গাড়িতে নরমাংস ভোজন

গাড়িতে নরমাংস ভোজন
Cannibalism in the Cars

সম্প্রতি আমি সেন্ট লুইস্ গিয়েছিলাম। ইণ্ডিয়ানা-র অন্তর্গত টেরে হটে–তে গাড়ি বদলাবার পর বছর চল্লিশেক, অথবা পঞ্চাশও হতে পারে, বয়সের একটি নম্র, উদার-দর্শন ভদ্রলোক কোন এক স্টেশন থেকে গাড়িতে উঠে আমার ঠিক পাশেই বসল। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে আমরা সহজ ভাবে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম। লোকটিকে অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও প্রীতিপদ বলে মনে হল। আমি ওয়াসিংটন থেকে আসছি শুনে সঙ্গে সঙ্গে সে বিভিন্ন জননেতা ও কংগ্রেসের ব্যাপারে নানা রকম প্রশ্ন করতে লাগল; শ্রীঘ্রই বুঝতে পারলাম যে আমি এমন একটি লোকের সঙ্গে কথা বলছি যে রাজধানীর রাজনৈতিক জীবনের সব অলি-গলির খবর রাখে; এমন কি সেনেটের সদস্য এবং জাতীয় আইন সভার প্রতিনিধিদের ব্যক্তিগত জীবন ও কর্মধারা পর্যন্ত তার নখদর্পণে। ইতিমধ্যে দুটি লোক মুহূর্তের জন্য আমাদের পাশে এসে দাঁড়াল; একজন অপর জনকে বলল:

হ্যারিস, আমার এ কাজটা যদি করে দাও, তাহলে আমি কোন দিন তোমাকে ভুলব না বাবা।

আমার নতুন বন্ধুটির চোখ দুটি খুসিতে চ চ ক করে উঠল। মনে হল, কথাগুলি যেন তার কোন সুখ-স্মৃতিকে জাগিয়ে তুলেছে। তার পরেই তার মুখটা চিন্তাচ্ছন্ন-প্ৰায় বিষণ্ণ হয়ে উঠল। আমার দিকে ফিরে বলল, আপনাকে একটা গল্প বলছি; আমার জীবনের একটি গুপ্ত অধ্যায় আপনার কাছে মেলে ধরছি-ঘটনাগুলি ঘট বার দিন থেকে আজ পর্যন্ত কারও কাছে সে অধ্যায়ের কথা বলি নি। মন দিয়ে শুনুন, আর কথা দিন যে আমার গল্পের মাঝ খানে বাধা দেবেন না।

জানালাম যে তা দেব না, আর সেই লোকটি ও কখনও সোৎসাহে, আর কখনও বিষগ্রচিত্তে, কিন্তু সব সময়ই আবেগ ও ঐকান্তিকতার সঙ্গে নিম্নলিখিত আশ্চর্য এক অভিযানের কথা বলতে লাগল।

১৮৫৩ সালের ১৯শে ডিসেম্বর আমি সেন্ট লুইস থেকে শিকাগোগামী সন্ধার ট্রেনটায় যাত্রা করলাম। সব মিলিয়ে যাত্রী ছিল মাত্র চব্বিশ জন। কোন মহিলা বা শিশু ছিল না। সকলেরই মন-মেজাজ ভাল; শীঘ্রই পরস্পরের মধ্যে মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠল। মনে হল, যাত্রাটা বেশ সুখেরই হবে; আমার ধারণা, শ্রীঘ্রই যে আতংকের মধ্যে আমাদের পড়তে হবে তার তিলমাত্র আশংকাও কোন যাত্রীর মনে ছিল না।

রাত ১১টা নাগাদ খুব বরফ পড়তে শুরু করল। ছোট গ্রাম ওয়েল্ডেন পার হবার কিছু সময় পরেই আমরা এক ভয়ংকর বৃক্ষহীন বিস্তীর্ণ তৃণভূমির নির্জনতার মধ্যে প্রবেশ করলাম। সেখান থেকে শুরু করে সুদূর জুবিলি উপনিবেশ পর্যন্ত সেই জনবসতিহীন নির্জনতা লীগের পর লীগ (১ লীগ প্রায় ৩ মাইল) প্রসারিত। গাছপালা নেই, পাহাড় নেই, এমন কি বিক্ষিপ্ত কোন পাথরের বাধা পর্যন্ত নেই, সম্পূর্ণ বাধাবন্ধহীন বাতাস সেই সমতল মরুভূমির উপর দিয়ে তীব্র তীক্ষ্ণ শব্দ করে বয়ে চলেছে, আর পড়ন্ত বরফের কুঁচি গুলি ঝ ঞ ক্ষুব্ধ সমুদ্রের সফে ন তরঙ্গশীর্ষ হতে নিক্ষিপ্ত তুষারকণার মত ইতস্ততঃ ছড়িয়ে পড়ছে; বাইরে ঘন হয়ে বরফ পড়ছে; ট্রেনের গতিবেগ ক্রমাগত হ্রাস পাওয়ায় বুঝতে পারছি যে সেই বরফে র ভিতর দিয়ে এগিয়ে যেতে ইঞ্জিনের অসুবিধাও ক্রমেই বাড়ছে। বস্তুত, একসময় ট্রেনটা প্রায় থেমেই পড়ল, লাইনের উপর বরফের স্তূপ জমে জমে বড় বড় কবরের আকার ধারণ করেছে। কথাবার্তায় ভাঁটা পড়ল। ফুর্তির পরিবর্তে দেখা দিল গভীর উদ্বেগ। জনবসতি থেকে পঞ্চাশ মাইল দূরে এই নির্জন তৃণভূমিতে বরফের মধ্যে বন্দী হয়ে পড়ার সম্ভাবনা সকলের মনেই দেখা দিল, আর তার বিষণ্ণ প্রভাব সকলের উপরেই ছড়িয়ে পড়ল।

সকাল দুটো নাগাদ চারদিকের সব গতি স্তব্ধ হয়ে যাওয়ায় আমার অস্বস্তিকর তন্দ্রাটুকুও ভেঙে গেল। মুহূর্তের মধ্যে এই বিপজ্জনক সত্যটি আমার সামনে ঝলসে উঠল যে বরফের স্তূপের মধ্যে আমরা সকলেই বন্দী হয়ে পড়েছি। সকলে উদ্ধারকার্যে লেগে যান। সকলেই লাফিয়ে উঠে কাজে নামল। একটি মুহূর্তের বিলম্ব সকলেরই সর্বনাশ ডেকে আনবে এই চৈতন্যে উদ্বুব্ধ হয়ে প্রতিটি যাত্রী বেরিয়ে এল সেই উন্মত্ত রাত্রির ঘন অন্ধকার বরফের ঢেউ ও প্রচণ্ড ঝড়ের মধ্যে। বেশ্যা, হাত, কাঠের বোর্ড–বরফ সরাবার মত যা কিছু হাতের কাছে পাওয়া গেল তাই নিয়ে আসা হল। সে এক অদ্ভুত দৃশ্য: অর্ধেক ঘন অন্ধকারে আর অর্ধেক ইঞ্জিনের রিফ্লেক্টার-এর অত্যুজ্জ্বল কড়া আলোয় একদল উন্মাদপ্রায় মানুষ জমাট বরফের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

মাত্র একটি ঘন্টার মধ্যেই প্রমাণ হয়ে গেল যে আমাদের এ চেষ্টা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। একটা বরফের স্তূপ কেটে পরিষ্কার করতে না করতেই ঝড়ের বেগে এক ডজন স্তূপ লাইনের উপর জমে উঠছে। অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে উঠল যখন দেখা গেল বরফের সঙ্গে সর্বশেষ প্রচণ্ড সংঘাতের ফলে ইঞ্জিনের চাকাটাও ভেঙে গেছে। আমাদের সামনে এখন যদি একটা খোলা লাইনও থাকে তাহলেও আমরা। সম্পূর্ণ অসহায়। পরিশ্রমে ক্লান্ত দেহ, দুঃখে শ্রান্ত মনে সকলে গিয়ে গাড়িতে ঢুকলাম। স্টোভের পাশে জমায়েত হয়ে গম্ভীরভাবে পরিস্থিতির পর্যালোচনা শুরু করলাম। সঙ্গে কোন রকম খাদ্য নেই-এটাই প্রধান বিপদ। কাঠ যথেষ্ট আছে, কাজেই জমে যাবার ভয় নেই। সেটা আমাদের একমাত্র সান্ত্বনা। আলোচনার শেষ নিরুৎসাহব্যঞ্জঃ ক হলেও কণ্ডাক্টর-এর পরামর্শই শেষ পর্যন্ত মেনে নেওয়া হল; অর্থাৎ এরকম বরফের মধ্যে পঞ্চাশ মাইল পথ পায়ে হেঁটে যাওয়া মানেই মৃত্যু। সাহায্যের জন্য কাউকে পাঠানো সম্ভব নয়, আর পাঠালেও সাহায্য আসবে না। কাজেই উদ্ধার অথবা অনাহার যাই ঘটুক না কেন আমাদের তাই মেনে নিতে হবে, যথাসম্ভব ধৈর্যের সঙ্গে অপেক্ষা করতে হবে! এই কথাগুলি যখন উচ্চারিত হল তখন সেখানে উপস্থিত অতি বড় শক্তিমান লোকের বুকের ভিতরটাও মুহূর্তের জন্য ঠাণ্ডায় শিরশির করে উঠে ছিল।

বাতাসের ওঠা-নামার ফাঁকে ফাঁকে গাড়িটা সম্পর্কে নানা মৃদু আলোচনা শোনা যাচ্ছিল। আলোগুলো ক্রমেই ম্লান হয়ে এল; আর সেই নির্জন প্রান্তরে পরিত্যক্ত অধিকাংশ মানুষ কাঁপা-কাঁপা আলোছায়ার মধ্যে বসে চিন্তার মধ্যে ডুবে গেল-সম্ভব হলে বর্তমানকে ভুলতে পারলে ঘুমিয়ে পড়তে চেষ্টা করতে লাগল।

সেই চিরন্তন রাতটি–সত্যি সে রাত আমাদের কাছে চিরন্তন বলেই মনে হয়েছিল-শেষ পর্যন্ত শেষ ঘণ্টায় উপনীত হল; শীতল, ধূসর উষা দেখা দিল পূর্ব দিগন্তে। বাইরের আলো আরও বাড়লে যাত্রীরা চলাফেরা শুরু করল, দেখা দিল জীবনের লক্ষণ; তারা কপালের উপর থেকে ঝোলানো টুপিগুলো সরিয়ে দিল, জমে-যাওয়া হাত-পা টান-টান করল, জানালা দিয়ে বাইরের নিরানন্দ প্রকৃতির দিকে তাকাল। সত্যি নিরানন্দ!-কোথাও জীবনের চিহ্ন মাত্র নেই, নেই একটি ও মনুষ্য বসতি; বিস্তীর্ণ সাদা মরুভূমি ছাড়া কিছু নেই; বাতাসের তাড়া খেয়ে বরফের চাঁই ইতস্তত ছুটে বেড়াচ্ছে; বরফের ঘূর্ণিঝড় মাথার উপরকার আকাশকে ঢেকে দিয়েছে।

সারাটা দিন গাড়ির মধ্যে ঘুরে বেড়ালাম। মুখে কথা নেই, শুধু চিন্তা আর চিন্তা। আবার একটি দীর্ঘায়ত ভয়ঙ্কর রাত-আর ক্ষুধা।

আবার একটি উষা-নৈঃশব্দ্য, বিষণ্ণতা ও জীবনক্ষয়ী ক্ষুধায় ভরা একটি দিন, যা থেকে উদ্ধার পাবার কোন আশা নেই তারই জন্য ব্যর্থ প্রতীক্ষা। অস্থির তন্দ্রা নিয়ে এল রাত-সঙ্গে এল ভোজের স্বপ্ন-জেগে উঠলেই ক্ষুধার যন্ত্রণা।

চতুর্থ দিনটি এল আর চলে গেল-তারপর পঞ্চম দিন! পাঁচটি দিনের ভয়াবহ বন্দী জীবন! প্রতিটি চোখে বন্য ক্ষুধার ঝলকানি। সে দৃষ্টিতে বিপদের অর্থবহ সংকেত-এমন কিছুর আভাষ যা প্রত্যেকটি মানুষের অন্তরে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে অস্পষ্টভাবে-এমন কিছু যা এখনও কারও জিভ কথায় উচ্চারণ করতে সাহস করছে না।

ষষ্ঠ দিন চলে গেল-সপ্তম দিনের উষার আলো ছড়িয়ে পড়ল এমন একদল ক্ষীণপ্রাণ, বীভৎসদর্শন, আশাহীন মানুষের উপর যারা আসন্ন মৃত্যুর ছায়ার নীচে দাঁড়িয়ে আছে। এইবার তার প্রকাশ ঘটবে! সে জিনিস প্রতিটি অন্তরের মধ্যে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছিল অবশেষে প্রত্যেকের ঠোঁট থেকে সেটা লাফিয়ে পড়তে প্রস্তুত! প্রকৃতির উপর চাপ চরমে উঠেছে-এবার তাকে পরাজয় মানতে হবে। দীর্ঘকায়, কিন্তুৎদর্শন, ম্লান-মুখ মিনেসোটা-র রিচার্ড এইচ গ্যাস্টন উঠে দাঁড়াল। সকলেই বুঝল কি ঘটতে চলেছে। সকলেই প্রস্তুত-সব আবেগ, সব উত্তেজনা থেমে গেছে-একটু আগেও যে সব চোখে ছিল উন্মত্ততা এখন তাতে নেমে এসেছে একটি শান্ত, চিন্তাশীল গাম্ভীর্য।

ভদ্রজনরা: আর ঠেকিয়ে রাখা যাবে না! সময় প্রত্যাসন্ন! আমাদের স্থির করতে হবে, অন্য সকলের খাদ্য জোগাতে আমাদের মধ্যে কাকে মরতে হবে!

ইলিনয়-এর মিঃ জন জে. উইলিয়ামস্ দাঁড়িয়ে বলল: ভদ্রজনরা-আমি টেনেসি-র রেভ, জেমস্ সয়ারকে মনোনীত করছি।

ইণ্ডিয়ানা-র মিঃ উইলিয়ম ডব্লু. অ্যাডামস্ বলল: আমি মনোনীত করছি নিউ ইয়র্ক-এর মিঃ ড্যানিয়েল স্লেট-কে।

মিঃ চার্লস্ জে. ল্যাংডন: আমি মনোনীত করছি সেন্ট লুইস-এর মিঃ স্যামুয়েল এ. বোয়েন-কে।

মিঃ স্লোট। ভদ্রজনরা-নিউ জার্সি-র জন এ. ভ্যান নোস্ট্রাণ্ড-এর স্বপক্ষে আমি অস্বীকৃতি জানাতে চাই।

মিঃ গ্যাস্টন: কোন আপত্তি না থাকলে এই ভদ্রলোকের ইচ্ছা গৃহীত হতে পারে।

মিঃ ভ্যান নোস্ট্রাণ্ড আপত্তি করায় মিঃ স্লোট–এর পদত্যাগ বাতিল হয়ে গেল। মেসার্স সয়ার ও বোয়েন-এর আপত্তিত্ত ঐ একই কারণে বাতিল হয়ে গেল।

ওহিয়ো-র মিঃ এ. এল, বাম: আমি প্রস্তাব করছি মনোনয়নের ব্যবস্থা এখানেই শেষ হল; এবার এই সভায় ব্যালট–এর সাহায্যে নির্বাচন শুরু হোক।

মিঃসয়ারঃ ভদ্রজনরা-এই সভার কার্য-পদ্ধতির বিরুদ্ধে আমি আন্তরিক প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সমস্ত বিচারেই এটা নিয়মবহির্ভূত ও অনুপযুক্ত। তাই আমি প্রস্তাব করছি, এই সব কিছু এখনই বাতিল করে দিয়ে এই সভার একজন চেয়ারম্যান ও তাকে সাহায্য করবার জন্য উপযুক্ত অফিসারবর্গ নির্বাচন করা হোক, আর একমাত্র তখনই আমরা সুষ্ঠ ভাবে এই কাজে অগ্রসর হতে পারব।

আইওয়া-র মিঃ বেল: ভদ্রজনরা-আমি আপত্তি জানাচ্ছি। আইন-কানুন ও আনুষ্ঠানিক রীতি-নীতি আঁকড়ে থাকার সময় এটা নয়। সাতদিনের বেশী আমাদের কারও পেটে খাবার পড়ে নি। অলস আলোচনায় ব্যয়িত প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের কষ্ট বাড়ছে। যে সমস্ত মনোনয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে আমি খুসি-আমার বিশ্বাস, এখানে উপস্থিত সকলেই খুসি-আর আমি তো ভেবে পাই না কেন আমরা এই মূহুর্তেই দুএকজনকে নির্বাচিত করব না। আমি একটি প্রস্তাব রাখতে চাই-

মিঃ গ্যাস্টন: এতে আপত্তি উঠবে, আর নিয়মমতে একদিন আটকে যাবে; ফলে যে বিলম্বটা আপনি এড়াতে চাইছেন সেটাই ঘটবে। নিউ জার্সি থেকে আগত ভদ্রলোক-

মিঃ ভ্যান নোস্ট্রাণ্ড: ভদ্রজনরা-আপনাদের মধ্যে আমি নবাগত; যে সম্মান আপনারা আমাকে দিয়েছেন আমি তাই চাই নি এবং আমি সংকোচ বোধ করছিজ-

আলাবামা-র মিঃ মগান: পূর্ব প্রস্তাবটি ই আমি উত্থাপন করছি।

প্রস্তাব গৃহীত হল; আর কোন বিতর্ক হতে দেওয়া হল না। অফিসার নির্বাচনের প্রস্তাবই পাশ হয়ে গেল, আর তদনুসারে মিঃ গ্যাস্টন চেয়ারম্যান, মিঃ ব্লেক সেক্রেটারি, মেসার্স হলক, ডায়ার ও বন্দুনকে নিয়ে একটি মনোনয়ন কমিটি এবং নির্বাচনের কাজে কমিটি কে সাহায্য করবার জন্য মিঃ আর. এম. হাউ ল্যণ্ডকে সহায়ক হিসেবে নির্বাচন করা হল।

তারপর আধ ঘণ্টার জন্য বিরতি হল; কিছুটা দলগত প্রচারকার্য চলল। হাতুড়ির শব্দে সদস্যরা মিলিত হলে কমিটি সভার সামনে কেন্টাকি-র মিঃ জর্জ ফাওঁ সন, লুসিয়ানা-র মিঃ লুসিয়েন হার্মান ও কলরাডো-র মিঃ ডব্লু. মেসিক-এর নাম সুপারিশ করে তাদের প্রতিবেদন পেশ করল। সে প্রতিবেদন গৃহীত হল।

মিসৌরি-র মিঃ রজার্স: মিঃ প্রেসিডেন্ট প্রতিবেদনটি যখন যথারীতি সভার সামনে পেশ করা হয়েছে তখন আমি এই মর্মে একটি সংশোধনী আনছি যে, মিঃ হেরমান-এর নামের পরিবর্তে আমাদের সকলের কাছে সসম্মানে পরিচিত সেন্ট লুইস-এর মিঃ লুসিয়াস হ্যারিস-এর নাম অন্তর্ভূক্ত করা হোক। এর থেকে কেউ যেন মনে না করেন যে লুইসিয়ানা থেকে আগত ভদ্রলোকটির মহৎ চরিত্র ও মর্যাদা সম্পর্কে আমি কোন রকম কটাক্ষপাত করছি-মোটেই তা নয়। এখানে উপস্থিত যে কোন ভদ্রলোকের মতই তাকে আমি শ্রদ্ধা করি- সম্মান করি। কিন্তু তাই বলে এ সত্যকে তো আমরা উপেক্ষা করতে পারি না যে, আমরা যে সাতটা দিন এখানে রয়েছি সেই সময়ের মধ্যে আমাদের অন্য যে কোন লোকের চাইতে তার দেহের মাংসই বেশী হ্রাস পেয়েছে-এ সত্যকেও আমরা উপেক্ষা করতে পারি না যে, অবহেলা বশতই হোক আর গুরুতর কোন ত্রুটির জন্যই হোক যে লোকের শরীরে পুষ্টিগুণ এত কম তার উদ্দেশ্য যত মহৎই হোক তথাপি তাকে ভোট দিয়ে কমিটি তার কর্তব্য যথাযথ পালন করতে পারেন নি।

চেয়ার: মিসৌরি থেকে আগত ভদ্রলোক আসন গ্রহণ করুন। নিয়মানুগ পদ্ধতিতে ভিন্ন অন্য কোন ভাবে কমিটির কর্মক্ষমতায় সন্দেহ প্রকাশ করবার অনুমতি চেয়ার দিতে পারেন না। এই ভদ্রলোকের প্রস্তাব সম্পর্কে সভা কি মনোভাব নিতে চান?

ভার্জিনিয়ার মিঃ হ্যালিডে : আমি আর একটি সংশোধনী তুলে বলতে চাই, মিঃ মেসিক-এর পরিবর্তে ওরিগন-এর মিঃ হার্ভে ডে ভিসের নাম অন্তর্ভূক্ত করা হোক। আপনারা হয়তো বলবেন, সীমান্ত-জীবনযাত্রার দুঃখ-কষ্টে অভ্যস্ত হওয়ার ফলে মিঃ ডে ভিস একটু কঠোর প্রকৃতির মানুষ হয়ে উঠেছেন। কিন্তু ভদ্রজনরা, এটা কি চারিত্রিক কঠোরতা নিয়ে দোষ ধরবার সময়? তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে খুৎখুৎ করবার এটা কি সময়? না, আমরা চাই পরিমাণ-পদার্থ, ওজন, পরিমাণ-এই তো এখন প্রধান বিচার্য বিষয়-বুদ্ধিমত্তা নয়, প্রতিভা নয়, শিক্ষা নয়। আমি জোরের সঙ্গে আমার প্রস্তাবটি রাখছি।

মিঃ মর্গ্যান (উত্তেজিতভাবে): মিঃ চেয়ারম্যান-এই সংশোধনী প্রস্তাবের আমি তীব্র প্রতিবাদ করছি। ওরিগন-এর এই ভদ্রলোকটি বৃদ্ধ, তাছাড়া তিনি হাড়-গোড়েই মোটা-মাংসে নয়। ভার্জিনিয়া থেকে আগত ভদ্রলোকটি কে আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই, পেট ভরে খাবার বদলে আমরা কি ঝোল খেতে চাই? তিনি কি আমাদের ছায়া দেখিয়ে ভোলাতে চান? একটি অরিগনীয় ভূত দেখিয়ে তিনি কি আমাদের দুর্দশাকে উপহাস করতে চান? আমি তাকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, চারদিকের এই সব উদ্বেগকাতর মুখের দিকে তাকিয়ে, আমাদের বিষাদ-ক্লিষ্ট চোখ রেখে, অনেক প্রত্যাশায় উদগ্রীব এইসব মানুষের বুকের ধ্বনি শুনে, তারপরও কি এই দুর্ভিক্ষপীড়িত লোকটি কে আমাদের উপর চাপিয়ে দিতে পারবেন? আমি তাকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, আমাদের এই পরিত্যক্ত অবস্থা, আমাদের অতীব দুঃখ, আমাদের অন্ধকার ভবিষ্যৎ-এসব কিছু জেনেও তিনি কি নিষ্ঠুরের মত এই ভগ্নস্তূপ, এই ধ্বংসস্তূপ, এই স্খলিত-পদ বৃদ্ধ, ওরিগন-এর তীর হতে বিতাড়িত দড়ির মত রসকসহীন এই বাউণ্ডুলে লোকটাকে আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে পারবেন? কখনও না! [হর্ষধ্বনি]

সংশোধনী প্রস্তাবটি কে ভোট দেওয়া হল; অগ্নিস্রাবী বিতর্কের পর সেটি বাতিল হয়ে গেল। প্রথম সংশোধনী অনুসারে মিঃ হ্যারিসকে অন্তর্ভূক্ত করা হল। তারপর ব্যালট গ্রহণ শুরু হল। পাঁচটি ব্যালটে কোন নিষ্পত্তি হল না। ষষ্ঠ ব্যালটে মিঃ হ্যারিস নির্বাচিত হল; শুধু নিজের ভোট টি ছাড়া আর সব ব্যালট ই তার স্বপক্ষে পড়ল। নির্বাসিত হল; শুধু নিজের ভোট টি ছাড়া আর সব ব্যালট ই তার স্বপক্ষে পড়ল। সে তখন প্রস্তাব করল, এই নির্বাচন ধ্বনি-ভোটে সমর্থিত হতে হবে; ফলে এবার তার নিজের ভোট টি বিপক্ষে পড়ায় প্রস্তাবটি বাতিল হয়ে গেল।

মিঃ র‍্যাডওয়ে প্রস্তাব করল, এবার অন্য প্রার্থীদের সম্পর্কে ভোটের ব্যবস্থা হোক এবং তারপরে প্রাতরাশের ব্যাপারে নির্বাচন হোক। প্রস্তাবটি গৃহীত হল।

প্রথম ব্যালটে ভোট সংখ্যা হল সমান সমান; অর্ধেক সদস্য একজনকে সমর্থন করল তার যৌবনের জন্য, বাকি অর্ধেক অন্যজনকে সমর্থন জানাল তার বিশাল চেহারার জন্য। প্রেসিডেন্ট তার কাস্টিং ভোট দিল দ্বিতীয় প্রার্থী মিঃ মেসিক-এর স্বপক্ষে। এই সিদ্ধান্তের ফলে পরাজিত পার্থী মিঃ ফাওঁ সন-এর বন্ধুদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিল, নতুন করে ব্যালটের দাবী জানাবার কথাও উঠল, কিন্তু সেই গোলমালের মধ্যেই সভার কাজ মুলতুবি রাখার প্রস্তাবটি গৃহীত হয়ে গেল এবং সঙ্গে সঙ্গে সভা ভঙ্গ হল।

নৈশ ভোজনের আয়োজনের দরুন ফাওঁ সন-উপদলের মনোযোগ তাদের বিক্ষোভের আলোচনা থেকে সরে গেল এবং পরে যখন আবার সে ক্ষোভ জানাবার সময় হল তখন মিঃ হ্যারিস-এর সম্মতি ঘোষণার আনন্দে সে সব চিন্তা হাওয়ায় উড়ে গেল।

ট্রেনের পিছনের আসনগুলোকে দিয়ে চমৎকার খাবার টেবিল বানানো হল; সাতটি যন্ত্রণাদায়ক দিন যে চমৎকার আহার্যের স্বপ্ন আমরা দেখেছি তার জন্য কৃতজ্ঞতাপূর্ণ অন্তরে আমরা বসে গেলাম। মাত্র কয়েকটি ঘন্টা আগে আমরা কী ছিলাম, আর এখন কী। হয়েছি! ছিলাম আশাহীন, বিষ-নয়ন, দুঃখ, ক্ষুধা, তীব্র উৎকণ্ঠায় বেপরোয়া; আর এখন কৃতজ্ঞতা, গাম্ভীর্য, প্রকাশের অতীত আনন্দ। আমার বিচিত্র ঘটনাবহুল জীবনে সেটাকেও মধুরতম মুহূর্তে বলে মনে করি। আমাদের বন্দীশালাকে ঘিরে বাতাসে গর্জন করে ফিরছে, বরফের ঝড় বইছে; কিন্তু তাতে এখন আর আমাদের কোন কষ্টই হচ্ছে না। হ্যারিসকে আমার ভাল লেগেছিল। হয় তো তার প্রতি আরও সদয় ব্যবহার করা যেত, কিন্তু এ ব্যাপারে হ্যারিসও তো আমার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমতই ছিল; এতে সেও তো আমার মতই সন্তোষ লাভ করেছিল। মেসিকও ভালই ছিল, যদিও স্বাদটা একটু চড়া, কিন্তু প্রকৃত খাদ্য-গুণ ও নরম মাংস হিসাবে হ্যারিসকেই আমার পছন্দ। মেসিক-এর স্বপক্ষেও অনেক কিছু বলার ছিল-সে-কথা আমি অস্বীকার করি না, বা অস্বীকার করতে চাইও না-কিন্তু প্রাতরাশের খাদ্য হিসাবে একটি বুড়ি মা অপেক্ষা বেশী উপযুক্ততা তার ছিল না-মোটেই না স্যার। লিকলিকে? তা তো বটেই! আর শক্ত? সত্যি, খুবই শক্ত! সে আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না-সে রকম কিছু আপনি কখনও কল্পনা করতে পারবেন না।

আপনি কি বলতে চান যে-

দয়া করে আমার কথায় বাধার সৃষ্টি করবেন না। প্রাতরাশের পরে নৈশাহারের জন্য আমরা নির্বাচিত করলাম ডে ট্রয়ট থেকে আগত ওয়াকার নামধারী একজনকে। সে লোকটি খুব ভাল ছিল। পরবর্তীকালে তার স্ত্রীকে সে কথা আমি লিখেছিলাম। বিরল বস্তু, কিন্তু খুব। ভাল। পরদিন সকালে প্রাতরাশের জন্য পেলাম আলাবামা-র ম্যান-কে। আজ পর্যন্ত যত সুন্দর মানুষকে নিয়ে টেবিলে বসেছি সে ছিল তাদের অন্যতম-সুদর্শন, শিক্ষিত, রুচিবান, কয়েকটি ভাষা অনর্গল বলতে পারে-যথার্থ ভদ্রলোক, সত্যি যথার্থ ভদ্রলোক আর বিশেষভাবে রসালো। নৈশাহারের জন্য পাওয়া গেল ওরিগন-এর ভদ্রলোককে: লোকটি এ একেবারে বাজে সে বিষয়ে কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না-বুড়ো, অস্থিসার, শক্ত। শেষ পর্যন্ত আমি তো বলেই ফেললাম, ভদ্রজনরা, আপনারা যা খুসি করতে পারেন, কিন্তু আমি আর একটি নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করে থাকব। তখন ইলিনয়-এর গ্রাইমও বলল, ভদ্রজনরা, আমিও অপেক্ষা করব। কিছু বস্তু দেখে যখন কাউকে নির্বাচিত করবেন তখন এসে আবার আপনাদের সঙ্গে বসব। অচিরেই বোঝা গেল যে, ওরিগন-এর ডে ভিস-কে নিয়ে সকলেই অসন্তুষ্ট; কাজেই হ্যারিসকে পাবার পর থেকে যে সুনাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তাকে অক্ষুণ্ণ রাখবার জন্য নির্বাচনের দাবী করা হল এবং তার ফলে জর্জিয়ার বেকার নির্বাচিত হল। সেও ছিল চমৎকার! ঠিক আছে, ঠিক আছে-এরপর একে একে পেলাম ডুলিটকে, হকিন্সকে ও ম্যাক্‌এন্দ্রয়কে (ম্যাএদ্রয় সম্পর্কে কিছু কিছু অভিযোগ উঠেছিল, কারণ সে ছিল অত্যন্ত বেঁটে আর লিকলিকে); তারপর পাওয়া গেল পেড, দুই স্মিথ, বেইলি (বেইলির ছিল একটা কাঠের পা, কাজেই তার সবটাই লোকসান; তবে তা ছাড়া বেশ ভালই ছিল), একটি ভারতীয় বালক, একজন বাজনাদার ও বামিস্টার নামে একজন ভদ্রলোককে-লোকটি ছিল বাউণ্ডুলে ভবঘুরে; সঙ্গী হিসাবে অথবা প্রাতরাশ হিসাবেও কোন কর্মের নয়। তারপরই এল ত্রাণ-ব্যবস্থা।

তাহলে শেষ পর্যন্ত বহুবাঞ্ছিত ত্রাণ-ব্যবস্থা এল?

হ্যাঁ, নির্বাচনের ঠিক পরেই একটি উজ্জ্বল, সূর্য-ওঠা সকালে ত্রাণ-ব্যবস্থা এসে পৌঁছল। সেদিন নির্বাচিত হয়েছিল মারফি; আমি জোর গলায় বলতে পারি তার চাইতে ভাল কিছু হতে পারত না। কিন্তু যে ট্রেন আমাদের উদ্ধারের জন্য এসেছিল সেই ট্রেনেই জন। মারফি আমাদের সঙ্গেই বাড়ি ফিরে এল এবং বেঁচে-বর্তে থেকে হ্যারিস-এর বিধবাকে বিয়ে করল–

সে কার বিধবা-

যাকে আমরা প্রথম নির্বাচিত করেছিলাম। মারফি সেই বিধবাকে বিয়ে করে এখনও সুখে, সমৃদ্ধিতে ও সসম্মানের বেঁচে আছে। আহা, সে যেন এক উপন্যাস স্যার-যেন একটি রোমান্স! কিন্তু এখানেই আমাকে নামতে হবে স্যার; নমস্কার। যদি কখনও আমার এখানে দুএকটা দিন কাটিয়ে যাবার সুযোগ করতে পারেন, তাহলে আপনাকে পেয়ে খুশি হব। আপনাকে আমার ভাল লেগেছে স্যার আপনার প্রতি আমার স্নেহ জন্মেছে। কি জানেন স্যার, হ্যারিসকে যেমন ভাল লেগেছিল, আপনাকেও তেমনই ভাল লেগেছে। অচ্ছাি স্যার, শুভদিন; আপনার যাত্রা মধুময় হোক।

সে চলে গেল। জীবনে কখনও এতদূর অভিভূত, দুঃখিত ও বিমূঢ় বোধ করি নি। কিন্তু সে চলে যাওয়াতে মনে মনে খুসিই হলাম। ভদ্র ব্যবহার ও নরম কণ্ঠ স্বর সত্ত্বেও যতবার সে দুটি ক্ষুধার্ত চোখ মেলে আমার দিকে তাকিয়েছে ততবারই আমি কেঁপে উঠেছি; আর যখন শুনলাম যে তার বিপজ্জনক স্নেহ আমার উপর পড়েছে এবং তার বিচারে আমি স্বর্গত হ্যারিস-এর সঙ্গে একই শ্রদ্ধার আসনের অধিকারী তখন আমার বুকের ভিতরটা বুঝি বা স্তব্ধ হয়েই গিয়েছিল।

আমার সে বিমুঢ়তা বর্ণনার অতীত। তার কথায় আমার সন্দেহ হয় নি; তার বিবরণ সত্যের যে আন্তরিকতার ছাপ ছিল তার একটি বর্ণকেও অবিশ্বাস করা যায় না; কিন্তু তার বিবরণের ভয়াবহতা আমাকে অভিভূত করে ফেলেছিল; আমার সব চিন্তা-ভাবনা কেমন যেন গুলিয়ে গিয়েছিল। দেখলাম কণ্ডাক্টরটি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তাকে বললাম, ঐ লোকটি কে?

এক সময় উনি কংগ্রেসের সদস্য ছিলেন। বেশ ভাল লোক ছিলেন। কিন্তু একবার তিনি ট্রেনে যেতে বরফ-ঝড়ে পড়েন এবং অনাহারে প্রায় মরতে বসেন। বরফের ঠাণ্ডায় তাঁর শরীরে এত ঘা হয়েছিল, এমনভাবে জমে গিয়েছিলেন, এবং না খেতে পেয়ে এতই শুকিয়ে গিয়েছিলেন যে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তারপরেই দুতিন মাসের জন্য তার মাথার গোলমাল দেখা দেয়। এখন তিনি ভাল হয়ে গেছেন, কিন্তু একটি বিশেষ বিষয়ের উন্মত্ততা (monomania) তাকে পেয়ে বসেছে। সেই পুরনো দিনের কথা উঠলে গাড়ি-বোঝাই সব মানুষকে একে একে খাইয়ে শেষ না করে তিনি কখনও থামেন না। এতক্ষণে সবাইকে খতম করে ফেলতেন, কিন্তু তাকে যে এখানেই নামতে হল। সব নাম গুলি বর্ণমালার মত তার একেবারে মুখস্থ। একমাত্র নিজেকে ছাড়া আর সকলকে খাওয়ানো শেষ হয়ে গেলে তিনি সব সময়ই বলেন: তারপর আবার যথারীতি প্রাতরাশের সময় হলে বিরোধী পক্ষে কেউ না থাকায় আমিই যথাসময়ে নির্বাচিত হলাম; আর তারপরে কোন আপত্তি না ওঠায় আমি পদত্যাগ করলাম। আর তাই আজ আমি এখানে হাজির আছি।

এতক্ষণ একটি রক্ততৃষ্ণাতুর মরমাংসাশীর সত্যিকারের অভিজ্ঞতার পরিবর্তে একটি উন্মাদের নিরীহ কল্পনায় বোনা কাহিনী শুনছিলাম মাত্র, এটা জানতে পেরে একটা অবর্ণনীয় স্বস্তি অনুভব করলাম।

[১৮৬৮]

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *