1 of 2

১.১০ জাগ্ৰদবস্থায় মোহিত করণ

দশম পাঠ
জাগ্ৰদবস্থায় মোহিত করণ

প্রথম পরীক্ষা – পাত্রকে পশ্চাদ্দিকে ফেলিয়া দেওয়া

যাহার হাত খুব তাড়াতাড়ি পড়িয়া যায়, শিক্ষার্থী তাহাকে পাত্র নির্বাচন করিবে। তাহাকে বেশ সরল ভাবে, পা দুই খানা জোড়া করিয়া ও হাত দুইখানা দুই পাশে ঝুলাইয়া দিয়া দাঁড় করাইবে। সে ঐরূপে দাঁড়াইয়া, তাহার সমস্ত শরীরটি যথা সম্ভব শিথিল ও বলশূন্য করতঃ শান্ত ও গম্ভীর ভাব অবলম্বন করিবে। তৎপরে শিক্ষার্থী পাত্রের পিছনে দাঁড়াইয়া নিজের মুষ্টিবদ্ধ ডানহাত তাহার (পাত্রের) ঘাড়ের নিম্নে (at the base of the brain) এবং নিজের বাম হাতখান, তাহার (পাত্রের) মাথার বামপার্শ্ব দিয়া প্রসারণ করতঃ ঐ হাতের অঙ্গুলিগুলি তাহার কপালের উপর স্থাপন করিবে। ঐরূপ করা হইলে, পাত্র চক্ষু বুজিয়া মনোযোগের সহিত এরূপ ভাবিতে আরম্ভ করিবে—“আমি পিছনের দিকে পড়িয়া যাইতেছি,ক্রমেই আমি পিছনের দিকে পড়িয়া যাইতেছি,-ক্রমেই আমার সমস্ত শরীর বলশূন্য ও শিথিল হইয়া পিছনের দিকে ঝুঁকিয়া পড়িতেছে,-আমি কিছুতেই আর অধিকক্ষণ দাঁড়াইয়া থাকিতে পারিব না,-আমি এখনই পড়িয়া যাইব,-আমি নিশ্চয়ই পড়িয়া যাইব।” যখন সে এরূপ ভাবিতে আরম্ভ করিয়াছে, তখন শিক্ষার্থী নিজের ডান হাতের মুঠের উপর খুব স্থির ও সতেজ দৃষ্টি স্থাপন করতঃ একাগ্রতার সহিত এইরূপ চিন্তা করিবে-“তুমি পিছনের দিকে পড়িয়া যাইবে,—তুমি নিশ্চয় পিছনের দিকে পড়িয়া যাইবে,-তোমার সমস্ত শরীর পিছনের দিকে ঝুঁকিয়া পড়িতেছে, তুমি কিছুতেই আর অধিকক্ষণ দাঁড়াইয়া থাকিতে পারিবেন,—তুমি এখনই পিছনের দিকে পড়িয়া যাইবে”। সে মিনিট দুই এরূপ চিন্তা করিয়া ধীর, গম্ভীর ও আদেশসূচক স্বরে বলিবে—“তুমি পিছনের দিকে পড়িয়া যাইতেছ, -ক্রমেই তোমার সমস্ত শরীর পিছনের দিকে ঝুকিয়া পড়িতেছে এবং আমি যখন আমার হাত দুইখানা সরাইয়া লইব, তখনই তুমি পিছনের দিকে পড়িয়া যাইবে;-তখন তুমি আর কিছুতেই দাঁড়াইয়া থাকিতে পারিবেনা।” খুব মনাযোগর সহিত এই আদেশগুলি তিন-চার বার প্রদান করোন্তর মন স্থির করিয়া, অপেক্ষাকৃত গম্ভীর ও আদেশসূচক স্বরে পুনর্বার বলিবে,-“এইক্ষণ তুমি পিছনের দিকে পড়িয়া যাইতেছ;-এই পড়ে যাচ্ছএই পড়ে যাচ্ছ-পড়ে গেলে-পড়ে গেলে-পড়লে।” এই শেষোক্ত আদেশটি প্রদান করিবার সঙ্গে সঙ্গে, শিক্ষার্থী বাম হাতখানা পাত্রের কপালের উপর হইতে, তাহার বাম কাণ স্পর্শ না করিয়া (উহার উপর দিয়া) আস্তে আস্তে সরাইয়া লইবে এবং ঠিক সেই সময়ে তাহার ডান হাতের মুঠটিও তাহার ঘাড়ের উপর হইতে সরাইয়া ফেলিবে। শিক্ষার্থী হাত দুইখানা সরাইবার সঙ্গে, যখন দেখিতে পাইবে যে, পাত্র বাস্তবিক পিছনের দিকে পড়িয়া যাইতেছে তখন তাহাকে খুব তাড়াতাড়ি ধরিয়া ফেলিবে, যেন সে পড়িয়া গিয়া কোনরূপ আঘাত না পায়। যদি পাত্র উপদেশগুলি যথাযথরূপে পালন করিয়া থাকে, তবে সে নিশ্চয় পিছনের দিকে পড়িয়া যাইবে। কোন কোন পাত্র পিছনের দিকে পড়িয়া যাওয়ার ঝোঁক পাওয়া সত্ত্বেও,পড়িয়া গিয়া আঘাত পাইবার আশঙ্কায় শক্তির গতি রোধ করিয়া স্থির ভাবে দাঁড়াইয়া থাকে। এজন্য শিক্ষার্থী পূৰ্বেই পাত্রকে এরূপ বুঝাইয়া রাখিবে যে, যখন সে পিছনের দিকে পড়িয়া যাইবার ঝোক পাইবে, তখন যেন সে শক্তির গতিরোধ করিয়া তাহার সম্পূর্ণ শরীরটি পিছনের দিকে পড়িতে দেয়, অর্থাৎ যেন সে পিছনের দিকে পড়িয়া যায়। যেহেতু পড়িয়া যাইবার সময়ই যখন তাহাকে দৃঢ়রূপে ধরিয়া ফেলা হইবে, তখন তাহার পড়িয়া গিয়া আঘাত পাওয়ার কিছুমাত্র আশঙ্কা নাই। আমি আশা করি যে, এই উপদেশগুলি যথাযথরূপে পালন করিয়া চেষ্টা পাইলে শিক্ষার্থী প্রথমবারেই কৃতকাৰ্য্য হইবে। যদি সে শিক্ষার প্রারম্ভে দুই-একবার অকৃতকাৰ্যও হয়, তথাপি সে নিরাশ হইয়া চেষ্টা পরিত্যাগ করিবে না। অধ্যবসায়ই কৃতকাৰ্য্যতার মূল। উপযুক্ত অধ্যবসায়ের সহিত বিভিন্ন প্রকৃতির কয়েকটি লোকের উপর কয়েকবার চেষ্টা করিলেই সে নিশ্চয় ইহা সম্পাদন করিতে সমর্থ হইবে। কাহারও উপর প্রথম বার চেষ্টা করিয়া অকৃতকার্য হইলে, দ্বিতীয় বার চেষ্টা করিবে এবং আবশ্যক হইলে আট-দশ বার পর্যন্তও উহা করিতে বিরত থাকিবে না।

দ্বিতীয় পরীক্ষা-পাত্রকে সম্মুখের দিকে ফেলিয়া দেওয়া

কাৰ্যকারক যাহাকে লইয়া পূর্ববর্তী পরীক্ষায় কৃতকার্য হইয়াছে, অর্থাৎ যে খুব তাড়াতাড়ি পিছনের দিকে পড়িয়া যায়, বর্তমান পরীক্ষাটি সম্পাদনের জন্য তাহাকেই পাত্র মনোনীত করিবে। তাহাকে পূর্বের ন্যায় পা দুইখানা জোড়া করিয়া এবং হাত দুইখানা দুই পাশে ঝুলাইয়া দিয়া সোজা ভাবে দাঁড় করাইবে। তৎপরে কাৰ্যকারক তাহার সম্মুখে মুখামুখি হইয়া দাঁড়াইয়া, তাহার উভয় হাতের অঙ্গুলিগুলি পাত্রের কপালের উভয় পার্শ্বে (at the temples of the fore-head) স্থাপন করিবে এবং তাহাকে বেশ শান্ত ও গম্ভীরভাব অবলম্বন পূর্বক সমস্ত শরীরটি সাধ্যমত বল শূন্য ও শিথিল করিয়া তাহার (কাৰ্যকারকের) দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকাইয়া থাকিতে বলিবে। এই সময় পাত্র তাহার চোখের পাতা উঠা-নামা করিতে কিম্বা চোখ কপাইতে পারিবেনা এবং সে তাহার সাধ্যমত দৃষ্টি স্থির রাখিয়া খুব মনাযোগের সহিত এরূপ চিন্তা করিবে “আমি সামনের দিকে পড়িয়া যাইতেছি,আমি সামনের দিকে পড়িয়া যাইতেছি,-ক্রমেই আমার সমস্ত শরীর সামনের দিকে ঝুঁকিয়া পড়িতেছে, -আমি এখনই সামনের দিকে পড়িয়া যাইব—আমি নিশ্চয় পড়িয়া যাইব।” যখন সে উক্তরূপ চিন্তা করিতে আরম্ভ করিয়াছে, তখন শিক্ষার্থী তাহার নাসিকা-মূলে (জ দ্বয়ের মধ্যস্থলের কিঞ্চিৎ নিম্নে) অত্যন্ত স্থির ও প্রখর দৃষ্টি স্থাপন করতঃ একাগ্রতার সহিত নিম্নোক্তরূপ ভাবিবে—“তুমি সামনের দিকে পড়িয়া যাইবে- তুমি কিছুতেই আর অধিকক্ষণ দাঁড়াইয়া থাকিতে পারিবেনা—তোমার সমস্ত শরীর সামনের দিকে ঝুকিয়া পড়িতেছে—এবং তুমি এখনই সামূনের দিকে পড়িয়া যাইবে” ইত্যাদি। সে মিনিট দুই এরূপ চিন্তা করিয়া গম্ভীর ও আদেশসূচক পরে বলিবে

তুমি সামনের দিকে পড়িয়া যাইতেছ—তুমি সামনের দিকে পড়িয়া যাইতেছ-ক্রমেই তোমার শরীর সামনের দিকে ঝুকিয়া পড়িতেছে এবং তুমি আর কিছুতেই দাঁড়াইয়া থাকিতে পারিবেনা;-যখন আমি তোমার কপালের পাশ্ব হইতে আমার হাত দুইখানা সরাইয়া ফেলিব, তখন তুমি আস্তে আস্তে সামনের দিকে পড়িয়া যাইবে।” দুই-তিন বার এইরূপ আদেশ দেওয়ার পর, যখন সে বুঝিতে পারিয়াছে যে, আদেশের প্রতি পাত্রের মনাযোগাকৃষ্ট হইয়াছে, তখন অপেক্ষাকৃত গম্ভীর ও আদেশচক স্বরে বলিবে—“এইক্ষণ তুমি সামনের দিকে পড়িয়া যাইতেছ;এই পড়ে যাচ্ছ—এই পড়ে যাচ্ছ–পড়ে গেলে–পড়ে গেলে পড়লে।” এই আদেশ প্রদান করিবার সঙ্গে সঙ্গে কার্যকারক পাত্রের কপালের উভয় পার্শ্ব হইতে তাহার হাত দুইখানা সামনের দিকে সরাইয়া আনিবে। যখন সে এইরূপে হাত দুইখানা সরাইয়া লইতেছে, তখন দেখিতে পাইবে যে, পাত্র তাহার হাতের প্রতি আকৃষ্ট হইয়া, সামনের দিকে ঝুকিয়া পড়িয়া ভূপতিত হইবার উপক্রম হইয়াছে। বলা বাহুল্য যে, এই সময়ই তাহাকে দৃঢ়রূপে ধরিয়া ফেলিতে হইবে, অন্যথায় সে পড়িয়া গিয়া কোনরূপ আঘাত পাইতে পারে।

যথাযথরূপে এই প্রণালীর অনুসরণ করিতে পারিলে শিক্ষার্থী প্রথম চেষ্টাতেই কৃতকার্য হইবে, সন্দেহ নাই। কারণ এই পরীক্ষা দুইটি খুব সহজ। আমার ভরসা আছে যে, যে কোন চতুর ব্যক্তি এই উপদেশ মত দুই-এক বার চেষ্টা করিলেই উক্ত পরীক্ষা দুইটি সুন্দররূপে সম্পাদন করিতে সমর্থ হইবে। শিক্ষার্থী এই পরীক্ষা দুইটি করিবার সময়, পাত্রের ভূপতিত হইয়া আহত হইবার কিছুমাত্র আশঙ্কা নাই, একথা তাহাকে পূৰ্বেই ভালরূপে বুঝাইয়া রাখিলে সে, আর শক্তির গতিরোধ করিতে ইচ্ছুক হইবে না। সে প্রথম প্রথম একটি নীরব ও জনশূন্য গৃহে পাত্রকে আহ্বান করিয়া এই পরীক্ষাগুলি করিবে এবং যে পর্যন্ত কয়েকটি বিভিন্ন লোকের উপর উহাদিগকে সম্পাদন করিতে সমর্থ না হইবে, ততদিন সে কোন লোকের সম্মুখে উহা করিবার চেষ্টা পাইবেন।

তৃতীয় পরীক্ষা–পাত্রের দুই হাত একত্রে জুড়িয়া দেওয়া

কাৰ্যকারক যাহাকে লইয়া পূর্বোক্ত পরীক্ষা দুইটিতে কৃতকাৰ্য্য হইয়াছে, অর্থাৎ যে খুব তাড়াতাড়ি পিছনের ও সামনের দিকে পড়িয়া যায়, এই পরীক্ষাটি সম্পাদনের জন্য তাহাকেই পাত্র মনোনীত করিবে।

পাত্রকে সরল ভাবে পা দুইখানা জোড় করিয়া দাঁড় করাইবে এবং তাহাকে তাহার ডান হাতের অঙ্গুলিগুলি বাম হাতের অঙ্গুলি গুলির ফাকে প্রবেশ করিয়া দিয়া, একটি দৃঢ় মুষ্টি করিতে বলিবে—অর্থাৎ সে তাহার দক্ষিণ কনিষ্ঠাকে বাম কনিষ্ঠা ও অনামিকার মধ্যে, দক্ষিণ অনামিকাকে বাম অনামিকা ও মধ্যমার মধ্যে, দক্ষিণ মধ্যমাকে বাম মধ্যমা ও তর্জনীর মধ্যে, দক্ষিণ তর্জনীকে বাম তর্জনী ও বৃদ্ধার মধ্যে স্থাপন করতঃ দক্ষিণ বৃদ্ধাকে বাম বৃদ্ধার উপর রাখিয়া উভয় হাতের তালুদ্বয় পরস্পরের গায়ে জোরের সহিত চাপিয়া ধরিয়া, একটি কঠিন মুষ্টি করিবে। ঐরূপ করা হইলে, সে বেশ শান্ত ও গম্ভীরভাব অবলম্বন পূৰ্ব্বক স্থির দৃষ্টিতে কাৰ্যকারকের চোখের দিকে তাকাইয়া থাকিয়া খুব একাগ্রতার সহিত নিম্নোক্তরূপ ভাবিতে আরম্ভ করিবে। যথা—“আমার হাত দুইখানা পরস্পরের গায়ে জোড়া লাগিয়া যাইতেছে এবং আমি উহাদিগকে আর খুলিতে পারিনা,—আমার হাত দুইখানা খুব দৃঢ়রূপে আঁটিয়া যাইতেছে এবং আমি কিছুতেই উহাদিগকে ফাঁক করিয়া খুলিতে পারিবনা—আমার হাত দুইখানা খুব কঠিন—আরও কঠিনরূপে জোড়া লাগিয়া যাইতেছে—আমি কখনও খুলিতে পারিনা। আমি হাত খুলিতে যতই চেষ্টা করিব, উহারা ততই দৃঢ় ও কঠিনরূপে জোড়া লাগিয়া থাকিবে।” যখন সে উক্তরূপ চিন্তা করিতে আরম্ভ করিয়াছে, তখন কাৰ্যকারক তাহার নাসিকা-মূলে খুব স্থির ও প্রখর দৃষ্টি স্থাপন পূর্বক, উভয় হাত দ্বারা ঐ মুষ্টিবদ্ধ হাত দুইখানার চারি পার্শ্বে পাস করিতে আরম্ভ করিবে, অর্থাৎ সেই মুঠটিকে তাহার হাত দ্বারা আস্তে আস্তে বুলাইয়া দিতে সুরু করিবে এবং তৎসঙ্গে নিম্নোক্তরূপ চিন্তা করিবে—“তোমার হাত দুইখানা খুব দৃঢ়রূপে জোড়া লাগিয়া যাইতেছে এবং তুমি কিছুতেই তোমার হাত খুলিতে পারিবেনা। আমি যতক্ষণ তোমার হাত খুলিতে আদেশ না

করি, ততক্ষণ তুমি কিছুতেই তোমার হাত খুলিতে পারিবেনা-হাজার চেষ্টা করিয়াও পারিবেনা—প্রাণপণ চেষ্টা করিয়াও পারিবেনা।” কাৰ্যকারক মিনিট দুই এইরূপ চিন্তা করার পর, একাগ্রতার সহিত ধীর, গম্ভীর ও আদেশসূচক স্বরে বলিবে—“তোমার হাত দুইখানা একত্রে জোড়া লাগিয়া যাইতেছে—তুমি কখনও তোমার হাত দুইখানা টানিয়া খুলিতে পারিবেনা—উহারা ক্রমেই দৃঢ়রূপে জোড়া লাগিয়া যাইতেছে এবং তুমি কখনও খুলিতে পারিবেনা; যতক্ষণ আমি তোমাকে হাত খুলিতে না বলিব, ততক্ষণ তমারহাত কিছুতেই খুলিবে না—কখনও খুলিবে না।” তিন-চার বার এইরূপ আদেশ দেওয়ার পর, যখন তাহার মন আরও অধিক একাগ্র হইয়াছে, তখন অত্যন্ত গম্ভীর ও আদেশসূচক স্বরে বলিবে— “তোমার হাত দুইখানা একেবারে জুড়ে গেছে–তুমি কিছুতেই আর উহাদিগকে খুলিতে পারিবেনা—তুমি হাত খুলিতে যত অধিক চেষ্টা করিবে, উহারা ততই শক্ত-দৃঢ় ও কঠিনরূপে জোড়া লাগিয়া থাকিবে—তুমি কিছুতেই খুলিতে পারিবে না; -চেষ্টা করচেষ্টা কর-খুব চেষ্টা কর—কিছুতেই পারিবেনা -হাজার চেষ্টা করিয়াও পারিবেনা-প্রাণপণ চেষ্টা করিয়াও পারিবেনা।” এই শেষ আদেশটি দেওয়া হইলে, তাহার হাতের মুঠের উপর পাস দেওয়া বন্ধ করিবে এবং তাহাকে হাত খুলিবার জন্য চেষ্টা করিতে বলিবে। যদি শিক্ষার্থী যথাযথরূপে এই নিয়মের অনুসরণ করিয়া থাকে, তবে সে নিজেই দেখিয়া আশ্চর্যান্বিত হইবে যে, পাত্রের হাত দুইখানা বাস্তবিক অত্যন্ত দৃঢ়রূপে জোড়া লাগিয়া গিয়াছে এবং সে সাধ্যমত চেষ্টা করিয়াও উহাদিগকে খুলিতে পারিতেছে না। সে দুই-এক মিনিট চেষ্টা করিয়া হাত খুলিতে না পারিলে, একাদশ পাঠের উপদেশানুসারে তাহাকে প্রকৃতিস্থ করিয়া দিবে—অর্থাৎ তাহার হাত খুলিয়া দিবে। আর যদি তাহার হাত বন্ধ না হইয়া থাকে, তবে এই নিয়মটি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে অনুসরণ করতঃ তাহার উপর দ্বিতীয় কিম্বা তৃতীয় বার চেষ্টা করিবে।

চতুর্থ পরীক্ষা–পাত্রের চক্ষুর পাতা জুড়িয়া দেওয়া

যাহার হাত খুব তাড়াতাড়ি জুড়িয়া যায়, শিক্ষার্থী তাহার উপরই নিম্নোক্ত পরীক্ষাটি সম্পাদন করিবার চেষ্টা পাইবে। পাত্রের হাত দুইখানা দুই পার্শ্বে ঝুলাইয়া দিয়া এবং পা দুইখানা জোড়া করিয়া তাহাকে সরল ভাবে দাঁড় করাইবে। তৎপরে তাহাকে চক্ষু বুজিয়া খুব মনাযোগের সহিত নিম্নোক্তরূপ চিন্তা করিতে বলিবে। যথা—“আমার চক্ষু জুড়িয়া যাইতেছে এবং আমি কিছুতেই উহাদিগকে টানিয়া খুলিতে পারিবনা”। যখন সে এইরূপ চিন্তা করিতে আরম্ভ করিয়াছে, তখন কাৰ্যকারক তাহার সম্মুখে দাঁড়াইয়া, তাহার নাসিকা-মূলে খুব স্থির ও প্রখর দৃষ্টি স্থাপন করতঃ উভয় হাত দ্বারা তাহার সেই মুদিত চক্ষু দুইটির উপর আস্তে আস্তে পাস করিতে আরম্ভ করিবে এবং তৎসঙ্গে সুস্পষ্ট, গম্ভীর ও আদেশসূচক স্বরে বলিবে—“তমার চোখের পাতা দৃঢ়রূপে জোড়া লাগিয়া যাইতেছে,-তুমি আর তোমার চোখের পাতা টানিয়া খুলিতে পারিবেনা;-উহারা খুব দৃঢ়রূপে-আরও কঠিনরূপে জুড়িয়া যাইতেছে এবং তুমি কিছুতেই উহাদিগকে টানিয়া খুলিতে পারিবেনা;-তুমি উহাদিগকে খুলিতে যতই চেষ্টা করিবে, উহারা ততই দৃঢ় ও কঠিনরূপে বন্ধ হইয়া থাকিবে—তুমি হাজার চেষ্টা করিয়াও উহাদিগকে খুলিতে পারিবেনা;-প্রাণপণ চেষ্টা করিয়াও পারিবেনা”। তিন-চার বার এইরূপ আদেশ দেওয়ার পর, অপেক্ষাকৃত গম্ভীর ও আদেশসূচক স্বরে বলিবে—“তোমার চক্ষুর পাতা গুলি একদম জুড়িয়া গিয়াছে এবং তুমি আর উহাদিগকে টানিয়া খুলিতে পারিবেনা; তুমি যতই চেষ্টা করিবে, উহারা ততই দৃঢ় ও কঠিনরূপে বন্ধ হইয়া থাকিবে -চেষ্টা করচেষ্টা কর—আরও চেষ্টা করকিন্তু কিছুতেই পারিবেনা-কখনও পারিবেনা।” তাহার চক্ষু বন্ধ হইলে পর তাহাকে একাদশ পাঠের নিয়মে প্রকৃতিস্থ করিয়া দিবে।

পঞ্চম পরীক্ষা–পাত্রকে কথা বলিতে অসমর্থ করণ

যাহার হাত ও চক্ষু জুড়িয়া গিয়াছে তাহার উপরই বর্তমান পরীক্ষাটি করিতে চেষ্টা পাইবে। পাত্রকে পূর্বের ন্যায় সোজা ভাবে দাঁড় করাইয়া স্থির দৃষ্টিতে কাৰ্যকারকের চোখের দিকে তাকাইয়া থাকিতে বলিবে এবং যখন সে ঐরূপ করিয়াছে, তখন কাৰ্যকারক নিজের দক্ষিণ বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা তাহার গলার উপর (গলার মধ্যে যে একখানা কোণাকার হাড় আছে-যাহাকে ইংরাজীতে Adam’s Apple বলে) পাস করিবে এবং তৎসঙ্গে তাহার নাসিকা-মূলে স্থির দৃষ্টি স্থাপন করতঃ গম্ভীর স্বরে বলিবে— “তোমার গলা বন্ধ হইয়া যাইতেছে এবং তুমি তোমার নাম বলিতে পারিবেনা;-তুমি হাজার চেষ্টা করিয়াও পারিবেনা-প্রাণপণ চেষ্টা করিয়াও পারিবেনা-কখনও পারিবেনা। এইরূপ কয়েকবার আদেশ দিবার পর অপেক্ষাকৃত দৃঢ়তার সহিত বলিবে—“এইক্ষণ তোমার গলা বন্ধ হইয়া গিয়াছে, -তোমার বাক্য সম্পূর্ণরূপে রোধ হইয়া গিয়াছে এবং তুমি আর তোমার নাম বলিতে পারিবেনা—হাজার চেষ্টা করিয়াও পারিবেনা -প্রাণপণ চেষ্টা করিয়াও পারিবেনা;-চেষ্টা কর—চেষ্টা কর—আরও চেষ্টা কর—কখনও পারিবেনাকিছুতেই পারিবেনা” ইত্যাদি। তৎপরে তাহাকে নাম বলিতে বলিবে; যদি সে উহা বলিতে না পারে, তবে উক্ত পাঠের নিয়মানুসারে তাহাকে প্রকৃতিস্থ করিয়া দিবে।

ষষ্ঠ পরীক্ষা–পাত্রের হাতে লাঠি জুড়িয়া দেওয়া

শিক্ষার্থী যাহার উপর পূর্ব পরীক্ষাগুলিতে কৃতকার্য হইয়াছে, তাহাকেই পাত্র মনোনীত করিবে। সে পূর্বের ন্যায় সরল ভাবে দাঁড়াইবে এবং স্থির দৃষ্টিতে কাৰ্যকারকের চোখের দিকে তাকাইয়া, উভয় হাত দ্বারা খুব দৃঢ়রূপে একগাছা মোটা লাঠির মধ্যস্থল চাপিয়া ধরিয়া থাকিবে। ঐরূপ করা হইলে, সে মনাযোগের সহিত এরূপ চিন্তা করিবে যে, ঐ লাঠিগাছটা দৃঢ়রূপে তাহার হাতের সঙ্গে জোড়া লাগিয়া যাইতেছে এবং সে কিছুতেই তাহার হাত হইতে ঐ লাঠিগাছটা ফেলিয়া দিতে পারিবে না—কিছুতেই পারিবে না ইত্যাদি। যখন সে উক্তরূপ ভাবিতে আরম্ভ করিয়াছে, তখন কাৰ্যকারক তাহার নাসিকা-মূলে স্থির ও প্রখর দৃষ্টি স্থাপন পূর্বক গম্ভীর ও অদেশসূচক স্বরে বলিবে–“এই লাঠিগাছটা তোমার হাতের সঙ্গে খুব দৃঢ়রূপে জোড়া লাগিয়া যাইতেছে এবং তুমি কিছুতেই উহাকে তোমার হাত হইতে খুলিয়া ফেলিতে পারিবেনা;-তুমি উহাকে ফেলিয়া দিতে যত অধিক চেষ্টা করিবে, উহা তোমার হাতে তত দৃঢ়রূপে লাগিয়া থাকিবে, এবং তুমি হাজার চেষ্টা করিয়াও উহা ফেলিতে পারিবেনা-কখনও পারিবেন—কিছুতেই পারিবেনা।” তিন-চার বার এরূপ আদেশ দেওয়ার পর আরও অধিক একাগ্রতার সহিত বলিবে—“লাঠিগাছটা তোমার হাতে অত্যন্ত দৃঢ়রূপে জোড়া লাগিয়া গিয়াছে এবং তুমি আর উহা ফেলিয়া দিতে পারিবেনা-কিছুতেই পারিবেনা-প্রাণপণ চেষ্টা করিয়াও পারিবেনা;চেষ্টা করচেষ্টা কর-আরও চেষ্টা কর” ইত্যাদি। সে উহা ফেলিবার জন্য কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পর তাহাকে প্রকৃতিস্থ করিয়া দিবে।

সপ্তম পরীক্ষা–পাত্রকে বসিতে অসমর্থ করণ

যাহার উপর পূর্বোক্ত পরীক্ষাগুলি সুন্দররূপে সম্পাদিত হইয়াছে, তাহাকে পাত্ৰ নিৰ্বাচন করতঃ পূর্বের ন্যায় তাহার হাত দুইখানি দুই পাশে ঝুলাইয়া দিয়া, সরল ভাবে দাঁড় করাইবে। তৎপরে তাহাকে তাহার পা দুইখানি (গোড়ালী হইতে উরু পর্যন্ত স্থান) খুব কঠিন করিতে বলিবে। ঐরূপ করা হইলে সে, কাৰ্য্যকারকের চোখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকাইয়া থাকিয়া, মনাযোগের সহিত এরূপ চিন্তা করিকে যে, তাহার পা দুইখানা সম্পূর্ণরূপে কঠিন ও শক্ত হইয়া যাইতেছে এবং সে কিছুতেই (তাহার পশ্চাতে স্থাপিত) চেয়ারে বসিতে পারিবেনা; তাহার পা দুইখানা অত্যন্ত কঠিন হইয়া গিয়াছে সুতরাং সে হাজার চেষ্টা করিয়াও চেয়ারে বসিতে পারিবেনা। তৎপরে কাৰ্যকারক তাহার নাসিকা-মূলে স্থির ও তীক্ষ দৃষ্টি স্থাপন করতঃ গম্ভীর ও আদেশসূচক স্বরে বলিবে—“তোমার পা দুইখানা শক্ত হইয়া যাইতেছে-ক্রমে ক্রমে খুব শক্ত—আরও শক্ত হইয়া যাইতেছে—তুমি কখনও চেয়ারে বসিতে পারিবেনা-কিছুতেই বসিতে পারিবেনা হাজার চেষ্টা করিয়াও পারিবেনা-প্রাণপণ চেষ্টা করিয়াও পারিবেনা” ইত্যাদি। এইরূপ কয়েকবার বলিয়া অপেক্ষাকৃত দৃঢ়তার সহিত পুনর্বার বলিবে—“তোমার পা দুইখানা লোহার মত শক্ত হইয়া গিয়াছে এবং তুমি কিছুতেই আর চেয়ারে বসিতে পারিবে না;-তুমি বসিতে যত চেষ্টা করিবে, তোমার পা দুইখানা তত দৃঢ় ও কঠিন হইয়া থাকিবে,-তুমি কিছুতেই বসিতে পারিতেছ না;—চেষ্টা করচেষ্টা কর—আরও চেষ্টা কর” ইত্যাদি। সে বসিবার নিমিত্ত কিছুক্ষণ চেষ্টা পাইবার পর তাহাকে প্রকৃতিস্থ করিয়া দিবে।

অষ্টম পরীক্ষা—পাত্রকে দাঁড়াইতে অসমর্থ করণ পাত্র নির্বাচন করিয়া তাহাকে একখানা চেয়ারে, তাহার পা দুইখানা ঘরের মেঝের উপর চাপিয়া বসিতে বলিবে। উক্ত নিয়মে বসিবার পর, সে কাৰ্যকারকের চোখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকাইয়া থাকিয়া একাগ্রতার সহিত এরূপ চিন্তা করিবে যে, তাহার সমস্ত শরীরটি ঐ চেয়ারের সঙ্গে আঁটিয়া যাইতেছে এবং সে আর চেয়ার হইতে উঠিতে পারিবেনা। যখন সে উক্তরূপ ভাবিতে আরম্ভ করিয়াছে, তখন কাৰ্য্যকারক স্থির ও প্রখর দৃষ্টিতে তাহার দিকে তাকাইয়া অত্যন্ত একাগ্রতার সহিত গম্ভীর ও আদেশ সূচক স্বরে বলিবে—“তোমার সমস্ত শরীর এই চেয়ারের সঙ্গে জোড়া লাগিয়া যাইতেছে এবং তুমি আর চেয়ার হইতে উঠিতে পারিবেনা—তুমি উঠিতে যত অধিক চেষ্টা করিবে, তোমার শরীর তত দৃঢ়রূপে উহাতে জুড়িয়া যাইবে; তুমি কিছুতেই উঠিতে পারিবেনা—কখনও উঠিতে পারিবে না-প্রাণপণ চেষ্টা করিয়াও পারিবেনা।” তৎপর আরও দৃঢ়তার সহিত বলিবে—“তোমার সমস্ত শরীরটি চেয়ারের সঙ্গে একদম জুড়িয়া গিয়াছে-তুমি হাজার চেষ্টা করিয়াও আর উঠিতে পারিবেনা—কখনও উঠিতে পারিবেনা; চেষ্টা করচেষ্টা কর—আরও চেষ্টা কর” ইত্যাদি। পাত্ৰ উঠিবার জন্য কিছুক্ষণ চেষ্টা পাইবার পর, তাহাকে প্রকৃতিস্থ করিয়া দিবে।

নবম পরীক্ষা–পাত্রকে মুখ বন্ধ করিতে অসমর্থ করণ

শিক্ষার্থী পাত্রকে সামনে দাঁড় করাইয়া তাহাকে মুখ খুলিতে অর্থাৎ হা করিতে বলিবে। সে কাৰ্যকারকের দিকে তাহার মুখ হা করিয়া (হা টা বেশ বড় হওয়া চাই। স্থির দৃষ্টিতে তাকাইয়া থাকিবে এবং এরূপ চিন্তা করিবে যে, সে আর মুখ বন্ধ করিতে পারিবেনা; কাৰ্যকারক যতক্ষণ তাহাকে মুখ বন্ধ করিতে না বলিবে, ততক্ষণ সে কিছুতেই তাহার মুখ বুজিতে পারিবেন; কারণ তাহার হা টা ক্রমেই বড় হইয়া যাইতেছে। তৎপরে কাৰ্যকারক তাহার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকাইয়া একাগ্ৰমনে ও আদেশ সূচক স্বরে বলিবে—“তুমি আর তোমার মুখ বন্ধ করিতে পারিবেনা;-তোমার হাটা ক্রমেই অত্যন্ত বড় হইয়া যাইতেছে এবং তুমি কিছুতেই উহা বন্ধ করিতে পারিবেনা;-তুমি যতই চেষ্টা করিবে, ততই পারিবেনা;-হাজার চেষ্টা করিয়াও পারিবেনা—প্রাণপণ চেষ্টা করিয়াও পারিবেনা; চেষ্টা করচেষ্টা কর—আরও চেষ্টা কর—খুব চেষ্টা কর” ইত্যাদি। সে মুখ বন্ধ করিতে কিছুক্ষণ চেষ্টা পাইবার পর তাহাকে প্রকৃতিস্থ করিয়া দিবে।

দশম পরীক্ষা—পাত্রকে লাফ দিতে অসমর্থ করণ

পাত্রকে সরলভাবে দাঁড় করাইয়া, তাহার এক হাত সম্মুখে, ঘরের মেঝের উপর, পাশাপাশিভাবে একখানি লাঠি রাখিবে। তৎপরে সে তাহার উভয় পা দুইখানা (গোড়ালী হইতে উরু পর্যন্ত) খুব শক্ত করিয়া স্থির দৃষ্টিতে কাৰ্যকারকের দিকে তাকাইয়া থাকিবে। ঐরূপ করা হইলে, সে মনোযোগের সহিত এরূপ চিন্তা করিবে যে, তাহার সমস্ত পা দুইখানা অত্যন্ত দৃঢ় ও শক্ত হইয়া যাইতেছে এবং সে লাফাইয়া ঐ লাঠিখানা ডিঙ্গাইতে পারিবেনা-কিছুতেই পারিবেনা-কখনও পারিবেনা। যখন সে ভাবিতে আরম্ভ করিয়াছে, তখন কাৰ্যকারক খুব প্রখর দৃষ্টিতে তাহার দিকে তাকাইয়া একাগ্ৰমনে ধীর ও গম্ভীর স্বরে বলিবে—“তোমার পা দুইখানা খুব শক্ত হইয়া যাইতেছে এবং তুমি লাফাইয়া আর ঐ লাঠিখানা ডিজাইতে পারিবেনা;তুমি উহা ডিজাইতে যত চেষ্টা করিবে, তোমার পা দুইখানা তত শক্ত ও কঠিন হইয়া থাকিবে;-তুমি কিছুতেই লাফাইতে পারিবেনা-কখনও পারিবেনা-কিছুতেই পারিবে না;-চেষ্টা কর চেষ্টা কর” ইত্যাদি। পাত্র লাফ দিবার জন্য কিছুক্ষণ চেষ্টা পাইবার পর তাহাকে প্রকৃতিস্থ করিয়া দিবে।

একাদশ পরীক্ষা–পাত্রকে চলিতে অসমর্থ করণ

পাত্রকে সামনে দাঁড় করাইয়া স্থির দৃষ্টিতে কাৰ্যকারকের চোখের দিকে তাকাইয়া থাকিতে এবং মনোযোগের সহিত এরূপ চিন্তা করিতে বলিবে যে, তাহার পা দুইখানা ঘরের মেঝের সঙ্গে দৃঢ়রূপে জোড়া লাগিয়া যাইতেছে এবং সে আর হাঁটিতে পারিবেনা। তৎপরে কাৰ্যকারক স্থির ভাবে তাহার নাসিকা-মূলে প্রখর দৃষ্টি স্থাপন করিয়া গম্ভীর ও আদেশসূচক স্বরে বলিবে—“তোমার পা দুইখানা মেঝের সঙ্গে কঠিনরূপে জোড়া লাগিয়া যাইতেছে এবং তুমি আর হাঁটিতে পারিবেনা; এইক্ষণ তোমার পা দুইখানা খুব কঠিন ও দৃঢ়রূপে মেঝের সঙ্গে লাগিয়া গিয়াছে এবং তুমি আর এক পাও চলিতে পারিবেনা; তুমি যত চেষ্টা করিবে, তোমার পা দুইখানা তত দৃঢ়রূপে জোড়া লাগিয়া থাকিবে; তুমি হাজার চেষ্টা করিয়াও চলিতে পারিবেনা-প্রাণপণ চেষ্টা করিয়াও পারিবেনা; চেষ্টা করচেষ্টা কর—কিছুতেই পারিবেনা কখনও পারিবেনা।” পাত্র চলিবার জন্য কিছুক্ষণ চেষ্টা পাইবার পর তাহাকে প্রকৃতিস্থ করিয়া দিবে।

দ্বাদশ পরীক্ষা–পাত্রকে মুখ খুলিতে অসমর্থ করণ

পাত্র সরলভাবে দাঁড়াইয়া তাহার ওষ্ঠদ্বয় জোরের সহিত পরস্পরের গায়ে চাপিয়া রাখিয়া শক্তরূপে মুখ বন্ধ করিবে। ঐরূপ করা হইলে, সে কাৰ্যকারকের চোখের দিকে তাকাইয়া চিন্তা করিবে যে, তাহার ওঠ দুইখানা কঠিনরূপে জুড়িয়া যাইতেছে এবং সে। আর মুখ খুলিতে অর্থাৎ হা করিতে পারিবেনা। তৎপরে কাৰ্যকারক তাহার নাসিকা-মূলে প্রখর দৃষ্টি স্থাপন করতঃ আদেশসূচক স্বরে বলিবে—“তোমার ওঠ দুইখানা দৃঢ়রূপে জুড়িয়া যাইতেছে এবং তুমি আর হা করিতে পারিবেনা; এইক্ষণ তোমার ওষ্ঠদ্বয় অত্যন্ত শক্তরূপে জুড়িয়া গিয়াছে এবং তুমি আর কিছুতেই তোমার মুখ খলিতে পারিবেনা-হাজার চেষ্টা করিয়াও পারিবেনা; চেষ্টা কর-চেষ্টা কর-খব চেষ্টা কর—আরও চেষ্টা কর—কিছুতেই পারিবেনা-কখনও পারিবেনা।” পাত্র মুখ খুলিতে কিছুক্ষণ চেষ্টা পাইবার পর তাহাকে প্রকৃতিস্থ করিবে।

ত্রয়োদশ পরীক্ষা—পাত্রকে ঘুষি মারিতে অসমর্থ করণ

পাত্র সামনে দাঁড়াইয়া কাৰ্যকারকের কপাল বরাবর একটা ঘুষি লক্ষ্য করিয়া রাখিবে। সে ক্রোধান্বিত হইয়া ঘুষি মারিতে যেরূপ ভঙ্গীতে দাঁড়ায়, এখনও তাহাকে সেরূপ ভাবে দাঁড়াইয়া ঘুষি লক্ষ্য করিতে হইবে। ঐরূপ করা হইলে, সে স্থির দৃষ্টিতে কাৰ্যকারকের চোখের দিকে তাকাইয়া থাকিবে এবং কাৰ্যকারক তাহার প্রতি স্থির দৃষ্টিতে তাকাইয়া আদেশসূচক স্বরে বলিবে—“তুমি আমাকে ঘুষি মারিতে পারিবেনা—তুমি আমাকে কিছুতেই ঘুষি মারিতে পারিবেনা; তোমার হাতখানা এখন যেরূপ অবস্থায় আছে, উহা ঠিক সেরূপ ভাবেই থাকিবে-তুমি কিছুতেই ঘুষি মারিতে পারিবেনা;-হাজার চেষ্টা করিয়াও পারিবেন্যপ্রাণপণ চেষ্টা করিয়াও পারিবেনা-চেষ্টা করচেষ্টা কর” ইত্যাদি। পাত্র ঘুষি মারিবার জন্য কিছুক্ষণ চেষ্টা পাইবার পর তাহাকে প্রকৃতিস্থ করিয়া দিবে।

চতুর্দশ পরীক্ষা–দুইজন পাত্রের হাত একত্রে জুড়িয়া দেওয়া

কাৰ্যকারক যে দুই ব্যক্তিকে কতকগুলি শারীরিক পরীক্ষায় অভিভূত করিতে সমর্থ হইয়াছে, এই পরীক্ষাটি তাহাদের উপরই সম্পাদনের প্রয়াস পাইবে। তাহাদিগকে সরল ভাবে দাঁড় করাইয়া, পরস্পরের হাত দৃঢ়রূপে চাপিয়া ধরিতে বলিবে। যে রকমে দুই ব্যক্তি হাও, সেক্ (hand-shake) বা করমর্দন করে, তাহারা পরস্পরের ডান হাত সেইমত শক্তরূপে চাপিয়া ধরিবে ও কার্যকারকের চোখের দিকে তাকাইয়া মনোযোগের সহিত এরূপ চিন্তা করিবে যে, তাহাদের হাত দুইখানা একত্রে দৃঢ়রূপে জোড়া লাগিয়া যাইবে এবং তাহারা তাহাদের হাত দুইখানা আর খুলিতে পারিবেনা। যখন তাহারা ঐরূপ করিয়াছে, তখন কাৰ্যকারক ক্রমান্বয়ে দুইজনের নাসা-মূলে প্রখর দৃষ্টি স্থাপন করিয়া আদেশসূচক স্বরে বলিবে—“তোমাদের হাত দুইখানা পরস্পরের সহিত শক্তরূপে জোড়া লাগিয়া যাইতেছে-এইক্ষণ উহারা খুব দৃঢ়রূপে—আরও কঠিনরূপে জুড়িয়া গিয়াছে এবং তোমরা কিছুতেই আর উহাদিগকে খলিতে পারিবেনা-হাজার চেষ্টা করিয়া পারিবেনা-প্রাণপণ চেষ্টা করিয়াও পারিবেনা; চেষ্টা করচেষ্টা কর—আরও চেষ্টা কর—কিছুতেই পারিবে না—কখনও পারিবেনা।” তাহারা হাত খুলিতে কিছুক্ষণ চেষ্টা পাইবার পর তাহাদিগকে প্রকৃতিস্থ করিয়া দিবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *