০৫-৬. মাইক উপদেশ দিল

০৫.

বেলা, তুমি এখনও কেন চলে যাচ্ছ না। মাইক উপদেশ দিল। সে চোখের কোণা দিয়ে আমাকে দেখছিল। সরাসরি তাকাচ্ছিল না। আমি বিস্মিত কতক্ষণ ধরে সে এভাবে আমাকে লক্ষ্য করে চলেছে।

মনে হচ্ছিল নিউটনের ওখানে একটা অলস বিকাল। এই মুহূর্তে মাত্র দুজন নিয়মিত খদ্দের দোকানে আছে। ব্যাক পেপার নিয়ে কিছু একটা বলছে। তাদের কথোপকথন থেকে সেটা ভেসে আসছে। মাইক শেষ দুই ঘণ্টা আপ্রাণ চেষ্টা করছে দুই কাষ্টমারকে তাদের চাহিদামত জিনিস গছিয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু তারা চেষ্টা করছে এটা ওটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে তারপর তাদের সিদ্ধান্ত জানাতে। সেটা তাদের কথোপকথন থেকে বোঝা যাচ্ছে। তাদের আলাপ আলোচনা মাইককে সেখান থেকে এক মুহূর্তের জন্য এদিকে আসার সুযোগ করে দিল।

আমি এখানে থাকতে অসুবিধা বোধ করছি না। আমি বললাম। আমি এখনও আগের সেই অবশ অবস্থা থেকে বের হতে পারছি না। সবকিছুর মধ্যে কেমন যেন মনে হয় অদ্ভুতভাবে যোগসুত্র আছে। আর আজ দিনটা শব্দে ভরা। যেন আমি আমার কান থেকে তুলা বের করে ফেলেছি। আমি চেষ্টা করছিলাম কোনরকম চেষ্টা ছাড়াই শব্দগুলো ধরতে।

আমি তোমাকে বলেছি, মোটা মানুষটা বলল, তার কমলা রঙের দাঁড়ি চুমড়ে আছে যেটা তার ধূসর চুলের সাথে মানাচ্ছিল না। আমি খুব কাছ থেকে হলুদ পাথর দেখেছি। কিন্তু সেগুলো এই ব্রুটের কাছে কিছুই না। তার চুলগুলো ম্যাড়ম্যাড়ে। তার কাপড়চোপড় দেখাচ্ছে কয়েক দিন ধরে তারা পর্বত থেকে বেড়িয়ে এসেছে।

কোন সুযোগ নেই। এতবড় কালো ভালুক হয় না। যে ধুসর বর্ণেরটা তুমি দেখেছিলে সেটা সম্ভবত ছিল অন্যকিছু। দ্বিতীয় মানুষটা লম্বা ও শুকনো। তার মুখ টানটান এবং চামড়ার জ্যাকেট পরা।

সিরিয়াসলি, বেলা, এই দুজন যত তাড়াতাড়ি চলে যাবে। আমি এই জায়গা বন্ধ করে দেব। মাইক বিড়বিড় করে বলল।

যদি তুমি চাও আমি যাই.. আমি কাঁধ ঝাঁকালাম।

বাকি চারটে থেকে এটা তোমার চেয়ে অনেক লম্বা। দাড়িওয়ালা লোকটা জোর গলায় বলল। আমি আমার জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছিলাম। সেটা দেখতে একটা বাড়ির মতই বড় এবং আলকাতরার মত কালো। আমি এটা নিয়ে এখানকার রেঞ্জারের কাছে রিপোর্ট করতে যাচ্ছি। জনগণকে সতর্ক করে দেয়া দরকার- এইটা পর্বতে ছিল না। মনে করে দেখ- এটা মাত্র এখানকার ট্রেইল হেড থেকে কয়েক মাইল দূরে।

টানটান মুখের লোকটা হাসল এবং তার চোখ ঘোরাল আমাকে অনুমান করতে দাও-তুমি তোমার পথে ঠিক আছে? এখনও পর্যন্ত কোন সত্যিকারের খাবার খাওনি অথবা মাটিতে এক সপ্তাহের মধ্যে ঘুমাওনি, ঠিক বলেছি না?

হেই, আ, মাইক, ঠিক? দাড়িওয়ালা লোকটা ভাকল, আমাদের দিকে তাকাল।

 আগামী সোমবার দেখা হবে। আমি বিড়বিড় করে বললাম।

বলুন স্যার। মাইক ওদের দিকে ঘুরে উত্তর দিল।

জিজ্ঞেস করো, সম্প্রতি কি এখানে কোন ধরনের সতর্ক বাণী প্রচার করা হয়েছে? কালো ভালুক সম্বন্ধে?

না স্যার। কিন্তু এটা সবসময়ই ভালো যে আপনাদের দূরত্ব বজায় রাখা এবং জায়গামত খাবার সগ্রহ করে রাখা। আপনারা কি নতুন ভালুকের নিরাপদ ক্যানেস্তারা দেখেছেন?

দরজা একটুখানি সরে খুলে গেল। আমি এই বৃষ্টির মধ্যে বের হয়ে পড়লাম। নিচু হয়ে জ্যাকেট মাথার উপর তুলে আমার মোটরলরির দিকে এগিয়ে গেলাম। বৃষ্টির ফোঁটা আমার হুডের উপর অস্বাভাবিকভাবে জোরালো শব্দ করছিল। কিন্তু শিগগিরই ইঞ্জিনের গর্জন সবকিছুকে ছাপিয়ে গেল।

আমি আমাদের খালি বাসায় ফিরে যেতে চাইছিলাম না। গত রাত সত্যিকারণেই বেশ নির্দয় ছিল। সেই দুঃসহ যন্ত্রণার মধ্যে ফিরে যাওয়ার আমার কোন ইচ্ছেই নেই। যদিও তার পরে ব্যথাটা ছড়িয়ে গিয়ে ঘুমানোর মত করে দিয়েছিল। কিন্তু সেটা শেষ হয়নি। যেমনটি আমি জেসিকাকে ছবি শেষে বলেছিলাম। এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই আমি আজ দুঃস্বপ্ন দেখব।

আমি এখন সবসময় দুঃস্বপ্ন দেখি। প্রতিরাতে। এটা প্রকৃতপক্ষে একটাই দুঃস্বপ্ন। অনেকগুলো নয়। কারণ আমি প্রতিরাতে একই দুঃস্বপ্ন দেখি। আপনি হয়তো মনে করতে পারেন কয়েক মাস চলে যাওয়ায় আমার বিরক্তি ধরে গেছে। একটা প্রতিরোধ শক্তি গড়ে উঠেছে। কিন্তু দুঃস্বপ্নটা আমাকে ভয়ার্ত করতে কখনও ব্যর্থ হয় না। তখনই শুধুমাত্র শেষ হয় যখন ভয়ার্ত চিৎকার দিয়ে বিছানায় জেগে উঠি। আমার কি সমস্যা হচ্ছে সেটা দেখতে চার্লি কখনই আসেন না। সেখানে কোন অনুপ্রবেশকারী অথবা এরকম কেউ নেই সেটা নিশ্চিত করতে তিনি আসেন না। তিনি এখন এটাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

আমার দুঃস্বপ্ন সম্ভবত এখন আর কাউকে ভয়ার্ত করছে না। কিছুই লাফ দিয়ে বেরিয়ে আসে না এবং চিৎকার দেয় না বু—উ। সেখানে কোন জম্বি নেই। কোন ভূত নেই। কোন সাইকোপ্যাথ নেই। সেখানে প্রকৃতপক্ষে কিছুই নেই। শুধু অসীম গোলকধাঁধার মসে আচ্ছাদিত গাছগুলোর ভেতর দিয়ে এগিয়ে চলা। এতই নিঃশব্দে যে একটা অস্বস্তিকর চাপ আমার কানের উপর দিয়ে যায়। এটা ছিল অন্ধকার। মেঘাচ্ছন্ন দিনে ধুলিধূসরের মত। সেখানে এমন আলো ছিল যা দিয়ে আসলে কিছুই দেখা যায় না। আমি অন্ধকারের ভেতর দিয়ে কোন পথে না গিয়ে ব্যস্ততা লাগালাম। সবসময় খুঁজছি, খুঁজছি আর খুঁজছি। যতই সময় যাচ্ছে ততই উন্মত্ত হয়ে পড়ছি। চেষ্টা করছি আরো জোরে যেতে। যদিও গতি আমাকে ধীর করে দিচ্ছে। তারপর সেইখানে আমার স্বপ্নের ঠিক জায়গায় আসল। আমি অনুভব করলাম এটা আসছে। কিন্তু দেখে কখনও মনে হয় না এটা আঘাত করার আগেই আমি জেগে উঠব। যখন আমি মনে করতে পারি না এটা কি ছিল, যেটা আমি খুঁজছি। যখন আমি বুঝতে পারলাম সেখানে খোঁজার মত কোন কিছুই নেই। কিছু পাওয়াও যাবে না। সেখানে শূন্যতা ছাড়া কখনওই আর কোন কিছু ছিল না। নিষ্প্রাণ গাছপালা ছাড়া। সেখানে কখনও আমার জন্য বেশি কিছু ছিল না… কিছুই না… কিছুই না…

সেই সময়ই সাধারণত আমার চিৎকার শুরু হয়।

আমি কোন দিকে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছি সেদিকে মোটেই মনোযোগী হলাম না। শুধু বিস্ময়ের সাথে শূন্যতা অনুভব করছিলাম। ভেজা রাস্তা ধরে চালিয়ে আমি বাড়িতে পৌঁছুলাম। কারণ আমার যাওয়ার আর কোন জায়গা নেই।

আমি আশঙ্কা করছিলাম আবার হয়তো অবশ হয়ে পড়ব। কিন্তু আমার মনে নেই আমি কীভাবে এটাকে আগে শান্ত করলাম। দুঃস্বপ্নটা আমার মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল। আমাকে যন্ত্রণাদায়ক বিষয়ে ভাবার জন্য তৈরি করছিল। আমি সেই জঙ্গলটার কথা মনে করতে চাচ্ছিলাম না। এমনকি আমি সেই দৃশ্য কল্পনা করেও ভয়ে কম্পিত হয়ে পড়ি। আমি অনুভব করলাম আমার চোখ জলে ভরে যাচ্ছে। বুকের গভীর ক্ষতের পাশ দিয়ে যন্ত্রণাদায়ক ব্যথাটা শুরু হচ্ছে। আমি এক হাত স্টিয়ারিং হইল থেকে তুলে নিলাম।

এটা এমন হবে যে আমার কখনও কোন অস্তিত্ব ছিল না।

এ্যাডওয়ার্ডের কথাগুলো আমার মাথার ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছিল। গতরাতের হ্যালুসিনেশনের ব্যাপারটার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল। সেগুলো ছিল শুধু বাক্য, শব্দহীন, যেন কোন কাগজে মুদ্রিত। শুধুই শব্দমালা। কিন্তু সেগুলো ক্ষতটাকে আরো বড় করে দিচ্ছিল। আমি ব্রেকের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়লাম।

আমি কুঁকড়ে গেলাম। স্টিয়ারিং হুইলের উপর আমার মুখ দিয়ে চাপ দিচ্ছিলাম। চেষ্টা করছিলাম ফুসফুস ছাড়াই শ্বাস নিতে।

কতক্ষণ ধরে এই রকম চলবে এটা ভেবে আমি বিস্মিত। হতে পারে কিছুদিন। হয়তো এখন থেকে বছরও পেরিয়ে যেতে পারে। যন্ত্রণাটা সময়ের সাথে আস্তে আস্তে শুধু কমে আসে। যেখান থেকে আমি যন্ত্রণাটা পেয়েছিলাম। আমি জীবনের পেছন দিকে ফিরে তাকানোর সামর্থ্য অর্জন করব। যদি এটা সম্ভব হয় যন্ত্রণাটা সহ্য করার মত নরম হয়ে আসে, নিশ্চিত আমি তার প্রতি এত বেশি কৃতজ্ঞ থাকব সে যেটুকু সময় দিয়েছে। যতটুকু আমি চেয়েছি, যতটকু আমি আশা করেছি। হতে পারে কোনদিন আমি এই পথে এটা দেখতে সমর্থ হব।

কিন্তু যদি এই ক্ষতটা আর কখনও ভাল না হয়? যদি কাঁচা অংশগুলো আর কখনও সেরে না ওঠে? যদি ক্ষতটা চিরস্থায়ী হয়? ভাল না হয়?

আমি নিজেকে কঠোরভাবে ধরে রাখলাম। এটা এমন যেন আমার কখনও অস্তিত্ব ছিল না। আমি এটা নিয়ে ভাবলাম। কত বোকা এবং অসম্ভব প্রতিজ্ঞা তৈরি করেছে। সে আমার ছবি চুরি করতে পারে। তার উপহারগুলোও। কিন্তু তার সাথে দেখা হওয়ার আগের সেই সময়টা আর ফেরত আসবে না। এই সমীকরণের অংশ হিসাবে শারীরিক সাক্ষ্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি পরিবির্তিত হয়ে গিয়েছি। আমার ভেতরে এত পরিবর্তন যে সেটা চেনার মত নয়। এমনকি আমাকে বাইরের থেকেও ভিন্ন দেখায়। আমার মুখ ফোলা ফোলা। গোলাপি রঙ থেকে ফ্যাকাশে সাদা হয়ে গেছি। চোখের নিচের দুঃস্বপ্নের কারণে কালি পড়ে গেছে। আমার ফ্যাকাশে রঙের তুলনায় চোখজোড়া অনেক বেশি কালো। যদি আমি সুন্দরী হয়ে থাকি, আগের কথা ধরলে, আমি এখন ভ্যাম্পায়ারদের পাশ দিয়ে চলে যেতে পারি। কিন্তু আমি সুন্দরী নই এবং সম্ভবত আমাকে খুব বেশি জম্বিদের মত দেখায়।

যদি তার কোন অস্তিত্ব না থাকত? হুহ্। সেটা পাগলের প্রলাপ। এটা এমন একটা প্রতিজ্ঞা যেটা সে কখনও রাখতে পারবে না। এমন প্রতিজ্ঞা যেটা খুব তাড়াতাড়িই সে ভেঙে ফেলবে।

আমি স্টিয়ারিং হুইল থেকে মাথা তুললাম। তীক্ষ্ণ যন্ত্রণা থেকে মনোযোগ অন্য দিকে সরিয়ে নিতে চেষ্টা করলাম।

প্রতিজ্ঞা পালনের ব্যাপারে নিজেকে অনেক বেশি বোকা ভাবতে শুরু করলাম। অন্য পক্ষ থেকে যে চুক্তি এরই মধ্যে ভাঙ্গা হয়ে গেছে সেই চুক্তি ধরে রাখার যুক্তিটা কি থাকতে পারে? কে গ্রাহ্য করবে আমি যদি বোকামি করে হঠকারী সিদ্ধান্ত নেই? সেখানে হঠকারী। হওয়ার কোন কারণ নেই। আমি কেন বোকামি করব না তার কোন কারণই নেই।

আমি নিজের রসিকতায় নিজেই হেসে উঠলাম। এখন হা করে শ্বাস নিচ্ছি। ফর্কে এখন আশাহীন অবস্থা বিরাজ করছে।

অন্ধকার আমাকে রসিকতা থেকে বিছিন্ন করল। যন্ত্রণা থেকেও। আমার শ্বাসপ্রশ্বাস সহজ হয়ে এল। আমি সিটে হেলান দিয়ে বসার মত অবস্থায় ফিরে এলাম। যদিও আজ বেশ ঠাণ্ডা, আমার কপাল ঘামে ভিজে গেছে।

আমি সেই তীক্ষ্ম যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আশাহীন অবস্থার ব্যাপারে মনোনিবেশ করলাম। ফর্কের ব্যাপারে উদাসীন হয়ে আমি সৃষ্টশীল অনেক কিছু দেখাতে পারি। হতে পারে আমি যা পারি তার চেয়ে বেশি। কিন্তু আমি আশা করছি আমি কোন একটা পথ খুঁজে পাব… আমি হয়তো আরো ভাল অনুভব করব যদি আমি এসব আঁকড়ে ধরে না থাকি। একাকী। একজন প্রতিজ্ঞা ভঙ্গকারী। যদিও আমি একজন শপথ ভঙ্গকারী। কিন্তু কীভাবে আমি আমার পক্ষ থেকে প্রতারণা করব। এই ছোট্ট নিষ্পাপ শহরে? অবশ্যই, ফর্ক সবসময় এতটা ক্ষতিকর থাকে না। কিন্তু এখন শহরটাকে ঠিক যেমনটি দেখায় তেমনটিই। এটা নিরানন্দ। নিরাপদ।

আমি অনেকক্ষণ ধরে জানালার কাঁচের বাইরে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। আমার চিন্তাভাবনা আস্তে আস্তে এগুতে লাগল। আমি এই চিন্তাগুলোকে অন্যত্র যেতে দিলাম না। গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে দিলাম। যেটা এতক্ষণ ধরে উপেক্ষা করা সত্বেও গর্জন করে চলছিল। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে বেরিয়ে এলাম।

ঠাণ্ডা বৃষ্টির ফোঁটা চুলের উপর পড়ছিল। বৃষ্টির ফোঁটা আমার চিবুক বেয়ে এমনভাবে গড়াচ্ছিল যেন কান্নার জল। এটা আমার মাথা পরিষ্কার করে দিল। আমি চোখে বৃষ্টির পানি নিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।

কয়েক মিনিট একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার পর, আমি কোথায় সেটা চিনতে পারলাম। আমি রাসেল এভিনিউয়ের উত্তর লেনের মাঝখানে পার্ক করে আছি। আমি চেনিয়ার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার ট্রাক তাদের ড্রাইভওয়ে বন্ধ করে দিয়ে আছে। এই রাস্তার উল্টোদিকে মার্কেজরা বাস করে। আমি জানি আমার ট্রাকটা সরানো দরকার। আমার বাড়িতে ফেরা উচিত। যেভাবে আমি আছি এটা বেআইনী। এখন আমি বিছিন্ন। একাকী। ফর্কের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। আশেপাশের কেউ একজন আমাকে দেখে ফেলতে পারে। তারপর চার্লির কাছে যেয়ে রিপোর্ট করতে পারে।

গভীর শ্বাস নিয়ে চলার প্রস্তুতি নিলাম। মার্কেজের উঠোনের একটা সাইনবোর্ড আমার নজরে পড়ল। এটা একটা বিশাল কার্ডবোর্ডের উপর তাদের মেইলবক্স পোস্টের খুঁটির সাথে লাগানো। কালো অক্ষরগুলো বড় বড় ভাবেই দেখা যাচ্ছে।

কখনো কখনো কাকতালীয় ব্যাপারও ঘটে।

কাকতালীয়? অথবা এটা কী তাই হতে পারে? আমি জানি না। কিন্তু এটা দেখে মনে হচ্ছে ওদের বাড়ির সামনে একটা মোটর সাইকেল বিক্রির জন্য সাইনবোর্ড টাঙিয়ে রেখে দিয়েছে।

সুতরাং এটা কাকতালীয় নাও হতে পারে। হতে পারে সবধরনের উদাসীনতার ব্যাপারে। আমি শুধু সেদিকে দৃষ্টি দিচ্ছি।

উদাসীন এবং বোকা। মোটরসাইকেলের উপর প্রয়োগ করার জন্য এদুটো চার্লির খুব প্রিয় শব্দ।

বড় শহরের একজন পুলিশের মত চার্লির চাকরি এখানে এতটা মনোযোগ কাড়ে না। কিন্তু একটা সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে তাকে ডাকা হয়।

অনেক বেশি প্রতিজ্ঞা আমি বহন করে চলেছি…

এটা আমার বেশ মনে ধরল। আমি বোকা এবং উদাসীন হতে চাই। আমি প্রতিজ্ঞা ভাঙতে চাই। কেন এটা বন্ধ করতে হবে?

আমি যেমনটি ভেবেছিলাম সেটা প্রায় ততটুকুই দূরে। আমি বৃষ্টির মধ্যে মার্কেজদের দরজার সামনে চলে এলাম। বেল বাজালাম।

মার্কেজদের কোন একজন ছেলে দরজা খুলে দিল। সবচেয়ে ছোটজন। নিরীহ গোছের। তার নাম মনে করতে পারলাম না। তার ধুসর চুল আমার কাঁধের উপর এসে পড়েছিল।

আমার নাম মনে করতে তার কোন ঝামেলায় পড়তে হলো না। বেলা সোয়ান? সে বিস্ময়ের সাথে জিজ্ঞেস করল।

তুমি বাইকটার জন্য কত টাকা চাও? আমার কাঁধের উপর দিয়ে বিক্রির ডিসপ্লের দিকে আঙুল তুলে দেখালাম।

তুমি কি সিরিয়াস? সে জিজ্ঞেস করল।

অবশ্যই আমি সিরিয়াস।

এগুলো কাজ করে না।

আমি অধৈর্যভাবে শ্বাস নিলাম। এটা এমন কিছু যেটা আমি সাইনবোর্ড দেখেই ধারণা করে নিয়েছিলাম। কত দাম?

তুমি যদি সত্যিই একটা চাও। শুধু এটা নিয়ে যাও। আমার মা বাবাকে বলেছিল এটা এখন থেকে সরিয়ে কোন আবর্জনা ভাগাড়ে দিয়ে আসার জন্য।

আমি বাইকটার দিকে আবার তাকালাম। দেখলাম কতগুলো আবর্জনার সাথে সেগুলো রাখা আছে। তুমি কি এই ব্যাপারে নিশ্চিত?

নিশ্চয়। তুমি তাকে জিজ্ঞেস করে দেখতে চাও?

এসব কাজে বড়দের না জড়ানোই ভাল। ওরা সেটা চার্লির কাছে উল্লেখ করতে পারে।

না। আমি তোমাকে বিশ্বাস করি।

তুমি কি আমাকে কোন কিছু সাহায্য করতে বলো? সে প্রস্তাব দিল। ওখানে কোন আলো নেই।

ঠিক আছে। ধন্যবাদ। আমার শুধু একটাই দরকার।

যদি ভাল হয় দুটোই নিয়ে যাও। ছেলেটা বলল হতে পারে তুমি অন্যটার থেকে কোন পার্টস খুলে নিতে পারবে।

সে এই ঝরঝরে বৃষ্টির মধ্যে আমার সাথে এল। দুটো ভারী মোটরবাইকই আমার ট্রাকের পিছনে তুলে দিতে সাহায্য করল। তাকে দেখে মনে হয় সে এগুলো থেকে মুক্তি পেতে আগ্রহী। সে কারণে আমি আর তর্ক করলাম না।

যাই হোক, তুমি এইগুলো নিয়ে গিয়ে কি করবে? সে জিজ্ঞেস করল। এগুলো কয়েক বছর ধরেই কাজ করে না।

আমিও দেখে সেটাই ভেবেছিলাম। আমি কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললাম। এক মুহূর্তের সিদ্ধান্তে নিয়ে নেয়া জিনিসের ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই। হতে পারে আমি এগুলোকে ডাউলিংয়ে নিয়ে যাব।

সে গুঙিয়ে উঠল।চালানোর চেয়ে ডাউলিংয়ে এগুলো ঠিক করে দেয়ার অনেক বেশি খরচ হবে। 

আমি সেটা নিয়ে তর্ক করতে পারতাম। জন ডাউলিংয়ের দাম হাঁকার ব্যাপারে বাজারে সুনাম আছে। কেউ জরুরি অবস্থায় ছাড়া তার কাছে যায় না। অধিকাংশই পোর্ট এঞ্জেলে নিয়ে যাওয়া পছন্দ করে। যদি তাদের গাড়ির সে সমর্থ থাকে। আমি সেই দিক দিয়ে খুব ভাগ্যবতী। তবে আমি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। যখন চার্লি প্রথমেই আমার ট্রাকের দিকে নজর দেবে যেটা আমি আর চালিয়ে নিয়ে যেতে সমর্থ হচ্ছি না। কিন্তু আমার এটা নিয়ে কখনও সামান্যতম সমস্যায় পড়তে হয়নি। অন্যথায় জোর শব্দ করা ইঞ্জিন ছাড়া এবং পঞ্চাশ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ গতিসীমা। জ্যাকব ব্লাক এটাকে খুব সুন্দর অবস্থায় রেখেছিল যখন সে এটা তার বাবার কাছ থেকে পায়।

বিদ্যুৎ চমকের আলোয় তাকে বেশ উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছিল তুমি জানো সেটা? তাহলে ঠিক আছে। আমি এমন কাউকে চিনি যারা গাড়ি তৈরি করে।

ঠিক আছে। সেটাই ভালো। সে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে হাসল।

সে চলে গেল যখন আমি চালিয়ে চলে এলাম। তখনও হাসছে। বন্ধুত্বপুর্ণ ছেলে।

আমি তাড়াতাড়ি চালিয়ে চলে এলাম। চার্লির মনোভাব পরিবর্তন হওয়ার আগেই আমাকে কাজ করতে হবে। বড় ধরনের কোন অপছন্দের ঘটনা ঘটনার আগেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আমি বাড়ির ফোনের কাছে চলে এলাম। আমার হাতে এখনও চাবি।

চিফ সোয়ান, প্লিজ। ডেপুটি ফোন ধরলে আমি বললাম। আমি বেলা।

 ওহ হেই, বেলা। ডেপুটি আনন্দিত স্বরে বলল আমি তাকে ডেকে দিতে যাচ্ছি।

আমি অপেক্ষা করতে থাকলাম।

কি হয়েছে বেলা? চার্লি ফোন তুলেই জানতে চাইলেন।

গুরুত্বপুর্ণ কিছু না হলে কি আর আমি তোমার কাজের সময় ফোন করতে পারি না?

তিনি এক মুহূর্ত চুপ করে রইলেন। তুমি এর আগে কখনও সেটা করনি। কোন গুরুত্বপূর্ণ কিছু কি?

না। আমি ব্লাক আঙ্কেলের বাড়ির যাওয়ার ডিরেকশনটাই শুধু জানতে চাচ্ছিলাম। আমি এখনও নিশ্চিত নই আমি সেই পথটা মনে করতে পারব কিনা। আমি জ্যাকবের সাথে দেখা করতে যেতে চাই। আমি কয়েক মাসের মধ্যে তাকে দেখেনি।

যখন চার্লি আবার কথা বললেন তার কণ্ঠস্বর অনেক বেশি আনন্দিত মনে হলো সেটা ভাল কথা, বেলা। তোমার কাছে কি কোন কলম আছে?

যে ডিরেকশন তিনি আমাকে দিলেন খুবই সোজা। আমি তাকে নিশ্চিন্ত করলাম, আমি ডিনারের আগেই ফিরে আসব। যদিও তিনি আমাকে বলার চেষ্টা করছিলেন ব্যস্ত তার কিছু নেই। তিনি আমাকে লা পুশে যোগদানের কথা বলছিলেন। আমি সেটা করত চাই না।

আমাকে এখন এই ঝড় ও অন্ধকারের মধ্যে শহরে যেতে হবে। আমি আশা করছি জ্যাকবকে একাকীই পাব। বিলি সম্ভবত সেটা নিয়ে কি করতে পারব সে ব্যাপারে বলে দিতে পারবে।

আমাকে দেখার পর বিলির প্রতিক্রিয়া কি হবে ভেবে ভেবে গাড়ি চালাতে গিয়ে কিছুটা চিন্তিত ছিলাম। কে জানে, সে হয়তো খুবই খুশি হবে। বিলির মনের মধ্যে, কোন সন্দেহ নেই, এই সব অনেক ভাল কাজ করবে। তার আনন্দ এবং স্বস্তি আমাকে মনে করিয়ে দেয় আমি যেটা মনে করতে চাই না। আজ আবার নয়। আমি মনে মনে বললাম। আমি সেটা অতিবাহিত করেছি।

ব্লাকের বাড়ি খুবই পরিচিত। সরু সরু জানালার ছোট্ট কাঠের বাড়ি। বিবর্ণ লাল রঙের পেইন্টিং করা। এটা ছোট্ট একটা ঘরের মত। আমি ট্রাক থেকে নামার আগে, জ্যাকবের মাথা জানালা দিয়ে উঁকি দিল। কোন সন্দেহ নেই ট্রাকের পরিচিত ইঞ্জিনের গর্জন আমাকে কিছু বলার আগেই চিনিয়ে দিল। জ্যাকব খুবই কৃতজ্ঞ যখন চার্লি বিলির ট্রাক আমার জন্য এনে দিয়েছিল। জ্যাকবকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল এটা চালানোর থেকে যখন সে এটা একেবারে শেষ পর্যায়ে। আমার ট্রাকটা খুব পছন্দ করতাম। কিন্তু জ্যাকব দেখে মনে হয় কাছাকাছি আসার জন্য ব্যস্ত।

সে আমার দিকে এগিয়ে এসে দেখা করল।

বেলা। উত্তেজনা তার মুখের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। তার উজ্জ্বল দাঁত আলো ছড়াচ্ছিল। আমি কখনও তাকে দেখিনি চুল পনিটেইল করে পিছনের দিকে বাঁধতে। এটাতে তাকে অন্যরকম দেখাচ্ছিল।

জ্যাকব গত আট মাসে আরো শক্তপোক্ত হয়েছে। তার মুখ আমি আগে যেরকম দেখেছিলাম সেরকম সুন্দর। যদিও সেখানে কিছুটা কাঠিন্য ভর করেছে।

হেই, জ্যাকব। তার হাসির মধ্যে প্রাণময়তার উপস্থিতি অনুভব করলাম। তাকে দেখে আমি খুশি হয়েছি এটা বুঝতে পারলাম। সেটা আমাকে বিস্মিত করল।

আমি প্রতি উত্তরে হাসলাম। দুজনার হাসির ভেতর দিয়ে কিছু একটা নিঃশব্দে কাজ করে যাচ্ছিল। যেন দুজন মানুষ বহুদিন পর মিলিত হচ্ছে। আমি ভুলে গিয়েছিলাম আমি জ্যাকব ব্লাককে সত্যিই কতটা পছন্দ করি।

সে আমার থেকে কয়েক ফিট দূরে থাকতেই থেমে গেল। আমি তাকে বিস্মিত হতে দেখলাম। আমার মাথা থেকে বৃষ্টির পানি ঝরে ঝরে পড়ছে।

তুমি আরও বড় হয়ে গেছে। আমি আনন্দিত সুরে অভিযোগ করলাম।

সে হাসল। তার হাসি সারা মুখে ছড়িয়ে পড়ল। পয়ষট্টি কেজি। সে আত্মতৃপ্তির সাথে ঘোষণা করল। তার কণ্ঠস্বর গভীর কিন্তু এটা সেই হাস্কি ভয়েস যেটা আমি মনে করতে পারি।

এটা কি কখনও শেষ হতে পারে? আমি অবিশ্বাসের সাথে মাথা নাড়লাম। তুমি দিন দিন বিশাল হয়ে যাচ্ছ।

এটা এইভাবে বেড়েই চলেছে। সে মুখ ভেঙচাল। ভেতরে এসো। তোমার তো সব ভিজে গেছে।

সে পথ দেখিয়ে নিয়ে গেল। তার বিশাল হাতে পেছনের চুলগুলো মোচড়াতে লাগল। সে তার হিপ পকেট থেকে একটা রাবার ব্যান্ড বের করলো। এটা দিয়ে পিছনের চুল বাঁধল।

হেই বাবা। সে ডাকল যেন ডাকটা সামনের দরজা দিয়ে ভেতরে যায়। দেখ, কে এখানে এসে থেমেছে।

বিলি ছোট্ট লিভিংরুমটাতে ছিলেন। তার হাতে একটা বই। তিনি বইটা কোলের উপর রাখলেন। আমাকে দেখতে পেয়ে নিজেকে ঠেলে সামনের দিকে চালিয়ে নিয়ে এলেন।

বেশ। তুমি কি জানো, তোমাকে দেখে কত খুশি হয়েছি বেলা!

আমরা হাতে হাত মেলালাম। তার বিশাল হাতের মধ্যে আমার ছোট হাত হারিয়ে গেল।

কী তোমাকে এখানে টেনে এনেছে? চার্লির সবকিছু ঠিকঠাক আছে তো?

হ্যাঁ। আসলে আমি শুধু জ্যাকবকে দেখতে এসেছি। আমি অনেকদিন তাকে দেখি নি।

আমার কথায় জ্যাকবের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। তিনি এত বড় করে হাসলেন যে আমার মনে হলো এটা তার দুগালে ব্যথা দেবে।

তুমি কি ডিনারের জন্য থাকবে? বিলিও আগ্রহান্বিত।

না। আমাকে সবসময় চার্লিকে খাওয়াতে হয়, আপনি জানেন।

আমি এখনই তাকে ডাকছি। বিলি উপদেশ দিলেন। সে সবসময়ই আমন্ত্রিত।

আমি অস্বস্তি এড়ানোর জন্য হাসলাম। এটা তো আর এমন নয় যে আপনি আর কখনওই আমাকে দেখবেন না। প্রমিজ করছি আমি তাড়াতাড়িই ফিরে আসব। এখানে এতবার আসব আপনি আমাকে দেখে অসুস্থ হয়ে পড়বেন। এতসবের পরে, যদি জ্যাকব মোটরবাইকটা ঠিক করে দিতে পারে, কেউ একজন দরকার পড়বে যে আমাকে কীভাবে চালাতে হয় শিখিয়ে দেবে।

বিলি উত্তরে চুকচুক করে শব্দ করলেন ঠিক আছে, পরের বার দেখা যাবে।

 তো বেলা, তুমি কি করতে চাও? জ্যাকব জিজ্ঞেস করল।

যাই করি না কেন। আমি এখানে আসার আগে তুমি কি করছিলে? হঠাৎ করে এইভাবে এখানে এসে বেশ স্বস্তিবোধ করছিলাম। আরাম পাচ্ছিলাম। এটা খুবই পরিচিত। কিন্তু শুধু দূরত্বসূচক। আমার সাম্প্রতিক অতীত নিয়ে এখানে কোন যন্ত্রণাদায়ক স্মৃতি নেই।

জ্যাকব ইতস্তত করতে লাগল আমি এইমাত্র আমার গাড়ি নিয়ে কাজ করতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু এখন আমরা অন্য কিছুও করতে পারি…

না। সেটাই উপযুক্ত। আমি বাধা দিলাম। আমি তোমার গাড়িটা দেখতে পছন্দ করি।

ঠিক আছে। সে বলল, গাড়িটা আমাদের গ্যারেজে। গ্যারেজটা বাড়ির পিছনে।

এটাতো ভালই। আমি তাই ভাবলাম। আমি বিলিকে হাত নাড়লাম। পরে দেখা হবে।

মোটামোটা গাছের গুড়ি তার গ্যারেজকে ঘিরে আছে। গ্যারেজটা কয়েকটা বিশাল ছাউনি দিয়ে ঢাকা ছাড়া আর কিছু না। সেই ছাউনির নিচে, কয়েকটা সিলিন্ডার উঠানো। যেটা দেখে একটা অটোমোবাইলের কারখানার মত লাগে। আমি কিছু পরিচিত জিনিস অন্ততপক্ষে সেখানে দেখতে পেলাম।

একটা কোন প্রকারের ভক্সওয়াগান? আমি জিজ্ঞেস করলাম।

 এটা একটা পুরানো.রা্যাবিট-১৯৮৬। একটা ক্লাসিক গাড়ি।

কেমন চলছে? কতদুর?

কাজ প্রায় বেশির ভাগ শেষ। সে আনন্দিত স্বরে বলল। তার কণ্ঠস্বর হঠাৎ করে নিচু হয়ে গেল। বাবা তার গত বসন্তের প্রতিজ্ঞা রক্ষা করেছেন।

ওহ! আমি বললাম।

তাকে দেখে মনে হল সে আমার এই বিষয়ে কথা বলা নিয়ে বুঝতে পেরেছে। আমি গত মে মাসের কথা মনে করতে চেষ্টা করলাম। জ্যাকব তার বাবার কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছিল। গাড়ির যন্ত্রাংশগুলো সেই ধরনের একটা তথ্য দিচ্ছে। বিলি আমাকে একটা নিরাপদ দূরত্বে থাকার নির্দেশ দিয়েছিল আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মানুষটার কাছ থেকে। এটা তার সচেতনতার রুপ নিয়েছিল।

কিন্তু আমি এখন দেখতে চাচ্ছি আমি এখান থেকে কোন ধরনের পরিবর্তন করে নিতে পারি।

জ্যাকব, তুমি মোটরসাইকেল সম্বন্ধে কি জান? আমি জিজ্ঞেস করলাম।

সে কাঁধ ঝাঁকাল। কিছুটা। আমার বন্ধু এমব্রির একটা ডার্ট বাইক আছে। আমরা এটা নিয়ে মাঝেমাঝে একত্রে কাজ করি। কেন?

বেশ…আমার ঠোঁটট চাটলাম। আমি নিশ্চিত নই সে এ ব্যাপারে তার মুখ বন্ধ রাখবে কিনা। কিন্তু আমার আর অন্য কোন পথ খোলা নেই। আমি সম্প্রতি এক জোড়া মোটরসাইকেল পেয়েছি। সেগুলো খুব একটা ভালো অবস্থায় আছে তা বলা যাবে না। আমি বিস্মিত হব যদি তুমি সেগুলো চালানোর মত করে দিতে পার?

শান্ত হও। তাকে দেখে মনে হলো চ্যালেঞ্জের জন্য সে সত্যিই আনন্দিত। তার মুখে হাসি। আমি একটা চেষ্টা করে দেখতে পারি।

আমি সর্তকভাবে আঙুল উঁচু করে দেখলাম। এই জিনিসটা। আমি ব্যাখ্যা করতে শুরু করলাম চার্লি কখনও মোটরসাইকেল ব্যবহার করা অনুমোদন করে না। সত্যি বলতে কি, কোনভাবে এই ব্যাপারটা জানতে পারলে তার হয়তো মাথা খারাপের মত হয়ে যাবে। সে কারণেই তুমি এটা কখনও বিলিকে বলবে না।

নিশ্চয়, নিশ্চয়। জ্যাকব হাসল। আমি বুঝতে পেরেছি।

 আমি এটার জন্য তোমাকে পারিশ্রমিক দেব। আমি বললাম।

এটা তাকে আঘাত করল। না। আমি তোমাকে সাহায্য করতে চাই। তুমি আমাকে তার দাম দিতে পার না।

বেশ… তাহলে তোমার ব্যবসা চলবে কীভাবে? সবকিছুই সেভাবে ঘটছিল যেভাবে আমি চাচ্ছিলাম। কিন্তু এটা বেশ সস্তায় মনে হচ্ছিল। আমার শুধু একটা মাত্র বাইক দরকার। এবং সেটা চালানো শেখাও আমার দরকার। সুতরাং এভাবে হলে কেমন হয়? আমি তোমাকে অন্য মোটরসাইকেলটা দেব। তার পরে তুমি আমাকে এটা চালানো শিখাবে।

মধুর শোনাচ্ছে। সে শব্দটাকে দুইভাগে ভাগ করে বলল।

এক সেকেন্ড অপেক্ষা কর-তুমি কি এখনও আইনগতভাবে পারবে? তোমার জন্মদিন কবে?

তুমি এটা মিস করেছ। সে টিজ করল। বিদ্রুপাত্বক ভঙ্গিতে চোখ টিপল। আমি সোল।

তোমার বয়স তুমি কখনও থামিয়ে দাওনি তো। আমি বিড়বিড় করে বললাম। তোমার জন্মদিন মনে না রাখার জন্য আমি দুঃখিত।

এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করো না তো। আমি তোমারটা মিস করেছি। তোমার এখন কত? চল্লিশ?

আমি মুখ বাঁকালাম। কাছাকাছি।

জন্মদিনকে উপভোগ করার জন্য আমাদের একটা যৌথ পার্টির দরকার।

 এটা তো ডেটিংয়ের মতই শোনাচ্ছে।

এই কথায় তার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল।

হতে পারে যখন বাইকটা ঠিক করা শেষ হবে। আমাদের উপহার আমাদের জন্য আনন্দের ব্যাপার হবে। আমি যোগ করলাম।

ডিল। তুমি কখন সেগুলোকে আমার জন্য নিয়ে আসবে?

আমি আমার ঠোঁট কামড়ে ধরলাম। বিব্রত। সেগুলো এখন আমার ট্রাকে আছে। আমি স্বীকার করলাম।

বহুত আচ্ছা। সে সেটাই বোঝাতে চাইল।

চাচা কি দেখতে পাবে যদি আমরা সেগুলো এখানে নিয়ে আসি?

সে আমার দিকে তাকিয়ে চোখ মটকালো। আমরা চোরের মত কাজ করব।

আমরা পুর্বদিক থেকে গাছের গা দিয়ে জানালার কাছাকাছি এলাম। জ্যাকব ট্রাকের বেড থেকে বাইকগুলো খুব দ্রুততার সাথে নামিয়ে ফেলল। সেগুলোকে একের পর এক ঠেলে ছাউনির নিচে নিয়ে গেল। সেখানে লুকিয়ে রাখল। এটা দেখে খুব সহজই মনে হচ্ছে। আমার মনে হয় বাইকগুলো তার কাছে হাল্কা দেখাচ্ছে তার চেয়ে অনেকগুন বেশি ভারী।

এগুলোর অর্ধেকটা খারাপ না। জ্যাকব মন্তব্য করল। আমরা সেগুলোকে গাছের নিচে ঢাকা দিলাম। এইটা, এইখানেরটা, আসলে আমি যেগুলো নিয়ে কাজ করেছি তার চেয়ে ভাল। এটা একটা হার্লে প্রিন্ট।

তাহলে ওইটা তোমার।

তুমি কি নিশ্চিত?

সত্যিই।

এগুলোর জন্য প্রথমেই কিছু ক্যাশ টাকার দরকার পড়বে। সে বলল, সে নিচের ধাতব জিনিসগুলোর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাল। আমাদের আগে পার্টসগুলোর ব্যাপারে দেখতে হবে।

আমার কিছুই নেই। আমি দ্বিধাগ্রস্ত। যদি তুমি এটা বিনামূল্যে করে দিতে পার, আমি পার্টসগুলোর জন্য দাম দেব।

আমি জানি না… সে বিড়বিড় করে বলল।

আমি কিছু টাকা সেভ করেছি। কলেজ ফান্ড থেকে, তুমি জানো। কলেজ। আমি ভাবলাম। এটা এমন নয় আমি এতটা জমিয়েছি বিশেষ কিছুর জন্য। যেকোন জায়গায় যাওয়ার জন্য। পাশাপাশি, আমার কোন চাহিদা নেই ফর্ক ছেড়ে চলে যাওয়ার। সেটা কি পার্থক্য আনবে যদি আমি কিছুটা উপরে যাই?

জ্যাকব শুধু মাথা উপর নিচ করল। সেটাই তার জন্য সবকিছু ঠিকঠাক আছে। বোঝাল।

যখন আমরা গ্যারেজে চলে এলাম, আমি নিজের ভাগ্যকে সাধুবাদ দিলাম। একমাত্র একজন টিনেজ বালক এতে একমত হবে। আমাদের দুজনের বাবা-মাকে প্রতারণা করে আমরা ভয়ানক বিপজ্জনক যানবাহন মেরামত করাচ্ছি। করাচ্ছি আমার কলেজ এডুকেশনের জমানো টাকা দিয়ে। সে এটাতে কোনরকম খারাপ বা ভুল কিছু দেখতে পেল না। জ্যাকব ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রাপ্ত উপহার।

.

০৬.

মোটরসাইকেল লুকানোর কোন দরকারই হলো না। শুধুমাত্র জ্যাকবের সাধারণ ছাউনির নিচে রাখাতেই কাজ হলো। বিলির হুইলচেয়ার অসমতল জায়গায় চলাচল করতে পারে না। আমাদের জায়গাটা বাড়ির থেকে পৃথক।

জ্যাকব প্রথম বাইকটা ঠেলতে শুরু করল। লাল রঙেরটা। সেটা আমার জন্য নির্ধারিত করা হয়েছে। তাড়াতাড়ি ঠিক করার জন্য। সে তার র‍্যাবিট গাড়ির প্যাসেঞ্জার দরজা আমার জন্য খুলে দিল, যাতে মাটিতে বসার পরিবর্তে সেটার সিটে আমি বসতে পারি। কাজ শুরু করে জ্যাকব আনন্দের শব্দ করতে লাগল। ছাউনির উপর থেকে আসা একমাত্র বাল্বের আলোর নিচে সে কথোপকথন চালিয়ে যাচ্ছিল। সে আমাকে তার স্কুলের ব্যাপার-স্যাপার বলছিল। তার চলতি ক্লাসগুলো সম্বন্ধে বলছিল। বলছিল তার দুজন সবচেয়ে ভাল বন্ধু সম্বন্ধে।

কুইল এবং এমব্রি? আমি মাঝখানে বললাম। দুইটায় অপরিচিত নাম।

জ্যাকব হাসল। কুইল মানে হচ্ছে হাত ধরে আমাকে নামাও। আর আমার মনে হয় এমব্রি তার নামটা কোন সোপ অপেরার তারকার কাছ থেকে পেয়েছে। আমি এ সম্বন্ধে যদিও সঠিক বলতে পারি না। তারা খারাপভাবে ঝগড়া শুরু করবে যদি তুমি তাদের নাম নিয়ে লাগতে চাও। তারা তোমাকে হতচ্ছাড়া করে তুলবে।

ভাল বন্ধু। আমি এক ভ্রূ উপরে তুললাম।

 না, তা তারা নয়। শুধু তাদের নাম নিয়ে কোন গোলমাল করো না।

 ঠিক তার পরেই দুর থেকে একটা ডাক প্রতিধ্বনিত হতে লাগল।

জ্যাকব? কেউ একজন ডাকছে।

 এটা কি বিলি? আমি জিজ্ঞেস করলাম।

না। জ্যাকব তার মাথা নাড়ল। তাকে দেখে মনে হলো সে একটু চমকেছে। শয়তানের কথাবার্তা। সে বিড়বিড় করে বলল। এবং শয়তানগুলো এসে পড়েছে।

জ্যাক? তুমি কি ওখানে আছো? চিৎকারের শব্দটা এখন আরো অনেক নিকটে।

হ্যাঁ। জ্যাকব প্রতি উত্তরে চেঁচাল।

আমরা সেই মৃদু শব্দের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম, যতক্ষণ না দুইজন লম্বা, কালো চামড়ার ছেলে ছাউনির কোণা পর্যন্ত এল।

একজন হালকা পাতলা, প্রায় জ্যাকবের সমানই লম্বা। তার কালো চুল ঘাড় পর্যন্ত লম্বা এবং সেটা কপালের উপর দিয়ে দুভাগ হয়ে প্রায় থুতনি পর্যন্ত পড়েছে। এক পাশ তার বাম কানের উপর দিয়ে পড়ছে যখন ডানপাশটা মুক্ত থাকছে। খাটো ছেলেটা আরো বেশি কালো। তার সাদা টিশাট তার বেশ চওড়া বুকের উপর এটে বসেছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে এই বিষয়ে সচেতন। তার চুল এতটাই ছোট দেখে মনে হয় যেন ন্যাড়া।

দুজনই থেমে গেল যখন তারা আমাকে দেখল। লম্বা ছেলেটি বারবার আমার ও জ্যাকবের দিকে তাকাচ্ছিল। শরীর সচেতন ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়েই ছিল। ধীরে ধীরে তার মুখে একটা হাসি ফুটে উঠছিল।

হেই বন্ধুরা, জ্যাকব তাদেরকে আন্তরিকভাবে সম্বোধন করল।

হেই জ্যাক। খাটো জন আমার দিকে থেকে চোখ না সরিয়েই বলল। আমিও প্রতি উত্তরে হাসলাম। সে আমার দিকে মুচকি হাসল। হাই, কেমন আছো?

কুইল, এমব্রি-এ হচ্ছে আমার বন্ধু বেলা।

কুইল আর এমব্রি। আমি এখনও জানি না কোন জন কে। তারা দুজনেই নিজেদের মধ্যে দৃষ্টি বিনিময় করল।

চিফ চার্লির মেয়ে, ঠিক? বাদামী ছেলেটি আমাকে প্রশ্ন করল। তার হাত বাড়িয়ে দিল।

সেটাই ঠিক। আমি নিশ্চিত করলাম। তার সাথে হ্যান্ডশেক করলাম। তার হাতের মুষ্ঠি দৃঢ়। দেখে মনে হচ্ছে সে তার বাইসেপকে সংকুচিত করছে।

আমি কুইল এটিরা। সে আমার হাত ছেড়ে দেয়ার আগে সগর্বে ঘোষণা করল।

তোমার সাথে দেখা হয়ে ভাল লাগল কুইল।

হাই বেলা। আমি এমব্রি। এমব্রি কল। তুমি সম্ভবত এরই ভেতরেই সেটা বুঝে গেছ। এমব্রি লজ্জিতভাবে একটু হাসল। তার এক হাত বাড়িয়ে দিল যেটা সে এতক্ষণ তার জিন্সের পকেটে ভরে রেখেছিল।

আমি মাথা উপর নিচ করলাম। তোমার সাথেও দেখা হয়ে খুশি হলাম।

তো তোমরা দুজনে এখানে কি করছ? কুইল জিজ্ঞেস করল। সে এখনও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

বেলা আর আমি মিলে এই মোটরবাইকগুলো ঠিক করতে যাচ্ছি। জ্যাকব ব্যাপারটা অন্যভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করল। কিন্তু বাইক শব্দটা ম্যাজিকের মত কাজ করল। তারা দুজনেই জ্যাকবের প্রজেক্ট দেখার জন্য গেল। তাকে এই সম্পর্কিত নানারকম প্রশ্ন করতে লাগল। অনেকগুলো শব্দ যা তারা ব্যবহার করছিল আমার কাছে অপরিচিত লাগল। আমি বুঝতে পারলাম আমার একটা ওয়াই ক্রোমোজম আছে যে কারণে আমি। সত্যিই বাইকের উত্তেজনার ব্যাপারটা বুঝতে পারছি না।

তারা এখনও পার্টসপাতি এবং টুকরো টাকরা নিয়ে কথা চালিয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হলো এখন আমার বাড়িতে ফেরা প্রয়োজন। চার্লি বাড়িতে আগেই ফিরতে হবে। আমি র‍্যাবিটের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলাম।

জ্যাকব আমাকে দেখল। তার চোখের দৃষ্টিতে অনুনয়। আমরা তোমাকে বের করে। দিয়েছি। তাই নয় কি?

না। এটা কোন মিথ্যে ছিল না। আমি নিজেকে এখানে বেশ উপভোগ করছিলাম কতই না অদ্ভুত। আমার এখনই চার্লির রাতের খাবার তৈরির জন্য যেতে হবে।

ওহ….বেশ। আমরা এই বিষয়ে আজ রাতে কথা বলে শেষ করে রাখব। এবং এই জিনিসটাকে আবার দাঁড় করানোর জন্য কি কি প্রয়োজন হতে পারে সেটা বের করার চেষ্টা করব। সেগুলোকে আবার কাজ করছে সেটা তুমি কখন দেখতে চাও?

আমি কি আগামীকাল ফিরে আসিতে পারি? রবিবার আমার জন্য অকেজো হয়ে থাকার দিন। ওদিন আমার খুব বেশি হোমওয়ার্ক থাকে না।

কুইল এমব্রির কাঁধে চাপ দিল। তারা দৃষ্টি বিনিময় করল।

 জ্যাকব আনন্দের সাথে হাসল। সেটাই সবচেয়ে ভাল হয়।

যদি তুমি একটা তালিকা তৈরি করো, তাহলে আমরা পার্টস কেনার জন্য দোকানে যেতে পারি। আমি উপদেশ দিলাম।

জ্যাকবের মুখ শুকনো দেখাল। আমি এখনও নিশ্চিত নই যে আমি তোমার সবকিছু কেনাতে পারব।

আমি মাথা নাড়লাম। কোন উপায় নেই। আমি এই পার্টির সব বহন করব। তুমি শুধু শ্রম এবং অভিজ্ঞতা দান করবে।

এমব্রি কুইলের দিকে চোখ ঘোরাল।

সেটা খুব একটা ঠিক মনে হচ্ছে না। জ্যাকব তার মাথা নাড়ল।

জ্যাকব, যদি আমি এটা কোন মেকানিকের কাছে নিয়ে যাই, সে আমার কাছ থেকে কত চার্জ নিতে পারে? আমি নির্দিষ্ট বিষয়ে বললাম।

সে হাসল। ঠিক আছে, তোমার সাথে আমার একটা ডিল হচ্ছে।

আর চালানো শিখানোর কথা কিন্তু উল্লেখ করো নাই। আমি যোগ করলাম।

কুইল এমব্রির দিকে চোখ ইশারা করল। ফিসফিস করে এমন কিছু বলল যেটা আমি ধরতে পারলাম না। জ্যাকবের হাত কুইলের মাথার পেছনে একটা চাটি মারল। এটাই তাই, বেরিয়ে যাও। সে বিড়বিড় করে বলল।

না। সত্যিই আমাকে যেতে হবে। আমি প্রতিবাদ করে দরজার দিকে এগুলাম। তোমার সাথে আগামীকাল দেখা হবে জ্যাকব।

আমি তাদের দৃষ্টির আড়ালে চলে যেতেই শুনতে পেলাম কুইল এবং এমব্রি একত্রে কোরাস ধরেছে ওয়াও। ওয়াও।

শব্দগুলো একটু পরেই আউচ ও হেই, আউতে পরিণত হলো।

যদি তুমি ছাড়া সেটা সেট করতে পার আমার এক বুড়ো আঙুলের উপর দাঁড়াব আগামীকাল… আমি শুনতে পেলাম জ্যাকব তাদের ধমকাচ্ছে। তার কণ্ঠস্বর মিলিয়ে গেল যখন আমি গাছপালার ভেতর দিয়ে হেঁটে এলাম।

আমি নিঃশব্দে মুখ চেপে হাসলাম। বিস্ময়ে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। আমি হাসছিলাম। সত্যিই আমি হাসছিলাম। সেখানে কেউ সেটা দেখছিল না। আমি এতটাই হালকাবোধ করলাম যে আমি আবার হাসলাম। যাতে এই অনুভূতিটা আরো বেশিক্ষণ ধরে থাকে।

আমি চার্লির আগে বাড়িতে পৌঁছুলাম। চার্লি ভেতরে প্রবেশ করার সময়ে আমি কেবলমাত্র ফ্রায়েড চিকেন প্যান থেকে নামাচ্ছিলাম। এটা একটা পেপার টাওয়েলের উপর রাখছিলাম।

হেই, বাবা। আমি তার দিকে কপট হাসি দিলাম।

তিনি তার ভাবাবেগ প্রকাশ করার আগেই যেন একটা ধাক্কা খেলেন। হেই, হানি। তার কণ্ঠস্বরে অনিশ্চয়তা। জ্যাকবের ওখানে বেশ মজা হয়েছে?

আমি টেবিলের উপর খাবারগুলো সাজাতে লাগলাম। হ্যাঁ, বেশ মজা করেছি।

বেশ, সেটাই ভাল। তিনি এখনও সতর্ক। তোমরা দুজনে মিলে কি করেছ?

এখন আমার সময় এসেছে সতর্ক হওয়ার। আমি তার গ্যারেজে ঢুকে গেলাম এবং তাকে কাজ করতে দেখলাম। তুমি কি জানো সে একটা ভক্সওয়াগন তৈরি করছে?

হ্যাঁ। আমার মনে হয় বিলি সেটা বলেছিল।

জেরা করা বন্ধ হয়ে গেল যখন চার্লি মুরগির রান চিবুতে লাগলেন। কিন্তু তিনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মুখের ভাব পড়ার চেষ্টা করতে লাগলেন।

ডিনারের পর, রান্নাঘর দুইবার বোয়ামোছা করলাম। তারপর সামনের রুমে যেখানে বসে চার্লি টিভিতে হকি গেম দেখছিলেন সেখানে বসে ধীরে ধীরে আমার হোমওয়ার্ক করতে লাগলাম। আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম যতক্ষণ পারা যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চার্লি শেষ সময়টা লক্ষ্য করলেন। যখন আমি সাড়া দিচ্ছিলাম না তিনি উঠে দাঁড়ালেন। হাতপা টানটান করলেন এবং তারপর পেছনের লাইট অফ করে দিলেন। সাথে সাথে আমি তার পিছু নিলাম।

সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠার সময় আমি অনুভব করলাম গত সন্ধ্যের পর অস্বাভাবিক অবস্থা থেকে আমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভালর দিকে যাচ্ছে। আমি অহেতুক ভয় নিয়ে এতদিন বেঁচে ছিলাম সেইটার জায়গায় করে নিচ্ছে আনন্দময় অনুভূতি।

আমি এখন আর অবশ হয়ে পড়ছিলাম না। আজ রাতেও হয়তো হব না। কোন সন্দেহ নেই। আমি আমার বিছানায় শুয়ে পড়লাম। কুঁকড়ে শুয়ে থাকলাম। আমি জোর করে চোখ বন্ধ করে কুঁচকালাম। এবং… পরবর্তী যে জিনিসটা আমি জানলাম, এটা ছিল সকাল।

আমি চমকে উঠলাম। হলদেটে রুপালি আলো আমার জানালা দিয়ে প্রবেশ করছে। আমি হতবুদ্ধ।

চার মাসের বেশি সময় পর প্রথমবারের মত, আমি কোনরকম স্বপ্ন দেখা ছাড়াই ঘুমিয়েছি। স্বপ্ন দেখা অথবা চিৎকার করা। আমি জানি না কোন আবেগটা বেশি শক্তিশালী- স্বস্তিকর অবস্থা নাকি শক।

আমি তখনও কয়েক মিনিট আমার বিছানায় শুয়ে থাকলাম, অপেক্ষা করলাম কিছু একটা আসার জন্য। কিছু একটা আসবেই। যদি যন্ত্রণাটা না ফিরে আসে অবশ করাটা আসবে। আমি অপেক্ষা করতে থাকলাম। কিন্তু কিছুই হলো না। আমি অনুভব করলাম অনেক সময় ধরে অনেক বেশি বিশ্রাম নেয়া হয়ে গেছে।

আমি এখনও পর্যন্ত এটা বিশ্বাস করতে পারছি না। উঁচু কিনারায় দাঁড়ানোর মত একটা পিচ্ছিল অনুভূতি বয়ে যাচ্ছে।

আমি সেই চিন্তাটা মন থেকে ঠেলে সরিয়ে দিলাম। আমি পোশাক পরলাম। জ্যাকবকে আজ আবার দেখতে যাচ্ছি। এই চিন্তাটা আমার মনকে পুরোপুরি ভরে ফেলল, আশাবাদী। হতে পারে এটা গতকালের মত একই রকম হবে। হতে পারে এটা আর আমার কাছে ততটা আকর্ষণীয় নাও মনে হতে পারে…কিন্তু আমি এটাকে আর কোন মতেই বিশ্বাস করি না। এটা একই রকম বিশ্বাস–এতটাই সহজ গতকালের মত। আমি নিজেকে গতকালের মত আর অস্বস্তিতে ফেলতে চাই না।

ব্রেকফাস্টের সময়ও চার্লি সর্তক থাকলেন। তিনি চেষ্টা করলেন তার জেরার ভাবটা লুকাতে, চোখ নামিয়ে ডিমের উপর রাখলেন যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তাকিয়ে ছিলাম।

আজ তুমি কি করতে চাচ্ছ? তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তার হাতের জামার বোতাম লাগানোর দিকে নজর দিয়ে এমন ভাব করলেন যেন তিনি আমার উত্তরের দিকে কোন মনোযোগ দিচ্ছেন না।

আমি আজ আবার জ্যাকবের সাথে থাকতে যাচ্ছি।

তিনি কোনরকম না তাকিয়ে মাথা ঝাঁকালেন। ওহ, তিনি বললেন।

তুমি কি কিছু মনে করলে? আমি দুশ্চিন্তার ভান করলাম আমি থাকতে পারি..

 তিনি তাড়াতাড়ি আমার দিকে তাকালেন। তার চোখে ভয়ের চিহ্ন। না, না। তুমি সেখানে যাও। হ্যারি আমার সাথে খেলা দেখতে যাচ্ছে, যাই হোক।

হতে পারে হ্যারি বিলিকে একটা ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে। আমি উপদেশ দিলাম। যত কম সাক্ষী হয় তত ভাল।

সেটা একটা ভাল আইডিয়া।

আমি নিশ্চিত নই খেলার কথাটা বলাটা আমাকে বাইরে বের করার জন্য কিনা। কিন্তু তাকে এখন অনেক বেশি উত্তেজিত দেখাচ্ছে। তিনি ফোনের দিকে এগিয়ে গেলেন। আমি আমার রেইনকোট নিয়ে নিলাম। জ্যাকেটের পকেটে আমার চেক বই নেয়ার ব্যাপারে সচেতন হলাম। এটা এমন কিছু যেটা আমি কখনও ব্যবহার করি না।

বাইরে বৃষ্টি এমনভাবে ঝরছে যেন বালতি থেকে পানি ঢেলে দেয়া হচ্ছে। আমি যতটা আস্তে চালাতে চাচ্ছিলাম তার চেয়ে আস্তে চালাতে হচ্ছিল। আমার ট্রাকের সামনে খুব কম গাড়িই দেখতে পাচ্ছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি জ্যাকবদের বাড়ির কাদা মাখা লেন দেখতে পেলাম। ইঞ্জিন বন্ধ করার আগেই সামনের দরজা খুলে গেল। জ্যাকব একটা বিশাল ছাতা নিয়ে দৌড়ে আমার কাছে চলে এল।

সে আমার গাড়ির দরজার সামনে ছাতা ধরল। আমি দরজা খুললাম।

চার্লি ফোন করেছিল। বলল তুমি আমাদের বাড়ির পথে। জ্যাকব দাঁত বের করে হেসে ব্যাখ্যা করল।

উত্তরে হাসি আমার মুখে ছড়িয়ে পড়ল। একটা অদ্ভুত অনুভূতি আমার গলার কাছে উষ্ণ বুদবুদ ছড়াচ্ছিল। যদিও আমার মুখের উপর বরফ শীতল বৃষ্টির পানি ঝরে পড়ছিল।

হাই জ্যাকব।

ভাল, ডাক বিলিকে উপরে ডাকার জন্য। সে তার হাত বাড়িয়ে দিল করমর্দনের জন্য।

আমি এতটা উপরে উঠে গিয়ে তার হাতে চাপড় মারলাম। সে হেসে উঠল।

হ্যারিকে কয়েক মিনিট পরেই বিলিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য দেখা গেল।

জ্যাকব ব্রিফিং দেয়ার জন্য তার ছোট্ট রুমটাতে আমাকে নিয়ে গেল। যেখানে সে অপেক্ষা করছিল।

তো কোথায় মিস্টার গুডরেন্স? আমি জিজ্ঞেস করলাম যখন বিলির পিছনে দরজা বন্ধ হয়ে গেল।

জ্যাকব তার পকেট থেকে একটা ভাজ করা কাগজ টেনে বের করল সমান করল। প্রথমে আমরা ডাম্প জিনিস দিয়ে শুরু করব। দেখব আমরা ভাগ্যবান কিনা। এইগুলো কিছুটা ব্যয়বহুল হবে! সে আমাকে সর্তক করল। এই মোটরসাইকেলগুলো আবার চালাতে গেলে তাতে অনেক কাজ করতে হবে। আমার মুখ ততটা উদ্বিগ্ন ছিল না। তাই সে বলে চলল আমি এখানে একশোর বেশি ডলার খরচের কথা বলছি।

আমি আমার চেক বই বের করে নিয়ে আসলাম। এটা দিয়ে নিজেকে বাতাস করলাম। তার দুশ্চিন্তার দিকে গোল গোল করে তাকালাম আমাদের হয়ে যাবে।

এটা খুব একটা অদ্ভুত রকমের দিন। আমি নিজেকে উপভোগ করলাম। এমনকি এই বৃষ্টি ভেজার মধ্যেও। ঝেড়ে আসা বৃষ্টি এবং গোড়ালি ডুবে যাওয়া কাদার মধ্যেও। আমি বিস্মিত প্রথমে যদি এটা মাত্র অবশ অবস্থা থেকে হারানোর প্রাথমিক শক হয়ে থাকে। কিন্তু আমি মনে করি না এটা এই ব্যাখ্যার জন্য অধিক কিছু।

আমি এখন যা নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম তার অধিকাংশই জ্যাকবকে নিয়ে। এটা এই জন্য নয় যে সে আমাকে দেখে সবসময়ই খুশি হয়। অথবা সে আমাকে তার চোখের কোণা দিয়ে লক্ষ্য করে না। অপেক্ষা করে আমার জন্য। এটা আমাকে নিয়ে কিছু নয়।

এটা জ্যাকব নিজেই। জ্যাকব সাধারণভাবেই একজন মন্ত্রমুগ্ধকর সুখী মানুষ। সে তার এই সুখীভাবটা সবসময় বহন করে চলে। এটা ভাগ করে নেয় যেই তার কাছাকাছি থাকে। যেন একটা পৃথিবীমুগ্ধ সুর্ড। যেই তার আয়ত্বের মধ্যে আসুক না কেন জ্যাকব তাকে উষ্ণ রাখে। এটা তার মধ্যে স্বতস্ফূর্তভাবেই আছে। এটা তারই একটা অংশ। কোন বিস্ময় নয় এই কারণে তাকে দেখার জন্য আমি এত উদগ্রীব।

সে আমার ড্যাশবোর্ডের ফাঁকা জায়গাটা দেখিয়ে দিল।

এখানকার স্টেরিও কি ভেঙে গেছে? সে বিস্মিত।

 হ্যাঁ। আমি মিথ্যে বললাম।

সে গর্তটার ভিতরে তাকাল। এটা কে খুলে নিয়েছে। সেখানে বেশ ক্ষতি হয়ে গেছে।

আমি নিয়েছি। আমি স্বীকার করলাম।

সে হাসল। হতে পারে তুমি এই মোটরসাইকেলটা খুব বেশি ব্যবহার করো নাই।

সেটা কোন ব্যাপার নয়।

জ্যাকবের কথামত, ডাম্পের ব্যাপারে আমরা বেশ সৌভাগ্যবান। সে কয়েকটা ধাতব জিনিস নিয়ে বেশ উত্তেজিত। সেগুলো সে পেয়েছে। আমি শুধু তাকে উৎসাহিত করে যাচ্ছিলাম। সে যা বলছিল তার পিঠে সায় দিয়ে গেলাম।

সেখান থেকে আমরা চেকার অটো পাটর্সের দোকান হকিয়ামে গেলাম। আমার ট্রাক নিয়ে দুইঘণ্টা যাবৎ একটানা দক্ষিণ দিকের ফ্রিওয়ে দিয়ে চালিয়ে গেলাম। জ্যাকবের সাথে সময় বেশ ভালই কেটে যাচ্ছিল। সে তার স্কুল ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে বকবক করে চলেছিল। আমি নিজেও বেশ কিছু প্রশ্ন করলাম। এমন কি তার ভেতর কোন ভান ছিল না। সে যেটা বলছিল সেটার ব্যাপারে সত্যিকারের আগ্রহ ছিল।

আমিই পুরো সময় ধরে বকবক করে চলেছি। সে অনেকক্ষণ পর অভিযোগ করল। কুইলের একজন সিনিয়র গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে প্রশ্ন করার পর। কেন তুমিও কিছু বলছো? ফর্কে কি হয়? কি ঘটে চলে? এটা নিশ্চয় লা পুশের চেয়ে অনেক বেশি উত্তেজনাকর।

ভুল। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। সেখানে সত্যিকারেই কিছু নেই। তোমার বন্ধুরা আমার চেয়ে অনেক বেশি আকর্ষণীয় মজার। আমি তোমার বন্ধুদের পছন্দ করি। কুইল বেশ মজার।

সে ভ্রু কুঁচকাল। আমার মনে হয় কুইলও তোমাকে পছন্দ করে।

আমি হাসলাম। সে আমার চেয়ে এখনও কিছুটা ছোট।

জ্যাকবের ভ্রু কুঁচকানো আরো গম্ভীর হলো। সে এখনও তোমার চেয়ে ততটা ছোট নয়। এটা মাত্র এক বছর কয়েক মাসের ব্যবধান।

আমার মনে হলো আমাদের আর কুইল সম্বন্ধে কথা বলা উচিত নয়। আমি কণ্ঠস্বর হালকা করলাম। নিশ্চয়। কিন্তু তুমি কি নারী ও পুরুষের ম্যাচুরিটির ভিন্নতার ব্যাপারটা ধরবে না? তুমি কি সেই ফাঁকের বছরগুলোকে শুনবে না? যেটাতে আমি তার চেয়ে বার বছরের বড় মনে হয়?

সে হাসল। চোখ ঘোরাল। ঠিক আছে কিন্তু যদি তুমি তাকে পছন্দ করতে চাও তুমি তার মত গড়পড়তায় একই সাইজের। তুমিও ছোটখাট। আমি তাহলে তোমার চেয়ে দশ বছরের বেশি হব।

পাঁচ ফুট চার সবচেয়ে গড়পড়তা। আমি চোখ মটকালাম। এটা আমার দোষ নয় যে তুমি কিম্ভুতকিমাকার।

আমরা হকুইয়াম পর্যন্ত বয়সের ব্যাপারটা নিয়ে তর্কাতর্কি করতে করতে এগুলাম। সঠিক সুত্রটা বের করার হাস্যকর চেষ্টা করতে লাগলাম। আমি দুবছর হারিয়েছি কারণ আমি জানি না কীভাবে একটা টায়ার চেঞ্জ করতে হয়। কিন্তু এক বছর ফিরে পেলাম আমার বুককিপিংয়ের দক্ষতার জন্য। চোকার যাওয়ার আগ পর্যন্ত এমনটি চলতে লাগল। তারপর জ্যাকব অন্যদিকে মনোযোগ দিল। আমরা তার তালিকায় যা কিছু আছে সবই খুঁজে পেলাম। জ্যাকব আত্মবিশ্বাস ফিরে পেল যে তার ওটা তৈরির ব্যাপারে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে।

তার পরের সময়টাতে আমরা লা পুশে ফিরে এলাম। আমি তেইশ কেজি আর সে তিরিশ কেজি জিনিস বহন করল। সে নিশ্চিতভাবে তার পক্ষে বেশি বহন করল।

আমি সেই কারণটা ভুলি নাই যে কারণে আমি এইসব করছি। এমনকি এখনও আমি নিজেকে অনেক বেশি উপভোগ করছিলাম। যেটুকু সম্ভব ভেবেছিলাম তার চেয়ে বেশি। সেখানে আমার প্রকৃত আকাঙ্খর কোন প্রতিফলন ছিল না। আমি এখনও প্রতারণা করতে চাইছিলাম। এটা ছিল অনুভূতিহীন এবং আমি সত্যিই সেটার তোয়াক্কা করি না। আমি কিছুটা উদাসীন হয়েছিলাম যাতে আমি ফর্কে ফিরে সবকিছু গুছিয়ে নিতে পারি। জ্যাকবের সাথে সময় কাটানো আমার জন্য বিশাল কিছু, যতটা আমি আশা করেছিলাম তার চেয়েও।

বিলি এখনও ফিরে আসেনি। সুতরাং আমাদের আর এখন লুকোচুরির কোন প্রয়োজন নেই। আমাদের জিনিসগুলো প্রকাশ্যে নামাতে কোন অসুবিধে নেই। আমরা আমাদের সব জিনিসপত্র জ্যাকবের টুলবক্সের পাশের প্লাস্টিকের উপর রাখলাম। জ্যাকব তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করে দিল। এখনও সে কথা বলছে, হাসছে। তার আঙুলগুলো ধাতব জিনিসের উপর খেলে যাচ্ছে।

জ্যাকব এখনও দক্ষতার সাথে তার হাতের কাজ দেখিয়ে চলেছে। হাতগুলোকে কাজের জন্য অনেক বড়ো দেখাচ্ছিল। যখন সে কাজ করছিল তাকে দেখে বেশ তৃপ্ত, কৃতজ্ঞ মনে হচ্ছিল। যখন সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাজ করছিল, তার উচ্চতা এবং বিশাল পায়ের পাতার কারণে আমার কাছে তাকে বিপজ্জনক দেখাচ্ছিল।

কুইল আর এমব্রিকে দেখা গেল না। মনে হচ্ছে জ্যাকবের গতকালের হুমকি তারা সিরিয়াসলি নিয়েছে।

দিনটা খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল। গ্যারেজের মুখের কাছটা অন্ধকার হয়ে গেল। যেটা আমি আশা করছিলাম। তারপর আমরা শুনলাম বিলি আমাদের ডাকছে।

আমি লাফিয়ে উঠে জ্যাকবকে জিনিসগুলো লুকিয়ে ফেলতে বললাম। দ্বিধাগ্রস্ত কারণ আমি জানি না কোন জিনিসটা আমি নেব।

এগুলো ছেড়ে দাও। সে বলল। আমি এগুলো নিয়ে পরে আজ রাতে কাজ করব।

তোমার স্কুলের কাজ বা অন্য কিছু করতে ভুলো না। আমি বললাম। এর জন্য নিজেকে কিছুটা দোষী মনে হলো। আমি চাই না সে কোন সমস্যার মধ্যে পড়ুক। পরিকল্পনাটা শুধু আমার জন্যই।

বেলা?

আমাদের দুজনের মাথা চকিতে ঘুরে গেল যখন আমি চার্লির পরিচিত গলার স্বর শুনতে পেলাম। সেটা গাছের ভেতর থেকে ভেসে আসছিল। ধীরে ধীরে বাড়ির কাছাকাছি চলে আসছিল।

ব্যস্ত। আমি বিড়বিড় করে বললাম আসছে! আমি বাড়িটির দিকে তাকিয়ে গুঙিয়ে উঠলাম।

যেতে দাও। জ্যাকব হাসল, এই অবস্থাটাকে সে উপভোগ করছিল। সে হঠাৎ করে লাইট বন্ধ করে দিল এবং এক মুহূর্তের জন্য যেন আমি অন্ধ হয়ে গেলাম। জ্যাকব আমার হাত আঁকড়ে ধরল এবং গ্যারেজের দিকে নিতে লাগল। গাছপালার ফাঁকফোকর দিয়ে তার পা পরিচিত পথ সহজে খুঁজে পেল। তার হাত অমৃসণ এবং খুবই উষ্ণ।

এই পথে হেঁটেও অন্ধকারের ভিতর দিয়ে আমরা বাড়ির পথে এলাম। বাড়িটা নজরে এলে আমরা হেসে উঠলাম। হাসিটা শব্দ করে হল না। হালকা ভাসাভাসা টাইপের। কিন্তু তারপরেও এটা সুন্দর। আমি নিশ্চিত সে হিস্টিরিয়ার উপসর্গগুলো খেয়াল করেনি। আমি আর হাসছিলাম না। একই সাথে ঠিক ও ভুলের দ্বৈত সত্ত্বা অনুভব করছিলাম।

চার্লি পেছনের ছোট পোর্চে অপেক্ষা করছিলেন। বিলি অপেক্ষা করছিলেন দরজার পথে।

হাই বাবা। আমরা দুজনেই একসাথে দুজনের বাবাকে বললাম। সেটাত্রে আমাদের আবার হাসি শুরু হলো।

চার্লি চোখ বড় বড় করে আমাকে দেখছিলেন। জ্যাকবের হাত আমার হাতের মধ্যে এটাই তার দৃষ্টিতে ঘুরছিল।

বিলি আজ ডিনারের জন্য আমাদের দাওয়াত করেছে। চার্লি অন্যমনস্ক স্বরে আমাদেরকে এটা বললেন।

আমার রাতের খাবারের গোপন রেসিপি হচ্ছে স্পার্গোটি। প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয়। বিলি অভিসন্ধির স্বরে বললেন।

জ্যাকব নাক টানল আমি মনে করি না রঘুকে অনেক সময়ের জন্য আশে পাশে দেখা যায়নি।

বাড়িটা লোকজনে পূর্ণ হয়ে গেল। হ্যারি ক্লেয়ারওয়াট সেখানে ছিল। তার পরিবারও সাথে ছিল- তার স্ত্রী সু, ফরকসে যাকে আমি সেই শৈশব থেকেই চিনি। তাদের দুই সন্তান। লিহ আমার মত একজন সিনিয়র কিন্তু মাত্র এক বছরের। সে খুবই সুন্দরী-প্রকৃত উজ্বল রঙ, কালো চুল এবং প্রেমে আগেই বন্দি হয়ে আছে। সে তখন বিলির ফোনে ব্যস্ত ছিল যখন আমরা ভেতরে ঢুকলাম এবং সে সেটা ছাড়ছিল না। সেথের বয়স চৌদ্দ। সে বোকা বোকা দৃষ্টিতে জ্যাকবের প্রতিটি শব্দ গিছিল।

কিচেন টেবিলে জায়গার তুলনায় আমরা সংখ্যায় অনেক বেশি ছিলাম। ছোট জায়গা। সে কারণে চার্লি ও হ্যারি চেয়ার উঠোনে বের করে নিয়ে এলেন। আমরা স্পার্গোটি প্লেটে নিয়ে আমাদের কোলের উপর নিয়ে বসে খেলাম। তারা খেলাধুলা নিয়ে কথা বলছিলেন। হ্যারি আর চার্লি মাছ ধরার পরিকল্পনা করছিলেন। সু তার স্বামীকে কোলেস্টেরল বাড়া নিয়ে ঠাট্টা করছিলেন। তিনি চেষ্টা করছেন কিন্তু পারছেন না। তাকে সবুজ এবং পাতা যুক্ত কিছু খেতে পরামর্শ দেয়া হলো। জ্যাকব বেশিরভাগ সময় আমার আর সেথের সাথে কথা বলছিল। সে আগ্রহের সাথে আমাদেরকে দেখছিল। চার্লি আমাদের দেখছিলেন, চেষ্টা করছিল এটা নিয়ে সন্দেহ না করতে। তিনি সন্তুষ্ট। কিন্তু তার চোখ সর্তক।

এটা ছিল জোরালো এবং বিভ্রান্তকর। সকলে সকলের সাথে কথা বলছিল। একজনের জোকসের হাসির কারণে অন্যের কথোপকথনে বাঁধা পড়ছিল। আমি প্রায় কোন কথাই বলছিলাম না। কিন্তু প্রচুর হাসছিলাম। কারণ আমি ভেতর থেকে তেমনটিই অনুভব করছিলাম।

আমি এখান থেকে যেতে চাইছিলাম না।

এই হচ্ছে ওয়াশিংটন। যদিও, এবং অনিবার্য বৃষ্টি হঠাৎ করে পার্টিটা ভেঙে দিল। বিলির লিভিংরুমটা এতটাই ছোট যে এই পার্টি সেখানে ধরে রাখা প্রায় অসম্ভব। হ্যারি চার্লিকে নামিয়ে দেবে। সুতরাং আমরা সবাই বাড়ি ফেরার জন্য আমার ট্রাকে উঠলাম। তিনি আমার আজকের দিনের কথা জিজ্ঞেস করছিলেন। আমি সত্যটাই বলছিলাম–আমি জ্যাকবের সাথে পার্টস কেনা দেখতে গিয়েছিলাম। তারপর ফিরে এসে সে গ্যারেজে কীভাবে কাজ করে সেটা দেখছিলাম।

তুমি কি মনে করো তুমি তাড়াতাড়ি আবার এখানে আসবে? তিনি বিস্মিত তারপরেও চেষ্টা করছেন স্বাভাবিক থাকার।

আগামীকাল স্কুলের পরে। আমি স্বীকার করলাম। আমি আমার হোম ওয়ার্ক করব। দুশ্চিন্তা করো না।

তুমি সেটা নিশ্চিত করবে। তিনি আদেশ দিলেন, চেষ্টা করছেন তার স্বস্তিকে ছদ্মবেশে মুড়ে দিতে।

আমি নাভার্স হয়ে পড়লাম যখন আমরা বাড়িতে পৌঁছলাম। আমি উপরে যেতে চাইছিলাম না। জ্যাকবের উপস্থিতির সেই উষ্ণতা ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছিল। তার অনুপস্থিেিততে উদ্বিগ্নতা আরো শক্তিশালী হয়ে উঠছিল। আমি নিশ্চিত আমি পরপর দুইরাত শান্তিতে কাটাতে পারব না।

বিছানায় যাওয়ার আগে আমি ই-মেইল চেক করলাম। সেখানে মায়ের কাছ থেকে একটা নতুন ম্যাসেজ আছে।

তিনি তার দিনযাপন সম্বন্ধে লিখেছেন। একটা নতুন বুকক্লাব যেটা শুধুমাত্র মেডিটেশন ক্লাস নিয়েই ব্যস্ত তিনি সেটা বাদ দিয়েছেন। তার দিন যাচ্ছে স্কুল গ্রেডের কাজ করে। মিস করছেন তার কিন্ডারগার্ডেনকে। তিনি লিখেছেন ফিল তার নতুন কোচিংয়ের চাকরিটা উপভোগ করছে। তারা ডিজনিওয়ার্ল্ডে আরেকটা দ্বিতীয় হানিমুন ট্যুর দেয়ার পরিকল্পনা করছে।

আর আমি লক্ষ্য করলাম গোটা জিনিসটাই যেন একটা জার্নালের রচনার মত। কাউকে চিঠি লেখার মত নয়। দুঃখবোধ আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। একটা অস্বস্তিকর জীবনের কথা মনে করিয়ে দিল। আমি তার কেমন মেয়ে!

আমি তাড়াতাড়ি ই-মেইলের উত্তর দিলাম। তার চিঠির প্রতিটা অংশের ব্যাপারে। আমার নিজের থেকে বেশ কিছু তথ্য জানালাম। বিলের বাসায় রাতের স্পগোর্টি পার্টির জানালাম। কীভাবে জ্যাকব কিছু ধাতব জিনিস দিয়ে একটা আস্ত কিছু দাঁড় করাচ্ছে সেটা দেখার কথা জানালাম। কিছুটা ঈর্ষাম্বিকভাবে। বিগত কয়মাস আমার কীভাবে কেটেছে সে সম্বন্ধে মোটেই কোন রকম উল্লেখ করলাম না। আমি খুব কমই মনে করতে পারি কি আমি কয়েক সপ্তাহ আগে তার কাছে কি লিখেছিলাম। কিন্তু আমি নিশ্চিত এটা খুব একটা আবেগসুলভ কিছু ছিল না। যতই আমি এটা সম্বন্ধে ভাবছি ততই নিজেকে দোষী মনে হচ্ছে। আমি সত্যিই তাকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছি।

আমি তার পরে আরো একটা চিঠি তাকে লিখলাম। প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি হোমওয়ার্ক করে রাখলাম। কিন্তু ঘুম থেকে দূরে থেকে অথবা জ্যাকবের সাথে সময় কাটিয়ে নয়– আমি সবচেয়ে বেশি সুখী ছিলাম অন্য একটা কারণে। একটানা দুরাত আমি সেই ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন থেকে দূরে আছি।

আমি ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে জেগে উঠলাম। আমার চিৎকার বালিশের আড়ালে চাপা পড়ে গেল।

সকালের মৃদু নরম আলো পেছনের জানালা দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ছিল। আমি তখন বিছানায় শুয়ে ছিলাম। চেষ্টা করছিলাম স্বপ্নটাকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে। গতকাল রাতে খুব সামান্য একটা পাথর্ক ছিল। আমি সেটাতে মনোযোগ দিয়েছিলাম।

গতরাতের স্বপ্নে জঙ্গলে আমি একা ছিলাম না। স্যাম উলি- সেই লোকটা যে আমাকে জঙ্গলের মাটি থেকে টেনে তুলেছিল, যার কথা সচেতনভাবে আমি সে রাতে ভাবিনি-সেখানে ছিল। এটা একটা অদ্ভুত অনাকাঙ্খিত পরিবর্তন। মানুষটার কালো চোখ অবন্ধুসুলভভাবে বিস্মিত হচ্ছিল। কোন একটা গোপন বিষয়ে পরিপূর্ণ যেটা সে আমার সাথে শেয়ার করতে চাচ্ছিল না। আমি তাকে চমকে দিলাম যখন সে আমার উন্মত্ত চিৎকার শুনতে পেল। এটা তাকে অস্বস্তিতে ফেলে দিল। সেখানে এত ভয়ের সবকিছু থাকা সত্ত্বেও ভয় পেলাম না। হতে পারে সেটা এইজন্য যে আমি সরাসরি তার দিকে তাকাচ্ছিলাম না। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল সে কাঁপছে এবং আমার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হচ্ছে। যদিও সে এখনও কিছু করে নাই কিন্তু দাঁড়িয়েছিল এবং দেখছিল। বাস্তবের সেই সময়ের মত সে আমাকে কোন সাহায্যের জন্য অফার করেনি।

চার্লি ব্রেকফাস্টের সময় আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমি তাকে পাত্তা না দেয়ার চেষ্টা করছিলাম। আমার মনে হয় আমি এটা করতে পেরেছিলাম। আমি আশা করছিলাম না সে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে। আমি সম্ভবত জম্বির ফিরে আসার কারণে দুর্বল হয়। পড়েছিলাম। আমি শুধু চেষ্টা করছিলাম এটা যাতে কোনমতে তাকে বিরক্ত না করে। সর্বোপরি, আমি আবার জম্বির ফিরে আসা লক্ষ্য করব। দুটো দিন আমার সুস্থতার জন্য খুবই কম সময়।

স্কুলে তার বিপরীত। এখানে এখন আমি মনোযোগ দিচ্ছি। এটা নিশ্চিত কেউ এখানে আমাকে দেখছে না।

আমার মনে পড়ল ফর্ক হাইস্কুলে আমার আসার প্রথম দিনের কথা। কত সাহসের সাথে আমি সেখানে প্রবেশ করেছিলাম। এটা দেখে মনে হয় যেন কতটাই পরিবর্তিত।

এটা এমনটি যেন আমি সেখানে ছিলাম না। এমনকি আমার শিক্ষকদের চোখও আমার উপর থেকে সরে যাচ্ছিল যেন আমার সিটটা খালি।

আমি সারা সকাল ধরে সবকিছু শুনছিলাম। আমার চারপাশের লোকজনের কণ্ঠস্বর। আমি চেষ্টা করছিলাম সেগুলো ধরার, যে কি হতে চলেছে। কিন্তু সেই কথাবার্তাগুলো এত ছাড়া ছাড়া যে আমি সেটা বাদ দিলাম।

জেসিকা আমার দিকে তাকাল না যখন ক্যালকুলাস ক্লাসে আমি তার পাশে যেয়ে বসলাম।

হেই জেস। আমি খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললাম। তোমার বাকি উইক্যান্ড কেমন কেটেছে?

সে আমার দিকে সন্দেহজনক দৃষ্টি নিয়ে তাকাল। সে কি এখনও আমার উপর রেগে আছে? অথবা সে কি আমার মত একজন উম্মুত্তকে নিয়ে খুব অধৈর্য হয়ে পড়েছে?

খুবই ভাল। সে বইতে মনোযোগ দিতে দিতে বলল।

সেটাই ভাল। আমি বিড়বিড় করে বললাম।

তার ঠাণ্ডা শীতল আচরণ ও কথাবার্তায় কিছু সত্য বেরিয়ে আসছিল। আমি অনুভব করছিলাম গরম বাতাস মেঝের ফাঁকগুলো থেকে বের হচ্ছে। কিন্তু এখনও খুব ঠাণ্ডা। আমি চেয়ারে খুলে রাখা আমার জ্যাকেটটা নিয়ে আবার পরে ফেললাম।

আমার চতুর্থ ঘণ্টার ক্লাসে দেরি হয়ে গেল। যে লাঞ্চ টেবিলটাতে আমি সবসময় বসি আমি পৌঁছানোর আগেই ভর্তি হয়ে গেল। মাইক সেখানে ছিল। জেসিকা এবং এঞ্জেলা, কনার, টেইলার, এরিক, লরেন। কেট মার্শাল, সেই লাল মাথার জুনিয়র, যে আমাদের কর্ণারে বাস করে, সে এরিকের সাথে বসেছিল। অস্টিন মার্কস, ওই ছেলেটার বড় ভাই, যার মোটর সাইকেল আছে, তার পাশে বসে ছিল। আমি বিস্মিত তারা কতক্ষণ ধরে সেখানে বসে আছে। মনে করতে পারলাম না এটা কি প্রথম দিন বলেই, নাকি এটা প্রতিদিনের অভ্যাস। নিজের প্রতি মেজাজ খারাপ হতে শুরু করল।

আমি মাইকের পাশে গিয়ে বসলেও কেউ খেয়াল করল না। এমনকি চেয়ার অন্যখান থেকে টেনে নেয়া এবং তাতে শব্দ করে বসে পড়ার পরও সেদিকে কেউ মনোযোগ দিল না।

আমি চেষ্টা করছিলাম তাদের কথোপকথনের বিষয়বস্তু ধরতে।

মাইক আর কনার স্পোর্টস নিয়ে আলোচনা করছিল। কাজেই আমি তাদেরটা থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিলাম।

আজ বেন কোথায়? লরেন এঞ্জেলাকে জিজ্ঞেস করল। আমি সেদিকে তাকালাম। আগ্রহী। আমি বিস্মিত যদি সেইটার মানে হয় এলো আর বেন এখনও এক সাথে।

আমি লরেনকে যেন চিনতেই পারছিলাম না। সে তার চুল খাটো করে কেটে ফেলেছে। সে এতটাই ছোট করে চুল কাটিয়েছে যে পিছন দিক থেকে তাকে একটা বালকের মত দেখাচ্ছে। যেটা তার জন্য একটা অদ্ভুত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার মনে হয় এর পিছনের কারণটা আমি জানি। তার চুলে কি কেউ গাম লাগিয়ে দিয়েছিল? সে কি এটা বিক্রি করে দিয়েছে? যেসব লোকের প্রতি সে খারাপ আচরণ করে তারা কি তাকে নোংরা অবস্থায় জিমনেসিয়ামের পিছনে দেখে ধরে ফেলেছে? চুল কেটে দিয়েছে? আমি সিদ্ধান্ত নিলাম এটা আমার জন্য ভাল দেখায় না যে আমার মতামত নিয়ে আমি তাকে সুবিচার করছি। যতদুর জানি সে একজন ভাল মানুষে পরিণত হওয়ার চেষ্টা করছিল।

বেনের পেটের সমস্যা হয়েছে। এঞ্জেলা শান্ত অরিচল স্বরে বলল আশা করছি এটা মাত্র চব্বিশ ঘণ্টার ব্যাপার। সে সত্যিই গতরাতে অসুস্থ ছিল।

এঞ্জেলা তার চুলগুলো পরিবর্তন করে ফেলেছিল। সে তার মাপের চেয়ে বাড়িয়েছিল।

তোমরা দুজনে এই উইকএন্ডে কি করে কাটালে? জেসিকা জিজ্ঞেস করল। তার ভাব দেখে মনে হলো উত্তর শোনার তার দরকার নেই। আমি বাজি ধরতে পারি এটা মাত্র তার শুরুর একটা ডায়লগ যাতে সে তার নিজের উইকএন্ডের গল্পটা বলতে পারে। আমি বিস্মিত হব যদি সে পোর্ট এ্যাঞ্জেলে আমার সাথের ঘটনাটা বলে, যেখানে আমি মাত্র তার দুই সিট পরেই বসে আছি। আমি কি অদৃশ্য হয়ে গেছি যে কেউ আমার উপস্থিতিতে আমাকে নিয়ে আলোচনা করতে অস্বস্তিবোধ করছে না?

আসলে আমরা শনিবার একটা পিকনিক পার্টিতে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু… আমরা আমাদের পরিকল্পনা ত্যাগ করেছিলাম। এঞ্জেলা বলল। তার কণ্ঠস্বরে এমন একটা চুড়ান্ত ভাব ছিল যেটা আমি আগ্রহী হলাম।

জেস ততটা নয়। এটা খুব খারাপ কথা। সে বলল। সে তার গল্প উপস্থাপন করতে যাচ্ছে। কিন্তু আমি শুধু মাত্র একজন না যে তার দিকে গভীর মনোযোগ দিচ্ছি।

কি ঘটেছিল? লরেন আগ্রহভাবে জিজ্ঞেস করল।

বেশ। এঞ্জেলা বলল, দেখে মনে হচ্ছে অনেক বেশি ইতস্তত করছে স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে যদিও সে সবসময়ই একটু রিজাভ। আমরা উত্তরের দিকে যাচ্ছিলাম। যদিও সেখানে খুব গরম ট্রেইল থেকে এক মাইল এগিয়ে গেলৈই খুব সুন্দর একটা স্পট আছে। কিন্তু যখন আমরা অর্ধেক পথ পেরুলাম… আমরা কিছু একটা দেখলাম।

কিছু একটা দেখলে? কি? লরেনের ধুসর চোখের পাতা উপরে উঠে গেল। এমনকি জেসও এখন মনোযোগ দিয়ে শুনছে।

আমি জানি না। এঞ্জেলা বলল আমরা মনে করছি এটা একটা ভল্লুক। এটা ছিল কালো। যাইহোক, কিন্তু এটা দেখে মনে হয়…খুবই বড়।

লরেন নাক টানল। ওহ, তুমিই নও। তার চোখজোড়া স্ক্রিপাত্বকভাবে ঘুরে গেল। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমার তাকে সন্দেহের পক্ষে যাওয়ার কোন দরকার নেই। সুস্পষ্টত তার ব্যক্তিত্ব তার চুলের মত অতটা পরিবির্তিত হয়নি। টেইলর আমাকে গত সপ্তাহে সেটা বলার চেষ্টা করেছিল।

তুমি রিসোর্টের কাছাকাছি কোন ভল্লুক দেখতে যাচ্ছ না। জেসিকা লরেনকে পাশ কাটিয়ে বলল।

সত্যিই! এঞ্জেলা নিচু স্বরে প্রতিবাদ করল। সে টেবিলের দিকে তাকিয়ে ছিল। আমরা এটা দেখেছি।

লরেন আবার নাক টানল। মাইক এখনও কনারের সাথে কথা বলে যাচ্ছে। আমাদের মত মেয়েদের দিকে কোন মনোযোগ দিচ্ছে না।

না, সে-ই ঠিক বলেছে। আমি অধৈর্যের সাথে বললাম। আমরা একজন পর্বত আরোহীকে দেখেছিলাম, গত শনিবার যে ভল্লুকটা এঞ্জেল দেখেছিল। সে বলেছিল এটা খুবই বড় এবং কালো। আর এটা শহরের বাইরের পাশে, তাই কি সে বলেনি মাইক?

সেখানে এক মুহূর্তের নীরবতা। টেবিলের প্রতি জোড়া চোখ আমার দিকে ঘুরে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। নতুন মেয়ে কেটি মুখ এমনভাবে হা করে রেখেছিল যেন যেকোন মুহূর্তে সে একটা বিস্ফোরণ ঘটাবে।

মাইক? আমি বিড়বিড় করে বললাম। তোমার সেই লোকের কথা মনে আছে যে ভালুকের গল্প বলেছিল?

নিশ্চয়। মাইক এক সেকেন্ড পর বলে উঠল। আমি জানি না কেন সে আমার দিকে এতটা অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে ছিল। আমি কাজের সময় তার সাথে কথা বলি, তাই নয় কি? বলি কি? আমি ভেবেছিলাম যেহেতু…

মাইক ধাতস্থ হলো। হ্যাঁ, দোকানে একজন লোক এসেছিল, যে বলছিল সে একটা বিশাল কালো ভাল্লুক দেখেছিল, ট্রেইলহেডের ডানদিকে। সেটা এত বড় যে একটা গ্রিজলির চেয়েও বড়। সে নিশ্চিত করল।

হুম। লরেন জেসিকার দিকে ঘুরে গেল। তার কাধ শক্ত হয়ে গেছে। সে বিষয় পরিবর্তন করল।

তুমি কি ইউএসসি ফেরার কথা শুনেছো?

প্রায় প্রত্যেকেই অন্যদিকে তাকাল। শুধু মাইক আর এঞ্জেলা ছাড়া। এঞ্জেলা আমার দিকে সচেতনভাবে একটু হাসল। আমি তাড়াতাড়ি হাসিটা ফিরিয়ে দিলাম।

তো, এই উইকএন্ডে তুমি কি করেছিলে বেলা? মাইক সতর্কতার সাথে কিছুটা অদ্ভুতভাবে জিজ্ঞেস করল।

লরেন ছাড়া প্রত্যেকেই পিছন ফিরে দেখল। আমার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।

শুক্রবার রাতে জেসিকা আর আমি পোর্ট এঞ্জেলসে একটা ছবি দেখতে যাই। তারপর আমি শনিবার বিকেল এবং রবিবারের প্রায় সমস্ত দিন লা পুশে কাটাই।

চোখগুলো মুহূর্তের জন্য জেসিকার দিকে ঘুরে গেল। আবার আমার দিকে ফিরে এল। জেসিকাকে অধৈর্য দেখাচ্ছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম সে চাইছিল না কেউ জানুক সে আমার সাথে গিয়েছিল। অথবা সে হয়তো নিজেই তার এই গল্পটা বলতে চেয়েছিল।

তুমি কি ছবি দেখেছিলে? মাইক হাসিমুখে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল।

ডেড এভ-জম্বির নিয়ে যে ছবিটা। আমি উৎসাহের সাথে বললাম। বিগত মাসগুলো জষি নিয়ে আমি যেভাবে ভুগছি তার কিছুটা উপকার হতে পারে।

আমি শুনেছি সেটা নাকি খুবই ভয়ের। তুমি কি তাই মনে করো? মাইক এখনও কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়ায় আগ্রহী।

বেলা শেষ হওয়ার আগেই বেরিয়ে গিয়েছিল। সে এতটাই ভয় পেয়েছিল। জেসিকা লজ্জাজনক হাসি দিয়ে কথার মধ্যে ঢুকে পড়ল।

আমি মাথা নোয়ালাম। চেষ্টা করছিলাম বিব্রত ভঙ্গি দেখাতে। এটা আসলেই খুব ভয়ের।

মাইক আমাকে প্রশ্ন করা বন্ধ করল না যতক্ষণ না লাঞ্চ শেষ হলো। ধীরে ধীরে অন্যরাও আবার তাদের নিজস্ব কথাবার্তা আলোচনা শুরু করে দিল। যদিও তারা এখনও আমার দিকে মাঝে মধ্যে তাকাচ্ছিল। এঞ্জেলা বেশিরভাগ সময় মাইকের সাথে কথা বলছিল। যখন আমি আমার ট্রে পরিষ্কার করতে নিয়ে গেলাম সে আমার পিছু নিল।

ধন্যবাদ। সে খুব নিচু গলায় বলল যখন আমরা টেবিল থেকে দূরে।

কিসের জন্য?

আমার পক্ষে, আমার সাথে কথা বলার জন্য।

 না, ঠিক আছে।

সে আমার দিকে সর্তকতার সাথে তাকাল। কিন্তু মোটেই আক্রমণাত্বক দৃষ্টিতে নয়। হতে পারে সে তার প্রকৃতি হারিয়েছিল। তুমি ঠিক আছে তো?

পুরোপুরি নই। আমি স্বীকার করলাম। কিন্তু আমি এখন আগের চেয়ে অনেকটা ভাল আছি।

শুনে খুশি হলাম। সে বলল। আমি তোমাকে মিস করি।

তারপর লরেন আর জেসিকা আমাদের পাশে চলে এল। আমি শুনতে পেলাম লরেন জোরে জোরে ফিসফিস করছে ওহ, কি ভালই না লাগছে, বেলা ফিরে এসেছে।

এঞ্জেলা তাদের দিকে চোখ ঘুরিয়ে তাকাল। আমার দিকে তাকিয়ে উৎসাহের হাসি দিল।

আমি লজ্জা পেলাম। এটা এমন যেন আমি সবকিছু আবার নতুন করে শুরু করছি।

আজ কত তারিখ? আমি বিস্ময়ের সাথে জিজ্ঞেস করলাম।

জানুয়ারিয় উনিশ।

 হুম।

কি এটা? এঞ্জেলা জিজ্ঞেস করল।

গতকাল আমার এখানে আসার একবছরপূর্ণ হয়েছে। আমি বিস্মিতভাবে বললাম।

খুব বেশি কিছু পরিবর্তন হয় নাই। এঞ্জেল বিড়বিড় করে বলল। তারপর লরেন আর জেসিকার দিকে গেল।

আমি জানি। আমি একমত হলাম। আমি শুধু সেই একই বিষয় নিয়ে অবছিলাম।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *