1 of 2

১.১৮ মোহিতাবস্থা পরীক্ষা করণ

অষ্টাদশ পাঠ
মোহিতাবস্থা
পরীক্ষা করণ

পাত্র নিদ্রিত হইবার পর কাৰ্যকারক তাহাকে কোন কাৰ্য্য করিতে আদেশ দিবার পূর্বে, তাহার বাস্তবিক নিদ্রা হইয়াছে কিনা, তাহা উত্তমরূপে পরীক্ষা করিয়া লইবে। কারণ সময় সময় বাচাল প্রকৃতির পাত্রগণ নিদ্রিত না হইয়াও নিদ্রার ভাণ করিয়া পড়িয়া থাকে এবং যখন সম্মোহনবিৎ কর্তৃক কোন কাৰ্য্য করিতে আদিষ্ট হয়, তখন উচ্চ শব্দে হাসিয়া উঠিয়া তাহাকে অপ্রতিভ করিবার চেষ্টা পায়। বস্তুতঃ পাত্রের বাস্তবিক নিদ্রা না হইয়া থাকিলে, তাহাকে কোন কার্য করিতে আদেশ করা বৃথা। এই নিমিত্ত পাত্র নিদ্রিত হইয়াছে বলিয়া বোধ করিলে, সর্বাগ্রে তাহাকে নিম্নোক্ত উপদেশানুসারে পরীক্ষা করিয়া লইবে।

(১) নিদ্রিত ব্যক্তির শ্বাস প্রশ্বাস গুলি পরস্পর সমান, দীর্ঘ ও গভীর হইলে তাহাকে নিদ্রিত বলিয়া বুঝিবে।

(২) পাত্রের চোখের পাতা আস্তে টানিয়া তুলিয়া ক্ষণকাল উহা ধরিয়া রাখিবে; যদি উহাতে তাহার চক্ষুর মণি এদিক-ওদিক নড়া-চড়া না করে, তবে তাহাকে গভীর নিদ্রায় নিদ্রিত বলিয়া জানিবে।

(৩) পাত্রের চোখের পাতা আস্তে আস্তে টানিয়া তুলিয়া রাখিবে। তৎপরে তাহার চক্ষু-মণির চারিপাশে যে সাদা অংশ আছে, সেই স্থানে খুব আস্তে অঙ্গুলি স্পর্শ করিবে, যদি উহাতে সে চোখের পাতা বন্ধ করিবার চেষ্টা না পায়, তবে তাহাকে নিদ্রিত বলিয়া বুঝিবে; কিম্বা তাহার চক্ষুর মধ্যে আস্তে আস্তে ফু দিলে, যদি সে চক্ষু বন্ধ করিতে চেষ্টা না পায়, তবে তাহার নিদ্রা হইয়াছে বলিয়া বুঝিবে। ইহা গভীর নিদ্রার পরিচায়ক।

(৪) পাত্রের একখানা হাত আস্তে আস্তে উঠাইয়া উহা উৰ্দ্ধবাহুর ন্যায় খাড়া করিয়া রাখিবে এবং ঐরূপ করিবার সময় গম্ভীর ও আদেশসূচক স্বরে বলিবে—“তোমার এই হাতখানাকে আমি সোজা ভাবে দাঁড় করাইয়া রাখিব; উহা শক্ত হইয়া সরল রেখার ন্যায় দাঁড়াইয়া থাকিবে এবং কিছুতেই উহা শিথিল হইবেনা বা পড়িয়া যাইবে না। তোমার হাত খানা ক্রমে ক্রমে খুব শক্ত হচ্ছে—আরও শক্ত হচ্ছে-লোহার মত শক্ত হচ্ছে—উহা কিছুতেই পড়িবে না—কখনও পড়িবে না; যতক্ষণ আমি তোমাকে উহা শিথিল করিতে না বলিব, ততক্ষণ উহ লোহার শলার মত শক্ত হইয়া দাঁড়াইয়া থাকিবে এবং উহাতে তোমার ঘুমের কোন ব্যাঘাত হইবে না।” দুই-তিন বার এইরূপ আদেশ করার পর, তাহার হাত খানা শক্ত হইলে, কিছুক্ষণের জন্য উহাকে ঐরূপ ভাবে অবস্থান করিতে দিবে, কিন্তু মাঝে মাঝে এক একবার টিপিয়া দেখিবে যে, উহা পূর্বের ন্যায় শক্ত আছে কি না? যদি উহা শিথিল না হইয়া বরাবর দৃঢ়ভাবে দণ্ডায়মান থাকে, তবে তাহাকে নিদ্রিত বলিয়া বুঝিবে। তৎপরে চার-পাঁচ মিনিট পর আদেশ দিয়া উহাকে পূর্বের ন্যায় শিথিল করিয়া দিবে।

(৫) পাত্রের একখানা পা আস্তে আস্তে উঠাইয়া সরল রেখার ন্যায় সোজা করিয়া শূন্যে রাখিবে এবং ঐরূপ করিবার সময় বলিবে–“তোমার মোহিতাবস্থা পরীক্ষা করণ এই পা খান (উরু হইতে গোড়ালী পৰ্য্যন্ত স্থান) শক্ত হচ্ছে-ক্রমে ক্রমে খুব শক্ত হচ্ছে। আমি ইহাকে শূন্যের উপর যেরূপ ভাবে রাখিয়াছি, উহা সেরূপ অবস্থায়ই থাকিবে-কখনও শিথিল হইয়া শুইয়া পড়িবে না। যতক্ষণ আমি উহাকে শিথিল হইতে না বলিব, ততক্ষণ উহা কঠিনরূপে এই অবস্থায় থাকিবে এবং উহাতে তোমার ঘুমের কোন ব্যাঘাত হইবে না” ইত্যাদি। উহা ৪৫ মিনিট সময় ঐ অবস্থায় থাকিলে তাহার নিদ্রা হইয়াছে বলিয়া বুঝিবে। পরে আদেশ দ্বারা উহা শিথিল করিয়া দিবে। এইটি ঠিক পুর্বোক্ত পরীক্ষার অনুরূপ।

এই গুলির দুই-একটি দ্বারা পরীক্ষা করার পর, পাত্র নিদ্রিত বলিয়া স্থির হইলে, পরবর্তী পাঠের উপদেশানুসারে তাহার মনে মায়া ও ভ্রম জন্মাইতে চেষ্টা করিবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *