ধ্বংসের কিনারে ব’সে

(১)
সূর্য, দেবতার মুকুটের মতো সূর্য, তুমি কেন
আজও তুল্‌লে মাথা, হায়, অন্ধকারে, হে মঙ্গলময়?
তুমি কি পাওনি লজ্জা এতটুকু এই দৃশ্যাবলি
দেখে, কেন চোখ অন্ধ হলো না তোমার? উপকূলে
প’ড়ে-থাকা রমণীর মৃত স্তনে তোমার সোনালি
চুম্বন দিয়েছ এঁকে কামুকের মতো দ্বিধাহীন;
দুধের বাচ্চার বুকে পারলে না জাগাতে স্পন্দন
জীবনের; কেন তুমি ফুঁসে-ওঠা বঙ্গোপসাগর থেকে সব
জল শুয়ে নাওনি সে রাতে সীমাহীন তীব্রতায়?
কোনও কথা না ব’লেই রক্তরঙ পাথর খন্ডের
ধরনে আবার ডুবে গেলে ভয়ঙ্কর হন্তারক
সমুদ্রের গর্ভ জলে। এ কেমন আত্মসমর্পন?
তাহ’লে কী ক’রে ব’লো আমার হৃদয়ে উঠবে জেগে
সূর্যস্তোর ধ্বংসের কিনারে ব’সে বিচূর্ণ বেলায়?

(২)
এই দেখ কে যেন জটায় বেঁধে সমুদ্রকে আজ
জলঢোঁড়া বানিয়ে রেখেছে, অগণিত চোখ মুখ
থেকে মুছে গেছে লোনা পানির হুষ্কার। জলরাশি
পারেনি ছিনিয়ে নিতে সপ্তর্ষিমন্ডল, জেলেদের
ডিঙি নাচে ঢেউয়ের চূড়ায় পুনরায়, বালকেরা
এক্কা দোক্কা খেলে আর সূর্যাস্তের কণা চতুর্দিকে
ছড়িয়ে দিগন্ত থেকে হাঁস নামে গৃহীর উঠোনে,
ন্যাংটো শিশু দাওয়া ছেড়ে ধাওয়া করে হাঁসের পংক্তিকে;
শিস দিতে দিতে গোধূলিতে হেঁটে যায় একা একা
উপকূলে স্বাস্থ্যবান, সাহসী যুবক, অন্তরালে
জাদু-বাস্তবতা-টানে দয়িতার খোঁপায় পরায়
হৃদয় রঙের ফুল। কৃষকের বুকে ধানচারা
গান হ’য়ে ধায় সমুদ্রের দিকে, জননী কিশোরী
মেয়েটিকে ডেকে বলে, ‘আয়, তোর চুল বেঁধে দিই।
১২।৫।৯১