৮. মানুষের মাংস

ধ্যায় ৩৬

ওরা মানুষের মাংস খেয়ে বেঁচেছিলো!

অ্যালবামটা কোলের উপর রেখে হতভম্ব হয়ে বসে আছে নুরে ছফা। এটা জানার পর তার মাথা রীতিমতো ভো ভো করছে। সভ্য দুনিয়ার কিছু মানুষ দূর্গম অঞ্চলে আটকা পড়ে মানুষের মাংস খেয়ে বেঁচে ছিলো আশিদিনেরও বেশি সময় ধরে।

সে টের পাচ্ছে একটা অবশ করা যোরের মধ্যে চলে যাচ্ছে যেনো। তার বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে এটা। কল্পনা করতেই সারা শরীর গুলিয়ে উঠলো।

“কেউ জানতো না আমরা অনেকেই বেঁচে ছিলাম, তাই উদ্ধার করতেও আসে নি,” বললো মুশকান। “সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকলাম রেসকিউ টিম এসে আমাদের উদ্ধার করবে, কিন্তু পাঁচদিন পরও কেউ এলো না।”

ছফা অ্যালবামের দিকে তাকালো। পেপার-ক্লিপিংসে ছড়াছড়ি। সবগুলোই আসল পত্রিকা থেকে কেটে লাগানো হয়েছে, কোনো ফটোকপি নয়। একটা ক্লিপিংসের দিকে চোখ গেলো তার। বড় বড় বোল্ড অক্ষরে লেখা গা শিউরে মুঠা হেডলাইন আর ধ্বংস হয়ে যাওয়া প্লেনের ছবি।

ছফা চোখ সরিয়ে নিলো। আরেকটা ক্লিপিংসের দিকে তাকালো সে। ওটা বলছে, মোট ১০২ জন যাত্রির মধ্যে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পয়ষট্টিজনের তো, বাকি সাইত্রিশ জনের বেশিরভাগই মারাত্মক আহত ছিলো, একদম সুস্থ, কিংবা সামান্য আহত ছিলো মাত্র বারোজন।

 “সাত হাজার মিটার উঁচু পাহাড়ের কোলে আমাদের বিমানটি আছড়ে পড়ে খুবই দুর্গম এলাকায়। বরফে ঢাকা উপত্যকা…প্রচণ্ড ঠাণ্ডা আর ঝড়ো বাতাস…কোনো পানি নেই..খাবার নেই…গাছপালাও নেই যে পাতা খেয়ে বেঁচে থাকা যাবে…কোনো জীব-জন্তুরও দেখা পাই নি ওগুলো শিকার করে ক্ষুধা মেটাতে পারবো।”

ছফা আরেকটা পৃষ্ঠা উল্টাতে গিয়ে টের পেলো তার হাত একটু কাঁপছে। ভয়ঙ্কর ঘটনার কথা শুনে হয়তো তার নার্ভ সিস্টেমও ভড়কে গেছে! কম্পিত হাতেই পৃষ্ঠাটা ওল্টালো। আরো কিছু ক্লিপিংস। আন্দিজের ম্যাপ, বিমানটি যেখানে বিধ্বস্ত হয়েছে সেই জায়গাটি বৃত্ত এঁকে চিহ্নিত করা। ভাঙাচোরা বিমানের ভেতরে বসে থাকা জীবিতদের ছবি।

 “এই ছবিগুলো আমার ক্যামেরায় তোলা হয়েছিলো,” জানালো মুশকান। তার মধ্যে এক ধরণের উদাস ভাব চলে এসেছে। “যদি আমাদের মধ্যে একজনও জীবিত অবস্থায় সভ্য-দুনিয়ার ফিরে যেতে পারে তাহলে ছবিগুলো সবাই দেখতে পাবে…কিংবা আমাদের সবার মৃত্যুর পরও যদি কেউ ওখানে আসে তাহলে ছবিগুলো আলোর মুখ দেখবে-এই উদ্দেশ্যেই তুলেছিলাম।”

ছফা দেখলো একটা ছবিতে বাকিদের সাথে তরুণী মুশকানও বসে আছে বিধ্বস্ত প্লেনের ভেতরে। ভারি সোয়েটারে তার শরীর আর মাথা ঢাকা থাকলেও মুখটা দেখে চিনতে অসুবিধা হলো না।

“প্লেনে থাকা কিছু খাবার আর পানি অল্প অল্প খেয়ে পাঁচ-ছয় দিন পার করলাম আমরা…এরমধ্যে আহত আরো তিনজন মারা গেলো। ওরকম জায়গায় শুধুমাত্র ফাস্টএইড দিয়ে ওদের বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয় নি।”

ছফা মুখ তুলে তাকালো। মুশকাল জুবেরকে ঝাপসা দেখলো সে। কেমন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছে। মুখ দিয়ে কোনো কথা বের করতে পারলো না।

“একসপ্তাহ পর আমরা যারা বেঁচে ছিলাম তারা টের পেলাম খিদে কতোটা ভয়ঙ্কর হতে পারে। না-খেয়ে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম ধীরে ধীরে।”

ছফা আরেকটি ক্লিপিংসের দিকে চোখ বুলালো। একই খবর। একই ছবি। তবে ভিন্ন ভিন্ন পত্রিকার।

“খিদের কাছে সব পরাজিত হয়। সবার আগে পরাজিত হয় স্বাদ-রুচি। তারপর যুক্তি-বুদ্ধি, সভ্যতা, মানবিকতা।”

মুখ তুলে তাকালো নুরে ছফা।

‘আমাদের মধ্যে নরম্যান নামের এক যুবক ছিলো। প্রথমে ও-ই প্রস্তাব করলো মূতষাত্রিদের মাংস খেয়ে বেঁচে থাকতে পারি আমরা। প্রচণ্ড শীত আর বরফের মধ্যে থাকার কারণে লাশগুলো পচে যায় নি।”

ছফা টের পেলো তার পেটটা গুলিয়ে উঠছে। মৃত মানুষের মাংস! দৃশ্যটা ভাবতেও কষ্ট হলো।

 “প্রথমে কেউ রাজি হয় নি..কিনতু আরো তিনদিন অভুক্ত থাকার পর…” কথা বলা থামিয়ে দিলো মুশকান। “…আগেই বলেছি, খিদের কাছে। সবকিছু হেরে যায়।”

ক্রমশ তার সামনে বসে থাকা মুশকান জুবেরি আরো বেশি ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। যেনো এক মায়াবি তার মায়ার জাল ছড়িয়ে দিয়েছে। চারপাশে এক ধরণের কুয়াশা। মাথাটা ঝিমঝিম করছে আগের চেয়েও বেশি।

 “যাত্রিদের মধ্যে একজন ডাক্তার ছিলো কিন্তু সে ছিলো মারাত্মক আহত…তাই ওরা সবাই সদ্য মেডিকেল থেকে বের হওয়া আমাকেই বললো মৃত মানুষগুলোর কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ খাওয়ার উপযোগী আর পুষ্টি জোগাবে বেশি…” একটু থামলো মুশকান। “…দিনের পর দিন আমরা মুতদের খেয়ে বেঁচে রইলাম…অপেক্ষা করতে লাগলাম উদ্ধার পাবার জন্য। যদিও ততদিনে অনেকেই হাল ছেড়ে দিয়েছিলো। বাঁচার আশা কেউ করছিলো না।”

আরেকটা ক্লিপিংস আর ছবির দিকে তাকালো ছফা ভগ্নপ্রায় প্লেনের বাইরে এদিক-ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বেঁচে থাকা কিছু মানব-সন্তান। তাদের প্রত্যেকের চেহারা বিধ্বস্ত, শরীর দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের মতোই।

“এভাবে এক মাস চলে গেলো কিন্তু কেউ এলো না আমাদের উদ্ধার করতে।”

ছফা আরেকটা পৃষ্ঠা উল্টালো কম্পিত হাতে।

“লাশগুলো কেটে খাওয়ার উপযোগী অংশগুলো আমরা বরফের ভেতর ঢুকিয়ে রাখতাম সংরক্ষণ করার জন্য। প্লেনের ভেতরে পাওয়া ম্যাচবক্স থেকে আগুন জ্বালিয়ে এটা ওটা পুড়িয়ে বরফ গলিয়ে খাবার পানি তৈরি করে নিতাম। কিন্তু কোনো কিছুই যথেষ্ট ছিলো না। ক্রমশ বনের পশুর মতো হয়ে যাচ্ছিলাম আমরা। অভুক্ত পশু! হিংস্র আর অসভ্য। শুধু বেঁচে থাকাটাই যেনো একমাত্র লক্ষ্য। আর কোনো উদ্দেশ্য নেই আমাদের সামনে।”

পেপার ক্লিপিংস থেকে চোখ সরিয়ে মুশকানের দিকে তাকিয়ে রইলো। নুরে ছফা। তার মুখে কোনো রা নেই। কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে সে। চোখের সামনে মুশকানের অবয়বটি কুয়াশায় মিলিয়ে যাচ্ছে, তরঙ্গায়িত হচ্ছে! তার কথাগুলো যেনো বহূদূর থেকে ভেসে আসা গুঞ্জনের মতো শোনাচ্ছে এখন।

“আহত, রোগগ্রস্ত মানুষগুলো টিকে থাকার অনেক চেষ্টা করেও একে একে ঢলে পড়লো মৃত্যুর কোলে। তারা হয়ে উঠলো আমাদের আহার!”

ছফার বমি বমি ভাব হলো। “এভাবে দু-মাস চলে গেলো কিন্তু উদ্ধারের কোনো চিহ্ন দেখতে পেলাম না। এবার প্রায় সবাই আশা ছেড়ে দিলো। তিনজন সাহসী যুবক চেষ্টা করলো পাহাড় থেকে নীচে নামার। আমরা বাঁধা দিলাম, কিন্তু তারা ছিলো বেপরোয়া, কারো কথা শুনলো না। একটু থামলো মুশকান জুবেরি। “ওদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি..সম্ভবত ভুলপথে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে.কিংবা দুর্ঘটনায় পড়ে থাকবে হয়তো।”

এসব কথা আর শুনতে চাইছে না ছফা কিন্তু মুখ ফুটে বলতেও পারছে না।

“শেষদিকে প্রায় দু-দুটো সপ্তাহ আমরা কেউ ঘুমাতে পারি নি।”

সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকালো ডিবির জাঁদরেল ইনভেস্টিগেটর। তার সেই দৃষ্টি ঢুলু ঢুলু।

“খাবার উপযোগী লাশ ফুরিয়ে গেছিলো..যারা বেঁচে ছিলাম তারা মনে মনে আশা করতাম কেউ হয়তো এমন কঠিন পরিস্থিতি সহ্য করতে না পেরে মরে যাবে আর আমরা…”

ছফার বমি বমি ভাবটা আবারো ফিরে এলো।

“কিন্তু কেউ আর মরছিলো না, দীর্ঘশ্বাস ফেললো মুশকান। “দু মাসেরও বেশি সময় ধরে কঠিন পরিস্থিতিতে লড়াই করে আমরা হয়তো টিকে থাকার অসামান্য ক্ষমতা অর্জন করে ফেলেছিলাম। কোনো কিছুই আর আমাদের পরাজিত করতে পারছিলো না।”

ছফা আরেকটি পৃষ্ঠা উল্টালো।

“আরো পাঁচদিন কোনো কিছু না খেয়ে কাটিয়ে দিলাম। খিদে আমাদেরকে অসভ্যতার চরম অবস্থায় নিয়ে গেলো। একরাতে আমাদের মধ্যে একজন অন্য একজনকে হত্যা করে ফেললো!”

স্থিরচোখে চেয়ে রইলো ছফা।

“আমরা সবাই বুঝতে পারলাম কিন্তু এ নিয়ে কেউ কিছু বললাম না। আরো কয়েকটা দিনের আহার তো হলো!” একটু থেমে উদাস হয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো মুশকান। “ঐ ঘটনার পর থেকে আমরা কেউ রাতে ঘুমাতাম না…কেউ কাউকে বিশ্বাস করতাম না। সবাই সতর্ক থাকতাম। সবাই জানতাম এরপর কি হতে চলেছে…” এবার ছফার দিকে তাকালো। “একদল আরেক দলকে মেরে ফেলবে…নিজেদের আহার বানাবে!”

নুরে ছফা মুখ খোলার চেষ্টা করলো কিন্তু হাত তুলে তাকে থামিয়ে দিলো মুশকান।

 “আপনাকে কিছু বলতে হবে না। যা বলার আমিই বলছি।” একটু থেমে গভীর করে নিঃশ্বাস নিয়ে নিলো আবার। “আমরা সবাই উদ্ধারের আশা ছেড়ে দিয়ে শারীরিক এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়লাম। সবাই সবাইকে সন্দেহ করতে লাগলাম…যে কেউ যে কাউকে খুন করে খেয়ে ফেলতে পারে। বরফে ঢাকা উপত্যকায়…মাটি থেকে সাত হাজার মিটার উপরে পশুর মতো বেঁচে রইলাম আমরা কয়েকজন মানুষ।”

ছফা আরেকটি পৃষ্ঠা উল্টালো। কিছু পেপার-ক্লিপিংসের সাথে ছবিও আছে মনেক। কিন্তু স্পষ্ট করে দেখতে পাচ্ছে না। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে তার।

“অবশেষে একদিন সকালে হুট করেই একটা হেলিকপ্টার দেখতে পলাম আকাশে।”

ছফা চোখ দুটো পিটপিট করে দেখার চেষ্টা করলো। একদল উদ্ধার পাওয়া মানুষের ছবি ভেসে উঠলো তার সামনে।

.

অধ্যায় ৩৭

কেএসকে চুপ মেরে আছে। ডাক্তার আসকার ইবনে সায়িদও কিছু বলছেন না। জাওয়াদ নিজের সিটে এপাশ-ওপাশ করছে বলে খ্যাচখ্যাচ করে শব্দ হচ্ছে, সেই শব্দটাই সুকঠিন নীরবতাকে জমাট বাঁধতে দিচ্ছে না।

“বুঝতেই পারছেন,” দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন ডাক্তার। “মানুষের মাংস খেয়ে বেঁচে যাওয়াদের ব্যাপারে সমাজ আর আশেপাশের মানুষ কেমন আচরণ করে।”

কেএসকে মাথা নেড়ে সায় দিলো।

“বেঁচে যাওয়াদের মধ্যে একমাত্র মুশকানই ছিলো এশিয়ান…মুসলিম…” চশমাটা খুলে পরিস্কার করে নিলেন ডাক্তার। “ তার অবস্থা হয়েছিলো খুবই শোচনীয়। নিজের পরিবার থেকেও সে বিরূপ মনোভাবের শিকার হয়। খুব দ্রুতই তার জীবনটা অসহনীয় হয়ে ওঠে।”

চুপ মেরে রইলো কেএসকে৷ সে এই ব্যাপারটা বুঝতে পারছে। যেখানে আমাদের দেশে একজন ধর্ষিতাকেই সব অপমান আর গঞ্জনা সইতে হয় সেখানে মানুষের মাংস খাওয়া একজনের সাথে কি আচরণ করা হবে সেটা অনুমেয়। আমেরিকায় থাকলেও নিজের কমিউনিটিতে কঠিন অবস্থায় পড়তে হয়েছে মুশকানকে। একদম স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়াটা আর সম্ভবও হয় নি।

“এই কথাটা আমাদের হাসপাতালে জানাজানি হয়ে গেলে ভীষণ সমস্যা হবে…রেপুটেশনের ব্যাপার…বুঝতেই পারছেন।”

ডাক্তারের কথায় মাথা নেড়ে সায় দিলো কেএস খান।

“তাই আমি মুশকানকে একটা অফার দিলাম,” ডাক্তার একটু কেশে নিলেন। “হাসপাতালের চাকরিটা সে ছেড়ে দিয়ে একজন কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করতে পারে…পর্দার আড়ালে থেকে কাজ করতে কোনো সমস্যা নেই…কিন্তু মুশকান এই প্রস্তাবে রাজি হয় নি। সে চাকরি ছেড়ে দেয়।”

“তখন কি উনি মি. জুবেরিকে বিয়ে করেছেন?” এই প্রথম জাওয়াদ কোনো প্রশ্ন করলো।

মাথা নেড়ে সায় দিলেন ডাক্তার। “এই ঘটনার মাসখানেক আগেই। ওদের বিয়েটা হয়।”

কথাটা শোনার পর অনেকক্ষণ চুপ মেরে রইলো কেএসকে। এরকম অভাবনীয় ঘটনা শুনতে হবে সেটা ঘুণাক্ষরেও ভাবে নি। আন্দিজের এই প্লেন ক্রাশের উপরে দু-দুটো বই আছে, একটা সিনেমাও বানানো হয়েছে। সিনেমাটা না দেখলেও বই পড়েছে অনেক আগে। খুবই লোমহর্ষক কাহিনী। বইটা পড়ার পর প্রায় মাসখানেক সে কোনো ধরণের মাংস খেতে পারে নি। মাংস দেখলেই তার মনে হতো নরমাংসের কথা। একদল বিপন্ন মানুষ লাশ কেটে খাচ্ছে!

হঠাৎ একটা কথা মনে পড়ে যাওয়ায় খোদাদাদ শাহবাজ খান নড়েচড়ে বসলো। “ডাক্তার, ঐ ঘটনার উপরে আমি দুইটা বই পড়ছি…ওইখানে তো মুশকান নামের কোনো ক্যারেক্টারের কথা লেখা নাই?!”

কথাটা শুনে ছফার সহকারী জাওয়াদ গোল গোল চোখে চেয়ে রইলো, তবে ডাক্তার আসকার ইবনে সায়িদ গভীর করে নিঃশ্বাস নিয়ে বললেন, “মুশকানের অনুরোধে বই দুটোর লেখক তার নাম ব্যবহার করে নি। তার চরিত্রটি অন্য নামে আছে বইয়ে।”

কেএস খান চুপ মেরে গেলো।

“মুশকান জানতো, এটা জানাজানি হলে সামাজিকভাবে কি রকম সমস্যায় পড়তে পারে।” দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এলো ডাক্তারের ভেতর থেকে। “বই লেখার অনেক আগেই সে তার নিজের কমিউনিটি আর পরিবারের কাছ থেকে বিরূপ আচরণের শিকার হয়েছিলো। ওদের কাছে এটা লুকানো যায় নি।”

 “এই কারণেই মুশকান আমেরিকায় থাকে নি,” অস্কুটস্বরে বললো কেএস খান।

“ও বুঝতে পেরেছিলো বইতে ওর কথা লেখা হলে শুধু আমেরিকায় নয়, পৃথিবীর সবখানেই বিরূপ আচরণের শিকার হবে।”

মাথা নেড়ে সায় দিলো ডিবির সাবেক কর্মকর্তা। ঘটনাটা আসলেই প্যাথেটিক। কয়েক মুহূর্ত কেউ কোনো কথা বললো না।

 “অনেক রাত হয়েছে, আমি আবার আলি রাইজার।”

সম্বিত ফিরে পেয়ে ডাক্তারের দিকে মুখ তুলে তাকালো কেএসকে।

হাতঘড়িতে হাত রেখে বললেন তিনি, “একটু স্টাডি করে ঘুমাতে যাবো। আপনাদের যদি আর কিছু জানার না থাকে তাহলে…”

মাথা নেড়ে সায় দিলো কেএস খান। জাওয়াদকে ইশারা করে নিজেও উঠে দাঁড়ালো। “সরি, ডাক্তার। আমরা আর আপনের সময় নষ্ট করুম না।” কথাটা বলেই হাত বাড়িয়ে দিলো সে।

ডাক্তার আসকার ইবনে সায়িদ উঠে দাঁড়িয়ে কেএসকের বাড়িয়ে দেয়া হাতটা ধরে সৌজন্যমূলক মাপায়সি দিলেন।

“থ্যাঙ্কস ফর গিভিং আস ইওর ভ্যালুয়েবল টাইম।”

ডাক্তার আর কিছু না বললে জাওয়াদকে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে এলো সে। অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে লিফটের সামনে এসে হাই তুললো। “কি জানতে আসলাম আর কি জানলাম,” অনেকটা বিড়বিড় করে বললো সাবেক ডিবি কর্মকর্তা। “আমি কখনও ঘুণাক্ষরেও ভাবি নাই সেভেনটি টু-র এই আলোড়নসৃষ্টিকারী ঘটনায় আমাদের দেশের কেউ ছিলো।” হাফ ছাড়লো মি. খান। “শেক্সপিয়ার কইলাম অনেক আগেই বইলা গেছে, ট্রুথ ইজ স্ট্রেঞ্জার দ্যান ফিকশান। একদম সত্যি কথা।”

জাওয়াদ মাথা নেড়ে সায় দিলো। “কিন্তু স্যার, একটা জিনিস আমার মাথায় ঢুকছে না?”

“কি?”

“আপনি বলছেন আন্দিজের ঘটনাটা ১৯৭২ সালের… যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে মুশকান জুবেরির বয়স এখন কতো?”

কপালের ডানপাশটা চুলকে দ্রুত হিসেব কষে ফেললো কেএসকে। “উমমমম…পয়ষট্টি…না, না…ছেষট্টি!”

. “কিন্তু নুরে ছফা স্যার তো আমাকে বলেছেন মহিলা দেখতে যথেষ্ট স্মার্ট…অ্যাট্রাক্টিভ…মানে খুব সুন্দরি?”

“ষাইটের পর কি কেউ এরকম থাকবার পারে না?”

মাথা দোলালো জাওয়াদ। “স্যার, আপনি বুঝতে পারছেন না.. ছফা স্যার বলেছেন, সুন্দরপুরের এমপি ঐ মহিলাকে বিয়ে করতে চাইছে। ছেষট্টি বছরের কোনো মহিলাকে একজন এমপি কেন বিয়ে করতে চাইবে?”

কেএস খান আবারো গাল চুলকালো। একটু ধন্দে পড়ে গেছে সে।

“এখন আমার মনে পড়েছে, ছফা স্যার ফোনে আমাকে ডিটেইল বলার সময় বলেছিলেন, ঐ মহিলার বয়স আনুমানিক ত্রিশ থেকে পয়ত্রিশের মধ্যে হবে।”

চমকে উঠলো মি, খান। “বলো কি!”

“জি, স্যার।” জোর দিয়ে বললো ছেলেটা।

“হায় হায়, সর্বনাশ হইয়া গেছে! মনে হইতাছে ছফা বিরাট বড় ভুল কইরা ফালাইছে!”

.

অধ্যায় ৩৮

বুকের কাছে দু-হাত ভাঁজ করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে মুশকান জুবেরি, তার দৃষ্টি সামনে বসা নুরে ছফার দিকে নিবদ্ধ। ডিবির জাঁদরেল ইনভেস্টিগেটর যেনো আক্ষরিক অর্থেই হতবাক হয়ে আছে দীর্ঘ সময় ধরে। কোলের উপরে পেপার-ক্লিপিংসের অ্যালবামটা নিয়ে বসে আছে সে। কখনও মনোযোগ দিয়ে ছবি আর নিউজগুলো পড়ছে, কখনও মুখ তুলে তাকাচ্ছে। যেনো ছবির একটি চরিত্রকে সামনাসামনি পেয়ে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করছে বার বার।

“এ-এই ঘটনাটা তো…” ঢোক গিললো নুরে ছফা, “ মানে…” মাতালের মতো আচরণ করছে সে। চোখ দুটো দুলু ঢুলু। কথাটা শেষ করতে পারলো না।

“১৯৭২ সালে,” আস্তে করে বললো মুশকান জুবেরি। তার ঠোঁটে দুর্বোধ্য হাসি। “তখন কি আপনার জন্ম হয়েছিলো?” তারপর মাথা দোলালো। সে। “আমার তা মনে হচ্ছে না।”

ছফা ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো মহিলার দিকে।

“আপনার কথা বলার ক্ষমতা বোধহয় লোপ পেয়ে গেছে, স্থিরচোখে চেয়ে আবারো হাসি দিলো। “মনে হয় না যোগ-বিয়োগ করে বয়স বের করার মতো অবস্থাতে আপনি এখন আছেন।”

ছফা ঢোক গিললো। তার দৃষ্টি এখন ঝাপসা নয়, পানিতে প্রতিফলিত হওয়া প্রতিবিম্বের মতো টলমল করছে চারপাশের দৃশ্যপট।

“সমস্যা নেই। আপনার সমস্ত প্রশ্নের জবাব আমি নিজে থেকেই দিচ্ছি। ভালো করেই জানি আপনার মাথায় কোন কোন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।”

ছফা আবারো নির্বাক হয়ে চেয়ে রইলো। তার মনে অনেক প্রশ্ন থাকলেও অজ্ঞাত এক কারণে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।

উঠে দাঁড়ালো মুশকান। ছফার সামনে এসে ভালো করে তাকালো তার চোখের দিকে, ডাক্তার যেভাবে রোগির চোখ পরীক্ষা করে ঠিক সেভাবে। মনে হলো সসতুষ্ট হয়েছে।

ছফা টের পেলো মহিলার গায়ের গন্ধ! সেই গন্ধ মোহনীয়; মাদকতাপূর্ণ, দুর্দমনীয়! জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিলো সে।

 “আহ” মায়াবি কণ্ঠে বলে উঠলো মুশকান। “মাথাটাকে এবার একটু বিশ্রাম দিন। কী দরকার যোগ-বিয়োগের হিসেব করে। বললামই তো..আমি আপনার সব প্রশ্নের জবাব দিয়ে দেবো। আপনাকে কষ্ট করে কিছু বলতে হবে না-ভাবতেও হবে না।”

নুরে ছফার মনে হলো সে বাস্তবের কোনো জগতে নেই। অপার্থিব এক জগতে, অমর্ত্যের এক অপ্সরার মুখোমুখি বসে আছে।

 “তখন আমার বয়স ছিলো পঁচিশ!” লাস্যময়ীহাসি দিয়ে বললো মুশকান। “কি, বিশ্বাস হচ্ছে না?” ছফার থুতনিটা আলতো করে ধরে তার চোখে চোখ রেখে কয়েক মুহূর্ত চেয়ে রইলো। “স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে?”

শুধুমাত্র মুখটা একটু হা করতে পারলো ছফা। আস্তে করে তার সেই ঠোঁটে তর্জনি দিয়ে স্পর্শ করলো মুশকান। আরো গভীরভাবে তার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো কয়েক মুহূর্ত। যেনো বোঝার চেষ্টা করছে ডিবির ইনভেস্টিগেটরের মাথায় কোন চিন্তাটা খেলা করছে এ মুহূর্তে।

“আমি কে?” নিঃশব্দে হাসলো। “আমি কে!”

 ছফা নির্বাক চোখে চেয়ে রইলো কেবল।

“তুমি আমার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে চাও, তাই না?” ছফার ঠোঁটে আঙুল ছোঁয়ালো সে। “রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসে নি…এই নামটা নিয়ে তোমার কোনো প্রশ্ন নেই? কেন আমি এমন নাম দিলাম?”

ছফার ঠোঁট দুটো সামান্য কেঁপে উঠলো।

“অন্যেরা তোমাকে এ সম্পর্কে কিছু বলেছে?” মাথা দোলালো আপন মনে। “ওসব একদম সত্যি না।”

মৃদু গোঙানি দিতে পারলো নুরে ছফা।

“আহ, তুমি কিছু বোলো না…যা বলার আমিই বলছি।” তারপর একটু থেমে আবার বলতে লাগলো সে, “আমি আসলেই রবীন্দ্রনাথের ভক্ত। সেই ছোটোবেলা থেকে। আমার মা খুব ভালো রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতো..আমাকেও শিখিয়েছিলো। ছায়ানটের প্রথমদিকার ছাত্র ছিলাম আমি। ৬২-তে যখন পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে রবীন্দ্রজন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করা হলো, সেই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে অনেকের সঙ্গে আমিও ছিলাম…তখন অবশ্য আমি অল্পবয়সি কিশোরী।” ছফার দিকে তাকালো সে। “ঠিক এভাবে লক্ষমীছেলের মতো বসে থাকো।” কানের পাশ থেকে আবারো চুল সরিয়ে নিলো। “এরপরই বাবার চাকরির কারণে আমরা সপরিবারে আমেরিকায় চলে যাই। সেখানে গিয়ে আমরা মা-মেয়ে রবীন্দ্রচর্চা অব্যাহত রেখেছিলাম। সকালের শুরু আর রাতে ঘুমাতে যাবার আগে রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনা-গাওয়া আমাদের নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার ছিলো।” একটু থেমে আবার বললো, “তো, কয়েক বছর আগে যখন সুন্দরপুরে রেসটুরেন্ট দেবো তখন সেটার নাম নিয়ে খুব একটা ভাবি নি। রবীন্দ্রনাথের অজস্র কবিতা, গান আমার মুখস্ত. তার গল্প-উপন্যাসের অনেক চরিত্রই আমার প্রিয়…ওখান থেকে একটা বেছে নিতে কী আর এমন কঠিন কাজ।” ছফার দিকে তাকালো স্থিরচোখে। “সত্যি বলতে, চারুলতা আর ঘরে-বাইরে নাম দুটোই আমার প্রথম পছন্দ ছিলো। কিন্তু নাম দেবার আগে একটা পাগলামি করে বসলাম।”

ছফা বহুকষ্টে মুখ খুলতে পারলো কিন্তু জান্তব গোঙানি ছাড়া কোনো শব্দ বের করতে ব্যর্থ হলো আরেকবার।

 “প্ৰচুর মজার মজার খাবার রান্না করলাম। রাতে ডাইনিং টেবিলে ক্যান্ডেল-লাইট জ্বালিয়ে সেগুলো পরিবেশন করলাম সুন্দর করে, তারপর প্ল্যানচেট করে ডেকে আনতে চাইলাম আমার প্রিয় রবীন্দ্রনাথকে।” একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে। “কিন্তু উনি এলেন না!” সত্যি সত্যি উদাস হয়ে গেলো মুশকান। “কেন এলেন না, জানো?”

ছফার দিক থেকে কোনো সাড়া পাওয়া গেলো না।

বাঁকাহাসি দেখা গেলো রহস্যময়ীর ঠোঁটে। “আমি উনার সম্পর্কে এতোকিছু জানতাম আর এটা জানতাম না, উনি খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে একদম অমনোযোগী ছিলেন। উনি মনে করতেন খাওয়া-দাওয়া করা সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। তারচেয়ে বড় কথা, আমার বানানো খাবারগুলো প্রায় সবই ছিলো নন-ভেজ।” মাথা দোলালো ডাক্তার মুশকান। “রবীন্দ্রনাথ মধ্য-বয়সের পর ভেজিটেরিয়ান হয়ে গেছিলেন। তাই আমার মিনতি সত্ত্বেও উনি আর এলেন না। সেজন্যে মনের দুঃখে এমন নাম দিয়েছি। কথাটা তো সত্যি, তাই না?” নির্বাক ছফার দিকে তাকালো সে। “তুমি বিরক্ত হচ্ছো? এসব গল্প শুনতে ভালো লাগছে না?” আক্ষেপে মাথা দোলালো। “ও…সরি!”।

এবার উঠে দাঁড়ালো মুশকান। “তুমি আসলে শুনতে চাও ওদের আমি কি করেছি…তাই না?” তাকে একটু উদাস দেখালো। “তাহলে মন দিয়ে। শোনো, প্রথমজনকে আমি এখানে ডেকে আনি নি। ও নিজের আগ্রহেই চলে এসেছিলো। চমৎকার মানুষ ছিলো…রবীন্দ্রনাথে খাওয়ার পর আমার সাথে দেখা করলো, অনেক প্রশংসা করলো। সুযোগ পেলেই কাউকে কিছু না বলে চলে আসতো এখানে। ধীরে ধীরে আমাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক গড়ে উঠলো। একদিন এই যে এখানে…” ঘরের চারপাশে চোখ বুলালো সে। “…আমরা গল্প করছিলাম। পূর্ণিমা ছিলো সেটা। বাইরে জ্যোৎস্না। ওর মধ্যে কী যে হলো…” চোখ বন্ধ করে ফেললো মুশকান। “আমিও সাড়া দিলাম একজন আরেকজনকে পাবার জন্য পাগল হয়ে গেলাম, “ ছফার দিকে কেমন করে তাকালো। “কিন্তু ওর নগ্ন শরীর…ওর গন্ধ আমাকে এলোমেলো করে দিলো মুহূর্তে। ওর সাথে মিলিত হবার আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম।”

ছফার সামনে একটু পায়চারি করলো সে।

“ও প্রথমে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলো আমাকে তারপর জোড়াজুড়ি…এক পর্যায়ে জবরদস্তি করতে লাগলো। ভীষণ ক্ষেপে গেলাম আমি। ওর ধারণাই ছিলো না আমি ওকে কি করতে পারি। ও আমাকে অন্যসব মেয়ের মতো ভেবেছিলো। দুর্বল। অসহায়।” বাঁকাহাসি দিলো সে। “দিলাম ওর ঘাড়টা মটকে!”

আধো-অচেতনের মধ্যেই আৎকে উঠলো ছফা। চোখ দুটো বিস্ফারিত হয়ে আছে।

“ও মরে যাবার পর ভাবলাম ওকে এভাবে অপচয় করাটা ঠিক হবে না। তাই খেয়ে ফেললাম।”

জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে শুরু করলো নুরে ছফা।

“অনেক দিন পর আরেকজন আমার প্রতি ঝুকলো আবার. আমিও সুযোগ করে দিলাম। প্রশ্রয় দিলাম। কৌশলে এখানে এনে…” নিঃশব্দে হাসলো মুশকান জুবেরি। বাতাসে ঘ্রাণ নিলো সে। “তবে শেষের দু-জনকে পুরোপুরি কৌশল করে ডেকে এনেছি এখানে। ওরা চারুলতা’কে পাবার জন্য ঘরের বাইরে এসে হারিয়ে গেলো চিরতরের জন্য!” গভীর করে নিঃশ্বাস নিলো। “আর তুমি…” ছফার খুব কাছে মুখ নিয়ে এলো সে। “তোমাকে আমি ডেকে আনি নি। তুমিও আমার টানে এখানে আসে নি। তাই ঠিক করেছি, তোমাকে আমি-”

একটা রিংটোন বেজে উঠলে চমকে তাকালো মুশকান। সোজা হয়ে দাঁড়ালো। ছফা তার জ্যাকেটের খোলা জিপারের ভেতরে কোনোরকমে কম্পিত হাতটা ঢুকিয়ে দিতে পারলো। বুকপকেট থেকে মোবাইলফোনটা বের করে আনতেই হাত থেকে সেটা পড়ে গেলো মেঝের ভারি কার্পেটের উপরে। ফ্যাল ফ্যাল চোখে সেদিকে চেয়ে রইলো সে।

মুশকান তাকালো ফোনের দিকে। ডিসপ্লেটা আলোকিত হয়ে আছে। কলার আইডি দেখতে পেয়ে নীচু হয়ে ফোনটা তুলে নিলো, তার ঠোঁটে দেখা গেলো মুচকি হাসি। কলটা রিসিভ করে স্পিকার অন করে দিলো, ফোনটা চেপে ধরলো ইনভেস্টিগেটরের ডানকানে।

“হ্যালো, নুরে ছফা?” ওপাশ থেকে উদ্বিগ্ন একটা কষ্ঠ শোনা গেলো। কিন্তু ডিবির তুখোড় ইনভেস্টিগেটর কোনো জবাব দিতে পারলো না।

 “হ্যালো, আমার কথা শুনতাছেন? হ্যালো…”

“অ্যা…” একটা শব্দ বের হলো ছফার মুখ দিয়ে। তার জিভ ভারি হয়ে। গেছে, কথা বলতে গেলে গোঙানি বের হচ্ছে এখন। “সু-স্যা-স্যা!” বহু কষ্টে মাতালের মতো জড়ানো কণ্ঠে শুধু এটুকুই বলতে পারলো।

“ছফা, শুনেন…আপনে যেই মুশকানের কথা বলতাছেন সম্ভবত ঐ মহিলা সেই মুশকান না!”

নুরে ছফা চোখ কুচকে তাকালো তার সামনে থাকা মুখটার দিকে। সেই মুখে দুবোধ্য হাসি। কিছুটা তাচ্ছিল্যের, কিছুটা অবজ্ঞার!

ছফার কান থেকে ফোনটা সরিয়ে নিলো ডাক্তার মুশকান। কলটা না কেটেই চেয়ারের পাশে কফি টেবিলের উপরে রেখে দিলো। ফোন থেকে উদ্বিগ্ন কণ্ঠটা বেশ জোরে জোরে চেঁচাতে লাগলো :

 “ছফা! আপনে ঠিক আছেন তো? ছফা! নুরে ছফা!”

ঢুলু ঢুলু চোখে পাশ ফিরে ফোনের দিকে তাকালো ডিবির ইনভেস্টিগেটর, কিন্তু হাত বাড়িয়ে ফোনটা ধরার ক্ষমতা তার নেই।

.

ফোনের দিকে অবিশ্বাসে চেয়ে আছে কেএস খান। কলটা এখনও কেটে দেয়া হয় নি কিন্তু ছফার দিক থেকে কোনো সাড়াশব্দও পাচ্ছে না।

জাওয়াদ তার দিকে ঝুঁকে ডিসপ্লেটা দেখলো। “স্যার, কি হলো?” তার কণ্ঠে আতঙ্ক।

 “ছফা তো কোনো রেসপন্স করতাছে না!” চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো কেএসকে। আর কোনো কথা না বলে ফোনটা জাওয়াদের হাতে দিয়ে দিলো সাবেক ডিবি কর্মকর্তা।

ছেলেটা কানে ফোন চেপে বলতে লাগলো, “স্যার? স্যার, আমি জাওয়াদ..স্যার?” ফ্যালফ্যাল চোখে ছেলেটা তাকালো কেএস খানের দিকে।

“কইলাম না, কোনো রেসপন্স করতাছে না,” অনেকটা বিড়বিড় করে বললো ক্রিমিনোলজির শিক্ষক।

“ছফা স্যার কিছুই বলেন নি?”

 মাথা দোলালো সে।

“তাহলে ফোনটা কে রিসিভ করেছে?”

ছেলেটার দিকে তাকালো সাবেক ইনভেস্টিগেটর। “কলটা কাটছেন তো, নাকি?”

“ওহ, সরি।” কলটা কেটে দিয়ে জানতে চাইলো জাওয়াদ, “এখন তাহলে কি করবো আমরা?”।

“বুঝবার পারতাছি না,” চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো মি. খান। তার মাথায় নানান আশংকা ঘুরপাক খাচ্ছে। “মনে হয় একবার একটু দু-হা করলো…তারপর চুপ।”

“ঘটনা কি?”

যেনো সম্বিত ফিরে পেলো কেএসকে, তারপর ঝটপট বলতে লাগলো, “তুমি সুন্দরপুরে এসপিরে ফোন দাও…ওরে বো ছফার ব্যাপারে কিছু জানে কিনা…ছফা কই আছে সেই ব্যাপারে খোঁজ নিতে বলো…জলদি করো..আর আমি একটু ডাক্তারের সাথে কথা বইলা আসতেছি,” কথাটা বলেই পেছন ফিরে ডাক্তারের অ্যাপার্টমেন্টের দরজার দিকে পা বাড়ালো আবার।

কলিংবেল বাজাতেই ডাক্তার নিজেই এসে দরজা খুলে দিলেন। কেএস খানকে দেখে অবাক হলেন ভদ্রলোক। “আপনি!”

 “সরি…একটা জরুরি দরকারে আপনেরে আবার ডিস্টার্ব করতে হইলো।”

.

অধ্যায় ৩৯

 “কি?” বেশ রহস্য করে বললো মুশকান জুবেরি, “তুমিও কি ঐ কেএসকের মতো মনে করো, আমি অন্য কেউ?” ছফার মোবাইলফোনের ডিসপ্লেতে। কেএসকে নামটা সে দেখেছে।

কিনতু যাকে বললো সে চোখের পাতা খুলে রাখতেই বেগ পাচ্ছে। এখন। মুখ দিয়ে শব্দ বের করতে গিয়ে আবারো জড়িয়ে গেলো।

ছফার গালে আলতো করে টোকা দিয়ে লম্বা করে ঘ্রাণ নিলো সে। এটা করার সময় চোখ দুটো কয়েক মুহূর্তের জন্য বন্ধ করে ফেললো। “তোমাকেও অপচয় করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।”

মুচকি হেসে আবার নিজের আসনে ফিরে গেলো। ছফার দুলুঢুলু চোখে আতঙ্কের প্রচ্ছায়া দেখা যাচ্ছে এখন।

“ভয় পাচ্ছো?” স্থিরচোখে চেয়ে রইলো কয়েক মুহূর্ত। হঠাৎ করেই গুনগুন করে গাইতে শুরু করলো মুশকান :

“তোমায় কিছু দেব বলে চায় যে আমার মন, নাই-বা তোমার থাকল প্রয়োজন।
যখন তোমার পেলেম দেখা, অন্ধকারে একা একা ফিরতেছিলে বিজন গভীর বন।
ইচ্ছা ছিল একটি বাতি জ্বালাই তোমার পথে, নাই-বা তোমার থাকল প্রয়োজন।”

গানটা থামিয়ে গভীর করে নিঃশ্বাস নিলো। “তোমার শরীরের ঘ্রাণটা বেশ…খেতে দারুণ লাগবে।”

ছফা কিছু বলার চেষ্টা করেও বলতে পারলো না।

তর্জনি নাড়িয়ে মানা করলো মুশকান। “না…আমি আমার কথা বলছি।” তারপর আবারো হাসি, আবারো রহস্যময় চাহনি। “ওদের কিন্তু আমি একা খাই নি। রবীন্দ্রনাথে যারা খেতে আসে তারাও ওদের স্বাদ পায়!”

এমন অবস্থায়ও ছফা আৎকে উঠলো কথাটা শুনে।

“আর তারা সবাই বেশ আয়েশ করে ওদের খায়?”

বিস্ফারিত চোখে চেয়ে রইলো ইনভেস্টিগেটর। সেও ঐ রেসটুরেন্টে খেয়েছে। আয়েশ করেই খেয়েছে!

“ওদের খেতে তোমার কেমন লেগেছে?”

ছফার মনে হলো সে বমি করে দেবে। রাগে কাঁপতে লাগলো তার সারা শরীর। আতঙ্কের সাথে টের পেলো বমিটা বোধহয় এবার আর আটকাতে পারবে না।

“চেষ্টা করে কোনো লাভ নেই। তুমি এখন কথা বলতে পারবে না, হাতঘড়িতে সময় দেখলো। কিছুক্ষণ পর আমার কথাও শুনতে পাবে না তুমি। আর এতোক্ষণ ধরে আমি যা বললাম সে-সব কথা অন্য কাউকে শোনানোর সুযোগ তুমি পাবে না। তুমি আমার কথা বুঝতে পেরেছো?”

নুরে ছফা জোর করে চোখের পাতা খুলে রাখার চেষ্টা করলো।

*

“এইটা কেমনে সম্ভব?”

একটু আগে যেখানে বসেছিলো ঠিক সেখানেই আবারো বসে আছে কেএসকে। ডাক্তার আসকারও আগের চেয়ারে বসে আছেন, তবে জাওয়াদ এখন ঘরে নেই।

“এইটা তো কোনো যুক্তি-বুদ্ধিতে মিলানো যাইতাছে না।”

ডাক্তার আসকার মাথা নেড়ে সায় দিলেন। “আপনি কেন, কেউই এটা বিশ্বাস করবে না। করতে পারবে না। আমেরিকা থেকে যে ডাক্তার এখানে জয়েন করেছিলো তারও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছিলো। কিনতু ঘটনা সত্যি।”

আরেকবার বিস্মিত হলো কেএস খান। “কি কারণে এমনটা হইছে তা কি আপনেরা জানেন? মানে আপনে নিজেও একজন নামকরা ডাক্তার…আপনের তো আইডিয়া থাকার কথা?”

ডাক্তার আসকার ইবনে সায়িদ গম্ভীর হয়ে গেলেন। তার মুখ থমথমে। “এটা মেডিকেল সায়েন্স দিয়ে ব্যাখ্যা করা অসম্ভব। অন্তত আজকের দিন। পর্যন্ত এটা অব্যাখ্যাতই বলতে পারেন।”

“আপনে মুশকানুরে এই ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞাসা করেন নাই?”

আলতো করে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ডাক্তার। “করেছিলাম…এরকম একটি বিস্ময়কর ঘটনা আমাকেও দারুণ কৌতূহলি করেছিলো…কিন্তু মুশকান আমাকে যেটা বলেছিলো সেটা একেবারেই অবিশ্বাস্য।”

 “কি বলছিলো আপনেরে?”

“আগেই বলেছি, আন্দিজের প্লেন ক্রাশের সময় ওরা মৃত সহযাত্রিদের লাশ খেতো। মেডিকেল সায়েন্সের স্টুডেন্ট হিসেবে ওগুলোর কোন অংশ খাওয়ার উপযোগী সেটা বাছাই করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো মুশকানের উপরেই” একটু থেমে গেলেন ডাক্তার। “কাকতালীয়ভাবে পর পর কয়েকদিন মানুষের শরীরের নির্দিষ্ট একটি অংশ ও খেয়েছিলো। ওর ধারণা এরফলেই ওর এমন পরিবর্তন। আই মিন, ঘটনাচক্রে আবিষ্কার করেছে সে।”

কেএসকে কিছুই বুঝতে পারলো না। “ইট ডাসেন্ট মেক সেন্স!” বিড়বিড় করে বললো।

মাথা নেড়ে সায় দিলেন আসকার ইবনে সায়িদ। “ইট রিয়েলি ডাসেন্ট মেক সেন্স অ্যাট অল।”

 “মানুষের শরীরের কোন অংশটা খাইতো মুশকান?”

কেএসকের দিকে তাকালেন ডাক্তার। বুঝতে পারছেন ভদ্রলোকের আগ্রহের পারদ সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে গেছে। “ও সেটা কখনও কাউকে বলে নি।” দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি, “সম্ভবত এই জীবনে কখনও কাউকে বলবেও না।”

মি. খান স্থিরদৃষ্টিতে চেয়ে রইলো।

“এই সিক্রেটটা সে কি কারণে কারোর সাথে শেয়ার করে না, জানেন?”

কেএসকে মাথা নেড়ে সায় দিলো। “একটা মারাত্মক বিশৃঙ্খলার জন্ম দিবো। সভ্যতা আর সভ্য থাকবে না। মানুষ হইয়া যাইবো অসভ্য। পশু। ঠিক যেমনটা ছিলো আদিমযুগে…” একটু থেমে আবার বললো, “…ঠিক আদিমও না..তার চায়াও বর্বর। একে অন্যেরে খাওনের জন্য…” আর বলতে পারলো না। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো তার ভেতর থেকে। “সবাই চিরযৌবন। চায়!”

ডাক্তার আসকার ইবনে সায়িদ চোখ বন্ধ করে ফেললেন। কতোগুলো দৃশ্য ভেসে উঠলো তার মনের পর্দায়। মৃত্যুভয়ে কাতর একজন মানুষ তার সবচাইতে ঘনিষ্ঠবনধুর কাছে নিজের গোপনভীতিটার কথা জানালো একদিন। ক্রমশ বার্ধক্যের চোরাবালিতে তলিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাচ্ছে মৃত্যুর হিমশীতল গহ্বরের দিকে। কিন্তু সে বাঁচতে চায় আরো অনেক বছর। এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে বড় ভয়। আজকাল মৃত্যুচিন্তা তাকে দিন-রাত ব্যতিব্যস্ত করে রাখছে।

সব শুনে মুশকান পরম মমতায় বন্ধুর হাত দুটো ধরে সহমর্মিতা জানালো! “এই পৃথিবীতে আমার বন্ধু বলতে শুধু তুমি সেই তুমি চলে গেলে যে আমি বড় একা হয়ে যাবো!”

আলো-আঁধারির একটি ডাইনিংরুম। বিশাল একটি টেবিল। দু-জন মানুষ চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে। কেউ কিছু জানতে চাইছে না। কেউ কিছু বলছেও না। যেনো নীরবতার এক অলিখিত চুক্তিতে আবদ্ধ তারা। এরপর থেকে নির্জন জমিদারবাড়িটি হয়ে উঠলো মৃত্যুভয়ে পর্যদস্ত বৃদ্ধমানুষটির নিয়মিত গন্তব্য। আর আলো-আঁধারির ডাইনিংরুমটি তার গোপন তীর্থস্থান।

অনেকক্ষণ পর চোখ খুললেন ডাক্তার। দেখতে পেলেন কেএস খান গভীর মনোযোগের সাথে চেয়ে আছে তার দিকে।

 “মানুষ সব সময়ই চিরযৌবন লাভের আশায় মরিয়া…” ধীরকণ্ঠে বললেন তিনি। “সভ্যতার শুরু থেকে সে এই চেষ্টাটা করে আসছে, এখনও এ নিয়ে বিরাট গবেষণা করছে হাজার-হাজার বিজ্ঞানী কিনতু তারা কেউই জানে না, মানুষের শরীরের ভেতরেই লুকিয়ে আছে চিরযৌবন লাভের সেই অমৃত!”

হতবুদ্ধির দেখালো কেএস খানকে।

“ ডিজাইনড বাই মাদার-ন্যাচার,” গম্ভীর মুখে বললেন ডাক্তার। আর এমনভাবে এটা করা হয়েছে, যৌবন দীর্ঘায়িত করতে চাইলে পুরো হিউম্যান রেইসটাই বিলুপ্ত হয়ে যাবার সম্ভাবনা দেখা দেবে। একটা বিশৃঙ্খলার জন্ম। দেবে।” কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে আবার বললেন তিনি, “মুশকান এটা ভালো করেই জানে।”

অবিশ্বাস্য শোনালেও কেএসকে বোঝার চেষ্টা করলো। মানুষের শরীরের ভেতরেই জীবনরক্ষাকারী উপাদান রয়েছে, আর সেটা প্রমাণিত। বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট থেকে শুরু করে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, এমনকি রক্ত-অন্য মানুষের জীবন রক্ষা করে থাকে। হয়তো চিরযৌবন লাভের উপাদানও মানুষ নিজের শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছে। কে জানে!

“ডাক্তার?” অনেকক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলো সে।

একটু চমকে তাকালেন আসকার ইবনে সায়িদ।

 “আন্দিজের পরও কি মুশকান জুবেরি…?”

কথাটা শেষ করতে না পারলেও সাবেক ইনভেস্টিগেটরের প্রশ্নটা কি বুঝতে পারলেন তিনি।

“তাইলে কি ঐ পাঁচজন মানুষরে…?”

মাথা নীচু করে ফেললেন ভদ্রলোক। বাম-হাত দিয়ে কপালটা আর্ততা করে ঘষতে লাগলেন তিনি। “এটা আমি জানি না। শুধু জানি, মানুষের ওই বিশেষ প্রত্যঙ্গটির প্রতি ও অ্যাডিক্টেড হয়ে পড়েছে। এটা যে ওকে যৌবন। ধরে রাখতে সাহায্য করছে সেটা তো প্রমাণিত…অন্তত মুশকানের কোনো সন্দেহ নেই এতো”।

কেএস খানের কপালে ভাঁজ পড়লো। সভ্যতার ইতিহাসে এরকম ঘটনা প্রচুর আছে। ক্যানিবালিজম এক ধরণের বিকৃত-নেশা। মানসিক সমস্যাও বটে। হয়তো এ-কারণেই কিছু অসভ্য জাতি ছাড়াও সভ্যজগতের অনেকেই সঙ্গোপনে এটার চর্চা করে থাকে। কদিন আগেও পাকিস্তানে দু ভাইকে কবর থেকে লাশ তুলে রান্না করে খেয়ে ফেলার জন্য মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। সত্তুরের দশকে ঢাকার আজিমপুর কবরস্তানের নরমাংসভোজি জলিল বেশ আলোচনায় চলে এসেছিলো। লাশের কলিজা খাওয়া ছিলো তার নেশা। এরকম অনেক ঘটনার কথা সে জানে। প্রায় সব দেশেই আছে এমন। কিছু মানুষ।

“আন্দিজে আটকা পড়ার সময় তারা সবাই যখন দু-মাসের মতো নরমাংস খেতে বাধ্য হয়েছিলো তখন কিন্তু মুশকান এটা বুঝতে পারে নি। মানে, চিরযৌবন লাভের কথা বলছি। ঐ অঙ্গটি খাওয়ার পর দারুণ এনার্জি পেয়েছিলো সে। প্রচণ্ড শীত আর কষ্টের মধ্যে তাকে এক ধরণের প্রশান্তি দিয়েছিলো। ও আমাকে বলেছে, ওটা খাওয়ার পর নাকি তার নার্ভ খুব শক্ত হয়ে যায়। একটু থামলেন ডাক্তার। “তবে উদ্ধার পাবার অনেক পরে সে। আবিষ্কার করে তার মধ্যে একটি পরিবর্তনও ঘটে গেছে।”

জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো কেএসকে। “পরিবর্তন?”

“কোনো পরিবর্তন না হওয়া!”

“দীর্ঘ চল্লিশ বছরে তার মধ্যে যে পরিবর্তন হয়েছে সেটা খুবই কম। বলতে পারেন, তার বেলায় ওটা খুব ধীরগতির হয়ে গেছে। চল্লিশটি বসন্তের পরিবর্তে মাত্র সাত-আটটি বসন্তের পরিবর্তন হয়েছে তার শরীরে!” একটু থেমে আবার বললেন, “যে ডাক্তার জয়েন করেছিলো আমাদের হাসপাতালে সেও প্রথমে মুশকানের পেছনে লাগলো এই সিক্রেটটা জানার জন্য। কিন্তু মুশকান যখন কিছু জানালো না তখন সে ক্ষিপ্ত হয়ে তার আন্দিজের ঘটনাটা বলে দিলো হাসপাতালের কয়েকজনকে। সেইসাথে আরো বলতে লাগলো, মুশকান এখনও সুযোগ পেলে মানুষের মাংস খায়। সে মানুষখেকো।”

কেএসকের মনে হলো আগামী কয়েকমাস কোনো মাংস খেতে পারবে। ঠিক এমন সময় দরজায় নক হলো। সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালেন ডাক্তার।

 “জাওয়াদ আসছে মনে হয়।” কথাটা বলে মি. খান নিজেই উঠে গেলো দরজা খুলে দিতো।

“স্যার!” ঘরে ঢুকেই উদ্বেগের সাথে বললো জাওয়াদ। “সুন্দরপুরের এসপি বলেলো ছফাসার নাকি ঐ মহিলার বাড়িতে গেছেন। উনিও ফোন দিয়েছিলেন কিন্তু উনার কলটাও রিসিভ করা হয় নি। উনাকে এক্ষুণি ফোর্স নিয়ে ঐ বাড়িটা রেইড দিতে বলে দিয়েছি।” হরবর করে বলে গেলো নুরে ছফার সহকারি।

কেএসকে পেছন ফিরে তাকালো ডাক্তারের দিকে। ভদ্রলোক ভুরু কুচকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন।

 “আপনি না বললেন মুশকানকে পুলিশ কাস্টডিতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে?”

মাথা দোলালো মি. খান। “আসলে ছফা মুশানের বাড়িতে গেছে…মহিলা নিজেই ওরে ফোন কইরা দেখা করতে বলছে। ঐ বাড়িতে ঢুকার আগে সে আমারে ফোন দিয়া এইটা জানাইছিলো।”

ডাক্তার আর কিছু বললেন না। তাকে যে ধোঁকা দিয়ে কথা আদায় করা হয়েছে সেটা ভালোমতোই বুঝতে পারছেন এখন। “আমার মনে হয়। আপনারা এখানে সময় নষ্ট না করে ওই লোককে বাঁচানোর চেষ্টা করলেই বেশি ভালো হয়।”

কেএসকে টের পেলো তার গায়ের পশম দাঁড়িয়ে গেছে।

“মুশকান কোনোভাবেই ধরা দেবে না। মরে যাবে, তবুও না!”

উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে দাঁড়ালো খোদাদাদ শাহবাজ খান।

“হয় সে আপনার ঐ লোককে মেরে ফেলবে, নয়তো সে নিজে মরবে।”

.

ধ্যায় ৪০

একটু আগে সুন্দরপুরের এসপি কল করেছিলো ছফার ফোনে, মুশকান সেটা ধরে নি। পর পর তিনবার চেষ্টা করেছে পুলিশের লোকটি। তার মানে ছফার ব্যাপারে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। সেটাই স্বাভাবিক। গভীর করে দম নিয়ে নিলো সে। তার সামনে যে বসে আছে তাকে নিয়ে এখন কোনো মাথাব্যথা নেই৷ পুরোপুরি জ্ঞান হারাবার পথে আছে সে। একটু আগে কোল থেকে পেপার-ক্লিপিংসের অ্যালবামটি মেঝেতে পড়ে গেছে। এখন ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে সেটার দিকে। সেই দৃষ্টিতে শুধুই অসহায়ত্ব। তাকে যে ড্রাগস দেয়া হয়েছে সেটা কাজ করে পা থেকে, তারপর আস্তে আস্তে উপরে উঠতে শুরু করে। অবশ হতে থাকে হাত-মুখ। শেষে পুরোপুরি অচেতন। ক্লিপিংসের অ্যালবামের পাতার দুই কোণে মাখিয়ে রেখেছিলো সে। খুবই শক্তিশালী ডোজের একটি ড্রাগস। আঙুল থেকে সামান্য পরিমাণও যদি জিভে লাগে কাজ হয়ে যায়।

আজ বিকেলের দিকে খুব দ্রুত সে বুঝতে পেরেছিলো ঘটনা কোন দিকে মোড় নিচ্ছে। যে এসপি তার সেবা করতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করে সে তার ফোন ধরছে না। যে এমপি উদগ্রীব হয়ে ঢাকা থেকে বার বার ছুটে আসে তার সান্নিধ্য পাবার আশায়, তাকে পাবার জন্য হুমকি-ধামকি পর্যন্ত দিতে পারে, সেও হাত-পা গুটিয়ে ফেলেছে আচমকা।

এদিকে বিকেলের শেষের দিকে সার্ভিল্যান্স ক্যামেরায় দেখেছে তার বাড়ির সামনে এসে নজর রাখতে শুরু করেছে দু-জন মানুষ। গত কয়েক দিনের ঘটনা আর এইসব এক করে খুব দ্রুত সে বুঝে যায় কি ঘটতে চলেছে। সে ভাবে নি ঢাকা থেকে কোনো পুলিশ এসে তার পেছনে লেগেছে। যদি বুঝতো বহূ আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতো।

যাহোক, সন্ধ্যা নামার আগেই বুঝে যায় খুব দ্রুতই ধরা পড়তে যাচ্ছে। বাড়ি থেকে বের হওয়াটাও সম্ভব নয়। আবার পেছন দিক দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পথটা সে নিজেই কয়েক মাস আগে বন্ধ করে দিয়েছে কুমিরের চাষ করে। সে জানে না তার ব্যাপারে পুলিশ কতোদূর জানতে পেরেছে, কিভাবে জানতে পেরেছে। এখন সবটাই পরিস্কার তার কাছে। অনেক কষ্টে শেষ পর্যন্ত কঠিন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে-এই দুর্গতুল্য বাড়িতে অনেক কিছু আছে যেগুলো অন্য কারোর হাতে পড়ার আগেই ধ্বংস করে ফেলতে হবে। এটা খুব জরুরি।

মুশকান এও বুঝতে পারছে যা করার দ্রুত করতে হবে। ঘরের এককোণে রাখা মনিটরটি চালু করে দিলো সে। ছয়টি উইন্ডো ভেসে উঠলো পদায়। সবগুলো উইন্ডোতে এই বাড়ির সার্ভিল্যান্স ক্যামেরাগুলোর ফিড দেখা যাচ্ছে। রিমোটের চেয়ে সামান্য বড় একটা জয় স্টিক হাতে তুলে নিয়ে বাইরের মেইনগেটের উপরে যে ক্যামেরাটি আছে সেটা নিয়ন্ত্রণ করলো। মেইনগেটের বাইরে সাদাপোশাকের দু-জন লোককে দেখতে পেলো সে। দু জনেই সিগারেট ফুকছে গেটের ওপাশে দাঁড়িয়ে। আর গেটের ভেতরে, একপাশে ছোট্ট একটা টুলের উপর বসে আছে দারোয়ান ইয়াকুব।

দরজা দিয়ে কেউ ঢুকছে টের পেয়ে সেদিকে তাকালো মুশকান। গোরখোদক ফালু দাঁড়িয়ে আছে সেখানে।

নুরে ছফা এখনও পুরোপুরি অচেতন হয়ে যায় নি। সে হয়তো হাত-পা নাড়াতে পারছে না, মুখ দিয়ে শব্দ বের করতে পারছে না কিনতু সবই দেখতে পাচ্ছে। সম্ভবত ফালুকে ঘরে ঢুকতে দেখে সে আতঙ্কিত হয়ে উঠলো, আধো অচেতনে থেকেও আতঙ্ক গ্রাস করলো তাকে।

একটু আগে এসপি ফোন করার পর পরই ইন্টারকমটা তুলে রাতকানা মেয়েটিকে বলেছিলো, সে যেনো তার ভাইকে এক্ষুণি উপরতলায় পাঠিয়ে দেয়। কথাটা শুনে সাফিনা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছিলো।

 “আমি জানি সে তোমার ঘরে লুকিয়ে আছে,” বেশ জোর দিয়ে। বলেছিলো মুশকান। দারোয়ান আর সাফিনার সাহায্যে সে যে এই বাড়িতে ঢুকেছে সেটাও সিসিক্যামে দেখেছিলো। “তোমার ভাইয়ের ভালোর জন্যই বলছি…ওকে উপরে পাঠিয়ে দাও। বাইরে পুলিশ আছে। ও পালাতে পারবে না। আমি ওকে বাড়ি থেকে বের করার ব্যবস্থা করছি।” এ কথা বলেই ইন্টারকমের রিসিভারটা নামিয়ে রাখে সে।

ফালু দরজার কাছে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।

“তোমার ঘটনা আমি শুনেছি,” বললো মুশকান। কয়েক পা এগিয়ে গেলো সে। “ঐ ইনফর্মারকে কেন মেরেছো?”

কাচুমাচু খেলে গোরখোদক। “ও…ও সব দেইখা ফালাইছে…জাইনা গেছে!”

ভুরু কুচকে ফেললো মুশকান। “কি জেনে গেছে?”

গাল চুলকালো ফালু। “আমি যে কঙ্কাল চুরি কইরা বেচতাম…”

মুশকান জুবেরি আর কিছু বললো না। এই গোরখোদক ছেলেটাকে সুন্দরপুরের অনেক মানুষ মান্য করে, সমীহ করে। তাদের ধারণা ছেলেটার মধ্যে অলৌকিক কোনো ক্ষমতা আছে, আর সেই ক্ষমতাবলে কেউ মারা যাবার আগেই সে বুঝে যায়, আগাম কবর খুরে রাখে। এ কথাটা যখন সে প্রথম শুনলো ফালুর সৎবোন সাফিনার কাছ থেকে তখন মনে মনে খুব হেসেছিলো। সে জানতো ফালুর এরকম কোনো ক্ষমতা নেই, তবে নিশ্চয় কোনো গোমড় আছে। সব মানুষেরই তা থাকে। এখন দেখছে, সুন্দরপুরের কামেল গোরখোদক আসলে নরকঙ্কাল চুরি করে বিক্রি করে!

“যাহোক, বাড়ির বাইরে পুলিশ আছে। তুমি এখানে থাকলে ধরা পড়ে। যাবে।”

মুশকানের কথা শুনে ঢোক গিললো পলাতক গোরখোদক।

“তবে আমি তোমাকে পালাতে সাহায্য করবো যদি আমার কথামতো কাজ করো।”

 “বলেন, কি করতে হইবো,” ফালু বললো।

*

জমিদার বাড়ির সামনে সাদা পোশাকের যে দু-জন পুলিশ সদস্য ডিউটিতে ছিলো তারা গেটের সামনে এসে জোরে জোরে আঘাত করছে কিন্তু ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই। একটু আগে তাদেরকে থানা থেকে ফোন করে জানানো হয় ঐ বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ার জন্য। নুরে ছফা নামে ডিবির যে অফিসার ওখানে ঢুকেছে সে নাকি ভীষণ বিপদে পড়েছে। তাকে ফোন করলেও সে ফোন ধরছে না। ধরলেও কোনো রকম সাড়া-শব্দ করছে না। তাদেরকে আরো বলা হয়েছে, থানা থেকে একটা টিম রওনা দিয়ে দিয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা চলে আসবে এখানে।

“ওই ব্যাটা দারোয়ানের বাচ্চা! গেট খোল!” তাদের মধ্যে লম্বা করে যে লোকটা আছে সে চেঁচিয়ে উঠলো। আচার-আচরণে সে সবসময়ই আগ্রাসী। “ওই মাদারচোদ্দ! গেট খুলবি নাকি ভাইঙ্গা ঢুকুম?”

তারপরও কোনো সাড়াশব্দ নেই। সঙ্গির দিকে তাকালো। “আমি কি দেয়াল টপকাইয়া ভেতরে ঢুকবো?”

মাথা চুলকালো সে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশের একটি দল চলে আসবে। তাদের জন্য অপেক্ষা না করে ভেতরে ঢোকাটা ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছে না। “ফোর্স তো চইলা আসবো…ওরা আসুক, তারপর যা করার করন যাইবো কি কও?”

অন্য সঙ্গিটি কাঁধ তুললো কেবল। “হ, তাই করো।”

এমন সময় ওপাশ থেকে খুট করে শব্দ শুনতে পেয়ে তারা দুজনেই সতর্ক হয়ে উঠলো।

“ঐ দারোয়ান মনে হয় গেটের পেছনেই আছে,” আগ্রাসী পুলিশ বললো তার সঙ্গিকে। “ওই শুয়োরেরবাচ্চা! আমরা পুলিশ….গেট খোল কইতাছি!” তারপরও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পা দিয়ে জোরে জোরে লাথি মারলো গেটে। এমন সময় তার কাঁধে সঙ্গির হাত পড়তেই লাথি মারা থামিয়ে। দিলো।

“ফোর্স আসতাছে,” অন্যজন বললো তাকে।

এবার মাটির রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলার শব্দ শুনতে পেলো তারা। গাড়িগুলো আসার অপেক্ষায় গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রইলো দু-জনে।

একটা নয়, দুটো গাড়ি এগিয়ে আসছে জমিদার বাড়ির দিকে। হেডলাইটের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠলো মেইনগেটের সামনের অংশটা।

প্রথমে একটা জিপ এসে থামলো গেটের সামনে। সুন্দরপুর থানার ওসি, এসআই আনোয়ারসহ আরো তিনজন কনস্টেবল নেমে এলো সেটা থেকে। তাদের স্যালুট দিয়ে কিছু বলতে যাবে অমনি আরেকটি জিপ এসে থামলো, ওসি আর এসআই সেই গাড়ির সামনে ছুটে গেলে সঙ্গে সঙ্গে। জিপ থেকে নেমে এলো এসপি মনোয়ার হোসেন।

“এখনও ভেতরে ঢোকেন নি?” ওসির উদ্দেশ্যে বললো সে।

“স্যার, আমি তো জাস্ট এলাম,” ব্যাখ্যা করলো সুন্দরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

“যে দু-জন ডিউটিতে ছিলো ওরা কি করেছে?” “স্যার,” পেছন থেকে সামনে চলে এলো ডিউটিতে থাকা দু-জন সাদা পোশাকের পুলিশ। “ভিতর থেইকা গেট বন্ধ কইরা রাখছে। অনেক ধাক্কাইছি-”

 “আরে এতো কথা বলছো কেন? গেটটা যেভাবে পারো খোলার ব্যবস্থা করো!” চিৎকার করে বললো এসপি।

পড়িমরি করে ডিউটিতে থাকা দু-জন আবার গেটের সামনে দৌড়ে গেলো। ওসি পেছনে ফিরে তার সঙ্গে আসা তিনজন কনস্টেবলকে ইশারা করলো ওদের সাথে যোগ দিতে।

“স্যার, গেটটা যদি খুইলা না দেয় তাইলে কিন্তু ভাইঙ্গা ঢুইকা যাবো।”

মাথা নেড়ে সায় দিলো এসপি। “যা করার জলদি করেন।”

ওসিও আর কোনো কথা না বলে গেটের কাছে চলে গেলো, তার পেছনে পেছনে এসআই আনোয়ার।

 “এই! গেট খোল!” ডিউটিতে থাকা একজন হাক দিলো। “স্যার,” পেছন ফিরে তাকালো সে। “মনে হয় না ভিতর থেইকা গেট খুইলা দিবো।”

“তাইলে দেয়াল টপকাইয়া ভিতরে ঢোকো।”

“আমার সাথে আসো,” ঝটপট বলে উঠলো এসআই আনোয়ার। ডিউটিতে থাকা দু-জন পুলিশকে নিয়ে চলে গেলো গেটের ডানপাশের দেয়ালের দিকে।

 “ভেতর থেকে কিছু শোনা গেছে?” এসপি বলে উঠলো ওসির পেছনে এসে।

“না, স্যার,” পেছন ফিরে বললো ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। “পুরা বাড়িই সুনসান। ওরা আমারে একটু পর পর জানাইছে সব। ছফাস্যার ভিতরে ঢুকার পর তেমন কিছুই ঘটে নাই।”

এসপি চিন্তিতমুখে কিছু বলতে যাবে অমনি “আগুন-আগুন!” বলে একটা চিৎকার হলো। তাদের কাছে দৌড়ে এলো আনোয়ার।

“স্যার, বাড়িটাতে আগুন লাগছে!”

 “কি?” আতঙ্কিত কণ্ঠে বলে উঠলো ওসি।

“জলদি বাড়িতে ঢোকো তোমরা!” চিৎকার করে বললো এসপি মনোয়ার।

এসআই আবারো দৌড়ে গেলো দেয়ালের দিকে।

এসপি আর ওসি কয়েক পা পেছনে যেতেই দেখতে পেলো গেটের পেছন থেকে লালচে আলো আর ধোঁয়া উঠছে। সম্ভবত বাড়িটার দোতলায় আগুন লেগেছে। আরেকটু পিছিয়ে যেতেই বুঝতে পারলো তাদের আন্দাজ পুরোপুরি সঠিক।

 “ঘটনা-” ওসি কথাটা বলতে পারলো না, তার আগেই বাড়ির ভেতর থেকে গগনবিদারি চিৎকার ভেসে এলো। আর সেই কণ্ঠটা একজন নারীর!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *