৩. দিন পনের হলো

দিন পনের হলো কিরীটী এই বাড়ীতে এসেছে এবং ইতিমধ্যেই সকলের সঙ্গেই অল্পবিস্তর আলাপ-পরিচয়ও হয়ে গিয়েছে। সত্যশরণকে বাদ দিয়ে অন্যান্য বাদবাকি পাঁচজন সহবোর্ডারদের মধ্যে একমাত্র ইনসিওরেন্সের দালাল রজতবাবুই যেন কিরীটীর দৃষ্টি একটু বেশি আকর্ষণ করেছেন।

কিরীটীর ঘরের একপাশে থাকেন রজতবাবু ও অন্যপাশে সত্যশরণ।

রজতবাবুর বয়স যাই হোক না কেন, ৩০-৩১-এর বেশি নয় বলেই মনে হয়। রোগাটে ছিপছিপে গড়ন। উজ্জল শ্যাম গাত্রবর্ণ। চোখেমুখে বুদ্ধির একটা অদ্ভুত ধারালো তীক্ষ্ণদীপ্তি। চোখে সরু সোনার ফ্রেমে শৌখিন চশমা। ভদ্রলোকের বেশভূষাতেও সর্বদা একটা শৌখিন পরিচ্ছন্ন রুচির পরিচয় পাওয়া যায়। ইনসিওরেন্সের দালালীতে যে তাঁর অর্থাগমটা ভালই ভদ্রলোকের চাল-চলুন আচার-ব্যবহার ও রুচিবিলাস হতেই স্পষ্ট বোঝা যায়। হাতও বেশ দরাজ।

কারণ এই বাড়ির সহ-বোর্ডারদের প্রায়ই এটা ওটা পাঁচরকম দামী খাবার এনে খাওয়ান ও নিজেও খান এবং মধ্যে মধ্যে সিনেমা-থিয়েটারেও নিয়ে যান।

ভ্রাম্যমাণ দালাল, সেইজন্য মধ্যে মধ্যে দুচার-পাঁচদিনের জন্য এবং কখনোকখনো দশদিনের জন্য কলকাতার বাইরে বাইরে তাঁকে ঘুরে বেড়াতে হয়।

উপরের তলার অধিবাসীদের মধ্যে একমাত্র রজতবাবুরই নীচে কবিরাজ মশাইয়ের বহিঃ ও অন্দরমহলে যে যাতায়াত আছে, প্রথম দুচারদিনেই কিরীটীর সেটা নজর এড়ায়নি। এবং রজতবাবুর নীচের তলার ঘনিষ্ঠতা সম্পর্কে উপরতলার : বোর্ডার সিনেমার গেটকীপার জীবনবাবুর দুচারটে অম্লমধুর রসালো মন্তব্য যে কিরীটীর সদাসতর্ক শ্রবণেন্দ্রিয়কে এড়িয়ে গিয়েছে তাও নয়। কিরীটী লক্ষ্য করেছিল নীচের তলাকার অধিবাসীদের মধ্যে কবিরাজ মশাইয়ের ছেলে ও মেয়ে অনিলশেখর ও অমলা উভয়ের সঙ্গেই রজত বাবুর কিঞ্চিৎ বেশ যেন আলাপ-পরিচয় আছে। কেবলমাত্র অবগুণ্ঠনের অন্তরালবর্তিনী, নিঃশব্দচারিণী কবিরাজের গৃহিণীর সঙ্গে আলাপ-পরিচয় আছে কিনা সেটা জানবার সুযোগ হয়নি কিরীটীর। কবিরাজ-গৃহিণীকে তো কখনোও বাইরে বের হতে দেখা যেত না, কারণ শোনা যায় কবিরাজ মশায়ই নাকি সেটা পছন্দ করেন না। তাঁকে নিজেকেও বড় একটা বাইরে বের হতে দেখা যায় না। বেশীর ভাগ সময় সকাল সাতটা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত ও দ্বিপ্রহর দুটো থেকে বেলা পাঁচটা পর্যন্ত ও সন্ধ্যা সাড়ে ছটা থেকে রাত্রি এগারটা প্রত্যহই এবং কোন কোন রাত্রে বারোটা সাড়ে বারোটা পর্যন্ত কবিরাজ মশাই বাইরের ঘরেই থাকেন। এবং তিনি যে আছেন সেটা মধ্যে মধ্যে একটিমাত্র তাঁর কণ্ঠনিঃসৃত শব্দে জানা যেতঃ মাগো করালবদনী নৃমুণ্ডমালিনী, সবই তোর ইচ্ছা মা

প্রায় সদা নিঃশব্দ লোকটির বজ্রগম্ভীর কণ্ঠ হতে ঐ করালবদনী মৃমুণ্ডমালিনী শব্দ দুটি যেন সমস্ত নীচের তলাটা গম গম করে তুলত।

কবিরাজ ও তস্য গৃহিণীকে বাড়ির বাইরে না দেখা গেলেও দ্বিজপদ, ঝি সুন্দরী ও কবিরাজের ছেলে অনিলশেখর ও মেয়ে অমলাকে প্রায়ই আসতে যেতে দেখা যেত।

তাদের চেহারা চালচলন বেশভূষা কোনটারই যেন কোন সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া যেত না কবিরাজের সংস্কৃতির সঙ্গে।

পরিচ্ছন্ন ছিমছাম বেশভূষা উভয়েরই।

অনিলশেখর বি. এ. ক্লাসের চতুর্থ বার্ষিকীর ছাত্র এবং মেয়ে অমলা আই. এ. ক্লাসের ছাত্রী।

একদিন সন্ধ্যার দিকে নিত্যকারের মত সাধ্যভ্রমণে বের হয়ে গলির মুখে নিম্নকণ্ঠে ঘনিষ্ঠভাবে আলোচনারত অমলা ও রজতবাবুকে দেখে কিরীটী বুঝতে পেরেছিল রজতবাবুর নীচের তলায় সত্যকারের আকর্ষণটি কোনখানে।

কিন্তু ন্যায়রত্ন লেনের উপর ও নীচের তলার অধিবাসীদের লক্ষ্য করার চাইতেও যে উদ্দেশ্যে কিরীটী খুঁজে পেতে কষ্ট করে ঐ অঞ্চলে এসে ডেরা বেধেছিল, কিরীটীর চিন্তাধারাটা বেশির ভাগ সময় বিক্ষিপ্ত ভাবে তারই মধ্যে আবদ্ধ থাকত বলাই বাহুল্য।

দিন পনের গত হয়ে গেল কিন্তু এখনো পর্যন্ত বিশেষ কোন কিছুই ঐ অঞ্চলের কিরীটীর অনুসন্ধিৎসু মনকে নাড়া দিতে পারেনি।

তবু তার সতর্কতার অভাব ছিল না। বাইরে থেকে বেকার শান্তশিষ্ট ও একান্ত নির্লিপ্ত তাকে মনে হলেও ভিতরে ভিতরে তার তীক্ষ্ণ শ্রবণ-মননশক্তি চারিদিকেই সমভাবে প্রক্ষিপ্ত হয়ে থাকত।

সকালে ও দ্বিপ্রহরে কিরীটী নিজের ঘর থেকে বড় একটা বেরই হত না। বের হত একেবারে সন্ধ্যা সাতটার পর। এবং রাত বারোটা, কখনো কখনো বা একটা দেড়টা পর্যন্ত আশেপাশে সমস্ত অঞ্চলটার পথে গলিতে সদাসতর্ক দৃষ্টিতে, অথচ বাইরে নির্লিপ্ত পথিকের মত ঘুরে ঘুরে বেড়াত।

এমনি করেই দিন চলছিল।

সহসা এমন সময় একদিন শান্তস্থির পুষ্করিণীর জলরাশিতে ছোট্ট একটি লোস্ট্রাঘাতে যেমন তরঙ্গ জাগে এবং ক্রমে সেই চক্রাকারে ক্রমবিস্তৃতমান তরঙ্গচক্র তটপ্রান্তে আছড়ে পড়ে শব্দ তোলে, ঠিক সেইভাবেই ব্যাপারটা শব্দায়িত হয়ে উঠলো আচমকা।

বিকেল চারটে হবে।

উপরের তলার সেমি-মেসের বোর্ডাররা কেউই তখন অফিস ও কর্মস্থল থেকে ফেরেন নি, একমাত্র রজতবাবু ব্যতীত। অবশ্য কিরীটী তার ঘরে নিত্যকারের মত দরজাটা ভেজিয়ে ঐদিনকার বহুবার পঠিত সংবাদপত্রটাই আবার উল্টে-পাল্টে দেখছিল।

রজতবাবু, দিন চারেক ছিলেন না মেসে। ঐদিন সকালের দিকে পাটনা থেকে ফিরেছেন টুর সেরে।

গুনগুন করে সর্বদাই প্রায় যতক্ষণ রজতবাবু তাঁর ঘরে থাকেন, গান করা তাঁর একটা অভ্যাস। এবং কিরীটী পাশের ঘর থেকে তাঁর সেই গুনগুনানি শুনেই বুঝতে পেরেছিল রজতবাবু, তাঁর ঘরেই আছেন। আর মাত্র মিনিট কুড়ি আগে যে রজতবাবু, নীচে নেমেছিলেন তাঁর জুতোর শব্দেই বুঝতে পেরেছিল কিরীটী।

হঠাৎ নীচের তলা থেকে, বলতে গেলে এখানে আসবার পর এই প্রথম কিরীটী ভিষগরত্নের নাতি-উচ্চ কর্কশ কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়ে সত্যিই চমকে ওঠে।

ভদ্রলোক! জেন্টেলম্যান! ঢের ঢের দেখা আছে আমার। ফের এ-বাড়িমুখো হয়েছে কি ঠ্যাং ভেঙে খোঁড়া করে দেবো জন্মের মতো। বেরোও! বেরিয়ে যাও!

কৌতূহলে কিরীটীর শ্রবণেন্দ্রিয় সজাগ ও উৎকর্ণ হয়ে ওঠে।

কবিরাজের চিৎকারের সঙ্গে সঙ্গেই প্রায় রজতবাবুর মেয়েলী ঢংয়ের কণ্ঠস্বর শোনা গেল, আপনি বা অত চেচাচ্ছেন কেন বলুন তো মশাই! বিবাহ করবো তো আমি, আর বিবাহটা হবে অমলার সঙ্গে আপনি তো অবান্তর তৃতীয় পক্ষ।

বাঘের মতই যেন ভিষগরত্ন এবারে গর্জে উঠলেন, কি কি বললি বেটা! আমি তার জন্মদাতা বাপ, আমি তৃতীয় পক্ষ! আর তুই কোথাকার এক ভবঘুরে ইনসিওরেন্সের দালাল, তুই হলি প্রথম পক্ষ! বেরো। বেরো এখান থেকে

বেরিয়ে আমি নিশ্চয়ই যাবো। মনে রাখবেন কেবল স্রেফ ভদ্রতার খাতিরেই কথাটা বলতে এসেছিলাম, নচেৎ মেয়েও আপনার সাবালিকা এখন। এ বিয়ে আপনি চেষ্টা করলেও আটকাতে পারবেন না।

রজতবাবুর বক্তব্য শেষ হতে না হতেই ভিষগরত্নের কণ্ঠ আবার শোনা গেল, কালই তুই আমার বাড়ি ছেড়ে চলে যাবি। নইলে তোর মত কুকুরদের কেমন করে শায়েস্তা করতে হয় তা আমি জানি। বেটা নচ্ছার পাজী ছুঁচো

থামুন থামুন-অত চেচাবেন না, হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেবো মশাই!

ওঃ, অথ বিবাহঘটিত! প্রেম-প্রাণ দেওয়া-নেওয়া ব্যাপার!

সেই চিরপুরাতন অথচ চিরনতুন পঞ্চশরের ফুলবাণ পর্ব!

হায় হায় সন্ন্যাসী! কি করছো তুমি পঞ্চশরের ভস্মরাশি বিশ্বময় ছড়িয়ে দিয়ে জানতে যদি! কিন্তু এ যে বেশ গুরুতর ব্যাপার!

প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ে, বিবাহটা শেষ পর্যন্ত যদি ঘটে যায়ই, ভদ্রলোক শৌখিন রজতবাবুর পক্ষে তাঁর রোমশ ভল্লুকাকৃতি কবিরাজ শ্বশুরমশাইটির তো একেবারে বদহজম ঘটাবে!

নাঃ, আজকালকার আধুনিক মতিগতির ছেলেমেয়েরা বড় বেশী যেন দুঃসাহসী হয়ে উঠেছে।

আবার রজতবাবুর কণ্ঠস্বর কিরীটীর কানে এলো, শুনুন মশাই, ভালর জন্যই বলছি, বেশী ঘাঁটাঘাঁটি করবেন না এ নিয়ে। অমলাকে আমি বিবাহ করবোই, আপনার পিতৃত্বের পেনাল-কোডের আইন-কানুন ধোপে টিকবে না। মিথ্যে মিথ্যে কেন ঝামেলা করছেন! ভালয় ভালয় রাজী হয়ে যান। ভদ্রভাবে ব্যাপারটা চুকেচুকে যাক, all expense আমার I promise!

কে তোমার promise চায় হে ছোকরা! দ্বিজপদ, আমার লাঠিটা দাও তো–কবিরাজ মশাই হাঁক দিলেন।

পূজ্যপাদ ভাবী শ্বশুরের লাঠি! ভাবী পত্নীর পুজনীয় পিতৃদেব হলেও এযুগের আধুনিক হবু জামাইয়ের বোধ হয় আর সাহসে কুলায় না। সবেগে প্রস্থান করলেন। বেচারী রজতবাবু!

এমনিতে বাইরে শৌখিন প্রকৃতির ও নিরীহ শান্তশিষ্ট দেখতে হলে হবে কি, রজতবাবু, ভদ্রলোকটিকে তো কিরীটীর মনে হচ্ছে এখন বেশ করিতকর্মাই।

ইতিমধ্যে একসময় কখন এক ফাঁকে দিব্বি সুন্দরী কবিরাজ-নন্দিনীর মনোরঞ্জন করে বসে আছেন এবং স্বয়ং পিতৃদেব হয়েও ভিষগরত্ন ব্যাপারুটির বিন্দুবিসর্গ টের পাননি।

কিরীটী সংবাদপত্রে আর মনোনিবেশ করতে পারে না।

এবং একটু পরেই রজতবাবুর পদশব্দ সিঁড়িতে আবার শোনা গেল।

কিরীটী বুঝতে পারে রজতবাবু, তাঁর ঘরে এসে প্রবেশ করলেন এবং আবার সঙ্গে সঙ্গে পদশব্দে বোঝা গেল বাইরে বের হয়ে গেলেন।

সেই যে রজতবাবু, গেলেন, দিন দুই আর ফিরলেন না মেসে।

কিন্তু আশ্চর্য, উক্ত ব্যাপার নিয়ে সেই দিন বা তার পরের দিনও নীচে ভিষগরত্নের অন্দরমহলে কোনপ্রকার সাড়া-শব্দ পাওয়া গেল না!

এমন কি পরের দিন দ্বিপ্রহরের দিকে কিরীটীকে একটু বের হতে হয়েছিল, ফিরবার পথে গলির মাথায় অমলার সঙ্গে চোখাচোখিও হয়ে গেল। সঙ্গে তার এক সহপাঠিনী বা বান্ধবী বোধ হয় ছিল। পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলতে বলতে কবিরাজ-গৃহের দিকেই আসছিল।

রজতবাবু, ফিরে এলেন দিন দুই পরে দ্বিপ্রহরে।

জ্যৈষ্ঠের শেষ। প্রখর রৌদ্রুতপ্ত দ্বিপ্রহরে আকাশটা যেন একটা তামার টাটের মত পুড়ে ঝাঁঝাঁ করছে। বাতাসে যেন আগুনের উগ্র একটা বিশ্রী ঝাঁজ।

দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে কিরীটী একটা টেবিলফ্যান চালিয়ে একজোড়া তাস নিয়ে পেসেন্স খেলছিল বাইরে থেকে রজতবাবুর গলা শোনা গেল।

ভিতরে আসতে পারি কিরীটীবাবু! আরে কে ও, রজতবাবু যে! আসুন আসুন।

দরজা ঠেলে রজতবাবু এসে কিরীটীর ঘরে প্রবেশ করলেন।

বেশভূষা যেন সামান্য একটু মলিন, মাথার চুল অযত্ন-বিন্যস্ত, মুখখানি কিন্তু বেশ প্রফুল্লই মনে হল।

হঠাৎ রজতবাবুর মুখের দিকে তাকিয়ে কেন যেন কিরীটীর মনে হয়, মাত্র এই দুই দিনেই ভদ্রলোকের বয়সটা যেন হু হু করে বেড়ে গিয়ে গালে ও কপালে বয়সের রেখা পড়েছে।

বসুন বসুন—তারপর কি খবর রজতবাবু? এ দুদিন ছিলেন কোথায়?

চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসতে বসতে ক্লান্ত অবসন্ন কণ্ঠে রজতবাবু বললেন, একটু কাজে গিয়েছিলাম বর্ধমানে।

কিরীটী উঠে টেবিলফ্যানটা একটু ঘুরিয়ে দিল রজতবাবুর দিকে। বললে, ইনসিওরেন্সের ব্যাপারে বোধ হয়?

না। দাদামশাইয়ের একটা বাড়ি আছে বর্ধমানে। মা যতদিন বেঁচে ছিলেন ঐখানেই তো ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর থেকে বাড়িটা তালা দেওয়াই পড়েছিল। কথাগুলো বলে একটু থেমে আবার বলতে লাগলেন, কলকাতায় আর নয়। ভাবছি, এবার সেখানে গিয়েই থাকবো।

কাজকর্মের আপনার অসুবিধা হবে না কলকাতা ছেড়ে গেলে?

মশাই। কলকাতা শহর তো নয় যেন একটা বাজার। ঘেন্না ধরে গিয়েছে আপনাদের এই ধুলো বালি ধোঁয়া আর ছত্রিশ জাতের মানুষের ভিড়ের কলকাতা শহরের ওপরে। মানুষ থাকে এখানে!

কিরীটী আজকে রজতবাবুর কথাগুলো শুনে যেন বেশ একটু অবাক হয়। কারণ কয়েকদিন আগেও রজতবাবুকে কিরীটী বলতে শুনেছে, ছোঃ ছোঃ আপনাদের গ্রাম্যজীবন আর সুবার্ব মাথায় থাক আমার! বেঁচে থাক আমার এ কলকাতা শহর। কথাটা বলছিলেন রজতবাবু সিনেমার গেটকীপার জীবনবাবুকে। আজকাল মানুষের সেরা তীর্থস্থান হল কলকাতা আর বোম্বাই—এই দুটি শহর, বুঝলেন মশাই!

কিন্তু কিরীটী মুখে জবাব দেয়, তা যা বলেছেন।

হঠাৎ পরক্ষণেই রজতবাবু, চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন, আচ্ছা চলি মশাই। দক্ষিণ পাড়ায় একটা জরুরী কাজ আছে, সেরে আসি।

রজতবাবু আর দাঁড়ালেন না। বের হয়ে গেলেন। হঠাৎ যেমন এসেছিলেন তেমনি হঠাৎই যেন প্রস্থান করলেন।

কেনই বা এলেন আবার হঠাৎ কেনই বা চলে গেলেন কিরীটী যেন ঠিক বুঝতে পারে না।

বর্ধমানে গিয়েছিলেন এই সংবাদটুকুই মাত্র কিরীটীকে দেবার এমনই বা কি প্রয়োজন ছিল! না, ভদ্রলোকের আরো কিছু বলবার বা কিছু জানাবার ছিল কিরীটীর কাছে। অন্যমনস্ক ভাবে কিরীটী তাসগুলো হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকে।

দ্বিপ্রহরের স্তব্ধ নির্জনতায় একটা ক্লান্ত রিকশার ঘণ্টির ঠং ঠং শব্দ নীচে গলির পথে ক্রমে ক্রমে মিলিয়ে গেল।

বাইরে বারান্দায় রেলিংয়ের ওপরে বসে একটা কাক কর্কশ স্বরে কা কা করে ডাকছে।