৭. ঊষার পূর্বে

পরের দিন ঊষার পূর্বে যখন ভালো মদের প্রভাবে শহরের অধিকাংশ ঘুমাচ্ছিল নেফার একটা পুরানো ভবনে তার ব্যক্তিগত বাসস্থানে টাইটাকে খুঁজতে গেল। টাইটা প্যাপিরাসের স্ক্রৌল থেকে চোখ তুলে তাকাল, সে একটা তেলের প্রদীপের মিটিমিটি হলুদ আলোতে পড়ছিল তা।

তুমি কি কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত? নেফার অদ্ভুত সংশয় নিয়ে জিজ্ঞেস করল।

দেখতেই পারছ যে আমি ব্যস্ত। টাইটা বলল কিন্তু সেই সাথে আত্মসমর্পিত চিত্তে সে স্ক্রৌলটা কাঠের দন্ডের উপর ভাজ করতে শুরু করল। কিছুক্ষণ নেফার কক্ষটার ভেতর উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘোরাফেরা করল, কিছু জিনিস দেখার জন্য থামল যা বৃদ্ধ লোকটি সংগ্রহ করেছে। যতোদিন ধরে তারা এখানে গালালায় আছে–রঙে বেরঙের পাখিদের সংরক্ষিত চামড়া, ছোট স্তন্যপায়ী ও সরীসৃপের কংকাল, শুকনো কাঠ অথবা চারাগাছের অস্বাভাবিক আকৃতির টুকরো এবং অন্যান্য আয়তাকার বস্তু, বোল অথবা বোতল অথবা থলের মধ্যে যা বেঞ্চের উপর অথবা অস্বাভাবিক স্তূপ করা সব সংগ্রহ করেছে। টাইটা ধৈৰ্য্য নিয়ে অপেক্ষা করল তার আগমনের কারণটা জানতে, যদিও সে ভালোভাবেই জানত যে তা কি হতে পারে।

নেফার অনেক পুরানো কাঁকড়ার একটা ফসিল তুলে নিল এবং তা প্রদীপের আলোয় ধরল। মিনটাকা আর টর্কের সাথে বিবাহিত নয়। সে বলল চোখ না তুলেই।

আমার দুই কানে তখন পাথর চাপা পড়েছিল না যে আমি বুঝতে সক্ষম ছিলাম না।

নেফার ফসিলটা পূর্বের স্থানে রেখে দিল এবং আইসিসের একটা ব্রোঞ্জের মূর্তি তুলে নিল যা টাইটা শহরের দেয়ালের নিচ থেকে খুঁড়ে তুলেছে। এর উপরটা সবুজ তালংকের ভারি স্তরে ঢাকা।

চিফ্রেন এর মূর্তির নিচে একজন রাজার বিয়ের উপর কি কি শর্ত আরোপিত হয়েছে? যে সতর্কভাবে জিজ্ঞেস করল।

টাইটা চিন্তায় মগ্ন হয়ে আনমনে তার নাক ধরল এবং নিরীক্ষণ করল সে তার তর্জনীর শেষ প্রান্তে কি ধরে আছে। অন্য যে কোন বিয়ের কন্যার মতো তার স্ত্রীরও বিয়ে করার জন্য স্বাধীন হওয়া উচিত, হয় একজন কুমারী অথবা একজন বিধবা। সে বলল।

অথবা তার স্বামী কর্তৃক তালাকপ্রাপ্ত।

অথবা ক্ষমতাধীন ফারাও এর আইন দ্বারা, টাইটা মাথা ঝাঁকাল এবং সে দেবত্বপ্রাপ্ত বা বিয়ে করার পূর্বে তাকে তার সার্বভৌম ক্ষমতায় স্থিরকৃত হওয়া উচিত।

স্থিরকৃত হওয়ার জন্য ফারাওকে অবশ্যই তার সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পৌঁছাতে হবে। যা আমার নেই অথবা তার গড বার্ড ধরতে হবে, যা আমি চেষ্টা করেছি কিন্তু বিফল হয়েছি, অথবা তাকে যুদ্ধে পারদর্শী হতে হবে–রেড রোড এ। নেফার থামল তারপর বলে চলল, যা আমার নেই এখনো। সে শেষ শব্দটায় জোর দিল। টাইটা চোখ পিটপিট করে তাকাল, কিন্তু উত্তর দিল না।

নেফার মূর্তিটাকে রেখে দিল এবং সংকল্প নিয়ে টাইটার দিকে তাকাল। আমি রেড রোড এ অংশ নিতে ইচ্ছুক।

টাইটা নিরবে তাকে পর্যবেক্ষণ করল। তুমি এখনো তোমার পূর্ণ বৃদ্ধি ও শক্তিতে নেই।

আমি যথেষ্ট বড় হয়েছি এবং শক্তিশালী।

তোমার সাথে কে দৌড়াবে?

ম্যারন। নেফার দৃঢ়ভাবে বলল।

আরো অধিক শক্তিশালী ও অধিক অভিজ্ঞ লোক আছে যারা তোমাকে আরো বেশি সাহায্য করতে পারবে। অনেক লোক আছে যারা ট্যামোসিয়ান বংশের একজন ফারাও এর চুলের বিনুণী একত্রিত করতে খুব ভালোবাসে।

আমি ম্যারনকে কথা দিয়েছি। নেফার দৃঢ়ভাবে বলল।

দুটো কুকুরছানা তাদের উদ্যমতা ও অজ্ঞতায় তাদের নিজেদের থাবায় হোঁচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছে, টাইটা ভাবল কিন্তু পরিবর্তে সে বলল, গালালায় কোন অক্ষত ঘোড়া নেই। অন্তত একটি, যা এই উদ্দেশ্য সাধন করতে পারবে।

আমি জানি কোথায় তাদের পেতে হবে। নাজা ও টর্ক অরক্ষিত অবস্থায় এর অনেকগুলো মিশরে ফেলে গেছে। টাইটা ঐ জোরালো উক্তির বিভ্রান্তি চিহ্নিত করে তাকে বিব্রত করল না। ভুয়া ফারাও মিশর প্রহরায় এমনকি তার মেসোপটেমিয়া অভিযানে তাদের সাথে যতো নিয়ে গেছে তার চেয়ে অধিক অভিজ্ঞ সৈন্য রেখে গেছে। কিন্তু সে জানে নেফার কোন যুক্তি শুনতে ইচ্ছুক নয় যা তার নির্ধারিত ইচ্ছার বিরুদ্ধে যায়।

যদি তুমি ব্যর্থ হও তবে তুমি তোমার চুলের থেকে বেশি হারাবে। তুমি এতোটাই সম্মান হারবে সে সিংহাসনের প্রতি তোমার দাবিও ব্যর্থ হতে পারে।

আমি ব্যর্থ হব না; নেফার শান্ত ভাবে বলল। টাইটা ঠিক এই উত্তরটাই আশা করেছিল।

তুমি কখন রেড রোড চেষ্টা করতে চাও? সে জিজ্ঞেস করল।

প্রথমে আমাকে আমার ঘোড়া পেতে হবে।

*

যখনই তারা ঝর্ণা খনন করেছে এবং গালালাকে স্থায়ী বসতি হিসেবে ব্যবহার শুরু করেছে তখনই নেফার টাইটার উপদেশে শহরের জন্য পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন করেছে। মানুষের মল, গবাদি পশুর বর্জ্য ও ঘোড়ার সারি থেকে গোরুর গোবর পর্যন্ত গাড়িতে একত্রিত করে সার হিসেবে জমিতে ছিটানো হয়। আর বাকি অবশিষ্টাংশ উপত্যকার প্রান্তের জলায় নেওয়া হলে তা শীঘই কাক ও চিলের, শকুন ও কলিজা খাদকের স্থায়ী আবাসে পরিণত হয়েছে। বেবুনগুলো পাহাড় থেকে নেমে আসে এবং শতশত খেকশিয়াল ও বেওয়ারিশ কুকুর আবর্জনার স্তূপ থেকে খাবার খায়।

নেফারের আদেশে প্রত্যেক সন্ধ্যায় জলাশয়ে ফাঁদ পাতা হল এবং পরের দিন সকালে আটক প্রাণীগুলোকে খাঁচায় ভরে নিয়ে আসা হলো।

এর মধ্যে শাবাকো ও তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত লোকদের নীল উপত্যকার শহর ও গ্রামে খোঁজ নিতে ও গোপন খবর সংগ্রহ করতে পাঠাল। তারা সরাইখানায় পান করল এবং ভ্রমণকারী যাদের সাথে তাদের পথে দেখা হলো তাদের প্রশ্ন করল। তারা প্রতিটি দুর্গ এবং রক্ষী সেনাদলকে লক্ষ্য করল এবং সৈন্য যাদের শহরে ঢুকতে, ত্যাগ করতে এবং কুচকাওয়াজ করতে দেখল তাদের সংখ্যা গুনল। সপ্তাহ পরে তারা সংবাদ নিয়ে ফিরে তার বিস্তারিত ও সঠিক তথ্য দিল।

তারা রিপোর্ট করল যে ভুয়া ফারাওরা তাদের পিছনের যে কোন আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য কমপক্ষে তাদের অর্ধ পদাতিক বাহিনী, বর্শাবাহক, গুলতিধারী ও ধুনকারীদের রেখে গেছে। সীমান্তের সব দুর্গগুলো পুরোপুরি প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ও প্রহরারত এবং রক্ষীসেনারা মনে হলে সচকিত ও হুঁশিয়ার। তাদের অশ্বারোহী দলের খবর কি? নেফার জিজ্ঞেস করল, যখন শাবাকো তার দীর্ঘ রিপোর্টের শেষ প্রান্তে চলে এল।

টর্ক তার অধিকাংশ রথ তার সাথে মেসোপটেমিয়ায় নিয়ে গেছে। সে মিশরে দুই রেজিমেন্টেরও কম সৈন্য রেখে গেছে। যাই হোক সব সৈন্যরা আরো অধিক রথ নির্মাণের কঠিন কাজে ব্যস্ত।

ঘোড়াগুলো? নেফার জানতে চাইল।

তারা উভয় রাজ্যের প্রতিটি প্রাণী দখল করে নিয়েছে। এমনকি তারা সৈন্য ব্যবসায়ীদের লিবিয়া পাঠিয়েছে, তারা যা পায় তা ক্রয় করবে। মনে হয় নতুন অশ্ব সরবরাহ নির্বাসনগুলো থেইন ও মানাশি পুরো শক্তিশালী। যাই হোক এদের অধিকাংশ প্রাণীগুলো মনে হয় তরুণ ও অদক্ষ। কঠিন যুদ্ধে প্রশিক্ষিত প্রাণীগুলোকে পূর্বে আর্মিরা তাদের সাথে নিয়ে গেছে।

থেইন, নেফার সিদ্ধান্ত নিল। এটা মানাশি থেকে মরুর বেশি কিনারে ও কাছে। তার মনে পড়ল যে থেইন হলো সেই জায়গা যেখানে টাইটা নাজার থেকে নেওয়া তার আজ্ঞাবহের কাগজটা ব্যবহার করেছিল সোক্কোর কাছ থেকে সতেজ ঘোড়া ও রথ সংগ্রহ করতে যে ছিল হিল্টোর পুরানো সহযোগি। তারা তখন মিনটাকাকে অ্যাভারিস থেকে উদ্ধার করার জন্যে রাস্তায় ছিল। সে তার মন পিছনে ফেরালো এবং রক্ষী সেনাদল ও প্রহরারত সৈন্য দলের অবস্থা মনে করার চেষ্টা করল কিন্তু তা ছিল অনেক দিন আগের।

তুমি থেইন সম্পর্কে যতটুকু পার বল। এখনও কি সেখানে সোক্কো নেতৃত্ব। দেয়?

আমরা দুর্গের একজন সার্জেন্টের সাথে স্থানীয় সরাইখানায় মদ পান করে ছিলাম। সে বলেছে যে সোক্কো এতো ভালো কাজ করেছে যে তাকে দশ হাজার সৈন্যের মধ্যে সর্বোত্তম পদে উন্নীত করা হয়েছে।

.

দশদিন পর, নেফার ও টাইটা ঘন সবুজ ঘাসের মধ্যে বসেছিল এবং ছাগলের পাল দেখার ভান করছিল যা তাদের চারপাশে চড়ে খাচ্ছে। যদিও থেইনের দুর্গের চারপাশের ভূমি ভালোই আবাদী ও ঘাসে পূর্ণ তবুও তা ছিল সমতল, গাছ বিহীন ও বৈশিষ্ট্যহীন। সেখানে কোন পাহাড় ছিল না যেখান থেকে তারা দূরের ক্যাম্পটা দেখতে পারবে। সবচে কাছের উঁচু ভূমি মরুর কিনারা বরাবর পূর্বদিকে এক ক্রোশ।

তারা দুজনে বেদুঈনদের ছেঁড়া ধুলামাখা কালো পোশাক পড়েছে। এই ছন্দবেশে তারা একজোড়া খরগোশের বা কাকের ন্যায় সহজভাবে ঘুরে বেড়াতে সক্ষম। বিরতি নিতে তারা দাঁড়াল এবং ছাগলগুলোকে দুর্গের আরো একটু কাছে। নিয়ে নিয়ে গেল। তারপর আবার বেদুঈন রাখালদের মতো করে আসন করে বসে পড়ল।

তারা যেখানে বসেছিল সেখান থেকে নতুন অশ্ব সরবরাহের পালগুলো খুব দূরে ঘাস খাচ্ছিল না। অস্ত্রধারী ও ইউনিফর্ম পরা রাখাল প্রহরারত সেখানে। আমার মনে হলো এখানে দুই হাজারের অধিক প্রাণী হবে। নেফার অনুমান করল।

সম্ভবত অতো নয়, টাইটা তার মাথা ঝাঁকালো। পনের শত এর কাছাকাছি, কিন্তু আমরা যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব তা থেকে বেশি।

দীর্ঘ সকাল-বিকাল জুড়ে তারা দেখল ও অপেক্ষা করল। সৈন্য সারির পাশে বেড়ার মধ্যে রাখালেরা কাজ করছিল। তরুণ প্রাণীগুলোকে রথের হার্নের্স থেকে তারা খুলছে। বিকেলে তাদের চিৎকার করা আদেশ শেষে ঘোড়ার পালগুলোকে মাঠ থেকে নিয়ে যাওয়া হলো এবং দুর্গের ওপাশে পৌঁছিয়ে দীর্ঘ আস্তাবলে রাখা হলো। দূর থেকে তারা তাদের বাধতে ও রাতের জন্য বিছানা পাততে দেখল।

যখন সূর্য ডুবছিল, নেফার ও টাইটা তাদের ছাগলগুলোকে একত্রিত করে বৃত্ত করল এবং ধীরে ধীরে মরুভূমিতে নিয়ে গেল। গোধূলি লগ্নে চারটি রথের একটা ঘোট বিযুক্ত সেনা দল অ্যাভারিস থেকে রাস্তা দিকে হাওয়ার বেগে এল। সামনের রথে দাঁড়িয়ে আছে একজন স্থূলকায় অফিসার, দশ হাজারের, সর্বোত্তম রূপার বর্ম পরিহিত। যখন সে কাছাকাছি এল তারা দুজনে তাকে চিনতে পারল।

সেথের অভিশাপ পড়ুক এর উপর, নেফার বিড়বিড় করল। এ তো সোক্কো, হিল্টো পুরানো সহযোদ্ধা। সে কি আমাদের চিনবে?

তারা তাদের মাথা নোয়ালো, অনুগতভাবে তাদের কাঁধ নামাল এবং ছাগলগুলোর পিছনে পা টেনে এগিয়ে চলল। হঠাৎ সোক্কো তার গতি পরিবর্তন করে সরাসরি তাদের দিকে তার রথ চলালো। তুই অসভ্য জঞ্জাল! সে চিৎকার করল! কতবার তোকে সাবধান করেছি ও বলেছি তোর নোংরা রোগাক্রান্ত পশুগুলোকে আমার ঘাস ও ঘোড়া থেকে দূরে রাখতে। সে নিচু হয়ে নেফারের কাঁধে সশব্দে আঘাত করল। চাবুকটা তার শরীরে মাংস কেটে বসে গেল এবং লাল দাগ নেফারকে অন্ধ করে দিল।

সে সোক্কোকে রথ থেকে প্রায় টেনে বের করতে যাবার পূর্বে টাইটা তাকে ধরে ফেলল এবং তাকে সে যেখানে দাঁড়িয়েছিল সেখানেই স্থির রাখল। মনে হল এটাও সোক্কোকে আক্রমণ করল, কারণ তার কণ্ঠ পরিমিত হলো যখন সে তার চাবুক কুন্ডলী করল এবং বলল যদি আমি তোমাদের আবার এখানে পাই তবে তোমাদের বিচি খুলে নেবো। সে তার যান পুনরায় রাস্তার দিকে ফিরিয়ে দুর্গের দিকে দুলকি চালে চলে গেল।

ছয় রাত পর নতুন চাঁদের অন্ধকারে তারা শক্তি নিয়ে থেইন এ ফিরল। গালালা হতে প্রতিটি লোক যারা পায়ে চলতে পারে তারা সহ ৪০ জন ঘোড়া সাওয়ারী কালো কাপড় পরিহিত ও অর্ধ ঢাকা চেহারায় রয়েছে। প্রত্যেক আরোহী একটি করে বড় থলে বহন করছিল, ঘোড়ার পশ্চাৎদেশে তা ঝোলানো। থলের ভেতরের জিনিসগুলো দেহ মোড়ানো ও নড়াচড়া করছিল। প্রাণীগুলো চাপা ধ্বনি ও কাতর স্বর নির্গত করছে। প্রতিটি থলেতে রয়েছে দুইটা বা তিনটা জীবন্ত খেকশিয়াল। তাদের পা বাঁধা এবং হালকা প্যাঁচানো কাপড়ের টুকরা তাদের মুখে গোঁজা রয়েছে তাদের মুখরোধ করার জন্য।

ঘোড়ার খুরের আওয়াজ চাপা দেওয়া হলো চামড়ার জুতা দিয়ে। নেফার তাদের দুর্গের পশ্চিম পাশের দিকে এক সারিতে প্রশস্ত প্রদক্ষিত পথে নিয়ে গেল। সৈন্যরা সাবধান থাকল যাতে রক্ষীদের সতর্ক না হতে পারে।

প্রতিটি লোক জানে তাকে কি করতে হবে কারণ তারা এই কৌশলটি অনেকবার অনুশীলন করেছে। তারা নিরবে তাদের গঠনে, কালো ঘোড়া সওয়ারীদের অর্ধচন্দ্রাকায় অবস্থায় রাখল থেইন ও নদীর বরাবর। একত্রে থেকে তারা তাদের মাঝের দূরত্ব রাখল যথেষ্ট কাছাকাছি যাতে একটা নিরব নিদর্শন সারি মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করতে পারে। নেফার ছিল মধ্যখানে, ম্যারন বা দিকের অংশে এবং শাবাকো ডান দিকে।

যখন নেফার সন্তুষ্ট হলো যে তারা অবস্থান ঠিক ভাবে নিয়েছে তখন সে নাটিংগেইলের মত ডাক দিল, তিনবার পুনরাবৃত্তি করল এবং অন্ধকারে তখন সে জ্বলন্ত দাগের লাল সারিটা দেখল। কারণ তার লোকেরা কাদার আগুনের পাত্রের ঢাকনা খুলে দিয়েছে যা সবাই বহন করেছিল। সেও একই কাজ করল। সে তার ঘোড়ার পিছনে রাখা একটা থলের মুখ খুলে ভেতরে হাত ঢুকাল। ঘাড়ে ধরে সে একটা শৃগালী বের করল যে তার মুঠোর মধ্যে আর্তনাদ করে উঠল।

একটা কর্কশ আলকাতারার গন্ধ তার নাকে, এল। স্বাভাবিক দুর্গন্ধ ঢেকে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী একটা কালো আঠালো তরলে প্রলেপ শেয়ালটার চামড়া ও লেজে দেয়া হয়েছে। টাইটা এই আঠালো পদার্থটি একটা প্রাকৃতিক ঝর্ণা থেকে সংগ্রহ করেছে যা সে আগে থেকেই চিনত। এটা মাটি থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় পড়ে এবং টাইটা বলেছে যে তা অনেক গভীর থেকে আসে। এটা খুবই দাহ্য কিন্তু সে এটাকে অন্য একটা পদার্থের সাথে মিশিয়েছে, একটা হলুদ স্ফটিক নির্মিত পাউডার যা এটাকে আরো অধিক দাহ্য করে তুলেছে। প্রতিটি আটক করা খেঁকশিয়ালকে এই মিশ্রন দিয়ে লেপ দেওয়া হয়েছে।

নেফার তার ছুরি দিয়ে প্যাচানো রশিটা কাটল যা শৃগালীর চারটি থাবা একসাথে বেঁধে রেখেছিলো। প্রাণীটা মুক্ত হতেই নেফার তার হাতের মধ্যে রেখে তাকে লাথি দিল, প্রাণীটা তোলপাড় করল। সে তার পশমি লেজটা আগুনের পাত্রে স্পর্শ করাল যা ফুতফুত করে ধোয়া সৃষ্টি করে আগুন ধরাল। পালানোর জন্য প্রাণীটা তার চেষ্টা দ্বিগুণ করছে, কিন্তু মুক্ত হওয়ার পূর্বে নেফার তার ঠোঁটের মধ্যে ছুরির ডগা ঢুকিয়ে দিয়ে প্যাচানো রশি কেটে দিল যা তার মুখরোধ করেছিল। সাথে সাথে সে তার চোয়াল প্রশস্ত করে একটা কান ফাটানো চিৎকার দিল, অলীক ও ভয়ার্তক। নেফার তাকে মাটিতে ফেলে দিল এবং ছোট প্রাণীটি আগুনের একটা প্রবাহ এবং স্ফুলিঙ্গ তার পিছনে ছড়িয়ে গর্জন করতে করতে ছুটে গেল ও এমনভাবে চিৎকার করছে যা তার স্নায়ুকে সচকিত করল এবং তার ঘাড়ের পিছনের চুল খাড়া করে ফেলল।

তারপর থলে থেকে আরেকটা খেঁকশিয়াল বের করল সে। অন্ধকারে আগুনের সব বৃত্তগুলো সারি ধরে জ্বলল, খোলা মাঠে ঘুরে বেড়ালো এবং এক ভয়ংকর কাতর গর্জন রাতটাকে অশুভ করে তুলল। যন্ত্রণা কাতর প্রাণীগুলোর অল্প কয়েকটা নদী উপত্যকা ফিরে এল কিন্তু অন্যরা সহজভাবে মরুতে তাদের আবাসের দিকে চলল। থেইনের দুর্গের দিকে সরাসরি তাদের রাস্তায় একত্রে তারা সৈন্য সারির দিকে দ্রুত চলল।

যখন নেফার শেষ চিৎকাররত খেঁকশিয়ালটা অবমুক্ত করল, সে তার তলোয়ার বের করল এবং লাথি দিয়ে ঘোড়া ছুটাল। সে জ্বলন্ত প্রাণীগুলোর পিছু নিল এবং উভয় পাশে তার সাথে তার সৈন্যরা চলছে। তারা সবাই তাদের কণ্ঠে শয়তানের মতো শব্দ করল চিৎকারের সাথে যুক্ত করে।

কয়েকটা শিয়াল তাদের আগুনধরা লেজগুলো শুকনো ঘোড়ার খাবার ও বাসস্থানের মধ্যে ঢুকিয়ে দিল। ফলে তাতে আগুন ধরে গেল। একটা রহস্যজনক মিটমিট আলোয় দৃশ্যটা আলোকিত হল যা অন্ধকারের যাত্রীদের মনে হলো কোন দৈত্য।

সম্মুখে নেফার দেখল সবচেয়ে কাছের রক্ষীরা তাদের অস্ত্রগুলো একপাশে সজোরে নিক্ষেপ করে পালিয়ে যাচ্ছে জলন্ত প্রাণীগুলোর মতই সজোরে চিৎকার করতে করতে।

জ্বিন! তারা আর্তনাদ করল।

আমাদের রক্ষা কর! সেথ! অন্ধকারের রাজা আমাদের সাহায্য কর।

নরকের পাল! ভাগ! ভাগ!

বাঁধা ঘোড়াগুলো পিছনের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল এবং ওগুলো সামনে পিছনে নড়াচড়া করতে লাগল। একটা খুঁটি মাটি উপড়ে উঠে গেল, আরেকটি দীর্ঘ সারির টানে মট করে ভেঙে গেল, বিশটা ঘোড়া তৎক্ষণাৎ মুক্ত হয়ে গেল এবং আর্তনাদ করা, চিৎকার করা আরোহী যারা ক্যাম্পের মধ্যে ঠেলাঠেলি করছিল তাদের সামনে দিয়ে দৌড়ে বের হয়ে গেল।

নেফার তার ঘোড়ার পিঠে উপুড় হয়ে শুয়ে দৌড়াদৌড়ি করা রক্ষীদের তার বাঁকা তলোয়ার দিয়ে আঘাত করতে লাগল, তাদের দুই হাতের মধ্যখানে গভীরভাবে আঘাত করল এবং ফলাটা দেহর মধ্য দিয়ে অবাধে যেতে দিল। তারপর নেফার এক সারি ভয়ার্ত ঘোড়া যারা একটা দড়ি ছিঁড়তে লড়াই করছে মুক্ত হওয়ার জন্য, এক কোপে সে রশিটা কেটে দিল এবং হাঁক দিয়ে তাদের ভয়ার্ত পালটার সাথে যোগ দিতে পাঠালো। তারপর ঘুরে অন্য এলোমেলো পশুদের কাছে গেল এবং মুক্ত মাঠে ধাক্কা দিয়ে তাদের খোয়াড় থেকে বের করে দিল। শাবাকো ও তার লোকেরা তার সাথে জোরে চিৎকার করে গেল, তারা ঘোড়াগুলোকে চাবুক মারছে। লোকজন ও প্রাণীর চলন্ত স্রোত একটা অদ্ভুত দৃশ্যের অবতারণা করল এবং তাদের পিছনে জলন্ত দুর্গ আলোয় আলোকিত। শিয়ালদের শেষটা জ্বলে মরে গেছে এবং তাদের কালো ধিকিধিকি পুড়া মৃতদেহগুলো ঘাসে পড়ে রইল যখন আরোহীরা পাহাড়ের দিকে প্রচন্ড গতিতে চলল।

শাবাকো অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এল এবং নেফারের পাশে পাশে চলল, সেথের মিষ্টি বীজের নামে! সে চিৎকার করল, ওটা দারুন এক মজা হল। তারপর সে ঘুরে পিছনে তাকাল।

অনুসরণের কোন চিহ্ন এখনো নেই, বরং বেশি করুণা হচ্ছে। এই আনন্দদায়ক সন্ধ্যার জন্য একটা ভালো পান ও ভোজ হতে পারে।

আমি তোমাকে ওয়াদা করছি পরে আরো বেশি বিনোদন হবে। নেফার হাসল, কিন্তু এখন আমাদের অবশ্যই দলটার নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে তারা এলোমেলো হয়ে যাওয়ার পূর্বেই।

তারা তাদের ঘোড়াগুলোকে জোরে ধাক্কা দিল, ছুটন্ত দলটার মধ্য দিয়ে ছুটল যততক্ষণ না তারা দলটার প্রথমে চলে এল, আড়াআড়ি ভাগ হয়ে দৌড় থেকে দুলকি চালে তাদের ঘোড়াকে নিয়ে এল এবং তারপর তাদের মুক্ত মরু ও গলালার দিকে ঘুরিয়ে এগিয়ে নিয়ে চলল।

সকাল বেলা ঘোড়ার দীর্ঘ পালটাকে কৃশ পাথুরে গিরিখন্দের মধ্যে ছড়ানো পেল, নেফারের গতি ছিল সহজ কিন্তু ধীর। শাবাকোর তাদের চিহ্নিত করল যখন ম্যারন ও তার রাখালেরা পিছন থেকে দলভ্রষ্টদের দেখাশুনা করতে লাগল।

সূর্যের প্রথম রশির দিকে তির্যক দৃষ্টি হেনে নেফার শাবাকোকে ডেকে বলল, তাদের উপর মুখ উপরে ধরে রাখো ও চলতে থাক। আমি পিছনে যাচ্ছি দেখতে যে সোক্কো ও তার লোকেরা এখানে আমাদের পিছু নিয়েছে কিনা।

যাবার সময় সে ম্যারন ও অন্য তিনজনকে চিহ্নিত করল, সবাই তারা বল্লম ও তলোয়ার চালনায় দক্ষ। সে তাদের ইশারা করল এবং তারা দৌড়ে তার সাথে যোগ দিতে এল। যদি তারা আমাদের পিছু নেয়, আমাদের উচিত তাদের মন পরিবর্তনের চেষ্টা করা।

নেফার পিছনের রাস্তা দিয়ে তাদের নিয়ে চলল এবং একটা স্থানে যেখানে পাথুরের গিরিটা সরু সেখানে পৌঁছে তারা সৈন্যদের তাদের ঘোড়া রাখতে বলে সে ও ম্যারন পাথরে ঢাকা খাড়া খাজে উঠে গেল।

চূড়ায় যখন তারা পৌঁছল তখন সূর্য দিগন্তে পরিষ্কার, কিন্তু এখনো রাতের ঠাণ্ডা পুরোপুরি যায় নি এবং ধুলা ও তাপের পাতলা স্তর সৃষ্টি হয়নি। ভূমি মরুর ঊষার বিশেষ মৃদু সঞ্চারনশীল আলোয় চকচকে পাথর ও বালিয়াড়ির পর্বত, প্যাঁচানো ও কর্কশ গাছের প্রতিটি অংশকে শ্বাসরুদ্ধকর এক সৌন্দর্য অঙ্কন করেছে।

ওখানে! নেফার বলল, ম্যারনের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হল। দশজন আরোহী, ম্যারন তাদের প্রথমে দেখতে না পাবার হতাশা লুকানোর চেষ্টা করল।

এগার জন! নেফার তাকে শুধরে দিল, এবং সে তর্ক করল না। পরিবর্তে সে আনন্দে দাঁত বের করে হাসল। আমাদের পাঁচজনের জন্য সুন্দর বিরক্তি।

আমরা তাদের এখানে নিয়ে আসব। নেফার নিচে গিরি খাদের দিকে নির্দেশ করল। ওখানে যেখানে তা সরু। আমি চাই না তাদের খবর অ্যাভারিসে নিয়ে যেতে কেউ বেঁচে থাকুক।

সব থেকে ওটাই আমাকে মানায়। ম্যারন হাসল। তারা বড় পাথরগুলোর মধ্যে অপেক্ষা করতে লাগল। ঘোড়াগুলোর মাথার কাছে দাঁড়িয়ে তাদের নাসিকায় হাত রেখে তাদের আওয়াজ করতে বা নাক ডাকা প্রতিরোধ করল তারা। আর তখন অদক্ষভাবে ফাঁদের মধ্যখানে নেফার একটা চামড়ার থলে ঝুলালো যা পূর্বে আটককৃত শিয়ালগুলোকে বহন করেছিল।

যখন নিচে গিরিখাতের পাথুরে ভুমি হতে তারা খুরের আওয়াজ শুনল নেফার তখন খোলা ভূমির দিকে তাকাল যেখানে ম্যারন ও অন্য লোকদের একজন লুকিয়ে ছিল, গিরিখন্দের অন্য প্রান্তে। সে আঙুল ছড়িয়ে তার বাম হাত তুলল। চুপ ও সতর্ক থাকার সংকেত। তার পিতা তাকে শিখিয়েছেন যে হাতের ইশারা মুখের আদেশ থেকে অধিক গ্রহণযোগ্য। বিশেষত যুদ্ধের ময়দানে যখন হার ও নিমজ্জিত হয়ে যাবে, গন্ডগোল অথবা এমন পরিস্থিতিতে যখন লুকিয়ে থাকাই সবচেয়ে জরুরি।

এখন সে অন্য একটা ছোট আওয়াজ করল, বালির আওয়াজের মাঝে উচ্চ কপিকলের ক্যাচ ক্যাচ আওয়াজ। অপর তীরের ঝনঝন শব্দের মাঝে নেফার বড় পাথরটার চারপাশে তাকাল যা তাকে ও তার দুজন সৈন্যকে লুকিয়ে রেখেছে। ফুলের গাছের একটা কটকটে ঝোঁপ তার মাথার ছায়ামূর্তিটাকে বাধা দিচ্ছে।

গিরিখাতের মুখে একজন দৃশ্যমান হল এবং সৈন্যটি তার ঘোড়া থামাল যখন সে চামড়ার থলেটা পথে পড়ে থাকতে দেখল। সে সতর্কভাবে চারপাশে দেখল এবং তার বাকি সৈন্য তার পিছনে ভিড় করল। এমনকি কুমিরের চামড়ার হেলমেটের নিচ দিয়ে নেফার সোক্কোকে চিনতে পারল এবং তার পিঠে কাঁধের উপর দিয়ে চাবুকটা উঁকি দিচ্ছে।

প্রতিঘাতের উপযুক্ত সময়, নেফার দাঁত চেপে ভাবল। অভিজ্ঞ সৈন্যের ন্যায় সোক্কো সময় নিল পরিস্থিতি বুঝতে, কিছু একটা তার মনে সন্দেহ জাগিয়েছে। সে তার ঘোড়াকে একটু এগিয়ে নিয়ে গেল, বাকিরাও তাকে অনুসরণ করল। সবার দৃষ্টি তখনও থলেটির দিকে, ঘোড়ার পিঠে উবু হয়ে তারা ওটা দেখছে। সোক্কো হঠাৎ আদেশ করল, সবই সতর্ক হও! আমার পিছন দিকটা লক্ষ্য রাখবে। বলেই সে ঘোড়া থেকে নেমে পড়ল। এগিয়ে গিয়ে সে থলেটার উপর থামল। নেফার তখন তার বাম হাতটা উঠিয়ে নির্দেশ দিতেই তার লোকেরা পাথর নিক্ষেপ শুরু করল। তারা একেক জনকে লক্ষ্য স্থির করে আঘাত হানছে এবং হিল্টো ও শাবাকো আগে থেকেই সমঝোতা করে প্রস্তুতি নিয়েছে যেন তাদের উভয়ে একই লক্ষ্যে আঘাত না করে। পাঁচ জন সেনা এমন স্থানে আঘাতপ্রাপ্ত হল যেখনে কোন বর্ম পরিধান করা থাকে না, তিন জনের গলায় এবং বাকি দুজন পিছনে ঘাড়ে আঘাত পেল। এই পাঁচ জন ঝুপ করে ঘোড়া থেকে নিচে পড়ে গেল এবং সাথে সাথে তাদের স্টারলেটের খুড়ের নিচে পতিত হলো।

নেফার ও তার লোকজন তখন চিৎকার করতে করতে অ্যাম্বুশ থেকে বেড়িয়ে এল উদ্যত তলোয়ার হাতে, হুরাস এবং সেথের নামে!

প্রথম আঘাতের ঝাঁপটা সামলে যে সকল যোদ্ধা টিকেছিল তারা দ্রুত ঘুরে তাদের মুখোমুখি হলো, কিন্তু শাবাকোর তলোয়ারের আঘাত ফেরানোর মতো পর্যাপ্ত সময় তারা পেল না। ঘোড়াগুলো প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত, সোক্কোর দুটি ঘোড়া নিজেদের সামলে নিল এবং তার পিঠের আরোহীকে ছুঁড়ে ফেলে দিল।

নেফার সবচেয়ে কাছের লোকটিকে ধরল সে তখনো বসেছিল এবং তাকে কণ্ঠ নালীতে আঘাত করে হত্যা করল। ইত্যবসরে সাক্কো তার তলোয়ার বের করে নেফারের পেটের দিকে তেড়ে এল।

নেফার আঘাতটা ঘুরিয়ে দিল এবং তার ঘোড়া পিছিয়ে গেল। তারপর ঘোড়াটা উভয় খুর দিয়ে সোক্কোতে আঘাত করল, যার একটা ছিল নিরেট আঘাত, বালির উপর দিয়ে গড়িয়ে পড়ল সে। নেফার তাকে শেষ করতে পারার পূর্বে শত্রুদের আরেক জন তার দিকে এগিয়ে এল দ্রুত। তলোয়ার উঁচু করে নেফার আঘাতের নিচ দিয়ে চলে গেল এবং শত্রুকে পাল্টা আক্রমণ করে হত্যা করল।

প্রথম ধাক্কা থেকে সোক্কোর লোকেরা মাত্র সেরে উঠছে, এদিকে ম্যারনও তার পালা সঠিকভাবে পছন্দ করল। সৈন্যদের সাথে এলোমলো লড়াই এর মধ্যে দিয়ে তীব্র ধাওয়া করল সে। এক সৈন্যের হৃদপিন্ড বরাবর আঘাত করে সে বিজেতার চিৎকার দিল। সঙ্গে সঙ্গে সে ফলাটা বিপরীতে ঘুরিয়ে আবার আরেক জনকে হত্যা করল, এক কোপ ঘাড়ের আড়াআড়ি; তার শিকার টুকরো হয়ে মাটিতে পড়ল ছিন্ন মাথা নিয়ে।

সোক্কো তার হেলমেট ও তলোয়ার হারিয়ে ফেলেছে এবং হাঁটুগেড়ে বসে পাগলের মতো হামাগুড়ি দিয়ে তার অস্ত্র আবার ধরার চেষ্টা করল। তার লোকদের মধ্যে এখনো একমাত্র সেই সক্ষম প্রতিরোধ করার জন্য। নেফার তার ঘোড়ার পিঠে শুয়ে কাত হয়ে ভোলা স্থানটা লক্ষ্য করল যেখানে তার কুমীরের চামড়ার বর্ম বুকের অংশে কাঁধের সাথে বাধা। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সে নিজেকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারল না। সে তার আক্রমণ পরিবর্তন করে হালকা করে তার কব্জি ঘুরিয়ে তলোয়ারের হাতলের কাস্তে আকৃতির ফলার বাঁকা অংশ দিয়ে সোক্কোর ধূসর মাথার পিছনে আঘাত করল। লোকটি উপুড় হয়ে বালিতে পড়ে গেল সাথে সাথে।

নেফার চারপাশে নজর বুলালো নিশ্চিত হতে যে সব কিছু ম্যারনের নিয়ন্ত্রণে কিনা, তারপর পিছলে ঘোড়া থেকে মাটিতে নেমে দাঁড়াল। এমন সময় সোক্কো আর্তনাদ করে তার মাথায় হাত রেখে উঠে বসতে চেষ্টা করল। নেফার সাজোরে তার গোড়ালি তার শত্রুর বুকের উপর রাখল এবং তাকে পিছন হতে ধাক্কা দিয়ে তার তলোয়ারের তীক্ষ্ণ ডগা ধরল তার কণ্ঠে বরাবর। চিৎকার কর সোক্কো, নইলে আমি তোমার মৃত্যুর খবর তোমার মায়ের কাছে, ওই সব একশ দুর্গন্ধময় ছাগলের পালের কাছে পাঠাবো যাদের হাত রয়েছে তোমাকে জন্ম দানে।

একটা বিমূঢ় অভিব্যক্তি সোক্কোর মাঝে স্পষ্ট হলো এবং আড়ষ্ট হয়ে তাকিয়ে রইল।

মহামান্য, সে সজোরো উচ্চারণ করল। আমাকে ক্ষমা করুন, আঘাত করুন, আমার মূল্যহীন জীবন নিয়ে নিন বাজেয়াপ্ত হিসেবে আমার ঐসব অমার্জিত ও অসভ্য শব্দগুলোর জন্যে। আমি গুজবটা শুনেছিলাম যে আপনি এখনো জীবিত কিন্তু আমি আপনার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে কেঁদেছিলাম এবং এই রকম একটা অলৌকিক ঘটনা বিশ্বাস করতে পারি।

নেফার স্বস্তিতে হাসল সে তাকে খুন করতে চায় নি। সে একজন বৃদ্ধ দুবৃত্ত এবং হিল্টো বলেছিল যে সে মিশরের সব আর্মিদের মধ্যে অন্যতম একজন দক্ষ ঘোড়সওয়ার। তুমি কি আমাকে ফারাও হিসেবে তোমার আনুগত্যে শপথ নিবে? নেফার কঠোর ভাবে জানতে চাইল।

আনন্দের সহিত, কারণ সকল দুনিয়া আপনাকে ভয় পায়। আপনার নাম নেফার সেটি, সকল প্রভুর প্রিয় এবং এই মিশরের আলো। আমার হৃদ্স্পন্দন শুধু আপনার জন্যে এবং আমার আত্মা আপনার দায়িত্বের গান গাইবে মৃত্যুর মুহূর্ত পর্যন্ত।

তাহলে সোক্কো আমি তোমাকে এক হাজার রথের প্রধান বানালাম এবং টাইটা তার রাজকবির পদবি অদ্যবদি ভালোভাবে প্রহরায় রেখেছে। আর তুমি সুন্দর করে কথা বল যা তার উপকারেই আসবে।

আমাকে আপনার পদ চুম্বন করতে দিন, ফারাও। সোক্কো অনুনয় করল।

বরং তুমি তোমার হাত দাও। নেফার বলল, তার শিং-এর মতো কঠিন মুঠোটা ধরে তাকে টেনে তুলল। তোমার লোকদের জন্য করুণা হচ্ছে। নেফার মরদেহগুলোর দিকে নজর বুলালো। যদি তারা তোমার রাজ অনুভূতি ভাগ করে নিতো তাহলে তাদের মরার দরকার ছিল না।

তারা এক জন প্রভুর হাতে নিহত হয়েছে, সোক্কো বলল। এর চেয়ে আর কোন বড় সম্মান নেই। তাছাড়া টাইটা, ওয়ারলক হয়তো কয়েক জনকে রক্ষা করতে সক্ষম হবে যারা এখনো আর্তনাদ করছে ও বেঁচে আছে।

তিনদিন পর যখন তারা গালালার মধ্য দিয়ে পাশাপাশি ঘোড়াগুলো নিয়ে চলছিল, সোক্কো তার নতুন ফারাও এর ডান পাশে গর্বিতভাবে এগিয়ে চলছে। তার হেলমেট তার ব্যান্ডেজের উপর উঁচু করে বসানো যা তার আঘাত প্রাপ্ত মাথার চারপাশে জড়ানো।

*

দশ হাজার সৈন্যের সর্বোত্তম পদবি নিয়ে সোক্কো ভুয়া ফারাওদের সৈন্যদের রসদ সরবরাহের অফিসারই শুধু ছিল না সে যুদ্ধের ময়দানের একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ সেনাপতি। সে নেফারকে শত্রুদের যুদ্ধ রথের ও ওয়াগনের সঠিক হিসাব দিতে সক্ষম হল যা নিয়ে তারা সংশয়ে ছিল। স্মৃতি থেকে সে ডেল্টার মজুদ ভান্ডারের সংখ্যার তালিকা এবং সর্বশেষ আবিষ্কৃত অস্ত্রসমূহ যা অস্ত্রাগারে মজুদ তার একটা তালিকা বের করল।

টক ও নাজা তাদের প্রায় শেষ কর্মক্ষম যুদ্ধ রথটা তাদের সাথে পূর্বের অভিযানে নিয়ে গেছে। মিশরে বর্তমানে পঞ্চাশটারও কম আছে, হয় উচ্চ রজ্যে অথবা নিম্ন রাজ্যে। অ্যাভারিস, থেইন ও আসওয়ানের আর্মিরা কারখানায় দিন রাত কাজ করছে। কিন্তু প্রতিটি রথ যা তারা তৈরি করছে তা সঙ্গে সঙ্গেই বীরসেবা ও মেসোপটেমিয়ার রাস্তায় পাঠানো হচ্ছে।

আমাদের এখন যথেষ্ট ঘোড়া আছে, থেইনে ফারাও-এর শক্তিশালী হানাকে ধন্যবাদ। এমনকি যদিও অধিকাংশ তরুণ অপ্রশিক্ষিত, কিন্তু আমরা কোন যুদ্ধ রথ ছাড়া কিছুই করতে পারব না। হিল্টো গম্ভীরভাবে বলল। যা নেই আমরা তা ধরতে পারব না এবং রাজকোষের সকল অর্থ দিয়ে আমরা একটা সৈন্য দল কিনতে পারবো না।

যখন তারা গালালা থেকে বিশাল ঘোড়ার পাল দখলে ছিল তখন হিল্টো পূর্ব দিকে মহাসড়ক থেকে গুপ্ত ভান্ডারের অবশিষ্ট স্বর্ণ নিয়ে এসেছে। গালালা শহরের নিচে পুরানো জলাধারে তিন লাখেরও বেশি মূল্যবান ধাতু লুকিয়ে রাখা হয়েছে। সে বলে চলল, শীঘ্রই টর্ক আমাদের সফলতার কথা জেনে যাবে। সে তখন বুঝবে যে আমরা একটা সত্যিকারের হুমকিতে পরিণত হয়েছি। যখনই তার ব্যাবিলন দখল করা শেষ হবে তখন সে তার সৈন্যবাহিনীকে ভাগ করে দিয়ে এখানে আমাদের আক্রমণ করতে বলবে। সে যদি মাত্র একশ রথও পাঠায় বর্তমানে আমাদের যে অবস্থায় আমরা তাদের সামনে দাঁড়াতে পারব না।

যখন অন্যদের সবার কথা বলা শেষ হল, নেফার সভা সম্বোধন করার জন্য দাঁড়াল তবে সে বেশিক্ষণ কিছু বলল না। সোক্কো, তুমি আমার জন্য ঘোড়াগুলোকে প্রশিক্ষণ দাও, সে বলল। টাইটা এবং আমি রথের ব্যবস্থা করবো।

মহামান্য তা হবে একটা সাধারণ ঘটনা, সোক্কো গম্ভীরভাবে বলল।

অত খুশি হয়ো না এক হাজার রথের প্রধান। নেফার তার দিকে চেয়ে হেসে বলল। আমরা কিভাবে আপনার উপাধিকে একটা ক্ষুদ্রতম অলৌকিক বিষয়ের সাথে ভালো করতে পারি? আমাদের বিশ্বাসকে একটা বৃহত্তম কিছুতে রাখি চলুন।

*

টাইটা কালো পাহাড়ের শিলার উপরিভাগে দাঁড়িয়ে আছে। তার চারপাশে দৃষ্টি জুড়ে বালিয়াড়ি ছড়িয়ে রয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশ থেকে একশ লোক তাকে দেখছিল বিস্মিত কিন্তু কৌতূহলী। ম্যাগোসের খ্যাতি তাদের কাছে মরুর মতই অসীম। তারা সবই হচ্ছে যোদ্ধা যারা তাদের নিজের ইচ্ছায় এখানে এসেছে, ভুয়া ফারাওদের ছেড়ে তাদের সমর্থন নেফার সেটিকে দিতে। এই জোটটা একটু অসম, তারা এখানে নিজেদের অস্ত্র ও রথহীন অবস্থায় পেয়েছে এবং প্রতিদিন একটা সতেজ গুজব আসছে যে হয় টর্ক নয় নাজা অথবা দুজনেই তাদের ত্যাগ করার প্রতিশোধ নিতে এগিয়ে আসছে।

ফারাও নেফার সেটি ওয়ারলকের পাশে সরু পাহাড়ের শিখরে দাঁড়িয়েছিল। গভীর আলোচনায় তারা ব্যস্ত। মাঝে মাঝে একজন অথবা অন্য জন পশ্চিম দিকে অঙ্গভঙ্গি অথবা নির্দেশ করল, যেখানে অবিরত বালি আর বালি ছাড়া আর কিছু দেখার ছিল না।

তারা দিনের তাপের মধ্যে ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করল। কেউ মোহমুক্তি বা অবিশ্বাস প্রকাশ করল না, কারণ সবাই টাইটাকে সম্মান করে। যখন বালি ঘড়ির শূন্যতায় ছায়াগুলো গম্ভীর হয়ে রক্ত বর্ণ হল তখন ঐ বেমানান যুগল তরুণ শাসক ও বৃদ্দ ম্যাগোস পর্বত শিখর থেকে নেমে এল এবং বালিয়াড়িতে হাঁটতে বের হল। নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ছাড়াই ওয়ারলক একটা বালিয়াড়ির মুখের সামনে ও পিছনে গেল। সে মধ্যবর্তী স্থানে থামল এবং অদ্ভুত ও রহস্যজনক ভঙ্গি করল তার দীর্ঘ লাঠি দিয়ে, তারপর আবার চলল; ফারাও ও তার অফিসারেরা তাকে অনুসরণ করে গেল শুধু।

অবশেষে পড়ন্ত গোধূলি লগ্নে ম্যাগোস তার লাঠি নরম বালিতে গাঁথল এবং ফারাও নেফার সেটির সাথে কথা বলল একান্তে। তখন হঠাৎ করে তারা অফিসারদের চিৎকার করে আদেশে উদ্দীপ্ত করল।

বিশ জন তোক সামনে দৌড়ে গেল খননের যন্ত্রপাতি নিয়ে যা তাদের দেয়া হয়েছে। হিল্টো ও ম্যারনের নির্দেশনায় ও ম্যাগোসের নিবিড় পর্যবেক্ষণে তারা খনন করতে শুরু করল। যখন গর্তটা বাঁধ সমান গম্ভীর হল তখন খোলা বালি নিচে পড়তে লাগল ততোটাই দ্রুত যতো দ্রুত তারা তা বের করেছে, এবং চেষ্টা দ্বিগুণ করতে হলো তাদের উদ্দেশ্য সফল করার জন্যে। খননকারীদের মাথাগুলো দ্রুত চারপাশের মাটির সমতলের নিচে ধীরে ধীরে ডুবে গেল, এমন সময় গর্তের তলা থেকে উত্তেজিত চিৎকার এলো। নেফার সশব্দে দৌড়ে সামনে গেল ও কিনারায় গিয়ে দাঁড়াল।

এখানে কিছু আছে, মহামান্য, একটা লোক গর্তের তলায় হাঁটুগেড়ে বসে আছে।

আমাকে দেখতে দাও, নেফার লাফিয়ে নামল এবং লোকটাকে ধাক্কা দিয়ে সামনে থেকে সরাল। একটি লুকানো বস্তু উম্মোচিত হলো এখনো চুলে ঢাকা কিন্তু সিডার কাঠের ন্যায় শক্ত।

নেফার টাইটার দিকে তাকাল। এটা একটা ঘোড়ার দেহ! সে ডেকে বলল।

কি রঙের? টাইটা জানতে চাইল। এটা কি কালো?

তুমি কি ভাবে জানলে? নেফার প্রকৃতপক্ষে অবাক হলো না।

ঘোড়ার গলার দড়িতে কি ফারাও টর্ক উরুর স্বর্ণের সীল আছে? টাইটা আরেকটি প্রশ্ন দিয়ে তার প্রশ্নের উত্তর দিল।

খনন করে এটাকে বের কর! নেফার তার চারপাশের ঘর্মাক্ত লোকদের আদেশ দিল। কিন্তু এখন আলতোভাবে। কোন ক্ষতি করো না।

তারা সতর্কতার সাথে কাজ করে গেল, এবার তারা হাত ব্যবহার করল বালি সরাতে। শীঘ্রই তারা কালো ঘোড়াটার সম্পূর্ণ মাথা বের করল যার মাথায় টর্কের স্মারক পরিহিত, স্বর্ণের পাতে খচিত ঠিক যেমনটা টাইটা পূর্বে দেখেছে।

তারপর তারা মৃত দেহটার অবশিষ্টাংশ বের করতে শুরু করল। প্রাণীটা গরম শুষ্ক বালি দিয়ে ভালোভাবেই সংরক্ষিত হয়েছে, মমি করলে যেমনটা হয়। তাছাড়া এর সাথে তার হার্নেসের সঙ্গীটাও পড়ে আছে, অন্য একটা খোঁজ না করা ঘোড়া যা। নেফারের মনে করল কিভাবে সে এই চমৎকার প্রাণীগুলোকে শেষবার দেখেছিল যখন প্রাণীগুলে টর্কের রথ সামনে টেনে নিচ্ছিল কালো হয়ে আসা খামসিনের ধুলোর মেঘের নিচে দিয়ে।

ইতোমধ্যে রাত নেমে এলে কর্মীরা তেলের প্রদীপ জ্বালালো ও গর্তের ধারে তা সাজিয়ে রাখল। সারারাত কাজ করে মৃত ঘোড়গুলোকে বাঁধন থেকে মুক্ত করে বের করল তারা। শুষ্ক মৃত দেহগুলো এতো হালকা যে চারজন লোক সহজেই তা বহন করতে পারল।

তারপর তারা হার্নেসটি বের করে আনল। এটা পুরোপুরি সংরক্ষিত ছিল, এবং নেফার সেটি তার সহিসদের সঙ্গে সঙ্গে কাজে লাগিয়ে দিল–চামড়ায় তেল দিতে এবং স্বর্ণের ও ব্রোঞ্জের অংশগুলো পালিশ করতে।

আবার তারা রথে কাজ করতে ফিরল এবং খনন কারীদের মাঝ থেকে একটা চিৎকার এলো যখন ড্যাশবোর্ডটা ঘিরে থাকা বালি পরিষ্কার হলো। এটা সোনার পাতে ঢাকা এবং প্রদীপের আলায় ঝিকিমিকি করছে, আলোটা তাদের চোখ ধাধিয়ে দিচ্ছে। বল্লমগুলো ও বর্শাগুলো এখনো তাদের পটে বাঁকা পিঠের পাশে রথীর হাতের কাছে প্রস্তুত। প্রতিটি অস্ত্র নিজেই একটা শিল্প। বর্শার হাতলগুলো শক্তির জন্য স্তরে স্তরে বিন্যস্ত এবং ধাতব মাথাগুলো শস্যবিদের ছোট ছুরির ন্যায় ধারালো। তীরগুলো অ্যাভারিসের গ্রিপ্পার তৈরি, বানগুলো সোজা ও যথার্থ; পুচ্ছটা লাল, হলুদ ও সবুজ রঙে রাঙানো, বানের মধ্যে রাজ সীলমোহর আঁকা।

টর্কের বিশাল যুদ্ধের ধনুক এখনো ওটার তাকে রয়েছে এবং শুধুমাত্র ধনুকের তারটা লাগানো বাকি। নেফার বর্শাটা হাতে নিল এবং আফসোস করল যদি তা যুদ্ধে ব্যবহার করার শক্তি তার থাকত।

যখন সমস্ত রথটা অবমোচিত হলো, তারা তলদেশের নিচ দিয়ে রশি ঢুকালো এবং গর্ত থেকে তা টেনে বের করল। সোনার পাতগুলোকে পিটিয়ে এতো পাতলা করা হয়েছে যে এগুলো যানটার ওজনে কমই যোগ করেছে এবং তলদেশটা কালো শক্ত কাঠে তৈরি করা, যা অনেক দূর মিশরের দক্ষিণ সীমান্তের অশুভ রেইন ফরেস্ট থেকে সংগ্রহ করা। এসব গুঁড়ি সর্বোত্তম ব্রোঞ্জ থেকে অধিক স্থিতিস্থাপক, কিন্তু হালকা ও শক্ত। শক্তি না হারিয়ে ওজন বাঁচাতে তারা ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

এখন সকাল, এবং সূর্য দিগন্তে উঁকি দিচ্ছে। নেফার ও টাইটা রথটা ঘিরে ছিল যখন তা আলোতে ঝিকিমিকি করল। এটা এতো চকচকে ও মাধুর্যময় যে মনে হল ইতোমধ্যে এটা চলছে, শুধু মাত্র প্রেমিকের মতো দুটি গর্বিত ঘোড়ার স্পর্শের অপেক্ষায় নেফার স্বর্ণের কারুকার্যে হাত বুলালো। তা একজন আকর্ষণীয় রমনীর ত্বকের মতই মসৃণ এবং তার হাতের নিচে উষ্ণ।

মনে হচ্ছে এটা একটা জীবন্ত প্রাণী, সে একটা বড় শ্বাস ছাড়ল।

নিশ্চিতভাবে এর চাইতে চমৎকার যুদ্ধের অস্ত্র কখনো তৈরি হয় নি।

পঞ্চাশ বছর আগে আমি লর্ড ট্যানোসের জন্য একটা রথ তৈরি করেছিলাম। টাইটা অবজ্ঞা করল ও মাথা ঝাঁকালো। তোমার ওটা দেখা উচিত ছিল। কিন্তু তা তার সাথে তার কবরে বহুদূরে ইথিপিয়ায় বিশ্রামে এখন।

নেফার হাসি লুকালো–বৃদ্ধ লোকটি কখনোই সর্বোত্তমটা স্বীকার করবে না। তাহলে আমাকে এখন অবশ্যই এই নিচু কারুকার্যের বস্তুটি দ্বারা সম্ভষ্ট থাকতে হবে। সে গম্ভীর ভাবে বলল। এখন শুধু আমার অস্ত্রাগারটা সম্পূর্ণ করতে নীল তলোয়ারটি দরকার যা নাজা আমার পিতার কাছ থেকে চুরি করেছে।

পরবর্তী সপ্তাহ ও মাস জুড়ে টাইটা সমাহিত যানগুলো ও তাদের সরঞ্জাম চিহ্নিত করল, পারদর্শী লোকের একটা দল তাদের খনন করে বের করে সেগুলো রথ তৈরি কারিগরদের কাছে পাঠাল যারা পাহাড়ের চূড়ায় একটা কর্মশালা স্থাপন করেছে, শুকনো তাল পাতা দিয়ে ওটার ছাদ দেওয়া। এখানে, তাদের পঞ্চাশ জন এবং কাছেই আরো একশ অস্ত্র মেরামতকারী দিনের বেলা পরিশ্রম করে গেল, দুপুরের তীব্র তাপেও তা বন্ধ রাখল না। কারিগরেরা তলোয়ার, বল্লম ও বর্শাগুলো চকচকে ও ধারালো করল। তারা পুনরায় বান বাঁধল ও মাথাগুলো পুনঃস্থাপন করল। ধীর আগুন দিয়ে তারা তীরগুলো সোজা করল যেগুলো বেঁকে গিয়েছিল। রথ কারিগরেরা প্রতিটি রথ খুলে ফেলল যখন তা বালির নিচ থেকে বেরিয়ে এল; প্রতিটি যন্ত্রাংশ পরীক্ষা করল, রং করল এবং তলদেশ ও প্যানেল শক্ত করল এবং সুষম করল ও তৈলাক্ত পদার্থ চাকায় লাগাল যথার্থ ও ভালোভাবে চলার জন্যে। তারপর তারা তাদের একত্রিত করে গালালায় পাঠাল, ঠিক করা অস্ত্রে পরিপূর্ণ আর্মিদের সজ্জিত করতে যাদের হিল্টো, শাবাকো ও সোক্কো প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

অনেক যান তপ্ত হলুদ বালিয়াড়ির এতো গভীরে চাপা পড়েছিল সে তারা চিরতরে হারিয়ে গেল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা ১০৫টা উদ্ধার করল যা পাঁচটি দলকে সজ্জিত করতে যথেষ্ট।

যখন নেফার রাজকীয় রথে চড়ে গালালার ফটক দিয়ে চলল, ম্যারন তার পাশে পাদানিতে অবস্থান নিল।

মিনটাকা ও মেরিকারা এক সাথে থোরের মন্দিরের ত্রিকোনা ছাদে দাঁড়িয়েছিল, এবং করবী ফুলের পাপড়ি তাদের উপর ছিটালো যখন তারা নিচ দিয়ে গেল।

সে খুব সুন্দর। মেরিকারার কণ্ঠে গর্ব ফুটে উঠল। এতো লম্বা ও সুন্দর।

লম্বা, সুন্দর ও শক্তিশালী, মিনটাকা সম্মত হলো। সে এই মিশরের ইতিহাসের সবচাইতে মহান ফারাও হবে।

আমি নেফারের কথা বলি নি। মেরিকারা বলে উঠল।

*

এরই মধ্যে শহরটি ও মিশরের মধ্যে একটা বলিষ্ঠ চোরা যোগাযোগ গড়ে উঠেছে এবং পূর্বের সাগরের সাফাগা বন্দর থেকে নিয়মিত অন্যান্য ক্যারাভান আসতে লাগল। টর্ক ও নাজার ধন-রত্ন দখল করার পর হতে গালালা স্বর্ণ সমৃদ্ধ একটা শহর হয়ে উঠেছে। হায়েনার ন্যায় ব্যবসায়ীরা বহু দূর থেকে হলুদ ধাতুর গন্ধ পেল এবং তাদের পণ্য সামগ্রী দুনিয়ার শেষ প্রান্ত থেকে নিয়ে এল বিক্রি করতে। বর্তমানে এমন কোন বিলাসপণ্য বা প্রয়োজনীয় পণ্য ছিল না যা শহরে পাওয়া যায় না, তাই মিনটাকাকে বুশিরিস এর অশিরিশ মন্দিরের আঙ্গুর বাগান থেকে সর্বোত্তম লাল মদের এক ওয়াগন সংগ্রহ করতে কষ্ট হল না স্বাগত ভোজ সভার জন্যে, যেদিন রথীরা ফিরল সেদিন সন্ধ্যায় যার আয়োজন করল সে।

তার আদেশে কসাইরা দশটি বড় ষাঁড় বিদ্ধ করল ও পোড়ালো এবং সেই সাথে শত শত মুরগি ও হাঁস। নতুন রথের দ্রুত চালানে সতেজ মাছ ও শৈবালে থাকা গলদা চিংড়ির ঝুড়ি এল উপকূল থেকে। অধিকাংশ লম্বা গোঁফওয়ালা কাঁকড়া জাতীয় প্রাণীগুলো তখনো জীবিত ছিল যখন তাদের চি-চি শব্দে ফুটন্ত পানিতে ফেলা হল। শিকারীরা মরুর চতুর্দিক গেল এবং গজলা হরিণ, অরিক্স এবং অস্ট্রিচের মাংস ও ডিম নিয়ে ফিরল।

ভোজ সভাটা তাদের অর্জনের ও নকল ফারাওদের বিরুদ্ধে ছোট জয়ের একটা আনন্দ মুখর উদযাপন ছিল। মদের তীব্র প্রবাহ বয়ে গেল যখন নেফার অতিথিদের স্বাগত জানাতে ও সৈন্য দলের জন্যে পাঁচটি রথ বালির নিচ থেকে উদ্ধার হয়েছে তা ঘোষণা করতে উঠে দাঁড়াল। ঘোড়াগুলো সহ যা আমরা টর্কের শোষণ থেকে মুক্ত করেছি… এই কথায় সবার মাঝে অট্টহাসি ছড়িয়ে পড়ল, …এবং অস্ত্র ও রথসমূহ যা আমাদের এখন আছে, আমরা তা দিয়ে নিজেদের টর্ক ও নাজা থেকে ভালোভাবে রক্ষা করতে সক্ষম। যেমনটা আপনারা জানেন, প্রতিটি দিন যা

অতিক্রম করছে নীলের ব্যানারে। শীঘ্রই এটা আমাদের নিজেদের শুধুমাত্র রক্ষার বিষয় হবে না বরং যা আমাদের কাছে থেকে চুরি হয়েছে তা ফিরিয়ে নেবার এবং ভয়ংকর কাজগুলোর প্রতিশোধ হবে যা ঐ দুই দৈত্য করেছে। তারা তাদের নিজ হাতে প্রকৃত ও মহান রাজাদের খুন করেছে। তারা রাজা অ্যাপেপির খুনী; যে আমার পাশের সম্মানিত রমণীর পিতা, এবং তারা আমার নিজের পিতাকেও হত্যা করেছে, ফারাও ট্যামোসকে। অতিথিরা এখন নিরব ও হত বিস্মিত, নির্দেশনার জন্যে এক জন অন্য জনের দিকে তাকাচ্ছে। তখন হিল্টো উঠে দাঁড়াল। নেফার তাকে অনুমতি দিল এবং তার মুখে প্রশ্ন এল। মহামান্য, আমার অজ্ঞতা ক্ষমা করবেন কারণ আমি একজন সাধারণ মানুষ, কিন্তু আমি বুঝি নি। সমগ্র পৃথিবী জানে রাজা অ্যাপেপি দূর্ঘটনায় মারা গেছে যখন তার জাহাজে আগুন লাগে, যখন বালাসফুরায় তারা সবাই ছিল। কিন্তু এখন আপনি তার মৃত্যুর জন্য দোষটা প্রতারকদের দিচ্ছেন। তা কিভাবে হতে পারে?

আমাদের মাঝে একজন আছে যে ঐ নির্মম রাতের প্রকৃত ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী। নেফার হাত বাড়াল ও মিনটাকাকে দাঁড় করাল। অতিথিরা তাকে অভিবাদন দিল কারণ তারা সবাই তাকে তার সৌন্দর্য ও তার মাধুর্যমন্ডিত স্পৃহার জন্যে ভালোবাসে। নেফার তার হাত উঠাতেই তারা শান্ত হলো এবং তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনল। সে তাদের সাথে বন্ধু ও সহযোদ্ধার মতো কথা বলল, এখন সে তাদের সাথে তার নিজের ভয় ও দুঃখ ভাগাভাগি করতে সক্ষম। যখন সে শেষ করল তারা খাঁচায় বন্দী ক্ষুধার্ত সিংহের ন্যায় গর্জন করতে লাগল।

এবার শাবাকো উঠে তার প্রশ্ন করল। কিন্তু মহান ফারাও আপনি আপনার নিজের পিতার মৃত্যুর কথাও বললেন, রাজা ট্যামোসের। তিনি কি ভাবে খুন হয়েছেন এবং কার হাতে?

এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য আমি ম্যাগোসকে অনুরোধ করছি, লর্ড টাইটা, যার কাছে কোনো রহস্য যতোই কঠিন হোক তা সরল ও লুকিয়ে থাকতে পারে না।

টাইটা তাদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলল যা তাদের মনোযোগ ধরে রাখতে কার্যকর হল বেশি। তার প্রতিটি শব্দ এমনি যারা জনতার শেষ প্রান্তে ছিল তাদের কাছেও পরিষ্কার পৌঁছল, এবং ঐ সব শব্দগুলোর কোমলতা ভয়ংকর ঘটনাগুলোর সাথে এতোটাই আবেগ সৃষ্টি করল যে পুরুষেরা কেঁপে উঠল এবং মহিলারা কাঁদল।

শেষে টাইটা লাল, সবুজ ও হলুদ পালকের ভাঙ্গা তীরটা উঁচু করে ধরল, এটা হল ফারাও ট্যামোসের মৃত্যুর হাতিয়ার। তীরটা যা টর্কের সীলমোহর বহন করে, কিন্তু তা নাজা কর্তৃক নিক্ষিপ্ত হয়েছিল, যে মানুষটাকে ফারাও ভালোবাসতো ও বিশ্বাস করত একজন ভাইয়ের মতই।

তারা তাদের রাগ ও আশা নিয়ে ন্যায় বিচারের জন্য গালালার উপরের তারা খচিত আকাশ পানে গর্জন করে উঠল। টাইটা তীরটা সবচেয়ে কাছের আগুনে জোরে নিক্ষেপ করল যার উপর একটা ষাড় পোড়া হচ্ছিল। এটা গভীর পরীক্ষা করার দরকার ছিল না কারণ এটা ঐ তীরটা ছিল না যা ফারাওকে হত্যা করেছে, বরং এটা ছিল ঐগুলোর একটা যা সে সমাহিত রথ থেকে নিয়েছে। সে বসে পড়ল এবং তার চোখ বন্ধ করল যেন সে ঘুমানোর চেষ্টা করছে।

নেফার অতিথিদের তাদের অনুভূতির পূর্ণ প্রকাশ হতে দিল এবং যখন তারা একটু চুপ হতে লাগল সে আরো বড় মদের বোতল আনতে ইঙ্গিত করল। একটা শেষ ঘোষণা আছে যা তাকে অবশ্যই করতে হবে এবং অপেক্ষা করল সবার মেজাজ আরেকটু নরম হতে। সে আবার দাঁড়ানোর পূর্বে সবাই চুপ হয়ে গেল এবং তাকে পূর্ব জ্ঞান নিয়ে দেখল যা বুশিরিসের ভালো মদের কারণে উঁচু আসনে অধিষ্ঠিত। রাতটা ইতোমধ্যে অনেক চমক দিয়েছে এবং তারা অবাক হচ্ছিল এখন আবার কি আসবে কে জানে!

একজন রাজাকে তার সৈন্যদের শত্রুদের বিপক্ষে নেতৃত্ব দেওয়ার পূর্বে, আমাদের পূর্ব পুরুষদের এই ভূমিতে প্রকৃত পক্ষে তিনি যে একজন রাজা তা প্রমাণ করতে হবে, যিনি হবেন একজন সত্যিকার ও যথার্থ রাজা। আমার উদ্দেশ্য আপনাদের দখলদারদের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া। কিন্তু আমি এখনো ফারাও হিসেবে অধিষ্ঠিত নই, আমি এই নিশ্চয়তা পেতে পারি যদি আমি অপেক্ষা করি যতোক্ষণ না আমার সংখ্যাগরিষ্ঠতার বছর আসবে। কিন্তু সেটা এখনো অনেক দূরে এবং আমি অতত দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে রাজি নই। এমনকি আমার শত্রুরাও ঐ সুযোগ দিবে না। সে থামল এবং তারা তার দিকে তাকিয়ে রইল বিমোহিত হয়ে চমৎকার গড়নের, বয়স কম তবুও লম্বা এবং সোজা, যেমনটা তার পিতা তার পূর্বে ছিল। এখন সে তার ডান হাত শপথ নেয়ার মত করে তুলল।

আমার লোকদের ও আমার প্রভুদের সম্মুখে, আমি রেড রোডে দৌড়ে আপনাদের প্রমাণ দিতে চাই যে আমি আপনাদের রাজা।

কিছু লোক দীর্ঘশ্বাস ফেলল এবং তাদের মাথা ঝাঁকাল, অন্যরা দাঁড়িয়ে চিৎকার করল, না! ফারাও, আমরা আপনাকে মৃত দেখতে পারব না। তখন অন্যরা বলল, বাক হারা! যদি সে ব্যর্থ হয় তবে সে একজন সাহসী মানুষের মতই ব্যর্থ হোক।

ঐ রাতে মিনটাকা কান্না করল এবং তাকে সে জিজ্ঞেস করল, আমাকে কেন তুমি প্রথমে বলনি?

কারণ তুমি আমাকে থামানোর চেষ্টা করতে।

কিন্তু কেন তোমাকে এটা অবশ্যই করতে হবে?

কারণ আমার প্রভুদের এবং আমার দায়িত্বের জন্যে এটা দরকার।

এমন কি যদি এটা তোমার মৃত্যুর কারণও হয়?

এমনকি যদি তা আমার মৃত্যুর কারণ হয় তাও।

সে তার সবুজ চোখগুলোর মধ্যে দিয়ে অনেকক্ষণ চেয়ে রইল এবং দেখল তার সিদ্ধান্ত কতটা দৃঢ়। তারপর সে তাকে চুমু খেল এবং বলল, আমি গর্বিত যে আমি তোমার মত একজন মানুষের স্ত্রী হবো।

*

হুরাসের পুরোহিতদের মধ্যকার জ্যোতিষীরা ম্যাগোসের সাহায্যে ক্যালেন্ডার হিসাব করল এবং রেড রোডের পরীক্ষার তারিখ ঠিক করল, প্রভুর নতুর চাঁদের দিনে তা অনুষ্ঠিত হবে।

অতএব হাতে সময় অল্প। টাইটা মন্তব্য করল। নেফার তার ভাগ্য পরীক্ষার জন্যে খুব অল্প সময় পাচ্ছে। তাই সে তার অন্য সকল দায়িত্ব থেকে মুক্ত হলো। এমন কি রাজ্য সম্পর্কিত বিষয়াদি টাইটা ও সভাসদের হাতে ছেড়ে দিল এবং সমস্ত মনোযোগ সে তার আসন্ন প্রথম কাজে দিল। একজন শিক্ষানবীশ নিজেকে পরীক্ষার জন্য উপস্থাপনা করার পূর্বে অবশ্যই তাকে তার নিজের ঘোড়ার দল গঠন করতে হবে ও প্রশিক্ষণ দিতে হবে যা তাকে রেড রোডে বহন করবে।

নেফারকে পাল থেকে–যা তারা থেইনে দখল করেছিল ঘোড়াদের একটা দল বেছে নিতে হবে, তারপর রথের সাথে বেঁধে তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সে সোক্কোকে তা পছন্দ করার সাহায্যের জন্যে বলতে পারে। সে শুধু বিখ্যাত সহিসই না বরং সে প্রতিটি আটক প্রাণীকে চেনে। তাছাড়া সোক্কো ছিল সেই পাঁচ জনের এক জন যে গালালায় অংশ নেওয়া রেড রোড যোদ্ধাদের অন্যতম এবং সে নেফারের পরীক্ষা নিতে পারবে। তবে সে ভাগ্য পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না।

আরও একজন ছিল যার কাছে নেফার কিছু গ্রহণ করতে পারবে। টাইটার জ্ঞান, সমঝোতা এবং ঘোড়া ও রথের কৌশল বিষয়ক অভিজ্ঞতা, সোক্কোর চেয়েও যা বেশি প্রজ্ঞার দাবি রাখে, যদিও টাইটা কখনো রেড রোডের যোদ্ধা ছিল না। তার দৈহিক ত্রুটি এবং আধ্যাত্মিকতাই এর কারণ।

প্রথম দিন তারা দুজন পাহাড়ের পাদদেশে সবুজ ভূমির পাশে বসে ঘোড়াগুলো দেখে কাটিয়ে দিল। তারা একত্রে বসে নিচে চলাফেরা রত ঘোড়াগুলোকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করছিল। নেফার একটি চমৎকার সাদা কোল্ট নির্দেশ করতেই টাইটা মাথা নেড়ে নাকচ করে দিল সাথে সাথে। ধূসর বর্ণের প্রাণীগুলো দেখতেই সুন্দর যা। কিন্তু আমি এদের বিষয়ে সন্তুষ্ট নই। আমি যতদূর দেখেছি তাদের প্রাণশক্তি এবং জোর কম থাকে। আমাদের হয় কালো কিংবা অন্য কোন বর্ণের খুঁজতে হবে।

নেফার পুনরায় একটি ধবধবে সাদা ব্লেজকে নির্দেশ করল, কিন্তু টাইটা আবার মাথা নেড়ে তা খারিজ করে দিল। বেদুইনেরা বলে সাদা প্রাণীর দিকে শয়তান কিংবা জ্বীনের দৃষ্টি বেশি নিবদ্ধ হয়। আমি কোন সাদা প্রাণী পছন্দ করতে ইচ্ছুক নই।

তুমি তাদের ঐ সব কথা বিশ্বাস করো?

টাইটা জোরে মাথা ঝাঁকাল। সাদা হচ্ছে কবরের চিহ্ন। তুমি এবং তোমার দলকে অবশ্যই ফারাও এর মতোই দেখতে হতে হবে।

রাত অব্ধি তারা এভাবে কাটিয়ে দিল। পরদিন ভোরে তাদের সাথে ম্যারন এবং রাজকন্যারাও যোগ দিল। তারা ঘোড়া বাছাই করতে লাগল, কিন্তু দুপুর পর্যন্ত কোন কিছুই হল না। এদিকে ঘোড়াগুলো বেশ দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। তারা ওগুলোকে একত্রিত হতে দিল এবং অবশেষে সেগুলো একত্রে ঘাস খেতে লাগল।

আমি ঐ কাল কোল্টটা পছন্দ করছি। নেফার বলল।

ওটা খোঁড়া। ইতোমধ্যে ওটা তার সামনের বাঁ-পায়ে খোঁড়াচ্ছে।

ওটা খোঁড়া নয়। নেফার প্রতিবাদ করল।

ওটার বাম কানটা লক্ষ্য করো। প্রতি পদক্ষেপে তা নিচু হচ্ছে। ম্যারনকে বলল ওটাকে পরীক্ষা করতে।

কিছুক্ষণ পর নেফার একটি কাল রঙের ঘোটকী নির্দেশ করল। তার মাথাটা সুন্দর এবং চোখ দুটো বেশ উজ্জ্বল।

ওটা অধিক শক্তিশালী। তার চোখ দুটো যতোটা না বুদ্ধিদীপ্ত প্রখর তার চেয়ে বেশি নার্ভাস। যুদ্ধক্ষেত্রে ওটা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ম্যারন ইচ্ছে করলে পরখ করে দেখতে পারে।

ঐ লম্বা লেজ এবং পিঠবিশিষ্ট কালো কোল্ট কেমন হবে?

সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে মাত্র ছয়টি ঘোড়া অবশিষ্ট ছিল পর্যবেক্ষণের অপেক্ষায়। বেশ কিছুক্ষণ নীরবে তারা ঘোড়াটা পর্যবেক্ষণ করে গেল।

অবশেষে ম্যাগোস কথা বলল, ওটার মাঝে আমি কোন ত্রুটি খুঁজে পাচ্ছি না। তার দ্যুতিময় চোখ দেখে মনে হয় যেন তার হৃদয় থেকে আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে।

আমি তাকে ক্রুস নামে ডাকবো। নেফার সিদ্ধান্ত নিল। এটা একটি বেদুইন নাম, যার অর্থ আগুন।

হ্যাঁ, নাম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমার জানা মতে কোন চমৎকার ঘোড়ার কুৎসিত নাম হয় না। কেননা ঈশ্বর তাদের নাম দিয়ে চিনবেন। ক্রুসকে তোমার ডান দিকের বাহক রূপে নিবে। কিন্তু এখন বা দিকেরটা খুঁজা প্রয়োজন।

আরেকটি কোল্ট! নেফার উত্তেজিত ভাবে বলে উঠল। কিন্তু টাইটা তাকে থামিয়ে দিল।

না, আমাদের এখন বা-দিকের জন্যে একটি ফিল্লি ঘোড়া দরকার। পরিশ্রমী, যে শক্ত রাস্তায়ও ক্লান্ত হবে না।

তুমি নিশ্চয়ই ইতোমধ্যে ওটা পছন্দ করে ফেলেছে, না-কি? নেফার জিজ্ঞেস করল।

এবং তুমিও। টাইটা মাথা নাড়ল সম্মতিতে। আমরা উভয়েই জানি কোনটি হবে তা।

তাদের দৃষ্টি নির্দিষ্ট ফিল্লিটার উপর নিবন্ধিত হল, ওটা প্রধান সেচ নালাটির কাছে তখন ঘাস খাচ্ছিল, ক্রুস থেকে পুরোপুরি আলাদা দেখতে। যেন প্রাণীটা তাদের কথা শুনতে পেল, মাথা তুলে ওটা তাদের দিকে তার উজ্জ্বল দৃষ্টিতে তাকাল।

ঘোটকীটা খুব সুন্দর, নেফার আনমনে বিড়বিড় করে উঠল। আমি কোন দড়ি ছাড়াই তাকে আয়ত্তে নিতে চাই এবং আমি তা চেষ্টা করতে যাচ্ছি।

সে দাঁড়িয়ে ম্যারনের উদ্দেশ্যে বলল; অন্য ঘোড়াগুলোকে সরিয়ে নাও, শুধুমাত্র ফিল্মিটা ছাড়া।

নেফার ফিল্পিটার কাছে এগিয়ে গেল। ওটার মন ভোলাতে সে সুর করে গান গাইতে লাগল।

এসো, প্রিয়তমা।

প্রাণীটা অস্বস্তিতে নাক ফুসল ঘন ঘন।

সুইট হার্ট, সে আদুরে গলায় বলল। আমার ভালোবাসার ধন।

ঘোটকীটা যেন এক পা এগিয়ে এল। নাকটা উঁচু করল। নেফার এগিয়ে গিয়ে তাকে স্পর্শ করতেই প্রাণীটা লাফিয়ে বিদ্যুৎ বেগে সরে গেল।

বাতাসের মতই তার গতি। ম্যারন বলে উঠল।

ডোভ, নেফার বেদুইন শব্দটা ব্যবহার করল যা উত্তরের বাতাস বুঝায়, মৃদু শীতল হাওয়া শীতকালে প্রবাহিত হয়। ডোভ, এর নাম দিলাম।

.

পরবর্তী দিনগুলোতে তারা প্রাণী দুটোকে বশ মানাতে বিভিন্ন কসরত করে গেল। এমন কি নেফার নাওয়া-খাওয়া ভুলে ওদের পিছনে সময় ব্যয় করতে লাগল। মিনটাকাকে পর্যন্ত পর্যাপ্ত সময় দিল না।

একদিন মিনটাকা অভিযোগের সুরে বলল, আমি ঈর্ষায় পুড়ে মরছি। ইতোমধ্যে তারা আমার চেয়েও তোমাকে দেখি বেশি ভালোবাসতে শুরু করেছে।

তুমি দেখছি আর সব সাধারণ মহিলার মতো করে কথা বলছ।

কথাটা বলেই নেফার একটা শীষ বাজাল। ডোভ মাথা উঁচিয়ে তার দিকে তাকাল এবং তার সাথে মিলিত হতে এগিয়ে এল। আরেকবার শীষ দিতে সও এগিয়ে এল। তারা দুজনে প্রাণীগুলোকে আদর করতে লাগল।

টাইটা তখন কাছে এসে দাঁড়াল। একটি রাজকীয় জোড়া। তারা রেড রোড পাড়ি দিতে যথেষ্ট পরিশ্রম করবে।

হ্যাঁ, ডোভ বাতাসের মতো খামসিন হয়ে গতি তুলবে, দেখো। আনন্দে বলল মিনটাকা।

পরবর্তী দিনগুলোতে তারা প্রাণীগুলোকে রেড রোডের জন্যে প্রস্তুত করতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে গেল। গালালার মরুতে নেফার ও ম্যারনের যুগ্ম অংশ গ্রহণে চলল কঠোর অনুশীলন।

শহরের প্রতিটি লোক দূরে দাঁড়িয়ে তা উপভোগ করল। তারা কখনও হাত তালি কিংবা কখনও বাকহারা! ধ্বনিতে উৎসাহ দিল তাদের। ঘোড়াগুলোও দ্রুত প্রশিক্ষণ নিল, যা তাদের মিশরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঘোড়ায় পরিণত করল।

*

দূর্গ শহর গালালায় মাত্র পাঁচজন যোদ্ধা ছিল যারা রেড রোড এ অংশ নিয়েছে। হিল্টো, শাবাকো, সোক্কো, টিমোস এবং টরান। আরও অনেকেই চেষ্টা করেছিল কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে এবং কেউ কেউ জীবন পর্যন্ত দিয়েছে। গালালা হচ্ছে সেই স্থান যেখানে লর্ড ট্যানোস তার মিশরের শত্রুদের ধ্বংস করেছিলেন এবং শহরটির চত্বরে তাদের অনেকের মস্তক ছিন্ন করেন। মাঝ রাতের পর হিল্টো একটি সাদা ষাঁড়কে তাড়িয়ে শহরের বাইরে সরু টানেলটার নিকট নিয়ে এল। যা শহরের বাইরে কবরস্থানের ভেতর দিয়ে চলে গেছে। সে প্রাণীটিকে একটি পাথরের বেদীর উপর রেখে বলি দিল, যা পূর্ব থেকে প্রস্তুত করা ছিল।

মশালের আলোতে জ্বলজ্বল করে উঠল প্রবাহিত রক্ত ধারা। তখন পাঁচ যোদ্ধা তাদের তরবারী তাতে ঢুবাল এবং গোপনে ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা করল যেন তাদের ত্যাগ তিনি গ্রহণ করেন এবং তাদের পথে তিনি সাহায্য করেন। তারা ফারাও নেফার সেটি এবং তার সঙ্গীর জন্যে তাদের উদ্দেশ্য সফল করতে বিবেচনার জন্যেও আবেদন করল।

ভোরের আলো তখনও ভালোভাবে ফুটেনি, গোলাপি আভায় ভোরের তারা বিদায় নিচ্ছে এমন সময় শাবাকো এগিয়ে এসে তাদের দীক্ষা নিতে গোপন সভাকক্ষে যাবার জন্যে বলল।

তারা তাকে টানেলের ভেতর দিয়ে পাথরের লাইন বরাবর অনুসরণ করে গেল। মশালের আলোয় মমির রং করা শবাধারগুলো জ্বলজ্বল করছিল। যার ভেতর পাঁচ শত বছরের পুরানো পুরুষ ও মহিলাদের মৃত দেহ রয়েছে। বাতাস ছিল শুষ্ক ও ঠাণ্ডা। মাটি ও মাশরুমের ভ্যাপসা গন্ধ তাদের নাকে বারবার ধাক্কা দিচ্ছে। তাদের পদ শব্দ আবদ্ধ স্থানটায় প্রতিধ্বনি তুলল। বাতাসে একটা ফিসফিসানির গুঞ্জন গায়ে কাঁটা দিল সবার। সম্ভবত ওগুলো মৃতদের কষ্ঠ কিংবা বাদুরের ডানার ঝাঁপটানির আওয়াজ হয়ে থাকবে।

তারা কক্ষটায় প্রবেশ করতেই তাজা রক্তের গন্ধ পেল, যা তাদের পায়ের সাথে লেগেছিল যখন ষাঁড়টা জবাই করা হয় এবং তারা তা মাড়িয়ে এসেছে। দেয়ালের চর্তুদিকে তাদের মশালের আলো কিরণ ছড়াতে লাগল।

কে এই রহস্যে প্রবেশ করেছে। হিল্টোর কষ্ঠ বলে উঠল, কিন্তু তার মুখটা আচ্ছাদিত।

আমি নেফার সেটি।

এবং আমি ম্যারন ক্যামবাসিয়েস।

তোমরা কি রেড রোডে অংশ নিতে ইচ্ছুক?

আমরা তা করতে চাই।

তোমরা কি কোন শুদ্ধ দ্বন্দ্ব যুদ্ধে তোমাদের প্রথম প্রতিপক্ষকে হত্যা করেছো?

আমরা তা করেছি।

কোন যোদ্ধা কি আছেন যে তোমার স্পন্সর হবে, নেফার সেটি?

আমি সেই স্পন্সর। শাবাকো তার উদ্দেশ্যে বলে উঠল।

এবং তোমারও কি কোন যোদ্ধা আছেন যে তোমার স্পন্সর হবে, ম্যারন। ক্যামবাসিয়েস?

আমি তার স্পন্সর। সোক্কো জবাবে বলল।

দীক্ষা পর্ব শেষ হলে নেফার এবং ম্যারন প্রথম গ্রেডে পদার্পণ করল।

বঁড়টির রক্তের নামে এবং আগুন, যা তার শক্তি, তোমরা দেবতার শিক্ষা নবীশ রূপে গৃহীত হলে। যদিও এখনও তোমরা পূর্ণাঙ্গ যোদ্ধা, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় গ্রেডে অধিষ্ঠিত হওনি, রেড রোডের পূজারী রূপে যোগ্য হও নি, এমনকি তার গোপন নাম অর্জনে। তোমরা শুধু সে অধিকার পেলে রোড এ অংশ নেবার চেষ্টা চালাতে যা ঈশ্বর তোমাদের জন্যে নিবেদন করেছেন এবং তা জেনে যে তা মৃত্যুর কারণ হতে পারে, তোমরা কি সে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছো?

হ্যাঁ, আমরা তা করছি।

*

পরের দিনগুলোতে টাইটা তাদের বিভিন্ন কৌশল রপ্ত করতে প্রশিক্ষণ দিয়ে গেল। রথগুলোর নিয়ন্ত্রণটাই ছিল প্রধান এবং সেই সাথে গতি। দশটি রথ সহযোগে তারা মরুতে কঠোর অনুশীলণে ব্যস্ত রইল।

মিনটাকা মেরিকারাকে মরুতে নিয়ে এল নিজেদের রথ চালিয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দেখতে।

প্রথম দিকে ক্রুস ও ডোভ ঠিক মতো ছন্দ মেলাতে পারছিল না। কিছু সমস্যা ছিল তাদের যা টাইটা বাতলে দিল নেফারকে। দুদিন ধরে নেফার প্রাণী দুটোকে বারবার তা শুধরাতে প্রশিক্ষন দিয়ে গেল।

দশম দিনে টাইটা পাহাড়ের চূড়ায় বসে তাদের প্রশিক্ষণ দেখছিল, সারি বাঁধা টার্গেট যেখানে রথ ছুটে যাবে। ক্রুস দূর থেকে রঙ করা বৃত্তটা দেখল এবং অস্থির ভাবে কান নাড়তে লাগল। কিন্তু ছোটার পূর্বে নেফার নীল শব্দটা উচ্চারণ করল জোরে, যা ক্রুসের প্রতি নেফারের একটা সংকেত ছিল নির্দিষ্ট টার্গের বরাবর ছুটতে।

ভোব এবং ক্রুস দ্রুত গতি তুলল, এক সময় মনে হল তারা পাল তুলে যেন উড়ছে। টার্গেটের নিকটবর্তী হয়ে নেফারের প্রথম বর্শাটি লাল বৃত্তের নির্দিষ্ট অংশে বিদ্ধ করল সরাসরি। সবাই হাত তালি দিয়ে উঠল।

*

তার পরদিন টাইটা গুণে বসানো নেফারের তীরের খাঁজটা পরখ করল। নেফার তখন হলুদ পতাকা সংযুক্ত লক্ষ্যটা দেখছিল যা তাদের কাছ থেকে দুইশ কদম সম্মুখে স্থাপন করা। পতাকাটি উড়ছিল, এক মুহূর্তের জন্যে ওটার উপর দিয়ে মরুর তপ্ত হাওয়ার একটা ঝটকা বয়ে গেল। নেফার তীরটা ছেড়ে দিল এবং বাতাসে ওটা নিজেকে ভাসিয়ে দিল অলসভাবে। তীরটি তার লক্ষ্যের শীর্ষে পৌঁছে গেল এবং এটি তার পতন শুরু করতেই বাতাস টাইটার গালে আবার ঝাঁপটা দিল।

তীরটাও বাতাস অনুভব করল এবং প্রত্যক্ষ ভাবে উড়ার দিক পরিবর্তন করল। এটা লক্ষ্যের দিকে পড়ল, এবং লাল লক্ষ্য বস্তুটার কাছ থেকে তিন হাত দূরে পড়ল।

এই প্রতারক বাতাসের উপর সেথ বমি করুক! নেফার অভিশাপ দিল।

হালকা তীর এটা বেশি অনুভব করবে। টাইটা বলল এবং হেঁটে ছোট এক্কা গাড়ির কাছে ফিরল যা অতিরিক্ত ধনুক ও তীরের খাপ বহন করছে। চামড়ার খাপে মোড়ানো দীর্ঘ বান্ডিল নিয়ে সে ফিরল।

না! নেফার বলল, সে টর্কের বিশাল যুদ্ধের ধনুকটা তখন খুলল। এটা আমাকে আরো ভালো করে!

কখন তুমি এটি টানার শেষ চেষ্টা করেছো? টাইটা তাকে জিজ্ঞেস করল।

যে দিন আমরা এটা মাটির নিচ থেকে বের করলাম। জবাব দিল নেফার।

তোমার জানা উচিত। তুমিও সেখানে ছিলে।

তা ছমাস আগের কথা, টাইটা বলল এবং তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে নেফারের নগ্ন বুকে ও বাহুতে নজর বুলালো। মাংসেপেশী বাঁকানো, সিডার কাঠের ন্যায় শক্ত হয়ে গিয়েছে। সে ধুনকটা তার হাতে দিল।

বিষণ্ণভাবে নেফার ওটা নিয়ে তার হাতে ঘুরালো। সে দেখল এটা মেরামত করা হয়েছে। ধাতুর সুন্দর তার তাতে বাধা হয়েছে এবং তা চকচক করছিল। ধনুকের গুণটা নতুন, সিংহের সামনের পায়ের পেশী তম্ভ শুকিয়ে পাকানো হয়েছে। যততক্ষণ না ওগুলো ব্রোঞ্জের মত শক্ত অনমনীয় হয়েছে।

অসম্মতি তার ঠোঁটে আবার উঠল কিন্তু তারা বেরোলো না কারণ টাইটা তাকে দেখছিল। সে ধনুকটা তুলল এবং জায়গামত তীর না লাগিয়ে তা টানার চেষ্টা করল। অর্ধেক কিউবিট টানার পর তার বাহু জমে গেল এবং মাংসপেশী বুকে আড়া আড়ি শক্ত হয়ে গেল, তবু তা আর নড়ল না। সর্তক ভাবে নেফার চাপটা ছেড়ে দিল এবং ধুনকের গুণ বিশ্রাম নিতে ফিরল।

আমাকে এটা ফিরিয়ে দাও। টাইটা তার থেকে অস্ত্রটা নিতে হাত বাড়াল। তোমার না আছে শক্তি, না রয়েছে সংকল্প।

নেফার তার হাত থেকে ঝাঁকি দিয়ে তা সরিয়ে নিল এবং তার ঠোঁটগুলো চিকন ও সাদা হয়ে গেল, চোখ ঝলসে উঠল। তুমি সব কিছু জান না, বৃদ্ধ মানুষ, যদিও তুমি মনে কর যে সব জান।

সে গাড়ির কাছে পৌঁছে তাকের উপর রাখা খাপ থেকে টর্কের সীল আঁকা দীর্ঘ ভারি তীর গুলোর একটা টেনে নিল। ধনুকটার মত এটাও সমাহিত রথ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সে দীর্ঘ পদক্ষেপে তীর ছোঁড়ার স্থানে ফিরল এবং তার অবস্থান নিল। সে তীরটা লক্ষ্য স্থির করল। তার বক্ষ ফুলে উঠল এবং একটা বড় নিঃশ্বাস নিল সে। একটা চোখ চেপে সে টানতে শুরু করল। ধীরে ধীরে টেনে গুণটার মধ্যবর্তী স্থানে তীরটি নিয়ে এল। বিতৃষ্ণার একটা শব্দ করল সে এবং তার শ্বাস তার গলা দিয়ে শাঁ শাঁ আওয়াজ করে বের হল, তার বাহুর মাংসেপেশী গুলো উঁচু ও শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে এবং সে তা পূর্ণ টেনে আনল, গুণটাকে একজন প্রেমিকের মত চুমু খেল তারপর। ঐ একই সময় সে ওটা ছেড়ে দিল এবং ভারি তীরটা লাফ দিয়ে চলে গেল। লক্ষ্যের অনেক উপর দিয়ে ওটা উড়ে গেল, গেল এবং দ্বিগুণ দূরে গিয়ে পড়ল। তারপর পাতলা মাথাটা দূর পাহাড়ে আঘাত করে উজ্জ্বল স্ফুলিঙ্গ তৈরি করল এবং আঘাতের ভয়ংকর শক্তিতে বানটা মট করে ভেঙ্গে গেল।

নেফার অবাক হয়ে তীরটার পিছনে চেয়ে রইল। টাইটা বিড়বিড় করে বলল, সম্ভবত তুমি ঠিক।

নেফার ধনুকটা ফেলে দিল এবং তাকে জড়িয়ে ধরল। তুমি যথেষ্ট জান, বৃদ্ধ পিতা; সে বলল। যথেষ্ঠ আমাদের সবার জন্য।

*

টাইটা এরপর নেফার ও ম্যারনকে মরুভূমিতে নিয়ে গেল, তিন দিন ধরে রুক্ষ ও সুন্দর ভূমিতে ভ্রমণ করল তারা। সে তাদের লুকানো উপত্যকায় নিয়ে গেল যেখানে কালো তরল পাহাড়ের গভীর খাজ দিয়ে চুঁইয়ে পড়ে। এটা সেই পুরা আঠালো বস্তু যা তারা থেইনে ঘোড়া দখলের সময় শিয়ালের পশমি লেজে মেখেছিল।

তারা তাদের সাথে আনা মাটির পাত্রগুলো পূর্ণ করল এবং গালালার কর্মশালায় ফিরল। টাইটা কালো তরল বিশোধন করে ধীর আগুনে তা ফুটালো যতোক্ষণ না এটা সুন্দর সিল্কের মত পিচ্ছিল হল। এটা চাকার নাভি গোলককে পিচ্ছিল, মসৃণ ও দীর্ঘস্থায়ী করবে, শূকর চর্বি বা অন্য কোন বানানো তেল থেকে বেশি। এটা তোমাকে প্রতি হাজারে পঞ্চাশ কদম বেশি সহায়তা দিবে। সম্ভবত সফলতা ও ব্যর্থতার মধ্যে পার্থক্য এনে দিবে, অথবা এমনকি জীবন ও মরণের মধ্যেও।

নেফার রেড রোডে রাজকীয় রথটা চালানোর ইচ্ছা পোষণ করল, কিন্তু টাইটা তাকে উল্টো জিজ্ঞেস করল, তুমি কি সত্যিই একটা সোনার শবাধারে চড়তে চাও?

সোনার কারুকার্যের ওজন মাত্র দুই টেল। তুমি নিজেই ওটাকে বেশি ভারি করেছে।

এটা তখন দুইশ হবে যখন তুমি সেখানে বেরিয়ে যাবে।

টাইটা ১০৫টা রথের প্রত্যেকটির কাছে গেল যেগুলো তারা বালির নিচ থেকে উদ্ধার করেছে। তাদের মধ্য থেকে দশটা সে বাছাই করল এবং তাদের খুলে ফেলল। সে কাঠামো ওজন করল এবং যানগুলোর প্রতিটি জোড়ার শক্তি পরীক্ষা করল।

সে চাকাগুলো তাদের নাভি গোলকে ঘোরালো, চোখের মাপে তাদের ঘূর্ণনের নূন্যতম কম্পন বিচার করল। অবশেষে সে তার চূড়ান্ত পছন্দ করল।

সে পছন্দ করা যানের নাভিগোলক বদলে দিল যাতে চাকাগুলো একমাত্র ব্রোঞ্জের পিন দ্বারা ধরে রাখা যায় যেটা হাতুড়ির এক আঘাতেই বের করতে পারা যায়। সে রথটা আবার জোড়া দিয়ে ড্যাশবোর্ড এবং পাশের প্যানেল বাদলে দিল। অতিরিক্ত বিন্দু পরিমাণ ওজন থেকে এটাকে মুক্তি দিল সে। ড্যাশবোর্ড ও প্যানেলের সাহায্য ছাড়া রথীদের সম্পূর্ণ তাদের নিজের ভারসাম্যতা জ্ঞানের উপর নির্ভর করতে হবে এবং রশির একটা ভাঁজ পাদানিতে লাগানো রইল যা তাদেরকে সবচেয়ে রুক্ষ ভূমিতে দৃঢ় রাখতে সাহায্য করবে। সব শেষে সে চাকার চক্র দন্ডে তেল লাগালো যা মরুর কুয়া থেকে আনা কালো গ্রীজ দিয়ে তৈরি করেছে সে।

টাইটার অধীনে তারা প্রতিবারে হার্নেসের এক ইঞ্চি সেলাই করে গেল, এবং মিনটাকা, মেরিকারা ও তাদের দাসীরা অনেক রাত পর্যন্ত সেলাই করল এবং দ্বিতীয় বার সেলাই করল জোড়া ও বাইনগুলোকে।

তারপর তারা অস্ত্র পছন্দ করল যা তারা বহন করবে, বল্লমগুলো ও তীরগুলো বের করে ঘুরিয়ে দেখল, একটা বিশেষ ভারসাম্য তাদের বোর্ডে ঝুলছিলো যা টাইটা নকশা করেছে, বাট অথবা মাথার সামঞ্জস্যতা পরখ করল তারা। তীরের ডগা উক্ষি করা হল যাতে তারা লক্ষ্য বস্তু কামড়ে আকড়ে ধরতে পারে। তারা তাদের স্যান্ডেলে পুনরায় সোল লাগাল এবং কাঠি দিয়ে ব্রোঞ্জর কীলক পূর্ণ করল। তাদের সম্মুখ বাহু রক্ষা করতে ও ধনুকের গুণের ও বল্লমের চামড়ার ফালির আঘাত থেকে রক্ষা পেতে তারা নতুন চামড়ার বন্ধনী তৈরি করল। তারা প্রত্যেকের জন্য তিনটি করে তলোয়ার বাছাই করল কারণ অনেক সময় ব্রোঞ্জের ফলা যুদ্ধের তাপে মট করে ভেঙে যায়। তারা প্রান্তগুলো ধার দিল, তারপর ঝামা পাথরের পাউডার দিয়ে ঘষল, যতোক্ষণ না ওটা দিয়ে তারা তাদের নিজেদের বাহু থেকে চুল শেভ করতে পারল। তারা অতিরিক্ত ধনুকের গুণগুলোর পরিচর্যা করল ও পাকালো, তাদের কোমরে তা বাঁধা বেল্ট হিসেবে তারা বহন করবে। চামড়ার হেলমেট ও আটসাট জামা ছাড়া তারা রাস্তায় অন্য কোন বর্ম পড়বে না। এসব তাদের ওজন কমাবে যাতে ডোভ ও ক্রুসের সুবিধে হবে। তারা কামার শালার বন্ধ দরজার পিছনে কাজ করল যাতে অনন্যরা তাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে না পারে।

কিন্তু অন্য কিছু চেয়ে সর্বোপরি তারা প্রশিক্ষণ নিল ও অনুশীলন করল। তাদের শক্তি ও তেজ গড়ে তুলল এবং সেই সাথে ঘোড়াগুলোর বিশ্বাস।

ডোভ ও ক্রুসের জন্য অগ্নি পরীক্ষার আগুনটাই হবে সবচেয়ে খারাপ। তারা কাঠের আটি ও শুকনো খড়ে সাজিয়ে তাদের নিজেদের আগুন বাইরে মরুতে তৈরি করল। ঘোড়াগুলোকে আগুন দেখতে দিল এবং সেই সাথে ধোয়ার গন্ধ নিতে, তারপর তাদের চোখ বেধে দিল। যদিও প্রথমে ক্রুস বাধা দিল এবং ভয়ে আওয়াজ করল, শেষ দিকে সে অন্ধ হয়ে দৌড়াৰে তার পিঠের লোকটির উপর ভরসা করে মচমচে অগ্নি শিখার কাছাকাছি থেকে, যেমনটা তারা তার নাম রেখেছে।

মিনটাকা ও মেরিকারা নতুন তৈরি করা হাথোরের মন্দিরে অপেক্ষারত দিন গুলির দীর্ঘ সময় ব্যয় করল তাদের জন্যে প্রার্থনা করে ও দেবীদের কাছে তাদের জীবন ভিক্ষা চেয়ে যেন তাদের প্রিয় মানুষগুলো ভালোভাবে ফিরে আসে।

*

হুরাসের পূর্ণিমার পঁয়ত্রিশ দিন পূর্বে একটি অদ্ভুত ক্যারাভান দল গালালায় এসে উপস্থিত হল। এটি উপকূল থেকে এসেছে, সেই দূর সাফাগা বন্দর থেকে। এর নেতৃত্বে ছিল একজন এক চোখা কানা এবং এক হাত বিশিষ্ট বিশালাকায় দৈত্য, যার নাম আর্টেলা। শহরের দেয়ালের বাইরে থাকতেই রেড রোডের পাঁচজন যোদ্ধা তার সাথে সাক্ষাৎ করতে এগিয়ে গেল এবং তাকে গালালায় সম্মানের সাথে আমন্ত্রণ জানালো, কেননা সে ছিল তাদের তৃতীয় গ্রেডের ভ্রাতা যোদ্ধা, যে প্রায় ত্রিশ বছর আগে তাদের সাথে রেড রোড দৌড়িয়েছে। বিশ বছর আগে ফারাও ট্যামোসের লিবিয়া অভিযানের সময় তার চোখের মধ্যে একটা তীর বিদ্ধ হয় এবং তার পাঁচ বছর পর একজন নুবিয়ান কুঠারবিদ এক কোপে তার কুনুই থেকে নিচের অংশ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

আর্টেলা বর্তমানে একজন ধনী ব্যক্তি। সে একটি সার্কাস পার্টির মালিক, যারা বিভিন্ন স্থানে ঘুরে মানুষকে বিনোদন দেয়। তার দলে বিভিন্ন কৌশল, দক্ষতার পুরুষ ও মহিলারা রয়েছে। তার এক দল মহিলা আছে যাদের ধরা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী মেয়েলোক। এর মাঝে একজন রয়েছে যে এক বারে দুটি ঘোড়াকে এক সাথে দূরে নিক্ষেপ করতে পারে এবং আরেকজন রয়েছে সে ব্রোঞ্জের দন্ডকে কামড়ে বাঁকা করে পিন্ডে পরিণত করে ফেলে। আরেক মেয়েলোকের পৃথিবীর সেরা সুন্দরী রূপে খ্যাতি রয়েছে এবং খুব কম লোকই তার দিকে দীর্ঘক্ষণ চেয়ে থাকতে পারে। তাকে সেই উত্তর থেকে নিয়ে আসা হয়েছে সেখানে প্রায় সারা বছর নদী সাদা পাথরে পরিণত হয়ে থাকে। তার মুখের পর্দা সরিয়ে তাকে দেখার জন্যে আর্টেলা দশ টেইল রূপার মূদ্রা দাবি করে থাকে। দেহের অন্যান্য অংশ প্রদর্শনেও রয়েছে বিভিন্ন মূল্য, যা কেবল ধনীদের দ্বারাই সম্ভব।

এছাড়া আর্টেলার অধীনে আরও একটি কালো দাস মেয়ে আছে যে অগ্নি ভক্ষন। করতে পারে এবং আপাদমস্তক সে জীবন্ত বিচ্ছু ভর্তি ঢালার মাঝে নিজেকে ঢুকিয়ে রাখার সাহস দেখায়। সে তার গলায় একটি অজগর সাপ পেঁচিয়ে রাখে এবং তার খেলা প্রদর্শনের এক পর্যায় সে নগ্ন হয়ে সাপটির লেজ তার গোপন অঙ্গ দিয়ে জরায়ুর ভেতর ঢুকিয়ে দেয়।

এগুলো হচ্ছে আর্টেলার সার্কাসের আকর্ষণ, যা দর্শকদের মজা দিয়ে থাকে। এছাড়া আরো একটি আকর্ষণ রয়েছে যা নিয়ে সে গর্ব করে তা হলো তার চ্যাম্পিয়নরা–এক দল যোদ্ধা, কুস্তিগীর এবং তলোয়ারধারী। যারা যে কারো সাথে দ্বন্দ্ব যুদ্ধে অংশ নিতে বসে থাকে। আর্টেলা এক টেইল স্বর্ণ বাজী রাখে যারা তাদের যে কাউকে হারাতে পারবে তার জন্যে। অনেকেই আগ্রহ দেখায়, কিন্তু এ পর্যন্ত কেউ তাদের পরাজিত করতে পারেনি এবং আর্টেলার সম্পদ এভাবে ক্রমশ বেড়েই চলেছে। যদিও আজকাল সে নিজে কোন লড়াই এ অংশ গ্রহণ করে না, তবুও সে যুদ্ধ হৃদয়ের মানুষ এবং রেড রোডের জন্য নিবেদিত প্রাণ।

তাই যখনই তার কানে পৌঁছেছে যে ফরাও ট্যামোসিয়ান সাম্রাজ্যের কেউ রেড রোডে অংশ নিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে তার এই চ্যাম্পিয়নদের প্রায় অর্ধ পৃথিবী ঘুরিয়ে এখানে নিয়ে এসেছে তার বিপক্ষে অংশ নিতে। সে এই খেলাটা পছন্দ করে, আর তাই এ জন্যে কোন খরচা নিতেও সে ইচ্ছুক নয়, উপভোগ করাটাই মূল উদ্দেশ্য।

তার যোদ্ধা ভ্রাতারা প্রাচীন শহরটির এক স্থানে তার ও তার দলের জন্য একটি স্থান প্রস্তুত করে দিল এবং পর দিন তাদের সম্মানে এক ভোজের আয়োজন করা হল, সেখানে শুধু নেফার ও ম্যারনকে নিমন্ত্রণ করা হল না। এর কারণ আর কিছুই নয়, প্রতিযোগীতার পূর্বে প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরিচয় না ঘটানো আর কি।

পরের দিন থেকে আর্টেলার বাহিনী ধারাবাহিক কঠোর অনুশীলনে নেমে পড়ল। যাই হোক টাইটা তার কাছে অপরিচিত কেউ ছিল না। যেদিন আর্টেলা তার বাহুটা হারাল এবং তা আক্রান্ত হয়ে পচন ধরেছিল এবং তার জীবন মরণাপন্ন, তখন টাইটা এগিয়ে এসে সঠিক চিকিৎসা দেওয়ায় সে অল্পতে রক্ষা পায়। আর্টেলা তাই তাকে তাদের অনুশীলন পর্বে আমন্ত্রণ জানাল এবং সবচেয়ে রূপবতী মেয়েটি তার সেবায় শরবত নিয়ে এল। মেয়েটি টাইটাকে দেখল তার সেই সর্বনাশা মনোহরী দৃষ্টি নিয়ে।

আলোচনার প্রথমে আর্টেলা তাকে সর্বশেষ সংবাদটা দিল যা সে আসার সময় জেনে এসেছে। মিশরীয়দের মেসোপটেমিয়ার অভিযান সম্বন্ধে। যতোদূর সে জেনেছে রাজা সারগন ও তার আর্মি বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবং রাজধানী ব্যাবিলিয়নের দেয়ালের ভেতর অবস্থান করছে। এখন তার পতন শুধু সময়ের ব্যাপার। তারপর জয় শেষে ফারাও এর আর্মি শীঘ্রই মিশর ফিরবে এবং গালালার এই ক্ষুদ্র বাহিনী যা তার সাম্রাজ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ তা উচ্ছেদ করতে মনোনিবেশ দিবে। যখন সে এ কথাটা বলল তার চেহারাটা অর্থপূর্ণ দেখাল, যা তার এই প্রাক্তন বন্ধুর জন্যে সময়াচিত সতর্কতার প্রকাশ বৈকি আর কিছু না।

যখন তারা কুশনে হেলান দিয়ে এসব ছাড়াও অন্যান্য বিষয়াদি যেমন রাজনীতি, ক্ষমতা, যুদ্ধ, ওষুধ, যাদু এবং দেবতারদের নিয়ে আলোচনা করল, টাইটা তখন আর্টেলার বাহিনীর অনুশীলন চুপিসারে অবলোকন করে গেল। এই চ্যাম্পিয়ানরা বেঁচেই আছে প্রতিপক্ষকে হত্যার মধ্য দিয়ে এবং এটাই তাদের একমাত্র আরাধনা।

সন্ধ্যা বেলা টাইটা কক্ষে ফিরে দেখতে পেল নেফার ও ম্যারন তার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আমি তাদের অনুশীলন দেখেছি এবং আমি তোমাকে সতর্ক করতে চাই এই বলে যে আমাদের আরো অধিক অনুশীলন করতে হবে টিকে থাকতে চাইলে। সে বলল, আর মাত্র হাতে গুনা কয়টা দিন বাকী রয়েছে।

আমাদের খুলে বল, বৃদ্ধ পিতা। নেফার বলল।

প্রথমে যার কথা বলতে হয় সে হল পোলিওস, কুস্তিগীর… টাইটা বলে গেল, এবং তার শক্তি ও কৌশল অন্য সবার চেয়ে আলাদা। দ্বন্দ্ব যুদ্ধে তার সমকক্ষ আর কেউ না। তারপর সে তার দূর্বলতাটাও বর্ণনা করল, সে খুঁজে পেয়েছে।

*

প্রতিযোগিতার দশ দিন পূর্বে হিল্টো এবং শাবাকো শহরের সবাইকে ইশতেহার পাঠ করে শোনাল। তারা প্রতিযোগিতার যাবতীয় নিয়ম ও ধারাবাহিকতা বর্ণনা করল বিস্তারিত ভাবে।

কুস্তির অগ্নি পরীক্ষায় ফারাও নেফার সেটি লড়বে উর এর পোলিওসের সাথে। জনতা পোলিওসের নাম শুনে হর্ষধ্বনি দিয়ে উঠল। কেননা সে বিখ্যাত এবং সবাই তার সম্বন্ধে জানে। তার ডাক নাম ব্রেক বেকার। সম্প্রতি সে দামেস্কে একজন লোককে হত্যা করেছে, রিং এ–যে তার সতের তম শিকার।

ম্যারন ক্যামবাসিয়েস লড়বে নুবিয়ার সিগাসার সাথে। তাকেও ভালোভাবে চেনে সবাই। লোকজন তাকে কুমীর বলে ডাকে। কারণ কিছু অদ্ভুত রোগে তার দেহের চামড়া শক্ত, খসখসে, উঁচু-নিচু ও কাল হয়ে গিয়েছে। যার ঘষা খেলে যে কারো দেহ ছিঁড়ে যাবে।

তলোয়ার যুদ্ধের অগ্নি পরীক্ষায় ফারাও নেফার সেটি তাওরিনের খামার সাথে লড়বে।

ম্যারন লড়বে ইন্দাসের ড্রোসার সাথে।

ঐ রাতে মিনটাকা ও মেরিকারা দেবীর উদ্দেশ্যে একটি সাদা ভেড়া বলি দিল এবং কেঁদে তাঁর কাছে তাদের প্রিয় মানুষদের রক্ষা করার জন্যে প্রার্থনা জানাল।

*

রেড রোড দৌড়ানোর সাতদিন পূর্বে পাঁচ যোদ্ধা তাদের চিহ্ন রেখা স্থাপন করল। কেউ, যে একজন রাজার বিনুণী করা চুলের গোছা কেড়ে নিতে পারবে, সে-ই অমরত্ব প্রত্যাশা করবে। হিল্টো তাদের অবগতি করল যে এক খন্ড বিনুণী করা চুলের গোছা পাঁচ কিউবিট উঁচুতে বাঁধা থাকবে এবং যে প্রথমে ওটা কেড়ে নিবে কৃতিত্ব তার। সে পাঁচ হাজার টেইল স্বর্ণ পাবে, যা কোন চমৎকার এলাকা কেনার জন্যে যথেষ্ট, যখন সে তার নিজ ভূমে ফিরে যাবে। সেই সাথে পুরস্কার হিসেবে সে রেড রোডের যাবতীয় অস্ত্র নিজের জন্য পাবে। পাঁচ যোদ্ধাকে একে একে হারিয়ে চূড়ান্তে পৌঁছাতে হবে এবং শুরুটা হবে কেন্দ্রীয় চত্বর হতে।

*

প্রতিযোগিতার সাত রাত পূর্বের রাতে মিনটাকা নেফারকে তার বাহুতে নিতে অস্বীকৃতি জানাল। আমার ভালোবাসা তোমাকে দুর্বল করে দিতে পারে।

হুরাসের পূর্ণিমার একদিন আগে সবাইকে বিশ্রাম নিতে আদেশ করল টাইটা। ডোভ এবং ক্রুসকে ঝর্ণার ধারে মাঠে নীরবে চরতে দেখা গেল। মেরিকারা এক ঝুড়ি কমলা, দুররা কেক ও অন্যান্য ফল নিয়ে ঝর্ণার ধারে ম্যারনের পাশে বসে ঘোড়া দুটোকে দেখছিল। মেরিকারা হাঁটুগেড়ে তার পিছনে বসে চুলগুলো বিনুণী করে দিচ্ছিল পিঠের উপর দিয়ে। সে তার মুখটা ম্যারনের চুলের ভেতর গুঁজে দিল, এক অদ্ভুত ভালো লাগায় সে রাঙা হল। এতো সুন্দর সুবাস। কোন কিছুই যেন আমার কাছ থেকে তোমাকে কেড়ে নিতে না পারে।

যদি আমি সফল হই তবে আমাকে কি দিয়ে পুরস্কৃত করবে তুমি? ম্যারন

তার মাথা বুকে টেনে নিয়ে জিজ্ঞেস করল।

আমি তোমাকে এমন পুরস্কার দেবো যা তুমি স্বপ্নেও ভাবনি। সে হেসে বলে উঠল।

আমি এই স্বপ্নে বেঁচে থাকবো। সে তাকে আশ্বস্ত করে বলল। আমি আমার জীবনের প্রতিটি রাতে এই স্বপ্ন দেখি।

*

প্রতিযোগিতার দিন সকালে টাইটা নেফারকে জাগাতে এল। সে তখনও হাতের উপর মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিল। টাইটা তাকে স্পর্শ করতেই সে উঠে বসল। চুলের বিনুণী করা মোটা গোছাটা যা মিনটাকা বেঁধে দিয়েছে তা তার কাঁধের নিচ পর্যন্ত নেমে গেছে। টাইটার দিকে দৃষ্টি ফেরাতেই সে শক্ত হয়ে গেল, তার মনে পড়ল আজকের দিনটা কত কঠিন এবং বৃদ্ধ তারই উৎকণ্ঠায় অধির। আজ সকালের পরিবেশটাও যেন এক অদ্ভুত বিষণ্ণ।

দেয়ালের উপর দিয়ে যখন সূর্যোদয় হল, দশটি রথকে তখন চত্বর ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। পুরো শহর জনতার হর্ষ ধ্বনিতে উৎসব মুখর। কেউ ড্রাম বাজাচ্ছে, কেউ শিষ দিচ্ছে, মহিলারা ফুল ছুঁড়ে মারল তাদের উদ্দেশ্যে, কিন্তু যোদ্ধারা সবকিছুকে ছাপিয়ে নির্লিপ্ত রইল।

নেফার এবং ম্যারন হালকা বর্ম পরিধান করেছে এবং তাদের শরীর তেল দিয়ে। রাখা কুস্তি লড়তে। টাইটা এগিয়ে যেতেই তারা রথ থেকে নেমে তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসল। সে তার হাত তাদের মাথার উপর তুলে হুরাস এবং রেড গডের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করল তাদের আশীর্বাদ এবং সুরক্ষার জন্য। সবশেষে সে তার নিজের গলা থেকে মাদুলি সহ নেকলেসটি খুলে নেফারের গলায় পড়িয়ে দিল। এই কবজটা টাইটা ছাড়া আর কেউ কোন দিন স্পর্শ করেনি।

তারপর হিল্টো, মাথায় লাল টুপি পরিহিত যা থার্ড গ্রেডের প্রতীক, একটি পাথরের বেদীর উপর উঠে দাঁড়াল এবং যাবতীয় নিয়মাবলি বর্ণনা করল উঁচু গলায়। পাঠ শেষে সে গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, তোমরা কি সবকিছু বুঝতে পেরেছে এবং রেড রোডের নিয়ম মেনে তাতে অংশ নিতে কি ইচ্ছুক?

রেড গডের নামে আমরা রাজি। নেফার জবাবে বলল।

কে চুলের বিনুণী করা গোছা কাটবে? হিল্টো জিজ্ঞেস করল। মিনটাকা ও মেরিকারা পিছন থেকে এগিয়ে এল তখন। মিনটাকার চোখের পাতা ফুলা, সারা রাত সে ঘুমাতে পারেনি। দুজনেই তারা উদ্বিগ্ন এবং ভয়ে বিবর্ণ। নেফার ও ম্যারন মাথা নত করতেই এই দুতরুণী তাদের মাথা থেকে বিনুনী করা চুলের গোছা ছুরি দিয়ে কেটে নিল এবং হিল্টোর হাতে তুলে দিল তা।

হিল্টো সেগুলো তখন তাদের রথের পাদানিতে স্থাপিত পতাকার দন্ডের উঁচুতে বেঁধে দিল। এগুলোই ট্রফি, যা তাদের জীবন দিয়ে রক্ষা করতে হবে যেন বিপক্ষের প্রতিযোগী তা ছিনিয়ে নিতে না পারে।

তোমাদের রথে চড়! হিল্টো নির্দেশ দিতেই নেফার ও ম্যারন পাদানিতে লাফিয়ে উঠে গেল।

পাখি দুটোকে নিয়ে এসো। হিল্টো আদেশ করল।

একজন সেবক তার দুবাহুতে করে দুটো মোরগ নিয়ে এল। মোরগ দুটোর গলার কাছ থেকে পালক উঠানো। রোদে তাদের ঝুটি চকচক করে উঠল।

ছেড়ে দাও এবং শুরু! হিল্টো চিৎকার করে উঠল। মোরগ দুটিকে একটি নির্দিষ্ট বৃত্তের মাঝে বালুর মাঠে ছেড়ে দিতেই জনতা উত্তেজনায় চিৎকার করে উঠল।

এদিকে নেফার ডোভ ও ক্রুসের পিঠে চাবুক চালাল এবং রথ দ্রুত ছুটতে লাগল।

নিয়মানুসারে মোরগ দুটো যততক্ষণ লড়াই করতে থাকবে তততক্ষণ পর্যন্ত নেফার তার রথ চালিয়ে বল্লম নিক্ষেপের স্থান পর্যন্ত দৌড়ে যাবে, সেখানে শাবাকো অপেক্ষা করছে বিচারক হিসেবে। তারা সেখানে তাদের বল্লম নিক্ষেপের অগ্নি পরীক্ষায় অংশ নেবে। তা শেষ করতে পারলে পরবর্তী ধাপের জন্যে এগিয়ে যাবে। যতো দ্রুত শেষ করবে ততোই তারা অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকবে। যে কোন একটি মোরগের মৃত্যু হতেই বাকী প্রতিযোগিরা তাদের ধাওয়া করবে। তখন সবার আগে যে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে প্রতিটি ধাপ পেরোতে পারবে সেই হবে জয়ী। নেফার ও ম্যারন মূল উপলক্ষ্য বিধায় অন্যদের কাজ শুধু ধাওয়া করা, অন্যান্য পরীক্ষায় তারা অংশ নেবে না।

মোরগ দুটো তাদের সর্পিল ঘাড় ও ভীষণ বাঁকানো চঞ্চু দ্বারা একে অন্যের পালক ও মাংস ছিঁড়ে ফেলবে এবং যখন রক্ত ঝড়ে তারা দুর্বল হয়ে যাবে তখন মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নেবে।

বড় পাখিটার পালকগুলো সোনালি ও কপার বর্ণের। উদিত সূর্যের মতই উজ্জ্বল, তার লেজ লম্বা। অন্য পাখিটা কালো, কিন্তু চমৎকার জ্বলন্ত পিঠ এবং তার নগ্ন মাথা রক্তিম বর্ণের।

তারা এখন এক জন অন্যকে বৃত্তাকারে ঘুরল, ইতোমধ্যে তারা অনেক কঠিন ও দীর্ঘ সময় লড়েছে। আলগা পালকগুলো তাদের বালিতে পড়ে আছে ও পশ্চিমের বাতাসের গরম ঝাঁপটায় তা দূরে সরে গেল। উভয় পাখিরই রক্ত ঝরছে, বড় বড় ভারি ফোঁটায় এবং তারা তাদের পায়ের উপর একটুখানি অস্থির হয়ে গেল। যাই হোক তাদের চোখ উজ্জ্বল ও হিংস্র যেমনটা লড়াইয়ের শুরুতে ছিল।

সুন্দর ও পূজনীয় হাথোর, তাদের দুজনকে বেঁচে থাকার শক্তি দাও। মেরিকারা ফিসফিসাল, সে দৃঢ়ভাবে মিনটাকার হাত ধরে আছে। তাদেরকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত লড়াই করতে দাও। যদিও সে জানত তার আবেদন কতটা বৃথা। এবং ম্যারন ও নেফারকে ক্ষতি থেকে দূরে রাখা।

হঠাৎ কালো পাখিটা মাথা উঁচু করে উড়াল দিল, তার শক্তিশালী ডানা ঝাঁপটিয়ে সামনের দিকে পাগুলো পুরো প্রসারিত করে। অন্য পাখিটা তাকে সাক্ষাৎ করতে উঠল কিন্তু সে প্রায় নিঃশেষিত এবং তার প্রতিরোধ ছিল দুর্বল। সে আঘাতটা রুখতে দেরি করে ফেলল যা তার পালকে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সংঘর্ষ করল। এক সাথে গড়াগড়ি খেল ওগুলো এবং যখন তারা আলাদা হল লাল মোরগটা তখন একটা ডানা টানছিল। এটা প্রায় শেষের পর্যায়ে।

মেরিকারা জোরে ফুঁপিয়ে উঠল, ওহ্! হাথোর, তাকে মরতে দিওনা, সে মিনটাকার বাহুতে নখ বসিয়ে চামড়ায় উজ্জ্বল লাল দাগ ফেলে দিল, কিন্তু মিনটাকা

তা অনুভবই করল না। সে ভয় নিয়ে দেখছিল যখন লাল পাখিটা দুর্বল ভাবে দুলছিল এবং জনতা বন্য ভাবে গর্জন করল।

কালো পাখিটা বুঝল সে জিতে গিয়েছে এবং তার শক্তি ফিরে এল। সে আবার উড়ে শক্তি সঞ্চয় করে ঘুরল, তার ডানা গুলো প্রসারিত এবং উজ্জ্বলভাবে তা চমকাচ্ছে। পাখিটা তার ভারসাম্য ফিরে পাবার আগেই সে লাল মোরগটাকে আঘাত করল। তারপর পাখিটা কোন রকমে উঠে করুণভাবে দৌড় দিল, তার প্রতিদ্বন্দ্বীর ভর সহ কেননা কালো পাখিটার ওটার উপর তখন। মেয়েরা গর্জন করে উঠল। তাকে যেতে দে, সেথের কালো ছায়া। তাকে বাঁচতে দে!

লাল পাখিটা তাকে নিয়ে দৌড়াল, প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল তার অধিকতর দুর্বল এবং অবশেষে সে পড়ে গেল।

সে মৃত! কেউ একজন জোরে বলল, লড়াই শেষ। ধাওয়াকারীদের যেতে দাও।

না! সে এখনো জীবিত। মিনটাকা ভয়ংকর ভাবে চিৎকার করে উঠল।

কালো পাখিটা লাল পাখিটাকে ছেড়ে দিল এবং তার সামনে দাঁড়িয়ে রইল। তার শক্তি ও সাহসের শেষটা নিয়ে লাল পাখিটা নিজেকে দাঁড়াতে বাধ্য করল এবং দুলতে দুলতে দাঁড়াল, দুই ডানা বালিতে ঝুলিয়ে এবং তার গালের ক্ষত থেকে রক্ত ঝরছে।

কালো পাখিটা মনে হল তাদের মধ্যকার দূরত্ব হিসাব করল, তারপর আরো একবার সে শূন্যে উঠল এবং এক মুহূর্তের জন্য তার শিকারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং পায়ের নখগুলো পুরো শক্তিতে ঢুকিয়ে দিল ওটার হৃদপিণ্ড ও ফুসফুস দিয়ে। লাল মোরগটা তার নিচে গড়িয়ে পড়ল এবং শুয়ে পড়ল। তার চঞ্চ নিরব মৃত্যুর কান্নায় নেতিয়ে পড়ল এবং তার ডানাগুলো ভগ্নভাবে কাঁপছে।

কালো মোরগটা মৃত দেহটার সামনে দাঁড়িয়ে রইল, তার মাথা পিছনে নিয়ে বিজেতার ডাক দিল যা মনে হল মিনটাকার মেরুদন্ড ছিঁড়ে নামল এবং তাতে কাঁপন ধরাল।

প্রভু কথা বলেছেন। এটা শেষ। হিল্টো ছিন্ন ও রক্তাক্ত মৃত দেহটা ঘাড়ে ধরে তুলল এবং বেস এর মন্দিরের পতাকা পড়ে গেল। সে রথীদের দিকে ঘুরল যারা তাদের ঘোড়ার দলের পিছনে গুটি সুটি মেরে আছে।

তোমরা রেড রোডে যেতে মুক্ত! চিৎকার করে বলল সে। মৃত্যু অথবা বিজয়ে সওয়ার হও! দীর্ঘ চাবুকগুলো তখন আওয়াজ তুলল, ঘোড়াগুলো তাদের মাথা নিক্ষেপ করল, তাদের কেশর দোলালো এবং দশটা যুদ্ধের রথ একবারে এক সাথে সভাস্থল ঘুরে এল। মহিলারা চিৎকার দিল এবং পুরুষের উল্লাস করে উঠল। তারপর তারা শহরের ফটক দিয়ে বেরিয়ে পাহাড়ের দিকে চলল, পতাকার সারি অনুসরণ করে।

*

নেফার একটু সময় নিল ঘোড়াগুলোকে প্রশ্রয় দিতে ও আশ্বস্ত করতে; সে প্রতিটির ঘাড়ে একটি করে হাত দিয়ে দাঁড়াল এবং তাদের ফিসফিসিয়ে সাহস জোগাল। তারপর সে দৌড়ে পাদানিতে গিয়ে উঠল এক লাফে। সে তাদের প্রথমে হাঁটার গতিতে, তারপর ধীরে ধীরে দৌড়ের কেন্দ্রস্থলে নিয়ে এল। যখন তারা নিখুঁতভাবে এক তালে সামনে বেগে দৌড়াচ্ছিল তখন সে তাদের গতি কমান্ড দিয়ে পরিবর্তন করল, নীল!

মসৃণভাবে তারা লক্ষ্যের দিকে দ্বিতীয় বারের জন্যে এগোলো এবং তখন সে ম্যারনের হাতে লাগামটা দিল। সে তাকে কোন তিরস্কার করল না, সে জানে ম্যারন এখনো তাদের প্রথম চেষ্টার ব্যর্থতায় কষ্ট পাচ্ছে। ইতোমধ্যে তারা এগিয়ে থাকলেও বল্লম পরীক্ষাটা পার হতে পারেনি এখনও। নেফার যতোটা না ব্যর্থ হচ্ছিল ম্যারনের প্রচেষ্টা ছিল বেশি হতাশজনক।

যখন সে তার কব্জিতে চামড়ার ফালিটা প্যাচালো নেফার খেয়াল করল ক্রুসের কানটা কোন সংকেতের অপেক্ষায়, যে আবার পদক্ষেপ ভাঙ্গতে পারে। কিন্তু সে তা সামনে খাড়া করে রেখেছে এবং ঠিক মতো দৌড়াচ্ছে। সে সারিটা নিখুঁতভাবে ধরে রাখল যখন তারা প্রথম লক্ষ্যের সামনে এল এবং তার বল্লমটা মধ্যের লাল বৃত্তে ঢুকে গেল এবার। মনে হল যেন সাথে সাথেই দ্বিতীয় লক্ষ্যটা এসে গেল, সে মসৃণ ভাবে নিক্ষেপ করল এবং তীক্ষ্ম প্রান্ত গভীরভাবে ভেতরের বৃত্তে ঢুকে গেল। তার পাশে ম্যারন চুপ, তার সর্ব শক্তি ও প্রচেষ্টা দিয়ে দলটাকে চালাচ্ছে।

তৃতীয় বল্লমটা সূর্য রশ্মির ন্যায় জ্বলে উঠল যখন তা দূর দূরত্ব অতিক্রম করল এবং শাবাকো আরেকটি আঘাতের জন্যে লাল পতাকা তুলল।

শেষ বলুমটা নেফারের হাতে, চামড়া ফালিটা দৃঢ় ভাবে তার কব্জিতে প্যাচানো, সে ঘোড়াগুলোকে গুন গুন করে বলল, তার কণ্ঠ দৃঢ় ও বিশ্বস্ত, আরো একবার। মাত্র আর একবার আমার জন্যে!

মনে হল জুস নিজেকে একত্রিত করল ও তার চিবুক ঠেসে ধরল, সুন্দর ভাবে সারিটা ধরল সে এবং যখন নেফার নিক্ষেপ ওটা করল সে জানত তা লাল বৃত্তে আঘাত করতে যাচ্ছে। সে তাদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করল যখন ওটা স্থির হল উড়ন্ত অবস্থাতে।

হা! হা! চলে এসো এবং তারা সামনে বাড়ল মসৃণগতি থেকে পূর্ণ বেগে, এতো জোরালোভাবে যে নেফারকে তার পা দৃঢ় করতে হল এবং পিছনের পতন রোধ করতে রশিটা ধরতে হল।

শাবাকো তার মাথার উপর লাল পতাকাটা দুলালো এবং তার কণ্ঠে পরিষ্কার শোনা গেলম, বাক হারা! মহামান্য! আপনি নিখুঁত!

কিন্তু নেফার জানে তারা কখনো রাস্তাটুকু পুষিয়ে নিতে পারবে না যা তারা হারিয়েছে এবং ধাওয়াকারীরা এরই মধ্যে দ্রুত ও কঠিন ভাবে আসছে তাদের পিছনে।

*

পতাকার সারি তাদের প্রশস্ত বৃত্তে নিয়ে এল, উত্তর দিকের গভীর খাদের তীক্ষ্ণ ধারের কিনারে এবং প্রাকৃতিক এক সারি সমতল ভূমির উপর যেখানে মাটির গঠন নরম রসালো ফলের মতো, কিন্তু নগ্ন ও কঠিন।

তৃতীয় ও শেষ সমতল ভূমিটা পঞ্চাশ জনের মতো দর্শক দ্বারা ঘেরা যারা গালালা থেকে উঠে এসেছে। যখন নেফারের রথ তাদের দিকে দৌড়ে গেল তারা হৈ হৈ করে উঠল, তারা তার প্রবেশের জন্য পথ ছেড়ে দিল। উঁচু ভূমিটার চূড়া সমতল ও মসৃণ। এই ভোলা স্থানের মধ্যবর্তী স্থানে কুস্তিগীররা অপেক্ষা করছিল। সাদা পাথর দ্বারা ঘেরা স্থানে তারা নিজেদের বৃত্তে দাঁড়িয়ে আছে। নেফার তাদের দিকে চলল। জনতা তাদের পিছনে উত্তেজনায় উল্লাস করতে করতে ও হাসতে হাসতে এগিয়ে চলল। নেফার ঘোড়াগুলোকে থামাল এবং দুজন সাহিস যারা প্রস্তুত হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল দৌড়ে এল তাদের মাথাগুলো ধরতে।

দেখো প্রত্যেকে যেন মাত্র এক বালতি পান করে। নেফার তাদের আদেশ দিল যখন সে লাফিয়ে নামল। এটাই প্রথম জায়গা যেখানে তারা ঘোড়াগুলোকে পানি খাওয়ানোর অনুমতি পেয়েছে, কিন্তু নেফার চায় না তাদের পেট তরলে ফুলে যাক।

দ্রুত নেফার ও ম্যারন তাদের চামড়ার বর্ম খুলে ফেলল এবং নিচের স্কার্ট খুলে সূর্যালোকে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে গেল। তাদের তরুণ শক্ত দেহ দেখে জনতা গুঞ্জন করে উঠল, নিখুঁত কুস্তির জন্যে যা প্রশিক্ষিত। তা উন্মুক্ত হলে নিচু জাতির ও সন্দিগ্ধ নৈতিকতার কিছু মহিলাও উত্তেজনায় চিৎকার করল।

এখন প্রতিটি অতিক্রান্ত হওয়া মুহূর্ত রথ ধাওয়াকারীদের কাছে নিয়ে আসছে। নেফার এমনকি নৃত্যরত মহিলাদের দিকেও তাকালো না বরং সে ও ম্যারন দূর পদক্ষেপে সামনে বাড়ল সে দিকে যেখানে তাদের নিজ নিজ প্রতিদ্বন্দ্বী অপেক্ষা করছিল। নেফার সাদা পাথরের বৃত্তের বাইরে এল এবং উর-এর পোলিওস এর দিকে তাকাল যে কেন্দ্রস্থলে দাঁড়িয়ে আছে।

সে আশানুরূপ ভাবে বড় অথবা লম্বা ছিল না, নেফারের চাইতে বৃহৎ বা ভারিও নয়, কারণ বিচারকেরা তাদের সতর্কভাবে ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন করেছেন। যাই হোক কোন চর্বি বা অতিরিক্ত ঝোলালো মাংস পোলিওসের ছিল না। তবে এটা নিশ্চিত যে সে নিজেকে নমনীয় করতে তেল মেখেছে, কারণ যখন সে তার মাংসপেশী ফুলালো তখন তা চকচক করল। তার সবকিছুই কঠিন। তার পেট সমতল, তার হাত-পা দীর্ঘ ও সুকোমল। সে হাতগুলো তার বুকের উপর ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে এবং একটা কঠিন শীতল দৃষ্টিতে নেফারকে খেয়াল করছে।

নেফার একটা দীর্ঘ দম নিল এবং তখন তার কানে আবার টাইটার কথাগুলো বাজল, এতো পরিষ্কার যে যেন সে তার কানে কানে কথা বলছে। বাম হাঁটু, ওটা তার একমাত্র দুর্বলতা।

নেফার তার দৃষ্টি প্রতিপক্ষের দেহের উপর নিবদ্ধ করল, কিন্তু পোলিওসের বাম হাঁটু তার ডান হাঁটুর মতই ভালো ঠেকল। শক্ত ও দুর্জেয় জলপাই গাছের প্রধান শাখার মতো যা।

নেফার তার গলার সোনার মাদুলিটা স্পর্শ করে পা বাড়িয়ে পাথরের বৃত্তে প্রবেশ করল, জনতা গর্জে উঠল ও আর্তনাদ করল এবং চিৎকার দিল। পোলিওস তার হাত হাঁটুতে বেঁধে কাঁধটা কুজো করল এবং সর্পিল সমতল অভেদ্য দৃষ্টি দিয়ে তাকে দেখল। নেফার জানত তাকেই প্রথমে আঘাত করতে হবে কারণ পোলিওসের কোন তাড়া নেই। পোলিওসের কাজ হল নেফারকে এখানে দেরি করিয়ে দেয়া যতোক্ষণ না ধাওয়াকারীরা তাকে ধরে ফেলে। নেফার একবার তাকে আবর্তন করল এবং পোলিওসও ধীরে তাকে মোকাবেলা করতে ঘুরল।

হ্যাঁ! নেফার নিজে নিজে বলল, ওখানে তা, সে তার বাম পাতা টানছে। কিন্তু তা ছিল তার ক্ষুদ্র একটা দোষ যা নেফার টাইটার উপদেশ ছাড়া কখনো বের করতে পারতো না। এটা তার পুরানো আঘাত, টাইটা তাকে বলেছিল, এখানে! এবং সে তার বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে নেফারের হাঁটুতে চাপ দিয়ে প্রকৃত স্থানটা দেখিয়েছে। কিন্তু তারপরও টাইটা তাকে বলল, তবুও তাকে হালকা ভাবে নেয়ার সাহস দেখিও না। সে একজন মানুষ হত্যাকারী। এটা তার প্রিয় কাজ এবং তা খুব অপ্রতিরোধ্য। টাইটা তাকে স্পষ্ট করে বলেছে।

নেফার অন্য পথে বৃত্তাকারে ঘুরে এল এবং পোলিওসও তার সাথে ঘুরল। নেফার তখন তা দেখল, একটা ছোট অস্বাভাবিক গর্ত তার হাঁটুর টুপির স্ফীতির নিচে। সে কোন ঝুঁকি নিতে চাইল না এবং সে কাছাকাছি এল। তারা প্রত্যেকে চিরায়ত নিয়মেই এগুল, উভয়ে হাতে দিয়ে একে অন্যকে আঁকড়ে নিক্ষেপের সুযোগ খুঁজছে। ধারা পরিবর্তন করে ওজন বদলে ধাক্কা দিল ও তারপর অন্যের ভারসাম্য অনুভব করতে দিল। তখন হঠাৎ পোলিওস সামনে লাফিয়ে নিচু হল, নেফারের বক্ষের নিচে এবং নেফারও তা আশা করেছিল। সে দীর্ঘ বাহুটা তার কোমরে প্যাচিয়ে হঠাৎ তাকে এতো উপরে তুলল যে সে শুধু তার পায়ের পাতা মাটিতে স্পর্শ করে রইল এবং পোলিওস তাকে নিয়ে তার বাহুতে ঘুরল, তাকে পিছনে ঘুরালো যাতে সে তার ভারসাম্য রাখতে না পারে। তারপর হঠাৎ পোলিওস তার ডান হাঁটুতে পড়ে নেফারকে তার সাথে নিচু করল। তার অন্য পা কঠিন দৃঢ়, বাম উরু ভূমির সাথে। নেফার তখন তার উপর আড়াআড়ি নেমে এল এবং তাকে তার পিঠে আঘাত করল কিডনি বরাবর। এটা তার মেরুদন্ড ভেঙে ফেলার কথা, নেফার আক্রমণটা ম্যারনের সাথে শতবার অনুশীলন করেছে। প্রতিপক্ষ আঘাতটা নিতে তার পিঠ বাকা করল এবং একই সময়ে তার উভয় গোড়ালি মাটিতে সজোরে বন্ধ করে দিল শক্তি ভাঙতে। তবুও সে তার মেরুদন্ড ক্যাচ ক্যাচ করতে অনুভব করল যখন তার কশেরুকাগুলো সর্বোচ্চভাবে বেঁকে গেল।

পোলিওস তার পূর্ণ ওজন নিয়ে তার উপর নেমে এল, কিন্তু নেফার তার পিঠের নিচ দিয়ে পিছলে গেল এবং ডান হাত দিয়ে পোলিওসের হাঁটু জড়িয়ে ধরল, টাইটা তার ডান বৃদ্ধাঙ্গুলটা শক্ত করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করেছে–চামড়ার বল পিষত যতোক্ষণ না তা উপরের স্তরে কোন গভীর দাগ না ছাড়ত। এমনকি তারপরও টাইটা সম্ভষ্ট হত না। সে নেফারকে এই অনুশীলন করতে বাধ্য করত যতোক্ষণ না সে বৃদ্ধাঙ্গুল ও তর্জনীর মধ্যে একটা কড়ি গুড়ো করতে পারত। তারপর সব সময় টাইটা হাঁটুর টুপির নিচে ঠিক স্থানটা স্পষ্ট করেছে যেখানে আঘাতটা আছে এবং চাপের মাধ্যমে তাকে তা পৃথক করতে অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। নেফার এবার তা পেল এবং তার বৃদ্ধাঙ্গুল ঢিবির মাথা ও অমিলিত হাঁটুর টুপির মধ্যকার ক্ষতে ঢুকিয়ে দিল।

নেফারের ডান হাতের প্রতিটি মাংসপেশী দাঁড়িয়ে গেল কসরতে এবং চোখগুলো মনে হল কোঠর থেকে বেড়িয়ে যাবে। তারপর হঠাৎ সে তার বৃদ্ধাঙ্গুলের ডগার নিচে কিছু অনুভব করল এবং শেষ একবার চেষ্টা করল। তার বৃদ্ধাঙ্গুল আরো গভীরে ঢুকল, দুর্বল উপলব্ধি এবং পেশীতন্তু ক্যাচ ক্যাচ করল এবং কট করে শব্দ হলো যখন তারা ছিঁড়ে গেল, হাঁটুর টুপিটা নেফারে মুঠিতে উঠে এল বিচ্ছিন্ন হয়ে।

পোলিওস আর্তনাদ করে উঠল, এমন চরম যন্ত্রণার শব্দ করল যে তা দর্শকের চিৎকার পর্যন্ত থামিয়ে দিল, যারা বৃদ্ধের কিনারে ভিড় করেছিল। পোলিওস তার নিজের মুঠি ছেড়ে দিল এবং নেফারকে তার কাছ থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু নেফার গড়িয়ে তার আঘাত এড়িয়ে গেল খুব সহজেই।

হঠাৎ, শিশুর মতো করুণ ও অসহায় হয়ে পোলিওস ফুঁপিয়ে উঠল এবং কুঁকড়ে গেল ব্যথায়। নেফার তার উপর উঠে তার চেহারাটা মাটির দিকে চেপে ধরল। সে তার বাম পা-টা প্যাচিয়ে তার পিছনে তুলল এবং পোলিওস বাঁধা দিতে পারল না। নেফার ভাঙ্গা হাঁটু পিছনে বাকাল যতোক্ষণ না গোড়ালিটা পোলিওসের নিতম্ব স্পর্শ করল এবং তার সব ভর ওটার উপর ছেড়ে দিল। পোলিওস যে ভয়ংকর চিৎকারটা দিল তা কোন মানুষের ছিল না।

আর্তনাদ কর! নেফার আদেশ দিল, কিন্তু পোলিওস ব্যাথায় বোকা হয়ে গেল এবং অবশ হয়ে গেছে। আম্পায়ার নেফারের কাধ স্পর্শ করার জন্য এগিয়ে এল এবং তার জয় নির্দেশ করল।

নেফার লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল এবং পোলিওসকে আর্তনাদ করতে ছেড়ে গেল। তার সামনের দর্শকেরা নিরবে ভাগ হয়ে গেল, তার জয়ের দ্রুততা ও সম্পূর্ণতায় তারা বিস্মিত। নেফার শুনল জনতার কেউ বলছে, সে তার ঐ পা দিয়ে আর কখনো হাঁটতে পারবে না। কিন্তু সে পিছু দেখল না যখন সে অন্য বৃত্তের দিকে দৌড়ে গেল এবং ধাক্কা দিয়ে লোকদের সরিয়ে তার পথ করল যারা ওখানে ভিড় করছিল।

ম্যারন ও সিগাসা–কুমিরটি, বুকে বুকে চেপে আছে। তারা বৃত্তের ভেতরে গড়াগড়ি খেল, প্রথমে একজনের উপর একজন, পরে অন্য জন। নেফার এক নজরে দেখল ম্যারন আঘাতপ্রাপ্ত। সিগাসার রোগান্বিত ত্বক পুরু ও কন্টকময়, ব্যাথার জন্য অভেদ্য এবং সে এখন তা অস্ত্রের মতোই ব্যবহার করছে, নিজেকে তার সাথে ঘর্ষণ করে। ম্যারনের মাংস তা ছিঁড়ে ফেলল, তার বুক ও বাহু থেকে রক্ত ঝরছে। টাইটা তাকে এ ব্যাপারে সতর্ক করেছিল, কিন্তু তার অস্বস্তিকর আলিঙ্গনটা এড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব ছিল এবং ম্যারন ছিল আক্রান্ত। নেফার একেবারে ঠিক সময়ে পৌঁছেছে।

রেড রোডের নিয়ম ইচ্ছে করেই শিক্ষানবীশদের বিরুদ্ধে করা হয়েছে। যাই হোক, তারা একজন শিক্ষানবীশকে অন্য জনের সাহায্যে আসার অনুমতি দিয়েছে, কিন্তু শুধুমাত্র তখন যখন সে তার নিজেকে প্রতিপক্ষকে হারাতে পারবে তার পর। এটা হল কয়েকটা সুযোগের একটা যা তারা পেয়েছে। নেফার এর পূর্ণ সুযোগ নিল। যে মুহূর্তে সে বৃত্তে ছিল নেফার থেমে গেল এবং একটা সাদা পাথর তুলে নিল যা একটা পায়রার ডিমের আকৃতির। ম্যারনকে সাহায্য করতে দৌড়ে যাবার মুহূর্তে সে পাথরটা তার তালুর কেন্দ্র স্থলে স্থাপন করল, আঙ্গুলগুলো দিয়ে মুঠো করে ধরল এবং এতে দৃঢ়ভাবে ধরল যে তার আঙ্গুলের গাঁটগুলো পর্যন্ত চাপে সাদা হয়ে গেল। সে তার মুঠকে অস্ত্রে রূপান্তরিত করল মিস্ত্রির হাতুড়ির মতই যা কার্যকর এখন।

জনতা কুমিরের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে সতর্ক করল এবং ম্যারনকে ছেড়ে দিয়ে সে দ্রুত উঠে দাঁড়াল। সে নেফারের দিকে এগিয়ে এল মাথা নিচু করে। টাইটা তাদের সতর্ক করেছিল যে তার টাক ও গোল খুলিটা দুরমুজের মতই ভয়ংকর। সিগাসা ইতোমধ্যে ম্যারনের দুটো পাজরে ফাটল ধরিয়ে দিয়েছে তার প্রথম আক্রমণেই এবং এখন সে নেফারের সাথে তা করতে যাচ্ছে।

নেফার তাকে আসতে দিল, তার চলন পরিমাপ করল। তারপর দৃঢ়ভাবে পা দুটো স্থাপন করে সে তার বদ্ধ ডান মুষ্ঠি দিয়ে সিগাসার চোয়ালে আঘাত করল সজোরে, সেই নির্দিষ্ট স্থানে যা টাইটা তাদের দেখিয়েছে। সিগাসার নিজের দৌড়ের ওজন ও গতি নেফারের কাঁধের পূর্ণশক্তির সাথে সংঘর্ষ ঘটল আঘাতের পিছনে। বিশাল মাথাটা পিছন দিকে ভেঙে গেল এবং সিগাসার পাগুলো তার নিচে সেদ্ধ খাবারের মতো নরম হয়ে গেল কিন্তু তার ভরবেগ তাকে বয়ে নিল আরো কিছুক্ষণ। তারপর দাগ দেওয়া পাথরের মাঝে হাত পা ছড়িয়ে সে পড়ে রইল।

ভিড়ের কেউ কখনো শূন্য মুঠি অস্ত্র রূপে ব্যবহৃত হতে দেখে নি। তারা বিস্ময়ে চিৎকার দিল। এমনকি ফলাফলে নেফারও হতভম্ব, কারণ সিগাসা একটুও

নড়ে পড়ে আছে। নেফার মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিল এবং আম্পায়ারদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করল, সিগাসা বৃত্ত ত্যাগ করেছে। সে অবশ্যই বাজেয়াপ্ত।

আম্পায়ার চিৎকার করে তার সম্মতি জানাল, নেফার সেটি বিজয়ী! সিগাসা প্রতিদ্বন্দ্বীতার অধিকার হারিয়েছে। আপনি বিজয়ী নেফার সেটি!

নেফার দৌড়ে ম্যারনের কাছে গেল এবং তাকে টেনে দাঁড় করাল। তুমি কি ব্যথা পেয়েছ?

 আমার পাঁজর! শূয়রটা ষাঁড়ের মতো আঘাত করেছে। সে বিতৃষ্ণা প্রকাশ করল।

আমাদের যেতে হবে।

হ্যাঁ, অবশ্যই। ম্যারন সোজা হলে এবং কাঁধ ঘুরালো। ব্যাথায় তার মুখটা ছাই এর ন্যায় ধূসর হয়ে আছে। এটা কিছু না। কিন্তু সে তার বুকের পাশ চেপে ধরল যখন তারা দৌড়ে রথে ফিরল। তারা তাদের স্কার্ট এবং চামড়ার বর্ম পরিধান করল দ্রুত।

অনেক সময় লেগে গেছে। আমরা প্রতি সেকেন্ডে ভূমি হারাচ্ছি। যখন তারা হামাগুড়ি দিয়ে রথের পাদানিতে উঠল তখন তারা উভয়ে পিছনে পাহাড়ের খাদ্যের সমতলের নিচে অবস্থান করছিল। বল্লমের মাঠের দিকে সমতলে তারা পিছনে তাকাল। ঐ যে তারা! ম্যারন বিতৃষ্ণার আওয়াজ করল এবং সূর্যালোতে ধুলার মেঘটা বিপদজনক ধূসর ও রহস্যজনক হয়ে উঠল। উড়ন্ত ধুলার নিচে ধাওয়া করা যানগুলো এখনো কালো বিন্দুর মতো, কিন্তু মনে হলো আকারে বাড়ছে।

বলার কিছু ছিল না। ধাওয়াকারীরা কুস্তিগিরদের সাথে লড়বে না। তারা সোজাসুজি পাথরের বৃত্ত পেরিয়ে যাবে। নেফার ও ম্যারন জানত তাদের এগিয়ে থাকা কতটা প্রয়োজন এবং কত দ্রুত তারা এ হোট সুবিধাটা হারাতে পারে। এখন শুধুমাত্র একটা ভুল পদক্ষেপ অথবা ভুল হিসাব সব পাল্টে দিতে পারে।

নেফার লাগাম ঝাঁকি দিল এবং তা দলের উদ্দেশ্যে হাক দিল। ডোভ ও ক্রুস বিশ্রাম নিয়েছে যখন তারা কুস্তি লড়ছিল। এখন তারা সতেজ, তারা বেঁকে গতি তুলল। সামনে পতাকার সারি কোর্স নির্দেশ করছে যা দক্ষিণে বিশাল বাঁক নিয়ে ফিরে গেছে সে দিকে যে দিক থেকে তারা এসেছে।

অর্ধ রাস্তা দিয়ে। ম্যারন আনন্দ প্রকাশ করার চেষ্টা করল কিন্তু তার কণ্ঠ তারা কাঁটা পাজরের ব্যাথায় শক্ত এবং প্রতিটি শ্বাস সে টানছিল ব্যথিত হয়ে। তারা মালভূমি পেরিয়ে অন্য পাশে পৌঁছে গেল সেখানে খাদের কিনারে সমতলগুলো বিশাল পদক্ষেপে তাদের পিছনে পড়তে লাগল। তারা সেচ ভূমির ছোট মাঠ ও ভূমির দিকে নিচে তাকাল, অবাক করা সবুজের বিপরীতে গিরিমাটি ও পিঙ্গল বর্ণ চারপাশের ভূমির এবং গালালার টাওয়ার ও ছাদগুলো এতো ভগ্ন ও মেটো রঙের যে এই দূরত্ব থেকে তাদের মানুষের তৈরি মনে হল না বরং মরুর প্রাকৃতিক দৃশ্য মনে হল।

তারা সামনে দেখল, খাদটা তাদের দিকে দৈত্যের মতো চেয়ে আছে। এটার ঢাল খাড়া এবং অপরিমেয়, ছায়ান্বিত লাল গভীরে পতিত। রাস্তায় ছোট এক দল দর্শনার্থী ছিল যারা পর্বতের চূড়ার প্রান্ত ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। এরা হলো সেই দর্শক যারা বল্লমের পরীক্ষা দেখেছে এবং তারা সংক্ষিপ্ত রাস্তা নিয়ে তীরের পরীক্ষা দেখার জন্য তাড়াহুড়ো করছে।

নেফার শক্ত হাতে রথটা চালিয়ে সমতল থেকে নামছিল ঘোড়াগুলোকে তাদের সর্বোচ্চ গতিতে তুলে, ধাওয়াকারীদের থেকে এমনকি কয়েক গজ এগিয়ে জিত ফিরে পাবার চেষ্টা করছে। এটা হল সেই স্থান যেখানে ক্রুস তারা বল্লম পরীক্ষায় তার ভুলের ক্ষতি পূরণ করেছিল। তার বিশাল শক্তি তাদের দ্রুত চালিত করল এবং তার পাশে ডোভকে নতুন হৃদয় দিল। তারা খাদের নিকট পৌঁছে কিনার ধরে দৌড়াল। যদিও কুস এটার পাশে ছিল তুবও সে কখনোই তার পদক্ষেপ ভাঙ্গল না বরং তার মন প্রাণ দিয়ে দৌড়াল। নেফার তার প্রাণ শক্তিটা উঁচুতে উঠতে অনুভব করল।

আমরা এখনো তাদের সেতু পর্যন্ত পিছনে রাখতে পারব। সে বাতাসে চিৎকার করল, চল, কুস! চল, ডোভ।

নেফার সামনে দেখল এবং টাইটার লম্বা, নির্ভুল অবয়বটাকে কিনারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পেল। সে খাদ পেরিয়ে ধনুকের লক্ষ্যের দিকে অন্য পাশটা দেখছে এবং সে ঘুরে দেখল না যখন তারা তার পিছনে থামল এবং রথ থেকে লাফিয়ে নামল।

গত সন্ধ্যায় টাইটা ভবিষ্যত্বাণী করেছিল। পশ্চিমের বায়ু প্রবাহ, ধনুক ও খাদ। অতিক্রম ফলাফল নির্ণয় করবে। আমি তোমাদের জন্য ওখানে অপেক্ষা করব।

তারা তাক থেকে ধনুক ও তীরের খাপ নামল এবং ঘোড়াগুলো অপেক্ষারত সাহসীদের তত্ত্বাবধানে দিয়ে টাইটার সাথে মিলিত হতে দৌড়ে পর্বতের কিনারে গেল।

বল্লম খেলায় আমরা সময় নষ্ট করেছি, নেফার গম্ভীরভাবে তাকে বলল বিশাল যুদ্ধ ধনুকে তীরটা লাগাতে লাগাতে।

কুস খুব ব্যাকুল ছিল, টাইটা বলল, এবং তাই তুমিও। কিন্তু পিছনে দেখে কোন লাভ নেই। সামনে দেখ! সে গভীর খাদের উপর দিয়ে নির্দেশ করল যেখানে লক্ষ্যগুলো একটা হালকা বাঁশের মঞ্চের উপর ঝুলানো।

বল্লম পরীক্ষার মতো, এখানেও পাঁচটা লক্ষ্য। ওগুলো শুকরের ফোলানো মূত্র থলি। প্রত্যেকটা আড়াআড়িভাবে ভারে পাকানো সুতায় ঝুলানো। ওগুলো আলাদা করে ঝুলানো যাতে একটা তীর একটাকেই লক্ষ্যভেদ করে ও অন্যটিকে ভাগ্যক্রমে আঘাত না করতে পারে। সুতাটা যা তাদের ধরে রেখেছিল তা দুই কিউবিট লম্বা যাতে তাদের নড়াচড়ার সুযোগ থাকে। বাতাসের মতই হালকা তারা পশ্চিম বাতাসে নাচল, অপ্রত্যাশিত ভাবে দ্রুত ওঠানামা ও উপর নিচ করছে।

তাদের মধ্যকার বিশাল উন্মুক্ত খাদ সঠিকভাবে দূরত্ব পরিমাপ করা প্রায় অসম্ভব করে তুলল এবং পশ্চিমা ঘূর্ণবাতাস বৃত্তাকারে পর্বতে বয়ে গেলে। খাদের এপাশে বাতাসের ধাক্কা ও দিক তারা যা অনুভব করল তা অন্যপাশ থেকে ভিন্ন হবে। যাই হোক এটা তীরগুলোকে ততোটাই আক্রমণ করবে যতোটা লক্ষ্যগুলোকেও করছে।

দূরত্ব কত হবে, বৃদ্ধ পিতা? নেফার জিজ্ঞেস করল, খাপ থেকে একটা দীর্ঘ। তীর পছন্দ করতে করতে। ঐ সকালের প্রথমে টাইটা এই খাদের কিনার বরাবর সমকোণবিশিষ্ট ত্রিভুজের একপাশ পরিমাপ করেছে। তারপর সে অন্য পাশের লক্ষ্যের কোণটা মেপেছে একটা ভূতুড়ে আয়োজন করে। তারের একটা বোর্ডের উপর সে এসব পরিমাপ এমনভাবে ব্যবহার করেছে যা নেফারের কাছে অবোধ্য, খাদ পেরিয়ে দূরত্ব পরিমাপ করতে।

একশত পঞ্চাশ কিউবিট, টাইটা তাকে এখন বলল। নেফার এই তথ্য তার নিজের বাতাসের গতি ও দিকের হিসাবের সাথে যোগ করল এবং সে তার অবস্থান পর্বতের ভাঙা কিনারে নিল। ম্যারন তার হাতে হালকা সৈনিকের ধনুকটা নিয়ে তার পাশে দাঁড়াল।

হুরাস ও দেবীর নামে, নেফার প্রার্থনা করল, চল আমরা শুরু করি। তারা একই সাথে তীর ছুঁড়ল।

নেফারের তীর মঞ্চের আড়াআড়ি কাঠের উপর দিয়ে পড়ল, অনেক দীর্ঘ ও উঁচুতে। ম্যারনের তীর বাতাসে মাত্রাতিরিক্ত কোণে উঠল লক্ষ্যের দূর দিয়ে। যখন এটা উচ্চতার শীর্ষে পৌঁছে ধীর হলো, বাতাস তখন এটার নিয়ন্ত্রণ নিল এবং ওটা বামে সরে গেল, প্রায় এটা দূরত্বের সীমায় ঝুলন্ত ওঠানামা করা শূকরের মূত্রথলে সারির দিকে পড়ল, মাঝের লক্ষ্যে পরিষ্কার আঘাত করল এবং তারা ফট আওয়াজ শুনল যখন তা বিস্ফোরিত হল এবং যাদুর এক ঘাতের মতোই অদৃশ্য হয়ে গেল।

দর্শকদের মধ্য থেকে একটা অনন্দের চিৎকার এল এবং আম্পায়ার উচ্চ কণ্ঠে তা বলল, কিন্তু ম্যারন বিড়বিড় করল যখন সে অন্য একটা তীর নিল। ওটা সৌভাগ্য ছিল।

আমি যে কোন সৌভাগ্য নিব যা তোমার খাপে আছে। নেফার বলল, বাক হার!, ভ্রাতা, বাক-হার!

তারা আবার নিক্ষেপ করল, এবার ম্যারনের তীর আগেই পড়েই গেল, পর্বতের পাথরে লেগে ঝনঝন শব্দ করল। নেফারেরটা মূত্রথলিটির ডান দিকে ১/২ কিউবিট দূর দিয়ে এড়িয়ে গেল এবং বাতাসের জন্য সেথকে অভিশাপ দিল যা সে পাঠিয়েছে। বল্লমের ন্যায় রেড রোড়ের নিয়ম তীরের সংখ্যার উপর কোন নিয়ন্ত্রণ দেয়নি, শুধুমাত্র শর্ত ছিল যে তাদের ওগুলো রথে বহন করতে হবে শুরু থেকে, এটা ওজন ও সংখ্যার মধ্যকার হিসাব। তারা প্রত্যেকে পঞ্চাশটা করে তীর এনেছে। কিন্তু ম্যারনের তীর থেকে নেফারের প্রতিটি তীর লম্বা, অর্ধেক বেশি ওজন।

তারা ছাড়ল এবং ভুল করল; আবার ছাড়ল এবং আবার ভুল করল। টাইটা বাতাস ও প্রত্যেক তীরের উড্ডয়ন দেখল। সে তার সব শক্তি তার চারপাশে জমা করল ঘাতক বাতাসের শক্তি ও তেজ অনুভব করার জন্য। সে প্রায় তা দেখতে পারল, এটার প্রবাহ ও শক্তি পানির পরিষ্কার ঝর্ণার স্রোতের মতো।

লক্ষ্যের একই স্থানে ধরে রাখ? সে নেফারকে আদেশ দিল। কিন্তু আমার নির্দেশের অপেক্ষা করো।

নেফার পুরো শক্তিতে গুণ টেনে ধরল এবং তার ডান হাতের প্রতিটি মাংসপেশী কাঁপল করতে যা সে ধরে আছে।

টাইটা বাতাস পরখ করল ও তার অংশ হয়ে গেল, তার নিজের সত্তার গভীরে তা অনুভব করল। এখন! সে ফিসফিস করে বলল এবং তীরটা খাদের উপরে উঁচুতে লাফিয়ে ছুটে গেল এবং বাতাসে একটু দুলল। তারপর উঁচুতে থাকা বাজপাখির মতো মনে হল যখন এটা নিজেকে একত্রিত করল এবং লক্ষ্যের দিকে ঝুঁকল। মূত্রথলি ফট করে উঠল যখন এটা তা আঘাত করল এবং জনতা গর্জে উঠল। পরের টা! টাইটা আদেশ দিল এবং নেফার টানল তার বাহু উঁচু করে এবং দ্বিতীয় মূত্রথলির ডান দিক বরাবর।

এবার। টাইটা ফিসফিস্ করে বলল। মনে হল বৃদ্ধ মানুষটি তার মনের শক্তি দিয়ে তীরটার গতি নিয়ন্ত্রণ করছে। একেবারে শেষ মুহূর্তে আঘাত করার পূর্বে পশ্চিমা বাতাস বিদ্বেষ পূর্ণভাবে ওটাকে একপাশে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু তীরটা লাইন বজায় রাখল এবং মূত্রথলি বিস্ফোরিত হল তীক্ষ্ম কাটার আওয়াজ করে।

পরেরটা লাগাও! টাইটা ফিসফিসাল, ধরে রাখ! এবং একটুর জন্যে এখন এইবার তীরটা প্রায় মূত্র থলিটা স্পর্শ করে ফেলেছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বলটা একপাশে লাফিয়ে সরে যায়। নেফার আবার টাইটার নির্দেশে তীর ছুড়ল এবং একটা তীরের সমান দীর্ঘ উঁচু দিয়ে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হল এবং চলে গেল। বিশাল ধনুকটাকে নিয়ে কাজের ক্লান্তি খুব বেশি, তার ডান হাত ব্যথা করছে এবং পেশী আপনা আপনি সংকুচিত হচ্ছে ও লাফাচ্ছে।

বিশ্রাম নাও? টাইটা আদেশ দিল। লসট্রিসের কবজটা তোমার ডান হাতে নাও এবং বিশ্রাম কর।

নেফার ধনুকটা এক পাশে রেখে মাথা প্রার্থনার ভঙ্গিতে নত করে দাঁড়িয়ে রইল, সোনার মাদুলিটা ডান হাতে নিয়ে। সে অনুভব করল শক্তি তার ধনুক নিক্ষেপের হাতে ফিরে আসতে শুরু করেছে। ম্যারন এখনো ছোট ধনুক দিকে চেষ্টা করছে কিন্তু তার কাটা পাজরের ব্যথা তার উপর প্রায় দ্বিগুণ হয়ে কষ্ট দিচ্ছে এবং যন্ত্রণার ঘাম তার বিবর্ণ মুখ বেয়ে পড়ছিল।

ঐ সময় পর্বতের চূড়ার লোকজন নড়ে উঠল ও ঘুরে গেল এবং উঁচু সমতলে ফিরে তাকাল। কেউ একজন চিৎকার করল, তারা আসছে এবং চিৎকারটা জনতা তুলে নিল, যতোক্ষণ না চিৎকার কানে তালা লাগিয়ে দিল। নেফার তার মাথা তুলে আকাশের সীমায় প্রথম রথটা দেখল। লাগাম ধরা ডায়ামিওসকে চেনার জন্য এটা যথেষ্ট কাছে ছিল; তার সোনালি চুল বাতাসে পিছনে উড়ছে। তার পিছনে সারি ধরে ধাওয়াকারীদের অন্য রথগুলোও এল। ক্ষীণভাবে সে চালকদের ঘোড়াগুলোর উদ্দেশ্যে চিৎকার করতে শুনল এবং রুক্ষ ভূমিতে চাকার ঘড় ঘড়ানি শব্দটাও।

তাদের দিকে দেখো না; টাইটা তাকে আদেশ দিল। তাদের নিয়ে ভেবো। শুধু তোমার লক্ষ্য সম্পর্কে চিন্তা কর। নেফার অগ্রসরামান যানের সারির দিকে পিঠ ফেরালো এবং ধনুক তুলে নিল। টান এবং ধরে রাখ। টাইটা বলল। বাতাস আকস্মিক বেগে ধাবিত হল এবং পড়ে গেল। তীরটা নির্ভুলভাবে খাদের উপর দিয়ে চলল এবং চতুর্থ মূত্রথলি বিস্ফোরিত হল।

নেফার খাপ থেকে অন্য একটা তীর টেনে নিল, তারপর সে তার হাতে নিয়ে থামল এবং তার হৃদয়ে হতাশা অনুভব করল। মরুভূমি থেকে একটা ধুলোর দৈত্য ঘুরতে ঘুরতে লক্ষ্যের সারির উপর এল। পিঙ্গল বর্ণে ধুলার পর্দা এবং বালি ও ধ্বংসাবশেষ দূরত্ব আচ্ছন্ন করে দিল এবং তার গভীরতায় একমাত্র অবশিষ্ট মূত্রথলিটা অদৃশ্য হয়ে গেল।

তাদের পিছনে পাহাড়ে উঁচুতে ধাওয়াকারী রথীরা জয়ে চিৎকার করল এবং ঘূর্ণয়মান বাতাসের গর্জন ছাপিয়ে নেফার ডায়ামিওসের কণ্ঠ শুনল, এবার তোমাকে দাঁড়াতে হবে এবং আমার সাথে লড়াই করতে হবে, নেফার সেটি।

তোমার সমাপ্তি হওয়ার পূর্বে আর একটা লক্ষ্য; সোক্কো, আম্পায়ার, কঠোর ভাবে চিৎকার করল।তোমার স্থানে দাঁড়াও।

ওখানে কোন লক্ষ্য সেই, নেফার প্রতিবাদ করল।

নামহীন প্রভুর ইচ্ছা, সোক্কো তাকে বলল, তোমাকে অবশ্যই তার কাছে সম্পর্কিত হতে হবে।

ওখানে? টাইটা চিৎকার করল। আরো অধিক মহান ও শক্তিশালী দেবীর প্রতীয়মান ইচ্ছা আছে। সে গভীর সংকীর্ণ উপত্যকার হলুদ ধুলার অভেদ্য মেঘ নির্দেশ করল।

ঘোলাটে হ্রদের গম্ভীর হতে ভেসে ওটা ছিপির মতো, মূত্রথলিটা তার ভাঙা সুতা নিয়ে এটার নিচে নড়াচড়া করে ধুলার মেঝের শীর্ষে উঠল এবং গরম বাতাসে দ্রুত নড়াচড়া করল।

এবার দেবী লসট্রিসের নামে। টাইটা নেফারকে উৎসাহ দিল। সে-ই একমাত্র একজন যে তোমাকে এখন সাহায্য করতে পারে।

দেবীর নামে! নেফার চিৎকার করল, বিশাল ধনুকটা উপরে তুলে ঝড়ের বন্য আলিঙ্গনের ক্ষুদ্র বেলুটার লক্ষ্যে সে তীর ছুড়ল। উপরে ও আরো উপরে তীরটা উঠল এবং মনে হলো বুঝি এটা বাম দিক দিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট হবে, কিন্তু হঠাৎ মূত্রথলিটা নড়ে উঠল এবং তীরটির সাথে সাক্ষাত করতে ডুব দিল। রেজারের মতো ধারালো পাতলা তীরের মাথা এটাকে ভাগ করে খুলে দিল, ওটা বিস্ফোরিত হল এবং কাপড়ের টুকরার মতো বাতাসে ভেসে গেল।

আপনি বিজিত! সোক্কো তাদের চিৎকার করে ছেড়ে দিল। নেফার ধুনকটা ফেলে দিল এবং রথের দিকে দৌড় দিল, ম্যারনও তার পিছনে দৌড় দিল, তার আহত পাঁজর সামাল নিয়ে এবং জনতা উৎসাহ দিল যখন ডোভ ও ক্রুস একসাথে লাফিয়ে আগে বাড়ল। তাদের পিছনে ধাওয়াকারীদের চিৎকার হতাশ ও রাগান্বিত। কিন্তু নেফার পিছন ফিরে তাকাল না।

এক হাজার কদম সামনে ঝুলন্ত সেতুটা পর্বত থেকে পর্বতে ছড়িয়ে আছে, নিচে ভয়ংকর খাদ, কিন্তু ওটাতে পৌঁছার আগে তাদের আগুন অতিক্রম করতে হবে।

*

শাবাকো ছিল সেতু পারাপারের আম্পায়ার। ঘোড়ার পিঠে করে সে বল্লমের পরীক্ষা থেকে দৌড়ে এখানে এসেছে। এখন সে তার পরবর্তী অবস্থান সেতুতে নিয়েছে। এটা হল সমগ্র রেড রোডের সবচেয়ে কঠিন ধাপ।

শিক্ষানবীশদের এখানে একটা পছন্দ থাকে। তারা সেতুতে পৌঁছাতে আগুনের দেয়াল এড়িয়ে যেতে পারে। পরিবর্তে তাদের দীর্ঘ ঘুরে যেতে হবে এবং আরো নিচে উপত্যকা পেরোতে হবে যেখানে পর্বত সুন্দর ভাবে দূরে চলে গিয়েছে। যাই হোক, এটা কোর্সে প্রায় দুই ক্রোশ যোগ করে।

শাবাকো সেতুর মাথায় দাঁড়িয়ে নেফারের রথটাকে ধনুক পরীক্ষা স্থল ত্যাগ করতে দেখল এবং পিছনে খুব কাছে ধাওয়াকারীরা দৌড়ে প্রপাতের কিনারা দিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে।

শাবাকোর সহানুভূতি তার ফারাও এর সাথে। যাই হোক, রেড গডের প্রতি তার আনুগত্যতা তার চেয়ে বেশি জোরালো। যদিও সে তার পুরো হৃদয় দিয়ে নেফারকে বিজিত দেখতে চায়, তবুও তাকে সহানুভূতি দেখানোর সাহস সে করে না। তা তার পবিত্র শপথের বিরুদ্ধে যাবে এবং তার অমর আত্মাকে বিপদে ফেলবে।

সে বেড়াটা বিবেচনা করল। এর দৈর্ঘ্য বরাবর শাবাকোর লোকেরা গুটিসুটি মেরে জ্বলন্ত মশাল নিয়ে অবস্থান করছে। বেড়াটা একজন লোকের দ্বিগুণ লম্বা এবং শুকনো ঘাসের বান্ডিল দিয়ে তৈরি যা এই গরম, শুষ্ক বাতাসে দাহ্য পদার্থের মতো জ্বলে উঠবে। বেড়াটা অর্ধবৃত্তাকারে নির্মিত; প্রত্যেক প্রান্ত পর্বতের কিনার পর্যন্ত গাথা, যা তার বাহুতে সেতুটা ধরে আছে, এবং ঘুরে যাওয়ার কোন রাস্তা নেই। সেতুর মাথায় পৌঁছাতে শিক্ষানবীশদের অবশ্যই তা ভেঙে যেতে হবে।

শাবাকো অনিচ্ছুক ভাবে চিৎকার করে আগুন লাগানোর আদেশ দিল। মশালবাহীরা এর দৈর্ঘ্য ধরে দৌড় দিল, বেড়ার তলদেশে আগুন ধরিয়ে। সঙ্গে সঙ্গে তা জ্বলে উঠল। লালচে শিখা ও কালো ধোঁয়ায় ওটা হয়ে উঠল ভয়ংকর রক্তিম এক দেয়াল।

নেফার তাদের সামনে আগুনের দেয়াল উঠতে দেখল। যদিও সে তা আগে থেকে জানত তবুও এখন তার স্পৃহা ভয় পেয়ে কমে গেল এবং সে ঘোড়াগুলোর জন্য ভয় পেল কারণ তারা ইতোমধ্যেই অনেক পরিশ্রম করেছে। সে ক্রুসের কান খেয়াল করল এবং ওগুলোকে সতর্কতার সাথে সামনে পিছনে করতে দেখল যখন প্রাণীটা ধোঁয়ার গন্ধ পেল ও আগুনের শিখা জ্বলতে দেখল এবং বাতাসে তা উঠতে দেখল।

তাদের পিছনে ধাওয়াকারীরা খুব দূরে নয়। সে ডায়ামিওসের অবজ্ঞাপূর্ণ ব্যঙ্গ শুনল, দীর্ঘ রাস্তা নাও, নেফার সেটি। তোমার কোমল চামড়ার জন্যে আগুনটা খুব বেশি গরম।

নেফার তাকে অবহেলা করল এবং আগুনের দেয়ালটা পর্যবেক্ষণ করল, ওটার দিকে দ্রুত এগুতে লাগল। কোন দুর্বল স্থান ছিল না যা সে দেখতে পেল, কিন্তু সবচেয়ে কাছের প্রান্তটা প্রথমে জ্বলে উঠেছে এবং আগুন দ্রুত ও অধিক হিংস্রতায় তা পুড়িয়ে দিল। সে দেখল শুকনো ঘাসের ভারি এক বান্ডিলটা দেয়াল থেকে পরে গেল এবং একটা সরু ফাঁকা স্থান তৈরি করল যার মধ্য দিয়ে সে ওপাশের বাষ্প মন্দ তাপের অস্পষ্ট সেতুর মাথার সীমায় রাস্তা তৈরি করতে পারে।

সে ফাঁকা স্থানটার দিকে চালনা করল এবং পাশে থাকা ম্যারনকে বলল, তোমার মাথা ঢাক। তারা তাদের মাথায় কাপড় প্যাচালো এবং পানির থলে থেকে তাদের উপর পানির ঝাঁপটা দিল, মাথার কাপড় ও স্কার্ট ভেজালো।

চোখ বাঁধার কাপড় প্রস্তুত রাখ, নেফার ম্যারনকে বলল। তারা এখন এতো কাছে যে তারা অনুভব করল তাপ তাদের সাথে সাক্ষাৎ করতে বেরিয়ে আসবে এবং ক্রুস পদক্ষেপ ভাঙ্গল এবং লাফিয়ে উঠা আগুনের শিখার বাঁধায় বেঁকে বসল যা তার সম্মুখে ছিল।

উপরে চড়! নেফার আদেশ করল এবং দ্রুত ছুটন্ত অবস্থায় তারা ঘোড়াগুলোর মধ্যেই জোড়া দন্ডের উপর দৌড়ে গেল এবং তাদের পিঠে দুলে উঠল। নেফার ক্রুসের ঘাড়ে শুয়ে পড়ল এবং তার সাথে কথা বলল শান্ত ভাবে। সব ঠিক, আমার প্রিয়। তুমি চোখ বাধাটা চেন। তুমি জান আমি তোমাকে আঘাত করবো না। আমাকে বিশ্বাস কর কুস! আমাকে বিশ্বাস কর! এবং সে তার চোখে মোটা পশমি কাপড়টা বেঁধে দিল এবং হাঁটু দিয়ে আগাত করে তাকে জ্বলন্ত দেয়ালের সরু ফাঁকের দিকে চালাল এবং নেফার তার হাতের পিছনে ফোস্কা পড়া অনুভব করল। ক্রুসের কেশরের অগ্রভাগ কালো ও মচমচে হয়ে গেল আঁচে। কিন্তু উভয় ঘোড়া দৌড়ে চলল সাহসীর ন্যায়।

তারা প্রজ্বলিত ঘাসের দেয়ালে আঘাত করল এবং তাদের চারপাশে তা ছড়িয়ে পড়ল। নেফার তার চোখ আগুনের আঁচ অনুভব করল এবং সে তাদের কঠিনভাবে বন্ধ করল এবং ক্রুসকে উৎসাহ দিয়ে চলল। তারা অন্যপাশে বিস্ফোরিত হয়ে বের হল, স্ফুলিঙ্গ ও আগুন হেচড়ে নিয়ে।

নেফার তার হাতের নিচ দিয়ে পিছনে দেখল এবং দেখল ডায়ামিস ফাঁকের মধ্য দিয়ে তার রথটা লক্ষ্য করছে যা তারা জ্বলন্ত দেয়ালে সৃষ্টি করেছে। ডায়ামিওসের ঘোড়াগুলোর চোখ বাঁধা নয়, তারা আগুন দেখল এবং রাস্তা থেকে ভয় পেয়ে সরে গেল এবং পিছিয়ে যেতে ও সামনে-পিছে নড়াচড়া শুরু করল। ভয়টা যা তারা তাদের সামনে দেখল তা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য লড়াই করছে।

ডায়ামিওসের ঘোড়াগুলো অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। নেফার ডোভের পিছেনে থাকা ম্যারনের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলল, আমরা এখন একটা সুযোগ পেয়েছি। তারা সেতুর মাথার দিকে এগিয়ে চলল, ঘোড়াগুলোর লাগামের নিয়ন্ত্রণে নিল এবং একটু দূরে তাদের থামাল।

তাদের চোখ বাঁধা রাখ! নেফার আদেশ দিল। তাদের খাদটা দেখতে দিও না।

সেতুর সংকীর্ণ পায়ে চলার পথটা ইচ্ছে করেই এতোটাই সরু করে তৈরি করা হয়েছে যে একটা রথ পর্যন্ত পার হতে এবং এটার পুরো ভার বহন করতে পারবে বা। তাদেরকে যানটকে বিভক্ত করে তা খণ্ড খণ্ড করে বহন করে পার করতে হবে। যখন ম্যারন হার্নেস খুলে ফেলল এবং ঘোড়াগুলোর দুই পা বেঁধে দিল, নেফার তখন হাতুড়ি নিয়ে চাকার কেন্দ্রস্থলের ব্রোঞ্জের আটকে রাখার পিনগুলোকে বের করল, তারপর টেনে চাকাগুলোকে বের করল। সে তাদের একটা তুলে নিয়ে ম্যারনকে অন্যটা নিল, তারপর দৌড়ে গেল সেতুর দিকে।

সেতুটা আলতোভাবে দুলে উঠল। এটা তাদের দুজনের পাশাপাশি পার হওয়ার জন্য যথেষ্ট চওড়া নয়। নেফার ইতস্তত করল না বরং দৌড়ে সরু পথে বেরিয়ে গেল এবং ম্যারন খুব কাছ থেকে পিছনে তাকে অনুসরণ করল। সেতুটা তাদের নিচে নড়ে উঠল সাগরে একটা জাহাজের ডেকের ন্যায় কিন্তু তারা অতি কষ্টে ভারসাম্য ধরে রাখল এবং তাদের চোখ অন্য তীরে নির্দিষ্ট করল, কখনোই তাদের নিচে ভয়ংকর খাদের দিকে তাকাল না যা গিরিখাতের তীক্ষ্ণ অভিক্ষিপ্ত পাথরে সাজানো।

অবশেষে তারা অপর প্রান্তে পৌঁছে গেল, চাকাগুলোকে রেখে ফিরতে দৌড় দিল। জ্বলন্ত বেড়ায় আগুন তখন অনেক উঁচুতে এবং হিংস্র ডায়ামিওসকে অতিক্রম করতে দিচ্ছিল না যদিও সে তার দলকে নির্দয়ভাবে চাবুক মারছিল এবং চিৎকার করে গালি দিয়ে যচ্ছিল তাদের।

তারা পানির থলেগুলো পরিত্যাগ করল, সেই সাথে তীরের অবশিষ্টগুলো এবং অতিরিক্ত যন্ত্রপাতির সব, দুজনে একসাথে অবকাঠামো তুলে নিয়ে তা সেতুর উপরে বয়ে নিয়ে গেল। প্রতিটি সতর্ক পদক্ষেপ যা তারা নিল মনে হল তাতে এক জীবন লাগাল, কিন্তু অবশেষে তারা অন্য পাশে পৌঁছে অবকাঠামো রাখল এবং ফিরতি দৌড় দিল আবার। নেফার জোড়া দন্ডটা নিল এবং তারা আবার পার হল। এখন শুধুমাত্র ঘোড়াগুলোকে আনা বাকি।

যখন তারা ফিরতে শুরু করল তারা দেখল যে আগুন নিভে যাচ্ছে। তারা ঘোড়াগুলোর কাছে পৌঁছালো, ডোভ ও ক্রুস ধৈর্য ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের পা ও চোখ বাঁধা, তারা হাঁটুর বাঁধন খুলে দিল। ডোভকে প্রথমে পার করাও; নেফার আদেশ দিল। সে স্থির।

যখন নেফার তার বাহু ক্রুসের ঘাড় প্যাচিয়ে অপেক্ষা করছিল তখন ম্যারন ডোভকে সেতুর সরু পায়ে চলার পথে নিয়ে গেল। প্রাণীটা তার পায়ের নিচে নড়তে অনুভব করল, তার মাথা তুলল এবং সতর্কতায় নাক দিকে শব্দ করল ঘোঁত ঘোত করে। ম্যারন নরমভাবে তখন তার সাথে কথা বলল ও সতর্কভাবে অন্য কদম বাড়াল এবং আবার থেমে গেল।

তাকে দ্রুত করিও না; নেফার ডেকে বলল, তাকে তার নিজের মতো করে এগুতে দাও। প্রতিবার উঁচু পদক্ষেপে ডোভ এক-পা এক-পা করে এগোল। মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছে হঠাৎ সে জমে গেল এবং চার পায়ে কম্পমান হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। ম্যারন তার কপালে হাত বুলিয়ে দিল এবং ফিসফিসিয়ে তাকে কিছু বলল এবং সে এগুতে লাগল পুনরায়। অবশেষে সে অন্য পাশে পৌঁছে শক্ত মাটি অনুভব করল ও তার খুরের নিচে ডাকল এবং তার মাথা দুলালো স্বস্তিতে।

এখনো জ্বলন্ত বাঁধা দিয়ে আবদ্ধ ডায়ামিওস চিৎকার করছে, তারা তাদের দলের একটাকে পার করতে পেরেছে, আমাদের তাদের এখনই থামাতে হবে। রাসতাফা আমাকে তোমার ঘোড়াগুলো দাও। যদিও তারা আহত আমি তাদের চড়েই পার হব, এমনকি যদি তা তাদের হত্যা করেও।

নেফার পিছনে তাকাল এবং দেখল ডায়ামিওস ছাই এর জ্বলন্ত বিছানা দিয়ে আসছে। এটা তার ঘোড়ার হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছে গেল এবং পঙ্গু প্রাণীটা হোঁচট খেল এবং প্রায় পড়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ডায়ামিওস এটাকে ফুলিঙ্গের বর্ষণের মধ্য দিয়ে চালিয়ে আনল এবং চুল ও মাংস পোড়র দুর্গন্ধ বের হল তখন। ভয়ংকরভাবে আহত প্রাণীটা তাকে বয়ে নিয়ে এল তারপর ধপাস করে পড়ে গেল যখনই ওটা খোলা ভূমিতে পৌঁছাল। ডায়ামিওস লাফিয়ে ওটার পিঠ থেকে নেমে তার তলোয়ার মুক্ত করল এবং নেফারের দিকে দৌড় দিল।

নেফার তার নিজের তলোয়ার মুক্ত করল এবং খাদের ওপাশে ম্যারনকে ডেকে বলল, ফিরে এসো এবং ক্রুসকে নিয়ে যাও। আমি এই জারজটাকে খেলায় ভুলিয়ে রাখব। ডায়ামিওসের সাথে মিলতে সামনে এগুল সে। সে তার আক্রমণ স্বাভাবিক রাস্তায় মোকাবেলা করল এবং ফলাগুলো কর্কশ শব্দ করে উঠল এবং পূর্ণ পরিসরে তারা মারামারি করল। ডায়ামিওস ঘুরে গেল এবং আবার আঘাত হানল তার মাথা বরাবর। নেফার আঘাতটা আটকালো তারপর দ্রুত তার অস্ত্র চালনা করল, তাকে লাফ দিয়ে পিছিয়ে যেতে বাধ্য করল।

নেফার পিছনে দেখার জন্য এক মুহূর্ত সময় পেল এবং দেখল ম্যারন ইতোমধ্যে কুসকে দোদুল্যমান সরু পথে বের করে নিয়ে গেছে। কুস তার খুরের নিচে নড়া অনুভব করল। তার মাথা ঝাঁকাল এবং পিছু নেবার চেষ্টা করল।

যাও, ক্রুস! নেফার তার দিকে কঠোর ভাবে চিৎকার করল, এবং তার কণ্ঠের শব্দে ঘোড়াটা দৃঢ় হলো এবং সতর্ক ভাবে পা বাড়াল কাঠের আস্তরণের উপর দিয়ে।

ডায়ামিওস আবার এগিয়ে এল এবং নেফারকে তার মনযোগ তখন তার উপর নিবদ্ধ করতে হল। সে নেফারের গলা ও বুক বরাবর পরপর কয়েকটা দ্রুত আঘাতের লক্ষ্য স্থির করল এবং যখন নেফার তা আটকে ও ফিরিয়ে দিল সে ঘুরে গেল এবং তার গোড়ালির গাটের দিকে আক্রমণ করল। নেফার ফলার ঝিকঝিক করা বৃত্তের উপর দিয়ে লাফ দিল এবং তার নগ্ন কাঁধের দিকে এগিয়ে গেল। সে তাকে স্পর্শ করল এবং দেখল রক্ত তার তামাটে ও তৈলাক্ত মাংসপেশি দিয়ে বেরিয়ে আসছে।

কিন্তু মনে হল অগভীর ক্ষত, ডায়ামিওস তা অনুভব করল না। সে পূর্বের মত জোরালো ডাকে এগিয়ে এল। তারা আঘাতের পর আঘাত বিনিময় করল এবং কাটার জন্য আটকে দিল, তারপর ডায়ামিওস পিছু হটল এবং বাম দিক দিয়ে ঘুরল, তার পিছন থেকে চলার চেষ্টা করল এবং তাকে আলাদা করে ফেলল সেতুর মাথা থেকে। কিন্তু নেফার তার দিকে আবার এগিয়ে তাকে জায়গা দিতে বাধ্য করল।

এক মুহূর্তের বিরাম এবং নেফার দেখল যে শিখা নিভে গেছে, ঘাসের বেড়া প্রায় সম্পূর্ণ পুড়ে শেষ। অন্য ধাওয়াকারীরা জ্বলন্ত ছাই-এর বিছানা লাফিয়ে পার হচ্ছিল এবং লড়াইয়ে যোগ দিতে দৌড়ে আসছে, তার চতুর্দিকে বৃত্ত কর এবং তাকে কেটে ফেল। ডায়ামিওস তাদের উদ্দেশ্য চিৎকার করল যখন তারা দৌড়ে এল। নেফার পিছনে তাকাল এবং দেখল যে ম্যারন ক্রুসকে সরু পথের অনেকখানি নিয়ে গিয়েছে। ঘোড়াটা কাঁপছিল ও ঘামছিল তার খুরের নিচে নড়বড়ে ডেকের অনুভবে কিন্তু সে তার নিচে ভয়ংকর খাদ দেখতে পারছিল না।

ঠিক তখন অন্য ধাওয়াকারীরা দৌড়ে এল, তাদের ফলা ঘুরিয়ে এবং নেফারকে ব্যঙ্গ করতে করতে। এবার আমরা তোমার চুলের বিনুণী তোমার ডান রাজকীয় নিতম্বের উপরে ফুটো করে ঢুকাবো।

নেফার দ্রুত সেতুর উপরে ফিরে গেল। এখন তারা তার কাছে মাত্র একজন করে আসতে পারবে এবং বিদ্রূপ থেমে গেল। তারা সরু রাস্তার মাথায় জড়ো হয়ে থামল। সে আমাকে কেটে দিয়েছে, ডায়ামিওস বলল, তুমি কি ওর পিছু যাবে, রাসতাফা, যখন আমি তা বাধবো।

তার দাঁত দিয়ে সে তার কাপড়ের আঁচল থেকে এক টুকরো ছিঁড়ে অগভীর মাংসের ক্ষতের উপর তা বাঁধল। যখন সে এটা করছিল রাসতাফা তখন সেতুতে উঠল দৌড়ে। তার দাড়ি ছিল এবং দেখতে শ্যামবর্ণের। কালো ও রাগত দৃষ্টির একজন বিশাল মানুষ, কিন্তু ফেরিটের মতই দ্রুত। সে আন্দোলিত ডেকে সহজেই ভারসাম্য রাখল এবং নেফারের গলার দিকে আঘাত হানল, এতো জোরালো ভাবে তা এল যে নেফারকে আবার পিছাতে হল।

ক্রুস তার পিছনে খুব কাছাকাছি ফলার ঘর্ষণ ও চিৎকার শুনল এবং প্রতিবাদে পিছনে ধাবিত হল। সেতুটা লাফিয়ে উঠল এবং তার নিচে ওটা নড়ে চড়ে উঠল। এবং একটা ভয়ংকর মুহূর্তের জন্যে মনে হল ঘোড়াটা হয়তো তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবে এবং পাশ দিয়ে পড়ে যাবে। কিন্তু কোন অলৌকিক ভাবে সে তার চারপায়ে ভারসাম্য রাখল এবং কাঁপতে কাঁপতে দাঁড়াল হিংস্রভাবে দুল্যমান সরু পথটার উপর।

রাসতাফাও হোঁচট খেল এবং কিনারে টলমল করতে করতে দাঁড়ালো, সে তার বাহু বাতাসে ছড়িয়ে দিল তার ভারসাম্য ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করতে। নেফার তার দিকে দ্রুত ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং ফলাটা ঢুকিয়ে দিল তার উঁচু করা বাহুর নিচে। ব্রোঞ্জের ফলাটা পাজরের মধ্য দিয়ে পিছলে গেল এবং গভীরে চলে গেল। রাসতাফা তার দিকে মৃদু বিস্ময় নিয়ে তাকাল এবং বলল, লেগেছে, সেথের কসম, এটা আঘাত করেছে!

নেফার হেঁচকা টান দিয়ে ফলাটা বের করে নিতেই রাসতাফার হৃদপিন্ডের রক্ত এটার পিছনে ঝরে পড়ল। রক্তিম পদার্থটা বের হল দ্রুত বেগে। সে নড়বড়ে হয়ে গেল এবং পিছন দিকে পড়ে অতল গহ্বরে চলে গেল, হাত ও পা চাকার স্পোকের মতো ছড়িয়ে। তার কণ্ঠ ছিল বন্য, চিৎকার ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে গেল যখন সে পড়ে গেল এবং শব্দটা হঠাৎ বিছিন্ন হয়ে গেল। তার বর্ম গিরিখাতের পাথরে লেগে ঠনঠন শব্দ করল। তার সঙ্গীরা সেতুর মাথায় ইতস্তত করল, ঐ মৃত্যুর ভয়ে আতংকিত।

নেফার সুযোগটা নিল, পিছু ঘুরে ক্রুসের কম্পমন পশ্চাৎ দেশে হাত বুলালো, স্থির হও, ক্রুস, আমি এখানে, আমার প্রিয়, হাঁট। কুস তার কণ্ঠ পেয়ে শান্ত হল এবং তারপর যখন সেতুর বন্য ঘূর্ণন শান্ত হল, সে এক কদম সামনে বাড়ল, তারপর আরেক বার।

হাঁট, ক্রুস, হেঁটে এগিয়ে যাও। তারা প্রায় অর্ধেক রাস্তা অতিক্রম করেছে এমন সময় ম্যারন চিৎকার করে তাকে সতর্ক করল, তোমার পিছনে দেখো, ভ্রাতা।

নেফার ঠিক সময়ে ঘুরল অন্য একজন প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি হতে। নেফার তাকে নামে জানত। সে একজন লিবিয়ান দাস এবং তার স্বাধীনতার অধিকার চাচ্ছিল। ভয়হীন ভাবে সে সরু ডেকে দৌড়ে নেমে এল সোজা নেফারের দিকে। সে তার পুরো শক্তি ব্যবহার করল এবং নেফার শুধুমাত্র প্রথম আঘাতটা পাশে ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম হল। তারা ফলা আবদ্ধ করে একে অন্যকে জিঘাংসু আলিঙ্গনে আবদ্ধ করল তাদের মুক্ত হাত দিয়ে। তারা তাদের সবলে টান দিল এবং কুস্তি করল, ধাক্কা দিল সুবিধার জন্য। কুস তার পিছনে লড়াই শুনল এবং তা তাকে তাড়না দিল। সে আবার সামনে ঝুঁকে পড়ল আরো কয়েক পদক্ষেপ, অন্য তীরের নিরাপত্তার দিক দিয়ে।

নেফার আবার লোকটার মুখোমুখি হল, তার দাঁতগুলো কালো এবং অমসৃণ এবং তার নিঃশ্বাসে পঁচা মাছের গন্ধ। সে ঐ নোংরা তীক্ষ্ণ দাঁতগুলো নেফারের মুখে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল। একটা কুকুরের মতো তাড়া দিয়ে কামড়ে এল। কিন্তু নেফার পিছিয়ে গেল। তারপর সে তার কপাল বরাবর হেলমের চূড়া ও নাকের সংযোগের উপর সজোরে আঘাত করল। সে বুঝল লোকটার হাড় ও কোমলস্থি ভেঙ্গেছে এবং লোকটা তার মুঠি ছেড়ে দিয়ে পিছিয়ে গেল। সে তার পদ স্থাপন হারিয়ে ফেলল এবং নিজেকে স্থির করতে সেতুর পাশের রশি ধরল। তার পিঠ খাদের উপর নেমে গেল। নেফার তার আকড়ে রাখা আঙ্গুলগুলো মুক্ত করে দিল এবং সে পিছলে গেল বাতাসে চিৎকার করতে করতে।

মনে হল দীর্ঘ সময় ধরে পড়ল সে, তারপর অনেক নিচে পাথরে দুম করে পড়ার শব্দ হল

তার পিছনে সরু পথে তিনজন লোক ছিল ডায়ামিওসের নেতৃত্বে। তার ক্ষতটা সে বেঁধেছে এবং মনে হলো অক্ষত। কিন্তু তার দুই সঙ্গীর কি হয়েছে সে তা দেখেছে এবং এখন সে আরো বেশি সর্তক। নেফার তাকে আক্রমণ করল। হঠাৎ ম্যারন বিজয়ের চিৎকার দিল, আমরা পেরিয়ে গেছি, মহামান্য। এবং সে শুনল ক্রুসের খুর পাথুরে তীরে ঠনঠন আওয়াজ করছে। ক্রুস পেরিয়ে গেছে।

নেফার ঘুরে দেখল না কারণ ডায়ামিওসের ফলাটা তার চোখের সামনে ঝিকমিক করে উঠল রোদে। নেফার তখন চিৎকার করে বলল, সেতু কেটে দাও ম্যারন, প্রধান অবলম্বনটা কেটে দাও এবং তাকে পড়ে যেতে দাও।

ডায়ামিওস আদেশটা শুনল এবং বিপদসংকেতে লাফিয়ে পিছু হটল। সে তার কাঁধের উপর দিয়ে পিছনে দেখল এবং পরিমাপ করল সে সরু পথে কতটুকু চলে এসেছে ও অন্য প্রান্ত কত দূরে।

ম্যারন দুটো পুরু রশির উপর দাঁড়াল সেগুলো সরু পথের সম্পূর্ণ ভার বহন করছে। সে একটা কোপ দিল এবং তার প্রথম আঘাত অর্ধেক পর্যন্ত দেবে গেল। তম্ভগুলো ফট করে শব্দ করে আলাদা হয়ে গেল এবং মিলিত হওয়া সাপের মতো খুলতে শুরু করল। ক্ষীণ ভয় ডায়ামিওসের ঘর্মাক্ত চেহারায় খেলল এবং ঘুরে পালাল, তার সঙ্গীরাও তার সাথে সরু পথে ফিরে গেল। নেফার ঘুরে দৌড়ে ম্যারনের সামনে চলে এল। সে সেতুর প্রান্তে পৌঁছে লাফ দিয়ে নিরাপদ স্থানে। গেল। সঙ্গে সঙ্গে তখন ম্যারন অন্য প্রধান অবলম্বনটা কেটে দিল এবং সমগ্র সেতুটি কেঁপে উঠল। তারপর ভয়ংকরভাবে এক দিকে কাত হয়ে থাকল ওটা। ডায়ামিওস নিজেকে টেনে শক্ত ভূমিতে তুলল, আর ঠিক তখন সেতুটা বেঁকে অতল গহ্বরে হারিয়ে গেল। নেফার গিরিখাতের অপর প্রান্তে তা দেখতে কয়েক সেকেন্ড নষ্ট করল। সে দেখল ডায়ামিওস ও বেঁচে যাওয়া ধাওয়াকারীরা ইতোমধ্যে তাদের রথে চড়ে বসেছে এবং জ্বলন্ত ঘাসের বেড়ার শেষ ধোঁয়ার মধ্যে দিয়ে এক সারি করে গতি তুলে এগিয়ে যাচ্ছে। গিরিখাতের কিনার বরাবর রাস্তা অনুসরণ করে চলছে তারা যা তাদেরকে ওপাশে নিয়ে যাবে যেখানে পর্বতগুলো সমতল হয়ে গেছে। সেখানে পৌঁছে তারা আবার তাদের ধাওয়া করতে পারবে।

নেফার ম্যারনকে দ্রুত ঘোড়ার হার্নের্স বাধতে তাড়া দিল এবং হেঁচকা টান দিয়ে ওগুলোকে দীর্ঘ জোড়া দন্ডে তুলল। তারপর হামাগুড়ি দিয়ে পাদানিতে উঠে নির্দেশিত পতাকার সারি ধরে চলতে শুরু করল। তারা এ সমতলের উপর ঘোড়াগুলোকে সর্বোচ্চ গতিতে তুলল, কারণ এটার শেষে তাওরিনের খামা এবং ইনডাসের ড্রোসা অপেক্ষা করছে। ঘোড়াগুলো তখন দীর্ঘ বিশ্রাম পাবে যখন তাদের চালক বৃত্তে পৌঁছে কুখ্যাত এই দুই আর্টেলার তলোয়ারধারীর সাথে লড়বে। নেফার গতি তুলল এবং নির্দেশিত পতাকাগুলো দ্রুত ফেলে এগিয়ে চলল। তারা শেষ ঢালের শীর্ষে উঠল এবং দেখল তাদের সামনে দীর্ঘ সরু উপত্যাকার অপর প্রান্তে গালালা শহর তার ফটক নিয়ে তাদের স্বাগত জানাতে সম্পূর্ণ খুলে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু উপত্যকার মাথায় তাদের ও শহরের মাঝে, পাহাড়ের অগভীর অংশে লোকের বৃহৎ ভীড়। মনে হল যেন শহরে প্রতিটি শেষ সদস্য শহর থেকে বেড়িয়ে এসেছে তলোয়ারের পরীক্ষা দেখার জন্য। তারা দ্রুত চালিয়ে এল এবং জনতার হৈ চৈ অভিবাদন জানাল।

জনতার ভিড়ের মধ্যে দিয়ে একটা সরু রাস্তা কাঠের রেলিং দিয়ে সীমা চিহ্নিত করা। তারা কেন্দ্রস্থলের দুটো সাদা পাথরের বৃত্তে গেল এবং লাফিয়ে নিচে নামল, এবং সহিসরা দৌড়ে আগে বাড়ল ঘোড়াগুলোকে ধরতে, নেফার ম্যারনকে আলিঙ্গন করল তারা।

তুমি মারাত্মকভাবে আহত; নেফার ম্যারনকে ফিসফিসিয়ে বলল। এতে কোন লজ্জা নেই। কারণ এটা একটা ক্ষত যা সম্মানের সাথে গৃহীত কিন্তু এটা তোমাকে ব্যাহত করবে। তোমাকে ড্রোসার মোকাবেলা করতে হবে না। সে দ্রুত ও শক্তিশালী এবং পুরোপুরি বর্ম পরিহিত। তার থেকে দূরে থাকবে এবং ভাগতে থাকবে যততক্ষণ না আমি তোমাকে সাহায্য করতে না আসি।

তারপর তারা আলাদা হলো। প্রত্যেকে তাদের নিজেদের আম্পায়ার কর্তৃক নির্ধারিত বৃত্তের দিকে গেল এবং নেফার সাদা রঙের পাথরের সারির কাছে থামল ও কেন্দ্রস্থলে যোদ্ধার দিকে তাকাল। তাওরিনের খামা পুরো বর্মে সজ্জিত, শিরস্ত্রাণ বুকে ও পায়ে বাঁধা। যদি নেফার ও ম্যারন একই নিরাপত্তা চাইত তবে শুরু থেকে তাদের রথে তা বহন করতে হত। কিন্তু দুটি পোশাকের ওজন এমনকি ক্রুসের শক্তিকেও শুষে নিত। পাথরের বৃত্তের কিনারা হতে নেফার তার প্রতিপক্ষকে পর্যবেক্ষণ করল। খামার হেলমেটা তার বিভৎস মুখের কানের উপরে পর্যন্ত ছড়ানো এবং নাকের অংশটা ঈগলের মতো চোখা। চোখটা যা ফুটোর পিছনে ঝিকমিক করে উঠলছিল অমানবিক ও কৃপাহীন দেখাল। তার বুক ব্রোঞ্জের বর্মে সুরক্ষিত। তার দস্তানা সোনালি মাছের আঁশে ঢাকা। সে তার বাম কাঁধে একটা ছোট বৃত্তাকার ঢাল বহন করছে।

গলা, কবজি, বগল, গোড়ালির গাট এবং চোখ। টাইটা নেফারকে নির্দেশনা দিয়েছে, এছাড়া সব ঢাকা। নেফার তার মাথার উপর লসট্রিসের মাদুলিটা তুলল এবং সোনার চেইনটা তার বাম কব্জিতে প্যাঁচালো। তারপর সে ক্ষুদ্র সোনার আবরণটা তার ঠোঁটের কাছে ধরল এবং ওটাতে চুমু খেল। সে সাদা পাথরের উপর দিয়ে পা বাড়াল এবং সামনে এগোলো তাওরিনের খামাকে মোকাবেলা করতে।

তারা ডান দিক দিয়ে একবার ঘুরল, তারপর ফিরল এবং হঠাৎ খামা আঘাতের পর আঘাত ও কোপের উপর কোপ দিতে লাগল, সেগুলো এতো দ্রুত ছিল যে চোখ এড়িয়ে যায়। বর্মের ওজন বহন করে নেফার তাকে এতো দ্রুত হওয়ার আশা করে নি। তাকে হারাতে তাকে তার সব দক্ষতা ও শক্তি প্রয়োগ করতে হবে এবং এখনই সে তার চামড়া দেহ বর্মের মধ্য দিয়ে একটা কোপ খেল যা তার পাজরে লাগল। সে গরম রক্ত তার টপটপ করে ঝরতে অনুভব করল এবং আবার বৃত্তাকারে খামা ঘুরল।

জনতা চিৎকার ও গর্জন করছিল। তাদের চতুর্দিকে একটা সাগরের ঝড়ের মত তা মনে হল। কিন্তু হঠাৎ নিরবতায় যখন তারা চুপ হল সে ব্যথার একটা চিৎকার শুনল। অন্য বৃত্ত থেকে তা এল এবং সে ম্যারনের কণ্ঠ চিনল। ম্যারন একটা আঘাত পেল এবং শব্দটায় মনে হল আঘাত মারাত্মক। তার নেফারের সাহায্যে দরকার। সম্ভবত তার জীবন এর উপর নির্ভর করছে। কিন্তু নেফারের নিজের জীবনই এখন ভয়ংকর ঝুঁকির মধ্যে। কারণ সে পূর্বে কখনোই খামার মতো প্রতিপক্ষের সাথে মোকাবেলা করেনি। এমনকি টাইটও তার কোন দুর্বলতা সম্পর্কে ভবিষৎবাণী করতে পারেনি। তারা আবার এক সাথে বৃত্তের মধ্যে আক্রমণ চালাল ধাতুর উপর ধাতুর আঘাতে ঢং ঢং শব্দ তৈরি করল। হঠাৎ নেফার প্রতিপক্ষের একটা ক্ষুদ্র দোষ লক্ষ্য করল। যখন খামা মাথা নিচু করে কোপ দেয় তখন তার বাম দিকটা এক মুহূর্তের জন্য খুলে যায় এবং তার মাথা তখন সামনে বাড়ায় একটা অস্বস্তিকর ভঙ্গিতে।

নেফার জানে সে বেশিক্ষণ টিকতে পারবে না। খামা তার তুলনায় অতিরিক্ত দক্ষ ও শক্তিশালী।

সব কিছু পাশার একটা চালের উপর, সে ঝুঁকিটা নিল এবং তার ডান নিতম্ব অরক্ষিত রাখল টোপ হিসেবে। খামা সেদিকে এগিয়ে গেল নিচু কোপ দিতে। তার সম্মুখ খুলে গেল এবং তার মাথা সামনে এগোলো। এর জন্য নেফার প্রস্তুত ছিল, সে তার নিতম্ব দুলিয়ে আঘাত এড়িয়ে গেল এবং ফলাটা তার স্কার্টের আঁচল ভেদ করে গেল রক্ত না ঝড়িয়েই।

লসট্রিসের সোনার মাদুলিটা ঝিকমিক করে উঠল যখন সে তা ঘুরালো, তারপর নেফার চেইনটার শেষ প্রান্ত দিয়ে গুলতির আঘাতের মতো তাকে কশাঘাত করল। চেইনটাকে ব্যবহার করল আঘাতটার গতি সঞ্চার করতে। এটা রোদে আলোর শানিত রশ্মি হয়ে গেল যাতে খামার হেলমেটের অক্ষি কোঠার ঝলসে উঠল এবং তীক্ষ্ণ ধাতব প্রান্ত তার অক্ষি গোলকে ঢুকে গেল।

খামা চোখের জেলি ও রক্ত তার মুখোশের ভেতর দিয়ে মিশ্রণ হয়ে ঝরতে লাগল, সে পিছিয়ে গেল। অন্ধ হয়ে গেল সে এবং ব্যথায় কুঁকড়ে গেল। তার হেলমেট তীব্র টান দিয়ে খোলার চেষ্টা করল তার বিস্ফোরিত চোখ ধরার জন্য। যখন তার হেলমেটের প্রান্ত উঠল এবং তার গলা উম্মোচিত হলো, নেফার তার তলোয়ারের ডগা তার গলার মধ্য দিয়ে ঢুকিয়ে দিল বৃদ্ধাঙ্গুলের সমান প্রশস্ত করে। অগ্রভাগটা তার মাথার পিছনে কোনাকুনি চলে গেল এবং খামা তার বাহু প্রসারিত করে পড়ে মারা গেল। তার বর্ম মাটিতে ধুকে ঝনঝন শব্দ করার পূর্বেই নেফার মৃত দেহটাকে ফেলে রেখে চলে গেল এবং কবজের চেইনটা তার কজ্বিতে আবার প্যাচালো ও বৃত্ত থেকে দৌড়ে বের হল। সে অন্য বৃত্তে পৌঁছানোর চেষ্টা করল, সেখানে সে জানত ম্যারন মারাত্মক বিপদে। কিন্তু লোকের ভিড় তাকে বাধা দিল সে রাস্তা পরিষ্কার করতে সে তলোয়ার দোলানো এবং দর্শকেরা তার সামনে চিৎকার করে পালাল। সে সরু স্থান দিয়ে ভেঙ্গে চলল এবং দেখল দ্বিতীয় বৃত্তে ম্যারন তার অস্ত্র হারিয়েছে এবং তার ডানদিকের একটা মারাত্মক আঘাত থেকে খুব রক্ত ঝরছে ও একটা কোপ তার কানের অর্ধেক কেটে দিয়েছে। ড্রোসা হাসছিল, ষাঁড়ের মতো গর্জন করছিল খুনের আনন্দে। ড্রোসার পিঠ নেফারের দিকে ঘোরানো ছিল। নেফার তার দিকে তাকিয়ে এগোলো এবং তার বর্মের আটেক রাখা ফিতার দিকে আঘাতের লক্ষ্য স্থির করল। একটা বন্য প্রাণীর মতো সহজাত প্রবৃত্তি নিয়ে ড্রোসা বিপদ অনুভব করল এবং তার মুখোমুখি হতে ঘুরল। নেফারের আঘাতটা ধাতব রুক্ষ বর্মে লাগল এবং একপাশে সরে গেল এবং ড্রোসা তার মাথা বরাবর ভয়ঙ্কর কোপ দিতে উদ্যত হল। নেফার লাফিয়ে উঠল এবং পিছিয়ে গেল এবং তারা একে অপরকে ঘিরে বৃত্তাকারে ঘুরল।

ম্যারন তার সুযোগ দেখল এবং তলোয়ার তুলতে ঝুকল যা সে ফেলে দিয়েছিল কিন্তু ড্রোসা তার দিকে লাফিয়ে উঠল। ম্যারন এতো দুর্বল ছিল যে সে পিছনে বেঁকে পড়ে গেল। ড্রোসা লাথি দিয়ে পড়ে থাকা তলোয়ারটা বৃত্তের বাইরে ফেলে দিল এবং তার পা ম্যারনের দুই কাঁধের মাঝে রাখল এবং নিচের দিকে চেপে ধরল।

দেখুন মহান ফারাও, সমস্ত দুনিয়া ভয় পায় যাকে, আমার কজার মধ্যে আপনার বাজে ছেলেটাকে পেয়েছি। সে আঘাত করার ভান করল কিন্তু তলোয়ারটা ম্যারনের ঘাড়ের পেছনে থামিয়ে ফেলল। আমি কি আপনাকে তার মাথা দিব? একজন রাজার জন্য সঠিক উপহার।

নেফার তার মধ্যে চরম রাগ অনুভব করল এবং ড্রোসাকে ম্যারনের ধরাশায়ী দেহের উপর থেকে সরিয়ে দিতে সে ছুটল।

আকস্মিক ভাবে ম্যারন হাত বাড়ালো এবং ড্রোসার গোড়ালির গাঁট তার রক্তাক্ত হাত দুটো দিয়ে ধরে ফেলল এবং তাকে হোঁচট খাওয়ানোর চেষ্টা করল। ড্রোসা হোঁচট খেল, গালি দিল এবং লাথি মেরে তার পা মুক্ত করল। কিন্তু এক মুহূর্তের জন্য সে ভারসাম্যহীন হল এবং নেফার সুযোগটা কাজে লাগাল এবং দৌড় দিল। সে তার কণ্ঠে নিশানা করল। তার হেলমেটের চিবুকের টুকরো ও হুকের প্লেটের মধ্যকার ফাঁকা দিয়ে ড্রোসা মুচড়ে সরে গেল এবং নেফারের তলোয়ারের ডগাটা শব্দ করে বাজল ধাতু উপর।

নেফার হত্যা করার জন্য তার সুযোগটা নষ্ট করেছে। কিন্তু সে দ্রোসাকে তার শিকারের উপর থেকে সরিয়ে দিয়েছে এবং ম্যারন হামাগুড়ি দিয়ে উঠে দাঁড়াল এবং নেফারের পিছনে চলতে লাগল তাকে সুরক্ষিত ঢাল রূপে ব্যবহার করে।

তারা আবার চক্কর দিল। নেফার জানত সে আশা করতে পারে না ড্রোসার মতো একজন মানুষ তাকে আরেকটি সুযোগ দিবে। হতাশায় সে আবার মাদুলিটা দিয়ে চেষ্টা করল। স্বর্ণের চেইন ধরে দুলাল এবং ড্রোসার হেলমেটের সংকীর্ণ ফাটল লক্ষ করল। তারা চক্কর দিল ও আক্রমণের ভান করল। ড্রোসা সহজেই নড়াচড়া করছিল। কিন্তু ম্যারনকে রক্ষা করার প্রয়োজনে নেফার বাধাগ্রস্ত হছে। সে কোন আক্রমণ রচনা করতে পারল না, ম্যারনকে অরক্ষিত রেখে।

ধাওয়াকারীরা! ভিড়ের কেউ চিৎকার করল এবং প্রতিটি মাথা দুলে উঠল এবং দীর্ঘ উপত্যাকার মাথার ঢালের চূড়ার দিকে মুখ তুলল। ডায়ামিওসের রথ আকাশসীমার উপর দিয়ে দৌড়ে আসছে। সেতুর মাথায় তার অপমানের শোধ নিতে সে উদগ্রীব, কঠোর গতিতে অন্যদের থেকে এগিয়ে সে। তাদের দিকে তার গতির সর্বোচ্চে সে আসছে।

আপনি আমার অধিকার মহান মিশর! ড্রোসা নেফারকে উপহাস করল। আমি ডায়ামিওসের মতো একটা ভুইফোড়কে আপনার বিনুণী নিয়ে যেতে দেব না আমার হাত থেকে।

সে নির্মমভাবে নেড়ে উঠল এবং নেফারতার ধূসর চোখে শীতল সংকল্প দেখতে পেল যেগুলো তাকে হেলমেটের সংকীর্ণ ফাঁক দিয়ে দেখেছে।

নেফার ফিসফিসিয়ে ম্যারনকে বলল, যদি আমি পড়ে যাই তবে বৃত্ত থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিজেকে বাঁচিও।

না ফারাও! আমি আপনার সাথে স্বর্গের পথে বর্শা বাহক হিসেবে ভ্রমণ করবো; ম্যারন নরম স্বরে বলল এবং তার শক্তি তাকে ব্যর্থ করল। তার পাগুলো তার নিচে নড়ে উঠল এবং রক্ত ঝরে ঝরে সে মাটিতে পড়ে গেল। ড্রোসা সুযোগটা কাজে লাগাল। নেফারের উপর তার তলোয়ার ঝনঝন করে উঠল এবং নেফারের তলোয়ারের উপর তাম্রকারের হামারের মতো শব্দ করল যখন সে তা ফেরাল।

প্রতিটি আঘাতে কর্কশ শব্দ হল এবং নেফারের ডান হাত থেকে কাঁধ পর্যন্ত তা অবশ করে দিল এবং সে বুঝল সে আর বেশিক্ষণ টিকবে না। এখনও সে দেখল ড্রোসার চোখ প্রতিআঘাত পর্যবেক্ষণ করছে এবং তাদেরকে সরু ও জ্বলতে দেখল যখন সে নিজে তাকে হত্যা করার আঘাতের জন্য একত্রিত করল।

এটা উঁচু থেকে এল আকাশ থেকে বজ্রের ন্যায় এবং নেফার জানত সে ঘুরে যেতে পারবে অথবা এক হাতে তা থামাতে পারবে না, এটা খুব জোরালো ছিল।

তাই সে তার তলোয়ারের হাত দৃঢ় করল বাম হাত দিয়ে ডান হাতের কব্জি ধরে, সেই হাত দিয়ে যে হাতে সোনার মাদুলিটা ধরা।

দুটি তলোয়ার একত্রিত হল শক্তি নিয়ে, উভয় ফলা পুরোপুরি ভেঙে গেল এবং দূরে সরে গেল, সাদা পাথরের বৃত্তের বাইরে।

এক আঘাতেই তারা দুজনেই নিরস্ত্র হয়ে গেল এবং এক মুহূর্ত বিস্ময়ে একে অন্যের দিকে চেয়ে রইল। নেফার প্রথমে সামলে নিল এবং ড্রোসার মাথা বরাবর তলোয়ারের বাট সজোরে নিক্ষেপ করল। সহজাত ভাবেই ড্রোসা চোখ মিটমিট করে মাথা নিচু করল। নেফার তাকে তীব্র বেগে আক্রমণ করল এবং তার বুকে বুক ঠেকিয়ে দাঁড়ালো। মন্দিরের এক জোড়া নৃত্য শিল্পীদের মতো তারা একসাথে ঘুরলো, একে অন্যকে নিক্ষেপ করার চেষ্টা করছে। নিজেকে রক্ষা করার জন্য নেফারের কোন অস্ত্র ছিল না, লসট্রিসের মাদুলি ছাড়া। তার সব শক্তি একত্রিত করে সে কোন মতে স্বর্ণের চেইনের একটা ফাঁদ ড্রোসার হেলমেটে নিক্ষেপ করতে পারল। সে তার কব্জিতে তা প্যাচিয়ে চেইনটাকে নিচের দিকে ঠেলা দিল যতোক্ষণ

হঠাৎ করে হেলমেটের প্রান্তের নিচে ফাঁকা স্থানটা খুঁজে পেল এবং ড্রোসার ঘাড়ে আটকে গেল। নেফার টান দিল এবং চেইনের প্রান্ত করাতের মত চালাল এবং বুঝল সোনার আংটা জীবন্ত মাংসে গভীর ভাবে কামড়ে দিল।

ড্রোসা দম নিল, তার মুঠি খুলে দিল এবং উভয় হাত বাড়িয়ে দিল মুক্ত হওয়ার জন্য। সে নেফারের কব্জি ধরল এবং তাকে তার গলা থেকে ধাক্কা দিয়ে সরানোর চেষ্টা করল। কিন্তু এটা ফাঁসটাকে কাটার ক্ষমতা আরো বাড়িয়ে দিল। হেলমেটের সংকীর্ণ ফাঁকা দিয়ে তাকিয়ে নেফার দেখল ড্রোসার চোখগুলো তাদের কোঠর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে এবং রক্তে ফুলে উঠল। নেফারের কব্জি ধরে ড্রোসা হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। নেফার তার সামনে দাঁড়াল এবং তার কব্জি ঘুরাল, চেইনটাকে শক্ত করল যতক্ষণ না হঠাৎ সে অনুভব করল বিৎসভাবে কিছু কেটে গেল এবং ড্রোসার শ্বাস বিস্ফোরণের মতো ফেটে পড়ল তার ছিন্ন শ্বাসনালি হতে। তার শ্বাসনালি পুরোপুরি কেটে গেছে এবং সে ধীরে ধীরে নেতিয়ে পড়ল। যখন নেফার দুলতে দুলতে পিছু এল সে আম্পায়ারের চিৎকার শুনল। আপনি মুক্ত ও অবাধ। সে রক্তাক্ত সোনার চেইনটা পিছন দিয়ে তার মাথার উপর দিয়ে পড়ল। তখন সে পাগল হওয়া জনতার মাথার উপর দিয়ে তাকাল, পাহাড়ের ঢালের দিকে। ডায়ামিওসের রথ এরই মধ্যে অর্ধেক পথ চলে এসেছে এবং পূর্ণ গতিতে সোজাসুজি তার দিকে আসছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *