১৬. পরের দিন সংবাদপত্রে বড় বড় হরফে প্রকাশিত হল

পরের দিন সংবাদপত্রে বড় বড় হরফে প্রকাশিত হল–মালঞ্চ মল্লিকের স্বামী সুশান্ত মল্লিক স্ত্রীহত্যার অপরাধে গ্রেপ্তার।

বেলা তখন সকাল সাড়ে নটা। লালবাজারে মিঃ চট্টরাজের অফিস ঘরে এসে ঢুকল কিরীটী।

–আসুন মিঃ রায়, চট্টরাজ বললেন, দেখেছেন বোধ হয় আজ নিউজপেপারে নিউজটা ফ্ল্যাশ করা হয়েছে?

—দেখেছি। কিন্তু আপনাকে যেমন বলেছিলাম, ফোন করেছিলেন? কিরীটী শুধাল।

—হ্যাঁ, এখুনি হয়তো আসবেন ওঁরা—

আধ ঘণ্টার মধ্যেই প্রথমে ডাঃ সমীর রায় এবং তার পৌঁছবার মিনিট দশেক পরেই দীপ্তেন ভৌমিক এসে পড়লেন।

কিরীটীই বললে, মিঃ ভৌমিক, ডাঃ রায়, খুব অবাক হচ্ছেন বোধ হয় আপনারা, কেন এ সময় ফোনে আপনাদের জরুরী তলব দিয়ে মিঃ চট্টরাজ এখানে ডেকে আনিয়েছেন, তাই না?

দুজনেই মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালেন।

–শুনুন, উনি মালঞ্চর হত্যাকারীকে সনাক্ত করতে পেরেছেন–

দুজনেই একসঙ্গে অর্ধস্ফুট প্রশ্ন করলেন,—কে—কে?

–যখন আপনাদের ডেকে আনা হয়েছে জানতে পারবেন বৈকি। একটা ধৈর্য ধরুন। এরপর গম্ভীর কণ্ঠে কিরীটী বলল, ডাঃ রায়, সেরাত্রে চিনতে পারেননি আপনি কাকে হিন্দুস্থান রোডের সদরে দেখেছিলেন?

–না।

–যার কাছে ঐ বাড়ির সদর দরজা আর দোতলায় মালঞ্চর ঘরের ড়ুপলিকেট চাবি দুটো ছিল তাকেই আপনি দেখেছিলেন।

–ড়ুপলিকেট চাবি?

—হ্যাঁ, আপনাকে মালঞ্চ দেবী দেননি সে চাবিটা?

—না।

—দীপ্তেনবাবু—আপনাকে?

–না।

–মিথ্যা বলছেন দীপ্তেনবাবু, সুরজিৎ ঘোষালের পকেট থেকে হাতিয়ে মালঞ্চ আপনাকেই দিয়েছিল ড়ুপলিকেট চাবিটা, যাতে আপনি যে কোন সময়েই ঐ ঘরে আসতে পারেন।

—বলতেই হবে আপনার মস্তিষ্ক রীতিমত উর্বর—ব্যঙ্গভরা গলায় দীপ্তেন ভৌমিক বললেন।

—দীপ্তেনবাবু, আমি কিরীটী রায় এবং কিরীটী রায় বলতে যে কি এবং কতখানি বোঝায় তা আপনার সম্ভবত জানা নেই বলেই এখনো আপনি পালাবার পথ খুঁজছেন। আপনি জানেন না যে আপনার ফাঁদে আপনি নিজেই জড়িয়ে পড়েছেন

—ফাঁদে!

-হ্যাঁ! পরে কোন এক সময় এসে বাথরুমের দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে ঐ চাবির সাহায্যেই আবার পরে এক সময় রাত্রে এসে প্রথমে সদর ও পরে মালঞ্চর শোবার ঘর খুলে ভিতরে প্রবেশ করেছিলেন আপনার ফেলে যাওয়া সিগ্রেট কেসটা নেবার জন্য, কিন্তু আপনি ভাবতেও পারেননি ইতিমধ্যে সেটা ডলি দত্ত এসে নিয়ে গিয়েছে। আর সিগ্রেট কেসটা না পেয়েই আপনি ফিরে যাবার সময় বাথরুমের দরজাটা ভিতরে থেকে বন্ধ করে যান, and that was your second thought, একবারও আপনার মনে হল

যে, যে মালঞ্চকে হত্যা করল সে কোন্ পথে বের হয়ে যাবে এবং সে ব্যাপারটা প্রথমেই পুলিসের মনে জাগতে পারে।

চট্টরাজের ঘরের মধ্যে যেন একটা শ্বাসরোধকারী স্তব্ধতা নেমে আসে। দীপ্তেন ভৌমিক স্থিরদৃষ্টিতে কিরীটীর দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে বসে থাকেন। ডাঃ সমীর রায়ও স্তব্ধ।

কিরীটীর ঋজু কণ্ঠস্বর আবার শোনা গেল, আপনি হত্যাকাণ্ডটা যথেষ্ট কুল ব্রেনেই পরিকল্পনা করেছিলেন and it was pre-planned murder-সুরজিৎ ঘোষালের নাম লেখা একটা রুমাল সেই কারণেই আপনি হাতিয়েছিলেন পূর্বাহে, যদিও জানি না কি করে সেটা আপনার হস্তগত হয়েছিল, আশ্চর্য হব না যদি শুনি যে আপনার প্রেয়সীই সেটা আপনার হাতে তুলে দিয়েছিল। সবই প্ল্যান অনুযায়ী হয়েছিল, কিন্তু আপনার second thought অনুযায়ী over-cautious হতে গিয়ে আপনি যদি ঐ ঘরে ফিরে এসে বাথরুমের দরজাটা বন্ধ করে না যেতেন তাহলে ঐ চাবির প্রশ্নটা আমার মাথায় হয়তো এত সহজে উঁকি দিত না, আর আপনিও ঐ একটিমাত্র ভুলের জন্যে এত সহজে exposed হয়ে যেতেন না।

–ঐ একটি মাত্র ভুলই আপনার গলায় ফাঁস দিয়েছে দীপ্তেনবাবু—উহু, দরজার দিকে তাকিয়ে কোন লাভ হবে না, ওখানে তিন-চারজন সার্জেন্ট দাঁড়িয়ে আছে। মিঃ চট্টরাজ প্রস্তুত হয়েই আপনাকে আজ এখানে ডেকে পাঠিয়েছেন, আর আপনার মনে নিশ্চয়তা আনবার জন্যেই আজকের সমস্ত কাগজে সুশান্ত মল্লিকের গ্রেপ্তারের সংবাদটা ফ্ল্যাশ করা হয়েছিল। আপনি হয়তো ভাববেন দীপ্তেনবাবু, মালঞ্চকে আপনিই যে হত্যা করেছেন, পুলিসের হাতে তার কোন প্রমাণ নেই, কিন্তু মালঞ্চ-হত্যার কোন প্রত্যক্ষ প্রমাণ। পুলিসের হাতে না থাকলেও, হ্যাসিস সিগ্রেটের চোরাকারবারের সঙ্গে যে আপনি লিপ্ত ছিলেন তার অনেক প্রমাণই পুলিসের হাতে এসেছে। আদালতে যখন আপনি সোমনাথ ভাদুড়ীর সওয়ালের সামনে দাঁড়াবেন তখন দেখবেন মুক্তির কোন রাস্তাই খোলা নেই

থামল কিরীটী, তারপর চট্টরাজের দিকে তাকিয়ে বলল, মিঃ চট্টরাজ, আপনার কাজ এখন আপনিই করুন।

মিঃ চট্টরাজ বললেন, you are under arrest মিঃ ভৌমিক।

দীপ্তেন ভৌমিক নিঃশব্দে চট্টরাজের দিকে তাকালেন।