সেগুলো ভেসে গেল। তোমাকে মিস করব। সে বলল। তার একহাত আমার দিকে বাড়িয়ে দিল। তার আঙুলগুলো ছড়ানো। এমনভাবে যেন সে আশা করছে সেগুলো যথেষ্ট লম্বা হয়ে আমাদের দুজনের মধ্যের ব্যবধান ঘুচয়ে ফেলবে।

আমিও তোমাকে আমি ঢোক গিলে বললাম। আমার হাতও তার দিকে বাড়িয়ে দিলাম যতটা সামনে দেয়া যায়।

যেমনটি যেন আমরা একত্রিত, তার ভেতরের বেদনা আমাকে মোচড় দিল। তার ব্যথা আমার ব্যথা।

জ্যাক… আমি তার দিকে এক পদক্ষেপ এগিয়ে আসলাম। আমি চাইলাম আমার হাত দিয়ে তার কোমর জড়িয়ে ধরতে। তার মুখের দুঃখের সব অভিব্যক্তি মুছে ফেলতে।

এ্যাডওয়ার্ড আবার আমাকে পিছনে টেনে নিল। তার হাত আমাকে সেখানে রাখতে বাধ্য করল।

এটা ঠিক আছে। আমি তাকে প্রতিজ্ঞা করলাম। তার মুখ দেখার জন্য আমার চোখের ভিতরে বিশ্বাস স্থাপন করলাম। সে চেষ্টা বুঝতে পারল।

তার চোখের দৃষ্টি দুবোধ, তার মুখের ভাব অভিব্যক্তিহীন। শীতল। না, এটা ঠিক নেই।

তাকে যেতে দাও। জ্যাকব গুঙিয়ে উঠল। আবার রাগান্বিত। সে যেতে চায়। সে দুই পা সামনের দিকে এগিয়ে এল। তার চোখের ভেতরে বিদ্যুতের চমক খেলে গেল। তার বুক দ্রুত ওঠানামা করতে লাগল। কাঁপতে লাগল।

না! এ্যাডওয়ার্ড!

ইসাবেলা সোয়ান!

চলো এসো! চার্লি উন্মত্ত হয়ে উঠেছে! আমার কণ্ঠস্বরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু সেটা চার্লির জন্য নয়। তাড়াতাড়ি!

আমি তাকে টান দিলাম। সে কিছুটা রিলাক্স হলো। সে আমাকে ধীরে ধীরে পিছনে টেনে নিল। সব সময় তার চোখ জ্যাকবের উপর যখন আমার পিছতে লাগলাম।

জ্যাকব তিক্ত মুখে আমাদের দেখতে লাগল। তার চোখের ভেতর থেকে বন্যতা বেরিয়ে আসছে। তারপর, আমাদের মধ্যে বন এসে পড়ায়, তার মুখ হঠাৎ করে যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যেতে লাগল।

আমি জানতাম যে তার মুখের শেষ চাহনি আমাকে তাড়িয়ে বেড়াবে যতক্ষণ না আমি তাকে আবার হাসতে দেখব।

ঠিক তখনই আমি তাকে আবার হাসতে দেখলাম। আমি তাকে আমার বন্ধু রাখার একটা পথ খুঁজে পেলাম।

এ্যাডওয়ার্ড তার হাত দিয়ে আমার কোমড় আঁকড়ে ধরে রইল। আমাকে কাছাকাছি রাখল। সেটাই একমাত্র জিনিস যেটা আমার চোখের ভেতর কান্না ধারন করে রাখল।

আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা আছে।

আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু আমাকে তার শত্রু হিসাবে গণ্য করে।

ভিক্টোরিয়া এখনও আমাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। আমি যাদেরকে ভালবাসি তাদের সবাইকে বিপদের মধ্যে রেখেছে।

যদি আমি খুব তাড়াতাড়ি একটা ভ্যাম্পায়ারে পরিণত না হই, তাহলে তারা আমাকে হত্যা করবে।

এখন মনে হয় যদি আমি সেটা করি, তাহলে কুইলিইটেস নেকড়ে-মানবেরা তাদের কাজ করার চেষ্টা করবে। ভবিষ্যতে আমার পরিবারকেও হত্যা করার চেষ্টা করবে। আমি মনে করি না তাদের সত্যি সেরকম কোন সুযোগ আছে। কিন্তু আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু কি নিজেকে এই সুযোগে হত্যা করতে দেবে?

খুব গুরুত্বপুর্ণ সমস্যা। সুতরাং কেন তারা হঠাৎ করে অদৃশ্য হয়ে গেল। গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে আমি চার্লির বিবর্ণ মুখ দেখতে পেম।

এডওয়ার্ড আমাকে মৃদুভাবে চাপ দিল। আমি এখানে।

আমি গভীরভাবে শ্বাস নিলাম।

সেটা সত্য। এ্যাডওয়ার্ড এখানে। তার হাত আমার চারিদিকে জড়িয়ে আছে।

সেই সত্যটা যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণ আমি যেকোন কিছুর মোকাবেলা করতে পারি।

আমি কাধ ঝাঁকালাম এবং সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম আমার ভাগ্যকে বরণ করে নিতে। আমার সৌভাগ্য তো আমার পাশেই!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *