০৬. এক প্লেট ল্যাংড়া, কটি সন্দেশ এবং …রু আফজা!

এক প্লেট ল্যাংড়া, কটি সন্দেশ এবং …রু আফজা!

তার জন্যে রাখা ১০ ভাগ দিয়ে দীপ্তি যদি শেষ পর্যন্ত উড়িয়ে না দেয়, তাহলে আমরা নিজেরাই যাচ্ছি স্বাধীনভাবে কমবেশি ৯০ ভাগ এরকম মনস্থ করে রাত ৯টা নাগাদ বাড়ি ফিরে দেখি, দীপ্তির দাদার গুরুদেব এবং যদিও এখনও দীক্ষা নেয়নি, তথাপি দীপ্তিরও পূজ্যপাদ শ্রীবাগীশ্বর ভট্টাচার্য এক প্লেট কাটা ল্যাংড়া ও কয়েকটি সন্দেশের সামনে বসে আছেন। পাশেই। এক গ্লাস রু আফজা, আইস-কিউবগুলো সব এখনও গলে যায়নি।

হরিদ্বার সেরে উনি এখন সবে কণখলে।

এ-সব দেবীপুরাণের কথা, বুঝলে মা। গুরুদেব বলছেন, সেই যখন ভগীরথ গঙ্গাকে নিয়ে আসছেন। খল নামে এক দানব থাকত এখানে। ঋষিদের যজ্ঞ নষ্ট করত। সারাদিন প্রস্তরস্থূপ হয়ে পড়ে থাকে। সন্ধ্যায় প্রকটিত হয় তার রাক্ষসরূপ। ভগীরথ শঙ্খধ্বনি করে গঙ্গাকে নিয়ে পৌঁছলেন এখানে। স্রোতধারা থেকে এক ফোঁটা জল গিয়ে লাগল প্রস্তরস্থূপে। ব্যস, খল উদ্ধার হয়ে গেল!কণ মানে কণিকা। আর খল তো শুনলে। এই দুয়ে মিলে কণখল। আনন্দময়ী মার আশ্রম এখানেই।

একটা সন্দেশ ভেঙে মুখে দিয়ে বললেন, এ কী, এ তো গিরীশের!

সত্যিই বুঝি তাই। দীপ্তি, কী করে বুঝলেন চোখে ওঁর বিভূতির দিকে তাকিয়ে। গিরীশ প্রসঙ্গ রহস্যাবৃত রেখে, সাধকোচিত প্রসন্ন হেসে উনি ফের হরিদ্বারে ফিরে এলেন। চৈতিকে বললেন, হরিদ্বারে মথুরাবালার দোকানে মালাই সন্দেশ খেতে ভুলো না যেন।

বলতে বলতে ঈষভাবে পাছা তুলে, ছোট করে, প্রায় নিঃশব্দে, উনি উইন্ড পাস করলেন মাত্র একবার।

তরফদার ছবিগুলো সঙ্গে দিয়েছিল। আমি সেগুলো বের করে এই যে কেদার বদ্রীর ছবি বলে চৈতিকে দিতে যাচ্ছি, উনি হাত বাড়িয়ে একরকম ছোঁ মেরেই সেগুলো নিয়ে নিলেন।

ঠিক যা চাই, তখুনি হাতে এসে যায়। পাঠিয়ে দেন। সিলিং-এর দিকে ভ্র তুলে উনি দুবার নাচালেন। মানে, সেই যে, সেই লোকটা! ওপরওয়ালা।

এই দেখুন নীলকণ্ঠ পর্বত।(ছবি দেখিয়ে), আপাদমাথা বরফে ঢাকা ত্রিকোণ এই পাহাড়। সর্বঋতুতে এর অঙ্গে ওই শ্বেত গরদবস্ত্র। স্বয়ং বদ্রিনারায়ণ! সামনে দুদিকে সবুজ নর ও নারায়ণ পর্বত—এঁরা এর প্রহরী। এই যে অলকানন্দা! স্বর্গের নদী। এর তীরে মাহেন্দ্ৰমুহূর্তে গিয়ে দাঁড়ালে নীলকণ্ঠ থেকে সঙ্গীতের ঐকতান ভেসে আসে।

নিয়ে যান। মাকে নিয়ে যান। পিওর সিল্কের থানের ভেতর থেকে ধবধবে পা লাল বিদ্যাসাগরীতে গলিয়ে গুরুদেব উঠে দাঁড়ালেন।

দীপ্তি তখন গলায় আঁচল জড়িয়ে ওঁর চটির ওপর। দীপ্তিকে দেখিয়ে আমাকে বললেন, এঁরাই সাক্ষাৎ পার্বতী। যতক্ষণ আমাদের এখানে এঁদের রুনুঝুনু নিজের বামস্তনের নিপল নাড়িয়ে কোনখানে তা দেখালেন হাত দিয়ে, অর্থাৎ হার্ট, শুধু ততক্ষণই আমরা শিব হয়ে আছি।

বলতে বলতে ওঁর চোখ কপালে উঠে গেল।

 

খাওয়া দাওয়ার পর টিভি খুলে একশো গ্রামকা টিকিয়া দেখছি, চৈতি বাবা বাবা বলে ওদের ঘর থেকে ছুটে এল। ওর হাতে নীলকণ্ঠ পাহাড়ের ছবিটা, মুখচোখ বিস্ময়ে ফেটে পড়ছে।

দ্যাখোও! বলে ছবিটা ও আমার নাকের ওপর এমন চেপে ধরে যে নিঃশ্বাস বন্ধ হবার জোগাড়।

ওরে, ছাড়, ছাড়। কিন্তু, আশ্চর্য তো। এ যে সত্যিই একটা সুগন্ধ ভেসে আসছে ছবির ভেতর থেকে।

দীপ্তিও দৌড়ে এল। ছবিটা কানে রেখে সে চৈতিকে বলল, ওমা, একটা খুব মিষ্টি টুং টাং সুরও ভেসে আসছে রে। চৈতি ছবি কানে রেখে বলল, কই, আমি পাচ্ছি না তো।

কিছু শুনতে আমিও পেলাম না। তবে সুগন্ধ একটা ভেসে আসছে এতে কোনও সন্দেহ নেই।

 

সবই গুরুদেবের লীলা। অনেকদিনের মধ্যে এই প্রথম বিনা নিমন্ত্রণে দীপ্তি আমার ঘরে শুতে এল। অবশ্য, কাল রবিবার। কিন্তু বেশ কিছুদিন হল শনিবারগুলোও সে বাদ দিচ্ছে। বিনা ট্রাভেল এজেন্টে কেদার-বদ্রী যেতে সে রাজিও হয়ে গেল এক কথায়। তবে, দায় দায়িত্ব সব আমার।

পান পচে যায় যাক। কিন্তু চুন খসা চলবে না, এই তো।

এ ধরনের কথা আমি বুঝি না। বলেছি তো, বলবে না।দীপ্তির বুকে এখনও ব্রেসিয়ার। কোমরে শায়া। বরাবরের মতো এ দুটির গিট আমাকে খুলতে হবে। এবং এ-ব্যাপারে কোনও সাহায্য আমি ওর কাছ থেকে পাব না। বিবাহের ১৮ বছর পরেও কেন এ অবুঝ কুমারী ব্রত! কেন এই বিরক্তিকর প্রতিরোধ? সম্পূর্ণ নারী কি সেই উদাসিনী নয়, ছোট্ট হাই তুলে ও শব্দহীন তুড়ি মেরে যে বলতে পারে (মৃদু হেসে), কবে যে কুমারী ছিলাম, সে আমার একটুও মনে নেই ভাই! শাড়ি-শায়া ব্লাউজ এবং ব্রেসিয়ার–শীতে সোয়েটার এর প্রত্যেকটির সঙ্গে সমস্ত প্রতিরোধ মাটিতে ফেলে রেখে যারা বিছানায় ওঠে না, আমি তাদের, আমি তাদের, নারী বলে মনে করি না–না!

ওর এখনও পর্যাপ্ত নিতম্বের নাটকীয় উত্থানের সানুদেশে আমার হাত। কিন্তু, বড় বহুমূল্য দিয়ে আমি জানি, এ উত্থান অনতিক্ৰমণীয়। বাঁ হাতে কমণ্ডলু, গায়ে গেরুয়া, দক্ষিণ বাহু আশীর্বাদী মুদ্রায় তুলে, আহা, আমি সেই কবে থেকে দাঁড়িয়ে। দাড়িগোঁফ বুক ছুঁল। সব সাদা হয়ে গেল। তবু এ বিন্ধ্য কোনওদিন নতজানু হল না। এ-উত্থানের মধ্যে কোনওদিন জেগে উঠল না নিজের পতন কামনা।

না বোঝার কী আছে।

যা বোঝার আমি বুঝে নিয়েছি।

কী সেটা?

শুধু আমি নয়। ইউ হেট উওমেন অ্যাজ এ ক্লাস। তুমি মেয়েদের লেসার মর্টাল মনে কর। কর কি না!

জানি না। উমমম। তবে তোমার গুরুদেবের মতো ওর নিল্ল নাড়া দিয়ে আমি বলি, যতক্ষণ রুনুঝুনু যে মনে করি না, সেটা ঠিক। উমমম।

শাট আপ ইউ! এক ঝটকায় নিজেকে খুলে নিয়ে দীপ্তি তীক্ষ্ণ চিৎকার করে বলল, গুরুদেবের নাম তুমি মুখে আনবে না।

 

দীপ্তি বিছানায় উঠে বসেছে।একটা চাদর টেনে নিয়েছে বুকে। মাছের রক্তের মতো জোলো লাল নাইট-ল্যাম্পের আলোয় তার খোলা চুলের তোড় ঝাঁপিয়ে পড়েছে, আজও মেদহীন, ওর কুমারী ওয়েস্ট লাইনের ওপর। কপালের মত সিঁদুর-টিপ এখন ব্রাশের ক্রুদ্ধ স্ট্রোক। ওর ভরা ঠোট থেকে চুষে তোলা খুনখারাবি ল্যাকমে এখন ওরই মুখময় আমার চুম্বনের লালা-সহ বীভৎস উল্কি। ক্র, পাতলা হাসিতে ভরে যায় আমার মাথা! বলো, বলো ওগো অপমানিতা, আগে বলো, তুমি নারী না প্রেতিনী?

যে গন্ধটা আসছিল নীলকণ্ঠর গা থেকে ওটা তোমার খুব চেনা সেন্টের : ব্রুট! নাম মাহাত্ম্যের কারণে কতবার কিনে দিয়েছ আমাকে। তোমার মনে পড়ল না? কিন্তু বাজনাটা? বাজনাটা এল কোথা থেকে শুনি। বাজনাটা বাজেনি। হ্যাঁ, বেজেছে। না, বাজেনি।

বাজনাটা তুমি শোনোনি। হ্যাঁ, শুনেছি। না, শোনোনি।

হ্যাঁ, বেজেছে। না, বাজেনি। হ্যাঁ, শুনেছি। না, শোনোনি।

হাঁ এবং না। রাজা দুজনেই। দুই পাগলা রাজার আদেশে যুযুধান দুই রক্তাক্ত সৈন্যশ্রেণী… এক সময় অস্ত্রত্যাগ করে আরও একবার আমরা পরস্পরের মধ্যে মিশে যাই।শমিত্র আর চেনা যায় না। কিছুক্ষণ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *