প্রথম খণ্ড
দ্বিতীয় খণ্ড
তৃতীয় খণ্ড

১০. কুকুর মানে কী?

কুকুর মানে কী?

তাহলে, ওই হল আসল প্রশ্ন : উপনিষদের ওই কুকুর কথাটির মানে কী!

কুকুর মানে কুকুর। আবার কী?—এই হলো আধুনিক পণ্ডিতদের বলবার কথা। আর, কুকুরই যদি হয় তাহলে তাদের লেজ থাকবে না কেন? অবশ্যই, উপনিষদের ঋষিরা লেজের কথা লিখতে ভুলে গিয়েছিলেন। আধুনিক টীকাকারেরা যেন ভ্রম-সংশোধন হিসেবেই লেজের কথাটুকু জুড়ে দিচ্ছেন : পেছনের কুকুর তার সামনের কুকুরের লেজ কামড়ে ধরলো, ইত্যাদি।

লেজের উপাখ্যানটি ছোটো নয় ; এ-লেজ শঙ্কর-ভাষ্য(৫১) থেকে গজাতে শুরু করে মক্ষ্মূলারের গ্রন্থাবলী হয়ে স্যর সর্বপল্লীর “ভারতীয় দর্শন” পর্যন্ত এসে পৌঁচেছে।

কিন্তু আমাদের ওই একই মন্তব্য : উপনিষদের ব্যাখ্যা করা মানে উপনিষদ রচনা করা নয়। লেজের উল্লেখ যদি উপনিষদে না থাকে তাহলে তর্জমা করতে গিয়ে, কিংবা, টীকা করতে গিয়ে লেজ রচনা করার সুযোগ নেই। তার বদলে, উপনিষদে ঠিক কী লেখা আছে? লেখা আছে, কুকুরেরা এক সাদা কুকুরের কাছে গিয়ে বললো, আমরা ভোজন করতে চাই, আমাদের অন্নার্থে গান দিন। অন্নং নঃ ভগবান আগায়তু, আশনায়াম্‌ ইতি। আর শেষ পর্যন্ত সত্যিই তারা দল বেঁধে গান করতে শুরু করলো : আমরা ভোজন করি, আমরা পান করি, ইত্যাদি।

এখন এতো ব্যাপার কি সত্যিই কুকুরের পক্ষে সম্ভব? নিশ্চয়ই নয়। পুরাকালেও নয়। সেকালের কুকুরেরা যে অন্ন চাইতো এবং অন্নের উদ্দেশ্যেই দল বেঁধে গান গাইতো—এমন কথা নিশ্চয়ই কেউই বিশ্বাস করবেন না।

আর একটা সম্ভাবনা আছে। উপনিষদের এই অংশে যাদের কথা বলা হয়েছে তারা আসলে সত্যিকারের কুকুরই নয়। তার বদলে মানুষ।

এবং মানুষ হলেও তাদের কুকুর বলে উল্লেখ করবার পেছনে কোনো রকম ঠাট্টা-বিদ্রুপের উদ্দেশ্য নেই।

কিন্তু তাও কি সম্ভব? মানুষকে নিছক জন্তু-জানোয়ার মনে করা হচ্ছে, অথচ তা স্বাভাবিক ভাবেই! তার মূলে কোনো রকম বিদ্রুপ-বিতৃষ্ণার লক্ষণ নেই?

আজকের দিনে অবশ্যই তা সম্ভব নয়। কিন্তু উপনিষদের এ-অংশ তো আজকের দিনের লেখা নয়। উপনিষদের এই অংশে যাদের উল্লেখ করা হচ্ছে তারাও কেউ আধুনিক কালের মানুষ নয়। অপরপক্ষে, বৈদিক সাহিত্যের দিকে ভালো করে নজর করুন। দেখবেন, জন্তু-জানোয়ারের নাম থেকে কতো স্বাভাবিক ভাবেই একান্ত মানবীয় ব্যাপারগুলির নামকরণ করবার নমুনা পাওয়া যাচ্ছে। তাই, আধুনিক মনোভাবটাকেই আপনি যদি একমাত্র মনোভাব মনে করেন তাহলে প্রাচীনদের ওই ব্যবহারটির কোনো অর্থ খুঁজে পাবেন না।

কয়েকটা নমুনা দেখা যাক।

সাদা খচ্চোর : আজকের দিন আমি-আপনি নিশ্চয়ই কোনো ব্যক্তি বা কোনো বস্তু সম্বন্ধে সমীহ দেখাবার মনোভাব নিয়ে এমনতরো নাম ব্যবহার করবো না। কিন্তু একটা বই-এর নাম যদি তাই দেওয়া হয়? তাহলে আজকের দিনে নিশ্চয়ই সরাসরি বলে দেওয়া যাবে, বইটার বিরুদ্ধে বিদ্রুপমূলক মনোভাবের বিকাশ হিসেবেই এ-রকম নাম দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রাচীন কালের ব্যাপারই আলাদা। একটি উপনিষদের নাম সত্যিই সাদা খচ্চোর : শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ। অথচ ঠাট্টা নয়, বিদ্রুপ নয়,–নামকরণের মধ্যে কোনো রকম বিরূপ ভাবের প্রকাশই নেই।

আর শুধু খচ্চোরই বা কেন। প্রাণীজগতের আরো সব অদ্ভুত অদ্ভুত বাসিন্দাদের খুঁজে পাবেন বৈদিক-সাহিত্যের রকমারি নামের মধ্যে। অপর একটি উপনিষদের নাম গ্রহণ করা হয়েছে ব্যাঙ থেকে : মাণ্ডুক্য উপনিষদ। কিন্তু এই নামের জন্যে উপনিষদ-সাহিত্যে তার মর্যাদা এতোটুকুও কম নয়। শঙ্করাচার্যের গুরু গৌড়পাদ এরই কারিকা রচনা করে অমর হয়েছেন।

উপনিষদ থেকে আরো এক-পা পিছু হটে যদি সংহিতার রাজ্যে প্রবেশ করেন তাহলে আপনার মনে হতে পারে নামজগতের এক অদ্ভুত চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করেছেন বুঝি! নমুনা দেখুন :

সংহিতাগুলির নানান শাখা-উপশাখার নাম পাওয়া যায়, যদিও অবশ্য অনেক শাখাই আজ বিপুপ্ত হয়েছে এবং যে-সব নাম টিকে রয়েছে তার মধ্যে অনেক নামেরই কোনো রকম মানে খুঁজে পাওয়া জা দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু একটা ব্যাপার দেখে বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই : এতো সব নামের মধ্যে যে-গুলির মানে ঠাহর করা আজো সম্ভবপর সেগুলির প্রায় প্রত্যেকটির পশুজগৎ বা উদ্ভিদ-জগৎ থেকে পাওয়া।

ঋগ্বেদের যে-একমাত্র শাখা আজো বিলুপ্ত হয় নি তার নাম হলো শাকল। ঐতরেয় ব্রাহ্মণে(৫২) লেখা আছে, শাকল হলো এক রকম সাপের সেকেলে নাম। শৌনক প্রণীত প্রাতিশাখ্য(৫৩) অনুসারে, এ-ছাড়াও ঋগ্বেদের আরো চারটি শাখা ছিলো : বাস্কল, আশ্বলায়ন, সাঙ্খ্যায়ন ও মাণ্ডুক। এর মধ্যে মাণ্ডুক নামটিকে বুঝতে অসুবিধে হয় না। বেদজ্ঞরা ভেবে দেখতে পারেন, দুটি শাখার নামের যে-মানে পাওয়া যায় তারই আলোয় বাকি তিনটির কোনো মানে উদ্ধার করা সম্ভব কিনা।

পুরাণে(৫৫) আছে, এককালে সামবেদের সহস্রাধিক শাখা ছিলো। ইন্দ্র বজ্রাঘাতে সেই শাখাগুলি বিনষ্ট করেন। ইন্দ্রের এই অদ্ভুত আচরণের তাৎপর্য খোঁজা আপাতত আমাদের উদ্দেশ্য নয়। তার বদলে দেখা যাক, ইন্দ্রের বজ্রাঘাত সত্ত্বেও যে-সাতটি শাখা টিকে থাকলো বলে বলা হয়েছে সেগুলির নাম কী রকম : কৌথুমী (বা কৌথুম), রাণ্যায়ণীয় (বা রাণ্যায়ণ), শাট্যমুগ্র, কাপোল, মহাকাপোল, লাঙ্গলিক, শার্দূলীয়। এই সপ্তম নামটি যে বাঘ থেকেই এসেছে তা বোঝবার জন্যে স্যর মনিয়ার-উইলিয়ম্‌স্‌-এর অভিধান ঘাঁটতে হবে না। কিন্তু দুঃখের বিষয় তাঁর ওই মহামূল্যবান অভিধানটিকে তন্ন-তন্ন করে খুঁজেও এক লাঙ্গলিক ছাড়া আর কোনো নামের শব্দার্থ পাওয়া যায় না। কিন্তু এ-নামটির যে-অর্থ পাওয়া যায় তা চিত্তাকর্ষক : লাঙ্গলিক মানে নাকি একরকম ভেষজ(৫৫)।

কৃষ্ণ-যজুর্ব্বেদের একটি শাখার নাম তৈত্তিরীয় সংহিতা। এ-নাম যে তিতির পাখি থেকে এসেছে সে-বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। শুক্ল-যজুর্ব্বেদের যে-শাখার নাম বাজসনেয়ী সংহিতা তা বাজ বা তেজি ঘোড়া থেকে এসেছে কিনা ভেবে দেখা দরকার। কৃষ্ণ-যজুর্ব্বেদের অপর শাখার নাম মৈত্রায়ণী সংহিতা, তার কয়েকটি উপশাখার নাম খুবই চিত্তাকর্ষক : মানব, বরাহ, ছাগলেয়, হারদ্রবীয়, দুন্দুভ, শ্যামায়ণীয়।

অথর্ব্ববেদের কয়েকটি শাখার নাম : পৈপ্পল, শৌনকীয়, তোত্তায়ন, ব্রহ্মপালাশ। এগুলির মধ্যে পৈপ্পল নামটি যে পিপুল গাছ থেকে এসেছে সে-বিষয়ে কোনো রকমই সন্দেহের অবকাশ নেই। বাকিগুলির কোনোটি কোনো জন্তু-জানোয়ারের বা কোনো গাছগাছড়ার কাছ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে কিনা ভালো করে ভেবে দেখা দরকার।

আমরা বলতে চাই, পাঁচটা দৃষ্টান্তের মধ্যে যদি একটাকেও স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায় আর বাকি ক’টাকে বোঝা না যায় তাহলে যেটা বোঝা যাচ্ছে তারই সাহায্যে যে-ক’টাকে বোঝা না সেই ক’টাকে বোঝবার চেষ্টা করতে হবে। কিংবা, অন্তত এটুকু তো নিশ্চয়ই দাবী করা যায় যে, যা-অস্পষ্ট তার সাক্ষ্য যা-স্পষ্ট তার সাক্ষ্যকে উড়িয়ে দিতে পারে না। সংহিতা-সাহিত্যের অন্তত কয়েকটি দৃষ্টান্তের বেলায় আমরা স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছি যে, নামগুলি সরাসরি জন্তু-জানোয়ার, কিংবা, গাছগাছড়া থেকেই গ্রহণ করা হয়েছে। বাকিগুলির অর্থ যদি এমন বোঝা না-ও যায় তাহলেও কি সেগুলির পক্ষে একই রকম উৎপত্তি হওয়া স্বাভাবিক নয়?

আর, এই কথাটি মনে রেখে আধুনিক পণ্ডিতদের যুক্তিটাকে বিচার করে দেখুন  : ছান্দোগ্যের ঋষি যে-হেতু আলোচ্য দৃশ্যটিকে কুকুর-সম্বন্ধীয় সামগান বলে বর্ণনা করছেন সেই হেতু উদ্দেশ্যটা ঠাট্টা-তামাসা ছাড়া আর কী হতে পারে? এ-যুক্তি নেহাতই অচল এবং মূলে রয়েছে সেকালের রচনাতেও একালের মনোভাব কল্পনা করার চেষ্টা। কিন্তু সেকালের রচনায় একালের মনোভাব যে কল্পনা করা চলবে না তার প্রমাণ হলো, সেকালের ঋষিরা যে-গ্রন্থগুলিতে নিজেদের চূড়ান্ত জ্ঞান প্রকাশ করেছেন সেইগুলিরই নামকারণ করবার সময় সাপ, ব্যাঙ, বাঘ, ছাগল, তিতির, খচ্চোর ইত্যাদি নানান রকমের জানোয়ারেরই শরণাপন্ন হয়েছিলেন। এবং তার জন্যে যে তাঁদের কোনো রকম কুণ্ঠা ছিলো সে-কথা পুরোনো পুঁথির কোথাও লেখা নেই।

তাই, আধুনিক পণ্ডিতদের ওই যুক্তিটিকে যদি সত্যই গুরুত্ব দিতে হয় তাহলে মানতেই হবে, বৈদিক ঋষিরা নিজেদের যে কীর্তিগুলিকে সবচেয়ে মহান ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন সেগুলি সম্বন্ধেই তাঁরা বিদ্রুপ-পরিহাসে মুখর হয়ে উঠেছিলেন!

তাহলে, ছান্দোগ্য-উপনিষদের ওই অংশটিতে কতকগুলি মানুষকে যে কুকুর বলে উল্লেখ করা হয়েছে তার কারণ বিদ্রুপ বা পরিহাস নয়। আর বিদ্রুপ বা পরিহাস যদি নাই হয় তাহলে বর্ণনাটিকে সহজ ও স্বাভাবিক বলেই স্বীকার করতে হবে। তার মানে, স্বাধ্যায়ের আশায় বেরিয়ে গ্লাব মৈত্রেয়, ওরফে, বক দালভ্য নামের বিদ্বান ব্যক্তিটি যাদের সামগান শুনে এলেন তাদের সহজ ও স্বাভাবিক পরিচয় হলো : কুকুর।

কিন্তু সত্যিই কি কোনো মানবদলের সহজ ও স্বাভাবিক পরিচয় কুকুর হওয়া সম্ভব?

নিশ্চয়ই সম্ভব, যদিও অবশ্যই আমাদের আধুনিক সমাজে নয়,–প্রাচীন সমাজে।

আমাদের এই ভারতবর্ষেই এমন অনেক মানবদলের খবর পাওয়া যায় যাদের নাম কুকুর এবং শুধুই কুকুর।

সেকালের লেখা পুঁথিপত্রে এ-জাতীয় খবর পাওয়া যায়। এমন কি একালেও যারা পিছিয়ে-পড়া বা সেকেলে অবস্থায় আটকে রয়েছে তাদের যদি স্বচক্ষে দেখেন তো দেখবেন তাদের মধ্যেও এই নামটি একেবারেই দুর্লভ নয়।

প্রথমে দেখা যাক প্রাচীন পুঁথিতে কী লেখা আছে।

কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে(৫৬) খুবই সোজাসুজি কুকুর নামের মানুষদের কথা বলা হয়েছে : কৌটিল্য বলছেন, ‘রাজশব্দোপজীবী’ সংঘগুলির মধ্যে একটির নাম কুকুর। হরিবংশের(৫৭) অষ্টত্রিংশ অধ্যায়ের নামই হলো কুকুরবংশবর্ণন। মহাভারতের সভাপর্বে লেখা আছে, যাবদগণের একটি শাখার নাম কুকুর : “এইরূপে কুকুর, অন্ধক ও বৃষ্ণিগণ ‘দুর্বল ব্যক্তি বলবানের সহিত স্পর্ধা করিবে না’ এই নীতিবাক্যের অনুসরণ ক্রমে মহাবীর জরাসন্ধকে তৎকালে উপেক্ষা করিয়াছিলেন”(৫৮)। ভীষ্মপর্বের নবন অধ্যায়ে(৫৯) ধৃতরাষ্ট্রের কাছে ভারতবর্ষের নানারকম মানুষের বর্ণনা দিতে দিতে সঞ্জয় কুকুর নামের একদল মানুষের উল্লেখ করছেন। সভাপর্বে(৬০), যুধিষ্ঠিরের কাছে যারা উপহার বহন করে আনছে বলে বর্ণিত হয়েছে তাদের মধ্যে একদল মানুষকে স্বাভাবিক ভাবেই কুকুর বলা হয়েছে। তাহলে, প্রাচীন পুঁথিপত্রেই দেখা যায় মানবদলের নামও কুকুর হওয়া অসম্ভব নয়, এবং উল্লেখিত দৃষ্টান্তের কোথাও লোকগুলিকে হেয় প্রতিপন্ন করবার জন্যে ইচ্ছে করেই, গাল দিয়ে, কুকুর বলা হয়েছে—এমন নজির নিশ্চয়ই নেই। সর্বত্রই একদল মানুষের সহজ স্বাভাবিক পরিচয় হিসেবেই কুকুর শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।

কিন্তু মানবদয়ের পরিচয় যে অত্যন্ত স্বাভাবিক ভাবেই কুকুর হওয়া সম্ভবপর এ-কথার প্রমাণ হিসেবে শুধুমাত্র প্রাচীন পুঁথিপত্রের নজিরই আমাদের একমাত্র সম্বল নয়। আজো আমাদের দেশের নানা জায়গায় যে-সব মানুষের দল সমাজ-বিকাশের প্রাচীন স্তরে আটকা পড়ে রয়েছে তাদের দিকে দেখুন, দেখবেন কুকুর নামের কী রকম ছড়াছড়ি! এখানে মাত্র কয়েকটি নমুনা উল্লেখ করলেই হবে।

রিসলী(৬১) বলছেন, ওরাওঁদের  মধ্যে একদল মানুষের পরিচয় হলো খোয়েপা, খোয়েপা মানে বন্য কুকুর। অনন্তকৃষ্ণ আয়ার(৬২) বলছেন, আজো মহীশূর অঞ্চলে একাধিক দলের মানুষের পরিচয় কুকুর নাম দিয়েই। থার্স্টন(৬৩) দক্ষিণ ভারতের নানারকম মানুষের পরিচয়-প্রসঙ্গে বলছেন, একদলের নাম হলো ভোলিয়া, ভোলিয়া মানে বন্য কুকুর।

আরো অনেক দৃষ্টান্ত দেখানো যায়। আজো ভারতবর্ষের কতো জায়গায় কতো রকমের মানুষ যে অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই কুকুর হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয় তার পূর্ণ তালিকা খুবই দীর্ঘ হবে।

এই ভাবে কুকুর বলে জীবন্ত মানুষগুলিকে দেখবার পর পুরোনো পুঁথির দিকে ফিরে যাওয়া যায়।

ছান্দোগ্য-উপনিষদে ওই যে যারা সামগান গাইলো ওরা কারা?

ওদের সত্যিকারের কুকুর মনে করে এবং সত্যিকারের কুকুরের ন্যায্য মর্যাদা দেবার জন্যে শঙ্করাচার্যের মতো লেজ সৃষ্টি করে উপনিষদের পিছনে জুড়ে দেবার দরকার নেই।

কিংবা, রাধাকৃষ্ণণ প্রমুখ আধুনিক বিদ্বানদের মতো এ-কথা কল্পনা করবারও কোনো দরকার নেই যে, উপনিষদের ঋষিরা যজ্ঞীয় ঋত্বিকদের বিদ্রুপ করে বা ঘৃণাভরে ওই রকম সাজিয়েছিলেন।

তার বদলে, এখানে একদল সত্যিকারের মানুষেরই বর্ণনা। সেই মানুষগুলির সহজ ও স্বাভাবিক পরিচয় হলো : কুকুর। যেমন সহজ স্বাভাবিক ভাবেই বেদের শাখাগুলিকে সাপ, ব্যাঙ, ছাগল ইত্যাদি নাম দেওয়া হয়েছিলো, কিংবা উপনিষদের কোনোটির নাম নেওয়া হয়েছে ব্যাঙ থেকে, কোনোটির খচ্চোর থেকে!

————————-
৫১. ছান্দোগ্য উপনিষদের শঙ্করভাষ্য দ্রষ্টব্য।
৫২. ঐতরেয় ব্রাহ্মণ (রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী) ২৩৫।
৫৩. দুর্গাদাস লাহিড়ী : ঋগ্বেদ সংহিতা ২৯।
৫৪. ঐ ৩১।
৫৫. M. Monier-Williams SED.
৫৬. অর্থশাস্ত্র (রাধাগোবিন্দ বসাক) ২:২০৯।
৫৭. হরিবংশ ৩৮ অধ্যায়।
৫৮. মহাভারত (কালীপ্রসন্ন সিংহ) ২১৫।
৫৯. ঐ ৭৫৬।
৬০. ঐ ২৩৮।
৬১. H. H. Risley PI 793.
৬২. A. K. Iyer MTC 1:248.
৬৩. E. Thurston and Rangacari CTSI 1:‘Bholia’