1 of 2

৩.০৪ ক্রিষ্টেল গেইজিং

চতুর্থ পাঠ
ক্রিষ্টেল
গেইজিং (Crystal Gazing)

ক্রিষ্টেল নামক কাল বর্ণের এক প্রকার স্বচ্ছ প্রস্তর বা কাচ আছে, নির্দিষ্ট প্রণালীতে উহার প্রতি দৃষ্টি ক্ষেপনকেই “ক্রিষ্টেল গেইজিং বলে। ইহা দ্বারা ভূত ভবিষ্যৎ ও বর্তমান সম্বন্ধে নানা বিষয় জানিতে পারা যায়। সুতরাং ইহা দিব্যদর্শন বা দিব্যদৃষ্টির অন্তর্ভুক্ত। আমাদের দেশে “নখদর্পণ” নামে একটা বিষয় আছে, অনেকেই হয়ত উহার নাম শুনিয়াছেন, ক্রিষ্টেল গেইজিং সেইমত হইলে ও উহা অপেক্ষা উচ্চতর বিষয়। নখদর্পণে ক্রিষ্টেল গেইজিং এর ন্যায় সকল বিষয়েরই ভূত, ভবিষ্যৎ ও বর্তমান জ্ঞাত হওয়া যায় কিনা, তাহা জানি না, তবে আমি কেবল উহা চোর ধরিবার উদ্দেশ্যেই প্রযুক্ত হইতে দেখিয়াছি।

যে সকল ব্যক্তির হৃদয়ে উপযুক্ত পরিমাণে দিব্যদর্শন শক্তি-বীজ নিহিত আছে, কেবল তাহারাই ক্রিষ্টেলের ভিতর নানা প্রকার চিত্রাদি বা ভিশান (visions) দর্শন করিয়া থাকে, অপর লোকেরা উহাতে কিছুই দেখিতে পায় না। সুতরাং সকল লোক ইহাতে সাফল্য লাভ করিতে পারে না। যাহাদের হৃদয়ে উক্ত শক্তি-কণা নিহিত আছে, তাহাদের অনেকেই ইহাতে অল্পাধিক সময়ের মধ্যে সফলমনোরথ হয়, আর যাহাদের উহা নাই, তাহারা ক্রমাগত মাসের পর মাস চেষ্টা করিয়াও কৃতকাৰ্য্যতা লাভে সমর্থ হয় না।

যে কাৰ্য্যকারক এই বিষয় চর্চা করিতে আগ্রহান্বিত হইবে তাহাকে একটি ক্রিষ্টেল গেইজিং যন্ত্র (Crystal Gazing Apparatus) সংগ্রহ করিয়া ইহা অভ্যাস করিতে হইবে। অথবা সে নিজেও নিম্নোক্ত প্রণালীতে একটি যন্ত্র প্রস্তুত করিয়া অভ্যাস করিতে পারে। একটা সাধারণ সাদা কাচের গ্লাসের (ordinary tumbler) ও ভাগ পরিষ্কার জলে পূর্ণ করতঃ একখানা কাল রুমাল বা কাল কাগজ দ্বারা উহার বাহিরের দিকটা এমন ভাবে আবৃত করিয়া দিবে, যেন উহার অভান্তরস্থ জল খুব কাল দেখায়; কিংবা ঐ জলের মধ্যে কয়েক ফোটা কাল কালি ঢালিয়া উহাকে খুব কাল করিয়া লইলেও তারা ক্রিষ্টেল গেইজিং অভ্যাস করা যাইতে পারে। গ্লাসের জল প্রতিদিনই বদলাইতে হয়।

অভ্যাসের প্রণালীঃ -একটি খুব নীরব ও নির্জন গৃহে দিবসে বা রাত্রিতে ইহা অভ্যাস করিবে। অভ্যাসকারী চেয়ারে বসিয়া ডান হাতে ক্রিষ্টেলটি ধারণ পূর্বক ঐ হাতখানা নিজের কোলের উপর রাখিবে। আর যদি সে গ্লাস লইয়া অভ্যাস করিতে ইচ্ছা করে, তবে চেয়ারে বসিয়া গ্লাসটিকে কাল রংয়ের অয়েল ক্লথ বা কাপড় দ্বারা ঢাকা টেবিলের উপর এমন ভাবে স্থাপন করিবে যেন, উহার অভ্যন্তরস্থ কাল জলের প্রতি দৃষ্টি পাত করিলে, উহাতে তাহার মুখের ছবি প্রতিবিম্বিত না হয়। দিনের বেলা অভ্যাস করিলে ঘরের উত্তর দিকের জানালার ভিতর দিয়া বিক্ষিপ্ত সূৰ্য্য-কিরণ প্রবেশ করিতে পারে, এমন ভাবে জানালা খোলা রাখিয়া উহার দিকে পিছন দিয়া, আর রাত্রিতে অভ্যাস করিলে বাতির আলোকের দিকে পিছন দিয়া বসিবে। আহারের দুই ঘণ্টা পূর্বে বা পরে অভ্যাসের সময় নির্দিষ্ট রাখিবে; যেহেতু খুব ভরা বা খালি পেটে ইহা অভ্যাস করা উচিত নহে। কথিত নিয়মে ক্রিষ্টেল বা গ্লাসটি স্থাপন পূর্বক চিন্তাশূন্য ও একাগ্রচিত্তে (ক্রিষ্টেল হইলে উহার উপরি ভাগের উপর, আর গ্লাস হইলে, উহার অভ্যন্তরস্থ জলের উপর, স্থির দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকাইয়া থাকিবে। তখন চোখের পলক পড়িলেও কোন ক্ষতি নাই। এরূপ শান্তভাবে ১০ হইতে ২০ মিনিট কাল তাকাইয়া থাকিলে, যদি অভ্যাসকারীর আত্মিক সংবেদনা থাকে, তবে সে ক্রিষ্টেল বা ঐ কাল জলের উপর প্রথম অস্পষ্ট ধূমের ন্যায় বাষ্প দেখিতে পাইবে এবং উহা তখনই সাদা মেঘের আকার ধারণ করিবে ও উহার মধ্যে ইতস্ততঃ ভ্রমণশীল বহু সংখ্যক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আলোক-কণা দৃষ্ট হইবে। তাহার দৃষ্টি তখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট বিন্দুতে স্থির না হওয়া বশতঃ চক্ষুর মণি তাড়াতাড়ি সঙ্কোচিত ও প্রসারিত হইতে থাকিবে, এবং ক্রিষ্টেল বা গ্লাসটা যেন এক একবার আঁধারে অদৃশ্য হইয়া যাইতেছে বলিয়া বোধ হইবে। প্রথম প্রথম কয়েক বৈঠক পৰ্যন্ত (কোন কোন ক্ষেত্রে অনেক বৈঠক পৰ্য্যন্তও) এইরূপ দৃষ্ট হইয়া থাকে। ইহা সাফল্যের লক্ষণ। তৎপরে, হঠাৎ এক দিন ঐ ভ্রাম্যমান আলোক-বিন্দুর সহিত পরদার ন্যায় সাদা মেঘ খানা সরিয়া গিয়া, উজ্জল নীলাকাশ-বক্ষে দ্রষ্টব্য বস্তু সকল (visions) প্রতিফলিত হইয়া উঠিবে।

যখন অভ্যাসকারীর শরীরে একের পর একটি করিয়া নিমোক্ত লক্ষণ সকল প্রকাশ পাইতে থাকিবে, তখন দ্রষ্টব্য বস্তু বা ভিশন নিশ্চিতরূপে দেখা দিবে বলিয়া বুঝিবে। সেগুলি এই :–(১) মেরুদণ্ডের ভিতরে, ঘাড়ের মূল হইতে মেরুদণ্ডের শেষ সীমা পৰ্যন্ত, শীতল জল ধারার ন্যায় ঠাণ্ডা বোধ; (২) পরক্ষণেই, আবার মেরুদণ্ডের মুল হইতে ব্রহ্মতালু পর্যন্ত স্থানে, আকস্মিক উত্তাপ প্রবাহের অনুভূতির ন্যায় উহার প্রত্যাবর্তন (৩) খোলা ও বন্ধ হওয়ার মত মাথার ভিতর আক্ষেপ বা খেচুনি। (৪) সৰ্বশেষে একটি গভীর দীর্ঘ নিশ্বাস এবং চতুঃপার্শ্বস্থ বস্তু, বিষয় ও অবস্থা সম্বন্ধে সম্পূর্ণ বিস্মৃতি। তদ্ব্যতীত দীর্ঘকাল বৈঠক দিলে অভ্যাসকারীর শরীরে আরও নানা রকমের লক্ষণ সকল প্রকাশ পাইয়া থাকে।

দ্রষ্টব্য বস্তু বা ভিশান্‌গুলি দুই রকমে প্রকাশিত হইয়া থাকে; সরল ভাবে এবং সাঙ্কেতিক রূপে। যে ঘটনা কোন অতীত কালে ঘটিয়াছে, অথবা বর্তমানে ঘটিতেছে কিম্বা ভবিষৎ কালে ঘটিবে, উহার অবিকল চিত্র ক্রিষ্টেলে প্রতিফলিত হইলে উহাকে সরল বা “ডাইরেক্ট ভিশা” (direct vision), আর কোন সাঙ্কেতিক চিহ্ন বা চিত্র দ্বারা প্রকাশ পাইলে, উহাকে “সিম্বলিক্ ভিশা”(symbolic vision) বলে। ডাইরেক্ট ভিশা সহজেই বুঝা যায়, কিন্তু সিম্বলিক ভিশন বুঝা কঠিন; কারণ উহাতে কেবল একটি মাত্র সঙ্কেত দ্বারা কোন একটি বিষয় বা ঘটনা প্রকাশিত হইয়া থাকে। যদি কেহ এরূপ স্বপ্ন দেখে যে তাহার কোন বন্ধু রোগাক্রান্ত হইয়া মারা গেল এবং তাহা সত্য হয়, তবে উহাকে “ডাইরেক্ট ভিশান” বলে; আর কোন একটি রুগ্ন আত্মীয় বা বন্ধুর আরোগ্যের জন্য কোন ব্যাকুল চিত্ত ব্যক্তি যদি স্বপ্নে তাহাকে বা অপর কোন ব্যক্তিকে আল্লাদের সহিত নদী বা পুকুরে সাঁতার দিতে দেখে, এবং তৎপরেই সেই রুগ্ন ব্যক্তির আরোগ্য লাভ হয়, তবে উহাকে “সিম্বলিক্ ভিশা” বলে। কোন সংবাদ জানিবার জন্য যাহার মন খুব ব্যাকুল, সে স্বপ্নে জাহাজ আসিতেছে দেখিলে, তাহার ঐ সংবাদ প্রাপ্তি হইয়া থাকে। এই সকল ভিশাকে সিম্বলিক্ ভিশন্ অফ ড্রিম (symbolic visions of dream) বলে।

অভ্যাসকারীর প্রকৃতি অনুসারে দ্রষ্টব্য বস্তু বা ভিশান্ গুলি তাহার মানস-নয়নের সম্মুখে প্রকাশ পাইয়া থাকে। যদি সে স্বভাবরূপ (positive) হয় তবে ভিশান্গুলি সিম্বলিক্ বা সাঙ্কেতিকরূপে, আর সে অভাবরূপ (negative) হইলে ডাইরেক্ট বা সরল ভাবেই তাহাকে দেখা দিয়া থাকে। যাহাদের নিকট উহারা সাঙ্কেতিকরূপে প্রকাশ পায়, তাহারা নিজের অভিজ্ঞতা ও বিচার-বুদ্ধি দ্বারা অনুবাদ করিয়া উহাদের অর্থ বাহির করিবার চেষ্টা পাইবে; তদ্ব্যতীত উহার আর অন্য কোন সরল পন্থা নাই।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *