৮. ম্যারনকে দাঁড় করাল

নেফার ম্যারনের উপর ঝুকল। তুমি দাঁড়াতে পারবে? সে জিজ্ঞেস করল। কিন্তু যখন ম্যারন চেষ্টা করল তার পা ভেঙে পড়ল এবং সে মাটিতে হাত পা ছড়িয়ে পড়ে গেল। নেফার তাকে এক হাত দিয়ে টেনে তুলল তারপর হাতটা তার ঘাড়ের পিছন দিয়ে ঝুলিয়ে দিল। ওজন তার কাঁধে নিয়ে, সে ম্যারনকে দাঁড় করাল।

ম্যারন একজন ভারি মানুষ, এবং নেফার প্রায় নিঃশোষিত ছিল, তবুও সে তাকে নিয়ে দুলতে দুলতে অপেক্ষয়মান রথের দিকে চলল এবং তাকে মেঝের তক্তার ওপর স্কুপের মতো করে শুইয়ে দিল। তারপর এক মুহূর্ত সে চাকার সাথে হেলান দিয়ে হাঁফাল এবং পিছনে তাকাল। ডায়ামিস ঢালের সমতল ভূমিতে পৌঁছে গেছে এবং চারশ কদমের কম দূরে এখন। এতো দ্রুত আসছে এবং এতো কাছে যে নেফার তার চেহারায় বিজেতার অভিব্যক্তি দেখতে পারল।

অন্য ধাওয়াকারীদের রথগুলো তাকে অনুসরণ করছে, তারা ছয় জন। নেফার মন থেকে তাদের সামনে লড়াইয়ের জন্য দাঁড়ানোর চিন্তা তৎক্ষণাৎ বের করে দিল। তার বর্তমান অবস্থায় সে এমনকি ডায়ামিওসের সাথে লড়াইয়ে টিকবে না। তাকে ভাগতে হবে।

নেফার বাঁধার রশি দিয়ে ম্যারনের দেহে দুটা প্যাঁচ দিল ও বেঁধে তাকে পাদানির সাথে আবদ্ধ করল। তারপর সে নিজেকে টেনে টেনে পাদানিতে তুলল এবং ম্যারনের দেহের উপর দুই পা ফাঁক করে দাঁড়াল।

তাদের ছেড়ে দাও। সে সহীসদের ডেকে বলল, যারা ঘোড়াগুলোর মাথা ধরেছিল। তারা তাদের ছেড়ে লাফিয়ে রাস্তা থেকে সরে গেল।

চল ডোভ! চল ক্রুস! সে তাদের ডাকল এবং লাগাম দিয়ে তাদের চকচকে পিঠে আঘাত করল। তারা এক সাথে লাফ দিয়ে সামনে বাড়ল এবং তাদের সামনে জনতা এলোমোলো হয়ে গেল। সে তাদের মাথা উপত্যকার নিচে শহরের খোলা ফটকের দিকে নির্দেশ করল এবং তাদের দৌড়াতে দিল।

সে পিছনে নজর তুলল এবং দেখল ডায়ামিওস তাদের দিকে তীব্র বেগে আসছে। সে তার দলটাকে চাবুক দিয়ে নির্দয়ভাবে আঘাত করেছে এবং তাদের উদ্দেশ্যে রাগতভাবে চিৎকার করেছে, কিন্তু ডোভ ও ক্রুস তাদেরকে পেছনে রাখল ডায়ামিওসের চাবুকের নিষ্ঠুর কাজ সত্ত্বেও। নেফার সামনে দেখল এবং দূরত্ব হিসাব করল যা তাদের এখনও দৌড়াতে হবে।

অর্ধ ক্রোশের চেয়ে কম গালালার ফটক পর্যন্ত। ইতোমধ্যে সে পাম গাছে পাতার বেষ্টনী চিহ্নিত করতে পারল যা দেয়ালগুলোকে অলংকৃত করেছে এবং প্রবেশের লাল পাথরের কলামগুলোকে সাজিয়েছে।

হঠাৎ তার রথের একটা চাকা উঁচু পাথরে লেগে উল্টে যাবার উপক্রম হল এবং রথে গতি কমে গেল। ঘটনাটার জন্যে তার অমনযোগিতাই দায়ী। এখন যখন নেফার পিছনে তাকাল সে দেখল সে ভুলটা তাদের ভালোই মূল্য দিয়েছে। কারণ ডায়ামিওস তাদের দিকে একশ কদম এগিয়ে এসেছে। সে বল্লমের সীমায় চলে এসেছে এবং নেফার তাকে তার অস্ত্রের জন্য তার পাশের পটের দিকে হাত বাড়াতে দেখল এবং চামড়ার ফালি তার কব্জিতে বাঁধছে।

তার জন্য নেফারের কোন উত্তর নেই। সে তার সব বাণ প্রথম ধাপে ব্যবহার করে ফেলেছে। সে খাদের কাছে তার ধনুক ফেলে এসেছে এবং তার শেষ তলোয়ারটা ড্রোসার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভেঙ্গে গেছে। এমনকি তার চাবুকও নেই। তাই একমাত্র আত্মরক্ষা হল গতি।

সে ঘোড়াগুলোকে বলল,চল ডোভ! চল ক্রুস! এবং তাদের কান পিছনে ঝুকল যখন তাদের নাম ডাকতে শুনল এবং তাদের খুরগুলো শক্ত মাটিতে আওয়াজ তুলল এবং চাকার কেন্দ্রস্থল কাঁচক্যাচ শব্দ করল। কারণ এমনকি টাইটার কালো তেল শুকিয়ে যাচ্ছে।

তখন অন্য খুরের আওয়াজ এল, নেফারের দলের আওয়াজের সাথে মিশে। এবার পিছনে তাকাতেই দেখল ডায়ামিস আরো কাছাকাছি। তার ঘোড়াগুলোকে সে চাবুক মারল। ডায়ামিওসের বল্লম প্রস্তুত ছিল এবং সে তা জোরে নিক্ষেপ করল এবং বিষাক্ত পোকার মতো তা উড়ে এল।

সহজাত ভাবেই নেফার সংকুচিত হয়ে গেল, তার ডান পায়ের কাছে বল্লমটা মেঝের তক্তায় আঘাত করল, দাঁড়িয়ে রইল কাঁপতে কাঁপতে।

চল, আমার বন্ধুরা! তার কণ্ঠ তিক্ষ্ণ ছিল এবং ঘোড়াগুলো তা শুনল। তোমার যা আছে আমাকে সব দাও। ক্রুস তার বিশাল হৃদয়ে আর একটু কিছু পেল এবং তার সাথে ডোভকেও তা উদ্দীপ্ত করল। তারা ডায়ামিওসের ছিন্ন ও রক্তাক্ত যুগল থেকে এগিয়ে যেতে শুরু করল।

টান, শূয়র! ডায়ামিওস চিৎকার করল। টান, নইলে আমি তোদের পিঠের ছাল ছাড়িয়ে নেব। এবং তার দীর্ঘ চাবুকটা শব্দ করে উঠল।

ডায়ামিওস তখন অন্য একটা বল্লম নিল এবং চামড়া ফালি প্যাচালো। যখন সে তার বাহুর পিছনে তা দোলালো নিক্ষিপ্ত করতে, নেফার তখন তার নড়াচড়া দক্ষভাবে বিচার করল এবং লাগামে টোকা দিল। বল্লম বাতাসে ছুটতেই নেফার ডোভকে ক্রুসের কাঁধের দিকে কাত করাল এবং তারা একটু গতি পরিবর্তন করল, নিশানা ব্যর্থ হল। ডায়ামিওস তার শেষ বল্লমটা টেনে নিল পাত্র থেকে। সে এখন কাছে, খুব কাছে।

নেফার মরিয়া হয়ে তাকে খেয়াল করল, তার দলকে একত্রিত করল বড় লাগামে যাতে তারা তার কমান্ড আগেই বুঝতে পারে।

সে মুহূর্তে ডায়ামিওস তার ডান কাঁধ সামনে বাড়াল নিক্ষেপ করতে, নেফার তার দলকে অন্যদিকে ঘুরালো, তাদের দৌড় পূর্ণ গতিতে অসংগত হয়ে গেল। কিন্তু বল্লমটা তার হাত ত্যাগ করেনি তখনও; সে ভান করেছে। সে বল্লমটা আবার প্রস্তুত অবস্থায় তুলে অবস্থান নিল এবং নিক্ষেপ করতে প্রস্তুত।

নেফার পিছনে দুলতে অথবা রাস্তা ত্যাগ করতে বাধ্য হল এবং রুক্ষ পথে নেমে গেল এবং ছড়ানো উঁচু উঁচু স্থান। সে দিক পরিবর্তন করল এবং এবার ডায়ামিওস নেফারের দিকে নয় বরং ডোভের দিকে লক্ষ্য স্থির করল, ঘোরার ফলে যার পেটের অংশ বেরিয়ে পড়েছে।

বল্লমটা ডোভের পশ্চাৎ দিকে উপরে বিধল। এটা চামড়া ও উঁচু মাংশপেশী কেটে গেল, তারপর হাড়ে ধাক্কা খেল এবং তার গভীর অংগে প্রবেশ করল না। এটা কোন মারাত্মক আঘাত নয়, কিন্ত খারাপ কারণ বল্লমের মাথা আটকে গেছে এবং তার পেটের নিচে তা ঝুলে রইল। তার নেওয়া প্রতি পদক্ষেপ ওটা বাঁধা দিচ্ছে।

নেফার তার নিচে রথটা ধীর হচ্ছে বুঝল এবং যদিও সে ডোভকে উৎসাহ দিল।

ডায়ামিওস সামনে বাড়ল এবং তার চোখের কোণ দিয়ে নেফার দেখল তার দৌড়রত ঘোড়ার মাথাগুলো তার বাঁ দিকের চাকার সমতলে চলে এসেছে, এবং ডায়ামিওসের কর্কশ কণ্ঠ এবং বিজয় তার কানে প্রায় কথা বলল।

শেষ, নেফার সেটি। আমি এবার তাকে পেয়েছি।

নেফার তার মাথা ঘুরলো এবং তার দিকে আড়াআড়ি তাকাল। ডায়ামিওসের ঠোঁটগুলো ভয়ংকর ভাবে পিছনে টানা, মৃতদেহের ঠোঁটের মতো।

সে তার শেষ বল্লমটা নিক্ষেপ করেছে, কিন্তু সে তার তলোয়ার মুক্ত করেছে। এখন।

ফটকে পৌঁছতে কতটুকু দৌড়াতে হবে? নেফার ভাবল। সহজাতভাবেই সে মন্দিরের ছাদে তাকাল। একটা ক্ষুদ্র মানব অবয় চোখে ধরা পড়ল সারি করা লোক জনের মধ্যে, ঠিক সেখানে সে তা দেখার আশা করেছিল। সে মিনটাকার লাল স্কার্ট চিনতে পারল এবং দেখল সে তার মাথার উপর একটা সবুজ পতাকা দোলাচ্ছে। তার লম্বা কালো চুল একটা ছোট পতাকার মতো উত্তরের বাতাসে দুলছে।

সবকিছু ছাড়িয়ে একটা উপহার, সে ভাবল এবং তার হাত ডায়ামিওসের বল্লমের উপর পড়ল যেটা মেঝের তক্তার মধ্যে গেঁথে ছিল তার পায়ের কাছে। মাথাটা কাঠের মধ্যে গভীরে ঢুকে আছে, কিন্তু সে শক্ত করে ওটা মুচড়ালো ও ঝকাল এবং টেনে ওটা মুক্ত করল।

তার নিক্ষেপের ফালি নেই, কিন্তু সে এটা একটা বর্শার মতো ধরল এবং আড়াআড়ি তার শত্রুর দিকে তাকাল। ডায়ামিওসের চোখ সরু হয়ে গেল যখন সে দেখল অস্ত্রটা নেফারের হাতে। সে তখন আত্মরক্ষার অবস্থা নিয়ে নেফারের পাশাপাশি চলে এল এবং ঝুঁকে আঘাত করল। নেফার বল্লমের দন্ড দিয়ে আঘাতটা ঘুরিয়ে দিল। দুইটা যান হঠাৎ গতি পরিবর্তন করে আলগা হয়ে গেল। তারপর আবার একসাথে হলো এবং এতো কঠিনভাবে তাদের টক্কর লাগল যে নেফার প্রায় পাশ দিয়ে পড়ে গিয়েছিল এবং নিজেকে স্থির করতে বেপরোয়াভাবে লাগাম খাবলে ধরতে বাধ্য হল সে।

ডায়ামিওস লম্বা দন্ডটায় একটা কোপ দিতে এল যার মধ্যে নেফারের চুলের বিনুনী বাধা কিন্তু শক্ত বাশ ছিন্ন করতে পারল না। নেফার তার ভারসাম্য ফিরে পেল এবং বল্লম নিয়ে ডায়ামিওসকে আক্রমণ করতে গেল, তাকে তাড়িয়ে দিল। এখন দুটি যান চাকায় চাকায় লেগে এবং কেন্দ্রস্থল কেন্দ্রস্থল বরাবর দৌড়াচ্ছে।

নেফার ও ডায়ামিস আড়াআড়ি বেঁকে গেল। একে অন্যকে কোপ দিল এবং আঘাত করল। যদিও নেফার লাগামের দিকে পিছনে হেলে ছিল কিন্তু ব্রোঞ্জের ফলায় বুকের বর্মের চামড়া কেটে গেল এবং সে ফলার কিনারের তীক্ষ্ণতা অনুভব করল। তখন সে বল্লমের অগ্রভাগ ডায়ামিওসের মুখের দিকে বাড়াল এবং তাকে ঘুরে যেতে বাধ্য করল।

ডোভ খুব কষ্ট করছে। বল্লমের কাটা এখনো তার চামড়ায় ঢুকে আছে এবং বানটা প্রতি পদক্ষেপে তার পায়ে আঘাত করছে। নেফার অনেক কণ্ঠের আওয়াজ শুনল প্রথমে কোমল এবং ধনুকের আওয়াজে এবং চাকার কাঁচ কাঁচ ও গুড়ম গুড়ম শব্দে প্রায় হারিয়ে গেল তা। কিন্তু শব্দটি প্রতি পদক্ষেপে জোরালো হচ্ছে। সে চোখ তুলল এবং গড়িয়ে পড়া ঘামের মধ্য দিয়ে যা তার চোখে জ্বালা ধরিয়ে দিল, দেখল ফটকগুলো সরাসরি সামনে। শহরের দেয়ালগুলো ও ছাদগুলো মানুষে পূর্ণ। তাদের জয়ধ্বনি কোলাহলের মধ্য দিয়ে যেন সে মিনটাকার কণ্ঠের আওয়াজ শুনল। এটা তার নিজের ক্লান্তির ভ্রম ছাড়া কিছুই না। কিন্তু তা তাকে শক্ত করে তুলল এবং সে ঘোড়াগুলোকে হাক দিল এবং লাগাম দিয়ে তাদের একত্রিত করল। কিন্তু ডোভ দোলছিল ও পড়ে যাচ্ছিল। ডায়ামিওস আবার এল, এবার নেফারের উপর দিকে আক্রমণ করল। শত্রু তার পূর্ণ আঘাত মানুষটার দিকে নয় বরং বল্লমটার দিকে চালাল। তার ফলা নেফারের মুঠির উপর থেকে বল্লমটাকে কেটে আলাদা করে দিল এবং তার হাতে রইল অপ্রয়োজনীয় কাঠের দন্ড। নেফার তা ডায়ামিওসের মাথার দিকে সজোরে নিক্ষেপ করল। কিন্তু সে মাথা নিচু করে তা এড়িয়ে গেল এবং নেফারকে আক্রমণ করল, তাকে পা-দানির অন্যপাশে সরে যেতে বাধ্য করল উজ্জ্বল ফলাটা এড়ানোর জন্য।

ডায়ামিওস তৎক্ষণাৎ সুযোগটা নিল এবং নেফারের সামনে তার পথ নিল। যখন সে আক্রমণ করে কাছে এল তখন সে হাত বাড়িয়ে দন্ডটা ধরল যার উপর নেফারের চুলের বিনুণী নাচছিল এবং বাতাসে দোল খাচ্ছে। সে এটাকে ভেঙে নেওয়ার চেষ্টা করল। যদিও এটা প্রায় দ্বিগুণ বেঁকে গেল তবুও এটা তার প্রয়াসকে রুখে দিল। তখনও এক হাতে লম্বা দন্ডটা ধরে রেখে ডায়ামিওস অন্য হাত বাড়াল পুরু চুলের গোছাটা ধরতে। এটা ঝাঁকি খেল এবং তার আঙুলের ডগায় নেচে উঠল। কিন্তু একই সাথে তলোয়ারের বাটে তার মুঠি আবদ্ধ রাখার চেষ্টা করছে সে এবং সে পুরস্কারটা সম্পূর্ণ ধরতে পারল না। সে তার তলোয়ার ফেলে দিয়ে এবার বিনুণিটা ধরল এবং তা ছিঁড়ে নেওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু বাঁশটা ছিল স্থিতিস্থাপক ও শক্ত এবং বিনুণিটাও শক্ত করে বাঁধা। ক্রুস ও ডায়ামিওসের ডানপাশের ঘোড়া কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ছুটছে। ডায়ামিওস সম্পূর্ণ মগ্ন তার পুরস্কার বাঁশের লাঠি থেকে ছিঁড়তে। সে জানত নেফার নিরস্ত্র এবং কোন প্রকৃত বিপদ নেই এবং সে পাথুরে ফটকটা অবহেলা করল যা আবছাভাবে তাদের সামনে আবির্ভূত হলো। ভিতরে বাঁকা হও। নেফার ক্রুসের উদ্দেশ্যে চিৎকার করল, তাকে তোমার সহায়তা দাও! নেফার লাগামগুলোকে করাতের মতো ব্যবহার করল। এটা হলো তা যার জন্য তারা প্রশিক্ষণ নিয়েছে মরুভূমিতে ঐ মাসগুলো জুড়ে। টাইটার সাথে অন্য দল চালিয়ে নেফার ক্রুসকে এ শক্তির প্রতিযোগিতা ভালোবাসতে শিখিয়েছে এবং এবার সে তার বিশাল ডান কাঁধ বেঁকে দিল। অন্য ঘোড়াটার ঠিক পিছনে তা ঠেলে দিল এবং তাকে ভারসাম্যহীন করে দিল। আবদ্ধ রথগুলো ডানদিকে মোড় নিল, প্রবেশদ্বার দ্রুত চলে আসছিল। প্রবেশদ্বারটা টুকরো করা লাল পাথরে সারি এবং শত বছরের কাঁকড় বাহিত বায়ু তাদের মসৃণ করেছে ও আকৃতি দিয়েছে তবু এখনও তারা ভারি ও বিপদাপন্ন।

তাকে নিয়ে চল। নেফার চিৎকার করে ক্রুসকে বলল এবং লাগামে একটা শক্ত হাত রেখে তাকে উৎসাহ দিল। ক্রুস অন্য ঘোড়াকে জোর করে আরো কয়েক কদম নিয়ে গেল যতোক্ষণ না সে সোজাসুজি নিরেট লাল পাথরের দেওয়ালের দিকে ধাবিত হল।

একেবারে শেষ মুহূর্তে ডায়ামিওস কি ঘটছে সে সম্বন্ধে সচেতন হলো এবং একটি বিপদ সংকেতের জন্য চিৎকার দিয়ে সে বাঁশের দন্ড ছেড়ে দিল এবং তার ছুটন্ত রথের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাবার চেষ্টা করল, কিন্তু ক্রুস অন্য ঘোড়াটাকে নিয়ন্ত্রণ করছিল তখন এবং তাকে মাথার বরাবর পাথুরে প্রবেশদ্বারের দিকে নিয়ে চলল।

ডায়ামিওস অনুধাবন করল সে উড়ন্ত রথটাকে থামাতে পারবে না এবং সংঘর্ষ এড়াতে পারবে না। সে উৎক্ষিপ্ত ককপিঠ থেকে লাফ দেওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু সে ততোক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। তার উভয় ঘোড়া পাথুরে সারির মধ্য দিয়ে পূর্ণ বেগে ধাবিত হল। প্রচন্ড সংঘর্ষ সাথে সাথে তাদের হত্যা করল। নেফার তাদের শেষ ভয়ার্ত আর্তনাদ শুনল যখন তারা প্রবেশ করল। সংঘর্ষে বিধ্বস্ত হওয়ার শব্দ, তাদের ভাঙ্গা হাড়ের মড় মড় শব্দ এবং কাঠের টুকরার ছিন্ন ও বিদীর্ণ হওয়ার শব্দে পরিবেশটি ভারি হয়ে গেল। একটা চাকা পরিষ্কার খুলে গেল এবং এক মুহূর্তের জন্য নেফারের যানের পাশে লাফ দিল। ডায়ামিওস তার একটা বল্পমের মতোই সজোরে নিক্ষিপ্ত হল সোজাসুজি দেয়ালে। প্রথমে তার মাথায় টুকরে গেল এবং তার খুলি এমন ভাবে ফেটে গেল যেন সে একটা বেশি পাকা তরমুজ। তার শক্ত সাদা দাঁতগুলো লাল পাথরের উপরি স্তরে পড়ে রইল, বদমায়েশরা পরে যা চাপ দিয়ে খুলে স্মৃতিচিহ্ন বানাবে, সোনার চেইনে বাধবে এবং বাজারে বিক্রি করবে।

নেফার ক্রুস ও ডোভকে তোরণের দিকে চালাল, এবং যদিও তার বাঁ দিকে চাকার কেন্দ্রস্থল পাথরে ঠুকরে গেছে তবু তারা শহরের প্রধান রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করল যার উভয় পাশে উল্লাসিত জনতা দিয়ে সারিবদ্ধ। তারা রাস্তাটা পামপাতা ও ফুল দিয়ে ঢেকে দিয়েছে এবং এমনকি শাল ও মাথার টুপি এবং তাদের নিজেদের পোশাকের অন্যান্য টুকরো দিয়েও।

নেফারের প্রথম চিন্তা ছিল ডোভের জন্য। সে ঘোড়াগুলোকে থামিয়ে লাফ দিয়ে নামল এবং দৌড়ে আহত ঘোড়াটির কাছে গেল। বল্লমের ফলা তার কাঁধের গভীরে ঢুকে আছে। একমাত্র টাইটাই ভরসা ওগুলোকে বের করার জন্য, কিন্তু সে বানটা ভেঙে দিল যাতে এটা আর তার পাশে ঝুলতে না পারে। তারপর সে পাদানিতে ফিরে আবার লাগাম তুলে নিল।

লোকজন রাস্তায় ঝাঁক বেঁধে চলল এবং রথের পাশাপাশি দৌড়াল যখন এটা হাঁটার গতিতে চলল। তারা হাত বাড়াল নেফারকে স্পর্শ করার জন্য। তাদের মাথার টুপি, পাগড়ি তার রক্ত মোছার জন্য ব্যবহার করল যা তার ক্ষত থেকে পায়ে গড়িয়ে পড়েছে। একজন প্রভুর রক্ত, একজন ফারাও ও একজন রেড রোড যোদ্ধার যা কাপড়টাকে পবিত্র করে দিতে পারবে। উন্মত্তভাবে তারা চিৎকার করে তাদের প্রশংসার বাণী বলল।

আমাদের জন্য প্রার্থনা করবেন, মহান মিশর, প্রকৃত ফারাও!

আমাদের নেতৃত্ব দিন, মহান ফারাও!

জয়, রেড প্রভুর মহান ভাই-এর জয়!

আপনি হাজার হাজার বছর বেঁচে থাকুন, নেফার সেটি আসল ফারাও!

সভাস্থলের প্রবেশদ্বারে জনতার ভিড় এতো ঘন ছিল যে শহরের রক্ষীদের রথের সামনে দৌড়াতে হল এবং রাস্তা করতে হল। নেফার সভাস্থলের দিকে এগিয়ে চলল।

সভাস্থলের কেন্দ্রস্থলে হিল্টো সাজানো উঁচু পাথুরে মঞ্চে দাঁড়িয়ে আছে তাদের নতুন ভ্রাতা যোদ্ধাদের স্বাগত জানাতে। নেফার ভাঙ্গা, ধুলোয় ও রক্তে মাখা রথটাকে মঞ্চের নিচে থামাল এবং দুজন মানুষ নেমে এল ও ম্যারনকে উঠাতে তাকে সাহায্য করল। তারা তাকে হাথোর মন্দিরে নিয়ে গেল যেখানে টাইটা তার চিকিৎসা করার জন্য অপেক্ষা করছিল। তারা ম্যারনকে কাঠের টেবিলের উপর শুইয়ে দিল যেটা টাইটা তৈরি করেছে এবং বৃদ্ধ ম্যাগোস সাথে সাথে তার চিকিৎসা শুরু করে দিল। প্রথমে তার পাশের তলোয়ারে কাটা গভীর ক্ষতটা পরিচর্যা করল। মেরিকারার চোখের জল ম্যারনের ভাঙা ও রক্তাক্ত দেহের উপর পড়ল এবং তার ক্ষতে পড়ল।

রেড রোডের যোদ্ধারা নেফারকে সভাস্থলে ফিরিয়ে নিয়ে গেল। তারপর নেফার সিঁড়ি দিয়ে নেমে রথ থেকে দুটা চুলের বিনুনি তুলে ধরল এবং ওগুলোকে বড় কড়াইয়ের কাছে নিয়ে গেল যেটা উঁচু পাথরের বেদির কেন্দ্রস্থলে ত্রিপদীর উপরে জ্বলছিল। সে কাড়াইটার সামনে হাঁটু গেড়ে বসল এবং ঘোষণা করল, কোন শত্রু আমদের এই সম্মান ও তেজের পুরস্কারে হাত লাগাতে পারে নি। সে ওগুলোকে উঁচিয়ে ধরল যাতে সারা দুনিয়া প্রত্যক্ষ করতে পারে। এবং তারপর পরিষ্কার ও সদম্ভে বলল, আমি তাদের রেড প্রভুকে উৎসর্গ করলাম। সে চুলের বিনুণিগুলো আগুনে নিক্ষেপ করল, তারা উজ্জ্বল হয়ে পুড়ে গেল। নেফার উঠে দাঁড়াল এবং তার ক্ষতের কারণে দুর্বল হয়ে পড়ল, দুলতে লাগল যখন সে তাদের সামনে দাঁড়াল। আমি রেড রোড দৌড়িয়েছি। যদিও আমি কিছু বছর হারিয়েছি তবুও আমি আমার মিশরের দ্বৈত মুকুটের অধিকার নিশ্চিত করেছি। আমি নিজেকে ফারাও ঘোষণা করলাম। সাহস থাকলে অন্য কাউকে মুকুট দাবি করার ভান করতে দাও।

তারপর তারা তাকে আরো উৎসাহ দিল যখন রেড রোডের যোদ্ধারা তার সামনে হাঁটুগেড়ে বসল, তার ডান হাত ও পা চুম্বন করল এবং মৃত্যু ও তাদের পরের জীবন পর্যন্ত তাদের আনুগত্যের শপথ নিল।

*

দুটি বিশাল নদীর পানিতে ভেসে থাকা শহরটা তাদের সামনে একটা পদ্ম ফুলের মতো উপস্থিত হল, তোলার জন্য প্রস্তুত। এর দেয়ালগুলো পোড়া ইটের, তারা সাতাশ কিউবিট পুরু এবং এই উর্বর ও পনি সমৃদ্ধ ভূমির সবচেয়ে লম্বা পাম গাছের চাইতেও উঁচু।

তাদের মধ্যবর্তী ব্যবধান কত? টর্ক ইশতার ডি মেডিকে জিজ্ঞেস করল। শহরে যেতে কত পথ পড়ি দিতে হবে?

দশ ক্রোশ মহামান্য। ইশতার তাকে বলল। অর্ধ দিনের পথ। টর্ক তার রথের পাদানিতে লম্বা হয়ে দাঁড়াল এবং তার চোখে ছায়া দিল। ওটাই কি সে কিংবদন্তীর লৌকিক উপ্যাখ্যানের নীল ফটক? সে জানতে চাইল। সে জানে ইশতার ব্যাবিলনের রাজকীয় শহরে পনের বছর যাবৎ বাস করেছে এবং তার যাদুর বেশির ভাগই এখানে মারডুকের মন্দিরে শিখেছে।

এমনকি এ দূরত্ব থেকেও প্রবেশদ্বার মূল্যবান রত্ন-পাথরের মতো ঝিকমিক করল। গোবরাট এতো চওড়া যে দশটি রথ পাশপাশি এক সাথে প্রবেশ করতে পারে এবং সিডার কাঠের তৈরি ফটকগুলো দশ জন লোক একে অপরের কাঁধের উপর দাঁড়ালো সে উচ্চতা হবে তার চাইতেও বেশি।

এটা আসলেই নীল রঙের। টর্ক বিস্মিত হল। আমি শুনেছি এটা লেপিস ও লাজুলি দিকে আবৃত।

তা নয়, মহামান্য। ইশতাদের চেহারা বিকৃত হয়ে গেল। ওগুলো সিরামিকের টাইলস। প্রতি টাইলসে ব্যাবিলনের দুই হাজার দশটা প্রভুর একজন করে আঁকা।

টর্ক নীল ফটকের প্রত্যেক পাশের মাইলের পর মাইল দেয়াল বরাবর তাকাল। প্রতি দুই হাজার কদম পর পর প্রহরা ভবন আছে এবং নিয়মিত বিরতিতে পুরু দেয়ালগুলো ভারি করে মজবুত করা। ইশতার জানত সে কি ভাবছে।

দেয়ালের চূড়া পর্যন্ত একটা রাস্থা আছে। দুটি রথ পাশাপাশি চলার মত যথেষ্ট প্রশস্ত। এক ঘণ্টার মধ্যেই সারগন পাঁচ হাজার সেনাকে এটার যে কোন অবস্থানে দিতে পারে যা একটা দখলদার আর্মির জন্য হুমকি স্বরূপ।

টর্ক বিরক্তে শব্দ করল, বুঝাতে চাইল যে সে আকর্ষিত নয়। যে কোন দেয়ালের দুর্বলতা এবং তার নিচে সুড়ং খনন করা থাকতে পারে। আমাদের দুটোর একটি দরকার।

ভিতরে আরেকটা দেয়াল আছে, মহান ফারাও; ইশতার নরম সুরে বিড় বিড় করল। এটা প্রায় প্রথমটার মতই অভেদ্য।

যদি আমরা সরাসরি যেতে না পারি, আমরা একটা ঘোরা পথ খুঁজে নেব। টর্ক কাঁধ উঠাল। ওগুলো কি সারগনের প্রাসাদের বাগান? সে তার দাড়িতে হাত বুলিয়ে সারিবিদ্ধ ভবনগুলো নির্দেশ করল যেগুলো আকাশে বিশাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারা এতো দক্ষভাবে একটা আরেকটার উপর নির্মাণ করেছে যে দূর থেকে মনে হচ্ছে একটা ভাসমান উল্টানো পিরামিড, মনে হয় যেন তারা বিশাল ঈগলের মত ডানা ছড়িয়ে মাটির বন্ধন থেকে মুক্ত।

ইশতার তার সদ্য নীল ট্যাটু লাগানো হাত দিয়ে নির্দেশ করল। পাঁচটা সারিবদ্ধ ভবন আছে এক বিশাল উঠান ঘিরে, প্রতিটা প্রথমটার থেকে চওড়া। আন্দর মহলেরই একা রয়েছে পাঁচ হাজার কক্ষ, প্রতিটি সারগনের একটা করে স্ত্রীর জন্যে। তার রত্নভান্ডার প্রাসাদের নিচে গভীর কক্ষে সমাহিত করা। এটা একটা মানুষের মাথার সমান উচ্চতা করে সোনা দ্বারা প্যাক করা।

তুমি কি ঐ বিস্ময়গুলো তোমার নিজের চোখে দেখেছ? টর্ক তাকে চ্যালেঞ্জ করল।

 আন্দর মহল দেখি নি। ইশতার স্বীকার করল, কিন্তু আমি রত্নের প্রধান ভন্টে প্রবেশ করেছিলাম এবং আমি আপনাকে সোজাসুজি বলি, রাজা যিনি একজন প্রভু, তার যা আছে আপনার সব আর্মির পর্যাপ্ত ওয়াগন নেই এতো রত্ন বহন করে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

এবং আমি তোমাকে সোজাসুজি বলি, ইশতার দি মেডি, যে আমি সব সময় নতুন ওয়াগন তৈরি করতে পারি।

টর্ক তার মাথা পিছনে নিয়ে পশুর মতো উচ্চশব্দে হাসল।

ব্যাবিলনে সৈন্য নিয়ে যাওয়াই একটা দীর্ঘ জয়, বিজয়ের অভঙ্গুর রঞ্জু। তাদের রান এর সাথে সাক্ষাত হয়েছিল, সারগনের বড় ছেলে, বাহর- আল-মিলহ এর তীরে; টর্ক ও নাজার রথগুলোর মাঝামাঝি। তারা তার আর্মিকে তুলার মতো ধূলিসাৎ করে দিয়েছে এবং তাদের হ্রদে নিক্ষেপ করেছে যতোক্ষণ না হ্রদের পানি রক্তে লাল হয়। মরদেহগুলো এক পার থেকে অন্য পার পর্যন্ত ছেয়ে যায়।

তারা রান এর ছিন্ন মস্তক তার পিতার কাছে পাঠিয়েছে একটা বর্শায় গেঁথে। দুঃখে পাগল হয়ে সারগন ফাঁদে পা দিয়েছে যা তারা তার জন্য প্রস্তুত করেছিল তারা। যখন নাজা তাকে সামনে থেকে মোকাবেলা করতে তাকে প্রলুব্ধ করল, টর্ক তখন দক্ষিণ দিক ঘুরে এসেছে, এক হাজার রথ নিয়ে পিছনে। যখন সারগন তাদের মালামালের গাড়ি রক্ষা করতে ঘুরে ফিরল, নিজেকে সে ব্রোঞ্জের চকচকে বৃত্তের মধ্যে পেল।

সারগন কোন মতে পঞ্চাশটি রথ নিয়ে পালাল কিন্তু সে ২০০ রথ ফেলে গিয়েছে এবং এগার হাজার লোক তার পিছনে। টর্ক বন্দিদের খোঁজ করল। যা করতে তার দুদিন সময় লাগল। কিন্তু সে প্রতিটি লোককে বলি দিল, এবং অমার্জিত আনন্দ পেল যখন তার প্রতিটি শিকারের চোখের সামনে তাদের ছিন্ন অঙ্গ ঝুলল। তারপর সে তার শিকারদের রক্তক্ষরণে মরার অনুমতি দিয়েছে, তাদের রক্ত সেথের নামে উৎসর্গকৃত, ক্ষুধার্ত প্রভু যে এরকম নিষ্ঠুরতা ভালোবাসে। টর্ক ছিন্ন পুরস্কারগুলো সারগনকে পাঠাল লবণের প্যাকেট করে একশ সিডার কাঠের সিন্দুকে ভরে। একটা সুকৌশল বিপদ সংকেত, যে যখন টর্ক ও নাজা ব্যাবিলনে আসবে সে কি আশা করতে পারবে।

ব্যাবিলন দুই নদীর মাঝখানে সরু নলাকার ভূমির উপর নির্মিত, ইউফ্রেতিস পশ্চিমে এবং টাইগ্রিস পূর্বে। তুড়িৎ পিছু হঠার কারণে সারগন সেতুগুলো ধ্বংস করতে সক্ষম হল না। যে কোন ক্ষেত্রে ঐ ভারি পুড়ানো ইটের পিলার যেগুলোর উপর তারা নির্মিত ভাঙ্গতে এক সৈন্যবাহিনী লাগবে। সারগনের আর কোন সেনাবাহিনী ছিল না, তার একটা শেষ পদাতিক বাহিনী অবশিষ্ট ছিল কেবল সেতুগুলোকে রক্ষা করার জন্য, কিন্তু তারা মনোবলহীন এবং তাদের রথ ছিল না তাদের। তারা দুই ফারাও এর বিরুদ্ধে বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি। টর্ক জীবিতদের হাত ও পা বেঁধে তাদের সেতুর কেন্দ্রস্থলের উঁচু স্থান থেকে প্রশস্ত নদীতে ফেলে দিয়েছে এবং মিশরের সৈন্যরা পাচিলে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে তাদের আপন আনন্দ অনুভব করল যখন তারা ডুবল। এখন ব্যাবিলন তাদের সামনে। এক বছরের একটু বেশি লাগল যখন তারা অ্যাভারিস থেকে যাত্রা শুরু করেছে।

তুমি সুরক্ষাগুলো জান ইশতার। তুমি তাদের নকশা করতে সাহায্য করেছিলে। শহর পতনে কত সময় লাগবে? টর্ক অস্থিরভাবে জিজ্ঞেস করল। আমার কত সময় লাগবে দেয়ালগুলো ভাঙ্গতে।

দেয়ালগুলো অজেয়, মহামান্য। ইশতার বলল।

আমরা দুজনেই জানি এটা সত্য নয়, টর্ক তাকে বলল। যথেষ্ট সময় লোক জন ও সংকল্প থাকলে কোন দেয়াল তৈরি হয় না যা ভাঙ্গতে পারা যায় না।

এক বছর, ইশতার চিন্তিতভাবে বিড়বিড় করল। অথবা দুই বছর, হয়তোবা তিন। কিন্তু তার ট্যাটু খুঁচিত চেহারায় একটা প্রতারণা ভাব রইল এবং তার চোখগুলো ছিল ধূর্ত ও কুটিল।

টর্ক হাসল এবং খেলার ছলে ইশতারের পিচ্ছিল চোখা দাড়ির এক মুঠো টেনে ধরল। সে তা পাকাল যতোক্ষণ না ব্যথায় তার চেহারা বিকৃত হয়ে গেল এবং তার চোখে পানি এল। তুমি আমার সাথে খেলতে চাও যাদুকর? তুমি তো জানই আমি একটা ভালো খেলা খেলতে কতো ভালোবাসি,তাই না?

দয়া করুন মহান মিশর! ইশতার অনুনয় করল। টর্ক তাকে এতো জোরে ধাক্কা দিল যে সে প্রায় রথের পাদানি থেকে পড়ে যাচ্ছিল এবং নিজেকে স্থির রাখতে ড্যাশবোর্ডের পাশ ধরতে হলো তাকে।

এক বছর, তুমি বললে? দুই? তিন? আমার এখানে বসে থাকার অত সময় নেই এবং ব্যাবিলনে সৌন্দর্য ও বিস্ময়গুলো দেখার আমার তাড়া আছে। ইশতার দি মেডি এবং তুমি জান এর অর্থ কি, তাই না?

আমি জানি, প্রভুর ক্ষমতা অসীম এবং আমি একজন মানুষ ছাড়া কিছুই না। নমনীয় ও গরিব।

গরিব! টর্ক তার চেহারার উপর চিৎকার করল। সেথের কসম, ভন্ড তুমি ইতোমধ্যেই আমার এক লাখ সোনা চোষে নিয়েছ এবং এটার জন্য আমি কি দেখতে পারি?

আপনার একটা শহর ও একটা রাজত্ব আছে। মিশরের পর দুনিয়ার সবচেয়ে ধনী, আমি যা আপনার পায়ে লুটিয়েছি। সে এখন টর্ককে ভালো করে চেনে, জানে ঠিক কতদূর সে যেতে পারে।

আমি শহরটির চাবি চাই, টর্ক তার চেহারা খেয়াল করল, খুশি হল যা সে ওখানে দেখল। সে ইশতারকে ততোখানিই চেনে যতোখানি যাদুকর তাকে চেনে।

এটা হয়তো একটা সোনার তৈরি চাবি হবে; ইশতার গভীর চিন্তিত ভাব নিয়ে বলল। সম্ভবত তিন লাখ সোনা?

টর্ক হাসির একটা বিশাল বিস্ফোরণ বেরিয়ে যেতে দিল এবং তার মাথা বরাবর বর্ম পরিহিত মুঠি দিয়ে আঘাতের নিশানা করল। এটা ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে ছিল না এবং ইশতার ওটার নিচে সহজেই মাথা নিচু করল।

তিন লাখ দিয়ে আমি আরেকটা সেনা বাহিনী কিনতে পারি। টর্ক তার মাথা নাড়াল এবং তার দাঁড়ির সুতাগুলো প্রজাপতির মেঘের মতই নাচল।

বন্ধু সারগনের রত্নভান্ডারে একশ লাখ পড়ে আছে। একশ থেকে তিন বাদ, একটা ক্ষুদ্র মূল্য।

তা শোধ করার জন্য আমাকে শহরটা দাও। ইশতার এটা আমাকে তিনটা পূর্ণ চাঁদের মধ্যেই দাও এবং আমি তোমাকে সারগনের ভাণ্ডার থেকে দুই লাখ সোনা দেব। সে ওয়াদা করল।

যদি আমি এটা আপনাকে পরবর্তী পূর্ণ চাঁদের আগেই তা দিই? ইশতার কার্পেট ব্যবসায়ীদের মতো তার হাতগুলো এক সাথে ঘষল।

এই কথায় টর্কের দাঁত বের করা হাসি তার চেহারায় আছড়ে পড়ল এবং সে গম্ভীরভাবে বলল, তাহলে তুমি তোমার তিন লাখ পাবে। একটা সুরক্ষিত ওয়াগনের দল বহরও পাবে তাদের বয়ে নেওয়ার জন্য।

*

দুই ফারাও-এর আর্মিরা নীল ফটকের সামনে জামায়েত হল এবং টর্ট সারগনের কাছে একজন দূত পাঠাল যেন শহরটি তৎক্ষণাৎ আত্মসমর্পণ করে। …এ রকম অসাধারণ শৈল্পিক নিদর্শন আগুন থেকে রক্ষার করতে এবং আপনার লোক ও পরিবার এবং জনগণকে তলোয়ার থেকে। যখন টর্ক কৌতুকপূর্ণভাবে তার চাহিদা ভাষায় প্রকাশ করল জবাবে সারগন একগুয়ে ও অবাধ্যতা দেখিয়ে বার্তা বাহকের ছিন্ন মাথা টর্কের কাছে ফেরত পাঠাল। প্রাথমিক প্রাপ্তি শেষ হওয়ার পর টর্ক ও নাজা দেয়ালগুলোকে একবার প্রদক্ষিণ করল। ব্যাবিলিয়নীদের তাদের পূর্ণ শক্তি ও বীর্য দেখানোর অনুমতি দিল।

ইশতার তখন টর্ক ও নাজার সামনে একটি মানচিত্র এনে রাখল।

এটা তোমার অধিকারে কীভাবে এল? নাজা জানতে চাইল।

বিশ বছর আগে রাজা সারগনের আদেশে আমি শহরটা পর্যবেক্ষণ করি এবং এ মানচিত্রটা আমার নিজ হাতে আঁকি। ইশতার জবাব দিল। অন্য কেউ এতো নিখুঁত ও সুন্দর করে পেতে পারবে না।

যদি সে তা অর্পণ করেছিল তবে কেন তুমি তার সারগনকে দাও নি?

আমি দিয়েছি। ইশতার মাথা ঝাঁকালো।

আমি তাকে নিম্নমানের চিত্রটা দিয়েছিলাম যখন গোপনে আমি আসল কপিটা রেখে দিই আপনারা আজ যা আপনাদের সামনে দেখেছেন। আমি জানতাম কেউ এক দিন আমাকে আরো বেশি দিবে যা সারগন দিয়েছে তার থেকেও অনেক বেশি।

আরো এক ঘণ্টা তারা মানচিত্রটা পর্যবেক্ষণ করল, মাঝে মাঝে গুন গুন করে মন্তব্য করল। কিন্তু বেশির ভাগ সময় চুপ ও নিমগ্ন হয়ে রইল তারা। যুদ্ধের জেনারেল হিসাবে যুদ্ধের ময়দানে বৈশিষ্ট্যের জন্য পেশাদারীত্ব পূর্ণ চোখ দিয়ে তারা দেওয়ালগুলো, টাওয়াগুলো ও দুর্গগুলোর গভীরতা ও শক্তির প্রশংসা করতে সক্ষম হল যেগুলো শব্দাতী জুড়ে এক স্তরের পর আরেক স্তর বসিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

অবশেষে টর্ক টেবিল থেকে উঠে দাঁড়াল।

কোন দুর্বলতা নেই যা আমি ভবিষ্যৎ বাণী করতে পারি। যাদুকর! তুমি প্রথম বারের মতো সঠিক। ঐ দেয়াল গুড়ো করে ভেঙে প্রবেশ করতে তিন বছরের কঠিন কাজ। তোমাকে এটার চাইতে ভালো করতে হবে তোমার তিন লাখ অর্জন করতে।

পানি, ইশতার ফিসফিস করে বলল। পানির দিকে দেখুন।

আমি পানির দিকে দেখেছি; নাজা তার দিকে চেয়ে হাসল; কিন্তু তা ছিল একটা সাপের হাসি, ঠাণ্ডা এবং পাতলা ঠোঁটের। খালগুলো শহরের প্রতিটি ভবনে যথেষ্ট পানি সরবরাহ করে, সারগনের ছয়টা ভবনের বাগান বাড়িতেও, যেগুলো আকাশ পর্যন্ত বিস্তৃত। শহরটাকে পানি দিচ্ছে একশ বছর ধরে।

ফারাওরা সর্বদর্শী, সর্ব জ্ঞানী। ইশতার তাকে মাথা নিচু করে অভিবাদন জানল, কিন্তু এই পানি কোথা হতে আসে?

বিশাল দুই নদী থেকে। নীলের পর দুনিয়ার সবচেয়ে বিশাল নদী ওগুলো। একটা পানির সরবরাহ যা এই একশ বছরেও ব্যর্থ হয় নি।

কিন্তু কোথা দিয়ে পানি শহরে ঢোকে? কিভাবে এটা বেরিয়ে যায়, নিশ্চয়ই এ দেয়ালগুলোর নিচ অথবা উপর দিয়ে? ইশতার জোর দিল এবং নাজা ও টর্ক এক অর্থপূর্ণ উপলব্ধির দৃষ্টি বিনিময় করল।

*

ব্যাবিলনের অর্ধমাইল উত্তরে, শহরের দেয়ালের বাইরে, ইউফ্রাতিসের পূর্ব তীরে, একটা স্থানে যেখানে নদী প্লাবিত হয় ও মন্থর গতিতে বয়ে গেছে, যেখানে নিনুরতা মন্দিরটি অবস্থিত; ইউফ্রাতিসের সিংহ মাথার ডানাওয়ালা প্রভু যে। এটা পাথরের স্তম্ভের উপর নির্মিত তা, নদীর মধ্যবর্তী বর্ধিত স্থানে। প্রভুর নানা রকম প্রতিমূর্তি একটা বিশেষ দেয়ালে অঙ্কিত যা ভেতরের চারটা দেয়াল ঘিরে আছে। প্রবেশে পথের উপরে আক্কাডিয়ান ভাষায় পাথুরে দেয়ালে সবার জন্য একটা সতর্ক বাণী খোদাই করা, যাতে বলা আছে যারা গোপন কুঠরী আক্রমণ করার সাহস করবে তাদের উপর প্রভুর কঠোর দণ্ড নেমে আসবে।

ইশতার প্রবেশ পথের উপর একটা মন্ত্র চালনা করল অভিশাপটা অকার্যকর করতে, দুজন বন্দীর গলা লম্বালম্বি কেটে এবং তাদের রক্ত তোরণে ছড়িয়ে দিয়ে। পথ পরিষ্কার হতেই পিছনে বিশ জন জন সৈন্য নিয়ে সে মন্দিরের উঠানে দ্রুত পদক্ষেপ প্রবেশ করল সেখানে লাল পোশাক পরিহিত নিনুরতার যাজকেরা জমায়েত হয়েছিল। তারা মন্ত্র পড়ছিল এবং অঙ্গভঙ্গি করছিল, অনাহুত প্রবেশকারীদের দিকে তারা হাত নাড়ছে, ইউফ্রাতিসের পানি তাদের পথে ছড়িয়ে নিনুরতাকে আহ্বান করছে একটা অদৃশ্য যাদুর দেয়াল তৈরি করে টর্ককে ফিরিয়ে দিতে।

বিনা বাধায় টর্ক দেয়ালের ভেতর দিয়ে বড় বড় পদক্ষেপ এগিয়ে প্রধান যাজককে হত্যা করল, বৃদ্ধ লোকটার গলার মধ্যে এক আঘাতেই। তার এই পরিণতি দেখে অন্য যাজকেরা নিজেদেরকে তার সামনে সমর্পণ করল আনুগত্য প্রকাশ করতে।

টর্ক তার তলোয়ার নিচু করে ক্যাপ্টেনের উদ্দেশ্যে মাথা ঝুকালো, যে রক্ষীদের কমান্ড ছিল। তাদের সবার হত্যা নিশ্চিত কর, কেউ যেন বেঁচে না যায়।

তারাপ দ্রুত তার আদেশ পালন করল এবং আঙ্গিনাটা রক্তিম কাদার দেহে ভরে গেল। টর্ক তখন আদেশ দিল। তাদের নদীতে নিক্ষেপ করো না। আমি চাই না শহরের রক্ষী তাদের ভেসে যেতে দেখুক এবং অনুমান করুক আমরা কোথায় আছি। তারপর সে ইশতারকে দেখতে ঘুরল, সে তখন আঙ্গিনায় প্রবেশ করে আরেকটা মন্ত্র প্রয়োগ করছে প্রভুর অশুভ প্রভাব ব্যর্থ করে দিতে যা তারা আহ্বান করছিল। চার কোনায় সে ধূপ পোড়াল, যা পুরু পিচ্ছিল ধোয়া নির্গত করল যা নিনুতার অপছন্দনীয় এবং টর্ক আনন্দে তাকে উৎসাহ দিয়ে গেল। পবিত্রকরণ সম্পন্ন হলে ইশতারের মন্দিরের পবিত্র স্থান দিয়ে পথ দেখল এবং টর্ক ও তার সৈন্যরা তাকে অনুসরণ করল, রক্তমাখা প্রাসাদ পেরিয়ে।

তাদের কীলক দেওয়া স্যান্ডেল উঁচু, গুহাময় হলের অন্ধকার গুপ্তস্থানে তা এমনভাবে প্রতিধ্বনি তুলল যে এমনকি টর্কও একটা ধর্মীয় শিহরণ অনুভব করল যখন তারা প্রভুর প্রতিমূর্তির সামনে এগিয়ে গেল। সিংহের মাথা নিরবে দাঁত বের করে গর্জন করছে যেন এবং পাথুরে ডানাগুলো প্রসারিত। ইশতার প্রভুর উদ্দেশ্যে আরেকবার প্রার্থনা করল তাকে শান্ত করতে। তারপর টর্ককে নিয়ে গেল সরু পথ দিয়ে, পিছনের দেয়াল ও মূর্তির পিঠের মধ্যে দিয়ে। এখানে সে লোহার গ্রিলে ঘেরা গেইট খুঁজে পেল যা ভালোমত নিনুরতার দেহকে ঘিরে তৈরি। টর্ক গ্রিলের দন্ডগুলো ধরে তাদেরকে তার ভালুকের শক্তি দিকে নাড়াল। তারা নড়ল না।

আরেকটা অধিকতর পথ আছে, সর্বজ্ঞানী ফারাও, ইশতার মিষ্টি করে পরামর্শ দিল। চাবিটা প্রধান যাজকের দেহের উপর হবে।

ওটা আন। টর্ট তার রক্ষীদের ক্যাপ্টেনকে উচ্চ কণ্ঠে আদেশ দিল যে দৌড়ে গেল, যখন ফিরল তার হাতে রক্ত লেগেছিল। সে এক গুচ্ছ ভারি চাবি বহন করছে, তাদের কোনটা হাতের সমান লম্বা। টর্ক গ্রিলের তালায় দুটা দিয়ে চেষ্টা করল এবং দ্বিতীয়টা প্রাচীন এই নির্মাণশৈলীকে ঘুরিয়ে দিল। ফটকটা ক্যাচ ক্যাচ করে খুলে গেল।

টর্ক উঁকি দিয়ে দেখল একটা প্যাচানো সিঁড়ি অন্ধকারে নেমে গেছে। নীবর ফাঁকা স্থানের বাতাসটা ঠাণ্ডা ও স্যাঁত-সেঁতে এবং সে অনেক নিচে বয়ে চলা পানির আওয়াজ শুনল।

মশাল আনন? সে আদেশ করল; এবং ক্যাপ্টেন তার দলের চারজনকে তার মাথা উপর মশাল ধরে রাখতে বলল। টর্ক সরু অরক্ষিত সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করল। সে সাবধানে এগোল, কারণ সিঁড়ির ধাপগুলো ছিল কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল। বয়ে যাওয়া পানির শব্দ জোরালো হল যখন সে নেমে গেল। ইশতার ঘনিষ্টভাবে তাকে অনুসরণ করল।

এ মন্দির ও এর নিচের টানেলগুলো প্রায় পাঁচ শত বছর পূর্বে নির্মিত। সে টর্ককে বলল।

অবশেষে টর্ক তলদেশে পৌঁছল এবং একটা পাথুরের ভিত্তিতে নামল। কম্পমান মশালের আলোতে সে দেখল তরা একটু বাঁকানো ছাদের প্রশস্ত টানেলে দাঁড়িয়ে আছে। ছাদ ও দেয়ালগুলো সিরামিকের টাইলসের উপর জ্যামিতিক ভাবে দাঁড়ানো। টানেলের উভয় প্রান্ত গভীর অন্ধকারে হারিয়ে গেছে।

ইশতার দেয়াল থেকে একটুকরো ফাংগাস তুলে প্রবাহের মধ্যে ছুঁড়ে মারল, যা দ্রুত নালার নিচে বয়ে নিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। এটা একজন মানুষের চেয়ে বেশি গভীর। সে বলল এবং টর্ক রক্ষীদের ক্যাপ্টেনের দিকে তাকাল যেন সে ঐ বক্তব্যটা বিবেচনা করতে চায়।

এই পায়ে চলার পথ যার উপর আমরা দাঁড়িয়ে আছি তা পুরো নালা জুড়ে বিস্তৃত। ইশতার ব্যাখ্যা করল। যাজকেরা যারা টানেলটা মেরামত করে তারা দ্রুত চলাচলের জন্যে এটা ব্যবহার করে।

এটা কোথা হতে শুরু এবং এর শেষ কোথায়? টর্ক জানতে চাইল।

নদী তটে একটা নিষ্কাশন কূপ রয়েছে, মন্দিরের স্তম্ভের নিচে, যার মধ্যে দিয়ে পানি প্রবাহিত হয় সেখানে শুরু এবং নালার শেষ প্রান্তে নিনুরতার আরেক মন্দির যা ব্যাবিলনের দেয়ালের অভ্যন্তরে অবস্থিত নীল ফটকের কাছে শেষ হয়েছে; ইশতার ব্যাখ্যা করল। এক মাত্র যাজকেরাই এই টানেলের খবরটা জানে। অন্যরা বিশ্বাস করে পানিটা প্রভুর একটা দয়া। এটা মন্দিরের পরিসরের ঝর্ণা হতে বের হওয়ার পর পানির তোলার চাকার দ্বারা উঠিয়ে প্রাসাদের বাগানগুলোতে অথবা শহরের প্রতিটি কোয়ার্টারের খালগুলোতে পাঠানো হয়।

আমি বিশ্বাস করি, ইশতার দি মেডি, যে তুমি তোমার তিন লাখ অর্জন করার খুব কাছে। টর্ক আনন্দে হাসল। তোমার জন্য এখন যা শুধু অবশিষ্ট তা হচ্ছে এই খরগোশের গর্ত দিয়ে আমাদের পথ দেখানো এবং শহরের বিস্ময়কর সম্পদ, বিশেষ করে রত্ন ভান্ডারের কাছে নিয়ে যাওয়া।

*

টর্ক যুক্তি দেখাল সে শহরের দেয়ালের ভেতরের নিনুরতার প্রধান মন্দিরের যাজকেরা নিয়মিত নদীর মন্দিরের যাজকদের সাথে যোগাযোগ রাখত।

প্রায় নিশ্চিতভাবে তারা এই নালাকে এ দুই গোত্রের মধ্যে সড়ক হিসেবে ব্যবহার করত। আর এটা আবিষ্কার করতে সময় লাগবে না সে নদীর মন্দিরে তাদের ভ্রাতাগনের খারাপ কিছু হয়েছে। তাকে তার পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

টর্ক তার সবচেয়ে ভালো ও বিশ্বস্ত দুইশ লোক বাছাই করল, সবাই তার নিজের সিংহ দলের সদস্য। সে তাদের দুই ভাগে ভাগ করল। যখন তারা শহরের রাস্তায় যুদ্ধ করবে তখন প্রথম দলটা নীল ফটক পাহারায় থাকবে এবং তা খুলে রাখবে যতক্ষণ না এটা দিয়ে ফারাও নাজা কিয়াফানের প্রধান সৈন্য বাহিনী প্রবেশ করতে পারে। দ্বিতীয়টা খুব ছোট দল এর কাজ প্রাসাদে তাদের অবস্থান নেওয়া এবং তারা রত্ন দখল করবে সারগনের তা লুকানোর আগেই। যদি তা বয়ে নিতে এক হাজার ওয়াগনের দরকারও হয়। ইশতার তাকে আশস্ত করল।

বাছাই করা ২০০ জনকে সারগনের আর্মির পোশাক পরানো হল যা বন্দীদের ও যুদ্ধের ময়দানের মৃতদের থেকে নেওয়া। তারা গোড়ালির গাট পর্যন্ত লম্বা ডোরাকাটা কাপড় পড়ল, কোমরে বেল্ট লাগানো এবং লম্বা হেলমেট পরল। ইশতার তাদের দেখাল কি ভাবে দাঁড়িয়ে মেসোপটেমিয়ার ঐতিহ্য অনুযায়ী কোমর বাঁকা করতে হবে। তারা তাদের শত্রুদের থেকে নিজেদের আলাদা করতে শুধু মাত্র একটা লাল কাপড়ের একটা ফালি পড়ল। আর্মির অনুলেখকেরা দ্রুত শহরের মানচিত্রের অতিরিক্ত কপি বানাল এবং উভয় ডিভিশনের ক্যাপ্টেনদের তা দিল যাতে তারা রাস্তা ও ভবনের অবস্থান জানতে পারে। সন্ধ্যার মধ্যে তারা সবাই জেনে গেল তাদের কি করতে হবে, একবার শহরে প্রবেশের পর।

অন্ধকার নামতেই নাজা শান্তভাবে তার বিশাল সৈন্য বাহিনী নিয়ে নীল ফটকের বাইরে অবস্থান নিল, শহরে প্রবেশের জন্য প্রস্তুত। টর্কের লোকেরা তা খুলে দিলেই তার ভেতরে প্রবেশ করবে।

নিনুরতার নদী মন্দিরের উঠানে টর্ক তার ডিভিশন জমা করল। দিনের আলো থাকতেই সে ও ইশতার তাদেরকে এক সারিতে সিঁড়ি দিয়ে নালার সমতলে পথ দেখাল।

কোন তাড়াহুড়া ছিল না, কারণ তাদের এই ভূগর্ভস্ত যাত্রা শেষ করতে যথেষ্ট সময় হাতে রয়েছে। তাদের কীলক দেওয়া স্যান্ডেলের আওয়াজ চাপ দেওয়া হয়েছে চামড়ার মোজা দিয়ে তাই তাদের ভারি পদক্ষেপ অন্ধকার টানেলে প্রতিধ্বনি তুলল না। তার নিরবে এগিয়ে গেল, প্রতি দশজন একটা করে মশাল নিয়ে। তাদের বাম পাশে পানির অনন্ত প্রবাহ অন্ধকারে কলকল শব্দে বয়ে চলেছে। প্রতি এক হাজার কদম পর পর ইশতার প্রভু নিনুরতাকে উপহার ও মন্ত্র দিয়ে শান্তি করার জন্যে থামলো এবং সামনের পথবে যাদুর বাঁধা-বিঘ্ন থেকে মুক্ত করতে যা মৃত যাজকেরা স্থাপন করেছিল।

তুবও এই নিরব হাঁটাটা টর্কের কাছে কাছে সীমাহীন মনে হলো এবং এটা একটা বিস্ময়ের মতো এল যখন ইশতার হঠাৎ করেই থামল ও সামনে নির্দেশ করল, চকচকে সিরামিকের দেয়াল থেকে আলোর ক্ষীণ প্রতিফলন হল। টর্ক তাকে অনুসরণ করা লোকদের থামার ইশারা করল। তারপর, ইশতারের সামনে আগ বাড়ল। তাদের নিজেদের পোশাকের উপর তারা পাগড়ি ও রক্তে মাখা পোশাক পড়ল যা হত্যা করা যাজকদের শরীর থেকে নেওয়া হয়েছে।

যখন তারা আলোর উৎসের দিকে গেল, তারা আরেকটা গ্রিল ঘেয়া ফটক দেখল এবং একটা বিকৃত ছায়া ফটকের উপরে স্থাপিত মশালের আলো থেকে দেয়ালের উপর পড়েছে। যখন তারা কাছাকাছি গেল তারা দেখল যে গ্রিলের অন্য পাশে দুজন পোশাক পরিহিত যাজক টুলের উপর বসে আছে; তারা বাও খেলায় নিমগ্ন। ইশতার তাদের নরম সুরে ডাকতেই তারা চোখ তুলল। মোটা জন দাঁড়াল এবং ফটকের দিকে দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে দেখল।

তুমি সিন্নার কাছ থেকে এসেছো? সে জিজ্ঞেস করল।

হ্যাঁ। ইশতার আশ্বস্ত করতে জবাব দিল।

তুমি দেরি করেছ। আমরা রাত নামা থেকে অপেক্ষা করছি। তোমার এখানে কয়েক ঘণ্টা আগে থাকা উচিত ছিল। প্রধান যাজক, অসন্তুষ্ট হবে।

আমি দুঃখিত; ইশতার অনুতাপ প্রকাশ করল। কিন্তু তুমি সিন্নাকে চেন।

মোটা যাজকটা মুখ টিপে হাসল, হ্যাঁ, আমি সিন্নাকে চিনি। সে আমাকে ত্রিশ বছর আগে আমার দায়িত্বগুলো শিখিয়েছিল।

সে তারা চাবি ফটকের তলায় লাগল এবং তারপর তা খুলল। তোমাকে দ্রুত করতে হবে, সে বলল। টর্ক তার চেহারা ঢেকে সামনে এগোল, পোশাকের ভাঁজে তার তালোয়ার নিয়ে। তাকে যেতে দিতে যাজক দেয়াল ঘেঁষে সরে দাঁড়াল। টর্ক তার সামনে থামল এবং ফিসফিসিয়ে বলল, নিনুরতা তোমাকে পুরস্কার দিবে, ভ্রাতা। এবং তার চিবুক দিয়ে হাতের তলোয়ারটা ঢুকিয়ে তার মস্তক পর্যন্ত টেনে এক আঘাতে তাকে হত্যা করল।

বিপদসংকেতের এক চিৎকার দিয়ে, তার সঙ্গী পিছিয়ে গেল, বাও বোর্ড ফেলে দিল ও গুটিগুলো স্তম্ভের উপর ছড়িয়ে পড়ল। দুটি বড় পদক্ষেপে সে তার কাছে গেল এবং তার মাথা ধর থেকে আলাদা করল।

আর কোন শব্দ না করে যাজকটা পিছনের অন্ধকার নর্দমায় পড়ে গেল এবং তার কাপড় বেলুনের মতো ফুলে তাকে ভাসিয়ে রাখল, সে পানির টানের নিচে চলে গেল।

টর্ক একটা নরম শিষ দিতেই চাপা শব্দে তার লোকজন ভোলা তলোয়ার নিয়ে মশালের আলোয় আগে বাড়ল। ইশতার তাদের পথ দেখাল যতোক্ষণ না তারা আরেকটা পাথরের সিঁড়ির সামনে পৌঁছাল। তারা দ্রুত তা বেয়ে উঠে গেল এবং একটা ভারি পর্দার কাছে পৌঁছল যা তাদের রাস্তা আটকে আছে। ইশতার এটার কিনারে দিয়ে দেখল এবং মাথা নাড়ল, মন্দির খালি।

টর্ক প্রবেশ করে তার চারপাশটা ভালো ভাবে দেখল, এই মন্দিরটা আরো বৃহৎ ও অধিক মনোহর নদীর মন্দির থেকে। সিলিং এতো উঁচু যে পঞ্চাশটা মশালের আলো ক্ষীণ হয়ে গেল তার কাছে। তাদের নিচে প্রভুর প্রতি মূর্তি গুপ্তস্থানের মুখে গুটিসুটি মেরে আছে যেখান থেকে নালা পূর্ণ শক্তিতে দানবীয় ঝর্ণার বেগে প্রবাহিত হচ্ছে একটা গভীর পুকুরে সাদা পাথরের উপরি স্তর দিয়ে। যাজকটির মৃত দেহ যার মাথা টর্ক প্রায় আলাদা করে দিয়েছে পুকুরের জলে ভাসছে, যেখান থেকে পানি খালে পড়ছে ও তা শহরে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। যদিও বাতাসে ধূপের পুরো গন্ধ, মন্দিরের বিশাল হলটা শূন্য।

টর্ক তার লোকদের সামনে আসার ইশারা করল। তারা টানেল থেকে বেরিয়ে এসে তাদের অধিনায়কের পিছনে সারি বদ্ধ হয়ে দাঁড়াল। টর্ক হাত উঠিয়ে সংকেত দিতেই তারা দুলকি চালে সামলে বাড়ল। ইশতার ছোট দলটাকে নেতৃত্ব দিয়ে হলের একটা পাশের দরজা দিয়ে বারান্দায় নিয়ে গেল যেটা সারগনের প্রসাদের সাথে সংযুক্ত। এদিকে টর্ক তার লোকদের মন্দিরের পিছনের সরু চত্বরে নিয়ে গেল এবং মানচিত্রটা তার যতোখানি মনে আছে সেই অনুযায়ী দ্বিতীয় রাস্তা চওড়া চত্বরের দিকে ঘুরল, তার জানা মতে যা নীল ফটকের দিকে চলে গেছে। তখনও অন্ধকার ছিল এবং তারাগুলো ঘুমন্ত শহরের উপরে চমকাচ্ছে।

তারা পথে একাধিক সংখ্যক মুখ ঢাকা অবয়বের সাথে সাক্ষাত করল, একজন বা দুজন মাতাল হয়ে দুলছে কিন্তু অন্যরা রাস্তা ছেড়ে অস্ত্রধারী যোদ্ধাদের কালো সারিটাকে যেতে দিল। একজন মহিলা বাচ্চা কোলে তাদের পিছন থেকে ডেকে বলল, মারডুক তোমাদের সহায় হোক, সাহসী সৈনিক এবং আমাদেরকে টর্ক থেকে নিরাপদ রাখুন, মিশরের নাপিতটা থেকে। টর্ক আক্কাডিয়ান ভাষা তার কথার অর্থ বোঝার মতো যথেষ্ট বুঝল এবং তার দাড়ির আড়ালে হাসল।

তাদের নকল বেশে, তারা কোন বাধা ছাড়াই রাস্তার শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেল, সামনে প্রবেশ দ্বার উন্মোচিত হল, তখন একটা কণ্ঠ রক্ষী ভবনের দরজা থেকে তাদের উদ্দেশ্যে বলল,

দাঁড়াও! আজ রাতের সংকেতটা দাও। তোরণের পিছন থেকে পাঁচ জন লোক মশালের আলো হাতে বেরিয়ে এল। কিন্তু তারা প্রস্তুত ছিল না। হেলমেট ও দেহ বর্ম ছাড়া, তাদের চোখ ফোলা এবং তার মুখগুলো এখনো ঘুমাচ্ছন্ন।

রাজা সারগনের কাছে মিশরের ফারাওদের পক্ষ থেকে সম্মানিত দূত; টর্ক তার কাঁচা ভাষায় বিড়বিড় করল এবং তার দলকে আক্রমণ চালাতে হাত দিয়ে সংকেত দিল। ফটক খোল এবং সরে দাঁড়াও! সে সোজাসুজি দলানের তার দিয়ে দৌড় দিল।

একমুহূর্তের জন্য লোকটি অনিশ্চিতভাবে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর সে তলোয়ারের ঝলক দেখল এবং জরুরিভাবে চিৎকার দিল, অস্ত্র তুলে নাও। রক্ষীদের বের হতে বলো। কিন্তু খুব দেরি গেছে। টর্ক এক আঘাতে তাকে তার জায়গায় ফেলে দিল এবং তার লোকেরা অন্য রক্ষীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল, তারা নিজেদের আত্মরক্ষার কোন সুযোগ পেল না। কিন্তু গোলমাল ফটকের উপরের পাঁচিলের রক্ষীদের সর্তক করে দিয়েছে তততক্ষণে। তারা বিপদ সংকেতের ঘণ্টা বাজাল এবং তাদের বল্লম আক্রমণকারীর দিকে ছুরে মারল।

তাদেরকে ওখান থেকে টেনে বের করো। টর্ক আদেশ করল এবং তার অর্ধেক লোক ঢালু পথের দিকে ছুটল ফটকের প্রত্যেক পাশের পাঁচিলে পৌঁছানোর জন্যে। তারা তৎক্ষণাৎ দেয়ালের রক্ষীদের সাথে প্রচন্ড ও উন্মক্ত লড়াইয়ে জড়াল, টর্ক তার সাথে অর্ধেক সৈন্য রাখল।

ইশতার ফটকের কক্ষটা বর্ণনা করেছিল যার মধ্যে জটিল যন্ত্রপাতি রাখা, ভারি কল ও কপিকলের একটা সিস্টেম, যা ভারি ফটকগুলোকে চালায়। টর্ক তার লোকদের প্রবেশ পথের দিকে নিয়ে গেল ভেতরের রক্ষীরা তা বন্ধ করে দেওয়ার পূর্বে এবং মাত্র কয়েক মিনিটের ভয়ংকর লড়াইয়ের পর তারা তাদের অধিকাংশদের হত্যা করতে অথবা আহত করতে সমর্থ হল।

জীবিতরা তাদের অস্ত্র ফেলে দিল, কেউ হাঁটুগেড়ে বসল এবং অরণ্যে রোদন করল। তাদের কেউ ছুরিকাঘাতে নিহত হল এবং দূরমুজের আঘাত পেল যখন যারা হাঁটু গেড়ে বসেছিল। অন্যরা পিছনের দরজা দিকে পালিয়ে গেল এবং টর্ক তার লোকদের বিশাল কপিকলটার দিকে নিয়ে গেল। এর প্রতি স্পোকে দুজন করে লোক নিয়ে তারা ফটকগুলো খুলতে শুরু করল।

কিন্তু বিপদ ঘণ্টা শহরের রক্ষীদের জাগিয়ে দিয়েছে। যারা তাদের ব্যারাক থেকে মাছির মতো বেরিয়ে এল। কয়েক জন বর্ম ছাড়া এবং এখনো অর্ধ ঘুমন্ত এবং প্রবেশ পথ রক্ষা করতে দৌড় দিল।

টর্ক কপিকল কক্ষের ভারি খিল আটকে দিল এবং প্রবেশমুখে লোক নিযুক্ত করল তা প্রতিরোধ করতে। প্রবেশ পথের উপরের পাচিল থেকে তার লোকেরা প্রহরীদের হত্যা করেছে অথবা তাদের দেয়ালের শীর্ষ স্থান থেকে নিক্ষেপ করছিল, এখন তারা ঢালু পথে লড়াই করল, আক্রমণরত ব্যাবিলনদের আটকে রাখল।

কপিকল কক্ষের দরজাটা কেঁপে উঠল এবং ফাঁপা হয়ে গেল যখন ব্যাবিলিয়নরা ওটা পাগলের মতো ভাঙ্গতে চেষ্টা করল কিন্তু কপিকলগুলো টর্কের লোকদের প্রয়োগে ধীরে ধীরে ঘুরল এবং বিশাল ফটকগুলো তাদের স্থান ছেড়ে নিচে ফাঁকা স্থানে নির্মমভাবে নেমে গেল।

এখান ফটকের দিকের রাস্তা ব্যাবিলনের রক্ষীদের দ্বারা জনাকীর্ণ। কিন্তু তারা তাদের নিজেদের সংখ্যায় বাধাগ্রস্থ হল। এক সাথে মাত্র চারজন ঢালু পথে উঠতে পারল দেয়ালের শীর্ষের দিকে এবং টর্কের লোকেরা তাদের সাক্ষাৎ করল এবং তাদের সজোরে পিছনে নিক্ষেপ করল। অন্যরা এখানো দরজা ভেঙে কক্ষে প্রবেশ করার চেষ্টা করছে যার মধ্যে কপিকলগুলো অবস্থিত কিন্তু দরজাটা নিরেট। যখন অবশেষে তারা তাদের গুঁড়িয়ে দিল তারা দেখল টর্ক ও তার লোকেরা তাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

দেয়ালের বাইরে নাজার লোকেরা মৌমাছির ঝাকের মতো সামনে আসছে বাকা লৌহদন্ড ও লিভার নিয়ে। তারা ভারি ফটকগুলোকে প্রশস্ত থেকে প্রশস্তর করল, যতোক্ষণ না অবশেষ রথের একটা দল অতিক্রম করতে পারল। তারপর তারা সরে দাঁড়াল এবং নাজার যুদ্ধ রথের একটা দল ফটক দিয়ে পশুর বেগে প্রবেশ করল এবং রাস্তার পাশ থেকে পাশে ঠেলা দিল মিশরের আর্মি পিছনে আসল। টর্ক সবকিছু তার নিয়ন্ত্রণে নিল ও শহরের মধ্য দিয়ে প্রাসাদে তার দলকে ছুটাল।

ব্যাবিলনে লুণ্ঠন শুরু হয়ে গেল।

*

প্রাসাদের প্রতিরক্ষা ছিল কঠোর, স্বয়ং সারগনের নেতৃত্ব। যাইহোক, ঐ সন্ধ্যার মধ্যে টর্ক প্রথম প্রাসাদের বাইরের দেয়ালে একটা ফাঁটল ধরাল। একটা শক্তিশালী সৈন্য দল ওটার দিকে নেতৃত্ব দিল এবং প্রতিরক্ষা ভেঙে গেল। তারা সারগনের শয়নকক্ষ ভেঙ্গে প্রবেশ করল। সারগন তখন মারডুকের প্রতিমূর্তির সামনে হাঁটু গেড়ে বসেছিল, মেসোপটেমিয়ার ক্ষুধার্ত প্রভু একটা রক্তাক্ত তলোয়ার তার হাতে নিয়ে। তার পাশে পড়ে আছে তার প্রিয় পত্নীর দেহ। একজন ধূসর চুলের মহিলা

সে তার সাথে ত্রিশ বছর যাবৎ বাস করছে, সে তাকে একটি সকরুণ মৃত্যু উপহার দিয়েছে সেটা থেকে যা সে টর্কের লোকদের কাছ থেকে আশা করতে পারত। যাই হোক, সারগন নিজেকে, তার নিজের তলোয়ারে পড়ার মতো শক্ত করতে সক্ষম ছিল না। টর্ক তার হাত থেকে আস্ত্রটা ফেলে দিল।

আমাদের অনেক কিছু আলোচনা করার আছে মহারাজ; সে তাকে ওয়াদা করল। এটা কি আপনি নন যে আমাকে সেথের কালো বৃক্ষ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন? আশা করি আমি আপনাকে বিশ্বাস করাতে পারছি যে আপনি আমাকে ভুল রং-এ এঁকেছেন।

অন্দর মহলের মহিলাদের দল বেঁধে প্রাসাদ থেকে বের করা হলো, মাত্র তাদের পাঁচশ জন পাঁচ হাজার নয় যা ইশতার বলল। টর্ক তার নিজের বিনোদনের জন্য সবচেয়ে কম বয়সী ও সুন্দরী বিশ জন বাছাই করল এবং বাকিদের তার উচ্চপদস্থ অফিসারদের দেওয়া হল, তারা তাদের উপভোগ করার পর তাদেরকে সাধারণ সৈনিকদের কাছে দিয়ে দিবে।

প্রাসাদের নিচে মাটির গভীরে সমাহিত রত্ন ভান্ডার ভেঙ্গে বের করতে আরো দুদিন লাগল, কারণ অনেক সুনিপুণ স্থাপনা ও কৌশলে তাদের রক্ষা করা হয়েছিল। ইশতারের দক্ষতা ও প্রত্যক্ষ জ্ঞান ছাড়া প্রধান রত্ন ভাণ্ডারের প্রবেশ করতে হয়তো আরো বেশি সময় লাগত।

রাস্তা পরিষ্কার হলে, টর্ক ও নাজা, হেজারেটসহ সিঁড়ি দিয়ে নামল এবং কক্ষে প্রবেশ করল। ইশতার একশ তেলের প্রদীপ দিয়ে অভ্যন্তরটা আলোকিত করেছে এমন কি দুই ফারাও ও হেজারেট রত্নের দীপ্ততা দেখে বিমোহিত হয়ে গেল। রুপার বার সাজানো, সোনা চোঙ্গাকৃতি পিন্ডে পরিণত করা যেগুলো একে অন্যে সাথে সমাঞ্জস্য করে সাজনো সুবিধার্থে। সবগুলোর উপর স্বর্ণকারের চিহ্ন ও সারগনের স্মারক আঁকা।

হেজারেট কিছুক্ষণের জন্য ভাষাহীন হয়ে পড়ল, তার নাজুক চোখে ধাতুর ঝালক থেকে বাঁচানো জন্য ছায়া দিতে হল। নাজা সারির মাঝখান দিয়ে ধীরে ধীরে সামনে হেঁটে গেল, যেগুলো তার মাথা থেকেও উঁচু। কয়েক পদক্ষেপ পর পর থামল পিন্ডগুলোকে হাত বুলানো জন্যে। অবশেষে তার কণ্ঠ ফিরে পেল সে এবং ফিফিস্ করে বলল। তারা মসৃণ ও উষ্ণ, একজন কুমারী দেহের মতই।

টর্ক প্রতি হাতে একটি করে বার নিল এবং আনন্দে হাসল। কত ওজন? সে ইশতারের কাছে জানতে চাইল।

হায়! মহান রাজা, আমারা এখনো তা হিসেব করার সুযোগ পাই নি। কিন্তু আমরা সারগনের অনুলিপির স্ক্রৌলটা দেখেছি। তারা রুপার হিসাব রেকর্ড করেছে সর্বমোট ৫৫ লাখ আর স্বর্ণ তেত্রিশ। সে তার ট্যাটু করা হাতগুলো অনুমোদনের ভঙ্গিতে ছড়ালো। কিন্তু কে এক জন ব্যাবিলিয়ানের হিসাব বিশ্বাস করে?

সারগন একজন অধিকতর মহান লুণ্ঠনকারী যতোটা আমি তাকে ভেবে ছিলাম? টর্ক এটা প্রশংসার বাণীর মতো বলল।

কমপক্ষে এখানে যথেষ্ট পরিমাণ আছে আমাকে দাক্ষিণ্য দিতে যা আপনি ওয়াদা করেছেন। ইশতার মৃদু পরামর্শ দিল।

আমার মনে হয় আমাদের এটা পরে আলোচনা করা উচিত। টর্ক সদায়ভাবে তার দিকে হাসল। আমি একজন দয়ালু ও ভদ্র মানুষ, ইশতার, যেমনটা তুমি খুব ভালো করেই জান। যাইহোক, অতি ভদ্রতা বোকামির একটা লক্ষণ। কি অসভ্য আমি না?

রত্নভান্ডার ছাড়াও শহরটাতে আরো অনেক কিছু দেখার ছিল এবং বিস্মিত হওয়ার আছে। টর্ক ও নাজা প্রাসাদ ঘুরে এল, টাওয়ারের শীর্ষ, তাদের ঝর্ণা, বাগান ও বন।

এই উচ্চতা থেকে তারা উভয় বিশাল নদীটা নিচে দেখল এবং সংকীর্ণ জলা এবং প্যাপিরাসে বিশাল বন শহরের দেয়ালে বাইরে।

পরে তারা মন্দিরগুলো দর্শন করল, কারণ এসব চমৎকার ভবনগুলোর গঠন সুন্দর, তাদের আসবাবপত্র, গোপনস্থান, মোজাইক ও অন্যান্য সব কিছু শিল্পকর্মে ঠাসা। যখন তারা এগুলো সরাল নাজা ও টর্ক অধিষ্ঠিত প্রভুর সাথে কথোপকথন করে কথা বলল, সে ভ্রাতা, প্রভু ও সমমানের বলে তাদের সম্বোধন করল। টর্ক ব্যাখ্যার করল যে ব্যাবিলন আর একটা রাজধানী শহর নয় বরং তা এখন মিশরের একটা অংশ। তাই প্রভুর উচিত তার পৃথিবীর আসন অ্যাভারিসে সরিয়ে নেয়া, যেখানে টর্ক তাকে উপযুক্ত বাসস্থান দেওয়ার দায়িত্ব নিল। প্রভুর সম্পদের অপসারণ ধার রূপে বিবেচনা করা উচিত যা পরে শোধ করা হবে।

ঔসব মন্দিরগুলোর সবচেয়ে বৃহৎটি হল মারজুকের। টর্ক এটাকে শুধু দামী ধাতু ও গহনার খনি নয় বরং অসীম আবাসস্থলের একটা স্থান বলে স্বীকার করল।

ইশতার মারজুকের একজন ভক্ত এবং তরুণ অবস্থায় সে এই একই মন্দিরের প্রধান যাজকের কাছে যাদু শিখেছে। যেহেতু সে এখনও তার পুরস্কার পায়নি তাই সে টর্কের এত কাছাকাছি লেগে আছে যে যেন একটা আটুলি একটি সিংহের পেটে। সে টর্ককে নির্দেশনা দিয়েছিল মারডুকের পূজার মধ্যে এবং টর্ক মন্তব্য করল, মারডুকের স্বাদ আমার নিজের অনেক পরিচিত সেথের স্বাদের কাছাকাছি। তারা ভাই ভাই।

তা সবসময় সুস্পষ্ট, মহারাজ। যাই হক মারজুকের ক্ষুধা মানুষের বলীর জন্যে, তা সেথের ক্ষুধার চাইতে বেশি এবং সে খুঁতখুতে তা কীভাবে তার কাছে উপস্থাপিত হলো সে বিষয়ে।

সে টর্ককে অলিগলি ধরে বাগানের উঠান দিয়ে মন্দিরের গভীর স্থানে পবিত্রদের পবিত্র স্থানে নিয়ে এল, যেটা নিজেই একটা ছোট শহর ছিল। তারা শেষে এল চুল্লী ভবনে।

যখন তারা প্রধান বলী কক্ষের উপর দাঁড়াল, টর্ক নিচে এর ভেতরে তাকাল, সে এর নকশা ও স্থাপনা দেখে সম্পূর্ণ বিমোহিত হয়ে গেল। এটা আমার কাছে ব্যাখ্যা কর। সে ইশতারকে আদেশ করল।

দুইটা চুল্লী আছে, আলাদা আলাদা নয়, ঐ দেয়ালের পিছনে প্রত্যেকটা। ইশতার চকচকে কপারের দেয়ালগুলোর দিকে নির্দেশ করল। যখন কাঠ কয়লার আগুন জ্বলে ওঠে তারা বিশাল গর্জন করে উস্কে দেয় যতোক্ষণ না ধাতব দেয়াল গুলো উদিয়মান সূর্যের মতো তাপে জ্বলতে থাকে। দেয়ালগুলো অপসারণ যোগ্য। কপিকলের সাহায্যে কাজ করা হয়, ফলে তা তাদের সামনে গড়িয়ে যেতে সক্ষম অথবা তাদের টানে আলাদা করতে সক্ষম হয়…।

যখন ইশতার তার ব্যাখ্যা শেষ করল, টর্ক তার বর্মপরা হাতটি মুঠি করে অন্য হাতের তালুতে দুম করে আঘাত করল। সেহ্ ও মারডুকের কসম, আমি কখনো এমনটা শুনি নি। আমাকে এটা স্বচক্ষে দেখাতে হবে। যদি এটা এমন হয় যেমনটি তুমি বর্ণনা করলে, আমি তেমন একই অদ্ভুত নির্মাণ অ্যাভারিসে আমার নিজের মন্দিরে করবো। যাজকদের তাদের নারকীয় চুল্লীটা জ্বালাতে আদেশ কর। আমরা আমাদের বিজয় উদ্যাপন করব মারডুককে একটা বলী দিয়ে।

চুল্লীটা আশানুরূপ তাপে পৌঁছাতে কয়েক দিন সময় লাগবে। ইশতার তাকে সর্তক করল।

আমি কয়েক দিনই আছি, আমাকে লুটের মালের প্রেরণ দেখাশুনা করতে হবে এবং আমাকে সারগনের বিশ জন কমবয়সী স্ত্রীর সন্তুষ্টি ও ভালোটাও দেখা শুনা করতে হবে।

সে তার চোখ ঘোরালো। সবচেয়ে দুঃসাধ্য কাজ, যে কোন ঘটনায়, আমরা বদমায়েশরা এখনো শহর লুঠতে ব্যস্ত। আমি তাদের সজ্ঞানে ফিরিয়ে আনতে কিছু সময় ব্যয় হবে শুধু।

তিন দিন পর টর্ক তার উচ্চপদস্থ অফিসারীদের জন্য একটা বিজয়ী ভোজ সভার আয়োজন করল বিলাশ ভাবনের সর্বোচ্চ ছাদে। অতিথিরা বিশাল কাদার পাত্রে বেড়ে ওঠা কমলা গাছের বনের মধ্যে এলিয়ে পড়ল; সবই পূর্ণ বিকশিত তাই বাতাসটাও মিষ্টি সুবাসে পূর্ণ। তাদের ঘিরে ঝর্ণাগুলোও কলকল শব্দে বয়ে চলল। ভোজের টেবিল সিল্কের কার্পেট দিয়ে ঢাকা। সকল বোল ও পাত্রগুলো বুপা ও স্বর্ণ এবং দামী পাথরে খচিত, ওগুলো মন্দিরে নৈবেদ্য থেকে আনা হয়েছে। টুলের উপর যে অতিথিরা বসেছিল তারা সারগনের স্ত্রী, তারা ছিল সোনার চেইন ব্যতীত সম্পূর্ণ নগ্ন। পরে যখন ফেনিত বীয়ার ও মিষ্টি মদের বোতলগুলো প্রভাব বিস্তার করল তখন এই জীবন্ত টুলগুলো বালিশ ও গালিচা হিসাবে ব্যবহৃত হল সবার।

এই আনন্দের মাঝে ইশতার হামাগুড়ি দিয়ে টর্কের পাশে এল এবং তার কানে ফিসফিসিয়ে বলল, ফারও প্রভু। যে সমুদ্র গলাধঃকরণ করে এবং তারা ভক্ষণ করে, চুল্লী প্রস্তুত।

.

টর্ক দুলতে দুলতে দাঁড়িয়ে হাততালি দিল। সম্মানিত ভ্রাতাগণ! সে তার

অফিসারদের সম্বোধন করল এবং তারা আনন্দে গর্জে উঠল।

আমার কাছে আপনাদের জন্যে একটা বিনোদন আছে, আমার সাথে আসুন, এবং সে অস্থিরভাবে সিঁড়ির দিকে এগোল তার পিছনে তার লোকজনের ভিড় নিয়ে।

তারা পাঁচিলে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াল এবং বলীর কক্ষে তাকাল। চুল্লী দুটো দিয়ে ধোয়া তাদের মাথার উপর দিয়ে বেরিয়ে গেল, এবং তারা তাপে ঘামাতে লাগল যা উজ্জ্বল ধাতব দেয়াল থেকে প্রতিফলিত হচ্ছে।

 আমারা আজ এখানে মহান প্রভু মারডুক উৎসর্গ করতে জমায়েত হয়েছি, যে আমাদেরকে তার শহর যুদ্ধের উপহার হিসেবে দিয়েছে। টর্ক তাদের বলল প্রধান যাজকের কন্ঠ নকল করে। তারা আনন্দিত ভাবে তাকে উৎসাহ দিল।

একজন রাজা ও তার রাজপরিবার ছাড়া আর কোন ভালো বলী আমরা দিতে পারি? তারা আবার উল্লাস ধনি করল।

টর্ক ইশতারের উদ্দেশ্যে হাত নাড়ল, যে দ্রুত বেগে দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে কক্ষের দিকে নিচে গেল যেখানে একশ দাস চরকির কাছে দাঁড়িয়ে আছে ও যন্ত্র চালনা করতে প্রস্তুত। প্রধান যাজকের নির্দেশে তারা মারড়ুকের উদ্দেশ্যে মন্ত্র পড়তে শুরু করল।

পুরোহিত তখন খোলা কক্ষের উপর তার বেদীতে উঠল পিছনে মন্ত্র পাঠরত দাসদের নিয়ে। সে তার উভয় বাহু তুলে প্রভুর কাছে প্রার্থনা করতে লাগল চওড়া কণ্ঠে।

তার নির্দেশে চুল্লী কক্ষের পাথরের দেয়ালে একটা ছোট দরজা খুলে গেল; এবং অন্য যাজকেরা এক সারিতে থাকা মানুষগুলোর দিকে এগিয়ে গেল। তারা সাধারণ সাদা পোশাকে ছিল এবং দাঁড় ছাড়া আর কোন অলংকার তাদের শরীরে ছিল না।

তারা উভয় লিঙ্গের ছিল এবং সব বয়সের, কেউ ছিল কেবল শিশু তাদের মাতৃ কোলে; কিছু ছিল মাত্র হাঁটতে শিখছে; অন্যরা ছিল বয়ঃসন্ধি কালের। কিন্তু সব চেয়ে লম্বা জন ছিল একজন বাঁকা সাদা চুলের মানুষ একজন রাজা, যুদ্ধার ভঙ্গিমায়।

জয়! সারগরন, স্বর্গের ও পবিত্র ভূমি মহান শাসক দুই নদীর মধ্যেখানের। টর্ক তাকে বিদ্রূপ করল। আমি তোমার জন্য তা করব যা তুমি তোমার জন্যে করার সাহস পাও নি। আমি তোমাকে পাঠাচ্ছি বাহক হিসাবে তোমার প্রভুর স্নেহার্ত বাহুতে, মারজুকের কাছে। আমি একজন সহানুভূতিশীল ব্যক্তি এবং আমি তোমার স্ত্রীদের চাই না এবং তোমার ছোট ছেলে ও মেয়েরা তোমার জন্য দুঃখ করুক তাও চাই না। আমি তাদেরকে তোমার সাথে তোমার পথে সঙ্গী হিসাবে পাঠাচ্ছি। সে তার লোকদের হাসি দমিত হতে দেওয়ার জন্য থামল। তারপর সে বলে চলল, এই বার্তাটা মারডুককে দিও, যখন তুমি তার সাথে মুখোমুখি দাঁড়াবে। বলো তাকে যে টর্ক, তার মহান ভাই, তাকে অভিনন্দন জানিয়েছে এবং তার সুদৃষ্টি কামনা করেছে।

সারগন তার চারপাশে তার পুত্রদের জড়ো করল এবং টর্কের দিকে তাকাল না বা তার কথার উত্তর দিল না।

টর্ক প্রধান যাজকের দিকে তাকাল, এখন যাজক, দেখান আমাদের আপনার এই যন্ত্রের কাজ কেমন।

প্রধান যাজক আবার গাইতে শুরু করল কিন্তু এক ভিন্ন প্রার্থনা, কর্কশ ও অপরিচিত। তার পিছনে কক্ষে দাসরা তার সাথে গাইল এবং এক সাথে ধাপ আগে বাড়াল, তারপর তাদের নগ্ন পায়ে তাল তুলল. পাথর খন্ডের উপর বজ্রপাতের শব্দের ন্যায়। প্রতিবারে এক ধাপ চরকিটা ঘুরতে শুরু করল।

থমে কোন পরিবর্তন চোখে পড়ল না তখন ইশতার ফিসফিসিয়ে বলল, জ্বলন্ত দেয়াল গুলোতে দেখুল, মহান টর্ক, সফল নায়ক- রাজাদের মহান। দেখুন তারা কি ভাবে একে অন্যের দিকে চলতে শুরু করেছে, ধীরে ধীরে, ওহ, খুব ধীরে ধীরে। যতোক্ষণ না তারা অবশেষে মিলিত হল এবং বলীগুলো মচমচে এবং কালো হয়ে গেল প্রদীপের শিখায় পড়া মথের মতন। টর্ক সামনে ঝুকল, তার চেহারা ঘাম ও উত্তেজনায় চকচকে।

*

মারডুক সম্ভষ্ট, ইশতার ঘোষণা করল মদের পাত্র থেকে মুখ তুলে উপরে তাকিয়ে। আপনি তাকে চুল্লীতে যা উৎসর্গ করলেন তা তার কাছে সবচেয়ে গ্রহণীয়।

টর্ক মাথা ঝাঁকাল, আমার ভাই মারডুককে বলা আমি সন্তুষ্ট তার সন্তুষ্টিতে।

টর্ক সিংহের চামড়ার একটা স্তূপের উপর হাঁটুগেড়ে বসল যা মন্দিরের ভেতরের কক্ষে পাথরের উপর মারজুকের বেদির সামনে ছড়ানো। প্রভুর সোনার মূর্তিটা ছিল নব যৌবনের এক হাসিতে প্রসন্ন মুখ। মূর্তিটা স্বাভাবিক আকারের তিন অথবা চার গুণ। একমাত্র বৈশিষ্ট্য যা প্রভুকে একজন নশ্বর থেকে আলাদা করে, তার আকার ছাড়া অন্য কিছু তা- তার কোকড়া চুলের মাথার প্রত্যেক পাশে ক্ষুদ্র ছাগলের মত শিং এবং পায়ের পরিবর্তে দ্বিখন্ডিত খুর।

তুমি আমাকে বলেছিলে মারডুক একজন ভয়ংকর প্রভু ছিল, অধিক নিষ্ঠুর ও হিংস্র যে কোনো বাঘ থেকে, এমনকি সেথের থেকেও হিংস্র, টর্ক ইশতারকে চ্যালেঞ্জ করছে, যখন প্রথমে সে মূর্তিটা দেখল। সে দেখছি এক জন সুন্দর বালক।

মহান ফারাও প্রতারিত হবেন না! ইশতার তাকে সর্তক করল, এই চেহারাটা মারডুক মানুষের দুনিয়াকে দেখায়। তার আসল রূপ এতোটাই বীভৎস যে, যে তা দেখবে সাথে সাথে অন্ধ হয়ে যাবে ও বকবক করে পাগল হয়ে যাবে।

চিন্তায় গম্ভীর হয়ে টর্ক মূর্তির সামনে হাঁটুগেড়ে বসল এবং শান্ত রইল যখন যাজকেরা নবজাত দুটি শিশু নিয়ে এল। ইশতার সোনার বোলটা বেদির পূর্বে স্থাপন করে তাদের প্রভুর উদ্দেশ্যে বলি দিল।

ইশতার তাদের গলা এতো দক্ষভাবে কাটল যে তারা চিৎকার দিতেই পারল না যখন তাদের রক্ত সোনার বোলে পড়ল যা সে তাদের নিচে ধরেছিল।

যখন ছোট নিস্তেজ দেহগুলো সংকীর্ণ ঢালু মার্বেলের পথে ফেলে দেওয়া হল যা পবিত্র স্থানের নিচে চুল্লীতে চলে গেছে, ইশতার সোনার বোলটা তখন বেদির সামনে রাখল ও ধূপের কড়াই জ্বালাল। গুনগুন করে ও মিনমিন করতে করতে সে হাত ভর্তি হার্ব ও ধূপ আগুনে ফেলল যতোক্ষণ না বন্ধ কামরাটা নীল ধুয়ায় ভরে গেল এবং বাতাস সুরভিত ও নেশাদ্দীপক হল। কিছুক্ষণ টর্ক বুঝল পরিষ্কারভাবে চিন্তা করা কঠিন এবং তার দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে গেল ফলে মনে হল ছায়াগুলো নড়ছে ও নৃত্য করছে এবং সে দূরে আওয়াজ শুনল, বিদ্রুপের। সে তার চোখ বন্ধ করল এবং তার আঙ্গুলগুলো চোখের পাতায় চেপে ধরল। যখন সে তাদের আবার খুলল, সে দেখল যে প্রভুর চেহারার মিষ্টি হাসি উধাও হয়ে গিয়েছে এবং তা এতো অশ্লীল ও ভয়ানক যে গা শিহরিত হলো যেন সে বিষাক্ত পোকার উপর দিকে হাঁটছে। সে অন্য দিকে তাকানোর চেষ্টা করল কিন্তু পারল না।

মহান প্রভু মারডুক সন্তুষ্ট। ইশতার পুনরাবৃত্তি করল, রক্তে পূর্ণ বোলের উপরিস্তরে প্রতিফলিত দ্বৈবজ্ঞ পর্যবেক্ষণ করে। তিনি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে কৃপা করেছেন।

মারডুককে বল যে আমি তাকে আমার পীর হিসাবে সম্মান করি। আমি তার চুল্লীর মধ্যে আরো এক হাজারের বেশি উৎসর্গ করব।

মারডুক আপনাকে শুনছেন। ইশতার বোলটা তুলে ধরল এবং তার মধ্যে উঁকি দিল। দীর্ঘ নিরবতার পর সে সামনে পিছনে মৃদু দুলতে শুরু করল বোলটা তার কোলে নিয়ে। অবশেষে সে চোখ তুলল। মারডুককে দেখুন, ব্যাবিলনের মহান প্রভু! আমাদের সাথে কথা বলুন, আমরা আপনাকে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।

সে তার বাহুগুলো সোনার মূর্তিটার দিকে খুলে দিল এবং প্রভু একটা বাচ্চার কণ্ঠে কথা বলল, আধো আধো ও সুমধুর। আমি তোমাকে অভিবাদন জানাই, আমার ভাই টর্ক! অদ্ভুত কণ্ঠটা বলল, তুমি জানতে চাও বাচ্চা বাজপাখিটা সম্বন্ধে যে তার ডানা প্রসারিত করে মরুভূমিতে বাঁকানো নখরগুলো ধারালো করছে।

টর্ক এই বিদ্রোহী কণ্ঠেই শুধু বিস্মিত নয়, এই বিবৃতির যথার্থতায়ও বিস্মিত। প্রকৃতপক্ষে সে ইচ্ছুক ছিল পরামর্শ চাওয়ার নেফার সেটিকে আক্রমণ ও ধ্বংস করার বিষয়ে তার পরিকল্পনার। সে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু কণ্ঠ বন্ধ হয়ে গেল এবং প্রাচীন মমির আবৃত করা কাপড়ের মতো শুকনো হয়ে পড়ল।

মিষ্টি, শিশু সুলভ কণ্ঠ বলে চলল, তুমি আমার অনুগত দাস ইশতারের কাছ থেকে ভালো পরামর্শ পেয়েছ। এটা ভালো ছিল সে তুমি তার কথা শুনেছো। যদি তুমি তা না করতে, যদি তুমি গালালায় এগিয়ে যেতে যখন তুমি তা করার চিন্তা করেছিলে তুমি আরো বিপদের সম্মুখীন হতে এমনকি খামসিনের বাতাসের চাইতেও বৃহৎ যা তোমার রাজত্বকে ধ্বংস ও সমাহিত করে দিত।

টর্ক তিক্তভাবে স্মরণ করল কীভাবে ইশতার তাকে বিরত করেছিল পূর্বে নেফার সেটিকে আক্রমণ করার জন্য ও মিনটাকাকে ধরে আনার জন্য, তার পালিয়ে যাওয়া স্ত্রী-র পিছনে আরেকটা সৈন্য বাহিনী পাঠানো থেকে। অনেক আগেই তার গুপ্তচরেরা তাকে রিপোের্ট করেছে ঠিক কোথায় আছে গালালার যুগলদ্বয়। সে অভিযানের জন্য রথ ও পদাতিক সৈন্যের আরেকটা বাহিনী একত্রিত করেছিল।

সে জানত যদি তার সিংহাসনের প্রতি এই চ্যালেঞ্জ থেকে সে নিজেকে যুক্ত না করে, যদি বালক ফারাওকে তার পূর্ণ শক্তি অর্জনের পূর্বে শেষ না করে তবে শীঘ্রই বিদ্রোহী ও গণ-অভ্যুত্থান তার সমগ্র রাজত্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়বে। একবার তা ঘটে গেলে সে জানত যে বংশ প্রতিষ্ঠা করছে তা শের্ষ হয়ে যেতে পারে, সর্বনাশ ও ধ্বংসের মধ্যে দিয়ে।

সে এই চ্যালেঞ্জ ও নেফার সেটির হুমকি থেকে মুক্ত হতে যতোটা ব্যাকুল তার চেয়েও বেশি ব্যাকুল ঐ মহিলাকে ধরতে সে তখনো তাকে বিদ্রূপ করেছিল ও অসম্মান করেছে। তার জন্যে তার ঘৃণা তার সব আবেগকে অতিক্রম করেছে। ইশতার তাকে আক্রমণে যাওয়া থেকে প্রতিরোধ করেছিল, ভয়াবহ ফলাফলের কথা বলে, বিপদ ও মৃত্যুর সতর্কবাণী দিয়ে, ইশতার তাকে জানিয়েছিল তার সৈন্য বাহিনীকে পরিবর্তন করে নাজার সাথে যোগ দিতে এবং এই যৌথ অভিযানকে ব্যাবিলনের দুর্বল শহরের দিকে আনতে।

যদিও এতো দূরে, অভিযানটা এক বিজয়ে রূপান্তরিত হয়েছে, যদিও লুষ্ঠিত মাল ও হত্যা এখন অগণিত তবুও টর্ক নিজেকে অসম্পূর্ণ অনুভব করল।

সে গর্জে উঠল, সে নিজেকে যতোটা বলল ততটা সোনার প্রভুকেও বলল, আমাকে অবশ্যই নেফার সেটিকে পেতে হবে। দ্বৈত মুকুটটা আমার মাথার উপর শান্তিতে বসবে না যততক্ষণ না আমি তাকে খুন করি এবং তার দেহ আগুনে নিক্ষেপ করি যাতে কখনো কার পুনরুত্থান না ঘটে। ইতোমধ্যে আমি তার নাম ও তার বংশের নাম মিশরের প্রতিটি কাগজ ও নিদর্শন থেকে তুলে ফেলেছি, কিন্তু আমাকে অবশ্যই তাকে ও তার স্মৃতিকে ধ্বংস করতে হবে এবং তা চিরদিনের মতো।

তার রাগ ও ঘৃণায় সে লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে গেল এবং ইশতার ও তার প্রভুর প্রতি চিৎকার করল। তুমি আমাকে আগে একবার তোমার অশুভ কথা ও ভয়ংকর সতর্ক সংকেত দিয়ে আমার লক্ষ্য থেকে সরিয়েছে। এখন আমি তোমাকে তার পীর হিসাবে সম্বোধন করছি, তোমরা সমান এবং একজন পূজারী হিসাবে নয়। আমি চাই তুমি লোকটাকে ও নেফার নেটির আত্মাকে আমার কাছে এনে দাও, আইনত ও উচিত শাস্তি দিতে। এখান আমি তোমার ও তোমার ভৃত্য থেকে আর কোন অস্বীকৃতি গ্রহণ করবো না। রাগা ও হতাশায় টর্ক ইশতারের দিকে একটা লাথি তাক করল। মেডি তা আসতে দেখে গড়িয়ে এক পাশে সরে গেল। টর্কের ব্রোঞ্জের কীলক গোজা স্যান্ডেল ভবিষ্যৎ দেখার বোলটা ধরল এবং শিশুগুলোর রক্ত প্রস্তর ফলকের উপর ছড়িয়ে পড়ল এবং বেদির সম্মুখে নিচে। এমনকি টর্কও বিহ্বল হয়ে গেল যা সে করেছে। সে মিম্বরে দাঁড়িয়ে রইল মূর্তির সামনে প্রভূর প্রতি উত্তরের অপেক্ষায়।

ভ্ৰষ্টাচার! ইশতার হাহাকার করে উঠল, টর্ক উরুক, এবার তোমার উদ্যোগ নিশ্চিত ধ্বংস হয়ে যাবে। সে নিজেকে রক্তের লেই এর মধ্যে ঢুকিয়ে দিল, এতো ভয়ার্ত যে সে তার চোখ মূর্তিটার দিকে তুলতে পারল না।

একটা ভয়ংকর নিস্তব্ধতা নেমে এল পবিত্র স্থানে। পাথুরে বলির চুল্লীর আগুনের ক্ষীণ পটপট শব্দ যার উপর তারা দাঁড়িয়ে ছিল মনে হল তা বেড়ে গেল।

তারপর একটা শব্দ হলো, নরম কিন্তু সন্দেহাতীত। এটা শ্বাসটানার শব্দ, একটা ঘুমন্ত শিশুর দম টানার মত, কিন্তু তারপর আরো কর্কশ ও শক্তিশালী হতে লাগল। এখন এটা একটা বন্য পশুর শ্বাসে পরিণত হল, তারপর দৈত্যের, যা মন্দিরের মধ্যে প্রতিধ্বনি তুলল। শেষে তা একজন রাগান্বিত প্রভুর হিংস্র তীব্র শব্দ হয়ে গেল, স্বর্গের ঝড়ের গর্জনের ন্যায়, প্রচন্ড বায়ু তাড়িত সাগরের ঢেউ ভাঙার মতন। তার এতো ভয়ানক যে এমনকি ইশতার দি মেডিও শিশুর মতো কাতর স্বরে কেঁদে উঠল।

প্রভু এখন আর কখনো তোমাকে সফল হওয়ার অনুমতি দিবে না। তুমি টাইটা ও তার অনুগ্রহভাজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার সাহস করো না যতোদিন ওয়ারলক মারা যায়। ইশতার ফিসফিসিয়ে বলল।

তারপর একটা ভয়ংকর কণ্ঠ কথা বলল এতো রুক্ষ ও অপার্থিব যে এটা টর্কের নার্ভ নাড়িয়ে দিল এবং তাকে কাঁপিয়ে দিল। আমাকে শুনছ! টর্ক উরুক! তুমি নশ্বর মানুষ যে প্রভু মাথার অংশ হতে চাও! বজ্রটা পবিত্র স্থানের অন্ধকার কক্ষে প্রতিধ্বনি তুলল এবং তা দেয়াল থেকে দেয়ালে ঘুরে বেড়াল। তুমি জান যে তুমি কোন প্রভু নও। শুনছো আমাকে, ঈশ্বরে নিন্দুক! যদি তুমি আমার ও আমার প্রতিনিধি ইশতার দি মেডির ভবিষ্যৎ বাণী অবাধ্য করে গালালার দিকে যাও, আমি তোমাকে ধ্বংস করব এবং তোমার আর্মিকেও যেমনটা আমি তোমার অন্য আর্মিদের মরুতে সমাহিত করেছিলাম। এবার তুমি আমার ক্রোধ থেকে পালাতে পারবে না।

যদিও ধূপের কড়াইয়ের বিষাক্ত ধূয়ায় সে বিভ্রান্ত ও মারজুকের রাগে ভয়ার্ত ছিল যা মন্দির পূর্ণ করে দিয়ে ছিল, তবুও টর্ক এখনো যথেষ্ট চতুর ছিল ইশতারের প্রতিবাদের কিছু ভুল অনুভব করার জন্যে, কিছু একটা মারডুকের রাগে বিশ্বাসযোগ্য নয়।

সে তার সাহস একত্রিত করল, যা প্রভুর অতিপ্রাকৃতিক আবির্ভাবে হারিয়ে গিয়েছিল এবং ঠিকভাবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করল যা তাকে থামিয়ে দিয়েছিল। সে বুঝল যে নিষ্ঠুর শব্দ এবং বজের মতো কণ্ঠটা সোনার মূর্তির পেট থেকে আসছিল। সে ওটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল এবং দেখল যে প্রভুর নাভিতে একটা কালো ফাটল। সে মূর্তিটার দিকে এক পদক্ষেপ আগে বাড়ল এবং ইশতার বিপদসংকেতে তার হাত তুলল এবং চিৎকার করল, সাবধান, ফারাও! প্রভু রাগান্বিত, তার কাছে যাবেন না।

টর্ক তাকে এড়িয়ে গেল এবং সামনে আরেক পদক্ষেপ বাড়ল, প্রভুর পেটের বোতামের দিকে তাকিয়ে রইল। সে ফাটলের গভীরে একটা ক্ষীণ ঝলক দেখল; একটা সঠিক সময় অনুভব করেছে যখন ভাগ্য তার সহায় হয়েছে এবং সে তা এখন অনুভব করল। সে নিজেকে শক্ত করল এবং চিৎকার দিল, প্রভুর শ্বাসের ভয়ংকর আওয়াজের উপর দিয়ে, আমি তোমাকে ত্যাগ করলাম, মারডুক রাক্ষস! আমাকে আঘাত কর, যদি তুমি সক্ষম হও। তোমার মন্দিরের আগুন আমার উপর নিক্ষেপ কর যদি তুমি পার।

সন্দেহ স্পষ্ট হয়ে গেল যখন ঐ ক্ষীণ আলো আবার প্রভুর পেটের ফাটলে দেখা দিল এবং শ্বাসটা দ্বিধাগ্রস্থ হল। টর্ক তার তলোয়ার বের করল, তার ফলার ধারালো অংশ দিয়ে ইশতারকে তার রাস্তা থেকে সরাল। তারপর সে দৌড়ে সামনে গেল, তারপর দ্রুত বেগে দৌড়ে সোনালি মূর্তির পিছনে। সে পিছনটা পরীক্ষা করল, তার ফলার ডগা দিকৈ ধাতুটা আঘাত করল। এটা ড্রামের ন্যায় ফাপা আওয়াজ করল এবং সে আরো নিবিষ্টভাবে পর্যবেক্ষণ করে সেখানে একটা অপসারণ যোগ্য প্যানেল আবিষ্কার করল যা প্রায় নিখুঁতভাবে লাগালো।

একটা লুকানো দরজা! সে গর্জে উঠল। মনে হচ্ছে সে মারজুকের পেটে যা তার মুখ দিয়ে এতোদিন গিয়েছে তার চেয়ে বেশি কিছু।

সে দ্রুত ফিরে এল এবং প্রভুর পেটের ফাটল দিয়ে উঁকি দিল। একটা মনুষ্য চোখ তার দিয়ে চেয়ে আছে। দৃষ্টি বিস্ময়ে প্রশস্ত হয়ে গেল এবং টর্ক একটা বিশাল চিৎকার দিল। ওখান থেকে বেরিয়ে আয়, তুই বিশাল পশুর কীট। সে তার কাঁধ মূর্তি ঘেষে স্থাপন করল এবং তার সব শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিল। মূর্তিটা এটার পাথুরে ভিত্তির উপর নড়ে উঠল এবং টর্ক আবার ধাক্কা দিল। ধীরে ধীরে মূর্তিটা নিচে চলে গেল এবং পাথুরে সমতলে বিস্ফোরিত হল। ইশতার চিৎকার দিল এবং লাফিয়ে পথ থেকে সরে এল যখন তা তার উপর পড়ছিল।

প্রভুর মাথা কোনাকুনি হয়ে পড়ে রইল এবং চুরমার সংঘর্ষের পর নিস্তব্ধতায় হাতড়ে বেড়ানোর শব্দ হল, চমকিত ইঁদুরের মতো, পতিত মূর্তির ভেতরে। গুপ্ত দরজা খুলে গেল এবং একটা ছোট দেহ হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে এল। টর্ক ওটাকে ওটার ঘন চুল ধরে টেনে তুলল। দয়া করুণ, মহান রাজা টর্ক, মেয়েটা অনুনয় করল, মধুময় মিষ্টি কণ্ঠে, এটা আমি নয় সে আপনাকে প্রতারণা করার চেষ্টা করেছে। আমি অন্যদের আদেশ পালন করছিলাম। সে এতো সুন্দর একটা শিশু ছিল যে, মুহূর্তের জন্যে টর্ক তার রাগ কম অনুভব করল।

তারপর তাকে তার গোড়ালিতে ধরে তুলে এক হাতে তাকে উল্টা করে ঝোলালো। সে কাঁদছিল ও তার মুঠিতে মোচড়াচ্ছিল।

কে তোমাকে এটা করার আদেশ দিয়েছিল। টর্ক জানতে চাইল।

ইশতার দি মেডি। সে কান্না করল।

টর্ক তাকে তার মাথার চারপাশে দুবার চক্কর দিল এবং তারপর শিশুটাকে মন্দিরের কলামে প্রচন্ড বেগে নিক্ষেপ করল, তার চিৎকার সাথে সাথে থেমে গেল। তার মৃত দেহ বেদির উপর ভাঁজ হওয়া স্তূপের ন্যায় পড়ে রইল। টর্ক সোনার মূর্তিটার দিকে ফিরে তার তলোয়ারটা লুকানোর দরজা প্রবেশ পথ দিয়ে ঢুকিয়ে দিল। প্রভুর পেটের ভিতর তছনছ করল সেখানে আরেকটা গুপ্তচর ও একটা অদ্ভুত প্রাণী ছিল যে দরজা দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে এল। প্রথমে টর্ক ভেবেছিল এটা একটা বিশাল কোলা ব্যাঙ এবং লাফিয়ে পিছনে সরল। তারপর দেখল সে এটা একটা কুঁজো বামন, এমনকি মেয়েটার থেকে খাটো ও ছোট, যাকে সে এই মাত্র হত্যা করেছে। বামনটা একটা ষাঁড়ের মতো গর্জন করল। সে ছিল সবচেয়ে কুৎসিত ব্যক্তি যাদের টর্ক সারাজীবনে দেখেছে, অস্বাভাবিক আকারের চোখ বিশিষ্ট। কালো চুলের গোছা তার কান ও নাক পর্যন্ত ঝোঁপের মতো বেরিয়ে আছে।

আমাকে ক্ষমা করুন, আমি আপনাকে প্রবঞ্চনা করার চেষ্টা করেছি, মহান প্রভু ও মিশরের রাজা। টর্ক তার তলোয়ার দিয়ে তার দিকে কশাঘাত করল, কিন্তু প্রাণীটা মাথা নিচু করে পাশ কেটে গেল এবং লাফ দিল। ঐ অদ্ভুত কণ্ঠে গর্জে উঠল। তার ভাড়ামিতে টর্কের হাসি পেল। বামনটা কক্ষের পিছনের দিকে পর্দার পিছনে দৌড়ে গেল এবং গোপন দরজা দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল।

টর্ক তাকে যেতে দিল এবং ইশতারের দিকে ঘুরল, ঠিক সময়ে তার শক্ত পিচ্ছিল চুলের মুঠি ধরার জন্যে যখন সে কক্ষ থেকে পালানোর চেষ্টা করল। সে তাকে সজোরে পাথুরে মেঝেতে নিক্ষেপ করল এবং তার পাজর ও পিঠে লাথি মারল।

তুমি আমাকে মিথ্যা বলেছো। টর্ক আর হাসছে না এবং তার চেহারা গাঢ় রক্তিম বর্ণের হয়ে গেল। তুমি ইচ্ছে করেই আমাকে ভুল দিকে চালিত করেছ। তুমি আমাকে আমার লক্ষ্য থেকে সরিয়ে দিয়েছ। দয়া করুন প্রভু; ইশতার বিলাপ করল, মেঝেতে গড়াগড়ি দিল তীব্র লাথি এড়াতে। এটা শুধু আপনার ভালোর জন্য।

এটা কি আমার ভালোর জন্য ছিল যে তুই ট্যামোসের বংশধরকে গালালায় স্বাধীনভাবে বাড়তে দিয়েছিস এবং আমার রাজ্বত্বে বিদ্রোহ ও রাজ বৈরী ছাড়িয়ে পড়তে দিয়েছিস? টর্ক হুংকার দিল। তুই কি ভাবিস আমি পাগল এবং এতো বোকা যে আমি তা বিশ্বাস করব?

এটা সত্য; ইশতার ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল, যখন টর্কের পা তার পাজরে লাথি দিল এবং তাকে চিৎ করে ফেলে দিল। কি ভাবে আমরা একজন ওয়ারলকের বিরুদ্ধে যেতে পারি সে ঝড়কে তার ইচ্ছে মতো আদেশ দেয় যেন ওটা তার পোয্য কুকুর?

তুমি টাইটাকে ভয় পাও? টর্ক জোরে তার শ্বাস ছাড়ল। ওয়ারলককে? সে জানতে চাইল অবিশ্বাস্য ভাবে।

সে আমাদের দূর থেকে দেখছে। সে আমার নিজের যাদু আমার দিকেই ঘুরিয়ে দিতে পারে। আমি তার বিরুদ্ধে টিকে থাকতে পারব না। আমি শুধুমাত্র তার থেকে আপনাকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছিলাম, মহান ফারাও।

তুমি শুধু মাত্র তোমার নীল ট্র্যাটুর চামড়া রক্ষা করার চেষ্টা করেছিলে। টর্ক উচ্চকণ্ঠে বলল এবং আবার তাকে সজোরে লাথি মারতে গেল।

আমি আপনার কাছে ভিক্ষা চাচ্ছি, সব প্রভুর প্রথম। ইশতার মাথা দুই হাতে দিয়ে ঢাকল। আমাকে আমার পুরস্কার দিন এবং আমাকে যেতে দিন। টাইটা আমার ক্ষমতা অর্থহীন করে দিয়েছে। আমি তাকে পুনরায় মোকাবেলা করতে পারব না। আমি আর আপনার কোন কাজে লাগব না।

টর্ক এক পা পিছনে টেনে দাঁড়াল, আরেকটা লাথি মারার ভঙ্গিতে। তোমার পুরষ্কার? সে অবাক হয়ে জানতে চাইল। নিশ্চয় আমি তুমি বিশ্বাস কর না যে আমি তোমার অবাধ্যতা তিন লাখ সোনা দিয়ে পুরস্কৃত করব।

ইশতার তার হাঁটুতে ভর দিয়ে উঠে এল এবং টর্কের পায়ে চুমু দেওয়ার চেষ্টা করল। আমি আপনাকে ব্যাবিলন দিয়েছি, মহান প্রভু। আপনি আমাকে যা ওয়াদা করেছিলেন তা অস্বীকার করতে পারে না।

টর্ক রাগান্বিত ভাবে হাসল। আমি তোমাকে কিছুই অস্বীকার করতে পারি না যা আমাকে খুশি কর। এমনকি জীবনও। যদি তুমি আরেক দিনও বেঁচে থাকতে চাও তবে আমাকে গালালায় নিয়ে যাও এবং ওয়ারলকের সাথে যাদুশক্তির পরীক্ষার আরেকটা সুযোগ নাও।

*

মনে হয় সারা মিশর শুনেছে যে নেফার সেটি রেড রোডে দৌড়িয়েছে এবং তার রাজ অধিকারে ভূষিত হয়েছে। প্রতিদিন সারাদেশ থেকে দর্শনার্থীরা মালামাল পৌঁছল। কিছু ছিল সৈন্য দলের কর্নেল ও অধিনায়ক। টর্ক ও নাজা তাদের অবর্তমানে মিশর পাহারা দিতে রেখে গিয়েছিল। অন্যরা ছিল নীলের বিশাল শহরগুলো অ্যাভারিস ও ম্যামফিস, থেব ও আসওয়ানের অভিজাত ব্যক্তিবর্গের দূত এবং ঐ সব শহরের প্রধান যাজক। তারা নাজা ও টর্কের স্বৈরাচার ও অত্যাচারে অসুস্থ ও অসহ্য হয়ে গিয়েছে এবং তাদের অনুপস্থিতিতে সাহসী হয়ে সবাই এসেছে নেফার সেটির কাছে তাদের আনুগত্যের শপথ নিতে।

মিশরের জনগণ আপনাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত, দূতেরা তাকে বলল, আমাদের রেজিমেন্টগুলো আপনার সপক্ষে ঘোষণা দিবে যখনই আপনি আবার পবিত্র মাটির দিকে এগুবেন এবং তারা জানে যে আপনার জীবিত থাকার গুজবটা সত্য। দলনেতা তাকে নিশ্চয়তা দিল।

নেফার ও টাইটা তাদের গভীরভাবে প্রশ্ন করল তাদের রেজিমেন্টের সমাবেশ সম্পর্কে এবং তাদের প্রস্তুতির অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইল। এটা শীঘ্রই পরিষ্কার হলো সে টর্ক ও নাজা রেজিমেন্টের মাখনটা সরিয়ে নিয়েছে তাদের মেসোপটেমিয়া অভিযানের জন্যে এবং শুধু রিজার্ভ সৈন্যদের দল রেখে গেছে যেগুলোর অধিকাংশ নতুন সদস্যে গঠিত, খুব কম বয়সী ও অদক্ষ অথবা বৃদ্ধ দ্বারা যাদের মিলিটারি জীবন শেষের দিকে।

রথ ও ঘোড়াগুলোর অবস্থা কি? নেফার মূল্যবান প্রশ্নটা করল। ক্যাপ্টেনরা তাদের ধুসর মাথা নাড়াল এবং গম্ভীর দেখাল।  

নাজা ও টর্ক রেজিমেন্ট শূন্য করে দিয়েছে। প্রায় প্রতিটি যান তাদের সাথে পশ্চিমের রাস্তায় গিয়েছে। তারা পূর্ব সীমান্তে পাহারার জন্য যৎসামান্য ফেলে গেছে, বেদুঈন দখলদারদের মরু থেকে আসতে বাধা দেওয়ার জন্য।

ম্যামফিস, অ্যাভারিস ও থেবসের কর্মশালার অবস্থা কী? নেফার জানতে চাইল। তাদের প্রত্যেকে প্রতি মাসে কমপক্ষে পঞ্চাশটা রথ তৈরি করতে পারে।

যখনই ঘোড়াগুলো তাদের টানার জন্যে প্রশিক্ষিত হয় তখন তাদেরকে পূর্বে পাঠানো হয় যৌথ ফারাওদের আর্মিতে যোগ দিতে, ব্যাবিলিয়নে।

টাইটা এই তথ্যগুলো নিরূপণ করল। ভুয়া ফারাওয়া সম্পূর্ণ সজাগ হুমকির ব্যাপারে যা আমরা তাদের পিছনে রচনা করতে পারি। তারা নিশ্চিত হতে চায় যে যদি তাদের রেখে যাওয়া রেজিমেন্টরা তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং প্রকৃত ফারাও নেফার সেটির পক্ষে সমর্থন দেয় তবে তাদের অস্ত্র ও রথের অভাব হবে একটা কার্যকর সৈন্যবাহিনী গঠিত হওয়ার জন্য।

আপনাকে অবশ্যই আপনার সৈন্য বাহিনীগুলোকে ফিরিয়ে নিতে হবে। নেফার অফিসারদের আদেশ দিল। এরই মধ্যে গালালায় অনেক বেশি আর্মি এবং আমরা আমাদের খাবার ও পানির শেষ পর্যায়ে। আর কোন যান বা ঘোড়াকে মিশর ছাড়ার অনুমতি দিবেন না। আপনার লোকদের প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন এবং তাদের সর্বোত্তমদের নতুন রথে সজ্জিত করুন যখন তারা সুলভ হয়। আমি শীঘ্রই আপনাদের কাছে আসব, আপনাকে নেতৃত্ব দিতে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে। তারা তার নামের প্রশংসা করতে করতে ও তাদের আনুগত্য পুনঃনিশ্চিত করে চলে গেল।

টাইটার পরামর্শে নেফার গালালার ক্ষুদ্র সেনাবাহিনীকে দ্বিগুণ করল নিজের একটা দক্ষ সেনাবাহিনীতে তৈরি করতে ও ভুয়া ফারাওদের শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করতে। তারা তাদের তরুণ কমান্ডার দ্বারা উদ্বুদ্ধ, কারণ নেফার তাদের যে কারো থেকে বেশি পরিশ্রম করে। সে প্রথম সৈন্যদলের সাথে ও রেড রোডের অন্য যোদ্ধাদের তার পাশে নিয়ে ও টাইটাকে নিয়ে তাকে উপদেশ দিতে ভোরের পূর্বে বের হয়ে যায়, সে ধীরে ধীরে তার ডিভিশনদের একটা দেহে গড়ে তুলল। শহরে ফিরে ক্লান্ত ও ধুলাময় সন্ধ্যাবেলায় সে কর্মশালায় যেতো যেখানে সে বর্ম প্রস্তুতকারক ও রথ তৈরি কারকদের সাথে সুন্দর কথায় ও যুক্তি দিয়ে কাজ করার উৎসাহ দিতো। তারপর, তার খাওয়ার পর সে টাইটার সাথে প্রদীপের আলোয় বসে, যুদ্ধের পরিকল্পনা ও তাদের সৈন্যদের অবস্থা নিয়ে আলোচনায় মত্ত হতো। সাধারণত মধ্য রাতের পর সে হোঁচট খেয়ে বিছানায় যেত, মিনটাকাকে জাগাত এবং সেও বিছানা থেকে উঠত কোন অভিযোগ ছাড়াই, তাকে তার বর্ম ও স্যান্ডেল খুলতে ও তার পা ধুতে ও মিষ্টি তেল দিয়ে তার ব্যথিত মাংসপেশী মালিশ করতে সাহায্য করার জন্যে।

তারপর সে এক বোল মদ ও মধু গরম করে দিতে তাকে ঘুমাতে সাহায্য করার জন্য। প্রায়ই বোলটা তার হাত থেকে পড়ে যেত সে শেষ করার আগেই এবং তার মাথা পিছনে বালিশের উপর এলোপাথারি ভাবে পড়ে রইত। তখন মিনটাকা তার মাথা তার বুকে নিয়ে জড়িয়ে রাখতো যতোক্ষণ না সে ভোরে জেগে উঠত।

*

প্রত্যেক দিন ম্যারন আঘাত থেকে একটু একটু করে সেরে উঠছিল যা সে রেড রোডে পেয়েছে। টাইটা তার ভাঙা পাজর বেঁধে দিয়েছে এবং তারা যথেষ্ট দ্রুততায় সেরে উঠল। সে তার ছিন্ন কান সেলাই করে দিয়েছে এতো নিখুঁতভাবে যে এখন তা একটু খানি তীর্যকভাবে দাঁড়িয়ে আছে এবং মেরিকারার কাছে মনে হল তার গালের নিচের অর্ধচন্দ্রাকার কাটা দাগটা তাকে আরো বয়স্ক ও আরো স্বতন্ত্র করেছে। যাই হোক, তার বাহুর নিচে তলোয়ারের আঘাতটা এমনকি টাইটাকেও চিন্তিত করে তুলেছিল, এখন তাও সেরে উঠেছে। মাঝে মাঝে ম্যারন সুস্থবোধ করত। তারপর যখন পীড়িত পদার্থগুলো আবার উত্থিত হত, সে অর্ধ অচেতনায় ও জ্বরে ডুবে যেত।

মেরিকারা তার পাশে অবস্থান করত তখন, তার কাপড় বদলে দিত এবং ক্ষতে প্রলেপ লাগিয়ে দিত যা টাইটা তার জন্য তৈরি করেছিল। যখন ম্যারন সুস্থ হত সে তাকে গান শুনাত এবং শহর ও আর্মির সব খবর বর্ণনা করত। সে তার সাথে বাও খেলত, এবং ছড়া শুনাত, ধাঁধা বলে আনন্দ দিতো।

প্রত্যেক সকালে সে তার প্রতিটি অংশ ধৌত করল, তার শক্ত মাংসপেশীর প্রতিটি ভাঁজ, সমতল ও স্ফীত অংশ। প্রথমদিকে সে তার চোখ তার গোপনাঙ্গ থেকে সরিয়ে রাখত, কিন্তু শীঘ্রই তা তার কাছে বিনয়াভিমানী মনে হয়।

এক রাতে সে জানালা দিয়ে আসা চাঁদের আলোয় জেগে গেল। এক মুহূর্তের জন্য তার মনে হল সে তার নিজের শয়নকক্ষে থেবসের নদীর প্রাসাদে আছে। কিন্তু তখন সে ম্যারনের যন্ত্রণাদায়ক শ্বাস প্রশ্বাস শুনল, দুঃস্বপ্ন তাড়িত অসঙ্গত চিৎকার এবং এটা তাকে ভয় পাইয়ে দিল। সে নগ্ন অবস্থায় তার বিছানার পায়ের কাছে তার বিছানা থেকে উঠল এবং দৌড়ে তার কাছে গেল।

যখন সে বাতি জ্বালাল, সে দেখল সে তার চোখ সম্পূর্ণ ভোলা কিন্তু দৃষ্টিহীন, এবং তার হোরা পাংশুবর্ণের ও দুমড়ানো, তার ঠোঁটের উপর সাদা ফেনা এবং তার দেহ বয়ে চলা ঘামে চকচক করছে। সে বুঝল এটা সেই সমস্যা যার সম্বন্ধে টাইটা তাকে সতর্ক করেছিল।

টাইটা! সে আর্তনাদ করল। দয়া কর, আমাদের এখন তোমাকে প্রয়োজন।

টাইটার কক্ষ তাদের উঠান পেরিয়ে অন্য পাশে এবং সে সর্বদা ঘুমায় তার দরজা খোলা রেখে যাতে সে তার ডাক শুনতে পায়।

টাইটা! সে আবার কান ফাটানো চিৎকার দিল যখন সে নিজেকে ম্যারনের বুকে নিক্ষেপ করল তাকে রুখতে। তখন তার মনে পড়ল ম্যাগোস নেফারের সাথে মরুভূমিতে গিয়েছে এবং রথের একটা দল নিয়ে কোন গোপন অভিযানে এবং কয়েক দিনের মধ্যে ফেরার সম্ভাবনা নেই। সে মিনটাকাকে ডাকার কথা ভাবল। কিন্তু তার কক্ষ পুরানো ভবনের অন্য প্রান্তে এবং সে ম্যারনকে ছেড়ে যাওয়ার সাহস করল না।

নিজেই নিজের ভরসা। সে বুঝল যে ম্যারনকে জীবন তার হাতে, এবং ঐ চিন্তায় সে তার আতঙ্ক দমতি হতে অনুভব করল। একটা শীতল সংকল্প তার স্থান নিল। সে তার উপর পড়ল এবং তাকে শক্ত করে ধরে রাখল, ফিসফিসিয়ে সাহস ও নিশ্চয়তা দিল। কিছুক্ষণ পর যে শান্ত হল ফলে সে তাকে এক মুহূর্তের জন্য ছেড়ে যেতে পারল। সে জানালার দেয়ালের কাছের সিন্দুকের কাছে গেল, ওষুধের শিশি খুঁজে নিল যেটা তার জন্য ম্যাগোস রেখে গিয়েছে, তিক্ত ওষুধ যা মদের সাথে মিশাল এবং তা কড়াইতে গরম করল যেমনটা যে তাকে নির্দেশ দিয়েছে।

তারপর সে তাতে তা জোর করে পান করাল। বাটিটা খালি হলে সে পানি গরম করল ও তার চেহারা হতে ঘাম, ঠোঁট হতে ফেনা ধুয়ে দিল। সে তার দেহ ধৌত করতে যাচ্ছিল তখন একজন আকস্মিক জব্দকারক তাকে যন্ত্রণা দিল এবং সে কাঁপতে ও আর্তনাদ করতে শুরু করল। তার ভয় পুরো উদ্যামে ফিরে এল। সে নিজেকে তার উপর নিক্ষেপ করল এবং তার সমস্ত শক্তি দিয়ে তার সাথে লেগে রইল, মরে যেও না আমার প্রিয়। সে তার কাছে অনুনয় করল এবং তারপর অধিকতর জোরালো কণ্ঠে বলল, আমি তোমাকে মরতে দেব না। ও হাহোর আমাকে সাহায্য কর, আমি তাকে আমার নিজের হাতে পাতাল থেকে টেনে আনব। সে বুঝল সে একটা যুদ্ধে আছে, এবং সে তার সাথে লড়াই করল, তার সব শক্তি বাড়াল ও তার সাথে যোগ করল। যখন সে তাকে তার হাতের মধ্যে অবশ হয়ে যেতে অনুভব করল এবং তার ঘামে ভেজা দেহ ঠাণ্ডা হতে শুরু করল, সে চিৎকার ও আর্তনাদ করে উঠল, না, ম্যারন, ফিরে এসো! আমার কাছে ফিরে এসো। তুমি আমাকে ছাড়া যেতে পার না। সে তার নিজের মুখ তার উপর স্থাপন করল এবং তার নিজের জীবন তার মধ্যে দেওয়ার চেষ্টা করল, হঠাৎ সে একটা শ্বাসের বিস্ফোরণ ঘটাল, তার ফুসফুস খালি করল এবং সে ভাবল সব শেষ। সে তাকে জড়িয়ে ধরল, এবং যখন সে চাপটা ছেড়ে দিল সে আরেকটা জোরালো দম নিল, তারপর আরেকটা ও আরেকটা। তার হৃদপিণ্ডে ধড়ফড়ানি জোরালো নিয়মিত ধুমধাম শব্দে পরিণত হল যা তার দেহ কাঠ মাধ্যে বারবার প্রতিধ্বনিত হল।

তুমি ফিরে এসেছে, সে ফিসফিসিয়ে বলল। তুমি আমার কাছে ফিরে এসেছে। সে তাকে দুই হাতে জড়িয়ে রাখল তার বুকের উপর দিয়ে, এবং তার নিতম্বে তার পা আটকে দিল, তাকে তার নিজের দেহ দিয়ে উষ্ণ করল। ধীরে ধীরে তা শ্বাস প্রশ্বাস গভীর ও নিয়মিত হল, এবং সে তার ধমনীতে উষ্ণ রক্তে প্রবাহ ফিরে আসার অনুভব করল। সে তার সাথে শুয়ে রইল এবং পূর্ণতার একটা গভীর অনুভূতি অনুভব করল কারণ সে জানত সে যে তাকে রক্ষা করেছে। এবং আজকে রাত হতে সে শুধু তার।

ভোরে আরেকটা অলৌকিক ঘটনা করল। সে তার দেহ জাগ্রত অনুভব করল। সে অনুভব করল তার সাথে কিছু একটা ঘটছে এবং সে যখন চোখ খুলল এবং তার চেহারার মধ্যে তাকাল সে দেখল ম্যারন জেগে আছে এবং তাদের মধ্যে এমন এক অভিব্যক্তি ছিল যা তার হৃদয়কে তার বক্ষের ভেতরে স্ফীত করে দিল। ফলে সে অনুভব করল সে হয়তো তার নিজের আবেগের বর্ষণে শক্তিতে দম আটকে যাবে।

হ্যাঁ? সে জিজ্ঞাসা করল।

হ্যাঁ, সে উত্তর দিল। এটাই যা আমি এই দুনিয়ায় অন্য যে কোন কিছু থেকে বেশি চাই। সে নিজেকে প্রসারিত করল ও তাকে পথ দেখাল।

সে তার পাশে শান্তভাবে শুয়ে রইল, তাকে বিরক্ত না করতে সতর্ক। সে বুঝল সে জাগছে এবং আলতোভাবে তাকে তার ঠোঁটে চুমু দিল এবং তার চোখে দেখল প্রথমে হত বিমূঢ়ভাবে তারপর নব উম্মোচিত আনন্দে যখন রাতের ঘটনাগুলো তার মনে পড়ল।

আমি চাই তুমি আমার স্ত্রী হও, সে বলল।

আমি ইতোমধ্যেই তোমার স্ত্রী। সে জবাব দিল, এবং আমি তোমার স্ত্রী থাকবো আমার মৃত্যুর দিন পর্যন্ত।

*

মরুর অনুশীলনে নেফার পিছনে রথের সারির দিকে তাকাল, তারা চারটা কলামে রথ নিয়ে পূর্ণ গতিতে পাশাপাশি চলছে। প্লাটুনের কমান্ডার তার সংকেতের অপেক্ষায়। সে সামনে তাকাল এবং শত্রুদের পদাতিক বাহিনীকে সমতল ভূমিতে দেখল, তাপের মরীচিকায় বিকৃত- ফলে তাদেরকে মোচড়ানো ভঙ্গিতে চলা সাপের মত মনে হল, যেন পানির হ্রদে সাঁতার কাটছে যেখানে কোনো পানি নেই। সে তাদের কেন্দ্রস্থলের দিকে সরাসরি রথ চালাল। টাইটার সেবায় ডোভ তার আঘাত থেকে সম্পূর্ণ সেরে উঠেছে এবং এখন সে জোরালো ভাবে ক্রুসের দীর্ঘ পদক্ষেপের সাথে তাল রেখে দৌড়াল।

তারা যখন ছুটল, সে শত্রুদের গঠন পরিবর্তন হতে দেখল। একটা দৈত্যকার শত্রুর ন্যায় সারিটা নিজেই গুটিয়ে একটা বল হয়ে গেল, দুই সারি সৈন্যের একটা শক্ত বৃত্ত বাইরের দিকে দুই মুখ করা। বাইরের দলটা তাদের দীর্ঘ বর্শা অনুভূমিক করে রেখেছে, ফলে তারা ব্রোঞ্জের বর্শার মাথার ঝলমলে দেয়াল প্রদান করল। নেফার বর্শার দুই সারির কেন্দ্রস্থলের দিকে দৌড়ে গেল, এবং তারপর যখন তারা মাত্র দুইশ কদম দূরে সে হাতের ইশারা করল হুরাসের পাখার মত করে।

গঠনটা সূর্যের মধ্যে একটা ফুলের মতো খুলে গেল, পিছনের সৈন্যরা বিপরীতক্রমে ডানে ও বায়ে চলে গেল, হুরাসের পাখা ছাড়িয়ে দিল গুটি গুটি মারা পদাতিক বাহিনীকে ঢেকে ফেলার জন্য। রথগুলো তাদের চতুর্দিকে যেমনভাবে চাকার প্রান্ত কেন্দ্রস্থলের চারপাশে ঘুরে তেমন করে প্রদক্ষিণ করল এবং খাটো বাঁকানো অশ্বারোহী সেনাদলের ধনুক হতে তীর কালো মেঘের মতো তাদের দিকে উড়ে গেরুর আক্রমণ শেল এবং চলে।

নেফার আক্রমণ শেষ করে ফিরে আসার সংকেত দিল। মসৃণভাবে রথগুলো চার সারিতে পুনর্গঠিত হল এবং চলে গেল। আরেকটা সংকেত, এবং তারা মধ্য থেকে ভেঙ্গে গেল এবং দৌড়ে ফিরে এল। তাদের বল্লম প্রস্তুত এবং নিক্ষেপণের চামড়ার ফালি তাদের কবজিতে প্যাচানো।

যখন সে পদাতিক বাহিনীর বৃত্ত দ্রুত অতিক্রম করল, নেফার তার ডান মুঠো স্যালুটের ভঙ্গিতে তুলল, এবং চিৎকার করে বলল, ভালো করেছ! অনেক ভালো হয়েছে।

পদাতিক সৈন্যরা তাদের বর্শা তুলল তার প্রশংসার বাণী স্বীকার করার জন্য এবং চিৎকার করে বলল, নেফার সেটি ও হুরাস।

নেফার ঘোড়াগুলোকে স্থির করল এবং তাদের দিকে ঘুরে দুলকি চালে পদাতিক বাহিনীর সামনে এল তার স্কোয়াড্রনকে থামাতে। টাইটা তাকে অভিনন্দন জানাতে প্রতিরক্ষা বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এল।

কেউ আহত? নেফার জিজ্ঞেস করল এমন কি যদিও অনুশীলনের তীরগুলো অগ্রভাগ যেগুলোকে তারা ছুড়ছে চামড়ায় প্যাঁচানো তবুও তারা চোখে অথবা অন্য কোন ক্ষতি করতে পারে।

কয়েকজনের দাগ পড়েছে। টাইটা কাঁধ উচালো।

তারা খুব ভালো করেছে। নেফার বলল, তারপর পদাতিক বাহিনীর দলনেতার উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে বলল। তোমার লোকদের ভেঙে বের হতে দাও। আমি তাদের সাথে কথা বলতে চাই। তারপর তারা খেতে ও পান করতে পারবে। তারপর আমরা আবার নকল প্রত্যাহার অনুশীলন করব।

একটা পাথরের একটু উঁচু স্থান ছিল যা একটা প্রাকৃতিক মঞ্চ গঠন করে ছিল নেফার ওটার শীর্ষে চড়ল যখন সব লোক, পদাতিক বাহিনী ও রক্ষীরা তার নিচে জমায়েত হল।

টাইটা পাথরের ভিত্তিমূলে আসন করে বসল এবং খেয়াল করল ও শুনল। নেফার তাকে ফারাও ট্যামোসের কথা খুব মনে করিয়ে দিল, তার পিতা একই বয়সে তার মতই সহজ ভঙ্গি ছিল এবং সাধারণভাবে কথা বলত, কিন্তু কার্যকরভাবে কথ্য ভাষায় যা তার লোকেরা সবচেয়ে ভালো বুঝত। মাঝে মাঝে নেফারও তার মতো তাদের একজন হয়ে যেত, এবং সে উষ্ণতা ও শ্রদ্ধা তারা তার জন্য অনুভব করল তা স্পষ্ট ছিল যেভাবে তারা সাড়া দিল।

নেফার সকালের অনুশীলন পর্যালোচনা করল, যারা যোগ্যতা দেখাল তাদের যথাযথ সম্মান দিল, কিন্তু সেই সাথে নির্মমভাবে তাদের প্রদর্শনের মধ্যকার প্রতিটি অপূর্ণতা তুলে ধরল।

আমি মনে করি তোমরা টর্ক ও নাজাকে তাদের সুন্দর জীবনের চমক দিতে প্রায় প্রস্তুত। সে শেষ করল। এখন কিছু খাও। আমরা অজকের দিনের জন্য শেষ করি নি, প্রকৃতপক্ষে আমরা মাত্র শুরু করেছি। তারা হাসল এবং চলে যেতে শুরু করল।

নেফার পাথর থেকে লাফিয়ে নামল এবং যেহেতু সে উঠে গেল তাই টাইটাও দাঁড়াল। কিন্তু হঠাৎ তাকে শান্তভাবে কিন্তু জরুরি ভাবে বলল, দাঁড়াও, নেফার? নড়া না? নেফার জমে গেল যেখানে সে দাঁড়িয়েছিল।

কোবারটার অবশ্যই পাথরের স্তূপে তার বাসা বেঁধে ছিল কিন্তু শোরগোল এবং পা ও খুরের আওয়াজে এটা ফাটল হতে পিছলে বেরিয়ে এসেছে ঠিক যখন নেফার লাফিয়ে নামল এবং প্রায় ওটার শীষে পদার্পণ করল। সাপটা তার পিছনে উঠে দাঁড়াল, তার কোমর সমান উঁচু। সাপটার ফলা প্রসারিত এবং তার পাতলা কালো জিহ্বা সরু কুঞ্চিত ঠোঁটের মধ্য দিয়ে লক লক করল। এটার চোখগুলো মসৃণ পাথরের গুটিকার ন্যায়; কালো মনিতে আলোর স্ফুলিঙ্গ এবং তারা তাদের সম্মুখে সহজে ছোবল মারার দৃষ্টিতে পায়ের উপর নিবদ্ধ।

সবচেয়ে কাছের লোকেরা টাইটার সতর্কবাণী শুনছে এবং তারা ঘুরল। এখন প্রায় পাঁচশ লোক নেফারের চতুর্দিকে জমায়েত কিন্তু কেউ নড়ার সাহস করল না। তারা তাদের ফারাও এর মারাত্মক দূর্দশার ভয়ে এক দৃষ্টি তাকিয়ে রইল।

কোবরাটা হা করল, আক্রমণের পূর্ব প্রস্তুতি, এবং শক্ত বিষদাঁতগুলো এটার মুখের ধূসর আড়াল থেকে বেরিয়ে এল। ধারালো প্রাণে বিষের ফোঁটা ঝলমল করছে।

টাইটা লসট্রিসের মাদুলিটা ওটার লম্বা চেইনের ওপর দোলকের মতো করে দোলালো এবং তা সূর্যের আলোতে ঝিকমিক করে উঠল। সে এটাকে কোবরার তোলা মাথা দুলতে ও অমনোযোগী হতে ব্যবহার করল, সাপটা তার চোখ নেফার থেকে ঘুরিয়ে উজ্জ্বল মাদুলিটার দিকে ফেরালো। টাইটার অন্য হাতে তার লাঠি ছিল এবং সে কাছাকাছি এগিয়ে গেল। যখন আমি আঘাত করব, লাফ দিয়ে সরে যাবে, সে আস্তে আস্তে বলল এবং নেফার মাথা ঝুলিয়ে সম্মতি জানাল। টাইটা ধীরে ধীরে এক পাশে ঘুরতে গেল এবং কোবরাটাও তার সাথে ঘুরল, সোনার মাদুলিটা দ্বারা বিমোহিত ওটা।

এখন! টাইটা বলল এবং তার লাঠি দিয়ে কোবরাটাকে আঘাত করল। একই মুহূর্তে নেফারও লাফ দিয়ে সরে গেল, এবং সাপটা লাঠিতে ছোবল মারল। টাইটা সরিয়ে নিল তাই কোবরাটা লক্ষভ্রষ্ট হল এবং এক মুহূর্তের জন্য এটা শূন্য মাটিতে ছড়িয়ে গেল। ছোবলটা থেকে অধিকতর গতিতে টাইটা তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করল, এবং স্বস্তির একটা চিৎকার বেরিয়ে এল দর্শকদের মধ্যে থেকে।

কোবরাটা লাঠির প্রান্তে জড়িয়ে গেল এবং কুন্ডলী করে একটা উজ্জ্বল বল হয়ে গেল। টাইটা হাত বাড়িয়ে কুন্ডলীর মধ্য দিয়ে তার হাত ঢুকাল যততক্ষণ না সে সাপটাকে তার মাথার পিছনে চেপে ধরতে পারল। তারপর সে তা উপরে তুলে ধরল এবং লোকজন তা খেয়াল করে হাফ ছাড়লো। তারা সহজাত ভাবেই পিছু হইল যখন এটা টাইটার দীর্ঘ সরু বাহুতে প্যাচিয়ে গেল। তারা চাইল সে ওটাকে হত্যা করুক। কিন্তু মুচড়ানো সাপটাকে নিয়ে টাইটা তাদের সারির মধ্য দিয়ে হেঁটে গেল ও খোলা মরু ভূমিতে বেরিয়ে গেল।

সেখানে সে সাপটাকে তার হাত থেকে নিক্ষেপ করল এবং ভূমিতে পড়তেই তার কুন্ডলী খুলে গেল। পাথুরে মাটির উপর দিয়ে পিছলে পিছলে চলে গেল এবং টাইটা মগ্ন হয়ে দেখতে লাগল সাপটিকে।

হঠাৎ উপরের আকাশ হতে একটা গগনবিদারী চিৎকার ভেসে এল। তারা সবাই সাপ ধরতে এতো মগ্ন ছিল যে কেউ তাদের উপরে নীল আকাশে বাজ পাখিটাকে চক্কর দিতে দেখেনি। এখন এটা মাটির দিকে নিচু হল কোবরাটার দিকে পড়ছে। শেষ মুহূর্তে সাপটা নিজের বিপদ বুঝতে পারল এবং আবার দাঁড়িয়ে গেল, ফলা পূর্ণ প্রশস্ত করে। বাজপাখিটা তার ধারালো নখর সাপটার মাথার পিছনে স্ফীত ফণায় এক ইঞ্চি বসিয়ে ভারি ডানা ঝাঁপটিয়ে উঠে গেল কোবারটাকে তার থাবার নিচে ঝুলিয়ে ও প্যাচিয়ে নিয়ে।

টাইটা লক্ষ্য করল পাখিটা সাপটাকে নিয়ে চলে গেল এবং শেষে নীলাভ ধূসর তাপের আস্তরের আড়ালে বিন্দুর ন্যায় অদৃশ্য হয়ে গেল। টাইটা দীর্ঘক্ষণ পিছনে তাকিয়ে থাকল। সে ঘরে নেফার যেখানে সেখানে ফিরে এল। তার অভিব্যক্তি ছিল গম্ভীর এবং সে দিনের বাকিটা সময় চুপ করে রইল। সন্ধ্যায় সে নেফারের পাশে রথে করে গালালায় ফিরল, তখনো নীরব।

একটা কোন অশুভবাণী ছিল, নেফার বলল এবং তার দিকে তাকাল। সে টাইটার চেহারায় দেখল তখনও গম্ভীর। আমি লোকদের কথা শুনেছি নেফার শান্তভাবে বলে চলল। তাদের কেউ আগে কখনো এমনটা হতে দেখেনি। কোবরা রাজকীয় বাজ পাখির স্বাভাবিক শিকার নয়।

হ্যাঁ, টাইটা বলল, এটা একটা অশুভ সংকেত, একটা বিপদ সংকেত ও একটা ওয়াদা প্রভুর কাছ থেকে।

এর অর্থ কি? নেফার তার চেহারা পর্যবেক্ষণ করল।

কোবরাটা তোমাকে হুমকি দিয়েছিল, তার অর্থ বিশাল বিপদ। বাজ পাখিটা পূর্ব দিয়ে উড়ে গেল কোবরাটাকে তার নখরে নিয়ে এর অর্থ পূর্বদিকে বিশাল বিপদ। কিন্তু শেষে বাজ পাখিটা জিতল।

তারা উভয়ে পূর্বদিকে তাকাল। আমরা কাল ভোরের প্রথম আলোতে একটা তাল্লাশি অভিযান চালাবো। নেফার সিদ্ধান্ত নিল।

*

ভোরের পূর্বে অন্ধকারের ঠাণ্ডায় নেফার ও টাইটা পর্বতের চূড়ায় অপেক্ষা করছিল। তল্লাশি দলটার বাকি সদস্যরা পিছনের ঢালে ক্যাম্প করেছে। তারা বিশ জনের মত। লুকিয়ে থাকার জন্য তারা রথগুলোকে গালালায় রেখে এসেছে এবং তারা ঘোড়ার পিঠে চড়ে এসেছে।

হিল্টো ও শাবাকো অন্য তল্লাশি বাহিনীকে নিয়ে দক্ষিণের ভূখন্ড পর্যবেক্ষণ করতে নিয়ে গেছে, তাদের মাঝখানে তারা গালালায় প্রতি হুমকি সকল পূর্ব শক্তিকে উড়িয়ে দিতে পারে।

নেফার তার দলকে গেবেল অববাহিকার দিকে লোহিত সাগরের পশ্চিম তীর বরাবর এনেছে। রাস্তার পাশের প্রতিটি বন্দর ও জেলেদের গ্রামে দেখেছে। কয়েকটা বাণিজ্যের ক্যারাভান ও বেদুঈনদের ভ্রমণ দল ছাড়া তারা আর কিছু খুঁজে পায়নি। বিপদের কোন চিহ্নই। এখন তারা সাফাগা বন্দরের উপরে ক্যাম্প করেছে।

টাইটা ও নেফার অন্ধকার থাকতেই জেগেছে এবং প্রহরী স্থানের চূড়ায় উঠার জন্য ক্যাম্প ছেড়ে এসেছে। তারা কাছাকাছি নিরবতায় বসল। নেফার অবশেষে কথা বলল।

এটা কি একটা মিথ্যা অশুভ সংকেত হতে পারে?

টাইটা নাক দিয়ে বিতৃষ্ণার একটা শব্দ করল ও থু থু ফেলল। একটা বাজপাখি তার নখরে একটা কোবরা নিয়ে? এটা স্বাভাবিক নয়। এটা একটা অশুভ সংকেত ছিল, নিঃসন্দেহে কিন্তু সম্ভবত মিথ্যা। ইশতার দি মেডি ও অন্যরা এরকম ফাঁদ পাততে সক্ষম। এটা সম্ভব।

কিন্তু তুমি এ রকমটা মনে করছ না? নেফার জোর দিল। তুমি আমাদের দিয়ে এতো কষ্ট করাতে না যদি তুমি বিশ্বাস করতে এটা মিথ্যা।

ভোর দ্রুত চলে আসে। টাইটা প্রশ্ন এড়িয়ে গেল এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন পূর্ব আকাশে তাকাল যেখানে শুকতারা ঝুলে আছে, একটা লণ্ঠনের মতো, নিচু দিগন্তের উপর। আকাশটা একটা পাকতে থাকা ফলের মত নরম, খেজুর পাকা ডালিমের মত রং ধারণ করেছে। অন্য তীরের পর্বতগুলো ছিল কালো এবং তীক্ষ্ম ও ছিন্ন। বৃদ্ধ কুমিরের ছেদন দাঁতের ন্যায় আকাশের আলোকিত হওয়া প্রেক্ষাপটের বিপরীতে।

হঠাৎ টাইটা দাঁড়িয়ে গেল এবং তার লাঠির উপর ঝুকল। নেফার কখনো অবাক হতে ব্যর্থ হয়নি ঐ ধূসর বৃদ্ধ চোখগুলোর তীক্ষ্ণতা দ্বারা। সে জানত টাইটা কিছু দেখেছে। নেফার তার পাশে দাঁড়াল।

কি হল, বৃদ্ধ পিতা?

টাইটা একটা হাত তার বাহুতে রাখল। অশুভ সংকেত মিথ্যা না, সে এতোটুকুই বলল। বিপদ এখানে।

সাগরটা ঘুঘুর পেটের মতো ধূসর হচ্ছিল, কিন্তু যখন আলো শক্তিশালী হলো তখন উপরিস্তর সাদা ফুটকিতে ভরে গেল।

বাতাস সমুদ্রটাকে কশাঘাত করে সাদা ঘোড়ায় পরিণত করেছে। নেফার বলল।

না। টাইটা তার মাথা ঝাঁকাল, ওগুলো কোন সফেন তরঙ্গ নয়। ওগুলো পাল। পালের নিচে একটা জাহাজ।

সূর্য দূরের পর্বতের চূড়ার উপরে তার উপরিতল ধাক্কা দিয়ে উদিত হলো এবং ক্ষুদ্র ত্রিভুজে সাদা হয়ে জ্বলল, নীড়ে ফেরারত সারস পাখির বিশাল ঝাকের ন্যায়, এক মাস্তুল বিশিষ্ট একটা ঝাক যুদ্ধ জাহাজ সাফাগা বন্ধরের দিকে আসছে। যদি এটা টর্ক ও নাজার আর্মি হয়, তবে কেন তারা সাগর দিয়ে আসবে? নেফার শাক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল।

এটা মেসোপটেমিয়া থেকে সরাসরি ও সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত রাস্তা। নৌকায় পারাপার ঘোড়া ও মানুষগুলোকে মরুভূমির কষ্টদায়ক ভ্রমণ থেকে রক্ষা করবে। সাপ ও বাজপাখির বিপদ সংকেত ছাড়া, আমরা এদিক থেকে বিপদ আশা করতাম না। টাইটা উত্তর দিল।

এটা একটা সুচতুর কাজ। সে সম্মতিতে মাথা নাড়ল। মনে হয় তারা সমগ্র লোহিত সাগর পার হওয়ার জন্যে প্রতিটি ব্যবসায়ীর যান ও মাছের নৌকা দখল করেছে।

তারা পর্বত বেয়ে নিচের গিরিখাতের ক্যাম্পে ফিরে এল। সৈন্যরা জেগে ছিল ও সচকিত। নেফার প্রহরীদের ডাকল এবং তাদের আদেশ দিল। দুজন সর্বোচ্চ গতিতে গালালায় ফিরে যাবে। সোক্কোর কাছে তার আদেশ নিয়ে, যাকে সে শহরের দায়িত্বে রেখে এসেছে। অন্য লোকদের অধিকাংশকে সে জোড়ায় জোড়ায় ভাগ করল এবং দক্ষিণে পাঠাল হিল্টো ও শাবাকোর দলকে খুঁজতে এবং তাদেরকে নিয়ে আসতে। সে তার সাথে পাঁচ জন সৈন্য রাখল। নেফার ও টাইটা লোকদের দেখল যাদের সে দ্রুত সংবাদ প্রেরণে পাঠিয়েছে, তারপর তারা পর্বতে চড়ল এবং পাহাড়ের মধ্য দিয়ে সাফাগায় চলল পাঁচ জন লোক নিয়ে যাদের নেফার বাছাই করেছে। তারা সকালের মাঝামাঝি সময়ে বন্দরের উপরের উঁচু ভূমিতে পৌঁছাল। টাইটা তাদের একটা পরিত্যক্ত ওয়াচ টাওয়ারে নিয়ে গেল যেখান থেকে বন্দর ও তাদের অভিগম দেখা যাবে। তারা সৈন্যদের দায়িত্বে ঘোড়াগুলোকে রেখে ভাঙ্গা মই দিয়ে টাওয়ারের শেষ তলায় উঠে গেল।

প্রথম নৌকাগুলো উপসাগরে প্রবেশ করছে। নেফার ওগুলো চিহ্নিত করল। ওগুলো খুব বোঝাই করা কিন্তু বাতাসের সাহায্যে তারা দ্রুত এল। তারা তীর থেকে একটু দূরে থামল এবং ভারি প্রবালের নোঙ্গরগুলো ফেলল। টাওয়ারের শীর্ষ থেকে নেফার ও টাইটা নিচে খোলা ডেকের সবকিছু পরিষ্কার দেখল, যেটা লোজন ও ঘোড়ায় জনাকীর্ণ। যখনই এক মাস্তুলের জাহাজগুলো নোঙ্গর ফেলল, তখনই লোকগুলো জাহাজের পাশের কাঠের প্রান্ত সরিয়ে ফেলল। তাদের ক্ষীণ চিৎকার ভাঙ্গা ওয়াচ টাওয়ার থেকেও শোনা গেল যখন তারা ঘোড়াগুলোকে লাফিয়ে নামতে উৎসাহ দিচ্ছিল। তারা বিশাল পানি ছলকে পানিতে নেমে এল। তারপর লোকগুলো তাদের কাপড় খুলে ফেলল এবং তাদের পিছনে লাফিয়ে পড়ল। তারা ঘোড়াগুলোর কেশর ধরে তাদের পাশাপাশি সাগরের তীরে রিয়ে এল। প্রাণীগুলো তীরে এসে তাদের শরীর থেকে পানি ঝাড়ল যা সুন্দর কুয়াশা তৈরি করে সূর্যালোতে রংধনুতে পরিণত হল।

এক ঘণ্টার মধ্যে বীচটা মানুষ ও ঘোড়ায় গিজগিজ করল। ঘোড়া বাঁধার খুঁটি পোঁতা হলো ছোট বন্দরটার কাদার তৈরি ভবনগুলোর চতুর্দিকে।

যদি আমাদের রথের একটা দল থাকত, নেফার আক্ষেপ করল, এটাই হতো আঘাত করার সময়। মাত্র তাদের অর্ধেক সৈন্য তীরে এবং তাদের রথগুলো ভাঙা। আমরা তাদের টুকরো টুকরো করতে পারতাম। টাইটা কেন উত্তর দিল না।

এরই মধ্যে উপসাগরটা জাহাজে ভরে গেল। নৌকাগুলো যেগুলো রথ ও মালপত্র বহন করবে সেগুলো কাছেই নোঙ্গর করা এবং যখন ভাটা নামল তারা ভূমিতে নিয়ে এল ও তালিকা করল। শীঘ্রই পানি হাঁটু পর্যন্ত গম্ভীর হলো তাদের ঘিরে। তীরের লোকেরা পানি ঠেলে মালপত্র নামাতে শুরু করল। তারা ভেঙে রাখা। রথের অংশ তীরে বয়ে আনল এবং তীরে এনে তাদের সংযোগ করল।

পশ্চিম পর্বতে সূর্য ডুবছিল যখন শেষ জাহাজটা উপসাগরে প্রবেশ করল। এটা ছিল সবগুলো থেকে বৃহৎ এবং তার খাটো ও মোটা মাস্তুলের চূড়ায় গর্জনরত সিংহের মাথার পতাকা ও টর্ক উরুক এর হাউজের জমকালো রঙগুলো উড়ছিল।

ওই যে সে। নেফার মাস্তুলের অগ্রভাগে সন্দেহাতীত অবয়বটা নির্দেশ করল।

এবং ওটা ইশতার টর্কের পাশে। কুকুর ও তার প্রভু। টাইটার ধূসর চোখে একটা হিংস্র ঝলক ছেয়ে গেল যা নেফার পূর্বে কদাচিৎ দেখেছে। তারা অদ্ভুত যুগলকে পানি ঠেলে তীরে আসতে দেখল। তীর থেকে একটা পাথুরে জেটি বেরিয়ে গেছে। টর্ক ওটার উপর উঠল।

তুমি কি দেখতে পাচ্ছ কোন জাহাজে নাজা? নেফার জিজ্ঞেস করল এবং টাইটা তার মাথা ঝাঁকাল।

টর্ক একা অভিযান চালবে। সে নিশ্চয়ই নাজাকে ব্যাবিলিয়ন ও মেসোপটেমিয়া ধরে রাখতে রেখে এসেছে। সে তার ব্যক্তিগত ব্যবসা দেখা শুনা করতে এসেছে।

তুমি কীভাবে তা জান? নেফার জানতে চাইল।

তার চতুর্দিকে একটা আভা বিরাজ করছে। এটা একটা গাঢ় লাল মেঘের মত। আমি এমনকি এখান থেকেও তা অনুভব করতে পারছি। টাইটা নরম সুরে বলল। তার সব ঘৃণা মাত্র একজন মানুষের উপর নিবদ্ধ। সে কখনো নাজা বা অন্য কাউকে তাতে ভাগ বসাতে দেবে না, প্রতিশোধের নেশা যা তাকে এখানে নিয়ে এসেছে।

আমি তার ঘৃণার বস্তু? নেফার জিজ্ঞেস করল।

না, তুমি না।

তাহলে কে?

সর্বোপরি সে মিনটাকার জন্য এসেছে। যখন সূর্য ডুবল, নেফার ও টাইটা পাঁচ জন সৈন্যকে টর্কের পিছু করতে রেখে এল এবং রাতে দ্রুত তারা গালালার দিকে রওনা দিল।

*

সাফাগায় তার আগমণের পরের সকালে, টর্ক দুজন বেদুঈনকে আটক করল যারা সাফাগার রাস্তায় তাদের গাধা নিয়ে চলছিল। বিনা সন্দেহে তারা সোজাসুজি তার বাহুতে ধরা দিয়েছে। টর্কের সম্মান এমনকি মরুর অসীমতাও বিদ্ধ করেছে, তাই যখনই তারা জালন কে তাদের বন্দিকর্তা বেদুইনরা তখন তাকে সন্তুষ্ট করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তারা টর্ককে প্রাচীন শহরটির পুনরুত্থানের চমকপ্রদ খবর দিল। তারা মিষ্টি ঝর্ণার কথা বলল যা এখন পাহাড়ের গুহা থেকে প্রবাহিত হয় এবং সবুজ ঘাসের ও বনের কথা যেগুলো গালালাকে ঘিরে আছে। তারা তাকে রথের একটা আনুমানিক হিসাব দিল যা নেফার সেটির আছে। টর্ক বুঝল হিসেব করে দেখল সে তার শক্রর চেয়ে পাঁচগুণ এগিয়ে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তারা তাকে সাফাগান থেকে পুরানো শহরে যাওয়া রাস্তার পূর্ণ বর্ণনা দিল। এখন পর্যন্ত টর্কের শুধুমাত্র গালালায় অভিযানের পরোক্ষ জ্ঞান ছিল এবং মনে হলো সে তাকে ভুল তথ্য দেয়া হয়েছিল। তাকে বলা হয়েছিল যে দ্রুত চললে তিন থেকে চার দিনে যাত্রা এবং সে পরিকল্পনা করেছিল তার নিজের পানি ও পশুর খাদ্যের ওরাগনগুলো তার সাথে উপকূল থেকে বহন করবে। এটা একটা দীর্ঘ ও কষ্টসাধ্য পদ্ধতি হত। এই নতুন তথ্য সব কিছু বদলে দিল। বেদুঈনরা তাকে নিশ্চয়তা দিল যে সে গালালায় এক দিন ও এক রাতের শক্ত ভ্রমণেই পৌঁছতে পারবে।

সে ঝুঁকি ও বিপদের কথা পরিমাপ করল, তারপর মরু দিয়ে গালালায় দ্রুত যাত্রার সিদ্ধান্ত নিল শহরটাকে চমকে দিতে। তবে তাকে তার সোজাসুজি যুদ্ধের দীর্ঘ যাত্রা নিঃশোষিত ঘোড়া ও শূন্য পানির থলে নিয়েই করতে হবে। যাই হোক তারা ঝর্ণার মাথা ও সবুজ ভূমি দখল করতে পারে যা বেদুঈনরা তার কাছে বর্ণনা করেছে। একবার যখন তারা ঐ সব আশীর্বাদগুলো নিয়ে নেবে, বিজয় নিশ্চিত। তার সব সৈন্য বাহিনী অবতরণ এবং রথ জোড়া লাগাতে জন্য আরো দুদিন লেগে গেল। দ্বিতীয় সন্ধ্যায় সে গালালার উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করতে প্রস্তুত হলো।

পানির থলে পূর্ণ করে অগ্রগামী সৈন্য দল সাফাগা থেকে বের হলো যখন সূর্য ডুবন্ত ও সূর্যের তাপ চলে গেল। প্রতি রথের দুইটা অতিরিক্ত দল থাকল ওটার পিছনে। তারা রাতে ঘোড়াগুলোর বিশ্রামের জন্য থামবে না বরং তাদের বদলে দিবে যখন তারা ক্লান্ত হবে। যে কোন ক্লান্ত প্রাণী ছেড়ে দেওয়া হবে এবং ফেলে যাওয়া হবে অশ্ব সরবরাহ দলের তা আনার জন্য।

টর্ক সামনের দলটাকে নেতৃত্ব দিল এবং ভয়ংকর গতি তুলল। পর্যায়ক্রমে ঢালে উলঠ, তারপর চাবকিয়ে ঘোড়াগুলোকে দুলকি চালে অথবা দৌড়িয়ে পাহাড় থেকে নামাত এবং সমতলে যখন পানির থলে শূন্য হয়ে গেল তখনও কেউ পিছু হটল না। পরের দিনে মধ্য সকালে তাপ ভয়ংকর হয়ে গেল এবং তারা বেশির ভাগ অতিরিক্ত ঘোড়া ব্যবহার করে ফেলেছে।

বেদুঈনদের দিক নির্দেশনায় টর্ক নিশ্চিত থাকল যে সে গালালা সামনে খুব বেশি দূরে নয়। কিন্তু প্রতিবার তারা একটা চূড়ার শীর্ষে উঠল ও একই অলস সংকীর্ণ সরু পথ, পাহাড় ও শুকনো মাটি পেল ও তাপের মরীচিকা তাদের সামনে ঝিকিমিকি করল।

পড়ন্ত বেলায় বেদুঈন পথ প্রদর্শন করা ছেড়ে গেল। জ্বিনের যাদুতে তারা তাপের মরীচিৎকার মধ্যে গলে গেল এবং যদিও টর্ক এক জোড়া রথ তাদের পিছে পাঠাল তবুও তাদের আর দেখা গেল না।

আমি আপনাকে সতর্ক করেছিলাম, ইশতার দি মেডি আত্মতৃপ্তভাবে টর্ককে বলল, আপনার আমার উপদেশ শোনা উচিতে ছিল। ঐ প্রভুহীন সৃষ্টিগুলো সম্ভবত টাইটা, ওয়ারলকের পাঠানো। প্রায় নিশ্চিতভাবে সে পথ ঢেকে দিয়েছে এবং আমাদের ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা জানি না কত দূরে এই উপকথার গালালার অথবা ঐ বিষয়ের কারণে যদি তা সত্যি থেকে থাকে। এই আমন্ত্রণহীন মতামতের জন্য টর্ক তর ট্যাটু করা মুখে চাবুক মারল। একটা সর্বনাশ ও নৈরাশ্য অনুভূতি টর্ককে জেকে বসল, তা লাঘব করার জন্য কিছুই করতে সে পারছিল না। সে ঘোড়াগুলো আরো একবার চাবকালো এবং তাদের পরবর্তী দীর্ঘ পাথুরে ঢালের উপরে নিয়ে গেল যেটা তাদের মুখোমুখি হল। সে অনেক ঘোরাঘুরি করল, তাদের ধৈর্য্যের প্রায় শেষ সীমায় এলে গেল এবং সে সন্দেহ করল যে তারা রাতে যেতে পারবে।

কোনভাবে তারা ঘোড়া চালিয়ে এগুল, তার অধিকাংশ সৈন্য তা করল। পঞ্চাশ অথবা ষাটটা রথ তাদের ঘোড়ার সবশেষ দলটাকে ব্যবহার করে ফেলল এবং টর্ক তাদের রাস্তার পাশে ছড়িয়ে ফেলে এল।

দ্বিতীয় দিন সূর্য উঠল–চুমুর মতো উষ্ণ, রাতের ঠাণ্ডার পর, কিন্তু এটা একটা প্রতারণাপূর্ণ চুমু। শীঘ্রই এটা তাদের লাল লাল চোখে যন্ত্রণা ধরিয়ে দিল ও ধাধিয়ে দিল। প্রথমবারের মতো টর্ক মরে যাওয়ার সম্ভাবনার মুখোমুখি হল, যেন এই ভয়ংকর রাস্তার কোন শেষ নেই।

আবার একটা পাহাড়, সে তার ঘোড়ার শেষ দলটাকে বলল এবং চাবুক পিটিয়ে দলটি তারা চালিয়ে আনার চেষ্টা করল। কিন্তু ঘোড়াগুলো হোঁচট খেল, সহজ ঢালুতে তাদের মাথা ঝুলছে এবং ঘাম অনেক আগেই শুকিয়ে সাদা লবণ হয়ে গিয়েছে তাদের শরীরে। ঠিক চূড়ার নিচে টর্ক তার আর্মির পিছিয়ে পড়া সারির দিকে ফিরে তাকাল। এমনকি না গুণেই সে দেখল সে তার অর্ধেক রথ হারিয়েছে। শত শত পদাতিক সৈন্যরা সারি পিছনে টলমল ভাবে হাঁটছে। এমনকি সে খেয়াল করে দেখল দুই অথবা তিন জন করে তারা পড়ে যাচ্ছে এবং রাস্তার পাশে মরা মানুষের মতো তারা পড়েই রইল। আকাশে শকুনরা তাদের অনুসরণ করছিল, শত শত কালো বিন্দু আকাশের গায়ে উঁচু বৃত্তে ঘুরছে। সে দেখল কিছু তির্যকভাবে নেমে এল খাবারের দিকে যা সে তাদের জন্য প্রস্তুত।

একটাই মাত্র পথ আছে, সে ইশতারকে বলল, এবং তা হল সামনে। সে তার ঘোড়াদের পিঠে চাবুক মারল এবং তারা যন্ত্রণায় কাতরভাবে চলতে লাগল।

তারা পর্বতের শীর্ষে পৌঁছল এবং টর্ক বিস্ময়ে বিহ্বল হয়ে গেল। উপত্যকার দৃশ্য, নিচে আরা কিছুই ছিল না যা সে কখনো কল্পনা করেছে, প্রাচীন শহরে ভগ্নাংশ তার সামনে। তাদের রূপরেখা ভূতুড়ে মনে হল কিন্তু আদি ও অন্তহীন। যেমনটা তার কাছে বলা হয়েছে তেমনি শহরটা ঠাণ্ডা সবুজ মাঠে ও জ্বলজ্বলে পানির খালের জালে ঘেরা। তার ঘোড়াগুলো পানির গন্ধ পেল এবং নতুন শক্তিকে লাগাম টানল।

এমনকি তার বেপরোয়া তাড়াহুড়ার মধ্যেও সে কৌশলগত অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে সময় নিল। সে তৎক্ষণাৎ দেখল সে শহরটা অসহায় ও অরক্ষিত, ফটকগুলো সম্পূর্ণ খোলা এবং তার ভেতর থেকে পলায়নরত আতংকিত উছুল জনতা বেরিয়ে গেল। কয়েকজন পদাতিক সৈন্য উদ্ধাস্তুদের সাথে মিশে আছে, কিন্তু তারা কোন বিষয় নয়। কোন অশ্বারোহী দল বা যুদ্ধ রথের কোনো চিহ্ন নেই। তার নেকড়ে দলের সামনে এক ঝাক ভেড়া, কিন্তু নেকড়েগুলো তৃষ্ণায় কাতর ও দুর্বল।

সিউথ তাদের আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন, টর্ক বিজয়ে চিৎকার দিল। আজ সূর্যাস্তের পূর্বেই তুমি তোমার আশার চেয়েও বেশি মহিলা ও সোনা পাবে ব্যবহার করতে।

চিৎকারটা লোকগুলো লুফে নিল যারা তাকে ঢালের উপরে অনুসরণ করল এবং তাদের ক্লান্ত ঘোড়াগুলো তাদের নিয়ে যতো দ্রুত সম্ভব নেমে এল প্রথম সেচের গর্তের কাছে।

*

তুমি আমাকে সেচের খালে বিষ মিশাতে দিতে পারতে। নেফার নিরস ভাবে বলল, যখন তারা উত্যকার অন্য পাশ থেকে সবকিছু দেখছিল।

তুমি এর চাইতেও তা ভালো জন। টাইটা তার রূপালি মাথা দুলিয়ে জবাব দিল। ওটা একটা অপরাধ হতো যা প্রভু কখনো ক্ষমা করতেন না, এই তিক্ত ভূমিতে একমাত্র সেথ অথবা সিউথ-ই এ রকম জঘন্য কাজ করতে পারে।

এই দিনে আমি ইচ্ছাকৃত ভাবেই সেথের চরিত্রে অভিনয় করতাম। নেফার মজাচ্ছলে হাসল। কিন্তু সে তা বলল কেবলমাত্র ম্যাগোসকে রাগাতে। তোমার দুটো বদময়োশ খুব ভালো করেছে। সে বেদুঈন দুটির দিকে তাকাল যারা টাইটার পাশে হাটুগেড়ে বসে আসে। তাদের মূল্য দাও ও তাদের যেতে দাও।

তারা সোনার কোন মূল্য নেয় না, টাইটা ব্যাখ্যা করল। যখন আমি গেবেল নাগারে বাস করতাম তারা আমার কাছে তাদের বাচ্চাদের এনেছিল এবং আমি তাদের হলুদ ফুলের অসুখ থেকে সুস্থ করেছিলাম। সে গুটিসুটি মেরে বসে থাকা লোকগুলোর উপর আশীর্বাদের একটা ভঙ্গি করল এবং তাদের আঞ্চলিক ভাষায় তাদের সাথে কিছু কথা বলল। ধন্যবাদ দিল তাদের জীবনের ঝুঁকি নেওয়ার জন্যে ও টকর্কে ভুল পথে চালিত করতে এবং তাদের কাছে তার ভবিষ্যতে প্রতিরক্ষার ওয়াদা করল। তারা তার পায়ে চুমু খেল, তারপর বড় পাথরের মধ্যে দিয়ে চলে গেল।

টাইটা ও নেফার নিচের উপত্যকার অপ্রকাশ্য যুদ্ধের দিকে তাদের পূর্ণ মনোযোগ দিল। টর্কের লোকজন ও ঘোড়াগুলো তাদের শেষ সীমা পর্যন্ত পানি পান করেছে এবং এখন তারা তাতে চড়ছে। এমনকি যদিও সে অনেক রথ রাস্তায় হারিয়েছে তবুও এখানে টর্ক নেফারের সেনাবাহিনীর চেয়ে সংখ্যায় তিনগুণ এগিয়ে।

আমরা তার সাথে খোলা মাঠে লড়াই করার সাহস করি না। নেফার গম্ভীর ভাবে বলল, এবং নিচে উদ্বাস্তুদের দিকে তাকাল যারা উপত্যকার উপরে পালিয়ে যাচ্ছে। প্রথম থেকেই শহরে খুব কম মহিলা ছিল, নেফার ইচ্ছাকৃত ভাবেই তাদের সংখ্যা কম রেখেছে তার যোদ্ধাদের জন্য খাবারের মজুদ বাঁচাতে। এমনকি মিনটাকা ও মেরিকারাসহ সব বাচ্চা, অসুস্থ ও আহতরাও এক সাথে দুই দিন আগে গালালা ছেড়ে চলে গিয়েছে। ম্যারন গিয়েছে সম্পদের বহন করা ওয়াগনের সাথে। নেফার তাদের সবাইকে গেবেল নাগারে পাঠিয়েছে যেখানে টর্ক তাদের কখনো খুঁজে পাবে না এবং পানির ক্ষুদ্র ঝর্ণাটা তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখবে যুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত।

এখন গালালা মূল্যবান সবকিছু, প্রতিটি রথ, অস্ত্র ও বর্মের টুকরো পর্যন্ত সুরক্ষিত। সে সন্তুষ্টি নিয়ে নিচের উদ্বাস্তুদের দেখল। এতো কাছ থেকেও বলা মুশকিল যে তারা মহিলা এবং সাধারণ নাগরিক নয় বরং ছদ্মবেশী পদাতিক সৈন্য। এইসব পেশীবহু লোকদের অনেকেই পা আটকে গিয়ে পড়ে যাচ্ছিল এবং হোঁচট খাচ্ছিল তাদের লম্বা স্কার্ট ও শালে। বান্ডিলগুলো যেগুলো তারা তাদের বাহুতে বহন করছে সেগুলো আসলে শিশু নয় বরং তাদের ধনুক এবং তলোয়ার যেগুলো শালে ঢাকা। তাদের দীর্ঘ বর্শাগুলো উপত্যকার উপরে পাথরের মধ্যে লুকানো রয়েছে যেখানে প্রধান বাহিনী লুকিয়ে আছে।

টর্কের সব রথগুলো পানি খাওয়া শেষ করেছে এবং তারা সবুজ মাঠ পেরিয়ে শক্ত ও সুশৃঙ্খলিত ভাবে আসছিল সারির পর সারি ধরে। পানি অলৌকিকভাবে তাদের পুনরুজ্জীবিত করেছে এবং তাদের সামনে হাতছানি দিচ্ছে লুটের মাল ও দস্যুতা।–হুরাসের কাছে প্রার্থনা কর যেন আমরা টর্ককে অনুসরণ করতে প্ররোচিত করাতে পারি এবং উপত্যাকায় প্রবেশ করাতে পারি। নেফার ফিসফিস করল। যদি সে টোপটা না গেলে এবং পরিবর্তে অরক্ষিত শহরটা দখল করে নেয় তাহলে সে আমাদের পানি এবং ঘাস বঞ্চিত করবে। আমরা তখন বাধ্য হব যুদ্ধ করতে খোলা ময়দানে বেরিয়ে আসতে যেখানে সে প্রতিটা সুবিধা পেয়ে থাকবে।

টাইটা কিছুই বলল না। সে সোনার মাদুলিটা ঠোঁটে চেপে দাঁড়িয়ে আছে এবং তার চোখ উপরের দিকে ঘুরল এমন ভঙ্গিতে নেফার খুব ভালো করেই চেনে।

শত্রুরা এখন অনেক কাছে কারণ নেফার চলন্ত যানের ভিড় থেকে টর্কের রথ চিনতে সক্ষম হল। টর্ক তার প্রধান সৈন্য দলের কেন্দ্রস্থলে ছিল, তার প্রতি পাশে দশটা করে রথ, উপত্যকাকে এপাশ ওপাশ করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট চওড়া সম্মুখ। তার পিছনে তার বাকি রথগুলো সুগঠিত। ধুলা তার চারপাশে শান্ত হল এবং একটা ভয়ংকর নিরবতা তাদের উপর নেমে এল। একমাত্র শব্দ ছিল পলায়নরত উছুল জনতার বকবকানি ও কোলাহল তাদের সম্মুখস্থ সরু উপত্যকার ভেতরে।

এসো, টর্ক উরুক! নেফার বিড় বিড় করে বলল। আক্রমণ করতে আদেশ দাও! ঐতিহাসিক স্থানটার দিকে এগোও!

অগ্রগামী রথের বিশাল বাহিনীর সামনে ইশতার দি মেডি টর্কের বিশাল দেহের পাশে গুটিসুটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে। এতে কৃশকায় যে টর্কের দাঁড়িতে লাগানো ফিতের নিচে পড়ে রয়েছে ইশতার।

বাতাসে ওয়ারলকের গন্ধটা তীব্র, মনে হচ্ছে দশ দিনের পচা কোন বস্তু। তার কণ্ঠ তীক্ষ্ণ শোনাল। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে উপরে আকাশে ভেসে থাকা মেঘের দিকে তাকাল একবার। একটা অনুভূতি তার চেহারায় খেলা করতে দেখা গেল। সে ওখানে একটা শিকারী পশুর মতো অপেক্ষা করছে। আমি তার উপস্থিতি অনুভব করতে পারছি। উপরে তাকান, মহান ফারাও!

টর্ক এতো চিন্তিত ছিল যে, আকাশের দিকে দৃষ্টি দিতে তার কষ্ট হল। শকুনগুলো অনেক নিচে নেমে এসেছে। টর্ক উপত্যকার পিছনে দূরে তাকাল। কিন্তু শত শত শকুন আকাশ ও ভূমির মধ্যবর্তী স্থানে ছড়িয়ে ছিল, সে দ্বিধান্বিত হয়ে গেল।

উপত্যকার পাশে ছড়িয়ে থাকা পাথরের আড়াল থেকে নেফার তাকে দেখছিল। এখন সে আরো কাছাকাছি, সে তার চেহারার অভিব্যক্তিগুলো স্পষ্ট পড়তে পারছিল।

এগোও টর্ক! নেফার বিড়বিড় করল প্রার্থনার মতো করে। আক্রমণ করতে বল। তোমার আর্মিকে উপত্যকায় প্রবেশ করতে বল। সে টর্ককে দ্বিধান্বিত হতে দেখল এবং অস্তিরতায় সে হাত কচড়াচ্ছিল। মাথা ঘুরিয়ে টর্ক পাশে থাকা শীর্ণকায় ইশতারের দিকে তাকাল।

মেডির নীল চেহারাটা উত্তেজনায় ফেটে পড়তে চাইছে। সে টর্কের বর্মের উপর হাত রেখে বলল, এটা একটি ফাঁদ, ওয়ালকের তৈরি। আপনি যদি আগে কখনও আমাকে বিশ্বাস নাও করে থাকেন এখন অবশ্যই তা করতে হবে। চারপাশের বাতাসে মৃত্যুর গন্ধ এবং চক্রান্তের আভাস। টাইটার যাদুর জাল আমার মুখে বাদুরের ডানার মতো ঝাঁপটা মারছে।

টর্ক তার দাঁড়ি ইতস্ততভাবে ঘষতে লাগল, রথের সারি তার নির্দেশের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।

পাহাড়ের পাশে নেফার চোখ সরু করে তাকিয়ে রইল, পাশ ফিরে সে তার ছদ্মবেশী সৈন্যদের দেখল। মূল্যবান সময়গুলো পার হয়ে যাচ্ছে। টর্ককে কি আটকে রেখেছে? সে কি আক্রমণের নির্দেশ দিবে না? নেফার উত্তেজনায় স্বর উঁচু করল। যদি সে এখন আক্রমণ না চালায়…!

উপত্যকার মাথায় তাকাও। টাইটা তার চোখ না খুলেই বলল। বিরক্ত হয়ে নেফার তার কথামতো তাকাল এবং ভয়ের একটা শিহরণ তার হাড় পর্যন্ত কাঁপিয়ে দিল।

এ অসম্ভব! সে বিস্ময়ে বলল।

উপত্যকার শেষ প্রান্তে উঁচুতে, কিন্তু টর্কের রথ থেকে যা পুরোপুরি দৃষ্টিগোচর সেখানে একটা উঁচু পাথর অবস্থিত। তার উপর একটি মানব মূর্তি দেখা গেল, একা। যা একটি মেয়ে মানুষের, যুবতী ও স্লিম। এ দূর থেকেও যা রাজকীয় কেউ বুঝতে অসুবিধে হচ্ছিল না, অ্যাপেপির রাজবংশের কেউ।

মিনটাকা! নেফার জোরে শ্বাস ছাড়ল। আমি তাকে আদেশ দিয়েছিলাম ম্যান এবং মেরিকারার সাথে গেবেল নাগার যেতে।

আমরা জানতাম সে কখনও তোমার অবাধ্য হবে না। টাইটা তার চোখ খুলে একটা উপহাস সূচক হাসি দিল।

এটা তোমার কাজ। নেফার তিক্ত কণ্ঠে বলল। তুমি তাকে টর্কের ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করছে। তুমি তাকে বিপদে ফেলছ।

যদিও আমি খামসিনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি কিন্তু মিনটাকা অ্যাপেপিকে নিয়ন্ত্রণ করতে কখনও পারি না। সে যা করছে তা তার নিজের ইচ্ছাতেই।

তাদের নিচে তখন টর্ক তার রথ সারিতে আদেশ দিল নিচের মানুষগুলোকে ছেড়ে গালালার ঝর্ণা দখল করতে, যেমনটা ইশতার তাকে বলেছে। তখন সে তার পাশে থাকা ইশতারকে বিড়বিড় করতে শুনল, কিছু একটা আছে, টাইটা জাল বুনেছে।

টর্ক চারপাশে তাকাল দীর্ঘ উপত্যকা বরাবর। হঠাৎ তার চোখে উঁচু হলুদ পাথরের উপর দাঁড়িয়ে থাকা অবয়টা ধরা পড়ল। তাকে সে চিনতে পারল, সাথে সাথে তার ঘৃণা ও রাগ চরমে পৌঁছে গেল। মিনটাকা অ্যাপেপি! সে ফোঁস করে উঠল। আমি তোর কাছে আসছি, বেশ্যা মাগী। আমি তোকে মৃত্যুর পথে পৌঁছে দেব।

এটা একটি যাদুর মায়া ফারাও! নিজেকে ওয়ারলকের ফাঁদে পড়তে দিয়েন না।

এটা কোন যাদু নয়,। টক দাঁত চেপে বলল। আমি তোমাকে এর প্রমাণ দেবো যখন তার উষ্ণ দেহে আমার তলোয়ারটা ঢুকাবো এবং সেখান দিয়ে রক্ত বের হবে।

ওয়ারলক আপনাকে মায়ায় আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। চারদিকে আমি মৃত্যুর ছায়া দেখতে পাচ্ছি। কথাটা বলেই ইশতার পাদানি থেকে নেমে পালাতে চাইল। নাজা তার কাঁধ শক্ত করে ধরে ফেলল। না, ইশতার! আমার পাশেই থাকো। তুমি এর প্রমাণ পাবে। তারপর টর্ক তার পরবর্তী আদেশ দিল। সামনে চল! আক্রমণ!

টক অবশেষে আদেশ দিল। নেফার নরম স্বরে বলল। কিন্তু কি লাভ? যদি সে মিনটাকাকে … সে বেশি ভাবতে পারল না।

এখন তোমার লড়াই করার মতো কিছু একটা রয়েছে। টাইটা শান্তভাবে বলল।

নেফার মিনটাকার জন্যে প্রচণ্ড ভালোবাসা অনুভব করল এবং তা তার মনে ক্রোধ সৃষ্টি করল। সে পাথরের আড়াল থেকে বের হয়ে এল এবং রথের বিচ্ছিন্ন অংশসমূহের সামনে এসে দাঁড়াল। টর্ক ও তার বাহিনীর পুরো মনযোগ তখন অসহায় শিকারের দিকে, মিনটাকার দিকে। তার লম্বা অবয়টা কেউ লক্ষ্য করল না। কিন্তু নেফারের প্রতিটি লোক তাকে দেখতে পেল, যারা উপত্যকার বিভিন্ন পাথরের আড়ালে ছিল। নেফার তার তলোয়ারটা মাথার উপর তুলে উঁচু করল এবং শেষ রথটা নিচে নেমে আসতেই সে তা নিচু করলো সংকেতে। তার সংকেত পেতেই পাহাড়ের উপর থেকে ওয়াগনগুলো যাদের শুধু চাকা লাগানো তা তার লোকেরা ছেড়ে দিল, ওগুলো আগে থেকেই তৈরি ছিল। দুপাশ থেকে ওগুলো প্রচন্ড গতিতে নিচে নেমে আসতে লাগল।

ইশতার চিৎকার দিয়ে উঠতেই টর্ক মিনটাকার দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে পাশে তাকাল এবং তার বাহিনীকে ছিন্ন বিছিন্ন করতে যানগুলোকে নেমে আসতে দেখল।

পিছনে! সে চিৎকার করে উঠল। পিছনে ফিরে চল। কিন্তু রথীরা তাদের রথ থামাতে ব্যর্থ হল।

প্রথম ওয়াগনটা সারির মাথায়, ভেঙ্গে পড়ল। হট্টগোল, চিৎকার এবং কাঠ ভাঙ্গার শব্দে চারপাশ নরকে পরিণত হল। দুপাশ থেকে ওয়াগনগুলো তাদের উপর নেমে আসছিল, উঁচু থেকে নামায় তাদের গতিও ছিল বেশ।

টর্কের কিছু লোকজন লাফিয়ে পালাতে চাইল। কিন্তু তাদের ভারি বর্মের কারণে তারা তা সময় মতো পারল না। কারো মাথা, কারো পা, হাত টুকরো টুকরো হয়ে গেল। এমন সময় পাথরের আড়াল থেকে নেফারের লোকজন যারা বেঁচেছিল তাদের দিকে বর্শা নিক্ষেপ শুরু করল।

টক চারপাশে তাকাল এবং ফাঁদ থেকে বেরিয়ে যাবার পথ খুঁজল। ভাঙা ওয়াগনের জঞ্জাল তার সামনের পথ রোধ করে আছে। পিছনে এতো ভীড় যে এগোবার উপায় নেই, এ দিকে তীর এবং বর্শা বৃষ্টির মতো চারপাশে বর্ষিত হচ্ছে।

টর্কের এই অমনযোগের সুযোগে ইশতার চুপিসারে পাদানি থেকে নেমে পড়ল এবং রথের সারি, ঘোড়া, মানুষদের কাছ থেকে গা বাঁচিয়ে পালাতে লাগল।

টর্ক সামনে আবার তাকাতেই দেখতে পেল মিনটাকা তখনও সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।

সে সাথে সাথে খাপ থেকে একটা তীর তুলে নিল, কিন্তু তৎক্ষণাৎ আবার সিদ্ধান্তটা পাল্টাল, না! এই বেশ্যার জন্যে তীর হবে বড় বেশি সম্মানের। আমি নিজ হাতে তাকে গলা টিপে মারবো।

সে তলোয়ারটা হাতে নিয়ে রথ থেকে লাফিয়ে নামল। ঘোড়র নিচ দিয়ে দৌড়ে বের হয়ে এল, নেফারের দুই জন লোক তখন পাথরের আড়াল থেকে লাফিয়ে তার দিকে ধেয়ে এল। কিন্তু তার তলোয়ারের সামনে তারা দাঁড়াতে পারল। সে মেয়েটির জন্যে এতো ক্ষুধার্ত যে কোন কিছুই তাকে দমিয়ে রাখতে পারবে না।

নেফার দেখতে পেল টর্ক ফাঁদ থেকে বের হয়ে পাথর থেকে পাথরে লাফিয়ে সামনে চলেছে।দৌড়, মিনটাকা! পালাও! সে তার উদ্দেশ্যে চিৎকার দিল।

টর্কও তার চিৎকার শুনল এবং উপরে তাকাল, তুইও আয়, বাচ্চা ছেলে, আমার তলোয়ারে যথেষ্ট ধার করার দুজনের জন্য।

দৌড় না থামিয়েই নেফার তার হাতের বর্শাটা নিক্ষেপ করল, কিন্তু টর্ক সহজেই তা হাত দিয়ে সরিয়ে দিল। অস্ত্রটা বাধা পেয়ে দূরে সরে গেল, যা মিনটাকার পায়ের কাছে পাথরটার উপর গিয়ে শব্দ করে পতিত হল। মিনটাকা কোন পাত্তা দিল না।

মুহূর্তের জন্য অস্ত্রটা টর্কের গতি থামিয়ে দিয়েছে এবং নেফার দ্রুত লাফিয়ে তার পাশে চলে এল। নেফারের ক্রোধ থেকে বাঁচতে টর্ক প্রতিক্ষার জন্যে হাত তুলল এবং ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল। ডান হাতে ব্রোঞ্জের তলোয়ারটা তুলে সে বলল, আয় খোকা! তোর দ্বৈত মুকুটের স্বাদ মিটিয়ে দেই।

নেফার এগিয়ে এল, টর্ক তার দিকে তলোয়ার চালাল এবং নেফার পাশ কাটিয়ে আঘাতটা এড়াল।

নেফারের লোকজন দেখতে পেল নেফার যুদ্ধ করছে। যারা আড়ালে ছিল তারা সবাই বেড়িয়ে এসে যাকে সামনে পেল ধরাশায় করতে লাগল। চারিদিকে প্রচন্ড হট্টগোল লেগে গেল।

নেফার টর্কের নিতম্ব বরাবর যেখানে বর্মটা একটু উঠানো ছিল তা লক্ষ্য করে আঘাত হানল। টর্ক ওটা ফেরাতে উদ্যোত হতেই নেফার দ্রুত তার মুখ বরাবর আঘাত করল। আঘাতের শক্তি ও দ্রুততায় টর্ক হতভম্ভ হয়ে গেল। মাথা ঝাঁকিয়ে সে সরে গেলেও হেলমেটের খোলা অংশ দিয়ে নেফারের তলোয়ারের ফলা তার কপাল স্পর্শ করল এবং সে অনুভব করল সেখান দিয়ে রক্ত ঝরছে। আঘাতটা তাকে পাগল করে দিল, সে গর্জে উঠে নেফারের দিকে তেড়ে এল। চতুর্দিক থেকে আঘাত করতে লাগল সে। নেফার আঘাতগুলো এড়াতে পিছু হটতে বাধ্য হল এবং এক সময় মিনটাকার কাছাকাছি হলো যেখানে সে দাঁড়িয়ে।

জানে এভাবে সে বেশিক্ষণ টিকতে পারবে না টর্কের ঐ ভয়ংকর ক্রোধের সামনে। এ ধরনের লড়াইয়ে খুব কম লোকই টর্কের সামনে দাঁড়াতে পারে।

টর্কের আঘাতগুলো ছিল যেন অপ্রাকৃতিক। নেফার অনুভব করল যেন সে প্রচন্ড কোন ঝড়ের কবলে পড়েছে। নেফার জানে এ থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় হল দ্রুত গতিতে পাশ ফিরে সুবিধে মতো অবস্থান নেওয়া। কিন্তু তার পিছন দিকে পাথরের প্রাচীর।

হত্যার তৃষ্ণা যেন টর্ককে পাগল করে তুলেছে। নেফারও প্রাণপণে তার আঘাতগুলো ফিরিয়ে দিচ্ছিল। নেফারের পিছন পাথরে ঠেকল। তার শেষ চেষ্টা দিয়ে সে বাঁচার চেষ্টা করল।

তখন নেফার শুনল মিনটাকা যেন কিছু বলতে চাইছে চিৎকার করে। কিন্তু সে কিছুই বুঝতে পারল না, সে সামনে এগুতে পারছে না। ক্রমশ টর্ক তার আরো নিকটে চলে এল এবং বুকে বুক ঠেকিয়ে তাকে পরাস্ত করতে চাইছে।

নেফারের দুর্বল হাত থেকে তার তলোয়ার পিছলে গেল। টর্ক তখন দুহাতে তার তলোয়ার মাথার উপর তুলল, নিশ্চিত নেফারকে মৃত্যুর দেশে যা পাঠিয়ে দেবে। আঘাতটা নেফারের মাথা বরাবর নেমে আসছিল, কিন্তু হঠাৎ তা মাঝপথে থেমে গেল। তার দৃষ্টি বিস্ফোরিত এবং সতর্ক। নেফার চোখ বন্ধ করে আঘাতের অপেক্ষা করছিল। দেরি দেখে চোখ খুলল। দেখল মাঝ পথেই তার তলোয়ার থেমে গেছে এবং টর্ক একটি হাত তার পিছনের পিঠ বরাবর ধরে আছে গলার কাছটায়। তারপর হাতটা সামনে নিয়ে এল আবার, তাতে রক্ত মাখা। কিছু বলার জন্য সে মুখ খুলল, কিন্তু রক্তের দুটি ধারা তার মুখের ভেতর থেকে বেরিয়ে এল এবং ধীরে ধীরে সে নেফারের দিক থেকে পিছনে ঘুরল। ঘুরে মিনটাকাকে দেখতে পেয়ে টর্ক চমকে উঠল, যে তার সামনে পাথরটার উপর দাঁড়িয়ে।

অবিশ্বাস্য অনুভূতিতে নেফার দেখতে পেল একটা বলুম টর্কের পিঠের উপরে ঠিক গলার নিচে বিদ্ধ।

যখন সে দেখল যে নেফার নিচে ফাঁদে পড়ে গেছে তখন মিনটাকা বর্শাটা তুলে নেয় যা নেফার টককে নিক্ষেপ করেছিল এবং বাধা পেয়ে তার পায়ের কাছে এসে পতিত হয়। তারপর নিচে নেমে পেছন থেকে সরাসরি অস্ত্রটা টর্কের ব্রোঞ্জের হেলমেটের নিচে গলা বরাবর চালিয়েছে।

মূর্তির মত নিশ্চল দাঁড়ানো টর্কের মুখের ভেতর থেকে রক্তের ধারা অবিরত বইতে লাগল। সে তলোয়ারটা ফেলে গলা ধরে বসে পড়ল ও সে কিছু বলার চেষ্টা করল, কিন্তু রক্তের ধারায় তা চাপা পড়ে গেল।

মিনাকম ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠল যখন টর্ক লাফিয়ে উঠে তাকে ঝাঁপিয়ে ধরল। নেফার তার পায়ের উপর দুলে উঠল। সে টর্কের ফেলে দেয়া তলোয়ারটা তুলে নিল। মিনটাকার চিৎকার তাকে নতুন করে শক্তি জোগাল যেন, বিশেষ করে তার তলোয়ার ধরা হাতটায়।

প্রচন্ড ক্রোধে সে তলোয়ারটি টর্কের বুক বরাবর স্থির করে চালাল। টর্ক কেঁপে উঠল এবং মিনটাকাকে ফেলে দিল। ভয়ে মিনটাকা সরে এল এবং নেফার আবার ফলাটা বের করে বুকের মাঝখান দিয়ে পুনরায় ঢুকিয়ে দিল সজোরে।

পায়ের উপর দুলে উঠে টর্ক নেফারের দিকে ঘুরল এবং তার দিকে এগিয়ে আসতে চাইল দুহাত বাড়িয়ে। নেফার তখন তলোয়ারটা তার গলা লক্ষ্য করে চালাল এবং টর্ক হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল ফলাটা চেপে ধরে। নেফার টান দিয়ে ওটা বের করে নিতেই টর্কের হাতের মধ্য দিয়ে রক্তের অবিরত ধারা বইতে দেখা গেল। মুখটা মাটি বরাবর দিয়ে সে ধপাস করে পড়ে গেল।

নেফার হাত থেকে তলোয়ারটি দূরে ফেলে দিল এবং ঘুরে দেখতে পেল মিনটাকা একটি পাথরের আড়ালে আশ্রয় নিয়েছে। প্রচন্ড ভয় পেয়েছে সে। বিপদ কেটে গেছে, মিনটাকা ফুফিয়ে কেঁদে উঠল, এখনও সে কাঁপছে, আমি ভেবেছিলাম সে তোমাকে মেরেই ফেলবে।

সে তা প্রায়ই করে ফেলেছিল; নেফার দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। কিন্তু তোমার জন্যে পারে নি, এই জীবনের জন্যে আমি তোমার কাছে ঋণী।

অসহ্যনীয়! মিনটাকার কণ্ঠ কেঁপে উঠল। আমার মনে হচ্ছিল সে কখনও মরবে না।

সে একজন দেবতা, নেফার হাসার চেষ্টা করল, তাই একটু দেরিতে সে মরল আর কি।

যুদ্ধের শব্দে সম্বতি ফিরে এল তাদের। টর্কের লোকজন তাদের ফারাও-এর মৃত্যু দেখতে পেয়েছে। তারা যুদ্ধ থেকে পালাল এবং আত্মসমর্পণ করল অনেকে। তারা সবাই ফারাও নেফার সেটির প্রশংসায় তার আনুগত্য স্বীকার করল।

বিজয়ের আনন্দে তাদের ক্ষমা করে দিল নেফার। সে চিৎকার করে আদেশ করল শক্তি ফিরে পেয়ে, তাদের জন্যে কোয়ার্টার বরাদ্দ করো। তারা আমাদের মিশরীয় ভাই। অফিসারদের এবং সৈন্যদের নিজ নিজ মর্যাদা মতো সুবিধে দাও।

টর্কের লোজন যারা তার আনুগত্য প্রকাশ করল তাদের নিয়ে নেফারের শক্তি এখন প্রায় তিন গুণ বেড়ে গেছে।

তারপর সে এক দল সৈন্যকে সাফাগা অভিমুখে পাঠাল টর্কের বাকি ঘোড়াগুলো এবং পানির ওয়াগনসমূহকে রাজধানী গালালায় নিয়ে আসতে।

নেফার তার শেষ আদেশটা দিয়ে যখন মিনটাকা সহযোগে শহরের তোরণ দিয়ে প্রবেশ করছিল তখন নিচু কণ্ঠে মিনটাকাকে বলল, টাইটা কোথায়? ম্যাগোসকে কি কেউ দেখেছে? কিন্তু টাইটা যেন উধাও হয়ে গিয়েছে।

টাইটা পাথুরে ভূমির উপর থেকে যুদ্ধটা দাঁড়িয়ে দেখছিল। অন্য কেউ লক্ষ্য না করলে তার দৃষ্টি এড়াল না ইশতার দি মেডিকে। পলায়ন পর খরগোশের মতো সে পাথরের আড়ালে আড়ালে পালিয়ে যাচ্ছিল।

টাইটা তাকে পলাতে দিল। তাকে পরেও ধরা যাবে।

অনেক আগে যেদিন টাইটা দূর থেকে মিনটাকাকে দেবীর সামনে কোবরার হাত থেকে রক্ষা করেছিল সে দিন থেকে সে মিনটাকাকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা অর্জন করে।

আজ সে মিনটাকাকে তার ক্ষমতা বলে টর্কের টোপ হিসেবে ব্যবহার করেছে। সে জানত তার প্রতি টর্কের ঘৃণা কতটুকু।

আজ সে এ কাজটা না করলে যুদ্ধের ফলাফল হয়তো উল্টা হতো।

যখন রেড রোডের ভ্রাতারা নেফারকে নিয়ে বিজয়োল্লাস করে এগিয়ে চলছিল তখন কেউ আর তার বিষয়ে মনোনিবেশ করল না।

সে তখন ইশতারের পদচিহ্ন অনুসরণ করতে গেল। তার মন খুলতেই বাতাসে মেডির ছায়া অনুভব করল। সে তার ফেলে যাওয়া চিহ্ন দিয়ে এগুলো।

ইশতার নিজেকে আড়াল করতে তার যাদু প্রয়োগ করেছে। টাইটা চোখ বন্ধ করে তাকে খুঁজল।

পানির থলে, সে বিড়বিড় করল এবং সামনে তাকাতেই থলেটা সে দেখতে পেল। তুলে নিয়ে দেখল খালি ওটা। আরও দূর গিয়ে সে আরেকটি খালি পাত্র পেল। পানির থলে নিয়ে ইশতার গালালার পথ ধরেই এগিয়েছে।

রাত নেমে এল, কিন্তু টাইটা থামল না। মাঝে মাঝে মেডির চিহ্ন হারিয়ে যাচ্ছিল।

মেডিও অনুভব করল কেউ তার পিছু নিয়েছে। সে আর কেউ নয় স্বয়ং টাইটা। যাদু বলে সে বুঝল টাইটা অতি নিকটে। সে যাদুর জাল বুনল এবং টাইটাকে ভুল পথে চালনা করল।

বেশ কিছু দূর এগুবার পর টাইটা মেডির চিহ্ন হারিয়ে ফেলল। অনেক চেষ্টা করেও সে তার গন্ধ বাতসে পেল না। চোখ বন্ধ করে সে তার অনুভূতিসমূহ এক করল এক মনে। সব কিছু অস্পষ্ট। সাথে সাথে সে বুঝল যে এটা মেডির যাদুর প্রভাব এবং তাকে সে ভুল পথে চালিত করেছে।

শিকারের এতো কাছাকাছি আমার আরো বেশি সচেতন থাকা উচিত ছিল, মেডি আমাকে চিহ্নিত করেছে।

সে থলে থেকে একটু পানি পান করল, তারপর সাবধানতায় সামনে আগে বাড়ল। সে তার লাঠি দিয়ে সামনে নির্দেশ করল এবং ধীরে ধীরে তা এপাশ ওপাশ দোলালো। সে লাঠির নির্দেশিত পথ অনুসরণ করল এবং তার সামনে দেখল, চাঁদনী রাতে ঝিক ঝিক করছে রাস্তার পাশে বিবর্ণ পাথরের একটা বৃত্ত।

মেডির একটা উপহার, সে জোরে বলল, বিতৃষ্ণা তাকে আবার জেকে ধরল।

সে তার লাঠি দিয়ে মাটিতে আঘাত করে প্রচন্ড শক্তিতে বলল, নকিউব! তার বিতৃষ্ণা কমে গেল, এবং সে বৃত্তটার কাছাকাছি গেল।

এটা যথেষ্ট জরুরি নয় যে আমাকে তার মন্ত্র ভাঙ্গাতে হবে। সে গম্ভীরভাবে চিন্তা করল, আমি এটা মেডির উপরেই ঘুরিয়ে দেব।

সে তার লাঠির ডাল ব্যবহার করে একটা নুড়ি পাথর বৃত্ত থেকে সরল ও এটার শক্তি নষ্ট করল। এবার সে বৃত্তটার পাশে বসল আসন করে। কোন ক্ষতির সম্মুখীন না হয়ে কোন নুড়ি স্পর্শ না করেই সে কাছাকাছি ঝুঁকে গেল এবং তাদের গন্ধ শুকল। মেডির গন্ধ তাদের উপর জোরালো এবং সন্তুষ্টিতে হাসল সে।

সে খালি হাতে তাদের স্পর্শ করেছি। টাইটা ফিসফিস করে বলল। ইশতার তার ঘামের চিহ্ন তাদের উপর ফেলে গিয়েছে। টাইটা ঐ ক্ষুদ্র স্রোতধারা ব্যবহার করতে পারবে। সতর্ক রইল একই ভুল সে না করতে। সে তার লাঠির ডাল দিয়ে নুড়িগুলোকে সরাল এবং তাদের অন্য একটা প্যাটার্ন দিল–একটা তীরের মাথা ঐ দিকে যে দিকে ইশতার গিয়েছে। সে থলে থেকে মুখ ভর্তি পানি নিয়ে তা নুড়ির মধ্যে ফেলল যেগুলো ভিজে চকচক করল চাঁদের আলোয়। তারপর সে তার লাঠিটা বল্লামের মত তীরের মাথা সেদিকে নির্দেশ করেছে সেদিকে নির্দেশ করল।

খাইদাস! যে চিৎকার করল এবং অনুভব করল যে কানের পর্দায় চাপ পড়ছে যেন সে সমুদ্রের অনেক গভীরে ডুবে গিয়েছে। এটা অসহনীয় হওয়ার আগেই ধীরে ধীরে তা কমতে শুরু করল এবং সে একটা ভালো লাগা ও সন্তুষ্টি অনুভব করল। এটা অবশেষে সে তা মেডির উপর ঘুরিয়ে দিয়েছে।

*

এক ক্রোশ সামনে ইশতার রাস্তা ধরে দ্রুত চলছে। সে এখন অনুসরণ সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন। সে এখন আত্মবিশ্বাসী, যে বাধা সে রাস্তায় স্থাপন করেছে তার অধিকাংশ লোকদের থামায়। কিন্তু সে জানে এটা টাইটাকে বেশিক্ষণ আটকে রাখতে পারবে না।

হঠাৎ সে দুলে উঠল এবং দুই হাতে কান ঢাকল। ব্যথা বাড়ছিল, যেন একটা লাল গরম চাকু তার কানের গভীরে আঘাত করছে। সে আর্তনাদ করে হাঁটুগেড়ে বসে পড়ল। এটা ওয়ারলক, সে ফুঁপিয়ে উঠল। ব্যথাটা এতো তীব্র যে সে পরিষ্কারভাবে চিন্তা করতে পারল না। সে তার আমার উপরেই তা ঘুরিয়ে দিয়েছে।

কাঁপা কাঁপা হাতে সে বেল্টের ঝোলাতে হাত বাড়াল এবং তার সবচেয়ে ক্ষমতাধর মাছুলি বের করে আনল, এতো ফারাও ট্যামোসের একটা সন্তানের যে জন্মের পরেই হলুদ ফুলে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিল, তার একটা শুকনো মমি করা হাত। ইশতার এটা ছোট প্রিন্সের কবর থেকে চুরি করেছে। হাতটা কালো এবং বানরের থাবার মতো হয়ে আছে।

সে এটা তার যন্ত্রণা কাতর মাথার কাছে ধরল এবং অনুভব করল ব্যাথাটা কমতে শুরু করেছে। সে অস্থিরভাবে দাঁড়াল এবং পা টেনে টেনে নাচতে শুরু করল, মন্ত্র পড়ল এবং আর্তনাদ করল, তার কানের ব্যথা চলে গেল। সে বাতাসে শেষ লাফটা দিয়ে যে পথে সে এসেছে সেদিকে ফিরে দাঁড়াল, কাছে কোথাও সে ওয়ারলকের উপস্থিতি অনুভব করল, গ্রীষ্মের বজ্রপাতের হুমকির ন্যায়।

সে তাদের জন্যে একটা ফাঁদ পাতার চিন্তা করল, কিন্তু জানে টাইটা তা তার উপর ঘুরিয়ে দিবে। আমাকে সরে যেতে হবে এবং আমার পথ লুকাতে হবে। সে সিদ্ধান্ত নিল এবং ঘুরে রাস্তা বরাবর দৌড় দিল যতোটুকু সম্ভব।

সে একটা কঠিন রাস্তা বেছে নিল, তার উপর এমনকি টর্কের সৈন্যরাও কোন চিহ্ন ছেড়ে যেতে পারে নি।

সে তার বাম তর্জনী দিয়ে পাথরের উপর মারজুকের সংকেত হালকা করে আঁকল, ওটার উপর থু থু দিল এবং প্রভুর তিনটা লুকানো নাম উচ্চারণ করল যা তাকে হাজির করতে পারবে।

আমার শত্রু থেকে আমাকে লুকান, মহান মারডুক। আমাকে নিরাপদে আপনার ব্যাবিলনের মন্দিরে নিয়ে যান, এবং আমি আপনার সবচেয়ে পছন্দের বলি দিবো। সে ওয়াদা করল। মারডুক সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে ছোট মেয়েকে তার চুল্লীতে পাঠানো। ইশতার এক পায়ে দাঁড়িয়ে পাঁচ থেকে পঞ্চাশ কদম লাফিয়ে পিছনে এল, মারজুকের রহস্যময় সংখ্যা যা শুধু তার ভক্তরাই জানে। তারপর সে একটা তীক্ষ্ণ বাক নিয়ে ডানদিকে মোড় নিল উত্তরের বন বরাবর। সে দ্রুত এগোতে লাগল, তার ও আর অনুসারীর মাঝে দূরত্ব বাড়ালো চেষ্টা করল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *