ক্যালাভেরাস জেলার কুখ্যাত লাফানে ব্যাঙ

ক্যালাভেরাস জেলার কুখ্যাত লাফানে ব্যাঙ
The Notorious Jumping Frog of Calaveras Country

আমার জনৈক বন্ধু প্রাচ্য দেশ থেকে আমাকে একখানি চিঠি লেখেন। সেই চিঠির অনুরোধক্রমেই সৎ স্বভাবের অতিভাষী বুড়ো সাইমন হুইলার-এর সঙ্গে দেখা করি, এবং বন্ধুর অনুরোধমত আমার বন্ধুর বন্ধুলিওনিডাস ডব্লু. স্মাইলির সম্পর্কে খোঁজ-খবর করি। তারই ফলাফল এখানে লিপিবদ্ধ করছি। আমার কিন্তু সন্দেহ হয়েছে যে, লিওনিডাস ডব্লু. স্মাইলি একটি কাল্পনিক নাম; এ রকম কোন লোকের সঙ্গে আমার বন্ধুর কোন দিন কোন পরিচয় ছিল না; তার মতলব ছিল, বুড়ো হুইলারকে তার কথা জিজ্ঞাসা করলেই কুখ্যাত জিম স্মাইলি-র কথা তার মনে পড়ে যাবে, এবং এমন কিছু অতিশয় বিরক্তিকর স্মৃতি রোমন্থনের দ্বারা সে আমাকে পাগল করে ছাড়বে যেটা আমার পক্ষে যেমন দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর, তেমনই অপ্রয়োজনীয়। এই যদি তার মতলব হয়ে থাকে তো সেটা হাসিল

এঞ্জেল-এর একটা ধ্বংসপ্রায় খনি-শিবিরের বিধ্বস্ত শুঁড়িখানার বাথরুমের স্টোভের পাশে সাইমন হুইলার আরাম করে ঝিমুচ্ছিল। সেই অবস্থায় তার সঙ্গে আমার দেখা হল। দেখলাম, লোকটি মোটাসোটা, মাথায় টাক প্রশস্ত মুখোনিতে একটা শান্ত সরলতার। আভাষ। জেগে উঠে সে আমাকে স্বাগত জানাল। তাকে বললাম, আমার জনৈক বন্ধু আমাকে পাঠিয়েছে তার ছেলেবেলার বড় আদরের বন্ধুলিওনিডস ডব্লু. স্মাইলি-রেভারেণ্ড লিওনিডাস ডব্লু স্মাইলি সম্পর্কে কিছু খোঁজ-খবর করতে।বন্ধুটি শুনেছে যে। ধর্মসভার এই তরুণ সদস্যটি এক সময় এঞ্জেল-এর শিবিরের বাসিন্দা ছিল। আরও বললাম, মিঃ হুইলার যদি রেভারেণ্ড লিওনিডাস। ডব্লু স্মাইলি সম্পর্কে কোন তথ্য আমাকে জানাতে পারেন তাহলে আমি খুবই কৃতজ্ঞ বোধ করব।

সাইমন হুইলার আমাকে ঘরের এক কোণে নিয়ে গিয়ে নিজের চেয়ার দিয়ে আমার পথটা আরাম করে বসে আমাকে লক্ষ্য করে যে একঘেয়ে বিবরণটি ছুঁড়ে মারল পরবর্তী অনুচ্ছেদে সেটি লিপিবদ্ধ করা হল। সে একবারও হাসল না, ভুরু কুঁচ কাল না, প্রথম পংক্তটি যে সুরে শুরু করল সেই একই সুরে একটানা বলে গেল, কখনও গলার স্বরের এতটুকু পরিবর্তন ঘটল না, কোন সময়ই তার। উৎসাহে এতটুকু ভাটা পড়ল না; বরং এই অন্তহীন বিবরণের ভিতরে সব সময়ই এমন একটা আকর্ষণীয় আগ্রহ ও আন্তরিকতার স্পর্শ লেগে রইল যাতে আমি পরিষ্কার বুঝতে পারলাম যে, তার কাহিনীতে যে হাস্যকর বা উদ্ভট কিছু থাকতে পারে একথা কল্পনা করা তো দূরের কথা, সে এটাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার বলে মনে করেছে এবং এর দুই নায়ককে চাতুরীর ব্যাপারে অতি-মানবিক প্রতিভা বলে স্বীকার করছে। আমি তাকে যেমন ইচ্ছা কথা বলে যাবার সুযোগ দিলাম; একবারও তার কথায় কোন রকম বাধা দিলাম না।

রেভ.লিওনিডাস ডব্লু. হুম, রেভারেণ্ড লি-দেখুন, জিম স্মাইলি নামক একজন লোক একসময় ৪৯-এর শীতকালে-অথবা ৫০-এর বসন্তকালেও হতে পারে-ঠিক যে কোন সময় আমার সঠিক মনে নেই-এখানে থাকত; তবু এই দুটো সময়ের যে কোন একটা সময়ে যে হবে সেটা আমার মনে আছে এই জন্যে যে, সে যখন প্রথম এই শিবিরে আসে তখনও বড় নালাটা কাটা শেষ হয় নি; কিন্তু সে যাই হোক, ও রকম একটা অদ্ভুত মানুষ আমি আর দেখি নি। যে কোন বিষয় নিয়ে যে কোন সময়ই সে বাজি ধরতে প্রস্তুত। শুধু একজন। প্রতিপক্ষ পেলেই হল।আর তাও না পেলে সে নিজেই প্রতিপক্ষ সেজে বসত। অন্য লোকের যাতে সুবিধা, তাতেই তারও সুবিধা; মোট কথা হল, একটা বাজি হওয়া চাই, আর তা হলেই সে খুসি। কিন্তু লোকটির কপাল ছিল ভাল-অসাধারণ ভাল; প্রায় সব ক্ষেত্রেই বাজিতে তারই জিত হত। যে কোন সুযোগই সে বাজি ধরতে রাজি হত; এমন কোন জিনিস নেই যা নিয়ে সে বাজি ধরত না; আর আগেই তো বললাম, যে কোন পক্ষেই সে বাজি ধরতে রাজি হত। কোথাও একটা ঘোড়দৌড় হলে সেখানেই সে ছুটে গেল; হল। কুকুরের লড়াই তো তার উপরেই বাজি ধরল; বিড়ালের লড়াই হচ্ছে, তাতেও বাজি; যদি মুরগির লড়াই হয় তো তাতেও বাজি, আরে, দুটো পাখি যদি বেড়ার উপর বসে থাকে, তাহলে সেখানেও সে বাজি ধরবে কোন্ পাখিটা আগে উড়ে যাবে তার উপরে; অথবা শিবিরের কোন সভা হলে সে নির্ঘাৎ সেখানে হাজির হবে আর পার্সন ওয়াকার-এর উপর বাজি ধরবে, কারণ তার বিচারে সেই সেখানকার শ্রেষ্ঠ যুক্তিবিদ বক্তা, আর লোকটি আসলেও তাই এবং ভাল মানুষও। যদি দেখতে পায় যে কোন ভ্রমণকারী কোথাও রওনা হচ্ছে, অমনি সে বাজি ধরতে লোকটার গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে কত সময় লাগবে, সে কোথায় যাচ্ছে; আর আপনি যদি তার সঙ্গে বাজি লড়েন তাহলে তার গন্তস্থল কোথায়, আর সেখানে পৌঁছতে তার কত সময় লাগছে সেটা জানবার জন্য সে হয়তো মেক্সিকো পর্যন্ত তার পিছনে ধাওয়া করবে। এখানকার অনেক ছেলেই সেই স্মাইলিকে দেখেছে, এবং তার সম্পর্কে আপনাকে অনেক কিছু বলতেও পারে। কি জানেন, বিষয়বস্তুটা তার কাছে কিছুই নয়-যে কোন বিষয়েই সে বাজি ধরতে প্রস্তুত। একবার পার্সন ওয়াকার-এর স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন, বেশ অনেক দিনের অসুখ; মনে হল তাকে আর বাঁচানো যাবে না; একদিন সকালে ওয়াকার এখানে এল, আর সেও এসে হাজির। সে জানতে চাইল, ভদ্রমহিলা কেমন আছেন; স্মাইলি বলল, ঈশ্বরের অসীম করুণায় এখন সে অনেকটা ভাল, আর এত তাড়াতাড়ি সেরে উঠছে যে ঈশ্বরের আশীর্বাদে শীঘ্রই ভাল হয়ে উঠবে; কিন্তু কিছু না ভেবেচিন্তেই স্মাইলি বলে উঠল, দেখুন, আমি আড়াই বাজি রাখছি, তিনি ভাল হবেন না।’

এই স্মাইলির একটা ঘোটকি ছিল-ছেলেরা সেটাকে বলত পনেরো মিনিটে র ঘুড়ি; তারা অবশ্য ঠাট্টা করেই বলত, কারণ সেটার গতি ওর চাইতে বেশীই ছিল। সেই ঘোড়া নিয়েই সে বাজিও জিতত, যদিও সেটা ছিল অত্যন্ত ধীরগতি, এবং সব সময়ই তার শ্বাসকষ্ট, বা বদমেজাজ, বা ক্ষয়রোগ, বা কোন না কোন রোগ লেগেই থাকত। তাকে দু’শ বা তিনশ গজ এগিয়ে দৌড় শুরু করবার ব্যবস্থা করে দেওয়া সত্ত্বেও অন্য ঘোড়াগুলো তাকে কাটিয়ে চলে যেত; কিন্তু সব সময়ই একেবারে শেষ মুহূর্তে সেটা অত্যন্ত উত্তেজিত ও বেপরোয়া হয়ে উঠত, লাফিয়ে-ঝাঁপিয়ে, পা ফাঁক করে ছুটতে শুরু করত, কখনও পা ছুঁডত বাতাসে, কখনও বা পাশের বেড়ায়, কখনও আরও বেশী ধূলো উড়িয়ে, কখনও হেঁচে–কেঁশে-নাক ঝেড়ে আরও বেশী শব্দ করে-এবং শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যস্থলে পৌঁছে ঠিক ঘাড়ে-ঘাড়ে অন্য সব ঘোড়াকে মেরে বেরিয়ে যেত।

তার একটা ছোট্ট কুকুরের বাচ্চা ছিল; তাকে দেখলে আপনার মনে হবে তার মূল্য এক সেট ও নয়। কিন্তু যেই তার উপর বাজি ধরা হল অমনই সে যেন আর একটা কুকুর হয়ে যেত; তার নীচের চোয়ালটা স্টিমবোটের গলুইয়ের মত বেরিয়ে আসত; দাঁতগুলো বেরিয়ে এসে অগ্নিকুণ্ডের মত ঝ ঝক্ করে উঠত। প্রথমে অন্য কুকুরটা তাকে নাস্তানাবুদ করে তুলত, কামড়ে দিত। দুতিনবার উল্টে ফেলে দিত, আর অ্যাণ্ড জ্যাকসন-কুকুরের বাচ্চাটার নাম-খুসি মনেই সে সব কিছু মেনে নিত যেন এ ছাড়া অন্য কিছু সে আশাই করে নি-বাজির টাকা ক্ৰমে দ্বিগুণ থেকে দ্বিগুণতর হতে হতে একেবারে চরমে উঠল; আর তখনই অকস্মাৎ সে অপর কুকুরটার পিছনের পায়ের হাঁটুর কাছটা কামড়ে ধরত-কি জানেন, ঠিক কামড়াত না, চেপে ধরে ঝুলে থাকত যতক্ষণ না তাকে বিজয়ী বলে ঘোষণা করা হত। স্মাইল এই ভাবে বার বার বাজি জিততে লাগল; কিন্তু শেষ পর্যন্ত একবার তাকে এমন একটা কুকুরের সঙ্গে লড়িয়ে দেওয়া হল যার পিছনের পা-ই ছিল না, কারণ পিছনের দুটো পা-কেই করাত দিয়ে কেটে ফেলা হয়েছিল। লড়াই বেশ অনেকদূর এগিয়েছে, বাজির অংক চডুচ ডু করে বেড়ে গেছে, আর সেও তার প্রিয় জায়গায় কামড় দিতে গিয়ে দেখল তার পিছনের পা-ই নেই; তা দেখেই বেচারি ভড়কে গেল, বিস্মিত হল, এবং এতদূর নিরুৎসাহ বোধ করল যে লড়াইতে জিতবার কোন চেষ্টাই করল না; ফলে প্রতিদ্বন্দ্বীর হাতে সে শোচনীয়ভাবে ঘায়েল হল।সে স্মাইলির দিকে এমনভাবে তাকাল যেন বলতে চাইল যে দোষটা তো তারই; কারণ লড়াইতে তার একমাত্র ভরসাই হল পিছনের পা, আর মনিব তাকে এমন একটা কুকুরের সঙ্গে লড়িয়ে দিল যার পিছনের পা-ই নেই তো সে কামড় বসাবে কোথায়। তারপরই দু-এক পা খুঁড়িয়ে হেঁটে ই সে মাটিতে পড়ে গেল ও মরে গেল। বাচ্চাটা বড় ভাল ছিল; অ্যান্ড্রু জ্যাকসন-এর কথাই বলছি; বেঁচে থাকলে নাম করতে পারত, কিন্তু তার মধ্যে মাল ছিল, প্রতিভা ছিল-আমি জানি, কারণ সে তো মুখে কিছু বলতে পারে না; প্রতিভা না থাকলে একটা কুকুর কখনও এ রকম অদ্ভুতভাবে লড়াই করে জিততে পারে না। তার সেই শেষ লড়াই ও তার ফলাফলের কথা মনে হলেই আমার খুব দুঃখ হয়।

দেখুন, এই স্মাইলির কুকুরের বাচ্চা, মোরগের বাচ্চা, বিড়ালের বাচ্চা-এক কথায় বাজি ধরবার মত সব কিছুই ছিল। আপনি যাই নিয়ে হাজির হন না কেন, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পারবেন না। একদিন সে একটা ব্যাঙ ধরে সেটাকে বাড়ি নিয়ে গেল; বলল, সেটাকে শিখিয়ে-পড়িয়ে মানুষ করবে। সত্যি, তিন-তিনটে মাস সে আর কোন কাজ করল না; পিছনের উঠোনে গিয়ে ব্যাঙ টাকে লাফানো। শেখাতে লাগল। আর বাজি ধরে বলতে পারি, সেটাকে শিখিয়ে তবে ছেড়েছিল। পিছন থেকে একটু খানি টিপে দিল, আর পরমুহূর্তেই দেখবেন যে ব্যাঙ টা ফুলকো লুচির মত বাতাসে ঘুরছে-দেখবেন সে একটা ডিগবাজি খেল, অথবা শুরুটা ভাল ভাবে হলে দুটো। ডিগবাজিও খেতে পারে, তারপর নেমে এসে বিড়ালের মত চারপায়ে ঠিক বসে পড়বে। মাছি ধরার ব্যাপারে সে তাকে এতই ওস্তাদ করে তুলেছিল, আর অনবরত তাকে দিয়ে সে কাজটা এত বেশী অনুশীলন করিয়েছিল যে চোখে পড়ামাত্রই সে মাছিটাকে থাবা দিয়ে ধরে ফেলত, একটাও পালাতে পারত না। স্মাইলি বলত, ভাল করে শেখাতে পারলে একটা ব্যাঙ সব কাজ করতে পারে-তার সে-কথা আমি বিশ্বাস করি। আরে, আমি যে নিজে দেখেছি এই মেঝের উপর ড্যানিয়েল ওয়েবস্টারকে-ব্যাঙ টার নাম ছিল ড্যানিয়েল ওয়েবস্টার-রেখে সে গুনগুন করে বলত, মাছি ড্যানিয়েল, মাছি, আর অমনি চোখের পলক ফেলতে না ফেলতে সে একলাফে সোজা ওই কাউন্টারের কাছে গিয়ে মাছিটা ধরে পুনরায় একতাল কাদার মত থপ করে মেঝেতে বসে পড়ে এমনভাবে পিছনের পা দিয়ে মাথার একটা দিক চুলকোত যেন সে এমন কিছু করে নি যা অন্য কোন ব্যাধ করতে পারে না। এত গুণী হওয়া সত্ত্বেও কিন্তু ব্যাঙ টা খুবই নম্র ও সরল স্বভাবের। আবার সমতল জায়গায় লাফ–ঝাপের কথা যদি বলেন, এক লাফে সে যতটা জমি পার হতে পারত তার জাতের অন্য কাউকে সেটা করতে আপনি কখনও দেখেন নি। সমান জায়গায় লাফানোটাই ছিল তার মোক্ষম কেরামতি, আর তাই সে ক্ষেত্রে স্মাইলি তার উপর বাজির অংক ধরত প্রাণ খুলে। ঐ ব্যাঙ টা নিয়ে স্মাইলির গর্বের সীমা ছিল না, আর তা তো হতেই পারে, কারণ যে সব লোক দেশ-বিদেশে অনেক জায়গায় ঘুরছে তারাই বলে যে তারা যত ব্যাঙ দেখেছে তাদের মধ্যে এটাই

দেখুন, একটা জাফরি-কাটা বাক্সের মধ্যে স্মাইলি ব্যাঙ টাকে রাখত; মাঝে মাঝে সেটাকে শহরতলিতে নিয়ে গিয়ে বাজি ধরত। একদিন একটা লোক-শিবিরে সে ছিল নবাগত-তাকে বাক্সটা শুদ্ধ দেখতে পেয়ে বলল:

আপনার ঐ বাক্সে কি আছে বলুন তো?

আর স্মাইলি বেশ নিরাসক্ত গলায় বলল, তা কাকাতুয়া হতে পারত, ক্যানারি পাখি হতে পারত, হতে পারত কিন্তু হয় নি-এতে আছে একটা ব্যাঙ।

লোকটা সেটাকে হাতে নিল, ভাল করে দেখল, এদিক ওদিকে ঘোরাল তারপর বলল, হুম-এই। তা এটা কি করতে পারে?

স্মাইলি সহজ ভাবেই জবাব দিল, একটা কাজ খুব ভালই করতে পারে-ক্যালাভেরা জেলার যে কোন ব্যাঙ কে লাফানোয় হারিয়ে দিতে পারে।

লোকটা আবার বাক্সটা হাতে নিল, অনেকক্ষণ ধরে ভালভাবে দেখল, তারপর সেটা স্মাইলিকে ফিরিয়ে দিয়ে বলল, আমি তো এই ব্যাঙ টার মধ্যে এমন কোন বিশেষত্ব দেখছি না যাতে অন্য ব্যাঙ থেকে এটা বিশেষ ভাল কিছু হতে পারে।

স্মাইলি বলল, হয় তো আপনি দেখতে পাচ্ছেন না। হয় তো আপনি ব্যাঙ চেনেন, অথবা চেনেন না; হয় তো এ বিষয়ে আপনি অভিজ্ঞ, অথবা হয় তো আপনি নেহাৎই শিক্ষানবীশ। সে যাই হোক, আমার বিশ্বাস আমার কাছে; তবে ক্যালাভেরাস জেলার যে কোন ব্যাঙ–কে সে যে লাফে হারিয়ে দিতে পারে সে বিষয়ে আমি চল্লিশ ডলার বাজি রাখতে রাজী আছি।

লোকটা এক মিনিট কি যেন ভাবল, তারপর দুঃখের সঙ্গে বলল, দেখুন,আমি এখানে নতুন এসেছি, আর আমার সঙ্গে কোন ব্যাঙ–ও নেই; কিন্তু আমার যদি একটা ব্যাঙ থাকত, তো আপনার সঙ্গে বাজি লড়তাম।

তখন স্মাইলি বলল, খুব ভাল কথা-খুব ভাল কথা-আপনি এক মিনিট আমার বাক্সটা ধরুন, আমি গিয়ে আপনার জন্য একটা ব্যাঙ নিয়ে আসছি। তখন নবাগত লোকটা বাক্সটা হাতে নিল, স্মাইলির চল্লিশ ডলারের সঙ্গে নিজের চল্লিশ ডলার যোগ করল, আর তারপর বসে অপেক্ষা করতে লাগল।

এইভাবে অনেকক্ষণ বসে বসে সে নানা কথা ভাবতে লাগল। তারপর ব্যাঙ টাকে বের করে তার মুখটা হাঁ করিয়ে একটা চামচ দিয়ে পাখি-মারা ছররা গুলি তার পেটের মধ্যে ভরে দিল-একেবারে থুতনি পর্যন্ত ভরপেট এবং তারপর সেটাকে মেঝেতে ছেড়ে দিল। ওদিকে স্মাইলি জলাভূমিতে নেমে কাদার মধ্যে অনেক ঘুরে ঘুরে শেষ পর্যন্ত একটা ব্যাঙ ধরে সেটাকে এনে লোকটার হাতে দিয়ে বলল:

এবার আপনি যদি তৈরি হয়ে থাকেন তাহলে এটাকে ড্যানিয়েল-এর পাশে এমনভাবে বসিয়ে দিন যাতে দুটোর সামনের থাবা এক সারিতে থাকে। লাফানোর নির্দেশটা আমিই দেব। তারপর সে বলল, এক-দো-তিন-ছোটো! সে ও নতুন লোকটা পিছন থেকে ব্যাঙ দুটোকে টিপে দিল, আর সঙ্গে সঙ্গে নতুন ব্যাঙ টা তড়িঘড়ি লাফাতে শুরু করল; কিন্তু ড্যানিয়েল একবার হাঁসফাঁস করল, গলাটা বাড়াল-এইভাবে-একজন ফরাসীর মত, কিন্তু তাতেও কিছু হল না-সে নড়তেই পারল না; সে যেন গির্জার মত মাটির সঙ্গে আটকে আছে; সে একটু ও নড়তে পারল না; মনে হল যেন তাকে বেঁধে সেখানে নোঙর ফেলে দেওয়া হয়েছে। স্মাইলি খুবই অবাক হল, বিরক্তও হল, কিন্তু ব্যাপারটা যে কি হল কিছুই বুঝতে পারল না।

লোকটা টাকাটা নিয়ে পা বাড়াল। দরজাটা পার হবার সময় কাঁধের উপর দিয়ে বুড়ো আঙ্গুলটা বাড়িয়ে ড্যানিয়েলকে দেখিয়ে সে আবার বলল, ইচ্ছা করেই বলল, আমি তো এই ব্যাঙ টার মধ্যে এমন কোন বিশেষত্ব দেখছি না যাতে এটা অন্য ব্যাঙ য়ের চাইতে ভালকিছু হতে পারে।

স্মাইলি অনেকক্ষণ ধরেই মাথা চুলকোচ্ছিল আর ড্যানিয়েল-এর দিকে তাকাচ্ছিল; শেষটায় বলল, ব্যাঙ টার যে কি হল ভেবে অবাক হচ্ছি-ওটার নিশ্চয় কিছু হয়েছে-কেমন যেন ঢিলেঢালা দেখাচ্ছে। তারপর ব্যাঙ টার গলা ধরে তুলে বলে উঠল, আরে, এ যে দেখছি। পাঁচ পাউণ্ড ওজন হয়েছে! তখন সেটাকে উল্টো করে ধরতেই সে দুই মুঠো-ভর্তি গুলি উগরে দিল। এতক্ষণে আসল ব্যাপার বুঝতে পেরে সে রাগে পাগল হয়ে উঠল-ব্যাঙ টাকে নামিয়ে রেখে ছুটল লোকটার পিছনে। কিন্তু তাকে ধরতে পারল না। আর-

[এই সময় সামনের উঠোন থেকে কে যেন সাইমন হুইলার-এর নাম ধরে ডাকল, আর সে ব্যাপার কি জানবার জন্য উঠে দাঁড়াল।] যেতে যেতে আমার দিকে ফিরে বলল, যেখানে আছেন সেখানেই বসে থাকুন, বিশ্রাম করুন-আমার এক সেকেণ্ডের বেশী লাগবে না।

কিন্তু, আপনারা যদি অনুমতি করেন, তো আমি মনে করি যে উদ্যমশীল বাউণ্ডুলে জিম স্মাইলির এই ইতিহাসের অনুবৃত্তি রেভ. লিওনিডাস ডব্লু. স্মাইলি সম্পর্কে বিশেষ কোন তথ্য আমাকে দিতে পারবে না; কাজেই আমি সেখান থেকে চলে এলাম।

দরজার কাছেই হুইলার ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। সে ফিরে আসছিল। আমার পথ আটকে দিয়ে সে আবার শুরু করল।

দেখুন, এই স্মাইলির একটা হলে এক-চক্ষু গরু ছিল; সেটার কোন লেজ ছিল না, আর-

যাই হোক, আমার না ছিল সময়, না ছিল আগ্রহ, তাই দুঃখী গরুর কথা শোনবার জন্য অপেক্ষা না করেই আমি বিদায় নিলাম।

[১৮৬৫]

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *