১১. গাড়িতে বসে ফিরবার পথে

গাড়িতে বসে ফিরবার পথে কিরীটীকে প্রশ্ন করলাম, অনুসন্ধানের মত কিছু পেলে?

না। একটা হাতের লেখার মত কিছু খুঁজছিলাম, কিন্তু পেলাম না। লোকটা দারুণ চালাক, আগে থেকেই সাবধান হয়ে যা কিছু প্রয়োজনীয় সব সরিয়ে ফেলেছে। তবু দুটো জিনিস পাওয়া গেছে। –

কি? কিরীটির মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম।

একটুকরো কাগজ আর এইচ, এইচ, এইচ মার্কা একটা জন ফেবারের ‘লোড’ পেনসিল।

একটা দ্রব্য সেখানে সে বহু যত্নে লুকিয়ে রেখেছে।

ডাক্তার আগেই চলে গিয়েছিলেন। কথা ছিল তিনি পুলিস সার্জেনের ময়নাতদন্তের রিপোর্টটা নিয়ে তার বাসাতেই আমাদের জন্ম: দাপেক্ষা করবেন।

তাই গোটা তিনেকের সময় খাওয়া-দাওয়া সেরে আমরা একবার লালবাজার থানায় পুলিস কমিশনারের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম।

বর্তমান কেস সম্পর্কেই কমিশনার সাহেবের সঙ্গে কিরীটীর নানা কথাবার্তা হল। কিরীটীর সঙ্গে পুলিস কমিশনারের খুব বেশী বুন্ধত্ব, অন্যান্য কথাবার্তার পর সাহেব একসময়ে বললেন, কুমারসাহেব এ ব্যাপারে অত্যন্ত ত্ৰিয়মান হয়ে পড়েছেন মিঃ রায়। তিনি গভর্ণমেণ্টকে দশ হাজার টাকার একটা চেক দিয়ে গেছেন—যে খুনিকে ধরিয়ে দিতে পারবে সে-ই ঐ পুরস্কার লাভ করবে।

তা বৈকি, কিরীটী বললো, তার মত একজন সম্মানিত ব্যক্তির পক্ষে এ বড় কম অসম্মানকর কথা নয়! আজি সংবাদপত্রে দেখছিলাম, বর্তমানে শ্ৰীপুরে যে টি-বি হাসপাতাল তৈরী হচ্ছে গঙ্গার ধারে লক্ষ টাকা ব্যয়ে এবং যার সব কিছু ব্যয়ভার তিনিই নিয়েছেন— সেটা নাকি তার কাকা স্যার দিগেন্দ্রর নামেই ‘দিগেন্দ্র স্যানাটোরিয়াম’ নাম দেওয়া হবেতিনি ঘোষণা করেছেন।

পুলিস কমিশনারের ওখান হতে বিদায় নিয়ে আমরা ডাঃ চট্টরাজের বাসায় গিয়ে দেখি, তিনি আমাদের জন্যই অপেক্ষা করছেন। তাকে নিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম। এবং সকলে আমরা বরাবর কুমারসাহেবের ওখানে গিয়ে হাজির হলাম। কথায় কথায় একসময় কিরীটী প্রশ্ন করল কুমারসাহেবকে, আচ্ছা, প্রফেসর শর্মা সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন বলুন তো কুমারসাহেব?

প্রফেসর শর্মার নামে কুমারসাহেবের সমস্ত শরীরটা যেন সহসা একবার কেঁপে উঠল মনে হল। পরীক্ষণেই উত্তেজিত স্বরে তিনি বললেন, প্রফেসর শর্মা মানুষের দেহে একটি শয়তান মিঃ রায়! He is a dirty snake Blood-sucking Vampire!

প্রফেসর শর্মা আপনার মৃত সেক্রেটারী শুভঙ্কর মিত্রের পরম বন্ধু ছিলেন, তা জানেন বোধ হয় কুমারসাহেব?

ভগবানকে ধন্যবাদ যে সে বন্ধুত্বের অবসান হয়েছে। ভয়ঙ্কর লোক! লোকটা নাকি কি একটা নাটক লিখেছে এবং চেষ্টা করছিল নিরীহ শুভঙ্করকে দিয়ে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে একটা থিয়েটার-পার্টি খুলতে।

শুনলাম ওরা দুজনে পরস্পর পরস্পরকে নাকি চিনতেন?

একটা মৃদু হাসি কুমারসাহেবের ওষ্ঠ্যপ্রান্তে জেগেই মিলিয়ে গেল, বুঝতে পেরেছি। মিঃ রায়, আপনি কি সন্দেহ করছেন—প্রফেসর শর্মাই ছদ্মবেশী আমার কাকা স্যার দিগেন্দ্র কিনা, না? কিন্তু আমি বলছি তা নয়, তবে সে একজন ভয়ঙ্কর শয়তান বটে। তারপর যেন একটু থেমে আবার আত্মগতভাবে বললেন, কিন্তু কাকার কথা আমি কিছুতেই ভুলতে পারছি না মিঃ রায়। মনে হচ্ছে। এ বাড়ির কোথাও না কোথাও তিনি এখনও মৃত্যু-তৃষ্ণায় ওৎ পেতে বসে আছেন। হ্যাঁ, he is somewhere here! Somewhere here!

কুমারসাহেব। আবার বলতে লাগলেন, এখন আর অবিশ্যি আমার বলতে বাধা নেই মিঃ রায়-কাল সন্ধ্যায় আমার সেক্রেটারী শুভঙ্কর আমাকে বলছিল শীঘ্রই নাকি সে কোথায় টাকা পাচ্ছে! আর সেই টাকা দিয়ে সে নাকি শীঘ্রই একটা থিয়েটার খুলছে, planও প্রায় তৈরী।

আচ্ছা, সন্ধ্যার পরে প্রফেসর শর্মার বাসায় গেলে তাঁকে পাওয়া যেতে পারে বলে আপনার কি মনে হয় কুমারসাহেব?

তা ঠিক বলতে পারি না, তবে শুনেছি। দমদমার একটা বাগানবাড়িতে তলোয়ার সঙ্ঘ মানে একটা নাকি গুপ্ত সঙঘ আছে; সেইখানে সে ও আমার মৃত সেক্রেটারী প্রত্যহ সন্ধ্যার পর তলোয়ার খেলতে যেত। সন্ধ্যার পর তার বাসায় না পেলেও, সেখানেই হয়তো তাকে পেলেও পেত পারেন। ঠিকানা দিতে পারি। যদি চান।

আমাদের অনুরোধে কুমারসাহেব ঠিকানাটা দিয়ে দিলেন।

কুমারসাহেব, আপনি অরুণ কর বলে কাউকে চেনেন?

আমার মৃত সেক্রেটারীর একজন পরম ভক্ত ছিল শুনেছি। বেশ ছেলেটি। তেমন বিশেষ কিছু নয়, সামান্য একটু-আধটু জানাশোনা হয়েছিল একবার।

দেখুন কুমারসাহেব, কিরীটী বলতে লাগল, একটা খুনের মাওলার তদন্ত করতে গেলে অনেক অপ্রিয় ব্যাপারের সামনে আমাদের যেতে হয়; সেই জন্যই আগে বলে দিচ্ছি, যদি কোন সময়ে অপ্রিয় কিছু বলি তো মনে কিছু করবেন না যেন। আচ্ছা, এমন কি হতে পারে না যে, আপনার কাকা এমন কারও ছদ্মবেশ নিয়েছিলেন, যিনি হয়তো মিঃ শুভঙ্কর মিত্রের সঙ্গে যথেষ্ট পরিচিত ছিলেন? এমন কি হয়তো আপনার সঙ্গেও পরিচয় ছিল সেই লোকটির?

না, সম্ভব নয়।

অবিশ্যি একথা খুবই সত্যি যে, আপনার নিজের কাকাকে আপনি যতটা চেনেন, আর কারও পক্ষে ততটা চেনা একেবারেই সম্ভবপর নয়। আচ্ছা আপনার মনে কি হয়, এমনভাবে কোন পরিচিত ব্যক্তির ছদ্মবেশে আপনার কাকা স্যার দিগেন্দ্র এখানে আসতে পারেন বলে?

না, বললাম তো, একেবারেই তা অসম্ভব। তাছাড়া আমার চোখকে তঁর পক্ষে ফাঁকি দেওয়া সম্ভবপর নয়। মিঃ রায়। এ চিন্তাও বাতুলতা।

যাহোক, কুমারসাহেবের ওখান থেকে বিদায় নিয়ে তীরই দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী আমরা দমদমায় তলোয়ার সঙ্ঘ অভিমুখে যাত্রা করলাম।

ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোডের ওপর সিঁথির কাছাকাছি এক পুরাতন বাগান-বাড়িতে ঐ সঙ্ঘ।

লোহার গেটের মাথায় একটা কেরোসিনের বাতি টিমটিম করে জ্বলছে। বাগানের মধ্যে বড় বড় আমি ও ঝাউ গাছ। অন্ধকারে সো সো করে ঝাউপাতার একঘেয়ে কান্না শোনা যায়।

সঙ্ঘের কর্তা রাম সিং একজন যুদ্ধ ফেরত পাঞ্জাবী হাবিলদার সৈন্য।

কিরীটী ভৃত্যকে দিয়ে তাঁর কাছে কার্ড পাঠাতেই রাম সিং পাশের একটা ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন।

দানবের মতই উঁচু লম্বা চেহারা, অন্ধকারে যেন মূর্তিমান বিভীষিকার মতই প্রতীয়মান হয়।

রাম সিং আমাদের নিয়ে গিয়ে একটা ছোট কামরার মধ্যে বসলেন। তারপর আমাদের পরিচয় জেনে বললেন, আমিও মিঃ মিত্রের আকস্মিক মৃত্যুসংবাদ পেয়েছি। বাবু। বাঙালীর মধ্যে আমন চমৎকার তলোয়ার খেলতে আজ পর্যন্ত বড় একটা রাম সিংহের চোখে পড়েনি বাবু। মনটা আমার বড় খারাপ হয়ে গেছে। বহুৎ আচ্ছা আদমি থা।

আমি আপনার যে ঘরে খেলা হয়, সে ঘরটা একবার গোপনে দেখতে চাই রাম ਸੇਲੇ!

আসুন না।

পাশের বারান্দা দিয়ে আমরা একটা প্ৰকাণ্ড হলঘরের খোলা জানালার সামনে এসে দাঁড়ালাম। ঘরের আলো বারান্দায় এসেও খানিকটা পড়েছে।

ঘরের দেওয়ালে দেওয়ালে তীক্ষ্ণ সব তলোয়ার টাঙানো।

ঘরের মেঝেতে প্রফেসর শর্মা দাঁড়িয়ে। পরিধানে দামী কালো সার্জের লংস ও ঝোলা একটা জামা গায়ে। মাথার চুলগুলো ব্যাকব্রাস করা। দেহের প্রতিটি মাংসপেশী যেন সজাগ শক্তির অহমিকায় সুস্পষ্ট। ঘরের পরিবেশে আজ প্রফেসর শর্মাকে যেন চমৎকার মানিয়েছে।

হাতে একটা তীক্ষ্ণ তরবারি নিয়ে তিনি চারপাশে বনবান শব্দে ঘোরাচ্ছেন। হঠাৎ এদিকে চোখ পড়তেই আমাদের সকল গোপনতা সত্ত্বেও তীর সঙ্গে চোখাচে্যুখি হয়ে গেল। কিন্তু তিনি কোন ইঙ্গিত দিলেন না।

এমন সময় একজন ভৃত্য একটা থালায় করে বড় বড় সব কাচের গ্লাসে বাদামের সরবৎ নিয়ে ঘরে ঢুকল।

উপস্থিত যাঁরা ছিলেন সকলেই এক-একটা গ্লাস থালার ওপর থেকে তুলে নিলেন।

প্রফেসার শর্মা একটা সরবতের গ্লাস হাতে নিয়ে, সেটা মাথার ওপর তুলে ধরে আনন্দবিহুল কণ্ঠে বললেন, এস, যে বন্ধু আমাদের মারা গেল তাঁর আত্মার কল্যাণে ও যে এর পরে মরবে তার শুভ কামনায় এই সরবত আমরা প্রাণভরে পান করি। হুররে!

সমস্ত সরবতটা এক চুমুকে পান করে, শূন্য গ্লাসটা সামনের একটা টেবিলের ওপরে শৰ্মা নামিয়ে রাখলেন সশব্দে। তারপর এক পাক ঘুরে আবার বললেন, উপস্থিত ভদ্রমহোদয়গণ, আমার কথা আপনারা অবিশ্বাস করবেন না; শীঘ্রই আর একজনের মৃত্যু আসন্ন হয়ে এসেছে আমি স্পষ্ট সেটা যেন অনুভব করছি। বলতে বলতে প্রফেসর শর্মা হস্তধৃত তলোয়ারটার বঁটিটা শক্ত করে চেপে ধরলেন, বন্ধু সকল, আপনাদের মধ্যে কেউ আজ আমার সঙ্গে অসিমুখে শক্তি পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত? আসুন তবে! একদিন তলোয়ার না খেললে যেন শরীর আমার ঝিমিয়ে আসে।

প্রফেসার শর্মার চোখে যখন আমরা পড়েই গেছি, তখন আর গোপনতার প্রয়োজনও নেই; তাই আমরা সকলে ঘরের মধ্যে গিয়েই প্রবেশ করলাম।

ওর বুকে একটা সত্যিকারের শক্তি ঘুমিয়ে আছে। বাবু। ও সত্যি বীর! সাবাস রোটা! রাম সিং বললে।

যাক গে, আপনাদের মধ্যে আমার সঙ্গে আসি খেলতে কারও সাহস নেই দেখছি। এই যে আমার নতুন বন্ধু মিঃ কিরীটী রায় এখানে উপস্থিত রয়েছেন, আসুন না, আপনার সঙ্গেই এক হাত খেলা যাক। অবিশ্যি আপনাকে যথেষ্ট সুযোগ দেব।

অশেষ ধন্যবাদ প্রফেসর শর্মা। ওটায় আমি তেমন রপ্ত নই। কিরীটী মৃদুস্বরে জবাব निळा।

তাহলে আর কি হবে, হতাশ হতে হল। আজ তবে আসি সর্দার। গ্রে স্ট্রীটের দিকে একটা জরুরী কাজ আছে…এখুনি যেতে হবে একবার। প্রফেশার শর্মা বলে ওঠেন।

আরে তাই নাকি, আমার বন্ধুরাও তো রাত্রে আজ ও পাড়াতেই নিমন্ত্রণ! কি হে সব্রত, অরুণ করের বাড়িতে আজ তোমার নিমন্ত্রণ না? কিরীটী আমার মুখের দিকে তাকিয়ে সহস্যে বললে।

কিরীটীর কথায় প্রফেসর শর্মার চোখ দুটো সহসা একবার তীক্ষ হয়েই আবার স্বাভাবিক হয়ে এল।

এরপর আমরা সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাম সিং-এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে এসে উঠে বসলাম। রাত্রির অন্ধকারে হেডলাইট জ্বলিয়ে গাড়ি ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোড ধরে ছুটে চলল।

কিরীটী একসময় হীরা সিংকে ডেকে আদেশ দিল, হীরা সিং, পথে মেছুয়াবাজারে একবার ডাঃ রুদ্রের ল্যাবরেটরীর সামনে থেমে। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললে, আচ্ছা সুব্রত, এককালে তো তুমি কলেজ-জীবনে শুনেছি। একজন খুব নামকরা ‘অ্যাথলেট’ छिटुब्न? –

কেন বল তো হঠাৎ এ প্রশ্ন?

আচ্ছা তোমরা যখন কোন জায়গায় শো দেখাতে যেতে, তোমাদের সঙ্গে বড় বড় লাগেজ থাকত না?

তা থাকত বৈকি! আমি জবাব দিলাম।

কিরীটী মৃদুস্বরে বললে, হুঁ, এবারে পাকা বন্দোবস্ত। সন্দেহ হবার যেটি নেই। কিরীটী অন্যমনস্ক ভাবে কী যেন ভাবতে লাগল এর পর।

যথাসময়ে আমাদের গাড়ি ডাঃ রুদ্রের ল্যাবরেটরীর দরজার সামনে এসে দাঁড়াল।

ডাঃ রুদ্র ল্যাবরেটরীতে ছিলেন না। তাঁর একজন সহকারী আমাদের এসে অভ্যর্থনা করে সমাদরের সঙ্গে বসবার ঘরে নিয়ে গিয়ে বসাল, বললে, বসুন, ডাক্তার একটা জরুরী কাজে বের হয়েছেন, ফিরতে একটু দেরী হবে।

সহকারীর হাতে কিরীটী পকেট থেকে একটা লেড পেনসিল বের করে দিয়ে বললে, ডাঃ রুদ্রকে এই পেনসিলটা একটিবার পরীক্ষা করে দেখতে বলবেন তো অমিয়বাবু!…আমি শুধু জানতে চাই পেনসিলটা কোন গ্রুপের। হ্যা ভাল কথা, যে বইটা দিয়ে গিয়েছিলাম, তার থেকে ফটো নিয়ে ডেভলাপ করে দেখবার কথা ছিল, সেটা করা হয়েছে কি?

আজ্ঞে, ফটোর নেগেটিভটা শুকোচ্ছে। আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি, সাধারণ লেখবার কালি দিয়েই বইয়ের ওপর নামটা লেখা হয়েছিল। বইয়ের ওপর পড়া গেছে পরিষ্কার।

খুব সুখবর! প্লেটটা এখনি দেখবখন। হ্যাঁ, পুলিসের রিপোর্টটা সার্জেন দিয়ে যায়নি?

হ্যাঁ, ডাক্তার বলছিলেন মৃত মিঃ মিত্রের রক্ত ও হৃৎপিণ্ড পরীক্ষা করে দেখা গেছে, তিনি আফিংয়ের নেশায় নাকি অভ্যস্ত ছিলেন, প্রায় অন্তত বছর খানেক ধরে।

হ্যাঁ। কুমারসাহেবের প্রাইভেট রুমের জানালার কাছে যে আঙুলের ছাপের ফটো তোলা হয়েছিল সেটার রিপোর্ট কী?

হুবহু স্যার দিগেন্দ্রর আঙুলের ছাপের সঙ্গে মিলে গেছে স্যার।

বেশ। যে তলোয়ারটা সেই ঘরে পাওয়া গিয়েছিল তার গায়ে কোন আঙুলের ছাপ পাননি, না?

আজ্ঞে না।

সবাই আপনারা ভালভাবে পরীক্ষা করে দেখেছিলেন তো অমিয়বাবু?

হ্যাঁ স্যার, সব কিছুই পরীক্ষা করে দেখেছি।

এবারে কিরীটী আমার দিকে ফিরে তাকিয়ে বললে, আমাদের কথাবার্তা শুনে সুব্রত বোধ হয় খুব আশ্চর্য হয়ে গেছ, না? ডাক্তারও হয়তো হয়েছেন। কিন্তু একটা কথা কি জানেন? একটা ‘ক্রাইমকে অনুসন্ধান করে তার গোপন কথা জানতে হলে অনেক ছোটখাটো ব্যাপারেরও সাহায্য নিতে হয়। কারণ অনেক সামান্য ব্যাপারের মধ্যে কত সময় যে আমরা প্রয়োজনীয় সূত্রের সন্ধান পাই ভাবলেই বিস্মিত হতে হয়। একজন খুনী বা দোষীকে খুঁজে বের করতে হলেই যে টনটনে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থাকতেই হবে তার কোন মানে নেইসামান্য বিচার বুদ্ধি ও common sense থাকলেই যে কেউ খুনীকে অনায়াসেই খুঁজে বের করতে পারেন.I.অন্তত আমার বিশ্বাস তো তাই।

এরপর একটু থেমে আবার বলতে শুরু করে, জানি জীবনে শত পরাজয় আছে এবং সেইজন্যই হঠাৎ পাওয়া একটি দিনের জয়ের আনন্দ অতীতের সমস্ত পরাজয়ের বেদনায় যেন শান্তিবারি ছিটিয়ে দেয়। ঐ ধৈর্য, অধ্যবসায় ও সহজ বিচার-বুদ্ধি আছে বলেই জীবনে আজ পর্যন্ত আমি কখনো হতাশ হইনি। যে কোন রহস্যই আমার কাছে বিচার ও বিশ্লেষণে অল্প সময়ের মধ্যে সহজ হয়ে গেছে। যা হোক, এবার আমাদের উঠতে হয়, রাত্রি প্রায় সাড়ে আটটা হল। বলতে বলতে কিরীটী আমার ও ডাক্তারের চোখের সামনে একটা টাইপ করা কাগজ মেলে ধরলা, তাতে এই কটা কথা লেখা।

“প্রফেসার কালিদাস শর্মা,-খোঁজ নিয়ে দেখলাম লোকটার বাড়ি ও জন্মস্থান কাশীতে। ওইখানেই এবং পরে পাটনায় ও কাশীতে ওঁর জীবনের চব্বিশটা বছর কাটিয়েছেন। ওঁর পিতার নাম স্বৰ্গীয় জ্ঞানদাস শৰ্মা। পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে এম. এ. ডিগ্ৰী নেন। তার পর কলকাতায় ১৯৩৬ সন থেকে প্রফেসারী শুরু করেন। কিন্তু একটি বৎসর না যেতেই ১৯৩৭ সালে কলেজ সংক্রান্ত কতকগুলো কী ব্যাপার নিয়ে চাকরী যায়। বর্তমানে তিনি কোথাও কোন কাজ করেন না, তবে প্রায়ই দেখা গেছে অরুণ করের নাম সই করা চেক ব্যাঙ্ক থেকে উনি ভাঙিয়ে নিয়েছেন।”

কিরীটী আমাদের দিকে একবার চেয়ে অদ্ভুত একটু হেসে কাগজটা মুড়ে ভাঁজ করে পকেটে রেখে উঠে দাঁড়াল। চল, আশা করি এর পর আর রহস্যের মূল সূত্রটি খুঁজে পেতে তোমাদের কারও কষ্ট হবে না।

গাড়িতে বসে কিরীটী বললে, তাহলে সুব্রত, তুমি তো অরুণ করের বাড়িতেই যাবে, না?

হ্যাঁ।

আচ্ছা। আমার একটা জরুরী কাজ আছে। অন্য জায়গায়, আমি আপাতত সেইখানেই যাব।