• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

০৮৯. তার ভিজিটিং কার্ড নেই

লাইব্রেরি » শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় » উপন্যাস (শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়) » পার্থিব - শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় » ০৮৯. তার ভিজিটিং কার্ড নেই

তার ভিজিটিং কার্ড নেই, দেওয়ার মতো পরিচয় নেই, জানানোর মতো ডিগ্রি নেই, ভরসা কৃষ্ণজীবনের চিঠিটা। রিসেপশনিস্ট মেয়েটির হাতে একটু নার্ভাস হাতে সেইটেই সমৰ্পণ করল চয়ন। বলল, দয়া করে যদি এটা মিস্টার সেনের কাছে পাঠিয়ে দেন।

মেয়েটা বেয়ারা ডেকে চিঠিটা পাঠিয়ে দিয়ে তাকে একবার দেখল। চয়ন আজ যথাসাধ্য সাজগোজ করে এসেছে। পরিষ্কার ইস্তিরি করা প্যান্ট, হাওয়াই শার্ট, আজ সে দাড়ি কামিয়েছে। এর চেয়ে বেশি আর কি সে করতে পারে? ব্যক্তিত্ব বলে একটা জিনিস আছে, যেটা সাজগোজকে টেক্কা মেরে যায়, আর স্মার্টনেস বলেও আর একটা জিনিস আছে যা এ যুগের পৃথিবীতে খুব বিকোয়। কিন্তু চয়নের ও দুটো নেই। মেধা? মেধা আছে কিনা তা সে ঠিক বোঝে না। সে ইংরেজি আর অঙ্কটা ভালই জানে, অন্তত ছাত্রছাত্রীদের পড়াতে যে-টুকুর দরকার হয়। সেই মেধা এই আধুনিক বাণিজ্য সংস্থার কাজে লাগবে কিনা সেটাই প্রশ্ন। নিজেকে এত ঐশ্বৰ্যহীন, এত বিত্তহীন, গুণহীন মনে হয় তার যে জড়সড় হয়ে গদি-আঁটা নরম চেয়ারে বসে সে তীক্ষ্ণ একটা হতাশায়ঃ বিদ্ধ হতে লাগল বারবার। হবে না। সে জানে।

চয়ন শুনেছে, সেন বিদেশ থেকে এক কাঁড়ি টাকা আর নো-হাউ নিয়ে ফিরে প্রথম কিছুদিন চাকরি করে বাজারটা বুঝে নিয়েছিলেন। এখন বোম্বাইয়ের কাছে একটা আধুনিক কারখানা খুলেছেন। কিসের কারখানা তা ভাল জানে না চয়ন; তবে সেনের অবস্থা যে খুব ভাল, তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। মাসে মাত্র দিন দশেকের জন্য কলকাতায় আসেন, বাকি দিন ভাগ করা আছে দিল্লি ও বোম্বাইয়ের জন্য। এগুলো মূলত সেলস অফিস। সেন প্রায়ই বিদেশে যান। একটা মানুষ অনেক মানুষকে ছাড়িয়ে কি করে যে এত উঁচুতে উঠে যায় সেটাই ভেবে পায় না চয়ন। এসব অচেনা, রূপকথার জগতের মানুষের কাছে যেতে তার ভয় ভয় করে। আর একটা অনুভূতি হয়, নিজের জন্য লজ্জা।

আধা ঘণ্টা বসে থাকতে হল চয়নকে। তারপর একজন ছিমছাম বেয়ারা এসে তাকে নিয়ে গেল ভিতরে; শেকসপিয়র সরণির এই ফ্ল্যাটের ভাড়া কত তার কোনও আন্দাজ নেই চয়নের। শুনলে সে হয়তো অজ্ঞান হয়ে যাবে।

অফিসটা যে খুব বড় তা নয়। এক বা দেড় হাজার স্কোয়ার ফুটের একটা ফ্ল্যাট। হলঘরটা পার্টিশন দিয়ে সামনে রিসেপশন। পিছনে ছোট অফিস। সব মিলিয়ে জনা সাত-আট লোক কাজ করছে। দুটো কম্পিউটার আছে। হলঘর, পেরিয়ে বাঁ দিকে একটা ঘরের দরজা ঠেলে তাকে ঢুকিয়ে দিল বেয়ারা।

ভিতরটা বেশ সাজানো। সবুজ কার্পেট, দেয়ালে হালকা সবুজ রং। বেশ বড় একটা আধুনিক টেবিলের ওপাশে সেন সাহেব বসে। বয়স মধ্য ত্রিশ। চল্লিশের কাছাকাছিও হতে পারে। ফরসা, ভাল চেহারা। মাথায় বড় বড় চুল। মুখখানা লম্বাটে, নাকটা প্রবল, ঠোঁট দুটোয় একটা নিষ্ঠুর ভাব আছে। চোখ দুটো তীক্ষ্ণ এবং স্বপ্নহীন।

ভদ্রলোক খুবই ভদ্র গলায় বললেন, মিস্টার বিশ্বাস আপনাকে পাঠিয়েছেন? কিন্তু…

এই কিন্তুটাকেই সবচেয়ে বেশি ভয় পায় চয়ন। কতবার কিন্তু এসে তার পথ আটকে দিয়েছে। সে কিছু বলল না, শুধু ভয়ার্ত চোখে সেন সাহেব নামক অতি-সফল লোকটির দিকে চেয়ে রইল।

সেন চিঠিটা আর একবার দেখে বলল, বসুন।

নরম গদির চমৎকার চেয়ারে সে প্রায় ড়ুবে গোল বটে, কিন্তু শরীরের আরামটা তাকে প্রভাবিত করল না। সে খরগোশের মতো সচকিত ভঙ্গিতে বসে একটা-দুটো-তিনটে শুকনো টোক গিলতে লাগল।

সেন সাহেব সামান্য একটা হাসির রেখা মুখে ফুটিয়ে তুলে বললেন, বিশ্বাস স্যার আমার খুবই শ্রদ্ধেয় মাস্টারমশাই। নাউ হি ইজ এ বিগ অ্যান্ড রিনাউনড় ম্যান। তিনি যখন পাঠিয়েছেন তখন আপনার জন্য আমার একটু চেষ্টা করা উচিত। আচ্ছা, আপনি কি একটু স্পেসিফিক্যালি বলতে পারেন, ঠিক কী ধরনের জব আপনি করতে পারবেন?

চয়ন আকাশপাতাল ভেবেও এ প্রশ্নের জবাব খুঁজে পেল না। সে বিচ্ছিন্নভাবে অনেক কিছুই জানে। ডারউইন তত্ত্ব থেকে মার্কসবাদ, সে জানে ইংরেজি গ্রামার বা সাহিত্যের ইতিহাস, যে জানে অঙ্ক, ফিজিক্স-কেমিস্ট্রি, কিন্তু বিশেষজ্ঞের মুন ভূ কোনও বিষয়েই নেই। নিজেকে উপস্থাপন করা বড় কঠিন মনে হচ্ছিল তার। সে খুব ক্ষীণ গলায় বলল, আমি তো জানি না।

সেন সাহেব কি একটু অবাক হলেন? কপালে বিস্ময়ের ভাঁজ-গম্ভীর মুখে বললে, যদি অফিস ওযার্ক হয়, যাকে ক্লারিক্যাল জব বলে, তাহলে কিন্তু কলকাতায় কোনও ভ্যাকান্সি নেই। যদি ওরকম সাদামাটা চাকরি করতে চান তাহলে আপনাকে বোম্বাই যেতে হবে। পারবেন? আমরা যা মাইনে দিই তাতে বোম্বাইতে বাসা ভাড়া করে থাকা বা সংসার চালানো খুব শক্ত ব্যাপার।

চয়ন দাঁতে ঠোঁট কামড়াল। তার কাছে কলকাতাও যা, বোম্বাইও তা। কিন্তু বোম্বাই গিয়ে তার কিছু লাভ হবে বলে মনে হল না। সে একটু ভদ্রলোকের দিকে চিন্তিতভাবে চেয়ে থেকে বলল, ও। তাহলে—

একটু ভেবে নিন। সামনের মাসে দশ তারিখের পর আমি আবার কলকাতায় আসব; যদি রাজি থাকেন তাহলে তখন দেখা করবেন। স্যালারিটা, ধরে নিন অ্যােরাউণ্ড টু থাউজ্যান্ড। বম্বের পক্ষে কিন্তু স্যালারিটা বেশ কমই। লোকাল পিপলদের হয়তো চলে যায়, কিন্তু—

আবার একটা কিন্তুতে হোঁচটি খেতে হল তাকে। কিন্তুই তার সবচেয়ে বড় বাধা। শব্দটা যদি লোপাট করে দেওয়া যেত।

একটা কুণ্ঠিত নমস্কার করে বেরিয়ে এল চয়ন।

টিউশনি সেরে বাড়ি ফিরতে রাত নটা বেজে গেল। ছাদে উঠে যখন ঘর খুলছিল তখন অন্ধকার ছাদের কোণে জলের ট্যাংকের পাশ থেকে মেয়েলী গলার স্বর জিজ্ঞেস করল, চাকরি হল?

চয়ন একটু হাসল, না।

অনিন্দিতা এগিয়ে এসে বলল, কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি তোমার জন্য। কেন হল না?

চয়ন মৃদু একটু হেসে বলল, হল না বললে ভুল হবে। ভদ্রলোক বম্বেতে চাকরি দিতে রাজি। মাইনে মাত্র দুহাজার।

ধুস। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রিফিউজ করল বোধ হয়।

তাই হবে।

আমার কিন্তু খুব আশা ছিল, চাকরিটা তোমার হবে।

চয়ন মৃদু হেসে বলে, আশা করতে নেই।

শত হলেও কৃষ্ণজীবনবাবু নিজে চিঠি দিয়েছিলেন তো, হওয়া উচিত ছিল।

চয়ন মাথা নেড়ে বলে, কৃষ্ণজীবনবাবু খুব প্র্যাকটিক্যাল মানুষ নন। কাকে কী বলতে হবে, কোন অন্ধি-সন্ধি দিয়ে কাকে চাকরিতে ঢোকানো যাবে সেসব ভাববার সময় ওঁর কোথায়? হয়তো এরোপ্লেনে বা কোনও মিটিঙে ছাত্রটির সঙ্গে দেখা হয়েছিল, তাই বলেছিলেন। আমার মনে হয়, আমার কোয়ালিফিকেশন কী তাও কৃষ্ণজীবনবাবু ভাল করে জানেন না।

অনিন্দিতা কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে। ঘরের বাতির আভায় তার মুখের ম্লান ভাবটা লক্ষ করল চয়ন। অনিন্দিতা একটু ধরা গলায় বলে, মনটা বড্ড খারাপ লাগছে।

আমার লাগছে না। ঢাকরি জিনিসটা করা তো আমার অভ্যাস নেই। চাকরি হয়তো আমার ভাল লাগবে না।

অনিন্দিতা একটু অবাক হয়ে বলে, শুধুই টিউশনি করে জীবন কাটাতে চাও নাকি?

অকপটে চয়ন বলে, কাটবে না? আমার তো মনে হয় বেশ কেটে যাবে।

তোমার অ্যাম্বিশন বলে কিছু নেই কেন বলো তো! তোমার ওই একটাই ভীষণ দোষ।

চয়ন চিন্তিতভাবে বলে, অ্যাম্বিশন থাকাই কি ভাল? অলস চিন্তা আর অ্যাম্বিশন তো এক জিনিস নয়। অ্যাম্বিশন কথাটার মধ্যে হয়তো অ্যাচিভমেন্টও কিছুটা থাকে। আমার পক্ষে কিছু অ্যাচিভ করা কি সম্ভব?

তাই অলস চিন্তা করতে বুঝি ভাল লাগে?

না। অনিন্দিতা, আমি অলস চিন্তাও করি না। আমার মাথায় সেটাও আসতে চায় না।

কী হবে তাহলে তোমার?

আমার কিছুই হওয়ার নয়।

তুমি একটা কাজ করবে? কৃষ্ণজীবনবাবুকে গিয়ে বলো, তাঁর চিঠিতে কাজ হয়নি। উনি নিশ্চয়ই আবার চেষ্টা করবেন।

না। অনিন্দিতা, উনি ব্যস্ত মানুষ। মাথায় অনেক চিন্তা। তার ওপর মনে হচ্ছে ওঁর একটা ফ্যামিলি ট্রাবল চলছে। এসব বলে ওঁকে ডিস্টার্ব করা ঠিক নয়।

তোমাকে উমেদারি করতে বলছি না। যা হয়েছে সেটা তো বলতে পারবো!

সুযোগ পেলে অবশ্যই বলব। আমার মনে হয়। উনি যে আমাকে চিঠি দিয়ে এক জায়গায় পাঠিয়েছিলেন সেটাই ওঁর মনে নেই।

তবু বলে। তোমার তো আর কোনও সোর্স নেই। আচ্ছা, সেই সুব্রতবাবুকে বলেছ?

উনি জানেন। কিন্তু উনিও আর একজন বিগ গাই। সারা পৃথিবীতে বাড়ির ডিজাইন আর কনস্ট্রাকশন করে বেড়ান। ওঁরাও কি কথা মনে রাখা সম্ভব?

তা বলে ফ্যা-ফ্যা করে ঘুরে বেড়াবে নাকি? তুমি শুধু মাঝে মাঝে মনে করিয়ে দিয়েই দেখ না।

ওরা বিরক্ত হবেন।

তুমি চারুশীলাকেই ধরো না। শুনে তো মনে হয় মহিলা খুব ভাল।

খুবই ভাল অনিন্দিতা। কিন্তু বায়না করা শুরু করলে বেশি দিন ভাল থাকবেন না। বিগড়ে যাবেন। তা ছাড়া চারুশীলা বোধ হয়। কিছুদিনের জন্য বিদেশে যাবেন। খুব ব্যস্ত।

যাঃ। তোমার কপালটাই খারাপ।

যে বিষয়ে সন্দেহ নেই। অত ভেবো না। আমি তো ভালই আছি।

ছাই আছো। ভাল থাকা কাকে বলে তা তুমি জানোই না।

দুজনেই একটু চুপ করে রইল। এত কাণ্ডের পরও যে অনিন্দিতা ছাদে তার কাছে আসে সেটা একটা অদ্ভুত টানের জন্যই। তাদের মধ্যে প্রেম হয়তো নেই, কিন্তু একটা ভালবাসা আছেই। অনিন্দিতা তাকে জীবনে দাঁড় করানোর একটা শপথ নিয়েছে হয়তো। কিন্তু—

ওই কিন্তুই কুরে-কুরে খায় চয়নকে। সব সময়ে একটা কিন্তু এসে সব কাজ ভণ্ডুল করে দেয়।

অনিন্দিতা হঠাৎ বলে, আচ্ছা, তোমার কাছে হেমাঙ্গীবাবুর কথাও তো খুব শুনি। উনি কিছু পারেন না?

কী পারবেন? ওঁর একটা অডিট ফার্ম আছে। ইনকাম ট্যাক্স, আরও সব ট্যাক্স নিয়ে কারবার। সেখানে আমার হওয়ার নয়। ওঁর ক্লায়েন্টরা বেশির ভাগই ঝানু ব্যবসাদার। চাকরি দায়ে পড়ে দিলেও বেশিদিন রাখবে না। উনি নিজেই বলেছেন সেকথা। চাকরির বাজারটাই স্যাচুরেটেড।

আচ্ছা, তুমি কেন কম্পিউটার শেখো না?

কত কী শেখার আছে অনিন্দিতা! শেখা হল কই? আমার আর নতুন করে জীবন শুরু করতে ইচ্ছে হচ্ছে না। টিউশনি বজায় থাকলেই হল। চলে যাবে।

একটা কথা জিজ্ঞেস করব? কিছু মনে করবে না?

না! বলো।

টিউশনি করে তুমি মাসে কত পাও?

দু হাজারের মতো।

সেটা কি খারাপ?

না তো! খারাপ কেন হবে?

বাসা ভাড়া তো পঞ্চাশ, তাই না?

হ্যাঁ।

তাহলে তোমার চলে যায়। যাश।

আমার কী ইচ্ছে করে জানো? তোমার টিউশনিগুলো সব কেড়ে নিই। এই টিউশনি করে চলে যায় বলেই তোমার আর কিছু করতে ইচ্ছে করে না। এসো, রেলিঙের পাশে একটু দাঁড়াই—

খুব সংকোচের সঙ্গে দাঁড়ায় চয়ন। তাদের নিয়ে এ বাড়িতে কথা হচ্ছে। মেলামেশোটা বন্ধ করতে পারেনি চয়ন। অনিন্দিতা বলে, যা হয় হোক, তোমার বন্ধুত্ব আমার দরকার।

বন্ধুত্বটাই আছে। হয়তো তার বেশি কিছুই নেই। তবু দাদা আর বউদি কথা শোনাতে ছাড়ে না। আজকাল অবশ্য বলে বলে তারাও কিছু ক্লান্ত।

অনিন্দিতা খুব কাছ ঘেষে দাঁড়িয়ে বলল, আমার কিন্তু তোমার মতো নয়। আমার অনেক অ্যাম্বিশন।

জানি।

আমি বসে থাকি না। বি এ পাস করেই টাইপ আর শর্টহ্যান্ড শিখেছিলাম। কোনও কাজে এল না। বি এড করলাম। মাস্টারি জুটল না। এবার ভাবছি কম্পিউটার শিখব। কিন্তু এত টাকা লাগে যে বাবার ওপর প্ৰেশার পড়ে যাবে।

নার্সিং হোমে কেমন লাগছে?

ধুস। একদম বাজে। আমি তো আজকাল রিসেপশন আর অফিস ওয়ার্ক দেখি। কিন্তু কী জানো? ডাক্তার বাসু লোকটা ভাল নয়। নানারকম আভাস ইংগিত শুরু করেছে।

সেটা কি রকম?

সেটাও বুঝিয়ে বলতে হবে নাকি? মেয়েদের যেভাবে ক্ষমতাবান পুরুষেরা ব্যবহার করতে চায় ঠিক সেরকম। গত সপ্তাহেও উইক এন্ডে কোথায় যেন নিয়ে যেতে চেয়েছিল। আমি কাজ আছে বলে পার পেয়ে গেলাম। আমার বদলে শুক্লা নামে একজন নার্সকে নিয়ে গেল। শুক্লার অবশ্য প্রেজুডিস নেই। ডিভোর্সি, এক ছেলের মা। আমার তো তা সম্ভব নয়। এর পর যদি আবার ওরকম প্ৰস্তাব দেয় তাহলে বোধ হয় চাকরি ছাড়তে হবে।

চয়ন একটু চুপ করে রইল। মনটা বিষণ্ণ হয়ে গেল। হঠাৎ। বলল, বুঝেছি।

নতুন কিছু নয়। দেশ জুড়ে এসব হয়। আমরা যারা সংস্কার আঁকড়ে থাকি, সতীত্ব, কৌমাৰ্য আঁকড়ে থাকি তাদেরই কিছু হয় না। পড়ে মারা খাই।

চয়ন মৃদু স্বরে বলল, এসব ভ্যালুজ একটু পারসোনাল অনিন্দিতা, যারা একবার হারিয়ে ফেলে তারা আর মূল্যাটা খুঁজেই পায় না। ভোতা হয়ে যায়।

তুমি কি মনে করো শারীরিক পবিত্রতার কোনও দাম আছে?

দাম নেই নাকি?

আছে? ওটা তো পুরনো আচল ধারণা। সংস্কার। আমরা কিছু বোকা মানুষ ওসব মেনে চলি।

লোভী লোকের কাছে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া কি সংস্কারমুক্তি?

অনিন্দিতা একটু ভেবে বলল, ঠিক তা বলছি না। কিন্তু প্রয়োজনে যদি শরীর দিতে হয়?

প্রয়োজনটাকে খুব বড় করে দেখতে গেলে অনেক গণ্ডগোল হয় অনিন্দিতা। বরং প্রয়োজনটা কাটছাট করা ভাল।

অনিন্দিতা হাসল, তোমার মতো?

তা বলিনি।

আচ্ছা, আমি পবিত্র থাকলে কি তুমি খুশি হও?

হই অনিন্দিতা।

কেন হও?

এমনি। আমি একটু প্ৰাচীন পন্থী বোধ হয়।

অনিন্দিতা সামান্য মন্থর গলায় বলল, ওটা আমার প্রশ্নের জবাব হল না। আমি পবিত্র থাকলে তোমার কি?

আমার কিছুই না।

কেন কিছুই না?

মুশকিলে ফেললে।

এবার অনিন্দিতা হাসল, আচ্ছা থাক, বলতে হবে না।

চয়ন বাচল।

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে অনিন্দিতা বলল, জানো, আমার খুব ইচ্ছে ছিল নাটকে অভিনয় করি। দু চারটে করেছিও। কিন্তু গ্রুপ থিয়েটারে চান্স পাওয়ার কোনও স্থিরতা নেই। পয়সাও পাওয়া যায় না।

কটা নাটকে অভিনয় করেছ?

করেছি। কয়েকটা। কিন্তু ভাল রোল পাইনি। আমার চেহারাও তো ভাল নয়।

চয়ন চুপ করে থাকে। অনেকক্ষণ বাদে বলে, থিয়েটারে মেয়েদের এক্সপ্লায়েটেশন নেই?

ওমা! নেই আবার! খুব আছে। তবে কী হয় জানো, প্ৰেম-ট্রেম হয়ে যায়। বিয়েও হয়।

তোমার হল না?

না তো! তবে একটা প্রেম হবো হবো হয়েছিল। যে ছেলেটার সঙ্গে হয়েছিল, পরে জেনেছি। ওটা একটা হারামজাদা। বউ আছে, তবে তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখে না।

তোমার অভিজ্ঞতা অনেক, না?

অনেক।

দুজনে ফের চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।

হঠাৎ তার হাতে একটা হাত রেখে অনিন্দিতা বলে, শোনো, তুমি হার মেনো না।

তার মানে কি অনিন্দিতা?

তুমি হার মানলে আমার খারাপ লাগবে।

চয়ন এই নাটকীয় ডায়ালগে একটু অবাক হয়ে বলে, হার মানবারও কিছু নেই। আমার অ্যাম্বিশনই নেই যে। আমার শুধু মনে হয়, এই বেশ আছি।

এটাকে থাকা বলে না। তোমার ব্ৰেন ভীষণ শার্প। তুমি অনেক জানো। তোমার কিছু হবেই।

আমার বয়স ত্ৰিশের কাছাকাছি হল অনিন্দিতা ।

তাতে কি? ওটা কি বয়স? আমারও তো পঁচিশ।

দুজনে ফের কিছুক্ষণ চুপচাপ।

আমি এলে তোমার খারাপ লাগে না তো!

না। ভাল লাগে।

Category: পার্থিব - শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
পূর্ববর্তী:
« ০৮৮. টাকা জিনিসটার যে কী মহিমা
পরবর্তী:
০৯০. বুকের মধ্যে যেন একটা শাঁখ বেজে ওঠে »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑