২. অভাবনীয় আকস্মিক দুর্ঘটনা

অভাবনীয় আকস্মিক দুর্ঘটনা।

দিদিমার বাড়ির ঘরগুলো স্বল্পপরিসর বলেই মণিকা প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করেছিল শয়নের। একটা ঘরে দিদিমার সঙ্গে মণি নিজের শয়নের ব্যবস্থা করেছিল। বাকী তিনটি ঘরে তিনজনের শোবার ব্যবস্থা। দোতলায় ইংরাজী Eপ্যাটার্নের পরিকল্পনায় চারখানি ঘর। প্রথম ঘরটিতে অতুল, দ্বিতীয় ঘরে রণেন, তৃতীয় ঘরে মণি, তার দিদিমা ও সুবালাদি এবং শেষঘরে সুকান্ত। রাত সাড়ে এগারোটার পরে তাস খেলা শেষ হলে যে-যার ঘরে শুতে যায়। পরের দিন প্রত্যুষে মণি অন্যান্য দিনের মত প্রভাতী চা তৈরী করে প্রথমে ঘুম ভাঙিয়ে সুকান্তকে চা দেয়, তারপর ডেকে তোলে রণনকে এবং চা দেয়। সর্বশেষে অতুলের ঘরের ভেজানো দ্বার ঠেলে ভেতরে ডাকতে গিয়ে দেখে অন্যান্য দিনের মত তার দরজায় ভিতর হতে খিল ভোলা নেই; ভোলাই আছে। একটু যেন আশ্চর্যই হয় মণিকা, অতুলের চিরদিনের অভ্যাস—সে কখনও শয়নঘরের দরজা ভিতর হতে বন্ধ না করে শোয় না। এখানে আসবার পরও গত সাতদিন সকালে অন্তত চার-পাঁচবার দরজায় ধাক্কা দিয়ে ডেকে তবে মণিকে দরজা খোলাতে হয়েছে। দরজা প্রথম ধাক্কাতেই খুলে যেতে বেশ একটু বিস্মিত হয়েই চায়ের কাপ হাতে মণি অতুলের ঘরে গিয়ে প্রবেশ করে।

অতুল চেয়ারের ওপর বসে আছে। চায়ের কাপটি হাতে এগুতে এগুতে ঠাট্টা করেই মণি বলে, কি ব্যাপার বল তো অতুলানন্দ স্বামী!

তিন বন্ধুর সকলের নামের সঙ্গে একটা নন্দ যোগ করে স্বামী বলে ডাকে মণি। ওরা তিন বন্ধুই প্রতিবাদ জানিয়েছিল, আমরা ত্রয়ী ঘোরতর সংসারী। স্বামীজী মোটেই নয়!

মণিকা ঠাট্টা করে বলেছিল, উঁহু, এ ঠিক তা নয়। এ অনেকটা দুধের সাধ ঘোলে মেটানো আর কি!

একত্রে যুগপৎ সকলেই প্রশ্ন করে, তার মানে, তার মানে?

উঁহুঁ। Thus far and no further! কতকগুলো এমন ব্যাপার আছে সংসারে যার রহস্যটুকু উদঘাটিত হয়ে গেলেই সকল মাধুর্য তার নষ্ট হয়ে যায়।

এই ব্যাপরের পরেই কিন্তু একটি বিচিত্র ব্যাপার ঘটে। যদিচ তিন বন্ধু জানে আজ পর্যন্ত একজন ব্যতীত বাকী দুজন সে ঘটনা সম্পর্কে একেবারে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। কিন্তু মণিকা জানে তিন বন্ধুর প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা করে তাকে একই অনুরোধ জানিয়েছে এবং প্রত্যেককেই মণিকা একই জবাব দিয়ে মৃদু হাসির সঙ্গে নিবৃত্ত করেছে। ব্যাপারটা হচ্ছে মণিকার বন্ধুদের ঐ ধরনের সম্বোধনের কিছুদিন পরেই একদিন অতুল বলে, মণিতুমি নিশ্চয়ই জান আমাদের চারজনের বন্ধুত্বের মধ্যে কোথাও এতটুকু গলদ নেই। তোমার সেদিনকার রহস্যজনক উক্তি বুঝতে পারিনি মনে কোরো না।

মণি কৌতুক হাস্যের সঙ্গে অতুলের মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, বুঝতে পেরেছ! কি বল তো অতুলানন্দ স্বামী?

সত্যি, ঠাট্টা নয়! Be serious মণি!

I am seriousgo on! মণি গম্ভীর হবার ভান করে।

তুমি যদি আমাদের তিনজনের মধ্যে কাউকে বিয়ে কর, জেনো, বাকি দুজন আমরা এতটুকুও দুঃখিত হব না।

সত্যি বলছ?

ভগবানের নামে শপথ নিয়ে বলছি, সত্যি।

নাস্তিকের মন নিয়ে আর ভগবানকে টানাটানি কোরো না অতুলানন্দ স্বামী।

বিশ্বাস কর আমি যা বলছি—

করলাম, কিন্তু আমার নিজস্ব একটা মতামতও তত থাকতে পারে এ ব্যাপারে!

নিশ্চয়ই।

তাহলে শোন, বিধাতা এ জীবনে বোধ হয় আমার ঘর বাঁধার ব্যাপারে বিষম একটা কৌতুক করে বসে আছেন!

মানে?

মানে তোমাদের তিনজনের মধ্যে এমন বিশেষ বিশেষ কতকগুলো গুন আছে, একমাত্র যাদের সমম্বয়েই আমি বিবাহে স্বীকৃত। অতএব বুঝতেই পারছ তা যখন এ জীবনে হবার নয় তখন–

তাহলে আর কি হবে? তাই তো ভেবেছি এ জীবনের তপস্যা পরজন্মে মনোমত পতিলাভ।

পরে রণেন ও সুকান্তও ঠিক অনুরূপ অনুরোধই জানিয়েছিল মণিকাকে এবং মণিকাও পূর্ববৎ জবাবই দিয়েছিল তাদেরও।

কিন্তু মণিকার সম্বন্ধেও অতুল কোনো সাড়া দেয় না। আরও একটু এগিয়ে এসে মণিকা বলে, কি গো অতুলানন্দ স্বামী, চেয়ারে বসে ঘুমোচ্ছ নাকি?

এবারেও সাড়া না পেয়ে ভাল করে তাকায় মণিকা অতুলের দিকে এবং সঙ্গে সঙ্গে চমকে ওঠে ও, হাত হতে চা-ভর্তি কাপটা মাটিতে পড়ে ঝঝন্ শব্দে গুঁড়িয়ে যায়। অত্যন্ত ধীরস্থির মণিকা চিরদিন সাধারণত মেয়েরা যে স্নায়বিক হয় অদপেই সে ধরনের সে নয়। কিন্তু সেই মুহূর্তে শিথিল হাত হতে চায়ের কাপটা পড়ে মাটিতে চূর্ণ হয়ে যাবার ঠিক পূর্বে ক্ষণেকের জন্য সম্মুখেই উপবিষ্ট নিশ্চল অতুলের মুখের দিকে তাকিয়েই যেন একটা ভয়ের অনুভূতি তাকে বিকল করে দিয়েছিল। অস্ফুট একটা আর্ত শব্দ কোনমতে চাপতে চাপতে ছুটে ঘর হতে বের হয়ে চাপা উত্তেজিত কণ্ঠে ডাকে, রণেন, সুকান্ত-শীগগিরী!

সুকান্ত সবে তখন চায়ের কাপটি শেষ করে নামিয়ে রাখতে যাচ্ছিল শয্যার পাশেই মেঝেতে হাত বাড়িয়ে এবং শয্যা হতে তখনও সে গাত্রোখান করেনি। আর রণেন চায়ের কাপ অর্ধেক নিঃশেষ করেছে। মণিকার চাপা আর্ত ডাকটা উভয়েরই কানে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই দুজনেই প্রায় একসঙ্গে দুঘর হতে বের হয়ে আসে সামনের বারান্দায়। মণিকার সর্বশরীরতখনও উত্তেজনায় কাঁপছে। একবার মাত্র ওদের ডেকেই যেন তার সমস্ত শক্তি নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে। সমস্ত মুখখানা তার ভয়ে ও উত্তেজনায় কেমন হয়ে গিয়েছে। একটা বিবশ অসহায় নিষ্ক্রিয়তা।

দুজনেই ব্যগ্র কণ্ঠে প্রশ্ন করে, কি? কি হয়েছে মণি?

অতুল—কোনক্রমে মণিকা বেল নামটাই উচ্চারণ করতে সক্ষম হয়।

অতুল! কি হয়েছে অতুলের? সুকান্ত প্রশ্ন করে, কিন্তু রণেন ততক্ষণে খোলা দরজা দিয়ে অতুলের ঘরে গিয়ে প্রবেশ করে।

কি? কি হয়েছে অতুলের? সুকান্ত আবার প্রশ্ন করে।

কিন্তু মণিকার কণ্ঠে কোন জবাব আসে না। কেবল ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে সুকান্তর মুখের দিকে, অগত্যা সুকান্তও ঘরের মধ্যে যায়। মণিকা তাকে অনুসরণ করে আচ্ছন্নভাবে যন্ত্রচালিতের মত।

নির্বাক স্থির জড়পদার্থের মত দাঁড়িয়ে আছে রণেন চেয়ারের উপরে উপবিষ্ট অতুলের মুখের দিকে তাকিয়ে।

অতুল!

অতুলের গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ। কিন্তু মুখের দিকে তাকালে মনে হয় যেন সমস্ত মুখখানার ওপরে একটা কালো ছায়া পড়েছে। চোখ দুটি খোলা এবং আতঙ্কে বিস্ফারিত দুহাত মুষ্টিবদ্ধ—অসহায় শিথিলচেয়ারের দুপাশে ঝুলছে। হাঁটু দুটো একটু ভাঁজ করা। বারেক মাত্র তাকিয়েই কারও বুঝতে কষ্ট হয় না যে অতুল মৃত। ডাক্তার রণেনের পক্ষে তো নয়ই, সুকান্তরও বুঝতে দেরি হয় না অতুল মৃত।

গত রাত্রে আহারাদির পর সাড়ে নটা থেকে সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত চারজনে একত্রে সুকান্তর ঘরে বসে তাস খেলেছে। এবং তাস খেলতে খেলতে প্রত্যহ যেমন হৈ-হুল্লোড় হাসি তামাসা হয় তেমনিই হয়েছে। বরং গত রাত্রে যেন একটু বেশীই কৌতুকপ্রিয় দেখা গিয়েছিল অতুলকে। এমনিতেই কারণে অকারণে অতুল একটু বেশী হাসে, গত রাত্রে তার সে হাসির মাত্রা যেন অন্যান্য দিনের চাইতে একটু বেশীই বলে মনে হচ্ছিল। প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা অতুল।

কোন রাগ ছিল না তার দেহে। সুকান্ত ও রণেন তবু মধ্যে মধ্যে অসুখে বা পেটের গোলমালে ভুগেছে, কিন্তু গত সাত আট বৎসরের মধ্যে একদিনের জন্যও অতুলকে অসুস্থ হতে দেখা যায়নি। সে সবার চাইতে বেশী পরিশ্রমী—চঞ্চলও সে তিনজনের মধ্যে সকলের চাইতে বেশী। সেই নীরোগ সুস্থ অতুল! হঠাৎ তার এমন কি হল যে হঠাৎ চেয়ারে বসে বসেই তার প্রাণ বের হয়ে গেল। প্রথমটায় প্রায় মিনিট দশেক তিনজনের মধ্যে কারও মুখেই কোন কথা সরে না। তিনজনেই যেন বোবা নিশ্চল। অতুলের মৃত্যু শুধু অভাবনীয় নয়, যেন চিন্তারও অতীত।

অনেকক্ষণ মৃত অতুলের দিকে চেয়ে চেয়ে দেখে ওরা তিনজন পরস্পরের মুখের দিকে তাকায়। সকলের বোবা দৃষ্টিতে একটি মাত্র প্রশ্ন : এ কি হল?

শরৎ-প্রভাতের সোনালী আলো মুক্ত বাতায়নপথে ঘরের মধ্যে এসে যেন সেই প্রশ্নই করছে, কি হল?

জানালার পাল্লার উপরে একটা চড়ুই পাখি লাফালাফি করে কিচিরমিচির শব্দ করছে। দিদিমা এখনও গঙ্গাস্নান সেরে বাড়ি ফেরেননি। দাই জাকীয়ার গলার স্বর শোনা যাচ্ছে, সুবালাদির সঙ্গে নিত্যকার ঘর-দুয়ার পরিষ্কার করা নিয়ে খিটিমিটি চলেছে নীচে। দিদিমার দক্ষিণ হস্ত ঐ সুবালাদি। আজ দীর্ঘ পাঁচ বছর গাঁ হতে এসে দিদিমার আশ্রয়েই থাকেন। একবেলা রান্না সুবালাদিই করেন। মণিকা ঘরে এলেও বেশীক্ষণ কিন্ত দৃশ্যটা সহ্য করতে পারে না। ঘরের বাতাসে যেন এতটুকু অক্সিজেনও নেই, কেমন যেন শ্বাসরোধ করছে।

মণিকা বারান্দায় বের হয়ে এল। রেলিংয়ের সামনে দাঁড়াল। বারান্দা থেকে বেশ খানিকটা আকাশ দেখা যায়। শরতের আকাশ। পেঁজা তুলোর মত কয়েক টুকরো মেঘ নীল আকাশের বুকে ইতস্তত সঞ্চরণশীল। প্রাণের সংবাদ নিয়ে সকালে সূর্যের আলো দিগন্ত প্লাবিত করে দিচ্ছে। এই শুচিস্নিগ্ধ প্রভাতের প্রশান্তিতে কেন মৃত্যু এল! অতুল! অতুল! গত সাতদিনের খুঁটিনাটি কথা মনে পড়ছে। গতকালও এমন সময় অতুলের ঘরে বসেই চা-পান করছিল ও।

অতুল বলছিল চা-পান করতে করতে, এ যাত্রায় তার বেশীদিন থাকা হবে না, দু-চারদিনের মধ্যেই এবারে তাকে বম্বে রওনা হতে হবে। সেখানে কিসের একটা কনফারেন্স আছে। পরশুদিন সকলে মিলে সারনাথ গিয়েছিল। রণেন ও সুকান্ত ভিতরে ছিল, মণিকা আর অতুল বাইরে বেড়াচ্ছিল। সূর্যের শেষ আলোটুকু নিঃশেষ হতে চলেছে তখন পৃথিবীর বুক হতে।

চারদিকে আবছা আলোর একটা স্লান বিধুর বিষণ্ণতা। অতুল হঠাৎ বললে, একটা কথা এবারে আমি তোমাকে বলব স্থির করেছি মণি।

কৌতুকস্মিত কণ্ঠে মণিকা জবাব দিয়েছিল, বলবেই যখন স্থির করেছ অতুলানন্দ স্বামী, বলেই ফেল চটপট। মনের মধ্যে আর পুষে রেখো না। বেশীক্ষণ পুষে রাখলে জমাট বেঁধে যাবার আবার ভয় আছে।

না, না—ঠাট্টা নয়—

ঠাট্টা যে নয় সে তো বুঝতেই পারছি। তবে আর বিলম্ব কেন? বলেই ফেল। হাসতে হাসতে জবাব দিয়েছিল মণিকা।

আমি বিবাহ করব স্থির করেছি কথাটা যেন কোনমতে উগরে দেয় অতুল।

সুসংবাদ। কবে? কৌতুকস্নিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকায় মণিকা অতুলের মুখের দিকে।

যবে কনে বলবে প্রস্তুত–সেই দিনই।

কেন, কনে কি এখনও প্রস্তুত নয়? আবার সেই কৌতুক জেগে ওঠে মণিকার কণ্ঠে।

বুঝতে পারছি না।

বল কি! তবে কি রকম বিয়ের ঠিক করলে? হাসতে শুরু করে মণিকা, কনের মনের সংবাদই এখনও মিলল না, অথচ স্থির করে ফেললে বিয়ে করছ!

তাই তো কনেকে শুধাচ্ছি—

বুঝেও যেন না বোঝার ভান করে মণিকা বলে, মানে?

সেই জবাবই তো চাই তোমার কাছে মণি—

ক্ষণকাল মণিকা চুপ করে থাকে। তারপর বলে, আমার জবাব তো তুমি পেয়েছ অনেক দিন আগেই অতুল। আমি তোমাদের তিনজনকেই ভালবাসি। এবং সেই ভালবাসার মধ্যে

আমি বিচ্ছেদ বা দুঃখ আনতে চাই না।

এ ধরণের platonic ভালবাসার কোন অর্থই হয় না। আর জান, এ ভালবাসায় আমি তৃপ্তও নই। আমি চাই আমার ভালবাসাকে পরিপূর্ণভাবে একান্তভাবে আমারই করে পেতে। জীবনের সর্ব ব্যাপারে ভাগ দিতে ও ভাগীদার হতে আমি রাজী আছি, কিন্তু ভালবাসার ব্যাপারে নয়।

কিন্তু এতদিন তো তুমি তাতেই তৃপ্ত ছিলে, অতুলানন্দ!

না। সে তোমার ভুল।

ভুল?

হ্যাঁ, একেবারেই ভুল।

এরপর নিঃশব্দে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে মণিকা, তারপর বলে, আমাকে তুমি ক্ষমা কর অতুল।

না, না। না, আজ আমার কথা তোমায় শুনতেই হবে মণি।

মণিকা নির্বাক।

কি, চুপ করে রইলে যে?

কি বলব বল। সবই তো তোমরা জান। আমাকে পাওয়ার চিন্তা তুমি ভুলে যাও।

তা আর সম্ভব নয় মণি। গত তিন বৎসর যুদ্ধ করে নিজের সঙ্গে আমি আজ ক্ষতবিক্ষত। এই আমার শেষ সঙ্কল্প। আমি তোমায় চাই। অতুল হাত বাড়িয়ে আবেগের সঙ্গে মণিকার একখানা হাত অন্ধকারেই চেপে ধরে, মণি!

হাত ছাড় অতুল। অধীর হয়ো না। এত বড় বন্ধুত্বকে ক্ষুন্ন হতে দিও না।

হঠাৎ এমন সময় শুকনো পাতার উপর কার যেন দ্রুত পলায়মান পদশব্দ শোনা গেল। দুজনেই চকিত হয়ে প্রশ্ন করে, কে? কে?

ইতিমধ্যে দুজনের একজনের খেয়াল হয়নি কখন একসময় সন্ধ্যার অন্ধকারে চারদিক ঢেকে গিয়েছে।

খেয়াল হতেই মণিকা বলে ওঠে, উঃ, দেরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু রণেন আর সুকান্তর এখনও কোন পাত্তা নেই কেন? ওরা আবার কোথায় গেল?

অল্প দূরেই এমন সময় সুকান্তর গলা শোনা যায়, অতুল, মণি,তোমরা কোথায়? বাড়ি ফিরবে না? টাঙ্গাওয়ালা যে তাগাদা দিচ্ছে।

একটু এগুতেই সুকান্ত ও রণেনের সঙ্গে ওদের দেখা হয়ে গেল। ও সম্পর্কে দুজনের মধ্যে গত দুদিনের মধ্যে দ্বিতীয়বার আর কোন আলোচনাই হয়নি।

.

মণিকার দুচোখের কোল জলে ভরে ওঠে। নীচে দিদিমার কণ্ঠস্বর শোনা গেল, কৃষ্ণের শতনাম করতে করতে গঙ্গাস্নান সেরে এই বোধ হয় তিনি ফিরলেন।