৯. টাইটা সেই স্থানে এল

টাইটা সেই স্থানে এল যেখানে ইশতার তার রাস্তা লুকিয়েছে এবং হঠাৎ থেমে গেল, যে আভাসটা একটু আগেও খুব শক্তিশালী ছিল তা হঠাৎ বিলীন হয়ে গেল উদিত সূর্যের তাপে কুয়াশার ন্যায়। মেডির কোন গন্ধ না স্বাদ কোনটাই নেই। সে রাস্তায় আর একটু গেল, কিন্তু দেখল রাস্তাটা শূন্য ও শীতল। দ্রুত সে যেখানে ইশতারে আভা হারিয়েছিল সেখানে এল। ইশতার শুধুমাত্র লুকানোর জন্য সময় নষ্ট করেনি। সে জানে যে ছাই অথবা পানি ও রক্ত আমাকে কদাচিৎ থামাতে পারলে। সে ভাবল।

সে আকাশের দিকে তাকাল এবং দেখল তারা খচিত আকাশের মাঝে একমাত্র লাল তারা দিগন্তে নিচু হয়ে আছে যা দেবী লসট্রিসের তারা। সে মাদুলিটা নিয়ে দেবীর প্রশংসায় মন্ত্র পড়তে শুরু করল। প্রথম অংশ শেষ না করতেই একটা রাগান্বিত অচেনা উপস্থিতি অনুভব করল। অন্য একটা প্রভুকে এ পথে আহ্বান করা হয়েছে এবং যেহেতু সে ইশতারকে জানে তাই অনুমান করতে পারল এটাকে। সে প্রশংসার দ্বিতীয় স্তবক শুরু করল এবং তার সামনের খালি পাহাড়ে একটা ঝলক গঠিত হতে লাগল, মারজুকের মন্দিরের চুল্লীতে কপারের দেয়ালের মতন যখন বলির আগুন জ্বলছিল।

মারডুক মুখোমুখি হল এবং তার রাগ দেখাল, সে সন্তুষ্টি নিয়ে ভাবল। সে ক্ষীণ রক্তিম আভার উপর দাঁড়াতে গেল এবং বলল, তুমি তোমার নিজের ভূমির মন্দির থেকে এতো দূরে চুল্লীর মারডুক। এ মিশরে অল্প কয়েকজন তোমাকে পূজা দেয়। তোমার ক্ষমতা শেষ। আমি দেবী লসট্রিসকে আহ্বান করেছি এবং তুমি তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারবে না।

সে তার স্কার্ট খুলে ফেলল, আমি তোমার আগুন নিকুচি করি, মারডুক। সে বলে চলল, এবং একজন মহিলার মতো করে বসে সে পাথরের উপর প্রসাব করল। দেবী লসট্রিসের নামে, মারডুক সরে যা এবং আমাকে যেতে দে।

পাথরটা দ্রুত ঠাণ্ডা হয়ে গেল এবং যখন বাষ্প মিলিয়ে গেল, সে আরো একবার মেডির ছায়াময় চিহ্ন চিহ্নিত করতে পারল, সে পর্দাটা যা ইশতার ছাড়িয়েছে তা ছিন্ন ও বিদীর্ণ হয়ে গেল, টাইটা তার মধ্যে দিয়ে এগোল এবং আবার তাকে অনুসরণ করল।

দিগন্ত বিবর্ণ হয়ে পূর্বে আলো সোনালী রশ্মিতে পরিণত হল। টাইটা জানে যে সে দৃঢ়ভাবে তা অর্জন করছে এবং সে চোখ বড় বড় করে বাড়ন্ত আলোর মধ্যে তাকাল তার শিকারকে দেখতে। সে দ্রুত থেমে গেল। তার পায়ের কাছে একটা গভীর খাদ, যার তীক্ষ্ম পার্শ্বগুলো অনেক নিচে অন্ধকারে হারিয়ে গেছে। কোনো মানুষ ঐ গভীরতা মাপতে পারবে না এবং এই বাঁধার চারপাশে কোন রাস্তা নেই, টাইটা অন্য পারটা দেখল। এটা কমপক্ষে ১০০০ কদম দুরে এবং পাড়টা আরো বেশি ভয়ংকর দেখাচ্ছে।

অনেকগুলো শকুন তলহীন খাদের উপর অনেক উঁচুতে উড়ছিল। টাইটা সম্মানিত সূচক মাথা নাড়ল। চমৎকার, ইশতার। সে বিড়বিড় করল। এমন কি শকুনগুলোও একটা দক্ষ স্পর্শ। আমি এর উৎকর্ষ সাধন হয়তো করতে পারব না, কিন্তু এ রকম একটা প্রয়াস শক্তি বিধায় ব্যয় কারক। এটা তোমার অনেক শক্তি ক্ষয় করেছে।

টাইটা পর্বতের কিনারা থেকে সরে এল এবং ফাঁকা স্থানে না চলে সে অন্য পথে গেল।

খাদ আর নেই এবং ওটার স্থান পাথুরে ভূমির মতো সমতল পথ। নিচু অন্য পারের ছায়া এখনো নীল। এই সমতলের মাঝপথ ৫০০ কদমও দূরে নয়, ইশতার দাঁড়িয়ে আছে। সে দুই হাত মাথায় তুলে টাইটাকে মোকাবেলা করছে, তার সৃষ্ট যাদু বজায় রাখতে পাগলের মতো চেষ্টা করছে। যখন দেখল সে ব্যর্থ এবং টাইটা তার দিকে এগিয়ে আসছে একটা রাগান্বিত জ্বিনের ন্যায় সে অসহায়ভাবে তার হাত নামিয়ে নিল, আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে নরম শিলার পাহাড়ের দিকে ঘুরে পাথুরে ভূমির অন্য পাশে দৌড় দিল, তার পিছনের কাপড় তার পায়ের উপর দিয়ে ঘুরল।

টাইটা তাকে দীর্ঘ পদক্ষেপে অনুসরণ করল এবং যখন ইশতার পিছনে তাকাল তখন তার নীল চেহারায় এক উন্মাদ ভাব দেখা গেল। এক মুহূর্তের জন্য ভীত বিহ্বল ভাবে সে লম্বা চুলের অবয়বের দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর ঘুরে দৌড় দিল। এক মুহূর্তে সে টান দিল, ফাঁকা পড়ল তারপর দৌড় ধীরে হয়ে গেল এবং টাইটা তাকে নির্মমভাবে ধরল।

ইশতার তার কাঁধ থেকে পানির থলেটা ফেলে দিল এবং দৌড় দিল আরো সহজে কিন্তু সে টাইটার থেকে মাত্র কয়েকশ কদম এগিয়ে। সে নিচু পাহাড়ের কাছে পৌঁছে একটা খাতের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেল।

টাইটা খাদের মুখে পৌঁছে সামনের পাথুরে রাস্তায় ইশতারের পায়ে চিহ্ন দেখতে পেল কিন্তু যেখানে খাতটা সম্পূর্ণ ডানে মোড় নিয়েছে সেখানে তা অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে। টাইটা তা অনুসরণ করল। কিন্তু যখন সে বিবর্ণ নরম শিলাটার কাছে পৌঁছল তখন সে বন্য পশুর গর্জন শুনল। ঘুরে দেখল যে খাজটা তার সামনে সরু হয়ে গিয়েছে এবং একটা চারপেয়ে জম্ভ পথের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। প্রাণীটা তার লেজ এপাশ-ওপাশ নড়ছে, একটা বিশাল পুরুষ সিংহ ওটা।

সিংহটার কেশর দাঁড়িয়ে গেল, একটা বিশাল ঝোঁপ প্রতি গর্জনে যা বাতাসে যেভাবে ঘাস নড়ে সেভাবে নড়ল। এর চোখ সোনালি ও মণিটা নির্মম কালো। পশুর গন্ধে রাতের গরম বাতাস সে ভারি হয়ে আছে।

টাইটা বালুময় মাটির দিকে তাকাল, যার উপর ওটার বিশাল থাবা গেথে আছে। সে ইশতারের পায়ের ছায় দেখতে পেল, কিন্তু সিংহের থাবার কোন চিহ্ন সেখানে ফেলেছিল না।

টাইটা তার গতি থামল না। সে মাদুলিটা তুলে ভয়ংকর প্রাণীটার দিকে এগিয়ে গেল। আক্রমণ করার পরিবর্তে ওটার গর্জন থেমে গেল সাথে সাথে। তার মাথায় বহিঃস্তর স্বচ্ছ হয়ে গেল এবং সে ওটার মধ্য দিয়ে খাতের পাথুরে দেয়ালগুলো দেখতে পারল। তারপর নদীর কুয়াশার মতো প্রাণীটা মলিন হলে ও হারিয়ে গেল।

টাইটা যেখানে ওটা দাঁড়িয়ে ছিল তার মধ্যে দিয়ে গেল এবং কোনটা ঘুরে এল। তার সামনে খাতটা আরো সরু হয়ে গিয়েছে এবং পার্শ্বশুলো পিচ্ছিল। এটা হঠাৎ একটা পাথুরে দেয়ালে গিয়ে শেষ হয়ে গেছে।

ইশতার দেয়ালের দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, পাগলের মতো টাইটার দিকে তাকাল। চোখটা হলুদ ও লাল, শিউপিল কালো ও প্রসারিত। হিংস্র পশুটার দুর্গন্ধের চাইতেও তার ভয়ের গন্ধ জোরালো। সে তার ডান হাত তুলল এবং একটা দীর্ঘ হাড্ডিসার আঙুল টাইটার দিকে নির্দেশ করল। পিছু হট! ওয়ারলক! সে চিৎকার করল। আমি তোমাকে সাবধান করছি।

টাইটা তার দিকে হেঁটে গেল, সে আবার চিৎকার করল এবং একটা অদৃশ্য অস্ত্র টাইটার দিকে নিক্ষেপ করল। কিন্তু দ্রুত টাইটা লসট্রিসের মাদুলিটা তার চোখের সামনে ধরল এবং কিছু একটা মসৃণ গতিতে তার মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেল অনুভব করল, উড়ন্ত তীরের ন্যায়।

ইশতার ঘুরল এবং পাথরের একটা সংকীর্ণ ফাঁকা দিয়ে দ্রুত বেগে দৌড় দিল তার পিছনে যা তার দেহ দ্বারা টাইটার কাছ থেকে লুকানো ছিল। টাইটা প্রবেশ মুখে থামল এবং পাথর ঠুকল। পাথর প্রকৃত আওয়াজ করল। সে ইশতারে পদধ্বনির প্রতিধ্বনিত হতে শুনল। টাইটা প্রায় নিশ্চিত যে এটা কোন ভ্রম নয় বরং একটা গুহাময় নরম শিলা, পর্বতের ফাটলের প্রকৃত মুখ।

টাইটা তার পিছে রওনা দিল, এবং দেখল সে একটা নিচু পাথুরে পথে সে চলছে যা সূর্যলোকে ক্ষীণ আলোকিত। তার সামনে গুহার মেঝে ঢাল এবং সে চলতে লাগল; সে সতর্কভাবে চলল। এখন বুঝল পথটা বাস্তব, মেডির জাদু নয়। যখন সে অন্ধকারে সামনে বাড়ল টাইটা তার পদক্ষেপ আবারো শুনল।

হঠাৎ টানেলটা একটা তীক্ষ্ম বাঁক নিল, যখন ঘুরল টাইটা নিজেকে একটা বৃহৎ গুহার মধ্যে পেল যার ছাদটা উঁচু। গুহার অপর পাশের দেয়ালে ইশতার জমাট, গুটি মেরে আছে। পালানোর আর কোন পথ নেই। যখন সে টাইটাকে টানলের মুখে দেখল সে কান ফাটানো চিৎকার দিল ও বলল, দয়া করুণ মহান ম্যাগোস! আমাদের দুজনের মধ্যে একটা বাধন আছে। আমার ভাই, আমাকে ছেড়ে দাও এবং আমি তোমাকে এমন রহস্য দেখাব যা তুমি কখনো স্বপ্নেও ভাবনি। আমি আমার সকল শক্তি তোমাকে দিয়ে দেব। আমি তোমার বিশ্বস্ত কুকুর হব। আমি আমার সারা জীবন তোমার সেবায় নিয়োজিত করবো।

তার ওয়াদাগুলো এতো ঘৃণিত ছিল যে টাইটা তার সিদ্ধান্ত দ্বিধান্বিত হয়ে যাওয়া অনুভব করল। এটা ছিল তার মনের একটু সন্দেহ, কিন্তু ইশতার তার বর্মের একটু খানি তুলে তার বৃদ্ধাঙ্গুল ও তর্জনী দিয়ে একটা বৃত্ত আকল, মাড়ুকের চিহ্ন এবং চিৎকার করে কিছু বলল।

তার পিছন হতে টাইটা আর ঘাড়ে অ-বহনযোগ্য ওজন অনুভব করল। কোন অদৃশ্য দ্বৈত অক্টোপাশ তাকে জড়িয়ে ধরেছে, তার বাহু তার পার্শ্ব ঠেসে ধরছে। তার কণ্ঠটাও খুব ভয়ানকভাবে চেপে ধরছে। সে মানুষের মাংসের ঝলসানো গন্ধ পেল। রাক্ষুসের আভা তার দম বন্ধ করে দিতে চাইছে। সে নড়তে পারল না। অন্যপাশে ইশতার নাচল ও তার ট্যাটু করা মুখ বীভৎসভাবে বিকৃত হয়ে গেল। তোমার ব্যর্থ দেবী তোমাকে এই মাটির গভীরে রক্ষা করতে পারবে না। তুমি আর বেশিক্ষণ টিকতে পারবে না। সে চিৎকার করল। আমাদের প্রতিযোগিতা শেষ। আমি তোমাকে ও তোমার সব জন্তুকে হারিয়ে দেব। ওয়ারলক! এখন তুমি মরবে।

টাইটা উঁচু অন্ধকারময় গুহার ছাদের দিকে চোখ ঘুরালো এবং তার সব মনোযোগ দীর্ঘ উজ্জ্বল ছাদের উপর নিবন্ধ করল, সে তার নব শক্তি একত্রিত করল। তার লাঠি ডান হাতে তুলে উপরে নির্দেশ করল। তার ফুসফুসের শেষ দমটুকু দিয়ে সে চিৎকার করল, খাইদাস!

বরফে চিড় ধরলে যেমন শব্দ হয় তেমন একটা শব্দ উপরে হল। শক্তির শব্দে ছাদ থেকে পাথর ভেঙে নিচের দিকে দ্রুত এল। নিজের অপ্রচুর ওজন দিয়ে তা ইশতারে কাঁধে আঘাত করল। তার ঘাড়ের জোড়ার কাছাকাছি। এটা ইশতারকে ছিন্ন ভিন্ন করে বেরিয়ে গেল। যখন ইশতার মুচড়ালো ও কাঁপল ও ভয়ংকরভাবে লাথি মারল, টাইটা তার কাঁধ ও গলা থেকে ওজনটা প্রশমিত হতে অনুভব করল। মারডুক হেরে গিয়েছে এবং টাইটা আবার নিশ্বাস নিতে পারল। পোড়া মাংসের গন্ধ চলে গেল। বাতাস আবার প্রাচীন ও অসাড় হয়ে ঠাণ্ডা হল, শুধু ফাংগাসের গন্ধ পাওয়া গেল।

টাইটা তার জিনিসগুলো তুলে নিল। তোমার জঘন্য প্রভুও তোমাকে তোমার কবর থেকে মুক্ত করতে পারবে না। চিরদিন এখানে শুয়ে থাক, ইশতার। টাইটা বলল ও ঘুরে চলে এল। তার লাঠি পাথরে ঠুকতে ঠুকতে, সে গালালার পথে বেরিয়ে পড়ল।

*

বসন্তে তিনজন বার্তা বাহক ব্যাবিলনে পৌঁছাল।

ফারাও নাজা কাইফান ব্যাবিলনের প্রাসাদের সর্বোচ্চ ছাদের বাগানে সাক্ষাৎ করল তাদের সাথে। রাণী হেজারেটা তার পাশে সিংহাসনে বসা, গহনায় ভীষণ সজ্জিত।

বার্তা বাহক সবাই ছিল উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। যাদের ফারাও টর্ক পশ্চিমে চার মাস আগে নিয়ে গিয়েছিল। তারা তাদের জীবন বাজি রেখে দিন রাত ধরে পাহাড়, মরুভূমি ও চূড়া পাড়ি দিয়ে এসেছে এবং তাদের শীর্ণ দেখাচ্ছে। এরা নিজেদের নাজার সিংহাসনে পায়ের কাছে ফেলল। সকল জয় আপনার, ফারাও নাজা, মিশরে সবচেয়ে মহান প্রভু। তাদে সোধনটা নাজা ও তার স্ত্রীর নিকট অস্বস্তিকর লাগল। আমরা ভয়ানক খবর নিয়ে এসেছি। আমাদের দয়া করুন। যদিও আমরা যা বলব তা আপনাকে অসন্তুষ্ট করবে। দয়া করুন এবং আমাদের উপর থেকে আপনার ক্রোধ সরিয়ে নিন।

বল! নাজা কঠোরভাবে জানতে চাইল। আমি একাই বিবেচনা করব তোমাদের মাফ করব কি না।

আমরা ফারাও টর্কের খবর নিয়ে এসেছি। যিনি আপনার প্রভু ভাই এবং মিশরের দ্বৈত শাসক। অফিসার বলল।

বল! নাজা আবার আদেশ দিল কারণ লোকটা দেরি করছে।

গালালার মরুভূমিতে একটা বিশাল যুদ্ধ হয় ফারাও টর্ক উরুকের আর্মি ও দখলদার নেফার সেটির মধ্যে। সে চুপ হয়ে গেল আবার।

চালিয়ে যাও, নাজা উঠে দাঁড়াল।

বার্তাবাহক দ্রুত শুরু করল, কাপুরুষচিত কাজ ও ডাইনীবিদ্যা দিয়ে আমাদের ফারাও টর্ক উরুকের সৈন্যদের ধ্বংস করে দেওয়া হয়। তাকে হত্যা করা হয়েছে। তার সৈন্যরা আত্মসমর্পণ করেছে। যারা বেঁচে আছে তারা শত্রুদের সাথে যোগ দিয়েছে এবং ভুয়া ফারাও নেফার সেটির জয়ধ্বনি তুলছে, সেথ তার উপর তার ক্রোধ বর্ষণ করুক। সেই শয়তান তার সব শক্তি নিয়ে এখন অ্যাভারিস অভিমুখে।

নাজা তার সিংহাসনে ফিরে গেল এবং তার দিকে বিস্ময়ে চেয়ে রইল। তার পাশে হেজারেট হাসল। সে নাজার বাহু স্পর্শ করল এবং তার দিকে ঝুঁকে তার কানে কানে ফিসৃফিসিয়ে বলল, প্রভুদের কাছে প্রার্থনা করুন, এবং সকল জয়ধ্বনি শুধু মিশরের নিম্ন ও উচ্চ রাজ্যের একমাত্র শাসক ফারাও নাজা কাইফানের।

নাজা কঠোর ও অভিব্যক্তিহীন থাকতে চাইল। কিন্তু আমি তার মুখে তলোয়ারের তীক্ষ্ণ ফলার ন্যায় উচ্চারিত হল, তুমি এক ফারাও প্রভুর মৃত্যুর খবর এনেছ। দুঃখ হচ্ছে এখন তোমার জন্যে, কারণ তুমি এখন এর চরম মূল্য দিতে যাচ্ছ। সে দেহরক্ষীদের দিকে ইশারা করল। তাদের নিয়ে যাও এবং মারডুকের যাজকদের বলো তাদের চুল্লীতে বলি দিতে।

যখন তাদের বাধা হল ও বলি দিতে নিয়ে যাওয়া হল তখন নাজা আবার দাঁড়াল এবং ঘোষণা করল, প্রভু ও ফারাও টর্ক উরুক মৃত। আমি তোমাদের সামনে ঘোষণা করছি আমি এই মিশরের একমাত্র মহান ফারাও, ফারাও নাজা কাইফান।

বাক-হার! সকল নেতা ও ক্যাপ্টেনরা চিৎকার দিল, যারা সিংহাসনের চারদিকে দাঁড়িয়ে ছিল। তারা তাদের তলোয়ার বের করল তাদের ঢলের সাথে আঘাত করে শব্দ করল, বাক হার! বাজা প্রভু নাজা কাইফান।

সবাইকে খবর দিন আমরা আজ দুপুরে যুদ্ধ সভায় মিলিত হব।

তারপর এগার দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নাজা সারগনের প্রসাদে বৈঠক করল কড়া নিরাপত্তার মাঝে। বারতম দিনে নাজা তার সেনা দলকে আদেশ দিল এবং ব্যাবিলন ও মিশরের সীমানার সকল জমিদার ও ছোট রাজাদের কাছে দূত পাঠাল। সে তাদের যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত করতে বলল এবং তার কমান্ডাদের নেফার সেটির বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেতে বলল।

পরবর্তী পূর্ণ চাঁদে, যখন তার বাহিনী ব্যাবিলন শহরের নীল ফটকের সামনে জমায়েত হল, তারা ছিল চল্লিশ হাজার শক্তিশালী প্রশিক্ষিত যোদ্ধা, অস্ত্রে সুসজ্জিত, ঘোড়া, রথ, ধনুক ও তলোয়ার নিয়ে।

কি গৌরবান্বিত দৃশ্য। হেজারেট কেল্লার উপর তার স্বামীর পাশে দাঁড়িয়ে বলল।

আমরা যখন যাত্রা শুরু করব আমাদের মাতৃভূমির দিকে তখন আমাদের সংখ্য আরো বৃদ্ধি পাবে সুমেরীয় এবং হিটিটিস, হুরিয়ান এবং অন্যান্য দখলকৃত রাজ্যের আর্মি দ্বারা। আমরা মিশরে ফিরে যাব দুই হাজার রথ সহযোগে। তুমি কি তোমার ভাই নেফারের জন্য কোন করুণা অনুভব করছো না?

না, এতোটুকুও না! সে মাথা ঝাঁকাল। আপনি আমার ফারাও ও আমার স্বামী। যে-ই আপনার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে সে দেশদ্রোহী এবং মৃত্যু পাবার যোগ্য।

মৃত্যু সে পাবে এবং প্রতারক ওয়ারলক-এর শেষকৃত্যের আগুন ভাগ করে নেবে এবং তার পাশে পুড়বে সে। নাজা গম্ভীর ভাবে ওয়াদা করল।

*

নেফার ও মিনটাকা এক সাথে তার রথে গালালার থেকে ক্যারাভানের পথে দীর্ঘ শোভা যাত্রার মাথায় চলছে। ম্যারন ও মেরিকারা তার ডান পাশে দ্বিতীয় সারিতে। মেরিকারা প্রতিবাদ সত্ত্বেও জেদ করে ম্যারনের রথে চড়েছে যে কিনা এখনো দুর্বল ও অসুস্থ এই অজুহাতে।

আমি গালালার যুদ্ধ পাই নি, কিন্তু আমি প্রতিজ্ঞা করেছি যে আমি তার একটাও মিস করব না। যতোদিন আমার দেহে শ্বাস থাকবে আমি আমার রাজা ও সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুর সাথে চলব। যদিও একটা সারসের মতো পাতলা ও মলিন দেখাচ্ছে তাকে তবুও সে পানিতে লাগাম হাতে উচ্চশিরে দাঁড়িয়ে আছে।

প্রথম রথগুলো পাহাড়ের ঢালের শীর্ষে উঠল এবং তদের নিচে ছড়িয়ে আছে নীলের সবুজ উপত্যকা, মহান নদী যে নিজে তরল কপারের ধারার ন্যায় ঝিকঝিক করছে। লাল আভা ছড়াল সকালের সূর্যালোকে। নেফার ঘুরে পাশের রথে থাকা ম্যারনের উদ্দেশ্যে হাসল। আমরা ঘরে ফিরছি। মিনটাকা গান গাইতে শুরু করল, প্রথমে নরম সুরে তারপর অধিক জোরালো ভাবে, নেফারও তার সাথে যোগ দিল।

দেবতাদের ভূমি, মন্দিরের দেশ;
দশ হাজার বীরের দেশ আমার,
পৃথিবীর সেরা তুমি, প্রিয় সবার
আমাদের প্রাণের মাতৃভূমি,
আমাদের প্রাণপ্রিয় মিশর, ধন্য তুমি ॥

তারপর ম্যারন ও মেরিকারা তাদের সাথে গান গাইল এবং গানটা সারি থেকে সারিতে ছড়িয়ে পড়ল।

অন্য আর্মিরাও তাদের সাথে যোগ দিল, অস্ত্রে সজ্জিত রথীরা, জেনারেল ও ক্যাপ্টেন তাদের রেজিমেন্ট ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে। তাদের পিছনে এল সকল ধর্মের যাজক, শাসক ও লর্ডরা; কেউ হৈ চৈ করে, কেউ ঘোড়ায় চড়ে, কেউবা রথ নিয়ে। কেউ গাড়িতে, কেউবা পালকিতে চড়ে। তাদের পর এল সাধারণ নাগরিকেরা হাসতে হাসতে ও নাচতে নাচতে। কিছু মহিলা তাদের শিশু কোলে নিয়ে এগিয়ে এল আনন্দে কাঁপতে কাঁপতে, যখন তারা তাদের স্বামীদের, প্রেমিকদের, ভাইদের ও পুত্রদের সৈন্য সারিতে দেখল।

আরো দুটা সৈন্য দল তাদের মিশনে যোগ দিল, দল নেতা ও জেনারেল নিজেদের ফারাও-এর রথের সামনে হাজির করল। নেফার নেমে যাদের চিনল তাদের তুলে নিল ও আলিঙ্গন করল।

যখন সে আবার চড়ল তারা তার পিছনে পড়ে গেল এবং তাকে নীলের তীরে অনুসরণ করল। সেখানে নেফার আবার নামল এবং সম্পূর্ণ পোশাক পরিহিত অবস্থায় পানিতে নামল। যখন তারা তীরে সারিবদ্ধ হলো ও জয়ধ্বনি করল ও গান গাইল, সে গোসল করল ও ঘোলা বাদামি পানি পান করল রীতি অনুযায়ী।

যখন তারা শহরের ফটকে পৌঁছল শহরের তোরণ তখন সম্পূর্ণ খোলা ও জনগণ রাস্তায় সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে তাদের অপেক্ষা করছে, তাদের হাতে ব্যানার, ফুলের তোরা ও ফুলের ঝুড়ি। তারা নেফারের জন্য সম্মানের এবং স্বাগতিক গান। গাইল যখন সে মিনটাকাকে পাশে নিয়ে বাঁকানো তোরণের নিচ দিয়ে প্রবেশ করল।

তরুণদ্বয়কে দেব ও দেবীর মতই সুন্দর দেখাচ্ছে, তারা প্রথমে নদী পাড়ের মন্দিরে গেল যেটা টর্ক উরুক নিজের দেবত্ব উপস্থাপন করতে তৈরি করেছিল। নেফার সপ্তাহ আগেই টর্কের মূর্তি সরাতে ও ভুয়া ফারাও এর সকল স্মৃতি চিহ্ন দেয়াল থেকে মুছে ফেলতে আদেশ দিয়েছিল। তারা এখনো ফারাও নেফার সেটি ও হুরাসের একসাথে প্রতিমূর্তি আঁকতে ব্যস্ত, গালালার যুদ্ধে তার বিজয়ের বর্ণনা সহ।

নেফার সেখানে গিয়েছে তার প্রথম দায়িত্ব প্রভুকে ধন্যবাদ দিতে ও দুটো নিখুঁত কালো ষাড় পাথরের বেদিতে উৎসর্গ করতে। ধর্মীয় রীতিশেষে সে এক সপ্তাহের ছুটি ঘোষণা করল। উৎসব ও ভোজে রুটি, গোরুর মাংস, মদ ও বীয়ার সবার জন্য উন্মুক্ত রইল এবং খেলাধুলা নাটকের আয়োজন করা হল তাদের আনন্দ দিতে।

তুমি খুব ভালোলোক, আমার হৃদয়; মিনটাকা তাকে প্রশংসিতভাবে বলল, তারা তোমাকে আগেও ভালোবাসত, কিন্তু এখন তারা তোমার পূজা করবে।

কত দিনের জন্যে? নেফার অবাক হলো। যখন দূরে নাজা আমাদের অ্যুত্থানের কথা শুনবে তখন সে রওনা দিবে আক্রমণ করতে, যদি না সে এরই মধ্যে তা না করে থাকে। সাধারণ জনগণ আমাকে ততোক্ষণই ভালোবাসবে যতক্ষণ না সে দরজায় কড়া নাড়ছে।

*

ফারাও নাজা কাইফান তার বিশ্বস্ত জেনারেল আসমর-কে ব্যাবিলয়নের প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দিল। সে তাকে পাঁচশত রথ, দুই হাজার ধনুক ও সৈন্যসহ ব্যাবিলন রক্ষার্থে রেগে এল। এরপর বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে সে মিশরের দিকে তার সাম্রাজ্য ও সিংহাসন উদ্ধার করতে রওনা দিল। পর্বতের পাশ দিয়ে গড়িয়ে পড়া তুষারের বলের মতো, ফারাও নাজা কাইফানের আর্মিরা শক্তি ও তেজ একত্রিত করে পশ্চিম দিকের সমতল ও পর্বত দিয়ে এগোতে লাগল মিশরের দিকে। রাস্তায় তার সেনাবাহিনীর সংখ্যা বাড়তে লাগল এবং যখন সে খাতমিয়া পাস-এর উচ্চতায় দাঁড়াল তখন তার আর্মি প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

নাজা পশ্চিম দিকে প্রশস্ত বালির মরুভূমির উপর দিয়ে তাকাল যা ইশমাইলিয়া শহরের মহান তিক্ত হ্রদের মাথায় এবং তার মাতৃভূমির সীমান্তের উপর অবস্থিত। তাদের সামনে বিশাল বিস্তৃত মরু, বিশ্রাম নেওয়ার জন্য না কোন বন–না কোন মরুদ্যান আছে যতোক্ষণ না যে ইশমাইলিয়া পৌঁছাবে। আরো একবার সামনের রাস্তায় সে পানির সমস্যায় পড়বে। সে আলোর ঝলকানির মধ্যে চোখ বড় করে তাকাতেই পানির গাড়ির সারিটা দেখতে পারল, মাটির পাত্রে ওগুলো বোঝাই, পর্বতের ঢালের নিচে চাকার দাগে পড়া রাস্তা দিয়ে গিরিমাটি বর্ণের ভূমি দিয়ে মুচড়ে মুচড়ে চলছে।

মাস জুড়ে তারা পানির পাত্রগুলোর মরুতে তৈরি করতে ব্যয় করেছে, পূর্ণপাত্রগুলো বালিতে পুঁততে তারপর অতিরিক্ত সৈন্য রেখেছে তাদের পাহাড়া দিতে যখন তারা পরবর্তী মাল আনতে গেল। এতে তার আর্মিদের দশদিন সময় ও রাত পার হয়ে গেল। এই সময়টাতে তারা তাদের রেশন খুব হিসেব করে খরচ করল।

আমি আপনার সাথে অগ্রণী দলে থাকব। হেজারেট তার কনুইয়ের কাছ থেকে বলল, চিন্তায় ছেদ ঘটিয়ে নাজা তার দিকে তাকাল। এ ব্যাপারে আমরা আগেই আলোচনা করেছি। সে কুটি করল। বিয়ের কয়েক মাস পর থেকে তার রূপ ও সৌন্দর্য বিতৃষ্ণাকর হতে শুরু করেছে, তার ক্ষুদ্রতা–হিংসা ও মেজাজ দ্বারা আচ্ছাদিত। এখন নাজা অধিক থেকে অধিকতর সময় তার উপপত্নীদের সাথে কাটায় যা তার হিংসা আরো বাড়িয়ে দেয় যখন সে তার বিছানায় আসে।

তুমি অন্য মহিলাদের সাথে মালের গাড়ির সাথে আসবে, প্রেনের তত্ত্বাবধানে যে পশ্চাৎ দলের নেতা।

হেজারেট ঠোঁট ফোলালো এক সময় যেটা ছিল আবেদনময়ী, কিন্তু আজ তা বিরক্তিকর। যাতে তুমি লাসাকে সন্তানসহ রাখতে পার যেমনটা তুমি তার বোনকেও পেয়েছে। সে অভিযোগ করল। সে দুজন রাজকন্যার কথা বলছে যাদের নাজা সুমেরিয় প্রতিনিধি হিসেবে তার দায়িত্বে দিয়েছে তার আনুগত্যের প্রতীক রূপে। দুরাজকন্যাই যুবতী, চিকন ও আবেদনময়ী এবং বৃহৎ স্তনের অধিকারী। তারা তাদের স্তনের বোঁটা এঁকেছে সুমেরীয় লজ্জাহীন ফ্যাশনে এবং তাদের সাথে প্রবাসে যাচ্ছে নগ্ন ও উন্মুক্ত হয়ে হেঁটে।

তুমি বিরক্তিকর হয়ে যাচ্ছো, স্ত্রী। নাজা তার উপরের ঠোঁট হাসি দিয়ে তুলল যা ছিল অধিক বিতৃষ্ণাকর। তুমি জান যে এটা একটি রাজনৈতিক কৌশল। আমার তাদের থেকে একটা ছেলে দরকার ছিল সিংহাসনে বসাতে যখন বৃদ্ধ লোকটা মারা যাবে।

সেথের শ্বাস ও হৃৎপিণ্ডের কসম খেয়ে বল যে তুমি লাসাকে তোমার সাথে অগ্রণী দলে নিয়ে যাচ্ছে না। হেজারেট জোর দিল।

আমি তা এখনই শপথ করলাম। নাজা তার ভয়ংকর হাসিটা আবার হাসল।

আমি হুরিয়ার সিন্নালকে নিচ্ছি। সে হচ্ছে আরেকজন বন্দী সুমেরিয়ানটার চেয়ে যুবতী, মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সী, কিন্তু কপারের মতো তার চুল ও সবুজ চোখে উজ্জ্বল সে। তার নিতম্বটাও বৃহৎ ও গোলাকার, যা নাজার বেশি পছন্দ।

তার পেট থেকে আমার একটা ছেলে দরকার। নাজা ব্যাখ্যা করল, অ্যাশেরিয়ান সিংহাসনে বসাতে সে তারপর হাসল, একটা নরম বিপপূর্ণ ভেংচি দিয়ে। আনুগত্যের দায়িত্বগুলো সত্যিই গুরুভার।

হেজারেট তার দিকে হিংস্রভাবে তাকাল এবং তার পালকির জন্যে হাক দিল তাকে সারিতে ফিরিয়ে নিতে যেখানে প্রেন পশ্চাৎ দল নিয়ে আসছে।

*

টাইটার উপদেশে নেফার রেড সীর উপকূলটা প্রহরার ব্যবস্থা করেছে এক মাস্তুলের জাহাজে দ্বারা; কোন আক্রমণ হয় কিনা তা রিপোর্ট করতে, যদিও টাইটা জানত নাজার প্রধান দখলকারী সৈন্যরা আসবে বিশাল বালির মরু দিয়ে। টর্ক ও নাজা এই পথে মেসোপটেমিয়ায় গিয়েছিল। নাজা এই পথটা ভালো চেনে এবং তার বিশাল সৈন্যবাহিনীর নদীপথে আসাটা অনেক কষ্টের হবে টর্কের থেকে।

ম্যাগোসের চমৎকার নব প্রত্যয়নের ফলে নেফার ও তার কর্মকর্তারা নাজার সৈন্যের প্রকৃত সংখ্যা ও কৌশল জানে। একটা দলের নেতা, নাজার কমান্ডের চেইনে উচ্চপদে থাকা অফিসার যে টাইটার পুরানো পরিচিত ছিল এবং যে তার কাছে ঋণী, সে টাইটার কাছে বার্তা পাঠিয়েছে ফারাও নেফার সেটির প্রতি তার আনুগত্য প্রকাশ করে এবং তার সাথে যোগ দিতে চায়। তার পরিচিত একজন কার্পেট ব্যবসায়ী যে বীরসেবায় একটা ক্যারাভান নিয়ে যাচ্ছে টাইটা তাকে দিয়ে অফিসারকে একটা উত্তর পাঠাল। তাকে নির্দেশ দিল তার ডিভিশনের মাথায় থাকতে। তুমি আমাদের কাছে অধিক মূল্যবান তথ্যের উৎস হিসেবে থাকবে একজন যোদ্ধার চেয়ে, সে তাকে বলেছে। কার্পেট ব্যবসায়ী দিয়ে সে তাকে দুটা অস্বাভাবিক উপহার পাঠিয়েছে এক ঝুড়ি জীবন্ত পায়রা এবং একটা প্যাপিরাসের স্ক্রৌল যার মধ্যে একটা গোপন কোড রয়েছে।

যখন পায়রাগুলোকে ছাড়া হলে সঙ্গে সঙ্গে পাখি দুটো অ্যাভারিসে ফিরে এল তাদের আদি বাসস্থানে এবং তাদের সাথে এক পায়ে একটা সিল্কের সুতায় বাঁধা সাংকেতিক বার্তা তারা নিয়ে এল, যা সুন্দর পাতল হালকা প্যাপিরাসে কাগজে লেখা। এই বার্তার মাধ্যমেই নেফার নাজার সৈন্যদের সঠিক সংখ্যা ও অবস্থা জানতে পেরেছে। নাজা সেদিন ব্যাবিলন থেকে যাত্রা শুরু করেছে তারও সঠিক দিনটা সে জানতে পারল এবং আসমরের সাথে কত সৈন্য সেখানে আছে তাও। নেফার তার পশ্চিম দিকে গমন অনুসরণ করতে সক্ষম হল, দামেস্কো ও বীরসেবার মধ্য দিয়ে এবং অন্য সকল শহর ও দুর্গ পেরিয়ে।

শীঘ্রই এটা সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে টাইটা অবস্থান সঠিকভাবেই নিরূপণ করেছে এবং নাজা রেড সী পার হয়ে আসার চেষ্টা করেনি। সে প্রকৃতপক্ষে বিশাল বালির মরুভূমি দিয়ে আসছে।

নেফার রেড সীর উপকূলে তার প্রহরী তুলে নিল এবং সঙ্গে সঙ্গে তার প্রধান কার্যালয়ে তাদের চালান করল এবং তার আর্মির অধিকাংশ মরুর প্রান্তে ইশমাইলিয়া দুর্গের সীমানায় পাঠাল। এখানে মিষ্টি পানির ঝর্ণা ও প্রচুর ঘাসের মাঠ আছে। যখন তারা ইসলামিয়ায় অপেক্ষা করছিল তখন ফেরত পায়রায় রিপোর্ট আসতে থাকল। নেফার শুধু নাজার শক্তিই জানল না, কে তার কোন ডিভিশন নেতৃত্ব দিচ্ছে তাও জানতে সামর্থ হলো।

মিনটাকা ইশমাইলিয়ার দুর্গে নেফারের যুদ্ধ সভায় বসল। তার অংশগ্রহণ ছিল মূল্যহীন, সে ছিল হিকস্ এবং সে নাজার দলের ঐসব অফিসারদের চিনত যারা একসময় তার পিতার কর্মকর্তা ছিল। শিশু অবস্থায় সে শুনেছে তাদের প্রত্যেকের সাথে তার পিতার বিনিময় এবং তার অসাধারণ স্মৃতি যা বাও বোর্ডে প্রশিক্ষিত ও ধারালো করা। সে নেফারকে এসব লোকদের প্রত্যেকের শক্তি, দুর্বলতা ও ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যগুলোর বিবৃতি উপর উপদেশ দিতে সক্ষম ছিল। সে তাদের কাছে আসা তালিকায় চোখ বুলালো।

এই একজন, সেনাবাহিনীর কমান্ডার প্রেন, সে নাজার পশ্চাৎদল কমান্ড করছে। আমার আত্মীয় সম্পর্কিত, কারণ সে আমার পিতার একজন কাজিন। আমি তাকে ভালো করে জানি। সে আমাকে ঘোড়া চড়তে শিখিয়েছে। আমি তাকে আঙ্কেল টংকা বলে ডাকতাম। আমাদের ভাষায় যার অর্থ ভালুক। সে স্মৃতিচারণ করে হাসল। আমার পিতা তার সম্পর্কে বলত সে হাউন্ড কুকুরের মতই বিশ্বস্ত, সতর্ক ও ধীর। কিন্তু একবার যখন সে তার দাঁত শত্রুর গলায় ঢুকিয়ে দিবে মৃত্যু পর্যন্ত তা সে ধরে রাখবে।

এতোদিনে ম্যারন প্রায় সম্পূর্ণ সুস্থ ও শক্তি ফিরে পেয়েছে। সে নেফারের কাছে কোন দরকারী পদের জন্য আবেদন করেছে। তাই নেফার তাকে সামনে রথের ডিভিশনের সাথে নাজার আরো অভিগমন লক্ষ্য করতে পাঠাল, যখন সে উচ্চতা থেকে মরুতে নামতে শুরু করবে।

ম্যারনের স্কাউটরা নাজার পানির যানগুলোকে মাটির জার নিতে এগিয়ে আসতে ও অনুর্বর ভূমিতে তাদের স্তূপ করতে দেখল যার মধ্য দিয়ে নাজা মিশরের সীমান্তে পৌঁছাবে। ম্যারন তাদের পানির বহরটাকে আক্রমণ ও ছিন্নভিন্ন করে দেওয়ার অনুমতি চাইল। কিন্তু নেফার তার কাছে আদেশ পাঠল তাদের আক্রমণ না করতে। কেবল মাত্র তাদের পর্যবেক্ষণে রাখতে এবং সতর্কভাবে লক্ষ্য রাখতে যে তারা পানির মজুদ কোথায় রাখে তা লক্ষ্য রাখতে নির্দেশ দিল।

নেফার তার শেষ মজুদ যা সে নদী রক্ষায় রেখেছিল তাদের তুলে আনল এবং যখন তারা ইশমাইলিয়ার আশে পাশে ক্যাম্প করল নেফার তার কমান্ডারদের সভায় ডাকল। এমনকি টর্কের যান সহ, যা আমরা গালালায় আটক করেছিলাম তা সহ নাজা আমাদের থেকে তিনগুণ এগিয়ে। সে তাদের বলল। তার সব লোকেরা প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ এবং তার ঘোড়াগুলো প্রশিক্ষিত ও স্বাস্থ্যবান। আমরা তাকে সীমান্ত পার হয়ে নদী পর্যন্ত পৌঁছাতে দিতে পারি না। আমরা তাকে মোকাবেলা করব এবং লড়াই করব এখানে এ মরুভূমিতে।

সারা রাত তারা সভা করে কাটাল, এবং নেফার তার যুদ্ধ পরিকল্পনা তৈরি করল এবং তার আদেশগুলো জারি করল। তারা নাজাকে বিনা বাধায় প্রথম পাঁচদিন আসতে দিবে। তারপর যখন সে দলকে পুরোপুরি গোছাতে ব্যস্ত থাকবে তখন তারা তাদের ঘেরাও করে তার পানির মজুদ ধ্বংস করে দিবে, তার অভিযানের সামনে ও পিছন থেকে। এটা তাকে বালির মধ্যখানে ফাঁদে ফেলবে।

আমি নাজাকে ভালো করেই জানি। আমি নিশ্চিত সে এমন কি যখন আমরা তার পানির সংগ্রহ নষ্ট করে দিব তখনও সে পিছু হটবে না বরং সামনে এগিয়ে যাবে। তার সৈন্যরা বাধ্য হবে ইশমাইয়ালিয়া পৌঁছাতে অনেক দিন মরুর শুষ্ক যাত্রার পর। আমরা তখন তাদের সাথে আমাদের ঘোড়া ও সৈন্যদের নিয়ে মোকাবেলা করবো, যারা পূর্ণ বিশ্রাম প্রাপ্ত এবং পর্যাপ্ত পানি প্রাপ্ত থাকবে এবং তা হবে আমাদের নিজেদের পছন্দের একটা যুদ্ধ ময়দানে। এটা আমাদের বিরোধী পক্ষের শক্তিতে প্রভাব ফেলবে।

সভার এ দীর্ঘ সময় ধরে টাইটা নেফারের ক্যাম্পিং চৌকির ছায়ায় চুপচাপ বসে ছিল। মনে হচ্ছিল সে ঝিমাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ সে তার চোখ খুলে একটা ঘুমন্ত পেঁচার ন্যায় চোখ পিটপিট করল, তাদের আবার বন্ধ করল এবং তার চিবুকটা বুকের উপর নামাল।

আমাদের সবচাইতে বড় অভাব হল আমাদের রথের সংখ্যা ও অবস্থা। নেফার শুরু করল, কিন্তু আমরা ধনুক, বর্ম ও বর্শায় নাজার প্রায় সমকক্ষ। আমি নিশ্চিত যে যখন সে তার পানির সংকটটা বুঝবে নাজা তার পদাতিক বাহিনীকে তার সব রথ দিয়ে সামনে পাঠাবে তখন। টাইটা এবং আমি তার ভ্যানগুলোকে একটা ফাঁদে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছি যেখান থেকে আমরা একটি সুবিধা পেতে পারি। শহর ও কূপগুলোর সামনে আমরা ছোট পাথরের দেয়াল নির্মাণ করব যার পিছনে আমাদের ধনুকধারী ও পদাতিক বাহিনী নিজেদেরকে লুকিয়ে রাখবে। এ কাজগুলো ভালোভাবেই রথের আগ্রগতি রুখে দিবে। একটা কাঠ কয়লার দন্ড দিয়ে নেফার প্যাপিরাসের খন্ডের উপর একটা নকশা তৈরি করল। হিল্টো, শাবাকো, সোক্কো এবং তার বাকি সৈন্যরা দেখার জন্য সামনে ঝুঁকে এল।

দেয়ালগুলো একটা মাছের টোপের নকশায় তৈরি করা হবে। সে একটা উল্টো চোঙ্গার আকৃতি আঁকল।

আপনি কিভাবে তাদের ফাঁদে নিয়ে আসবেন। শাবাকো জিজ্ঞেস করল।

আমাদের রথের আক্রমণ ও মিথ্যে পিছু হটা যা আপনারা অনেকবার অনুশীলন করেছেন। নেফার ব্যাখ্যা করল, আমাদের ধনুকধারী ও গুলতি ধারীরা লুকানো থাকবে দেয়ালের পেছনে যতক্ষণ না নাজা আমাদের চোঙ্গ পর্যন্ত অনুসরণ করবে। যতো গভীরে তার প্রবেশ করবে ততই তার সৈন্যরা দেয়ালের নিকটবর্তী হবে। তারা আমাদের গুলতিধারী ও ধনুকধারীদের খুব সুন্দর একটা লক্ষ্যে পরিণত হবে যখন তারা খুব কাছ দিয়ে অতিক্রম করবে।

এমনকি শাবাকোকেও গভীরভাবে প্রভাবিত হতে দেখাল। আপনি তাদেরকে গবাদি পশুর মতই গোয়াল ঘরে বন্দী করতে ইচ্ছুক ঠিক যেমনটা আপনি টর্কের সাথে করেছেন।

পরিকল্পনাটা তারা উৎসাহ নিয়ে আলোচনা করল, পরামর্শ দিল ও ভুলত্রুটি শোধরালো। শেষে নেফার শাবাকোকে দেয়ালগুলো তৈরির দায়িত্ব দিল। টাইটা গত পাঁচদিন তা পর্যবেক্ষণ ও চিহ্নিত করে ব্যয় করেছে, যাতে পরদিন যখনই আলো ফুটবে তক্ষুনি কাজ শুরু করা যায়।

আমাদের হাতে সময় খুব কম। নেফার তাদের সতর্ক করল। আমরা জানি সে নাজার সৈন্যরা খাতমিয়ার উচ্চতায় চলে এসেছে এবং তার পানির ওয়াগানগুলোও প্রায় স্তূপ করা শেষ হয়ে গিয়েছে। আমি আশা করি কয়েক দিনের মধ্যে সে পাহাড়ের ঢাল থেকে নামতে শুরু করবে। অবশেষে সভা ভাঙ্গতেই অফিসারেরা দ্রুত কাজে লেগে গেল যা নেফার তাদের নির্দেশ করেছে। অবশেষে ইসমাইলিয়ার পুরনো দুর্গের উচ্চকক্ষে শুধুমাত্র তিনজন রইল–নেফার, টাইটা এবং মিনটাকা।

মিনটাকা প্রথম বারের মতো কথা বলল, আমরা এরই মধ্যে প্রেন, আমার আংকেল টংকার বিষয়ে আলোচনা করেছি।সে বলল এবং নেফার মাথা ঝাঁকালো কিন্তু পরিহাসমূলক দৃষ্টিতে তাকালো। যদি আমি তার সাথে দেখা করতে পারি, যদি তার সাথে মুখোমুখি কথা বলতে পারি, আমি নিশ্চিত যে আমি তাকে বুঝিয়ে নাজার বিরুদ্ধে আমাদের দলে নিয়ে আসতে পারবো।

তুমি কী বলতে চাও? নেফারের কণ্ঠ সূক্ষ্ম ও তার অভিব্যক্তি কঠোর।

বালকের মতো পোশাক পরে কয়েক জন লোক ও দ্রুতগামী ঘোড়া নিয়ে আমি নাজার প্রধান আর্মির দিকে যেতে পারি এবং পিছনে গিয়ে আংকেল টংকার সাথে দেখা করতে পারি। এর মধ্যে একটু ঝুঁকি থাকবে।

নেফারের চেহারা রাগে লাল হয়ে গেল। পাগলামি!! সে গম্ভীরভাবে বলল। এই রকম কঠিন পাগলামি তুমি গালালায় দেখিয়েছ যখন তুমি নিজেকে টর্কের সামনে টোপ হিসাবে উপস্থাপন করেছিলে। আমি এই বিষয়ে আর একটি শব্দও শুনব না। তুমি কি ভাবতে পার নাজা তোমাকে কি করবে যদি তুমি তার হাতে ধরা পর?

তুমি কি কল্পনা করতে পার যদি যুদ্ধের চূড়ান্ত মুহূর্তে আংকেল টংকা এবং তার দল নিজেদের পিছন থেকে সরিয়ে নেয়। সে নেফারকে বলল।

আমরা আর এ ব্যাপারে কোনো কথা বলব না। নেফার দাঁড়িয়ে গেল এবং তার মুঠি দিয়ে টেবিলের উপর চাপড় দিল। তুমি মেরিকারার সাথে এই দুর্গে থাকবে অভিযানের বাকিটা সময়। যদি তুমি আমার কাছে এখন ওয়াদা না কর যে তুমি এসব বোকামি তোমার মাথা থেকে বের করে দিচ্ছ না, আমি তোমার কক্ষের দরজায় খিল লাগিয়ে রাখব এবং প্রহরা বসাব।

তুমি আমার সাথে এরকম ব্যবহার করতে পারব ন। রাগে তার কণ্ঠ পট পট করে উঠল।

আমি এখনও তোমার স্ত্রীও না। আমি তোমার কোনো আদেশ মানতে বাধ্য নই।

আমি তোমার রাজা এবং আমি তোমার কাছে সম্মতি চাই যে তুমি তোমার বোকামির দ্বারা নিজেকে এমন বিপদে ফেলবে না।

এটা কোন জরুরি ব্যাপার নয় এবং আমি তোমাকে কথা দিব না।

টাইটাকে অভিব্যক্তিহীন দেখাল। এটা তাদের প্রথম কথা কাটাকাটি এবং সে জানে সকল তিক্ততার কারণ হলো তাদের একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা। সে কৌতূহল নিয়ে অপেক্ষা করল দেখার জন্য যে কীভাবে এটা শেষ হয়।

তুমি ইচ্ছে করেই গালালায় আমার আদেশ অমান্য করেছিলে। আমি তোমাকে বিশ্বাস করতে পারি না যে তুমি এবারও তা করবে না। তুমি আমার জন্য আর কোন পথ খোলা রাখলে না। নেফার তাকে গম্ভীরভাবে বলল এবং চিৎকার করে দরজার বাইরের রক্ষীকে ডাক দিয়ে জাগ্‌গা কে পাঠানোর জন্য বলল যে রাজকীয় হারেমের প্রধান খোঁজা।

আমি মেরিকারাকেও বিশ্বাস করতে পারি না। নেফার মিনটাকার দিকে ফিরল। সে সম্পূর্ণ তোমার নিয়ন্ত্রণে এবং যদি তুমি তোমার মন এটার মধ্যে রাখ তবে তুমি তাকেও তোমার দলে নিয়ে নিবে। আমি তোমাদের দুজনকেই অ্যাভারিসের মহলের অন্দর মহলে পাঠাচ্ছি। তোমরা সেখানে জান্নার অধীনে থাকবে। তোমরা বাও খেলে সময় কাটাতে পার যতোদিন না যুদ্ধ শেষ হয় ও যুদ্ধের ফলাফল নির্ধারিত হয়। এবং জাগ্‌গা এসে মিনটাকাকে নিয়ে গেল। দরজায় সে তার কাঁধের উপর দিয়ে নেফারের দিকে ফিরে তাকাল। এবং টাইটা হাসল যখন সে তার অভিব্যক্তিটা পড়ল। নেফার ভূয়া ফারাওদের শত্রুতার চেয়েও বেশি একগুয়ে শত্রুর সাথে টক্করে লেগেছে।

ঐ সন্ধ্যায় টাইটা তাকে তার নতুন আবাসস্থলে দেখতে গেল, যেখানে মেরিকারাও ছিল। এক জোড়া বৃহদাকায় খোঁজা দরজায় ছিল এবং আরেক জোড়া বন্ধ করা দরজার বাইরে। মিনটাকা এখনো রাগে জ্বলছে এবং মেরিকারাও তার প্রিয় মিনটাকার সাথে রাগান্বিত ব্যবহার করার ফলে ফুঁসছে। কমপক্ষে এ থেকে তোমরা শিখেছো যে একজন রাজার সাথে মোকাবেলা করলে কোন লাভ হয় না যদিও সে তোমাদেরকে ভালোও বাসে। টাইটা তাদের সুন্দর ভাবে বলল।

আমি তাকে ভালোবাসি না। মিনটাকা উত্তর দিল চোখে রাগ ও হতাশার অশ্রু নিয়ে। সে আমার সাথে শিশুর ন্যায় ব্যবহার করেছে এবং আমি তাকে ঘৃণা করি।

আমি তাকে আরও বেশি ঘৃণা করি। মেরিকারা ঘোষণা করল। যদি শুধু ম্যারন এখানে থাকত।

নেফার যা করেছে তা হল তোমাদের প্রতি তার ভালোবাসার প্রমাণ এবং তোমাদের নিরাপত্তার প্রতি তার ভাবনা, নয় কি? টাইটা পরামর্শ দিল। সে জানে যদি তুমি নাজা কাইফান ও হেজারেটের হাতে পড় তবে তোমার ভাগ্যের কি পরিণতি হবে।

পরদিন সকালে নেফার ও টাইটা উভয়েই দুর্গের পাঁচিলে দাঁড়িয়ে হোট ক্যারাভানানের দলটাকে ইশমায়ালিয়া ত্যাগ করতে দেখল অ্যাভারিসের উদ্দেশ্যে। মিনটাকা ও মেরিকারা কলামের মাঝখানে সিঙ্কে পর্দা টানা পালকির মধ্যে কাছাকাছি বসে ছিল। তারা নিজেদেরকে দেখাতে কিংবা টাইটা ও নেফারের কাছ থেকে তাদের বিদায়ও নিল না।

ব্যক্তিগত ভাবে, আমি একটি মৌচাক একটা ছোট লাঠি দিয়ে খোঁচা দিতে পছন্দ করতাম। টাইটা বিড়বিড় করল।

তাদের শেখা উচিৎ যে আমি ফারাও এবং এমনকি তাদের কাছেও আমার কথা আইনতুল্য। তাদের মেয়েলি বিষয়াদি ছাড়াও আমার আরও কাজ আছে চিন্তা করার। নেফার বলল, তারা তা কাটিয়ে উঠবে। সে দেয়ালের উপর দাঁড়িয়ে দেখতে থাকল যতোক্ষণ না দুল্যমান পালকি ও ক্যারাভানটা দূরে অদৃশ্য হয়ে গেল।

*

টাইটা এবং নেফার পাথরের দেয়ালগুলো পরীক্ষা করতে বের হল, শাবাকো সেগুলো তড়িঘড়ি করে তৈরি করেছে যেগুলো ইশমালিয়ার মরুদ্যানের পূর্ব পাশে অবস্থিত।

শাবাকোর এই প্রয়াস ইতিহাসের পাতায় মহান স্থাপত্য অর্জনের মধ্যে লেখা রবে না। টাইটা মন্তব্য করল। কিন্তু সব কিছু ভালোর জন্য। এ পথে যেদিক থেকে নাজা আসবে তারা এগুলোকে প্রাকৃতিক অবয়ব মনে করবে এবং তাদের কোন সন্দেহের সৃষ্টি করবে না যতক্ষণ না সে ফানেলে প্রবেশ করবে এবং সম্মুখ দিকে ধীরে ধীরে চাপানো খুঁজে পাবে।

তোমার পরিকল্পনা আমাদের নিজেদেরকে নিজেদের যুদ্ধের ময়দান পছন্দ করতে সক্ষম করেছে। নেফার মাথা নাড়াল। হুরাসের সাহায্যে আমরা এটাকে কসাইখানায় পরিণত করব। তারপর সে তার হাত টাইটার চর্ম-সর্বস্ব বাহুতে রাখল। আমি আবার তোমার কাছে গভীরভাবে ঋণী, বৃদ্ধ পিতা। এগুলোর সব তোমার কাজ।

না। টাইটা তার মাথা নাড়ল। এটা একটা আলোর কিঞ্চিৎ স্পর্শ যা আমি তোমাকে দিয়েছিলাম। বাকি সব তোমার। তুমি তোমার পিতা ফারাও ট্যামোসের সৈন্যবাহিনী উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছ। তুমি বিশালত্ব অর্জন করবে যা তার হতো। যদি সে নির্মমভাবে খুন না হতো শত্রুর হাতে, আজ যাদের আমাদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

এখন আমার সে সময় তার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার। নেফার বলল। চলো নিশ্চিত হই যেন কোবরাটা আবার আমাদের থেকে পিছলে বেরিয়ে না যায়।

সামনের দিনগুলোতে নেফার তার সৈন্য অনুশীলন করিয়ে এবং তার প্রতিরক্ষার পরিকল্পনা ও কৌশলের বিস্তারিত রিহার্সেল দিল। ধনুকধারী ও গুলতিধারী ব্যাটেলিয়নরা প্রতিদিন সকালে কুচকাওয়াজ করে বের হল এবং রুক্ষ অস্থায়ী দেয়ালগুলোর পিছনে তাদের অবস্থান নিল। তারা দেয়ালের সামনে পাথরের ছোট স্তূপ স্থাপন করল দূরত্ব মাপার জন্য যাতে তারা ফঁদটা ঠিক সামনে টানার জন্য বিবেচনা করতে সক্ষম হয়। তারা হাতের খুব কাছে অতিরিক্ত তীরের বান্ডিল রাখল যাতে যুদ্ধের সময় অস্ত্রের সরবরাহ কম না পড়ে। গুলতিধারীরা কাদার ছোট ছোট বল তৈরি করল এবং আগুনে পোড়ালো যতোক্ষণ না এগুলো পাথরের মত শক্ত হল, তারপর তারা এই মারাত্মক অস্ত্রগুলো দেয়ালের পিছনে তাদের হাতের কাছে নিয়ে রাখল। অনুশীলনের সময় নেফার ও তার কমান্ডাররা নাজার সৈন্যবাহিনীর ভূমিকা পালন করল এবং মরুভূমি থেকে আসল, তাদের অবস্থান সূক্ষ্ম চোখে দেখল, নিশ্চিত হল যে তারা দেয়ালের আড়ালে ঠিক মতই লুকিয়েছে।

তারপর যখন তারা অপেক্ষা করল, নেফার তার কৌশলগুলো রিহার্সেল করল। দেয়ালের সামনে ধাওয়া, রথ চালনা ও ফিরে আসার অনুশীলন করল যাতে তার লোকেরা প্রতিটি ভাজ, সমতল, খাদ, গর্ত ও মাঠের অন্যান্য ছোট বাঁকগুলো সম্পর্কে জ্ঞাত হতে পারে। সে দেয়ালের পিছনে একটা নিরাপদ স্থান সতর্ক ভাবে পছন্দ করল যুদ্ধের সময় ঘোড়াগুলোকে পানি খাওয়ানোর জন্য এবং সেখানে তাদের মজুদ রাখা হবে যতক্ষণ না তাদের দরকার হয়। আমার ভয় কোন শত্রু কমান্ডার না আবার তা অনুমান করে বসে যে খেলাটা আমরা তাদের সাথে খেলতে যাচ্ছি। নেফার টাইটাকে বলল এবং তার সৈন্যদের আবার অনুশীলন করার আদেশ দিল।

সন্ধ্যায় সে তার দলের সম্মুখ দিয়ে রথ চালিয়ে দুর্গে ফিরল। তার সারা দেহে ধূলা ও ঘাস মিশে একাকার। সে ক্লান্ত ছিল কিন্তু সন্তুষ্ট। সে তার ক্ষমতার মধ্যের সব কিছু করেছে তার সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত করার জন্য।

যখন সে ক্রুস ও ডোভ-কে টেনে থামাল, লাগামটা সহীসদের হাতে দিল এবং লাফিয়ে নামল, তার ভালোলাগা অনুভূতিটা উধাও হয়ে গেল। জাগ্‌গা রাজকীয় অন্দরমহলের প্রধান খোঁজা, তার জন্য অপেক্ষা করছিল। তার চোখ কান্নায় লাল ও কণ্ঠে ভয়। মহান ফারাও! আমাকে ক্ষমা করুন। আমরা সর্বোত্তমটাই করেছিলাম কিন্তু সে শৃগালীর মতো চালাক। সে আমাকে বোকা বানিয়েছে।

কে এই শৃগালী? নেফার জানতে চাইল, যদিও সে জানত কে হতে পারে।

রাজকুমারী, মিনটাকা।

তার কি হয়েছে? নেফারের কণ্ঠ বিপদাভাসে শুষ্ক।

সে পালিয়েছে এবং সাথে রাজকুমারী মেরিকারাকেও নিয়ে গেছে। জান্না বোকার মত বলল এবং যে কোন শাস্তির জন্যে মাথা পেতে দাঁড়িয়ে রইল।

*

মিনটাকা ও মেরিকারা অ্যাভারিসের ফিরতি পথের বেশিটা সময় তাদের পালানোর পরিকল্পনার উপর আলোচনা করে কাটাল, তারা ফিসফিসিয়ে কথা বলল। প্রথমে তারা ভাবল তাদের নিজের বাহিনীর একটা রথ নিয়ে পালাবে, কিন্তু শীঘ্রই তা বাতিল করল। কারণ তারা জানে এক ঘণ্টার মধ্যেই তারা তাদের পিছনে মিশরের সব আর্মিদের দেখা পাবে, এক ক্রোধান্বিত ফারাও-এর নেতৃত্বে। তবে ধীরে ধীরে ভালো পরিকল্পনা তাদের আলোচনা থেকে উঠে এল।

মিনটাকার প্রথম কাজ ছিল জান্নর ভরসা জেতা, যে তাদের অভিভাবক অ্যাভারিসের প্রাসাদে। সে তার নরম কোমল নিষ্পাপ স্বভাব দ্বারা তাকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিল অ্যাভারিস পৌঁছানোর চার দিন পর। তারপর সর্বত্র সুন্দর ও বিমোহিত উপায়ে, সে জাগ্‌গার কাছে আবেদন করল তাকে আর মেরিকারাকে হাথোরের মন্দিরে যাওয়ার অনুমতি দিতে যুদ্ধে নেফারের নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করতে। কিছু শর্ত দিয়ে জাগ্‌গা ঐ দুজন মহিলাকে মন্দিরের প্রধান যাজিকার সাথে এক ঘণ্টা সময় কাটানোর অনুমতি দিল। জাগ্‌গা মন্দিরে দরজায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করল কারণ কোন পুরুষ অথবা এমনকি কোন খোঁজার ভিতরে যাওয়ার অনুমতি ছিল না।

যখন অবশেষে মিনটাকা ও মেরিকারা বেরিয়ে এল জাগ্‌গা প্রাণ ফিরে পেল। কয়েক দিন পর তারা আবার মন্দিরে যেতে চাইল দেবীকে উৎসর্গ করতে এবং জাগ্‌গা খুব সহজেই রাজি হল তাতে।

আবারো প্রধান যাজিকা মন্দিরের সামনে মিনটাকা ও মেরিকারকে অভিবাদন জানানোর জন্য দাঁড়িয়ে ছিল ও তাদের ভেতরে নিয়ে যাওয়ার জন্যে। কোন শর্ত ছাড়াই জাগ্‌গা তাদের ফিরে আসার অপেক্ষা করল। প্রধান যাজিকা তার দুজন সহকারীকে তাকে সুস্বাদু খাবার ও চমৎকার মদ দিয়ে সেবা করতে পাঠাল। সে সব খাবার খেল ও মদ পান করল এবং দেবী গরু সদৃশ মূর্তির ছায়ায় ঘুমিয়ে পড়ল। যখন সে জাগল তখন সূর্য ডুবে গেছে এবং সে একা। সে দেখল পালকি বাহকেরা চলে গিয়েছে। সে মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য চিৎকার করল এবং তার লাঠি দিয়ে মন্দিরের দরজায় আঘাত করল। অনেকক্ষণ কেটে গেলে একজন যাজিকা তার কাছে একটা বার্তা নিয়ে এল: দুজন রাজকন্যা মন্দিরে আশ্রয়ের জন্য অনুনয় করেছে। পবিত্রমাতা তাদের আবদার অনুমোদন করেছেন এবং তাদের তার নিরাপত্তার অধীনে নিয়েছেন।

জাগ্‌গা কঠিন বিপদে পড়ল। মন্দিরে ভিতর ছিল অরক্ষিত। সে তার দায়িত্ব ফেরত চাইতে পারবে না, এমন কি ফারাও এর কর্তৃপক্ষ হিসেবেও নয়। তার একমাত্র খোলা পথটা হল ইশমাইলিয়ায় ফিরে যাওয়া এবং তার ব্যর্থতা স্বীকার করা। কিন্তু তা ঝুঁকিপূর্ণ। তরুণ ফারাও এখনো তার প্রকৃত রূপ দেখাননি এবং তার ক্রোধটা হতে পারে মারাত্মক।

*

যে মুহূর্তে মন্দিরের দরজা তাদের পিছনে বন্ধ হল, মিনটাকা ব্যাকুলভাবে জানতে চাইল, আপনি ব্যবস্থা করেছেন, পবিত্র মাতা?

কোন ভয় নেই, কন্যা। সব প্রস্তুত। যাজিকার বাদামী চোখ বিস্ময়ে চকচক করল। আমি খোঁজার মদে একটু খানি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছি। সে ফিক করে হাসল, আশা করি তোমরা ভাববে না যে আমি আমার সীমা ছাড়িয়ে গেছি এবং সে হলে তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দিও।

মিনটাকা তার মসৃণ মলিন গালে চুমু খেল, আমি নিশ্চিত আমার মতো হাথোরও আপনাকে নিয়ে গর্ব করবে।

যাজিকা তাদের সে কক্ষে নিয়ে গেল যেখানে মিনটাকার চাহিদামত জিনিসপত্র রাখা রয়েছে। তারা তড়িঘড়ি করে খসখসে কৃষকের পোশাক পরিধান করল এবং তাদের মাথা পশমি চাদর দিয়ে ঢাকল। তারপর কাঁধে চামড়ার ঝোলা ঝুলিয়ে তারা প্রধান যাজিকাকে বারান্দার গোলক ধাঁধার মধ্য দিয়ে অনুসরণ করল। অবশেষে তারা এক নিচু দরজা দিয়ে সূর্যালোতে বেরিয়ে এল এবং একটা জেটিতে নামল যেখানে একটা বড় এক মাস্তুলে নৌকা নোঙ্গর করা। ক্যাপ্টেনকে তোমরা আমাকে যে স্বর্ণ দিয়েছিলে তা দিয়েছি এবং সে জানে কোথায় যেতে হবে। অন্য আর যা। তুমি চেয়েছিলে সব নৌকায় তোমার কেবিনে রয়েছে। সে বলল।

আপনি জানেন তো জান্নাকে কি বলতে হবে? মিনটাকা বলল এবং বৃদ্ধ মহিলা আবার ফিক করে হাসি দিল।

আমি নিশ্চিত যে হাহোর আমাকে এই তাৎপর্যপূর্ণ মিথ্যাবাদীতার জন্য ক্ষমা করবেন, এটা একটা ভালো কারণ।

যখন যুগলদ্বয় লাফিয়ে নৌকায় উঠল নাবিকটা যে ছায়ায় ঝিমোচ্ছিল হামাগুড়ি দিয়ে দাঁড়াল এবং দ্রুত পাল তুলতে এগিয়ে এল। অনুমতির অপেক্ষা না করেই নাবিকটি ডেল্টার দিকে যাত্রা করল। দিনের বাকিটা সময় মিনটাকা ও মেরিকারা জাহাজের ছোট কেবিনে রইল, যাতে তীর থেকে বা কোন নৌকা থেকে কেউ তাদের চিনতে না পারে।

পড়ন্ত বিকালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য জাহাজটা পূর্ব তীরে নোঙর করল এবং দুজন অস্ত্রধারী লোক জাহাজে এল, ভারি বস্তা নিয়ে। সঙ্গে সঙ্গে ক্যাপ্টেন আবার রওনা দিল। লোক দুজন কেবিনে এল এবং মিনটাকার সামনে হাজির হল।

সকল প্রভু আপনাকে ভালোবাসুক, মহামান্য। দুজনের মধ্যে বড় জন বলল, একটা দাড়িওয়ালা হিকস্ বড় নাক ও শক্তিশালী দেহ কাঠামো বিশিষ্ট সে।

আমরা আপনার কুকুর। আমরা এসেছি যখনই আপনার ডাক পেয়েছিল।

লক! মিনটাকা সন্তুষ্টিতে হাসল এবং তারপর অন্য লোকটার দিকে ঘুরল।

এবং নিশ্চয়ই এটা তোমার ছেলে, লক্কা। সে তার বাবার মতই বড়, সাহসী ও বলবান। তোমাদের দুজনকে স্বাগতম। তুমি লক, আমার পিতাকে ভালো সেবা দিয়েছে। তুমি ও তোমার ছেলে কি তা আমার জন্য তা করবে। সে হিকস্‌সিয়ান ভাষায় বলল।

আমাদের জীবন দিয়ে, মহাত্মা! তারা তাকে বলল।

তীরে না যাওয়া পর্যন্ত আমার কাছে তোমাদের জন্য কোন কাজ নেই, কিন্তু ততক্ষণ পর্যন্ত বিশ্রাম নাও এবং তোমাদের অস্ত্র প্রস্তুত কর।

জাহাজের ক্যাপ্টেন ডেল্টার অনেকগুলো মুখ থেকে একটাকে বাছাই করল যেখানে স্রোত কম, জলা লেগুন দিয়ে ধীরে বয়ে গেছে এবং যার উপরে জলচর পাখির মেঘ ঘুরে বেড়ায়। ভোলা সমুদ্রে পৌঁছার পূর্বেই অন্ধকার নামল। কিন্তু ক্যাপ্টেন নির্ভুলভাবে চালল গভীরতা ও লুকানো বালির তটের মধ্য দিয়ে, যতোক্ষণ জালার পচা দুর্গন্ধ ভূমধ্যসাগরের পরিষ্কার লবনাক্ত বাতাস দিয়ে তাড়িত হল।

এখন, জাগ্‌গা বুঝবে যে আমরা পালিয়েছি। মিনটাকা মেরিকারার উদ্দেশ্যে হাসল। আমি ভেবে পাই না সে নেফারকে কি বলবে, যে আমরা মন্দিরের মধ্যে প্রধান যাজিকার অধীনে নিরাপদে আছি? আমি ও রকমটাই আশা করি।

জাহাজের ক্যাপ্টেন এবার পূর্ব দিকে ঘুরল এবং চাঁদের আলোয় সারা রাত উপকূল ঘেঁষে চলল। ভোরবেলা মিনটাকা ও মেরিকারা উষ্ণতার জন্য তাদের শালের নিচে কুন্ডলী পাকিয়ে জাহাজের সম্মুখভাগে দাঁড়াল। তারা দক্ষিণে তাদের ডান দিকের নিচু নির্জন মরু তীরে তাকাল।

ভেবে দেখো যে নেফার ওখানে মাত্র কয়েক ক্রোশ দূরে; মিনটাকা ফিসফিস করল। আমার মনে হচ্ছে যেন আমি তাকে হাত বাড়িয়ে স্পর্শ করতে পারব।

ম্যারনও সেখানে পূর্ব দিকে একটু এগিয়ে। কি আশ্চর্য যে তারা জানবে না আমরা খুব কাছাকাছি।

আমার হৃদয় নেফারের জন্য ব্যাকুল। আমি সব সময় হুরাস ও হাহোরের এর কাছে তার নিরাপত্তার জন্যে প্রার্থনা করি।

তাহলে তুমি আর তাকে ঘৃণা করো না। মেরিকারা প্রশ্ন করল।

আমি কখনো তা করিনি। মিনটাকা উষ্ণভাবে অস্বীকার করল, তারপর ইতস্ততঃ করল, সম্ভবত এক মুহূর্তের জন্য এবং মাত্র একটু খানি।

আমি জানি ঠিক তুমি কতটুকো তাকে অনুভব কর। মেরিকারা তাকে আশস্ত করল। মাঝে মাঝে তারা খুব জেদি ও গোঁয়ার এবং … সে উপযুক্ত শব্দ খুঁজল তা বর্ণনা করতে, … এবং পুরুষোচিত।

হ্যা! মিনটাকা সম্মতি জানাল, ঠিক তাই। বাচ্চাদের মতো। আমার মনে হয় আমাদের তাদেরকে ক্ষমা করতে হবে, কারণ তারা নিজেদের সাহায্য করতে পারবে না।

দিনের বাকি সময় ও পরের রাত জুড়ে তারা পূর্ব দিকের উপকূল ধরে চলল। পরের সকালে জাহাজটা এল আরিস এর বীচের নিকটবর্তী হল। পানি কোমর সমান গম্ভীর হতেই দেহরক্ষী দুজন লক ও লক্কা, মহিলাদের তীরে বয়ে নিয়ে গেল। তারা পানি ঠেলে আবার নৌকায় মালপত্র নিতে এল। তাদের সব কিছু নামানোর পর এক মাস্তুলের জাহাজটা মিশর ও ডেল্টার দিকে ফিরে চলল।

বেশ, আমরা তা করেছি, মেরিকারা অনিশ্চিত ভাবে বলল। মিনটাকার সঙ্গ সত্তেও তার বিরক্ত ও একাকী লাগছে। কিন্তু এখন কি করতে হবে? সে কানের কাছে চিৎকার করে বলল।

আমি লককে আমাকের জন্য বাহন আনতে পাঠাব। মিনটাকা বলল এবং তাকে আরেকটু স্বস্তি দেয়ার জন্য ও আত্ম বিশ্বাসী করার জন্য সে মেরিকারার কাছে ব্যাখ্যা করল, নেফার আমাদের মরুভূমি দিয়ে যাওয়ার সময় রুখে দিতে পারে আংকেল টংকাকে খুঁজে পেতে। কিন্তু আমারা তাকে বোকা বানিয়েছি। সে আরো উদ্ভাসিত হয়ে হাসল। ভেবে দেখ নেফার ও ম্যারন কতটা রাগান্বিত হত যদি তারা শুধু মাত্র তা জানত! তারা এক সাথে হাসল এবং মিনটাকা বলে গেল, এখানে আমরা নাজার অভিগমন রত আর্মির পিছন দিকে এবং বীরসেবা ও ইসমাইলিয়ার মধ্যকার রাস্তা আমাদের থেকে মাত্র কয়েক ক্রোশ দূরে। যখন লক একটা গাড়ি বা ওয়াগান খুঁজে পাবে আমাদের জন্য তখন আমরা আমাদেরকে নাজার আর্মির মালামালের গাড়িতে সামিল করতে পারব এবং লুকিয়ে থাকব ক্যাম্প অনুসারীদের মধ্যে যতোক্ষণ না আমরা আংকেল টংকার হেড কোয়ার্টারে পৌঁছাব।

মিনটাকা যেমনটা বলল গাড়ি পাওয়া তত সহজ ছিল না। নাজার সৈন্যদলের নেতা তাদের সামনে এবং ওয়াগন ও ঘোড়া দখল করে নিয়েছে। সাধারণ জনগণের খাবার ও সেই সাথে শেষে তারা পাঁচটা জরাজীর্ণ গাধার ব্যবস্থা করতে পারল, তাদের এ জন্যে চড়া মূল্যও দিতে হল, দুইটা ভারি সোনার আংটি এবং দুটি রূপা। প্রাণীগুলো মহিলা দুজনের ওজন বহন করতে সক্ষম ছিল না তাদের সঙ্গীদের কথা তো বাদই দিতে হল। তাই তাদের বেশির ভাগ রাস্তা হেঁটে চলতে হল এবং অবতরণের পর তৃতীয় দিনে তারা একটা চূড়ার শীর্ষে উঠল এবং তাদের নিচের উপত্যাকায় ফারাও নাজার বাহিনীকে দেখতে পেল। যতোদূর চোখ গেল তারা শুধু নাজার বাহিনীই দেখল এবং দাবানলের সৃষ্ট ধোয়ার মতো তা আকাশ পর্যন্ত ছড়িয়ে গেল।

তারা এর সাথে যোগ দিতে নেমে গেল এবং নিজেদেরকে মালপত্রের গাড়ির আড়াল করল। তারা ওয়াগান ও প্রাণীর সাথে দীর্ঘ ক্যারাভেনে নেমে পড়ল। মিনটাকা ও মেরিকারা তাদের মাথা ও চেহারা ঢেকে রাখল এবং তাদের পুরানো ধূলিমাখা পোশাক কাউকে বিরক্ত করল না। লক ও লক্কা খুব কাছাকাছি থেকে তাদের রক্ষা করল এবং অন্য ভ্রমনকারীদের থেকে নিরুৎসাহিত করল, অভিযামনের মাত্রা খুবই ধীর।

মিনটাকা ও মেরিকারা তাদের জীর্ণ গাধাগুলোর সর্বোচ্চ গতি ব্যবহার করে এগুলো এবং প্রথম রাতটা খোলা আকাশের নিচে কাটাল। ভোরে যখন পায়ের নিচের পথ দেখার মত আলো ফুট তারা আবার রওনা দিল। দুপুরের পূর্বে তারা প্রধান আর্মির পশ্চাৎ দলকে ধরে ফেলল। তারপর তারা অশ্বারোহী বাহিনীর লাইন অতিক্রম করল, প্রতি সারিতে বিশটি করে। তার পিছনে গবাদি পশুর খাবারের ওয়াগান ও পানির গাড়ি। মিনটাকা সংখ্যা দেখে বিস্মিত হল কখনো এটা মনে হয়নি যে মিশরে এতো প্রাণী আছে।

ঐ দিন সন্ধ্যায় প্রধান আর্মি থেমে যাওয়ার পরও তারা চলল এবং সূর্যাস্তের পর তারা রাস্তার পাশে খুঁটি ও কাঁটা গাছের ঝোঁপের বৃহৎ সমাবেশের সামনে এল। এটা স্থাপন করা হয়েছে নিচু পাহাড়ে সহজে সুরক্ষিত গিরিখন্দের প্রবেশ দ্বারে কড়া নিরাপত্তায় এবং এর চারপাশে অনেক ব্যস্ততা, পথচারীদের গমন ও অভিগমন দাস দাসীদের ছুটাছুটি এবং রথের আসা যাওয়া যেগুলোকে লাল পদবীধারী অফিসারেরা চালাচ্ছে। সীমানা প্রাচীরের ফটকের উপর সেনাদলের চিহ্নিত পতাকা উঠল এবং মিনটাকা তৎক্ষণাৎ তা চিনতে পারল। একটা বন্য ভালুকের ছিন্ন মাথা ওটার উপর অঙ্কিত ছিল,যার জীব ওটার দাঁতাল চোয়ালের কোনা দিয়ে ঝুলে আছে।

এই সেই ব্যক্তি যাকে আমরা খুঁজছি। মিনটাকা ফিসফিসিয়ে মেরিকারাকে বলল, কিন্তু তার সাথে সাক্ষাৎ করতে আমরা কি ভাবে ঢুকব? মেরিকারা জিজ্ঞেস করল অনিশ্চিত ভাবে, প্রহরীদের দিকে তাকিয়ে।

তারা তাদের অস্থায়ী ক্যাম্পটা একটু দূরে করল, কিন্তু জেনারেল প্রেনে যিনি লাল বাহিনীর প্রধান, তার কার্যালয় দৃষ্টিগোচরে রেখে।

একটা চামড়ার স্যান্ডেল ব্যাগ থেকে মিনটাকা দামি তেলের প্রদীপ বের করল যা সে তার সাথে নিয়ে এসেছে এবং এর আলোতে সে একটা ছোট বার্তা প্যাপিরাসের কাগজের টুকরোয় লিখল। সম্বোধন করা হল আংকেল ভালুক বলে এবং সই করা হল আপনার ছোট ঝিঁঝি পোকা লিখে।

মহিলা দুজন তাদের মুখ থেকে ধুলা ধুয়ে পরিষ্কার করল, একে অন্যের চুল ঠিক করে দিল এবং তাদের পোশাক পড়ে নিল। তারপর একে অন্যের হাত ধরে তারা সীমানা প্রাচীরে ফটকের সামনে এগিয়ে গেল। রক্ষীদের সার্জেন্ট তাদের আসতে দেখল এবং তার পা বাড়িয়ে সামনে গেল তাদের থামাতে।

এখন এসো। এখানে কোন সুযোগ হবে না। ভাগ এখান থেকে।

আপনাকে একজন দয়ালু ও ভালো মানুষের মতো দেখা যায়। মিনটাকা তাকে সাধারণভাবে বলল। আপনি কি কোন বদমাশকে ঐ অসভ্যভাবে আপনার মেয়ের সাথে কথা বলার অনুমতি দিবেন? সার্জেন্ট থেমে গেল এবং তার দিকে তাকাল। সে হিকস্স ভাষায় প্রকৃত উচ্চারণ ও স্টাইলে কথা বলল। সে তার লণ্ঠন তুলে তাদের চেহারা আলোকিত করল। তাদের পোশাক সাধারণ কিন্তু তারা সম্ভবত উচ্চ শ্রেণির কম বয়সী মহিলা। প্রকৃতপক্ষে তাদের চেহারা তার পরিচিত মনে হল, যদিও সে তৎক্ষণাৎ চিনতে পারল না।

আমাকে ক্ষমা করুন, সে মিন মিন করল। আপনাকে ভুল বুঝেছিলাম। সে ভেঙ্গে পড়ল এবং মিনটাকা মাধুর্যপূর্ণ ভাবে হাসল।

অবশ্যই, আপনাকে ক্ষমা করা হল। আপনি কি আমাদের পক্ষ থেকে একটা বার্তা সেনারক্ষক প্রেনের কাছে নিয়ে যাবেন? সে মোড়ানো কাগজের টুকরাটা দেখাল। সার্জেন্ট এক মুহূর্ত ইতস্তত করল ওটা নেওয়ার পূর্বে।

আমি দুঃখিত যে আপনাদের এখানে অপেক্ষা করতে হবে যতোক্ষণ না আমি তার কাছ থেকে কোন নির্দেশ না পাই।

খুব অল্প সময়ের মধ্যে সে দ্রুত ফিরে এল। সম্মানীয় মহোদয়া, আমি দুঃখিত যে আপনাদের অপেক্ষা করিয়েছি। দয়া করে আমাকে অনুসরণ করুন।

সে তাদেরকে সীমানা প্রাচীরের কেন্দ্র স্থলে রঙিন কাপড়ের প্যাভিলিয়নে নিয়ে গেল এবং তারপর তারা কাবাকোতে প্রবেশ করল। অন্দর মহল সুন্দর করে সাজানো, মেঝে প্রাণীর চামড়ার দিয়ে ঢাকা, অরিক্স, জেব্রা ও সিংহের। এগুলোর উপর একজন মানুষ আসন করে বসে মানচিত্র খুলে দেখছিল। সে চোখ তুলে তাকাল যখন মেয়েরা দরজা দিয়ে প্রবেশ করল। তার চেহারা রোগা। তার গাল মলিন এবং এমনকি তার দাড়ির ফিতাগুলোও ঢাকতে পারল না যে দাড়িসমূহ কালো থেকে ধূসরই বেশি। তার এক চোখ একটা চামড়ার টুকরায় ঢাকা। সে তাদের দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকাল।

আংকেল টংকা! মিনটাকা প্রদীপের আলোয় আসল এবং তার শাল পিছনে ফেলে দিল। লোকটি ধীরে ধীরে দাঁড়িয়ে তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তারপর হঠাৎ দাঁত বের করে সে হাসল এবং তার একমাত্র চোখ ঝিকঝিক করে উঠল।

আমি ভাবতাম না এটা সম্ভব! সে তাকে আলিঙ্গন করল এবং তাকে তুলে ফেলল। আমি শুনেছিলাম যে তুমি আমাদের ছেড়ে গিয়েছ এবং শত্রুদের দলে ভিড়েছ।

যখন সে তাকে আবার নিচে নামাল এবং সে এই স্নেহের প্রদর্শনী একটু সামলে নিয়েছে সে, সে শ্বাস নিল, ঐ বিষয়েই আমি আপনার সাথে কথা বলতে এসেছি, আংকেল টংকা।

তোমার সাথে এটা কে? সে মেরিকারার দিকে তাকাল তারপর তার একমাত্র ভালো চোখটা পিটপিট করল, সেথের জঘন্য শ্বাসের কসম। আমি তোমাকে চিনি।

এ হচ্ছে প্রিন্সেস মেরিকারা, মিনটাকা তাকে বলল।

নাজার পালিয়ে যাওয়া স্ত্রী। সে আপনাকে ফিরে পেয়ে খুশি হবে। সে মুখ টিপে হাসল। তোমরা দুজন কি খেয়েছ? তারপর তাদের উত্তরের অপেক্ষা না করে, সে তার চাকরদের আরো মাংস, রুটি ও মদ আনতে বলল। মেয়ে দুজন তাদের মুখ আবার ঢাকল যখন তা পরিবেশন করল চাকরেরা কিন্তু যখন তারা চলে গেল মিনটাকা তার কাছাকাছি গিয়ে বসল। তার ভালো কানের কাছে এবং তার কণ্ঠ ফেলে দিল যাতে তাদের কথা তাঁবুর দেয়ালের বাইরের কোন না শুনতে পায়।

সে তার কথা নিরবে শুনল। কিন্তু যখন সে ঐ রাতের ঘটনা বিস্তারিত বর্ণনা করল, যে রাতে তার পিতা ও তার সব ভাইদের তাদের জাহাজে বালাসফুরায় পুড়িয়ে মারা হয়েছিল তা শুনে টংকার অভিব্যক্তি পরিবর্তিত হয়ে গেল। মিনটাকার মনে হল সে তার চোখের কোনায় অশ্রুবিন্দু দেখল। সে জানত দুর্বলতার এমন প্রকাশ একজন রেড নেতার পক্ষে সম্ভব নয়। প্রেন তার মুখ ঘুরিয়ে ফেলল এবং যখন সে আবার তার দিকে তাকাল অশ্রু চলে গেছে এবং সে বুঝল যে তার হয়তো ভুল হয়েছে।

যখন অবশেষে সে শেষ করল, প্রেন সাধারণভাবে তখন বলল, আমি তোমার পিতাকে ভালোবাসতাম, প্রায় ততোখানি তোমাকেও ভালোবাসি। তবে তুমি যে প্রস্তাব রাখলে তা বেঈমানী। সে আরো কিছুক্ষণ চুপ রইল এবং তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

এসব আমাকে ভাবতে হবে। কিন্তু এর মধ্যে তুমি ফিরতে পারবে না যেখান হতে তুমি এসেছিলে। এটা অনেক বেশি ঝুঁকির। তোমাকে আমার অধীনে থাকতে হবে, তোমাদের দুজনকেই, যতোদিন বিষয়টা না নিষ্পত্তি হয়।

আমি কি কমপক্ষে নেফার সেটকে একটা বার্তা পাঠাতে পারি? মিনটাকা অনুনয় করল।

ওটাও খুব ঝুঁকিপূর্ণ। ধৈর্য ধরো বেশি সময় লাগবে না। নাজ খাতমিয়ার উচ্চতায় আছে। কয়েক দিনের মধ্যে সে ইশমাইলিয়ারদিকে যাত্রা শুরুরবে। ওশিরসের পূর্ণ চাঁদের আলো হ্রাস পাওয়ার শুরু হওয়ার পূর্বেই যুদ্ধের ফলাফল স্থির হয়ে যাবে। তার কণ্ঠ গর্জনে পড়ে গেল, এবং আমি একটা সিদ্ধান্তে এর মধ্যে উপনীত হব।

*

অনেক দূর থেকে ম্যারন নাজার বিশাল বাহিকে খাতমিয়ার ঢাল থেকে অনুর্বর ভূমিতে নামতে দেখল এবং সে এক জোড়া পায়রা ছেড়ে দিল যা টাইটা তাকে দিয়েছিল। দুইটা পাখির যদি একটা বাজ পাখি নিয়ে যায় তবে অন্যটা খবর বয়ে নেবে। উভয় পাখির পায়ে সাথে লাল রঙের সুতার একই গুচ্ছ বাঁধা আছে যার সাংকেতিক অর্থ হল অভিগম শুরু হয়ে গিয়েছে। নেফার তাদের অগ্রগতি নজরে রাখল এবং এমনকি রাতে গিয়ে কাছ থেকে দেখে আসল।

পঞ্চম রাতে নাজার পূর্ণ সেনাদল সম্পূর্ণ রূপে পারাপার শেষ করল এবং প্রধান উপাদানগুলো খাতমিয়া ও ইশমাইলিয়ার মধ্যকার ব্যবধানে অর্ধেক রাস্তা পেরিয়ে গিয়েছে। ম্যারন পশ্চাৎ দলের পিছন দিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল এবং পানির মজুদ পরীক্ষা করল যেগুলো তারা তাদের পিছনে ফেলে এসেছে। সে আবিষ্কার করল যে তাদের প্রায় সব ব্যবহৃত হয়ে গেছে অথবা বহন করে তারা নিয়ে গিয়েছে। নাজা তার জয়ের ব্যাপারে এতো আত্মবিশ্বাসী যে সে কোন মজুদ রেখে যায়নি কোন সম্ভাব্য পশ্চাৎ হটার জন্য। অব্যবহৃত জারগুলো থেকে ম্যারন তার নিজের পানির থলেগুলো পূর্ণ করল যেগুলো প্রায় খালি হয়ে গিয়েছিল এবং সে যে জারগুলো রয়ে গেল তা গুঁড়িয়ে দিল।

এখন সে নাজার সৈন্য বাহিনীর সীমান্ত পথে ফিরে চলল কিন্তু অনেক দক্ষিণ দিয়ে এবং তার স্কাউটদের দৃষ্টি সীমার বাইরে দিয়ে। সে সেখানে ফিরে এল যেখানে সে তার সর্ব শক্তি লুকিয়ে রেখেছিল। পঞ্চাশটা রথ দক্ষ সৈন্য দ্বারা চালিত ও নেফারের আর্মির সবচেয়ে সুন্দর ঘোড়া দ্বারা টানা। সে শুধু পানি খাওয়ানোর জন্য এবং ছোট পতাকা পরিবর্তন করার জন্য থামল সেটা তার রথে উড়ছিল। সেটাকে সে নীল থেকে নাজার আর্মির লাল করে দিল। সে নিজেকে সান্ত্বনা দিল যে এটা একটা যুদ্ধের কৌশল। তারপর তার বাহিনীকে পিছন থেকে নাজার অগ্রণী দলের সম্মুখে এগিয়ে নিয়ে গেল এবং ভয়ংকর ভাবে রথ চালাল তার নির্দিষ্ট–গন্তব্যের দিকে।

যে লোকগুলো পানি স্তূপ পাহাড়া দিচ্ছিল তারা তাদের এগিয়ে যেতে দেখল সেদিক থেকেই যেদিক দিয়ে তারা তাদের সহযোদ্ধাদের পৌঁছানোর আশা করেছিল। যখন তারা তাদের উপরে উড়ন্ত মিথ্যা রং চিনতে পারল তারা শান্ত হয়ে গেল। দ্বিতীয়বার চিন্তা করার জন্য ম্যারন তাদের কোন সুযোগ দিল না, বরং তাদের উপর দিয়ে ছুটে গেল এবং যে বাঁধা দিল তাকে কেটে হত্যা করল। জীবিতদের একটা পছন্দ দেয়া হল–হয় মৃত্যু অথবা স্বপক্ষ ত্যাগ। অধিকাংশরা নেফার সেটির দলে যোগ দিল। প্রতিটা মাটির জারের জন্য হাতুড়ির একটা আঘাতই যথেষ্ট ছিল। মূল্যবান তরল পদার্থটা বালিতে পড়ে গেল। ম্যারনের দল আবার ঘোড়ায় চড়ল এবং পরে অভিযানে চলল।

যখন অবশেষে তারা ইশমাইলিয়ার দৃষ্টি সীমায় এল নেফার তাদের অভিনন্দন জানাতে বেরিয়ে এল। ম্যারনকে আলিঙ্গন করল যখন সে শুনল যে কাজের জন্য তাকে প্রেরণ করা হয়েছিল তা সম্পন্ন হয়েছে, নাজা এখন তেপান্তরে পানি হীন। তুমি এই মাত্র তোমার পরাক্রমের প্রথম সোনা অর্জন করছে। সে ম্যারনকে বলল, এবং তোমাকে দশ হাজার সৈন্যের প্রধান রূপে পদোন্নিত করা হল। ম্যারনকে তার আঘাত থেকে সুস্থ দেখে সে স্বস্তি পেল। আমাদের সম্মুখে যে যুদ্ধ আসছে আমি তার ডান অংশের কমান্ডারের দায়িত্ব তোমাকে দিচ্ছি।

ফারাও, যদি আমি আপনাকে সম্ভষ্ট করে থাকি তবে আমি এক সুযোগ ভিক্ষা চাই।

অবশ্যই, পুরানো বন্ধু। যদি তা আমার ক্ষমতার মধ্যে হয় তবে তুমি তা পাবে।

আমার সঠিক স্থান আপনার পাশে। আমরা এক সাথে রেড রোডে দৌড়িয়েছি, চলুন এই যুদ্ধটা আমরা এক সাথে করি। আমাকে আরো একবার আপনার বর্শা বাহক হিসাবে আপনার পাশে চড়তে দিন। ওটা সবচেয়ে বড় সম্মান যা আমি চাই।

নেফার তার হাত ধরল এবং জোরে চাপ দিল। তুমি আমার রথে আরো একবার চড়বে এবং এতে আমি সম্মানিত হবো। সে তার হাত নামাল। কিন্তু আমাদের আর কথা বলার সময় নেই। নাজা তোমার বেশি পিছনে নয়। যখনই সে আবিষ্কার করবে তুমি তার পানি সরবরাহের কি করেছ, সে বাধ্য হবে সর্বোচ্চ গতিতে আসতে।

সহজাত ভাবেই তারা দুজন তেপান্তরে ফিরে তাকাল যেখান দিয়ে শত্রু আসতে পারে। কিন্তু তাপের আস্তরণ ছিল ধূসর এবং কিছুই দেখা গেল না। যাই হোক তারা আর অপেক্ষা করল না।

*

ফারাও নাজা তার রথ থামাল এবং তার পানির স্তূপের দিকে তাকাল। যদিও তার স্কাউটরা তাকে আগেই সতর্ক করেছে তবুও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেখে সে হতবাক। ধীরে ধীরে সে নামল ও দুমদাম করে হেঁটে ভেজা ভূমিতে বের হল। মাটির হাঁড়ির ভাঙা টুকরা তার স্যান্ডেলের নিচে মড়মড় করে উঠল এবং হঠাৎ সে তীক্ষ্ণ চিৎকার দিল। সে রাগ ও হতাশায় ভাঙ্গা টুকরোগুলোকে লাথি মারল। তারপর দুপাশে দুহাত শক্ত মুঠি করে দাঁড়াল এবং রাগত দৃষ্টিতে পশ্চিম দিকে তাকাল। ধীরে ধীরে সে তার নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেল এবং তার শ্বাস ধীর হল। সে ঘুরে হেঁটে ফিরে গেল যেখানে তার কর্মকর্তারা অপেক্ষা করছিল।

আপনি কি ফিরে যাওয়ার আদেশ দিবেন? ভয়ে ভয়ে তার একজন ক্যাপ্টেন জিজ্ঞেস করল।

নাজা তাকে নির্মম ভাবে আক্রমণ করল। আর কেউ যে এমন পরামর্শ দিবে আমি তাকে সম্পূর্ণ নগ্ন করব ও তার পা আমার রথের পিছনে বাধব। আমি তাকে টেনে মিশরে ফিরিয়ে নিয়ে যাব। তারা তাদের চোখ নামাল এবং বালিতে তাদের পা টেনে টেনে চলে গেলে।

নাজা তার মাথা থেকে লাল যুদ্ধের মুটটা খুলল এবং তার বর্শা বাহকের দেওয়া রুমাল দিয়ে তার ন্যাড়া মাথা থেকে ঘাম মুছল। মুকুটটা তার বাহু দিয়ে চেপে ধরে সে তার নতুন আদেশ দিল। সমগ্র আর্মি থেকে পানির থলেগুলো সংগ্রহ কর। এখান থেকে পানি সরবরাহ সরাসরি আমার হাতে। কোন মানুষ বা কোন প্রাণী অনুমতি ছাড়া পানি পান করবে না। কোন ঘুরে যাওয়া নয়, কোন পিছু হটাও নয়। সব যুদ্ধ রথগুলো কলামের সামনে থাকবে। এমনকি পশ্চাৎ দল প্রেনের গুলোও। অন্য যানগুলো ও পদাতিক বাহিনী অবশ্যই সুযোগ নিয়ে এবং তাদের সর্বোচ্চ গতিতে অনুসরণ করবে। আমি অশ্বারোহী দল সামনে নিয়ে যাব এবং ইশমাইলিয়ার কূপ দখল করব….

*

হেজারট কাবাকো থেকে মাথা বাড়িয়ে তার দেহরক্ষীদের ক্যাপ্টেনকে ডেকে জিজ্ঞেস করল, কি সমস্যা? এটা রাজকীয় ও পবিত্র স্থান। তবুও এ বদমাশগুলো আমার সীমানার মধ্যে কি করছে? তার কাবাকো পাশে পার্ক করা তার ব্যক্তিগত মালপত্রের গাড়ি থেকে যে লোকগুলো পানির থলে নিচ্ছিল সে তাদের দিকে নির্দেশ করল। তাদের কত সাহস যে আমার পানি সরিয়ে নিচ্ছে? আমি এখনো গোসল করি নি। তাদের বল ঐ থলেগুলো এখনই জায়গায় ফিরিয়ে দিতে।

এটা ফারাও, আপনার মহান স্বামীর আদেশে, মহারাণী! ক্যাপ্টেন ব্যাখ্যা করল। সকল পানির থলে সামনের অশ্বারোহী সৈন্যদের জন্য দরকার।

এরকম আদেশ আমার জন্য প্রযোজ্য হতে পারে না। মিশরের মহান রাণী হেজারেট আর্তনাদ করল। ঐ পানির থলেগুলো জায়গা মত রাখ।

সৈন্যরা ইতস্তত করল, কিন্তু সার্জেন্ট তার চামড়ার হেলমেটের চূড়া তার তেলোয়ার দিয়ে স্পর্শ করে বলল,

আমাকে ক্ষমা করুন। মহারাণী! আমার আদেশ হল সকল পানি নেওয়া।

তুমি আমাকে অসম্মান করছো? হেজারেট তাকে শাসালো।

দয়া করে ক্ষমা করুন এবং আমার অবস্থাটা বুঝুন, মহারাণী। লোকটি তার স্থানে দাঁড়িয়ে রইল।

আইসিসের সুন্দর নামের কসম, আমি তোমাকে ফাঁসিতে চড়াব ও তোমার দেহ পুড়াব যদি তুমি আমাকে আসম্মান কর।

আমার আদেশ…

তোমার ও তোমার আদেশের উপর প্লেগ পড়ুক। আমি এখন জেনারেল প্রেনের কাছে যাব। যখন আমি ফিরব আমি তোমার জন্য নতুন আদেশ নিয়ে আসবো। তারপর সে তার দেহরক্ষীর দিকে ফিরল। আমার রথ প্রস্তুত কর ও দশ জন লোক দাও।

হেজারেটের তাঁবু থেকে জেনারেল প্রেনের ক্যাম্প দেখা যায়। রথে করে তার দশ মিনিট লাগল সেখানে পৌঁছাতে। কিন্তু সীমানা প্রাচীরের ফটকের রক্ষী বাঁধা দিল, মহারাণী! জেনারেল নে এখানে নেই। সে তাকে বলল।

আমি তা বিশ্বাস করি না। হেজারেট রুষ্ট দৃষ্টিতে তাকাল।ঐ যে পতাকা উড়ছে, এর মানে সে এখানে।

মহারাণী, এক ঘণ্টা আগে তিনি তার সব অশ্বারোহী দল নিয়ে নাজা ফারাও এর আদেশে তার সাথে যোগ দিতে অগ্রণী দলে গিয়েছেন।

তার সাথে আমার দেখা করতেই হবে। খুব জরুরি বিষয়। আমি জানি সে আমাকে না জানিয়ে যাবে না। সরে দাঁড়াও এবং আমি নিজেই দেখে নেব সে এখানে আছে কিনা। সে তার দিকে সরাসরি রথ চালিয়ে দিল এবং দ্রুত প্রহরী লাফ দিয়ে সরে গেল।

সে হলুদ ও সবুজ রঙের ডোরাকাটা তাঁবুর সামনে থামল এবং লাগাম সহিসদের কাছে দিয়ে লাফিয়ে নামল ও তাঁবুর প্রবেশ দ্বারে দিকে দৌড় দিল। তাঁবুটা অরক্ষিত ছিল এবং সে বুঝল তাকে সত্য কথা বলো হয়েছে, প্রেন এখানে নেই। তবুও সে দরজা দিয়ে ঝুঁকে প্রবেশ করল। দুজন বালক মেঝেতে বসে খাবার খাচ্ছিল এবং তারা তার দিকে চোখ তুলে তাকাল।

তোমরা কারা? হেজারেট জানতে চাইল, জেনারেল কোথায়?

কেউ উত্তর দিল এবং তার দিকে নিঃশব্দে তারা তাকিয়ে রইল। হঠাৎ হেজারেটের চোখ সরু হয়ে গেল এবং সে এক কদম তাদের দিকে বাড়ল। তুমি! সে চিৎকার করে উঠল। তোমরা প্রতারক কুকুর। সে তাদের দিকে একটা কাঁপা আঙ্গুলে নির্দেশ করল। রক্ষী প্রহরী। প্রহরী, এখানে এখনই আস।

মিনটাকার যেন জ্ঞান ফিরল। সে মেরিকারার হাত ধরল ও তাকে টেনে তুলল। পিছনের দরজা দিয়ে সবেগে দৌড় দিল দুজন।

প্রহরী! হেজারেট আবার চিৎকার করল। এই দিকে! তার দেহরক্ষীরা তার পিছনের দরজা দিয়ে দৌড় দিল।

তাদের অনুসরণ কর! হেজারেট চিৎকার করল। তাদের পালাতে দিবে না। তারা গুপ্তচর ও দেশদ্রোহী।

তার দেহরক্ষীরা তাদের পিছনে ধাওয়া করল ও ফটকের রক্ষীদের চিৎকার করে বলল, তাদের থামাও। তাদের ধর, তাদের যেতে দিও না। প্রহরীরা তাদের তলোয়ার বের করল ও ফটক আটকাতে দৌড় দিল।

মিনটাকে থামল যখনই সে দেখল যে তারা প্রায় বিভক্ত হতে যাচ্ছে। সে তার চারপাশে বেপরোয়া ভাবে দেখল, তারপর মেরিকারাকে হাতে ধরে টেনে প্রাচীরের কাঁটার বেড়ার দিকে দৌড় দিল এবং ওটা লাফিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু দেহ রক্ষীরা তাদের কাছে চলে এল, তাদের গোড়ালি ধরে দেয়াল থেকে তাদের টেনে নামাল। কাটা তাদের হাত ও পা ছিলে দিল এবং তাদের রক্ত ক্ষরণ হচ্ছিল। কিন্তু তারা পাগলের মত লড়াই করল, লাথি মাল, আচড় দিল ও কামড় দিল। কিন্তু সৈন্যরা তাদের হেজারেটের সামনে নিয়ে এল। সে বিজেতার মতো হাসছিল। তাদের শক্ত করে ধর। আমি নিশ্চিত আমার স্বামী, এই মিশরের একমাত্র শাসক তাদেরকে তাদের অপরাধের জন্য উত্তম শাস্তি দিবে যখন সে ফিরবে। আমি তখন তাদের আর্তনাদ উপভোগ করব। তখন পর্যন্ত তাদের পশুর মতো আমার ভাবুর সামনে খাঁচায় ভরে রাখ, যাতে আমি তাদের উপর চোখ রাখতে পারি।

দেহরক্ষীরা তাদের বেঁধে রথে করে নিয়ে এল। একটা বিশাল শূকরের খাঁচায় তাদের ভরা হল ও নির্দেশিত স্থানে রাখা হল।

দিন ও রাত তোমাদের খাঁচার সামনে রক্ষী নিযুক্ত থাকবে। হেজারেট তাদের সাবধান করল। মেরিকারা কাঁদতে লাগল, কিন্তু মিনটাকা তাকে ফিসফিসিয়ে বলল, না আমার সখী, সাহসী হও। তাকে আমাদের কষ্টে আনন্দ পেতে দিও না।

*

ইশমাইলিয়া দুর্গের ওয়াচ টাওয়ার থেকে প্রহরী চিৎকার করে সতর্ক করল, ফারাও! সন্ধানী দল আসছে। নেফার লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল, সে ও টাইটা দুপুরের খাবার খাচ্ছিল তখন। দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে সে মঞ্চে উঠে গেল এবং চোখের উপর হাত তুলে ছায়া দিয়ে দূরে তাকাল। হলুদ আলোয় সে সন্ধানী দলটাকে সামনে এগিয়ে আসতে দেখল। যখন নদী তীরে ওয়াদির মধ্যে তার এল তখন রক্ষীরা ফটক খুলে দিল এবং তাদের প্রবেশ করতে দিল।

শত্রুরা দ্রুত এগিয়ে আসছে! নেফারকে চিৎকার করে জানাল দলের সার্জেন্ট।

খুব ভালো সার্জেন্ট, নেফার তাকে বলল। তারপর ফটকের উপরে দেয়ালে দাঁড়িয়ে বাদকে আদেশ দিল, সতর্ক সংকেত বাজাও।

সতর্ক সংকেত বাজাতেই সৈন্য সারি ও রথের কলাম যার যার অবস্থানে চলে যেতে শুরু করল।

টাইটা উঁচু মঞ্চে আরোহণ করল এবং নেফার তার দিকে চেয়ে হেসে বলল, তাহলে এমনকি পানির অভাবেও নাজা পিছু হটে নি।

আমরা কখনো ভাবিনি সে তা করবে। নরম সুরে বলল টাইটা।

পূর্ব দিগন্তে কালো হতে শুরু করল যেন অসময়ে রাত নামল। বিশাল বিস্তৃত হয়ে শত্রুরা গঠনরত একটা ঝড়ের মত এগিয়ে আসছে।

এখনো দুপুর হতে কয়েক ঘণ্টা লাগবে। নেফার নির্মম সূর্যটার দিকে তাকাল। নাজার ঘোড়াগুলো তিন দিনে অল্প পান করেছে এবং আমাদের এখানে দ্রুতই পৌঁছাতে তাদের অনেক কষ্ট করতে হবে। সে জানে সে অবশ্যই জিতবে এবং আজ দিনেই কুয়ার কাছে পৌঁছাবে, এছাড়া তার আর কোন পথ নেই।

তুমি কি তার সাথে সাক্ষাৎ করতে আমার সাথে যাবে, বৃদ্ধ পিতা? নেফার জিজ্ঞেস করল।

না! টাইটা তার বাম হাত তুলল। আঙুলে সে রক্তাভ লাল রুবি বসানো সোনার আংটি পড়েছে, যখন এটার উপর সূর্যালোক পড়ল তা ঝলমল করে উঠল। নেফার তা চিনতে পারল, এটা নাজা এই কয়েক বছর আগে তাকে দিয়েছিল নিদর্শন হিসেবে তার নিজের আঙুল থেকে খুলে, যখন সে বিশ্বাস করেছিল ম্যাগোস তার জন্যে তরুণ ফারাওকে খুন করেছে। নেফার বুঝল এটা একটি শক্তিশালী কবজ হিসেবে কাজ করবে কেননা এতে নাজার স্পর্শ রয়েছে। আমি এখান থেকে যুদ্ধ দেখব এবং আমি আমার নিজের পদ্ধতিতে তোমাকে সাহায্য করব।

নেফার হাসল। তোমার অস্ত্রগুলো অধিক ধারালো ও অধিক বিশ্বস্ত ভাবে উড়ে অন্তত আমি যতো অস্ত্র আমার হাতে নিয়েছি তার থেকে। হুরাস তোমাকে ভালোবাসুক ও রক্ষা করুক, বৃদ্ধ পিতা?

ধনুকধারী ও গুলতিধারী ব্যাটেলিয়ান নিজেদের অবস্থান নিল। পদাতিক সৈন্যরা দ্রুত এগোলো লক্ষ্য বরাবর। তারা সবাই জানে তাদের কি করতে হবে, বহুবার তারার এর অনুশীলন করেছে। সবাই তারা আড়াল নিলে মাঠটাকে নির্জন মরু ছাড়া আর কিছুই মনে হল না।

যখন নাজার অভিগমনের ধুলোর মেঘ এক ক্রোশের চেয়ে কম দূরে ছিল, নেফার টাইটাকে আলিঙ্গন করল এবং মই বেয়ে নেমে গেল। সে দৃঢ় পদক্ষেপে ফটক দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে যখন রথের কাছে এল তখন সমাবেশ থেকে একটা গর্জন এলো। সে তার সৈন্যবাহিনীর কাছে গেল এবং তার ক্যাপ্টেন ও সর্দারদের তাদের মধ্যে দেখল, সাহস রেখো, হিল্টো! আমার জন্য আরেক বার, শাবাকো! আজ রাতে আমরা বিজয়ের পেয়ালা এক সাথে পান করতে চাই, সোক্কো!

ম্যারনের হাতে ডোভ ও ক্রুস ছিল যখন সে লাফিয়ে পাদানিতে উঠল। নেফার তার কাছ থেকে লাগামটা নিল এবং ভোভ তার স্পর্শ চিনতে পারল ও তার বিশাল উজ্জ্বল চোখ দিয়ে তার দিকে ফিরে তাকাল। এক দিকে তার ঘাড় বাঁকা করল এবং সামনের একটা খুর দিয়ে মাটিতে চাপ দিল বারবার।

নেফার তার ডান হাত উপরে তুলে আদেশ দিল, এগিয়ে চল! সামনে।

যুদ্ধের ধ্বনি বাজল এবং সে সৈন্যদের সারির পর সারি নিয়ে বাড়ল সামনে। তারা চমৎকার ভাবে এগোল নিচু দেয়ালের মধ্য দিয়ে যেগুলোর পিছনে কেউ একটা ধনুকধারীকেও দেখল না। বাইরে খোলা সমতলে সে বেরিয়ে গেল।

নেফার আরেক হাতের সংকেত দিলে গঠন খুলে গেল। পাশাপাশি প্রথম সারি সামনে এগুলো বিশাল ধুলার মেঘটাকে মোকাবেলা করতে যা তাদের দিকে গড়িয়ে গড়িয়ে আসছে। কয়েক সপ্তায় আগে সে যে চিহ্নগুলো দিয়েছিল তার সামনে এসে নেফার তার প্রধান রথ থামল এবং ঘোড়াগুলোকে বিশ্রাম দিল, যখন সে শত্রুদের আগমন পর্যবেক্ষণ করতে লাগল।

এবার যেখানে পিঙ্গল ধুলার মেঘ ধূসর মরুকে ক্ষীণভাবে ছুঁয়ে গেল সেখানে সে কালো দাগের একটা লাইন দেখল এবং অসংখ্য ধাতুর ঝলকও দেখা গেল উষ্ণ বাতাসে। তারা এগিয়ে এল মরীচিকা ভেঙে, নাজার প্রথম সৈন্য সারি দুমড়ে মুচড়ে এগিয়ে এল এবং তাদের আকৃতি পরিবর্তিত হল।

তারপর তারা শক্ত হল ও দৃঢ় আকার ধারণ করল এবং সে ঘোড়াগুলো ও বর্ম পরিহিত লোকগুলোকে ঝুকতে দেখল তাদের যানের উপর।

ম্যারন বিড়বিড় করল, প্রিয় হুরাস মনে হয় সে তার সব রথ নিয়ে আসছে এবং একটাও মজুদ রাখেনি।

তারা নিশ্চয়ই পানির জন্যে পাগল। তার বেঁচে থাকার একমাত্র সুযোগ হল সম্মুখ আক্রমণে আমাদের সৈন্যদের ভেঙ্গে ফেলা এবং কূপগুলোর দখল নেয়া।

শত্রু সামনে এগিয়ে এল এবং এখন তারা তাদের রঙ ও পতাকা দিয়ে রেজিমেন্টদের চিহ্নিত করতে পারল এবং ক্যাপ্টেনকে চিনতে পারল যে তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে।

দুই হাজার কদম দূরে শত্রুরা থেমে গেল। চারপাশে বিশাল নিরবতা নেমে এল, শুধু বাতাসের আওয়াজ ছাড়া। পড়ন্ত পর্দার মত ধুলো যখন পড়ে গেল দুই সৈন্যবাহিনীর প্রতিটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেল তখন।

শক্রদের কেন্দ্রস্থল থেকে একটা যান সামনে এগিয়ে এল। যদিও ধুলায় ঢাকা, তবু গাড়ির কারুকার্য সূর্যের আলোতে ঝিকমিক করে উঠল এবং চালকের মাথার উপর উড়ছে রাজকীয় বিশেষ পতাকাটা। নাজা তার একশ কদম এগিয়ে থামল ফলে নেফার তার নির্মম সুন্দর মুখটা চিনতে পারল নীল যুদ্ধ মুকুটের নিচে।

জয়, নেফার সেটি, কুকুরের ছানা। যার পিতাকে আমি আমার নিজ হাতে হত্যা করে ছিলাম। নাজা তার সুমধুর কণ্ঠে বলল।

নেফার তার সাহসের পরিমাণ দেখে রাগে শক্ত হয়ে গেল। যে সবার সম্মুখে তা স্বীকার করছে।

আমার মাথায় আমি সেই মুকুট পড়ে আছি যা আমি ফারাও ট্যামোসের থেকে নিয়ে ছিলাম যখন সে মারা যাচ্ছিল, আমার হাতের মধ্যে, সে মহান নীল মুকুটটা তুলে ধরল, আমি তার সেই জিনিসটাও এনেছি যে তার মুঠিতে ধরে ছিল শেষ সময় পর্যন্ত। তুমি কি তা চাও কুকুর ছানা? নেফার অনুভব করল রাগে তার হাত কাঁপতে শুরু করেছে এবং রাগ লাল মেঘের মত তার দৃষ্টি অস্পষ্ট করে দিল।

স্থির হউন! ম্যারন তার পাশ থেকে ফিসফিস করে বলল। তার ফাঁদে নিজেকে প্রলুব্ধ হতে দিবেন না। খুব কষ্টে নেফার তার রাগের পর্দাটা এক পাশে সরিয়ে রাখল এবং তার চেহারা অভিব্যক্তিহীন রাখল তবে তার কণ্ঠ পাথরের উপর ধাতু যে শব্দ করে ওরকম করে বাজল। তৈরি হও! এবং সে তার তলোয়ার উপরে তুলল।

নাজা হাসল, শব্দহীন ভাবে। রথ চালিয়ে পূর্বের স্থানে তার সৈন্য দলের মাঝে ফিরে গেল, এগিয়ে চল! সম্মুখে। তারপর নীল তলোয়াটা উঠাল নাজা। তার সম্মুখ দল নেফারের লাইনের দিকে এগিয়ে এল। দ্রুত ছোট! আক্রমণ কর?

নেফার তার জায়গাতেই দাঁড়িয়ে রইল এবং তাদের আসতে দিল, যদিও তার ইচ্ছে হচ্ছিল এগিয়ে গিয়ে নাজাকে মোকাবেলা করতে ও তাকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে। কিন্তু সে খুব কষ্টে নিজেকে শান্ত রাখল এবং অপেক্ষা করে গেল। তারপর সে তার তলোয়ার তুলে তা তিনবার নাড়াল, অর্থপূর্ণ সংকেতে। তার সেনাবাহিনী সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দিল, একটা পাখির ঝাঁকের মত তারা দিক পরিবর্তন করল। তারা এমনভাবে ঘুরল যেন তাদের সবার মন এক এবং ছুটে চলল সমতল দিয়ে যে পথে তারা এসেছে।

নাজার সম্মুখের সৈন্যদল আক্রমণের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করে রেখেছিল, কিন্তু তারা কোন বাধার সম্মুখীন হল না, বরং অদৃশ্য বাঁধায় একটা হোঁচট খাওয়া লোকের মতো তারা গতি হারাল। যতোক্ষণে তারা সামনে নিল, নেফার ততোক্ষণে আরো একশ কদম এগিয়ে গিয়েছে। এবার তার সেনাবাহিনী মসৃণভাবে তাদের গঠন পরিবর্তন করল এবং একসাথে টেনে প্রসারিত অবস্থা থেকে চারটা কলামে সজ্জিত হল।

নাজা তার পিছনে ছুটে এল। কিন্তু তিনশ কদমের মধ্যে তার সেনাদল তাদের উভয় পাশে উঁচু পাথুরে দেয়াল দেখতে পেল যা বুক সমান। তারা এখন থামতে পারবে না, তাই তারা তাদের বাম ও ডান পার্শ্বকে তাদের কেন্দ্রস্থলের দিকে মোড় দেয়ালো। চাকায় চাকায় টক্কর লাগায় এবং ঘোড়ার দলগুলো বাধ্য হল একে অন্যকে স্থান দিতে, আক্রমণ দুলে উঠল এবং ধীর হল।

সেই মারাত্মক মুহূর্তে মাঠ পেরিয়ে যুদ্ধ ঘণ্টা বাজল এবং সংকেত পেতেই ধনুকরী ও গুলধারী নিচু দেয়ালের পিছন থেকে উভয় পাশে উঠে দাঁড়াল। তীর লাগানোই ছিল এখন শুধু তা টেনে ছেড়ে দিল তারা। এক মুহূর্ত তারা তাদের লক্ষ্য স্থির করল সতর্কভাবে। গুলতিধারীরা তাদের অস্ত্র অনেক উঁচুতে উঠিয়ে ঘোরালো, দীর্ঘ রশির প্রান্তে চামড়ার থলেতে আগুনে পুড়িয়ে শক্ত করা কাদার বল ভরা তাতে। বাতাসে তা গুঞ্জন তুলল যখন তারা তা ভয়ংকর ঘুরাতে লাগল।

নাজার অগ্রগামী সৈন্যদল ফানেলের অনেক ভেতরে ঢুকে গেছে যখন আবার ঘণ্টা বাজল এবং ধনুকধারীরা নিক্ষেপ করল। তাদের বলা হয়েছে ঘোড়াগুলোর দিকে লক্ষ্য করতে এবং শত্রুদের ক্যাপ্টেনদের দিকে তীরগুলো নিরবে উড়ে গেল। তীর নিক্ষেপের ফিসফিস শব্দ বাজছিল এবং কাদার তীরে এক মুঠো নুড়ি পতনের মত তীরের মাথাগুলো জীবম্ভ মাংসে আঘাত করল। নাজার আক্রমণের প্রথম দল শেষ। যখন ঘোড়াগুলো পড়ে গেল রথগুলো তাদের শবদেহের উপর উল্টে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অন্য দিকে ছুটল, উল্টা পাল্টা হয়ে গেল এবং গড়িয়ে পড়ল।

তারপর গুলতিধারী তাদের অস্ত্র নিখুঁতভাবে ছাড়ল। কঠিন পোড়ানো মাটির বলগুলো মানুষ ঘোড়ার খুলি ফাটিয়ে দিল, পা ভেঙ্গে অথবা পাজর গুঁড়িয়ে দিল। তারপর তারা লক্ষ্য স্থির করল পরবর্তী আক্রমণের।

সে যানগুলো তাদের পিছনে অনুসরণ করছিল তা সামনে আনা সম্ভব ছিল না এবং সামনের ভগ্নাংশে বাধা পেয়ে ওগুলো পড়ে গেল। লোকজন ককপিট থেকে সজোরে নিক্ষিপ্ত হল এবং পিছনের ঘোড়ার মারাত্মক খুরের নিচে পিষ্ট হল।

তার সেনাদলের সামনে নেফার হাতের ইশারা দিল যে জন্যে তার লোকেরা অপেক্ষা করছে এবং একঝাক পদাতিক বাহিনী লুকানো স্থান থেকে লাফিয়ে থামল এবং কন্টক ঝোঁপগুলো টেনে সরিয়ে দিল। খোলা মুখগুলোকে ইচ্ছে করেই লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। নেফারের রথ তাদের মধ্য দিয়ে গতি পরিবর্তন করল এবং বেড়িয়ে এল দেয়ালের ওপাশে খোলা মাঠে। এবার সুগঠিত নয়, তারা খেলার মাঠে কৌশল দেখানোর জন্য মুক্ত। তারা উল্টো দিকে সবেগে ছুটল। নাজার ফাঁদে আটক সৈন্য পিছন দিয়ে বৃত্ত করছে এবং তাদের উপর সৈন্য দল ঝাঁপিয়ে পড়ল।

এখন সেনাবাহিনীদ্বয় যুদ্ধে লিপ্ত হল লড়াইরত ষাঁড়ের মতন শিং উঁচিয়ে। নাজার সব রথ ফাঁদে আটকা পড়েনি। এবার রয়ে যাওয়া রথগুলো নেফারকে আক্রমণের জন্য ছুটল এবং একটা ঐতিহ্যগত রথের যুদ্ধ শুরু হল। রথগুলো বৃত্তাকারে ঘোরে আক্রমণ করল এবং পিছু হটল তারপর আবার আক্রমণ করল।

শুরুর দিকে বিশাল সংখ্যক সৈন্য হারানো পরও নেফার এখনও নাজার তুলনায় অনেক পিছিয়ে। যখন সুযোগে সামনে পিছনে দুলল, নেফার বাধ্য হল তার মজুদ শক্তি ব্যবহার করতে যাদের সে দুর্গের পিছনে লুকিয়ে রেখেছে। এখন সে তাদের শেষ দলটাকে ইশারা করল।

ধুলা, কোলাহল ও শোর-গোলের মধ্যে নেফার পাগলের মত নাজার রথ ও রাজকীয় লাল পতাকা খুঁজল। সে জানে যদি সে নাজাকে ব্যক্তিগত যুদ্ধে বাধ্য করতে পারে এবং তাকে হত্যা করতে পারে তবে সে এখনো দিনটা চালিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু তার কোন চিহ্ন ছিল না সেখানে। সম্ভবত দেয়ালের মাঝে গিরি সংকটে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। অথবা সে আহত অথবা মৃত অবস্থায় কোথাও যুদ্ধের ময়দানে পড়ে আছে।

কাছে নেফার দেখল হিল্টোর রথ দুজন সৈন্য দ্বারা পরিবেশিত এবং বৃদ্ধ যোদ্ধা আহত হলেও মাটিতে নিক্ষিপ্ত। হিল্টোর দলটা তাকে পড়ে যেতে দেখল এবং দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ল। নেফার অনুভব করল হতাশার একটা ঠাণ্ডা হাত তার হৃদয় পিষে দিচ্ছে। তারা যুদ্ধটা হারতে যাচ্ছে।

তখন সে দেখল লাল রথের একটা লাইন বৃত্তাকারে বেরিয়ে এসে তার ধনুকধারী ও গুলতিধারীদের পিছন দিয়ে ঘিরে ফেলল এবং তাদের তীর ও বল্লম দিয়ে হত্যা করছে। পদাতিক বাহিনী ছড়িয়ে পড়ল ও পালিয়ে গেল, একটা উশৃঙ্খলতা এবং হতাশা তাদের মধ্যে বিরাজ করছে যা ছিল ছোঁয়াচে। বিষণ্ণভাবে নেফারের মনে পড়ল যে টাইটা এটা বলে, ছোট পাখির প্রভাব এমনই–যখন একজন পালিয়ে যায় তখন তারা সবাই পালায়।

নেফার বুঝল তার সেনাবাহিনী শীঘ্রই ধরাশায়ী হবে এবং সে তাদের শক্তি, সাহস ও উৎসাহ দেয়ার জন্য আরেকটি লাল রথকে ধাওয়া করল, কিন্তু ততক্ষণে ডোভ ও ক্রস প্রায় জীর্ণশীর্ণ হয়ে গেছে এবং শত্রু তাদের থেকে দূরে চলে গেল।

তখন তার পাশ থেকে ম্যারন চিৎকার করে বলল, দেখুন, ফারাও! এবং মরু ভূমির পূর্ব দিকে নির্দেশ করল সে। হাতের উল্টো দিক দিয়ে নেফার মুখ থেকে তার ঘাম ও শক্রর রক্ত মুছল, এবং ঐ দিক তাকিয়ে রইল।

সব সন্দেহ ছাপিয়ে সে জানত সব শেষ, এবং তারা যুদ্ধটা হেরে গিয়েছে। বিপুল সংখ্যক রথের একটা শক্ত দল তাদের দিকে ধেয়ে আসছে। হঠাৎ কোথা থেকে এরা এল নেফার বুঝতে পারল না। সে ভেবেছিল নাজা তার সব যান পাঠিয়ে দিয়েছে। এখন আর কোন বিষয় না কে যুদ্ধ হেরে গিয়েছে।

কত সংখ্যক নেফার অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।

দুইশত! ম্যারন অনুমান করল, তার বেশিও হতে পারে। তার কণ্ঠে হতাশা।

সব শেষ, ফারাও! আমরা যুদ্ধ করতে করতে মরব।

একটা শেষ আক্রমণ। নেফার তার সবচেয়ে কাছের রথগুলোর উদ্দেশ্যে চিৎকার করল। নীল বাহিনী! সম্মানের সাথে মৃত্যু।

তারা কর্কশভাবে চিৎকার দিল জবাবে এবং রথ চালিয়ে তার উভয় পাশে এল। এমন কি ডোভ ও কুসও মনে হল নতুন শক্তি পেল এবং নীল রথের একটা ক্ষুদ্র লাইন তাদের নতুন শত্রুদের দিকে ছুটল, তাদের মুখোমুখি হয়ে যুদ্ধ করতে। যখন তারা কাছাকাছি এল তারা দেখল যে প্রধান রথে একজন জেনারেল, যার রথে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পতাকা উড়ছে, হুরাসের কসম, আমি তাকে চিনি। ম্যারন চিৎকার করল। এটা প্রেন, বৃদ্ধ পায়ু কামুক। তারা এখন এতো কাছাকাছি যে নেফার বৃদ্ধ অবয়বটা চিনতে পারল। এক চোখে কালো কাপড়ে ঢাকা সে তাকে রাজা অ্যাপেপির কর্মকর্তাদের দলে দেখেছে যখন তারা হাথোরের মন্দিরে শান্তি চুক্তি করছিল।

তার আগমন বড় অসময়ে। নেফার বিষণ্ণভাবে বলল। কিন্তু সম্ভবত আমরা তরুণ বালকদের পরের প্রজন্মকে তার লোলুপ আকর্ষণ থেকে বাঁচাতে পারব।

সে ডোভ ও ক্রুসকে সোজাসুজি প্রেনের দিকে চালাল, গতির দিক পরিবর্তন করতে ও তার বল্লম নিক্ষেপের জন্য ফাঁকা স্থান পাওয়া চেষ্টা করছে সে। কিন্তু যখন তারা কাছাকাছি এল, ম্যারন চিৎকার করল, হতভম্ব! সে নীল পতাকা উড়াচ্ছে! প্রেনের পতাকা পিছনে উড়ছিল, ঠিক তাদের বরাবর, সেই কারণে নেফার লক্ষ্য করে নি। কিন্তু ম্যারন ঠিকই দেখেছে। প্রেন ট্যামোস হাউজের নীল পতাকা উড়াচ্ছে এবং সেই সাথে তার সব রথও। যখন প্রেন ধীর হল, নেফারকে স্যাটুল করে চিৎকার করল, জয় ফারাও! আপনি দশ হাজার বছর বেঁচে থাকুন, নেফার সেটি।

অবাক বিস্ময়ে নেফার বল্লমটা নামিয়ে নিল যা সে প্রায় ছুঁড়তে যাচ্ছিল এবং ঘোড়াগুলোকে থামাল।

আপনার আদেশ কি, ফারাও! প্রেন চিৎকার দিল।

এটা কেমন অদ্ভুত কাজ জেনারেল প্রেন, কেন আপনি আমাকে আদেশ করতে বলছেন? নেফার উল্টো প্রশ্ন করল।

রাজকুমারী মিনটাকা আমাকে আপনার বার্তা দিয়েছে এবং আমি আমাকে আপনার দলভুক্ত করতে এসেছি, সেই সাথে রাজা অ্যাপোপি ও ফারাও ট্যামোসের হত্যার প্রতিশোধ নিতে সাহায্য করতে এসেছি।

মিনটাকা? নেফার দ্বিধান্বিত। কারণ সে নিশ্চিত ছিল সে অ্যাভারিসের মন্দিরে। নিজেকে সামলে নিয়ে সে বলল, ভালো সাক্ষাৎ জেনারেল প্রেন, ঠিক সময়েই এসেছেন। আপনার রথ আমার পাশে আনুন এবং আমরা এই ভূমির শেষ থেকে শেষ পর্যন্ত শত্রু উড়িয়ে দেব।

তারা পাশাপাশি আক্রমণ চালাল এবং নেফার দেখল ছত্রভঙ্গ ও ছড়িয়ে পরা নীল পতাকার সেনারা ফিরে আসছে ও সে তাদের যুদ্ধ চিৎকার শুনল, হুরাস এবং নেফার সেটি! এবং যুদ্ধের রেম্প ঘণ্টা বেজে উঠল এবং তারা নতুন শপথ নিল। নাজা কাইফানের লাল বাহিনীর অবস্থা খুব ভালো ছিল না এবং তারা প্রেন বাহিনীর সামনে দাঁড়াতেই পারল না। তারা কিছুক্ষণ লড়াই চালাল কিন্তু তারা ছিল তৃষ্ণার্ত। অনেকে রথ থেকে হামাগুড়ি দিয়ে নেমে ধুলায় হাঁটু গেড়ে বসে আত্মসমর্পণ করল, জীবন ভিক্ষা চাইল ও নেফার সেটির প্রশংসায় চিৎকার করতে লাগল। তাদের আচরণ অন্যদের মধ্যে ছোঁয়াচে হয়ে যুদ্ধের ময়দানে ছড়িয়ে পড়ল, কারণ লাল রথীরাও তাদের অস্ত্র ফেলে দিল ও হাঁটুগেড়ে বসে পড়ল।

নাজার খোঁজে অর্ধেক পথ চষে ফেলল নেফার সেটি। তার হৃদয়ে জয় পুরোপুরি হবে না যততক্ষণ না সে তার পিতার হত্যার বদলা নেবে। সে নিচু পাথুরে দেয়ালের কাছে ফিরে এল যেখানে শেষবার সে নাজাকে দেখেছিল। সে যুদ্ধের কোলাহল ও হৈ চৈ এর দিকে ছুটে গেল। চারদিকে ভাঙ্গা ও উল্টানো যান, আহত ও মৃত মানুষ, ঘোড়াগুলোর ছড়িয়ে থাকা মরদেহ, যদিও অধিকাংশ শত্রুদের হত্যা করা হয়েছে অথবা তারা আত্মসমর্পণ করেছে তবুও কয়েক জায়গায় বিচ্ছিন্ন লড়াই চলছিল। নেফারের লোকেরা তাদের হত্যা করছে নির্দয়ভাবে এমনকি যদিও তারা আত্মসমর্পণ করতে চেষ্টা করল। নেফার তাদের থামানো চেষ্টা করল কিন্তু তার লোকেরা যুদ্ধের তেজে আছে এবং সে তাদের রক্ষা করতে পারার আগেই অনেককে হত্যা করল তারা।

নিচু পাথরের দেয়ালটার কাছে পৌঁছে রথটা থামাল সে। পাদানিতে দাঁড়িয়ে দেয়ালের উপর অন্য পাশের সরু পথটা দেখতে পারল যেখানে সে নাজার সেনাবাহিনীকে ফাঁদে ফেলেছি, চারদিকে গুঁড়িয়ে যাওয়া ভাঙ্গা রথ ছড়িয়ে আছে। কয়েকটা ঘোড়া দাঁড়ানো চেষ্টা করছিল, কিন্তু পারল না। প্রতিটি রথ ঘিরে ছড়িয়ে আছে মানুষের মরা দেহ। নেফার মৃতদের মধ্যে নাজার দেহ খুঁজল। কিন্তু সব কিছু এলোমেলো এবং অনেকে ধ্বংসাবশেষের নিচে পড়ে রয়েছে। তখন সে রাজকীয় বৈশিষ্ট্য সম্বলিত পতাকাটা ধুলায় পড়ে থাকতে দেখল এবং মাটিতে জমা রক্ত।

আমাকে অবশ্যই খুঁজে পেতে হবে। নেফার ম্যারনকে বলল, আমাকে জানতে হবে যে সে মৃত। সে রথ থেকে লাফিয়ে নামল।

আমি আপনাকে খুঁজতে সাহায্য করব। ম্যারন ঘোড়ার মাথা নিয়ে দেয়ালের সাথে বাধল। নেফার নিচু দেয়ালের ওপাশে গেল এবং হামাগুড়ি দিয়ে সোনার রথের কাছটায় পৌঁছল। এটা এক পাশে পড়ে আছে, কিন্তু ককপিট খালি, একটা ঘোড়া এখনো জীবিত তবে সামনের দুই পা ভাঙ্গা। হঠাৎ ম্যারন চিৎকার দিল এবং ধ্বংসাবশেষ থেকে কিছু তুলে নেয়ার জন্য ঝুঁকল। সে তা উপরে উচিয়ে ধরল এবং নেফার দেখল সে নাজার নীল যুদ্ধের মুকুটটা পেয়েছে।

শূকরের দেহটা কাছেই হবে, নেফার তাকে ডেকে বলল। সে ওটা ছেড়ে যাবে না। এটা তার কাছে অনেক মূল্যবান।

রথের নিচে দেখুন, ম্যারন তাকে বলল, সে হয়তো ওটার নিচে আটকা পড়ে আছে। আমি আপনাকে ওটা তুলতে সাহায্য করছি। সে নেফারের দিকে ভাঙা জঞ্জালের উপর দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে এগোল এবং ঐ মুহূর্তে নেফার তার চোখের কোনা দিয়ে একটা নড়াচড়া দেখল। এমন সময় চিৎকার করে তাকে সতর্ক করল ম্যারন। পিছনে দেখুন! আপনার পিছনে!

নেফার মাথা নিচু করে ঘুরে গেল। নাজা যেখানে ড্যাশবোর্ডের পিছনে লুকিয়ে ছিল সেখান থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে। তার ন্যাড়া মাথা মলিন ও চকচকে অস্ট্রিচের ডিমের মতন এবং তার চোখ হিংস্র। সে এখনো নীল তলোয়ারটা ধরে আছে এবং নেফারের মাথায় দুই হাতে ধরে তা দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করল। কিন্তু ম্যারনের সতর্ক বাণী তাকে রক্ষা করল এবং নেফার শা শা করা ফলার নিচে মাথা নিচু করল। তার নিজের তলোয়ার তার কোমরে ঝুলানো খাপের মধ্যে কিন্তু তার হাতে একটা বল্লম ছিল যা দিয়ে সে একটু আগে নাজার একটা ঘোড়াকে হত্যা করেছে। সহজাতভাবে সে নাজার গলার দিকে ওটা তাক করল কিন্তু নাজা তার ছদ্মনাম একটা কোবরার মতই ক্ষীপ্র এবং মুচড়ে সরে গেল এক পাশে। এটা নেফারকে একটু সময় দিল তার নিজের তলোয়ারটা বের করতে, কিন্তু নাজা পিছিয়ে গেল এবং তার আশেপাশে দেখল। সে দেখল ম্যারন খোলা তলোয়ার নিয়ে নেফারকে সাহায্য করতে আসছে এবং তাদের খালি রথটা দেয়ালের সাথে বাঁধা। সে আরেক আঘাত দিয়ে নেফারকে পিছিয়ে দিল, তারপর ঘুরে দিল দৌড়। নেফার বল্লম ছুঁড়ে মারল কিন্তু তা লক্ষ্য বস্তুর অনেক দূর দিয়ে চলে গেল। নাজা দেয়ালের কাছটায় পৌঁছে গেল। সে লাফ দিয়ে পাদানিতে উঠে নীল তলোয়ার দিয়ে রাশি কেটে মুক্ত করে দিল। সে লাগাম ধরল না কিন্তু পট থেকে চাবুক নিল এবং ক্রুস ও ডোভকে চাবকালো। বিস্মিত হয়ে তারা লাফ দিয়ে সামনে বাড়ল এবং দৌড়ে চলল পূর্ণ গতিতে।

তাদের পিছনে নেফার লাফ দিয়ে দেয়ালের চূড়ায় উঠে দেখল নাজা সমতল ভূমি বরাবর দ্রুত পালিয়ে যাচ্ছে। বড় দম নিয়ে সে একটা শিষ বাজাল, তীক্ষ্ম আওয়াজ যা ডোভ ও ক্রুস খুব ভালো করে চেনে। সে দেখল তাদের কান খাড়া হল এবং তার দিকে তারা বেঁকে গেল। তারপর ক্রুস গতি দিক পরিবর্তন করল এবং তীক্ষ্ণ বাঁক নিল এবং ডোভও তার সাথে ঘুরল মসৃণ গতিতে। রথটি ঘুর্ণিনের ফলে সাজোরে নিক্ষিপ্ত হল এবং নাজা নিজের পতন রক্ষা করতে ড্যাশবোর্ড আকড়ে ধরতে বাধ্য হল। ঘোড়াগুলো যেখানে দেয়ালের উপর নেফার দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে ছুটে আসছে। নাজার তার ভারসাম্য ফিরে পেল এবং নীল তলোয়ারটা তুলল নিজেকে রক্ষায়। নেফার জানে তার ব্রোঞ্জের ফলা ঐ ভয়ংকর ফলাটার কাছে কিছুই না।

ঘোড়া দুটো দ্রুত তার নিচ দিয়ে গেল সে হালকা ভাবে ক্রুসের পিঠে লাফিয়ে উঠল এবং হাঁটু দিয়ে গুতো দিয়ে পূর্ণ গতিতে সমতলে নিয়ে গেল। তারপর পিছনে তাকিয়ে দেখল নাজা ককপিটে উঠে আসছে তাকে ধরতে।

নেফার তখন ক্রুসের পিঠে নিচু হয়ে তার নিজের তলোয়ার দিলে জোড়-দন্ডের রশিটা কেটে দিল। রথটা মুক্ত হয়ে একপাশে মোড় নিল তৎক্ষণাৎ। নাজার ওজনে চালনা দন্ডটি মাটির গভীর ঢুকে গেল, হঠাৎ রথটা থামতে বাধ্য হল এবং নাজা ওটার উপর থেকে ছিটকে পড়ল। মাটির সাথে তার কাঁধের প্রচন্ড সংঘর্ষ হল এবং এমনকি অক্ষ দন্ড ও কাঠ ভাঙ্গার আওয়াজ ছাপিয়ে নেফার তার হাড় ভাঙ্গার শব্দ পেল।

নেফার ক্রুসকে ঘুরিয়ে নাজাকে আক্রমণ করতে ছুটল। নাজা দুলতে দুলতে যন্ত্রণায় কাতরে উঠে দাঁড়াল এবং তার বুকের উপর দিকে তার ভাঙ্গা ডান কাঁধটা ধরে ছিল। পতনের ফলে তার হাত থেকে নীল তলোয়ার ছুটে গিয়েছে এবং ওটা তার কাছ থেকে দশ কদম দূরে গিয়ে পড়ে আছে।

নাজা ঢুলতে ঢুলতে অস্ত্রটার দিকে চলল, কিন্তু সে দেখল ক্রুস সরাসরি তার দিকে আসছে এবং ভয়ে সে ঠাণ্ডা ছাইয়ের বর্ণ ধারণ করল এবং ঘুরে দৌড়াতে শুরু করল।

নেফার ক্রুসের পিঠে ঝুঁকে বালি থেকে তলোয়ারটা নিল এবং নাজাকে ধাওয়া করতে ক্রুসকে ঘোরাল। নাজা তার পিছনে ঘোড়ার খুরের আওয়াজ বৃদ্ধি পেতে শুনল এবং পিছনে তাকাল। কাজল তার গাল বেয়ে নেমে গিয়েছে কালো অশ্রুর মতো এবং ভয় তাকে বিকৃত করে ফেলল। সে তখন বুঝল আজ তার আর নিস্তার নেই। সে তার হাঁটুগেড়ে বসল এবং আত্মসমর্পণ করতে দুই হাত উপরে তুলে।

পশ্চাৎ অংশে চাপড় দিয়ে ও একটা তীক্ষ্ম শীষ বাজিয়ে নেফার হাঁটু গেড়ে বসা লোকটার কাছে ক্রুসকে থামাল। লাফিয়ে নামল ও নাজার সামনে এসে দাঁড়াল।

দয়া করুন! ফুঁপিয়ে উঠল নাজা,

আমি আপনার কাছে দ্বৈত মুকুট ও সকল রাজ্য সমর্পণ করছি। সে করুণভাবে নেফারের পায়ে লুটিয়ে পড়ল।

আমি ইতোমধ্যেই তা পেয়েছি। আমার শুধু একটা জিনিসের অভাব। প্রতিশোধ!

দয়া করুন, নেফার সেটি! দেবীর দোহাই ও আপনার বোনের দোহাই। দেবী হেজারেটের এবং তার শিশুর দোহাই যা সে তার গর্ভে ধারণ করছে। হঠাৎ সে তার ডান হাতে একটা ছুরি তুলে নিয়ে নেফারের কুচকিতে আঘাত করতে উঠাল। নেফারের প্রায় লেগেই গিয়েছিল তা। কিন্তু একদম ঠিক সময়ে সে মুচড়ে সরে গেল এবং ছুরির ফলাটার ডগায় তার স্কার্ট কেটে গেল। তার হাতের নীল তলোয়ারের ফলার এক ঝটকার তার হাত থেকে অস্ত্রটা ফেলে দিল নেফার।

আমি তোমার স্থিরতার প্রশংসা করি। শেষ পর্যন্ত তুমি তোমার আসল রূপ দেখিয়েই দিলে। নেফার নির্মমভাবে হাসল। তুমি আমার পিতা ফারাও ট্যামোসকে যে রকম দয়া দেখিয়েছিলে তেমনি দয়া আমি তোমার জন্য মঞ্জুর করলাম। সে নীল তলোয়ারে ডগা নাজার বুকের কেন্দ্রস্থল দিয়ে চালিয়ে দিল এবং তা তার পাজরের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে গেল। যন্ত্রণায় নাজার চেহারা ছেয়ে গেল।

তুমি এই পবিত্র ফলাটা নোংরা করেছিলে। এখন আমি তা তোমার রক্তে ধুয়ে নিলাম। নেফার বলল, হেচকা টান দিয়ে মুক্ত করে, তারপর ওটা ঢুকিয়ে দিল আবার।

নাজা ধুলায় লুটিয়ে পড়ল এবং আরেক বার দম নিল, কিন্তু তার ফুসফুস থেকে বাতাস বুদবুদ হয়ে তার পিঠের ক্ষত দিয়ে বের হলো এবং একটা কাঁপুনি দিয়ে মরে গেল।

নেফার দেহটার পায়ে রশি বেঁধে তা ক্রুসের হার্নেসের সাথে বাঁধল এবং টেনে নিয়ে গেল মাঠের উপর দিয়ে। জয়ধ্বনি তাকে অনুসরণ করল পিছনে যখন সে ঘোড়া চালিয়ে গেল দুর্গের ফটকের দিকে। সে রশিটা কেটে দিল এবং নাজার দেহ ধুলায় তখন মাখামাখি।

দখলদারের দেহটাকে কেটে টুকরো টুকরো করে শহরের সবখানে ঝুলিয়ে দাও। মিশরের প্রত্যেক নাগরিককে প্রতারণা ও রাজ হত্যার ফল অবলোকন করতে দাও।

তারপর সে ওয়াচ টাওয়ারে উপর দাঁড়ানো প্রতিমূর্তিটার দিকে তাকাল এবং রক্তমাখা তলোয়ারটা তুলে তাকে সম্মান জানাল। টাইটা তার ডান হাত তুলে তার স্বীকৃতি জানাল।

সারাদিন টাওয়ারে ছিল সে। ম্যাগাস যুদ্ধে কি ভূমিকা রাখল? নিজেকে জিজ্ঞেস করল নেফার। আমরা কি তার প্রভাব ছাড়া জিতেছি? কোন উত্তর নেই, এবং সে চিন্তাটা সরিয়ে দিল। সে মই দিয়ে টাওয়ারের শীর্ষে উঠে টাইটার পাশে এসে দাঁড়াল। তারপর সেখান থেকে সে তার লোকদের উদ্দেশ্যে কথা বলল, সে তাদেরকে তাদের দায়িত্ববোধ ও সাহসের জন্য ধন্যবাদ দিল। সে তাদের পুরস্কার দেওয়ার ওয়াদা করল–লুটের মালের অংশ, এবং উদ্বেলিত সোনার চেইন ও পদবির সম্মানসূচক টাইটেল।

সে তাদের নাম নিল, সূর্য তখন পটে নামছিল, তার কথা প্রার্থনা দিয়ে শেষ হল তখন।

আমি এই জয় সোনালি হুরাসকে উৎসর্গ করি, প্রভুদের বাজপাখি! সে চিৎকার করল। শেষ সূর্যালোক এক ফালি মেঘ ভেদ করে এল এবং দুর্গের টাওয়ার আলোকিত করল। নেফারের মাথায় থাকা নীল যুদ্ধের মুকুট ও নীল তলোয়ারটা ঝলকে উঠল তাতে।

সেই সময়ে একটা তীক্ষ্ম চিৎকার ভেসে এল উপর থেকে। সবাই মাথা তুলল এবং প্রতিটি চোখ আকাশের দিকে ঘুরে গেল। লোকজনের মধ্যে একটা গুঞ্জন এ দীর্ঘশ্বাস ছড়িয়ে পড়ল, রাজ বাজ পাখি নেফারের মাথার উপর তিনবার চক্কর দিল এবং ডানা ঝাঁপটিয়ে আলো হয়ে আসা পূর্বদিকে চলে গেল তারপর।

প্রভুর আশীর্বাদ। সৈন্যরা মুগ্ধভাবে বলল। জয়, ফারাও! এমনকি প্রভুরাও আপনাকে সম্মান দেন।

কিন্তু যখনই তারা একা হল টাইটা আস্তে আস্তে কথাটা বলল, ফলে কক্ষের কেউ শুনতে পেল না। বাজপাখিটা এটা বিপদ সংকেত এনেছিল এবং কোন আশীর্বাদ নয়।

কিন্তু বিপদ সংকেতটা কি? নেফার শান্ত ভাবে জানতে চাইল কিন্তু গভীর মনোযোগে।

যখন পাখিটা ডাকল, আমি মিনটাকার চিৎকার শুনলাম। টাইটা ফিসফিস করে বলল।

মিনটাকা! নেফার যুদ্ধের উত্তেজনায় তার কথা ভুলেই গিয়েছিল। তার সম্বন্ধে প্রেন আমাকে কি বলেছিল? যে তাঁবুর প্রবেশ দ্বারের দিকে ঘুরল ও গার্ডদের চিৎকার করে বলল, প্রেন! সর্দার প্রেন কোথায়?

প্রেন তৎক্ষণাৎ এল এবং ফারাও এর সামনে হাঁট গেড়ে বসল। আপনি আমাদের কৃতজ্ঞতা অর্জন করে দিন। নেফার তাকে বলল। আপনাকে ছাড়া আমরা জিততে পারতাম না। আপনার পুরস্কার হবে আমার অন্য ক্যাপ্টেনদের থেকেও বেশি।

ফারাও মহান।

যুদ্ধের শুরুতে, আপনি রাজকন্যা মিনটাকার কথা বলেছিলেন। আমি ভেবেছিলাম সে অ্যাভারিসে হাথোরের মন্দিরে নিরাপদ আছে। আপনি তাকে শেষ কোথায় দেখছেন ও কখন?

ফারাও আপনি ভুল করছেন। রাজকুমারী মিনটাকা মন্দিরে নেই। সে আমার কাছে আপনার বার্তা নিয়ে এসেছিল। আমি আমার সাথে তাকে যুদ্ধে আনতে পারি না, তাই তাকে আমি দুদিন আগে আমার ক্যাম্প মরুভূমিতে রেখে এসেছিলাম, এই স্থান ও খাতমিয়ার মধ্যকার রাস্তায়।

নেফারকে একটা ভয় ঝেকে ধরল। আপনি এই ক্যাম্পে আর কাকে রেখে এসেছেন?

আরেকজন রাজকন্যা মেরিকারা যে মিনটাকার সাথে এসেছিল এবং মহান রাণী হেজারেটকে।

হেজারেট! নেফার লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। যদি মিনটাকা ও মেরিকারা হেজারেটের অধীনে থাকে তবে যখন সে শুনবে যে আমি তার স্বামীকে হত্যা করেছি তখন সে তাদের কি করবে? সে দৌড়ে বেরিয়ে গেল এবং ম্যারনকে ডাকল। মিনটাকা ও মেরিকারা ভীষণ বিপদে। তাকে বলল সে।

আপনি কিভাবে তা জানলেন? ম্যারনকে হতভম্ব দেখাল।

প্ৰেনের কাছ থেকে এবং টাইটা বাজ পাখিটার চিৎকার পড়েছে। আমাদের এখনই রওনা দিতে হবে।

*

সেই ভয়ংকর রাতে ঊষার পূর্বেই হেজারেট জেগে গেল। প্রথমে সে বুঝল না কিসে তার ঘুম ভাঙ্গল কিন্তু তারপর সে বাইরে অনেকগুলো কণ্ঠ শুনল। সে উঠে বসল এবং শব্দগুলো বুঝতে সক্ষম হল।

হেরে গেছে এবং হত্যা করেছে এবং এখনই পালাও।

সে চিৎকার করে তার দাসীদের ডাকল এবং দুজন এল, অর্ধ জাগ্রত ও নগ্ন, তেলের প্রদীপ হাতে নিয়ে।

কি হচ্ছে? হেজারেট জানতে চাইল।

আমরা জানি না। আমরা ঘুমাচ্ছিলাম।

বোকা মেয়েরা! যাও জেনে আস। হেজারেট রাগান্বিতভাবে আদেশ দিল।

এবং নিশ্চিত করো যে বন্দীরা এখনো খাঁচায় আছে। তারা চলে গেল।

যখন হেজারেট বাতি জ্বালাল ও পোশাক পড়ল তার দাসী দুজন তাঁবুতে ফিরে এক দমে ও প্রায় অমঙ্গল ভাবে বলল,

ইশমাইলিয়ায় ভয়ংকর যুদ্ধ হয়েছে, মহারাণী।

হেজারেটের খুশি অনুভূত হল। নাজা জিতেছে এই ব্যাপারে সে নিশ্চিত।

যুদ্ধের ফলাফল কি?

আমরা জানি না, মালকিন। আমরা জিজ্ঞেস করি নি।

হেজারেট কাছের মেয়েটার চুল মুঠি করে ধরে ঝাঁকাল, তোর মাথায় কি কোন জ্ঞান নেই? বলেই তার গালে চড় মারল সে। একটা প্রদীপ নিয়ে দ্রুত বাইরে এল ও দৌড়ে খাঁচার সামনে গেল এবং যখন তার বন্দীদের ওখানে দেখল তার দুশ্চিন্তা অর্ধেক কমে এল। হেজারেট তাদের রেখে গেল এবং দেখল সবাই চলে যাচ্ছে। শত শত সৈনিক পায়ে হেঁটে দ্রুত চলে যাচ্ছে এবং হেজারেট দেখল তাদের অধিকাংশ তাদের অস্ত্র ফেলে দিয়েছে।

তোমরা কোথায় যাচ্ছ? সে তাদের ডেকে জিজ্ঞেস করল। কি হচ্ছে? কেউ উত্তর দিল না, এমনকি কেউ তার উপস্থিতির ব্যাপারে সচেতনও নয়। সে দৌড়ে রাস্তায় গেল এবং একজন সৈন্যের হাত ধরল। আমি রাণী হেজারেট, সমগ্র মিশরের ফারাও-এর স্ত্রী! সে তার হাত ঝাঁকি দিল, বদমাশ, আমার কথা শোন।

সৈনিকটা খুব জোরে হেসে উঠল এবং হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু হেজারেট তাকে শক্ত করে ধরে রাখল যতোক্ষণ না সৈন্যটা তাকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার ধুলায় ফেলে দিল।

সে নিজেকে টেনে তুলে আরেকজন সৈন্যের দিকে এগিয়ে গেল যে একজন সার্জেন্টের ব্যাচ পরিহিত। যুদ্ধের খবর কি? আমকে বল। ওহ্, দয়া করে আমাকে বল, সে অনুনয় করল। ক্ষীণ আলোতে সৈনিকটি তাকে চিনতে পারল।

ভয়ংকর খবর, মহারাণী! তার কণ্ঠ কর্কশ। খুব ভয়ংকর যুদ্ধ হয়েছে এবং শত্রুরা জিতেছে। সব কিছু শেষ, শত্ৰু এগিয়ে আসছে এবং শীঘ্রই আক্রমণ করবে। আপনার এখনই পালানো উচিত।

ফারাও-এর খবর কী? আমার স্বামীর কী হয়েছে?

লোকে বলে যুদ্ধে তিনি হেরে গিয়েছেন এবং নেফার সেটি নিজে তাকে হত্যা করেছে।

হেজারেট তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল, নড়তে বা কথা বলতে অক্ষম সে।

আপনি কি যাবেন, মহারাণী? সার্জেন্ট জিজ্ঞেস করল। খুব দেরি হয়ে যাওয়ায় আগেই এবং বিজেতারা আসার আগে, লুণ্ঠন শুরুর পূর্বে এবং ধর্ষণ শুরু হবার আগেই। আমি আপনাকে রক্ষা করব।

কিন্তু হেজারেট তার মাথা ঝাঁকাল। এটা সত্য নয়। নাজা মরতে পারে না। সে ঘুরে গেল। সকাল পর্যন্ত সে আরো অনেককে জিজ্ঞাসা করল এবং সবাই একই। কথা বলল।

হেজারেট রাগে বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গেল এবং নিজের মাথায় বালি ছড়িয়ে দিল, দুঃখে চুল ছিঁড়তে লাগল ও কর্ণভেদী আর্তনাদ করল। তার দেহরক্ষী ও দাসীরা তাকে ধরতে এল। তার ফোঁপানো ও আর্তনাদ আরো জোরালো হলো তখন। আকাশের দিকে হাত উঠিয়ে সে আহাজারি করতে লাগল দেবতাদের দায়ী করে। তার ব্যবহার বেপরোয়া হয়ে পড়ল এক সময়। সে তার সাথে রাখা ছোট অলংকার খুঁচিত ছুরি দিয়ে তার স্তন কেটে ফেলল, দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করে নিচে জমা জলে যে কাদা হল তাতে গড়াগড়ি করল। তারপর হঠাৎ সে লাফ দিয়ে দাঁড়াল এবং সীমানা প্রাচীরে দিকে ছুটে সে দৌড়ে গাড়ির উপরে থাকা শূকরের খাঁচাটার সামনে গেল এবং চিৎকার করে মেরিকারাকে বলল, আমাদের স্বামী মৃত। আমাদের দৈত্য ভাই তাকে খুন করেছে।

হাথোর ও সকল প্রভুদের ধন্যবাদ, মেরিকারা চিৎকার করে বলল।

তুই নাস্তিক! হেজারেট তার দিকে ক্রোধান্বিত হয়ে গেল। নাজা কাইফান একজন প্রভু ছিল এবং তুই তার স্ত্রী ছিলি। সে তার পাগলামির গভীর স্তরে পৌঁছে যাচ্ছে। তোমার কর্তব্য পরায়ণ স্ত্রী হওয়া উচিত ছিল কিন্তু তাকে ত্যাগ করেছিলে। তার লজ্জা ও অপমানের কারণ তুই।

 ম্যারন আমার স্বামী, মেরিকারা তাকে বলল, আমি ঐ প্রাণীটাকে ঘৃণা করি যাকে তুমি স্বামী বল। সে আমাদের পিতাকে হত্যা করেছে। তাই নেফার তাকে শাস্তি দিয়ে ঠিক কাজ করেছে।

ম্যারন একজন সাধারণ সৈনিক এবং নাজা ছিল একজন প্রভু।

কিন্তু যদিও তার ঠোঁট শুধু স্ফীত ছিল তবু মেরিকারা হাসল ও তাকে বলল, ম্যারন নাজার চেয়ে বেশি ভালো মানুষ এবং আমি তাকে ভালোবাসি। সে ও নেফার শীঘ্রই চলে আসবে তোমাকে তোমার প্রাপ্যটা দিতে।

আস্তে, মেরিকারা, মিনটাকা ফিসফিস করে বলল। সে পাগল। তার চোখের দিকে দেখ। তাকে উস্কে দিও না। সে এখন যে কোনো শয়তানি করতে সক্ষম।

হেজারেট সকল যুক্তির উর্ধ্বে চলে গেল। তুমি একটা সাধারণ সৈনিককে ভালোবাস? সে জানতে চাইল। তোমার এতো সাহস যে তাকে আমার স্বামী ফারাও, এই মিশরের ফারাও-এর সাথে তুলনা করছো?

সে তার রক্ষীদের সার্জেন্টের দিকে ঘুরল, শূকরীটাকে খাঁচা থেকে টেনে বের কর। ক্যাপ্টেন ইতস্তত করল। মেরিকারার সতর্ক বাণী তাকে বিদ্ধ করল।

কিন্তু হেজারেট আবার চিৎকার করে উঠল। আমি তোমাকে আদেশ করছি, ক্যাপ্টেন। আমাকে মান্য কর অথবা পরিণামের মুখোমুখি হও।

ক্যাপ্টেন তার লোকদের আদেশ দিল এবং তার চামড়ার ফালি কেটে দিল যা মেরিকারার কোমরে বাঁধা ছিল ও পায়ে ধরে টেনে বের করল তাকে। তার যেসব জায়গায় বাঁধা ছিল সেগুলো নীল হয়ে আছে ও ফুলে গেছে এবং সে ঠিকমত দাঁড়াতে পারল না। তার মুখ ও দেহের বের হয়ে থাকা ত্বক সূর্যের প্রখরতায় পুড়ে গেছে এবং এলো চুল তার মুখের উপরে এসে পড়ছে।

হেজারেট তার চারপাশে দ্রুত দেখল। তার মনোযোগ একটা চাকার বিমের মধ্যে স্থির হল।

ওটা এখানে আন! সে আদেশ দিল ও দুজন লোক সে যেখানে বলল সেখানে তা এনে রাখল। কুকুরীটাকে এটার সাথে বাঁধ, না, ওভাবে না–চিত করে। তার হাত ও পা ছড়িয়ে যাতে তার প্রেমিক সৈনিকদের সুবিধা হয়।

তারা তার আদেশ মানল, তার কব্জি এবং গোড়ালি চাকার রিমের সাথে বাঁধল, তারা মাছের মতো করে।

হেজারেট তার সামনে দাঁড়াল ও তার মুখে থু থু দিল কিন্তু মেরিকারা তাকে উপহাস করল। হেজারেট তার উভয় গালে চড় মারল ও তার চাকুর ডগা দিয়ে বড় করে কেটে দিল, সেখান থেকে রক্ত ঝড়ে পড়ল মেরিকারার পোশাকে। হেজারেট তার চাকু দিয়ে মেরিকার পোশাক উপর থেকে নিচ পর্যন্ত কাটল, তার পর দুই হাতে ছিঁড়ে খুলে ফেলল। মেরিকারা সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে গেল, তার দেহ নিখুঁত ও সজীব, সূর্যের তাপ না লাগাল স্তনদ্বয় ও অন্যান্য অঙ্গ ধবধবে সাদা।

হেজারেট পিছন ফিরে তাকাল, তোমাদের থেকে কে প্রথমে করবে?

তারা লোভাতুর দৃষ্টিতে নগ্ন দেহটার পানে তাকাল।

মিনটাকা তখন খাঁচা থেকে বলল, সাবধান, তোমরা কি করছো! নেফার সেটি খুব শীঘ্রই এখানে আসবে এবং এটা তার বোন।

হেজারেট তার দিকে ঘুরল। তোর বিষাক্ত মুখ বন্ধ কর, তুমি পরবর্তীতে। সে তার লোকদের দিকে ঘুরল। এসো, এখন মিষ্টি মাংসের দিকে তাকিয়ে দেখ। তোমরা কি এর একটু স্বাদ নেবে না।

এটা পাগলামী, ক্যাপ্টেন ফিসফিস করে বলল, কিন্তু সে ঐ দেহ থেকে তার চোখ সরাতে পারল না। সে ট্যামোস হাউজের রাজকন্যা।

হেজারেট কাছের সৈন্যের কাছ থেকে দীর্ঘ বর্শা কেড়ে নিল ও বান দিয়ে তার পিঠে আঘাত করল।

লোকটি পিছিয়ে গেল। তুমি আসলেই পাগল। নেফার সেটি আমাকে জ্যান্ত রাখবে না। সে হঠাৎ ঘুরল এবং সীমা প্রাচীর দিয়ে দৌড়ে পলায়নরত লোকদের সাথে মিশে গেল। তার সঙ্গীরা কিছুক্ষণ ইতস্তত করল, তারপর একজন গুনগুন করে বলল, আসলেই সে পাগল? আমি অপেক্ষা করতে রাজি নই, নেফার সেটির আমাকে আর তার বোনকে এ অবস্থায় দেখার জন্য। এবং সেও একই পথে দৌড়ে চলে গেল।

হেজারেট তাদের পিছনে দৌড়ে গেল, ফিরে এসো! আমি তোমাদের আদেশ করছি। কিন্তু কেউ তার কথা শুনল না। সে এক কালো নুবিয়ানকে ডাকল কিন্তু সেও শুনল না।

কাঁদতে কাঁদতে ও ক্রোধান্বিত হয়ে সে দৌড়ে সীমানা প্রাচীরের ভেতরে চলে এলো। মিনটাকা খাঁচা থেকে বলল, এটা এখন শেষ, হেজারেট নিজেকে শান্ত কর। মেরিকারাকে ছেড়ে দাও এবং আমরা তোমাকে সম্মান দিব।

আমি মিশরের রাণী এবং আমার স্বামী অমর প্রভু, হেজারেট আর্তনাদ করল।

আমাকে দেখ এবং আমার সৌন্দর্য ও মহত্ত্ব ভয় কর। সে রক্ত ও ময়লা ঢাকা এবং হাতে থাকা বর্শাটা বেপরোয়াভাবে ঘোরালো।

দয়া করো, হেজারেট, মেরিকারা তার শুভ কামনা যোগ করল। নেফার ও ম্যারন খুব শীঘ্রই এখানে আসবে। তারা তোমাকে রক্ষা করবে।

হেজারেট তা দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকাল।

আমার কোন প্রতিরক্ষার দরকার নেই। তুমি কি বোঝ না যা আমি তোমাকে বলছি? আমি একজন দেবী এবং তোমরা আমার সৈন্যদের বেশ্যা।

প্রিয় বোন! তুমি শোকে বিহ্বল। আমাকে মুক্ত করে দাও যাতে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি।

একটা সুচতুর অভিব্যক্তিতে হেজারেটের চেহারা ছেয়ে গেল। তোমার কি ধারণা আমি তোমার জন্যে কোন সৈনিককে খুঁজে পাব না। তুমি ভুল। আমার নিজের কাছেই তা আছে। সে তার হাতে বর্শা তুলল এবং ভোতা প্রান্ত মেরিকার দিকে নির্দেশ করল। এই তোমার সৈনিক প্রেমিক, তোকে দাবি করতে আসছে।

যে কৃপাহীন ভাবে মেরিকারার দিকে এগিয়ে গেল।

না হেজারেট! মিনটাকা চিৎকার করল। তাকে ছেড়ে দাও।

চুপ কর বেশ্যা মাগী, এরপর তোর পালা।

না, হেজারেট! মেরিকারা তার কাছে অনুনয় করল।বোন তুমি এটা করতে পার না। তোমার কি মনে নেই। মেরিকারা থেমে গেল এবং তার চোখ বড় হয়ে গেল প্রচন্ড ধাক্কা ও ব্যথায়।

ওখানে! সে হেজারেট বলল, সে বলুমের প্রান্তটা তার তল পেটের গভীরে ঢুকিয়ে দিল।

ওখানে! সে আর্তনাদ করল, এবং ওখানে? প্রতিবার আরো গভীরে তা প্রবেশ করল যতোক্ষণ তা মেরিকারা পেটের ভিতরে এক হাত পর্যন্ত তা ঢুকে গেল এবং বেরিয়ে এল তা রক্তে ভিজে।

এবার মেয়ে দুটো তার উদ্দেশ্যে চিৎকার করল। থাম, ওহ, দয়া করে থাম? কিন্তু হেজারেট থামল না।

ওখানে এটা কি তোমাকে সন্তুষ্ট করেছে।

রক্তের বন্যায় মেরিকারা ভেসে যাচ্ছে কিন্তু হেজারেট সকল ওজন অস্ত্রটার উপর দিল এবং তা তার ভিতরে সম্পূর্ণ ঢুকিয়ে দিল। মেরিকারা তীক্ষ্ম চিৎকার দিল শেষবারের মত এবং নিস্তেজ হয়ে গেল তারপর। তার মাথাটা তার নগ্ন বুকের উপর ঝুঁকে পড়ল।

হেজারেট বল্লমটা তার চিকন মলিন দেহের ভেতর রেখে উঠে দাঁড়াল এবং দৌড়ে তার শূন্য তাঁবুতে গেল। সে তার রক্তে মাখা ও প্রস্রাবে ভেজা কাপড় বদলে অন্য পোশাক পড়ল ও স্যান্ডেল পড়ল।

আমি নাজাকে খুঁজতে যাচ্ছি, সে বলল যখন সে সকালের আলোতে চলে যেতে লাগল। মিনটাকা তখন খাঁচা থেকে তাকে ডেকে বলল, দয়া করে আমাকে মুক্ত করে দিয়ে যাও, হেজারেট। আমাকে তোমার বোনের পরিচর্যা করতে হবে। সে মারাত্মক আহত। আমাকে তার কাছে যেতে দাও।

তুমি বুঝতে পারছ না। বেপরোয়া ভাবে তার মাথা ঝাঁকাল হেজারেট।

আমাকে আমার স্বামীর কাছে যেতে হবে, মিশরের ফারাও। আমাকে তার দরকার। সে আমার জন্য খবর পাঠিয়েছে।

সে পশ্চিম দিকে চলতে শুরু করল, ইশমাইলিয়ার দিকে। মিনটাকা আরো এক বার তার চিৎকার শুনল,

আমার জন্য অপেক্ষা কর, নাজা! আমার প্রকৃত ভালোবাসা। আমি আসছি, আমার জন্যে অপেক্ষা…

*

মিনটাকা মুচড়িয়ে, টেনে হিঁচড়ে অনেক চেষ্টা করল কিন্তু চামড়ার ফালি ছিঁড়তে পারল না। তার হাত ও আঙুল থেকে গরম রক্ত ঝড়ে পড়ল। অনুভব করল তার হাত রক্তের অভাবে অসাড় হয়ে যাচ্ছে। যখন সে তার সংগ্রাম থেকে বিশ্রাম নিল তার চোখ মেরিকারা নিথর দেহটার দিকে গেল। সে তাকে ডেকে বলল, আমি তোমাকে ভালোবাসি আমার প্রিয়। ম্যারন তোমাকে ভালোবাসে। মরে যেও না। কিন্তু মেরিকারা চোখ সম্পূর্ণ খোলা এবং তার দৃষ্টি নিশ্চল।

মিনটাকা একটা চাপা আওয়াজ শুনল তাবুর প্রবেশ দ্বারে এবং মাথা ঘুরিয়ে হেজারেটের দুজন দাসীকে দেখল। মিনটাকা তাদের ডেকে বলল, দয়া করে আমাকে মুক্ত করে দাও। তোমাদের স্বাধীনতা পাবে এবং আরো বড় পুরস্কার। কিন্তু তারা তার কথায় কান না দিয়ে ফিরে যাওয়ায় লোকের সাথে পূর্ব দিকে চলে গেল। তারপর মিনটাকা ফটকে আরো কয়েক জনের কণ্ঠ শুনল। প্রায় চিৎকার দিতে গিয়েছিল, কিন্তু শেষ মুহূর্তে তাদের পোশাক, দেহবয়াব ও কথা শুনে বুঝল তারা বদমাশ এবং সে তার মাথা ঝুলিয়ে রাখল এবং মৃত্যুর ভান করল। লোকগুলোর মেরিকারার সামনে থামল। একজন এতো বাজে মন্তব্য করল যে খুব কষ্টে নিজের মুখ বন্ধ রাখল মিনটাকা।

তারপর তারা তার খাঁচার সামনে এল এবং উঁকি মেরে দেখল। সে তখন পুরোপুরি স্থির হয়ে পড়ে রইল এবং দম আটকে রাখল। তারা তাকে মৃত ভেবে চলে গেল, যা পেল তাই নিয়ে।

রাতে মিনটাকার মাঝে মাঝে ঝিমুনি এল ক্লান্তি ও হতাশায়। যখনই সে তাকাত রূপালি আলোতে সে মেরিকারার মলিন দেহটা ছড়িয়ে পরে থাকতে দেখত এবং তার ভয়ংকর কষ্টের চক্র তখন আবার শুরু হতো।

তারপর সকাল এল ও সূর্য উঠল কিন্তু মরুর বুকে শুধু একটাই মরুময় আওয়াজ এবং মাঝে মাঝে তার গোঙানি। কিন্তু তাও ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে গেল যখন আরেকটা দিন পানি ছাড়া কাটল।

তারপর সে অন্য কিছু শুনল দূরে মরমর শব্দ যা নতুন ঝনঝনে পরিণত হল এবং সে জানত এটা দ্রুত গতির চাকার আওয়াজ কারণ সে খুরের আওয়াজ শুনতে পেল। তারপর লোকদের কণ্ঠের আওয়াজ জোরালো হল এবং অধিকতর জোরালো যততক্ষণ না সে এক জনকে চিনতে পারল। নেফার! সে তার নাম ধরে ডাকতে চাইল, কিন্তু তার কণ্ঠ শুকিয়ে একটা ফিসফিসানি বের হল শুধু।

তারপর ভয় ও হতাশায় চিৎকার শুনল এবং ধীরে ধীরে সে তার মাথা ঘুরালো এবং দেখল নেফার ঝড়ের বেগে ফটক দিয়ে প্রবেশ করছে, তার পিছনে কাছাকাছি ম্যারন ও টাইটা। নেফার তাকে তৎক্ষনাৎ দেখল এবং খাঁচার কাছে দৌড়ে এল। সে দরজার তালা ভেঙে ফেলল এবং চামরা ফালিগুলি কাটল। ঘা তার কবজিতে বাসা বাঁধছিল, আলতো করে সে তাকে ঐ খাঁচা থেকে বের করল এবং জড়িয়ে ধরল। সে কান্না করছিল যখন সে তাকে তাঁবুর মধ্যে নিয়ে যাচ্ছিল।

মেরিকারা! সে ফিসফিসিয়ে বলল, তার ফাটা ও ফোলা ঠোঁট দিয়ে। টাইটার তাকে দেখতে হবে কিন্তু আমার ভয় অনেক দেরি না হয়ে গেছে। মিনটাকা তার কাঁধের উপর দিয়ে পিছনে তাকালো এবং দেখল টাইটা ও ম্যারন মেরিকারাকে বাঁধন মুক্ত করছে এবং তার দেহ থেকে রক্ত জড়ানো অস্ত্রটা বের করল তারা। তার দেহের উপর লিলেনের একটা সাদা কাপড় জড়িয়ে দিল সবশেষে।

মিনটাকা তার চোখ বন্ধ করল। আমি দুঃখ ও হতাশায় নিঃশেষিত, কিন্তু আমার প্রিয় তোমার মুখটা সব চাইতে সুন্দর ও সুখকর দৃশ্য যা আমি এখন পর্যন্ত দেখেছি। এখন আমি একটু বিশ্রাম নেব। বলেই সে তার জ্ঞান হারাল।

*

ধীরে ধীরে মিনটাকা চোখ খুলল এবং চোখ খুলে সে দুনিয়ার সবচেয়ে প্রিয় দুজন মানুষের মুখ দেখতে পেল। তার বিছানার একপাশে টাইটা বসে আছে এবং অন্য পাশে নেফার।

কতক্ষণ? জিজ্ঞেস করল সে। কত সময় চলে গিয়েছে?

একদিন ও একরাত। টাইটা তাকে উত্তর দিল। আমি তোমাকে লাল সেপেন ফুল দিয়েছিলাম। মিনটাকা হাত দিয়ে তার মুখ স্পর্শ করল এবং মুখের উপর একটা পুরু মলমের প্রলেপ পেল। সে নেফারের দিকে তার মাথা ঘুরাল এবং ফিসফিসিয়ে বলল, আমি কুৎসিত।

না! সে উত্তর দিল। তুমি সবচেয়ে সুন্দর মহিলা যাদেরকে আমি জীবনে দেখেছি এবং আমি তোমাকে সবচাইতে বেশি ভালোবাসি।

তোমাকে অমান্য কারার জন্যে তুমি আমার উপর রেগে নেই?

তুমি আমাকে একটি মুকুট ও একটি ভূমি দিয়েছ। সে তার মাথা ঝকালো এবং এক ফোঁটা অশ্রু তার মুখের উপর পড়ল। তার চেয়েও বড় তুমি আমাকে তোমার ভালোবাসা দিয়েছ যা ওটা থেকেও আমার কাছে অধিক মূল্যবান। আমি কীভাবে তোমার উপর রাগ করবো?

টাইটা আস্তে করে উঠে তাঁবু ত্যাগ করল এবং দিনের বাকিটা সময় তারা এক সাথে কাটাল।

সেদিন সন্ধ্যায় নেফার সবাইকে ডাকল এবং তারা সবাই মিনটাকার বিছানার পাশে জামায়েত হল টাইটা এবং ম্যারন, প্রেন, সোক্কো এবং শাবাকো।

আপনারা দেখেছেন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সে তাদেরকে বলল এবং দরজার প্রহরিদের দিকে ঘুরল। হেজারেট নামের মহিলাকে নিয়ে এসো, সে আদেশ করল।

মিনটাকা চমকে উঠল এবং ওঠে বসার চেষ্টা করল, কিন্তু সে তাকে জোর করে শুইয়ে দিল।

আমাদের সৈন্যরা তাকে ইশমাইলিয়ার ফিরতি পথে মরুভূমিতে এলামেলো চলাফেরা অবস্থায় পেয়ছে। নেফার ব্যাখ্যা করল।

প্রথমে তারা তাকে চিনতে পারেনি আর বিশ্বাস করতে পারেনি সে একজন রাণী। তারা ভেবেছিল সে একজন পাগল মহিলা।

হেজারেট তাঁবুতে প্রবেশ করল। নেফার তাকে গোসল ও নতুন কাপড় পড়ার অনুমতি দিয়েছে এবং টাইটা তার ক্ষতগুলোর চিকিৎসা করেছে। এখন সে তার হাত রক্ষীদের কাছ থেকে ছোটানোর চেষ্টা করল এবং চারপাশের তাকালো।

আমার সামনে থেকে তোমরা সরে যাও। সে লোকগুলোকে আদেশ করল যারা তার সামনে ছিল। আমি একজন রাণী।

কেউ নড়ল না এবং নেফার তার জন্য একটা টুল আনতে আদেশ দিল। যখন সে ওটার উপর বসল নেফার তার দিকে এক দৃষ্টিতে এতো নির্মমভাবে তাকিয়ে রইল যে হেজারেট তার মুখ ঢাকল এবং কাঁদতে শুরু করল। তুমি আমাকে ঘৃণা কর। সে বোকার মতো যুঁফিয়ে বলল। কেন তুমি আমাকে ঘৃণা কর?

মিনটাকা তোমাকে বলবে কেন? সে উত্তর দিল এবং বিছানার উপরে শোয়া মেয়েটির দিকে ঘুরল। দয়া করে আমাদের কাছে ব্যাখ্যা কর কীভাবে রাজকন্যা মেরিকারার মৃত্যু হলো।

মিনটাকা প্রায় এক ঘণ্টা ধরে সব কিছু বর্ণনা করে গেল এবং এ দীর্ঘ সময়ে কেউ সরল না এবং কথাও বলল না, শুধু তাদের বন্ধ রাখা দম খেলল এবং মাঝে মাঝে ভয়ে কেঁপে উঠল তারা। শেষে নেফার হেজারেটের দিকে তাকালো, তুমি কি এ বিবরণের কোন কিছু অস্বীকার কর?

হেজারেট নির্মম দৃষ্টিতে এবার তার দিকে তাকাল। সে একটা বেশ্যা ছিল এবং সে আমার স্বামীর জন্য কলংক বয়ে এনেছিল, যিনি মিশরের ফারাও। সে মৃত্যুরই যোগ্য। আমি সন্তুষ্ট যে আমি নিজ হাতে তাকে শাস্তি দিতে পেরেছি।

এমনকি এখনও আমি তোমাকে হয়তো ক্ষমা করে দিব। নেফার নরম স্বরে বলল, যদি তুমি এক বিন্দু পরিমাণ দুঃখ দেখাও।

আমি একজন রাণী। আমি তোমার ঐ সব ক্ষুদ্র আইনের উর্ধ্বে।

তুমি এখন আর রাণী নও। নেফার জবাব দিল এবং তাকে দ্বিধান্বিত দেখালো।

আমি তোমার নিজের বোন। তুমি আমার কোন ক্ষতি করবে না।

মেরিকারাও তোমার বোন ছিল। তুমি কী তাকে ছেড়ে দিয়েছিলে?

আমি তোমাকে খুব ভালো করেই চিনি, নেফার সেটি। তুমি আমাকে আঘাত করবে না।

তুমি ঠিক হেজারেট। আমি তোমার ক্ষতি করব না কিন্তু একজন আছে যে তোমাকে ছাড়বে না। সে তার পাশে জামায়েত হওয়া ক্যাপ্টেনদের দিকে ঘুরল। এটা সবচেয়ে পুরনো অধিকারের আইন একজন সবচেয়ে আহত ব্যক্তির জন্যে। সামনে এসে দাঁড়াও, ম্যারন ক্যামবাসিয়েস।

ম্যারন দাঁড়াল এবং সামনে এল, ফারাও, আমি আপনার লোক।

তুমি রাজকুমারী মেরিকারার বাগদত্তা ছিলে। তুমি সবচেয়ে বেশি আহত। আমি হেজারেট ট্যামোসকে তোমার হাতে তুলে দিলাম যে মিশরের রাজ পরিবারের রাজকন্যা ছিল।

হেজারেট কান্না করতে শুরু করল যখন ম্যারন একটা স্বর্ণের চেইন তার গলায় পরিয়ে দিল:

আমি একজন রাণী এবং একজন দেবী। তুমি আমাকে ক্ষতি করার সাহস করো না।

কেউ তার কান্নার দিকে লক্ষ্য করল না এবং ম্যারন নেফারের দিকে তাকাল। মহামান্য আপনি কি আমার উপর কোন বাধ্যবাধকতা আরোপ করেন? আপনি কি আমাকে তার প্রতি করুণা ও সহানুভূতি দেখানোর উৎসাহ বা আদেশ দিবেন?

আমি তাকে তোমার হাতে তুলে দিয়েছি কোন শর্তারোপ না করেই। তার জীবন এখন তোমার। ম্যারন তার তলোয়ার উন্মুক্ত করল এবং চেইনে ধরে হেজারেটকে টেনে দাঁড় করালো। সে যখন তাকে তাবু থেকে টেনে নিয়ে গেল তখনও সে বক বক করছিল এবং আর্তনাদ করছিল। কেউ তাদের অনুসরণ করল না।

তারা নিরবতার মধ্যে বসে রইল এবং বাইরের লোক হেজারেটের আর্তনাদ শুনছিল। তারপর হঠাৎ নিরবতা নামল এবং তারা নিজেদের শক্ত করল। তারা একটা উচ্চ কর্ণবিদীর্ণ চিৎকার শুনল এবং হঠাৎ করেই তা থেমে গেল যেমন করে শুরু হয়েছিল।

দুই হাত দিয়ে তার মুখ ঢাকল মিনটাকা এবং নেফার শয়তানের বিরুদ্ধে চিহ্ন আঁকল। অন্যেরা বসে রইল বিষণ্ণ হয়ে।

একটু পরে দরজার পর্দা ভাগ হয়ে গেল এবং ম্যারন তাঁবুতে প্রবেশ করল। তার ডান হাতে খোলা তলোয়ার এবং অন্য হাতে একটা ভয়ংকর বস্তু ধরা। মহামান্য, সে বলল, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

*

মিনটাকার পুরোপুরি সুস্থ হতে এবং অ্যাভারিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে তাদের আরও পাঁচ দিন সময় লেগে গেল। টাইটা ও নেফার মিনটাকাকে জোর করে একটা পালকিতে উঠাল যাতে তার কষ্ট কম হয়। তারা ধীরে এগিয়ে চলল এবং পনের দিন পর তারা পাহাড়ের ঢালে পৌঁছে নীলের বিশাল সবুজ উপত্যকায় তাকাল। নেফার মিনটাকাকে পালকি থেকে নামাতে সাহায্য করল এবং এক সাথে একটু পথ হাঁটল। কিন্তু তারা সেখানে বেশিক্ষণ কাটাল না। যখন নেফার উঠে দাঁড়াল এবং চোখের উপর ছায়া দিল দূরে তাকাতে তখন মিনটাকা জিজ্ঞেস করল

ওটা কি, আমার ভালোবাসা?

আমাদের দর্শনার্থী। নেফার জবাবে বলল। এই দর্শনার্থীরা সব সময় সাদরে গৃহীত।

মিনটাকা হাসল যখন ঐ দুই জন অসমাঞ্জস্য অবয়বের মানুষ তাদের কাছাকাছি এল: টাইটা এবং ম্যারন।

কিন্তু এটা কেমন অদ্ভুত পোশাক? তারা দুজন সাধারণ পোশাক এবং স্যান্ডেল পরিহিত এবং যেন তারা তীর্থ যাত্রার জন্যে প্রস্তুত।

আমরা বিদায় জানাতে এসেছি এবং আপনার কাছ থেকে বিদায় নিতে। টাইটা ব্যাখ্যা করল।

আমাকে এখনই ছেড়ে যাবেন না। নেফারকে বিহ্বল দেখাল। তুমি কি আমার অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিবে না?

তুমি ইশমাইলিয়ার এই ভূমিতে রাজ মুকুট পেয়েছে। টাইটা তাকে শান্তভাবে বলল।

আমাদের বিয়েতে? মিনটাকা চিৎকার করে উঠল। তোমাকে অবশ্যই আমাদের বিয়েতে উপস্থিত থাকতে হবে।

অনেক আগে থেকেই তোমরা বিবাহিত। টাইটা হাসল। সম্ভবত তোমাদের জন্মর দিন থেকেই। কারণ প্রভু তোমাদের একজনকে অন্যজনের জন্য তৈরি করেছেন।

কিন্তু তুমি, আমার রেড রোড ভ্রাতা এবং আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু! নেফার ম্যারনের দিকে ঘুরল, তোমার কী খবর?

এখানে আমার জন্য আর কিছু বাকি নেই যখন মেরিকারাই চলে গেল। আমাকে অবশ্যই টাইটার সঙ্গে যেতে হবে।

নেফার আর কিছু বলার মতো খুঁজে পেল না, বরং অধিক শব্দ এ সময়টাকে শুধু আরও বিষণ্ণ করে তুলবে। সে এমনকি জিজ্ঞেসও করল না তারা কোথায় যাচ্ছে। সম্ভবত তারা নিজেরাও জানে না।

সে তাদেরকে আলিঙ্গন করল ও চুমু খেল, তারপর সে ও মিনটাকা দাঁড়িয়ে রইল এবং তাদের চলে যাওয়া দেখল। তাদের আকৃতি ধীরে ধীরে মরুর তেপান্তরে বিলীন হয়ে গেল এবং তারা অদ্ভুত রকম একটি গভীর ব্যথা অনুভব করল তাদের জন্য।

তারা সত্যি চলে যায় নি। মিনটাকা ফিসফিস করল।

না। নেফার সম্মত হলো। তারা সব সময় আমাদের সাথে থাকবে।

*

প্রধান যাজিকা ও তার পঞ্চাশ জন সহকারীসহ রাজকন্যা মিনটাকা অ্যাপিপি হাথোরের মন্দিরে এল ফারাও নেফার সেটির সাথে তার বিয়ের জন্যে।

তারা দুজন থেবস্-এর প্রাসাদের ছাদে দাঁড়িয়ে ছিল, যেখান থেকে বন্যার বিশাল বিস্তৃত ও প্রবাহ দেখা যাচ্ছে। এ সময়টা দুই মিশরের সমস্ত জীবন্ত প্রাণীর জন্যে সবচেয়ে সুখের।

মিনটাকা অনেক আগেই তার আঘাত ও কষ্ট থেকে সেরে উঠেছে। তার সৌন্দর্য পূর্ণ বিকশিত এবং এই আনন্দঘন মুহূর্তে মনে হল তা আরও দশগুণ বেড়ে গেছে।

মনে হলো সমগ্র মিশর তাদের বিয়ের সাক্ষী হতে এসেছে। লোকজন নদীর দুই পারে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এবং যতদূর চোখ যায় শুধু লোক আর লোক। যখন নব দম্পতি আলিঙ্গন করল এবং নীলের পানির পাত্রগুলো ভাঙল তখন যে চিৎকার আকাশ পর্যন্ত পৌঁছালো তা সম্ভবত প্রভুদেরকেও বিস্মিত করে দিল। তারপর নেফার সেটি তার নতুন রাণীকে হাতে ধরে নিয়ে গেল এবং তার সৌন্দর্য জনগণকে দেখাল। তারা হাঁটুগেড়ে বসে কান্না করল এবং চিৎকার করে তাদের আনুগত্য ও ভালোবাসা প্রকাশ করল।

হঠাৎ একটা নিরবতা এ বিশাল ভূমির উপর নেমে এল এবং ধীরে ধীরে সকল চোখ উপরের দিকে ঘুরে গেল, প্রাসাদের উপরের আকাশে একটা ক্ষুদ্র বিন্দু দেখা গেল তখন। নিরবতার মাঝে একটা রাজকীয় বাজপাখির তীক্ষ্ণ নিঃসঙ্গ চিৎকার শোনা গেল এবং পাখিটা উঁচু নীল আকাশ থেকে নেমে আসছে। শেষে ঠিক যখন মনে হলো পাখিটা ফারাও-এর উপর এসে পরবে তখন বাজ পাখিটা তার ডানা প্রসারিত করল এবং ফারাও এর লম্বা দেহের উপর চক্কর দিল। নেফার তার ডান হাত তুলতেই চমৎকার পাখিটা তার হাতের মুঠোয় এসে নামল।

যখন তারা অলৌকিক ঘটনাটাকে অভিনন্দন জানালো তখন দশ হাজার কণ্ঠ একত্রে চিৎকার করে উঠল। কিন্তু নেফারের চোখ তখন খাঁটি সোনার চিকন ফাঁদের উপর নিবদ্ধ হলো যা পাখিটার ডান পায়ে বাঁধা ছিল বিশাল বাঁকানো নখরের উপরে। দামি ধাতুতে একটি প্রতীক আঁকা যা নেফারের হৃদৃম্পন্দন বাড়িয়ে দিল যখন নেফার তা চিনতে পারল।

রাজকীয় সীলমোহর! সে ফিসফিস করল। এটা কোন বন্য পাখি নয়। এটা নেফারটেম। আমার পিতার বাজ পাখি। এ কারণে এটি প্রায়ই আসত আমি যখন বড় কোন বিপদে থাকতাম আমাকে সতর্ক করতে ও পথ দেখাতে। আমার পিতার আত্মা সব সময় আমার পাশে ছিল।

এবং এখন নেফারটেম এসেছে সারা দুনিয়ার সামনে প্রমাণ করতে যে তুমিই প্রকৃত রাজা। মিনটাকা তার কাছাকাছি এসে দাঁড়াল এবং তার মুখের দিকে চেয়ে রইল–তার চোখ দুটি গর্ব এবং ভালোবাসায় উজ্জ্বল ॥

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *