1 of 2

১.১৫ পাত্রকে সম্মোহিত করিবার প্রাথমিক উপদেশ

পঞ্চদশ পাঠ
পাত্রকে সম্মোহিত করিবার প্রাথমিক উপদেশ

কাৰ্যকারক যাহাকে কয়েকটি শারীরিক পরীক্ষা দ্বারা অভিভূত করিতে পারিয়াছে, সম্মোহন নিদ্রায় নিদ্রিত (hypnotise) করিতে প্রথম তাহাকেই পাত্র মনোনীত করিবে। এই প্রণালীতে কাৰ্য্য করিলে সে শিক্ষায় সহজে কৃতকাৰ্য্যতা লাভে সমর্থ হইবে। যদি কোন শিক্ষার্থী পাত্রকে জাগ্ৰদবস্থায় বশীভূত না করিয়া প্রথমেই নিদ্রিত করিতে ইচ্ছা করে, তবে সে তাহা করিতে পারে; কিন্তু উহাতে সাফল্য লাভ করিতে অপেক্ষাকৃত অধিক সময় লাগিবে। পাত্রকে সম্মোহন নিদ্রায় নিদ্রিত, অর্থাৎ সম্মোহিত করিবার পূৰ্ব্বে, তাহাকে শারীরিক পরীক্ষায় অভিভূত করার দুইটি বিশেষ কারণ আছে। প্রথম কারণ এই যে, পাত্র এই পরীক্ষাগুলিতে অভিভূত হইলে, সম্মোহন-শক্তির প্রতি উপযুক্ত পরিমাণে তাহার সংবেদনা আছে এবং তাহাকে সম্মোহন নিদ্রায় নিদ্রিত করা যাইবে এরূপ বুঝা যায়। আর যাহারা জাগ্ৰদবস্থায় মোহিত হয় না, তাহাদের সংবেদনা অল্প; এজন্য তাহাদিগকে সম্মোহিত করা কঠিন। পাত্রের সংবেদনা পরীক্ষার ইহ সাধারণ নিয়ম। মোহিতাবস্থা অধিক পরিমাণে সংবেদনার উপর নির্ভর করিলেও উহা উৎপাদনের সময় আদেশের প্রতি পাত্রের মনঃ সংযোগ একান্ত আবশ্যক। এজন্য জাগ্রদবস্থায় অভিভূত ব্যক্তিও নিদ্রিত হইবার সময় মন একাগ্র না করিলে তাহাকে মোহিত করা যায় না; এবং যে জাগ্ৰদবস্থায় উক্ত পরীক্ষাগুলি দ্বারা অভিভূত হয় নাই, সেও আদেশের প্রতি যযোপযুক্তরূপে মনঃ সংযোগ করিতে পারিলে সম্মোহিত হইয়া থাকে। তথাপি উক্ত প্রণালীতে কাৰ্য্য করিলে যে শিক্ষার্থী অধিকাংশ চেষ্টাতেই সফল মনোরথ হইবে, তাহাতে সন্দেহ নাই। অভিজ্ঞ সম্মোহনবিদগণ পাত্রকে নিদ্রিত করিবার পূৰ্ব্বে, তাহাকে জাগ্ৰদবস্থায় মোহিত করা আবশ্যক বোধ করেন না। যেহেতু তাহারা মুখাকৃতি দেখিয়াই অনেক সময় অভ্রান্তরূপে তাহার সংবেদনার পরিমাণ করিতে পারেন। কিন্তু শিক্ষার্থী তাহা আশা করিতে পারে না। যাহারা বহু শত লোক মোহিত করিয়া অভিজ্ঞতা লাভ করিয়াছেন, তাঁহাদের সহিত তাহার তুলনা হইতে পারে না।

আর দ্বিতীয় কারণ এই যে, পাত্রকে জাগ্ৰদবস্থায় বশীভূত করিতে পারিলে, কাৰ্যকারকের শক্তির প্রতি তাহার যে বিশ্বাস জন্মে, তাহা তাহার মনে আবশ্যকীয় একাগ্রতা উৎপাদনের সাহায্য করতঃ তাহাকে তাহার আদেশের প্রতি অধিক আকৃষ্ট করিয়া থাকে। এই নিমিত্ত কোন নির্দিষ্ট সম্মোহনবিদের প্রতি কাহারও বেশী বিশ্বাস থাকিলে, সে তাহাকে যত সহজে মোহিত করিতে সমর্থ হয়, অপর কোন কাৰ্যকারক তাহা করিতে পারে না। কাৰ্যকারক স্বীয় আচার, ব্যবহার, কাৰ্য্য ইত্যাদি দ্বারা যত বেশী পরিমাণে লোকের বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা আকর্ষণ করিতে পারিবে, সে তত অধিক কাৰ্য্যকুশল সম্মোহনবিৎ হইতে সমর্থ হইবে।

পাত্রকে যে ঘরে সম্মোহন করিতে ইচ্ছা করিবে, তাহা খুব নীরব ও নির্জন হওয়া আবশ্যক। কায করিবার সময় বাহিরের গোলমাল, শব্দ, ইত্যাদিতে কাৰ্যকারকের নিজের ও পাত্রের একাগ্রতা নষ্ট না হয়, কিম্বা বাহির হইতে বাতাস আসিয়া তাহাদের উভয়ের চক্ষু কঁপাইতে না পারে, সে বিষয়ে খুব লক্ষ্য রাখিবে। দিনের বেলা কাষ করিলে ঘরে আলোক আসিতে পারে, এরূপ ভাবে ঘরের দরজা-জানালাগুলি বন্ধ করিয়া দিবে; কিন্তু বেশী আলোক অনেকের নিদ্রার ব্যাঘাত জন্মাইয়া থাকে। রাত্রি বেলা চেষ্টা করিলে দরজা-জানালাগুলি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করিয়া উজ্জ্বল বাতির আলোকে ঘরটি আলোকিত রাখিবে, যেন তাহারা পরস্পরকে সুস্পষ্টরূপে দেখিতে পায়। দিনের বেলা নীরব ও জনশূন্য মাঠেও পাত্রকে সম্মোহিত করা যায়; কিন্তু রাত্রিতে খোলা জায়গায় কখনও কাহাকেও মোহিত করিবার চেষ্টা পাইবেনা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *