1 of 2

১.০৮ শরীরে শিথিলতা উৎপাদন

অষ্টম পাঠ
শরীরে শিথিলতা উৎপাদন

শরীরের বিশেষ কোন অংশে বা সমস্ত শরীরে ইচ্ছামত শিথিলতা উৎপাদন, সম্মোহন বিজ্ঞানের ব্যবহারিক অংশের প্রথম পাঠ। যেমন অঙ্কশাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি লাভ করিতে সর্বাগ্রে সংখ্যা লিখন ও পঠন শিখিতে হয়; কিম্বা কোন ভাষায় জ্ঞান লাভের ইচ্ছা করিলে, ব্যাকরণের মূল সূত্রগুলি প্রথম উপলদ্ধি করিয়া লইতে হয়, সেইরূপ এই বিজ্ঞানের ব্যবহারিক অংশে কৃতকাৰ্যতা লাভের প্রয়াসী হইলে, শিক্ষার্থীকে বর্তমান পাঠের উপদেশানুসারে শরীরে ইচ্ছামত শিথিলতা-উৎপাদন অনুশীলনটি সর্ব প্রথম অভ্যাস করিয়া লইতে হইবে।

কয়েকটি যুবককে আহ্বান করিয়া চেয়ারে বসাইবে। তাহারা স্থির ও শান্তভাবে চেয়ারে বসিলে পর, তাহাদের দক্ষিণ তর্জনীগুলি সরল রেখার ন্যায় উদ্ধা মুখে খাড়া করিয়া ঐ হাতের অপর অঙ্গুলিগুলিকে মুষ্টিবদ্ধ করিতে বলিবে; তৎপরে তাহাদের দণ্ডায়মান দক্ষিণ তর্জনীগুলির উপর, বামতলুগুলি সম্পূর্ণরূপে শিথিল ও বলশূন্য করিতে বলিবে। তাহারা প্রত্যেকেই তাহাদের বামহাতগুলি এরূপ ভাবে অসার ও বলশূন্য করিবে, যেন শিক্ষার্থী তাহাদের ডান হাতগুলি সরাইয়া লইবা মাত্র তাহাদের বাম হাতগুলি পড়িয়া যায়। ডান হাতগুলি অপসারিত হইলে বাম হাতগুলি পড়িয়া যাইবার কারণ এই যে, ঐ হাতগুলি সম্পূর্ণরূপে বলশূন্য ও শিথিল হওয়াতে, উহারা নিরালম্ব অবস্থায় কখনও শূন্যে থাকিতে পারে না। এরূপ বলিয়া, তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিবে যে, তাহারা উক্ত উপদেশ মত, তাহাদের বামহাতগুলি বলশূন্য ও শিথিল করিয়াছে কিনা? তাহারা সম্মতি সূচক উত্তর দিলে, শিক্ষার্থী তাহাদের এক ব্যক্তির নিকট যাইয়া তাহার ডান হাতখানা হঠাৎ টান্ দিয়া সরাইয়া ফেলিবে। যদি ডান হাত সরাইবার অব্যবহিত পরেই তাহার বাম হাতখানা পড়িয়া যায়, তাহা হইলে সে উক্ত উপদেশ মত কাৰ্য্য করিতে পারিয়াছে, অর্থাৎ সে তাহার বাম হাতখানা সম্পূর্ণরূপে শিথিল করিতে সমর্থ হইয়াছে; সুতরাং সে এই পরীক্ষায় কৃতকাৰ্য্য হইল। আর যদি তাহার ডান হাত সরাইয়া লইবার পরেও বাম হাতখানা পড়িয়া না গিয়া থাকে, তবে সে উক্ত উপদেশ মত বাম হাতখানা সম্পূর্ণরূপে বলশূন্য ও শিথিল করিতে পারে নাই; যেহেতু উহা আশ্রয় হীন হইয়াও শূন্যে অবস্থান করিতেছে! সুতরাং সে এই পরীক্ষায় অকৃতকার্য হইল। শিক্ষার্থী তাহাকে পরিত্যাগ করতঃ অবশিষ্ট ব্যক্তিদিগকে এক এক করিয়া ঐরূপে পরীক্ষা করিবে এবং উহার ফলাফল লক্ষ্য করিবে। যাহারা এই পরীক্ষায় কৃতকাৰ্য্য হইল, তাহাদিগকে গ্রহণ করতঃ অবশিষ্ট ব্যক্তিদিগকে পরিত্যাগ করিবে; কিন্তু যাহারা প্রথম বার অকৃতকার্য হইয়াছে, তাহাদের কেহ পুনৰ্ব্বার চেষ্টা করিয়া উহাতে কৃতকার্য হইলে পর তাহাকেও পরবর্তী পরীক্ষার জন্য গ্রহণ করা যাইতে পারে।

পাত্রদিগের উপর এই পরীক্ষাটি করিবার সময়, তাহারা কোনরূপ প্রতারণা করিতে না পারে, সে বিষয়ে শিক্ষার্থী বিশেষ সতর্ক থাকিবে। কারণ, কেহ কেহ বাম হাত সম্পূর্ণরূপে শিথিল করিতে না পারিয়া, ডান হাত সরাইয়া লইবার সময়, বাম হাতখানা ইচ্ছাপূর্বক ও চতুরতার সহিত ফেলিয়া দিয়া এরূপ ভাণ করে, যেন তাহার হাত স্বতঃই পড়িয়া গিয়াছে। এরূপ চতুরতা সহজেই ধরা যায়। বাম হাতখানা সম্পূর্ণ শিথিল ও আশ্রয় শূন্য হইয়া যদি স্বতঃই পড়িয়া যায়, তাহা হইলে উহা কখনও নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে (অর্থাৎ ঐ টুকু উচচ হইতে ঐরূপ ভার বিশিষ্ট কোন নির্জীব পদার্থের পতনে যতটুকু সময়ের আবশ্যক, তাহার পূৰ্বে) পড়িতে পারেনা। পক্ষান্তরে ঐ হাত তাহার ইচ্ছার বশবর্তী হইয়া পতিত হইলে, উহা হয় নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে, আর না হয় পরে পড়িবে।

পাত্রদিগের উপর এই পরীক্ষাটি করিতে চেষ্টা পাইবার পূর্বে, শিক্ষার্থী নিজে ইহা সুন্দররূপে শিক্ষা করিয়া লইবে যে, কিরূপে দক্ষিণ তর্জনীর উপর বাম হাতের তালু রাখিয়া উহাকে বলশূন্য ও শিথিল করিতে হয়। কারণ যাহা সে নিজে জানেনা, তাহা সে অপরের দ্বারা সম্পাদন করাইতে পারিবে না। নিম্নোক্ত উপদেশানুসারে কাৰ্য্য করিলে সে প্রথম বারে না হউক, অন্ততঃ কয়েক বারের চেষ্টায়, হাতে শিথিলতা উৎপাদন ক্রিয়াটি সুন্দররূপে শিক্ষা করিতে সমর্থ হইবে। সে সরলভাবে দাঁড়াইবে কিম্বা চেয়ারে বসিবে। তৎপরে পূৰ্ব্বকথিত নিয়মে, তাহার দক্ষিণ তর্জনীটি উৰ্দ্ধমুখে দাঁড় করাইয়া, ঐ হাতের অপর অঙ্গুলিগুলি মুষ্টিবদ্ধ করতঃ উহার উপর বাম তালু স্থাপন করিবে এবং বাম কনুইটিকে শরীরের বাম পার্শ্বের সঙ্গে লাগাইয়া কোমর পর্যন্ত ঝুলাইয়া দিবে। এইক্ষণ সে চোখ বুজিয়া মনাযোগের সহিত চিন্তা করিবে যে, তাহার বাম হাতখানা ক্রমেই বলশূন্য ও অসার হইয়া পড়িতেছে। এক মিনিট এরূপ চিন্তা করার পর, উপস্থিত কোন বন্ধুকে তাহার অজ্ঞাতসারে ডান হাতখানা হঠাৎ টান দিয়া সরাইয়া ফেলিতে বলিবে। যখন সে ব্যক্তি উক্তরূপে ডান হাত সরাইয়া ফেলিয়াছে, তখন সে দেখিতে পাইবে যে, তাহার বাম হাতখানাও আপনা আপনি পড়িয়া গিয়াছে। যদি শিক্ষার্থী দুই-একবার চেষ্টা করিয়া উহা সম্পাদন করিতে না পারে, তবে আরও অধিকবারের চেষ্টায় ইহা শিক্ষা করিয়া লইবে। কারণ সে এই সহজ পরীক্ষাটিতে কৃতকাৰ্য্য হইতে না পারিলে পরবর্তী কঠিন পরীক্ষা গুলি সুন্দররূপে সম্পাদন করিতে সমর্থ হইবে না।

শিক্ষার্থী এই অভ্যাসটি সুন্দররূপে শিক্ষা করিয়া লইবার পর, যখন বিশেষ কোন শারীরিক কিম্বা মানসিক শ্রমে তাহার খুব ক্লান্তি বোধ হইবে, তখন সে একখানা ইজি চেয়ারে কিম্বা বিছানায় চিৎভাবে শুইয়া শরীরের সমস্ত মাংসপেশীগুলিকে সম্পূর্ণরূপে বলশূন্য ও শিথিল করতঃ দশ মিনিট নির্জীবের ন্যায় পড়িয়া থাকিলে অনুভব করিবে যে, তাহার দুই ঘন্টা ব্যাপী বিশ্রামের কায হইয়াছে। শরীরস্থ মাংসপেশীগুলিকে সৰ্ব্বদ। শক্ত করিয়া রাখা যাহাদের অভ্যাস, তাহার দুই ঘণ্টা বিশ্রামে যে আরাম অনুভব করিবে, তাহা সে দশ মিনিটেই উপভোগ করিতে সমর্থ হইবে। এই বিজ্ঞানের উচ্চ শাথা ভুক্ত কতগুলি কঠিন বিষয় আছে, যথা—দিব্যদৃষ্টি, দিব্যশ্রবণ, দিব্যানুভূতি ইত্যাদি—এই সকল বিষয়ের পরীক্ষা সকল সম্পাদন করিতে তাহাকে আবশ্যকীয়রূপে সমস্ত শরীরে শিথিলতা উৎপাদন করিতে হইবে। সুতরাং সে সৰ্ব্বতভাবে এই অভ্যাসটি সুন্দর রূপে শিক্ষা করিয়া লইবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *