৬. কিরীটী বাসায় ফিরে এলো

কিরীটী বাসায় ফিরে এলো যখন রাত প্রায় নটা।

রজতবাবুর ঘরে আলো জ্বলছে দেখে কিরীটী দাঁড়ালো দরজাগোড়ায়। রজতবাবু তা হলে ফিরেছেন! পরশু যে সেই দক্ষিণ কলকাতায় কাজ আছে বলে চলে গিয়েছিলেন, এ দুদিন আর ফেরেননি। রজতবাবুর গলা কানে এলো, বেশ ভালো করে বাঁধ –রাস্তায় যেন আবার খুলে না যায়।

রজতবাবুর ঘরের দরজাটা অর্ধেকটা প্রায় খোলাই ছিল। সেই খোলা দ্বারপথে উঁকি দিয়ে কিরীটী দেখল, রজতবাবু মেসের ভৃত্য রতনের সাহায্যে বাক্স-বিছানা সব বাঁধাছাঁদা করছেন।

ঘরের মধ্যে গিয়ে প্রবেশ করল কিরীটী, কি ব্যাপার রজতবাবু বাঁধাছাঁদা করছেন সব?

হ্যাঁ মিঃ রায়, এ বাসা ছেড়ে আমি আজ চলে যাচ্ছি।

চলে যাচ্ছেন!

তা নয়ত কি? মশাই অপমান সহ্য করেও পড়ে থাকবো?

তা কোথায় যাচ্ছেন?

বালিগঞ্জে—একেবারে লেক অঞ্চলে। দোতলার ওপরে একটা চমৎকার ফ্ল্যাট পাওয়া গিয়েছে—ভাড়াটা অবশ্য কিছু বেশী। তা কি করা যাবে, এ হতচ্ছাড়া জায়গায় কোন ভদ্রলোক থাকে। যেমন বাড়ি তেমনি বাড়িওলা! বেটা অভদ্র ইতর

কবিরাজ মশাইয়ের ওপরে বড্ড চটে গিয়েছেন দেখছি

চটবো না! অভদ্র ইতর কোথাকার!

মেসের দ্বিতীয় ভৃত্যও এসে ঘরে প্রবেশ করল, ট্যাক্সি এসে গেছে, বাবু!

ট্যাক্সি গলির মধ্যে এনেছিস তো?

হ্যাঁ স্যার একেবারে দোরগোড়ায় নিয়ে এসেছি। বলতে বলতে ভৃত্যের পশ্চাতে যে লোকটি ঘরে এসে প্রবেশ করল, কিরীটী কয়েকটা মুহূর্ত তার মুখের দিকে নিজের অজ্ঞাতেই তাকিয়ে থাকে।

বসন্ত-ক্ষতচিহ্নিত সেই গোলালো মুখ গঙ্গাপদর। W. B. T. 307-এর ড্রাইভার গঙ্গাপদ।

জিনিসপত্র কি কি যাবে? গঙ্গাপদ আবার প্রশ্ন করে।

বিশেষ কিছু নয়। এই যে দেখছো ঐ দুটো সুটকেসু ঐ বেডিংটা, ব্যাস!

অতঃপর ভৃত্যের সঙ্গে ধরাধরি করে গঙ্গাপদই মাল ট্যাক্সিতে নিয়ে গিয়ে তুলল।

রজতবাবুর ঘরটা খালি হয়ে গেল।

রাত দশটার সময় ঐ রাত্রেই সিঁড়িতে কবিরাজ মশায়ের খড়মের খটখট শব্দ ধ্বনিত হয়ে উঠলো।

কৌতুহল দমন করতে না পেরে কিরীটী বাইরে এসে দেখলে ভিষগরত্ন রজতবাবুর খালি ঘরটার দরজায় একটা তালা লাগাচ্ছেন। কিরীটীকে দেখে কবিরাজ মশাই বললেন, শুন্য ঘর থাকা ভাল নয় রায় মশাই। তাই তালাটা লাগিয়ে দিয়ে গেলাম। মূষিকের উপদ্রব হতে পারে।

আরো দিন দুই পরে। বেলা দ্বিপ্রহর। মেসের ভৃত্য বলাই আগেই চলে গিয়েছে, রতনও যাবার জন্য সিঁড়িতে নেমেছে, পিছন থেকে কিরীটীর ডাক শুনে রতন ফিরে দাঁড়াল।

রতন!

কি বলছেন? রতনের মুখে সুস্পষ্ট বিরক্তি। ভাবটা– যাবার সময় আবার পিছু ডাকা কেন!

যাবার পথে অন্নপূর্ণা রেস্তোরাঁয় বংশীবদনকে বলে যেও তো এক কাপ চা আমার ঘরে দিয়ে যেতে।

আজই প্রথম নয়। মধ্যে মধ্যে এরকম দ্বিপ্রহরে কিরীটীর চায়ের প্রয়োজন হয় এবং বখশিশের লোভে বংশীবদন দিয়েও যায় চা।

চার পয়সা চায়ের কাপের দামের উপর আরো তিন আনা উপরি লাভ হয় বংশীবদনের। পুরো একটা সিকিই দেয় কিরীটী।

যে আজ্ঞে। বলে রতন সিঁড়ি দিয়ে নেমে চলে গেল।

মিনিট কুড়িক বাদেই বংশীবদন এক কাপ চা নিয়ে এসে কিরীটীর ঘরে প্রবেশ করল।

বাবু, চা

চা-পান করতে করতে কিরীটী বংশীবদনের সঙ্গে আলাপ চালাতে লাগল।

দুচারটা সাধারণ কথাবার্তার পর হঠাৎ কিরীটী প্রশ্ন করে, এ পাড়ার ট্যাক্সি ড্রাইভার গঙ্গাপদকে চিনিস বংশী?

কোন গঙ্গাপদ? ঐ যে হদকো মোটা কেলে লোকটা?

হ্যাঁ।

খুব চিনি। ডেকে দেবো নাকি লোকটাকে? গাড়ি চাই বুঝি?

হ্যাঁ, তোর সঙ্গে আলাপ আছে নাকি?

না। তবে কত্তার সঙ্গে খুব ভাব। মাঝে মাঝে রাত্রে কত্তার ঘরে আসে যে!

কে, ভূপতিবাবুর সঙ্গে?

হ্যাঁ।

তোর কত্তার ঘরে রাত্রে আর কে কে আসে রে?

ঐ গঙ্গপদই আসে বেশী। আর কই কাউকে তো আসতে দেখিনি বড় একটা, তবে মাঝে মাঝে এই মেসের রজতবাবু যেতেন।

রজতবাবু, যেতেন!

হ্যাঁ।

ট্যাক্সি বুঝি গঙ্গাপদরই?

বাবু, শুনেছি কোন এক বাবুর। গঙ্গাপদ তো মাইনে-করা লোক।

খুব ভাড়া খাটে ট্যাক্সিটা, নারে?

ছাই! ভাড়া আর খাটে কোথায়? তবে হ্যাঁ, মধ্যে মধ্যে সন্ধ্যারাত্রে চলে যায় ফেরে পরের দিন আবার সন্ধ্যায়!

ভাবছি কাল একবার ট্যাক্সিটা ভাড়া নেবো। পাঠিয়ে দিতে পারিস ওকে একবার?

কাল বোধ হয় ও যেতে পারবে না বাবু!

কেন?

কাল রাত্রে গঙ্গাপদ যে বলছিল, পরশু মানে কাল রাত্রে ভাড়ায় যাবে। ফিরবে পরদিন– সারা রাত ভাড়া খাটালে অনেক পায় কিনা।

চা খাওয়া হয়ে গিয়েছিল। একটা সিকি ও চায়ের কাপটা নিয়ে বংশীবদন চলে গেল।

পরের দিন রাত তখন সোয়া আটটা হবে। কিরীটী এক কাপ চা নিয়ে রেস্তোরাঁর দরজার ধারে একটা টেবিলের সামনে বসে স্থির দৃষ্টিতে রাস্তার দিকে তাকিয়ে ছিল।

W. B. T. 307 ট্যাক্সিটা খোলা দরজা বরাবর রাস্তার ওধারে ফুটপাত ঘেষে লাইটপোস্টটার অল্প দূরে পার্ক করা আছে। এতদূর থেকেও আবছা অস্পষ্ট বোঝা যায় গাড়ির চালকের সীটে বসে আছে একজন ছায়ামূর্তি। কিরীটী অন্যমনস্কের মত চা-পান করলেও তার সদাজাগ্রত দৃষ্টি ছিল W. B. T. 307 ট্যাক্সিটার ওপরেই। বড় রাস্তার ঠিক মোড়েই সেই সন্ধ্যা থেকে আরো একটা ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে আছে।

ক্ৰমে ক্ৰমে রাতের প্রহর গড়িয়ে চলে। একটি দুটি করে রেস্তোরাঁর খরিদ্দার চলে যেতে থাকে। রাত প্রায় দশটার সময় কিরীটী হঠাৎ যেন চমকে ওঠে।

আপাদমস্তক চাদরে আবৃত্ত একটি নারীমূর্তি এসে W. B. T. 307 ট্যাক্সি গাড়িটার সামনে দাঁড়াতেই নিঃশব্দে ট্যাক্সির দরজাটা খুলে গেল।

নারীমূর্তি ট্যাক্সিতে উঠে বসল এবং উঠে বসবার সঙ্গে সঙ্গেই ট্যাক্সি স্টার্ট দিয়ে চলতে শুরু করে।

কিরীটীও আর মুহূর্ত বিলম্ব না করে রেস্তোরাঁ থেকে উঠে সোজা গিয়ে দ্রুতপদে বড় রাস্তার মোড়ে যে দ্বিতীয় ট্যাক্সিটা অপেক্ষা করছিল তার মধ্যে গিয়ে উঠলো।

বড় রাস্তায় পড়লেও W. B. T. 307 ট্যাক্সিটা ট্রামের জন্য আটক পড়ে তখনও বেশীদূর এগোতে পারেনি। কিরীটী ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই ট্যাক্সিটা চলতে শুরু করে। ইঞ্জিনে স্টার্ট দিয়ে ট্যাক্সিটা প্রস্তুত হয়েই ছিল পূর্ব হতে সঙ্কেতমত। কিরীটী চাপা গলায় ড্রাইভার মনোহর সিংকে কি যেন নির্দেশ দিল।

গ্রীষ্মের রাত্রি দশটায় কলকাতা শহর এখনো লোকজনের চলাচল ও যানবাহনের বৈচিত্র্যে সরগরম।

আগেকার গাড়িটা সোজা কর্ণওয়ালিস স্ট্রীট, কলেজ স্ট্রীট ধরে এগিয়ে গিয়ে বৌবাজারের কাছাকাছি বাঁয়ে বাঁক নিয়ে শিয়ালদহের দিকে এগিয়ে চলল। শিয়ালদহের মোড়ে এসে ডাইনে বেকে এবারে চলল সারকুলার রোড ধরে সোজা। জোড়াগির্জা ছাড়িয়ে সারকুলার রোডের কবরখানা ছড়িয়ে বাঁয়ে বেকল।

আগের গাড়িটা চলেছে এবারে আমীর আলি অ্যাভিনু ধরে।

হঠাৎ একসময় আগের গাড়ির স্পীডটা কমে এলো। সঙ্গে সঙ্গে মনোহরও তার পা-টা তুলে নেয় গাড়ির অ্যাকসিলারেটারের ওপর থেকে।

ট্রাম ডিপোটা ছাড়িয়ে বাঁ-হাতি একটা সরু গলির মুখে গাড়িটা দাড়াল।

গাড়ি থেকে পূর্ববর্তী সর্বাঙ্গে চাদরে আবৃত মহিলাটি নেমে গেলেন এবং ট্যাক্সিটাও সামনের দিকে চলে গেল। হাত-দশেক ব্যবধানে মনোহর তার ট্যাক্সি দাঁড় করিয়েছিল। বিকাশ প্রশ্ন করেন, ব্যাপার কি কিরীটীবাবু?

কিরীটী ট্যাক্সির দরজা খুলে নামতে নামতে বললে, নামুন-এবং মনোহরের দিকে ফিরে তাকে ও কনস্টেবলকে অপেক্ষা করতে বলে এগিয়ে চলল।

বিকাশ কিরীটীকে অনুসরণ করেন। সরু গলিপথ, গলির মুখে একটিমাত্র লাইটপোস্ট। গলির পথ জুড়ে অদ্ভুত একটা আলোছায়ার লুকোচুরি চলছে যেন।

কিন্তু গলির মুখে যতদূর দৃষ্টি চলে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেল না কিরীটী। তবু, কিন্তু কিরীটী গলির মধ্যে ঢুকে এগিয়ে চলে। ব্লাইণ্ড গলি। কিছুটা এগুতে শেষ হয়ে গিয়েছে। সামনেই নিরেট দেওয়াল। গলির দুপাশে দোতলা তিনতলা সব বাড়ি আলোছায়ায় যেন স্তুপ বেধে আছে।

সব কয়টি বাড়িরই দরজা বন্ধ। মাত্র একটি বাড়ির খোলা জানালাপথে খানিকটা আলোর আভাস লাগছে গলিপথে।

জানালাপথে উঁকি দিয়ে দেখল কিরীটী, সাহেবী কেতায় সোফা-সেট-কাউচে সুসজ্জিত ড্রয়িংরুম। এবং সেই ড্রয়িংরুমের মধ্যে একটি সোফার উপরে পাশাপাশি বসে একটি তরুণবয়স্ক পুরুষ ও একটি নারী।

চমকে ওঠে কিরীটী। কারণ পুরুষটিকে না চিনলেও নারীটীকে চিনতে তার কষ্ট হয়নি দেখা মাত্রই। সেই ভদ্রমহিলা! যাকে মাত্র কয়েকদিন পূর্বে রাত্রে ভিষগরত্নের বাইরের ঘরে অনবগুণ্ঠিতা দেখেছিল সে।

কিন্তু ভদ্রমহিলাটির আজকের সাজসজ্জার ও সে-রাত্রের সাজসজ্জার মধ্যে ছিল অনেক তফাৎ। গা-ভর্তি জড়োয়া গহনা, পরিধানে দামী সিল্কের শাড়ি।

অপূর্ব রূপ খুলেছে দামী সিল্কের শাড়ি ও জড়োয়া গহনায়। চোখ যেন একেবারে ঝলসে যায়। আর পুরুষটির পরিধেয় সাজসজ্জা দেখলে মনে হয় ধনী কোন গুজরাট দেশীয় লোক। কিন্তু চিনতে পারল না চোখে কালো চশমা থাকায়। পুরুষটি হঠাৎ স্পষ্ট বাংলায় বলে, এসেছ?

আমার গাড়ি বাইরে অপেক্ষা করছে-চল

কিন্তু মাল?

মালও গাড়িতেই আছে।

বেশ, তবে চল।

কিন্তু টাকাটা?

ও হ্যাঁ হ্যাঁ ভুলে গিয়েছিলাম একদম বলতে বলতে জামার পকেটে হাত চালিয়ে একতাড়া নোট বের করে মহিলার হাতে তুলে দিল পুরুষটি।

গুনতে হবে নাকি?

তোমার খুশি।

মহিলাটি মৃদু হেসে নোটগুলো এক এক করে সত্যই গুনে দেখল। সব একশো টাকার নোট। নোটগুলো গুনে ব্লাউজের মধ্যে চালান করে দিয়ে উঠে দাঁড়াল।

চল—

আর একটু বসবে না?

একটু কেন-সারারাতই তো থাকবো সঙ্গে সঙ্গে। চল—ওঠ।

যুবকটি উঠে দাঁড়ায়। কিন্তু মহিলাটি হঠাৎ বাধা দিয়ে বলে, একটু বোস আসছি।

মহিলাটি ভিতরে চলে গেল। যুবকটি বসে আছে। হঠাৎ পা টিপে টিপে কে একজন কালো মুখোশে মুখ ঢেকে সোফার উপরে উপবিষ্ট যুবকের অজ্ঞাতেই তার পশ্চাতে এসে দাঁড়াল এবং সঙ্গে সঙ্গে দপ করে ঘরের আলো গেল নিভে।

কি হল! আলো নিভে গেল যে! বিকাশ চাপা কণ্ঠে বলেন।

চুপ! কিরীটী সাবধান করে দেয়।

অন্ধকারে একটা চাপা গোঁ গোঁ শব্দ, একটা ঝটাপটি শোনা যাচ্ছে।

পরক্ষণেই কিরীটী আর দেরি না করে গিয়ে বন্ধ দরজার উপরে ধাক্কা দেয়।

দরজায় ধাক্কা দিতেই বুঝলে দরজা ভিতর হতে বন্ধ।

প্রচণ্ড বেগে ধাক্কা দিতে দিতে একসময় মট করে শব্দ তুলে ভিতরের খিলটা বোধ হয় ভেঙে দরজা খুলে গেল।

দুজনে হড়মড় করে অন্ধকার বাড়িটার মধ্যে প্রবেশ করে। পাশের ঘরে ঢুকে অন্ধকারে হাতের টর্চের আলো ফেলতেই কিরীটী চমকে উঠলো।

মেঝের উপরে পূর্বদৃষ্ট তরুণ যুবকটি উপুড় হয়ে পড়ে আছে।

ঘরের আলোর সুইচটা সন্ধান করে আলোটা জালানো হল। ভূপতিত যুবকটিকে তুলে ধরতে গিয়েই বোঝা গেল সে আর বেঁচে নেই। কিন্তু তার চোখের চশমাজোড়া খুলে ফেলতেই কিরীটী চমকে ওঠে। অস্ফুট কণ্ঠে তার শব্দ বের হয় একটি মাত্র, এ কি! রজতবাবু! এবং মৃত্যু তার পূর্বপূর্বের মতই। গলায় সেই সরু কালো দাগ।

বিকাশ বললেন, চেনো নাকি লোকটাকে?

হ্যাঁ। রজতবাবু– আমাদের মেসেই ছিল!

কিন্তু সেই মহিলাটি গেলেন কোথায়?

চল, বাড়িটা খুঁজে একবার দেখি। যদিও মনে হচ্ছে পাওয়া যাবে না আর।

সত্যিই তাই। বাড়ির মধ্যে দোতলার ও একতলার সব ঘরগুলিতেই তালাবন্ধ। কোথাও মহিলাটির সন্ধান পাওয়া গেল না।

চল, ফিরি।

কিরীটী ও বিকাশ দ্রুতপদে নিজেদের ট্যাক্সিতে এসে উঠে বসতেই মনোহর ইঙ্গিত করে দেখাল ওধারে ফুটপাথে W. B. T. 307 ট্যাক্সিটা তখনো দাঁড়িয়ে আছে। কিরীটী ঠিক করলো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবে।

বেশীক্ষণ কিন্তু অপেক্ষা করতে হল না। দেখা গেল দুটো বাড়ির পরের গলির ভিতর থেকে একজন চাদরে আবৃত মহিলা বের হয়ে সোজা তাদের ট্যাক্সির দিকেই এগিয়ে আসছে।

নেহাৎ হিসাবেরই ভুল বোধ হল কিরীটীর।

অন্ধকারে ভুল ট্যাক্সির খোলা দরজা-পথে ট্যাক্সির মধ্যে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মহিলাটি ভুল বুঝতে পারলেও তখন আর ফিরবার পথ ছিল না। বিকাশের হাতে উদ্যত লোডেড পিস্তল।

কিন্তু মহিলাটি যেন নির্বিকার।

গোলমাল করে কোন লাভ হবে না। চুপটি করে বসে থাকুন। বলেই কিরীটী মনোহরকে নির্দেশ দিল সোজা থানার দিকে গাড়ি চালাতে।

ট্যাক্সিটা এসে থানার সামনে দাঁড়াতেই, সর্বাগ্রে কিরীটী বিকাশকে ডেকে চুপি চুপি কি কতকগুলো নির্দেশ দিয়ে ভদ্রমহিলাটিকে নিয়ে থানার ঘরের মধ্যে গিয়ে প্রবেশ করল! ভদ্রমহিলাটি এতক্ষণ গাড়িতে সারাটা পথ একটি কথাও বলেননি। ওরাও তাঁকে কোন কথা বলবার বিন্দুমাত্র চেষ্টাও করেনি। কিরীটীর চোখের নিঃশব্দ ইঙ্গিতে সচল পাষাণমূর্তির মত ভদ্রমহিলা কিরীটীকে অনসরণ করে ঘরের মধ্যে গিয়ে প্রবেশ করলেন।

কিরীটী একটি চেয়ার দেখিয়ে বললে, বসুন। যদি ভুল না হয়ে থাকে তো মনে হচ্ছে আপনিই বোধ হয় বীজেন্দ্রবাবু ও নিহত অরবিন্দবাবুদের বোন সুরমা দেবী!

ভদ্রমহিলা কিরীটীর কথায় বারেক চমকে ওর মুখের দিকে তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিলেন। কিন্তু প্রত্যুত্তরে একটি কথাও বললেন না। যেমন দাঁড়িয়ে ছিলেন তেমনি দাঁড়িয়েই রইলেন।

বসুন সুরমা দেবী!

ইতিমধ্যে বিকাশ এসে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে আর একটা চেয়ার টেনে বসলেন।

বসুন! আবার কিরীটী অনুরোধ জানাল।

এবং সুরমা দেবী এবারে একটা চেয়ারে উপবেশন করলেন।

বুঝতেই পারছেন নিশ্চয়, নেহাৎ ভাগ্যচক্রেই আপনি আমাদের মুঠোর মধ্যে এসে পড়েছেন! শুনেন সুরমা দেবী, আপনি হয়তো এখনো বুঝতে পারেননি যে আমরা আট-ঘাট বেধেই আপনাকে আজ সন্ধ্যার পর অনুসরণ করেছিলাম যখন আপনি ন্যায়রত্ন লেনের বাসা থেকে বের হয়ে ট্যাক্সিতে গিয়ে চাপেন।

কিরীটীর শেষের কথায় সুরমা উপর দিকে মুখ তুলে তাকালেন।

হ্যাঁ, আপনি মুখ বুজে থাকলেও অবশ্যম্ভাবীকে আপনি ঠেকিয়ে রাখতে পারবেন না সুরমা দেবী। আমরা জাল যে মুহূর্তে গুটিয়ে আনবো সেই মুহূর্তেই আপনাদের দলের অন্যান্য সকলের সঙ্গে আপনাকেও তাদের মাঝখানে এসে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু আমি তা চাই না। আপনি যদি স্বেচ্ছায় সব স্বীকার করেন, আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি সকলের মধ্যে টেনে এনে আপনাকে দাঁড়াবার লজ্জা ও অপমান হতে নিষ্কৃতি দেবো। কারণ আমি বুঝতে পেরেছি, এই বিশ্রী ব্যাপারের মধ্যে যতটুকু আপনি আপনার ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় হোক জড়িত হয়ে পড়েছেন, সেটা হয়ত আপনাকে একপ্রকার বাধ্য হয়েই হতে হয়েছে। আরো একটা কথা আপনার জানা দরকার। আমীর আলি অ্যাভিনুর বাড়িতে আজ কিছুক্ষণ পূর্বে রজতবাবুর হত্যা-ব্যাপারটাও আমরা স্বচক্ষে দেখেছি।

দ্বিতীয়বার চমকে সুরমা কিরীটীর মুখের দিকে তাকালেন।

কয়েকটি মুহূর্ত অতঃপর স্তব্ধতার মধ্যে দিয়েই কেটে গেল।

কিরীটী সুরমা দেবীর মুখের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পেরেছিল সোজাসুজি আক্রমণকে প্রতিরোধ করবার আর তাঁর ক্ষমতা নেই। কোন নারীই ঐ অবস্থায় নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারে না!

নিঃশব্দে মুখ তুলে তাকালেন সুরমা দেবী কিরীটীর মুখের দিকে আবার। দুজনের চোখের টি পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হল।

কিরীটী চোখে চোখ রেখেই প্রশ্ন করল, তাহলে কি ঠিক করলেন সুরমা দেবী?

সুরমা দেবী নিশ্চুপ।

বুঝতেই পারছেন আর চুপ করে থেকে কোন লাভ হবে না! মাঝ থেকে কেবল পুলিশের টানা-হেচড়াতে কেলেঙ্কারিই বাড়বে।

কি বলবো বলুন?

আপনার যা বলবার আছে—

আমার?

হ্যাঁ!

কয়েকটা মুহূর্ত আবার নিঃশব্দে মাথা নীচু করে বসে রইলেন সুরমা দেবী, তার পর মাথা তুলে ধীরে ধীরে বললেন, হ্যাঁ, বলবো।

তবে বলুন।

হ্যাঁ বলবো, সব কথাই বলবো। নইলে তো আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত হবে না।

বলতে বলতে সুরমা দেবীর দুচোখের কোল বেয়ে দুটি অশ্রুর ধারা নেমে এলো।

সুরমা দেবী বলতে লাগলেনঃ

আপনারা তো আমার পরিচয় জানতেই পেরেছেন। তাই পরিচয় দিয়ে মিথ্যা সময় আমি নষ্ট করতে চাই না। সব বলছি, পনের বছর বয়সের সময় আমার বিবাহ হয়। এবং বিবাহের ঠিক দশ দিন পরেই, দুর্ভাগ্য আমার, সর্পাঘাতে আমার স্বামীর মৃত্যু হয় তাঁর কর্মস্থল ময়ূরভঞ্জে। তিনি ছিলেন ফরেস্ট অফিসার। আমার স্বামীর একটি ছোট জাঠতুত ভাই ছিল সত্যেন। সত্যেন মধ্যে মধ্যে আসত আমাদের বাড়িতে। স্বামীকে চেনবার আগেই তাঁকে ভাগ্যদোষে হারিয়েছিলাম। আমার তখন ভরা যৌবন। সেই সময় সত্যেন এসে আমার সামনে দাঁড়াল। শ্বশুরবাড়ির দিক দিয়ে আমার বৃদ্ধ শাশুড়ী ছাড়া আর কেউ ছিল না। তাই বিধবা হবার পরও মধ্যে মধ্যে সেখানে আমায় যেতে হতো। এবং গিয়ে দুচার মাস সেখানে থাকতামও। ক্রমে সত্যেনের সঙ্গে হলো ঘনিষ্ঠতা। বলতে বলতে সুরমা দেবী চুপ করলেন।

সুরমা দেবীর জবানবন্দীতেই বলি।

সত্যেনের সঙ্গে সুরমার ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতায় যা হবার তাই হল। সুরমা যখন নিজে বুঝতে পারল তার সর্বনাশের কথা, ব্যাকুল হয়ে উঠলো সে এবং লজ্জাসরমের মাথা খেয়ে তখুনি সত্যেনকে একদিন ডেকে সব কথা খুলে বলতে একপ্রকার বাধ্য হল!

সত্যেন লোকটা ছিল কিন্তু আসলে একটা শয়তান। সে বললে, আরে তার জন্যে ভয়টা কি। সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

ব্যবস্থা! কিসের ব্যবস্থা?

কিসের আবার! গোলমাল সব ঠিক হয়ে যাবে। কিছু ভেবো না তুমি। তার জন্যে ভয়টা কি! সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

সুরমা সত্যেনের কথায় রাজী হয় না। ইতস্তত করে বলে, দেখ একটা কাজ করলে হয় না?

কি?

আমি রাজী আছি। বিবাহটাই হয়ে যাক।

বিয়ে!

হ্যাঁ।

কেন, তুমি তো ক্ষেপেছো! বিয়ে করবো তোমাকে!

তার মানে?

ঠিক তাই।

কিন্তু এতদিন তো তুমি

পাগল না ক্ষেপা! ওসব বাজে চিন্তা ছেড়ে দাও সুরমা। আমার ব্যবস্থা তোমায় মেনে নিতেই হবে।

লোহার মত কঠিন ও ঋজু হয়ে এল সুরমার দেহটা মুহূর্তে। তীক্ষ্ণ গম্ভীর কণ্ঠে সে কেবল বলল, ঠিক আছে, তোমায় কিছু ভাবতে হবে না।

সুরমা ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল।

শোন শোন সুরমা— সত্যেন ডেকে বাধা দেয় সুরমাকে।

সুরমা কেবল বললে, চলে যাও এখান থেকে।

পরের দিনই সুরমা চন্দননগরে দাদাদের ওখানে চলে এলো। মা ও অরবিন্দ সমস্ত ব্যাপারটাই জানতে পারল। কেবল জানতে পারল না আসল ব্যক্তিটি কে। সুরমা কিছুতেই প্রকাশ করল না।

বোন সুরমাকে নিয়ে তারা চলে এলো কাশীতে।

সেইখানেই একদিন কবিরাজ চন্দ্রকান্তর সঙ্গে আলাপ হয় অরবিন্দর।

চন্দ্রকান্তকে দিয়েই তারা কাঁটা তুলবার ব্যবস্থা করলেন।

কিন্তু চন্দ্রকান্ত সে-পথ দিয়েই গেলেন না। কাশীতে তিনি মুক্তাভস্ম নাম দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চোরাই কোকেনের কারবার চালাচ্ছিলেন। এবং ঐ সময়টায় পুলিশ অত্যন্ত তৎপর হয়ে ওঠায় চন্দ্রকান্তও কাশীর ব্যবসা গুটিয়ে অন্যত্র কোথাও সরে যাবার মতলব করছিলেন। তাঁর সংসারে ছিল আগের পক্ষের একটি ছেলে ও মেয়ে।

চন্দ্রকান্ত বললেন, শোন সুরমা, তুমি যদি রাজী থাকো আমি তোমাকে বিবাহ করতে রাজী আছি—কেন ও মহাপাপে মা হয়ে নিজেকে জড়াবে! ভ্রূণহত্যা মহাপাপ।

সুরমা প্রথমটায় কবিরাজের প্রস্তাবে বিহ্বল হয়ে যায়। চন্দ্রকান্ত তাকে বিবাহ করে সম্মান দেবে! পরে অনেক ভেবে রাজী হয়ে গেল সুরমা চন্দ্রকান্তরই প্রস্তাবে। কারণ সে নিজেও ওই কথাটা ভাবতে পারছিল না।

এক রাত্রে সে গৃহ থেকে পালাল কবিরাজ চন্দ্রকান্তর সঙ্গে।

কবিরাজ সুরমাকে নিয়ে এসে একেবারে কলকাতায় উঠলেন কাশীর সমস্ত ব্যবসাপাট তুলে দিয়ে। কিন্তু যে আশায় সুরমা গৃহত্যাগ করলো সে আশা তার ফলবতী হল না।

জন্মমুহূর্তেই সন্তানটিকে সেই রাত্রেই চন্দ্রকান্ত যে কোথায় সরিয়ে দিল তার অজ্ঞাতে সুরমা তা জানতেও পারলে না আর।

বিবাহও হল না এবং সন্তানও সে পেল না। অথচ বন্দিনী হয়ে রইলো। সুরমা চন্দ্রকান্তর গৃহে তারই কূট চক্রান্তে।

সন্তানকে একদিন ফিরে পাবে, এই আশায় আশায় চন্দ্রকান্ত সুরমার গতিরোধ করে রাখল। শুধু তাই নয়, অতঃপর চন্দ্রকান্ত সুরমাকে দিয়েই তার ব্যবসা চালাতে লাগল। সুরমাকে টোপ ফেলে বড় বড় রুই-কাতলা গাঁথতে লাগল। সুরমা প্রথম প্রথম প্রতিবাদ জানিয়েছে, তার জবাবে চন্দ্রকান্ত বলেছে, আমার কথামত যদি না চল তো তোমার ছেলেকে একদিন হত্যা করে তোমার সামনে এনে ফেলে দেব।

চোখের জলের ভিতর দিয়েই সুরমা বলতে লাগলেন, সেই ভয়ে আমি সর্বদা সিটিয়ে থাকতাম কিরীটীবাবু। আর আমার সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সে যত কুৎসিত জঘন্য কাজ আমাকে দিয়ে করিয়ে নিত। শেষটায়, ওই চোরাই ব্যাপারে এলো একদিন সত্যেন।

সত্যেন!

হ্যাঁ। রজতবাবুর আসল নাম সত্যেন। ঘোমটার আড়ালে সে আমাকে দেখতে পায়নি, কিন্তু আমি তাকে চিনেছিলাম। আর ওই সত্যেনের সাহায্যেই ওই চন্দ্রকান্ত, যাকে আপনারা শশিশেখর বলে জানেন, তার অন্য এক অংশীদার অন্নপূর্ণা রেস্তোরাঁর মালিক ভূপতি চাটুয্যের সাহায্যে অতর্কিতে একটা কালো ফিতের সাহায্যে পিছন থেকে ফাঁস লাগিয়ে চোরাই কারবারের ব্যাপারটা যার কাছে এতটুকু জানাজানি হয়ে যেত বা আমার ওপরে যারই লোভ পড়ত তাকে হত্যা করতো। এমনি করেই দিনের পর দিন চলছিল নারকীয় কাণ্ড, এমন সময় একদিন আমার দুর্ভাগ্য ছোড়দাও এর মধ্যে এসে পড়লেন ঘটনাচক্রে।

লজ্জায় মুখ ঢাকলেন সুরমা।

তারপর আবার বলতে লাগলেন, এদিকে শয়তান সত্যেন তখন চন্দ্রকান্তর মেয়ে অমলাকে ভুলিয়েছে। সত্যেনের মিষ্টি কথায় অমলা ভুললেও আমি তো জানি তার মানে, সত্যেনের আসল ও সত্যকারের পরিচয়। আমি সতর্ক করে দিলাম চন্দ্রকান্তকে। চন্দ্রকান্ত আমার মুখে সব কথা শুনে কি যেন কী ভেবে রজতকে গালাগালি দিয়ে তাড়িয়ে দিল। তারপরই আমার হতভাগ্য ছোড়দাকে এক রাত্রে রেস্তোরাঁর মধ্যেই সেই ফিতের সাহায্যে ফাঁস দিয়ে হত্যা করলে ওরা। এবং রজতকে শেষ করার মতলব করলে। এদিকে ছোড়দার মৃত্যুতে আমি দিশেহারা হয়ে গেলাম। দাদাকে চিঠি দিয়ে জানালাম তার মৃত্যুর কথা।

আমরা জানি সে চিঠির কথা। কিরীটী বলে।

জানেন?

হ্যাঁ। তারপর বলুন।

রজতকে তাড়াবার পর সে আসবে না জানতাম। তাই আমিই তাকে একটা চিঠি দিই চন্দ্রকান্তর পরামর্শমত—যে আমি নিজে টাকার বিনিময়ে ভুলিয়ে নিয়ে তার হাতে অমলাকে তুলে দেবো; এই আশ্বাস দিয়ে পার্ক সার্কাসের গার্ডেনের রজতের সঙ্গে ঝগড়ার পর তাকে ডেকে পাঠাই। এদিকে রজতের দ্বারা অনিষ্ট হতে পারে এই ভেবে চন্দ্রকান্তও ব্যস্ত হয়ে উঠেছিল তাকে তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেলার জন্য। আর সেই সঙ্গে আমারও ছিল প্রতিহিংসা। আমার আজকের এই চরম দুর্গতির জন্য তো সেই দায়ী। সে-ই তো আমাকে লোভে ফেলে এই চরম সর্বনাশের পথে একদা টেনে এনেছিল। তাই প্রতিজ্ঞা করলাম মনে মনে, যেতেই যদি হয় তাকে শেষ করে যাবো এবং এইবারই সর্বপ্রথম ও শেষবার চন্দ্রকান্তর দুষ্কৃতিতে তাকে সাহায্য করতে সর্বান্তঃকরণে এগিয়ে গিয়েছিলাম। আমার কাজ শেষ হয়েছে। আপনি কিরীটীবাবু এখানে এনে আমাকে বলেছিলেন, নিয়তি-চালিত হয়েই নাকি আপনাদের গাড়িতে এসে আমাকে উঠতে হয়েছে, কিন্তু তা নয়।

কি বলছেন আপনি সুরমা দেবী? বিকাশ প্রশ্ন করেন।

ঠিক তাই। স্বেচ্ছায় আমি আপনাদের গাড়িতে উঠেছি।

সত্যি বলছেন?

হ্যাঁ। আপনারা যে ট্যাক্সি করে আমাদের অনুসরণ করছেন সেটা আমি পূর্বাহ্নেই টের পেয়েছিলাম। আজ রাত্রে রজতকে শেষ করে পুলিশের কাছে এসে সব বলে দেবো পূর্ব হতে সেটা মনে মনে স্থির-সংকল্প হয়েই আমি প্রস্তুত হয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম। কথাটা বলতে বলতে কিসের একটা পুরিয়া হঠাৎ সুরমা দেবী হাতের মুঠোর থেকে নিয়ে মুখে পুরে দিলেন চোখের পলকে।

বাধা দেবেন না কিরীটীবাবু, আর। আমাকে যেতে দিন। সত্যই কলঙ্কিনী আমি।

আর কথা বলতে পারলেন না সুরমা দেবী।

শেষের কথাগুলো জড়িয়ে তাঁর অস্পষ্ট হয়ে গেল।

কিরীটী বললে হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে, কিন্তু আর তো দেরি করা চলে না। আমাদের এখুনি যেতে হবে। নচেৎ পাখী উড়ে যেতে পারে।

সুরমার মৃতদেহ ঐখানেই পড়ে রইলো। ওরা থানা থেকে বের হয়ে গেল।