০৯. জিহাদিদের প্রচুর আহারের ব্যবস্থা

জিহাদিদের প্রচুর আহারের ব্যবস্থা

জিহাদিদের প্রচুর আহারের ব্যবস্থা করেছে মাদ্রাছা-ই-মদিনাতুন্নবির মহান প্রতিষ্ঠাতা আলহজ কোরবান আলি ব্যাপারি; সে জানে জিহাদিরা খেতে পছন্দ করে, ওদের মগজ পেটে এবং অরো একটু নিচে, তাই সে তাদের জন্যে গোটা বিশেক গরু কোরবানি দিয়েছে।

খেতে আমিও পছন্দ করি, গরুর সুরুয়ার লাল টকটকে রঙ আর চর্বি আমার পছন্দ। মাদ্রাছা-ই-মদিনাতুন্নবির প্রাঙ্গণে উৎসব শুরু হয়ে গেছে, খাওয়ার উৎসব, জয়ের উৎসব; আমি আলহজ কোরবান আলি ব্যাপারে, আর নতুন দুই নম্বর খেতে বসেছি আমার ‘গোলাপ-ই-সাহারা’য়। আমি যে-বিশাল ঘরটিতে থাকি, সেটির নাম দিয়েছি আমি ‘গোলাপ-ই-সাহারা’, ওই ফুলটির গন্ধ আমাকে কুয়ৎ দেয়। এখন আমার দুই নম্বর জিহাদি মোঃ আবু লাদেন।

লাদেন নামটি যে এই নাপাক দেশে আগেও ছিলো আমি জানতাম না; তার নামটি শুনেই আমার পছন্দ হয়, আরো পছন্দ হয় তার চরিত্র। আমি কয়েক দিনেই বুঝতে পারি সে সত্যিকার ছালাম দেয়, ওপরে উঠতে চায় না, আমি তাকে শুয়োরের গোস্ত খেতে বললেও সে বিছমিল্লা বলে খাবে। আমি একেই পছন্দ করেছি, তাই আজই তাকে দু-নম্বরের গৌরব দিই।

মোঃ আবু লাদেন আমার পায়ে ছালাম ক’রে বলে, ‘হুজুর, আমি খোয়াবেও ভাবি নাই আপনে আমারে আপনের দুই নম্বর করবেন। আপনের লগে আমি কোনো দিন বেঈমানি করুম না।’

আমি বলি, ‘আল্লার রহমত তোমার ওপর বর্ষিত হোক।’

সে আমার ঘরেই কয়েক রাকাত সালাত আদায় ক’রে আমার পায়ের নিচে বসে; একটু পরেই হয়তো সে আমার পা টিপতে শুরু করবে।

আমি বলি, ‘মোঃ আবু লাদেন, তুমি ঈমানের সঙ্গে কাজ করবে; এখন উঠে চেয়ারে বসো, এসো এক সাথে খাই।’

সে আমার সঙ্গে চেয়ারে বসে খাবে কোনো দিন ভাবে নি; আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে পড়ার চেষ্টা করি কোনো দিন সে মোঃ হাফিজুদ্দিন জিহাদি হয়ে উঠবে কি না, এই দুনিয়ায় কাউকেই চিরকাল বিশ্বাস করা যায় না।

খেতে খেতে আমরা গল্প করি, শ্যামসিদ্ধির কথা বলি।

আলহজ কোরবান আলি ব্যাপারি বলে, ‘হুজুর, আপনেই আমাগো ফিউচার, আমরা দেশে ঈমান চাই, শরিয়া চাই, একদিন আপনে হইবেন আমাদের মোল্লা ওমর, দেশটারে আল্লার নামে চালাইবেন।’

আমি বলি, ‘আপনার বিবিজান লাইলাতুল কদর কেমন আছেন?’

কোরবান ব্যাপারি বলে, ‘তার প্যাড ত খালি থাকে না, এইখনও একটা প্যাডে। আমার অসুবিদা হইতেছে।’

আমি বলি, ‘খাঁটি মুছলমান আওরাতের পেট ভরা থাকাই নিয়ম, পেট খালি রাখলে তারা শয়তানের সঙ্গে জিনা করতে পারে।‘

কোরবান আলি ব্যাপারি বলে, ‘শয়তানের লগে যাইতে জিনা করতে না পারে হেইরা লিগাই ত তার পেডটারে আমি গুদামের মতন ভাইরা থুই; তয় অখন আমার অসুবিদা হইতেছে, আমি তার উপরে ওটতে পারি না, আমার প্যাডটা ত দেকতে পাইতেছেনই, আর তারে উপরে ওটতে কইলে সে কয় এইডা ইছলামে হারাম, হে অনেক মছল্লা শিকছে।’

আমি বলি, ‘খাঁটি মুছলমানের নিয়মিত ছহবত দরকার।‘

কোরবান আলি ব্যাপারি বলে, ‘হ, হুজুর, সাচা কতা কইছেন।’

আমি বলি, ‘আপনার গার্মেন্টসে তো অনেক কচি মেয়ে আছে, গার্মেন্টসের পেট খসানোর জন্য তো অনেক এনজিও আছে?’

কোরবান আলি ব্যাপারি বলে, ‘হা, তাগো কয়টারে দিয়াই এইখন টেমপরারি কাম চালাইতে আছি, এইখন বোঝতে আছি ক্যান চাইরটা বিবি দরকার, আল্লা যা করেন ভালর লিগাই করেন।’

আমি বলি, ‘মাসে কটির পেট বানান?’

কোরবান আলি ব্যাপারি বলে, ‘হেই হিসাব রাখনের সময় আমার নাই, হুজুর, প্ৰডাকশন, এক্সপোর্ট, ইমপোট, কাস্টমস, সোনা আনন, ব্যাংক লোন, লোন শোদি না করনের ফাঁক বাইর করন, ট্যাকা পয়সার হিসাব রাখতে রাখতেই মাতা খারাপ অইয়া যায়।‘

আমি বলি, ‘প্রেগন্যান্ট হ’লে প্ৰব্লেম হয় না?’

সে বলে, ‘এইটা আইজাকাইল কোনো প্ৰব্লেমই না, হায়েজ না হইলেই পাঠাই দেই, আমাগো কন্টাক্ট করা ক্লিনিক আছে, তারা খসাই দেয়, তিন শ কইর‍্যা লয়, মাইয়াগুলিও ফুর্তিতে কাম করে, ফুর্তি ছাড়া কেউ কাম করতে চায় না।’

আমি বলি, ‘আপনার বিবিজান জানেন?’

সে বলে, ‘অহন জানলে আর না জানলে কিছু আহে যায় না। তয় হে ট্যাকা চিনে, আমার থিকা বাড়ি ল্যাখাই নিছে, দশ কোটি ট্যাকাও নিছে ল্যাকাপরা জানা বিবি ত, সব বোঝে, ট্যাকা বোঝে বেশি। তয় তার ছাৰ্ভিছটা ফাশ কেলাশ, গার্মেন্টসের মাইয়াগুলি অই রকম পারে না, ব্যাংককের ছেমরিরাও পারে না। আমি তাজ্জব অই বিবি এই ছাৰ্ভিছ শিগলো কোহ হানে?’

আমি বলি, ‘আপনার কি মনে হয় আপনার বেগম ছাহেবা আগেই সার্ভিস শিখে এসেছিলেন?’

সে বলে, ‘তোবা, আস্তাগাফেরুল্লা, অইডা বিবিজান করে নাই, পরথম যেই দিন ছোফার উপর ছহবত করি, লউয়ে ছোফা ভিজ্জা গেছিল; পরদিনই নতুন ছোফা কিনতে অইছিল।‘

আমি বলি, ‘অনেক টাকা ব্যয় হয়ে গিয়েছিলো তাতে?’

কোরবান আলি ব্যাপারি বলে, ‘ট্যাকা ত মুত। ছোফায় লউ দেইক্যা আমার দিল ভইর‍্যা গেছিল, মনে অইছিল আমি হুরি পাইছি।‘

আমি মোঃ আবু লাদেনকে জিজ্ঞেস করি, ‘মোঃ আবু লাদেন শাদি করেছো কয়টা?’

মোঃ লাদেন বলে, ‘না। হুজুর, ইছলামের জইন্যে জীবন কুরবানি কইর‍্যা দিছি, একটা বিবিও লই নাই, লমুও না।’

আমি বলি, ‘এটা ঠিক নয়, বিবি নেয়ার আদেশ আছে।’

মোঃ আবু লাদেন বলে, ‘অহন বিবি লওয়ার ট্যাকা অয় নাই, হুজুর।’

আমি বলি, ‘শিগগিরই হবে, একটি দুটি বিবি নিও।’

মোঃ আবু লাদেন বলে, ‘আপনে দয়া করলে লমু, হুজুর।’

আমি বলি, ‘এখন কষ্ট হয় না?’

সে একটু লজ্জিত হয়, তবু বলে, ‘হুজুর, আপনের কাছে মিছা বলুম না, আমার কয়ড়া গেলমান আছে, আর হুজুর শান্তির ঠাণ্ডা আগুনের সোম কয়ডা মালাউন মাইয়ার লগে ছহবত করছি।‘

আমি বলি, ‘কোনটি তোমার পছন্দ?‘

সে বলে, ‘হুজুর, মালাউন মাইয়াগুলি হুরির মতন, গেলমান দিয়া ঠ্যাকা কাম চালাই, হুজুর অনুমতি দিলে আইজ রাইতে একজন গেলমান আনুম।’

আমি বলি, ‘একটি মালাউন মাইয়া আনতে পারো নি?’

সে বলে, ‘না, হুজুর, অহন ত শান্তির ঠাণ্ডা আগুন নাই; আবর কবে শান্তির ঠাণ্ডা আগুন লাগাইবেন, হুজুর?’

আমি বলি, ‘আগুন তো লেগেই আছে।’

আজ আমার কোনো হুর বা হুরি নেই বা উর্বশী নেই, দরকারও বোধ করছি না; কালকের শ্যামসিদ্ধিকে পাক করার পর দরকার হবে।

আজি আছে ব্ল্যাক লেবেল ও সিভাস রিগ্যাল, আলহজ কোরবান আলি ব্যাপারি পাজেরোতে ক’রে কয়েক বোতল নিয়ে এসেছে আমার জন্যে। আমারও একটি পাজেরো আছে, পুরানো, পাজেরো ছাড়া দেশকে পবিত্র স্তানে পরিণত করা যায় না; আর শারাব খুবই দরকার, গুলশানে আমার একটি ফ্ল্যাট আছে, আমার কিনতে হয় নি, এক ডোনার সেটি উপহার দিয়েছেন। আমিরাত থেকে তিনি আসেন মাঝেমাঝে, মুম্বাই থেকে একটি-দুটি হুর নিয়ে আসেন, বাঙালি হুরও তাঁর পছন্দ। মালাউন হুর তার বিশেষ বিশেষ পছন্দ–তার মতে ওদের সার্ভিস ফাইভ স্টার; তবে তাঁর শ্ৰেষ্ঠ পছন্দ চাকমা মারমা হুরী–দিঘিনালায় একবার চাকমা না মারমা হুর টেস্ট করার পর, আর কোনো হুরে তার রুচি নেই। আমিরাতিদের সবাই আমির; এলেই আমার হাজার পঞ্চাশেক ডলার থাকে, আর ওই ডলার জিনিসটা দেখলেই নফল নামাজ আদায় করতে ইচ্ছে হয়।

আমি একটি ব্ল্যাক লেভেল খুলি, মোঃ লাদেনকে জিজ্ঞেস করি, ‘চলবে?’

সে বলে, ‘হুজুর, এত দামি জিনিশ কোন দিন খাই নাই; ভাইগ্যে অয় নাই, কেরুই আমার ভাইগ্যে জোডে।‘

আমি বলি, ‘তাহলে তুমি তো এতোদিন কুকুরের মুত খেয়েছে।’

সে বলে, ‘আমরা ছোডো জিহাদি, অইডা খাইয়াই জিহাদ করি।’

আমি বলি, ‘আজ একটু ভালো জিনিশ খেয়ে দেখো।’

সে বলে, ‘হুজুর, আপনের লগেই খামু? আমার গুনাহ অইব না?’

আমি বলি, ‘না, গুনাহ্ হবে না, যদি বেঈমানি না করো, মনে রেখো আমি তোমার কে। ইছলামে আমরা সবাই সমান, তবে কেউ কেউ সমানের থেকে একটু বেশি, যেমন আমি তোমার থেকে সমানের চেয়ে একটু বেশি।’

সে বলে, ‘হুজুর, মইর‍্যা গেলেও বেঈমানি করুম না; চিরকাল আমি আপনের পায়ের নিচে পইর‍্যা থাকুম; আমি মোঃ হাফিজুদ্দিন না।’

একটু চমকে উঠি, তাহলে হাফিজুদ্দিনকে সেও খেয়াল করছে? আহাম্মক দেখালেও এর সম্পর্কেও সাবধান থাকতে হবে।

সন্ধ্যায় আমি মাদ্রাছা-ই-মদিনাতুন্নবির জিহাদিদের,  আমার দুই নম্বরকে, আমার বডিগার্ডদের, দুই নম্বরের বডিগার্ডদের, ‘আলি দিবস’-এর মহান কর্মকাণ্ডের কর্মপদ্ধতি বুঝিয়ে দিই। ওই ঘিলুহীন জিহাদিগুলো সহজে কিছু বোঝে না–আল্লা ওদের এভাবেই সৃষ্টি করেছেন, তাঁর পরিকল্পনা কে বুঝতে পারে—, খুন আর ছহবত আর গেলমান ছাড়া, ওদের সব কিছু মুখস্থ করাতে হয়; কিন্তু একবার বুঝিয়ে দিলে, মুখস্থ হয়ে গেলে, ওরা বেশ মুখস্থ করতে পারে, ওরা হাইয়ানের মতো কাজ করে। আরব্য হাইয়ানের মতো; এটা আমার পছন্দ। হাইয়ান না হ’লে প্রকৃত ধাৰ্মিক পরহেজগার হওয়া যায় না, বিশ্বাসী হওয়া যায় না, অন্ধ হওয়া যায় না; যে প্রশ্ন করে, যার সন্দেহ আছে, তাকে দিয়ে কিছু করানো যায় না; যে প্রশ্ন করে না, যার সন্দেহ নেই, যে অন্ধ, তাকে দিয়ে সব করানো যায়; সে হচ্ছে প্রশ্নহীন অগ্নিকাণ্ড, খাপখোলা তলোয়ার।

সাম্যবাদ, সর্বহারার সময়ও আমি এটা দেখেছি, এখনো দেখছি, বেশি করে দেখছি; এবং এটা আমার ভালো লাগে বিশেষ একটি কারণে–আমি নেতা, একনায়ক, আমার আদেশ সবাই মান্য করে। তারা অবশেষে আমার কথা বোঝে, আগামীকাল তারা হরফে হরফে জের জবর পেশা নোক্তাসহ তা পালন করবে। জিনরা একবার বুঝলে জিনের মতোই কাজ করে।

বোঝাতে বোঝাতে রাতের আহারের সময় হয়ে যায়।

আমি আহার করি, একা, দুই নম্বরকে ডাকতে ইচ্ছে করে না, এবং সিভাস রিগ্যালের বোতলটি খুলে খুব নিঃসঙ্গ বোধ করি। এই সব জিনিশ–আঙুর, গম থেকে তৈরি সাকারগুলো–একটু অদ্ভুত, এগুলো মানুষকে একলা করে। বেশ একলা; অনেকের সঙ্গে খাওয়ার সময়ও আমি একলা বোধ করি, আর যখন একলা খাই তখন থাকি বিধাতার মতো নিঃসঙ্গ। অবশ্য এই চরম নিঃসঙ্গতা আমাকে কখনো কখনো চরম সুখ দেয়, নিঃসঙ্গতারও রয়েছে অবর্ণনীয় সুখ; মনে পড়ে এক সময় আমি কবিতা পড়তাম, কাপতাম, বিষন্ন হতাম; এখনো মনে পড়ে, ‘কমরেড, তুমি নবযুগ আনবে না?’, ‘অজস্র জন্ম ধ’রে আমি তোমার দিকে আসছি, কিছুতেই পৌঁছোতে পারছিনা’, ‘ফাটা ডিমে আর তা দিয়ে কী ফল পাবে’। এই সব আমি অনেক দিন করি না। আমি একলা বোধ করি, এবং কাকে যেনো মনে পড়ে। কাকে আমার মনে পড়ছে? কেনো মনে পড়ছে? মনে পড়া খুবই খারাপ, তাতে মানুষ অসুস্থ হয়; তাহলে আমি কি অসুস্থ হচ্ছি?

কাকে মনে পড়ছে? কী মনে পড়ছে?

কৃষ্ণকলি, পদ্মবতী, সীতা, রমলা, বকুলমালা, মেহেরুন্নেছা, লাকি, বিউটি, মঞ্জু, শেলিকে? মিনিস্টার, সেক্রেটারি, নেতা, সিডনি, লন্ডন, ঢাকা, কাবুল, কাতার, রিয়াদকে? না, তাদের কথা আমার মনে পড়ে না।

আমার মনে পড়ে কণকলতাকে, স্বৰ্ণলতাকে, সঞ্চারিণী পল্পবিনীকে।

আমি ফোন করি; এই প্ৰথম ফোন করতে আমার আঙুল কাঁপে।

তাহলে আমি কি সত্যিই অসুস্থ হচ্ছি? নইলে আঙুল কাঁপবে কেনো?

মোবাইলটি আমার হাত থেকে পড়ে যেতে চায়, ওটিকে আমার রক্তমাংসময় মনে হয়, কণকলতার চিবুকের মতো, বুকের মতো, টোলের মতো, স্বর্ণদ্বীপের মতো; মোবাইলটির যেনো একটি হৃৎপিণ্ড আছে, সেটি থারথার করছে।

আমার গলা শুনেই কণকলতা বৃষ্টির শব্দের মতো বেজে ওঠে।

‘হুজুর, আমি আপনের বিবি কণকলতা, আপনার কণকলতামণি। হুজুর, আমারে এই রাইতে আপনের মনে পড়ছে? আমি বুক ভাইর‍্যা আপনেরে ডাকতেছি, যেইভাবে আপনে আল্লারে ডাকেন। আপনে আমার ডাক শোনাতে পাইছেন, হুজুর?’

ওর ডাক আমি সব সময়ই শুনি, কিন্তু সেটা ওকে বলতে চাই না; আমি বলি, ‘তুমি ফোন করো নি কেনো?’

কণকলতা বলে, ‘আমার ডর করতে আছিল, হুজুর।’

আমি বলি, ‘কেনো?’

কণকলতা বলে, ‘মনে হইছিল আপনে জিহাদিগো লগে মিটিং করতেছেন, কাউলকার প্রোগ্রাম ঠিক করতেছেন; আপনের কত কাম, ফোন করার লিগা আমার বুক কাপছিলো।’

আমি বলি, ‘হ্যাঁ, ওই ঘিলুছাড়া বাঞ্চতদের অনেক কিছু বোঝাতে হয়েছে, অনেক সময় লেগেছে, এখন আমার একলা লাগছে।’

কণকলতা বলে, ‘হুজুর, আপনে তাইলে আল্লা রছুলরে ডাকেন, নইলে আমারে ডাকেন, কন কণাকলিতা, কণকলতা, কণকলতা।’

আমি বলি, তাতে আমার কাজ হবে না, তাদের তো আমি দমে দামে ডাকি, এখন আমার তোমাকে দরকার।‘

কণকলতা বলে, ‘খালি দরকার, হুজুর? আর কিছু না?’

আমি বলি, ‘হ্যাঁ, দরকার।‘

কণকলতা বলে, ‘খালি দরকার? আমি আপনের রাইতের দরকারের মাল? আপনের খিদার পান্তাভাতে পিয়াইজ ভর্তা? আপনের মোতনের ডহি?’

আমি বলি, ‘তা আমার দিল জানে, কাউকে জানতে দেবো না।’

কণকলতা বলে, ‘আমারেও জানতে দিবেন না, হুজুর? একবার জানতে দিলে গলায় ফাঁসি দেওনের সোমও সুখ পামু।’

আমি বলি, ‘তোমার ফাঁসি দিতে হবে না।’

কণকলতা বলে, দড়ি ত বিছনার নিচেই রাইখ্যা দিছি, ওইটায় ঝোলনের আগে আপনের দিলের কতা আমারে একবার কন, হুইন্যা সুক পাই।’

আমি বলি, ‘না, কাউকে আমি দিলের কথা বলি না।’

কণকলতা বলে, ‘আমারেও কইবেন না?’

আমি বলি, ‘না।‘

কণকলতা বলে, ‘ক্যান, হুজুর?’

আমি বলি, ‘আমার দিল কথা বলতে ভয় পায়।’

কণকলতা বলে, ‘আপনের দিলডা এত ডরায় ক্যান? আপনে ত, হুজুর, ডরান না।’

আমি বলি, ‘আমার দিলটি হৃদয় হয়ে উঠছে।‘

কণকলতা বলে, ‘হৃদয়? এ কোন কতা হুনাইলেন, হুজুর?’

আমি বলি, ‘তোমার বিশ্বাস হয় না?’

কণকলতা বলে, ‘আপনের সব কতাই আমার বিশ্বাস হয়, আপনে আমার কেছে আল্লার মতন, ভগবানের মতন।‘

আমি বলি, ‘এমন কথা বলা কবিরা গুনাহ।’

কণকলতা বলে, ‘হুজুর, আগামীকাইল তা জিহাদ আছে, আমাগো ঘরবাড়ি, বাবার কলডা, আর দোকানগুনি আমারে মনে কইর‍্যা একটু দেইখ্যেন।’

আমি বলি, ‘আমার একলা লাগছে, কণকলতা।’

কণকলতা বলে, ‘হুজুর, আপনের তাল গাছ আমারে চায়, না আপনের হৃদয় আমারে চায়? কন, আপনের হৃদয় আমারে চায়?’

আমি বলি, দুটোই তোমাকে চায়; হৃদয়ে আর তালগাছে তফাৎ নেই।’

কণকলতা বলে, ‘এই রাইতে আসুম কেমুন কইর‍্যা, হুজুর? আপনে আমারে দিল দিয়া হৃদয় দিয়া আদর কইরেন; আর হুজুর, আমি আপনের হারটা গলায় পইর‍্যা আছি, মনে আয় হুজুররে বুকে লইয়া আছি, আমার বুক কাপতেছে।’

আমি বলি, ‘তুমি তবু হার পরেছে, আমার কিছু নেই, আমি একলা।’

কণকলতা বলে, ‘হুজুর, আপনের লিগা আমি কষ্ট পাইতে আছি, হুজুর, আপনের লিগা আমার পরান কান্দে।’

অন্য মোবাইলগুলো আমাকে পাগল ক’রে তোলে।

কিছু না বলেই আমি কণকলতাকে কেটে দিই। শুধু শুনতে থাকি :

‘কাউলকা কয়েকটা মালাউনরে ফালাই দিও, অগো দালালগো ফালাই দিও, আল্লায় তোমারে রহমত করব। তোমার কামের উপরই আমরা ভরসা কইর‍্যা আছি, পাক স্তানের আর তেরি নাই, আল্লা হাফেজ।’

‘আমাগো তুমি পাক স্তানের দিকে আগাই দিছ, আবার আমরা পাক সার জমিন সাদ বাদ ফিইর‍্যা পাইব, আমাগো দিল খুশিতে ভাইর‍্যা আছে, আমাগো পাক স্তানের মুরুব্বিরা তাকাই রইছে, কাউলকা জাহান কাপাই দিবা, ডর নাই, মুরুব্বিরা আছে, আল্লা হাফেজ।’

‘মেইন পার্টির অনেকেই এইখন আমাগো লগে, মেইন পার্টিরে আমরা মাইনর পার্টি কইর‍্যা তুলুম, তারা আমাগো ট্রিক্স বুজতে পারে নাই; পরের ইলেকশনে আমরাই আসুম, তয় ইলেকশনে ফিলেকশনে আমরা বিশ্বাস করি না, আমাগো বিশ্বাস জিহাদে।‘

‘আমাগো স্বর্ণযুগে ইলেকশন আছিল না, এইখনও থাকব না, ইলেকশন হইল নাছারাগো, ইহুদিগো, খিরিস্টানগো, আস্তাগাফেরুল্লা, ইলেকশন হইল আইয়ামে জাহেলিয়াতের নিয়ম।’

‘দশজন জেনারেল তোমারে প্রশংসা করছে, মোবারকবাদ জানাইছে, তারা এইখন আমাগো লগে আছে, তারা তোমারে জেনারেলের জেনারেল মনে করে, তারা হেল্প করব, আল্লা হাফেজ।‘

‘আমি কাইল তোমার আরও সাকসেস উইশ করি করি, তুমি দ্যাশটারে পাক করবা, আবার আমরা স্তান ফিইর‍্যা পাব, উই মাস্ট গেট ইট ব্যাক। পিউর অ্যান্ড পারফ্যাক্ট ইছলাম ইজ স্টেজিইং এ কাম ব্যাক থ্রো ইউ. আল্লা হাফেজ।’

‘ইছলাম ইজ দি অনলি সলিশন, আন্ড উই উইল সল্‌ভ্‌ ইট। নো আদার সলিশন ইজ অ্যাকছেপ্টবল, দেয়ার ইজ নো আদার সলিশন। আল্লা দি গ্রেট দি রাহমানির রাহিম ইজ উইথ আস।‘

‘আই অ্যাম শিউর টুমরো উইল বি এ গ্রেট ডে ইন দি হিস্ট্রি অব ইসলাম, ইন দি হিস্ট্রি অব স্তান, জাস্ট বার্ন দ্যাট ব্লাডি মঠ, ফাক ইট, মেইক দি মালাউন্স ইউর জিম্মিজ। বি কেয়ারফুল অব দেয়ার দালালস, উই শ্যাল নেভার লেট দেম কাম ব্যাক টু পাওয়ার, দি দালালস আর কন্সপাইরিং টু কাম ব্যাক টু পাওয়ার, বাট দে মাস্ট বি ভেপারাইজড, আল্লা হাফেজ।’

‘এমডি অব দি দুবাই-মদিনা-কাতার ব্যাংক স্পিকিং, স্যার। উইশ ইউ অল সাকসেস। আমরা আপনের জইন্যে দুই কোটি ট্যাকা রাখছি সো দ্যাট ইউ ক্যান বিল্ড অ্যান আল আকসা অ্যাট দ্যাট প্লেস, আল্লা হাফেজ। ‘

‘ভিসি অব আইআইইউ স্পিকিং, কংগ্ৰেচুলেশন্স ফর টুমরো, ওয়ান ডে উই শ্যাল ট্রান্সফর্ম ইট ইনটু অ্যান আল আজহার, অনলি দি হোলি কুরআন, হাদিছ, ফিকাহ উইল বি টট, উই শ্যাল থ্রো এওয়ে দি ব্লাডি বাস্টার্ড ওয়েস্টার্ন সাইন্সেস, ইছলাম ইজ দি অনলি সাইন্স, ইট ইজ দি সাইন্স অব আল্লা দি রাহমানির রাহিম; অ্যান্ড উই নিড দ্যাট সং পাক সার জমিন সাদ বাদ। দি সং রিংগস ইন মাই হার্ট, আই লিসন টু ইট এভরি নাইট ইন পিটিভি।‘

‘আমি এই দ্যাশে, নাপাক দ্যাশে শাস লাইতে পারি না, প্লিজ ডু মেইক ইট এ পিউর অ্যান্ড পারফেক্ট পাকিস্তান। পাক সার জমিন সাদ বাদ।’

আর লন্ডন, হেলসিংকি,

নিউ ইয়র্ক, সিডনি, প্যারিস, তোকিও,

জাকার্তা, পুত্রজায়া, বার্লিন, আবু ধাবি, রিয়াদ, কাবুল,

তেহরান, আমস্টারডাম, দিল্লি, মস্কো, সোল, রোম, কাতার,

ইসলামাবাদ, সুনামগঞ্জ, মদনগঞ্জ, ভেদরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ,

ঠাকুরগাঁও, কামারগাঁও, সোনারগাঁও, ব্ৰাহ্মণগাঁও…

আমি একই সঙ্গে উত্তেজনা ও নিরুত্তেজনা বোধ করি; আমি শ্যামসিদ্ধি গ্রামটি ও তার আকাশছোঁয়া মঠটিকে দেখতে পাই।

আমাদের গ্রাম থেকে অনেক দূরে শ্যামসিদ্ধি, কিন্তু এক মাইল হেঁটে গেলেই দূর থেকে ওই মঠটি দেখতে পেতাম, ওটিকে দেখার জন্যে কতো দিন আমি বিকেলে এক মাইল দৌড়িয়েছি, অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে তার চুড়োটি দেখে আবার দৌড়ে বাড়ি ফিরেছি। কী সুখ পেতাম তাতে, আমি জানি না; কখন ওটি তৈরি হয়েছিলো তাও জানি না; কিন্তু গাছপালার ওপর দিয়ে উঠে যাওয়া আকাশচুম্বি ওই মঠ আমাকে আকাশ ছুঁতে বলতো। উচ্চতা আমার পছন্দ।

ওটি ধ্বংস করতে হবে আমাকে, ওটি জামাঈ জিহাদে ইছলামের শক্র, ওই মঠ ও জামাঈ জিহাদে ইছলাম একসঙ্গে থাকতে পারে না।

আমি বিশাল হ’তে চাই, বিশাল হতে হ’লে বিশালকে ধ্বংস ক’রেই হতে হয়; উচ্চ হতে চাই, উচ্চ হতে হ’লে উচ্চকে ধ্বংস করতেই হয়; ক্ষুদ্রকে ধ্বংস ক’রে কেউ আকাশ ছুঁতে পারে না।

একটু বেশি পান করেছি, বডিগার্ডদের বলে রেখেছি ফজরের আগেই আমাকে উঠিয়ে দিতে, তা তারা দেবে; কিন্তু আমার ঘুম আসছে না।

আমি কণকলতা ও শ্যামসিদ্ধর মঠটিকে দেখতে পাচ্ছি।

আজকের বিশাল কর্মকাণ্ড, নিঃসঙ্গতা, সিভাস রিগ্যালের জন্যে হয়তো আমি একটু স্মৃতিকাতর হয়ে উঠেছি, স্মৃতি সব সময়ই ক্ষতিকর; তা মানুষকে এগোতে দেয় না, মহৎ হ’তে দেয় না, স্মৃতিকে ধ্বংস ক’রেই গ্রেট হতে হয়। যাদের স্মৃতি নেই, তারাই গ্রেট।

আমি বোধ হয় গ্রেট হতে পারবো না, আমার স্মৃতি জেগে উঠছে–ওই মঠে কী হতো, এখন কী হয়, তা আমি জানি না; একবার একটুকু কাছে গিয়েছিলাম, দেখেছিলাম ঝাঁকেঝাঁকে পাখি এসে বসছে মঠের ফাঁকে ফাঁকে, আবার উড়ে যাচ্ছে, আমার মনে হচ্ছিলো ঝাঁকেঝাঁকে  রঙ আর সুর এসে বসছে আর উড়ে যাচ্ছে, এখন অবশ্য আমি আবাবিল ছাড়া আর কোনো পাখি চিনি না।

আমি দেখি আশমান ভ’রে আবাবিল।

পাখির রঙ আর সুর আমাকে আর মুগ্ধ করে না, আমি মুগ্ধ হই পাথরের টুকরো মুখে করে আসা হিংস্র পাখির কথা ভেবে, যা বেহেশত থেকে ছুটে এসেছিলো রাহমানির রাহিম পরম করুণাময়ের নির্দেশে। হাতি নিয়ে এসেও কোনো কাজ হয় নি ওই পাক পবিত্র পাখির সামনে।

কয়েক বছর আগে একটি কাফেরের লেখা বই পড়ে আমি ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেছিলাম, কাফেরটিকে না পেয়ে বইটিকে পুড়িয়ে ফেলেছিলাম।

কাফেরটি লিখেছে ওইগুলো পাখি ছিলো না, সে-বছর মক্কায় বসন্তু রোগ দেখা দিয়েছিলো, তাতে অনেকে মারা যায়, আর কাফের আক্রমণকারীরা বসন্তের ভয়ে পালিয়ে যায়। যারা বেঁচেছিলো, তাদের মুখ আর শরীর ভরে থাকে বসন্তের কুৎসিত দাগে; ওই দাগগুলোকেই মনে করা হয় আবাবিল পাখির ছোড়া পাথরের টুকরোর দাগ। আস্তাগফেরুল্লা।

কাফের নাছারারা কতো মিথ্যেই যে রটাতে পারে; তাই দুনিয়া থেকে তাদের সরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু আমি ভুলতে পারছি না কণকলতাকে ও শ্যামসিদ্ধির মঠটিকে, আমি ঘুমোতে পারছি না।

রাত ভোর হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ওই মঠটি হবে শূন্যতা।

নতুন মহাপূর্ণতা সৃষ্টির জন্যে শূন্যতা সৃষ্টি করতে হয়; আগামীকাল আমি শূন্যতা সৃষ্টি করবো মহাপূর্ণতা সৃষ্টির জন্যে।

কিন্তু আমি দেখতে পাই আমি বিকেলে বাড়ি থেকে দৌড়ে এসে দাঁড়িয়েছি পথের ধারে, দূর থেকে দেখতে পাচ্ছি শ্যামল খয়েরি মঠটি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে, আকাশ মঠটির দিকে তাকিয়ে আছে; আমি একটি ঘাসফুলের মতো তাকিয়ে আছি মঠ ও আকাশের দিকে।

আমি কেঁপে কেঁপে উঠছি, আগামীকাল, একদা ছোটো ঘাসফুল ধ্বংস করবে আকাশচুম্বি বিশালকে, ওই মঠ তা জানে না। মঠটি কি এখন আমার পায়ে এসে পড়তে পারে না? কাঁদতে পারে না হরিপদ বা দুর্গার মতো? আবেদন জানাতে পারে না, ‘হুজুর, আমাকে বাঁচান, আপনের পায়ে পড়ি।’

মঠ, তুমি আকাশচুম্বি হ’লেও, অতিশয় তুচ্ছ এই ঘাসফুলের কাছে; অবশ্য আমি আর ঘাসফুল নই, অগ্নিকুণ্ড, অনেক বছর আমি ঘাসফুল দেখি নি, দেখতেও চাই না। আমার সুদক্ষ বিস্ফোরকবিদরা সব পরিকল্পনা ঠিক করে রেখেছে, তারা জানে কয়েক মুহূর্তে কীভাবে বিশালকে ধ্বংস করতে হয়। বিস্ফোরকবিদেরা ট্রেনিং পেয়েছে দেশে ও বিদেশে, পার্বত্য চট্টগ্রামের জঙ্গলে আর পাক পাকিস্থানে, তারা জিহাদের বিজ্ঞানী।

আমি অবশ্য মাঝেমাঝে ভাবি ওই তুচ্ছ মঠটিকে ধ্বংস করতে কাফেরদের বিস্ফোরক ও নিয়মকানুন লাগবে কেনো?

একটি পাক কালাম কি আমরা খুঁজে বের করতে পারিনা যেটি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক বজ্র ছুটে এসে ওটির মাথায় আঘাত হানবে, এবং টুকরো টুকরো হয়ে যাবে কাফেরদের মঠ? আল আজহার কী করে? খোমেনিরা কী করেন? তারা এখনো কেনো সেই কালামটি খুঁজে বের করতে পারে নি? আমি বিশ্বাস করি ওই কালাম আছে, শুধু আমরা বের করতে পারছি না; অথচ নাছাৱারা তার সাহায্যে এটম বোমা হাইড্রোজেন বোমা তৈরি করেছে, তার ভয়ে মানুষ কঁপিছে। আমি জানি হাইড্রোজেন বোমার থেকেও শক্তিশালী কালাম আছে, আমরা এখনো সেটি খুঁজে বের করতে পারি নি।

আমার ঘুম আসছে না, আমি শান্তি পাচ্ছি না।

কণকলতাকে আমি ফোন করি; সে বলে, ‘হুজুর, অহন তিনডো বাজে, অহনও আপনে ঘোমান নাই, আপনের কী হইছে, হুজুর?’

আমি বলি, ‘তুমিও তো ঘুমেও নি।’

কণকলতা বলে, ‘হুজুরের হারডা গলায় পইরা হুইয়া রইছি, ঘুমাইতে ইচ্ছা করতে আছে না, হুজুর থাকলে আর ঘুম কি; হারডারে মনে হইতেছে হুজুরের হুজুর হুজুরের জিবলা হুজুরের ঠোট।’

আমি বলি, ‘আমার ঘুম আসছে না; আমার গলায় তো কণকলতার হার নেই, আগুনের মালা বুকের মধ্যে।’

কণকলতা বলে, ‘আপনের কী হইছে, হুজুর? তালগাছ ঘুমাইতে দিতেছে না?’

আমি বলি, ‘না, তার থেকেও বড়ো।‘

কণকলতা বলে, ‘হেইডা কি, হুজুর?’

আমি বলি, ‘কাল শ্যামসিদ্ধির মঠটি ধ্বংস করা হবে, ওটি আর দেখবে না।’

কণকলতা হাহাকার করে উঠে বলে, ‘কন কি হুজুর? এইর থিকা আমারে খুন কইর‍্যা হালান, চুরমার কইর‍্যা হালান, বলি দিয়া হালান।’

আমি বলি, ‘সবই রাহমানির রাহিম আল্লার ইচ্ছা, পাক স্তান পাক সার জমিন সাদ বাদ প্রতিষ্ঠা করতে হলে এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই, কাল ওখানে শূন্যতা থাকবে, যেমন এখন আমার বুকে শূন্যতা।’

কণকলতা বলে, ‘হুজুর, আপনের পায়ে পড়ি, তার বদলে আমারে বলি দেন, ভাগা দিয়া দ্যান, ওইডার দিকে আমি সকাল বিকাল চাইয়া থাকি।’

আমি বলি, ‘তার বদলে এখন নতুন কিছুর দিকে চেয়ে থাকবে।’

কণকলতা বলে, ‘নতুন জিনিশটা কি, হুজুর?’

আমি বলি, ওখানে একটি আল আকসা মসজিদ উঠবে, মসজিদের টাকাও পেয়ে গেছি, তার দিকে তাকালে তোমার চোখ ভরে যাবে।’

কণকলতা হাহাকার করে, ‘তার বদলে আমারে বলি দ্যান, হুজুর, আপনে কইলে আমি ভোরেই আসুম, ওই মডের নিচে আমারে বলি দিয়েন।’

আমি বলি, ‘তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।’

কণকলতা বলে, ‘অহন, হুজুর?’

আমি বলি, ‘কাল সন্ধ্যার পর তোমাদের বাড়ি আমার পাজেরো যাবে, তুমি চলে এসো; আমরা পাক সার জমিন উদযাপন করবো।’

কণকলতা বলে, ‘আইচ্ছা, হুজুর।’

আমি বলি, ‘আল্লা হাফেজ।’

কণকলতা বলে, ‘আল্লা হাফেজ, হুজুর, আপনের লিগা আমার মন কান্দে।’

তারপরও সে ফোন রাখে না, চুমোর পর চুমো খেতে থাকে; তার জিভ আর ঠোঁটের চাপে আমার মোবাইল কাঁপতে থাকে।

আমি আবার মঠটিকে দেখতে থাকি, যেনো শেষবারের মতো দেখছি; কাল ওটি আমার পায়ের নিচে পড়ে থাকবে। পাখিগুলোকে দেখতে পাই, ডানার পর ডানা উড়ছে, সুখের পর সুখ ভাসছে, রঙ আর রঙ ছবি আঁকছে। কিন্তু এখন আর আমি ছবি আঁকা পছন্দ করি না, ছবি নাপাক, আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি; কিন্তু আমি মঠটি ঘিরে রঙের ছবি দেখতে থাকি।

আমি একবার উঠে সালাত আদায় করি; আল্লার কাছে জামাঈ জিহাদে ইছলামের জন্যে রহমত চাই।

সিভাস রিগ্যালের একটি বোতল বের করি।

এক গেলাশ গিলতে গিলতে আমার কণকলতাকে মনে পড়ে।

তার কণ্ঠস্বর শুনতে পাই, তার দুটি স্তন পাকা গন্ধমের মতো পেয়ারাগাছের ডালে বুলিতে দেখি, তার শরীরটিকে আমার একটি কোমল সোনালি মাংসের মঠ মনে হয়, একদিন কি ওই মাংসের মঠও আমার চুরমার করতে হবে? আমি মনে মনে পাক সার জমিন গানটা গাই। দেখতে পাই আমার দিল পরিষ্কার হয়ে উঠেছে, পাখি ডাকতে শুরু করেছে, মোরগ অপূর্ব স্বরে আল্লার নাম নিচ্ছে, সোবে সাদেকের শাম্‌স্‌ উঠছে, মুয়াজ্জিন ডেকে বলছে, নিদ্রার থেকে সালাত উত্তম, ফেরেশতারা আল্লা আল্লা জিকির করছে, আমি সেই শব্দ শুনতে পাই। আমার অবশ্য ঘুম হয় নি, অনেক রাত হবে না; একরাত ঘুম না হ’লে আমার অনেক রাত ঘুম হয় না। আমি গিয়ে সবার সঙ্গে সালাত আদায় করি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *