০৭. খিলাফত

খিলাফত

একটা তরুণ অমার্জিত জাতি প্রথমে আপন যৌব-শক্তির প্রচণ্ড অভিঘাতে কোন প্রাচীন সভ্যতাকে পরাজিত করেছে–তারপর সেই বিজিত সভ্যতার সাংস্কৃতিক স্থানন্দের মায়ার কাছে নিজেরা পরাজয় মেনেছে–এমন ঘটনা ইতিহাসের আলোচনার এক পরম চিত্তাকর্ষক বিষয়বস্তু। এক্ষণে আরবদের জীবন-কাহিনীতে এমন ঘটনারই আলোচনা এসে পড়ছে।

আরবরা যখন উর্বর হেলাল, পারস্য ও সিরিয়া অধিকার করল, তখন তার সঙ্গে সঙ্গে তাদের দখলে এল পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতার লীলাভূমিসমূহ। চিত্র শিল্প, স্থাপত্য শিল্প, দর্শন, চিকিৎসাবিদ্যা, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজ্য-শাসন এসব বিষয়ে আদিম আরবেদের শিক্ষা দিবার ছিল না কিছুই; শিক্ষা করিবার ছিল সবই-আর কি রাক্ষুসে ক্ষুধাই না ছিল এদের পেটে লুকিয়ে। এদের কৌতূহল ছিল সুতীক্ষ, এদের অন্তর্নিহিত সম্ভাব্যতা ছিল বিপুল। এই বিস্ময়কর-সম্পদ তারা নিয়ে তাদের পরাজিত জাতিদের সহযোগে এক্ষণে তাদের প্রাচীন সাংস্কৃতিক-উত্তরাধিকারকে আত্মস্থ করে তা ঢেলে নবরূপে উপস্থাপিত করতে শুরু করল। টিসিফন, দামেস্ক, বায়তুল-মোকাদ্দেস এবং আলেকজান্দ্রিয়াতে তারা স্থাপত্য-শিল্পী, শ্রম-শিল্পী, জহুরী এবং শিল্প-দ্রব্য উৎপাদকদের কাজ দেখে মুগ্ধ হল এবং সেসবের অনুকরণ করতে লাগল। প্রাচীন সংস্কৃতির এইসব কেন্দ্রে তারা এল–তারা দেখল এবং তারা পরাভূত হল।

আমরা বর্তমানে যাকে আরব-সভ্যতা বলি, তা মৌলিক-গঠন বা জাতিগত বৈশিষ্ট্য–এর কোন দিক দিয়ে আরবীয় ছিল না। খাঁটি আরবীয় অবদান ছিল ভাষাগত এবং কতকাংশ ধর্মগত। খিলাফত-জামানার শুরু হতে শেষ পর্যন্ত সিরিয়া, পারস্য ও মিসরের বাসিন্দা ও অন্যান্যরা (যেমন নব দীক্ষিতেরা অথবা খৃস্টান ও ইহুদীরা) সভ্যতার পতাকা বহনকারীদের মধ্যে সর্বাগ্রগামী ছিল–যেমন, বিজিত গ্রীকরা ছিল বিজেতা রোমকদের অধীনে। আরব-ইসলামী সভ্যতার মূলে ছিল গ্রীক প্রভাবপুষ্ট আরামেইক ও ইরানী সভ্যতা। এ-সভ্যতা বিকাশ লাভ করেছিল খলীফাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং বিস্তার লাভ করেছিল আরবী ভাষার মাধ্যমে। অন্য কথায়, “উর্বর হেলাল-অঞ্চল’ যে সেমিটিক সভ্যতা আসিরিয়া-ব্যাবিলোনীয়, ফিনিশীয়, আরামীয় ও ইহুদীদের দ্বারা উদ্ভূত ও বিকশিত হয়েছিল, আরব-সভ্যতা তারই অনিবার্য পরিণতি। এ-সভ্যতায় পশ্চিম এশিয়ার ভূমধ্যসাগরীয় সভ্যতা তার চরম উৎকর্ষ লাভ করে।

মুসলিম-আরব কি শ্রেণীর মানুষ পয়দা করেছিল, আমরা তার দুটি স্পষ্ট ছবি পাই প্রথম দুই খলীফা–আবুবকর (রাঃ) (৬৩২-৬৩৪) এবং ওমরের (রাঃ) (৬৩৪৬৪৪) মধ্যে। আবুবকরই প্রকৃতপক্ষে আরব জয় করেন ও আরবে শান্তি স্থাপন করেন। অথচ তিনি প্রাচীনকালের কওমী সর্দারের মত অনাড়ম্বর সরল জীবনযাপন করতেন। তিনি তাঁর পত্নী বিবি হাবীবার সঙ্গে আল-সুনহ নামক স্থানে একটি ছোট বাড়ীতে বাস করতেন এবং এই স্থান হতে তার শাসন কালের প্রথম ছয়মাস তিনি রোজ রাজধানী মদীনায় আসতেন। এসময় তিনি রাজকোষ হতে কোন বেতন বা ভাতা নিতেন না। (আর আসলে এ সময়ে রাষ্ট্রের তেমন কোন আয়ও ছিল না)। মহানবীর মসজিদের আঙ্গিনায় বসে তিনি যাবতীয় সরকারী কার্য সমাপন করতেন।

তাঁর পরবর্তী খলীফা ওমর (রাঃ) ছিলেন এক প্রতিভাবান অসাধারণ কর্মী পুরুষ। তিনি লম্বা জওয়ান ছিলেন এবং তাঁর দেহে প্রচুর শক্তি ছিল। তিনিও জাকজমক-শূন্য সরল জীবনযাপন করতেন এবং খলীফা হওয়ার পর অন্ততঃ কিছুকাল পর্যন্ত তেজারতী দ্বারা নিজ পরিবার পালন করেন। তিনি জীবন-ভর বেদুঈন শেখের মত একান্ত আড়ম্বরহীনভাবে চলেছেন। মুসলিম ঐতিহাসিকদের বিবেচনায় প্রাথমিক-যুগে হযরত মুহম্মদের (সঃ) পরই ওমরের স্থান। মুসলমান লেখকগণ তার ধর্মপ্রাণতা, তার সুবিচার এবং তার অনাড়ম্বর জীবনযাপন প্রণালীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তাঁরা মনে করেন, খলীফার যেসব গুণ থাকা দরকার, ওমরের মধ্যে তার সব ছিল। ঐতিহাসিকেরা আরো বলেন, তাঁর মাত্র একটি জামা ও একটি আলখিল্লা ছিল এবং তাতে তালির অভাব ছিল না। তিনি খেজুরপাতার বিছানায় শয়ন করতেন এবং তাঁর একমাত্র ধ্যান ছিল–ধর্মের পবিত্রতা সংরক্ষণ, হক-বিচার কায়েম করা এবং ইসলাম ও আরব-জাতির উন্নতিবিধান। ওমরের কঠোর চরিত্র সম্বন্ধীয় উপাখ্যানে আরবী-সাহিত্য ভরপুর। তিনি তাঁর নিজ পুত্রকে সুরাপান ও ব্যভিচারের জন্য দোররা মেরে মেরেই ফেলেছিলেন। একদা এক বেদুঈন কোন জালিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে তাঁর কাছে আসে। তিনি রাগের মাথায় বেদুঈনকে কয়েকটি দোরা মারেন। এরপরই তাঁর অনুতাপ হয়; তিনি বেদুঈনকে ডেকে তার পিঠে সেই কয়েকটি দোরর মারতে বলেন। বেদুঈন অস্বীকার করে। তখন তিনি আপনা আপনি এই বলতে বলতে চলে যান :

‘হে আল-খাত্তাবের পুত্র! তুমি নগণ্য ছিলে, আল্লাহ তোমাকে ইজ্জত দিয়েছেন; তুমি পথ-ভ্রান্ত ছিলে, আল্লাহ্ তোমাকে পথ দেখিয়েছেন; তুমি দুর্বল ছিলে, আল্লাহ, তোমাকে সবল করেছেন। এরপর আল্লাহ্ তোমাকে তোমার জাতির ঘাড়ের উপর শাসক নিযুক্ত করেছেন তাদেরই একজন তোমার কাছে এল সাহায্য চাইতে–আর তুমি তাকে করলে বেত্রাঘাত। আল্লাহর কাছে যখন হাজির হবে, তখন তোমার এ অন্যায়ের কি কৈফিয়ত দিবে।

এ-কথা লক্ষণীয় যে, ওমর নিহত হন পারস্য-দেশীয় এক খৃস্টান গোলামের ছুরিকাঘাতে।

ওমরের পরবর্তী খলীফা ওসমান (রাঃ) বারো বছর শাসন করেন এবং এক বিদ্রোহ-কলে মুসলমানদের হাতে নিহত হন। আলী (রাঃ) (৬৫৬৬৬১) পরবর্তী খলীফা। প্রায় সমস্ত মুসলিম-জগতই তাঁকে স্বীকার করে নেয়; তথাপি একটি বিরুদ্ধ দল শীঘ্র জেগে ওঠে। ফলে রু হয় সেই বংশগত লড়াই, যা পরবর্তীকালে মাঝেমাঝেই মুসলিম-সাম্রাজ্যকে তোলপাড় করেছে এবং কখনো কখনো তার ভিত্তিমূলকে পর্যন্ত কাঁপিয়ে তুলেছে। পাঁচ বছর পর এক বিষাক্ত চুরির আঘাতে হযরত আলী (রাঃ) নিহত হন।

এখানে একটি সাধারণ ভুল সম্বন্ধে আমাদের সাবধান হতে হবে : অনেকেই মনে করেন খিলাফত একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। রোম সাম্রাজ্যের এবং ক্যাথলিক চার্চের অধিনায়কের সঙ্গে খলীফাকে এক মনে করা ভুল। খলীফা আমীরুল মুমেনীন : মুমিনদের আদেশদাতা। এ হিসেবে তাঁর পদের সামরিক গুরুত্ব যথেষ্ট। ইমাম হিসেবে তিনি জামাতের ইমামতি ও জুমার নামাজে খোত্বা দিতে পারতেন এবং অনেক সময় বাস্তবিকই খোতবা দিতেন। কিন্তু এ কাজ নিতান্ত নগণ্য মুসলমানকে দিয়েও চলতে পারে। মহানবীর খলীফা হওয়া মানে ছিল, মুসলিম রাষ্ট্রের নায়ক পদে ব্রত হওয়া। গয়গম্বর হিসেবে কারো পক্ষে মুহম্মদের (সঃ) স্থলাভিষিক্ত হওয়ার কথাই ওঠে না। খলীফার সঙ্গে ধর্মের শুধু এইটুকু সম্বন্ধ ছিল যে, তিনি ধর্মের পৃষ্ঠপোষক ও অভিভাবক ছিলেন। যেকোন ইউরোপীয় সম্রাটের মত খলীফা ধর্মকে বিধর্মীয় আক্রমণ হতে রক্ষা করতেন, ধৰ্ম-বিরোধী মত দমন করতেন, কাফিরদের সঙ্গে লড়াই করতেন এবং দারুল ইসলামের সীমা বর্ধন করতেন এবং এসব কর্তব্য সম্পাদন করতে তিনি তার ঐহিক বাহুবল প্রয়োগ করতেন। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষার্ধের আগে ইউরাপে এমন কোন ধারণা বদ্ধমূল হয় নাই যে, মুসলিম-খলীফা খৃস্টান-পোপের মত সমগ্র জগতের মুসলমানদের উপর এক ধর্মীয় আধিপত্যের অধিকারী। সুচতুর দ্বিতীয় আবদুল হামিদ খৃস্টান-শক্তিপুঞ্জের চোখে তার মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য ঐ ধারণার সাহায্যে গ্রহণ করেছিলেন। কারণ, এই সময় খৃস্টান-শক্তিবর্গ এশিয়া ও আফ্রিকার বেশির ভাগ মুসলিম-রাষ্ট্রের উপর প্রভাব বিস্তার করেছিল। বিগত শতাব্দীর শেষ ভাগে প্যান-ইসলামীজম নামে একটি আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। এ-আন্দোলনের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য স্থাপনের মাধ্যমে খৃস্টান-শক্তিকে বাধা দেওয়া। তুরস্ককে এই আন্দোলনের কেন্দ্র করে খিলাফতের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

আলীর হাত হতে যিনি খিলাফত কেড়ে নেন, তিনি ছিলেন আলীরই এক দূরসম্পৰ্কীয় চাচাতো ভাই : ধূর্ত মুয়াবীয়া সিরিয়ার শাসনকর্তা। তার আমল হতে ইসলামের সার্বভৌম ক্ষমতায় এক নব-নীতির প্রবর্তন হয়? খিলাফত বংশগত হয়ে পড়ে। নির্বাচন-প্রথা বিলুপ্ত হয়। আমাদের আলোচ্য যুগে তিনটি বংশের কথা আসবে। উমাইয়া বংশ : ৬৬১ সালে দামেস্কে মুয়াবীয়া–এর শাসন-আমলের পত্তন করেন; বাগদাদের আব্বাসীয় বংশ (৭৫০-১২৫৮) এবং কায়রোর ফাতেমীয় বংশ (৯০৯–১১৭১)। উমাইয়া খলীফাদের এক সুবিখ্যাত শাখা স্পেনে কর্দোভা নগরকে রাজধানী করে ৯২৯ হতে ১০৩১ পর্যন্ত স্পেন শাসন করেন। এই খলীফাদের মধ্যে একমাত্র ফাতেমীয় খলীফারা আলীর বংশধর বলে দাবী করতেন। বংশগত উত্তরাধিকারের নীতি রাজনৈতিক ব্যাপারে খানিকটা স্থায়িত্ব আনয়ন করেছিল। বাস্তবিক পক্ষে কিন্তু রক্তাক্ত আত্মকলহ ইসলামকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে নাই, এমন কোন দীর্ঘযুগ ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন-কোন সময় খলীফা নামে সাম্রাজ্যের অধিপতি হলেও কার্যতঃ নিজ রাজধানীতেও তাঁর ষোলআনা কর্তৃত্ব থাকত না।

মুয়াবীয়ার অভ্যুদয় উপলক্ষে এই সময় ইসলামের রাজনীতিতে আর এক নতুন সুর বেজে ওঠে। পরবর্তী যুগে মুসলিম-জগতে বহুবার এইসব ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়েছে।

ইরাকের অধিবাসীরা আলীর পুত্র ইমাম হাসানকে খলীফা বলে ঘোষণা করল। তারা বলু-হাসান আলীর জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং মহানবীর কন্যা ফাতিমার গর্ভজাত। সুতরাং, যুক্তি অনুসারে তিনিই খিলাফতের অধিকারী।

মুয়াবীয়া অসাধারণ শাসন-কুশলী ব্যক্তি ছিলেন। বিশৃঙ্খলতার ভিতর হতে তিনি একটি সুশৃঙ্খল সমাজ গড়ে তোলেন। মুসলিম যুদ্ধ-বিগ্রহের ইতিহাসে তারই ছিল প্রথম সুশিক্ষিত এবং সুশৃঙ্খল সৈন্যবাহিনী। মুসলিম ঐতিহাসিকরা আরো বলেন যে, ইসলামের তিনিই প্রথম রেজেন্ত্রী দত্তর স্থাপন করেন এবং তিনিই প্রথম পোস্টঅফিস স্থাপন করেন। তাঁর এই প্রতিষ্ঠান অনতিকাল মধ্যে বিকাশ লাভ করে সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশকে সুসংবদ্ধ করে।

মুয়াবীয়ার মধ্যে রাজনৈতিক জ্ঞান যে পরিমাণে বিকাশ লাভ করেছিল, তেমন বোধহয় কোন খলীফার মধ্যে বিকাশ লাভ করে নাই। আরব জীবনী লেখকদের বিবেচনায় তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ গুণ ছিল ‘হিম’। হিমকে বুদ্ধির কলা কৌশল বলে অনুবাদ করা যেতে পারে। হিল্ম সেই অসাধারণ শক্তি যার বলে মানুষ কেবল তখনি বল প্রয়োগ করে যখন বল প্রয়োগ ছাড়া আর কোন পথই খোলা থাকে না; অন্যান্য সর্বপ্রকার অবস্থায় শান্তিপূর্ণ পথ অবলম্বন করে। মুয়াবীয়া পরম বিচক্ষণতার সঙ্গে মোলায়েম ব্যবহার দ্বারা শত্রুকে আপন করতে চেষ্টা করতেন। তিনি তাঁর ক্রোধ দমন করে চলতেন কোন অবস্থাতেই তিনি আত্মসংযম হারাতেন না; ফলে যে কোন পরিস্থিতিতে তার কর্তৃত্ব বহাল থাকত। তিনি বলেছেনঃ ‘যেখানে আমার চাবুক যথেষ্ট, সেখানে আমি তলোয়ার ধরি না; যেখানে আমার জিভ যথেষ্ট, সেখানে আমি চাবুক হাতে নেই না। আর একটি চুলও যদি আমাকে আমার দেশের ভাইয়ের সঙ্গে বেঁধে রাখে, তবে আমি তা ছিড়ি না। যখন তারা টানে আমি ঢিলা দেই, আর যদি তারা ঢিলা দেয়, আমি টানি।’ কথিত আছে, তিনি ইমাম হাসানকে তাঁর খিলাফত দাবী পরিত্যাগ উপলক্ষে এই মর্মে পত্র লেখেন : ‘আমি স্বীকার করি, রক্তের সম্বন্ধ হিসেবে এ মহান পদের জন্য আপনার দাবীই অগ্রগণ্য। এ পদের গুরুদায়িত্ব পালনে আপনি শ্রেষ্ঠতম ক্ষমতার অধিকারী–এ বিষয়ে নিশ্চিত হলে আমি অসঙ্কোচে আপনার হাতে বয়েত হতাম। এখন তা হলে ঠিক করুন, আপনি কি করবেন।’ এই পত্রের সঙ্গে মুয়াবীয়ার দস্তখত-সহ একখণ্ড সাদা কাগজ ছিল–ইমাম হাসানের পূরণের জন্য। প্রতিদ্বন্দ্বী ইমাম হাসান এ-পত্র পেয়ে স্বভাবতঃই মুগ্ধ হলেন।

পরবর্তী খলীফাদের মত মুয়াবীয়া বাইজেন্টাইনদের সঙ্গে বাহুবল পরীক্ষা করেন এবং দুই দুইবার তাঁর সবল বাহু কনস্টান্টিনোপল পর্যন্ত প্রসারিত হয়। যখন তিনি সিরিয়ার গভর্নর, তখন মুসলিম নৌ-বাহিনী এশিয়া মাইনরের নিকটস্থ লিসীয়ার উপকূলের অদূরে বাইজেন্টাইন নৌ-বাহিনীর সঙ্গে এক রক্তাক্ত সংগ্রামে লিপ্ত হয়ে জয়লাভ করে। ইসলামের ইতিহাসে এই-ই প্রথম উল্লেখযোগ্য নৌ-বিজয়। কনস্টান্টিনোপল তুর্কদের আগ পর্যন্ত দুর্ভেদ্যই রয়ে যায়। এশিয়া মাইনরেও আরবরা কখনো স্থায়ী প্রভুত্ব বিস্তার করতে পারে নাই, কিংবা হেলেস্পন্ট পার হতে পারে নাই। তাদের প্রদান শক্তি নিয়োজিত হয়, পূর্ব ও পশ্চিম দিকে। মুয়াবীয়ার আমলে আবার তারা অভিযান পথে বের হয়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *