১৩. আমিও ভেবে পেলাম না

আমিও ভেবে পেলাম না কিরীটী হঠাৎ শাবল আনতে বললে কেন আর শাবল দিয়ে কী এমন কাজ হবে! যাহোক, একটু পরেই মাধব একটা শাবল ও একটা লণ্ঠন নিয়ে সেই ঘরের মধ্যে ফিরে এল। শাবলটা হাতে নিয়ে একটা টর্চ হাতে আমরা কিরীটীর পিছু পিছু রান্নাঘরের দিকে চললাম।

তারপর সিঁড়ি দিয়ে নেমে শুভঙ্কর মিত্রের অস্ত্ৰঘরের দিকে চললাম। ব্যাপার কি? কিরীটী কোথায় চলেছে? সে বলেছিল। আজ সন্ধ্যার আগেই খুনীকে ধরিয়ে দেবে, কিন্তু এখানে কোথায় চলেছে? তবে কি খুনী ঐ বদ্ধ ঘরের মধ্যেই লুকিয়ে আছে নাকি কোথায়ও? ঘরের সামনে এসে কিরীটী সদ্য চুনকাম করা দেওয়ালটার দিকে এগিয়ে গেল।—আলো উঁচু করে ধর সুব্রত, এই দেওয়ালটা খুঁড়তে হবে।–

দেওয়ালটা সাত্যসত্যই সে শাবল দিয়ে খুঁড়তে লাগল। অল্পক্ষণ পরেই কতকগুলো ইট ঝুরঝুর করে পড়ে গেল। পাগলের মত শাবল দিয়ে কিরীটী চারপাশের ইট খুলতে লাগল। দেওয়ালের খানিকটা ভেঙে একটা গর্ত মত দেখা গেল।

সেই গর্তের মধ্যে পা দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে, কিরীটী শাবল দিয়ে কিসের ওপর আঘাত করল। ঠিক করে একটা শব্দ হল। শাবলের সাহায্যেই চাড় দিয়ে কি যেন ভেঙে ফেলল। তারপর পকেট থেকে টৰ্চটা বের করে সেই গর্তের মুখে ফেলে আমাদের ডাকল, আসুন মিঃ চৌধুরী, চেয়ে দেখুন। ঐ কাঠের বাক্সর মধ্যে। চেয়ে দেখুন তো, আপনার মক্কেল সত্যিকারের শুভঙ্কর মিত্রকে চিনতে পারেন কি না? ঐ—ঐ হচ্ছে সত্যিকারের শুভঙ্কর মিত্র। আর একটু আগে ময়নাঘরে যাকে দেখে এলাম, সে কে জানেন? কিরীটী আমাদের মুখের দিকে চেয়ে বলতে লাগল, কুমার দীপেন্দ্রনারায়ণের কাকা-রাঁচি পাগলা গারদের পলাতক। স্যার দিগেন্দ্ৰ নারায়ণ।

মিঃ চৌধুরী একপ্রকার চিৎকার করে উঠলেন, অসম্ভব! আপনি কি পাগল হলেন, মিঃ রায়?

না, পাগল আমি হইনি।

একটা ভীষণ দুর্গন্ধে সেখানকার সমস্ত বাতাস বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। একটা পচা গলা মৃতদেহ বাক্সের মধ্যে বীভৎস আকারে পড়ে আছে। কিন্তু বিকৃত হলেও বুঝতে কষ্ট হয় না যে, একটু আগে যে দেহটা ময়নাঘরে দেখে এলাম তার সঙ্গে এই মৃতদেহের খুব সামান্যই পার্থক্য আছে। হুবহু একেবারে মিল, যেন দুটি যমজ ভাই!

এই কি তবে বিশ্বাস করতে বলেন মিঃ রায় যে, মিঃ চৌধুরী বলতে লাগলেন, স্যার দিগেন্দ্র আসল শুভঙ্করকে হত্যা করে এইখানে তার মৃতদেহ লুকিয়ে রেখে এতদিন ধরে

আমারও যেন সব কেমন গোলমাল হয়ে যাচ্ছিল। আমি বললাম, তাহলে অন্য কেউ স্যার দিগেন্দ্রকে খুন করেছে এবং তারপর প্রফেসর শর্মাকে সে-ই খুন করেছে?

কিরীটী মৃদু হেসে বললে, চলুন, সব কথা এবারে খুলে বলব।-ওপরে চলুন।

আমরা সকলে ওপরে এসে শুভঙ্কর মিত্রের শয়নঘরে বসলাম। মাধব একটা টেবিলল্যাম্প জেলে দিয়ে গেল।

কিরীটী মাধবকে বললে, গাড়িতে আমার একটি অ্যাটাচি-কেস আছে, ড্রাইভারের কাছ থেকে সেটা নিয়ে এস তো মাধব।

মাধব কিরীটির নির্দেশ পালন করতে চলে গেল।

এবারে কিরীটী বলতে লাগল, আপনারা সকলে খুব আশ্চর্য হয়েছেন না? প্রথম থেকেই হত্যার ব্যাপারে আপনারা ভুল পথে ছুটে চলেছিলেন, কিন্তু একটু ভেবে দেখলেই ব্যাপারটা বুঝতে পারতেন।

স্যার দিগেন্দ্ৰ কোন একটা কারণে শুভঙ্কর মিত্রের ছদ্মবেশ নিয়েছিলেন। পাটনায় যখন আসল স্পোর্টসমান মিঃ শুভঙ্কর মিত্র ছিলেন, সেই সময় তাঁর সঙ্গে দিগেন্দ্রর কোন সূত্রে হয়তো আলাপ হয়। স্যার দিগেন্দ্ৰ অত্যন্ত চতুর এবং বুদ্ধিমান ব্যক্তি ছিলেন। তিনি অবিকল তার মত দেখতে এমন একটি লোককে খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন। এমন সময় মিঃ মিত্রের সঙ্গে তার বোধ হয় আলাপ-পরিচয় হয় এবং স্যার দিগেন্দ্ৰ লক্ষ্য করলেন মিঃ মিত্র অবিকল র্তারই মত দেখতে শুধু তাঁর নিজের নাকটা একটু ভোঁতা। আর মিঃ মিত্রের নাকটা চোখা। স্যার দিগেন্দ্রর ফ্রেঞ্চকটি কালো দাড়ি আছে, মিঃ মিত্রের তা নেই। নাকের খুঁতটা স্যার দিগেন্দ্ৰ ডাঃ রুদ্রের সাহায্যে অপারেশন করে ঠিক করে নিলেন এবং চেহারা বদলাবার আগে স্যার দিগেন্দ্রর পক্ষে মিঃ মিত্রের সঙ্গে কয়েক সপ্তাহ খুব ঘনিষ্ঠভাবে মিশে তাঁর স্বভাব্যচরিত্র, ভাবগুলো অনুকরণ করে নিতে এতটুকুও বেগ পেতে হয় নি। কিন্তু এত করেও একটা জিনিস স্যার দিগেন্দ্রর চোখে ধরা পড়েনি, সেটা হচ্ছে মিঃ মিত্রের ডান কনের কাছে ছোট সিকি-ইঞ্চি পরিমাণ লাল জড়ুল-চিহ্ন। এই ঘরে মিঃ মিত্রের ফটো দেখে সেইটা আমার নজরে পড়ে, আমি তখনি মিলিয়ে দেখবার জন্য ময়নাঘরে ছুটে যাই। কিন্তু মৃত ব্যক্তির ডান ক্যানের নীচে কোন জড়ুল-চিহ্ন পাই না। এতেই বুঝলাম যে কুমারসাহেবের বাড়িতে যে খুন হয়েছে সে মিঃ মিত্ৰ নিশ্চয়ই নয়, জন্মের দাগ কখনও মিলায় না। তখন ভাবতে লাগলাম মৃতব্যক্তি যদি মিঃ মিত্ৰ নাই হয়, তবে আসল মিঃ মিত্ৰই বা কোথায় এবং এই মৃত ব্যক্তিই বা কে? এদিকে এই বাড়ির অস্ত্রঘরের সামনে গিয়ে দেখলাম, একটা দেওয়ালে নতুন চুনকাম করা হয়েছে। সন্দেহ হল সমস্ত দেওয়াল বাদ দিয়ে এক জায়গায় মাত্র চুনকাম করা হয়েছে কেন? তবে কি ঐ চুনকাম করা দেওয়ালের আড়ালে কোন রহস্য লুকিয়ে আছে?

ভাবতে লাগলাম। এদিকে মিঃ মিত্র খুব ভাল হিন্দী জানতেন। অথচ স্যার দিগেন্দ্র হিন্দী জানতেন না। তিনি কয়েক মাস হয়তো পাটনায় থেকে কোন একজন মাস্টার রেখে হিন্দীটা আয়ত্ত করে নিয়েছিলেন মাত্র, কিন্তু তাতে করে কাজ চললেও ছদ্মবেশের কাজ চালানো যায় না।

তবে কি হিন্দীভাষায় অনূদিত সাত সমুদ্র তেরো নদীর পারে বইখানা তাঁরই? আমি এবারে উৎকণ্ঠিত ভাবে প্রশ্ন করলাম।

হ্যাঁ। কিরীটী আবার বলতে লাগল, এসব ছাড়াও তিনি নতুন করে আফিং খেতে শুরু করেছিলেন, কেননা মিঃ মিত্রের নাকি আফিংয়ের নেশা ছিল। তাছাড়া এই ঘটনা ঘটবার আগের দিন নকল মিঃ মিত্র ও কুমারসাহেব স্যার দিগেন্দ্রর বেনামীতে দুজনে দুখানা চিঠি পান। সে হাতের লেখাও মিলিয়ে দেখছি, সেই লেখা স্যার দিগেন্দ্রর হাতের লেখার সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। পুলিশের ফাইলে স্যার দিগেন্দ্রর হাতের লেখার নমুনা ছিল। সেই চিঠিগুলো একপ্রকার সবুজ কাগজে পেনসিল দিয়ে লেখা। পেনসিল পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। পেনসিল সাধারণত চার শ্রেণীর হয়। কারবন’, ‘সিলিকেট’ ও ‘লোহা’ দিয়ে মিশিয়ে যে পেনসিলের সীসা তৈরী হয় তার লেখা সাধারণত ধূসর কালো রংয়ের হয়। গ্রাফাইট’, সিলিকেট’ ও ‘লোহা দিয়ে যে পেনসিলের সীসা তৈরী হয় তার লেখা সাধারণত বেশ ঘন কালো রংয়ের হয়। রংয়ের পেনসিলগুলো সাধারণত ওর সঙ্গে রং মিশিয়ে তৈরী হয়। আর কপিং পেনসিল তৈরী হয়। অ্যানিলিন রং’, ‘গ্রাফ্রাইটু ও কেওলিন দিয়ে। পেনসিল দিয়ে লেখা সেই চিঠিটার গায়ে ‘অ্যাসিটিক এসিডের’ ও ফেরোসায়োনাইডের একটা সলুশন ঢেলে দেওয়া হয়–তার ফলে লেখাগুলো একটা রাসায়নিক ক্রিয়ায় রঙীন হয়ে যায়। মাইক্রোসকোপ দিয়ে পরীক্ষা করে বুঝতে পারা গেছে, ঐভাবে লেখা সাধারণত রঙীন হওয়া উচিত নয়। ঐ সলুশন দিয়ে এবং ঐ রং দেখেই আমরা ধরতে পেরেছি। কোন শ্রেণীর পেনসিল দিয়ে চিঠিটা লেখা হয়েছিল। বোঝা যায় লেখাটা কপিং পেনসিল দিয়েই লেখা হয়েছিল এবং সাধারণত এইচ. এইচ. কপিং পেনসিল দিয়ে লিখলে ঐ ধরনের লেখা হয়। সুব্রত, বোধ হয় মনে আছে, ঐ ধরনের একটা পেনসিল এ বাড়িতেই আমি পেয়েছি ডেস্কে, গতকাল বলেছিলাম। এখন বুঝতে পারছি, সেই পেনসিলটা দিয়েই ওই দুখানা চিঠি লেখা হয়েছিল।

এই পর্যন্ত বলে কিরীটী মাধবের আনীত অ্যাটাচি কেস থেকে সাত সমুদ্র তোরো নদীর পারে বইখানা বের করল। এই বইখানা নিয়ে মিঃ মিত্র প্রায়ই অরুণ করের সঙ্গে আলোচনা করতেন এবং এই বইখানা কুমারসাহেবের খাবার ঘরে চেয়ারের ওপর পাওয়া যায়। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে প্রথম পাতায় একটা নাম লেখা ছিল, তারপর রবার দিয়ে ঘষে সেটা তুলে ফেলা হয়েছে। আমরা এটারিও ফটোগ্রাফ নিয়ে পরীক্ষা করেছি। ফটো নেওয়া হয়েছিল ‘অরথোক্রোম্যাটিক প্লেটে’; একটা নেগেটিভ তোলা হয় এবং তাকে ছোট করে ‘পারক্লোরাইড অফ মারকারি’ দিয়ে জোরালো করা হয়। তারপর সেটা শুকোলে ফ্রেমে বসিয়ে তার সঙ্গে লাগিয়ে আর একটা প্লেটে ফটো নেওয়া হয়। এইভাবে প্রায় ছ-সাত বার ফটো নেওয়া। ফটোয় কি নাম পাওয়া গেছে দেখুন!

আমরা সকলে নেগেটিভের দিকে বিস্ময়ে হ্যাঁ হয়ে গেলাম! পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে তাতে লেখা—দিগেন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী। এরপরও অবিশ্বাস করা চলে না যে, স্যার দিগেন্দ্রনারায়ণই স্বয়ং আমাদের ছদ্মবেশী মৃত মিঃ শুভঙ্কর মিত্র! তবে এখন প্রশ্ন ওঠে, আসল শুভঙ্কর মিত্র কোথায়? স্যার দিগেন্দ্র তাকে খুন করেন। কিন্তু কোথায় তবে মিঃ মিত্র খুন হলেন? বিকাশবাবু গত ডিসেম্বর মাসে পাটনা থেকে মিঃ শুভঙ্কর মিত্রকে পাঞ্জাব এক্সপ্রেসে ফিরে আসতে দেখেছিলেন। এবং পাটনা থেকে ফিরে এসেই কিছুদিন পরে মিঃ মিত্ররূপী স্যার দিগেন্দ্ৰ কুমারসাহেবের কাছে চাকরি নেন। তাহলে বোধ হয় ট্রেনের মধ্যেই স্যার দিগেন্দ্র কােজ সারেন এবং আসল মিঃ মিত্রের মৃতদেহটা খেলাধুলার সাজ-সরঞ্জাম রাখবার বড় বোক্সর মধ্যে ভরে সঙ্গে নিয়ে আসেন।

বিখ্যাত শিকারী ও স্পোর্টসম্যান হিসাবে মিঃ মিত্র সর্বত্রই সুপিরিচিত। অতএব বিনা হাঙ্গামায় বাক্সবন্ধ হতভাগ্য মিত্রের মৃতদেহটা নিয়ে আসতে তাঁকে এতটুকুও বেগ পেতে হয়নি। মৃতদেহ রাস্তায় ফেলতে পারেননি পাছে তাঁর প্ল্যান ভেস্তে যায়। মৃতদেহ সঙ্গে করেই এনেছেন। কিন্তু কোথায় রাখবেন—এই হল তাঁর সমস্যা। এইখানেই তিনি সব চাইতে বুদ্ধির খেলা দেখালেন, মিঃ মিত্রের মৃতদেহ মিঃ মিত্রের বাড়ীতে লুকিয়ে রাখলেন। এখানে এসেই আগে তিনি পুরাতন চাকরীদের বিদায় করে মাধবকে রাখলেন, পাছে তাকে কেউ সন্দেহ করে। তারপর এখানে এসে যখন তিনি মিঃ মিত্রের বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে গেলেন তখন তিনি দেখলেন—সেদিনকার ঘটনা আমরা মিঃ চৌধুরীর মুখেই শুনেছি, কেননা মিঃ চৌধুরী সেদিন উপস্থিত ছিলেন, এবং সে রাত্রে প্রফেসর শর্মার কথা শুনতে শুনতে হঠাৎ মিঃ মিত্র কেমন অসুস্থ হয়ে পড়ে যান তাও আমরা জানি। মিঃ মিত্ররূপী স্যার দিগেন্দ্র নিমেষে। বুঝতে পারলেন সে রাত্রে অসাধারণ চতুর আসল মিঃ মিত্রের শিশুকালের বন্ধু প্রফেসার শৰ্মার চোখে তিনি ধূলো দিতে পারেননি। তিনি তাকে চিনে ফেলেছেন। এখানে এসে অরুণ করের সঙ্গে আলাপ হয়ে স্যার দিগেন্দ্র ঠিক করেন অরুণের মাথায় হাত বুলিয়ে বেচারীর টাকা কটা বাগাতে হবে, কেননা মিঃ মিত্রের অনুসন্ধান নিয়ে দেখলেন মিঃ মিত্রের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ ছিল। খুনের রাত্রে বোধ করি টাকার কথা বলবার জন্যই তাঁকে লুকিয়ে ওপরের ঘরে এসে দেখা করতে বলেন এবং টাকা ধারের কথা মিঃ চৌধুরীকেও বলেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল আর একটা কোন জায়গা থেকে প্রচুর অর্থ নিয়ে এবং অরুণ কর ও হতভাগ্য মৃত মিঃ মিত্রের ঘরবাড়ি বন্ধক রেখে প্রভূত অর্থ নিয়ে এদেশ ছেড়ে চিরতরে চম্পট দেবেন।

মিঃ চৌধুরী কিরীটীর কথায় কেঁপে উঠলেন। কিরীটী বলতে লাগল, কিন্তু এর মধ্যে তার চাইতেও চতুর আর এক চতুর চূড়ামণি এসে দেখা দিলেন। তিনি হচ্ছেন আমাদের হতভাগ্য প্রফেসর শর্মা!

সেইজন্য প্রায়ই প্রফেসার শর্মা এখানে আসতে লাগলেন মৃতদেহের খোজে। কেননা তখনও তিনি বুঝতে পারেননি যে স্যার দিগেন্দ্ৰ মৃতদেহ কোথায় কী ভাবে লুকিয়ে রাখতে পারেন। একটু ভাবলেই বোঝা যায় এবং তাই ভেবেই হয়তো মিঃ শৰ্মা অনুমান করেছিলেন নিশ্চয়ই, এ বাড়িরই কোথায়ও তাঁর মৃতদেহ লুকিয়ে রাখা হয়েছে, কেননা সেটাই হবে সবচাইতে বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু কোথায়? বাগানে? না, তাতে লোক-জানাজানি হবে। সবচাইতে ভাল হবে অস্তুগারে। কেননা সেটা সব চাইতে নির্জন।

মিঃ মিত্র যে আসল নয় জাল এবং খুঁজতে খুঁজতে অস্ত্ৰঘরেই যে সে লুকানো আছে প্রফেসর শর্মা এই ঠিক করলেন এবং দেখলেন এ মজাই হল—তিনি কোন কিছু না ভেঙে সুযোগের অপেক্ষায় রইলেন, কেননা তাঁরও অবস্থা তখন চাকরিবাকরি না থাকার দরুন ‘অদ্যভক্ষো ধনুৰ্গণঃ’। তাছাড়া অরুণ করের টাকায় তাঁর মত একজন অতি বিলাসী লোকের চলাও সম্ভবপর ছিল না।