২০-২১. খাড়াখাড়ি উঠতে লাগলাম

২০.

আমরা খাড়াখাড়ি উঠতে লাগলাম। রাস্তাটা ক্রমেই সংকীর্ণ হয়ে আসতে লাগল। আমরা সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠে গেলে গাড়ি দুটো কাছাকাছি ঘেষে এল। এলিসের পক্ষে গাড়ি চালানোই মুশকিল হয়ে পড়ল। পেছনে ছোট একটি ট্যান পিগোট রেখে আমরা গুঁড়ি মেরে চললাম।

এলিস আমি বিলাপ করলাম। ড্যাশবোর্ডে রাখা ঘড়িটার গতি যেন বেড়ে গেছে।

এটাই ভেতরে ঢোকার একমাত্র পথ, সে আমাকে আশ্বস্ত করল। কিন্তু ওর গলা বেশ দুর্বল শোনাল।

গাড়ি সতর্কভাবে ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগোতে লাগল। একটা গাড়িই তখন লম্বালম্বিভাবে আছে। সূর্য এতক্ষণ মাথার উপর ছিল, তা অত্যন্ত ক্ষীপ্র গতিতে নিচের দিকে নামতে লাগল।

গাড়িগুলো একের পর একগুড়ি মেরে মেরে শহরের দিকে এগুতে লাগল। আমরা যখন নিকটবর্তী হলাম, তখন দেখতে পেলাম গাড়িগুলো রাস্তার পাশে পার্ক করা আছে। এবং লোকজন পায়ে হেঁটে দূরে কোথাও রওনা দিচ্ছে। প্রথমে ভাবলাম এটা বোধহয় অধৈর্যের কারণে কোন কিছু জিনিস আমি সহজে বুঝতে পারি। কিন্তু যখন সেটার পেছন দিয়ে ঘুরে আসলাম তখন দেখতে পেলাম শহর দেয়ালের বাইরে পরিপূর্ণ পার্কিং লট। ভিড় করে লোকজন গেটের মধ্য দিয়ে হেঁটে প্রবেশ করছে। কাউকেই গাড়ি চালিয়ে ঢোকার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না।

এলিস, আমি তাড়াতাড়ি ফিসফিসিয়ে বললাম।

আমি জানি। সে বলল। তার মুখ বরফখণ্ডের মত সাদা দেখাল।

সে সময় আমি চারপাশ তাকাচ্ছিলাম, এবং গুঁড়ি মেরে ধীর পায়ে হেঁটে যাওয়ার কারণে অনেকটাই দেখার সুযোগ হচ্ছিল। এটুকু বলতে পারি তখন দমকা হাওয়া বইছিল। গেটের কাছে ভীড় করে থাকা লোকজন সব হ্যাট মুঠোয় ধরে রেখেছে এবং মুখের চারপাশে পরে থাকা চুলগুলো টান টান করে বাধা। তাদের কাপড় দেহের চারপাশে ঝুল ঝুল করছে। এটাও লক্ষ্যণীয়, সবখানেই লাল আর লাল। লাল শার্ট, লাল হ্যাট, লাল পতাকাও যেন গেটের বাইরে বাতাসের সাথে সাথে ফিতের মত পত পত করছে। আমি দেখলাম ক্রিমসন রঙের স্কার্ফ পরিহিতা একজন মহিলা সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সে সেখানে পৌঁছে গেল, লাফ দিল কিন্তু এটা আরো জোরে বাজতে লাগল।

বেলা, এলিস আস্তে করে ভয় ধরানো গলায় বলল। আমি দেখতে পারছি না এখানকার গার্ডরা এখন কী সিদ্ধান্ত নেবে- যদি এটা কাজ না করে, তোমাকে একা যেতে হবে। দৌড়ে যেতে হবে তোমাকে। শুধু বলতে থাকবে প্লাজো দেই আরোরি, এবং তারা যেদিকে বলবে সেদিকে দৌড়ে যাবে। হারিয়ে যেও না।

প্লাজো দেই প্ৰারোরি, প্লাজো দেই প্রারোরি, আমি বারবার নামটা বলতে লাগলাম, এবং গাড়ি থেকে নামার চেষ্টা করলাম।

অথবা টাওয়ার ঘড়ি, যদি তারা ইংরেজি বলে। আমি চারপাশটায় যাব, শহরের বাইরের শিডিউলড কোন জায়গায়, চেষ্টা করব কোনভাবে দেয়াল টপকে ভেতরে ঢোকা যায় কিনা।

আমি মাথা নাড়লাম, প্লাজো দেই প্রায়োরি।

এ্যাডওয়ার্ড হয়ত দক্ষিণের টাওয়ার ঘড়ির নিচে থাকবে। ডানে বাগানের সঙ্কীর্ণ গলিপথ আছে, সেখানে ছায়ার মধ্যে সে থাকবে। সে সূর্যের আলোয় আসার আগেই তোমাকে তার মনোযোগ আকর্ষণ করতে হবে।

আমি ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়ালাম।

এলিস কাছেই সামনের সারিতে ছিল। নেভী ব্লু পোষাক পরিহিত একটি লোক পার্কিং লট থেকে গাড়ি সরিয়ে নিয়ে প্রবহমান ট্রাফিক জ্যামকে দেখিয়ে দিচ্ছে কোথায় যেতে হবে। তারা ইউ-টার্ণ করে রোডের পাশে একটা জায়গা খুঁজে পেল গাড়ি রাখার জন্য। এলিসও সেদিকে ঘুরে এল।

ইউনিফর্ম পরা লোকটা অলসভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। কোনদিকে মনোযোগ দিচ্ছিল না। এলিস ইতস্তত তার চারপাশে ঘুরে একসময় গেটের দিকে মুখ করে ওর গতি বাড়াল। সে আমাদের দিকে চিৎকার করে কিছু বলল, কিন্তু পরক্ষণেই আমাদের দিকে আর এক্ষেপ না করে ভীড়ের পরবর্তী গাড়ি সরানোয় মনোযোগী হয়ে পড়ল।

গেটে দাঁড়ানো লোকটাও প্রায় একই ইউনিফর্ম পরে ছিল। যখন আমরা তার কাছে আমাদের কথা নিবেদন করলাম সেই সময় গাদা গাদা টুরিষ্ট পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল।

গার্ডটি রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিল। এলিস পুরোপুরি থামার আগ পর্যন্ত গাড়িটা সর্তকভাবে ঘোরাল। আমার জানালায় সূর্যের আলো পড়ছিল এবং এলিস ছিল ছায়ায়। সে আলতোভাবে সিটের পেছনের ব্যাগ থেকে কিছু একটা বের করে আনল।

গার্ড অসহিষ্ণু একটা মনোভাব নিয়ে আমাদের গাড়ি চারপাশে ঘুরে এল। এলিসের জানালায় রাগান্বিতভাবে ঝুঁকে তাকাল।

এলিস জানালার অর্ধেকটা খুলল। আমি লোকটাকে দেখলাম। অন্ধকার গ্লাসের বিপরীতে ওর চেহারাটা দ্বিতীয়বার দেখতে হলো।

আমি দুঃখিত, শুধুমাত্র পর্যটনবাসগুলোই আজ শহরের ভেতরে ঢুকতে পারবে, মিস। সে ইংরেজিতে চমৎকার উচ্চারণে বলল। তাকে খুব অনুতপ্ত দেখাচ্ছিল। সে খুব খুশি হত যদি সে এমন সুন্দরী মহিলাকে আর কোন নতুন ভাল খবর শোনাতে পারত।

এটা ব্যক্তিগত ভ্রমণ, মোহনীয় একটা হাসি দিয়ে এলিস বলল। সে জানালার বাইরে সূর্যালোকে তার হাত বাড়িয়ে দিল। আমি আতঙ্কে জমে গেলাম, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি বুঝতে পারলাম সে কনুই পর্যন্ত টানটান করে দস্তানা পরে আছে।

সে ধাঁধা লাগা চোখে তার ফিরিয়ে আনা হাতের দিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখল এ মুহূর্তে এক তাড়া টাকা ধরে আছে। যার বাহ্যিক মূল্য এক হাজার ডলার।

মজা করছ? সে বিড়বিড় করে বলল।

 এলিসের হাসি ছিল চোখ ধাধিয়ে দেয়ার মত। যদি তুমি তা মনে কর।

সে তার দিকে তাকাল। তার চোখ বিস্ময়ে বিস্ফোরিত হয়ে গেল। আমি নার্ভাসভাবে ড্যাশবোর্ডে রাখা ঘড়ির দিকে এক পলক তাকালাম। যদি এ্যাডওয়ার্ড তার প্লান অনুযায়ী চলে তাহলে আমাদের হাতে আর মাত্র পাঁচ মিনিট আছে।

আমার একটু তাড়া আছে। সে হাসতে হাসতে উল্লেখ করল।

গার্ড দ্বিতীয়বারের মত অন্ধ হয়ে গেল। টাকাগুলো তার পকেটে রাখল।

সে জানালা থেকে একটু পিছিয়ে গিয়ে আমাদের দিকে যাওয়ার ইশারা করল। পার হয়ে যাওয়া লোকজনের কেউ এই পরিবর্তনটুকু ধরতে পারল না। এলিস শহরের ভেতরে গাড়ি চালিয়ে নিল। আমরা দুজন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।

রাস্তাটা ছিল ভীষণ সঙ্কীর্ণ, দারুচিনি রঙের বিল্ডিংগুলোর মত সেগুলোও একই রঙের পাথরে মোড়ানো, যা রাস্তাগুলোকে অন্ধকার ছায়াময় করে রেখেছে। মনে হচ্ছিল যেন বাগানের সরু গলিপথ। দেয়াল লাল পতাকায় সাজানো। বেশ কয়েকটা আঙ্গিনা পর একটু খালি জায়গা। বয়ে আসা বাতাস সে সরু পথে যেন শিষ বাজাচ্ছে।

তখন ছিল ভীড়ে পরিপূর্ণ। পায়ে হাঁটা লোকজনের ভিড় আমাদের গতিকে বার বার থামিয়ে দিচ্ছিল।

আর মাত্র একটু দূর, এলিস আমাকে উৎসাহ দেয়ার চেষ্টা করল। গাড়ির দরজার হাতলে তখন আমার হাত নিশপিশ করছিল যাতে এলিস বলার সাথে সাথে ছুটে বেরিয়ে যেতে পারি।

এলিস দ্রুত একটু পথ এগিয়ে আবার হঠাৎ থেমে গেল। ভীড়ের জনতা আমাদের ঘুষি দেখালো এবং ক্রুদ্ধভাবে কিছু বলল। ভাল লাগল যে আমি সেসবের কিছুই বুঝলাম না। সে গাড়ি ঘুরিয়ে এমন ছোট একটা পথে নিয়ে তুলল যেটা গাড়ি চলাচলের জন্য নয়। আতংকিত লোকজন পথ ছেড়ে দিয়ে গাড়ির গা বাঁচাতে পাশে সরে সরে গেল।

আমরা শেষের দিকে আরেকটা পথ খুঁজে পেলাম। সেখানের বিল্ডিংগুলো লম্বায় উঁচু আরও বেশি। সেগুলো এমনভাবে হেলানো যাতে করে সূর্যের আলো সামনের চাতালে পড়তে পারে সামনে পতপত করতে থাকা লাল পতাকা চোখে পড়ল। অন্য জায়গার তুলনায় এ জায়গায় ভীড় আরও ঘন। এলিস গাড়ি থামাল। পুরোপুরি থামার আগেই আমি গাড়ির দরজা খুলে ফেললাম।

সে রাস্তাটা কোথায় প্রশস্ত হয়ে সামনের দিকে গিয়ে মেলে গেছে দেখিয়ে দিল। ওখানে আমরা এখন দক্ষিণ স্কয়ারে। টাওয়ার ঘড়ি ডানে রেখে সোজা সামনের দিকে দৌড়াও। আমি চারপাশে খুঁজে আরেকটাপথ বের করছি

সে যখন আবার বলতে শুরু করল তখন ওর গলা ধরে এল, হিসহিসিয়ে বলল, তারা সবখানে!

আমি সে জায়গাতেই জমে গিয়েছিলাম, কিন্তু সে আমাকে প্রায় ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে নামাল। তোমার হাতে মাত্র দুমিনিট সময় আছে। যাও, বেলা, যাও! সে চিৎকার করে বলল, বলতে বলতে সে নিজেও বের হয়ে এল।

এলিস যে ছায়ায় মিশে গেছে সেটা দেখার জন্য আমি থামলাম না। আমার পেছনের গাড়ির দরজা বন্ধ করার জন্যও না। আমি পথে, আমার সামনে পড়া বিশাল দেহী এক মহিলাকে প্রায় ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলাম, মাথা নিচু করে দৌড়াতে লাগলাম, কোন দিকে একটুকুও লক্ষ্য করা ছাড়াই, এমন কি পায়ে নিচে পরা উঁচু নিচু পাথরগুলোও। অন্ধকার লেন থেকে বের হয়ে আসতেই মূল ভবনের গায়ে আছড়ে পড়া প্রখর সূর্যালোকে আমার অন্ধ হয়ে যাবার যোগার। আমার পাশ দিয়ে হুশ করে বাতাস ছুটে গেল। চুলগুলো সব মুখের ওপর আছড়ে পড়ল। আমাকে আবার অন্ধ করে ফেলার উপক্রম করল। এটা কোন বিস্ময়ের ব্যাপার নয় যে আমি দেয়ালের গা দেখতে পেলাম না যতক্ষণ না পর্যন্ত আমি এর গন্ধ পেলাম।

সেখানে আর কোন পথ ছিল না। লোকজনের ভীড়ে কিছু দেখা যাচ্ছিল না। আমি রাগান্বিতভাবে তাদেরকে ধাক্কা দিলাম। দুহাত দিয়ে তাদের সরিয়ে পথ করে নিতে চাইলাম। আমি তাদের কথাবার্তা শুনতে পেলাম। কিন্তু তাদের ভাষা বুঝতে পারলাম না। লোকগুলোর মুখে রাগ ও বিস্ময় খেলা করছিল।

জনতা আমার চারপাশ থেকে ধাক্কা দিতে লাগল, আমাকে ভুল দিকে ঘুরিয়ে দিল। আমি খুশি ছিলাম ঘড়িটা অনেক স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। ঘড়ির দুটো কাটাই নির্দয় সূর্যের দিকে ইঙ্গিত করছিল। আমিও তাই ক্রুদ্ধভাবে জনতা ভীড়কে ধাক্কা মেরে এগোতে চাইলাম। আমি জানতাম আমার অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমি অর্ধেক পথও এগোতে পারিনি। আমি কিছুতেই এটা করতে পারব না। আমি বোকাগাধা টাইপের, ধীরগতির মানুষ। এর কারণে আমরা সবাই মরতে যাচ্ছি।

আশা করছিলাম এলিস বেরিয়ে যেতে পেরেছে। ধরে নিয়েছিলাম সে কোন অন্ধকার ছায়া থেকে আমাকে দেখতে পাচ্ছে। জেনে গেছে যে আমি ব্যর্থ হয়েছি। তাই সে হয়ত বাড়িতে জেসপারের কাছে যেতে পারে।

রাগ ও উত্তেজনার বাইরে, নতুন কোন কিছু আবিষ্কার করার শব্দ শোনার চেষ্টা করছিলাম। এ্যাডওয়ার্ডের বাইরে বেরিয়ে আসা জনিত কোন শব্দ, হাঁপানি, হয়তবা চিৎকার।

কিন্তু জনতার ভীড়ের মধ্যে একটু ফাঁকও ছিল। সেখান দিয়ে আমি সামনের জায়গায় ফোয়ারাও দেখতে পেলাম। সেদিকে লক্ষ্য করে আমি এগিয়ে গেলাম।

আমার কাঁদতে বাকি ছিল যখন আমি সেটার কিনারায় পা পিছলে পড়লাম, আর হাঁটু পানিতে দৌড়াতে লাগলাম। পুলটা পার হতে হতে ফোয়ারার পানি ছিটকে এসে আমাকে সম্পূর্ণ ভিজিয়ে দিল। সূর্য থাকা সত্ত্বেও বাতাস ছিল কনকনে ঠাণ্ডা, যে কারণে ভিজে থাকাটা আমাকে অনেক কষ্ট দিচ্ছিল। কিন্তু ফোয়ারার গোড়াটা অনেক চওড়া থাকায় আমি মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই চত্বরের মূল কেন্দ্রে পৌঁছে গেলাম। কিনারায় হোঁচট খেলেও থামলাম না- নিচু দেয়ালে লাফিয়ে উঠলাম এবং নিজেকে ভীড়ের মধ্যে ছুঁড়ে দিলাম।

এবার নড়াচড়া আমার জন্য অনেক স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ হল, কেননা কনকনে ঠাণ্ডা পানিতে আমার জামা চুপচুপে ভেজা থাকায় দৌড়ের সময় তা ছিটকে পানি পড়ছিল আর লোকজন তা থেকে দূরে থাকছিল। আমি ঘড়ির দিকে আবারও তাকালাম।

একটা গভীর, কানফাটানো তীক্ষ্ম আওয়াজ চত্বরের মধ্যে প্রতিফলিত হল। এটা আমার পায়ের নিচের পাথরকেও পর্যন্ত কাঁপিয়ে দিল। বাচ্চারা কেঁদে উঠল এবং কান চেপে ধরল। আমি গুঙ্গিয়ে উঠে যত দ্রুত সম্ভব দৌড় দিলাম।

এ্যাডওয়ার্ড! আমি গুঙ্গিয়ে উঠলাম, যদিও জানতাম কাজ হবে না। ভীড়ের হৈ চৈ অনেক তীব্র ছিল এবং সে তুলনায় আমার চিৎকার ছিল দম বন্ধ অবস্থায় নিঃশ্বাস ফেলার মতই। তারপরও আমি চিৎকার করা থামাতে পারলাম না।

ঘড়ি আবারও ক্রমাগত ঘণ্টাধ্বনি দিয়ে যেতে লাগল। আমি মায়ের কোলে এক বাচ্চাকে পাশ কাটিয়ে দৌড়ালাম। যার চুল উজ্জ্বল সূর্যালোকে একেবারেই সাদা দেখাচ্ছিল। লম্বা মানুষের জটলা, যারা সবাই লাল ব্লেজার পরে আছে, আমাকে হুমকি দিল যেন আমি তাদের মধ্য দিয়ে না যাই। ঘড়িটা আবারও ঘণ্টা বাজাল।

এবার দেখতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। ভীড়ভাট্টার কারণে বাতাস বাধা পাচ্ছিল না। তা আমার মুখে যেন চাবুক মারছিল। আমার চোখও জ্বলছিল। যদিও আমি নিশ্চিত ছিলাম না চোখ জ্বালাটা আমার চোখের পানির কারণে হয়েছিল কিনা। অথবা ঘড়ির ঘণ্টাধ্বনির সাথে হার মেনে আমি কেঁদে উঠেছিলাম।

বাগানের গলির মুখের কাছে একটি পারিবারে চার সদস্য দাঁড়িয়ে। দুটো বাচ্চার পরনে ক্রিমসন পোশাক, তাদের ঘন কাল চুলে মিল করে লাল ফিতা। বাবাটা অত লম্বা না। যে কারণে তার কাঁধের ওপর দিয়ে ছায়ার মধ্যেও আমি উজ্জ্বল কিছু দেখতে পেলাম। আমি শব্দ করতে করতে তাদের দিকে এগিয়ে গেলাম। টলমলে চোখের পানি ছাপিয়ে দূরে দেখার চেষ্টা করলাম। ঘণ্টা বাজল, ছোট মেয়েটা তার কানে হাত চাপা দিল।

বড় মেয়েটা মায়ের দিকে কোমর উচালো, মায়ের পা জড়িয়ে ধরল এবং তাদের পেছনে থেকে কৌতূহলে ছায়ার মধ্যে তাকিয়ে থাকল। আমি যখন দেখলাম, তখন সেও মায়ের কনুই ধরে নাড়া দিল এবং অন্ধকারের দিকে ইশারা করল। ঘণ্টা বাজল এবং আমি আরও নিকটবর্তী হলাম।

আমি এতটাই কাছে ছিলাম যে ওর তেজী গলা শুনতে পেলাম। ওর বাবা আমার দিকে বিস্ময় ভরা কৌতূহলে তাকাল। যদিও আমি তাদের প্রতি কোন রকম ভ্রূক্ষেপ করছিলাম না, এ্যাডওয়ার্ডের নাম ধরে বারবার ডাকছিলাম।

বড় বাচ্চাটা কলকল করে উঠল এবং ছায়ার দিকে তাকিয়ে হাত পা নেড়ে অধৈৰ্য্য হয়ে তার মাকে কিছু বলার চেষ্টা করল।

আমি পথভ্রষ্টের মত বাবাটার চারপাশে ঘুরতে লাগলাম সে বাচ্চাটাকে খপ করে আমার পথ থেকে তুলে নিল–ঘণ্টাটা আমার মাথার ওপর বেজে উঠল।

এ্যাডওয়ার্ড, না? আমি চিৎকার করে উঠলাম, কিন্তু আমার গলার স্বর তীক্ষ্ম গোঙ্গানীর মত শোনাল।

আমি এবার তাকে দেখতে পেলাম। এটাও দেখতে পেলাম যে সে আমাকে দেখতে পাচ্ছে না।

এবার কোন হ্যালুসিনেশান না, সত্যিই তাকে দেখলাম। আমি বুঝতে পারলাম আমি যা ধারণা করে রেখেছিলাম তাতে খুত ছিল, যা আমাকে প্রবঞ্চিত করেছে; তারা ওর প্রতি সঠিক বিচার করেনি।

গলির মুখ থেকে মাত্র কয়েক ফিট দূরে এ্যাডওয়াড় দাঁড়িয়ে ছিল, নড়াচড়াহীন পাথরের মূর্তির মত। ওর চোখ জোড়া বন্ধ ছিল, দুহাত দুপাশে অবহেলায় পরে ছিল। তালুগুলো সামনের দিকে। ওর অভিব্যাক্তি ছিল প্রশান্তিময়, যেন সে ভাল কিছু চিন্তা করছে। ওর বুকের পাথুরে চামড়া ছিল আবরণহীন- পায়ের পাতার ওপর সাদা ফেবরিকের স্তূপ। চত্বরের চাতাল থেকে প্রতিফলিত আলো তার চামড়ার রঙের কাছে ম্রিয়মান ছিল।

এ ছাড়া আর সুন্দর কিছু আমি দেখলাম না- এমনকি আমি হাঁপাতে হাঁপাতে আর চিৎকার করতে করতে দৌড়াতে শুরু করেছিলাম। আমি এটার প্রশংসা করলাম। শেষ সাত মাসের তুলনায় এটা কিছুই না। এটাও কোন ব্যাপারই না যে সে আমাকে চায় না। যতদিন বাঁচব আমি তাকে ছাড়া কোনকিছু কখনও চাইব না।

ঘড়ির ঘণ্টা বাজল এবং সে আলোর দিকে বিশাল একটা পদক্ষেপ নিল।

 না! আমি চিৎকার করে উঠলাম। এ্যাডওয়ার্ড, আমার দিকে তাকাও!

সে শুনছিল না। সে ক্ষীণ হাসল। সে তার পা তুলল সরাসরি সূর্যের আলোর পথে পা ফেলার জন্য।

আমি প্রচণ্ড শক্তিতে তার গায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম যাতে করে মাটিতে পড়ে যেতে পারি এবং সেও আমাকে বাহু দিয়ে ধরতে না পারে আর আমাকে কামড়াতেও না পারে।

আবার ঘণ্টা বাজলে এ্যাডওয়ার্ডের কাল চোখ ধীরে ধীরে খুলে গেল। সে আমার দিকে পূর্ণ বিস্ময় নিয়ে তাকাল।

আশ্চর্য, সে বলল। ওর তীক্ষ্ম গলার আওয়াজ বিস্ময়, কিছুটা স্ফুর্তিতে ভরা কার্লিসলে ঠিকই বলেছিল।

এ্যাডওয়ার্ড, আমি দম বন্ধ করা কষ্ট নিয়ে বললাম, কিন্তু আমার গলায় কোন শব্দ হল না। তোমাকে ছায়ার দিকে ফিরে যেতে হবে। তোমাকে ঘুরতে হবে!

ওকে বেশ চিন্তিত মনে হল। ও আমার চিবুকে হাত বুলিয়ে দিল। সে বুঝতে পারল না যে আমি চেষ্টা করছি ওকে পেছনে পেছাতে।

এটা খুব আশ্চর্যের ছিল, যে আমাদের দুজনের কেউই জানতাম না যে আমরা প্রাণহানিকর বিপদের মধ্যে আছি। এমনকি সে সময়েও আমি ভালবোধ করলাম। পুরোপুরি। আমি খেয়াল করলাম আমার বুকের ভেতর হৃৎপিণ্ড ধুকপুক ধুকপুক করছে, রক্ত গরম হয়ে উঠছে এবং ধমনীর মধ্য দিয়ে তা দ্রুত গতিতে ছোটাছুটি করতে শুরু করেছে। আমি ঠিকই ছিলাম- অসুস্থ ছিলাম না।

আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না কত দ্রুত এটা ঘটে গেল। একটা বিষয় অনুধাবন করতে পারলাম না যে তারা ভাল ছিল। সে চিন্তিতভাবে বলল। আবার তার চোখ বন্ধ করল। তার ঠোঁট জোড়া আমার চুলের উপর চেপে ধরল। তার কণ্ঠস্বর মধুর এবং ভালভেটের মত মসৃণ। মৃত্যু, যেটা নিঃশ্বাসের মধুরতাকে শুষে নেয়। সৌন্দর্যের উপর তার কোন কতৃত্ব নেই। সে বিড়বিড় করে বলল। আমি বুঝতে পারলাম উদ্ধৃতিটি কবরখানার কাছে রোমিও থেকে নেয়া। ঘড়িটা তার শেষ ঘণ্টা বাজাল। তুমি সবসময়ই ঠিক একই রকম সুঘ্রাণ দাও। সে বলে চলল, হতে পারে এটাই নরক। আমি পরোয়া করি না। আমি এটাই নেব।

আমি মৃত নই। আমি বাধা দিলাম। এবং তুমিও নও। দয়া করো এ্যাডওয়ার্ড। আমাদের এখন যেতে হবে। তারা খুব দূরে যেতে পারে না।

আমি তার বাহুদ্বয়ের মধ্যে লড়তে থাকলাম। তার ভ্রু দ্বিধায় কুঁচকে গেল।

সেইটা কি? সে ভাবে জিজ্ঞেস করল।

আমরা মৃত নই। এখনও না! কিন্তু তোমাকে এখান থেকে বেরিয়ে যেতে হবে।

ব্যাপারটা হৃদয়ঙ্গম করে তার চোখ জোড়া লাফাতে লাগল, যখন আমি কথা বলছিলাম। আমি শেষ করার আগে, সে হঠাৎ আমাকে ছায়া থেকে সরিয়ে একবারে কিনারে নিয়ে গেল। আমাকে ঘোরাতে লাগল শক্তিহীনভাবে যাতে আমার পিছনটা ইটের দেয়ালের সাথে শক্তভাবে লেগে থাকে। তার পিছনটা আমার দিকে যাতে সে সেদিক থেকে আড়াল রাখে। তার বাহু প্রসারিত হয়ে আছে। প্রতিরক্ষামূলকভাবে আমার সামনে।

আমি তার বাহুর ভেতর থেকে উঁকি দিয়ে দেখতে লাগলাম দুটো অন্ধকার আকৃতি নিজেরা বিচ্ছিন্ন হয়ে আসছে অন্ধকার থেকে।

অভিনন্দন, ভদ্রমহোদয়েরা। এ্যাডওয়ার্ডের কণ্ঠস্বর শীতল এবং প্রশান্ত, ভাসা ভাসা। আমি মনে করি না, আমি আজ থেকেই তোমাদের সেবার দাবি করব। আমি এটাকে প্রশংসা করতে পারি। যাই হোক, তোমাদের প্রভুকে আমার ধন্যবাদ জানাতে পার।

আমরা কী কোন উপযুক্ত জায়গায় এ কথোপকথনের ব্যবস্থা করতে পারি না?

আমি মনে করি না তা এত জরুরি। এ্যাডওয়ার্ডের গলার আওয়াজ আরও দৃঢ় শোনাল। আমি তোমাদের আদেশ জানি, ফেলিক্স। আমি কোন নিয়ম ভঙ্গ করব না।

ফেলিক্স কেবল মাত্র যে জিনিসটা বোঝাতে চেয়েছে হল সূর্যরশ্মির কাছে যাওয়া। আরেকটা ছায়া কোমল গলায় বলল। তারা দুজনই ধোয়াটে ধূসর আলখাল্লা পরে ছিল যা মাটি পর্যন্ত লুটিয়ে ছিল। আমাদের আরও ভাল আড়াল খুঁজতে হবে।

আমি তোমাদের ঠিক পেছনেই থাকব, এ্যাডওয়ার্ড শুষ্ক গলায় বলল। বেলা, তুমি কেন চত্বরে ফিরে যাচ্ছ না, উৎসব উপভোগ রছ না?

না। মেয়েটাকেও আন, প্রথম ছায়াটা বলল।

আমি অন্তত তা মনে করি না। ছল করা সখ্যতা ভেঙে গেল। এ্যাডওয়ার্ডের স্বর ছিল শীতল। সে ভীষণ সূক্ষ্মভাবে তার কৌশল বুঝে নিল। আমি দেখতে পেলাম সে মারামারি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

না। আমি মুখ ফুটে বললাম।

 ইশশ, সে বিড়বিড় করে বলল, শুধু আমার জন্য।

ফেলিক্স, ছায়ার সাবধান করে দেয়াটা লক্ষ্য করার মত। এখানে নয়। সে এ্যাডওয়ার্ডের দিকে ফিরল। অ্যারো এমনিতেই তোমার সাথে আবার কথা বলবে, যদি তুমি আমাদের শক্তি খরচ করতে না চাও।

অবশ্যই। এ্যাডওয়ার্ড রাজী হল। কিন্তু মেয়েটিকে ধীনভূবে চলতে দিতে হবে।

আমি ভয় পাচ্ছি যে তা বোধহয় সম্ভব নয়, স্থির ছায়া খেদ ভরে বলল।

আমাদের আদেশ পালন করার নিয়ম।

তাহলে আমি ভয় পাচ্ছি যে আমি অ্যারোর দাওয়াত নিতে অপারগ, ডিমেট্রি।

ঠিক আছে তাহলে, ফেলিক্স গরগর করে উঠল। আমার চোখ গভীর ছায়ার দিকে স্থির হয়ে ছিল, আমি দেখতে পেলাম ফেলিক্স বিশালাকৃতির, লম্বা, কাঁধের দিকটা চওড়া। তার সাইজ অনেকটা এমেট এর মত।

অ্যারো খুব হতাশ হবে। এ্যাডওয়ার্ড উত্তর দিল।

ফেলিক্স আর ডিমেট্রি দুদিক থেকে গলির মুখে কাছাকাছি হল, মেঘের মত ধীরে ধীরে বিস্তৃত হল যেন দুদিক থেকে এ্যাডওয়ার্ডের দিকে নেমে আসতে পারে।

এ্যাডওয়ার্ড এক ইঞ্চিও নড়ল না। সে আমাকে বাঁচাতে নিজেকে মহাবিপদের দিকে। ঠেলে দিচ্ছিল।

আকস্মিকভাবে, এ্যাডওয়ার্ড ঝট করে মাথা ঘুরিয়ে চারপাশে তাকাল, গলির মুখে ঝড়ো বাতাসেপূর্ণ অন্ধকারের দিকে, এবং ডিমেট্রি ও ফেলিক্স তাই করল, এমন কোন শব্দের কিংবা নড়াচড়ার আশায় যা আমার ইন্দ্রিয় ক্ষমতার বাইরে।

আমাদের আরও সংযত হওয়া উচিত, তাই নয় কী? একটা পুলকিত কণ্ঠস্বর উপদেশ দিল। এখানে মহিলারা উপস্থিত আছেন।

এলিস লঘু পদক্ষেপে এ্যাডওয়ার্ডের পাশে এসে দাঁড়াল। তার অভিব্যক্তি স্বাভাবিক। দুশ্চিন্তার কোন চিহ্নমাত্র নেই। তাকে খুব ছোটখাট আর দুর্বল দেখাচ্ছিল। তার ছোট দুহাত বাচ্চাদের মত প্রসারিত।

ডিমেট্রি, আর ফেলিক্স সোজা হয়ে দাঁড়াল, গলির মুখ থেকে ভেসে আসা বাতাসের ঘূর্ণি তাদের আলখেল্লাকে মৃদু মৃদু আন্দোলিত করছিল। ফেলিক্সের মুখ কঠোর। স্বভাবতই তারা নতুন সংখ্যা বাড়া পছন্দ করেনি।

আমরা একা নই। এলিস তাদের মনে করিয়ে দিল।

ডিমেট্রি ওর কাঁধের ওপর দিয়ে ওপাশে তাকাল। চত্ত্বরে, একটি ছোট পরিবার, সাথে লাল পোশাক পরিহিত বাচ্চা, আমাদের দেখছে। মা-টি ব্যস্তভাবে বাবা-টিকে কিছু বলছিল, তার চোখ আমাদের পাঁচজনের দিকে। ডিমেট্রি যখন এক দৃষ্টিতে মহিলাটির দিকে তাকিয়েছিল তখন সে অন্যদিকে পালাল। লোকটি ভবনের দিকে কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে লাল ব্লেজার পরা লোকগুলোর একজনের কাঁধে মৃদু টোকা দিল।

ডিমেট্রি মাথা নাড়ল। প্লিজ, এ্যাডওয়ার্ড, বাস্তববাদী হও।

তাই হোক, এ্যাডওয়ার্ড রাজী হল। কোন ধরনের পণ্ডিতি ছাড়াই আমরা একেবারেই চলে যাব।

ডিমেট্রি হতাশায় হিসহিস করে উঠল। অন্তত আমাদের একসাথে নিরালায় ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা তো করতে দাও।

লাল পোশাক পরিহিত ছয়জন লোক পরিবারটার সাথে যোগ দিয়ে আমাদের দিকে রাগী ভঙ্গিতে তাকাতে লাগল। এ্যাডওয়ার্ড আমার সামনে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানে থাকায় ওকে নিয়ে আমার খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছিল নিশ্চিত এটা ওদের সতর্ক করে দেয়ার কারণে। আমি না দৌড়ানোর জন্য তাদের দিকে চিৎকার করতে চাচ্ছিলাম।

এ্যাডওয়ার্ডের দাঁত জোড়া শব্দ করে নিচে নেমে এল। না।

ফেলিক্স হাসল।

যথেষ্ট। শব্দটা ছিল অনেক জোরে, স্পষ্ট এবং সেটা আমাদের পেছন থেকে এল। একটি অন্ধকার আকৃতি আমাদের দিকে আসতে দেখে আমি এ্যাডওয়ার্ডের বাহু চেপে ধরলাম। যাই হোক যা ঘটে চলেছে, আমি জানতাম এটা অন্য কেউ। কে সে?

প্রথমে আমি ভেবেছিলাম এটি কোন অল্প বয়স্ক ছেলে। নতুন আগন্তুক হুবুহু এলিসের মতই হালকা পাতলা, অবসন্ন, উস্কখুস্ক বাদামী চুল তেমন পরিপাটি না। আলখেল্লার নিচের শরীর ছিল আরও অন্ধকার, একেবারে কালো- শুকনা। কিন্তু তার মুখ ছিল বাচ্চাদের মত সুন্দর। ডাগর চোখ, হাস্যোজ্জ্বল মুখ যেন একটা দেবদূত।

মেয়েটার উচ্চতা তেমন লক্ষ্যণীয় নয়, যে কারণে তার প্রতিক্রিয়া আমাকে দ্বিধায় ফেলে দিল।

এ্যাডওয়ার্ড তার দুহাত দুপাশে এলিয়ে দিল- যেন পরাজিত।

জেইন, সে চিনতে পেরে হাল ছেড়ে দিয়ে হিসহিস করে বলল।

এলিস বুকের ওপর দুহাত ভাঁজ করে দাঁড়াল, ওর প্রতিক্রিয়া ধরা যাচ্ছে না।

আমাকে অনুসরণ কর, জেইন আবার বলল, ওর বাচ্চাদের মত গলা অপূর্ব শোনাল। সে ঘুরে দাঁড়াল এবং ধীরে ধীরে অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল।

ফেলিক্স আমাদের আগে যেতে বলল।

এলিস জেইনের একটু পেছন চলল। এ্যাডওয়ার্ড একহাতে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে ওর পাশে পাশে আমাকে নিয়ে চলল। গলিপথটা সঙ্কীর্ণ হয়ে নিচের দিকে নেমে গেল। আমি ওর দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টি নিয়ে তাকালে ও কেবল মাথা নাড়ল। আমার পেছনে যারা আছে তাদের কথা শুনতে না পেলেও, আমি নিশ্চিত যে তারা ওখানেই ছিল।

তো এলিস, এ্যাডওয়ার্ড হাঁটতে হাঁটতে আলাপনের মত বলল। আমি ভাবছি তোমাকে এখানে দেখে আমার অবাক হওয়া উচিত হবে না।

এটা আমারই ভুল, এলিস একই রকম স্বরে বলল। আমার কাজ ছিল সব ঠিকঠাক রাখা।

কী ঘটেছে এমন? এ্যাডওয়ার্ডের গলা শান্ত, যদিও সে কৌতূহলে ছটফট করছিল। আমি ভাবছিলাম পেছন থেকে কেউ শুনে ফেলছে কিনা।

এটা অনেক লম্বা গল্প। এলিস আমাদের এবং পথের দিকে তাকিয়ে কেপে উঠল। অল্প কথায়, সে খাড়া পাহাড়ের চূড়া থেকে লাফিয়ে পড়েছিল, কিন্তু নিজেকে হত্যা করার জন্য নয়। বেলাই আজকের এই অনবদ্য খেলার মূল।

আমি বিস্ফোরিত চোখে সোজা সামনের দিকে তাকালাম, এমন অন্ধকার ছায়া আমি আগে কখনও দেখিনি। আমি বুঝতে পারলাম সে কীভাবে এলিসের চিন্তা ভাবনা পড়তে পারত। ডুবে যাওয়া, নেকড়েমানব বন্ধুরা…

হুম, এ্যাডওয়ার্ড সংক্ষিপ্তভাবে বলল, ওর স্বাভাবিক গলার স্বর চলে গেছে। নিচের দিকে নামতে থাকলেও গলিপথে সামান্য বক্রতা ছিল, যে কারণে আমি এর শেষ দেখতে পাচ্ছিলাম না। আমরা একবারে নিচে পৌঁছে গেলাম, জানালাহীন, ইটের গাথুনী। কনিষ্ঠতম জেইনকে এখন দেখা যাচ্ছে।

এলিস কোনরকমের দ্বিধা করল না, কোন রকমের বাক ভাঙা ছাড়াই দেয়ালের সামনে দাঁড়াল। তারপর সহজ ভঙিতে নিচু হয়ে রাস্তার একটি খোলা গর্তের মধ্যে প্রবেশ করল।

এটি দেখতে খানিকটা ড্রেনের মত, শেষ প্রান্তটা চাতালে। এলিস ওটার মধ্যে হারিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমি বুঝতে পারিনি, কিন্তু ঘর্ষণের শব্দ শুনে মনে হল ওটা অর্ধেকটা পথ বেকে গেছে। গর্তটা ছিল ছোট এবং অন্ধকার।

আমি বিড়ম্বনায় পড়ে গেলাম।

সব ঠিক আছে, বেলা, নিচু স্বরে এ্যাডওয়ার্ড বলল। এলিস তোমাকে লুফে নেবে।

আমি দ্বিধা নিয়ে গর্তের মধ্য দিয়ে তাকালাম। ধারণা করছি সেও প্রথমবারের মত যাচ্ছে, যদি ডিমেট্রি আর ফেলিক্স অপেক্ষা করে না থাকে, আমাদের পেছনে নীরবে এবং চুপিসারে।

আমি সঙ্কীর্ণ গর্ত দিয়ে এক পা রাখলাম।

এলিস? আমি ফিসফিসিয়ে বললাম, আমার কণ্ঠ কেপে গেল।

আমি এখানে, বেলা, সে আমাকে আশ্বস্ত করল। আমাকে আরও ভাল অনুভূত করতে ওর গলাটা যেন দূর থেকে ভেসে আসছিল। এ্যাডওয়ার্ড আমার কব্জি ধরল- ওর হাত মনে হচ্ছিল যেন শীতের পাথর- যা আমাকে আরও নিচে অন্ধকারে নামাল।

প্রস্তুত? সে বলল।

ওকে ফেলে দাও। এলিস বলল।

আমি চোখ বন্ধ করলাম যাতে করে আমার চোখ অন্ধকার দেখতে না পায়, ভয়ে চোখ বন্ধ অবস্থাতেই দাঁত মুখ চেপে রাখলাম যাতে করে কোন চিৎকার দিতে না পারি। এ্যাডওয়ার্ড আমাকে ফেলে দিল।

এটি ঘটে গেল মুহূর্তে এবং নীরবে। এক সেকেণ্ডের অর্ধেকেরও কম সময়ের ধরে বাতাস চাবুক মারল যেন, এবং তারপর, আকস্মিকভাবে দমবন্ধ করা অবস্থায় এলিসের অপেক্ষমান হাত আমাকে ধরে ফেলল।

আমি আরেকটু হলে ভর্তা হয়ে যাচ্ছিলাম; ওর হাত ছিল খুব শক্ত, সে আমাকে উপরে তুলে রাখল।

সেখানটা ছিল প্রায় অন্ধকার, কিন্তু উপরের দিক অতটা কাল নয়। গর্ত থেকে ক্ষীণ আলোর আভাস ভেসে এসে আমার পায়ের নিচের আর্দ্র পাথরগুলো প্রতিফলিত হয়ে আলোকিত করে তুলছিল। এক সেকেন্ডের জন্য সে আলো গায়েব হয়ে গেল এবং তখন এ্যাডওয়ার্ডই ছিল আলোর আভাসে ভরা, আমার পাশে থাকা উজ্জ্বল দীপ্তি। সে আমাকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে পাশে ধরে রাখল। এক পা করে এক পা করে আমাকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে লাগল। আমি দুহাতে ওর ঠাণ্ডা কোমর জড়িয়ে ছিলাম। পাথুরে তলায়। থমকে থমকে হোঁচট খেতে খেতে পথ চলতে লাগলাম। আমাদের পেছনে ড্রেনের গর্ত থেকে ভেসে আসা ভীষণ একটা ঘর্ষণের শব্দ হতে থাকল যেন অনন্ত যান্ত্রিক কোন কিছু।

রাস্তা থেকে ভেসে আসা ক্ষীণ আলো মুহূর্তে গুমোট অন্ধকার হয়ে গেল। ফাঁকা জায়গায় আমার পায়ের চলার শব্দও যেন প্রতিধ্বনিত হতে লাগল; ভীষণ বিস্তৃত শব্দ শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু আমি নিশ্চিত ছিলাম না। আমার বুকের ধুক ধুক শব্দ এবং পায়ের নিচে পাথরের শব্দ ছাড়া আমি আর কোন শব্দ শুনতে পেলাম না– একটু ব্যতিক্রম এই যে, কেউ আমার পেছনে অধৈর্যভাবে হিস করে ফিসফিসিয়ে উঠল।

এ্যাডওয়ার্ড আমাকে শক্ত করে ধরে রাখল। অন্যহাতে সে আমার মুখও ধরে রাখল, ওর নরম আঙুল আমার ঠোঁটের ওপর। কখন যেন আমি অনুভব করলাম ওর মুখ আমার চুলের ভেতর ঢুকে যেতে চাচ্ছে। আমি বুঝতে পারলাম এটা আমাদের নতুনভাবে এক হওয়া, আমি নিজ থেকে ওর আরও কাছে ঘেষলাম।

ঠিক তখন, আমি বুঝতে পারলাম ও আমাকে চাচ্ছিল, শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত ভৌতিক টানেল এবং ওত পেতে থাকা ভ্যাম্পায়ারের তুলনায় সেটা যথেষ্টই ছিল। মূলত সেটা পাপ ছাড়া আর কিছু নয়- একই পাপ তাকেও ধাবিত করেছে এখানে এসে মরার জন্য, যখন সে বিশ্বাস করল আমার মরতে চাওয়াটা ওর ভুলের কারণেই। আমার কপালে আস্তে করে ওর ঠোঁটের ছোঁয়া পেলাম, এবং আমি আচরণের গতি প্রকৃতি সম্পর্কে কোন পাত্তা দিলাম না। শেষ পর্যন্ত মরার আগে আমি ওর কাছে থাকলাম। দীর্ঘায়ু হওয়ার চাইতে এটা অনেক ভাল।

আমি ঠিক করলাম ওকে জিজ্ঞেস করব আসলে এখন কী ঘটতে যাচ্ছে? আমি একাগ্রতার সাথে জানতে চাইব আমরা কোথায় মরতে যাচ্ছি যেন আগে থেকে জেনে রাখলে ব্যাপারটা আরও সহজ হবে। কিন্তু আমি বলতে পারলাম না। এমনকি ফিসফিস করেও না। আমরা যেখানে আছি সেখানে অন্যরাও আমার সবকিছু শুনে ফেলতে পারে, প্রত্যেকটা নিঃশ্বাস, প্রত্যেকটা হৃৎস্পন্দন।

আমাদের পায়ের নিচে চূড়াময় পথ আমাদের আরও নিচের দিকে, আরও গভীরে মাটির দিকে নিয়ে যেতে লাগল, যা আমাকে ক্রমে ভয় ধরিয়ে দিচ্ছিল। আমার মুখের ওপর থাকা এ্যাডওয়ার্ডের হাত আমাকে জোরে চিৎকার করা থেকে বিরত রাখছিল।

আমি বলতে পারব না কোত্থেকে আলো আসছিল কিন্তু কালোর বদলে ধীরে ধীরে সেখানটা ধূসর হচ্ছিল। আমরা ছিলাম নিচু খিলানওয়ালা টানেলে। লম্বা পরিত্যক্ত আবলুস কাঠের আঠা ধূসর পাথরে গড়িয়ে পড়ছিল যেন সেগুলো কালিপাত করছিল।

আমার গায়ে কাটা দিয়ে উঠল, আমি ভাবলাম ভয়ে। কিন্তু দাঁতে দাঁত কপাটি লাগতেই বুঝতে পারলাম এখানে ভীষণ ঠাণ্ডা। আমার কাপড় এখনও ভেজা এবং এখানের তাপমাত্রা শহরের শীতের তুলনায় আরও নিচে। এ্যাডওয়ার্ডের চামড়াও ছিল তেমন ঠাণ্ডা।

সে বুঝতে পেরে আমাকে আলগা করে চলতে দিল, কেবল মাত্র হাত ধরে রাখল ও।

না না…না, আমি ওকে আমার হাত দিয়ে জাপটে ধরে চি চি করে বললাম। আমি জমে বরফ হয়ে যাওয়াকেও পরোয়া করি না। কে জানে, আমাদের কতদিন ছেড়ে থাকতে হবে?

ওর ঠাণ্ডা হাত আমার বাহুতে ঘষতে লাগল, চেষ্টা করছিল ঘর্ষণের মাধ্যমে আমাকে উত্তেজিত করার।

আমরা ব্যস্তভাবে টানেলে পথ চলছিলাম, অথবা আমারই মনে হচ্ছিল আমরা তড়িঘড়ি করছি। আমার ধীরে চলা কাউকে বিরক্ত করছিল। ধারণা করলাম ফেলিক্স এবং আমি ঘন ঘন হিস হিসানি শুনতে পেলাম।

টানেলের শেষ প্রান্তে মচমচ করে শব্দ হচ্ছিল- আমার হাতের মত পুরু লোহা গুলোয় মরচে ধরা। পাতলা ঘন লৌহজালে তৈরি ছোট একটি দরজা তখন খোলা। এ্যাডওয়ার্ড তড়িঘড়ি করে তার ভেতর দিয়ে একটি উজ্জ্বলতর ঘরে ঢুকে গেল। গ্রিলটা তখন ঝনাৎ ঝন শব্দ করে বন্ধ হয়ে তালা আটকে গেল। আমার পেছনে তাকাতেও ভয় হচ্ছিল।

লম্বা রুমটার আরেক পাশে নিচু ও ভারী কাঠের দরজা। ওটা খুব পুরু ছিল- আমি তা বুঝতে পারলাম কারণ দরজাটাও ছিল খোেলা।

আমরা পায়ে পায়ে দরজার দিকে এগোলাম এবং আমি বিস্ময়ে চারপাশে তাকাতে থাকলাম আর আপনা আপনিই শান্ত হয়ে আসছিলাম। আমার পাশে এ্যাডওয়ার্ড খুব চিন্তায় পড়ে গেল, ওর চোয়াল শক্ত হয়ে গেল।

.

২১.

আমরা ছিলাম উজ্জ্বল আলোয়, অচেনা হলওয়েতে। দেয়ালগুলো অফ-হোয়াইট, মেঝের কার্পেট ছিল মেটে ধূসর রঙের। সাধারণ চারকোণা ফ্লুরোসেন্ট লাইট সেখানের সিলিং-এ। এই জায়গাটা অনেক উষ্ণ, যে জন্য আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। একঘেয়ে পাথুরে জায়গার তুলনায় এই হলটি অনেক আরামদায়ক।

আমরা যা নির্ধারণ করলাম তার সাথে এ্যাডওয়ার্ডকে একমত হতে দেখলাম না। সে অন্ধকার মুখে উত্তেজিতভাবে লম্বা হলওয়ে ধরে নিচে নামল। শবাচ্ছদের মত দেখতে একটি এলিভেটরের ওখানে দাঁড়িয়ে রইল।

সে আমাকে জড়িয়ে রাখল এবং এলিস আমার আরেক পাশে হাঁটতে লাগল। আমাদের পেছনে ভারী দরজা ধুম করে বন্ধ হয়ে গেল। আর বজ্রপাতের মত গুড়গুড় আওয়াজ রুমে ছড়িয়ে পড়ল।

জেইন একহাত দিয়ে এলিভেটরের দরজা ধরে রেখে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। ওর অভিব্যক্তি ছিল উদাসীন।

এলিভেটরের ভেতরে, ভলচুরির সেই তিন ভ্যাম্পায়ার খুব স্বস্তির সাথে ছিল। তারা তাদের আলখাল্লা পিছন দিকে সরিয়ে দিল। মাথার উপরের হুড কাঁধের উপর ফেলে দিল। ফেলিক্স এবং দিমিত্রি প্রায় একইরকম রঙের। আচ্ছাদনের নিচে তাদের পোশক ছিল আধুনিক, নিষ্প্রভ এবং অবর্ণণীয়। আমি এক কোণায় ভয়ে অবনত মুখে এ্যাডওয়ার্ডকে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ওর হাত তখনও শক্ত করে আমার বাহুতে ধরা। সে জেইন এর ওপর থেকে চোখ সরাল না।

এলিভেটর অল্প একটুই উপরে উঠল। আমরা এমন জায়গায় নামলাম যা দেখতে ছিল অনেকটা অফিস এলাকার মত। দেয়ালগুলো ছিল সমতল কাঠের, মেঝেতে পুরু কার্পেট দেয়া, ঘন সবুজ রঙের। জায়গাটা বড় ছিল কিন্তু কোন জানালা ছিল না। তাসকান গ্রামের উজ্জ্বল আলোকিত চিত্রকর্ম দেয়ালের বিভিন্ন জায়গায় ঝুলেছিল যেন নতুন বসানো হয়েছে। মলিন চামড়ার গদি ঘন সারিবদ্ধভাবে সাজানো ছিল, এবং একটি চকচকে টেবিলে ক্রিস্টাল ফুলদানীতে বেগুনি রঙের ফুলে ভরা। ফুলগুলোর গন্ধ আমাকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ঘরের কথা মনে করিয়ে দিল।

রুমের মধ্যখানে একটি উঁচু পলিশ করা মেহগনির কাউন্টার। আমি বিস্ময়ের সথে খেয়াল করলাম ওটার পিছনের মহিলাকে।

সে ছিল লম্বা, কালো চামড়ার এবং সবুজ চোখের। সে অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য সুন্দর হতে পারে কিন্তু এখানে নয়। কারণ সে ছিল আমার মতই পরিপূর্ণ মানুষ। আমার ধারণা কল্পনায়ও আসছিল না এই মহিলাটি এখানে এই নির্জনে, এত ভ্যাম্পায়ারের মধ্যে কী করছে?

সে ভাবে স্বাগতম জানানো ভঙিতে হাসল। শুভ সন্ধ্যা, জেইন, সে বলল। তার মুখে কোন চমৎকৃত হওয়ার কোন লক্ষণ দেখা গেল না। সে জেইনের দিকে তাকাল।

জেইন উপর নিচ মাথা নাড়ল। গিয়ানা, রুমের অন্ধকারে সে দুই পাল্লার একটি দরজার দিকে এগিয়ে গেল এবং আমরা তাকে অনুসরণ করলাম।

ফেলিক্স যখন ডেস্কের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল তখন সে গিয়ানার দিকে মুখ ভেঙচাল। এবং সে খিলখিল করে হেসে উঠল।

কাঠের দরজার অপর পাশে আরেকটা অভ্যর্থনা পেলাম। ধূসর রুপালি রঙের স্যুট পরা নিষ্প্রভ চেহারার একটি ছেলে, হতে পারে সে জেইনের জমজ। ওর চুলগুলো আরও কাল আর ঠোঁট ওর হুবুহ সে রকম নয়, কিন্তু আসলেই সে চমৎকার। সে আমাদের দিকে এগিয়ে এল। জেইনের কাছে গিয়ে হাসল। জেইন।

এলেক, সে প্রত্যুত্তরে স্বাগত জানিয়ে ছেলেটিকে বলল। তারা দুজন দুজনের চিবুকের দুপাশে চুমু খেল। তারপর সে আমাদের দিকে তাকাল।

তারা তোমাকে একজনকে আনতে পাঠিয়েছিল, আর তুমি এলে দুজনকে নিয়ে… এবং সাথে একটা অর্ধেকও, সে আমার দিকে তাকিয়ে বলল। ভাল কাজ।

জেইন হেসে উঠল- ওর আনন্দপূর্ণ আওয়াজ বাচ্চাদের খিলখিল হাসির মতই শোনা গেল।

আবার ফিরে আসার জন্য ধন্যবাদ, এ্যাডওয়ার্ড, এলেক ওকে স্বাগত জানাল। তোমাকে বেশ ভাল মুড়ে মনে হচ্ছে।

খানিকটা, এ্যাডওয়ার্ড চাপা গলায় বলল। আমি এ্যাডওয়ার্ডের দিকে এক পলক তাকালাম, এবং বিস্মিত হলাম, এই ভেবে যে কীভাবে ওর মুড আগের চাইতে এরকম খারাপ হয়ে গেল।

এলেক চুক চুক টাইপের শব্দ করল। এ্যাডওয়ার্ড আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে থাকা পরখ করল। এবং এটাই তাহলে সকল সমস্যার মূল? সে জিজ্ঞেস করল।

এ্যাডওয়ার্ড শুধু হাসল। ওর অভিব্যক্তি ছিল নিরুত্তাপ। যেন সে বরফ শীতল কিছু।

 দিবস, ফেলিক্স পেছন থেকে সন্তপনে বলল।

এ্যাডওয়ার্ড ফুসফুসের সমস্ত শক্তি দিয়ে দাঁত মুখ খিচে ঘুরে তাকাল, ফেলিক্স হাসল- ওর হাত উঠানো ছিল, তালু ওল্টানো; সে এ্যাডওয়ার্ডকে সামনের দিকে আসার জন্য দুবার আঙুল বাকিয়ে নাড়াল।

এলিস এ্যাডওয়ার্ডের বাহু স্পর্শ করল। ধৈর্য ধর, সে সাবধান করল ওকে।

তাদের দীর্ঘ দৃষ্টি বিনিময় দেখে আমিও কিছুটা আন্দাজ করতে পারলাম যে সে কী বলছে। আমি মোটামুটি ধরে নিলাম যে সে ফেলিক্সকে আক্রমণ না করা টাইপের এমন। কিছু বলল, কারণ এ্যাডওয়ার্ড গভীর শ্বাস নিল আর এলেক এর দিকে ফিরে এল।

অ্যারো তোমাকে আবার দেখে খুব খুশি হবে। এলেক বলল, যেন কিছুই ঘটেনি।

তাকে অপেক্ষায় রাখা আমাদের উচিত হবে না। জেইন পরামর্শ দিল।

 এ্যাডওয়ার্ড একবার উপর নিচ মাথা দোলাল।

এলেক আর জেইন হাত ধরাধরি করে সে পথ ছেড়ে আরেকটা বিস্তৃত হলের দিকে চলল- এ পথের কী কখনও শেষ হবে না?

তারা হলের শেষ প্রান্তের একটি দরজা এড়িয়ে চলল দরজাটি সোনা দিয়ে মোড়ানো হলের মধ্য পথে তারা দাঁড়াল এবং পাশের ছোট্ট একটুকু প্যানেলে ছিল সমতল একটি কাঠের দরজা। এটি বন্ধ ছিল না। এলেক এটি জেইনের জন্য খুলে রেখেছিল।

আমি গুঙ্গিয়ে উঠলাম যখন এ্যাডওয়ার্ড আমাকে দরজার আরেক পাশ দিয়ে ঠেলে দিল। এখানেও চত্ত্বর, বাগানের গলি, নর্দমার পাড়ের মত একই প্রাচীন পাথর। এটি কালো আর ঠাণ্ডা।

পাথরের বিপরীত জায়গাও তেমন বিশাল নয়। দ্রুত আবিষ্কার করলাম এটি উজ্জ্বলতর, গুহার মত বিশালাকার রুম যা প্রকৃতপক্ষে এতই গোল যেন একটি বিশাল দূর্গে গম্বুজ… সেটি যেমন তা আসলেই উপযোগী। দুই সিঁড়ি উপরে লম্বা জানালার গরাদের ফাঁক দিয়ে সূর্যের উজ্জ্বল আলো চারকোণা হয়ে পাথরের মেঝেতে প্রতিফলিত হচ্ছিল। সেখানে কোন কৃত্রিম আলো ছিল না। সে রুমের একমাত্র আসবাব যেটি ছিল তা হল একটি পুরানো কাঠের চেয়ার। যেন কন্টকময়, খালি জায়গা খুব কমই ছিল, দেয়ালের উঁচু নিচু পাথরের মতই আলো প্রতিফলিত করছিল। গোলাকার জায়গাটির ঠিক মধ্যখানে আরেকটা ড্রেইন নিচের দিকে হালকা দেবে আছে। আমি ভাবলাম তার আবার এটিকে এক্সিট হিসেবে ব্যবহার করে কিনা, যেমন তারা রাস্তার মাঝখানে ব্যবহার করেছিল।

রুমটা খালি ছিল না। জনাকয়েক লোক সেখানে আয়েশি ভঙ্গিতে আলাপচারিতায় মগ্ন। ফিসফিসানি ছিল অল্প এবং কোমল দ্র গলা শোনা যাচ্ছিল। যখন আমি দেখলাম এক জোড়া মহিলা গ্রীষ্মের পোশাক পরিহিত অবস্থায় আলোর ধারে দাঁড়াল, তখন মনে হচ্ছিল যেন তারা স্ফটিক খণ্ড, তাদের চামড়া রঙধনুর মত দেয়ালে আলো বিকিরিত করছিল।

যখন আমরা রুমে প্রবেশ করলাম সবগুলো মুখ আমাদের দিকে ঘুরে গেল। প্রায় সবগুলো অমরেরা একই রকম প্যান্ট ও শার্ট পরে ছিল। যেগুলো রাস্তায় তাদের ক্ষেত্রে। দেখা যেত না। কিন্তু যে মানুষটা প্রথমে কথা বলেছিল সে একটা লম্বা কালো আলখাল্লা পরেছিল। এটা আলকাতরা কালো এবং মেঝে ঝাড়ু দিয়ে নিয়ে চলছিল। এক মুহূর্তের জন্য, আমি তার লম্বা কালো চুলগুলোকে আলখাল্লার হুড ভেবে বসেছিলাম।

জেইন, প্রিয় জেইন তুমি ফিরে এসেছ। সে ওই উজ্জ্বল আলোতে চেঁচিয়ে উঠল। তার কণ্ঠস্বর শুধুমাত্র নরম একধরনের ফিসফিসানি।

সে এগিয়ে এলো এবং সেই নড়াচড়া এতটাই সুরিয়ারিলাস্টিক যে অভিভূত হয়ে গেলাম। আমার মুখ হা হয়ে গেল। এমনকি এলিস, যার প্রতিটি নড়াচড়াকে মনে হয় নাচের মুদ্রা, তার সাথেও তুলনা হলো না।

আমি তখনই শুধু বেশি বিস্মিত হলাম যখন সে যেন ভেসে ভেসে কাছে এল এবং আমি তার মুখ দেখতে পেলাম। এটা সাধারণভাবে খুব আকর্ষণীয় কোন মুখ নয়। সেজন্য সে আমাদের একাকী দেখাল না। সমস্ত দল তার চারিদিকে। কিছু তাকে অনুসরণ করছে। কিছু তার দেহরক্ষীদের মত সামনে আগে আগে এগিয়ে চলেছে। আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারলাম না যে তার মুখ সুন্দর অথবা না। আমি মনে করলাম এটাই তার প্রকৃত বৈশিষ্ট্য। কিন্তু সে তার আশেপাশের ভ্যাম্পায়ার থেকে এতটাই ভিন্ন যে যেগুলো আমার জন্য এসেছে। তার চামড়া স্বচ্ছভাবে সাদা, যেন রসুনের খোসা। এটাকে যেন কিছুটা সুস্বাদু দেখাতে থাকে। এটা লম্বা গাঢ়; কালো চুলের বিপরীতে উজ্জ্বল দেখাচ্ছিল, যেটা তার মুখকে ফ্রেমের ভেতর নিয়েছিল। আমি একটা অদ্ভুত ভয়াবহ অনুভূতি অনভুব করছিলাম তার চিবুক স্পর্শ করে। সেটা দেখতে এ্যাডওয়ার্ড অথবা এলিসের ত্বক থেকে নরম কিনা। অথবা এটা চকের মত পাউডার সমৃদ্ধ কিনা। তার চোখ লাল, তার আশেপাশে যারা আছে তাদের মতই। কিন্তু সেটার পাশে কিছুটা মেঘাচ্ছন্ন দুধ সাদা। আমি বিস্মিত হবো যদি তার দৃষ্টি দিয়ে সে কাউকে সম্মোহন করে।

সে জেনের দিকে সরে গেল। জেনের হাত তার কাগজের মত হাতে নিল। তার ঠোঁটে হালকাভাবে চুমু খেল। এবং তারপর আবার যেন ভেসে পিছিয়ে গেল।

হ্যাঁ, প্রভু। জেইন হাসল। সেই হাসির অভিব্যক্তিতে তাকে একজন স্বর্গীয় দেবশিশুর মত লাগছিল। আমি তাকে জীবত অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে এসেছি। যেভাবে আপনি আশা করেছিলেন।

আহ জেন। সেও হাসল। তুমি আমার জন্য সবসময়ই স্বস্তিকর একজন।

সে তার রহস্যময় চোখ আমাদের দিকে ঘুরাল। হাসিটা আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠল।

এবং এলিস এবং বেলাও! সে আনন্দিত স্বরে বলল। সে তার পাতলা হাত দিয়ে হাততালি দিল। এটা একটা সুখী সারপ্রাইজ! বিস্ময়কর!

সে যখন স্বাভাবিক সাধারণভাবে আমাদের নাম বলল আমি একটা শক খেলাম। সে এমনভাবে বলল যেন আমরা তার পুরোনা বন্ধু তার সাথে অপ্রত্যাশিত দর্শন দিতে এসেছি।

সে আমাদের গোটা দলের দিকে ঘুরল ফেলিক্স, প্রিয় একজন হও এবং আমাদের ভাইদেরকে আমাদের কোম্পানি সম্পর্কে বলো। আমি নিশ্চিত তারা সেগুলো মিস করতে চায় না।

হ্যাঁ, প্রভু। ফেলিক্স মাথা নোয়াল। আমরা যেদিক দিয়ে এসেছিলাম সেদিকে অদৃশ্য হয়ে গেল।।

তুমি দেখেছো, এ্যাডওয়ার্ড? সেই অদ্ভুত ভ্যাম্পায়ার ঘুরে দাঁড়াল এবং এ্যাডওয়ার্ডের দিকে এমনভাবে ভাসল যেন সে তার প্রিয় কিন্তু একটু আদূরে বকুনি দেয়া দাদু। আমি তোমাকে কি বলেছিলাম? তুমি কি সুখী নও যে আমি তোমাকে দেই নাই তুমি গত দিন যেটা চেয়েছিলে?

হ্যাঁ এ্যারো, আমি তাই। সে একমত হলো। আমার কোমরে তার হাতের বন্ধনী আরো শক্ত করল।

আমি একটা সুখী শেষ দেখতে চাই। এ্যারো শ্বাস নিল। সেগুলো এতটাই দুপ্রাপ্য। কিন্তু আমি গোটা গল্প জানতে চাই। এটা কীভাবে হলো? এলিস? সে এলিসের দিকে তার কৌতূহলের সাথে তার কুয়াশাছন্ন চোখে দৃষ্টি নিবদ্ধ করল। তোমার ভাইকে দেখে মনে হয় সে যেন তোমাকে ইনফ্যালিয়েবল ভাবছে কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে সেখানে কিছুটা ভুল আছে।

ওহ, আমি সেটা থেকে অনেক দূরে। এলিস হাসি দিয়ে দিল। তাকে প্রকৃতপক্ষেই বেশ সহজ দেখাচ্ছিল। শুধু তার হাতগুলো একটু দৃঢ় হয়ে মুষ্টিবদ্ধ হয়েছিল। আপনি আজ যেমনটি দেখছেন, আমি সবসময় সমস্যার সৃষ্টি করে সেগুলোর সমাধান করি।

তুমি অনেক বেশি বিনয়ী। এ্যারো আনন্দিত স্বরে বলল, আমি তোমার বেশ কয়েকটি আশ্চর্যজনক কাজ দেখেছি। আমি সেটা স্বীকার করি। আমি কখনও তোমার মত এত প্রতিভা লক্ষ্য করি নাই। আশ্চর্যজনক!

এলিস চোখের পলকে এক পলক এ্যাডওয়ার্ডের দিকে তাকাল। এ্যারো এটা মিস করল না।

আমি দুঃখিত। আমরা এখনও নিজেরা পুরোপুরি আলাপিত হয় নাই। হয়েছি কি? এটা শুধু এমনটি যে আমার মনে হচ্ছে আমি এর মধ্যে তোমাকে চিনি এবং আমি সেটা ধরেই এগিয়েছি। তোমার ভাই আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল গতকাল একটা অদ্ভুত পদ্ধতিতে। তুমি দেখেছো, আমি তোমার ভাইয়ের প্রতিভার কিছুটা ভাগ নিয়েছি। শুধুমাত্র আমি এই দিক দিয়ে সীমাবদ্ধ যে সে সেটা নয়। এ্যারো তার মাথা নাড়ল। তার কন্টস্বর ঈর্ষান্বিত।

এবং প্রাণশক্তিতে অনেক বেশি ভরপুরও। এ্যাডওয়ার্ড শান্ত স্বরে যোগ করল। সে এলিসের দিকে তাকাল যখন সে দ্রুতগতিতে ব্যাখ্যা করছিল এ্যারোর শারীরিক যোগাযোগের প্রয়োজন তোমার চিন্তাভাবনা ধরার জন্য কিন্তু সে আমার চেয়ে অনেক বেশি শুনতে পায়। তুমি জানো আমি শুধু শুনতে পাই সেই চিন্তাভাবনা যেটা তোমার মাথা থেকে এই মুহূর্তে চলে গেছে। এ্যারো তোমার মনে যত চিন্তা আছে সবকিছুই শুনতে পায়।

এলিস তার সুন্দর ভ্রু তুলল। এ্যাডওয়ার্ড তার মাথা নিচু করল।

 এলেকেরা দুজনের এই অভিব্যক্তিও মিস করল না।

কিন্তু একটা দূরত্ব থেকে সেটা শুনতে পাওয়ার মত… এ্যারো শ্বাস নিল। তাদের দুজনের দিকে কিছু একটা ভাবছে এবং সেই ভাবনাটা জায়গায় রুপ নিল। সেটা অনেক বেশি সহজসাধ্য হবে।

আরো আমাদের কাঁধের উপর দিয়ে তাকাল। বাকি সমস্ত মাথাগুলো সেই দিক অনুসরণ করল,। এমনকি জেন এলেক এবং দিমিত্রিও। যারা আমাদের পাশে নিরবে দাঁড়িয়ে ছিল।

ঘোরাঘুরি দিক থেকে আমিই সবচেয়ে ধীরগতির। ফেলিক্স ফিরে এসেছে। তার পেছনে আরো দুজন কালো আলখাল্লা পরা ভাসতে ভাসতে এসেছে। তারা দুজনেই দেখতে খুববেশি এ্যারোর মত। একজনের এমনকি একইরকম পিছনের বড় বড় চুল। আরেকজনের বরফ সাদা চুল। একইরকম ছায়া তাদের মুখে। সেই চুলগুলো কাঁধের উপর। তাদের মুখগুলো একইরকম। কাগজের মত পাতলা চামড়ার।

কার্লের পেইন্টিংয়ের সেই ত্রিরত্ব যেন পরিপূর্ণ হয়েছে। বিগত তিনশত বছরের ভেতরে যেটা অংকিত হয়েছে।

মার্কাস, কেইয়াস, দেখ! এ্যারো বলল, বেলা এত সবের পরেও বেঁচে আছে। এবং এলিস এখানে তার সাথে। এটা কি আশ্চর্যজনক কিছু নয়?

বাকি দুজনকে দেখে মনে হলো না যে আশ্চর্যজনক শব্দটাই তাদের প্রথম পছন্দ। কিনা। কালোচুলের লোকটাকে দেখে মনে হলো কিছুটা বিরক্ত, যেন সে অনেক বেশি কিছু দেখে ফেলেছে শতাব্দি ধরে। অন্যজনের মুখ তার তুষারশুভ্র চুলের নিচে বেশ তিক্তই। মনে হলো।

তাদের এই যে আগ্রহের ঘাটতি এটাতেও এ্যারোকে কোনভাবে আনন্দের কোন ঘাটতি হলো না।

এখন আমরা সেই গল্পটা শুনি। এ্যারো যেন তার হালকা কণ্ঠ সুর করে বলল।

সেই সাদা চুলের প্রাচীন ভ্যাম্পায়ারটা পিছিয়ে গেল, সরে সরে গেল সেই কাঠের ভেতরের দিকে। অন্যজন এ্যারোর পাশে এসে থেমে গেল। সে তার হাত বাড়িয়ে দিল। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম সে এ্যারোর হাত ধরতে যাচ্ছে। কিন্তু সে খুব হালকাভাবে এ্যারোর তালুতে একটু ঘুষি দিল তারপর তার হাত নিজের হাতের পাশেই রাখল। এ্যারো তার কালো ভ্রু উঁচু করল। আমি বিস্মিত হলাম কীভাবে তার কাগজের মত চামড়ায় কোনরকম ভাঁজ পড়ল না।

এ্যাডওয়ার্ড খুবদ্রুত নিশ্বাস নিতে লাগল এবং এলিস তার দিকে আগ্রহান্তিতভাবে তাকিয়ে রইল।

তোমাকে ধন্যবাদ মারকাস। এ্যারো বলল, সেটা কিছুটা ইন্টারেস্টিং। আমি বুঝতে পারলাম, এক সেকেন্ড পরে যে মারকাস তার চিন্তাভাবনা এ্যারো জানুক সেটাই করতে দিচ্ছে।

মার্কাসকে খুব ইন্টারেস্টেড মনে হলো না। সে এ্যারোর কাছ থেকে দূরে সরে গেল অবশ্যই কেইয়াসের সাথে যোগ দিতে। দেয়ালের পাশে এসে বসল। দুজন অনুসরণকারী ভ্যাম্পায়ার নিঃশব্দে তাদের অনুসরণ করল। তাদের দেহরক্ষী, যেটা আমি আগেই ধারণা করেছিলাম। আমি দেখতে পেলাম যে একইরকম চেহারার দুজন মহিলা কেইয়াসের পাশে গিয়ে দাঁড়াল। যে কোন ভ্যাম্পায়ারের জন্য গার্ডের এই ধারণাটা আমার কাছে হাস্যকর মনে হতে লাগল। কিন্তু হতে পারে যে তারা এত প্রাচীন যে তাদের ত্বকের জন্য এটা প্রয়োজনীয় হতে পারে।

এ্যারো তার মাথা নাড়াল বিস্ময়কর! সে বলল প্রকৃতপক্ষে বিস্ময়কর।

এলিসের অভিব্যক্তি হতাশায় ভরা। এ্যাডওয়ার্ড তার দিকে ঘুরে গেল এবং আবার খুব দ্রুততার সাথে ব্যাখ্যা করল। নিচু স্বরে। মার্কাস দেখছে সম্পর্কের ব্যাপার। সে আমাদের এই গভীর সম্পর্কের ব্যাপারে বিস্মিত।

এ্যারো হাসল এতটাই সহজসাধ্য সে নিজেকে নিজে সেটা শোনাল। তারপর সে আমাদের উদ্দেশ্যে কথা বলল এটা মার্কাসকে কিছুটা বিস্মিত করেছে। আমি তোমাদের এই নিশ্চয়তা দিতে পারি।

আমি মার্কাসের মৃতপ্রায় মুখের দিকে তাকালাম এবং সেটা বিশ্বাস করলাম।

এটা শুধু এতটাই কঠিন বুঝতে পারা, এমনকি এখনও। এ্যারো সুরেলা গলায় বলল, এ্যাডওয়ার্ডের হাত আমার কোমর জড়িয়ে আছে সেদিকে তাকিয়ে রইল। এটা আমার পক্ষে খুবই কঠিন যে এ্যারোর সেই চিন্তাভাবনার ব্যাপারটা বোঝা। আমি লড়তে লাগলাম নিজেকে ঠিক রাখার জন্য। তুমি কীভাবে এতটাই নিকটে তার কাছাকাছি এভাবে?

এটা কোনরকম শক্তির সাহায্য ছাড়া নয়। এ্যাডওয়ার্ড শান্তস্বরে উত্তর দিল।

কিন্তু এখনও- লা তুয়া ক্যানটেটে!কি বিপুল অপচয়!

এ্যাডওয়ার্ড কোনরকম রসিকতা ছাড়াই হেসে উঠল আমি এটাকে মূল্যের অতীত কিছু দেখেছি।

এ্যারো সন্দেহের সুরে বলল এটা খুবই বেশি মূল্যের বিনিময়ে।

সুযোগ মূল্য নেয়।

এ্যারো হেসে উঠল। যদি আমি তার দিকে তাকিয়ে না হাসি তোমার স্মৃতি অনুসারে, আমি বিশ্বাস করতে পারব না যে যেকোন কারোর রক্ত এতটা শক্তিশালী হতে পারে। আমি কখনও অনুভব করিনি এটার চেয়ে নিজে বেশি কিছু। আমাদের অধিকাংশই এই উপহারের পরিবর্তে অনেক বেশি আশা করবে এবং এমনকি তুমিও…

এটা অপচয়। এ্যাডওয়ার্ড শেষ করল। তার কণ্ঠস্বর এখন ব্যঙ্গাত্বক।

এ্যারো আবার হাসল আহ, আমি কীভাবে আমার বন্ধু কার্লকে মিস করছি! তুমি আমাকে তার কথা স্মরণ করিয়ে দিলে-একমাত্র সেই ছিল ততটা রাগাম্বিত কেউ নয়।

কার্ল আমার ভেতরে তার অনেক কিছুর মত এটাও দিয়েছে।

আমি হঠাৎ করে কখনও ভাবিনি কার্লিকে দেখব সবকিছুতে নিজেকে অমনভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে। কিন্তু তুমি তাকে লজ্জার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

কদাচিৎ এ্যাডওয়ার্ড অধৈর্যর সাথে বলল। যেন সে একজন খবুই ক্লান্ত। এটা আমাকে আরো বেশি ভীত করে তুলল। আমি সেটা কল্পনা না করে পারলাম না যে সে কি আশা করছিল যেটা সে অনুসরণ করেছে।

আমি তার সাফল্যের জন্য কৃতজ্ঞ। এ্যারো আনন্দিত স্বরে বলল। তোমার স্মরণশক্তি তার প্রতি আমার জন্য একটা উপহারের মত। যদিও তারা সেটা দেখে বিস্মিত। আমি বিস্মিত কীভাবে এটা…আমাকে আনন্দিত করে, তার সাফল্য তার উদারপন্থী পথে যেটা সে পছন্দ করেছে। আমি তার পরিকল্পনায় অভিভুত, অন্যদেরকে খুঁজে পাওয়া, যারা তার সেই অদ্ভুত দৃষ্টিশক্তির অংশীদার। এখনও, যেভাবেই হোক, আমি ভুলের কারণে সুখী।

এ্যাডওয়ার্ড কোন উত্তর দিল না।

কিন্তু তোমার রেসট্রিয়া! এ্যারো শ্বাস নিল আমি জানি না এতটাই শক্তি সম্ভব কিনা। সাইরেনের মত তোমার এই ডাকগুলো। শুধু একবার নয়। কিন্তু বারবার–যদি আমি এটা নিজের ভেতরে অনুভব না করতাম, আমি তাহলে এটা বিশ্বাস করতাম না।

এ্যাডওয়ার্ড এ্যারোর প্রশংসায় পেছনে তাকিয়ে রইল কোন রকম অভিব্যক্তি ছাড়াই। আমি জানতাম তার মুখ বেশ ভালই। সময় সেটাকে পরিবর্তিত করতে পারে না। অনুমান করে নেয়া যায় যে কিছু একটা নিচে নিচে ঘটে যাচ্ছে। আমি আমার শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার জন্য লড়ে চললাম।

শুধু স্মরণ করো সে তোমাকে কীভাবে আবেদন করত… এ্যারো শব্দ করে হাসল। এটা আমাকে তৃষ্ণার্ত করে তুলেছে।

এ্যাডওয়ার্ড টান টান হয়ে গেল।

কোন রকম অসুবিধার সৃষ্টি করব না। এ্যারো তাকে আশ্বস্ত করল। আমি বুঝাতে চাইছি তাকে কোন ক্ষতি করব না। কিন্তু আমি এতটাই কৌতূহলী, একটা নির্দিষ্ট বিষয়ের জন্য। সে আমার দিকে গভীর আগ্রহ সহকারে তাকাল আমি পারি কি? সে আগ্রহভরে জিজ্ঞেস করল। একহাত উপরে তুলে।

তাকে জিজ্ঞেস করো। এ্যাডওয়ার্ড তাকে উপদেশ দিল শান্ত স্বরে।

অবশ্যই। আমার প্রতি কতটা রুঢ় সে! এ্যারো বিস্মিত বেলা। সে এখন সরাসরি আমাকে উদ্দেশ্য করে বলছে। আমি খুবই অনুপ্রাণিত যে তুমি একমাত্র ব্যতিক্রম যে এ্যাডওয়ার্ডের এই ইম্প্রেসিভ প্রতিভার ব্যাপারে। সুতরাং খুবই আগ্রহসুচকভাবে যে। এরকম একটা ঘটনা ঘটেছে! আমি বিস্মিত, যদিও আমাদের প্রতিভা অনেক দিক দিয়েই একই প্রকৃতির। যদি তুমি আমাকে অনুমতি দাও যে আমি চেষ্টা করে দেখতে পারি কি তুমিও আমার জন্য একজন ব্যতিক্রম কিনা, সেইভাবে?

আমার চোখ ভয়ার্তভাবে এ্যাডওয়ার্ডের মুখের উপর দিয়ে ঘুরে এল। এ্যারোর এই অতিরিক্ত বিনয় সত্বেও, আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না আমি সত্যিই আমার কোন পছন্দ থাকতে পারে। আমি ভয়ানক ভীত যে সেই চিন্তাভাবনা করে যেটা আমাকে স্পর্শ করার তাকে অনুমতি দেয়ার ব্যাপারে। এখনও তার সেই অদ্ভুত ত্বকের স্পর্শের ব্যাপারে।

এ্যাডওয়ার্ড উৎসাহের সাথে মাথা নাড়ল। কারণ সে নিশ্চিত যে এ্যারো আমাকে আঘাত করবে না। অথবা কারণ সেখানে আর কোন বিকল্প কিছু নেই। আমি সেটা বলতে পারব না।

আমি পেছনে ফিরে এ্যারোর দিকে ঘুরলাম এবং আমার হাত তুললাম ধীরে ধীরে আমার সম্মুখে। আমি কাঁপছিলাম।

সে যেন ভেসে ভেসে কাছে চলে এল। আমার বিশ্বাস সে বুঝিয়েছিল তার অনুভূতিতে সেটা আশ্বস্ত করার মত। কিন্তু তার কাগজের মত চেহারা এতটাই অদ্ভুত এতটাই এলিয়েনের মত এবং ভয়ানক যেটা আশ্বস্ত করেও। তার কথার চেয়ে তার তাকানোতে আরো বেশি আস্থার প্রতিচ্ছবি।

এ্যারো কাছে পৌঁছে গেল। সে আমার সাথে হ্যান্ডশেক করলো। তার সেই অদ্ভুত চামড়া দিয়ে আমাকে চেপে ধরল। এটা বেশ কঠিন কিন্তু অনুভূত হলো কিছুটা ভঙ্গুর। পাথরের চেয়ে অনেক বেশি খোলসের মত। আমি যত শীতল ভেবেছিলাম তার চেয়ে অনেক বেশি।

তার সিনেমাটিক চোখ আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। তার দিক থেকে না তাকিয়ে থাকা ছিল অসম্ভব। তারা সেটাকে মন্ত্রকুহকের মত করে নিয়েছে একটা অদ্ভুত পদ্ধতিতে।

আমি দেখলাম এ্যারোর মুখ পরিবর্তিত হয়ে গেল। দৃঢ় বিশ্বাস উবে গেল এবং তাকে প্রথমবারের মত দ্বিধাগ্রস্ত দেখাল। তারপর অবিশ্বাস্যভাবে যখন সে শান্ত হয়ে গেল তার আগে মুখে একটা বন্ধুত্বের মুখোশ এটে নিল।

তো খুবই ইন্টারেস্টিং। সে বলল যখন সে আমার হাত ছেড়ে দিল এবং পিছিয়ে গেল।

আমার চোখ এ্যাডওয়ার্ডের দিকে পলক ফেলল এবং যদিও তার মুখ দেখে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। তবে আমার মনে হলো সে কিছুটা বিভ্রান্ত্র।

এ্যারো সেই গভীর চিন্তাভাবনার অভিব্যক্তি নিয়ে আস্তে আস্তে পিছিয়ে যেতে লাগল। সে এক মুহূর্তের জন্য চুপচাপ। তার চোখ আমাদের তিনজনকে দেখছিল। তারপর, বেপরোয়াভাবে সে তার মাথা নাড়ল।

প্রথমে সে নিজেকেই বলল আমি বিস্মিত যদি সে আমাদের অন্য প্রতিভাদের মত অমর হয়ে থাকে…জেন, প্রিয়া?

না! এ্যাডওয়ার্ড গজরানি দিয়ে শব্দটা বলল। এলিস তার হাত চেয়ে ধরে রাখল। সে এলিসের হাত ঝাড়া দিয়ে ফেলে দিল।

ছোট্ট জেন আরোর দিকে তাকিয়ে আনন্দিত হাসি দিল হ্যাঁ প্রভু?

এ্যাডওয়ার্ড এখন সত্যিকারের গর্জন শুরু করেছে। তার সেই শব্দ ভেসে ভেসে আসছে এবং তার দিকে যাচ্ছে। সে এ্যারোর দিকে ভস্ম করার দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। গোটা ঘর এখন যেন থেমে গেছে। প্রত্যেকে উৎসুক্য অবিশ্বাসের সাথে তাকে দেখছে। যেন সে এখানে কোন বিব্রতকর অসামাজিক ক্রিয়াকর্ম করে চলেছে। আমি দেখতে পেলাম ফেলিক্স আশা নিয়ে দাঁতমুখ খিচাল এবং এক পদক্ষেপ সামনে এগিয়ে এলো। এ্যারো তার দিকে একবার তাকাল এবং সে সেখানে জমে গেল। তার সেই গোঙানি একটা শান্ত অভিব্যক্তিতে রুপান্তরিত হলো।

তারপর সে জেনের দিকে ফিরে কথা বলল আমি বিস্মিত, আমার প্রিয় একজন, যদি বেলা তোমার প্রতি অমর করে থাকে।

আমি খুব কমই শুনতে পেলাম এ্যারোর এ্যাডওয়ার্ডের সেই ভয়ানক গোঙানির মধ্য থেকে। সে তারপর আমাকে যেতে দিল। তাদের দৃষ্টি থেকে আমাকে সরে যেয়ে লুকিয়ে পড়তে দিল। কাইয়াস আমাদের দিকে তাকিয়ে রইল। উৎসুক্য দৃষ্টিতে দেখছিল।

জেন আমাদের দিকে এগিয়ে আসছিল একটা সুন্দর হাসি নিয়ে।

এগিয়ো না। এলিস কেঁদে উঠল যখন এ্যাডওয়ার্ড সেই ছোট্ট মেয়েটির দিকে এগিয়ে গেল।

আমার কোন প্রতিক্রিয়ার আগে, তাদের দুজনের মাঝখানে কেউ লাফ দিয়ে আসার আগে, এ্যারোর দেহরক্ষীদের টান টান হওয়ার আগে, এ্যাডওয়ার্ড মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।

কেউ তাকে স্পর্শ করে নাই। কিন্তু সে পাথরের মেঝেতে পড়ে আছে প্রচণ্ড রাগ নিয়ে যখন আমি তার দিকে তাকালাম তার চেয়ে ভয়ের দৃষ্টি।

জেন এখন শুধু তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। এখন সকলের মুখে হাসি। যেটাকে এলিস বলে ছিল প্রদত্ত ক্ষমতা। কেন প্রত্যেকে জেনকে এমন ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখে। কেন এ্যাডওয়ার্ড তার পথের সামনে যেয়ে দাঁড়িয়েছিল সে এটা আমার সাথে করার আগেই।

থামো! আমি কাঁপতে লাগলাম। আমার কণ্ঠস্বর নিঃশব্দতার মধ্যে প্রতিধ্বনিত হতে লাগল। সেটা যেন তাদের দুজনের মাঝে লাফ দিয়ে পড়ল। কিন্তু এলিস তার হাত আমার দিকে ছুঁড়ে দিল বেষ্টনীর মত করে এবং আমার লড়াইয়ের বিরুদ্ধে। এ্যাডওয়ার্ডের ঠোঁট দিয়ে কোন শব্দ বের হচ্ছিল না। সে পাথরের মেঝের উপর পড়েছিল। আমার মনে হচ্ছিল এটা দেখে আমার মাথা মনে হয় বিস্ফোরিত হয়ে যাবে।

জেন। আরো তাকে মাদকতাময় স্বরে আবার ডাকল। সে তাড়াতাড়ি সেদিকে তাকাল। এখনও আনন্দের সাথে হাসছে। তার চোখ প্রশ্নবিদ্ধ। যত তাড়াতাড়ি জেল বাইরে তাকাল। এ্যাডওয়ার্ড এখনও সেখানে।

এ্যারো তার মাথা আমার দিকে ঝুঁকে দিল।

জেন আমার দিকে ঘুরে হাসল।

আমি তার দৃষ্টির দিকে তাকাতে পারছিলাম না। আমি এ্যাডওয়ার্ডকে এলিসের বাহুর মধ্যে বাধা পড়ে দেখতে লাগলাম। এখনও বেপরোয়াভাবে লড়ে চলেছি।

সে ভাল আছে। এলিস ফিসফিস করে বলল একটু শক্ত স্বরে। যখন সে কথা বলতে লাগল। এ্যাডওয়ার্ড উঠে বসল। তারপর লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল। তার চোখ আমার চোখের সাথে দৃষ্টি বিনিময় হলো। সেগুলো ভয় আতংকে কাঁপছিল। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম সেই ভয়টা সে এই মুহূর্তে যেটার ভুক্তভোগী হয়েছে সেটার জন্য। কিন্তু তারপর সে তাড়াতাড়ি জেনের দিকে তাকাল এবং তারপর আমার দিকে এবং তার মুখ স্বস্তির সাথে আশস্ত হলো।

আমিও জেনের দিকে তাকালাম। সে এখন আর হাসছে না। সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোয়ালে কিচমিচ করছে আমার দিকে তাকিয়ে। আমি কাঁপতে লাগলাম। ব্যথার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।

কিছুই ঘটল না।

এ্যাডওয়ার্ড আবার আমার পাশে। সে এলিসের হাত স্পর্শ করল। আর এলিস আমাকে তার হাতে তুলে দিল।

এ্যারো হাসতে শুরু করল হা হা হা। সে হাসল। এইটা খুবই সুন্দর!

জেন হতাশায় হিসহিস করে উঠল। সামনের দিকে ঝুঁকে দাঁড়াল, যেন সে দৌড়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

প্রিয় একজন, ওভাবে বেরিয়ে যেও না। এ্যারো স্বস্তিদায়ক স্বরে বলল। তার সেই পাউডার সদৃশ্য হাত জেনের কাঁধের উপর রাখল। সে আমাদের সবাইকে হতবাক করেছে।

জেনের উপরের ঠোঁট বেকে যেয়ে দাঁত বেরিয়ে এল। সে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।

হা হা হা এ্যারো আবার হাসতে লাগল। তুমি খুবই সাহসী এ্যাডওয়ার্ড, নিঃশব্দের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত। আমি জেনকে সেটা বলেছিলাম যে আমার জন্য সেটা করতে। শুধুমাত্র কৌতূহলের বশবর্তী হয়ে। সে প্রশংসার স্বরে তার মাথা নাড়তে লাগল।

এ্যাডওয়ার্ড তাকিয়ে রইল। বিরক্তিকর দৃষ্টিতে।

তো এখন আমরা তোমার সাথে কি করতে পারি? এ্যারো জানতে চাইল।

এ্যাডওয়ার্ড এবং এলিস শক্ত হয়ে বসে রইল। সেটাই এই অংশ যার জন্য তারা অপেক্ষা করছিল।

আমি কাঁপতে শুরু করলাম।

আমি মনে করি না সেখানে কোন সুযোগ আছে যে তুমি তোমার মন পরিবর্তন করতে পারো? এ্যারো এ্যাডওয়ার্ডকে আশান্বিতভাবে জিজ্ঞেস করল। তোমার প্রতিভা আমাদের এই ছোট দলে একটা নতুন কিছু বলে যোগ হবে।

এ্যাডওয়ার্ড দ্বিধা করতে লাগল। চোখের কোণা দিয়ে আমি ফেলিক্স এবং জেনের মুখ ভেঙুচানো দেখতে পেলাম।

এ্যাডওয়ার্ডকে দেখে মনে হলো সে প্রতিটি শব্দ মেপে মেপে বলছে আমি… হয়তো..হয়তো না।

এলিস? এ্যারো জিজ্ঞেস করল, এখনও আশা করে আছে। তুমি সম্ভবত আমাদের সাথে যোগ দিতে আগ্রহী?

না, ধন্যবাদ। এলিস বলল।

এবং তুমি, বেলা? এ্যারো তার ভ্রু উপরে তুলল।

এ্যাডওয়ার্ড হিসহিসিয়ে উঠল, আমার কানের কাছে নিচু স্বরে। আমি এ্যারোর দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। সে কি মজা করছে? অথবা সে সত্যিই আমাকে জিজ্ঞেস করছে আমি যদি সত্যিই ডিনারের জন্য থাকতে চাই?

সাদা চুলের কাইয়াস যে সমস্ত নিরবতা ভেঙে দিল।

 কি? সে এ্যারোর কাছে জানতে চাইল। তার কণ্ঠস্বর সেটা ফিসফিসানির চেয়ে বেশি কিছু নয়।

কাইয়াস, নিশ্চয় তুমি সেই প্রাণশক্তিতে ভরপুরতা দেখেছো। এ্যারো স্নেহের সুরে তাকে বকে দিল। আমি এখনও পর্যন্ত সেরকম কোন প্রতিভা খুঁজে পাই নাই, এতটা উদীয়মান, যখন আমরা জেন ও এলেককে পেয়েছিলাম তারপর থেকে। তুমি কি সেই সম্ভবনা খুঁজে পাও যখন সে আমাদেরই একজন হবে?

কাইয়াস তিক্ত অভিব্যক্তির সাথে অন্য দিকে তাকাল। সেই তুলনা দেয়ার কারণে জেনের চোখ জোড়া জ্বলতে লাগল।

এ্যাডওয়ার্ড আমার পাশে বসে ফুঁসতে লাগল। আমি তার বুকের ভেতর একটা গুনগুনানি শুনতে পেলাম। সেটা এটা হিংস্র গোঙানীর রুপ নিতে যাচ্ছে। আমি সেটা করতে দিতে পারলাম না যে তার সেই রাগ তাকে আঘাত করুক।

না, ধন্যবাদ। আমি কঁকাভাবে কথা বললাম, যেটা ফিসফিসানির চেয়ে বেশি কিছু। আমার কণ্ঠস্বর ভয়ে ভাঙা ভাঙা হয়ে গেছিল।

এ্যারো শ্বাস নিল সেটা দুভার্গ্যক্রমে। সে এতটাই অপচয়।

এ্যাডওয়ার্ড হিসহিসিয়ে উঠল। যোগ দাও অথবা মর। সেটাই কি তাই? আমি ধারণা করছি এতটাই বেশি যে যখন আমরা এটা এই রুমে এনেছিলাম। সেটা আপনার আইনের চেয়ে এতটাই বেশি।

তার কণ্ঠস্বরের সুর আমাকে বিস্মিত করল। তাকে অধৈর্য শোনাল। কিন্তু সেখানে কিছু একটা ছিল তার সেই কথাবার্তায় যেন সে তার কথাগুলো খুব যত্নের সাথে বলছে।

অবশ্যই না। এ্যারো চোখের পলক ফেলল। বিস্মিত। আমরা এরই মধ্যে তাকে কনভিন্স করে ফেলেছি। এ্যাডওয়ার্ড, আমরা হেইডির প্রত্যাবর্তনের জন্য অপেক্ষা করছি। তোমার জন্য নয়।

এ্যারো। কাইয়াস হিসহিসেয়ে উঠল আইন তাহলে তাদের দোষী করবে।

এ্যাডওয়ার্ড কেইয়াসের দিকে তাকাল। সেটা কীভাবে? সে জানতে চাইল। সে অবশ্যই জানবে কেইয়াস কি ভাবছিল কিন্তু তাকে দেখে মনে হলো সে এখনও মনস্থির করে পারছে না। সে কি সজোরে বলবে।

কেইয়াস তার কংকালের মত আঙুল তুলে আমাকে নির্দেশ করল সে অনেক বেশি কিছু জানে। তুমি আমাদের গোপনীয় বিষয়গুলো তার কাছে বলেছ। তার কণ্ঠস্বর কাগজের মতই হালকা। অনেকটা তার চামড়ার মত।

সেখানে খুব কম ভাল মানুষই আমাদের এখানে আছে। এ্যাডওয়ার্ড তাকে মনে করিয়ে দিল। আমি ভাবছিলাম সেই সুন্দরী অভ্যর্থনাকারিণীর কথা।

কেইয়াস একটা নতুন অভিব্যক্তিতে ঘুরে গেল। এটাকে কি হাসির সমতুল্য বলে ধরা যায়?

হ্যাঁ। সে একমত হলো। কিন্তু যখন তারা আর আমাদের কাছে দীর্ঘদিনের জন্য প্রয়োজনীয় নয়। তারা আমাদেরকে খেদমত করার জন্য রাখবে। এটা তোমার পরিকল্পনা নয় এই একজনের জন্য। যদি সে আমাদের গোপনীয়তা নিয়ে প্রতারণা করে, তুমি কি তাকে ধ্বংস করার জন্য প্রস্তুত? আমি মনে করি না। সে ঢোক গিলল।

আমি পারি না- আমি শুরু করলাম। এখন ফিসফিস করেই বলছি। কেইয়াস আমার দিকে বরফ শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমাকে থামিয়ে দিল।

তাকে আমাদের একজন বানানোর জন্য তুমি কি তাহলে আগ্রহী নও। কেইয়াস বলে চলল সেখানে, সে আমাদের জন্য ক্ষতিকারক। যদিও এটা সত্য এই জন্য যে শুধুমাত্র তার জীবনই বাজেয়াপ্ত করা উচিত। তুমি চলে যেতে পার যদি তুমি সেটা চাও।

এ্যাডওয়ার্ড তার দাঁত দেখাল।

সেটাই তাই আমি ভেবেছিলাম। কেইয়াস বলল। কিছু একটা যেটা আনন্দের সাথে সম্পকিত। ফেলিক্স সামনে ঝুঁকে এল।

যতক্ষণ না… আরো বাধা দিল। তাকে দেখে বেশ অসুখী মনে হলো কথোপকথন যেদিকে এগুচ্ছে সেটা দেখে। যতক্ষণ না তুমি তাকে অমরত্ব দিচ্ছ?

এ্যাডওয়ার্ড তার ঠোঁট চেপে ধরল। সে উত্তর দেয়ার আগে এক মুহূর্তের জন্য দ্বিধা করল এবং যদি আমি সেটা করি?

এ্যারো হাসল, কেন, তাহলে তুমি বাড়িতে যাওয়ার জন্য মুক্ত হতে পারবে এবং আমার বন্ধু কার্লকে আমার প্রশংসা জানাতে পারবে। তার অভিব্যক্তি আরো বেশি দ্বিধায় রুপ নিল। কিন্তু আমি ভীত যে তুমি সেটা বুঝাতে চাইছ।

এ্যারো তার সামনে হাত তুলল।

কেইয়াস, যে আবার বকুনি শুরু করছিল রাগান্বিতভাবে সে রিলাক্স হলো।

এ্যাডওয়ার্ডের ঠোঁট রাগান্বিতভাবে চেপে বসে রইল। সে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল এবং আমিও প্রতি উত্তরে তাকালাম।

বুঝে নাও। আমি ফিসফিস করে বললাম দয়া করে।

এটা কি সত্যিই সেরকম জঘন্য ধারণা? সে কি আমাকে পরিবর্তন করার পরিবর্তে মারা যাবে? আমার এরকম অনুভূতি হতে থাকল যেন আমার পেটে কেউ লাথি কষাচ্ছে।

এ্যাডওয়ার্ড আমার দিকে তাকিয়ে রইল অত্যাচারিত অভিব্যক্তি নিয়ে।

তারপর এলিস আমাদের থেকে দূরে গেল। এ্যারোর দিকে এগিয়ে গেল। আমরা তাকে লক্ষ্য করার জন্য ঘুরে গেলাম। তার হাতও এ্যারোর হাতের মত উত্তোলিত।

সে কোন কিছু বলল না। এ্যারো উদ্বিগ্নভাবে তার ক্রিয়াকর্ম দেখতে লাগল। এ্যারো অর্ধ পথে তাকে মিলিত হলো। আগ্রহের সাথে তার একটা হাত তুলে নিল। তার চোখে তৃষ্ণা।

সে তার মাথা ঝুঁকে তাদের হাত স্পর্শ করল। তার চোখ বন্ধ হয়ে গেল যখন সে মনোযোগ দিল। এলিস নড়াচড়া করছিল না। তার মুখ অভিব্যক্তি শূন্য। আমি এ্যাডওয়ার্ডের দাঁতে দাঁত ঘষার শব্দ শুনতে পেলাম।

কেউ নড়ছিল না। এ্যারোকে দেখে মনে হচ্ছিল সে এলিসের হাতের উপর জমে গেছে। সময় অতিবাহিত হতে লাগল। আমি আরো বেশি বেশি টান টান হয়ে যেতে লাগলাম। বিস্মিত যে কীভাবে সময় চলে যায় এটা অনেক সময় হওয়ার আগেই। এটা বোঝানো যে কিছু একটা ভুল হয়েছে। অনেক বেশি ভুল যেটা এরই মধ্যে হয়ে গেছে।

আরেকটা রাগান্বিত মুহূর্ত অতিবাহিত হয়ে গেল। তারপর এ্যারোর কণ্ঠস্বর নিরবতা ভেঙে দিল।

হা হা হা হা। সে হাসতে লাগল। তার মাথা এখনও সামনের দিকে ঝুঁকে আছে। সে ধীরে ধীরে উপরের দিকে তাকাল। তার চোখ উত্তেজনায় জ্বলজ্বল করছে। এটা মনোমুগ্ধকর।

এলিস শুষ্কভাবে হাসল আমি খুশি যে আপনি এটা উপভোগ করছেন।

তুমি যে জিনিস দেখেছো সেই জিনিস দেখে। বিশেষত সেই একটা যেটা এখনও ঘটে নাই! সে তার মাথা নাড়ল বিস্ময়ের সাথে।

কিন্তু সেটা হবে। এলিস তাকে মনে করিয়ে দিল। তার কণ্ঠস্বর শান্ত।

হ্যাঁ, হ্যাঁ। এটা প্রায় দৃঢ়ভাবে স্থির। দেখে তো মনে হয় সেখানে কোন সমস্যা নেই।

কেইয়াস তাকাল তিক্তভাবে অনুমোদনেরভাবে। তার অনুভূতি সে ফেলিক্স এবং জেনের সাথে ভাগ করে নিল।

এ্যারো। কেইয়াস অভিযোগ করল। প্রিয় কেউয়াস। এ্যারো হাসল। উত্তেজিত হয়ো না। সম্ভবনাগুলোকে ভেবে দেখো। তারা আজকে আমাদের সাথে যোগ দিচ্ছে না। কিন্তু আমরা সবসময়ে ভবিষ্যতের জন্য আশা করতে পারি। কল্পনা করো সেই আনন্দ যেটা তরুণ এলিস একাকী আমাদের ছোট্ট গৃহস্থালীতে নিয়ে আসতে পারবে।… পাশাপাশি, আমি এতটাই ভয়ানক কৌতূহলী যে কীভাবে বেলা রুপান্তরিত হয়।

এ্যারোকে দেখে মনে হলো সে বোঝাতে পারছে। সে কি বুঝতে পারছে না যে কীভাবে সে এলিসের দৃষ্টিতে দেখতে পারছে? সেটা এটা যে সে তার মনস্থির করে ফেলেছে যে আজকে আমাকে রুপান্তরিত করে দেবে। তারপর এটা আগামীকাল পরিবর্তন করে দেবে? এক লক্ষ ছোট ছোট সিদ্ধান্ত, তার সিদ্ধান্ত এবং অন্য আরো অনেকের সিদ্ধান্তও এ্যাডওয়ার্ড-তার পথ পরিবর্তন করে দিতে পারে এবং সেটার সাথে তার ভবিষ্যতও।

এটা কি সত্যি কোন ব্যাপার এলিস ইচ্ছে করছে এটা কি কোন রকম ভিন্নতা আনায়ন করবে, যদি আমি একজন ভ্যাম্পায়ারে পরিণত হই। যখন এই ধারণাটা এ্যাডওয়ার্ডের কাছে এতটাই অনুশোচনা যোগ্য? যদি মৃত্য তার কাছে একটা আরো ভাল বিকল্প কিছু হয়। তার চেয়ে আমাকে চিরদিনের জন্য পাওয়ার চেয়ে, একজন অমর? ভীতভাবে আমি অনুভব করলাম হতাশায় ডুবে যাচ্ছি, ডুবতে শুরু করেছি…।

তাহলে আমরা এখন চলে যাওয়ার জন্য মুক্ত? এ্যাডওয়ার্ড নিরুত্তাপ স্বরে জিজ্ঞেস করল।

হা হা। এ্যারো প্রশান্তস্বরে বলল কিন্তু দয়া করে আবার আমাদের দেখতে এসো। এটা সত্যিই প্রকৃতপক্ষে উত্তেজনাকর!

এবং আমরা তোমাকে দেখতে আসব ভালভাবে। কেইয়াস প্রতিজ্ঞা করল। তার চোখ হঠাৎ করে অর্ধমুদ্রিত হয়ে গেলা। এটা নিশ্চিত হও যে তুমি তোমার পাশে অনুসরণ করে চলেছ। আমি যদি তুমি হতাম আমি অনেক বেশি দেরি করতাম না। আমরা কোনরকম দ্বিতীয় সুযোগ দিতাম না।

এ্যাডওয়ার্ডের চোয়াল দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ হয়ে গেল কিন্তু সে একবার মাথা নোয়াল।

কেইয়াস ঘুরে ভাসতে ভাসতে যেখানে মারকাস তখনও বসা ছিল সেখানে গেল। মার্কাস নড়াচাড়া এবং কোনআগ্রহ দেখাননা ছাড়াই বসে ছিল।

ফেলিক্স গুঙিয়ে উঠল।

আহ, ফেলিক্স আরো হাসল, আমোদিত। হেইডি এখানে যেকোন মুহূর্তে চলে আসতে পারে, ধৈর্য ধরো।

হুম হুম। এ্যাডওয়ার্ডের কণ্ঠস্বর এখন একটা নতুন দিকে সেইক্ষেত্রে সম্ভবত আরো দেরি করার চেয়ে আমরা এখান থেকে কেটে পড়ি।

হ্যাঁ। এ্যারো সম্মত হলো। সেটাই ভাল আইডিয়া। দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। দয়া করে অপেক্ষা করো অন্ধকারের পরের জন্য, যদি, তোমরা কিছু মনে না করো।

অবশ্যই। এ্যাডওয়ার্ড একমত হলো। যখন আমি নিজেই ভাবছিলাম আমাদের পালানোর আগে অন্তত দিনের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করার।

এবং এখানে। এ্যারো যোগ করল। ফেলিক্সের দিকে এক আঙুল তুলে দেখিয়ে সেদিকে যেতে লাগল। ফেলিক্স সামনের দিকে এগিয়ে এল। এ্যারো তার সেই বিশাল ভ্যাম্পায়ারের ধুসর আলখাল্লা খুলে ফেলল যেটা সে পরে ছিল। কাঁধের উপর থেকে টান দিয়ে নামিয়ে নিয়ে আসল। সে এটা এ্যাডওয়ার্ডের দিকে দেখাল। এটা নাও। তুমি কিছুটা সন্দেহবাতিকগ্রস্ত।

এ্যাডওয়ার্ড সেই লম্বা আলখেল্লাটা পরে নিল। হুডটা নামিয়ে রাখল।

এ্যারো শ্বাস নিল। এটা তোমাকে ঠিক ঠিক মানিয়েছে।

এ্যাডওয়ার্ড শব্দ করল। কিন্তু হঠাৎ করে কাঁধের উপর দিয়ে সামনে তাকাল ধন্যবাদ এ্যারো। আমরা নিচে অপেক্ষা করব।

বিদায়। তরুণ বন্ধুরা। এ্যারো বলল, তার চোখ জ্বলজ্বল করছিল যখন সে একই দিয়ে তাকিয়ে ছিল।

চলো যাই। এ্যাডওয়ার্ড বলল, এখন জরুরি।

দিমিত্রি যে পথে গেছে সেটাই আমাদের অনুসরণ করা উচিত। তারপর আমরা যে পথে এসেছিলাম সেটা সেই পথে। একমাত্র বেরুনোর পথ দেখতে দেখতে।

এ্যাডওয়ার্ড আমাকে দ্রুততার সাথে তার পাশে টেনে নিল। এলিস আমার অন্যপাশে বেশ কাছাকাছি চলে এসেছে। তার মুখ কঠোর হয়ে আছে।

খুব বেশি দ্রুত নয়। সে বিড়বিড় করে বলল।

আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। ভীত। কিন্তু তাকে শুধুমাত্র স্বাভাবিক দেখাল। এটা তার পরে যে আমি প্রথমে শুনেছিলাম কণ্ঠস্বরের বিড়বিড়ানি পরে জোরে, উচ্ছংখল কণ্ঠস্বর। যেটা বিপরীত দিকের চেম্বার থেকে আসছে।

বেশ এটা অস্বাভাবিক। একজন মানুষের মোটা স্বর তীরের মত বিধল।

এতটা মধ্যযুগীয়। একটা অসন্তুষ্ট স্বর কাঁপছিল মেয়েলী কণ্ঠস্বর।

একটা বিশাল জনতা ছোট্ট দরজা দিয়ে আসছিল। যেটা ছোট পাথরের চেম্বারটা ভরে ছিল। দিমিত্রি আমাদের জায়গা করার জন্য সামনে এগোল। আমরা ঠাণ্ডা দেয়ালের গা ঘেষে দাঁড়ালাম তাদেরকে পথ করে দেয়ার জন্য।

একজোড়া সামনে, কথাবার্তা শুনে আমেরিকানই মনে হলো, নিজেদের দিকে সন্তুষ্টির দৃষ্টিতে দেখে আসছিল।

সুস্বাগতম অতিথিরা। সুস্বাগতম এই ভলতেরাতে! আমি শুনতে পেলাম এ্যারো সেই বিশাল রুম থেকে সুরে সুরে বলে চলেছে।

তাদের বাকিরা, চল্লিশজন বা তারও বেশি, সে জোড়ার পরে বেরিয়ে আসতে লাগল। কিছু কিছু দেখতে টুরিস্টের মত লাগছিল। কিছু কিছু ছবি তুলছিল। অন্যদের দ্বিধাম্বিত দেখা গেল যেন এই রুমে যে গল্পটা তারা শুনেছে তার মর্মার্থ কিছুই তারা বুঝতে পারেনি। আমি লক্ষ্য করলাম একজন ছোটখাট কালো মহিলাকে আলাদাভাবে। তার গলার কাছ থেকে গোলাপি এবং সে একহাতে ক্রস শক্তভাবে ধরে রেখেছে। সে অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি আস্তে চলছিল। কাউকে না কাউকে স্পর্শ করে। এবং প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছিল অপরিচিত ভাষায়। কেউ তাকে বুঝতে পেরেছে বলে মনে হলো না। এবং তার কণ্ঠস্বর আরো বেশি আতংকিত হয়ে উঠল।

এ্যাডওয়ার্ড আমার মুখ তার বুকের কাছে টেনে নিল। কিন্তু এটা খুব দেরি হয়ে গিয়েছিল। আমি এর মধ্যেই বুঝতে পেরেছিলাম।

যত তাড়াতাড়ি সেই ছোট্ট ঘরে চলে গেল, এ্যাডওয়ার্ড আমাকে দরজার দিকে ঠেলে দিল তাড়াতাড়ি। আমি মুখের ভয়ানক অভিব্যক্তিটা অনুভব করতে পারছিলাম এবং কান্না আমার চোখ দিয়ে নেমে আসতে শুরু করল।

সোনালি রঙের হলওয়ে বেশ নির্জন। খালি শুধুমাত্র একজন অভিজাত অদ্ভুত মহিলা ছাড়া। সে আমাদের দিকে কৌতূহলের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। বিশেষত আমার দিকে।

সুস্বাগত, বাড়িতে হেইডি। দিমিত্রি আমাদের পিছন থেকে তাকে অভিনন্দন জানালো।

হেইডি অন্যমনস্কভাবে হাসল। সে আমাকে রোসালির কথা মনে করিয়ে দিল। যদিও তাঁরা দুজনে মোটেই একইরকম দেখতে নয়। এটা শুধুমাত্র তার সৌন্দর্যের ব্যাপারে। এতটাই ব্যতিক্রমী ভোলা যায় না। আমি সেদিক থেকে দৃষ্টি ফেরাতে পারলাম না।

সে সেই সৌন্দর্যকে আরো জোরদার করার জন্য কড়া পোশাক পরেছিল। তার বিস্ময়ুকারভাবে দীর্ঘ পা মিনি স্কার্ট পরা ছিল। তার উপরের অংশে লংস্লিভ এবং বড়গলার কিন্তু খুবই কাছাকাছি ফিটিং। সেগুলো লাল ভিনাইলের তৈরি। তার মেহগনির মত লম্বা চুল খুব অভিলাসী ধরনের এবং তার চোখ যেন ভায়োলেটে একটা ছোঁয়া পড়েছে।

দিমিত্রি। সে তার রেশমী কণ্ঠস্বরে উত্তর দিল। তার চোখ আমার মুখের দিকে বার বার পলক ফেলছিল এবং এ্যাডওয়ার্ডের ক্লোকের দিকে।

অপুর্ব। দিমিত্রি তাকে প্রশংসা করল।

ধন্যবাদ। সে হাসি দিল তুমি কি আসছ না।

এক মিনিটের মধ্যে। আমার জন্য এটা রেখো।

হেইডি মাথা নোয়াল এবং দরজা দিয়ে তাকিয়ে বেরিয়ে গেল আমার দিকে শেষ কৌতূহলী দৃষ্টি দিয়ে।

এ্যাডওয়ার্ড এত জোরে চলতে লাগল যে তাল মিলাতে আমাকে দৌড়াতে হলো। কিন্তু আমরা এখনও আমরা সেই স্বর্ণালী দরজা দিয়ে বেরুতে পারিনি যেটা হলওয়ের একেবারে শেষ প্রান্তে। চিৎকার শুরু হওয়ার আগে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *